Fahmida Musharrat-ফাহমিদা মুশাররাত

Fahmida Musharrat-ফাহমিদা মুশাররাত

You may also like

Jamal uddin
Jamal uddin

শখের বশে নিজের কল্পনা জগৎকে গল্প প্রেমিদের নিকট গল্প আকারে তুলে ধরার প্রচেষ্টা✨

25/06/2024

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক পাঠিকা। সাদিব তামান্না কিন্তু ই বুক হয়ে আসছে নতুন আঙ্গিকে। আপনারা সবাই রেডি তো.....?

18/11/2023

সবচেয়ে তিক্ত শব্দ কোনটি জানেন? প্রতিদিন সকালে বেজে উঠা এলার্মের শব্দ! আরেকটা হচ্ছে যখন আপনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকবেন এবং সে মুহূর্তে কানের কাছে মুঠোফোনটি সশব্দে বেজে উঠবে। অতঃপর শান্তির ঘুম বাদ দিয়ে ফোন রিসিভ করতে দেখবেন সেটা গ্রামীণফোন সিম কোম্পানি থেকে আসা ফোন। 🙂

উপন্যাস: #তোমার_নামে_হৃদয়

14/11/2023

#কিশোরী_পালক
#ফাহমিদা_মুশাররাত
সম্পূর্ণ গল্পের লিংকঃ–

১. https://www.facebook.com/100070129450891/posts/666496209031355/?app=fbl

২.https://www.facebook.com/100070129450891/posts/667041318976844/?app=fbl

৩.https://www.facebook.com/100070129450891/posts/667541845593458/?app=fbl

৪.(অন্তিম পর্ব)
https://www.facebook.com/100070129450891/posts/668075025540140/?app=fbl

[ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]

13/11/2023

❝সব সখীরে পার করিতে নেবো আনা আনা, তোমার থেকে নেবো সখী তোমার কানের সোনা!! ❞
যত যাই বলুন না কেন ভাই? ব্যডা মানুষ আসলে ব্যডা মানুষই। এরা মিষ্টভাষায় কথা বলে যেমন সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আপনাকে ঘরের ঘরনী বানিয়ে নেবে তেমন অসৎ উদ্দেশ্যে আপনার সব হাতিয়ে নেওয়ার কারসাজিও ভালো মতো জানে। এই যেমন গানটার কথাই ধরুণ, আপনি তার সখী হওয়ার সুবাদে চাইলেই সে আপনাকে ফ্রি-তে নিতে পারতো। কিন্তু না তার সরাসরি চোখ গেল আপনার কানের সেই ছোট্ট স্বর্ণালঙ্কারের দিকে! কতটা চালাক হলে আবার সে ক্লিয়ারও করে দেয়, ❝সখী গো ও আমি প্রেমের ঘাটের মাঝি, তোমার থেকে পয়সা নেবো না! ❞ মানে কি ভাই! দিন দুপুরে ডাকাতি করবি নাকি? বর্তমানে স্বর্ণের দাম জানিস? এক আনা কিনতে গেলেও কমছে কম পাঁচ হাজারের নিচে পাওয়া যায় না। বেটা মানুষের মাথায় আসলে বেজায় বুদ্ধি। পঞ্চাশ একশ টাকার চেয়ে মিষ্টি সুরে তাই স্বর্নটা হাতিয়ে নেওয়াই শ্রেয়। কথাটা আগে কি বলল ঠিক মতো শুন। তারপর বুঝেশুনে কদম ফেল। না বুঝে ভুলেও পা বাড়াস না বইন। শেষে কেঁদে কেটেও কুল কিনারা পাবি না। 🙂

বিঃদ্রঃ কথাটি মজার ছলে বলা। দয়া করে সিরিয়াসলি নেবেন না।

12/11/2023

#কিশোরী_পালক
#অন্তিম_পর্ব
#ফাহমিদা_মুশাররাত
বাদ শুক্রবার জোহরের নামাজের পরপর বিয়ের কার্যক্রম সংঘটিত হবে। বিয়ের তোড়জোড় চলছে সকাল থেকে। মুরুব্বিরা একে একে পালককে এসে একেক উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। বেচারি পালক মনমরা হয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। গতকাল রাত থেকে এক নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে মেয়েটা। অথচ তার এ কান্না কারোর নিকট পৌঁছুচ্ছে না। বাবা মা-ও এ ব্যাপারে ভীষণ কঠোরতা জারি করেছে। রাহিমা বুঝিয়েছিল মেয়েকে বেশ কয়েকবার। কিশোরী পালকের মন মানেনি। বাকিদের বিয়ে হয় ঠিকই কিন্তু এভাবে হুট করে তো নয়। মান সম্মানের দিকে তাকাতে গিয়ে মেয়েকে বিসর্জন দিচ্ছে পালকের বাবা মা। একদিন না একদিন তো যেতেই হবে পরের বাড়ি। তা সে যাক না এখনি। ভালো পাত্র হাতছাড়া করতে চায় না কেউই।

জরিনা সকাল থেকে পালকদের বাড়িতে। মহিলা বেজায় খুশি। পালককে এহেন ঘরে পাঠাতে পারায় মোটা অংকের টাকা মিলেছে।

বাড়ি ভর্তি মেহমানের আগমন। গিজগিজ করছে সম্পূর্ণ বাড়িঘর। পাত্র পক্ষের বোনরা পালককে সাজানোর কাজে লেগে গেছে। পালকের সামনে রাখা হয়েছে বড় একটা ব্রিফকেস। তাতে ভর্তি সাজ সরঞ্জাম, সঙ্গে বেনারসিসমেত দু'টো শাড়ীও। আচমকা পালক সামনে থেকে সব ছুঁড়ে মারল। ছিটকে সব মাটিতে গড়াগড়ি খেল। পালক চিৎকার করে বলে উঠল,
" করবার কইতাম করতাম না আমি এই বিয়া? কতা কি আন্নেগো কানও যায় না? "

পালক কঠোরভাবে জানিয়েছে সে সাজবে না। যেখানে সে বিয়ে করতে চায় না সেখানে সাজারও কোনো মানে হয় না! ঘর ভর্তি মানুষজন। পালকের আত্নীয় স্বজন, পাত্র পক্ষ থেকে আগত মেহমানের কাউকে পালক নিজের কাছে ঘেষতে দিচ্ছে না।

পালকের চেচামেচি শুনে রাহিমাকে ডেকে আনা হয়। রাহিমা এসে মেয়েকে শান্ত করার যথেষ্ট চেষ্টা করেন। ঠান্ডা মাথায় বোঝাতে থাকেন। " এরুম করিছ না মা। সাইজা ল, মাইনষে খারাপ কইব। মা না তুই, লক্ষী মা আমার! "

" লক্ষী মারান লাগতোনা। সামনেরতন হরেন।একবার কইছি বিয়া করতাম না মানে করতাম না। "

" পালক কতা হুন মা'র! "

" কিল্লাই হুইনতাম। আঁর কতা আন্নেরা হুনতাছেন? হুনেন নো। আঁইও হুনতাম না। "

রাহিমা মেয়েকে শান্ত করতে না পেরে আচমকা সকলের সামনের কষে দু'গালে দু'টো চড় মারলেন। " কতা হুইনবি না মানে? বেক তুই কইলে অইবো? তুই কইরবি তোর বাপ দাদা চৌইদ্দ গুষ্টি কইরবো। "

পালক গালে হাত দিয়ে বসে আছে। চড় থাপ্পড় যাই পড়ুক। আজ সে কিছুতেই ভয় পাবে না। এ বিয়েটা কিছুতেই হতে দেবে না। " তইলে বাপ দাদারে যাই করাস না ক্যা? আঁর হিছে কিল্লাই লাগছত? "

রাগের মাথায় মা'কে তুই তোকারি শুনে উপস্থিত সবার মাঝে নাক ছিটকান শুরু হয়ে গেল। ঘরের এ কোণে থাকা যতজন মহিলা কথাটা শুনেছিল, সবাই ছিঃ ছিঃ করা শুরু করল। যা দেখতে পেয়ে রাহিমার মেজাজ তুঙ্গে চড়ে বসল। পায়ে নিচ থেকে জুতো খুলে মেয়েকে ইচ্ছেমতো মারলেন যতক্ষণ না শরীরের রাগ কমে। রাহিমার এলোপাতাড়ি মারা দেখে উপস্থিত কয়েকজন মহিলা তাকে ধরে সরিয়ে নিয়ে গেল অন্যত্র। পালক এবার একা পড়ে রইল সবার মাঝে। মায়ের হাত মা'র খেয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আর চোখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।

বাড়ির উঠোনে বিয়ের সকল বন্দবস্ত করা হয়েছে। শামিয়ানা টাঙিয়েছে ছোট একটি অংশ জুড়ে। সেখানটায় কাজি নতুন বরের পাশে বসে বিয়ে পড়াচ্ছেন। কিছুক্ষণ বাদে ডাক পড়ল কনের। কিন্তু পালককে সাজানো হয়নি। কোনোমতে জোরজবরদস্তি পূর্বক শাড়িটা পরানো হয়েছে। চোখমুখ একদম ফুলে ফেঁপে আছে। কাঁদার ফলে সমস্ত মুখমন্ডল জুড়ে লাল রঙ ধারণ করেছে। গালে পাঁচ আঙ্গুলের চাপ। সাজ বলতে মুখ জুড়ে এসবই স্থান পেয়েছে। পালক সামনে এগিয়ে যেতে দেখতে পেল বরের জায়গায় বসে আছে মধ্যবয়স্ক একজন লোক। চেহারা শুহরতে বসে গেছে স্পষ্ট বয়সের ছাপ। চোখের আন্দাজেই বলা যাবে লোকটার বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেছে। তাতে কি এখানকার মানুষের কাছে এটা কিছুই না। পুরুষ মানুষের আবার বয়স বাড়ে নাকি? তারা তো চিরযৌবন। টাকা পয়সাও কামাই করে ভালো। আর মেয়ে মানুষ বারো পেরুতে না পেরুতেই বুড়ি।

কাজি বারবার পালককে কবুল বলার নির্দেশ দিচ্ছে কিন্তু পালকের সেসব কোনো কথাই কান অব্দি পৌছুতে সক্ষম হচ্ছে না। নির্বিকার হয়ে বসে রইল পালক। কোনোভাবেই কি বিয়েটা আটকানো সম্ভব হবে না? সৃষ্টিকর্তা কি তার জন্য কোনো রাস্তাই খোলা রাখলেন না তবে? হয়তো না! এর থেকে বেরুনোর পথ চেয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত লাভ হলো না। জোরপূর্বক বিয়েটা তাকে মেনে নিতেই হলো। কবুল বলে তাৎক্ষণিক বসা থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল পালক। কিশোরী পালকের পক্ষে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। যার দরুন সেন্স হারিয়েছে।

কিশোরী পালকের জীবনের মোড় ঘুরল অন্যভাবে। বিয়ের মাস দু'য়েক পর পালকের স্বামী পুনরায় বিদেশে পাড়ি জমাল। ততদিনে কিশোরী থেকে পালক অন্তঃসত্ত্বা নারীতে রূপান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে নয় মাস চলছে। যে কোনোদিন প্রসবের সম্ভাবনা আছে। অল্প বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার দরুন শরীরে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে পালককে। সেই সঙ্গে একাধারে পুরো সংসারের দায়ভার তো আছেই। বড় বাড়িতে বিয়ে করেছে কিনা! ননদ বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও প্রায় সময় বাপের বাড়ি এসে থাকছে। সেই সুবাদে ননদ, শ্বাশুড়ির ফরমায়েশ খাটতে খাটতেই চলে যায় পালকের দিনকাল। ক্লান্তিতেও দুদণ্ড শান্তি মিলে না। কিছু বলাও যাচ্ছে না। বললেই শ্বাশুড়ি তেড়ে আসেন। দিনশেষে পালকের পক্ষে বলার মতো কেউ থাকে না। বাবা মা দু-একবার দেখতে এসেছিল। পালককে বলে গেছে সবটা মানিয়ে নিতে। সবার মন জুগিয়ে চলতে। মেয়েদের জীবনটা মানিয়ে নেওয়ার জীবন। কোনো অভিযোগ করা চলবে না।

দেখতে দেখতে সেদিনটা চলে এসেছে। পালক কলসিতে করে পানি নিচ্ছিল। ভারী জিনিস তোলা তারপক্ষে সম্ভব না। তাই ছোট আকারের কলসিতে পানি নিতে উদ্ধত হয়। কষ্ট করে নেওয়ার সময় কোমরের অংশ খানিকটা পানিতে ভিজে যায়, হাঁটার গতির জন্য কলসির পাশ বেয়ে পানি কিছুটা পড়ে যায় হাঁটার পথে। পালক অসাবধানতাবসত পা পিছলে পড়ে যায় মাটিতে। প্রসবের ব্যথায় মাটিতে বসে কাতরাতে থাকে। চিৎকার শুনে শ্বাশুড়ি, ননদ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ধরে ঘরের দিকে নিয়ে যায়।

দাত্রীকে খবর দেওয়া হলো। দাত্রী এসে চিকিৎসা চালালো। কিন্তু কুল কিনারা কিছুই করতে পারল না। শেষে ঠিক করা হলো পালককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হোক। অন্যথায় পালকের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাটিকেও বাঁচানো যাবে না। পালকের ননদ, শ্বাশুড়ি শুনে চুপসে গেল। হাসপাতালে নিলে অনেক খরচ। তাও সেটা বাড়তি খরচ। এতো খরচের কি দরকার? সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, যা করার বাড়িতেই করা হোক। আর কারোর কি সন্তান প্রসব হয়নি? তিনিও তো দাত্রীর সাহায্যে বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন। কই তাকে তো যেতে হয় নি! দাত্রীকে চাপ দেওয়া হলো যে করেই হোক বাড়ির বাহিরে যাওয়া চলবে না।

শ্বাশুড়ির কথা মতোই দাত্রী দ্বারা চিকিৎসা চলল। পালকের বাবা মা সংবাদ পেয়ে ছুটে এল। কিন্তু ততক্ষণে অনেকখানি দেরি হয়ে গেছে। পালককে যে ঘরে রাখা হয়েছে সে ঘরের মাটি লাল রঙে রঞ্জিত হলো। কষ্ট সহ্য করতে না পারায় মেয়েটি অবশেষে বিদায় নিল ধরণীর বুক ছেড়ে। এতে সবার নিকট পালকের প্রয়োজন ফুরালো। শ্বাশুড়ি, ননদ চুপসে গেল। তাদের ঘর থেকে বেরুনোর প্রয়োজন বোধ করলেন না। পালকের বাবা মা মেয়ের অবস্থা দেখে দিশা হারানোর মতো অবস্থা হলো। বাঁচানোর আশায় হাসপাতালের দিকে নেবেন বলে মেয়ের কাছে গেল। কিন্তু একি! গায়ে হাত দিতে অনুভব করল, মেয়ের সমস্ত শরীর ঠান্ডা হিম শীতল হয়ে আছে। বুঝতে বাকি রইল না। তাদের কিশোরী মেয়ে সন্তানসহ ধরনীর বুক হতে বিদায় নিল। মেয়েটি মায়াবী চোখদুটো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। যাতে প্রকাশ পেয়েছে অসহায়ত্বের চিহ্ন। বাঁচার আকুল আকুতি। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু শুকিয়ে গেছে। আহাজারি করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়ল পালকের অসহায় বাবা মা দু'জন। তাদের সম্মান তো রক্ষে হলো। কিন্তু সমাজ এবং পৃথিবীর কঠিন নিয়মে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারল না কিশোরী পালক।

একসময় বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে এভাবে কতশত পালকের জীবনচক্র অল্পবয়সে এসে থেমে গেছে, তার সঠিক হিসেব দেওয়া বাহুল্য। বর্তমানেও কিছু ক্ষেত্রে এসব দেখা যায়। মেয়ে হয়ে জন্মেছ তুমি। পড়াশোনা করে অফিস আদালতে তোমায় মানায় না। আটপৌরে শাড়িতে খুন্তি হাতে ঘরের কাজ সামলানো এবং বাচ্চা সামলানোর জন্যই তোমার জন্ম হয়েছে।

_____________ সমাপ্ত! _____________

গল্পটি কোনো কল্পকাহিনী নয় বরং সত্য ঘটনার আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। বর্তমানে সমাজের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তারপরেও কিছু মানুষের মনে এখনো আগের ন্যায় চিন্তাধারা বিরাজ করছে। সরকার এতো এতো আইন কানুন জারি করলেন কিছু মানুষের সেসবে যেন কোনো পরোয়াই নেই।

বিঃদ্রঃ কাউকে আঘাত করে লেখা আমার উদ্দেশ্য কখনোই ছিল না। কখনো লিখবোও না ইনশাআল্লাহ। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন!

11/11/2023

#কিশোরী_পালক
#পর্বসংখ্যা (০৩)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
" হুন ডাঙ্গর মাইয়া ঘরে বেশিদিন রাহন ঠিক না। আইজ্যা আইয়নের সময় দেখসি তোর মাইয়্যা সেলিম্মার লগে কতা কয়। সেলিম্মা কিন্তু সুবিধার না রহিমা। মাইয়্যারে অহন বিদায় না কইল্লে শেষে মান ইজ্জত আরাবি! "

রাহিমার আগ্রহ জন্মাল। একে-তো বাড়ির বাহিরে সেলিমের মতো অভদ্র ছেলের উৎপাত। মেয়ে না বললেও কি থেকে কি করে বসে জানা নেই। শেষে শয়তানের বদ নজরের উছিলায় না সম্মান খোয়াতে হয়। মানুষের সম্মান যে বড় টোটকা জিনিস। একবার হারালে শত কেঁদেকেটেও পাওয়া যাবে না। রাহিমা জরিনাকে বলল, " খালা ভাইব্বা জানামু। দেহি পালকের আব্বা আগে বাড়িত আইয়োক! " ( দেখি পালকের আব্বা আগে বাড়ি আসুক!)

" হ হ ভাব। কাইল হরুর দিকে আবাইন আমু। (কাল পরশুর দিকে আবার আসব।) বেশি দেরি করিস না কইলাম। হেলে ভালা পাত্র হারাইলে আপসোস কইরবি। "
সন্ধ্যার দিকে ফিরোজ বাড়ি ফিরলে রাহিমা সবটা জানালেন। শুনে অমত জানালেন সঙ্গে রেগেও গেলেন। কি সব যা তা বলছে রাহিমা। মেয়েকে ফিরোজ আরো পড়াবেন। তার ধারণা মেয়ে একদিন তার মুখ উজ্জ্বল করবে।

পাশের ঘর থেকে পালক বাবা মায়ের ফুসুরফাসুর শুনল। কিন্তু কিশোরীর ছোট মস্তিষ্ক বিষয়টি নিতে পারল না। তাই সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ দিল না মেয়েটি। প্রতিদিনকার মতো পাঠশালার আসছে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরে পারুল রূপালীর সাথে তেমন একটা দেখা হয় না। পাশাপাশি বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও ওরা বাড়ি থেকে তেমন একটা বের হয় না। ফিরে এসে ঘরের সমস্ত কাজ করতে হয় তাদের। কখনো সখনো পাত্র পক্ষের সামনে গুটিশুটি হয়ে বসে থাকে পালকের সইয়েরা। কেবল পালকের জীবনটা ভিন্ন আঙ্গিকে চলছে। পাত্রপক্ষের ঝামেলা তাকে সেভাবে পোহাতে হয় না। জরিনা বানুকে মাঝে সাঝে মায়ের কাছে আসতে দেখে, পালককে দেখলে ফিসফিস করে বলতে শুনে কিছু একটা। পালক সেসব জানে না। সইয়েদের কাছে বেশ কয়েকবার শুনেছে এসব ব্যাপারে। তাই কিছুটা আন্দাজ হয় কিন্তু গুরুতর মনে না করে কিচ্ছুটি মাকে জিজ্ঞেস করে না। কৌতূহল জাগলেও সেগুলো দমে রাখে। মা ভীষণ রাগী কিনা! উল্টো পাল্টা বললে মেরে পিঠের ছাল তুলে ফেলবে।
শুক্রবার বিকেলে পালক সইয়েদের সঙ্গে গল্প করছিল। এমন সময় আগমন ঘটে জরিনা বানুর। আজ সঙ্গে দুজন মহিলাকেও নজরে এলো পালকের। পালকের সইয়েরা কি বুঝল কে জানে? জরিনার চোখ রাঙানোর ইশারা দেখতে পেয়ে উঠে গেল তারা। মাথা নিচু করে ঢুকে পড়ল সোজা বাড়ির দিকে। পালকের মা উঠোনের অন্য মাথায় ঝাড়ু দিচ্ছিলেন। জরিনা পালককে হাতের ইশারায় দেখিয়ে বললেন, " এইত্তো এডাই হেই মাইয়্যা! "

মহিলাগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল পালককে। অনুমতিবিহীন পালকের হাত ধরল, মাথায় হাত খোঁপা করে রাখা চুলগুলো খুলে দিল, পায়জামা তুলে আবার পায়ের অংশটাও দেখল। এতে করে তারা ঠিক কি বুঝল পালক নিজেও জানে না। শুধুমাত্র উপস্থিত কান্ডের জন্য হিতাহিত বুদ্ধি হারিয়ে ফেলবার জোগাড় হওয়া ছাড়া। পালককে জরিনা ধমকে উঠল, " ঐ মাইয়্যা তোর দাঁতডি দেহা। ইইই কর। "

আচমকা ধমকে পালকের উঠে গেল রাগ। দাঁত কেন দেখাতে হবে? সে কি কোনো গরু ছাগল নাকি? রেগে গিয়ে মুখ খুলতে যাবে তখনই বাড়ির পেছন সাইড থেকে রাহিমা ঝাড়ু হাতে এলেন। পালককে ডেকে বলতে নিচ্ছিলেন কোনো একটি কাজের কথা। কিন্তু অসময়ে জরিনা বানুকে দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। বেশি অবাক হলেন জরিনার সঙ্গে অপরিচিত মহিলা দু'টিকে দেখে।

জরিনা লাল রঙা দাঁতগুলো প্রর্দশন করে রাহিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, " এতানরা তোর মাইয়্যারে দেখবো কই জোর কইচ্ছে। হেরলাই লগে করি লই আইছি। " (এনারা তোর মেয়েকে দেখবে বলে জোর করেছে। সেজন্য সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি )

রাহিমা ঘাবড়ে গেলেন৷ তিনি তো জরিনাকে কিছুই বলেননি বিয়ের ব্যাপারে। তবুও মহিলা নিজের মর্জিমতো সঙ্গে করে তাদের নিয়েই এলেন। পালককে উদ্দেশ্য করে বললেন,
" পালক তুই ঘরে যা। "

মায়ের আদেশ পেতে একমুহূর্তে কাল বিলম্ব করল না পালক। ছুটে চলে গেল ঘরের দিকে। এখানে থাকলে না আবার আরো হেনস্তার শিকার হতে হয় তাকে।

মহিলাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখলেন ঘরদোর। অপরিচিত হলেও মেহমানদারী করা উত্তম কাজ বিধায় তাদের ঘরে বাহিরেই বসতে দিলেন রাহিমা। ঘরের ভেতরটা অন্ধকার। বাহিরের আলো থাকতে ঘরে নিয়ে লাভ নেই। এই আলোকময় বিকেলে লণ্ঠন জালানো অর্থহীন। কথার প্রসঙ্গে বুঝলেন এনারা পাত্রের বোন হয় সম্পর্কে। পালককেও তাদের মনে ধরেছে, এবার রাহিমা যেমন মতামত পোষণ করে। রাহিমা কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইল। জানাল সবটা পালকের বাবার ওপর নির্ভর করে। এ ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। কিন্তু তারাও আশাহত হলো না। পালক দেখতে শুনতে ভালো। অনেক খুঁজে এমন মেয়ে পাওয়া গেল। তাই ফিরোজের আসার অপেক্ষা করতে লাগল। শুক্রবার হওয়ায় আজ ফিরোজের কাজও ছিল না। বাড়িতে থেকে আশেপাশের কাজ করছিল। বাড়ির পেছনের উঠোনটায় দু'চারটে সবজির গাছ লাগিয়েছে। বিকেলের দিকে হাঁটতে বেরিয়েছে। একটু বাদে সেও ফিরে এলো। তবে মুখটা মলিন করে। রাহিমা তাৎক্ষণিক বুঝল না কারণটা। মহিলাগুলো বিনয়ের সঙ্গে ফিরোজকে নিজেদের মন্তব্য জানালে ফিরোজ গতকাল রাগ দেখালেও আজ সেরকম কিছুই বলল না।
দিনকে দিন সেলিমের উৎপাত বেড়েই চলছে। পালকের সামনে এসে পড়ে হুটহাট করে। পথ আটকে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকসময় নিয়ে। পালক দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করে নেয়। মাঝে মধ্যে রাগের মাথায় কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। তার একই কথা চিঠির ইতিবাচক উত্তর চাই-ই চাই। প্রতিদিন একই কথা পালক কি তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে চায় কি-না? কিন্তু পালক আগের ন্যায় দৃঢ়তার সঙ্গে একই কথা জানায়। সে এসবে কোনোদিনও জড়াবে না। তাতে যাই ঘটে যাক। বাধ্য হয়ে অভিশাপ এবং গালমন্দ ছুঁড়ে রাগী চেহারা বানিয়ে পালকের সামনে থেকে স্থান ত্যাগ করে সেলিম।

গ্রামীণ সমাজে কোনো মেয়েকে একটি ছেলের সাথে সামান্য কথা বলতে দেখলেও লোকে আড়চোখে দেখে। ভাবে মেয়েটির সাথে বোধহয় ছেলেটির গভীর কোনো সম্পর্ক আছে। ধর্মের নামে গোড়ামীটাই যেন সবার মাঝে। তিলকে তাল বানিয়ে ফেলা তাদের কাছে ছুটকির ব্যাপার। টং দোকানগুলোতে যত ময়মুরুব্বি বসে সবার নজরে পালক পড়ে গেছে। সেলিম ভবঘুরে। তারওপর পালকের সাথে যখন তখন কথা বলতে ছুটে আসে। ব্যাপারটি চোখে এড়ানোর মতোও না।
পালকের বাবার কাছে কয়েকদিন ধরে লোকে ব্যাপারটি জানিয়েছে। কেউ কেউ বাড়ি বয়ে এসে সাবধানও করে যাচ্ছে পালককে দেখে রাখতে। অঘটন ঘটার আগেই মেয়েকে বিদায় করতে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে পালকের বাবা মা বাধ্য হয়ে সিন্ধান্ত নিলেন। মেয়েকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাত্রস্থ করবেন। যতদূর পড়েছে এই ঢের। আগে মান সম্মানটাই বড় বিষয়।

জরিনা বানুকে খবর দেওয়া হলো। মহিলা আগের দিনের মতো পান চিবাতে চিবাতে এসে হাজির হলেন। রাহিমার কাছে যখন ইতিবাচক সংকেত পেল বেশ খুশিই হলো। যেটা তার চোখেমুখে স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছিল। সেদিনকার আসা পাত্রটি এখনো হাতে আছে। সেই একই প্রস্তাব পুনরায় পেশ করল রাহিমার নিকট। রাহিমাও খুশিমনে না করল না। জানিয়ে দিল এখানেই মেয়েকে পাত্রস্থ করবেন।

চলবে.....!

[পুরোটা গল্পে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যদিও এখনকার গ্রামীণ পরিবেশ তখনকার তুলনায় অনেক ভিন্ন। সব ডিজিটাল হতে শুরু করেছে। মানুষের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে গেছে। কমে গেছে নিরক্ষরতার হার। তবুও এখনো কোনো কোনো জায়গায় এসব ঘটনা এভেইলেবল। সেই সাথে এভাবে উপস্থাপনের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত! ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]

11/11/2023

গল্পতো তিন নাম্বার পর্বে শেষ করে দেবো বলেছিলাম। যদি চার পর্ব হয়ে যায় তাহলে পাঠক কি আমাকে মেনে নেবে? 🥹

10/11/2023

#কিশোরী_পালক
#পর্বসংখ্যা (০২)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
সন্ধ্যের পর কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরেছে ফিরোজ। পেশায় দিন মজুরের কাজ করে সে। গায়ে ধূলোময়লায় ভর্তি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রতিদিন সন্ধ্যে হয়ে যায়। মাগরিবের আযান চলছে দূরের মসজিদে। সন্ধ্যায় হালকা আলোয় লন্ঠন হাতে পুকুরের দিকে যায় গোসল সেরে নেওয়ার উদ্দেশ্যে। পালক প্রতিদিন বাবার সাথে এসময়ে পুকুরঘাটে আসে। শুধু আজকে আসেনি। মেয়েটার বোধহয় কোন কারণে মন খারাপ বুঝল ফিরোজ। গোসল সেরে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় পরণে কেবল লুঙ্গি, গলায় ভেজা গামছাটা জড়িয়ে বাড়ির দিকে হাঁটল। ঘরের সামনে এসে হাঁক ছেড়ে ডাকে পালকের মা রাহিমাকে।

" পালকের মা। এএ পালকের মা। কোনাই তুই? "

" আইতাছি খাঁড়ান। " রাহিমা নামাজের সালাম ফেরাল সবে। শীতল পাটিটি তুলে রাখল ঘরের এক কোণে৷ " কি অইছে? বোলাইছেন কিল্লান? "

ভেজা গামছা এবং ধুয়ে দেওয়া ভেজা জামাকাপড়গুলো এগিয়ে দিল স্ত্রীয়ের দিকে ফিরোজ। বলল,
" পালক কোনাই? হের কি অইছে। কতা কয় না ক্যা? প্রত্তেকদিন তো দেহি কতা হুনলেই দৌড় দেয়। মাইয়্যাডা আইজ কই? "

পালক নিজের ঘরে বসে শুনছিল বাবা মায়ের কথা। মা তাকে বিকেলে মেরেছে। বেশ জোরে জোরে সলার মুঠোর আঘাত পড়েছে গায়ে। তাই অভিমান জমেছে মায়ের প্রতি মেয়েটির। আজকে সে যাবে না কোথাও। না বাবার কাছে আর না তো রাতে খেতে। ডাকুক তারা। ডাকতে ডাকতে হয়রান হয়ে যায়। শুনবে না।

রাহিমা চুপসে গেছে ফিরোজের কথায়। কি বলবে ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারছে না। মেয়েটাকে বিকেলে ঝোঁকের মাথায় মেরেছে। জানতে পারলে ফিরোজ আস্ত রাখবে না তাকে। মেয়েটা একদম বাপের প্রাণ। তারওপর একমাত্র সন্তান। রাহিমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে ফিরোজ বলে উঠল, " কতা কছ না ক্যান? কোনাই? ঘরে কি নাই? আম্মাজান! আম্মাজান কোনাই আন্নে? "

" আন্নের মাইয়্যা হড়তো বইছে। ডাইক্কা লাভ নাই। "

" ওও। তো এডাই না কবি। দম ধইরা রইছস ক্যা? "

" আন্নে খাইতেন আইয়েন। " বলে রাহিমা চলে গেল রসই ঘরের দিকে।
গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে যাচ্ছে পালক এবং তার সইয়েরা। দুইপাশে ধান ক্ষেত। ক্ষেতের অপর প্রান্তে তাদের পাঠশালা। রাস্তা ধরে গেলে অনেকখানি সময় লাগবে। তাই তিনজন ক্ষেতের আইল ধরেই চলে যায়। হেমন্তকাল চলছে। ক্ষেতে এখন পাকা ধান। কদিন বাদে সব কাটা হবে। তখন পুরো ক্ষেত থাকবে সম্পূর্ণ খালি। এখন তাই ক্ষেতে নামা নিষিদ্ধ। অসাবধানতাবসত ধানের ক্ষতি হলে ক্ষেতের মালিক চিল্লাপাল্লা শুরু করবেন ভেবে রাস্তা ধরেই হাঁটে তিনজন। টং দোকানের সামনে যেতে সেলিম বেরিয়ে আসে। মূলত পালকের জন্য অপেক্ষা করছিল এতোক্ষণ যাবত। পালককে দেখামাত্র দাঁত কেলিয়ে হাসল সেলিম। পালকের মনে পড়ে গেল গত কালকের ঘটনা। এই সেলিমের দেওয়া পত্রের জন্যই তো মার খেয়েছে সে। পিঠে এখনো সলার দাগ বসে আছে। সেলিমের হাসিতে পালকের রাগ হল। একপলক দেখে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে সেলিম ডাক দিল পালকের নাম ধরে।

" ঐ পালক। খাঁড়া কতা হুন। "

পালক কানে নিল না। সোজা হাঁটায় ধ্যান লাগাল। সেলিম দৌড়ে এসে পথ আটকে দাঁড়াল। " কিরে তোরে খাড়াইতে কইছি না? "

" কি কইবেন কন। দেরি অই যাইতেছে। " পালক তাড়া দেখিয়ে বলল।

সেলিমের কণ্ঠে তাচ্ছিল্য প্রকাশ পেল। " এহহহহ। এক্কারি লাগে যেন তুইই একলা ইস্কুল যাছ। আর কেও যায় না? "

" আন্নের সমস্যা কি? যনতন আই এমনে খাড়াইবেন না কইলাম। কোনো কাম কাইজ থাকলে যাই হিগিন করেন। "

" তোরে যেন এক্কান চিডি দিসি। হড়ছোস নি হাসা কইরা ক? "

পালক এবার নিজের রাগ ধরে রাখতে পারল না। তবে মুখে কিছু না বললেও চোখমুখ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে। পালককে রাগান্ধিত দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে সেলিম বলল, " এমনে চাছ কিত্তি। কি কবি এডাই তো হুইনতে আইছি। "

পালকের বান্ধবী রূপালী পাশ থেকে বলে উঠল, " হিগ্গা রাজি না। আন্নে এবার হরেন সামনের তন। "

" তুই চুপ থাক রূপালী। হিগ্গার কতা হিগ্গা কইবো। তোরে কেউ জিগাইছে? পালক তুই ক, তোর কি মত? "

পালক সামান্য উঁচু স্বরে বলল, " আন্নে কি বরা?
(আপনি কি বয়রা) কানে হুনেন না? আগে হড়ালেহাকান (পড়ালেখাটা) ঠিকঠাক মতো করেন যাই। হেয়ার হরে আইয়েন কিছু কইতে যত্তসব ফাউল বেডা। "

কথাটা সেলিমের গায়ে ভালোভাবেই লাগল। ক্ষেপে গিয়ে তুচ্ছার্থক স্বরে বলল, " কেমন এক্কান হড়ালেহা দেহায়। লাগে ব্যারিস্টার হইবো। এহহ দেখমু না। কোন বা**ল করছ! "
রাহিমা রসই ঘরে রান্না ছড়িয়েছে। প্রতিদিন বাপ বেটিকে যার যার মতো পাঠিয়ে তিনি বাকি কাজে হাত লাগান। আজ বৃহস্পতিবার। পালকের তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে। দুইটায় দিকে পাঠশালার পাঠ চুকবে। তারজন্য আজ রয়েসয়ে কাজে হাত লাগালেন রাহিমা। ফিরোজ দুপুরে প্রতিদিন বাহিরেই খান। যাদের বাড়িতে কাজ নিয়েছে মালিক, তারাই প্রতিদিন দুপুরে খাওয়ায়। ফিরোজ আর পালক সকাল সকাল ঠান্ডা ভাত খেয়ে বের হয় এবং ফিরে এসে আবার ভাত খাবে।

জরিনা বানু রাহিমার সামনে পাটাতনে বসে আছে। রাহিমা ভালো করেই জানেন জরিনার মতলব। দুইদিন পরপর আসে পালকের জন্য সম্বন্ধ নিয়ে। প্রতিবারই না করে দেন রাহিমা। বলেন মেয়েকে আরেকটু পড়াবেন। জরিনাও হাল ছাড়ে না। প্রতিবারই আসে নতুন নতুন সম্বন্ধ নিয়ে। এবারই সেরকমই। জরিনা পান চিবিয়ে ভাবনায় মত্ত হওয়ার ভাণ করলেন। রাহিমার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। জিভ দিয়ে চেটে ঠোঁট জোড়া লালে রঞ্জিত করল জরিনা। পানের পিক ফেলে ধাতস্থ হলেন। রাহিমাকে বললেন, " বুঝচ্ছস রহিমা। এক্কান ভালা সম্বন্ধ হাইছি তোর মাইয়্যাডার লাইগ্যা। "

" খালা আন্নেরে তো আগেই কইছি মাইয়্যা এত্ত তাত্তারি হরের বাড়ি দিমু না। "

" তইলে কিরবি? মাইয়্যা মানুষ যন অইছে যাওন তো লাগবোই। আর তোর মাইয়্যাও তো মাশো-আল্লা ডাঙ্গর অইছে। দেখতেও সোন্দর। চোহে লাগনের মতন৷ একজন আঁরে কইল হিগ্গার কতা হেল্লাই তোর ধারে আইছি। নইলে আঁর কাম আছেনি। হুদ্দাহুদ্দি আইয়্যাম? " (শুধুশুধু আসব?)

রাহিমার মধ্যে হেলদোল প্রকাশ পেল না। সে নিজের মতো কাজ করছে। জরিনা বুঝলেন রাহিমা কানে তুলছে না তার কথা। পুনরায় বলল,
" হোলা কিন্তু ভালা। বিদেশের তন আইছে। ডুবাই থাহে। (দুবাই থাকে) এরুম হোলা কিন্তু দুগা হাইতি নো কইলাম। ভাইব্যা দেখ আত ছাড়া অইলে হস্তাবি। " এবার জরিনা যা বলল তাতে রাহিমা কথাটা না চাইতেও ভাবতে বাধ্য হলেন!

বিঃদ্রঃ- গল্পটি একটি ছোট গল্প। একটি কিশোরী মেয়েকে কেন্দ্র করে। যার বেড়ে ওঠা গ্রামীণ পরিবেশে। গল্পে আমি চেষ্টা করছি আশি- নব্বইয়ের গ্রামীণ নিরক্ষর মানুষের জীবন কাহিনী ফুটিয়ে তুলতে। তাদের সমাজের প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস, শিক্ষার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা সম্পর্কে ছোট্ট একটি নমুনা দেখাতে চাইছি। জানিনা কতটুকু সফল হচ্ছি। যেহেতু নিরক্ষর এবং নিন্মবিত্ত মানুষের জীবনকাহিনী, তাই ভাষাগত সমস্যা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। গল্পকে ফুটিয়ে তুলতে আমাকে আঞ্চলিক ভাষায় ব্যবহার করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্র আমার জেলা লক্ষীপুরের ভাষাকেই ব্যবহার করছি। তাই পুরোপুরি নোয়াখালীদের মতোও হবে না। অযথা নোয়াখালীর ভাষা বা সেরকম হচ্ছে না বলে চিল্লাবেন না। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে ব্যাকেটে সুদ্ধ বানান দিয়ে দিয়েছি। আশা করি বিষয়টি সবাই বুঝতে পেরেছেন। সবথেকে বড় কথা এটা গ্রামীণ প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে লেখা আমার প্রথম গল্প।
গল্পটি বড় করবো না। এ মাসের শেষে আমার সেমিস্টার ফাইনাল। তাই পরবর্তী পার্টে চেষ্টা করবো গল্পটি শেষ করে দেয়ার ইনশাআল্লাহ। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

09/11/2023

ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় পালকের পড়ার টেবিলের নিচ থেকে একটি কাগজ কুড়িয়ে পেলেন রাহিমা। কৌতুহলবসত কাগজটি খুলে দেখলেন। সম্ভবত পড়াশোনা বিষয়ক কোনো কাগজ হবে। পড়াশোনা বেশিদূর জানা নেই রাহিমার। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এতে করে অন্তত বাংলা পড়ার মতো যোগ্যতা তিনি রাখেন। গ্রামীণ পরিবেশে অতি সাধারণ নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ছিলেন রহিমা। পড়াশোনায় তাই বেশি দূর এগুতে পারেননি। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর পর বাড়িতে বিয়ের সম্বন্ধ আসে। জানাশোনা ছেলে, ভালো ঘরের ছেলে পাওয়া দুষ্কর কি-না! তাই তো বাবা ধরে বিয়ে দিয়ে দিলেন। মেয়ে মানুষের এতো পড়ে কি লাভ? সেই তো শ্বশুরবাড়ি গিয়ে মাটির চুলোয় লাকড়ি জ্বলিয়ে হাঁড়ি গুঁতোতে হবে। কিন্তু মেয়ের বেলায় রাহিমা এবং রাহিমার স্বামী ভিন্ন কিছু ভেবে রেখেছেন। মেয়েকে তারা পড়াবেন। বিয়েশাদি পরেও করা যাবে। রাহিমা কৌতুহলী দীপ্ত চোখে কাগজটিতে নজর বুললেন। তেমন কিছুই বুঝলেন না তবে যতটুকু বুঝলেন তাতে মনে হচ্ছে মেয়েকে কেউ চিঠি দিয়েছে। তাও সাধারণ কোনো চিঠি না একেবারে যাকে বলে প্রেমপত্র। রাহিমার চোখমুখের রঙ নিমিষে বদলে গেল। পালক স্কুলে গেছে ঘন্টাখানেক আগে। আজ একবার বাড়ি আসুক তারপর দেখে নেবে রাহিমা।
সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে পালক। গ্রামের অন্যসব মেয়েদের মতো হেসে খেলে বেড়ায় সর্বদা। সহজসরল ধাঁচের একটি মেয়ে। দু'জন সই জুটেছে পালকের। ছোটবেলা থেকে তিনজনের একসাথে ওঠাবসা। তারাও পালকের মতো বেশ মিশুক স্বভাবের। পালকের পাশের বাড়ির দু'জনই। একজন পারুল অন্যজনের নাম হলো রূপালী।

পারুল পালককে বলল, " কিরে পারুল কিরুম আছোস? "

" কিরুম আবাইন থাকমু। দেখস না ভালাই তো আছি। "

রূপালীর চোখ এবার দুই সইয়ের দিকে ঘুরল। বিদ্যালয়ে দুপুরে বিরতির সময় চলে। একসাথে তিনজন বড় সৃষ্টি-কড়ই গাছটির নিচে বসে আছে। তিনজনের হাতেই খাবার। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে কথা বলছে।

রূপালী পালককে বাম হাতে ধাক্কা মেরে বলল, " ঢং করছ কিত্তি? হাসা করি কইলেই তো অয়। লাগে আমরা কিচ্ছু জানি না! "

" কি ঢং করছি? তোরা তো দেখসই তাইলে আবার কি দেখবি নতুন কইরা? "

পারুল এবার আকার ইঙ্গিত বাদ দিয়ে সরাসরি বলেই ফেলল, " তোরে যেন সেলিম্মা প্রেমপত্র দিসে হেইডার কতা কইছি। "

" ওও। " পালক বুঝতে পেরে বলল, " আরে সর হেয়া তো একটা হাগল। বেইল আছেনি কোনো? "

" বুইঝলি রূপালী তোরে আর আমারে কেউ দেয় না। সব পালকের কপালেই জুডে। " পারুল টিপ্পনী কেটে বলল রূপালীকে।

পারুলের কথার প্রতিত্তোরে রূপালী কিঞ্চিৎ রাগত স্বরে বলল, " পারুল তুই হইলি আরেক হাগল। এগিন কি ভালানি মাইনষে হইনলেও তো খারাপ কইবো। হুদামিছা পালক তুই এই হাগলের দিকে ভুলেও তাকাইস না৷ দেহা যায় কেরুম। "

তিনজনের আড্ডার মাঝে ঢং ঢং ঢং শব্দে ঘন্টা বেজে উঠল। টিফিন টাইমের সমাপ্তি ঘটে ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। একেবারে বিকেল চারটায় শ্রেণিকক্ষের পাট চুকিয়ে তিনজন যে যার মতো করে বাড়ি ফিরবে।
বিদ্যালয় থেকে ফিরে পালক বাড়ি এসে দেখল রাহিমা জামাকাপড় ভাজ করছেন। জামাকাপড় পাল্টে হাতমুখ ধোয়ার ব্যাপারে এবং খেতে আসার মতো ব্যাপারগুলোতে সবসময় তাগাদা দেন রাহিমা। কিন্তু আজ একদম নিশ্চুপ। পালক খেয়াল করল বিষয়টি। মায়ের মন খারাপ। বাবা বকেছেন বোধহয়, মনে মনে এমনটি ধরে নিল পালক। পালক রাহিমার ব্যস্ত হাতে কাপড়চোপড় গোছানো দেখছে। জানে এরপর এসব কি করবেন। মায়ের মন ভালো করতে হবে ভেবে মায়ের সাথে কাজে লেগে পড়ল পালক৷ রাহিমা তাকে সেরকম কোনো কাজই করতে দেন না। ছুটির দিনে টুকটাক রান্নার কাজে জিনিসপত্র এগিয়ে দেওয়া কিংবা ঘরদোর গোছানো পর্যন্তই। বাকিটা নিজে একা হাতে সামলান। মেয়ের কষ্ট হবে ভেবে স্কুল থেকে ফিরলে তো পারেননা ভাতটুকু মাখিয়ে খাইয়ে দেন। অথচ আজ সেই রাহিমা একদম নিশ্চুপ। একটা টু শব্দটুকু পর্যন্ত করছেন না।

পালক কাপড়চোপড়ে হাত লাগায়। গুছিয়ে রাখা কাপড়গুলো নিয়ে এক এক করে আলনায় রাখবে বলে। কাপড়গুলো নিতে রাহিমা ধমকে উঠলেন,
" ঐ এডি কই নেস? "

" ক্যান মা? আলনায় ভাঁজ কইরা থুইতে। "

পালকের হাত থেকে টান মেরে নিয়ে নিলেন কাপড়গুলো।
" লাগবো না তোর থোওন। আঁর কাম আই নিজেই পারমু। তোরে হন্ডিটি কইত্তে কে কইছে? " বলে রাহিমা গোছানো কাপড়চোপড় হাতে নিয়ে আলনার দিকে চললেন।

পালক পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল মা'কে। আহ্লাদী স্বরে জানতে চাইল, " আম্মা তোমার কি হইছে? এরুম কর কিল্লাই? "

" কিছু অয় নাই। ছাড় আঁরে। "

" আম্মা কও না? আব্বা কিছু কইছে তোমারে? শুধু কও আমারে। দেইখো আব্বারে কেমনে ঠিক করি? "

পালকের কথাটুকু মুখ থেকে বের করতে দেরি গালে সপাটে চড় পড়তে দেরি হয়নি। পালক হতভম্ব হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মা প্রচন্ড রেগে আছে। কই সকালেও তো ভালো ছিল। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কি এমন ঘটল যে একেবারে রণচণ্ডী রূপ ধারণ করতে হলো তাকে? গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে পালক। মা'কে বলল, " মারছো ক্যান? আঁই কিচ্ছি তোমারে? "

" বেসরম, বেলাজা মাইয়া। চোহের সামনের তোন সর। তোর মত মাইয়ারে আরো মারার দরকার আছে। মাইর না খাইতে চাইলে সর কইছি। সরর! " ধমকে উঠলেন রাহিমা। পালক শুনলো না মায়ের কথা। পেছন পেছন ছুটল। আজ তো সে জেনেই ছাড়বে মায়ের রাগের কারণ।

#কিশোরী_পালক
#সূচনা_পর্ব
#ফাহমিদা_মুশাররাত

[ সবাই রেসপন্স করলে বাকিটুকু লিখবো। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]

08/11/2023

সে এসে বসুক পাশে, যেভাবে অসুখ আসে,
তারপর হয়ে যাক, যন্ত্রণা অনায়াসে।
তবুও আসুক সে, জানুক, প্রিয়তম অসুখ সে!
–সাদাত হোসাইন!

06/11/2023

" কবে হলো এসব প্রতিভা? তুমি আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না? "

বাসার উপস্থিত সবাই আগ্রহ নিয়ে তাদের দুজনের দিকে তাকালো। আহির ঠিক কি জবাব চাইছে সেটা না প্রতিভা জানে আর না তো বাসার বাকি সবাই।

" কি হলো জবাব কেন দিচ্ছো না? " কিঞ্চিৎ ধমকের স্বরে বললো।
আমির হামজা দু'কদম এগিয়ে এলেন। " মানে? ও তোমাকে কি জানাবে? "
" মানেটা তো খুব সহজ আংকেল। বাচ্চার খবর বাচ্চার বাবাকে জানাবে না? মানুষের তো অবৈধ সন্তান হলেও জানায় এতো তাও আমাদের বৈধ সন্তান। "

প্রতিভা যেন ব্যাপারটি আর নিতে পারছে না। একে তো বাচ্চার বিষয়ে সে কিছুই জানে না। তার ওপর আহির সবার সামনে দাবি করছে বাচ্চা নাকি তার বাচ্চা! বিয়েটাই বা করলো কবে? লোকটা নির্ঘাত পাগল ছাগল হয়ে গেছে। এতোসব নিতে পারছে না প্রতিভা।

#কাঁজল_বরণ_আঁখি (প্রকাশিত উপন্যাস)
#ফাহমিদা_মুশাররাত

03/11/2023

#রিভিউ_পোস্ট
Fahmida Musharrat-ফাহমিদা মুশাররাত আপু তোমার লেখা #ছ'বছরের_তিয়া গল্পটা প্রথম পড়ি। গল্প'টা আমি রানিং পাড়ছি খুব ভালো লাগছে যদিও একটু ভয় লাগছে কারণ গল্প'টা রাতের বেলায় পড়ছি তো তাই তাও পড়ছি। আমার ভুতুয়া গল্প পড়তে ভালো লাগে তোমার গল্প টা পড়ে ভালো লাগছে। ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা গল্প দেওয়ার জন্য। আমাদের আরো সুন্দর সুন্দর গল্প উপহার দিও।❤️🫶
আর সরি লেট রিভিউ দেওয়ার জন্য🥺

ধন্যবাদ নানাজবিন সুলতানাপু! ❣️

02/11/2023

#ছ'বছরের_তিয়া গল্পের সম্পূর্ণ লিংকঃ-
#ফাহমিদা_মুশাররাত
১.https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=660462799634696&id=100070129450891&mibextid=Nif5oz

2.https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=660967419584234&id=100070129450891&mibextid=Nif5oz

৩.https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=661484099532566&id=100070129450891&mibextid=Nif5oz

৪.https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=662020066145636&id=100070129450891&mibextid=Nif5oz

(৫ এবং অন্তিম) .https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=662573402756969&id=100070129450891&mibextid=Nif5oz

[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]

01/11/2023

#ছ'বছরের_তিয়া
#পর্বসংখ্যা (০৫ এবং অন্তিম)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
জ্ঞান ফিরতে মাহমুদ নিজেকে একটি কুটিরে আবিস্কার করল। আশেপাশের পরিবেশ সম্পূর্ণ অপরিচিত। ভোরের আলো ফুটেছে সবে। অজানা পাখিদের কিচিরমিচির ধ্বনিতে মুখরিত চারপাশ। কিন্তু কোথায় আছে সে? প্রশ্নটা বারবার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। শয্যাশায়ী অবস্থা থেকে উঠে বসল মাহমুদ। শরীরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হল। গতরাতে তার সাথে শেষবার কি হয়েছে ভাবতেই ভয়ে গায়ের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে গেল। মাহমুদ চারপাশে নজর বুলিয়ে দেখতে গেলে কাউকে দেখতে পায় না। খালি গায়ে শুয়ে ছিল এতোক্ষণ যাবত। শরীরের কিছু কিছু জায়গা ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে। সেসব জায়গায় নাম না জানা লতাপাতা দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে মনে হলো মাহমুদের কাছে।

মাহমুদ কথা বলার সময় খেয়াল করল তার গলার স্বর ঠিকমতো বের হচ্ছে না। বহু কষ্টে মাহমুদ ডাকল, " কেউ আছেন? প্লিজ কেউ থাকলে সাড়া দিন৷ "
মাহমুদের ডাক শুনে ঘরে প্রবেশ ঘটল একজন বয়োবৃদ্ধ লোকের। মাথায় সাদা টুপি, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি জড়ানো। গালে পেকে যাওয়া সাদা দাঁড়ির অস্তিত্ব! লোকটি মাহমুদকে উঠে বসতে দেখে বলল, " বাবা ভালো আছেন? "
মাহমুদ লোকটির দিকে একপলক তাকিয়ে জানতে চাইল, " আমি এখানে কিভাবে এলাম? "
লোকটিকে এবার চিন্তিত দেখাল খানিকটা।
" আপনাকে পুরনো বাড়ির পেছনে অজ্ঞান হয়ে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। তারপর সেখান থেকে আমার এই ছোট্ট কুটিরে নিয়ে এসেছি। কেন গিয়েছিলেন ওখানে? "

" ঝড়ের রাতে ও পথ হয়ে যাওয়ার সময় আমার গাড়িটা খারাপ হয়ে যায়। সাহায্যের জন্য তখন আমাকে ওই বাসাটাকেই বেছে নিতে হয়েছে। কিন্তু.. "
এতটুকু বলে মাহমুদ থেমে গেল। পরের ঘটনা বলার কিংবা ভাববার মতো অবস্থায় এই মুহূর্তে নেই মাহমুদ। বয়োবৃদ্ধ লোকটি বুঝলেন হয়তো। মাহমুদকে অভয় দেখিয়ে বললেন, " ভয় পাবেন না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার কাছে শুকরিয়া আদায় করুণ। আপনার বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। নাহলে এ যাবত যতজন ও বাড়ির ভেতরে গেছে কেউ বেঁচে ফিরতে পারেনি। এমনকি মেলেনি কারো দেহাবশেষও! "
" ওখানে কি সত্যি এমন কিছুর অস্তিত্ব আছে? "
লোকটি মৃদু হাসলেন। " আপনার সাথে এতকিছু ঘটে গেল অথচ এখনো বলছেন কিছু নেই? "
" না আমি সেরকমটি বুঝাইনি। বলতে চেয়েছি এরকম ঘটনা কি অনেক আগে থেকেই ঘটে এসেছে? নাকি আমি প্রথমবার এর ভুক্তভোগী? "
" আপনার কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে আপনার কথা বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। একটু বিশ্রাম করুণ। আপনি সুস্থ বোধ করলে সব আপনাকে খুলে বলবো। "
বয়োবৃদ্ধ লোকটি মাহমুদের পাশ থেকে উঠে চলে গেলেন।

এ মুহুর্তে গ্রামের ছোট একটি ঘরে মাহমুদ অবস্থা করছে। ঘরের ওপরটা টিন শেডের ছাল। চারপাশের বেড়াগুলো ছনদ্বারা বেষ্টিত। বেড়ার ফাঁক গলে সোনালি মিহি রোদ ঘরের ভেতর প্রবেশ করছে। আশপাশ জুড়ে পাখির কিচিরমিচির শব্দ তো আছেই। মাহমুদ উঠে যাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যথায় শরীরটা ভেঙে আসার উপক্রম হলো। মাটিতে ঠিকমতো পা ফেলার মতো অবস্থায় সে নেই। তখন জানালার অর্ধভাঙা কাঁচের মধ্যে দিয়ে লাফিয়ে নিচে পড়েছে যার দরুন শরীরের কয়েকটা জায়গায় কাঁচ বিঁধে স্পষ্ট ক্ষতের দাগ বসে গেছে। বাংলাদেশ নামক দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলো এতোদিনে সব আধুনিকতার ছোঁয়ায় ছনের বাড়ি রেখে ইটের বাড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। অথচ এখন তার অবস্থান বাঙালির অতিপ্রাচীন একটি ঘরে। মাহমুদ গত রাতের সাথে আজকের দিনটা মিলাতে চাইল। কি বিভৎস ভয়ংকর ছিল সেই রাতটি। একটুর জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে। নাহলে এতোক্ষণে কতগুলো হিংস্র লোকের খাবারে পরিণত হতে হত তাকে।

মকবুল সাহেব গ্রামের প্রবীণ মানুষ। সকাল সকাল নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ মনে পড়ল তার নিজ হাতে নির্মাণ করা পুরনো বাড়িটির কথা। অতি সখের বাড়িটি এখন কি-না পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। মকবুল সাহেব নিজের পরিশ্রমের টাকায় শহরের যান্ত্রিক যানবাহনের শব্দ থেকে দূরে থাকবেন বলে, তুলনামূলক স্বল্প মূল্যে জমি কিনেন। এরপর সেখানে বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। ভেবেছিলেন শহর থেকে ফিরে এসে এখানে বৃদ্ধ বয়সে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন। কিন্তু বাড়িটি নির্মাণের পরপর এখানে আসা হয়নি। জীবিকা এবং ছেলে মেয়ের পড়াশোনার তাগিদে কাটিয়ে দেন আরো কয়েক বছর। ততদিনে বাড়িটিতে স্থান দখল করে নেয় অন্য আরেক জাতি। এক কথায় যাদের বলা হয় জ্বিন জাতি।

কোনো বাড়ি বির্নিমাণের কয়েকবছর পর্যন্ত মানুষের বসবাস না ঘটলে সে স্থানটি মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠে এবং জ্বিনেদের দখলে চলে যায়। প্রবীণ মকবুল সাহেবের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাড়িতে বসবাসের সময় তিনি নানা ধরনের অশরীরী আত্নার আভাস পান। দিনকে দিন তাদের উৎপাত বাড়তেই থাকে। কোনোভাবেই কাজ হয়নি। নিকটস্থ মসজিদের মোয়াজ্জেমকে ডেকে আনলে তিনি বাড়িটি ছাড়ার নির্দেশ দেন৷ জানান এরা ভীষণ খারাপ প্রজাতির জ্বিন। এদের রাগালে ফলাফল খারাপের দিকে যাবে। সেই সাথে জানালেন বাড়িটির পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে। এখানে একসময় শ্মশান ছিল। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মৃ*ত মানুষকে এখানে অন্তিম সংস্কার করা হতো। কিন্তু একটা সময় পর এখানে এদের উৎপাতের কারণে বাধ্য হয়ে সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা। মকবুল সাহেব শুরুতে মানতে চাননি। শেষমেশ বউয়ের কথা মতো বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

হাঁটতে হাঁটতে মকবুল সাহেব বাড়িটির পেছনের দিকে গেলেন। হঠাৎ নজরে এলো এক অজ্ঞাত যুবকের। দেখতে পেলেন যুবকটির শরীর অনেকাংশে কাঁদায় গেড়ে আছে। গ্রামের কয়েকজন যুবককে সাথে করে নিয়ে এলেন নিজের কুটিরে। অজ্ঞাত যুবকটির শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিকের তুলনায় স্থির। তবে নিশ্চিত হলেন সে এ যাত্রায় ঢের বাঁচা বেঁচে গেছে। গ্রামের নিকটে একজন আয়ুর্বেদিক ডাক্তারকে ডেকে চিকিৎসা করালেন। দু'দিনের চেষ্টায় সফল হলেন। জ্ঞান ফিরল পরিচয়হীন অজ্ঞাত যুবকটির।

নাস্তার প্লেট হাতে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন মকবুল সাহেব। মাহমুদকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলেন। মকবুল সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। মাহমুদ দেখতে অনেকটা তার ছেলের মতো। বছর তিনেক আগে তার একমাত্র ছেলেটি নিজের পরিবার সমেত গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃ*ত্যু বরণ করেন। মাহমুদকে ডেকে বলল, " বাবা বসুন! নাস্তাটা সেরে নিন। "

মাহমুদ ফিরে তাকায় প্রবীণ মানুষটির দিকে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সে যে এখনো বেঁচে আছে। বারবার মনে হচ্ছে এই মানুষটাও কোথাও তাদের দলের একজন নয়তো? মাহমুদকে চিন্তিত দেখে মকবুল সাহেব বললেন, " কি ভাবছেন? গত দু'দিন ধরে কিছু খাননি। খেয়ে নিন। তারপর আপনার সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন। "
মাহমুদ বিস্মিত হল। " কিভাবে পাবো আঙ্কেল? "
" পেটে দানা ফেলুন না আগে। তারপর নাহয় ভাববেন। "

মাহমুদ খেয়াল করল বাড়িটিতে প্রবীন মকবুল এবং তার সহধর্মিণী একাই থাকেন। কথার ছলে মকবুল সাহেব মাহমুদের নাম ঠিকানা জানতে চাইলেন। " আমার নাম মাহমুদ! "
লোকটি চমকে গেলেন। কিৎকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলেন কিয়ৎক্ষণ সময় মাহমুদের পানে। তারপর জানতে চাইলেন, " আপনি কিভাবে ওখানে গেলেন? "
" শহর থেকে বোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলাম। পথে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির কবলে পড়ে গাড়িটা খারাপ হয়ে যায়। ভেবেছি সামনের লোকালয় থেকে একজন মেকানিক খুঁজে পেলে তাকে দিয়ে গাড়িটি মেরামত করে নেব। কিন্তু সন্ধান পাই পুরনো বাড়িটির। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিতে হয় সেখানেই। "
" সেখানে যাওয়ার পর কি দেখেছিলেন? "
" সেখানে একজন কম বয়সী মহিলার এবং ছয় বছরের বাচ্চা মেয়ে থাকে। " এরপর মাহমুদ একে একে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। মকবুল সাহেব যেন অবাকের চরম শিখরে পৌঁছে গেছেন। এতোটা অবাক হয়েছেন যে তিনি কথা বলার ভাষাটুকু হারিয়ে ফেলেছেন। মাহমুদের কথা শেষ হওয়ার পরও তিনি চুপ করে ছিলেন মিনিট দুয়েক। জানতে চাইলেন, " ছোট মেয়েটির নাম যেন কি বললেন? "
" তিয়া! "
" ওর মা কি রাইমা ছিল? "
" আপনি কিভাবে জানলেন? "
" ওগুলো মানুষরূপী কতগুলো শয়তান। জানব না ভেবেছেন? "
" মানে? বুঝলাম না! "
" বুঝলেন না? জ্বিনরা কোনো পশুপাখি, নয়তো কোনো এক মানুষের আকৃতিতে আপনার সামনে ধরা দেবে। যাদের আপনি দেখেছেন ওরা আরো আগেই মারা গেছে। "
" মারা গেছে? " মাহমুদ অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।
" হ্যাঁ। ওগুলো কোনো মানুষ ছিল না ওরা জ্বিন ছিল। বলতে পারেন খারাপ জ্বিন। জ্বিনেদের এক জাতি আছে যাদের নাম ঘুল। এদের বসবাস হয় কবরস্থান এবং শ্মশানে। আর জানেন এরা কি খেয়ে থাকে? "
" মানুষ? "
" মৃ*ত মানুষের গোশত। যাদের আপনি দেখেছেন ওরা একসময় আমার পরিবারের সদস্য ছিল। আজ থেকে বছর তিনেক আগে তারা নিখোঁজ হয়ে যায়। তারপর থেকে তাদের খোঁজ কোথাও মেলেনি। এ যাবত যত মানুষ ও বাড়ির মুখো হয়েছে একে একে সবাই হারিয়ে গেছে। আপনিই একমাত্র সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। যিনি এখনো বেঁচে আছেন। "

অজানা সম্পর্কে জানার পর মাহমুদের গা কেঁপে হিম হয়ে উঠল মুহুর্তের মাঝে। সব বুঝতে পারলেও মাহমুদ একটা জিনিস তখনো বুঝতে পারল না। যদি সে বেঁচেই থাকে তাহলে তাদের মাঝে নিজেকে কেন দেখল?
মাহমুদকে চিন্তিত দেখে মকবুল সাহেব বললেন, " কি ভাবছেন? "
" আমাকে আপনি একটা কথা বলতে পারবেন? আসলে এসব কিছুর মাঝে একটা ব্যাপার ভীষণ অদ্ভুত লাগছে। "
"সেটা কি ব্যাপারে? "
" আমি তাদের মাঝে নিজেকে দেখেছিলাম কেন বলতে পারবেন? "
" সেটাও একটা জ্বিন আপনার প্রতিচ্ছবি ধরে এসেছিল। সম্ভবত আপনার সাথে থাকা কারিন জ্বিন! "

মাহমুদের পুনরায় মাথা ধরে এল। নিজেকে এক অদ্ভুত জগতের বাসিন্দা বলে মনে হচ্ছিল। দেহে আচমকা সমস্ত শক্তি ফিরে পেল। তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে প্রবীণ লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
" অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আমাকে এবার ফিরতে হবে। "
" সেকি আপনি তো ঠিকমতো হাঁটতেও পারছেন না। তাহলে ফিরে যাবেন কিভাবে? "
" যথেষ্ট ভালো আছি আঙ্কেল। চিন্তা করবেন না। আসি!! " বলে মাহমুদ স্থান ত্যাগ করল। মকবুল সাহেব মাহমুদের পিছু নিলেন। মাহমুদ দেখল তার গাড়িটি স্ব শরীরে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে। মাহমুদ অবাক হলে মকবুল সাহেব জানালেন, " এটা আপনারই গাড়ি। ঠিক আছে কি-না একবার দেখে নিন! " কালবিলম্ব না করে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়িটিতে স্টার্ট লাগাল মাহমুদ। ঠিকঠাক বুঝতে পেরে শেষবারের মতো মকবুল সাহেব এবং তার স্ত্রীয়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে এল। গাড়ি চালানোর সময় মাহমুদ গাড়ির কাঁচের প্রতিবিম্বে দেখতে পেল পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মকবুল সাহেব এবং তার স্ত্রী অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছেন।

মাহমুদ পুনরায় একই পথ ধরে শহরের পথে চলল। পথে এবার সেরকম কোনো কিছুই ঘটল না। শুধু দূর থেকে বাড়িটিকে দেখল আগের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে ফেলে আসার সময় কানে ছ'বছর বয়সী ছোট্ট তিয়া নামক মেয়েটির কণ্ঠস্বর ভেসে এল। তিয়া তাকে ফিসফিস বলছে,
" আঙ্কেল বাঁচতে চাইলে পালাও। নইলে এরা তোমায় মেরে খেয়ে ফেলবে!! " অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি খিলখিল করে হেসে ফেলল।

________________The End______________

[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]

Want your public figure to be the top-listed Public Figure in Lakshmipur?
Click here to claim your Sponsored Listing.

Videos (show all)

আহির তার বন্ধুদের সাথে কথা বলার ফাঁকে প্রতিভাকে দূর থেকে পরখ করছে। এই প্রথম সে প্রতিভাকে শাড়ি পড়তে দেখেছে।" শাড়িতে নারী!...
চেহারা দিয়ে কাউকে কখনো বিচার করবেন না। মনে রাখবেন মহান রাব্বুল আলামীন আপনাকে, আমাকে, আমাদের সবাইকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্...
মনের যত অভিযোগ সব আল্লাহ তায়ালার নিকট সঁপে দেওয়া উচিত, যিনি কখনো আপনার কথা, আপনার অভিযোগসমূহ শুনতে বিরক্ত হবেন না। #reel...
—আমার কাছে কী চাও?—কই, চাইনি তো কিছু।—ভালোবাস অথচ চাওনা—তাহলে?—না চাহিলে যারে পাওয়া যায়......—এতো গান।—শুধুই গান?—তা ছাড়...
ধরুন কেউ আপনাকে পুরো একটা বইয়ের স্তুপে ফেলে আসলো। ঠিক এরকম!❣️...... #reelsvideo #foryouシ #reelsviral #book #booklover

Category

Website

Address

Raipur, Laxmipur
Lakshmipur

Other Authors in Lakshmipur (show all)
বিষবৃক্ষ-bishbrikkha বিষবৃক্ষ-bishbrikkha
Laksmipur Girlsian 2017
Lakshmipur

Writter

C H I L L C H I L L
Lakshmipur

Al-Amin Ahmed Junayed Al-Amin Ahmed Junayed
Lakshmipur

The Official Facebook Fan Page of Al-Amin Ahmed Junayed

Md Delwar Hossen Fahim Md Delwar Hossen Fahim
Naokhali
Lakshmipur, BUSORTRAN

Ammar Soaib Ammar Soaib
Lakshmipur, 3700

হৃদয়ের মণিকোঠায় যে ভাবনাগুলো বেরিয়ে ?

MD.Raihan Uddin MD.Raihan Uddin
Lakshmipur

রুগী

Panna Nur Mahmuda Panna Nur Mahmuda
Lakshmipur

Trsp foundation. Trsp foundation.
TR Robiul Islam
Lakshmipur

K M forhad Uddin K M forhad Uddin
Lakshmipur
Lakshmipur, 3700

Poet & Science writer

Jahid Hasan Tuhin Jahid Hasan Tuhin
Sadar
Lakshmipur, 3700

Jahid Hasan Tuhin (উপকূলের কবি) Author | Journalist | Content Creator

NazmuL HasaN NazmuL HasaN
Baburhat, South Raipur
Lakshmipur, 3710

No caption needed