JOY GURU
Yes
রবীন্দ্রনাথের গান কেন পুরনো হয় না
*
আমার মনে হয় এর কারণ সুরের সারল্য এবং কথার রহস্যময়তা। তিনি যখন বলেন 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' তখন আমাদের হৃদয়ে জন্মভূমির প্রতি আশ্চর্য এক অনুভূতি জেগে ওঠে এবং এটা সব ধরণের মানুষের মনে একই রকমভাবে জাগ্রত হয়। এটা সারল্যের অসাধারণ এক উপস্থাপন। আবার তিনি যখন লেখেন 'ভেঙে মোর ঘরের চাবি, নিয়ে যাবি কে আমারে' তখন তালা এবং চাবির স্থান বদলে যাওয়ার রহস্যে মন থমকে দাঁড়ায় এবং তার ভাবনার আকাশে একটা ছবি টাঙাতে চেষ্টা করে, ছবিটা মেলে আবার মেলে না, একটা দোদুল্যমানতা খেলা করতে থাকে। এই বোঝা এবং না বোঝার অনুভূতি যখন তার মনকে একটা অধরা স্তরে বেঁধে ফেলছে তখন সুর তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য সহাস্যে এগিয়ে আসছে। কারণ সুরের সারল্য যা খুবই চেনা, আমাদের জীবযাপন থেকে উঠে আসা, তা কথার রহস্যময়তাকে এক ঝটকায় উড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তখন কথা এবং সুর দুই মিলে এক অনির্বচনীয়তা তাকে গ্রাস করে ফেলছে। এবং যতবার সে শুনছে এই গান, ততবার সে এর ঘোর থেকে বের হতে পারছে না, নতুন লাগছে ।
মানুষের একটি সহজ প্রবণতা হচ্ছে সে সুন্দরকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে। যে সুন্দরকে গ্রহণ কিংবা উপভোগ করতে খুব বেশি মগজ খাটাতে হয়, তা সব মানুষের না হয়ে কিছু উচ্চতর বোধের মানুষের হয়ে ওঠে। সংগীত নিশ্চয় শ্রেণিকে প্রতিনিধিত্ব করে, কিন্তু সুর তাকে অতিক্রম করে সর্বজনীন হয়ে ওঠার বৈশিষ্ট্য ধরে। এখন কোন কথা যদি শ্রেণীর উর্ধে উঠতে পারে, তাহলে সুর এবং কথার যৌথ আবেদন সব মানুষকে এক জায়গায় টেনে ধরতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা রবীন্দ্রনাথের গানের কথার এই বৈশিষ্ট্য পাই তার নিজস্ব শ্রেণিকে ধারণ করার ক্ষমতায়। তার গানে শ্রেণি মানে এখানে প্রধানত মধ্যবিত্ত, যদিও তিনি মধ্যবিত্ত ছিলেন না। কেননা মধ্যবিত্ত শ্রেণিই সমাজের অন্য শ্রেণীর চেয়ে অধিক শিল্পচর্চা করে। শিল্প যেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চর্চার অন্তর্গত। গণসংগীত কিংবা ফোক- এগুলি একদিকে শোষিত এবং নিম্নবর্গীয় শ্রেণীর গান। নিম্নবর্গীয়দের মধ্যে বাউল ধারার গান তার দার্শনিক প্রত্যয়ের জন্য সব শ্রেণীর মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা ধরে। আমরা যদি লালনের গান শুনি তাহলে এর সত্যতা পাই বা যে কোন বাউলের গানের মধ্য এই সার্বজনীনতা লক্ষ্য করি। তিনি যখন বলেন 'সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে' তখন কোন শ্রেণি নয়, সব মানুষ এই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে আত্মপরিচয় নিয়ে সংশয়ে পড়ে যায় এবং নিজেকে মানুষ রূপে ভাবতে বাধ্য হয়। রবীন্দ্রনাথ এই বাউল দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেক গান লিখেছেন। তিনি যখন লেখেন 'আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না' তখন কোন নির্দিষ্ট শ্রেণি নয়, সব মানুষ নিজেকে চেনার সংকটে ভুগতে থাকে এবং যতবার এই গান শুনে, এই ভাবনা থেকে বেরুতে পারে না। আবার জন্মভূমির প্রতি প্রতিটি মানুষের যে সহজাত টান, তা যখন গানে মূর্ত হয়, তখন শ্রেণি উর্ধে উঠে সব মানুষের হৃদয়ে একই বোধ জাগিয়ে তোলে। 'আমার সোনার বাংলা' কিংবা 'যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক' কিংবা 'সার্থক জনম আমার'- এমন বহু গান মানুষকে বোধের একই সূতায় বেঁধে ফেলে। ফলে রবীন্দ্রনাথের গান শুধু তার শ্রেণি নয়, সকল শ্রেণিকে নিজের দিকে টেনে নিতে সক্ষম হয়। আবার তিনি যখন প্রেমের গান লেখেন, তখন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আবেগকে এমন সূক্ষ্মতায় বাঁধেন যে এখান থেকে কানকে সরিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়ে। তিনি যখন সহজ ভঙ্গীতে বলেন 'আমার পরাণ যাহা চায়, তুমি তাই গো' কিংবা 'তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা' তখন তখন প্রতিটি প্রেমিক হৃদয় এই কথার ভেতর নিজেকে দেখতে পায়। প্রেমের এমন মহত্তম গান অজস্র।
শুধু জন্মভূমির প্রতি আবেগ কিংবা প্রেম কিংবা সার্বজনীন দর্শনের গান নয়, তিনি প্রকৃতি প্রেম নিয়ে যে অজস্র গান রচনা করেছেন তা প্রকৃতির প্রতি মানুষের আবেগকে এমন এক উচ্চতায় স্থাপন করে যা তার মনকে পরিশুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখে। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে শিল্পের চোখ দিয়ে দেখার যে আয়না, রবীন্দ্রনাথের গান তাকে প্রতিবিম্বিত করে। প্রকৃতির প্রতি এক ধরণের ঘনিষ্ঠতা অনুভব করতে বাধ্য করে।
এটা তো গেল গানের কথার দর্শন বা বোধ নিয়ে। সুর নিয়ে যদি বলতে হয়, তাহলে আমরা দেখবো তার গানে প্রযুক্ত সুর সবচেয়ে সারল্যের চাদরে মোড়ানো। শিল্পের সারল্য এক বিশাল শক্তি ধরে। এই সারল্য মানে সরলতা বা সহজতা নয়, এর মানে হচ্ছে রাগসঙ্গীতের যে জটিল বিন্যাস এবং গায়কী তা থেকে মুক্ত এবং সুরের যে লৌকিক প্যাটার্ন তার সুচারু প্রয়োগের ফলে সব ধরণের শ্রোতার শ্রবণেন্দ্রিয়কে আকৃষ্ট করা। তার সুরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আধুনিক নয় আবার লোক নয়, এ'দুটির এক আশ্চর্য মিশেল। ভাটিয়ালির মত টানা নয় আবার শহুরে গতিশীল রক নয়, আবার রাগের জটিলতা নয়- অথচ তার সুর সব ধরণের শ্রোতার রুচিকে ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। এ এক আশ্চর্য ক্ষমতা।
রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য গান ঈশ্বর বন্দনা। কিন্তু সেই বন্দনা কোন প্রথাগত ধার্মিক মানুষের নয়। এই মহাবিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তাকে তিনি অনুভব করেন এবং তার প্রতি তিনি এক ধরণের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 'আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে'- এটা সৃষ্টিকর্তার প্রতি এক অনন্য নিবেদন। কোন ধর্মীয় আচার নয়, প্রথা নয়, একজন বিশ্বাসী মানুষ যদি তার প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাহলে পৃথিবীতে যত ধর্মীয় হানাহানি, তা থাকতো না। তিনি এখানেও এমন এক ধর্মবোধের প্রকাশ ঘটিয়েছেন যে তা সব প্রথাসিদ্ধ ধর্মের বাইরে। ফলে এই গান জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গ্রহণ করে দ্বিধাহীন চিত্তে। কোন নির্দিষ্ট ধর্ম নয়, মানবধর্মই মুখ্য হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ তার গানে সুর থেকে সমগ্র জটিলতা পরিহার করেন অথচ তার মর্মে সংগীতের সবকিছুকে ধারণ করেন, সুরে প্রযুক্ত করেন সমস্ত শ্রেণীর জীবনধারা থেকে উঠে আসা স্বতঃস্ফূর্ত বিন্যাস। ফলে তা সকলের হয়ে ওঠার দিকে যাত্রা করে এবং তা কথার সারল্যে ও দার্শনিক সত্তায় অনিঃশেষ হয়ে পড়ে।
#সংগৃহীত
★ পা পিছলে দু পাহাড়ের মাঝে পড়ে আটকে গেছে। শিং দুটো পাহাড়ের উপরে আটকে আছে। জমিনে পরে যায়নি। আর লাফ দিয়ে উঠতে পারলোনা উপরেও।
সে টের পেলো- একা উঠতে চেষ্টা করলেও পারবেনা।তারপর......
চিৎকার দিলো। বিলাপ ধরে কান্না করলো। ডাক দিলো। হয়তো কেউ আসবে তাকে বাঁচাতে। এই সঙ্কট থেকে উদ্ধার করতে।
কিন্তু....
না! কেউ আসেনি। জন্মদাত্রী মাও আসেনি। আসেনি কষ্ট করে অতি যত্নে লালন কারী পিতাও।
★ এমনকি প্রতিটা সময় পিছন পিছন ঘুরতে থাকা হিংস্র পশুরাও আসেনি।
★ রাতটা ক্রমশই অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে। সাথে শীতের হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা বাতাসও বয়ে যাচ্ছে।
★ অতঃপর একজন আসলো.. যে প্রত্যেক প্রাণীর কাছে একবার অবশ্যই আসবে।
★ সাহায্য করলেন। তার রুহ নিয়ে নিলেন। হাড়-মাংস - নাড়ীভুঁড়ি সেই স্থানেই রেখে দিলেন। সে আর কেউ নয় - মৃত্যু!
★যে মহান রবের সৃষ্টিজগতের প্রত্যেক প্রাণীকে তার তিক্ত স্বাদ আস্বাদন করাবে।
★ সে তোমার কাছেও আসবে।অতএব...
★ আমল করে যাও... নিজের আমল নামাকে সমৃদ্ধ করো।
★ আল্লাহর কাছে সর্বদা সফলতার আশা রাখো।
★ মৃত্যু খুবই নিকটেই অবস্থান করছে।
সংগৃহীত
বর্তমান সময়ে ডিভোর্স এবং পরকীয়া একটা মহামারীর মতো সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে..!.........মাঝে মাঝে চিন্তা করি, সম্পর্ক গুলো কেন টিকছেনা ?
আসলে প্রেম বেশিদিন বাঁচেনা, মায়া বাঁচে । এই মায়াটাই মরে যাচ্ছে!! না আছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, না আছে সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার মতো মানসিকতা।
সম্পর্ক এতো সহজ বিষয় না । সম্পর্ক হোলো চারা গাছের মতো । এটাকে পরিচর্যা করতে হয় । আমরা বীজ রোপন করি। সেই বীজ থেকে চারা জন্মায়। চারা গাছ আমরা পরিচর্যা করি । যত্ন নিই। একসময় চারা গাছ শতবর্ষী বৃক্ষে রুপ নেয় । মানব জীবনের সম্পর্ক গুলোও এমন। সম্পর্কগুলোর যত্ন নিতে হয় । পরিচর্যার অভাবে সম্পর্ক অংকুরেই বিনষ্ট হয় । কোনো কোনো সম্পর্ক তো ভ্রুন অবস্থাতেই হয় খুন । আবার কোনো কোনো সম্পর্ক সঠিক যত্নে যুগ যুগ অটুট থাকে ভালোবাসায়, প্রেমে, পারস্পরিক বোঝাপড়ায় , শ্রদ্ধায়।
শুধু ভালোবাসায় সম্পর্ক টেকেনা, যেমন টেকেনা শুধু সিমেন্টে তৈরি কোনো গাঁথুনি। আমরা সিমেন্টের সাথে বালি দিই, জল দিই । তারপর না তৈরি হয় শক্ত ইটের গাঁথুনি । তেমনি সম্পর্ক কেবল প্রেমে টেকেনা। সেখানে শ্রদ্ধা মেশাতে হয়। বিশ্বাস মেশাতে হয়। ধৈর্য মেশাতে হয়। তারপরই তৈরী হয় সফল রসায়ন।
জীবনটা সরল রেখা নয়। এটা বক্র রেখার মতো। উঁচু নিচু কত বাঁক। প্রায়ই এরকম কোনও না কোনও কঠিন বাঁকে আমরা খুব দ্রুত জাজমেন্টাল হয়ে পড়ি । ব্যক্তিত্বের দ্বন্ধে জড়িয়ে প্রচন্ড ইগোতে সম্পর্ক গুলোকে খুন করি। সবসময় নিজেকে সঠিক মনে করি। মনে করি, আমি কম কিসে। এই অহম, ইগো আমাদের শেষ করছে।
সম্পর্ক গুলো নষ্ট করবেননা, প্লিজ। সম্পর্কগুলো বাঁচিয়ে রাখুন, মায়ায়, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় ❤️❤️
পুরুষ কেন গোপনে কাঁদে?
একজন প্রজ্ঞাময় বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পুরুষ কি কাঁদে?
তিনি জবাব দিয়েছিলেন, হ্যা, পুরুষ কাঁদে, অবশ্যই কাঁদে।
যে প্রশ্ন করেছিল সে অবাক হয়ে বললো, পুরুষও কাঁদে?
কখন?
কিভাবে?
কি এমন কারণ থাকতে পারে, যাতে করে পুরুষ কেঁদে উঠবে?
বৃদ্ধ বললেন,
●পুরুষ কাঁদে, যখন তার মায়ের মত আপন মানুষগুলো এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়,
●পুরুষ কাঁদে, যখন সে তার বাবা মা দুজনকেই হারায়,
●পুরুষ কাঁদে, যখন তার সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ে,
●পুরুষ কাঁদে, যখন সে তার মেয়ের বিয়ে দেয়,
●পুরুষ কাঁদে, যখন তার অকৃতজ্ঞ একগুঁয়ে সন্তান তাকে সবার সামনে অপমান করে,
● পুরুষ কাঁদে যখন আপনজন থেকে প্রতারিত হয়,
●পুরুষ কাঁদে, যখন সে বুঝতে পারে সে আসলে ভীষণ অসহায়, জীবন যুদ্ধ তাকে কিভাবে গোলাম বানিয়ে রেখে দিয়েছে,
●পুরুষ কাঁদে, যখন সে তার ভালবাসার মানুষগুলোর ভরণ পোষণ করতে ব্যর্থ হয়, তাদের সামান্যতম সখগুলোও সে যখন আর মিটাতে পারে না,
●পুরুষ কাঁদে, যখন সে তার নিজের মা, মাটি আর দেশ থেকে অনেক দূরে, ভালবাসার মানুষগুলোকে একটু ছুঁতেও পারে না, একটু আদরও করতে পারে না,
●হ্যা, পুরুষ কাঁদে, কিন্তু... সে তখনই কাঁদে যখন সে আঁধারের অতলে...
যখন ঝুম বৃষ্টি নামে...
যখন তার পাশে বালিশটা ছাড়া আর কেউই নেই...
■পুরুষের সেই অশ্রু তার চোখের গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে না, যা অন্য কেউ দেখে ফেলবে,
পুরুষের অশ্রু বেরিয়ে আসে তার হৃদয়ের গহীন থেকে, কখনো সেটা একটা দীর্ঘশ্বাস, কখনো বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা !
পুরুষের অশ্রুতে তার চামড়ায় ভাঁজ পড়ে, চুল দাড়ি পেকে যায়, তার হাত দু'টো কেঁপে কেঁপে ওঠে।
এতটুকু বলে সেই বৃদ্ধ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না, নিজেই কেঁদে উঠলেন তিনি, বললেন,
হ্যা ঠিক এভাবেই পুরুষ মানুষ কেঁদে ওঠে, কাঁদতে থাকে।
অতৃপ্ত এই পৃথিবীতে আজ যত আয়োজন অর্ধেক তার মিথ্যে মায়া বাকি অর্ধেক তার প্রয়োজন !
১৯২৪ সালে জাপানে শিক্ষকদের এক সভায় একটি ভাষণ দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পরে দ্য মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় প্রবন্ধাকারে ভাষণটি প্রকাশিত হয় ‘দ্য স্কুলমাস্টার’ শিরোনামে। আমাদের দেশের বিদ্যালয়শিক্ষার বীভৎস রূপটি সেখানে তুলে ধরেন তিনি। শিক্ষা, শিক্ষার্থী আর শিক্ষক— এই তিনকে বিশ্লেষণ করে নিজের শান্তিনিকেতন শিক্ষালয়ের মূল উদ্দেশ্যকে উপস্থাপন করেন। প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন কোনও শিক্ষায় বিশ্বাস ছিল না তাঁর, প্রথাগত শিক্ষককে তিনি দেখতেন স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে, যার উদ্দেশ্য বিস্ময় আর জীবনস্পন্দন থেকে শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে নিষ্প্রাণ জেলখানায় নিষেধমূলক উপদেশের শিকলে বেঁধে ফেলা। সেখানে আছে, ‘বাঁধাধরা দিনপঞ্জির নিরর্থক যন্ত্রণা’। আর আছে ‘বৎসরান্তে পরীক্ষা-নামক এক ভীতিপ্রদ বিচারের’, যা প্রশ্ন করতে, আবিষ্কার করতে শেখায় না, কেবল ‘অনুগত হতে শেখায়’। “ক্রমে এই শিক্ষাব্যবস্থা ব্যর্থ হতে থাকে, তখন বিবেকের জায়গা নেয় পুলিশ। আমরা জেলখানার জন্য বন্দি জুটিয়ে আনি, পাগলা গারদের জন্য রোগী: আমরা শিশুদের মনগুলিকে সে ভাবে ফাটকে সীমাবদ্ধ করে তুলছি তাদের অন্তর্লীন ক্ষমতাকে বিধ্বস্ত ক’রে...।”
নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি চেয়েছিলেন তিনটি অভিমুখের অনুশীলন— মনের মুক্তি, হৃদয়ের মুক্তি আর চিন্তাশক্তির মুক্তি। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাস্বপ্ন ভিন্ন এক সৃষ্টিশীল স্বাধীনতার ইঙ্গিত দেয়। উৎসাহিত করে বিকল্প কোনও গুরু-শিষ্য পরম্পরার। হয়তো লালনের ‘কান্ডারি’ আর ‘বন্ধু’ গুরু কোথাও মিলে যান রবীন্দ্রনাথের মুক্তিসন্ধানী শিক্ষকের সঙ্গে।
“গুরু বলে কারে প্রণাম করবি মন?/ তোর অতিথ গুরু, পথিক গুরু, গুরু অগণন।/ কারে প্রণাম করবি মন?/ গুরু যে তোর বরণডালা,/ গুরু যে তোর মরণ-জ্বালা,/ গুরু যে তোর হৃদয়-ব্যথা/ যে ঝরায় দু’নয়ন/ কারে প্রণাম করবি মন?”
ছবিটা E.O. Hoppé ১৯২৯ সালে শান্তিনিকেতনে তুলেছিলেন।
অন্য দেশের একজন লোকের লেখা কোন গান কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হবে? অনেকের যুক্তি এটা। আমাদের কাজী নজরুল ইসলাম থাকতে রবীন্দ্রনাথের গান কেন এদেশের জাতীয় সঙ্গীত হবে? এই যুক্তিতে বিশ্বাসী এমন একজনের সাথে কথা হচ্ছিলো। তাকে বললাম, “ভাই, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তো অন্য দেশের লোক”। খুব অবাক হলেন তিনি। তিনি জানতেনই না, কাজী নজরুল ইসলাম এর জন্ম ভারতের বর্ধমান জেলায়। তিনি ভেবেছিলেন তার জন্মস্থান চুরুলিয়া বোধহয় বাংলাদেশেরই কোনো একটা জায়গা হবে।
তবুও তিনি নারাজ। এবারের যুক্তি, একজন বিধর্মীর লেখা গান কেন মুসলিম প্রধান দেশের জাতীয় সঙ্গীত হবে? তাই মুসলমান কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা কোনো গান কেই জাতীয় সঙ্গীত করার জোর দাবি তার। অথচ ওই দিকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম অনেক আগেই খোদার আসন আরশ সব ছেদ করে ফাতাফাতা করে ফেলেছেন সেটা তার জানাই নাই। তাকে কাজী নজরুল ইসলাম এর বিদ্রোহী কবিতার ৫ লাইন পড়ে শুনলাম।
“চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
খোদার আসন আরশ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!”
চুপ করে রইলেন!
উনার চুপচাপ থাকা দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি কি জানেন, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিয়ে করেছিলেন একজন বিধর্মীকে? যার নাম আশালতা সেনগুপ্ত (প্রমীলা দেবী), এবং হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ দূর করার জন্য তিনি তার নিজের ছেলের নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণ মুহম্মদ?
এবারেও চুপ করে রইলেন এবং তার চোখেমুখে হতাশা খুব স্পষ্ট।
কবিদের জাতপাত বিচার করতে হয় না, দেশের গন্ডি পেরিয়ে কবিরা সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেন। ধর্ম দিয়ে কবিদের আবদ্ধ করা যায় না। কবিরা কোনো ধর্ম বিশেষের জন্য লেখেন না, তারা মানুষের জন্য লেখেন।
আগে হিন্দু মুসলমান হওয়ার চেয়ে মানুষ হওয়াটা বেশি জরুরি ভাই।
বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষাপটে ১৯০৫ সালে লেখা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। এই দেশটাকে ভাঙ্গতে প্রতিদিন কেউ না কেউ চক্রান্ত করছেই। আমার এই সোনার বাংলাকে আজকে ভালোবাসবেন না তো আর কবে ভালোবাসবেন? চলেন দৃপ্ত কণ্ঠে একবার নিজেকে নিজে বলি,
“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”
প্রণাম
আমি ঈশ্বর দেখিনি, বাস্তবের কোন দিনই
কেউ কাউকে ছুঁইনি ।
দেওয়াল ঘেরা ঘরের সিংহাসনের মূর্তি গুলি
আমাকে টানে না ।
প্রার্থনার সময় গুলিয়ে ফেলি ,
মনের মাঝে ফুটে ওঠে যাঁদের মুখ
তাঁরা এখনো যেন নাচিয়ে দেয় আমার বুক ।
অ-আ-ক-খ শেখায় , কিশলয়ের ধারাপাত থেকে
এরিথমেটিক জিওগ্রাফির পথ ধরিয়ে
চিনিয়ে দেয় মহাশূন্যের মহাবিষ্ময় ,
সিন্ধু জ্ঞানী পুরুর সাথে বিশ্বত্রাসী আলেকজান্ডারের
সখ্যতার দর্শন , সাহিত্য সমাজ বিদ্যা বিজ্ঞানে কৌতুহল জুগিয়ে
উজাড় করে দেন - স্নেহের শাসন ; আশীষ চুম্বন;
ঋষির আশীর্বাদ ।
আমার কুচো মনের অস্থির পলিতে
কৈশোরের তন্তু জড়িয়ে মূর্তি গড়েন,
বয়ঃসন্ধির বিষ-লবন পোড়াতে
পাথরের পিচ্ছিল ধাপ শুকাতে
অঙ্গার হয়ে জ্বলতে থাকেন ,
শিল্পীর জাদু স্পর্শ দিয়ে
ফুটিয়ে তোলেন বিস্তৃত বসন্তের ভরা যৌবন।
আমি পুজোর আনন্দে নত হই
নত হই তাঁদের কাছে ।
আমার ঋতুচক্রের ফসলে সূর্যের সৌরভে
বিস্তীর্ণ অধিকার নিয়ে যাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন
রাত্রির স্নায়ু জুড়ে ঝিঁঝিঁর শব্দ শুনিয়ে
তাঁরা আমার গুরু, আমার শিক্ষক, আমার ঈশ্বর ।
তাঁদের অস্তিত্ব অনুভব করি বুকের ভেতর ,
সাধ্য কই নষ্ট হই ।
আমি নত হয়ে যাই,
নত হয়ে থাকতে চাই সেই সব মহান আত্মার
চরনের কাছে ,
আমার থেকে খারাপ আমিকে খসাতে ।
হে অনন্য ঈশ্বর আমার গুরুদেব
আমার শতসহস্র প্রনাম নেবেন , প্রনাম ।।
নবকুমার
সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার -
স্মরণ -
বীর মুক্তিযোদ্ধা সঙ্গীতশিল্পী
অজিত রায়
----------------------------------------------------
তাঁর দরাজ গলার জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁকে
ডাকতেন 'রায় বাহাদুর' নামে
খ্যাতিমান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অজিত রায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রক্তাক্ত একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন শব্দ সৈনিক।
জন্ম ১৯৩৮ সালের ২৯ জুন কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে। পিতার নাম মুকুন্দ রায় এবং মায়ের নাম কণিকা রায়।
কৈশোরেই তবলা বাজানো শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর মা কণিকা রায় ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী এবং সালেমা বহুমুখী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। মায়ের কাছে তাঁর সঙ্গীতের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়।
অজিত রায়ের শিক্ষাজীবন শুরু রংপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। পরে ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজে।
১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা আসেন।
১৯৬৩ সালে রেডিওতে প্রথম গান পরিবেশন করেন।
১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ জনতার সাথে আন্দোলনে যোগ দেন। এই সময় রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী জাহেদুর রহিমের অনুপ্রেরণায় তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় ডাকসুতে নিয়মিত গণসঙ্গীতের রিহার্সেল করাতেন তিনি। তাঁর দরাজ গলার জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁকে ডাকতেন 'রায় বাহাদুর' নামে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ঢাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে জুন মাসের দিকে কলকাতায় যান। এরপর তিনি কলকাতাস্থ স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যোগদান করেন।
এই সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্টুডিওতে বহু গান তৈরি করে প্রচারিত হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। শিল্পীই ছিলেন প্রায় ১২০ জনের মত।
এদের মধ্যে ছিলেন - ড. সনজীদা খাতুন, রথীন্দ্রনাথ রায়, কাদেরী কিবরিয়া, প্রবাল চৌধুরী, ফকির আলমগীর, উমা খান, স্বপ্না রায়, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, তপন মাহমুদ, কুইন মাহজাবীন, মিতালী মুখার্জী, মালা খুররম, মৃণাল ভট্টাচার্য, রফিকুল আলম, রূপা ফরহাদ, শাহীন সামাদ, রিজিয়া সাইফুদ্দিন প্রমুখ।
এই দলে সুরকার-শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন - সমর দাস, অজিত রায়, আপেল মাহমুদ, আব্দুল জব্বার, সুজেয় শ্যাম ও অন্যান্য।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে প্রচারিত আখতার হোসেন রচিত 'স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে' গানটিতে সুর ও কণ্ঠ দিয়েছিলেন অজিত রায়।
শিল্পী অজিত রায় ১৯৭২ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন।
সে বছরই তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে ভারত এবং ১৯৭৮ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমন করেছিলেন।
১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতী আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১২৫তম জন্ম জয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হয়ে অজিত রায় কলকাতায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
১৯৯৫ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ বেতারের চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
অজিত রায় মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিল্পী হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি গণসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গানের জন্যও পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি কণ্ঠযোদ্ধা ছিলেন। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি কণ্ঠদান করেছিলেন। এ ছাড়া 'সুরজ মিয়া' নামের একটি ছবিতে অভিনয়ও করেন।
শিল্পী অজিত রায় তাঁর কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০০ সালে 'স্বাধীনতা পদক' ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী পরিষদ থেকে 'শব্দসৈনিক পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সন্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দসৈনিক ৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে প্রয়াত হন। শ্রদ্ধাঞ্জলি।
✍️তথ্যঋন ✍️✍️মেসবা খান✍️
গল্প :- " গুরু - শিষ্যের অটুট বন্ধন "
---------------------------------------
অনেক অনেক দিন আগে, প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স শহরে একটি বিখ্যাত একাডেমি ছিল, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহান দার্শনিক প্লেটো। তিনি তার জ্ঞান এবং দার্শনিক চিন্তাভাবনা দিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আলোকিত করেছিলেন। সেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এরিস্টটল। শুরুর দিকে, এরিস্টটল ছিলেন একটি কৌতূহলী এবং চিন্তাশীল তরুণ, যিনি তার গুরু প্লেটোর প্রতিটি কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং বুঝতে চেষ্টা করতেন।
দিন যতই গড়াতে থাকল, এরিস্টটল ততই তার গুরুর আদর্শের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতে লাগলেন। প্লেটোও লক্ষ্য করলেন যে এরিস্টটল শুধু অন্যদের থেকে আলাদা নয়, বরং তার মধ্যে গভীর জ্ঞানের পিপাসা এবং একটি স্বাধীন চিন্তার বীজ রয়েছে।
প্লেটো একদিন এরিস্টটলকে বললেন, "প্রিয় এরিস্টটল, তুমি শুধু একজন শিক্ষার্থী নও, তুমি একজন চিন্তাবিদ। তোমার চিন্তাধারায় আমি একটি আলাদা সুর শুনতে পাই, যা একদিন নিজের পথে এগিয়ে যাবে।"
এরিস্টটল বিনম্রভাবে উত্তর দিলেন, "গুরু, আপনার শেখানো জ্ঞানই আমাকে এ পথে নিয়ে এসেছে। আমি কখনও আপনার থেকে আলাদা হতে চাই না।"
তবে সময়ের সাথে সাথে এরিস্টটল নিজের ভাবনার জগতে ডুবে যেতে থাকেন। তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্লেটোর সাথে বিতর্ক করতেন এবং তার নিজের চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতেন। একদিন তাদের মধ্যে একটি দার্শনিক আলোচনা চলছিল, যেখানে এরিস্টটল বললেন, "গুরু, আপনি বলেছিলেন যে এই জগতে প্রতিটি বস্তুই একটি নিখুঁত 'ফর্ম' এর ছায়া। কিন্তু আমি মনে করি, এই জগতে যা কিছু আছে, তার নিজস্ব বাস্তবতা এবং মূল্য আছে।"
প্লেটো একটু হাসলেন এবং বললেন, "এরিস্টটল, তোমার চিন্তাধারা আমাকে খুব আনন্দ দেয়। তুমি আমার শিক্ষার্থী হয়ে আমার থেকে আলাদা ভাবনা পোষণ করছ, এটাই তো সত্যিকারের শিক্ষা। তুমি যা বিশ্বাস কর, সেটার পিছনে যুক্তি আছে, এবং আমি চাই তুমি সেই পথেই এগিয়ে যাও।"
এরিস্টটল বুঝলেন যে, যদিও তাদের চিন্তাভাবনা ভিন্ন, তাদের বন্ধন ছিল অটুট। প্লেটো সবসময় তার শিষ্যদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে উৎসাহ দিতেন এবং এরিস্টটলও এই স্বাধীনতার পূর্ণ সদ্ - ব্যবহার করছিলেন।
অনেক বছর পর, প্লেটো যখন বার্ধক্যে পৌঁছান, এরিস্টটল নিজেই একজন মহান দার্শনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছিলেন। তবুও, তিনি কখনো তার গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা হারাননি। একবার তার শিষ্যরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, "আপনি এখন এত বিখ্যাত, তবুও আপনি সবসময় আপনার গুরুর কথা বলেন কেন?"
এরিস্টটল উত্তর দিলেন, "আমার জ্ঞান যেখানেই পৌঁছাক না কেন, সেই বীজ তো আমার গুরু প্লেটোই বপন করেছিলেন। আমার দার্শনিক জীবন তারই অবদান। আমি গাছের পাতা হতে পারি, কিন্তু সেই গাছের মূল তো তিনিই।"
এভাবেই প্লেটো এবং এরিস্টটলের সম্পর্ক ছিল শুধু গুরু-শিষ্যের নয়, বরং দুই মহান চিন্তাবিদের মধ্যে এক গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক, যা তাদের চিন্তাধারায় আলাদা হলেও পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মাধ্যমে অটুট ছিল।
এভাবেই প্রাচীন গ্রিসের মাটিতে দার্শনিকদের মধ্যে এক মহৎ সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল, যা শুধু তাদের সময়েই নয়, ইতিহাসের পাতায় চিরদিনের জন্য অমর হয়ে আছে।
❤️ পোস্ট ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট শেয়ার করতে ভুলবেন না। Follow করে রাখবেন Nihar RN Mallick প্রোফাইলটি নিত্য নতুন আপডেট সর্বপ্রথম পাওয়ার জন্য । পাশে থাকবেন ।
( সংগৃহীত )
প্রতিবাদী ভালোবাসা
কলমে- মেরী দে
------
বিয়ের পর পর প্রথম বার বেতনের টাকাটা যখন আমার স্ত্রী অনন্যার হাতে তুলে দিয়ে বললাম আজ থেকে তোমার সংসার তুমি চালিয়ে নিও।
সে টাকাটা গুণে আমাকে বললো, যতদূর যানি---
“তুমি তো ৪৫ হাজার টাকা পাও, এখানে দেখছি মাত্র ৩৫ হাজার টাকা!” আছে।
আমি বললাম- বাকী ১০ হাজার এর মধ্যে আমি ৫ হাজার নিজের কাছে রাখিলাম যাতায়াত ও আমার হাত খরচ করার জন্য আর বাকি ৫ হাজার আমার বাবা-মায়ের হাত খরচের জন্য।
অনন্যা অবাক হয়ে বললো,- “তোমার বাবা-মায়ের জন্য মানে!
ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে মানে ছেলের উপর তাদের দায়িত্ব ও অধিকার শেষ!
আর বিয়ে করে আমাকে আনা মানে তোমারও তাদের উপর দায়িত্ব শেষ! আলাদা করে উনাদের প্রতিমাসে তোমার টাকা দিতে হবে না। দাও বাকি টাকাটা !”
আমাদের ভবিষ্যত আছে।
তুমি বাবা-মায়ের জন্য যে টাকাটা আলাদা করে রেখেছ, সেই টাকাটা দিয়ে দাও আর “তোমার নিজের কাছে এতো টাকা রাখতে হবে কেন? তোমার যা লাগবে আমার কাছ থেকে চেয়ে নিবে কেমন। সবই তো তোমার আমার দাও টাকা দাও বলে সব টাকা নিয়ে নিলো। সেই দিন লজ্জায় অনন্যাকে কিছুই বলিনি।
একদিন সিটি মল থেকে অনন্যা একই রঙের দু'টো শাড়ি কিনে বাড়ি এনেছে ,
“আমি, অনন্যাকে জিগ্গেস করলাম একই রঙের দু'টো শাড়ি এনেছো কেন? দু'টো দুরকম আনতে পারতে?”
অনন্যা বলেছিলাম- একটা নিজের জন্য, আর একটা ওর মায়ের জন্য।
সেই দিন শুধু অনন্যাকে বলেছিলাম ---
তোমার আহ্লাদ দেখে আমি বাঁচি না। মেয়ে মানুষের বিয়ের পর স্বামীর বাড়িই সব। এতো বাপের বাড়ির কথা চিন্তা করলে হবে?”
মাথা নিচু করে বলেছিল- ঠিক আছে, আর বাপের বাড়ির কথা চিন্তা করবো না!
কিছু দিন পর অফিসে যাওয়ার সময় অনন্যাকে বললাম,- আমাকে ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা দাও। আর শোনো, মার্কেটে গেলে আমার জন্য দু'সেট গেঞ্জি ও জাঙ্গিয়া, যদি পার তবে একটি শার্ট ও নিয়ে এসো,
আনার সময় ভুল সাইজ এনো না কিন্তু! যদি আনো, তাহলে তোমাকেই আবার সেটা চেঞ্জ করে আনতে হবে।
কথার ধাক্কাটা হয়তো অনন্যা নিতে পারেনি। তাই বোবা হয়ে গেলো! আমি ওর ব্যাগ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে অফিসে চলে গেলাম…
অফিস থেকে ফেরার পর অনন্যা দুটি শাড়ি দেখিয়ে বললো - আমার বোন পর্ণা কিনে পাঠিয়েছে। একটা আমার জন্য আর একটি আমার মার জন্য কেমন হয়েছে ?”
কিছুটা অবাক হয়ে বললাম- পর্ণার তো বিয়ে হয়েছে তাইনা সে তার শ্বাশুড়ি ও ননদকে না দিয়ে ---- তোমাদের জন্য কিনে পাঠিয়েছে? ঠিক বুঝলাম না!
বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িই তো মেয়েদের নিজের বাড়ি হয়, তাই না? জানি না পর্ণার এতো আহ্লাদ কেন?
যাই হোক, শাড়ি দুটি আমি নিয়ে গেলাম। পরে সময় মতো পর্ণার কাছে পাঠিয়ে দিবো! একথা বলে শাড়ি দুটি নিয়ে নিজ রুমে চলে আসলাম…
কিছুক্ষণ পর অনন্যাকে জিজ্ঞেস করলাম,- আমার জিনিসগুলো এনেছো?
সে মুখ ভোঁতা করে বললো- “না, আনিনি!”
কিছুটা রেগে বললাম,- আনো নি কেন?
কিছুক্ষণ পর টাকার একটি প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে মাথা নিচু করে বললো- “আজ থেকে তোমার সংসার তুমিই চালাও কেননা স্বামীর মনের মতন সব জিনিস স্ত্রীরা কিনতে পারে না!”
এর কিছু দিন পর হঠাৎ আমাদের ফ্ল্যাটবাড়ি এসে আমার শ্বশুর ও শ্বাশুড়িমা আমাকে বললো,- বৌমা, আমাদের বয়স হয়েছে। কখন কি হয় বলা যায় না। তুমি তোর প্রাপ্য সম্পত্তিগুলো বুঝে নাও।”
শ্বশুর বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,- কিসের সম্পত্তি বাবা?
শ্বশুর বাবা বলিল কেন তুমি জাননা বৌমা , মেয়েরা বিয়ের পরে পর হয়ে যায় জন্ম ভিটা থেকে ? আর শ্বশুর বাড়ির সকল সম্পত্তি আধিকার প্রাপ্ত হয়।
তোমার ও তোমার সন্তানে ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করে আমাদের হাত খরচ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলে। মনে আছে?
বাবারা সন্তান মানুষ করে শুধু দেওয়া জন্য নেওয়া জন্য না। অনন্যা অবাক হয়ে বললো,- বাবা, তুমি এসব কি বলছ?
আমি বললাম- বাবা ঠিকই বলছে ,
বাবা বলিল বৌমা আমার টাকা পয়সা কিছুই লাগবে না। শুধু একটু ভালোবাসা চেয়ে ছিলাম।
তুমি আমাদের ভুল বুঝছো বৌমা , বিষয়টা এমন না!”
শান্ত গলায় শ্বশুর বাবা বলিল,- আমার কি ইচ্ছে হতে পারে না, যে মানুষটাকে এতো বড় করলাম , পড়াশোনা শিখিয়ে যোগ্য পাত্রীর সাথে বিয়েও দিলাম , আজ যে চাকরিটা করছে সবটাই তো ওর মার চেষ্টায়। ওর মা চাইলে পারিতো ওর ছেলেকে অল্প পড়াশোনা করিয়ে গাঁয়ের মেয়ে বিয়ে করিয়ে আনতে।
ছেলে ও মেয়ে বিয়ে দিলেই যদি বাবা-মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যেতো, তাহলে আমি এখানে আসতাম না তোমাদের প্রাপ্য তোমাদের বুঝিয়ে দিতে।
অনন্যা আর কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে রইলো…
অনন্যা তখন আমার মা অর্থাৎ ওর শ্বাশুড়িকে বলিল,- মা---
যে মেয়ে এক মাকে ছেড়ে আরেক মায়ের কাছে এসেছে । সেই মেয়ের তো দুটি মা তাই নয় কি? আমার তো আজ থেকে দু-দু'টা মা! যে মেয়ের দু-দু'টা মা, সেই মেয়েতো একটু আহ্লাদি হবেই। আমি এক মায়ের জন্য কিছু করিবো, আরেক মায়ের জন্য কিছুই করিবো না, সেটা কিভাবে হয় মা, আপনিই বলুন? এই কথা বলে----
অন্যনা ওর শ্বাশুড়ি মা'র কাধে মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলো…
আর বলছে মাগো “তুমি তোমার সম্পত্তি দাও কিংবা না দাও, এতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কিন্তু তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না। মাগো আমি চাই তোমার সাথে থেকে হলেও আমার নীচু মন - মানসিকতার পরিবর্তন হোক।
যা আমার জন্মদাত্রী শিখিয়ে দিতে পারেনি, তা তুমি আমায় শিখিয়ে দিলে।
বাবা অনন্যার এসব কথা শুনে অবাক হয়ে বললো- “মা রে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!”
হেসে অনন্যা বলিল- তেমন কিছু না বাবা। একটু সমস্যা হয়েছিল, তোমার সামনেই সেটা সমাধান হয়ে গেলো।
শ্বাশুড়ি মা আমায় টেনে বুকে ঝড়িয়ে ধরে বলিল,- দুষ্টু মেয়ে, মায়ের সাথে ঢং করা হচ্ছে? আমি আমার করা ভুলের জন্য না , এই ভুল থেকে যে আমি আর একটা মা পেয়েছি, সেই খুশির আনন্দে কান্না করছি।”
মানুষ কখনো ভুলের উর্ধ্বে নয়। সংসার জীবনে এমন শত সমস্যা হতেই পারে।
প্রতিবাদের কৌশলটা ভালোবাসার মাধ্যমে শুধু একটু অন্য রকম হোক…
তাহলেই সকল সমস্যার সমাধান হবে। এটা আমার বিশ্বাস।
জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছিলাম সেদিন, যেদিন বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে পিতার নামের ঘরটিতে আমার নাম লিখতে হয়েছিল।
সারা জীবন এই ঘরটিতে আমার পিতার নামটি দেখে এসেছি। সেদিন এই ঘরে আমার নাম দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি প্রমোশন পেয়ে বাবার নামের ঘরে বসে গেছি; আর আমার বাবা তার জীবনের শেষ ক্লাশে চলে গেছেন । ধীরে ধীরে আমরা সবাই এগুচ্ছি।
অনেকেই বাবা কে বট গাছের সাথে তুলনা করে। আমি বলি, বাবা হলো আকাশ। যখন দরকার আলো দেয়। কখনো অন্ধকার মেঘ হয়ে বজ্রের মতো বকা দেয়। এরপরই আবার মায়ার বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে। আবার ঘুটঘুটে রাতের অন্ধকারে ঝিকিমিকি তাঁরা হয়ে জ্বলে। এই বিশাল আকাশটা কখনো মাথার উপর থেকে সরে যায় না। নিজে চলে যাবার পরও সন্তানদের জন্য নিজের তিল তিল করে জমানো সম্পদ রেখে যায়।
সব বাবা তার সন্তানদের কাছে সুপার হিরো। কোন বাবা-ই তার সন্তানদেরকে নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে দিতে চায় না। পকেটে টাকা না থাকলে ধার করে হলেও সন্তানের আবদার পূরণ করে।
হুমায়ূন আহমেদ ভুল বলে গিয়েছিলেন। পৃথিবীতে আসলে প্রচুর খারাপ বাবা আছে। এই বাবারা মিথ্যা বলে। "ঠিক মতো না পড়লে খেলনা কিনে দেব না" বলেও কিনে দেয়। সন্তানের কাছে হিরো সেজে থাকার জন্য মুখোশ পরে থাকে। তেড়ে আসা তীর নিজের পিঠে নিয়ে হাসি মুখ করে থাকে।
বাচ্চার স্কুলের বেতন দিতে গিয়ে নিজের বেতন বাড়াতে অফিসে ওভারটাইম করে। ব্যাগ হাতে বাজারে গিয়ে পকেট আর প্যাকেটের মূল্য মেলাতে না পেরে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
বাবাদের ঈদের শপিং লিস্টটা কখনো দেখেছেন? লিস্টে সবার নাম থাকলেও তাঁর নিজের নামটি কখনো খুঁজে পাবেন না চ্যালেঞ্জ।
একই ঘরে একই হাড়ির ভাত খেয়ে সন্তান যখন বড় হতে থাকে, বাবা তখন ছোট হতে শুরু করে।
যেদিন বাবার সীমাবদ্ধতা আপনার চোখে পড়বে, বুঝে নেবেন আপনি আর ছোটটি নেই, আপনি বড় হয়ে গেছেন। আর আপনার বাবা ছোট হতে শুরু করেছে। ছোট বেলায় আমাদের মুখে যেমন কোন দাঁত ছিল না, আমাদের বাবা-মায়ের মুখের দাঁতগুলোও পড়ে যাবে। তাঁরা যেমনটি করে আমাদের যত্ন নিয়েছিল, আমাদেরও সময় এসেছে তাঁদের যত্ন নেবার।
শুধু জিনিসপত্র কিনে দেয়াটাই কিন্তু যত্ন না। তাদের সবচেয়ে যে জিনিসটি বেশি প্রয়োজন, তা হলো সময়। নিজের সমবয়সীদের হারিয়ে তাদের গল্প করার মানুষের সংখ্যা কমতে থাকে। সময়টা তাই আমাদেরই দিতে হবে, আদর করতে হবে, মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে। ছোট বেলায় তাঁরা যা যা করেছিল সব ফেরত দিতে হবে। নিজেকে সুপার হিরো হিসেবে প্রমাণ করতে হবে।
আর এই আকাশটা অলরেডি আমার মত যারা বাবা হারিয়ে ফেলেছেন তাদের জন্য, রাব্বির হামহুমাকামা রাব্বায়ানি সাগিরা।
©সংগৃহীত
শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত উক্তি সমূহ,...
যাহা তুমি দেখাও, তার চেয়ে বেশি তোমার থাকা উচিত। যা তুমি জান, তার তুলনায় কম কথা বলা উচিত।!
সততার কাছে দুর্নীতি কোন দিন জয়ী হতে পারে না।
দুটো জিনিস খুবই কষ্টদায়ক। একটি হচ্ছে, যখন তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু তা তোমাকে বলে না। আর অপরটি হচ্ছে, যখন তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমাকে ভালোবাসে না এবং সেটা তোমাকে সরাসরি বলে দেয়।
বিপদের সময়ে যে হাত বাড়িয়ে দেয় সেই সত্যিকারের বন্ধু।
দু:খ কখনও একা আসে যখন আসে তখন তার দলবল নিয়ে-ই আসে।
আমি সবসময় নিজেক সুখী ভাবি, কারণ আমি কখনো কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না, কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করাটা সবসময় এ দুঃখের কারণ হয়ে দাড়ায়।
অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায়, ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।
কাউকে সারা জীবন কাছে পেতে চাও। তাহলে প্রেম দিয়ে নয় বন্ধুত্ব দিয়ে আগলে রেখো। কারন, প্রেম একদিন হারিয়ে যাবে কিন্তু বন্ধুত্ব কোনদিন হারায় না।
যে তার ভালবাসা প্রকাশ করতে পারে না, সে ভালোবাসতেই জানে না।
আনন্দ ও কাজ সময়কে সংক্ষিপ্ত করে।
সাফল্যের ৩টি শর্তঃ - অন্যের থেকে বেশী জানুন! - অন্যের থেকে বেশী কাজ করুন! - অন্যের থেকে কম আশা করুন!
তোমার একটু অভিমানের জন্য যদি কারো চোঁখে জল আসে, তবে মনে রেখো, তার চেয়ে বেশি কেউ তোমাকে ভালোবাসে না।
তোমার বন্ধু যখন বিপদে থাকবে, তখন সে না ডাকলেও তাকে সাহায্য কর। কিন্তু, যখন সে খুশিতে থাকবে, তখন সে না ডাকলে যেওনা।
শেক্সপিয়ার কে একজন জিজ্ঞেস করলো "তুমি বিয়ে করেছ তোমার চেয়ে বেশি বয়সের একটি মেয়েকে। তোমার লজ্জা করেনা।" শেক্সপিয়ার তাকে একটি ক্যালেন্ডার এনে দেখালেন আর বললেন "আপনি বলতে পারবেন সপ্তাহের সাতটি দিনের মধ্যে কোনটা যুবক আর কোনটা বৃদ্ধ?" আসলে ভালবাসার কোন বয়স হয়না আপনি যে কাউকেই ভালবাসতে পারেন।
প্রয়োজন খারাপ কেও ভাল করে তোলে।
মহত্ত্বের প্রতীক হচ্ছে ক্ষমাশীলতা।
জীবন জীবন মানেই অনিশ্চিত ভ্রমণ।
আমি নষ্ট করেছি সময়, এখন সময় নষ্ট করছে আমায়।
ভীরুরা তাদের প্রকৃত মৃত্যুর আগেই বহুবার মরে, কিন্তু সাহসীরা জীবনে মাত্র একবারই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে থাকে|
সংগৃহীত
রবীন্দ্রনাথকে লেখা নজরুলের একটি চিঠি
রবীন্দ্রনাথের উপর লেখা নজরুলের অনেকগুলি কবিতা পাওয়া গেলেও রবীন্দ্রনাথকে লেখা নজরুলের একটি মাত্র পুরা চিঠিই পাওয়া গেছে। সেই চিঠিটি লেখার ইতিহাস হ'ল-
নজরুল এবং তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে ১৯৩৪ সালে 'নাগরিক' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। পত্রিকাটি প্রকাশিত হ'ত কলকাতার ১সি মন্মথ ভট্টাচার্য স্ট্রীট থেকে। এই পত্রিকার ২য় বর্ষের অর্থাৎ ১৯৩৫ সালের পূজা সংখ্যার জন্য নজরুল রবীন্দ্রনাথের কাছে একটি লেখা চেয়ে এই চিঠিটি লিখেছিলেন। নজরুলের লেখা চিঠিতে তারিখ ছিল - ২৮শে আগস্ট ১৯৩৫
রবীন্দ্রনাথকে লেখা নজরুলের সেই চিঠিটি,-
শ্রীচরণারবিন্দেষু,
গুরুদেব! বহুদিন শ্রীচরণ দর্শন করিনি। আমার ওপর হয়ত প্রসন্ন কাব্য-লক্ষ্মী হিজ মাস্টার্স-ভয়েসের কুকুরের ভয়ে আমায় ত্যাগ করেছেন বহু দিন। কাজেই সাহিত্যের আসর থেকে আমি প্রায় স্বেচ্ছানির্বাসন নিয়েছি। আপনার তপস্যায় আমি কখনো উৎপাত করেছি বলে মনে পড়ে না, তাই অবকাশ সত্ত্বেও আমি আপনার দূরে দূরেই থেকেছি। তবু জানি আমার শ্রদ্ধার শতদল আপনার চরণস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয়নি।
আমার কয়েকজন অন্তরঙ্গ সাহিত্যিক ও কবি বন্ধু 'নাগরিক' পরিচালনা করছেন। গতবার পূজায় আপনার কিরণস্পর্শে ‘নাগরিক’ আলোকিত হয়ে উঠেছিল, এবারও আমরা সেই সাহসে আপনার দ্বারস্থ হচ্ছি। আপনার যে-কোনো লেখা পেলেই ধন্য হব। ভাদ্রের শেষেই পূজা সংখ্যা 'নাগরিক' প্রকাশিত হবে, তার আগেই আপনার লেখনীপ্রসাদ আমরা পাব আশা করি।
আপনার স্বাস্থ্যের কথা আর জিজ্ঞাসা করলাম না। - ইতি
প্ৰণত
নজরুল ইসলাম
নজরুলের এই চিঠির উত্তরে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন থেকে ১৯৩৫-এর ১লা সেপ্টেম্বর নজরুলের কলকাতার ঠিকানায়, এই চিঠি পাঠিয়ে ছিলেন।
কল্যাণীয়েষু,
অনেকদিন পরে তোমার সাড়া পেয়ে মন খুব খুসী হ'ল।, কিছু দাবী করেছ — তোমার দাবী অস্বীকার করা আমার পক্ষে কঠিন। আমার মুস্কিল এই, পঁচাত্তরে পড়তে তোমার অনেক দেরি আছে। সেইজন্য আমার শীর্ণশক্তি ও জীর্ণদেহের 'পরে তোমার দরদ নেই। কোনো মন্ত্রবলে বয়স বদল করতে পারলে তোমার শিক্ষা হোতো। কিন্তু মহাভারতের যুগ অনেক দূরে চলে গেছে। এখন দেহে, মনে মানব সমাজকে চলতে হয় সায়েন্সের সীমানা বাঁচিয়ে।
অনেকদিন থেকে আমার আয়ুর ক্ষেত্রে ক্লান্তির ছায়া ঘনিয়ে আসছিল, কিছুদিন থেকে তার উপরও দেহযন্ত্রের বিকলতা দেখা দিয়েছে। এখন মূলধন ভেঙে দেহযাত্রা নির্বাহ করতে হচ্ছে, যা ব্যয় হচ্ছে তা আর পূরণ হবার নেই।
তোমাদের বয়সে লেখা সম্বন্ধে প্রায় দাতাকর্ণ ছিলুম, ছোটোবড়ো সকলকে অন্ততঃ মুষ্ঠি ভিক্ষাও দিয়েছি। কলম এখন কৃপণ, স্বভাবদোষে নয়, অভাববশতঃ । ছোটো বড়ো নানা আয়তনের কাগজের পত্রপুট নিয়ে নানা অর্থী আমার অঙ্গনে এসে ভিড় করে। প্রায় সকলকে ফেরাতে হলো। আমার অনাবৃষ্টির কুয়োর শেষতলায় অল্প যেটুকু জল জমেছিল, সেটুকু নিঃশেষ হয়ে গেছে। আমি প্রতিজ্ঞা করেছি কৃপণের অখ্যাতি শেষ বয়সে স্বীকার করে নিয়ে রিক্ত দানপাত্র হাতে নিয়ে বিদায় নেব। যারা ফিরে যাবে, তারা দুয়ো দিয়ে যাবে, কিন্তু বৈতরণীর মাঝ দরিয়ায় সে ধ্বনি কানে উঠবে না।
আজকাল দেখতে পাই ছোটো ছোটো বিস্তর কাগজের অকস্মাৎ উদ্গম হচ্ছে ফুল ফসলের চেয়ে তাদের কাঁটার প্রাধান্যই বেশি। আমি সেকেলে লোক, বয়সও হয়েছে। সাহিত্যে পরস্পর খোঁচাখুঁচির প্রাদুর্ভাব কেবল দুঃখকর নয়, আমার কাছে লজ্জাজনক বোধ হয়।
এই জন্যে এখানকার ক্ষণসাহিত্যের কাঁচা রাস্তায় যেখানে সেখানে পা বাড়াতে আমার ভয় লাগে। সাবধানে বাছাই করে চলবার সময় নেই, নজরও ক্ষীণ হয়েছে, এইজন্যে এই সকল গলিপথ এড়িয়ে চলাই আমার পক্ষে নিরাপদ। তুমি ভরুণ কবি, এই প্রাচীন কবি তোমার কাছ থেকে আর কিছু না হোক, করুণা দাবী করতে পারে। অঙ্কিঞ্চনের কাছে প্রার্থনা ক'রে তাকে লজ্জা দিয়ো না। এই নতুন যুগে যে সব যাত্রী সাহিত্যতীর্থে যাত্রা করবে, পাথেয় তাদের নিজের ভিতর থেকেই সংগ্রহ করতে হবে।
শুনেছি বর্ধমান অঞ্চলে তোমার জন্ম। আমরা থাকি তার পাশের জিলায় যদি ঐ সীমানা পেরিয়ে আমাদের দিকে আসতে পারো খুসী হব। স্বচক্ষে আমার অবস্থাও দেখে যেতে পারবে। ইতি-
স্নেহরত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৫ ভাদ্র ১৩৪২
নজরুল এই চিঠি পেয়ে খুবই অভিভূত হয়ে পড়েন এবং ‘তীর্থ পথিক' নামক একটি কবিতার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের পত্রের উত্তর দেন।
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Contact the business
Telephone
Website
Address
বি বাড়িয়া, নবীনগর, শ্যামগ্রাম
Jatrabari
প্রিয় বন্ধু নামাজ বাদ দিয় না এপারের জীবনের চেয়ে ওপারের জীবন অনেক সুন্দর। মাহফুজুর রহমান মাহমুদী
স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া, , বাস্তবতা বহুদূর।
Jatrabari, MAGURA,KHULNA,DHAKA
অভিনয় জগতের সঙ্গে,বাস্তব জগতের কোন মিল নাই
Dhaka
Jatrabari, 1236
Our page's job is to try to keep you happy and entertain you all the time
Jatrabari
This page is for uploading gaming videos.Like my page & follow me on facebook & share my page.
Jatrabari
The beauty of nature can be seen on this page and we work with all necessary fish, fresh meat and veg
Jatrabari
This is Anaya's mom of Recipe's by Anaya's Mom. Which has focused on cooking &cooking recipe,vlog