Shopner Rajj - স্বপ্নের রাজ্য

Shopner Rajj - স্বপ্নের রাজ্য

নিয়মিত ভালোবাসার গল্প পেতে পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন ?

নিয়মিত ভালোবাসার নতুন নতুন গল্প পেতে আমাদের পেইজ লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন। আর আপনাদের ভালো লাগা গল্প গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। গল্প পড়ে লাইক কমেন্ট শেয়ার করতে ভুলবেন না।।

14/02/2024

রাস্তার পারে পড়ে থাকা একটা পুরনো বাক্সের উপর বসে এক লোক ভিক্ষা করে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। অনেক বছর ধরে। একদিন এক বৃদ্ধ লোক এগিয়ে এসে বলল, তুমি তো প্রাচুর্যের উপরেই বসে থাকো; ভিক্ষা করো কেন।
তার মানে কি, ভিক্ষুকের প্রশ্ন।
মানে হচ্ছে, তুমি যে বাক্সটার উপর বসে আছো সেটা একটা সোনার বাক্স।
ভিক্ষুক হেসে ফেলল। বৃদ্ধও মুচকি হেসে চলে গেল। ভিক্ষুক জানে বৃদ্ধ মজা করেছে, তবু সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি যাবার আগে বাক্সটা খুললো। খুলেই চোখ ছানাবড়া। বাক্স ভর্তি সোনা। সত্যিই এই প্রাচুর্যের উপর বসেই সে এতদিন ভিক্ষা করছিল, এটা তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না।
প্রতিকি গল্প। সারমর্ম হচ্ছে, আমরা এরকমই অশেষ প্রাচুর্যের ওপর বসে থাকি, আর আশা করি অন্য কেউ এসে আমাদের জন্য কিছু করে দেবে। সেই প্রাচুর্যের নাম হচ্ছে মস্তিষ্ক, এবং সেটাকে বুদ্ধি আর শ্রম দিয়ে সততার সাথে কাজে লাগানো। এই প্রাচুর্য দিয়েই প্রতিটি মানুষকে দুনিয়াতে পাঠান পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালা।!!

06/02/2024

যদি কেউ আপনারে ভালোবাসে, তাকে কিভাবে যত্ন করা যায়, তার এই অনুভূতি কিভাবে রক্ষা করা যায় এই চিন্তা করতে পারেন!

বয়স বাড়তে থাকলেই বুঝবেন
ভালোবাসা কত দুর্লভ!

বুঝবেন, কেউই আসলে, কাউকে ভালোবাসতেছেনা!

বুঝবেন,
ঘরে ঘরে সব আছে, মানুষ আছে, সংসার আছে, কাপ প্লেট, ঝোলানো ছবি আছে, সোশাল সাইটে কপি পেস্ট ক্যাপশন আছে,
বাচ্চা কাচ্চা আছে,
যৌনতা আছে,

কেবল ভালোবাসাটা নাই!

নাই সকল নিয়ে জড়ায়া ধরা!
নাই সব সত্য নিয়ে মুখোমুখি হবার সাহস!
নাই হৃদয় জুড়ে জমে উঠা স্বচ্ছ অনুভুতি!
নরম চুম্বন!

দেখবেন কত লুকানো জীবন মানুষের! কত সহস্র মাইল দুরত্ব দুটো মনের!

এই দুর্বোধ্য সময়ে, এই অস্থিরতার যুগে, এই অতি শরীর চাঞ্চল্য সময়ে কেউ যদি আপনাকে ভালোবাসে,

তা নিজের পরম পাওয়া বলে ভাবেন দয়া করে!

কারো কথা শুনে (সে যেই হোক)
নানা জাগতিক হিসাব কষে
সে ভালোবাসাটাকে জটিল করতে যায়েন না!

Imran Kais

06/02/2024

না বলতে শিখুন,,,

প্রয়োজন হলে সম্পর্ক বাদ দিয়ে দিন তারপর ও না বলতে শিখুন।

এই লোকটি একটি দোকান দিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করেছিল,,, এবং তার সমস্ত পরিচিতজন বন্ধু_প্রতিবেশী এবং পরিবার সেখানে কেনকাটা করতো এবং মাঝে মাঝে বাকী ও চাইতো
কয়েক বছর পরে, এই সব বাকী মিলে বড় আকার ধারন করে
কখনও কখনও আমরা হ্যাঁ বলি যখন আমাদের না বলা উচিত ছিল।
আপনি হ্যাঁ বলবেন ভাবছেন আপনি মানুষকে সাহায্য করছেন..
কিন্তু আসলে আপনি হেরে যাচ্ছেন
এবং আপনার কঠোর পরিশ্রম এবং ত্যাগ স্বীকার করছেন,
আপনার সময় খারাপ যাবে এবং বাকী টাকা চাইবেন তখন সবাই আপনার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

সবসময় হ্যাঁ বলবেন না...

আপনার ব্যবসায় বিনিয়োগ করুন এবং সঞ্চয় করুন, স্মার্ট হন, সবকিছু হারিয়ে যেতে দেবেন না,,,,,

এটি একটি উদাহরণ এর মধ্যে আরও অনেক কিছু লুকিয়ে আছে।

দয়া করে বন্ধু হউক আত্মীয় হউক পাড়া প্রতিবেশী হউক যে কেউ হউক না বলতে শিখুন কেননা শুন্য হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ আপনাকে ছাড়বে না যদি না বলতে না শিখুন।

06/02/2024

এখন থেকে চেষ্টা করুন যতদিন বেঁচে আছেন ঠিক ততদিন সবার সাথে বাকি জীবনটা সুন্দর ভাবে কাটানোর।

কারন, একদিন হয়তো আপনি থাকবেন না,

কিন্তু আপনার সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো সবসময় মানুষের মধ্যে পড়ে থাকবে!!

এখন থেকে চেষ্টা করুন কারো উপকার করতে না পারলেও অপকার না করার, কারন আজ যদি আপনি কারো উপকারে আসেন তাহলে কাল অবশ্যই আপনি বিপদে পড়লে বা অন্যকেউ বিপদে পড়লে, সে আপনার উপকারের কথা চিন্তা করে নিজেই অন্যজনের উপকার করবে!!

এখন থেকে চেষ্টা করুন কাউকে সম্মান করতে না পারলে

অসম্মান না করার, কারন আজকে আপনি যাকে অসম্মান করে কথা বলছেন, কাল হয়তো আপনাকেও একি ভাবে অসম্মানজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে,

সুতরাং কারো থেকে সম্মান পেতে চাইলে আগে সম্মান দিতে শিখুন!!

এখন থেকে চেষ্টা করুন কারো সমালোচনা করার আগে তার

জায়গা নিজেকে বসিয়ে দেখার, কারন আজ আপনি যার

সমালোচনা করছেন অন্যকারো কাছে, কাল হয়তো সেও

আপনার চিন্তা এখানে ছেড়ে দিন ...

পোস্ট

04/10/2023

কেমন আছেন সবাই !! অনেক দিন ধরে পেইজে কোন গল্প দিতে পারি না। নতুন চাকরিতে জয়েন করার পর থেকে একটু কাজের চাপে আছি সেজন্য।

15/08/2023

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৬

রোদ জেদ ধরে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে। এতেও বেশ জ্বালা। পায়ে পানি জমাতে বেশিক্ষণ ঝুলিয়ে বসতে পারে না। মেজাজ আপাতত প্রচুর খারাপ হয়ে আছে ওর। পাঁচ মাসের উঁচু হওয়া পেট এখন অথচ দেখে মনে হয় আট মাসের ভরা পেট। এ নিয়ে ও আদ্রিয়ানের চিন্তার অন্ত ছিলো না। ড.মিহা পরে বুঝিয়ে বলেছে যে টুইন হবে তাই স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি বড় তো হবেই। এতে চিন্তার কিছু নেই। আদ্রিয়ান রুমে ডুকতেই নজরে এলো রেগে লালা হওয়া রোদের দিকে। ঢোলাঢুলা একটা প্রেগন্যান্সির ফ্রক পড়া রোদ। বেশ মানিয়েছে এই গোলাপি রং টা রোদকে। আগের নাদুসনুদুস রোদ এখন কিছুটা গোলুমুলু হয়েছে। দেখলেই আদর আদর লাগে কিন্তু আদ্রিয়ান তো এখন আদর করতে পারে না। এই যে রোদের চোখ দুটি ক্লান্ত। শরীর ফুলেছে অথচ ভেঙে গিয়েছে। আগের মতো কিছুই করতে পারে না। অথচ রুপ তার বেড়েছে হাজার গুন। মাতৃকালীন এতটা যে কোন নারীকে সুন্দর আর আবেদনময়ী লাগে তা জানা ছিলো না আদ্রিয়ানের। হাতের ফলের প্লেট'টা পাশে রেখে হাত ধুয়ে এলো। রোদের রাগ যেন আকাশচুম্বি হলো। ইদানীং মেজাজ তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না ওর। আপাতত প্রচন্ড রাগ লাগছে। আদ্রিয়ান হাত ধুয়ে এসে ফলের প্লেট'টা হাতে নিয়ে রোদের মুখের সামনে ধরতেই নাক ফুলিয়ে মুখ সরালো রোদ। আদ্রিয়ান আবারও ধরলো। রোদ খাবে না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদ্রিয়ান বললো,

-- কাল নিয়ে যাব তো। বলেছিনা? হা করো।

-- কাল ই খাব। সরান এখান থেকে।

কাঠ কাঠ গলায় রোদ বলে উঠলো। আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস টানলো। হাতের প্লেট'টা সাইডে রেখে রোদের হাত দুটি ধরে নরম কন্ঠে শুধালো,

-- সোনা প্লিজ খেয়ে নাও। এটা এখন খাওয়ার সময় তোমার। জেদ করে না।

রোদ নাক মুখ কুচকে রেখেছে। আদ্রিয়ান আবারও বললো,

-- আচ্ছা তুমিই বলো ডক্টর না বেশি জার্নি করতে নিষেধ করেছেন? কাল তো তোমারও চেকাপ আছে। কাল ই না হয় বাবুকে দেখো৷ আজ ভিডিও কলে দেখো।

রোদ মানলো না। ওর ভাইয়ের সন্তান হবে আজ। সেখানে রোদ নাকি কাল দেখতে যাবে? এটা কি সম্ভব? মোটেও না। রোদ আজই যাবে। ফলের প্লেট'টা নিজের হাতে নিয়ে খেতে খেতে বললো,

-- আজই যাব। আপনি না নিলে একাই যাব।

আদ্রিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করছে ওকে। রোদ অর্ধেক খেয়েই প্লেট'টা রেখে দিলো। মনটা খারাপ ওর। আদ্রিয়ান একটু ঘেঁষে বসলো। কি মনে করে রোদ নিজের মাথাটা আদ্রিয়ানের বুকে রেখে চোখ বুজে নিলো। আদ্রিয়ান দুই হাতে আটকে নিলো রোদকে। রোদ যে এখন কাঁদছে এটা ওর জানা। প্রায় সপ্তাহ খানিক ধরে এমন হচ্ছে ওর। হঠাৎ করেই ভীষণ রেগে যায় আবার একটু পরই কেঁদে দিবে। মুড এতো ফাঁস্ট সুইং হচ্ছে ওর যা বলার বাইরে। এই ব্যাপারে প্রথম প্রথম আদ্রিয়ান টেনশনে থাকলেও ড.মিহা বলেছে সমস্যার কোন কারণ নেই কিন্তু রোদের খেয়াল রাখতে হবে। শরীরের অবস্থা এমনিতেই ভালো না। আদ্রিয়ান নিজেও ইদানীং অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এমন হলে কিভাবে হবে? যথাসম্ভব নিজেকে সামলে আদ্রিয়ান বললো,

-- আচ্ছা নিয়ে যাব। এরপর যদি কোন রকম সমস্যা হয় একদম আমি সব ফেলে চলে যাব।
............

-- কান্না থামাও।

রোদের হিচকি উঠে গেলো। আদ্রিয়ানের নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয় মাঝে মধ্যে। রোদ আদ্রিয়ানের বুকের পাশের টিশার্ট টা খামচে ধরে কান্না করতে করতে বললো,

-- আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি তাই না? আমি জানি তো। সত্যি আমি জানি না কেন এমন হচ্ছে। আমি ইচ্ছে করে করি না। আমার হঠাৎ হঠাৎ রাগ উঠে যায়। আমি কি করব?

আদ্রিয়ান হাতের বন্ধন দৃঢ় করলো। শরীর ফুলে উঠা শরীরটাকে নিজের বাহুতে পুরে নিয়ে ওর মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

-- আমি জানি তো সোনা। আচ্ছা নিয়ে যাব। বকবো ও না।

--উহু যাব না।

-- আবার কি হলো?

-- কিছু না। এমনিতেই। আপনি দেখে আসুন তো মিশি কোথায়? গোসল করাতে হবে ওকে।

আদ্রিয়ান রোদকে ছেড়ে বাইর হতেই রোদ বেডের সাইড ধরে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। বমি বমি পাচ্ছে। তারাতাড়ি ওয়াসরুমে ডুকে গলগল করে বমি করে দিলো। আদ্রিয়ান আর মিশির কন্ঠ শুনতেই দরজা লাগিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান এখন রোদের এমন অবস্থা দেখলেই হাইপার হয়ে যাবে। রোদ এখন ভয় নিজেকে নিয়ে কম আর আদ্রিয়ান'কে নিয়ে বেশি পায়। যেখানে রোদের অল্প অসুস্থ হলেই এই লোক এমন পাগলামি করে সেখানে যদি রোদের কিছু একটা হয়ে যায় তখন আদ্রিয়ানের কি হবে? রোদের বড় দুই বাচ্চার কি হবে? ইদানীং তো রোদ পেইন হলেও আদ্রিয়ান থেকে লুকানোর চেষ্টা করে। রোদ সব পরিষ্কার করছিলো তখনই দরজায় কড়াঘাতে ওর ধ্যান ভাঙলো। আদ্রিয়ান সমানতালে দরজায় নক করেই যাচ্ছে আর বলছে,

-- রোদ? রোদ? দরজা খুলো। কি হয়েছে? এই মেয়ে? রোদ!

ভয়ে এক ঢোক গিললো রোদ। ভালোকরে বমি পরিষ্কার করে মুখে পানি দিয়ে দরজা খুলতেই হুরমুর করে ভেতরে ঢুকলো আদ্রিয়ান। রোদ ভ্রু কুচকে বললো,

-- কি হয়েছে? বের হন।

আদ্রিয়ান সতর্ক দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকালো। বুঝার চেষ্টা করলো। পরপরই রোদকে ধরে বের হলো। রোদের ভেজা মুখটা মুছাতে মুছাতে বললো,

-- কি করছিলে?

-- মানুষ ওয়াসরুমে যা করে।

-- আমি থাকতে কেন গেলে না?

-- আজব প্রয়োজন পরে নি।

-- দেখি তাকাও।

রোদ মাথা নিচু করেই রেখেছে। আদ্রিয়ান ওর মুখটা উঁচু করে বললো,

-- বমি হয়েছে?

-- একটু।

-- মিথ্যা বলা শিখেছো ইদানীং।

রোদ ঢোক গিললো। আদ্রিয়ান'কে টেনশন দিতে চায় না ও আবার কিছু লুকাতেও পারে না। মিশি রোদকে অবশ্য উদ্ধার করলো ওর বাবাই থেকে। রোদের কাছে ঘেঁষে বসে বললো,

-- মাম্মা?

-- জ্বি মা।

-- ভাই কখন আসবে?

-- একটু পরই এসে যাবে মা।

আদ্রিয়ান আর কিছু বললো না। সোজা মিশিকে কোলে তুলে ওয়াসরুমে নিলো গোসল করাতে। রোদ বুকে হাত চেপে শ্বাস নিলো। এই লোক এত চালাক। তাও যদি হয় রোদ জনিত কোন কিছু তাহলে তো কথাই নেই। মিশিকে টাওয়ালে পেচিয়ে কোলে তুলে বের হলো আদ্রিয়ান। রোদ হাত বাড়াতেই মিশি বাবার কোল থেকে নেমে মায়ের কাছে এলো। রোদ সুন্দর করে ওকে মুছিয়ে একটা বিড়াল প্যান্ট আর কুর্তি পড়িয়ে দিয়ে বললো,

-- মা এখন আর বাইরে যাবে না।

-- আলিফ ভাইয়ার কাছে যাই?

রোদ মিশির ভেজা চুল গুলো সুন্দর করে নেড়ে দিয়ে বললো,

-- আচ্ছা যাও। আরিয়ানা'কে জাগাবে না ঘুমালে। ঠিক আছে?

-- আচ্ছা।

বলে মায়ে'র ঠোঁটে চুমু খেয়ে মিশি দৌড়ে বেরিয়ে গেল। আদ্রিয়ান ভেজা টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দিয়ে আসতে আসতেই দেখলো রোদ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আদ্রিয়ান ওকে ধরে বললো,

-- আগে গোসল।

রোদ ঘুমু ঘুমু চোখ দিয়ে তাকিয়ে বললো,

-- আগে ঘুম।

-- কোন কথা না। ড.মিহা বলেছে টাইমলি গোসল করতে।

-- অনেক ঘুম আসছে। দেখুন চোখ খুলতে পারছি না।

-- আমি বুঝি না এতটুকু সময়ের মধ্যে তোমার এত ঘুম কিভাবে আসে?

-- আমি কি ঘুমাই নাকি? আপনার পাঁজি দুটো ঘুমাতে চাচ্ছে।

-- তাই?

-- হুম তাই তো।

আদ্রিয়ান হাটু গেড়ে রোদের পেটের সামনে বসলো। দুই হাত দিয়ে মন ভরে আদর দিলো পেটে। পরপর কতগুলো চুমু খেয়ে বললো,

-- বাবাইরা তোমরা নাকি ঘুমাতে চাচ্ছো?

প্রশ্নটা করেই পেটে কান পাতলো আদ্রিয়ান। এমন ভান করছে মনে হচ্ছে ওর বাচ্চারা ওকে উত্তর দিবে এখন। রোদ হাসছে ঠোঁট এলিয়ে। পাগল বর রোদের। আদ্রিয়ান মুখটা সিরিয়াস করে বললো,

-- আমার বাচ্চারা এখন গোসল করতে চাচ্ছে। উঠো।

বলে রোদের হাত ধরে উঠাতে উদ্যত হলেই রোদ রেগে বললো,

-- বললাম তো এখন না।

কে শুনে কার কথা। আদ্রিয়ান রোদকে পাজা কোলে তুলে নিলো। সোজা ওয়াসরুমে নামিয়ে দিয়ে সাওয়ার টা অন করে দিতেই রোদ ভয়াবহ ভাবে রেগে গেলো৷ আদ্রিয়ান পাত্তা দিলো না। ভালোমতো রোদের চুল ধুয়ে দিতে ব্যাস্ত ও। রোদ যেহেতু ইদানীং বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না তাই আদ্রিয়ান উঁচু একটা টুল এখানে রেখেছে। আপাতত রোদকে ওটাতে বসিয়েই গোসল করাচ্ছে ও। এদিকে রোদ চেচিয়ে বলে যাচ্ছে,

-- সবসময় একদম ভালোলাগে না আমার। বলেছি না একবার এখন না।তবুও কেন জোর করেন? পরে করলে কি হতো? আমার ঘুম আপনার সহ্য হয় না। আমার কিছুই আপনার সহ্য হয় না।

রেগে বলতে বলতে আবার কেঁদে দিলো রোদ। হাঁপিয়ে উঠেছে এত কথা বলে। পেটে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আদ্রিয়ান সাওয়ারটা অফ করে দিয়ে রোদের সামনে দাঁড়িয়ে আলতো হাতে ওর মাথাটা নিজের কাছে নিলো। আদ্রিয়ানের পেটে এসে ঠেকলো রোদের মাথা। ভেজা চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আদ্রিয়ান বললো,

-- সোনা আমার কাঁদে না। তোমার সব অভিযোগ শুনছি। বলো।

রোদ দুই হাতে আদ্রিয়ানের কোমড়টা জড়িয়ে ধরলো। মুখটা ঘঁষে দিলো পেটে। আদ্রিয়ান আবারও বলতেই রোদ বললো,

-- আমি জানি না কেন এমন হচ্ছে। আমি এতটা কেন রিএক্ট করি। ভালোলাগে না কিছু।

-- কোন ব্যাপার না। এটা স্বাভাবিক পাখি।

রোদকে ছাড়িয়ে ওর ভেজা চুল গুলো কাটা দিয়ে আটকে শরীরে বডি ওয়াস দিয়ে সুন্দর করে গোসল করাচ্ছে আদ্রিয়ান। রোদ চুপচাপ বসে নেই। দুষ্টামিতে মেতে আছে। কে বলবে মাত্র রেগে আবার কাঁদছিলো এই মেয়ে? এই তো দিব্যি দুষ্টামি করছে ও। ফেনাগুলো আদ্রিয়ানকে লাগিয়ে দিচ্ছে আবার পানি ছিটাচ্ছে। বলতে হবে ধৈর্যশীল পুরুষ আদ্রিয়ান। এত ধৈর্য কার ই বা আছে। বউকে সুন্দর করে গোসল করিয়ে একটা টাওয়াল মাথায় পেচিয়ে দিলো। পোশাক পাল্টাতে সাহায্য করলো। হাতের ভেজা ঢোলা পোশাকটা দেখেই আদ্রিয়ানের মনে পরলো কিছুদিন আগের কথা।

এই তো তখন রোদের পেট ফুলা শুরু হয়েছিলো। কোন ড্রেসই পরতে পারছিলো না। কতক্ষণ কেঁদেছিলো সেই শোকে। আদ্রিয়ান সেই দিনই ম্যাটারনিটির এতগুলো পেশাক এনেছিলো। সেগুলো দেখেই যেন রাগে লাল হয়েছিলো রোদ। ওর কথা ও কেন পরবে এগুলো? এগুলো নাকি বয়স্ক মহিলারা পরে। রোদকেও বুড়ি সাজাতে নাকি আদ্রিয়ান এগুলো এনেছে। কিন্তু যখন দেখলো পুড়নো সব কাপড়েই ওর সমস্যা হচ্ছে। আরাম পাচ্ছে না কিছুতেই তখন রাতে জোর করে আদ্রিয়ান একটা পরিয়ে দেয় কারণ রোদ ঘুমাতে পারছিলো না। অবশেষে ঢোলা পোশাকেই সস্তি পেল ও। সেই থেকেই এগুলো পরা ধরেছে নাহলে কার সাধ্য ছিলো রোদকে এগুলো পরাবে?

রোদের খোঁচা দেয়াতে আদ্রিয়ানের ধ্যান ভাঙলো। সুন্দর করে রোদকে মুছিয়ে পোশাক পড়িয়ে ওযু করতে সাহায্য করলো আদ্রিয়ান। নিয়ে কাউচে বসিয়ে বেড গুছিয়ে নিজেও ঢুকলো গোসল করতে। জোহরের নামাজটা দুইজন একসাথে আদায় করে নিলো। রোদ অবশ্য এখন চেয়ারে বসে নামাজ পড়ে। ঝুঁকে সিজদাহ্ করতে পারে না। এত বড় পেট নিয়ে সম্ভব হয় না এখন। রাতের পর রাত এখন তাহাজ্জুদে কাটিয়ে দেয় আদ্রিয়ান। রোদ ও পরে যতটুকু পারছে। হয়তো দোয়ার বরকতেই এখন পর্যন্ত সব ঠিক ঠাক চলছে।

________________

দিশা হাতে ফোনটা তুলে পড়নের কাপড়েই শশুর বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেল। চোখ দিয়ে মেয়েটার এক ফোটা ও পানি পরছে না। সকলের অগচড়ে বেরিয়েছে ও। কোথায় যাবে? গন্তব্য জানা নেই। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে চলেছে। এদিক ওদিক যাওয়া যাবে না। কার পাল্লায় আবার পরে?ভেবেই বাসার দিকে পা চালালো। বাসায় ওকে দেখতেই সকলে চমকে উঠলো। এভাবে বাসার পোশাকেই শুধু মাথায় একটা ঘোমটা দিয়ে চলে এসেছে দিশা। দিশা সোজা নিজের বাবা'র সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-- আব্বু আমি কি এখানে কিছুদিন থাকতে পারি?

দিশার বাবা অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন। কি বলে তার মেয়ে? হরবর করে বলে উঠলেন,

-- কি বলিস আম্মা? তোমার বাড়ি এটা। যতদিন খুশি থাকবে।

-- আমাকে কেউ কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। আর না ই ওই বাসায় যেতে জোর করবে। ওনারা আসলেও না। তবে বলে রাখি কারো সাথে কোন সমস্যা হয় নি আমার। এমনিতেই এলাম আবার চলে যাব। এখন যাই।

কথাগুলো বলেই নিজের রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলো দিশা। হাটু মুড়ে বসে কেঁদে ফেললো নিঃশব্দে। সুখ কেন নেই ওর কপালে? কেন নেই? সব দোষ কি রাদকে ভালোবেসে? কোই দিশা তো এখন রাদকে মনে করে না। কিঞ্চিতে মনে পরলেও ভুলে যায় দিশা তাহলে রাতুল কেন রোদকে ভুলে না? দিশা তো রাতুলকে নিজের মনে জায়গা করে দিতে ব্যাস্ত। তাহলে রাতুল কেন বুঝে না? কেন দিশাকে অবহেলা করে? কেন দিন শেষে ওদের সম্পর্ক দৈহিক ই রয়ে যাচ্ছে? কেন আত্নীক হচ্ছে না? ভাবতেই গুমড়ে কাঁদে দিশা। সংসার থেকে মন উঠে যাচ্ছে ওর। একা একটা সম্পর্ককে আর কত টানবে ও?

রাতুল দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে। না দিশাকে সময় দেয় না নিজের পরিবারকে। দিশা এটা সেটা সব করলেও রাতু্ল থেকে রেসপন্স জিরো। গত পরসু রাতে যখন দিশা রাতুলের উন্মুক্ত বক্ষে মাথা দিয়ে আবদার করেছিলো, যাতে দুই জন কোথায় ঘুরতে যায় তখন রাতুল জানায় সে ব্যাস্ত। দিশা'র জোরাজুরিতে রাজি হয়ে বলে কাল ঘুরতে যাবে দুপুরে। সেই দিশা দুপুর থেকে তৈরি হয়ে ছিলো৷ রাতুলের কোন খবর নেই। কত কল করলো ফোন সুইচ অফ। দিশা রাত পর্যন্ত ওভাবেই বসে ছিলো। রাত ১১ টায় রাতুল যখন বাসায় ফিরলো তখন দিশা'র মনে কোথায় একটু ছিলো হয়তো রাতুল মাফ চাইবে। হয়তো এখন দিশাকে আদর আদর কথা বলবে। হয়তো একটা ফুল দিবে। কিন্তু না কিছুই হলো না। রাতুল ফ্রেশ হয়ে এসে দিশাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখেই দরজা লাগিয়ে এসে লাইট অফ করে দিলো৷ পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। দিশা ভাবলো এই তো এই বুঝি রাতুল ওকে কোন সারপ্রাইজ দিলো। কিন্তু দিশার সকল ভাবনা মিথ্যা করে দিয়ে রাতুল ওকে কোলে তুলে নিলো বিছানায়। এই প্রথম হয়তো দিশার মনে হয়েছিলো রাতুল ওকে নোংরা করে দিলো। দিশা কি রাস্তার মেয়ে হয়ে গেল? হবে হয়তো। নাহলে রাতুল কেন শুধু নিজের পুরুষত্ব দেখাতেই দিশার সানিধ্যে আসে। ভালোবাসতে কেন নয়? বিবেকের তাড়নায় দিশা দিকবিদিকশুন্য হয়ে পরে। সকালে রাতুল আবার নিজের মতো উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা চাইতেই যন্ত্রের ন্যায় দিশা উঠে ওকে নাস্তা সাজিয়ে দিলো। সেই থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক ভেবে চিন্তা করে দিশা ঐ বাড়ী থেকে চলে এসেছে। রাতুলের এতদিনের আচরণ ওকে যতটা কষ্ট দিয়েছে তার থেকেও পীড়াদায়ক ছিলো গতরাতের স্পর্শ। যা ছিলো সম্পূর্ণ ভালোবাসাহীন।

#চলবে....

( বর্ধিতাংশ আসবে। ছোট্ট বলে রাগ করবেন না।)

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৬(বর্ধিতাংশ)

অবশেষে দীর্ঘ নয় মাস তিন সপ্তাহ প্রতিক্ষায় অবসান ঘটিয়ে নিজের স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো ছোট্ট একটি প্রাণ। সে জানান দিচ্ছে পৃথিবীতে তার অবস্থান। ছোট্ট ছোট্ট হাত পা ছড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে সে। সবার প্রথম যার হাতে তাকে তুলে দেওয়া হলো সে হলো তার বাবা। অদ্ভুত ভাবে বাবা'র সানিধ্য পেয়েই চুপ করে গেলো সে। আদো আদো চোখ খুলে বাবা'কে দেখতে ব্যাস্ত সে। রাদ ঝুঁকলো। চুমু খেল ছেলের কপালে। মুখে আওড়ালো,

-- মাশাআল্লাহ।

পাশেই জাইফা অর্ধ জ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম দরকার ওর। ড.মিহা হেসে রাদের পিঠ চাপড়ে বললো,

-- ইউ হেব ডান ইট রাদ। আলহামদুলিল্লাহ।

রাদ একপলক মিহা'কে দেখে নিলো। নার্স এসে রাদের ছোট্ট ছেলেকে কোলে তুলে নিলো পরিষ্কার করার জন্য। রাদ এবার জাইফা'র কাপলে উষ্ণ স্পর্শ দিলো। নরমাল ডেলিভারি হয়েছে জাইফার। পুরোটা সময় রাদ ছিলো পাশে। স্ত্রী'র হাত ধরে সাহস জুগিয়েছে প্রতিনিয়ত। ক জন পুরুষ পারে এমন? রাদ পেরেছে। প্রিয়তমা'র পাশে থেকেছে। তীব্র যন্ত্রণায় যখন জাইফা ছটফট করছিলো তখন রাদ ই ছিলো যার কথায় সাহস পেয়েছিলো মেয়েটা। প্রথম মা-বাবা হয়েছে দুজন। খুশিতে রাদের চোখে পানি জমলো। কেবিন থেকে রাদ বের হতেই দেখলো নিজের সব আপনজনদের। শুধু নেই আদরের ছোট্ট বোনটি। আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। রাদ খুশি মনে এগিয়ে এসে জানালো তার ছেলে হয়েছে এবং মা আর সন্তান দুজনই সুস্থ। সকলেই খুশি হলো।

"আমাকে দেখাও। কই? এই ফোন ধরেন ঠিক করে।"

হঠাৎ এমন আওয়াজে রাদের বুঝতে বাকি রইলো না তার পাগল বোন ভিডিও কলে আছে। রাদ হেসে এগিয়ে আদ্রিয়ান থেকে ফোন নিয়ে বললো,

-- এখনো কেউ দেখে নি। আমি দেখেছি শুধু আর ডক্টর'রা।

-- কখন দেখাবে?

রোদের বলতে বলতেই নার্স বাচ্চা নিয়ে হাজির। রাদ সবার আগেই রোদকে দেখালো। রোদ যে কতটা উচ্ছাসি তা হয়তো সকলেই আন্দাজ করতে পারলো। একে একে সবাই দেখলো। রাত হওয়াতে বাকিরা বাসায় ফিরে গেলো। থেকে গেলো দিশা,রাদের মা আর জাইফার মা। রাদ ছেলে আর বউকে নিয়েই ব্যাস্ত রইলো।

______________

বাসার সবাই যে যার রুমে। আদ্রিয়ান এখনও আসে নি। কিভাবে আসবে? রোদের প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে আদ্রিয়ান বাসায় বেশি সময় দেয়। অফিসের কাজ বাসা থেকেই করে। যতটুকু না গেলেই না ততটুকু অফিসে গিয়ে করে আসে। মিটিং গুলো ভার্চুয়াল ভাবেই করে তবে সব তো আর বাসা থেকে সম্ভব না। এই কোম্পানির ষাট পার্সেন্ট আদ্রিয়ানের করা। বাকি চল্লিশ পার্সেন্ট ওর বাবা'র। যার মালিক ওরা তিন ভাই বোন। আদ্রিয়ান সেখান থেকে নিবে না আগেই জানিয়েছে কিন্তু সমস্যা হলো আরিয়ান আপাতত ব্যাবসায় হাত দিতে চাচ্ছে না। সময় হচ্ছে না আর জারবা ছোট। না চাইতেও দায়িত্ব ঘুরে ফিরে আদ্রিয়ানের উপরই। ওর বাবা'র বয়স হয়েছে ইদানীং। উনি ও সব একহাতে সামলাতে পারেন না। তাই আদ্রিয়ানের অফিসে যেতেই হচ্ছে। নাহলে এই অবস্থায় নিশ্চিত ও বউ ছেড়ে নড়তো না।
রোদের হঠাৎ করেই পেটে ব্যাথা অনুভব হলো। মাত্রা বাড়তেই রোদের ঘাম ছুটে গেলো। আদ্রিয়ান থাকলে এখন একটু সুবিধা হতো। রোদের এখন এমন হয়েছে যে এক মুহূর্ত ও আদ্রিয়ান ছাড়া থাকা দায়। কাকে ই বা ডাকবে? ডেকেই বা কি হবে? দিন নেই রাত নেই এই ব্যাথা হয়েই থাকে। বাচ্চা দুটো যত বড় হচ্ছে ততই রোদের ভোগান্তি বেড়ে চলছে। মা হওয়া মোটেও সহজ কিছু না। রোদ তা হাড়ে হাড়ে টের পায় এখন। মাঝে মধ্যে হাসি পায় ওর। কোন এক সময় ও কাঁদতো কেন মা হতে পারবে না এটা ভেবে। ভুগেছিলো ডিপ্রেশনে। অথচ এখন ভুগে মাতৃকালীন যন্ত্রণায়। অদ্ভুত।
হঠাৎ কান্নার শব্দ পেলো রোদ। বুঝতে দেড়ী হলো না কার কন্ঠ এটা। পেটে ব্যাথা ও করছে। না পেরে উঠে দাঁড়িয়ে গেল রোদ। দেয়াল ধরে ধরে সামনে হাটা দিলো। ইদানীং একা নিচে নামে না ও। আদ্রিয়ান ধরে ধরে নামায়। প্রয়োজন ছাড়া অবশ্য নামায় ও না। রোদ উঁকি দিয়ে দেখলো মিশি ফ্লোরে বসে কাঁদছে। আশেপাশে ও কেউ নেই। রোদ হাঁক ছেড়ে ডাকলো,

-- মিশি।

মিশি শুনলো না। একমনে বসে কাঁদছে ও। উপায়ন্তর না পেয়ে সিড়ির রেলিং আঁকড়ে রোদ নামতে লাগলো। পেট যথেষ্ট উঁচু হওয়াতে নিচের দিকে ভালো দেখতে পায় না। মনে হয় এই বুঝি পরে গেলাম। এদিকে পেট ও ব্যাথা করছে। মাথা ঘুরাচ্ছে। ঘেমে উঠেছে রোদ। অনেক কষ্টে নিচে নামলো। একবার শাশুড়ী'কে ডাকও দিলো। সাড়া এলো না। হেঁটে হেঁটে বেশ সময় লাগিয়ে মিশির কাছে গেলো রোদ৷ এখন ঝুঁকা তো সম্ভব না। চেয়ার ধরে হাঁপাচ্ছে রোদ। এতদূর হেটে বেশ ক্লান্ত হয়েছে ও। তবুও আদর লাগিয়ে ডাকলো,

-- মিষ্টু মা আমার উঠে আসো বাচ্চা। মা ঝুঁকতে পারছি না সোনা।

মিশি উঠছে না। ওর কথা পরে গিয়েছি এখন তো মায়ে'র কোলে তুলে নেয়ার কথা। তাহলে কেন মা নিচ্ছে না। রোদ একবার চেষ্টা ও করলো কিন্তু সম্ভব হলো না। আবারও বললো,

-- মাম্মার কিশমিশ উঠে এসো মা। এই দেখো তেমার ভাই-বোন'রা ডাকছে তোমায়।

মিশি তাকালো একবার। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। রোদ হাত বাড়াতেই তা ধরে উঠলো মিশি। উঠেই হাত বাড়িয়ে দিলো মায়ে'র দিকে। মানে কোলে নাও। ব্যাথা পেয়েছে মিশি। এখন কোলে উঠা ফরজ কাজ ওর। রোদের নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে। কিভাবে কোলে তুলবে ও? তাই বললো,

-- মা মাম্মার হাত ধর। চলো সোফায় বসে মাম্মা কোলে নিব।

মিশি যাবে না। ও এখনই উঠবে। রোদ এক হাত পেটে দিয়ে আরেকহাতে চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে মিশি মায়ে'র কোমড় জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে। রোদ এবার রীতিমতো ভালো করেই হাঁপাচ্ছে। ওর মাথা ঘুরিয়ে যাচ্ছে। মিশি'কে ধরবে নাকি নিজেকে তাই বুঝতে পারলো না। আদ্রিয়ান ঠিক তখনই বাসায় ডুকলো। দরজা পর্যন্ত এসে মিশি'র কান্নার শব্দ শুনে বাকিটুকু আর হেটে না এসে কিছুটা দৌড়েই এলো। ডুকেই এমন দৃশ্য দেখে আদ্রিয়ান চমকে গেলো। কয় ঘন্টা ই বা বাইরে ছিলো ও? তাতেই এই অবস্থা? রোদ চেয়ার ধরে হাঁপাচ্ছে আর মিশি ওর কোমড় জড়িয়ে কাঁদছে। ছুটে এলো আদ্রিয়ান। মিশিকে কোলে তুলে নিয়ে রোদের দিকেও হাত বাড়িয়ে দিলো। মিশি বাবা'কে পেয়েই অভিযোগ করলো মা কোলে তুলে নি তাকে। সে ব্যাথা পেয়েছে। রোদ মাথা এলিয়ে দিলো আদ্রিয়ানের কাঁধে। আদ্রিয়ান পরলো বেকায়দায়। জোরে ডাক দিলো ওর মা'কে। হয়তো তিনি বাসায় নেই তাই আদ্রিয়ানের ডাকে জারবা আর মিশান বেরিয়ে এলো। রোদ ততক্ষণে শরীর ছেড়ে দিয়েছে। মিশিকে মিশান কোলে তুলে নিয়ে। রোদকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে আদ্রিয়ান রুমে হাটা দিলো। মুখে পানি ছিটিয়ে বার কয়েক ডাকলো। ক্লান্ত রোদ চোখ খুলে আবারও বুজে নিলো। আদ্রিয়ানের হাতটা নিজের বুকে চেপে নিলো। এই আদ্রিয়ান এখন যে কতটা অস্থির হয়ে আছে তা রোদ ছাড়া কে ই বা জানে?

_______________

রাতুল বাসায় ডুকলো বেশ রাতে। ডুকতেই ভ্রু কুচকে এলো ওর। খাবার টেবিলে দিশা নেই। রোজ তো থাকে। আজ কোথায়? তবুও ততটা না ভেবে রুমে ডুকলো। এখানেও না দেখে এবার রাতুল হাতের ব্যাগটা সোফায় ছুড়ে জোরে ডাক দিলো,

-- দিশা! দিশা!

জবাব এলো না৷ রাতুল বিরক্ত হলো। শার্ট খুলতেও ভীষণ আলসেমি লাগছে ওর। ও আসলে তো দিশাই বোতাম খুলে দিতো। কোমড়ে হাত গুজে ওয়াসরুম,ব্যালকনিতে চেক করলো। না নেই। কিছুটা জড়তা নিয়েই মায়ে'র রুমের দিকে গেলো। মায়ে'র সাথে ভালোভাবে কথা হয় না অনেক সময় ধরে। তাই কিছুটা সঙ্কোচ নিয়েই নক করে বললো,

-- আম্মু দিশা কি এখানে?

-- না তো। কেনো?

-- কোথাও নেই তো।

কথাটা বলেই রাতুল সারা বাড়ী খুঁজলো। না পেয়ে কল করলো। দিশা ধরলো না। অস্থির হলো রাতুল।দিশা কোথায়? ওদের তো কোন ঝগড়া ও হয় নি। তাহলে? তিশা'কে কল দিতেই ও ধরলো৷ দিশা'র কথা জিজ্ঞেস করতেই তিশা জানালো দিশা হসপিটালে আছে জাইফার কাছে। রাতুল আচ্ছা বলে ফোন রাখলেও রেগে উঠলো এটা ভেবে কেন একবার বলে গেলো না। রাতুল কে কি একবার বলা যেতো না?

#চলবে......

( রিচেক করা হয় নি। ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

15/08/2023

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৫

রোদকে বাসায় আনা হয়েছে। আপাতত ঘুমাচ্ছে ও। আদ্রিয়ান কোথায় গিয়েছে কেউ জানে না। রোদকে বাসায় রেখেই বেরিয়েছে। ড্রয়িং রুমে পিনপতন নীরবতা। রোদের পরিবারও এখানে আছে। রোদের মা মেয়ের ভালোবাসায় কিছুটা স্বার্থপরায়ণ হয়ে ভেজা গলায় বলে উঠলেন,

-- ওদের তো দুটো সন্তান আছেই। আর কি দরকার?আমার মেয়েটা সুস্থ থাকুক।

আকুল আবেদন। মা হয়ে তার কাছে মেয়ের আগে কিছুই না। এটাই কি স্বাভাবিক নয়? রোদের বাবা মুখটা যথেষ্ট গম্ভীর করে বসে আছেন। যেন তারও এই কথাই। বাকি সবারও একই মতামত যা বুঝা যাচ্ছে নাহলে কেউ কেন এখনও কোন প্রকার দ্বিমত পোষণ করছে না? সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নিশ্চিত আদ্রিয়ানের কিন্তু সে কোথায়? ঐ যে গেলো এখনও এলো না। রোদের পরিবার মেয়েকে দেখে চলে গেলেন। তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অটুট।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। আদ্রিয়ান বাসায় ফিরলো। কাল রাত থেকে ভবঘুরের মতো ঘুরছে ও।বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গাইনোকলজিস্ট এর সাথে দেখা করেই মাত্র বাসায় ফিরলো৷ এটাই তো শেষ ভরসা ছিলো। ভেবেছিলো ভিন্ন কিছু শুনবে কিন্তু না কোন প্রকার ভিন্ন বাক্য শুনে নি ও। ড.মিহা যেই তিক্ত কথাগুলো বলেছিলো সেগুলোই আবার শুনেছে আদ্রিয়ান।
"এবোর্শন" শব্দটা কানে খুব জোড়ালো ভাবে বাড়ি খাচ্ছে ওর। ড.মিহা সোজাসাপটা বলে দিয়েছেন এটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আলট্রা'তে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে ফিটাস দুটো। সেই রিপোর্ট হাতেই আদ্রিয়ান তখন হসপিটালে হতভম্ব হয়ে বসে ছিলো সহ বাকি সবার মুখে ছিলো আতঙ্ক। যেখানে সব দম্পতির জন্য টু ফিটাস শব্দটা আনন্দের। খুশির। সেখানে আদ্রিয়ান-রোদের জীবনে শব্দটা হলো আতঙ্কের। হারানোর বেদনার। যেখানে রোদের বডি একটা বাচ্চার জন্যই প্রস্তুুত নয় সেখানে দুটি একসাথে। কোন ভাবেই এটা সম্ভব নয়। হাই রিক্স প্রেগ্ন্যাসি এটা। এমনকি শেষ পর্যন্ত বাচ্চাদুটো আর মা বাঁচবে কি না তারও নিশ্চয়তা নেই। এমনকি মাঝপথেই ড্রপ হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা রোদ। ওর লাইফ রিস্কে আছে। ডেলিভারিতে জটিলতার সম্ভবনাই বেশি। এমনকি জীবন ঝুঁকি যা আগে ছিলো তার থেকেও বেড়েছে। অথচ মেয়েটা বেখবর। হসপিটাল থেকে কতটা খুশি হয়ে এসেছে তা শুধু মাত্র রোদই জানে। কেউ ওকে বলে নি যে জমজ হবে। নার্সের কাছ থেকে শুনেছে। খুশিতে যখন আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলেছিলো তখন আদ্রিয়ান ও কেঁদেছিলো। রোদ ভেবেছে হয়তো রোদের মতোই খুশিতে কাঁদছে অথচ আদ্রিয়ান কাঁদছিলো দুটি না আসা সন্তানের প্রাণ আশঙ্কায়। সাথে রোদের জন্য। এই রোদ ছাড়া আদ্রিয়ান বাঁচবে না। কিছুতেই না। আবার সন্তানের লোভ ও সামলাতে ব্যার্থ আদ্রিয়ান। যেখানে একটা সন্তান চলে গিয়েছে এটা শুনেই অতি শোকাহত ছিলো আদ্রিয়ান সেখানে আজ দুটো সন্তান আছে যাদের সাথে রোজ রোজ কথা বলে আদ্রিয়ান-রোদ। এই সন্তানদের কিভাবে কুরবান করবে আদ্রিয়ান?আর রোদ? ঐ পাগলটাকে কিভাবে সামলাবে আদ্রিয়ান?
রুমে ডুকার আগেই আদ্রিয়ানের মা ডেকে উঠলেন। আদ্রিয়ান আসছি বলে রুমে ডুকলো ফাইল রাখতে। রোদ তখন মিশি আর মিশানকে নিয়ে গল্প করতে ব্যাস্ত। ওরা চারজন হবে। বড় একটা দল হবে সহ কত কি। মিশি আর মিশানের খুশির শেষ নেই। দুই জনই প্রচন্ড এক্সাইটেড জমজদের জন্য। আদ্রিয়ানের বুকটা হু হু করে উঠলো। খালি খালি লাগছে সব। আলমারি খুলে কাপড় নিতেই কানে এলো রোদের কন্ঠ,

-- কোথায় ছিলেন আপনি? খেয়েছেন দুপুরে? কল করলাম কত? ধরেন নি কেন হ্যাঁ? আমরা পাঁচজন টেনশনে ছিলাম।

আদ্রিয়ানের এখন কান্না আসছে। কিন্তু সেটা করা যাবে না। কাপড় হাতেই ওয়াসরুমে ডুকে পড়লো। রোদ ভ্রু কুচকে মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,

-- আমি কি আস্তে বলেছি? তোমার বাবা কি শুনে নি?

-- শুনেছে তো।

রোদ চিন্তিত হলো। আদ্রিয়ানের একটুও অবহেলা যে সহ্য হয় না। আবার ভাবলো হয়তো টায়ার্ড। মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,

-- বাবা নিচে দিদা'কে বলো বাবা'র জন্য খাবার বেড়ে দিতে। রুমে নিয়ে আসবে।

ঘাড় দুলিয়ে মিশিকে সহ মিশান রুম ত্যাগ করলো। রোদের কথা মত আদ্রিয়ানের জন্য খাবার রুমে দিয়ে মিশান গিয়েছে। রোদ প্লেট হাতে অপেক্ষা করছে আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান প্রায় ঘন্টা খানিক পরই বের হলো। রোদ তবুও ধৈর্য হারা হলো না। আদ্রিয়ান বারান্দায় টাওয়াল মেলতে গেলেই রোদ বললো,

-- আমার পাশে বসুন চুপচাপ।

আদ্রিয়ান টাওয়াল রেখে চুপচাপ তাই করলো। চোখ,মুখ ফুলা আদ্রিয়ানের। নিশ্চিত কাল রাত ঘুমায় নি। রোদ ভাত মেখে আদ্রিয়ানের মুখে তুলে দিতেই আদ্রিয়ান খেয়ে নিলো। খাওয়াতে খাওয়াতেই রোদ বলতে লাগলো,

-- মুখের কি অবস্থা? বাবুরা এসে আমাকে বলবে আমি তাদের আব্বুর খেয়াল রাখি নি৷ আর কল যদি আর এমন রিসিভ না করেন তাহলে আমি আর কথা বলব না। চিন্তা হয় না আমার?

অভিমানী সুর রোদের। আদ্রিয়ান খেতে খেতে আর কোন প্রতিত্তোর করলো না। রোদের হাতে তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে। ক্ষুধা লেগেছিলো প্রচুর। গত রাতের পর আর খাওয়া হয় নি। খাওয়া শেষ হতেই রোদ বললো,

-- কখনো শুনেছেন কেউ নিজেদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকি এভাবে পালন করে? সারাদিন কোথায় ছিলেন? বলুন? বাসার কেউ তেমন ভাবে উইস ও করলো না। শুধু ফেসবুকে উইশ করেছে সবাই। একসাথে দুটো খুশির খবর। একেতো বিবাহ বার্ষিকি তার উপর আমাদের টুইন হবে। সেলিব্রেশন নাহয় ছোট করে করতাম।

আদ্রিয়ান রোদের সব অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনলো। রোদ তো করলো অভিযোগ কিন্তু আদ্রিয়ান কোথায় করবে? ওর অভিযোগ শুনার কে ই বা আছে?
আদ্রিয়ান এগিয়ে রোদের ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে নরম কন্ঠে বললো,

-- আম্মু ডেকেছিলো। কথা বলে আসি।

রোদ মাথা দুলালো। আদ্রিয়ান প্লেট হাতে বের হলো।
পাশাপাশি বসে আছে আদ্রিয়ানের পরিবারের সবাই। সবার কথার মূলে রয়েছে একই ইঙ্গিত। বাচ্চাগুলোকে মারার কথা বলছে। হ্যাঁ এটাই তো বলছে। সহ্য হচ্ছে না আদ্রিয়ানের। অতি দুঃখে হাতটা মুঠ করতেই রগ গুলো ফুলে উঠলো। আদ্রিয়ানের বাবা গম্ভীর কণ্ঠে কাতরতা অনুভূতিপ্রবণতা সহ বলে উঠলেন,

-- রোদের পরিবার ও এটাই চাইছে আদ্রিয়ান। দুটো সন্তান তো আছেই। তার তাছাড়া রোদের লাইফ সেফ থাকবে না। এটা তো জানোই। আর যত দেড়ীতে করা হবে রোদের রিক্স বেড়ে যাবে।

আদ্রিয়ান মাথা তখনও নীচু করে আছে। আরিয়ান ছোট ভাইকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। সান্ত্বনা দেয়ার জন্য শব্দের খুব অভাব। কি বলবে? আদ্রিয়ান উঠে চলে গেলো। পেছনে আরিয়ানও গেলো। এমন মুহুর্তে ভাইকে একা কিভাবে ছাড়বে?

_________________

দিশা এখন আর কিছু বলে না। আজ হঠাৎ শরীর হালকা খারাপ লাগছে ওর। রাত ভর ঘুম হচ্ছে না। রাতুলের সাথে জেগে থাকতে হচ্ছে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে দিশা। মনকে হাজার বুঝ দিয়ে রাতুলের জন্য ভালোবাসা জন্মাতে চাইছে। কিছুটা হয়তো হয়েছেও। আল্লাহর দেয়া পবিত্র বন্ধন বলে কথা। মায়া,টান আল্লাহ নিজে সৃষ্টি করে দেন স্বামী স্ত্রী'র মাঝে। নিজেকে সামলাতে যথেষ্ট চেষ্টায় আছে দিশা। কি হবে ধোঁয়াশার পেছনে ছুটে? বর্তমানটা নিয়েই না হয় একটু খুশি থাকুক। সেই থেকে রাতুলের প্রতি ধ্যান দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে দিশা। ঘন্টাখানিক আগেই রাতুলকে কল করেছিলো রিসিভ হয় নি। দিশা ব্যাস্ত ভেবে আর কল করে নি। শাশুড়ীকে সঙ্গ দিতে ছুটেছে তার রুমে। এখন থেকে নিজের সুখ চাইবে দিশা। রাতুলকে নিয়ে ভালো থাকবে। আর কত বিষাদে মাখামাখি হবে ও? সুখ নিশ্চিত এবার ধরা দিবে ওর দারে।
রাতুল বাসায় ফিরতেই দিশা রোজকার ন্যায় সব গুছিয়ে দিলো। পানিটাও রাতুলকে ঢেলে খেতে হয় না। বউ তার সব করে দেয়। রাতুল একমনে খাচ্ছে। পাশেই দিশা বসা। দিশা ভাবলো রাতুল হয়তো দিশাকেও খেতে বলবে কারণ দিশা তো রাতুলের অপেক্ষায় ছিলো। খায় নি এখনও কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। নিজে খেয়ে উঠে গেলো রাতুল। দিশা ঠাই বসে। একটু কি রাতুল জিজ্ঞেস ও করতে পারলো না যে দিশা খেয়েছে কি না?
তবুও মনকে বুঝ দিলো দিশা হয়তো রাতুল টায়ার্ড বা অতটা খেয়াল করে নি। তাই আর ঘাটলো না। সব গুছিয়ে নিজে না খেয়েই রেখে দিলো। শাশুড়ী অবশ্য অনেক বলেছিলো খেতে। দিশাই খায় নি। বলেছে রাতুলের সাথে খাবে কিন্তু হলো না।
সব গুছিয়ে রুমে ডুকলো দিশা। কপালে হাত ঠেকিয়ে রাতুল চোখ বুজে আছে। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো দিশা। রাতুলের পাশে পা উঠিয়ে বিছানায় বসে হাত রাখলো রাতুলের কপালে। চোখ মেলে এক পলক তাকালো রাতুল। দিশা সুন্দর করে হেসে জিজ্ঞেস করলো,

-- মাথা ব্যাথা?

-- হুম।

রাতুলের ছোট্ট উত্তর। দিশা হাত দিয়ে সুন্দর করে রাতুলের মাথা টিপে দিলো। আরাম পাচ্ছে রাতুল। রোদের চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর। হসপিটালে শুনেছে আজ রোদের অবস্থা। যত যাই হোক না কেন রাতুল সবসময় ই চায় রুদ্রিতা ভালো থাক। সুখে থাক। যার সুখের আশায় রাতুল ছটফট করতে ব্যাস্ত সেখানে রাতুলেরই সিয়রে বসে তার স্ত্রী নিজের সুখ খুঁজতে ব্যাস্ত রাতুল থেকে। অথচ সে বেপারে বেপরোয়া রাতুল।

________________

জাইফা'কে নিতে চেয়েছিলো ওর পরিবার অনেকবার কিন্তু বরাবরই রাদ না করেছে। বউ কাউকে দিবে না সে। বউ তার বাচ্চা তার তাহলে কেন অন্য বাসায় থাকবে? এতদিন এটা বলে আসলেও আজ রাদ অন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাইফার ডেলিভারি ডেট এগিয়ে আসছে। আর আপাতত বাসার অবস্থা আর রাদের নিজের অবস্থা কতটা ভঙুর তা রাদ ই জানে। প্রিয় তার ছোট্ট বোনটার সাথে কি থেকে কি হচ্ছে তাই বুঝে উঠতে পারছে না ও। জাইফা ভরা পেটটা নিয়ে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। রাদ আস্তে করে উঠলো। নিজেই চুলগুলো বেঁধে দিয়ে জাইফা'কে ধরে বেডে বসালো। নিজে বসলো হাটু গেড়ে ওর পাশে। মলিন হাসলো জাইফা৷ রোদটা যে সবার ই প্রিয়। রাদ উঁচু হওয়া পেটে চুমু খেয়ে হাত বুলালো। জাইফা রাদের গালে হাত রেখে বললো,

-- আল্লাহর কাছে দোয়া ছাড়া কিছু করার নেই রাদ। ভরসা রাখুন।

রাদ মাথা রাখলো আলতো করে জাইফার উঁচু পেটে পরপরই মাথা উঠিয়ে বললো,

-- কাল তেমাকে তোমাদের বাসায় রেখে আসব জায়ু। আমি রোজ যাব দেখা করতে। আর মাত্র কয়েকটা দিন। বাবু তো এসেই যাবে ইনশাআল্লাহ।

জাইফা হাসলো। বললো,

-- আপনি কিভাবে ভাবলেন আমি চলে যাব?

-- এখানে তোমার যত্ন নেয়া সম্ভব হবে না জান। বুঝার চেষ্টা করো।

-- আমার যত্নের কোন খোট থাকবে না এটা আমি জানি রাদ। আমাকে এতটা পর কেন মনে করেন? আমি তো আপনারই। আপনাকে আর এই পরিবার'কে এমন অবস্থায় একা ছাড়বো কিভাবে ভাবলেন আপনি?

রাদের চোখ গড়িয়ে কয়েক ফোটা পানি পরলো যা খুব যত্নের সাথে মুছে দিলো জাইফা।

________________

আদ্রিয়ান নিজেকে শক্ত করেছে। বহু কষ্টে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও। এটা ব্যাতিত কোন উপায় ও তো নেই৷ ঠেলে ঠুলে পা চালিয়ে রুমে ডুকলো। আস্তে করে দরজা লাগিয়ে দিলো। কথাগুলো সব সাজিয়ে এসেছে আদ্রিয়ান। রোদকে বুঝাতে হবে। বলতে হবে বাচ্চাগুলো রাখা যাবে না। ডক্টর তো সোজাসুজি বলেছে বেবিগুলো শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না তার ভরসা নেই। ডেলিভারিতেও রোদের লাইফ রিস্ক। রোদের পড়াশোনা একেবারেই শেষ হয়ে যাবে কারণ ওর বেড রেস্টে থাকতে হবে। তাহলে পথটা কোথায়? যত দ্রুত করবে ততটা রোদের জন্য ভালো। এসব ভাঙতেই ভেঙে গেল আদ্রিয়ান। আবার নিজেকে শক্ত করলো। রোদ বেডেই হেলান দিয়ে বই পড়ছে। আদ্রিয়ান ওর পাশে বসেই ডাকলো,

-- রোদ?

বই থেকে মুখটা সরিয়ে রোদ বললো,

-- জ্বি।

কি বলবে আদ্রিয়ান ভেবে পেলো না। জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিলো। বলতে তো হবেই। নিজেকে যথা সম্ভব সামলে আদ্রিয়ান রোদের হাত থেকে বইটা সরিয়ে পাশে রাখলো। রোদ ভ্রু কুচকে তাকালো। আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই রোদ বললো,

-- চলুন না ডিনার বাইরে করি আজ? এমন এনিভার্সিরি হয় কারো? প্লিজ চলুন না। বাচ্চারা আমরা দুজন আর বাসার সবাই। আর ভাইদেরও আসতে বলি। নাহলে বাচ্চারা আসলে কি গল্প শুনাবো আমি? ওদের আব্বু এত কিপ্টে যে একটু ঘুরতেও নিলো না। আর...

রোদ আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ওর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরলো। রোদ চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, কি? আদ্রিয়ান চোখ নামিয়ে নিলো। ঢোক গিললো। বলতে হবে। মুখ খুললো আদ্রিয়ান,

-- রোদ। মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনো।

-- বলুন। শুনছি।

আদ্রিয়ান বহু কষ্টে বলে উঠলো,

-- রোদ বাচ্চাদের রাখা যাবে না।

রোদ বুঝলো না। কোন বাচ্চাদের কথা বলছে আদ্রিয়ান তাও বুঝতে পারছে না ও। অবুঝ প্রশ্ন করলো রোদ,

-- কোন বাচ্চাদের কোথায় রাখা যাবে না?

আদ্রিয়ান আর বলতে পারছে না। যেন কেউ গলায় চেপে আছে। তবুও জোর করে বললো,

-- সোনা আমাদের বাচ্চাগুলো রাখা যাবে না। ওরা সুস্থ নেই। কিছু সমস্যা আছে। ডক্টর মিহা বলেছে যাতে দ্রুত করা হয়। আ..আমি অন্য ডক্টরদের সাথে ও কথা বলেছি। তারাও এটাই বলেছে। এ...এবো...এবোর্শন করতে হবে।

দম নিলো আদ্রিয়ান। বহু কষ্টে এতটুকু বলেছে। রোদ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। অবুঝ না রোদ আর নাই আদ্রিয়ান ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কিছু বলেছে। আদ্রিয়ান সোজা করে বললো বাচ্চাগুলোকে মে'রে দিতে। রোদ তবুও ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

-- বুঝলাম না? কি বললেন? আবার বলুন। আমি আসলে খেয়াল করি নি।

আদ্রিয়ানের কন্ঠনালী কেঁপে উঠল। দাঁত চেপে ধরে নিজেকে শক্ত করলো। আবারও বললো,

-- বাচ্চাদের রাখা যাবে না।

-- তো কি করবো?

সোজা প্রশ্ন করলো রোদ। ওর মাথায় ডুকছে না কিছুই। আদ্রিয়ান এবার কিছুটা ভরকালো। বললো,

-- এবোর্শন।

রোদের মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে৷ নাকের পাটা ফুলিয়ে জোর গলায় বললো,

-- পাগল হলেন আপনি? কি বলেন এসব? কে করবে এবোর্শন? কি ধরণের মজা এসব?

রোদ আর বলতে পারছে না। দাঁড়িয়ে গেল বসা থেকে। ওর দুনিয়া ঘুরে উঠলো আদ্রিয়ানের কথায়। আদ্রিয়ান রোদকে ধরতে উঠলেই রোদ পিছিয়ে যায়। দরজা খুলে পেছনে না ঘুরে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়েই ভয়ে ভয়ে জোরে ডাকতে লাগলো,

-- মামনি! বাবা! ভাইয়া!মামনি!

আদ্রিয়ান এগিয়ে আসতে নিলেই রোদ আবারও চিৎকার করে উঠলো। দৌড়ে সবাই আসতেই রোদ আদ্রিয়ানের মা'কে জড়িয়ে ধরলো। কাঁপছে ওর শরীর। আদ্রিয়ান কি সব বললো মাত্র? রোদ কাঁদে নি এখনও। তেজী গলায় অভিযোগ করে বললো,

-- মামনি উনার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। দেখো কিসব বলছে। ভাইয়া? দেখো। বাবা'কে ডাকো। উনি আমাকে আমাদের বাচ্চাদের ম...মা..মারতে বলছে। কি বলছে দেখো?

হাঁপিয়ে উঠেছে রোদ। আদ্রিয়ানের মা ওকে জড়িয়ে ধরে আছেন। আরিয়ান এগিয়ে এসে রোদকে ছাড়িয়ে নিলো। ধরে নিজের রুমে গেলো। বাকিরাও সেখানে গেল। আপাতত বাচ্চা বলতে আরিয়ানা বাদে কেউ নেই। জারবার সাথে পাশের বাসায় গিয়েছে। সাবা রোদকে জড়িয়ে ধরলো। আরিয়ান রোদকে বুঝাতে লাগলো এবোর্শনের কথা। রোদ অবিশ্বাসের চোখে তাকালো সবার দিকে। হঠাৎ কি হয়েছে? বুঝতে অক্ষম রোদ। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই'কে ওর নিজের সন্তানদের শত্রু মনে হচ্ছে। এরা কেন ছোট্ট দুটি জানের পিছনে লাগলো? সবার কথায় রোদ বুঝলো এরা সবাই এক জোট। রোদকে কেউ বুঝাতে পারছে না। ও বুঝতেই চাইছে না। সাবা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড় দিলো রোদ। পেছনে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের গলা কানে আসছে রোদের,

-- রোদ! দৌড় দিও না। রোদ! থামো।রোদ!

রোদ থামলো না। রুমে ডুকে হন্য হয়ে নিজের ফোন হাতে নিলো। আদ্রিয়ান ততক্ষণে রুমে ডুকলো। হাঁপাচ্ছে রোদ। কল করেছে রাদকে। রিসিভ হতেই রোদ কাঁদতে লাগলো। রাদ বিচলিত হলো। রোদ বলে উঠলো,

-- ভাই! ভাই আমাকে নিয়ে যাও। আমি থাকব না এখানে। এরা আমার বাচ্চাদুটোকে মে'রে দিবে। সবাই এক হয়েছে। আমার বাচ্চাদের বাঁচাতে হবে। আমাকে নিয়ে যাও। ভাই? শুনছো? আমি থাকব না এখানে৷ নিয়ে যাও আমাকে। ভাই?

রাদ অনেক কষ্টে বলে উঠলো,

-- বোন আমার ওদের কথা শুন। তোর ভালোর জন্যই....

রোদ সজোরে ফোন আঁছড়ে দিলো। কি শুনলো এটা? ওর ভাই ও তো একই কথা বলছে। আদ্রিয়ান দৌড়ে এসে রোদকে ধরলো। রোদ ঘামতে লাগলো। অতিরিক্ত ঘামছে ও। মাথা ঘুরাতেই বমি পাচ্ছে সাথে। মুখে হাত চাপতেই আদ্রিয়ান তারাতাড়ি ওকে ধরে ওয়াসরুমে ডুকলো। গলগল করে বমি করে দিলো রোদ। আদ্রিয়ান ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রোদ শরীর ছেড়ে দিলো আদ্রিয়ানের উপর। মুখ ধুয়িয়ে রোদকে নিয়ে বের হলো আদ্রিয়ান। দরজা আটকে দিলো রোদকে শুয়িয়ে দিয়ে। রোদের পাশে বসতেই রোদ উঠে বসলো। আদ্রিয়ানের কোলে উঠে বসে দু হাত রাখলো আদ্রিয়ানের গালে। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরলো। আদ্রিয়ানেরও একই অবস্থা। রোদ আদ্রিয়ানের চোখে চুমু দিলো। গালে দিলো। কপালে দিয়ে থুতনিতেও দিলো। আর কিভাবে আদর করবে ও আদ্রিয়ানকে? রোদ উন্মাদের মতো চুমু খেল আদ্রিয়ানের ঠোঁটে। সারা দিলো না আদ্রিয়ান। রোদ গলায় নামলো। চুমু খাচ্ছে অনবরত। শার্টের দুটো বোতাম খুলে চুমু খেল। যতটা পারলো আদর করলো রোদ। আর বলতে লাগলো,

-- কি হয়েছে আপনার? আমাকে বলুন। আমি জানি তো কিছু হয়েছে? বলুন না? আপনি তো এমন না। আমি জানি তো। বলুন না?

-- কিছু হয় নি।

-- উহু। আমি আপনার চোখ পড়তে পারি। বলুন। আপনার চোখ আর ঠোঁট তো এক কথা বলছে না। বলুন সব মিথ্যা? এই বলুন। অনেক আদর করব আপনাকে। বাইরের কিছু খাব না। প্রমিস। আর হ্যাঁ পড়ায় ও ক্ষতি হবে না। আমি সব ঠিক রাখব। আর... আর কি করব? ও হ্যাঁ আমি আপনার সব কথা শুনবো। আমার বাসায়ও যেতে চাইব না। এই যে পেট ছুঁয়ে বলছি কোন বন্ধু রাখব না। ইয়াজ ও বাদ। সত্যি বলছি।

আদ্রিয়ান কাঁদছে শুধু। পানি পরছে গাল বেয়ে বেয়ে। রোদ এবার না পেরে নিচে বসে পরলো। আদ্রিয়ানের পা দুটো নিজের বুকে চেপে ধরলো। আঁকুতি করতে লাগলো নিজের সন্তানদের বাঁচানোর। আদ্রিয়ান অসহায়ের ন্যায় তাকিয়ে রইলো। মনে পরলো এমনই এক সময় মাইশার পা ধরে বসে সন্তানের জীবন ভিক্ষা চাইছিলো আদ্রিয়ান। আজ শুধু আদ্রিয়ানের জায়গায় রোদ। রোদ বলে উঠলো,

-- এই আপনি কি ভাবছেন আমি মিশি মিশানকে অবহেলা করব? এটা কি সম্ভব বলুন? ওরা আমার বাচ্চা না? প্লিজ আপনি সিদ্ধান্ত বলদান। আমার বাচ্চাদের আমি আমি কিছুতেই মারব না?

আদ্রিয়ান ঝুঁকে রোদকে ধরে উঠায়। রোদ একবুক আশা নিয়ে তাকায়। আদ্রিয়ান সেই আশায় বালি ঢেলে রোদকে নিজের বাহুতে পুরে নিয়ে বললো,

-- এটা সম্ভব না সোনা। তোমার লাইফ রিস্ক আছে।

রোদ অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়েই রইলো। এ কোন আদ্রিয়ান? রোদ নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে বসে আছে। রোদ ভেজা গলায় রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

-- ওদের রাখা যাবেই না?

-- উহু।

আদ্রিয়ান মাথা না তুলেই বললো। রোদ লাল হওয়া চোখ দিয়ে আদ্রিয়ানকে দেখে বললো,

-- ওদের অন্য কেউ কেন মারবে? আমার সন্তানদের আমিই মারবো?

-- বাসায় করা সম্ভব না রোদ। হসপিটালেরই করতে হবে।

রোদ হতভম্ব হয়ে গেল। ও কি বললো আর আদ্রিয়ান কি বললো? রোদ তো রাগের মাথায় এটা বলেছে তাই বলে আদ্রিয়ান কি বললো? অতি রাগে,কষ্ট, দুঃখে, অসহায় হয়ে দুই হাত মুঠ করে নিলো রোদ। জোরে জোরে নিজের পেটে আঘাত করতে করতে বলতে লাগলো,

-- মরে যা। ম'রে যা তোরা। আমার ভুল। আমারই ভুল হ'য়েছে। তোদের বাপ ই তোদের চায় না। ম'রে যা। তোদের মে-রে আমি নিজেও মরব।

আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠল। রোদ জোরে জোরে নিজের পেটে আঘাত করছে। আদ্রিয়ান উঠে ছুটে ধরলো। রোদকে থামানোর চেষ্টা করলো কিন্তু রোদ জোর করেই যাচ্ছে। রোদ থামছে না। বারবার বলছে,

-- মরে যা তোরা। তোদের মে'রে আমিও মরব।

আবার বলতে লাগলো,

-- তুই ধরবি না আমাকে। ছাড়। মেরে দিব এদের। আমিও মরব। তুই শান্তিতে থাক। তুই তো এটাই চাস।

আদ্রিয়ান না পেরে রোদকে সজোরে চড় মারলো। এক চড়েই থামলো না। পরপর চার পাঁচটা থাপ্পড় পরলো রোদের গালে। আদ্রিয়ান চড়গুলো মারতে মারতে বলতে লাগলো,

-- এই তুই আমার বাচ্চাদের মারলি ক্যান? ওদের কেন মারলি? এই ক্যান মারলি তুই? আমার বাচ্চাদের আঘাত ক্যান করলি?

আদ্রিয়ানের শক্ত হাতের চড় খেয়ে রোদ হেলে পড়েছে। ততক্ষণে বাইরে থেকে বাকিরাও চিল্লাচিল্লির আওয়াজে ছুটে এসেছে। আরিয়ান ছুটে এসে আদ্রিয়ান'কে থাপ্পড় মে'রে বললো,

-- এই ওকে কি করেছিস তুই?

-- ও....ও আমার বাচ্চাদের মেরেছে। মেরেছে মাত্র। কতগুলো আঘাত করেছে। আরিয়ান চেক কর। চেক কর না। আমার বাচ্চাগুলো ঠিক আছে কি না।দেখ না।

বাকিরা ততক্ষণে রোদকে ধরেছে। রোদ জ্ঞান হারা তখন। আরিয়ান ক্ষ্যাপাটে কন্ঠে বললো,

-- তুই তো এই বাচ্চাদের মারার জন্যই এতসব করছিস? তাহলে কি করছিস এখন? কি করেছিস মে'রে?

আদ্রিয়ান যেন হুসে ফিরলো। রোদের জ্ঞান ফিরে নি তখনও। আদ্রিয়ানের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। কি থেকে কি করলো ও? রোদকে কেন ই বা মারলো? অতি মানুষিক আঘাতে যা হয় তাই হয়েছে আদ্রিয়ানের। আরিয়ান চেক আপ করার কিছুক্ষণ পরই রোদের জ্ঞান ফিরলো। ততক্ষণে রাদ সহ রোদের মা-বাবা হাজির। রোদ উঠতেই আদ্রিয়ান কাছে আসতে নিলো ওমনি রোদ চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। পাগলের মতো বলতে লাগলো,

-- আমার বাচ্চা..... আমার বাচ্চাদের মে'রে ফেলেছে। উনি আমার বাচ্চাদের মে'রে ফেলেছে। মি....মিশি, মিশানকেও মে'রে দিবে। আমার সব বাচ্চাদের মে'রে দিবে। মে'রে দিবে।

রাদ বোনকে জড়িয়ে ধরলো। রোদ কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,

-- ভাইয়া আমার বাচ্চাদের মে'রে ফেলেছি।

আদ্রিয়ান কয়েক কদম পিছনে গিয়ে আলমারি ঘেঁষে বসে পরলো। এক পলকে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে। মিশান দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়েছে তা সম্পূর্ণ না জানলেও যতটুকু দেখেছে বা শুনেছে তাতেই ছেলেটা নিস্তব্দ হয়ে গেল। রোদকে শান্ত করলে পারছে না কেউ। আরিয়ান রোদকে ধরে বললো,

-- রোদ বোন আমার তোর বাচ্চারা ঠিক আছে।

-- না না না আমি মে-রে দিয়েছি ওদের।

অবশেষে ডক্টর ডেকে রোদের চেকআপ করানো হলো। ড.মিহা বলাতে রোদ বিশ্বাস করলো ওর বাচ্চারা এখনও আছে। রাদ এবার রোদকে বুকে জড়িয়ে রোদকে সবটা বললো শুধু আগের মিসক্যারেজের কথাটা বললো না। আদ্রিয়ান না করেছে।
রোদ বাচ্চাদের মারবে না। এতে যদি ও মরেও যায় তা ও না। সবাই শত বুঝালেও রোদের এক কথা ও ওর বাচ্চাদের মারবে না। হয় নিজে মরে যাবে তবুও বাচ্চাদের মারবে না। আদ্রিয়ান কিছুই বলে নি। আলমারি ঘেঁষে বসেই আছে। জীবনের এমন মুহূর্তে কি করবে ও এখন?

#চলবে......

মেলা কিন্তু আজই শেষ। বইটই থেকে বই নিয়েছেন তো?? লিংক কমেন্টে।

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#বোনাস_পর্ব

রোদ নিজের বাসায় চলে যেতে চেয়েছিলো বাচ্চাদের নিয়ে। আদ্রিয়ান নির্বাক ই ছিলো৷ কিছুই বলে নি। কিন্তু কি মনে করে রোদ যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে না করে দিলো। ওর মন মানুষিকতার কথা চিন্তা করে কেউ আর দ্বিতীয় বার সাথে যাওয়ার কথা বললো না। রোদের পরিবার সেই মনে মেয়ের জীবনের অনিশ্চিয়তা নিয়েই গেলেন। অথচ রোদ কারো মনের খবর রাখলো না। ওর এখন নিজের অনাগত সন্তানের জন্য লোভ হচ্ছে। কেন হবে না? ওর ভালোবাসার চিহ্ন এই দুটো বাচ্চা। কিভাবে মেরে দিবে এদের। এসবের মধ্যে রোদ এটা ভাবলো না রোদ ছাড়া বাকি এগুলো প্রাণ কিভাবে কিভাবে বাঁচবে? ওকে "মা" বলে আরো দুটি বাচ্চা আছে। আদ্রিয়ানের মতো পাগল করা স্বামী আছে। নিজের একটা পরিবার আছে যাদের জান রোদ আর এই যে শশুর বাড়ী যারা রোদকে কোনদিন ছেলের বউ হিসেবে দেখে নি। নিজেদের মেয়ের মতো ভালোভাসে। ঐ যে সব কথার এক কথা, মা। কেই বা এই লোভ সামলাতে পারবে? রোদ ও পারে নি। হোক সেটা নিজের জীবনের বিনিময়ে।
আদ্রিয়ান রুমে ডুকলো বেশ দেড়ীতে। রোদ ঘুমাচ্ছে তখন। এলোমেলো চুল, লাল হয়ে ফুলে আছে দুটো গাল। ফর্সা আর নাদুসনুদুস তো রোদ আগেরই। সেই গালে পুরুষের হাতের এতগুলো থাপ্পড় খেয়েই গালের এই বেহাল দশা। আদ্রিয়ানের ভীষণ খারাপ লাগছে। কিভাবে এতগুলো আঘাত করে বসলো ও ওর রোদকে? হাত দুটি ভেঙে ফেলতে মন চাইলো নিজের। দরজা আটকে ধীর পায়ে রোদের সামনে এসে বসলো। গাল দুটো বাজে ভাবে ফুলে লাল হয়ে আছে। আদ্রিয়ান হাত বাড়িয়েও সরিয়ে নিলো যদি রোদ ব্যাথা পায়। হাত বাড়িয়ে রোদের পরিহিত ফ্রকটা সন্তপর্ণে তুলে নিলো আদ্রিয়ান। বেরিয়ে এলো আদ্রিয়ানের এতদিনের মোহময় ভালোলাগার স্ত্রীর বিশেষ অঙ্গ। যেই পেট এতদিন আদ্রিয়ানের নেশা লাগিয়ে দিতো সেই পেটে এখন শুধু অপেক্ষা। মায়া। ভালোবাসা। আতঙ্ক। এই বুঝি প্রাণ দুটি চলে গেল। সাথে বুঝি নিজেদের মা'কে ও নিয়ে গেলো। বাবা'টার প্রতি তাদের এত কেন অনীহা? মনে থাকা চাপা কষ্ট গুলো উগরেই ফেললো আদ্রিয়ান। রোদের উন্মুক্ত পেটে চুমু খেল অনবরত। শক্ত হাত দিয়ে নরম ভাবে বুলিয়ে দিলো। এ যেন কেউ কোন নবজাতককে আদর করছে। রোদ তখন সজাগ হলো। আদ্রিয়ান'কে বুঝার চেষ্টা করলো। এমন ভাবে পেটে আদর করছে আদ্রিয়ান মনে হচ্ছে ছোট্ট বাচ্চাদের আদর করছে। পরপরই চুমু খাচ্ছে। ভেজা অনুভব করলো রোদ পেটে। আদ্রিয়ান কাঁদছে। হাত বুলাতে বুলাতেই অভিযোগ করতে লাগলো আদ্রিয়ান,

-- এই? আমার সোনা বাচ্চা দুটো কি ঘুমিয়ে গিয়েছে? ঘুমাও নি। আমি জানতাম তো ঘুমায় নি বাবাই'রা। তোমাদের মা তো ঘুম। তোমাদের বাবা'র ঘুম হারাম করে সে ঘুমাচ্ছে। তোমার বাবা'কে বুঝে না সে। পঁচা সে। বাবাই'কে একটুও ভালোবাসে না। একটুও না। কিন্তু তোমাদের অনেক ভালোবাসে আব্বুরা। তোমাদের মা তোমাদের অনেক ভালোবাসে। তোমাদের জন্য বাবা'কে ছেড়ে যেতেও রাজি সে।
এই বাবা'রা তোরা কি আসবি না? চলে যাবি? তোদের মা'কে ও কি নিয়ে যাবি? কথা বল? বাবা'র প্রতি তোদের এত কেন অনীহা?বাবা কি এতোই খারাপ। তোমাদের কিন্তু আরো দুইজন ভাই-বোন আছে। তারা কিভাবে থাকবে মা ছাড়া। আমি কিভাবে থাকব তোমাদের ছাড়া। বাবা ম'রে যাব তো সোনারা। প্লিজ মা'কে নিয়ে যেও না। তাহলে কিন্তু বাবা ও এসে যাব। তখন তোমাদের ভাই-বোনের কি হবে? তারা কিভাবে থাকবে বলো?
আমার বুকে এসো বাবাই'রা। বাবা অনেক কষ্টে আছি।

বলতে বলতে কেঁদে উঠলো ফুঁপিয়ে। রোদের চোখ দিয়ে শুধু পানিই পরছে। আদ্রিয়ান পেটে আবারও চুমু খেতে খেতে বললো,

-- মা'য়ের সাথে রাগ করে না। মা মে'রেছে। আমার বাবা'রা কি অনেক ব্যাথা পেয়েছে? মা আর মারবে না। বাবাই মা'কে বকে দিব। এই তোরা আয় না। বাবাই'কে আর কত জ্বালাবি? তোদের মা তো আমাকে বুঝে না। তোরা একটু বুঝ না। তোদের মা'কে নিয়ে যাস না প্লিজ। আমি যে তোদের মা ছাড়া থাকতে পারব না।

ছোট্ট বাচ্চার মতো নিজের অনাগত সন্তানদের কাছে অভিযোগ করলো আদ্রিয়ান। এতে মনটা একটু হলেও শান্তি লাগছে। পেট ঢেকে দিয়ে রোদের পাশে শুয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রোদও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এতে যেন আদ্রিয়ান বন্ধন আরো দৃঢ় করলো। রোদ কাঁদছে। আদ্রিয়ান রোদের গলায় মুখ গুজে কাঁদছে। রোদের কান্না আসছে কারণ ও শুধু নিজেরটাই দেখেছে। একটা বারও তো আদ্রিয়ানের কথা ভাবলো না। ওর তো দুটো বাচ্চা ও আছে। রোদের কিছু হলে ওর মিশি আর মিশানের কি হবে? মা ছাড়া থাকবে কিভাবে? ভাবতেই রোদ এবার জোরে কেঁদে দিলো। আদ্রিয়ান শক্ত করে বুকে চেপে ধরে বললো,

-- এই রোদ? আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?

-- উহু।

--সত্যি?

-- হু।

-- আমি থাকতে পারব না।

-- আমিও।

-- এই রোদ?

-- হু।

-- ওয়াদা কর।

-- ওয়াদা।

এ যেন দুই জন অবুঝ মানব-মানবী একে অপরকে আবদার করছে। রোদ আদ্রিয়ান বেশ সময় নিয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করলো। দুজন দু'জনের কষ্টগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা চালালো। বেশ সময় নিয়ে শান্ত হলো দুজন। আদ্রিয়ান রোদের ঠোঁটে লম্বা একটা চুমু খেয়ে আবারও বুকে নিতেই রোদ বললো,

-- উঠবো।

-- কি দরকার?

-- বাচ্চাদের কাছে যাব। মিশিটা একবার এলো না। মিশানকেও দেখি নি। খেলো কি না ঠিক মতো।

আদ্রিয়ান উঠে রোদকেও উঠালো৷ ওয়াসরুমে ডুকে ফ্রেশ করে বেডে বসিয়ে তেল আর চিরুনি এনে পেছনে বসলো। এলোমেলো চুলগুলোতে তেল লাগিয়ে সুন্দর করে আঁচড়ে বেঁধে দিলো। ভেজা মুখটা আস্তে আস্তে মুছিয়ে দিলো। গাল দুটো এমন ভাবে ভুলে আছে দেখেই আদ্রিয়ানের কেমন লাগছে। আস্তে করে ফুলা গালে চুমু খেয়ে বললো,

-- আমি অনেক সরি সোনা। আমার মাথা ঠিক ছিলো না। আমি....

-- উমম। কিছু হয় নি। চলুন।

আদ্রিয়ান রোদের হাতটা ধরে ওকে নিয়ে মিশানের রুমে গেলো। মিশান একাই শুয়ে আছে। রোদ জিজ্ঞেস করার আগেই আদ্রিয়ান বললো,

-- মিশি জারবার কাছে। জেদ করছিলো। তাই জারবা নিয়ে গিয়েছে।

রোদের বুকে মোচড়ানো শুরু করলো। কেমন মা ও? দুই সন্তানের কথা ভাবতে ভাবতে বাকি দুটোর কথা ভুলে গিয়েছিলো। কিভাবে ছিলো ওর মিশি মিশান? ভাবতেই চোখ ভরে উঠলো। আদ্রিয়ান রোদকে ধরতেই রোদ বলে উঠলো,

-- আমি ভালো মা না। ওদের আমাকে দরকার ছিলো। আমি কেন অবহেলা করলাম? আমি মা ডাক শুনার যোগ্য না।

-- এই শু..। তোমার পরিস্থিতি তে এটাই স্বাভাবিক। তোমার বয়সে কয়জন মা হয়েছে রোদ? কয়জন এই রকম দুটো বাচ্চা সামলায়?

রোদ এগিয়ে গেলো। আদ্রিয়ান তখনও দাঁড়িয়ে দরজার সামনে। রোদ জানে মিশান ঘুমায় নি। এই ছেলে কিছু হলেই চুপ করে যায়। গম্ভীর হয়ে উঠে। পুরোনো কষ্ট গুলো হয়তো ভুলে নি। যার কি না জন্মদাত্রী মা থাকতেও নেই সেই সন্তান কেমন ই বা থাকবে? কিন্তু মিশান রোদের মাঝে পুরো মা খুঁজে নিয়েছে। এখন এই মায়ে'র এমন অবস্থা দেখে নিশ্চিত ছেলেটা ভালো নেই। রোদ দাঁড়িয়ে থেকেই ডাকলো,

-- মিশান?

মিশান নড়লো না। রোদ জানে মিশান জেগেই আছে। আবারও বললো,

-- মিশু?
........

-- আব্বু উঠবে না? মা দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু।

মাথা বের করলো মিশান কাঁথার নিচে থেকে। হাত বের করে রোদের হাতটা ধরতেই রোদ পাশে বসলো। মিশান মাথাটা রোদের কোলে গুজেই কেঁদে উঠলো। হকচকিয়ে গেলো রোদ সাথে আদ্রিয়ান ও। দ্রুত পায়ে ডুকলো আদ্রিয়ান। ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলো,

-- মিশান? বাবা? এই কি হয়েছে? উঠো।

মিশান উঠলো না। রোদ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

-- ও কিছু দেখেছে?

-- জানিনা তো।

রোদ মিশানের চুলে হাত বুলিয়ে বললো,

-- আব্বু? মা ঠিক আছি। কাঁদে না বাবা। মা-বাবা কষ্ট পাচ্ছি না?

-- ওরা কি ঠিক আছে?

রোদ বুঝলো। বললো,

-- তুমিই জিজ্ঞেস করো?

নাক টানলো মিশান। বললো,

-- ওরা কি কথা বলতে পারে নাকি?

-- পারে তো। এই যে এখন বলছে ওদের বড় ভাই কেমন বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।

-- মা?

-- হ্যাঁ বাবা।

-- আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

-- জানিতো বাচ্চা। মা ও অনেক ভালোবাসি।

-- তোমার কিছু হবে না তো?

-- ইনশাআল্লাহ বাবা। তুমি দোয়া করো।

আদ্রিয়ান ও ছেলেকে বুঝালো। সংসারে কিছু হলে সবচেয়ে বেশি এফেক্ট পড়ে বাচ্চাদের উপর। যদি সেটা হয় মা-বাবা জড়িত তাহলে তো কথাই নেই। রোদ আদ্রিয়ান এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। বাচ্চাদের সামনে ঝগড়া ও করে না৷ আজ কিভাবে যেন মিশান দেখে ফেলেছে। তাতেই এই অবস্থা। পরিস্থিতি যথেষ্ট স্বাভাবিক করতে রোদ আদ্রিয়ান মিশানকে সময় দিলো। ঘুমন্ত মিশিকেও নিজের কাছে নিয়ে এলো আদ্রিয়ান। মিশানকেও যথেষ্ট স্বাভাবিক করলো। আজ মিশানের রুমেই চারজন একসাথে ঘুমালো। মিশান তো বলেই ফেললো,

-- আমরা ছয়জন এভাবেই থাকব একসাথে।

-- ইনশাআল্লাহ বাবা।

#চলবে.....

[ বোনাস পার্ট দেয়ার কোন ইচ্ছেই ছিলো না। নতুন পর্ব লিখতাম কিন্তু গত পর্বে আপনাদের এতো এতো রেসপন্স পেয়েই এই বোনাস পার্ট দিলাম। ধন্যবাদ সবাইকে।]
( আচ্ছা পেজে রিচ আর এনজেইগমেন্ট কমে যাচ্ছে কেন হঠাৎ? কারণটা কি? আমি আসলে বুঝতে পারছি না।)

Want your public figure to be the top-listed Public Figure in Gazipur?
Click here to claim your Sponsored Listing.

Category

Address

Gazipur