Kholilur Official
Im kholilur Official YouTube channel
জেনে নিন ঈদের নামাজের নিয়ম
সুন্নাহের আলোকে অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সাথে
ঈদের দিন জামাআতের সাথে ২ রাকাত সালাত আদায় করা ওয়াজিব। এই সালাতে অতিরিক্ত ৬টি তাকবীর দেয়া হয়ে থাকে। বছর ঘুরে ২ বার আমাদের জীবনে ঈদ আসে। তাই ঈদের সালাতের নিয়মটি ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। আসন্ন ঈদুল ফিতরের দিন যেন আমরা জেনে বুঝে ঈদের সালাত আদায় করতে পারি এজন্য ঈদের ২ রাকাত সালাতের নিয়মটি ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হলো।
====================
লেখাটি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে পড়তে ভিজিট করুন:
https://muslimsday.com/ঈদের-নামাজের-নিয়ম
====================
নিয়ত করা
----------------
অন্যান্য সালাতের ন্যায় এই সালাতের জন্যও নিয়ত করা ফরজ। আমরা ঈদুল ফিতরের ২ রাকাত ওয়াজিব সালাত আদায় করার জন্য কাতারবদ্ধ হয়েছি - মনে মনে এই সংকল্প বা intention থাকাই যথেষ্ট। আরবি বা বাংলায় নির্দিষ্ট শব্দ ও বাক্যে মুখে উচ্চারণ করে "নিয়ত পড়া" জরুরি নয়।
তাকবীরে তাহরিমা বলে সালাত শুরু করা
-----------------------------
ইমাম সাহেব তাকবীরে তাহরিমা "আল্লাহু আকবার" বলে সালাত শুরু করবেন। এরপর অন্যান্য সালাতের ন্যায় ইমাম সাহেব ও আমরা মনে মনে "সানা" পড়ব।
১ম রাকাতঃ অতিরিক্ত ৩টি তাকবীর
-----------------------------
"সানা" পড়া শেষ হলে ইমাম সাহেব ৩ বার "আল্লাহু আকবার" বলে তাকবীর দিবেন।
প্রথম তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিব।
দ্বিতীয় তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিব।
তৃতীয় তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত নাভির নিচে বাঁধবো। (প্রথম ২ তাকবীরের মত হাত ছেড়ে দিব না)
এরপর ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা পড়বেন। অন্য কোনো সূরা মিলাবেন। এরপর অন্যান্য সালাতের ন্যায় রুকু সিজদা আদায় করে ইমাম সাহেব ১ম রাকাত শেষ করে ২য় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা যথারীতি ইমামের অনুসরণ করব।
২য় রাকাতঃ অতিরিক্ত ৩টি তাকবীর
--------------------------------
২য় রাকাতের শুরুতে ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা পড়বেন। এরপর অন্য কোনো সূরা বা সূরার অংশ তিলাওয়াত করবেন। রুকুতে যাওয়ার আগে ইমাম সাহেব ৩টি অতিরিক্ত তাকবীর দিবেন।
প্রথম তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিব।
দ্বিতীয় তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিব।
তৃতীয় তাকবীরের সময়েও কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিব। (১ম রাকাতের ৩য় তাকবীরের মত হাত বাঁধব না। বরং হাত ছেড়ে দিব)।
এরপর ইমাম সাহেব চতুর্থ তাকবীর বলবেন। এটি হচ্ছে রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর। চতুর্থ তাকবীর শুনে আমরা রুকুতে চলে যাব। এরপর বাকি সকল নিয়মকানুন অন্যান্য সালাতের মতই। আমরা ইমামকে অনুসরণ করে ২ রাকাত সালাত শেষ করব।
সালতের পরে ইমাম সাহেব ২টি খুতবা দিবেন। যা শোনা ওয়াজিব। অনেককেই দেখা যায় সালাত শেষে উঠে চলে যান। এটি গর্হিত অন্যায় একটি কাজ।
ঈদের সালাতে আমরা মূলত অতিরিক্ত তাকবীর নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে থাকি। অতিরিক্ত তাকবীরের সময় দেখা যায় কেউ হাত তুলে হাত ছেড়ে দেন, কেউ বা আবার বেঁধে ফেলেন। কেউ বা আবার ভুলে রুকুতে চলে যান। আশা করি আসন্ন ঈদের সালাতে আমাদের এই ভুলগুলো হবে না। সংক্ষেপে তাকবীরের নিয়মটা বলা যায় এভাবেঃ
প্রথম রাকাতের সানার পরে ২ বার কান পর্যন্ত হাত তুলে ছেড়ে দিব। ৩য় তাকবীরে হাত বেঁধে ফেলব। আর ২য় রাকাতে রুকুর আগে ৩বার তাকবীরের সময়ই কান পর্যন্ত হাত তুলে হাত ছেড়ে দিব। চতুর্থ তাকবীরের সময় রুকুতে যাব। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক ভাবে ঈদের সালাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
তথ্যসূত্রঃ
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
পৃষ্ঠাঃ ২৫৮
প্রকাশকালঃ জুন ২০০০
(বিঃ দ্রঃ
ঈদের সালাতে অতিরিক্ত তাকবীর কয়টি হবে বা এর নিয়ম কী হবে এ বিষয়ে হাদীসের মাঝে ভিন্নতা রয়েছে। সুন্নাহের আলোকে হানাফী মাযহাবের মত অনুসারে উপরের পদ্ধতিটি লিখা হয়েছে। আপনি যদি ভিন্ন মাযহাবের অনুসারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মাযহাবের আলেমদের থেকে জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করতে পারেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার বা আলোচনার প্রয়োজন হলে অনুগ্রহ পূর্বক আলেমদের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলো। জাযাকাল্লাহু খাইর।)
মু’আবিয়া আল-কুশাইরী (রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ
একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করি, আপনি আমাদের স্ত্রীর হক সম্পর্কে কী নির্দেশ দেন? তিনি বললেনঃ তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খেতে দেবে। তোমরা যা পরিধান করবে তাদেরকেও তা পরতে দেবে। তাদেরকে মারধর করবে না এবং গালমন্দ করবে না ।
রেফারেন্সঃ
সুনানে আবু দাউদ ২১৪১
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
মু’মিন পুরুষ আর মু’মিন নারী পরস্পরে একে অন্যের সহযোগী। তারা সৎকাজের আদেশ করে, অসৎ কাজে বাধা দেয়, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। তারা এমন লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ নিজ রহমত বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
রেফারেন্সঃ
সূরা আত-তাওবাহঃ ৭১
সূত্রঃ তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন
পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
তোমাদেরকে যেই বড় বড় গুনাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে, তোমরা যদি তা পরিহার করে চল। তবে আমি নিজেই তোমাদের ছোট ছোট গুনাহ তোমাদের থেকে মিটিয়ে দেব এবং তোমাদেরকে এক মর্যাদাপূর্ণ স্থানে দাখিল করব।
রেফারেন্সঃ
সূরা আন-নিসাঃ ৩১
সূত্রঃ তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন
আজ রাতেও হতে পারে শবে ক্বদর
শবে ক্বদর মানেই ২৭ রমাদান নয়
আজ (১২ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার) ২০ রমাদান। ইফতারের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে ২১ রমাদান। যা শেষ দশকের প্রথম বিজোড় রাত। হাদীস শরীফের বর্ণনানুযায়ী আজও হতে পারে মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বদর। ক্বদরের ইবাদত হোক সুন্নাহের আলোয় উদ্ভাসিত ও বিদআত থেকে মুক্ত। শুধু ২৭ রমাদানই শবে ক্বদর হিসাবে ইবাদত নয়, বরং রমাদানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই শবে ক্বদরের জন্য বাড়তি নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও ইবাদতে সময় দেয়া উচিত।
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তবে কি দুআ’ পড়বো?
তিনি (রাসূল [সাঃ]) বলেনঃ তুমি বলবে,
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
"হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাসো। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও" (সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৮৫০)
জামে আত-তিরমিযির একটি হাদীস থেকে উক্ত দুআটি একটি বাড়তি শব্দ সহকারে পাওয়া যায়। দুআটি হচ্ছেঃ
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
"হে আল্লাহ! তুমি সম্মানিত ক্ষমাকারী, তুমি মাফ করতেই পছন্দ কর, অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও"
(তিরমিযি ৩৫১৩)
রমাদানে গুনাহ মাফ করানোর গুরুত্বের ব্যাপারে নিচের হাদীসটি আমরা সকলেই জানি।
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাঃ) মিম্বারে উঠলেন। তিনি প্রথম সিঁড়িতে উঠে বলেনঃ আমীন। তিনি দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরা আপনাকে তিনবার আমীন বলতে শুনলাম।
তিনি বলেনঃ আমি প্রথম সিঁড়িতে উঠতেই জিবরাঈল (আবু দাউদ) এসে বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে রমযান মাস পেলো এবং তা শেষ হয়ে যাওয়া সত্বেও তার গুনাহর ক্ষমা হলো না। আমি বললামঃ আমীন।
অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে নিজ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেলো, অথচ তারা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করালো না। আমি বললামঃ আমীন।
অতঃপর তৃতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যার নিকট আপনার উল্লেখ হলো, অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পড়েনি। আমি বললামঃ আমীন।
(আদাবুল মুফরাদ ৬৪৮, হাদীসের মানঃ সহীহ)
অর্থাৎ আমরা যদি রমাদান পেয়েও আল্লাহর থেকে ক্ষমা লাভ করতে না পরি তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্যের জন্য স্বয়ং রাসূল (সা) সমর্থন দিয়ে "আমীন" বলে গেছেন। আমরা কি এর মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারি? এলাকার একজন এমপি সাহেব বা সংসদের একজন মন্ত্রী যদি আমাদেরকে দুর্ভাগা বলেন বা আমাদের দুর্ভাগ্যের জন্য সমর্থন দেন আমরা কতই না পেরেশান হয়ে পড়ব! কিন্তু এখানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটি যেই লোকদেরকে দুর্ভাগা বলেছেন আমরা সেই দলে পড়ে যাচ্ছি না তো? আমরা কি আমাদের গুনাহ মাফ করাতে পেরেছি?
রমাদানের ২০ দিন চলেই গেল। আমরা কেউই জানি না আগামী রমাদান পর্যন্ত আমরা বেঁচে থাকব কিনা। আবার আরেকটি রমাদানে আমাদের গুনাহগুলোকে মাফ করাতে পারব কিনা। তাই এই রমাদানকেই জীবনের শেষ রমাদান হিসাবে চিন্তা করি। গুনাহ মাফ করানোর জন্য রমাদানের শেষ ১০ দিনকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করি। যারা প্রথম দিকে তারাবীহ সালাত পড়তে অলসতা করেছি অন্তত এই ১০ দিন পড়ি। এই ১০ দিন আগের চেয়ে একটু বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও দান সাদাকা করি। আল্লাহর রাসূল (সা) যেই দুআ শিখিয়ে দিয়েছেন সেই দুআ বারবার পড়ি। দুআর অর্থ বুঝি। অন্তর থেকে উপলব্ধি করে দুআ করি। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করবেনই!
এই পবিত্র সময়গুলো আমরা ফেসবুক বা ইউটিউবে অযথা ঘুরে না বেড়াই। আমাদের প্রোডাক্টিভিটি নষ্ট করার জন্য ফেসবুক-মেসেঞ্জার আর ইউটিউব বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। আমাদের ফোকাস নষ্ট করে সব কাজে ডেস্ট্রাকশন তৈরি করার জন্য এগুলোর জুড়ি নেই। ফেসবুকে আপনি হয়ত আপনার জন্য কাজের বা মূল্যবান ৫% জিনিস পাচ্ছেন। বাকি ৯৫% সময় নষ্ট হওয়া ছাড়া আর কিছু না। নিজেকে ফ্রেন্ডলিস্টের শত শত হাজার হাজার মানুষের কাছে এমন cheap বা সস্তা বানিয়ে না ফেলি যে, কেউ চাইলেই যে কোনো মুহূর্তে আমাকে reach করতে পারে! চাহিবা মাত্রই যেন আমি আমার কাজ ফেলে ফেসবুকে-মেসেঞ্জারে চলে না যাই। প্রতি দিন কত ঘন্টা মেসেঞ্জার বা ফেসবুকে ব্যয় করছি আর সেগুলো আসলে কতটুকু আমাদের ইহলৌকিক বা পরলৌকিক কাজে আসছে তা চিন্তা করার সময় এসেছে। আমরা একটা কাগজে লিখে রাখতে পারি দৈনিক আনুমানিক ফেসবুক ব্যবহারের সময়। সপ্তাহ শেষে দেখতে পারি পুরো সপ্তাহে কয় ঘন্টা ফেসবুক ইউজ করলাম, কয় ঘন্টা কুরআন পড়লাম আর কয় ঘন্টা ইসলামকে জানার জন্য বই পুস্তক পড়লাম।
তাই আসুন, আমরা রমাদানের এই শেষ ১০টা দিন অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকে সীমিত করি। প্রতি বিজোড় রাতে শবে ক্বদরের উদ্দেশ্যে সাধ্যমত তাহাজ্জুদ পড়ি, কুরআন পড়ি, গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করি। শেষ দশকে আমাদের টার্গেট হোক একটাই! আমাদের সকল গুনাহ থেকে মুক্তি!
আল্লাহ আমাদের সবাইকে গুনাহ থেকে মুক্ত করে দিন। আমীন।
মহিমান্বিত শবে ক্বদরের রাতের গুরুত্ব, ফজিলত সম্পর্কে আরো জানতে পড়তে পারেন মাওলানা শিব্বীর আহমদের লিখা এই প্রবন্ধটি:
মহিমান্বিত রাত ‘শবে কদর’ - Muslims Day 1,552 viewsমানব-ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মানুষের নিকট শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থটি অবতীর্ণ হওয়ার বরকতময় ধারা যে সময় শুরু হয়েছে, সে সময়.....
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
দুটি নিয়ামত এমন, যে ব্যাপারে বহু লোক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে- সুস্বাস্থ্য ও অবসর।
রেফারেন্সঃ
সহীহ বুখারী ৬৪১২
সূত্রঃ রিয়াযুস সালেহীন, ২য় খণ্ড, মাকতাবাতুল আশরাফ কর্তৃক প্রকাশিত, হাদীস নং ৯৭
পাদটীকাঃ
এ হাদীসের শিক্ষাঃ
ক. সুস্বাস্থ্য আল্লাহ তা'আলার দেওয়া এক বড় নি'আমত। এর জন্য শোকর আদায়
করা দরকার।
খ. সুস্বাস্থ্য যখন আল্লাহ তা'আলার একটি বড় নি'আমত, তখন এর হেফাজত করা অবশ্যকর্তব্য।
গ. মানুষ অবসর সময়কে হেলায় নষ্ট করে। অথচ এটা 'ইবাদত-বন্দেগীর এক বড় সুযোগ। সুতরাং প্রত্যেকের কর্তব্য এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা।
ঘ. সুস্বাস্থ্য ও অবসর সময় ছওয়াব কামাই করার জন্য মূলধনস্বরূপ। তাই প্রত্যেকের কর্তব্য, পুণ্যার্জন ছাড়া এ মূলধন যাতে নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকা।
রিযিক বৃদ্ধির দুইটি প্রমাণিত আমল
কুরআন ও হাদীস থেকে প্রাপ্ত
আমরা কে না চাই যে, আমাদের রিযিক বৃদ্ধি পাক? হালাল রিযিক ও অভাব-ঋণগ্রস্ত অবস্থা থেকে রক্ষা চেয়ে রাসূল (সা) নিয়মিত দুআ করতেন। বিশেষ করে ঋণের থেকে হেফাজতে থাকার জন্য রাসূল (সা) আল্লাহর কাছে দুআ করতেন। তিনি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির জানাজার সালাত পড়াতেন না।
আজকে আমরা কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে হালাল রিযিক বৃদ্ধির দুইটি আমল সম্পর্কে জানব।
॥॥ তাকওয়া অবলম্বন করা ॥॥
আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা। তাঁর আদেশগুলো পালন ও নিষেধ করা বিষয়গুলো বর্জন করা। রিযিকের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি, ফলাফলের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করা এবং আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত বা অনুগ্রহে সন্তুষ্ট থাকা। তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক অন্বেষণে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
- فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ فَارِقُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَأَشْهِدُوا ذَوَىْ عَدْلٍ مِّنكُمْ وَأَقِيمُوا الشَّهٰدَةَ لِلَّهِ ۚ ذٰلِكُمْ يُوعَظُ بِهِۦ مَن كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ ۚ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُۥ مَخْرَجًا
وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُۥٓ ۚ إِنَّ اللَّهَ بٰلِغُ أَمْرِهِۦ ۚ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَىْءٍ قَدْرًا
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।”
(সূরা আত-তালাক, আয়াতঃ ২-৩)
॥॥ আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ॥॥
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিযিক বাড়ে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ
"যে লোক তার জীবিকা প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।"
(বুখারী ৫৯৮৫)
অর্থাৎ আমরা যদি আমাদের আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখি, তাদের হক্ব আদায় করি, তাদের জন্য সাধ্য মত খরচ করি, তাদের মধ্যে অভাবীদেরকে সহযোগিতা করি। তাহলে আমাদের হায়াত ও রিযিকে আল্লাহ বরকত দিবেন ইনশাআল্লাহ।
রাসূল (সা) এর সহীহ হাদীস থেকে পাওয়া যায় সাদাকা বা দানের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। একটু পরীক্ষা করেই দেখুন না! আপনার কোনো অভাবী আত্মীয়দের জন্য, অভাবী বা কষ্টে থাকা বন্ধুদের জন্য সাধ্য মত খরচ করুন। দেখবেন আল্লাহ অকল্পনীয় উৎস থেকে আপনার রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন। এটা বান্দার সাথে আল্লাহর ওয়াদা!
আল্লাহ আমাদের সকলের অভাব দূর করে দিন। প্রত্যেকের ক্যারিয়ারকে সফল করুন। রিযিক বৃদ্ধি করে দিন। আমীন।
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি মদ পান করে, চল্লিশ ভোর (দিন) পর্যন্ত তার নামায ক্ববূল করা হয় না। সে তাওবা করলে আল্লাহ তার তাওবা ক্ববূল করেন। যদি আবার সে মদ পান করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা চল্লিশ ভোর (দিন) পর্যন্ত তার নামায ক্ববূল করেন না। যদি সে তাওবা করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার তাওবা গ্রহণ করেন। সে যদি আবার মদ পানে লিপ্ত হয় তাহলে আল্লাহ তা’আলা চল্লিশ ভোর (দিন) পর্যন্ত তার নামায ক্ববূল করেন না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা’আলা তার তাওবা কবূল করেন। সে চতুর্থ বারে মদ পানে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ তা’আলা চল্লিশ ভোর (দিন) পর্যন্ত তার নামায ক্ববূল করেন না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা’আলা তার তাওবা ক্ববূল করেন না এবং তাকে ‘নাহ্রুল খাবাল’ হতে পান করাবেন। প্রশ্ন করা হল, হে আবূ আবদুর রাহমান (ইবনু উমার)! নাহরুল খাবাল কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের পূঁজের নহর।
রেফারেন্সঃ
জামে আত-তিরমিজি ১৮৬৮
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
পাদটীকাঃ
চতুর্থ বার ক্ষমা না করা ও তাওবা কবুল না করার বিষয়টি ধমক হিসেবে বলা হয়েছে। অন্য হাদীসে আছে, দিনে সত্তরবার অন্যায় করেও যদি তওবা করে, আল্লাহ তায়ালাও তাও কবুল করবেন।
পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা ওয়াজিব
এটি অপশনাল সুন্নত নয়
দাড়ি ইসলামের শিআর ও পরিচয়-চিহ্ন হিসেবে গণ্য। দাড়ি লম্বা করা এবং মোচ খাটো করা দ্বীনে তাওহীদের শিক্ষা, যা সকল নবীগণের (আঃ) শরীয়তে ছিল। দাড়ি লম্বা রাখা ওয়াজিব এবং এক মুষ্ঠি থেকে খাটো করা নাজায়েয।
যেহেতু দাড়ি রাখা সকল নবীর পবিত্র রীতি ছিল তাই একে ‘সুন্নত’ও বলা হয়। এতে কারো কারো ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, দাড়ি লম্বা করাও অন্যান্য সাধারণ সুন্নতের মতো একটি সুন্নত। অতএব তা করলে ভালো, না করলেও গুনাহ নেই! এটা একদম ভুল ধারণা।
দাড়ি এমন কোনো সুন্নত নয়, যা রাখা-না রাখার স্বাধীনতা রয়েছে। এটা একটা ‘সুন্নতে ওয়াজিবা’। অর্থাৎ সুন্নতে মুয়াক্কাদা থেকেও এর গুরুত্ব বেশি এবং এটা পরিত্যাগ করলে গুনাহ হয়।
দাড়ি কামানো বা এক মুষ্ঠি থেকে ছোট রাখা এমন এক গুনাহ, যা মানুষের সঙ্গে সর্বদা সংযুক্ত থাকে এবং এমন একটি গুনাহ, যা গোপন করারও কোনো উপায় নেই। প্রতি মুহূর্তে এটার জন্য গুনাহ লেখা হতে থাকে। এটা একটা প্রকাশ্য গুনাহ, যা খুবই ভয়াবহ। তদুপরি দাড়ির সঙ্গে এই আচরণটা করা হয় সুন্নতের প্রতি অনীহা এবং অনৈসলামিক ফ্যাশনের প্রতি আকর্ষণের কারণে। এ অবস্থায় ব্যক্তির ঈমানের ব্যাপারেই শঙ্কিত হতে হয়।
(রেফারেন্সঃ https://www.alkawsar.com/bn/article/1424 )
উপরোক্ত লেখাটি আমাদের অ্যাপের "প্রচলিত ভুল" অপশনের "দৈনন্দিন জীবন" অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আমরা যারা দাড়ি ছোট করি বা শেভ করি তারা এর বিনিময়ে আসলে কী পাই? প্রিয় ভাই আমার! যারা এখন পর্যন্ত নবীজির (সা) এ গুরুত্বপূর্ণ আমলের অনুসরণ করছি না। চোখটা বন্ধ করে নিজেকে একটু প্রশ্ন করি। কী পাই আমরা দাড়ি কেটে? দুনিয়া বা আখিরাতের নূন্যতম কোনো লাভ কি এতে আছে? কেউ চুরি করলে, ঘুষ খেলে সে অন্তত দুনিয়াতে কিছু পেল। একজন পুরুষ দাড়ি কাটলে, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করলে এর বিনিময়ে সে কী পাওয়ার আশা করে পরকালের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ছাড়া? আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন।
অনেক ভাই আছেন, যারা রমজান মাস আসলে দাড়ি কাটা বন্ধ করেন। এটা অবশ্যই আল্লাহর প্রতি ভয় এবং রমজানে তাকওয়া বৃদ্ধির কারণে করেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ঈদের চাঁদ দেখা গেলে আবার দাড়ি কেটে আগের মত গুনাহে লিপ্ত হন।
আসুন আমরা রমজানে শুরু করা সকল ভাল আমলগুলো বছরের বাকি মাসগুলোতেও চর্চা করি। আজকে থেকেই সকল ভাইয়েরা নিয়ত করে ফেলি যে, দাড়ি কাটার গুনাহে আর লিপ্ত হব না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের হুকুমগুলো পালন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ
যে লোক তার রিযক প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়। সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।
রেফারেন্সঃ
সহিহ বুুখারী ৫৫৫৯
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
সালাতে রুকু সিজদা ঠিক ভাবে আদায় করছি তো?
সালাতের দুটি ওয়াজিব সম্পর্কে সচেতন হই
নামাজের ওয়াজিবগুলোর মধ্যে দুটি ওয়াজিব কাজ হচ্ছে রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং দুই সিজদাহর মাঝে সোজা হয়ে বসা। আমরা জানি নামাজে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে সহু সিজদাহ করতে হয়। অন্যথায় নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
আমরা অনেকেই রুকু থেকে কোনো রকম কোমর উঠিয়েই সিজদায় চলে যাই। প্রথম সিজদাহ থেকে উঠে সোজা হয়ে স্থির হয়ে বসার আগেই দ্বিতীয় সিজদায় চলে যাই। আমরা যারা নিয়মিত এরকম করে নামাজ পড়ছি আল্লাহই ভাল জানেন আমাদের সকল নামাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিনা।
আমরা যারা কষ্ট করে নামাজ পড়ছিই, তারা একটু সচেতন হলেই এই ভুল থেকে বেঁচে যেতে পারি। এই দুটি ওয়াজিব আদায়ের জন্য ৩ থেকে ৪ সেকেন্ড সময় ব্যয় করাই যথেষ্ট! তবুও আমরা তাড়াহুড়া করি। আল্লাহর রাসূলের (সা) সামনে এভাবে কেউ নামাজ পড়লে তিনি ঐ নামাজ আবার পড়ার জন্য নির্দেশ দিতেন।
যারা এরকম ত্বরিঘড়ি করে নামাজ পড়ে তাদের ব্যাপারে রাসূল (সা) বলেছেনঃ
“ঐ সলাত হলো মুনাফিকের সলাত যে বসে বসে সূর্যের প্রতি তাকাতে থাকে আর যখন তা অস্তপ্রায় হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে চারবার ঠোকর মেরে আসে।এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করতে পারে” (মুসলিম ১২৯৯)
অন্য হাদীসে এরকম দ্রুত রুকু সিজদাহকারীকে তুলনা করা হয়েছে রক্তে কাকের ঠোকর মারার সাথে।
রাসূল (সা) যখন ইমাম হয়ে নামাজ পড়াতেন তখন রুকু থেকে দাঁড়ানোর পর সাহাবিরা মনে করতেন আল্লাহর রাসূল (সা) হয়ত সিজদায় যেতে ভুলেই গেছেন! অর্থাৎ তিনি রুকু থেকে দাঁড়িয়ে অনেক লম্বা সময় ধরে দুয়া পড়তেন।
সাবিত (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) আমাদেরকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের বর্ণনা দিলেন। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করে দেখালেন। তিনি যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠালেন, তখন (এতক্ষণ) দাঁড়িয়ে রইলেন যে, আমরা মনে করলাম, তিনি (সিজদার কথা) ভুলে গেছেন।
(বুখারী ৮০০)
আমাদের অন্তত "সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ - রব্বানা লাকাল হামদ" পুরো বাক্য ধীরস্থির ভাবে উচ্চারণ করে আস্তেধীরে সিজদায় যাওয়া। রুকু থেকে "সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলার পর আমরা এই দুআটি পড়তে পারিঃ
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ
(মুয়াত্তা - ৪৭৯)
দুই সিজদার মাঝে রাসূল (সা) অত্যন্ত চমৎকার একটা দুয়া পড়তেন। এত সুন্দর একটা দুয়া! এই দুয়ার মাঝে দুনিয়া আখিরাতের সকল চাওয়াই চলে আসে।
اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِيْ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন
(হাদীসটি নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, ১/২৩১, নং ৮৫০; তিরমিযী, নং ২৮৪, ২৮৫; ইবন মাজাহ, নং ৮৯৮। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/৯০; সহীহ ইবন মাজাহ ১/১৪৮)
আরো একটি ছোট দুয়া হাদীসে পাওয়া যায়। এ দুয়াটিও দুই সিজদাহ এর মাঝে বসে পাঠ করতে পারি।
رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ
অর্থঃ হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
(আবূ দাউদ ১/২৩১, নং ৮৭৪; ইবন মাজাহ নং ৮৯৭। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ১/১৪৮)
চলুন পরবর্তী সকল নামাজে আরো কয়েক সেকেন্ড বেশি ব্যয় করে এই দুয়াগুলো নিয়মিত পড়ি। অ্যাপের দুআ সেকশনে নামাজের দুআগুলো অর্থ সহ পাওয়া যাবে। অর্থ বুঝে বুঝে দুয়াগুলো পড়লে আস্তে আস্তে আমাদের নামাজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। নামাজে মনযোগ ও আন্তরিকতা বাড়বে। নামাজ তখন প্রকৃত ভাবেই আল্লাহর স্মরণের মাধ্যম হয়ে উঠবে। আল্লাহ আমাদের সকলের নামাজকে সুন্দর করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, তোমার কন্যাদেরকে আর মু’মিনদের নারীদেরকে বলে দাও- তারা যেন তাদের চাদর নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
রেফারেন্সঃ
সূরা আল-আহজাবঃ ৫৯
সূত্রঃ তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন
পাদটীকাঃ
এই আয়াত থেকে স্পষ্টই প্রমাণিত হয়, নারীর চেহারাও তার পর্দার অন্তর্ভুক্ত। বেগানা ও গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখার কোন সুযোগ
জামায়াত ধরতে মসজিদে দৌঁড়ে যাওয়া
একটি ভুল কাজ, যা থেকে বিরত থাকা উচিত
মসজিদে জামাত শুরু হয়ে গেলে বা জামাতের সময় ঘনিয়ে আসলে প্রায়ই আমরা দৌঁড়ে গিয়ে জামাতে সামিল হই। ইমাম যদি রুকুতে থাকেন তাহলে আমাদের দৌঁড়ের গতি বেড়ে যায়। এতে দুর্ঘটনা ঘটার আশংকাও থাকে। জামাতে সামিল হতে এভাবে দৌঁড়ানো, সরাসরি আল্লাহর রাসূলের (সা) সুস্পষ্ট হাদীসের লংঘন! নিচে অনেকগুলো হাদীসের মধ্য থেকে দুইটি হাদীস উল্লেখ করা হলো।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সা)-কে বলতে শুনেছি যে,
‘‘যখন নামাযের জন্য ইক্বামত (তাকবীর) দেওয়া হয় তখন তোমরা তাতে দৌড়ে আসবে না, বরং তোমরা গাম্ভীর্য-সহকারে স্বাভাবিকরূপে হেঁটে আসবে। তারপর যতটা নামায (ইমামের সাথে) পাবে, পড়ে নেবে। আর যতটা ছুটে যাবে, ততটা (নিজে) পূরণ করে নেবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৩৬, ৯০৮, মুসলিম ৬০২, তিরমিযী ৩২৭, নাসায়ী ৮৬১, আবূ দাউদ ৫৭২, ৫৭৩, ইবনু মাজাহ ৭৭৫, আহমাদ ৭১৮৯, ৭২০৯, ৭৬০৬, ৭৭৩৫, ২৭৪৪৫, ৮৭৪০, ১০৫১২, ১৩১৪৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৫২, দারেমী ১২৮২)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ
সলাতের জন্য ইক্বামত দেয়া হয়ে গেলে তোমরা দৌড়াদৌড়ি বা তাড়াহুড়া করে সলাতে এসো না। বরং প্রশান্তি সহ গাম্ভীর্য রেখে সলাতে শারীক হও। অতঃপর ইমামের সাথে যতটা সলাত পাও তা আদায় করো। আর যতটা না পাবে তা পূরণ করে নাও। কেননা তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সলাত আদায়ের সংকল্প করে তখন সে সলাতরত থাকে বলেই গণ্য হয়। (সহীহ মুসলিম ই.ফা ১২৩৫, ই.সে. ১২৪৭)
মনে হতে পারে আমরা তো আল্লাহর দিকেই নেক উদ্দেশ্যে দৌঁড়ে যাচ্ছি। তাহলে তা খারাপ হবে কেন? কারণ হচ্ছে- রাসূল (সা) স্পষ্ট ভাষায় জামাত ধরার জন্য তাড়াহুড়া করে দৌঁড়ে যেতে নিষেধ করেছেন। আমরা যারা মুসলিম তাদের জন্য এই একটা কারণই যথেষ্ট। এরপর মনের বাড়তি প্রশান্তির জন্য যদি জানতে চাই এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য কী?
তাহলে বলা যায় মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহ তো সারা বিশ্ব জাহানের রব। বিশ্ব জাহানের একক মালিক। তাঁর দরবারে কি আমরা দৌঁড়ে যেতে পারি? আমাদের অফিসের বসের মিটিংয়ে কি হন্তদন্ত হয়ে দৌঁড়ে গিয়ে উপস্থিত হই? কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করতে গেলে কি আমরা নম্র ভাবে বিনয়ের সাথে, গাম্ভীর্যের সাথে যাই না? সেই একই কারণে দৌঁড়ে মসজিদে যাওয়া আল্লাহর রাসূলের (সা) একাধিক হাদীস দ্বারা নিষেধ। এছাড়াও দৌঁড়ে গেলে আমাদের হার্টবিট বেড়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে আসে। হাপাতে হাপাতে নামাজ পড়তে থাকলে নামাজের খুশু-খুযু নষ্ট হয়। একাগ্রচিত্তে নামাজে ব্যাঘাত ঘটে। এই নিষেধের পিছনে এটাও একটা কারণ হতে পারে।
তাই জামায়াতের সময় ঘনিয়ে আসলে বা জামায়াত শুরু হয়ে গেলে স্বাভাবিক ভাবে একটু পা চালিয়ে দ্রুত হাঁটলেও সেটা যেন দৌঁড় বা তাড়াহুড়ার পর্যায়ে চলে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখব।
আল্লাহ আমাদেরকে নামাজ শুরু হওয়ার আগেই মসজিদে উপস্থিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমরা সৎকর্মে অগ্রগামী হও। অচিরেই অন্ধকার রাতের খণ্ডসমূহের মতো ফিতনা-ফাসাদ দেখা দেবে। তখন লোকে সকালবেলা মুমিন থাকবে, সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে। সন্ধ্যাবেলা মুমিন থাকবে, ভোরবেলা কাফের হয়ে যাবে। সে তার দীন বিক্রি করবে দুনিয়ার সামান্য সম্পদের বিনিময়ে।
রেফারেন্সঃ
সহীহ মুসলিম ১১৮, জামে তিরমিযী ২১৯৫
সূত্রঃ রিয়াযুস সালেহীন, ২য় খণ্ড, মাকতাবাতুল আশরাফ কর্তৃক প্রকাশিত, হাদীস নং ৮৭
আজকে কুরআনের কথা বলার কারণে অপমানিত হলাম জুমার খুতবা ৩১ মার্চ ২০২৩
নবীজির (সা) চোখে শ্রেষ্ঠ মানুষ যারা
আসুন মিলিয়ে নিই নিজেদের সাথে
আমাদের চোখে সেরা মানুষের সংজ্ঞা কী? অনেক পড়াশোনা জানা, অনেক সম্পদের অধিকারী ইত্যাদি। চলুন দেখে নিই আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলের (সা) চোখে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের গুণাবলীগুলো। রাসূলের (সা) বিভিন্ন হাদীস থেকে সেরা মানুষের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আমরা জানতে পারি। হাদীসগুলো থেকে কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো।
১।
তোমাদের মধ্যে সর্বসেরা সে, যে কুরআন শিখে এবং শেখায়।
(বুখারী, পর্ব: ফাজায়েলুল কুরআন, অধ্যায়: ২১ হাদীস নং: ৫০২৭)
২।
নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সে, যে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম আচরণের অধিকারী।
(বুখারী, পর্ব: শিষ্টাচার, অধ্যায়: উত্তম চরিত্র, হাদীস নং: ৬০৩৫)
৩।
তোমাদের মধ্যে সর্বসেরা ব্যক্তি সে, যে ঋণ পরিশোধের বেলায় ভালো।
(বুখারী, পর্ব: উকীল নিযুক্তকরণ, অধ্যায়: ৬, হাদীস নং: ২৩০৫)
৪।
তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে যার কাছ থেকে সবাই কল্যান আশা করে, অনিষ্টের আশংকা করে না।
( তিরমিজী, পর্ব: ফিতান, অধ্যায়: ৭৬, হাদীস নং: ২২৬৩/২৪৩২)
৫।
তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সে, যে তার পরিবারের নিকট ভালো।
(ইবনে হিব্বান, পর্ব: বিবাহ, অধ্যায়: স্বামী-স্ত্রীর জীবনাচার, হাদীস নং: ৪১৭৭)
৬।
তোমাদের মধ্যে সে সর্বোত্তম, যে খাদ্য দান করে এবং সালামের জবাব দেয়।
(সহীহুল জামে’, হাদীস নং: ৩৩১৮)
৭।
তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সে ব্যক্তি, যে সালাতে কোমল-স্কন্ধ। (অর্থাৎ কেউ নামাজের কাতারে প্রবেশ করতে চাইলে কাঁধ নরম করে তাকে সুযোগ করে দেয়)।
( আবূ দাঊদ, পর্ব: সালাহ, অধ্যায় ৯৬, হাদীস নং:৬৭২ )
৮।
সেরা মানুষ সে যার বয়স দীর্ঘ এবং কর্ম ভালো হয়।
(জা-মিউল আহাদীস, হাদীস নং: ১২১০১ )
৯।
সেরা মানুষ সে যে মানবতার জন্য অধিক কল্যানকর উপকারী।
(সহীহুল জা-মি’, হাদীস নং: ৩২৮৯ )
১০।
আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আর আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম প্রতিবেশী সে, যে তার প্রতিবেশীর কাছে উত্তম।
(তিরমিজী, পর্ব: সদ্ব্যবহার ও সুসম্পর্ক, অধ্যায়: ২৮, হাদীস নং: ১৯৪৪)
১১।
শ্রেষ্ঠ মানুষ হলো যার অন্তর পরিচ্ছন্ন এবং মুখ সত্যবাদী। সাহাবীগন প্রশ্ন করলেন-সত্যবাদী মুখ বুঝা গেলো, কিন্তু পরিচ্ছন্ন অন্তরবিশিষ্ট কে?
নবীজি ইরশাদ করেন, যে অন্তর স্বচ্ছ-নির্মল, মুত্তাক্বী, যাতে কোন পাপ নেই, বাড়াবাড়ি বা জুলুম নেই, নেই খেয়ানত ও বিদ্বেষ।
(সহীহুল জা-মি’, হাদীস নং: ৩২৯১)
আল্লহ তা’আলা আমাদেরকে সর্বোত্তম মানুষের সবগুলো গুণ দান করুন এবং প্রকৃত ঈমানদার মানুষ হওয়ার তাউফীক দান করুন। আমিন
চলুন সালাতুদ দুহা আদায় করি
এটি শ্রেষ্ঠতম নফল সালাত
ফরজ-ওয়াজিব নামাজের পর যেই নফল নামাজের ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে সালাতুদ দুহা। শ্রেষ্ঠতম নফল সালাত হচ্ছে তাহাজ্জুদের সালাত। শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে সালাতুদ দুহার অবস্থান তাহাজ্জুদের পরপরই। নিয়মিত সম্ভব না হলে সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন আমাদের উচিত এ সালাত আদায় করা। তাহলে আস্তে আস্তে এটি সারা মাসের ইবাদতে পরিনত হবে ইনশাআল্লাহ।
সালাতুদ দুহা আমাদের কাছে ইশরাক ও চাশতের নামাজ বলে পরিচিত। সূর্যোদয়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের নিষিদ্ধ সময়ের আগ পর্যন্ত এ সালাত পড়া যায়। এই সময়ের মধ্যে আগে বা পরে পড়লে এই সালাতকে আলেমগণ ইশরাক, চাশত নামে অভিহিত করেছেন। মুসলিমস ডে অ্যাপের হোমপেজে সালাতের নিষিদ্ধ সময়ের ডানপাশে, "নফল সালাতের ওয়াক্ত" নামের একটি বাটন আছে। সেখানে ক্লিক করলে সালাতুদ দুহা সহ অন্যান্য নফল সালাতের সময় জানা যাবে।
মধ্যাহ্ন বা দুহার সালাত সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়ার ব্যাপারে হাদীস পাওয়া যায়। এছাড়াও হাদীসের আলোকে এর চেয়ে বেশি পড়ার ব্যাপারেও অনুমোদন রয়েছে। যে যার সাধ্য মত ২ রাকাত থেকে উপরের দিকে যত বেশি পারা যায় এ সালাত আদায় করতে পারেন।
এটি অন্যান্য যে কোনো নফল নামাজের মতই ২ রাকাত করে পড়া উত্তম। এই সালাতের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সূরা-ক্বিরাত নাই। সূরা ফাতিহার সাথে যে কোনো সূরা দিয়েই এই নামাজ পড়া যাবে। এ সালাতের আলাদা কোনো বিশেষ নিয়ম নেই। ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ যেভাবে আদায় করা হয়। সেভাবেই এই সালাত আদায় করতে হয়।
অন্যান্য সালাতের ন্যায় সালাতুদ দুহার ক্ষেত্রেও নিয়ত করা ফরজ। আপনি সালাতুদ দুহার জন্য জায়নামাজে দাঁড়িয়েছেন, এটা আপনার মনে থাকাই নিয়তের জন্য যথেষ্ট। সালাতুদ দুহা সহ কোনো সালাতেই মুখে উচ্চারণ করে আরবি বা বাংলায় নিয়তের কিছু বাক্য পড়া জরুরি নয়।
আল্লাহ আমাদের সকলকে নিয়মিত সালাতুদ দুহা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
তোমাদের কেউ যখন আহার করে, তখন সে যেন তার আঙ্গুল চেটে নেয়। কারণ সে জানে না, এগুলোর কোনটিতে বরকত নিহিত রয়েছে।
রেফারেন্সঃ
জামে আত-তিরমিজি ১৮০৮
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
যদি কেউ তোমার ঘরে তোমার অনুমতি ব্যতিরেকে উঁকি মারে আর তুমি পাথর নিক্ষেপ করে তার চক্ষু ফুটা করে দাও, তাতে তোমার কোন গুনাহ্ হবে না।
রেফারেন্সঃ
সহিহ বুখারী ৬৪২১
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
পাদটীকাঃ
এ থেকে বোঝা যায়, কারও ঘরে অনুমতি ছাড়া ঢোকার তো প্রশ্নই আসে না, ভেতরে উঁকি মেরে দেখাটাও অনেক বড় অন্যায়।
পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
আমার যে বান্দাগণ ঈমান এনেছে তাদেরকে বল, যেন নামায কায়েম করে। আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে (সৎকাজে) ব্যয় করে (এবং এ কাজ) সেই দিন আসার আগে-আগেই (করে), যে দিন কোন বেচনাকেনা থাকবে না এবং কোন বন্ধুত্বও কাজে আসবে না।
রেফারেন্সঃ
সূরা ইব্রাহিমঃ ৩১
সূত্রঃ তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন
পাদটীকাঃ
সালাত কায়েম করার অর্থ সমস্ত নিয়ম রক্ষা করে ওয়াক্তমতো জামাতের সাথে নামাজ আদায়ে যত্নবান থাকা।
যে সকল কারণে রোজা ভাঙে না
এ কাজগুলো সম্পাদন হলে রোজা চালিয়ে নিতে হবে। ভাঙা যাবে না
কিছু কাজ এমন আছে যার কারণে রোজা ভাঙে না। এ কার্যগুলো সম্পাদন হলে রোজা চালিয়ে নিতে হবে। রোজা ভেঙে গেছে মনে করে পানাহার করা যাবে না। এরকম কিছু কাজ নিচে সংক্ষেপে দেয়া হলো। যেগুলোর কারণে রোজা নষ্ট হয় না।
# রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে রোজা ভাঙে না। তবে স্মরণ হওয়া মাত্রই পানাহার ছেড়ে দিতে হবে।
# চোখে ওষুধ-সুরমা, মাথায় বা শরীরে তেল লাগালে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করলেও অসুবিধা নেই।
# অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (মুখ ভরে হলেও) রোযা ভাঙ্গবে না। তেমনি বমি মুখে এসে নিজে নিজে ভেতরে চলে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না।
# মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না। অনুরূপভাবে ধোঁয়া বা ধুলোবালি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটের ভেতর ঢুকে গেলে রোযা ভাঙ্গবে না।
# স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙ্গবে না।
# চোখের দু’ এক ফোটা পানি মুখে চলে গেলে রোযার ক্ষতি হয় না। তবে তা যদি গলার ভেতর চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
# সুস্থ অবস্থায় রোযার নিয়ত করার পর যদি অজ্ঞান বা অচেতন হয়ে যায় তাহলে রোযা নষ্ট হবে না।
# রোজা অবস্থায় ইনসুলিন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
# রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে বা ইনজেকশন ইত্যাদি দ্বারা রক্ত বের করলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোযাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়।
# রাত্রে স্ত্রী সহবাস করলে বা স্বপ্নদোষ হলে সুবহে সাদিকের আগে গোসল করতে না পারলেও রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কোনো ওযর ছাড়া, বিশেষত রোযার হালতে দীর্ঘ সময় অপবিত্র থাকা অনুচিত।
# বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া জায়েয। তবে কামভাবের সাথে চুমু খাওয়া যাবে না। আর তরুণদের যেহেতু এ আশঙ্কা বেশি থাকে তাই তাদের এ থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
# শুধু যৌন চিন্তার কারণে বীর্যপাত হলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে এ কথা বলাই বাহুল্য যে, সব ধরনের কুচিন্তা তো এমনিতেই গুনাহ আর রোযার হালতে তো তা আরো বড় অপরাধ।
# কামভাবের সাথে কোনো মহিলার দিকে তাকানোর ফলে কোনো ক্রিয়া-কর্ম ছাড়াই বীর্যপাত হলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে রোযা অবস্থায় স্ত্রীর দিকেও এমন দৃষ্টি দেওয়া অনুচিত। আর অপাত্রে কু-দৃষ্টি তো গুনাহ। যা রোযা অবস্থায় আরো ভয়াবহ। এতে ঐ ব্যক্তি রোযার ফযীলত ও বরকত থেকে মাহরূম হয়ে যায়।
এসব বিষয়ে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। অনেকেই অজ্ঞতাবশত এগুলোকে রোজা ভঙ্গের কারণ মনে করে থাকেন। ফলে এসবের কোনো কিছু ঘটে গেলে রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহার করেন। আবার কেউ কেউ এসব থেকে বেঁচে থাকার জন্যে অযথা কষ্ট করেন। আশা করি, ছোট এ পোস্টের মাধ্যমে উভয় শ্রেণির ভুল দূর হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখাটি সংকলন করেছেন মুসলিমস ডে অ্যাপের শরয়ী সম্পাদক মাওলানা শিব্বীর আহমদ। উসতাযুল হাদীস, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মোহাম্মদপুর।
রোজার মাসআলাগুলো যাচাই করার জন্য আমরা আয়োজন করেছিলাম ফিকহুস সিয়াম কুইজ প্রতিযোগিতা। যদিও প্রতিযোগিতাটি শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আপনি চাইলে ডেমো কুইজে অংশ নিয়ে মাসআলাগুলো জেনে নিতে পারেন। পুরষ্কার পাওয়া না গেলেও এতে রোজা সংক্রান্ত মাসআলাগুলো জানা সহজ হবে ইনশাআল্লাহ। ডেমো কুইজে অংশ নেয়া যাবে এখান থেকেঃ
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি আযান শুনে দু’আ করেঃ
اَللّهُمَّ رَبَّ هذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّداً الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَاماً مَّحْمُوْداً الَّذِيْ وَعَدْتَّهُ
‘হে আল্লাহ্-এ পরিপূর্ণ আহবান ও সালাতের প্রতিষ্ঠিত মালিক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে ওয়াসীলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকামে মাহমুদে পোঁছিয়ে দিন যার অঙ্গীকার আপনি করেছেন’
–কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে।
রেফারেন্সঃ
সহীহ বুখারী ৫৮৭
Click here to claim your Sponsored Listing.
Category
Contact the public figure
Telephone
Address
Jessore
7400
Jessore
এটা বিনোদনের পেজ এখানে যা ইচ্ছা পোস্ট করা হয় মন চাইলে ফলো দিয়ে আমাদের সাথে থাকতে পারেন