Ainan adapts stories
I stopped posting original stories because they keep getting stolen. So, now, I adapt stories!
আমি অত্যন্ত দুঃখিত। ব্যক্তিগত কারণে আমি "তদন্ত" গল্পটি সময় মতো লিখতে পারিনি।
এই গল্পটি "৮০০টি" কিংবা "কথাহীন আলাপ" গল্পগুলোর মতো সাড়া না পেলেও, যেই কয়েকজন গল্পটি পছন্দ করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
আমি ইনশাআল্লাহ গল্পটি ঈদুল আজহার মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করবো।
আবারো, আমি দুঃখিত।
রাত সাড়ে তিনটা বাজে।
পড়তে পড়তে খিদা লাগায় নারায়ণ অধিকারী পরোটা খেতে বের হয়েছে। এজন্য, হোস্টেলের গার্ডকে একটা সিগারেট ঘু*ষ দেয়া লেগেছে। এত রাতে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়াতে তাকে একা বের হতে হয়েছে। কালকে পেশাগত পরীক্ষার শেষ দিন। সে মেডিকেল স্টুডেন্ট। সন্ধ্যায় না পড়ে ফোনে প্রেম করায় এখন তাকে রাত জেগে পড়তে হচ্ছে।
বিশ্বরোডের পাশের ফুটপাথ ধরে সে পরোটার দোকানের দিকে এগোচ্ছে। বাইরে ভালোই কুয়াশা আর ঠান্ডা পড়ছে। সে তার কান টুপিটা ভালো মতো নিচের দিকে টেনে নিলো। তার কাছে পঞ্চাশ টাকা রয়েছে। পরোটা দশ টাকা করে হলে আর ডিম ভাজি পনেরো, এর থেকে বেঁচে যাওয়া টাকা এবং তার রুমমেট থেকে পাওনা বিশ টাকা মেলালে কালকের সকালের বেন*সনটার চিন্তা করতে হবে না। মাসের শেষের দিক বলে তাকে এভাবে হিসাব মেলাতে হচ্ছে। সে তার মা কে বলে বাবার থেকে টাকা চাইতে পারে। কিন্তু, সে চায় না। তার বাবা অনেক বড় মানুষ। অন্য মানুষের তার বাবার প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখে নিজের বাবার প্রতি তার ভীতি জন্মেছে অনেক আগেই। এজন্য, বাবার সামনে যেতে সে ভয় পায়। মাস শেষ হলে সে কিছু বলে না। তার মা নিজেই তাকে টাকা পাঠিয়ে দেন।
হঠাৎ, তার মনে হলো যে পেছন থেকে সে আরেক জোড়া পায়ের শব্দ শুনছে। সে সাথেসাথে থেমে গিয়ে পেছনে ফিরলো। না, কেউ নেই। সে সামনে তাকালো; ফুটপাথ খালি। এই মুহূর্তে রাস্তায় একটাও গাড়ি নেই। তার গা কাঁটা দিয়ে উঠলো। এত রাতে একা বের হওয়াটা ঠিক হয়নি। দূরে গাড়ির হেডলাইট দেখা যাচ্ছে। সে দ্রুত পা ফেলা শুরু করলো। তার মন বলছে, আলোতে গেলে সে সুরক্ষিত থাকবে। তবে, সে বেশি এগোতে পারলো না। মুহূর্তে মধ্যে তিনটা জিনিস একত্রে ঘটলো। শুকনো পাতায় হাঁটার শব্দ পাওয়া গেলো, অন্ধকার থেকে লাফ দিয়ে এসে একটা রুমাল ধরা হাত তার মুখ চেপে ধরলো এবং হাতের উপরি অংশে ধারালো শুই ফুটিয়ে দিলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নারায়ণ জ্ঞান হারালো।
-স্যার, এটা আপনার জন্য।
রেমিন গিফট পেপারে মোড়ানো ছোট একটা চারকোণাচে প্যাকেট কমিশনার এল. আখতারের হাতে তুলে দিলো।
-এটাতে কি?
-স্যার, একটা টাই এবং একটা টাই পিন।
-বলে দিলা কেন? গিফট পেপারে মোড়ানোর কোনো অর্থই রইলো না। বলেই যেহেতু দিবা, এটা খালি হাতে দিলেও কোনো পার্থক্য হতো কি?
রেমিন অপ্রস্তুত হাসি দিলো এবং মনে মনে বললো, "আপনেই তো জিজ্ঞেস করলেন!"
এখন, রাত নয়টা বাজে। সে কমিশনারের বাঙলোতে। তারা এখন রান্নাঘর কাম খাবার ঘরে রয়েছে। আখতার স্যারের বয়স পয়তাল্লিশ, গড়ন ছিপছিপে। বয়সের তুলনায় উনাকে বয়স্ক দেখায়। স্যার কথা বললে মনে হয় তিনি রেগে আছেন।
তিনি রেমিনের সাথে কথা বলছেন এবং রান্না করছেন।
-রান্না করাটা একটা আর্ট, বুঝেছো? এই আর্টটা আমি আগে আবিষ্কার করলাম না কেন, এ নিয়ে আফসোস হয়। তোমার ম্যাডাম অসুস্থ হয়ে পড়াতে আমি রান্না করা শুরু করি। তখন থেকে নিজের হাতের রান্না ছাড়া খেতে পারি না।
-জি, স্যার।
রেমিন একবার ভেবেছিলো জিজ্ঞেস করবে ম্যাডামের কি অসুস্থতা। পরে আর করলো না। প্রথম সাক্ষাতে এত ব্যক্তিগত প্রশ্ন করাটা বেয়াদবি হবে।
-আমি নিজেই বাজার করি, বুঝেছো? খাওয়া-দাওয়া হলো শৌখিন জিনিস। কাজেরলোককে এই কাজে ইনভল্ভ করা উচিত না। এরা এই জিনিসের মর্মই বোঝে না।
-জি, স্যার।
-তুমি এত আন-ইজি ফিল করছো কেন? খালি "জি স্যার, জি স্যার" করছো। শাইনেসের কিছু নেই। আমাকে তোমার বাবার মতো মনে করবা! বাসায় গেলে স্যার তোমার বাবা আর এখানে আমি। সো, নো শাইনেস!
-না স্যার, শাই না!
-তোমাকে আমি যখন শেষ দেখেছিলাম, তুমি এইটুকু ছিলে। কত বড় হয়ে গিয়েছো! কত সুন্দরী। মা শাহ আল্লাহ। আমার ছেলেটা বেঁচে থাকলে তোমার বয়সী হতো। স্যার কে বলে তোমাদের বিয়ে ঠিক করতাম।
রেমিন ভেবে পাচ্ছে না তার কি লাজুক হওয়া উচিত নাকি বেদনা প্রকাশ করা উচিত। সে একটা অদ্ভুত চাহুনি দিলো। দুই অনুভূতি মিলে তার চেহারায় এই চাহুনি এসেছে।
কথোপকথনের বিষয় পাল্টানো দরকার। সে বললো,
-স্যার, আপনি কি রান্না করছেন?
-ওহো, এটা?... Sous Vide Tongue and sizzling। জানি না উচ্চারণটা হলো কি না। কিন্তু, বানানটা জানি। আমার রেসিপি বুকে দেয়া আছে।
-স্যার, আপনার রান্নার গন্ধ জিভে পানি এনে দিচ্ছে, মা শাহ আল্লাহ!
-তাই? আমার একটা সিক্রেট রেসিপি আছে। তোমাকে বলবো না। খাবারের ঘ্রাণ যতটা ভালো তার থেকে দশ গুণ ভালো এর স্বাদ। জাস্ট বিকজ অফ দ্যাট রেসিপি!
-কি বলেন স্যার? আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।
রান্না শেষে স্যার উনার কিচেন এপ্রোন খুলে ফেললেন। এপ্রোনের নিচে তিনি শার্ট, প্যান্ট ও স্লিভলেস সোয়েটার পড়ে ছিলেন। উনার পায়ে পলিশ করা জুতা চকচক করছে। মেয়েটা অবাক হলো। লোকটা রান্নাকে ঝামেলা মনে করেন না। বরং, তিনি লোকজনকে নিজের রান্নার প্রক্রিয়া দেখাতে পছন্দ করেন। উনাকে রাঁধতে দেখা এক মন্ত্রমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা।
-মা, টেবিলে বসে পড়ো। ডিনার রেডি।... তো বলো, তোমার বি*ষ কি?
-বি*ষ, স্যার?
-আরে মানে, কি ড্রিং*ক করবা? আমার কাছে শে*রি, জি*ন, ভদ*কা, বোর*বন আর ওয়া*ইন আছে।
-সরি, স্যার। আমি ড্রিং*ক করি না।
-সত্যি?
-জি, স্যার।
-তুমি সিরিয়াসলি ড্রিং*ক করো না, নাকি আমার সামনে ভদ্র সাজছো? আই টোল্ড ইউ টু রিলাক্স, গার্ল! আমাকে ভয় পাচ্ছ কেন?
-না, স্যার! আমি সত্যিই ড্রিং*ক করিনা, স্যার!
-আচ্ছা তাইলে, তুমি গিয়ে ফ্রিজে দেখো। একটা কোক থাকার কথা। আমি ভদ*কাটা বের করি। এটা না খেলে আমার খিদা লাগে না।
স্যারের প্রত্যেকটা ডিসের প্রেসেন্টেশন মাস্টার শেফের থেকে কম না। লেটুস, কুচিকুচি গাজর এবং টমেটোর চাটনি দিয়ে প্রত্যেকটা খাবারে ডিসাইন করেছেন তিনি। রান্না করা জিহবাটা লেটুস দিয়ে মোড়ানো। তা কাঠি দিয়ে আটকানো। কাঠির মাথায় জলপাই দেয়া। এর চারিদিকে টুকরো টুকরো ভাজা গোশত। রেমিন খাবারের প্লেটগুলোকে কাছাকাছি রেখে ছবি তুললো। স্যার তার উৎসাহ দেখে খুশি হলেন। কিন্তু, তার রান্নার ছবি সামাজিক মাধ্যমে দিতে মানা করে দিলেন।
-একেকটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে উপলব্ধির ব্যাপার। একজন লোক বাসায় বসে টিভিতে কাবা শরীফ বা মক্কা-মদিনা যতই দেখুক না কেন, সচক্ষে না দেখলে বা অনুভব করলে কখনোই এর মর্ম বুঝবে না। সেইম কথা এই ক্ষেত্রেও।
রেমিন স্যারের কথা শুনে আসতে করে তার মোবাইল পার্সে রেখে দিলো।
-তুমি কি আবার ভয় পেয়ে গেলা নাকি আমার কথা শুনে?
-নাহ, স্যার!
-সমস্যা নেই। তুমি ছবি তুলো। জাস্ট কোথাও আপলোড করো না।
স্যারের রান্না আসলেও চমৎকার। বিশেষ করে মাংসটা। মাংসের স্বাদ যে এমন হতে পারে তা রেমিনের জানা ছিল না। সে তৃপ্তির শব্দ করে বলে উঠলো,
-স্যার, মনে হচ্ছে জীবনে প্রথমবার আমিষ খাচ্ছি! অনেক মজা হয়েছে!
আখতার স্যার তার খুশি দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিলেন। হাসিটা কেমন জানি। উনার চেহেরার সাথে যাচ্ছে না।
-তো বলো, স্যারের কি অবস্থা?
-স্যার, আলহামদুলিল্লাহ, পাপা ভালো আছে। অবসরের পর বেশি কিছু করেন না। কয়েকটা জায়গায় ইনভেস্ট করেছেন। এই-ই। আর স্যার, আসা করি, আমি এখন চাকরি করে পাপার বোঝা একটু হলেও কমাতে পারবো।
-না, না। তুমি এগুলা নিয়ে ওয়ারি করো না। তুমি চাকরি না করলেও স্যার দিব্বি চলতে পারতেন। উনার সুবিধা কি জানো? স্যার ভালো মানুষ হওয়ায় অনেক লোককে চেনেন। এজন্য, পুরা ক্যরিয়ারে উনি অনেক বন্ধু বানাতে পেরেছেন। যার পেশাগত ভালো বন্ধু আছে, তার সব আছে।
এভাবেই তো উনার আমার সাথে পরিচয়। ইনডাকশন নাকি কোপারেশন নাম ছিল ট্রেনিংটার, আমরা আর্মিদের থেকে নিতাম। সেখানে দেখা হয় স্যারের সাথে। স্যার ট্রেনিং অফিসার ছিলেন। স্যার আমাকে অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন। আমি উনার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। এজন্য, তোমার প্রতি আমার দায়িত্বটাও বেশি।
-স্যার, আপনি আমার জন্য যা যা করেছেন। আমি আজীবন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।
-এই কথা কখনো মুখেই আনবা না। এরকম আমাদের লাইন অফ ওয়ার্কে অহরহ হয়। কত ফালতু লোক এর অ্যাডভান্টেজ নেয়। আর, তুমি তো ভালো মানুষ; কোয়ালিফায়েড এন্ড ডিজার্ভও করো। যাক। কিরকম লাগছে পুলিশ লাইফ? সবাই ভালো আচরণ করছে তো? আমি তাদেরকে বলে দিয়েছি। কেও কোনো রকম স্টুপিডিটি করলে আমার কাছে সাথে সাথে রিপোর্ট করবা!
-জি স্যার, না স্যার! সবাই ভালো আচরণ করছে।
-গুড। এস পি কোনো ঝামেলা করছে না তো?
- না, স্যার। স্যার অনেক ভালো।
-হুম। অতউ ভালো না। ধুরন্দর একটা লোক। তার সাথে চোখ কান খোলা রেখে চলবে। জানো নাকি, সে কিন্তু ছুটি নিয়ে চলে গেছে?
-ছুটি?
-হ্যা। তোমার অবাক হওয়া দেখে বুঝতে পারছি যে সে তোমাকে কিছুই হ্যান্ডওভার করে যায়নি নিশ্চই?
-না, স্যার।
-জানতাম। সে ছুটি থেকে আসুক। তার বি*চিতে চাপ না দিলে সোজা হবে না। ইন দা মিন টাইম, স্টেশনের ফুল রেসপনসিবিলিটি তোমার। কোনো কিছু না বুঝলে আমাকে কল দিবা। কালকে সকাল সকাল গিয়ে সব গুছিয়ে নিবা। আমি তোমাকে টি ব্রেকের পর কল দিবো।
-জি, স্যার।
-আমাদের মেইন কোর্স তো শেষ। কাস্টার্ডটা ফ্রিজ থেকে বের করি তাইলে। তুমি লিভিং রুম থেকে দাবার সেটটা নিয়ে আসো। তুমি খেলতে পারো তো?
-জি, স্যার।
-তাইলে নিয়ে আসো। খাই আর খেলি।
রেমিন ড্রয়িং রুমে ঢুকে অনেকগুলো কেস ফাইল খোলা পড়ে থাকতে দেখলো। একটা কেস ফাইলের পাসে দুটো আলপিন রাখা। আলপিনে লাইটের আলো পড়ায় উজ্জ্বল আলোর প্রতিবিম্ব হচ্ছে। প্রতিবিম্ব চোখে পড়ায় সে আলপিনগুলো খেয়াল করলো। সে আলপিন থেকে চোখ সরিয়ে দাবার বোর্ডটা খুঁজলো। ওটা সেন্টার টেবিলের নিচে পেলো সে। দাবার জিনিসগুলো নিতে নিতে সে দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলো দেখে নিলো। তার খারাপই লাগলো। স্যার ও উনার স্ত্রীয়ের সাথে উনাদের বাচ্চার ছবিও টাঙানো। ছেলেটা কিভাবে মারা গেলো? মারা যাওয়ার সময় তার বয়স কত ছিল? আর, ম্যাডামের অসুস্থতাটা কি? এ সবকিছু জানতে মন চাইছে।
কিচেন কাম ডাইনিং রুমে ঢুকে সে আখতার স্যারকে ফোনে রাগারাগি করা অবস্থায় দেখলো।
-এদেরকে জেলে ঢুকাবা স্ট্রেইট! আরেকবার যদি একই কমপ্লেইন শুনি তাইলে আমি তোমার বি*চি সবার আগে ছিঁড়বো! আর, আমাকে এগুলা নিয়ে ফোন দিসো কেন? এই জিনিস প্রথমে আমাকে জানানোর কথা?... এসপি নাই তো কি হইসে? এএসপি নাই? তাকে ফোন দেয়া যায় না?!... ঠিক আছে। ওকে এখন ফোন দেয়া লাগবে না। কালকে সকালে তাকে অফিসে ফুল রিপোর্ট দিবা।
স্যার ফোন রাখার পর সে জিজ্ঞেস করলো,
-কি হয়েছে স্যার?
-ঐযে কয়েকটা বারবার কমপ্লেইন দেয় যে সরকারি হসপিটালে তাদের বাচ্চা মে*রে ফেলসে। ঐটা নিয়ে। তুমি এটা হ্যান্ডেল করবা। যারা কমপ্লেইন দিচ্ছে, অল আর ক্রিমিনালস। সবগুলাকে জেলে ভোরবা! ব্লা*ডি ক্রিমিনালস!
স্যারকে ঠান্ডা করতে দুই বাটি ঠান্ডা কাস্টার্ড, দাবায় তিনবার চেকমেট এবং ওয়া*ইন লাগলো। উনি যখন একটু হাসি হাসি এবং হালকা মাতাল হলেন, রেমিন প্রশ্ন করার সাহস পেলো।
-স্যার, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো। কিছু মনে করবেন না তো?
-না, মা, বলো।
-স্যার, বেয়াদবি মনে করবেন না। আপনে বলেছিলেন ম্যাডাম সিক। ম্যাডামের কি হয়েছে তা জানতে পারি?
তার থেকে চোখ সরিয়ে লোকটা দাবায় রানীর দিকে তাকিয়ে দম ধরে বসে রইলেন বেশ কিছুক্ষণ।
-তোমার ম্যাডাম আমাদের বাবুটা মারা যাবার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অফিস করে বাসায় তো আমি প্রায় পুরা দিন থাকি না। কাজের লোক পারছিলো না। তাই, তাকে তার মায়ের বাসায় পাঠিয়ে দেই। কিছু কিছু দিন, সে সুস্থ থাকে। তখন, সে এই বাসায় আসে। আমি চেয়েছিলাম আগের সব স্মৃতি সরিয়ে ফেলতে। ছবি, জামা-কাপড় এমনকি বাসাও পাল্টাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ও দিবে না। তাও, লাভ কি? এখানে এসে থাকলে তার অসুস্থতা বাড়ে।...
এল. আখতার স্যারের এই উত্তরের পর বাকি সময়টা সম্পূর্ণ নীরবতায় কাটলো।
নারায়ণের জ্ঞান ধীরে ধীরে ফিরছে। তার মাথার উপরে অতি উজ্জ্বল কয়েকটা বাতি চোখ ঝলসিয়ে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। কিছু মুহূর্তেই সে অনুভব করলো যে তার মাড়ির পাটিতে অনেকগুলো দাঁত নেই। প্রচন্ড ব্যথায় সে চিৎকার দিলো। সাথে সাথে একটা সিরিঞ্জ দিয়ে তার হাতের উপরের অংশে ইনজেকশন পুশ করা হলো। এবারও, ঠিক আগের মতো সে জ্ঞান হারালো।
চলবে...
গল্প: তদন্ত।
পর্ব: ২
লেখক: আইনান মুহসেনিন সাইফ সানি।
(বানান ও ব্যাকরণ ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এই গল্পের রেমিন চরিত্রটা আমার লিখা "৮০০টি" এবং "ব্লগ" গল্পেও উপস্থিত ছিল।)
বাচ্চাটা বড় বড় অবাক চোখে চারিদিক দেখছে।
কিছুক্ষণ আগে চোখ ফুটেছে তার। ছোট্ট একটা মানুষ। নবজাতকের কাছে হাসপাতালের এই সাদামাটা কক্ষটাই আশ্চর্যময়। বাবুটা গোলাপি কাপড় দিয়ে মোড়ানো। তার চারপাশে তার মতো আরো অনেক নবজাতককে গোলাপি বা আকাশি কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে আলাদা আলাদা বেবি কটে। তাদের মা-দের এখনো চিকিৎসা চলছে। ভালোমতো জ্ঞান ফিরলে, ওদের নিয়ে যাওয়া হবে এখান থেকে। তখন, ক্যাঙারুর বাচ্চার মতো তারাও মায়ের নগ্ন চামড়ার স্পর্শে উষ্ণতা পাবে। বাচ্চাগুলোর মধ্যে কেউ কেউ কাঁদছে, কেউ কেউ ঘুমাচ্ছে। কিন্তু, আমাদের বাবুটা অবাক হয়ে তার নতুন দুনিয়াটা দেখছে।
হঠাৎ করে কক্ষের কাঁচের দরজাটা খুলে গেলো। বাইরে থেকে দুইজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টর ঝগড়ার আওয়াজ ভিতরে এলো। বাবুটার মনোযোগ কিছুক্ষণের জন্য ওদিকে গেলেও সে আবার তার দুনিয়ায় হারিয়ে গেলো। বেবি রুমে একজন মহিলা ঢুকেছে। মহিলার গায়ে এপ্রোন, মাথায় বড় ঘোমটা আর মুখে মাস্ক। বাইরের মানুষগুলা কথা কাটাকাটি করতে গিয়ে মহিলার এই কক্ষে প্রবেশ খেয়াল করেনি।
বাবুগুলা যাতে ফেরত যাওয়ার সময় ভূল জায়গায় না চলে যায়, এজন্য প্রত্যেক কটে তাদের পিতামাতার নাম লেখা হয়েছে। মহিলাটা এই নাম দেখতে দেখতে এগোচ্ছে। সে আমাদের বাবুটার কটে ওর বাবা-মার নাম দেখে থেমে গেলো।
মহিলার চোখগুলো রাগে কুঁচকে গেলো। রাগের সাথে তার চেহারায় কিছুটা দুঃখও রয়েছে। বাবু তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। সে তার পার্স থেকে কি যেন একটা বের করলো। জিনিসটায় লাইটের আলো পড়ায় উজ্জ্বল আলোর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এই প্রতিবিম্ব দেখে বাবুটা অবাক হয়ে বড় বড় চোখে এবার ওটার দিকে তাকিয়ে রইলো। খুবই খারাপ একটা জিনিস ঘটতে যাচ্ছে; শিশু হ*ত্যা।
নভেম্বরের ঘন কুয়াশা ঢাকা পথ দিয়ে ফগ লাইট ছাড়াই বাসটা তেড়ে যাচ্ছে রাজধানীর দিকে। রেমিন জানালার পাসের সিটে বসে রয়েছে। বাসা থেকে রওনা দিতে দেরি হয়ে গিয়েছে তার। আম্মি ছাড়তেই চাচ্ছিলো না। সে কি কান্নাকাটি! পাপাও বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলো। সে এর আগেও বাসা ছেড়ে দূরে থেকেছে। পড়ালেখা করার সময় ছয় বছর তো সে হোস্টেলেই কাঁটালো। এই গত এক বছর অবশ্য বাসাতেই থেকেছে সে। এই এক বছরে আম্মি এতটা আবেগী হয়ে যাবে, এটা সে আন্দাজ করতে পারেনি। কিছু করার নেই। কালকে তার নতুন চাকরির প্রথম দিন। সরকারি চাকরির প্রথম দিনেই সে অনুপস্থিত থাকতে চাচ্ছিলো না। আর, ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে ভ্রমণ করে অজানা জায়গায় এসে প্রথম দিনের ডিউটি ধরা তার পছন্দ হচ্ছিলো না।
রওনা দেয়ার আগে পাপা বলেছিলো যে দেরি যেহেতু হয়ে গিয়েছে, ড্রাইভার পৌছিয়ে দিক। সে মানা করেছে। প্রথম দিনে নিজস্ব গাড়ি নিয়ে হাজির হলে অনেকে "নাক উঁচু বড়োলোকহানামী" মনে করতে পারে। মানুষের কাছে "ফার্স্ট ইম্প্রেশন"টা সে ভালো করতে চাচ্ছে। এটা হলো নিজস্ব গাড়ি দিয়ে না যাওয়ার প্রথম কারণ। দ্বিতীয় কারণটা হলো, হঠাৎ কখন কি দরকার লেগে যায় বলা যায় না। পাপাম্মির বয়স হয়েছে। সব জিনিস নিজে নাও করতে পারতে পারে। তখন দেখা যাবে বাসায় সেও নেই, ড্রাইভারও নেই আর গাড়িও নেই। এই সিদ্ধান্তে পাপাকে একটু চিন্তিত দেখাচ্ছিল। তবে, রেমিন আশ্বাস দিয়ে এসেছে উনাকে। যেই চাকরি সে করতে যাচ্ছে, ওটার জন্য যেহেতু সে প্রস্তুত সেহেতু একলা রাতে ভ্রমণ করাটা সামান্য ব্যাপার।
বাস যাত্রার এক ঘন্টা পার হওয়ার পর, তার মনে হলো যে তার পাপার চিন্তা করাটা যথাযথ ছিল। তার পিছের সিটে বসে থাকা লোকটা বারবার তার পাশাপাশি দুই সিটের ঘাড়ের মাঝে ফাঁকা অংশ দিয়ে তার দিকে উঁকি দিচ্ছে। প্রথমে সে খেয়াল করেনি। পরে, তার মাথার ওড়না ঠিক করার সময় সে প্রথমবার লোকটার কারবার খেয়াল করলো। একবার ভাবলো লোকটাকে কিছু একটা বলে লজ্জা দিবে। পরে, নিজেকে থামালো সে। এসমস্ত লোককে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে লাভ নেই। এদেরকে ধরিয়ে দিতে হয়। সে আরেকবার এমন করুক, সবার সামনে তাকে শায়েস্তা করা হবে।
এর পরের বার লোকটার দুরসাহস যেন বেড়ে গেলো। সে একটা নিকৃষ্ট কাজ করে বসলো। বাসের সিটের বসার এবং হেলান দেয়ার দু'টা অংশের মাঝে অল্প একটু জায়গা থাকে। ঐ ফাঁকা জায়গার ভেতর দিয়ে লোকটা হাত ঢুকিয়ে রেমিনকে স্পর্শ করলো।
বাস টার্মিনালে কনস্টেবল হাসেম দাঁড়িয়ে রয়েছে। আজকে নতুন এ. এস. পি. (অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারইন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ) আসবেন। থানা থেকে তাকে এএসপির রানার হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। এজন্য সে এখানে অপেক্ষা করছে।
এই এএসপি পদে বি.সি.এস করে এসে ঢুকে। নতুন স্যার খুব সম্ভবত আগে অন্য লাইনে ছিলেন। ওখানে ভালো না করতে পেরে এই লাইনে এসে পড়েছেন। এস. পি. সাহেব এ নিয়ে বেশি খুশি না। উনি চাচ্ছেন না এই নতুন এএসপি কিছুতে অংশগ্রহণ করুক। কেস হ্যান্ডলিং সবার আগে করতে দিবেন না। উনি এই নতুন এএসপির পোস্টিং পেরিফেরিতে করানোর ব্যবস্থা করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, কমিশনার স্যারের মানা ছিল। উনার পরিচিত এই নতুন এএসপি। এসপি এজন্য সরাসরি না পারলেও পরোক্ষভাবে নতুন এএসপিকে "সাইজ" করবেন। থানার সবাইকে বলে দিয়েছেন এই অফিসারকে যতটা সম্ভব কম খুশি করতে। তাছাড়া যে যার স্বাভাবিক দায়িত্ব তা পালন করবে।
তবে, হাসেমের এসব নিয়ে বেশি চিন্তা নাই। উপর মহলের কথা নিয়ে ভাবলে তার মাথা ব্যথা করে। কিন্তু, এগুলা নিয়ে আড্ডা দিতে তার আবার ভাল্লাগে। অদ্ভুত মানুষ সে। কিন্তু, ভালো মানুষ।
বাস টার্মিনালে এসে বাসটা থামলো রাত নয়টার দিকে। বাসের ভিতর থেকে হৈচৈ শুনে হাসেম এগিয়ে গেলো। বাসের দরজা দিয়ে কম বয়সী একজন নারী একজন পুরুষের কলার ধরে তাকে নামাচ্ছে।
-নাম তুই! নাম!!!
-আস্সালামুআলাইকুম, স্যার! আমি কনস্টেবল হাসেম।
-হাসেম? একে গাড়িতে তুলো এক্ষনি! থানায় নিয়ে চলো।
বাসের সিঁড়ি থেকে কলার দিয়ে ঝুলতে থাকা লোকটা এখনো বুঝতে পারছে না যে কি হচ্ছে। সে না বুঝতে পারছে যে এই নরম-শরম মেয়েটার শরীরে এত শক্তি কি করে, না বুঝতে পারছে হাসেমকে দেখে যে অপরাধ হয়ে যাওয়ার পূর্বে পুলিশ এসে হাজির কিভাবে?!
রাত এগারোটার দিকে পুলিশের গাড়ি সরকারি বাসার সামনে এসে থামলো। পুলিশদের ফ্যামিলি কোয়ার্টার নম্বর চারের নিচ তলার ডান পাসের এপার্টমেন্টটা রেমিনের। আন-ম্যারিড হয়েও ফ্যামিলি কোয়ার্টারে জায়গা পেয়েছে সে শুধু কমিশনার স্যারের জন্য। মালপত্র ঘরে ঢুকাতে ঢুকাতে সে হাসেমকে জিজ্ঞেস করলো,
-তুমি আমাকে চিনলে কি করে?
-স্যার, গতকাল আপনার সাথে ফোনে কথা বলার পর আপনাকে ফেসবুক রিকোয়েস্ট পাঠাইছি।
বিশাল এক দাঁতলা হাসি দিলো হাসেম।
-লিও রাজকুমার মেসি তোমার আইডি?
-জি, স্যার! আর্জেন্টিনা ওয়ার্ল্ড কাপ জিতার পর এই নামটা দিসি। আর প্রোফাইল পিকচারে মেসি যে কাপ চুমা দিয়ে রাখসে, ঐটা দিসি। (আবার এক দাঁতলা হাসি।) পরের ওয়ার্ল্ড কাপ পর্যন্ত রাখবো।
-নিজের পরিচয় গোপন রেখে সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা কিন্তু সাইবার ক্রাইম, জানো তো?
ছেলেটা বিশাল এক হাসি দিলো। রেমিন ঘরে আনা লাগেজ খালি করা শুরু করলো। বাকি জিনিসপত্র ভেতরে ঢুকাতে থাকলো হাসেম। সবকিছু গাড়ি থেকে ঘরে আনার পর, হাসেম লাজুক হাসি দিয়ে কথা বলা শুরু করলো,
-স্যার, আপনার ইউনিফর্ম আলমারিতে রাখছি। ফ্রিজে পানি আছে আর বাথরুমে সাবান তয়েলা সবকিছুর ব্যবস্থা করসি। কালকে সন্ধ্যায় মশার ওষুধ ছিটাইসি। স্যার, এখন বলেন, রাতের খাবার কি খাবেন? হোটেলে বলে রাখসি। তারা এক্ষনি বানায় দিবে! আমি নিয়ে আসবো।
-না। এটা দরকার নাই। আমি বাসাতেই খাই। এখন তো চারিদিকে দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তুমি বরং হোটেলে গিয়ে যদি ডিম আর পেঁয়াজ মরিচ পাও, কিনে নিয়ে আসো। আমার সাথে পাউরুটি আছে। আমি ঘরেই ভেজে খাবো।
-না, না, স্যার। এটা হয়েই না! আমি স্পেশাল বিরানি নিয়ে আসবো, স্যার!
-শুনো, ব্যাটা! আমি বাইরের খাবার কম খাই! কালকে প্রথম দিনে আমি পেট খারাপ নিয়ে অফিস করতে চাচ্ছি না। চাকরিতে আমি সুস্থ অবস্থায় যেতে চাই।
ছেলেটার বোধহয় মন খারাপ হলো।
-আচ্ছা, স্যার।
-শুনো, ওখান থেকে লবণ আর তেলও এনো একটু। আর হ্যা, এটা নাও।
সে এক হাজার টাকার একটা নোট ধরে রয়েছে।
-না, না, না, স্যার!
-এইপ ব্যাটা! সিনিয়র অর্ডার দিলে শুনতে হয়।
পরের দিন ফজরের সময় উঠে পড়লো রেমিন। ঠান্ডা পানি দিয়ে কাজ সেরে, ওযু করলো সে। বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে যে নামাজের সময় প্রায় শেষের দিকে। সে তাড়াতাড়ি নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। ব্যাগ থেকে জায়নামাজ বের করার সময় ছিল না বলে সে তার পরিষ্কার ওড়না বিছিয়ে নামাজ পড়ে ফেললো। নামাজ শেষে সে কিছুক্ষণ বসে রইলো। গতরাতে এসে সে নামাজ পড়ে নেই। আগেও অনেক নামাজ বাদ দিয়েছে সে। আজকে থেকে সে নতুনভাবে শুরু করতে চাচ্ছে। এখন থেকে আর নামাজ বাদ দেয়া যাবে না।
সকাল আটটার দিকে হাসেম গাড়ি নিয়ে হাজির। ইউনিফর্ম গায়ে যখন রেমিন গাড়িতে উঠে বসলো তখন তার এক প্রকার ইউফোরিয়া কাজ করতে লাগলো। চাকরি জীবনে আজ তার প্রথম দিন। আজকে নিজেকে বড় বড় লাগছে। সে ছোট বাচ্চাদের মতো এক কান থেকে আরেক কান পর্যন্ত একটা বিশাল হাসি দিয়ে রইলো। ভাগ্যিস, হাসেম খেয়াল করেনি।
আজকের দিনটা তার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছর ধরে, জীবনে নিজের অবস্থান নিয়ে মনে মনে অনেক সংগ্রাম করেছে সে। পুলিশ হওয়ার শখটা মাথায় চাপায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে পাপাম্মি। এতদিন এক পেশাগত লাইনে পড়ালেখা করে সব শেষে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা লাইনে যাওয়া তাদের ভালো লাগেনি। তারপরেও, বাংলাদেশী পিতামাতা হিসেবে কটুকথার সাথেও তারা যথেষ্ট সমর্থন করেছেন তাকে। কষ্ট ও পরিশ্রমটা শুধু মানসিক ছিল না। বিসিএসে টিকার জন্য কষ্ট ছিল এক রকম। টিকার পর শুরু হয়েছে আসল পরিশ্রম। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের রিক্রুটমেন্ট পাওয়ার পর একাডেমির সময় যেন ফুরোতেই চায় না। এরপর, জেলা পর্যায়ে প্রবেশনার হিসেবে ছয় মাস। এর মাঝে মাঝে নিজের কৌশল বৃদ্ধি আর সুরক্ষার জন্য 'তায় কোয়ান দো' প্রশিক্ষণ নেয়া। শেষমেশ ওরিয়েন্টেশনের পর এএসপি হওয়া। সম্পূর্ণ পথটা ছিল একটা নীরব যু*দ্ধ। লোকে সফলতাটা দেখে। এই সফলতার পিছে লুকিয়ে থাকা হাজারও কুরবানী ও সংগ্রাম কেও দেখে না।
পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সে বারান্দায় অনেক মানুষ দেখলো। এদের মাঝে প্রবেশ পথের পাসে একটা মহিলাকে দুই হাত জোর করে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখা গেলো। মধ্য বয়স্ক মহিলার বিনীত শারীরিক ভঙ্গি থাকলেও তার চোখ মুখে রাগ। ভ্রূকুটির নিচে লাল চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে সে রেমিনকে। রেমিন নীরবে হাসেমকে জিজ্ঞেস করলো এই মহিলার কথা।
-আরেহ, স্যার। ফালতু পাগল। খালি কমপ্লেইন দেয় যে তার বাচ্চাকে হাসপাতাল মারসে। আমরা খোঁজ নিসিলাম। মিথ্যা কথা!
থানায় সে তার প্রতি সবার একটা ঠান্ডা মনোভাব অনুভব করলো। যদিও সবাই তার জন্য একটা ছোটখাটো রিসেপশনের আয়োজন করেছে; চা- নাস্তা - মিষ্টি। কিন্তু, তাদের মুখ হাসলেও চোখ শীতল। এস পি তো নিজের অফিস রুম থেকে বেরই হলেন না। রেমিন সবার জন্য রসমালাই এনেছিল। এস পি স্যারের জন্য আলাদা প্যাকেট। স্যারকে দিয়ে তারপর বাকিদের দিলো। স্যারকে সালাম দিয়ে ঢুকে সে ভেবেছিলো লোকটা অনেককিছু বলবেন। তেমন কিছুই বললেন না। সে ধরে ফেললো যে লোকটা তাকে পছন্দ করে না। এবং, এই লোকটার জন্য থানার অন্যরাও তাকে পছন্দ করতে পারবে না। হয়তো স্যার ফিমেল পুলিশ অফিসার পছন্দ করেন না। বা, হয়তো কমিশনার স্যার তার পেরিফেরির পোস্টিং থামিয়েছেন দেখে ইনি তাকে দেখতে পারেন না।
যা-ই হোক, সে এই ঋণাত্মক সূচনায় বিচলিত হলো না। সে সবার সাথে পরিচিত হলো। এদের সাথে তার সামনের অনেকদিন কাজ করতে হবে। এদের সাথে ভালো সম্পর্ক শুরু থেকেই গড়ে তুলতে হবে। তখন, এস পি তাকে পছন্দ না করলেও কিছু যায় আসে না। পুরো থানা যদি তাকে ভালো জানে তাইলে এস পি তো শুধু একজন মানুষ। এজন্য, তাদের কয়েকজনের ঘু*ষ নেয়ার মতো বদভ্যাস থাকলেও তাতে না জড়িয়ে যতটা সম্ভব তাদের সাথে বন্ধুত্ব পালন করতে হবে।
দুপুরের মধ্যেই পুলিশগিরীর স্বাদ পেয়ে গেলো রেমিন। তবে, তদন্তগিরী বা গোয়েন্দাগিরীর মতো এটা সুস্বাদু না। এটা হলো তিতা আর বিরক্তিকর। দুনিয়ার লিখালিখি আর সই করার কাজ। তার মনে হতে লাগলো শিক্ষাজীবনের মতো আবার ব্যবহারিক খাতা লিখা নিয়ে বসেছে। কই গেলো "সি আই ডি" বা "ক্রাইম পেট্রল" এর রোমাঞ্চ? এ তো দেখা যাচ্ছে পাঠশালার বাড়ির কাজের সমতুল্য!
রাত সাড়ে তিনটা বাজে। পড়তে পড়তে খিদা লাগায় নারায়ণ পরোটা খেতে বের হয়েছে। কলেজের হোস্টেল থেকে বের হয়ে বিশ্বরোডের পাসের ফুটপাথ ধরে এগোচ্ছে সে পরোটার দোকানের দিকে। অন্ধকার পথে কুয়াশার ফাঁকে কিছুক্ষণ পর পর মালবাহী ট্রাকের আলো ঝলসে উঠছে। নারায়ণের পিছে অন্ধকারে নীরব পায়ে কে যেন হাঁটছে। পিছনের জনের হাতে ছোট কি যেন রয়েছে। জিনিসটায় হেডলাইটের আলো পড়ায় উজ্জ্বল আলোর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হচ্ছে।
চলবে...
গল্প: তদন্ত।
পর্ব: ১
লেখক: আইনান মুহসেনিন সাইফ সানি।
©Ainan Muhsenin Saif.
(বানান ও ব্যাকরণ ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এই গল্পের রেমিন চরিত্রটি আমার লিখা "৮০০টি" এবং "ব্লগ" গল্পেও উপস্থিত রয়েছে।)
"কথাহীন আলাপ।" গল্পটা একসাথে... 😊
পর্ব ১
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=518166017109503&id=100067483274638&mibextid=Nif5oz
পর্ব ২
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=518772267048878&id=100067483274638&mibextid=Nif5oz
"এমনও তো হতে পারে যে আপনার বয়ফ্রেন্ড আশেপাশেই আছে। আর, এজন্যই আপনি আমার কাছে আসতে চাচ্ছেন না।"
এই লিখাগুলো লিখে তাহসিন কিছুক্ষন ভাবলো। এটা চিরকুটটায় লিখে দেয়াটা কি ঠিক হবে? হয়তো মেয়ে রেগে যাবে। হয়তো তার সাথে আর চিরকুট বিনিময় করবে না। তাও। এটা দেয়ার দরকার আছে। পুরো রাতটা যদি এই একটা কারণে বৃথা যায়? তাকে নিশ্চিত হতে হবে। কিন্তু, এই একটাই তো রাত। মেয়েটা যদি তাকে নিচু মানসিকতার মনে করে?... না। সে সিদ্ধান্ত নিলো যে এই চিরকুটটা দিবে। তারা যথেষ্ট ফ্রি হয়েছে যে একদু'টা কঠিন কথা বলাই যায়। মেয়েটাও তো তাকে এতগুলো কথা লিখে দিলো এর আগের চিরকুটে।
বাচ্চার হাত থেকে নিয়ে মেয়েটা চিরকুটটা পড়ে তাহসিনের দিকে তাকালো। তার চেহেরা ভাবলেশহীন। ছেলেটা ভয় পেয়ে গেলো। মেয়েটার চোখের ঝিলিকটা চলে গিয়েছে। তার ঠোঁটের কোণে এখন আর সেই পরিচিতির হাসিটা নেই। ছেলেটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে মেয়েটার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। আল্লাহ জানেন আবার তেড়ে এসে চিল্লাচিল্লি করে কিনা! সে চুপ করে মোবাইলটা বের করে ফেসবুক ঘাঁটতে লাগলো।
নিচু চোখের আড়ালেই সে খেয়াল করলো যে তার সামনে একজন এসে দাঁড়িয়েছে। মেয়েটার কালো শাড়ির লাল পারটা সে দেখতে পারছে। ওর শরীর থেকে আসা ফুলের পারফিউমের গন্ধে তাহসিনের মাতাল মাতাল লাগলো। ভয় ও ভালো লাগার এক অদ্ভুত অনুভূতির সংমিশ্রনে সে ঘামাতে শুরু করলো। এই শীতের রাতেও তার কপালের পাশে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেলো। মেয়েটা কিছু বলছে না কেন?! মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে তার সামনে। সে সাহস করে উপরে তাকালো। মেয়েটা হাসছে। ওর এক হাতে একটা স্প্রাইটের বোতল। আরেক হাতে একটা টিস্যু উঁচু করে রেখেছে সে। তাহসিন টিসুটা নিয়ে তার ঘাম মুছলো। তারপর, মেয়েটার দিকে তাকিয়ে লজ্জিত একটা হাসি দিলো।
-আই এম সরি। যেহেতু সবার সামনে এসেছেন, আমার কোনো সন্দেহ নেই।
মেয়েটা কিছু বললো না। শুধু একটা মিষ্টি হাসি দিলো। এরপর, চুপচাপ তার পাশে স্প্রাইটের ছোট বোতলটা রেখে চলে গেলো তার বান্ধবীদের মাঝে। মেয়েগুলা সবাই খিলখিল করে হাসছে। মেয়েটা লজ্জায় একেকজনের গায়ে থাপ্পড় দিচ্ছে। তাহসিন প্রচন্ড বিব্রতবোধ করলো। ঐ চিরকুটটা দেয়াটা ঠিক হয়নি। কিন্তু, এখন সে একটু হলেও নিশ্চিন্ত। মেয়েটা আর কারো নয়। সে একটু আশেপাশে দেখে নিলো যে তার আম্মু কিছু দেখলো কিনা। না, তার মা আশেপাশে নেই। স্প্রাইটের বোতল এর নিচে আরেকটা চিরকুট রাখা।
"খাবারের সময় স্প্রাইট দিলে আবার আমার জন্য কষ্ট পেয়েন না। বধূর বান্ধবী দেখে আমাদের সবাইকে একস্ট্রা একটা দিয়েছে। আমার বাড়তিটাই আপনাকে দিলাম।
আর, আপনি সন্দেহ করছেন, এটা ভালো। সব সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে অশান্তি না করে অল্প পরিমানে সন্দেহ থাকা উচিত। বিশেষ করে আজকালকার সময়ে।"
"আমি আমার আচরণে দুঃখিত। (তাহসিন অনেকক্ষণ ভেবে তারপর আবার লিখা শুরু করলো।) কিন্তু, আমার আগে একজন গার্লফ্রেন্ড ছিল, অনেক বছরের। সে গত বছর বিয়ে করে 'ইউ এস এ' তে চলে গিয়েছে, আফটার চিটিং অন মি ফর এ ইয়ার। আমি এজন্য এক্সাক্টলি বেশি ট্রাস্টিং হতে পারিনা।.... সরি, এই চিরকুটটায় একটু বেশি আধুনিক ভাষা ব্যবহার করে ফেললাম।
কিছু মনে করবেন না। বাট, ডু ওর ডিড ইয়ু হ্যাভ এনিওয়ান? আমি একবার সাফার করে ফেলেছি। আবার করতে চাই না। কেও থাকলে এখনই সত্যিটা বলে দেন, প্লিজ।"
তাহসিন চিরকুটটা একবার শুরু থেকে পড়লো। নিজেকে খুব "ক্ষেত আর সিম্প" মনে হচ্ছে লিখাগুলো পড়ে। কিন্তু, সে চিরকুটটার লেখা পাল্টালো না। সে তার মনের কথাটাই বলেছে। শুরুতেই সব স্পষ্ট থাকা উচিত। মেয়েটার যদি এসব পছন্দ না হয়, তাইলে সে তাকে বলে দিলেই ভালো। সে আর ওর দিকে ফিরেও তাকাবে না।
"আমার কেও নেই। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। তবে, এমন না যে কেও চেষ্টা করেনি বা আমি চাইনি। সবাই আমাকে পছন্দ করে ঠিকই। কিন্তু, আমার সাথে প্রথম কথা বলার পরেই তারা আর সম্পর্কটা চালিয়ে যেতে চায় না। আমি শত ভাগ নিশ্চিত যে আজকে রাতের পর আপনিও চাবেন না আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখতে।"
"কেন? আর রহস্য রেখেন না। আপনি আমার সাথে ট্রাই করে দেখতে পারেন। হতেও তো পারে যে আমি অন্য বিশটা ছেলের মতো না। আপনি অবাক হবেন যে কত সহজে জীবন থেকে মানুষ হারিয়ে যায় , আজীবনের জন্য। এজন্য কখনো যদি কাউকে পান যাকে আপনি চাচ্ছেন, তাকে শক্ত করে ধরে রাখাই শ্রেয়।"
"হাহাহাহা! আপনি একটু বেশিই ফিলোসফিকাল হয়ে যাচ্ছেন না? মাত্র কয়েক ঘন্টার আমাদের এই পরিচিতি। তাও চোখে চোখে। যাক, চিরকুটের মাধ্যমে আমরা কিছুটা হলেও একে অপরকে চিনি। পরিচয় হয়তো জানি না। কিন্তু, আমরা একে ওপরের পরিচিত। এজন্য আপনাকে খুলেই বলি। আমি আসলে সাময়িক কিছুতে বিশ্বাসি না। আমার সাথে যদি আপনি কিছু চান, তাইলে ঐটা হতে হবে কমিটমেন্ট... ফর লাইফ!!!
এবং, ঐ লেভেলের কমিটমেন্টের জন্য ভালোবাসা কি ওটা জানতে হবে। ভালোবাসা হলো কারো প্রতি এতটা কেয়ার করা যে তা বোকামির পর্যায়ে চলে যায়। তার জন্য নিজেকে মানিয়ে নেয়া। হয়তো নিজের কষ্ট হচ্ছে, তবুও তাকে যেভাবে আছে সেভাবেই গ্রহণ করে নেয়া। ভালোবাসা ননসেন্সিকাল। এটা এক রাতে হয়ে যায় না। আর বিয়ে বাড়িতে তো না-ই; যেখানে সবকিছুই এক্সট্রা সুন্দর লাগে।
আপনি কি ঐ লেভেলের কমিটমেন্টে যেতে রাজি আছেন?"
তাহসিন চিরকুট থেকে চোখ তুলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা ভীতু চোখে তার প্রতিক্রিয়া দেখছে। সে একটা মুচকি হাসি দিলো। ছেলেটার হাসি দেখে মেয়েটা যেন সস্থির শ্বাস ছাড়লো। এই মেয়েটাকে সে কিভাবে না নিজের করে? তার আর এই মেয়ের মন মানসিকতা হুবুহু একইরকম। এই মেয়েকে যদি সে হাতছাড়া করে তাহলে জীবনের সে বড় একটা ভুল করবে। এই মেয়েকে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে তার মায়ের সাথে দেখা করিয়ে দিতে হবে। তার মা খুব সম্ভবত উনার বান্ধবীর সাথে আজকের রাতটা থেকে যাবেন। আর মেয়ে তো বান্ধবীর বিয়েতে থাকবেই। একবার দেখা করিয়ে দিলে, তার মা-ই রাতের মধ্যে মেয়ের সব খবর বের করে ফেলবে।
সে আবার চিরকুট লিখায় ফিরে এলো,
"আপনি অনেক কিউট। আপনাকে রাগী অবস্থায় এক রকম কিউট লাগে। আর এখনকার নার্ভাস অবস্থায় আরেকরকম কিউট লাগলো। আমি সত্যিই আপনার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। আপনি যে বলছেন যে ছেলেরা আপনার সাথে কথা বললে আর সম্পর্কে আগায় না, এর কারণ আমি বুঝতে পারছি না। আমি এরকম ইতির কথা ভেবে হতভাগ হচ্ছি। এর শুধু দু'টো কারণই আমার বুঝে আসছে। হয় আপনার মুখে দুর্দান্ত দুর্গন্ধ বা ঐ ছেলেগুলা দুনিয়ার এক নাম্বার বলদ।
আর হ্যা, ভালোবাসা ননসেন্সিকাল। কিন্তু, এই ননসেন্সটা না থাকলে মানুষ হয়ে লাভ কি? পশু হয়েই জন্মাতাম। ভালোবাসা যেদিন মরে যাবে, মানুষ আর সেদিন মানুষ থাকবে না। এজন্য আমাদের ভালোবাসতে হবে। আমি এই লেভেলের কমিটেড! আপনি রাজি আছেন তো?"
মেয়েটা এই চিরকুটটা পড়ে প্রথমে লাজুক হাসি দিলো, তারপর ঘিন্নায় নাক কুচকালো, এরপর হেসে দিলো এবং সব শেষে মুচকি হাসি দিয়ে তার দিকে আড়চোখে তাকালো। ওর দৃষ্টিতে তাহসিনের ঘাড়ের লোমগুলো দাঁড়া হয়ে গেলো। মেয়েটার সাথে তার খুব কথা বলতে মন চাচ্ছে। বুকের প্রজাপতিটা সজোড়ে ডানা ঝাপটিয়েই যাচ্ছে।
দূর সম্পর্কের মেহমানরা সবাই চলে গিয়েছে। এখন নিজেদের খাওয়াদাওয়াটা হবে। তাহসিন খেয়ালি করেনি কিভাবে সময় চলে গিয়েছে। এই মেয়েটা তাকে কেমন যেন মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলো।
মেয়েটা আরেক চিরকুট লিখার আগেই ডিজে মাইকে বলে উঠলো, সবাই ডান্স ফ্লোরে চলে আসেন। বউ এর বান্ধবী সবগুলো দৌড়িয়ে গেলো পাত্রীকে সহ নাচতে। বধূ বারবার বলছে গায়ের হলুদটা মুছে নেই। কে শুনে কার কথা। হলুদ সহ বউকে নিয়ে নাচা শুরু। তাহসিন অবাক হয়ে দেখলো তার মা আর উনার বান্ধবী নাচছে। নিজের ছেলেকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনি এসে ধরে নিয়ে গেলো। সে যেতে চাচ্ছিলো না। শুধু নিকট আত্মীয়রা একসাথে নাচ্ছে। সে তাদের মাঝে গেলে কেমন দেখায়। কিন্তু, সব আন্টিরা তাকে ধরে নিতে চলে এলো।
আন্টিদের সাথে ছেলেটা অপ্রস্তুতভাবে নাচতে লাগলো। নাচতে নাচতে একজনের সাথে ধাক্কা খেলো সে। ঘুরে দেখলো ঐ মেয়েটা। উচ্চতায় মেয়েটা তার বুকের কাছে আসে। মেয়েটা এক পলক তার চোখে চোখ রেখে লজ্জা পেয়ে অন্য প্রান্তে চলে গেলো। দূর থেকে মেয়েটাকে সে দেখতে দেখতে নাচতে থাকলো। মেয়েটা ভালো নাচে। ডিজে হিন্দি গান শেষে হুট্ করে একটা ইংলিশ গান লাগিয়ে দিলো, 'Goo goo muck'। সবাই একটা চিল্লানি দিয়ে নাচা শুরু করলো। বিশেষ করে কম বয়সী ছেলেমেয়েরা খুবই উৎসাহিত।
তাহসিন দেখলো যে মেয়েটা দূর থেকে তাকে দেখছে আর নাচছে। দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা তাকে চ্যালেঞ্জ করছে। সে কয়েকটা স্টেপ দিয়ে থেমে যায়। পরের স্টেপগুলা ছেলেটা দেয়। এরকম করে দুইজন মিলিয়ে মিলিয়ে নাচছে। মেয়ের বান্ধবীগুলা এটা খেয়াল করতে পেরে তাদের দুইজনকে ধাক্কিয়ে মাঝামাঝি নিয়ে এলো। তাহসিন ভীতু চোখে তার মায়ের দিকে তাকালো। তার মা দুইজনের মাঝে এসে দুইজনের হাত ধরে নাচা শুরু করে দিলো। এতে সবাই আরো চিৎকার আর হাততালি দিতে লাগলো। তার মায়ের বান্ধবী (পাত্রীর মা ) পাত্রী সবাই চলে এলো একসাথে নাচতে। তাহসিন অবাক হয়ে দেখলো সবার পাগলামি। কিন্তু, সবাই খুশি। আজকের রাতটা অনেক অপূর্ব ; যেন জাদুকরি কোনো নিশি।
খাওয়াদাওয়া শেষে তাহসিন খেয়াল করলো যে ছাদের একপাশে মেয়েটা দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে ভালোমতো মুখ মুছে একটা সেন্টার ফ্রেশ মুখে দিয়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো। তার মা খাওয়া শেষ করে আন্টিদের সাথে নিচে নেমে গিয়েছেন। এখন, সে শেষমেশ নিশ্চিন্তে মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারবে।
মেয়েটা ছাদের রেলিং ধরে নিচে তাকিয়ে রয়েছে। মরিচবাতির জ্বলা বন্ধ হওয়া তিন রঙের আলোতে তার চেহারাটা রূপকথার রমণীর মতো দেখাচ্ছে। তাহসিনের বুকের প্রজাপতিটা এখন মনে হয় বুক ছিঁড়ে বেরিয়েই আসবে। মেয়েটাকে এত্তটা সুন্দর লাগছে!
মেয়েটা একটা চিরকুট তার দিকে এগিয়ে দিলো।
"আমার নাম সানি।"
-সানি... কি অবস্থা? আমার নাম তাহসিন।
একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বললো ছেলেটা।
মেয়েটা কিছু বললো না। চুপচাপ তার দিকে তাকালো। তার চোখে এক অজানা বেদনা। সে ছেলেটাকে আরেকটা চিরকুট দিলো।
"আমি বোবা। আমি সব ঠিকঠাক করতে পারি। শুনতে পারি, দেখতে পারি। কিন্তু, শুধু কথা বলতে পারি না। আমি কমিউনিকেট করি হাতের সাইন ল্যাংগুয়েজ দিয়ে।
তুমি যদি আমার সাথে এসব জানার পর আর এগোতে না চাও, আমি বুঝবো। আমি কিছু মনে করবো না। তুমি একজন ভালো মানুষ। তুমি বেটার ডিজার্ভ করো।"
মেয়েটা অন্য দিকে ফিরে রয়েছে। সে ছেলেটার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। তাহসিনও হতোবুদ্ধি হয়ে গিয়েছে। সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সে একটা ধাক্কা খেয়েছে। তার অনুভূতি যা-ই ছিল, তার চেহারায় হালকা ঘৃণার ছায়া দেখা গিয়েছে। পরমুহূর্তে সানি পিছনে ফিরে তার এই চেহারা দেখে, কয়েক পলকে চোখের পানি মুছতে মুছতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।
এখন রাত ২:৪০ বাজে। তাহসিন তার বিছানায় শুয়ে আছে অন্ধকার রুমে। সে বাসায় ফিরেছে আরো এক ঘন্টা আগে। তার মা ওখানে রয়ে গিয়েছে।
তার অনেক খারাপ লাগছে। মেয়েটাকে সে থামাতে পারতো। কিছু একটা বলতে পারতো। কিন্তু, তা সে করেনি। একটা সুন্দর মনের মানুষকে কষ্ট দিয়েছে সে।
এখন সে কম্বলের নিচে মোবাইল টিপছে। তার চোখের সামনে মেয়েটার ফেসবুক প্রোফাইল খোলা, আফিয়া সানি।
সবার জীবনেই কিছু তল্পিতল্পা থাকে, সিম্পল ইংরেজিতে "ব্যাগগেজ"। সত্যিকারের প্রেমিক বা ভালোবাসা সেই হতে পারে যে আপনার সাথে ধৈর্য নিয়ে বসে আপনার ঐ তল্পিতল্পার মালামাল নামিয়ে হালকা করতে ভালোবাসে।
তাহসিন সানিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলো। তারপর, সে ইউটুবে "হ্যান্ড সাইন ল্যাংগুয়েজ " এর টিউটোরিয়াল ভিডিও বের করে তা দেখা শুরু করলো।
।।।
সমাপ্ত।
।।।
এই গল্পটা তাহসিন কে...
।।।
গল্প : কথাহীন আলাপ।
পর্ব : ২ (শেষ পর্ব।)
লেখক: আইনান মুহসেনিন সাইফ।
©Ainan Muhsenin Saif.
(বানান ও ব্যাকারণ ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।)
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Website
Address
Cumilla
● Thanks for watching my videos �� ● Keep Subscribe my Channel �� ● Keep Support me for intresting videos � ● And Love you my subscribers & Supporters..