Mohsina Meherun Manama

Mohsina Meherun Manama

Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Mohsina Meherun Manama, Grocers, Karim Kutir, Barishal.

15/03/2024

মাতৃত্ব
পর্ব:৪
লিখিকা : ঐশী মণ্ডল দীপান্বিতা

নীলার যখন জ্ঞান ফিরতেই নীলা দেখতে পেলো সে হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে আছে নীলা এবার আশে পাশে তাকালো কিন্তু কাউকে ই দেখতে পেলো না তারপর নীলা যখন বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে ঠিক সেই সময় একজন নার্স এসে নীলাকে উঠতে বাধা দিয়ে বললো

নার্স: এ কি আপনি উঠছেন কেন আপনার শরীর এখনো দুর্বল আপনি শুয়ে পড়ুন

কথা টা বলেই নার্স আবার নীলাকে শুয়ে দিলো নীলা এবার দুর্বল কণ্ঠে বললো

নীলা: আমি এখানে কিভাবে এলাম নার্স

নার্স: আপনাকে তো এখানে ডক্টর নিহান নিয়ে এসেছে আপনি তো উনার গাড়ি র সাথে ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ছিলেন তারপর উনি আপনাকে এখানে নিয়ে ওসেছেন

নীলা এবার প্রশ্নবোধক কন্ঠে বললো

নীলা: ডক্টর নিহান কে

নার্স: ডক্টর নিহান হলো এই হসপিটালের একজন নাম করা ডাক্তার দাড়ান আমি স্যার কে ডেকে আনছি

নার্সের কথা শেষ হতে ই পিছন থেকে কোনো এক পুরুষালি কণ্ঠে বলে উঠলো

সিটার পেসেন্টের জ্ঞান ফিরছে

কণ্ঠ স্বর টা শুনে নীলা এবং নার্স দুজনেই পিছনে ফিরে তাকালো তখন নীলা দেখতে পেলো এক সুর্দশন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে পরণে ডাক্তারি পোশাক নিজের চোখের চশমা টা ঠিক করতে করতে নীলার বেডের দিকে এগিয়ে আসছে নার্স সেই ব্যাক্তি কে দেখে বলে উঠলো

নার্স: ওই তো ডক্টর নিহান আসছেন

নিহান এবার নার্সের দিকে তাকিয়ে বললো

নিহান: স্টিটার পেসেন্ট এখনো কেমন আছেন

নার্স:এখন বেটার আছে স্যার

নিহান: ঠিক আছে আপনি এখন আসতে পারেন

নিহানের কথা মতো নার্স নীলার কেবিন থেকে চলে যায় নার্স যেতেই নিহান একটা চেয়ার টেনে নীলার বেডের পাশে বসলো তারপর নীলাকে উদ্দেশ্য করে বললো

নিহান: এখন শরীর কেমন আছে আপনার

নীলা মাথা নিচু করে উত্তর দিলো

নীলা: ঠিক আছি আমি এখন

নিহান আবার ও নিজের চোখের চশমা টা ঠিক করতে করতে বললো

নিহান: আপনি কাল ওতো রাতে প্রেগন্যান্ট অবস্থা য় রাস্তায় কি করছিলেন আরেক টু হলেই তো একটা বড় সড় বিপদ ঘটে যেতো

নিহানের মুখে প্রেগন্যান্ট কথা টা শুনে নীলা চমকে উঠে তারপর নিহানের দিকে তাকিয়ে নীলা বললো

নীলা: না না আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমি প্রেগন্যান্ট হবো কিভাবে আমি তো কখনো মা হতে পারবো না

নিহান এবার একটু নিজের চশমা নেড়েচেড়ে বললো

নিহান: কি আপনি মা হতে পারবেন না মানে৷ কিন্তু আপনার মেডিকেল রিপোর্ট তো বলছে আপনি দুই মাসের প্রেগন্যান্ট

নীলা আবারও বললো

নীলা: কি আপনি সত্যি বলছেন আমি সত্যি ই মা হতে চলেছি

নিহান: হুম আমি সত্যি বলছি আপনি সত্যি ই মা হতে চলছেন

নীলা তারপর নিজের পেটে হাত রাখলো তারপর মনে মনে বললো

নীলা: হে আল্লাহ তুমি যখন আমাকে সন্তান দিলে তবে কেন আর কয়েক দিন আগে আমাকে সন্তান দিলে না তাহলে হয়তো আমার জীবন টা এভাবে তচনচ হয়ে যেতো না এভাবে হয়তো আমাকে আমার নিজের ভালো বাসার মানুষ টা কে হারাতে হতো না

নীলা চুপ থাকায় নিহান বলে উঠলো

নিহান: আচ্ছা আপনি একটু আগে কেন বলছিলেন যে আপনি কখনো মা হতে পারবে ন না

নিহানের কথা য় নীলার ভাবনার সুতো ছিড়লো তারপর নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো

নীলা: দেখুন আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না আপনি আমার কাছে কিছু জানতে চাইবেন না

নিহান: আচ্ছা আপনি যখন বলতে চাচ্ছে ন না তখন আপনাকে বলতে হবে না আপনার বাড়ির ঠিকানা দিন আমি নিজে গিয়ে আপনাকে পৌছিয়ে দিচ্ছি অথবা আপনি আপনার হাসবেন্ডের নাম্বার টা দিন আমি ফোন করে ওনাকে এখানে আসতে বলছি

নিহানের কথা টা শেষ না হতে ই নীলা বলে উঠলো

নীলা: না

নিহান: না মানে

নীলা এবার নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো

নীলা: দেখুন আমি আপনাকে আমার বাড়ির ঠিকানা বা আমার স্বামী র নাম্বার কোনো টা ই দিতে পারবো না

নিহান এবার প্রশ্নবোধক কন্ঠে বললো

নিহান: দিতে পারবেন না মানে আপনি যদি আপনার বাড়ির ঠিকানা বা আপনার হাসবেন্ডের নাম্বার না দেন তাহলে আমি তাদের সঙ্গে কন্টাক্ট করবো কিভাবে

নীলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো

নীলা: কারণ আমি চাই না যারা আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ছে তারা আর আমার বিষয়ে কিছু জানুক

নীলার কথা শুনে নিহান একটু অবাক হয়ে বললো

নিহান: মানে আপনাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ছে মানে

নীলা: দেখুন আপনাকে এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না এটা একান্ত ই আমার ব্যাক্তি গত ব্যাপার দয়া করে আপনি কিছু জানতে চাইবেন না
আর আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানো র জন্য

নিহান কিছু বলছে না চুপচাপ নীলার কথা শুনে যাচ্ছে তারপর নীলা আবারও বললো

নীলা: আচ্ছা আমি এবার আসছি

কথা টা বলেই নীলা যখন ই উঠতে যাবে বিছানা ছেড়ে ঠিক সেই সময়...

চলবে

15/03/2024

#দমকা_প্রেমের_গল্প

#পর্ব_০৩
__________________

" এটা কেমন পাগলামি মুনতাসিম! তুই কি খুঁজছিস বলবি তো? কি এমন জিনিস যার জন্য এতোটা মরিয়া হয়ে উঠলি! আজিব ব্যাপার! ''

কথাটা বলেই লাইব্রেরির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো ইফতেখার আলম। কথাটা কতটুকু মুনতাসিমের কানে গেছে খোদা জানে। আকাশের অবস্থা মুটামুটি খারাপ বললেই চলে। বাহিরে ঝিরিঝিরি বাতাস সাথে ফোটা ফোটা বৃষ্টি।

বাহির থেকে দৃষ্টি এনে পুনরায় মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সে। পেশায় সে একজন উকিল। গত দু বছর যাবত প্রতিবার ই মুনতাসিম এই ভার্সিটিতে আসে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে। এসেই কোন দিকে না তাকিয়ে ই লাইব্রেরি তে ঢুকে বই গুলো উলট পালট করে কিছু খুঁজে। তার কিছু ক্ষন পরেই বেরিয়ে যায়। তবে একটা জিনিস ইফতেখার সবসময় নোটিশ করে মুনতাসিম যতটা উৎকন্ঠা নিয়ে লাইব্রেরি তে প্রবেশ করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার মুখ টা অমাবস্যার মতো আধারে ঢেকে যায়! কিন্তু সে আজও জানে না মুনতাসিম আসলে খোঁজে কি!

মুনতাসিম বেশ কিছু ক্ষন খোঁজার পর কাঙ্ক্ষিত জিনিস টা নজরে আসতেই অধর জুড়ে দেখা মিললো এক ঝলক হাসি। এগিয়ে গেলো সেদিকে। হাত উঁচু করে বইটা নামিয়ে ই অবাক হলো। প্রতিবার ই এসে বইয়ের উপর থেকে এক বস্তা ধুলো পরিষ্কার করতে হয় অথচ আজ কেমন ঝকঝকে পরিষ্কার। তার মানে বইটা কেউ পড়েছে? কথাটা মনে মনে আউড়ে ই চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো! মনে মনে ভাবলো, এ কেমন বাচ্চামি! আবেগের বয়সে একটা না হয় চিঠি লিখেছিলোই! এর জন্য কি এতো পাগলামি কেউ করে! মুনতাসিম আর ভাবলো না।

বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা উল্টাতে ই সাদা রঙের কাগজ টা বেরিয়ে আসলো, প্রতিবার থেকে আজ ব্যতিক্রম দেখে মুনতাসিম আবারো হাসলো। তৎক্ষনাৎ কাগজ টা হাতে নিয়ে বইটা নামিয়ে টেবিলের উপর রাখলো। কাঁপা হাতে কাগজটার ভাজ খুললো, এমন শক্ত ধাঁচের মানুষের এমন আবেগী অবস্থা দেখলে নির্ঘাত জনগণ হার্ট অ্যাটাক করবে।

_________________

" প্রিয় শ্যামপুরুষ,

অদ্ভুত ভাবনা আপনার! কালো কাগজে চিঠি লিখে কি বোঝাতে চাইলেন! এই অত্যাধুনিক যুগে বাস করেও বেনামী চিঠি টা নেহাৎ মন্দ হয় নি! আপনার বাক্যব্যয় বিফলে যায় নি, আপনি সার্থক! সব কিছুর তৃষ্ণা যদি মিটেই যেত তবে তো পৃথিবীতে আকাঙ্খা আর আক্ষেপ শব্দটার উৎপত্তি হতো না, থাক না কিছু তৃষ্ণা অন্তরের অন্তস্তলে। অসুস্থ না হলে তো বোঝাই যায় না সুস্থ তা কি! থাকুক না কিছু অসুস্থতা হৃদয়ে! দেখা হবে না কেন! অবশ্যই হবে।
কোন এক পূর্নিমার আলোয় আমাকে খুঁজে নিবেন নীল শাড়ি পড়া খোলা চুলে
তখন আপনার হাত ধরে পাড়ি দেব দিগন্ত থেকে দিগন্তে, অপেক্ষা করেন ঠিক ততদিনের "

ইতি আপনার অপরিচিত
কৃষ্ণবতী
________________

মুনতাসিম হাসলো, চিঠি টা আবার পড়লো। আবারোও পড়লো। কি অদ্ভুত তার বাচন ভঙ্গি! পকেটে হাত গুঁজে কালো রঙের কাগজ আর সাদা কালির কলম বের করে টেবিলে বসে পড়লো।
মিনিট দুয়েক ভেবে খসখসে কাগজে কিছু একটা লিখে ভাজ করে আবারো বইয়ের ফাঁকে রেখে দিলো। আজ মন টা ভীষণ ভালো, অদ্ভুত কারনেই ভালো।

লাইব্রেরির আরেক প্রান্তে বসে ইফতেখার বই পড়ছিলো, সামনে কেউ বসতেই মাথা তুলে সে দিকেই তাকালো সে। মুনতাসিমের মুখে হাসি দেখে কিছু টা নয় অনেক বেশিই অবাক হলো সে, যেই ছেলেকে বোম ফাটিয়েও হাসানো যায় না কি এমন হলো সে এমনিতেই হাসছে! ডাল মে কুস কালা হায় "

" কি ব্যাপার হাসছিস যে!"

মুনতাসিম ভ্রু কুঁচকে তাকালো,

" অমাবস্যার চাঁদ দেখলি মনে হচ্ছে ইফু "

ইফতেখার বই বন্ধ করে সামনে রাখলো, বিদ্রুপ কন্ঠে বলল,

" অমাবস্যার চাঁদ থেকে ও দুর্লভ বস্তু! "

মুনতাসিম বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল,

" হয়েছে চল বাসায় যাবো, চল উঠ "

ইফতেখার উঠে বইটা বুক শেলফ এ রাখতে রাখতে বলল,

" আমি কোথায় যাবো? "

" কেন আমার বাসায়! "

ইফতেখার ভ্রু বাকালো, ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

" পাগল নাকি! আমি যাবো তোর বাড়িতে! তোর ওই জল্লাদ বাপ চাচাদের সামনে! নো নেভার! কাভি নেহি হো সাকতা! তোর বাপের পুরোপুরি ধারনা তোকে রাজনীতি করতে আমি উস্কেছি! সে তো আর জানে না তার গুনধর পুত্র সেই কলেজ লাইফ থেকেই গুন্ডামী...

মুনতাসিম ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাতেই ইফতেখার দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বললো,

" সরি সরি রাজনীতি হবে! প্রিন্টিং মিসটেক না সরি টাইপিং মিস্টেক হয়ে গেছে। "

মুনতাসিম লাইব্রেরি থেকে বের হতে হতে বলল,

" থাক যাওয়া লাগবে না। তুই থাক আমিই গেলাম, আজ আবার শুনলাম মেধা আসবে। এতো ক্ষনে মনে হয় এসেও পড়েছে। থাক তোর যাওয়া লাগবে না "

ইফতেখার লাফিয়ে উঠে মুনতাসিমের কাধ জাপটে ধরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

" তুই আমার জানে জিগার বন্ধু, তুই তো জানিস কতটা ভালোবাসি তোকে! তুই যখন এতো করে বলছিস আমি ইফতেখার তোর কথা কি ফেলে দিতে পারি! লাভ ইউ দোস্ত! "

বলেই নাক টানার অভিনয় করলো, মুনতাসিম মুখ টা স্বাভাবিক করে বলল,

" আমি এতো বার কখন বললাম? আমি তো জাস্ট একবার বললাম, যেতে চাইলে চল না হলে থাক যাওয়া লাগবে না "

" এই না না যাবো! কে বলল যাবো না! কতদিন আন্টির হাতের রান্না খাই না! চল চল "

বলেই ইফতেখার আগে আগে চলে গেলো। মুনতাসিম বাহিরে আসতেই দেখলো ইফতেখার আর সায়র দাঁড়িয়ে আছে। ভাইকে দেখতেই সায়র এগিয়ে এলো সেদিকে, মুনতাসিমের কাছে গিয়ে লম্বা করে সালাম দিলো,

" আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহী ওবারাকাতুহ ভাইজান "

মুনতাসিম ভ্রু কুঁচকে এক পলক সায়রের দিকে তাকিয়ে গাড়ির দিকে যেতে যেতে বলল,

" অতিভক্তি চুরের লক্ষ্মণ "

মুনতাসিম গাড়ি তে উঠে সাথে সাথেই স্টার্ট দিলো ইঞ্জিন। গাড়ির শব্দ শুনে দুজন তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো গাড়িতে। বলা তো যায় না এই ঘাড়ত্যাড়া টা আবার রেখেই চলে যায়!

প্রায় বিশ মিনিটের মাথায় মুনতাসিমের গাড়ি প্রবেশ করলো একটা বিশালাকৃতির গেইট দিয়ে। চোখ ধাধানো সৌন্দর্য বাড়িটার। পুরনো আমলের জমিদার বাড়ির মতো!

পাথরের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করেই কিছু টা সামনে এগিয়ে গাড়ি টা থেমে গেলো। নেমে এলো মুনতাসিম, তার পিছু পিছু ভাইয়ের লেজ ধরে এগিয়ে এলো সায়র। তার পিছনে ই ইফতেখার।

মুনতাসিম ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই কারো গম্ভীর কন্ঠে পা দুটো থেমে যায় তার।

" কোথায় ছিলে সকাল থেকে? আজ থেকে না তোমার অফিসে জয়েন করার কথা ছিলো! ভুলে গেলে? "

মুনতাসিম ভ্রু কুচকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো মেহেরাব মজুমদারের দিকে। সাদা পান্জাবি আর পাজামা পরিহিত গাল ভর্তি সাদা দাড়ি আর গম্ভীর মুখশ্রী। তার পাশেই বসে আছে তার নিজের বাবা মাহমুদ মজুমদার। আর তার পাশেই কাচুমাচু করছে তার ছোট চাচা মাহফুজ মজুমদার। ইফতেখার ঢুক গিললো, এখন নিজের কপাল নিজেই চাপরাতে ইচ্ছে করছে, জেনে শুনে সিংহের গুহায় পা দিয়েছে সে! সায়র ভাইয়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে ঢুক গিলছে, বড়বাবা যে বেজায় চটেছে তা বোঝার বাকি রইলো না। অথচ যাকে বলল তার ই কোন ভাবাবেগ নেই, সে নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে।

" কি হলো কথা বলছো না কেন? অফিসে যাওনি কেন? বলেছিলাম না আমি?"

মুনতাসিম এক ভ্রু উচিয়ে চুল্কাতে চুল্কাতে নলল,

" পার্টি অফিসে ছিলাম, সেখান থেকে পার্লামেন্টে মিটিং ছিলো। সময় হয় নি অফিস যাওয়ার। আমি তো বলেছিই আমি অফিসে যাবো না, এসবে কোন ইন্টারেস্ট নেই আমার, প্লিজ এসবে আমাকে টানবেন না মিস্টার মেহেরাব মজুমদার, মাই ডিয়ার বড়বাবা"

তৃষা বেগম এগিয়ে এলেন মুনতাসিমের দিকে। মেহেরাব মজুমদারের দিকে তাকিয়ে মুনতাসিমের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

" আহহ কি শুরু করলেন ছেলেটা আসতে না আসতেই!

মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে বলল,

" যা তো বাবা ফ্রেস হয়ে টেবিলে আস, আমি খাবার বাড়ছি"

পুনরায় সায়র আর ইফতেখারের দিকে তাকালো,

" তোমরা ও আসো "

মুনতাসিম মাথা দুলিয়ে বলল,

" যাচ্ছি বড় মা "

বলেই গটগট পায়ে সিড়ি ভেঙে নিজের রুমে চলে গেলো মুমতাসিম। সায়র কাচুমাচু দৃষ্টিতে চার পাশ দেখে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সিঁড়ির দিকে, অমনি পিছনে থেকে কেউ বলে উঠলো,

" এই যে ভাইয়ের চামচা! আপনি ও কি পার্টি ফার্টির অফিসে গিয়েছিলেন নাকি? "

নিজের বাবার মুখে অমন কেস খাওয়া মার্কা কথা শুনে দাঁত দিয়ে জিভ কাটে সায়র। লোকটা আর কেস খাওয়ানোর সময় পেলো না, মুখে অদৃশ্য কিছু গালি আসলেও নিজেকে সামলে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,

" কি যে বলো না বাবা, তওবা তওবা, আসতাগফিরুল্লাহ! কি বলো এসব! আমি করবো রাজনীতি! পাগল নাকি! আমি তো মাত্র ই ভার্সিটি থেকে আসলাম, যাই বাবা ফ্রেস হয়ে আসি "

বলেই সায়র এক রকম দৌড়ে পালালো। ইফতেখার ও পা টিপে টিপে পালিয়ে এসে কোন ভাবে সায়রের রুমে ঢুকে হাফ ছেড়ে বাচলো।

ইফতেখারের অবস্থা দেখে সায়র গা দুলিয়ে হাসলো, বেচারা এতো ভয় পায় তার বাপ চাচাদের। ভয় পাবেই বা না কেন! একেক জন তো একেকটা বাঘ।

মুনতাসিম কেবল মাত্র রুমে ঢুকে অ্যাস কালারের শার্ট টা খোলার জন্য বোতামে হাত লাগালো, হঠাৎ পিছনে থেকে কেউ মিষ্টি স্বরে ধীর কন্ঠে বলল,

" মুনতাসিম ভাই আসবো? "

" নাহ "

রুক্ষ কন্ঠ শুনতে পেয়ে ও মেয়েটার কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না, এ যেনো তার প্রতি দিন কার রুটিন।

রুমে প্রবেশ করেই মিষ্টি হাসলো সে। মুনতাসিম বিপরীত দিকে মুখ করে ই বলল,

" মানা করা সত্যেও আমার ঘরে প্রবেশ করার সাহস তুই কোথায় পেলি মিনু? "

মিনু সহাস্যে উত্তর দিলো,

" তোমার কিছু দরকার মুনতাসিম ভাই? "

মুনতাসিম রক্ত চক্ষু নিয়ে মিনুর দিকে ফিরলো, চোখে মুখে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

" আমার হাতের ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় খেতে না চাইলে এখান থেকে বের হো বেহায়া মেয়ে! এতো বেহায়া মেয়ে কিভাবে হতে পারে মানুষ! ছোট বাবা কি কিছু ই শেখাতে পারলো না তোকে! শিক্ষার অভাব আছে তোর, এই বয়স কত তোর? "

মুনতাসিম ধমকে উঠলো, সাথে ইষৎ কেঁপে উঠলো মিনুও। চোখ দুটো ছলছল করছে তার। কি করবে সে, ভালোবাসে তো এই মানুষ টাকে! যার নামে উনিশ টা বসন্ত পার করেছে এতো সহজে ই কি তাকে ভুলে থাকা যায়!

চোখের কোনে জমে থাকা পানি টা বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছে ত্রস্ত পায়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
মিনু বের হতেই মুনতাসিম মাথার চুল টেনে ধরলো, রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললে বিপদ। খু*ন করলেও হাত কাঁপবে না তার। এই মেয়েটা কেন বোঝে না! সে তো তাকে বোন ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখেই না। কোন অনুভুতিও আসে না!

কি হবে তবে সামনে?

চলবে...

[ কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু ]

15/03/2024

-` এমন একটা বে'হা'য়া নি*র্ল*জ্জ মেয়ে কি-না আমার নিজের মেয়ে, ভাবতেই ঘৃ*ণায় আমার সমস্ত শরীর রি রি করছে। ছিহ্। ওকে জন্ম দেওয়ার আগে ম*রে কেন গেলাম না আমি?

হু'ঙ্কার ছেড়ে উক্ত কথাটি মেয়ের উদ্দেশ্যে বলে ঘৃ'ণায় মুখ ফিরিয়ে নিলেন লাবনী রহমান।

নিজের জন্মদাত্রী মায়ের মুখ থেকে এমন একটা কথা শুনতে হবে এটা কখনো ভাবতে পারেনি মেহরুন। পায়ের তলার মাটি যেন ইতোমধ্যে সরে গিয়েছে তার। একটা বাইরের লোকের কথা শুনে কি-না শেষমেষ অবিশ্বাস করে বসল তার মা সহ তার পরিবারের সবাই!

মেহরুনের করা কী'র্তিকলাপের কথা শুনে বাড়ির উপস্থিত সবার মুখে এখন একটাই শব্দ ছি ছি। আ'গুনে ঘি ঢালার মতো করে লাবনী রহমানকে উ'স্কে দিতে তার সাথে তাল মিলিয়ে নাজিয়া সুলতানা ক'টাক্ষ করে বলে উঠলেন ।

-` দেখলে তো মনে হয় ভাজা মাছটা যেন উলটে খেতে জানেনা। কিন্তু তলে তলে এতোকিছু। আজ না হয় হাতেনাতে ধরা পড়েছে, এর আগে আমাদের দৃষ্টির অগোচরে আরও কত কি করে বেরিয়েছে, তা কে জানে?

ছোট জা এর কথা শুনে আরও বেশি ফুসে ওঠেন লাবনী রহমান। অ'গ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মেহরুনের দিকে।

মায়ের কাছে দৌড়ে গিয়ে হাটু গেড়ে পায়ের কাছে বসে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে মেহরুন। মায়ের হাত দুখানি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের হাতের মুঠোয়। কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলল

-' বিশ্বাস করো মা, আমি কিচ্ছুটি করিনি। ঐ লোকটা তোমাদের যা বলছে সব মিথ্যে সব। বিশ্বাস করো আমায়।

এক ঝটকায় নিজের হাতটা সরিয়ে নিলেন লাবনী রহমান। মেহরুন আরও কিছু বলার পূর্বেই ঠা'স করে থা*প্পর পড়ে তার গালে। রা'গে ফুসছেন তিনি। একটা থা'প্পর মেরে ক্ষ্যা'ন্ত হননি। আরও দু-চারটে থা'প্পর বসিয়ে দিলেন মেহরুনের গালে। ফলে মেহরুনের ফর্সা গালে মুহূর্তেই রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে, সেইসাথে পাঁচ আঙুলের পাঁচটা দাগ দৃঢ়ভাবে বসে যায়।

শক্ত করে মেহরুনের গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে লাবনী রহমান বললেন

-' বিশ্বাস করবো কাকে? তোমায়, যে কিনা বিশ্বাসের মর্যাদাই রাখতে জানেনা।

মেহরুন কাদতে কাদতে আবারও লাবনী রহমানের হাত ছুতে গেলেই তিনি হুঙ্কার ছেড়ে বলে উঠলেন

-` খবরদার ঐ পা'পিষ্ঠ হাত দিয়ে ছোয়ার চেষ্টা করবি না আমায়। আজ থেকে আমার মেয়ে মৃত আমার কাছে। নিজের হাতে এতোদিন যত্ন করে বড় করেছি কি ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করার জন্যে? বে*হায়া, লির্ল*জ্জ, মেয়ে কোথাকার।

মেহরুন হা করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। যে মা তার গায়ে একটা ফুলের টোকা পর্যন্ত পড়তে দেয়নি, একটু কাদলেই যার মন আনচান করত, সবসময় যে মা আগলে রেখেছে। আজ সেই মা-ই তাকে প্র'হার করেছে। ক'টু কথা শোনাতেও যেন দুদণ্ড ভাবছে না তার মা। আর সেই মা-ই তার চোখে জল দেখে আগলে রাখার বদলে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মেহরুনের চোখ ছাপিয়ে এখনও মুক্তর দানার মতো অশ্রু গরিয়ে পড়ছে। এসব দেখেও কি নিষ্ঠুর মনে মায়া হয়না!

দূরে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ যাবত সবটাই পর্যবেক্ষণ করছিল মহামান্য সেই মানুষটি,যার জন্য ক*লঙ্কিত হয়েছে, এমন মিথ্যে অ'পবাদ শুনতে হচ্ছে, যার জন্য আপনজনদের কাছ থেকে এতো ক'টাক্ষের বাণী শুনতে হচ্ছে মেহরুনকে। মেহরুনের কান্না দেখে কি আদৌও মানুষটার মধ্যে কোনো ভাবান্তর ঘটলো, তা বোঝা গেল না তার গম্ভীর মুখশ্রী দেখে। কি চলছে তার মনে?

মেহরুন আর মায়ের পায়ের কাছে বসে না থেকে সেই মহামান্য মানুষটার কাছে ছুটে গিয়ে শক্ত হাতে কলার চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে ক্রু*দ্ধ গলায় বলে উঠে

-' কেন মি'থ্যে অপবাদ দিলেন আমার নামে মিস্টার আব্রিশাম খান আদ্রিশ? কেন আমার থেকে আমার পরিবারকে আলাদা করতে চাইছেন আপনি? আমার চরিত্রে ক*লঙ্কের দাগ দিলেন কেন? আপনি সবাইকে সত্যিটা বলে দিলেই তো সব মিটে যেত, তাহলে মিথ্যের আশ্রয় কেন নিচ্ছেন? কি লাভ হচ্ছে এতে আপনার? কি হলো চুপ করে আছেন কেন আপনি? আমার প্রশ্নের জবাব দিন।

দোতলার করিডোরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে আদ্রিশ। মেহরুনের দিকে ফিরে মুখটাকে পুনরায় গম্ভীর করে নেয় সে। শক্ত হাতে মেহরুনের হাত চেপে ধরে কলার থেকে ঝা'ড়ি মেরে সরিয়ে দেয় হাতটা। কলার ঝেড়ে মেহরুনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল

-` তোমার কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নয় এই আব্রিশাম খান আদ্রিশ। কথাটা মাথায় থাকে যেন মিস মেহরুন ইবনাত। অন্যথায় কি হবে সেটা কিন্তু আমি নিজেও জানিনা। আর হ্যাঁ নেক্সট টাইম আমার কলার ধরার সাহস দেখাতে আসবে না। ফল যে খুব একটা সুখকর হবেনা, সেটা বুঝতেই পারছ।

মেহরুনের চোখে এখনও অশ্রু টলমল করছে। অশ্রু সিক্ত নয়নে একরাশ ঘৃ'ণা নিয়ে আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

-` আপনার কারনেই আমার পবিত্র আত্মা ক*লুষিত হয়েছে আজ। শুধুমাত্র আপনার কারণে সবাই অ'বিশ্বাস করছে আমায়। আপনার প্রতি এতোদিন যে শ্রদ্ধাবোধটুকু ছিল, তা আজ ঘৃ'ণায় পরিণত হয়েছে। আই জাস্ট হেইট ইউ মিস্টার আব্রিশাম খান আদ্রিশ।

মেহরুনের দিকে তাকিয়ে শুধু স্মিত হাসে আদ্রিশ। তবে আদ্রিশ হতে কোনো উত্তর মেলে না আর।

ওদের দুজনকে আড়ালে কথা বলতে দেখে আবারও মাঝখান দিয়ে ফোড়ন কেটে নাজিয়া সুলতানা অর্থাৎ মেহরুনের চাচি বলে উঠলেন

-` দেখো ভাবি, তোমার মেয়ে আবারও ঐ ছেলেটার সাথে যেন কিসব বলছে। এতো বড় একটা পা*প করার পর, মায়ের হাতে চড় খেয়েও মেয়েটার মনে কোনো ভ'য়, ড'র বা ল*জ্জা বলতে কিছু নেই। ছি, কি বে'হায়া মেয়ে রে বাবা!

নাজিয়া সুলতানার কথায় যেন আরও তে'তে উঠলেন লাবনী রহমান। তিনি নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছেন না। যতই রা*গ দেখাক, ভেতরে ভেতরে তিনি গু'মড়ে ম*রছেন, নিজের মেয়ে বলে কথা, শত হোক ফেলে তো আর দিতে পারেন না। যে মেয়েকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছেন, বিশ্বাস করেছেন, সেই মেয়ে-ই তাকে এভাবে ঠ*কাতে পারলো? এটা মানতে ভীষণ ক'ষ্ট হচ্ছে তার। কোনো মা কি আদৌ পারে নিজের মেয়েকে নিয়ে এমন ক'টু বাক্য শুনতে? সেখানে তো তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। তিনি নিজেকে এ মুহূর্তে কিভাবে সামলাবেন তা জানা নেই তার।

ক্লান্ত লাগছিল বলে চোখের পাতাটা একটু লেগে এসেছিল, হঠাৎ বাড়িতে এতো হৈ হুল্লোর চিৎকার চেচামেচি শুনে ধরফড়িয়ে উঠে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে আসেন মেহনত আকবর।

সিড়ি বেয়ে মেহনত আকবরকে নামতে দেখেই দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরল মেহরুন। বাবার বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। কাদতে কাদতে ইতোমধ্যে তার নাকের ডগা লাল হয়ে গিয়েছে। নাক টেনে টেনে বলল

-` সবাই অবিশ্বাস করলেও, তুমি অন্ততপক্ষে বিশ্বাস করো আমায়। বিশ্বাস করো, তোমার মেয়ে এমন নি'কৃ'ষ্ট কাজ করতে পারেনা বাবা।

মেহনত আকবর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তিনি আসলে বুঝতে পারছেন না, এখানে হচ্ছেটা কি। তবুও শান্ত গলায় বললেন

-` কি হয়েছে মা? তুমি কাদছো কেন এভাবে? আর এতো হৈ হুল্লোড় হচ্ছে কেন বাড়িতে?

মেহরুন কিছু বলার পূর্বেই নাজিয়া সুলতানা পাশ থেকে বলে উঠলেন

-` বড়ভাই, এই মেয়ে যা করেছে তা মুখে আনার মতো না। ছি কি ল*জ্জা কি ল*জ্জা!

ভ্রু কুচকে ফেলেন মেহনত আকবর। হঠাৎ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুকের দিকে নজর পড়তেই তিনি বলে উঠলেন

-` আদ্রিশ বাবা তুমি এখানে?

এগিয়ে আসে আদ্রিশ। মুখে তার হাসির রেখা স্পষ্ট। অতলস্পর্শী ডাগর চক্ষুদ্বয়ে কি যেন এক ভাবের খেলা চলছে, তা বোঝার সাধ্য নেই!

কণ্ঠ কিছুটা খাদের নামিয়ে মেহনত আকবরের উদ্দেশ্যে আদ্রিশ বলে উঠল

-' আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল। আপনাকে কিছু বলার আছে আমার।

-' ওয়ালাইকুমাস সালাম। তো বলো কি বলবে?

-' আপাতত সবার সামনে আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না আমি।

তিনি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে আদ্রিশকে নিয়ে বাগানের দিকে চলে যান।

ওদের চলে যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রয় মেহরুন। কারও মুখে এখন যেন রা টিও নেই। রুমের মাঝে এখন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। এ যেন বড় কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস!

কিছুক্ষণ বাদে দুজনেই এসে হাজির হয়। দুজনের চোখ মুখ দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। মেহনত আকবর কিছুক্ষণ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মেহরুনের দিকে। তিনি এ মুহূর্তে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন।

মেহনত আকবর কি ভাবছে বা সামনে কি করবে তা বোঝা মুশকিল। অন্যদিকে আদ্রিশের অধরের কোণে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।

দোতলার করিডোরে রেলিং এ হাত রেখে এতোক্ষণ যাবত সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করছিল। সবটা দেখে যেন আগন্তুকটির প্রাণ জুড়িয়ে যায়। প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে কুটিল হাসল সে। মেহরুনকে এ বাড়ি থেকে ঘাড় ধা'ক্কা দিয়ে বের করতে পারলে তবেই তার শান্তি মিলবে।

#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা(লেখিকা)
#পর্ব১

#চলবে~

আসসালামু আলাইকুম। প্রায় ছয়-সাত মাস পর লেখালেখিতে পুনরায় মনোনিবেশ করলাম। এতোদিন লেখালেখি থেকে দূরে থাকার কারণে হয়তো লেখায় ভুলত্রুটি হতে পারে, তাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আপনাদের রেসপন্স আমার অনুপ্রেরণা। তাই সবাই আগের মতো রেসপন্স করবেন। হ্যাপি রিডিং~

15/03/2024

“অরিন! অরিন দাঁড়াতে বলেছি আমি। তুমি যদি এক সেকেন্ডের মধ্যে না দাঁড়াও তাহলে কিন্তু আজ আর বাড়িতে যেতে পারবে না। এবার ভেবে দেখো কি করবে”

অরিনের পা থেমে গেলো। কলেজ ব্যাগটা শক্ত করে চেপে ধরলো সে। সে বুঝতে পারেনি আজ তাকে এমন পরিস্থিতিতে পরতে হবে। কেনো যে সে এই জল্লাদের সামনেই পরলো আজ। বলিষ্ঠ পুরুষটি তার সামনা সামনি এসে দাঁড়ালো। অরিন মাথা নিচু করেই রইলো। অরিন তার থেকে বেশ খাটো হওয়ায় পুরুষটি ঝুঁকে বলল,,,

“আমার থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে না অরিন রানী, তাই চেষ্টা করে লাভ নেই।”

অরিন এবার চোখ তুলে তাকালো। পুরুষটিকে এক প্রকার হুমকি দেওয়ার সুরে বলল,,,“সমস্যা কি আপনার? আপনি আমায় এতো জ্বালান কেনো? রাস্তায় মেয়ে দেখলেই বিরক্ত করতে ইচ্ছে করে?”

ধূসর নামক পুরুষটি হাসলো। এরপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,
“রাস্তায় সব মেয়ে দেখলে বিরক্ত করতে ইচ্ছে করে না। শুধু তোমাকে দেখলে বিরক্ত করতে ইচ্ছে করে আর সাথে আরো অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে”

ধূসরের কথা শুনে অরিন বিরক্ত হলো। বিরবির করে বলল,,“অসভ্য লোক”

“কি বললে শুনিনি আবারও বলো মেয়ে। আর আজ এতো সাহস কোথা থেকে পেলে বলো তো। তুমি তো আমার দিকে তাকাও ই না আবার আজ হুমকি দিচ্ছো”

“এমপির ছেলে হয়ে মাথা কিনে নিয়েছেন?সহ্যের সীমা লঙ্ঘন করবেন না দয়া করে।”

“মাথা কেনো কিনবো কিনলে পুরো তুমিটাকেই কিনে ফেলবো বুঝেছো মেয়ে”

“পথ ছাড়ুন বাড়ি যেতে হবে আমার। আমার পরিবারের লোকজন চিন্তা করবে দেরি হলে”

ধূসর দুষ্টুমি করে বলল,,,
“তুমি চাইলে আমি বাইকে করে পৌঁছে দিয়ে আসতে পারি”

“আমার দু'টো পা আছে এবং আমি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতোই চলাফেরা করতে পারি। তাই আপনার বাইকে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”

অরিন হাঁটা ধরলো কথাগুলো বলে। ধূসর মৃদু হাসে। মেয়েটাকে রাগাতে তার একটু বেশিই ভালো লাগে। একটু না অনেক বেশিই ভালো লাগে। বাইকের কাছে এসে বাইকে উঠে বসলো। মেয়েটাকে একা সে ছাড়বে নাহ। তার প্রিয় জিনিসে কেউ চোখ তুলে তাকাক এই বিষয়টা তার পছন্দ না। তার জন্যই অরিনের পিছু পিছু সে প্রতিদিন তার অগোচরে বাড়ি অব্ধি যায়। মেয়েটা কিছু কারণ বসত তাকে পছন্দ করে নাহ। তবে সেই কারণগুলো আজও সে উদ্ধার করতে পারলো না। অরিন মাথার ওড়না টেনে মাথা নিচু করে হেঁটে চলেছে। ধূসর হাসলো। এই মেয়েটাও না কি কোন এক সময়ে চঞ্চল হরিণীর ন্যায় ছুটে বেড়াতো। সে সব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।

অরিনকে তার নিজ বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে ধূসর স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বাইক ঘুরিয়ে নেয় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। ভার্সিটিতে আজ সব বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিবে। তবে সে আজ দেরি করে ফেলেছে। কিছুক্ষণ বাদে ভার্সিটিতে পৌঁছে যায় ধূসর। বাইক রেখে বন্ধুদের দিকে এগিয়ে যায় সে। কাছাকাছি আসতেই ধূসরের প্রিয় বন্ধু উমেদ এসে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে ফিসফিস করে বলল,,,

“ভাবিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিস ঠিক মতো?”

ধূসর উমেদকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“কেমন আছিস সবাই?”

বন্ধু মহলের একজন বলে উঠে,,,“ধূসর আমাদের তিনদিন আগেই দেখা হয়েছে তুই এমন ভাবে বলছিস যেনো আমাদের যুগ যুগ ধরে দেখা হয় না”

ধূসর নুরার কথা শুনে হেসে বলল,,,
“তেমন কিছু না। বল কেমন আছিস সবাই?”

উমেদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ধূসরের দিকে। ছেলেটার মতিগতি সে বুঝে উঠতে পারে নাহ। সে তো বেশ ভালো মতোই জিজ্ঞেস করলো কথাটা তবে ধূসর তা সুক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে গেল। সবাই একে একে ধূসরের প্রশ্নের জবাব দিলো। ধূসরদের বন্ধু মহলের সদস্য ৬ জন। চার জন ছেলে আর দু'জন মেয়ে। উমেদ,ধূসর নাফিজ, ফাহাদ,নুরা আর স্নিগ্ধা। সবাই খুব ভালো বন্ধু।সদ্য মাস্টার্স শেষ করেছে তারা। ফাহাদ বিষাদময় কন্ঠে হুট করে শুধালো,,

“নদীর বিয়ে হয়েছে শুক্রবার”

সবাই হতবিহ্বল হয়ে তাকালো ফাহাদের পানে। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো পাঁচ জোড়া চোখ। নদী তাদের থেকে বছর একের জুনিয়র। খুব ভালো মেয়ে বলেই জানতো সবাই। ফাহাদের সাথে দু'বছরের সম্পর্ক। এতো ভালো মেয়ে,ছেলেদের সাথে কথা বলতো না তার এমন কাজে যে শুনবে সেই হতভম্ব হয়ে যাবে। উমেদ নিরবতা ভেঙে বলল,,

“কি বলছিস ফাহাদ? মজা করছিস তুই আমাদের সাথে?”

ফাহাদ বিষন্ন কন্ঠে শুধালো,,
“মজা কেনো করবো উমেদ। এই ব্যাপারটা মজার না। সত্যি নদীর বিয়ে হয়েছে এবং ও নিজেও রাজি ছিলো”

ধূসর এবার মুখ খুললো। রাগে তার চোখ জোড়া লাল হয়ে গিয়েছে। ছলনা,ধোঁকা জিনিসটা সে পছন্দ করে না। নিজেকে সামলে গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,
“তুই আগে কেনো বলিসনি আমাকে। ওই মেয়েকে তুলে নিয়ে আসতাম দরকার হলে”

“জোর করে ভালোবাসা হয় না। আমি যাকে ভালোবাসি সেই তো আমাকে চায় না। জোর করে রাখতে আমি চাই না। হয়তো সে আমার ভাগ্যে ছিলো না”

নুরা শান্তনা দিতে বলল,,“তুই মোটেও কষ্ট পাবি না ফাহাদ। ওই মেয়েটা তোকে ভালোই বাসে তবে তুই কেনো কষ্ট পাবি। জানি আমি যতো সহজে বলতে পারছি ব্যাপারটা এতোটাও সহজ নয়। তবে তুই চেষ্টা কর নিজেকে সামলে নেওয়ার। আল্লাহ হয়তো এর থেকে উত্তম কিছু রেখেছে তোর জন্য।”

ফাহাদকে কিছু সময়ের জন্য হলেও এই বিষাদময় স্মৃতি থেকে সরাতে চাইলো বন্ধুমহল। হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠলো সবাই মিলে। স্নিগ্ধা মুগ্ধ চোখে কেউ একজনকে দেখতে লাগলো। গত কয়েক বছর ধরে সে মানুষটাকে এক পাক্ষিক ভালোবেসে আসছে তবে বন্ধুত্বের খাতিরে বলে উঠতে পারলো না নিজের মনের কথা। তাই আজও লুকিয়ে লুকিয়েই দেখে যেতে হচ্ছে ভালোবাসার মানুষটিকে। অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। আদেও পাবে কি তাকে? কে জানে!

-

“কি রে মা আজ দেরি হলো যে কলেজ থেকে আসতে?”

অরিন জুতো জোড়া খুলে একপাশে রেখে বাড়িতে প্রবেশ করলো। ব্যাগটা পুরোনো সোফাটার উপর রেখে মায়ের কাছে আসলো অরিন।মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,,
“আজকে একটু লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম আম্মা তাই দেরি হয়েছে। হায়াত কোথায় ও স্কুল থেকে ফিরেনি?”

অরিন না চাইতেও মিথ্যা বলে ফেললো। অরিনের আম্মু অরুনি শেখ মেয়েকে বললেন,,
“হায়াত এখনো আসেনি। তুই বরং যা একটু বিশ্রাম নে। তারপর খেতে আয়। আবার তো বিকালে টিউশনি আছে”

অরিন সম্মতি জানিয়ে নিজের ছোট্ট রুমটায় আসলো। পর্দার ফাঁকা দিয়ে রোদ এসে পরছে ছোট্ট ঘরটায়। ঘরের বড় জানালা ঘেঁষে একপাশে কাঠের ছোট্ট একটা টেবিল। তার উপর গুটি কয়েক বইখাতা সাজানো, একটা খাট এবং একটা ছোট সাইজের আলমারি। খুব পরিপাটি করে গুছানো। অরিন নিজের কাঁধের ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে ঘরে রাখা দেওয়াল ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। প্রায় একটা বাজে। ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে পর্দা টেনে শুয়ে পরলো। তার এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। চোখ বন্ধ করতেই ধূসরের করা কাজের কথা মনে পরলো তার। তবে তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলো অরিন। কিছুক্ষণ ঘুমানো প্রয়োজন তার।

-

গোধুলি রাঙা বিকাল। ভার্সিটিতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে বাড়ি ফিরছে ধূসর এবং উমেদ। উমেদ একটা বাইকে আর ধূসর আরেকটা বাইকে। সারাটা দুপুর বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিয়েছে, দুপুরেও খেয়েছে ভার্সিটির ক্যান্টিনে। উমেদ প্রচুর বিরক্ত নিজের বন্ধুর খামখেয়ালি আচরণে। ছেলেটার মন বুঝে উঠতে পারে না। কখন কি করে বুঝতে পারলো না এতো বছর এক সাথে থেকেও। হঠাৎ ধূসর বাইক পাশাপাশি এনে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

“এখন তুই সোজা বাড়ি যাবি। আন্টি আমাকে ফোন করেছিলো। তোর ফোন কোথায়? ফোন কি সাইলেন্ট করে পকেটে রাখার জন্য কিনেছিস! বাসায় যাবি এখনই আমি তোকে রাতে ফোন করে নিবো যা এখন”

“কিন্তু ধূসর আমার তো তোর সাথে কিছু কথা ছিলো!”

“রাতে শুনবো তোর সব আজাইরা কথা এখন বাড়ি যা”

ধূসর উমেদকে আর কথা বলার সুযোগ দিলো না বাইকের গতি বাড়িয়ে নিজ গন্তব্যে চলে গেলো। গন্তব্য এখন তার নিবেদিতা। খবর পেয়েছে তার নিবেদিতাকে নাকি কিছু ছেলে মিলে কয়েকদিন যাবত জ্বালাচ্ছে। সেই খবরই নিতে যাচ্ছে। তার জিনিসে চোখ তুলে তাকানোর ফল যে খুব একটা ভালো হবে না তা সবার জানা উচিত। গন্তব্যে পৌঁছে দেখলো এলাকার কিছু বখাটে অরিনের দিকে বাজে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। অরিন যথেষ্ট শালীনতা বজায় রেখে চললেও ছেলেগুলোর বাজে দৃষ্টিতে দেখছে।

রাগে ধূসরের শরীর কাঁপছে। তবে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলো। নিজেকে শান্ত করার বৃথা প্রচেষ্টা করলো। অরিন ততক্ষণে কোচিং সেন্টারে প্রবেশ করেছে। ধূসর মনে মনে পরিকল্পনা করে ফেললো ছেলেগুলোকে কিভাবে শিক্ষা দিবে। তাই এখন শান্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে হাসলো। এরপর প্রিয় নারীর মুখটা কল্পনা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,,,

~❝আকাশ তোমার বুকে যেমন চাঁদের বসবাস তেমনি আমার
বুকের বাঁ পাশটায় আমার নিবেদিতার বসবাস।❞~

#চলবে~

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আপনাদের পছন্দের জুটি ধূসর-অরিনকে ফিরিয়ে আনলাম নতুন ভাবে। আগের গল্পের সাথে কোনো মিল নেই। চরিত্র গুলোও এখন আলাদা আলাদা। কেমন হয়েছে জানাবেন।অনেক দিন পরে লিখেছি খাপছাড়া হতে পারে। তার জন্য আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ।

15/03/2024

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৫৯

ইরফানদের টিনের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে পাকা বাড়ির সন্ধান পেয়েছে অপূর্ব। পাকা বাড়ির চারদিক ইটের তৈরি হলেও ওপরে টিনের চাল। নিচটাও পাকা। অপূর্ব আরুকে নিয়ে সেই ভিলায় বসবাসের আগে টুকিটাকি জিনিস কিনে নিয়েছে। খাট কেনার ইচ্ছে থাকলেও অর্থের কারণে সম্ভব হয়নি। তবে তোশক, বালিশ ও কম্বল কিনেছে।
তিনটা দিন পেরিয়ে গেছে ইতোমধ্যে। আরুও আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। চেম্বারে যাওয়ার আগে সবকিছু গুছিয়ে গিয়েছিল অপূর্ব। তাই বাড়িতে ফিরে কষ্ট করতে হলো না তাকে। জামাকাপড়ের ব্যাগটা আরুকে দিয়ে নিজে নিল পাখিকে। তাদের জন্য অপেক্ষারত রিকশা। ইরফানের কাঁধে হাত রেখে অপূর্ব বলল, "বিপদের দিনে যেভাবে আমাদের উপকার করলে। তা আমি কখনো ভুলতে পারব না ইরফান।"

"সেভাবে কিছুই করলাম না।"

"আর কয়েকটা দিন থেকে নাহয় ঘর ভাড়া নিতেন।" মিতা বলল।

"যেহুতু আলাদা থাকতে হবে, তাই দেরি না করাই ভালো। আমি সব সামলে নিতে পারব।" কথাটা বলে মিতার সাথে গভীর আলিঙ্গনে ব্যস্ত হলো আরু। এই সাড়ে তিন দিনে মায়া জন্মে গেছে মিতার প্রতি। অতঃপর এগিয়ে গেল রিকশার দিকে। আরু হাত দিয়ে টা টা দিতেই অপূর্ব বলল, "আসি, তোমরা সুযোগ পেলেই চলে এসো।" পরপর রিকশাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলল, "মামা আস্তে আস্তে চলেন।"

অপূর্ব, আরু ও পাখি চলল তাদের গন্তব্যে। ভবিষ্যত বাসস্থানে, পরিবার ছেড়ে চলার লড়াই শুরু করতে। ভারি গলায় শ্বাস টেনে মিতা বলল, "আমার ঘরটা ফাঁকা হয়ে গেল। হঠাৎ করে এসে মায়া লাগিয়ে দিয়ে গেল।"

"কোনো কাজ না থাকলে তুমি ওদের কাছে চলে যেও। কাছেই! পাঁচ মিনিটের মতো লাগবে। বাবু আর ব্যাগের জন্যই রিকশায় গেছে।" স্মিত হেসে মিতার হাত ধরে ঘরের দিকে পা বাড়াল ইরফান। বাড়িতে ফিরলে পাখির কান্না বড্ড মিস করবে ইরফান।
__
খোলামেলা বাড়িটা, বাইরে রং না থাকলেও ভেতরের রং খসে বিশ্রী অবস্থা। বাড়িটার ভেতরে তিনটা ঘর। একটা ঘরে আরও একজন ভাড়াটে থাকলেও বাড়ি দুটো খালি ছিল এতদিন। অপূর্বের চলাফেরা শৌখিন। একটি ঘরে কি তাকে মানায়?
আরু দরজার ছিটকিনি খুলে দেখল, অপূর্ব ইতোমধ্যে জিনিসপত্র সাজিয়ে রেখেছে। দেয়ালের সাথে ব্যাগটা ঠেস দিয়ে রেখে ভেতরে ঢুকে ঘূর্ণন দিল আরু। আবেগপ্রবণ হয়ে বলল, "অপূর্ব ভাই আপনি কি জানেন, এটা আমার সংসার?"

"এটা আমাদের সংসার।"

"তা বুঝলাম, খুব ক্ষুধা লেগেছে। খাবার রান্না করতে হবে?"

"বিরিয়ানি নিয়ে এসেছি। রাতে এগুলো খেয়ে পার করব। কাল শুক্রবার, কালকে বাজার করে নিয়ে আসব। তুই বস, আমি পানি নিয়ে আসি।" কথাটা বলে স্টিলের কলসটা নিয়ে বের হয়ে গেল অপূর্ব। ছোট পরিসরে কলতলা কিছুটা দূরে‌ অবস্থিত। টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া। দরজা খুলে পা রাখতেই পিছলে গেল পা। স্টিলের কলসটা মাটিতে পড়ে শব্দ তুলে চলে গেল বহুদূরে। দ্রুত টিন ধরে নিজেকে স্থির করল‌ অপূর্ব। জং ধরা টিনে খানিকটা কেটে গেল হাতের করতল। লক্ষ করল শেওলা জমে পিচ্চিল হয়ে আছে জায়গাটা। আরুর পড়ে যেতে সময় লাগবে না। কলতলা থেকে বের হয়ে একটা ইটের টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে এলো অপূর্ব। এক পাশে থাকা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ঘষে ঘষে শেওলা তোলার চেষ্টা করতে লাগল। তার এই কাজ শেষ হতে আধ ঘণ্টার বেশি লাগল। ততক্ষণে ভিজে জবুথবু সে। কলসটা ধুয়ে পানি নিয়ে ঘরে গেল। সামনে রেখে বলল, "ব্যাগ থেকে আমার জামাকাপড়গুলো বের করে দে।"

"হ্যাঁ! দিচ্ছি। কিন্তু কথা হচ্ছে আপনার গায়ে শেওলা আসল কীভাবে?"

"শেওলা জমে ছিল কলতলায়। পা পিছলে পড়ে গেছি। যদি পড়ে তোর দাঁত ভেঙে যায়, তাই পরিষ্কার করে এলাম। বেশিক্ষণ ভেজা থাকলে ঠান্ডা লাগবে, তাড়াতাড়ি জামাকাপড় দে।"

আরু জামাকাপড়ের ব্যাগ থেকে অপূর্বকে একটা ফতুয়া ও লুঙ্গি বের করে দিল। অপূর্ব ফের সেই পথেই পা বাড়াল। যেহুতু আর ফিরে যাচ্ছে না আহসান বাড়িতে, তাই নিজেদের ব্যবহারের উপযোগী পোশাক কিনে নিয়েছে। আরু বিরিয়ানিগুলো থালায় পরিবেশ করে অপেক্ষা করে অপূর্বর জন্য। মিনিট পাঁচ পর কাঁপতে কাঁপতে অপূর্ব এলো ঘরে। দরজা খোলার সাথে সাথে দমকা হাওয়া ছুঁয়ে দিল আরুর দেহ। গর্জন করল আকাশ। কৌতূহল নিয়ে আরু বলল, "বাইরের অবস্থা ভালো না। ইদানীং থেমে থেমে প্রচুর বৃষ্টি হয়।"

"সাগরে ঘুর্নিঝড় উঠেছে। সেই কারণেই বৃষ্টি হচ্ছে। আরও দুদিন এমন আবহাওয়া থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।"

"আচ্ছা, আমার যদি ডানা থাকতো। কতই না ভালো হতো। আমরা ডানায় ভর দিয়ে মধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে চলে যেতাম। শীতের সময় চলে যেতাম সূর্যের কাছাকাছি। কী মজা হতো তাই না!"

"পাখি? তুই হচ্ছিস রূপবতী নারী। তোর মতো নারী আমি দেখিনি। যদি তুই পাখি হতিস, তাহলে তোর রূপে মুগ্ধ হয়ে শিকারিরা তোকে ধরে নিয়ে যেত। আমৃত্যু বন্দি থাকতি লোহার খাঁচায়।"

বৃষ্টিহীন প্রকৃতি। গাছের পাতায় দু এক ফোঁটা পানি জমে আছে। ভেজহীন রোদ উঁকি দিয়েছে আকাশে। পাখিকে কোলে নিয়ে পিঁড়িতে বসে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ রোদ শুষে নিচ্ছে মা মেয়ে। অপূর্ব বাজার করতে বের হয়েছে।
আরুদের পাশের ঘরেও আছে এক দম্পতি। বিয়ের ছয় বছর চলছে তাদের। দুজনেই কর্মজীবী। একটা মেয়ে আছে, তবে সে থাকে দাদির সাথে অজপাড়া গাঁয়ে। মেয়েটির নামও শেফালী। আরুকে রোদ পোহাতে দেখে এগিয়ে এসে বসল তাদের পাশে। পাখির চোয়াল ধরে আদুরে গলায় বলল, "মিষ্টি একটা মেয়ে। দেখতে অবিকল তোমার মতো হয়েছে।"
তোমার কোনো কাজ থাকলে ওকে আমার কাছে দিয়ে, করতে পারো।"

মেয়েটির কথায় আরু সন্তুষ্ট হলেও দ্বিরুক্তি করল। অপরিচিত একটা মেয়ের কাছে নিজের মেয়েকে রেখে যাওয়া ঠিক হবেনা। আরুর না বলা বাক্য বুঝে নিল শেফালী নামের মেয়েটা। জোর করে পাখিকে আরুর কোল থেকে নিজের কোলে নিয়ে বলল, "তুমি কাজ করো, আমি ওকে নিয়ে তোমার পাশে পাশে ঘুরব। ও হ্যাঁ! বলাই তো হয়নি। আমার নাম শেফালী।"

শেফালী নামটা শুনেই মেয়েটির প্রতি আরুর মনে সৃষ্টি হলো বিশ্বাস। এই নামটা যে তার অতি প্রিয়। পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, "আপনি ওকে কোলে নিয়ে পাঁচ মিনিট কষ্ট করে বসুন। আমি ঘরটা গুছিয়ে আসছি।"

বলেই চঞ্চল পায়ে ঘরে এলো আরু। ঘরের কাজ সেরে উঠতেই অপূর্ব বাজার নিয়ে ফিরল। বাজারের থলে বাইরে রেখে ঘরে এলো। আচমকা কেউ পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরল মেয়েটাকে। খানিক ভরকে গিয়ে পিছু ফিরে অপূর্বর হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে হ্রাস পেল ভীতি। ভেংচি দিয়ে বলল, "এত এত খুশি কেন?"

"বলছি, পাখিকে দেখলাম পাশের বাড়ির আপুর কোলে। এই সুযোগে হবে নাকি?" অপূর্বর ইঙ্গিত বুঝতে বেগ পেতে হলো না আরুর। নাক কুঁচকে বলল, "ছি! কী কথা! পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ নেই বলে আমার মনে ভালো নেই। এদিকে তিনি এক্কা দোক্কা খেলতে এসেছেন।"

"আমার মন ভালো। ফুফার সাথে দেখা হয়েছে বাজারে।"

"কখন?"

"অবশ্যই বাজারে গিয়েছিলাম তখন। অয়নের মিলাদের জন্য জিলাপি কিনতে এসেছিস। কাকতালীয়ভাবে দেখা হয়ে গেছে।"

"আমার ভাইটা নেই, ভাবতেই পারিনা।"

আরুকে নিজের দিকে ফিরাল অপূর্ব। জড়িয়ে ধরে বলল,
"এত ভাবিস না। চল, রান্না করবি। আমি পাখিকে নিয়ে তোর পাশাপাশি ঘুরব।"

_
সময় দুইটা ছুঁইছুঁই। রোদ্দুর খাঁ খাঁ করছে গ্রামে। মোতাহার আহসান সহ বাকিরা নামাজ শেষে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। একদল মুসলিমও নামাজ শেষে জিলাপি হাতে নিয়ে বাড়িতে ফিরছে। অনেকটা দূরে যেতেই পেছন থেকে এক মুসলিম ডাকল, "চেয়ারম্যান সাহেব, দাঁড়ান।"

সবাই দাঁড়াল। নামাজ আদায় থেকে শুরু করে কিছুক্ষণ মোতাহার আহসানকে কিছু বলার চেষ্টা করছিল। তবে সুযোগ হয়ে উঠেনি। কাছাকাছি এসে বলল, "ভাই, একটা কথা ছিল। আমার ছেলে বিয়ের পর বউয়ের কথা শুনে। আমার সাথে ও আমার স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করে। তাই আমরা চাই আলাদা থাকতে। আমার ছেলে যাতে মাসে মাসে কিছু টাকা দেয়। এই ব্যবস্থাটা করে দিতে পারবেন?"

"ছেলের থেকে আলাদা হবে কেন? আমি একবার তোমার ছেলের সাথে কথা বলে দেখি। ফের যদি ও দুর্ব্যবহার করে তাহলে তুমি আলাদা হয়ে যেও। ছেলের কাছে হাত পাততে হবে না। আমি তোমার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড বানিয়ে দিব। যে ছেলে তোমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে না, তার জিনিস না খাওয়াই ভালো।"

"আচ্ছা।"

আরেকজন মুসলিম যাচ্ছিল সেখান দিকে। ফিসফিস ও ব্যঙ্গ করে বলল, "চাচা, তুমি কার কাছে বিচার চাইছ? যে নিজেই তার ছেলে ও বৌমাকে তাচ্ছিল্য করেছে? তার ছেলেই তো আলাদা থাকে।"

অস্ফুট স্বরে বললেও শোনা গেল কণ্ঠস্বর। মোতাহার আহসান দ্বিরুক্তি না করে সবাইকে নিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন। অস্থিরতা কাজ করছে ভেতরে ভেতরে। হাত দিয়ে হাওয়া করতে করতে বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল। রোয়াকে বসে বললেন, "কাল পর্যন্ত কেউ আমার সাথে এভাবে‌ কথা বলেনি। আজ সামনাসামনি বলছে। আমি বোধ হয় সত্যি বিচার করতে অক্ষম হয়ে গেছি।"

"ভাইজান, বাদ দাও তার কথা। একটু খুঁত পেল অমনি তার সারাজীবনের কাজ নিয়ে খোঁটা দিল।"

"আমি আর চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াব না। বয়সের কারণে সঠিক বিচার করতে ভুলে গেছি আমি। অপূর্বকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে লম্বা একটা বিরতি নিল।" মোতাহার আহসান বললেন। পরপর বললেন, "অনি, আমার জন্য এক গ্লাস তেঁতুল নিংড়ানো পানি নিয়ে এসো। প্রেসার বাড়ছে।"

মুহূর্তের মাঝে উদাসীন হলেন তিনি। তেঁতুল পানি আনার সময়টুকুও দিলেন না অনিতাকে। ঢলে পড়লেন বাবার বুকে। ধরাধরি করে ঘরে নিয়ে গেল তাকে। বিছানায় রেখে হাত পা ম্যাসাজ করতে লাগল। তেঁতুলের পানিটা খাইয়ে অনিতা বলল, "কী হলো হঠাৎ? ভালো মানুষটা নামাজ আদায় করতে গেলেন। কেউ একটু ডাক্তারকে খবর দাও।"

"একজন মানুষ ভাইজানকে বিচার নিয়ে খোঁটা দিয়েছে, সেটা‌ নিয়ে ভাবতে ভাবতে প্রেসার বাড়িয়ে ফেলেছেন।" ছোটো ভাই বলে।‌

মেজো ভাই ডাক্তারকে কল করতে গেলেন। ফ্যান ছাড়া থাকার পরেও ঘামছেন চেয়ারম্যান। পারুল বালতিতে করে পানি নিয়ে আসতেই অনিতা কেড়ে নিল তা। রাগান্বিত গলায় চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, "শান্তি হয়েছিস তুই? তাহলে ঘরে গিয়ে বসে থাক। আমার স্বামীর মাথায় তোকে পানি দিতে হবেনা।"

"এভাবে কেন বলছ ভাবি?"

"কীভাবে বলব তাহলে? নিজের সংসার তো শেষ, এবার আমার সংসারের দিকে তোর নজর পড়েছে। আমার নাতির বয়স পাঁচ দিন। অথচ আমি ওকে দেখতে পারিনি। তোরজন্য আমার ছেলে, বউ, নাতনি দূরে চলে গেছে। এই অবধি আমি ঠিক ছিলাম। তবে আজ? আজ যদি আমার স্বামীর কিছু হয়, তাহলে আমার থেকে খা/রা/প কেউ হবেনা।" আঙুল তুলে কথাটা বলে স্বামীর মাথায় যত্নে পানি দিতে লাগল অনিতা। পারুল ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিক। এই সবকিছুর জন্য আসলেই সে দায়ী। আজ যদি মোতাহার আহসানের কিছু হয়ে যায় বাবা মাকে মুখ দেখাতে পারবে না। এই সংসারটা তাকেই ঠিক করে দিতে হবে। তারপরে নিজের ভাঙা সংসারে ফিরে যাবে। টোনাটুনির সংসার হবে শুধু!

চলবে.. ইন শা আল্লাহ

আর মাত্র দুটো পর্ব। তিন পর্বেও হতে পারে।
কালকে রাতে চাইলেই দিতে পারতাম। ৯৭৫ শব্দ লেখা ছিল। তাই সকালে ১৫০০ করে তবেই দিলাম।

Want your business to be the top-listed Grocery Store in Barishal?
Click here to claim your Sponsored Listing.

Videos (show all)

Death note x light yagami🖤
Rain x zara zara ☘️🌼🥀✨

Category

Telephone

Website

Address


Karim Kutir
Barishal

Other Food & Grocery in Barishal (show all)
Badon Md Badon Md
আমি তোমাকে ভালবাসি
Barishal

নিজেকে ভালবাসতে শিখো 😔

One Side Love One Side Love
Barishal

Masud Grocery Store Masud Grocery Store
Uottor Mashang, Wzhirpur
Barishal, 8222

Rice, Dal, Oil, Shaban, Milk, Biscuits, Cakes, Chips, Chocolates etc are available in our shop.

ೄྀ࿐ 𝐽𝑎𝑛𝑛𝑎𝑡 ˎ-ೄྀ࿐ ˊˎ- ೄྀ࿐ 𝐽𝑎𝑛𝑛𝑎𝑡 ˎ-ೄྀ࿐ ˊˎ-
Barishal

প্রেমিকার কাজল চোখে আমি জীবনের স্বপ্ন সাজাই রোজ। 🌺 S🫶J

MD Riyad Sheikh MD Riyad Sheikh
Mirpur 7
Barishal, 019352781R+A

Mithun Mandal Mithun Mandal
Barishal, 8522

Ismail Ullah rafi Ismail Ullah rafi
Bhola
Barishal

তুমি সফলতা খুজে নাও� ভালোবাসা তোমায় খুঁজে নেবে�

Dipration Boy Dipration Boy
Barishal
Barishal

Attitude Boy

Mayan Gallery Mayan Gallery
Barishal, 8224

Trïshâ Trïshâ
Barishal