ComiToon
The name ComiToon is a mixture of Comic and Cartoon. So yeah! To read Comics in Bangla you are cordi
এক্রেলিক অন পেপার😋
১. "ভূত বলতে কিছু নেই"- বেঁচে থাকতে আমিও এ কথায় বিশ্বাস করতাম।
২. মাথায় জল পট্টি করে দিচ্ছে মা।
মা- নিজের খেয়াল রাখতে পারিস না? সামান্যতেই অসুস্থ হলে চলবে নাকি খোকা?
উত্তর দিতে যাবো তখন মনে পড়লো বাহিরেই মার লাশের খাটিয়া!
৩. 'টিং টং' কলিংবেলের শব্দ শুনে দৌঁড়ে গেলাম দরজা খুলতে। যেই না দরজাটা হাতলের দিকে হাত বাড়ালাম ঠিক তখনই বোনটা আমার শরীর ভেদ করে দরজাটা খুলে দিলো!
ওহ হ্যাঁ!
আব্বু মাত্রই আমাকে কবর দিয়ে এসেছে!
৪. বিড় বিড় করে মন্ত্র পড়ছে মিশা তান্ত্রিক! আমাকে দুনিয়ায় আনতে চাচ্ছে সে! অমরত্ব আর শক্তি চায়! হাহা!
মূর্খটা হয়তো জানে না দুনিয়াতে আমার আগমন হওয়া মাত্রই আমি তার মুন্ডু উপড়ে সেই রক্তে স্নান করবো! শয়তানরা কখনো অঙ্গীকার বদ্ধ হয় না, কখনো না!
৫. "মারিয়া উঠো! আমার অফিসে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে তো!"
রিফাতের ডাক শুনে ঘুম ভাঙ্গলো মারিয়ার। ফ্লোরে পা দিতে না দিতেই তার মনে পড়লো, রিফাত তো ৩ মাস আগেই মারা গেছে!
৬. গভীর রাত! কয়েকটি ছেলে আমার পিছু নিয়েছে। তাদের কুকুরের মতো তীক্ষ্ণ নজর আমার দেহের দিকে, জিহ্বা থেকে কয়েক ফোঁটা লালাও গড়িয়ে পড়েছে!
কিন্তু তারা জানেই না যে, আমি ৫ বছর আগে ধর্ষিত হয়ে এখানেই মারা গেছি।
~ #ফ্ল্যাশ_ফিকশন_২
লিখা- ফারজানা মিতু
#ক্যানভাস
পর্ব-৬ (সমাপ্তি পর্ব)
লিখা- ফারজানা মিতু
ছবি আঁকা শেষে নওরিন হা করে তাকিয়ে আছে অভ্রের ক্যানভাসের দিকে! কেউ বলবেই না ছবিটার প্রতিটি রঙের মধ্যে অভ্র নিজের রক্ত মিশিয়ে এঁকেছে! প্রতিটি রঙ কত সুন্দর গাঢ় রূপ নিয়েছে! মনোমুগ্ধকর! আর সবচেয়ে বড় কথা অভ্র নওরিনকে এঁকেছে। ক্যানভাসের নওরিনকে দেখে মনে হচ্ছে যেন সে উপরের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
"বাহ! এতো সুন্দর!"- মনে মনে বলে উঠলো নওরিন!
নিজের ক্যানভাসের দিকে তাকাতেই ইচ্ছে হচ্ছে না নওরিনের। রক্ত রঙের সাথে এতো বেশি পরিমাণে মিশিয়ে ফেলেছে যে তা মিক্স হয়ে থোকা থোকা হয়ে আছে। ক্যানভাসে ভালো মতো রঙ তো বসেই নি, উল্টো বেশি ঘষামাজার ফলে কিছু জায়গা থেকে কাগজ উঠে এসেছে! নিজের উপরেই নিজের রাগ হলো নওরিনের! এত বার অভ্রের ক্যানভাসের দিকে তাকিয়ে থাকার পরেও অভ্রর মতো আঁকতে পারে নি।
- ওর মতোই তো সব কিছু করেছি তবুও কেন হচ্ছে না!
আচমকা অভ্র বলে উঠলো,
- কিছু কি বললে?
- না! এখন আমি বাসায় যাবো।
- হ্যাঁ প্রায় সন্ধ্যা, তোমার বাসায় যাওয়া উচিত।
মাথা নিচু করে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো নওরিন। তার নিচু করে রাখা টইটম্বুর চোখ দু'টো অভ্রকে ভালো মতোই ফাঁকি দিয়েছে।
দুপুর থেকেই মনের মধ্যে একটা খচখচানি ভাব ছিলো অভ্রের। বার বার মনে হচ্ছিলো কি জানি ভুলে যাচ্ছে সে! তবে কি ভুলে যাচ্ছে সেটা ডায়েরি ঘেটেও মনে করতে পারছিলো না। সন্ধ্যা হতে একটুখানি সময় বাকি।
- নাহ! এক বালতি গরম পানি দিয়ে গোসল না করলে শরীরটা ফ্রেশ লাগবে না! ধুর গিজারটাও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে!
কিচেনে গিয়ে একটা বড় পাতিলে গরম পানি বসালো অভ্র, গুন গুন করে গান গাচ্ছে আর টগবগিয়ে উঠা পানির দিকে তাকিয়ে হাসছে সে! কেননা মাত্রই তার মনে পড়লো সে কি ভুলে যাচ্ছিলো।
খুব যত্নসহকারে গোসল সেরে, ফ্রিজ থেকে একটা ব্ল্যাক ডেভিলের ক্যান বের করে ঢকঢক করে গলা দিয়ে চালান করে দিলো। একটা বাটিতে সামান্য পানি এবং অন্য বাটিতে কিছু সাদা ভাত নিয়ে নিলো অভ্র। আলিফ যে ঘরে পা-হাত বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে সেটা সে ভুলেই গিয়েছিলো।
দরজার তালা খুলার শব্দ পাচ্ছে আলিফ। ব্যাথা, ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতরাচ্ছিলো সে। দরজাটা খোলার সাথে সাথে সামনে থাকা ছেলেটা তার দিকে দুইটা বাটি ঢেলে দিলো। একটু পানি আর দু'মুঠো ভাত দেখে কষ্টে বুকটা হুঁ হুঁ করে উঠলো তার। ক্রমান্বয়ে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আলিফের!
এয়ার ফ্রেশনারটা স্প্রে করতে করতে অভ্র বললো,
- কিরে প্যান্ট নষ্ট করেছিস নাকি? গন্ধের মধ্যে তো ঢুকাই যাচ্ছে না!
ক্যামেরাটা আলিফের দিকে ফোকাস করলো অভ্র।
কুঁই কুঁই শব্দ আসছে আলিফের স্কচটেপ মারা মুখ থেকে। এক টানে মুখে থাকা স্কচটেপটা সরিয়ে ফেললো অভ্র, সাথে উঠে আসলো আলিফের গালে লেগে থাকা দাঁড়ি থেকে খানিকটা চুল। ব্যাথায় আবারো চিৎকার দিয়ে উঠলো আলিফ। সাথে সাথে ফ্লোরে ঠেকে থাকা মাথার উপরে পা দিয়ে চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো অভ্র।
- একদম চুপ! আমি চাইলেই তোর হাত ও পায়ের প্রতিটি আঙুল টপ টপ করে কেঁটে ফেলতে পারি। আমি চাইলেই তোর চুল গুলোতে আগুন লাগিয়ে দিতে পারি। আমি চাইলেই কালকে ফুটন্ত পানির তোর হাতে না ঢেলে চেহারায় ঢালতে পারতাম! আমি চাইলেই..! কিন্তু নাহ! পশুর সাথে পশু না হয়ে, তাকে কিভাবে বশ করতে হয় আমার ভালো মতোই জানা আছে!
- প্লিজ ভাই! আপনার পায়ে ধরি আমাকে ছেড়ে দিন। আমি..আ..আমি..আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো! প্লিজ ভাই আমাকে ছেড়ে দিন।
- দ্যাট'স লাইক অ্যা গুড বয়। সামনে থাকা বাটি থেকে খাবার খেয়ে নে তারপর তোর স্বীকারোক্তি রেকর্ড করবো।
কোনো মতে বুকের উপরে ভর দিয়ে বাটি থেকে খাবার খাচ্ছে আলিফ। বাটি থেকে ফ্লোরে পড়ে যাওয়া ভাত গুলোও সাবাড় করে ফেলছে সে। বাটির আশেপাশের ফ্লোরে আলিফের প্রসাব ও পায়খানার পানি লেগে আছে। কিন্তু সেদিকে তার বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। এখন আলিফের খাবার খাওয়ার ধরন দেখে তাকে একটা কুকুরের মতো লাগছে।
সিগারেটে গভীর টান দিয়ে আবু রাব্বি সাহেব বারান্দায় বসে আছে, আজ দুই দিন হলো ঘর থেকে বের হন না তিনি। তাদের সকল কিছুর প্রমাণ অন্যের হাতে এখন। মাঝে মাঝে শিল্পকে বিশ্বাস করার জন্য নিজেকেই নিজে থাপ্পড় মারে আবু রাব্বি সাহেব। কোনো প্রশাসনিক সাহায্যও সে নিতে পারবে না, নিতে গেলেই হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। আলিফকে যেভাবে টর্চার করা হচ্ছে সেটা দেখে এখনো বুক কেঁপে উঠে আবু রাব্বি সাহেবের, কবে না জানি তাকেও...
ফোনের শব্দে হুশ ফিরে আবু রাব্বি সাহেবের মালিহা কাদিরের ফোন!
- হ্যালো মালিহা!
- হ্যালো রাখো সাইডে! হোয়্যাট'স এপে দেখো কি মেসেজ আসছে সবার কাছে! বার বার বলেছিলাম যে যেমন আছে তারা তেমন থাকুক, কারো ক্যারিয়ার নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাতে হবে না!
- কিন্তু মালিহা ছোট নতুন লেখকরা..
কথা শেষ করার আগেই মুখের উপরে ফোনটা কেটে দেয় মাহিলা কাদের। তড়িঘড়ি করে হোয়্যাট'স এপ চেক করে আবু রাব্বি সাহেব। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ভিডিও মেসেজ এসেছে।
- একি! আলিফকে এখনো আঁটকে রাখা হয়েছে! ছি! নোংরা ফ্লোর থেকে কিভাবে খাবার খাচ্ছে!
গা গুলিয়ে আসলো আবু রাব্বি সাহেবের। কিডন্যাপারের পা ছাড়া আর কিছু দেখা যায় নি। ভিডিওটা প্লে করার সময়ই গ্যালারিতে ডাউনলোড হয়ে গিয়েছিলো দেখে রিলিফ ফিল করে সে, জেলে গেলে একা না কিডন্যাপারকে সাথে নিয়ে যাবে! এমন সময়ে মেসেজ রিমুভড হয়ে যায়।
- হলে হোক গ্যালারিতে তো আছে! (সামান্য হাসার চেষ্টা করে সে)
পরক্ষণেই গ্যালারিতে গিয়ে দেখে সেখানে কোনো ভিডিও সেভ হয় নি। মুখটা সাথে সাথেই ফ্যাকাশে হয়ে যায় আবু রাব্বি সাহেবের। খাওয়া-দাওয়া, পরিবারের কারো সাথে কথা বলা সব ছেড়ে দেয়। একা একা শুধু অপেক্ষা করে লাল-নীল বাতিওয়ালা গাড়ির।
"আমি আলিফ ইকবাল। একজন সাহিত্যের স্টুডেন্ট পাশাপাশি গল্পকার। গত বইমেলায় আমার একটি বই বের হয়েছে। এক বছর আগে থেকে আমি জনাব আবু রাব্বি ও জুনায়েদ আবরারের সাথে আছি। সমাজের সকলের কাছে তারা একটি পরিচিত মুখ তবে তাদের ভয়ংকর কাজের ব্যাপারে কেউ জানে না। আমিসহ আরো কিছু নব লেখক আবু রাব্বি ও জুনায়েদ আবরারের ভক্ত ছিলাম। তারা যা বলতো সেটাই আমরা করেছি আজ পর্যন্ত। যেসকল লেখক তাদের অনুসরণ করে না, তাদের সান্নিধ্যে থাকে না, আর খুব দ্রুত জনগণের সামনে নিজের মেধা তুলে ধরে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সবাই কালো জাল বুনতে থাকি। কেবলমাত্র লেখকদেরই নয় যেকোনো নবীন প্রতিভাবানদের ক্ষেত্রেও আমরা এটা করেছি। বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে তাদের বিরুদ্ধে বাজে পোস্ট করি আমরা। মোট ২০ জনের একটা গ্রুপ আছে আমাদের। নবীন লেখকরা যথারীতিই কম বয়স্ক হয় বিধায় তারা তাদের পাঠক সমাজদের সাথে অনেক মিলেমিশে থাকে এবং বিভিন্ন লোগো ও মজাদার গ্রুপের নাম দিয়ে থাকে। এটাই ছিলো আমাদের মূল টার্গেট! লেখকদের লোগো ও গ্রুপের নামকে খামোখাই বিকৃত করে আমরা পাঠকদের সামনে তুলে ধরতাম। এদেশের অধিকাংশ মানুষই ধর্মভীরু, তাই ওই সকল লোগো ও গ্রুপ নাম নিয়ে কথা বলার সময় ইচ্ছা করেই ধর্ম আর ইলুমিনাতি টেনে আনাই ছিলো আমাদের অন্যতম হাতিয়ার! তাছাড়া আমাদের এক্সপোজাল পোস্ট গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রমাণ তুলে ধরতে পারতাম না আমরা কেননা লেখকরা কোনো খারাপ কিছু করে না যাতে আমরাও প্রমাণ পাই না। তাই অত্যাধিক মিথ্যাচার দিয়ে পোস্ট ভরে ফেলতাম। পাঠকদের মধ্যে ৬০% পাঠকই আমাদের নেগেটিভ মিথ্যা পোস্টগুলো সত্যি হিসেবে মেনে নেয় এবং কোনো প্রকার ইসলাম বা ইলুমিনাতি নিয়ে রিসার্চ না করেই লেখকদের বয়কট করে দেওয়া শুরু করে। এভাবে আমরা অনেক লেখকদের মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছি, এদের মধ্যে অনেকে তো সুইসাইডও করে ফেলেছিলো! সব কিছুই করেছি আমরা কেবলমাত্র আবু রাব্বি ও তার আরেক বন্ধু জুনায়েদ আবরারের কথায়। মূলত সব কিছুর দিক নির্দেশনা জুনায়েদই দেয়। রিমোট থাকে জুনায়েদের কাছে আর সেই অনুযায়ী কাজ করে আবু রাব্বি। তাদের আরেকজন মেয়ে বন্ধু আছে তবে সে সবসময়ই তাদের এইসব কাজ করার ক্ষেত্রে বাঁধা দিতো। গত কিছু মাস আগে আফজাল নামে একজন সুইসাইড করে, সেও একজন উঠতি লেখক ছিল। আমার খুব কাছের বন্ধু ছিলো সে, তাই তাকে মেরে ফেলার কাজটাও আমার উপরে এসেছিলো। হ্যাঁ! আফজালের কেইসটা সুইসাইড নয় মার্ডার ছিলো। আফজাল তার প্রথম বই দিয়েই বেস্ট সেলারের এক নম্বরে ছিলো তাই তার বিরুদ্ধে আমরা খুব বাজে বাজে কথা ছড়াই, তাকে নাস্তিক প্রমাণ করার জন্য উদ্ভট কথা ও মেয়েদের সাথে অবাধ মেলামেশার মিথ্যা কথা রটাতে থাকি। হুট করেই তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেলো। তারপরই সে প্রতিবাদী হয়ে আবু রাব্বির কালো কাজগুলোর বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ জোগাড় করে ফেলেছিলো, যেই দিন সে মারা যায় সেই দিন সন্ধ্যায় আমার সাথে প্রমাণগুলো নিয়ে দেখা করতে এসেছিলো। সে তখনও জানতো না যে আমিও এইসবে জড়িত। জোর করে সেদিন তাকে আমি অত্যাধিক পরিমাণে মদ্যপান করাই। সে সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে কান্না করতে থাকে এবং বিভিন্ন কষ্টের কথা বলতে থাকে। "আমার ক্যারিয়ার ডাউন করে দিয়েছে, সমাজের সবার সামনে আমি ছোট হয়ে গিয়েছি, কেন শুধু শুধু মিথ্যা রটানো তারা" ইত্যাদি ধরনের কথা বলছিলো। তার ড্রিংকের মধ্যে আমি এক ধরণের দ্রব্য মিশিয়ে দিয়েছিলাম, এই দ্রব্যের প্রভাবে মানুষ অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। মাদকজাত দ্রব্যের সাথে এটা মিলে গেলে ফরেনসিক রিপোর্টে এর আলাদা কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। আফজালের মাতাল হওয়ার পর থেকে আমি ওকে নানা কথা বলতে থাকি। "তোর কোনো সম্মানই নাই এখন, তোর জায়গায় আমি হলে সুইসাইড করে ফেলতাম, তুই সমাজে কিভাবে মুখ দেখাবি এখন? সবাই তোকে নাস্তিক ডাকছে, মেয়েদের সাথে তুই! ছি ছি আফজাল! এর চেয়ে মরণই ভালো!" ততক্ষণে আফজাল তার কালেক্ট করা রিপোর্টের কথা ভুলে গিয়েছিলো। আমার বিভিন্ন নিরুৎসাহিত কথায় সে একদম ভেঙ্গে পড়ে এবং বাসায় গিয়ে নিজেকে ফাঁসি দিয়ে দেয়। ওর পরিবার ও সমাজের সবাই ধরেই নিয়েছে যে নিজের মানহানী সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করেছে সে এবং মেডিক্যাল রিপোর্ট বলেছে অত্যাধিক মদ্যপান ও ডিপ্রেশনের কারণে সুইসাইড করেছে। মাঝ দিয়ে আমরা ঢাকা পড়ে গেলাম এবং তার সংগ্রহ করা সকল প্রমাণ আমি জ্বালিয়ে ফেললাম!"
রেকর্ডিং অফ করে দিলো অভ্র। সামনে থাকা আলিফ ছেলেটা অঝোরে কেঁদে চলেছে। তার হাত পা খোলা হয়েছিলো অনেক আগেই, ভালো মতো ফ্রেশ হওয়ার পরেই রেকর্ডিং শুরু করেছিলো অভ্র।
- কিরে আলিফ! নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত?
- ভাই আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি! শুধু মাত্র নাম কামানোর জন্য কত পাপ করেছি আমি! আফজাল ছেলেটা অনেক ভালো ছিলো ভাই। কখনো একটা গালি দিতেও শুনি নি। কি করে ফেললাম আমি!
অভ্র পাশে গিয়ে দাঁড়ালো আলিফের।
- তোকে একটা জিনিস দেখাই!
বলার সাথে সাথে রুমে ঢেকে থাকা সকল ছবির উপর থেকে পর্দা সরিয়ে ফেললো অভ্র।
- এই দেখ আমার জীবন। কিভাবে ১৮ টা বছর বেঁচে থেকেও মরে আছি দেখ! রুমে থাকা এই ১৮ টা ছবিই আমার সব।
আলিফ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অভ্র ছেলেটার দিকে! অভ্র ধীরে ধীরে তার জীবনের সকল কাহিনী একে একে বললো আলিফকে। ঘৃণায় আলিফের মুখে থু থু এসে পড়লো। সামনে থাকা অভ্র ছেলেটা এখন কান্না করছে। কত যুগ ধরে মনের মধ্যে চেপে থাকা কষ্টটা বের করছে।
- ভাই আমি নিজে থানায় যাবো। আমার কাছে আরো অনেক তথ্য আছে। সব কিছু নিয়ে আমি থানায় যাবো। অপরাধ করেছি শাস্তি মাথা পেতেই নিবো।
প্রিন্টারের শব্দ আসছে, হয়তো মামা সকল প্রমাণের কপি পাঠিয়ে দিয়েছে। রাত তখন ১ টা ৫৬ মিনিট! সকল প্রমাণ ও স্বীকারোক্তি ভিডিও সমেত আলিফকে ছেড়ে দিলো অভ্র। যদি পালিয়েও যায় তবেও কোনো আফসোস নেই, প্রমাণের মূল কপি মামার কাছে।
ক্রিং..ক্রিং..ক্রিং..
- কিরে দোস্ত এতো রাতে কল দিলি যে?
- মনটা ভালো না রে! কাল তোর দাওয়াত আমার বাসায় আন্টিকে নিয়ে আসিস।
- তা নাহয় আসলাম! ওই ছেলেটা কোথায়?
- কোন ছেলে?
- আরেহ! রাস্তায় যে তোর পরিচিত একটা ভাই অসুস্থ হয়ে গেলো! আমি যে গাড়ি নিয়ে গেলাম!
- ওহহ হ্যাঁ! আলিফ! সে ঠিক আছে এখন, বাসায় চলে গেছে।
- আচ্ছা তাহলে কাল দেখা হচ্ছে!
ফোন রেখে দিলো শাওন! ছেলেটা সারাদিন বাসায় একা একা থাকে! কাল আম্মুকে বলবো ওর বাসায় গিয়ে ভালো কিছু রান্না করে দিতে। মায়ের হাতে রান্না ভালো তো লাগবেই!
প্রশান্তির ঘুম দেয় শাওন।
অন্যপাশে সারারাত জেগে রঙ আর রক্ত নিয়ে ক্যানভাসের দিকে তাকিয়ে থাকে নওরিন। যখন থেকে জানতে পেরেছে অভ্র নিজের রক্ত দিয়ে ছবি আঁকে তখন থেকেই সে নিজের হাত কেটেকুটে একাকার করে ফেলেছে!
- আমি পারছি না! আমি পারছি না কেন? অভ্র এতো ভালো পারে কেন! উফফ আমি পারছি না!
এক প্রকার মানসিক ট্রমার মধ্যে চলে যায় নওরিন। রাত দিন জেগে ড্রয়িং করতে থাকে সে।
- এই যে শুনছো? বলছি শাওন বলছিলো কাল একটু..
- নাসিমা প্লিজ! আমি তোমাকে বার বার বলছি লিভ মি অ্যালোন!
দুপুর ২ টা ৫ মিনিট। বাহিরের প্রখর গরম ঘরে এসির নিচে চাপা পড়ে আছে, ঠান্ডা পরিবেশ বিরাজ করছে অভ্রের ডাইনিং রুমে। ডাইনিং টেবিলে এখন তিনজন মানুষ বসে আছে। অভ্র, শাওন ও শাওনের আম্মু নাসিমা আলম। সবে মাত্র খাবার খাওয়া শেষ হলো তাদের। বড় একটা হাই তুলতে তুলতে ফ্রিজের দিকে গেলো শাওন।
- ভাই রে ভাই! বিশ্বাস কর আম্মু কখনও এতো মজার খাবার বাসায় রান্না করে না। মেহমান আর আত্মীয়দের বাসায় গেলেই শুধু মজার মজার রান্না করে।
- কি বললি! তাহলে বাসায় খাবার খেয়ে এতো বড় বড় ঢেঁকুর তুলে কে?
জিহ্বার কামড় দিয়ে শাওন বললো,
- শিট! ধরা খেয়ে গেলুম!
উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো তিনজনই!
অভ্র সোফায় বসে শাওনের আম্মুর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। শাওন ফ্রিজ থেকে সফট ড্রিংক বের করে চুমুক দিতে দিতে তৃতীয় রুমের দিকে গেলো।
- দুই বছরে যত দিন এখানে আসলাম সব সময় রুমটাকে তালাবদ্ধ পেলাম! আজ খোলা!
নিজেকে নিজে বলতে বলতে রুমের দরজা খুলে প্রবেশ করলো শাওন। তিন দেয়ালে চারটা করে মোট বারোটা ক্যানভাস দেখলো সে আর নিচে রাখা ছিলো ৬ টা ক্যানভাস। ক্যানভাসের উপরে ছোট্ট করে নাম্বারিং করা সাথে ছবি আঁকার তারিখও দেওয়া আছে।
এক নাম্বার ক্যানভাসটার আঁকা দেখে মনে হচ্ছে কোনো বাচ্চার হাতে আঁকা ছবি। ছবিটার তারিখ দেওয়া ১৩ মে ২০০২! অভ্রের ছোট বেলার ছবি বুঝা যাচ্ছে। ছবিটাতে সে ও তার মা-বাবা একটা ফাঁকা রাস্তায় সাইকেলিং করছে। অভ্রের বাবা অভ্রের সাইকেল ধরে আছে আর অপর সাইকেলটায় অভ্রের মা বসে আছে। আশেপাশের পরিবেশ বেশ সবুজ!
দুই নাম্বার ছবিটি ২০০৩ এর সেখানেও দেখা যাচ্ছে তারা সাইকেল নিয়ে অনেক আনন্দময় সময় কাঁটাচ্ছে। এভাবে শাওন একে একে নয়টি ছবি দেখে ফেললো। দশ নাম্বার ছবিতে দেখা যাচ্ছে অভ্র তার সাইকেলটা রেখে রাস্তার পাশে একটা ফড়িংকে ধরার উদ্দেশ্যে দৌড়ে যাচ্ছে।
এগারো নাম্বার ছবিতে একটা ট্রাক এসে তার আব্বু আম্মুকে একটা ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো।
শাওন খেয়াল করছে প্রতিটি ছবি শাওনের আব্বু আম্মুর মৃত্যুর স্মৃতি দিয়ে আঁকা এবং একেকটা ছবির মধ্যে এক বছর করে গ্যাপ আছে। একে একে ক্যানভাস পাল্টাচ্ছে আর অভ্রের ড্রয়িং স্কিল আরো ভালো হচ্ছে। পরবর্তী ছবিগুলোতে শাওন দেখলো ছোট অভ্র তার আব্বু আম্মুর কাছে গিয়ে কান্না করছে। তারপর তার আব্বুর ছবিতে আঁকা চিহ্ন দেখে রাস্তার অন্য পাশে যাচ্ছে। ১৬ নং ছবিটি ভার্সিটিতে ভর্তির আগে আঁকা। ছবিটির দিকে চোখ আঁটকে আছে শাওনে! সেখানে দৃশ্যটি ঠিক এমন যেন, অভ্র রাস্তার অপর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার আব্বু আম্মুর দিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। আর ঠিক আগে যেই ট্রাকটি অভ্রের আব্বু আম্মুকে ধাক্কা দিয়ে চলে গিয়েছিলো এগারো নাম্বার ছবিতে সেই ট্রাকটিই আবার এসে তার আব্বু আম্মুকে পিষে চলে যাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি হলো ট্রাক ড্রাইভারের ছবিটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এই ছবিতে। ট্রাক ড্রাইভারের চেহারাটা একদম শাওনের আব্বুর মতো! লাস্টের ক্যানভাসটা শাওনের পরিচিত! ট্রাক চলে যাওয়ার ছবিটি আঁকার পরে রক্তাক্ত অবস্থায় অভ্রকে কয়েকদিন আগে উদ্ধার করেছিলো শাওন। ১৬ নং ছবির ট্রাক ড্রাইভারের চেহারাটা ভণ ভণ করে ঘুরছে শাওনের মাথায়।
অস্ফুটে বলে উঠলো,
- এটা কিভাবে সম্ভব!
- জুনায়েদ আবরার..তোর আব্বু!
পিছনে ফিরে অভ্রের দিকে তাকাতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলো শাওন। জ্ঞান ফিরার পরে একই রুমে নিজেকে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় পায় শাওন নিজেকে আর তার আম্মুকে। শাওনের চেহারাটা নীল হয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে কেউ শাওনকে ঘুষি মেরেছে।
- ১৮টা বছর ধরে এই সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সব প্রশ্নের উত্তর জানবো আমি। (হেসে উঠলো অভ্র)
- দোস্ত কি হচ্ছে এইসব আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! প্লিজ ক্লিয়ার কর!
- অভ্র বাবা! কি হয়েছে? আমাদের এভাবে বেঁধে রেখেছো কেন?
- সব উত্তর বের হবে। সব সব!
অভ্র তার মামাকে কল দিয়ে বললো জুনায়েদ আবরারের সাথে তার ভিডিও কল কনফারেন্স কানেক্ট করে দিতে এবং পুরোটা সময় সামান্যতম কথা না বলে কি হতে চলেছে সেটা দেখতে।
ফোন বেজে উঠলো কবি জুনায়েদ আবরারের! ভিডিও চ্যাটের জন্য সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসছে যেটা দিয়ে এতো দিন আলিফের টর্চারের ভিডিও এসেছিলো!
কল রিসিভ করার সাথে সাথে দেখলো নাসিমা ও শাওন বিধ্বস্ত অবস্থায় চেয়ারের সাথে বাঁধা। তাদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তাদের চড়, থাপ্পড়, ঘুষি দেওয়া হয়েছে।
- বাস্টার্ড! হু দ্য হেল আর ইউ! শাওন! এই শাওন! নাসিমা! কি হয়েছে তোমাদের!
- কাম ডাউন মিস্টার জুনায়েদ আবরার! গলা উঁচিয়ে কথা বললে আপনজনদের গলা কাটা অবস্থায় পাবেন। ডাউন ইউর ফাকিং ভয়েস!
রাগে আর ভয়ে চুপ হয়ে গেলো জুনায়েদ আবরার! ধীরে ধীরে বললো,
- হু আর ইউ?
- হাশেম আর নন্দিতাকে মনে আছে? নন্দিতাকে তো অবশ্যই মনে আছে আপনার! ছোট বেলার বান্ধবী বলে কথা!
বড় বড় চোখ করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে জুনায়েদ আবরার!
- আমি অভ্র! নন্দিতার ছেলে। ফ্ল্যাশ ব্যাক আপনি শুনাবেন নাকি আমি? নন্দিতা কে ছিলো? আর কি জন্য আপনি হাশেম ও নন্দিতাকে হত্যা করেছে? স্পিক আউট!
অপর পাশ থেকে কোনো উত্তর নেই।
শাওনের দিকে ড্র্যাগারটা পয়েন্ট করে অভ্র ধমকি দিয়ে বলে উঠলো!
- হাতে বেশি টাইম নেই জনাব খুনী! আপনার মুখ না খুলার ফলাফল হবে নিজের সন্তান ও স্ত্রীর মরণ যন্ত্রণা নিজের চোখের সামনে দেখা। যেমনটা ১৮ বছর আগে আমি দেখেছিলাম!
- আমি বলছি সব! নাসিমা আর শাওনের কাছ থেকে একটু দূরে থাকো প্লিজ! আমি বলছি!
নন্দিতা আমার ছোট বেলার বান্ধবী ছিলো। স্কুল, কলেজ এমনকি ভার্সিটি লাইফেও আমরা একসাথে ছিলাম। আমি আর নন্দিতা দুইজনই বাংলার স্টুডেন্ট ছিলাম! ভার্সিটিতে উঠার কয়েকদিনের মাথায় আমি, নন্দিতা, হাশেম, মালিহা আর রাব্বি বন্ধু হয়ে গেলাম। আমরা ছিলাম যার যার ডিপার্টমেন্ট থেকে টপ স্টুডেন্ট। আমাদের সবার নিজস্ব ট্যালেন্ট ছিল! হাশেমের ট্যালেন্ট ছিলো আর্টে, রাব্বির ইংরেজি সাহিত্যে, মালিহার গান ও গিটার চর্চায়, নন্দিতার লিখালিখি এবং আমার কবিতা। আমি ক্যারিয়ারের দিকে বেশি ফোকাস দিয়ে গিয়ে নন্দিতাকে হারাই। হাশেমের সাথে হুট করেই শুনি তার বিয়ে হয়ে গেছে। আফসোস ছিলো না! যে যাবার সে যাবেই! কিন্তু আমি ভেঙ্গে পড়েছিলাম, তখন যখন শত চেষ্টা করেও আমার ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারছিলাম না। রাব্বি, আমি আর মালিহা তিনজনই স্ট্রাগল করছিলাম তখন কিন্তু মাঝ দিয়ে নন্দিতা আর হাশেম অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়! দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ধীরে ধীরে তাদের নাম ছড়িয়ে যায়। আমার সহ্য হয় নি! আমি হতাশ আর হিংসাত্মক হয়ে উঠি। ছোট বেলা থেকেই আমি পরাজয় মেনে নিতে পারি না। সকল ভুলের ও কাজের ঊর্ধ্বে ভাবি আমি নিজেকে। হিংসা এতো বেশি কাজ করে যে আমি তোমার বাবা মাকে মেরে ফেলি..
- স্টপ! এখন কাহিনী বলবো আমি! আমি তখন খুব ছোট ছিলাম! আব্বু আম্মু মারা যাওয়ার কয়েকমাস আগে থেকেই দেখতাম আম্মুর এক বন্ধু বাসায় আসতো। তারপর আমি ট্রাক এক্সিডেন্টে সেই আম্মুর বন্ধুটাকেই দ্বিতীয়বার পিষে ফেলার সময় দেখেছিলাম। সেদিন থেকে আমার অ্যালজাইমার দেখা দেওয়ার কারণে আমার স্মৃতি হালকা হতে থাকে, আমি ভুলে গেলাম আমি কাকে দেখেছিলাম। ১৮ টা বছর আমি স্বপ্নে বার বার এক্সিডেন্টের দৃশ্যটা দেখতাম আর ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে তাড়াতাড়ি করে ছবি আঁকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু ড্রাইভারের চেহারাটা মনে করতে পারি আমি ভার্সিটিতে উঠার কিছু দিন আগে। আমার মনে পড়ে যায় কে ছিলো সেই লোক! সেদিন থেকেই আমি জুনায়েদ আবরারকে ফলো করতে থাকি। জানতে পারলাম তারা এখনো এমন ঘৃণিত কাজ করে! মামার মাধ্যমে তাকে রাব্বির ক্লোজ ফ্যান করে দিলাম, কেননা সম্পূর্ণ গ্রুপে রাব্বিই এমন লোক ছিল যে সামান্য প্রশংসাতে গলে যেতো। আর আমি হয়ে গেলাম শাওনের ক্লোজ ফ্রেন্ড! সব কিছুই ছিলো আমার প্লান! জনাব জুনায়েদ আবরার আপনি একজন বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ, পুলিশ আসার অপেক্ষা করুন!
কথাটা বলেই অভ্র জুনায়েদের কল কেটে দিলো।
তিনজনের উদ্দেশ্যে অভ্র বললো,
- মামা, শাওন আর আন্টি সব শুনেছো? মামা আমার এতো কিছু করার মোটিভ এখন পেয়েছো?
- হ্যাঁ!
তারপর অভ্রের মামা শাওন আর নাসিমাকে এখনো জুনায়েদ আবরার ও আবু রাব্বির সমাজের প্রতিভাবানদের পঙ্গু করে দেওয়ার অভিশপ্ত পরিকল্পনার কথা বলেন।
সবটা শুনার পরে পরিবেশ একদম থমথমে হয়ে যায়। কয়েক মিনিট এভাবেই চলে যায়।
তারপর অভ্র বলে উঠলো,
- শাওন তোদের চেহারায় ওগুলো ব্যাথার ছাপ না। আমি রঙ মেখে দিয়েছি যেন তোর আব্বুর চেহারায় পরিবারের মানুষের কষ্ট ও হারানোর যন্ত্রণা আমি দেখতে পারি। বাসায় চলে যা আন্টিকে নিয়ে।
- অভ্র বাবা!
- আন্টি আপনারা হয়তো ধরেই নিয়েছিলেন আপনাদের দুইজনকে আমি মেরে ফেলবো! আমি জানি পরিবার হারানোর কষ্টটা কত তীব্র! আমি চাই না এমনটা আর কেউ কখনো অনুভব করুক! হোক না সে আমার মা-বাবার খুনী! আমি চাই সমাজ হিংসামুক্ত হোক।
চেয়ারের সাথে থাকা তাদের বাঁধন খুলে দিলো অভ্র। শাওনে দ্রুত অভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। কেঁদে উঠলো দুইজনই। নাসিমা পরম যত্নে অভ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো!
কিছুক্ষণ পর তারা তাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
আলিফ তার কথা রেখেছে! সে পুলিশকে সকল প্রমাণ দিয়ে এখন হাজতে আছে৷ কিছুক্ষণের মধ্যে আবু রাব্বি, জুনায়েদ আবরার আর বাকি আসামীরাও হাজতে হবে।
রাত ৯ টা!
কলিং বেলের ব্যাটারী লাগাতে এখন আর ভুল করে নি অভ্র! বেলের আওয়াজ শুনে গেট খুললো সে। সামনেই নওরিন দাঁড়িয়ে আছে।
- কি খবর নওরিন? এতো রাতে!
- কিছু কথা আছে!
- আমারো অনেক কথা আছে তোমার সাথে।
নওরিনের ডান হাতটা ধরে টেনে টেনে অভ্র তার তালাবদ্ধ তৃতীয় রুমটাতে নিয়ে গেলো!
- দেখো নওরিন! আজ আমার ছবিগুলো মুক্ত! আজ আমিও মুক্ত নওরিন!
খুশিতে নওরিনকে জড়িয়ে ধরলো অভ্র! আস্তে আস্তে বললো,
- নওরিন আমার জীবনটা এখন ফাঁকা। অনেক একা আমি! আমার পাশে থাকো প্লিজ! আমি তোমাকে অনেক..অনেক ভালোবাসি!
অভ্রের চোখের দু'ফোঁটা পানি নওরিনের কাঁধ ছুঁয়ে নিচে বেয়ে পড়ছে। অভ্র কান্না করছে।
অভ্রের মাথা দুই হাত দিয়ে উপরে ধরে আছে নওরিন। অভ্রের হাত দু'টো এখনো নওরিনের কোমর জড়িয়ে আছে। দুইজন দু'জনের চোখের দিকে ঘোর লাগা নজরে তাকিয়ে আছে। নওরিন অভ্রের ফেইস থেকে ডান হাতটা সরিয়ে আস্তে আস্তে অভ্রের পিঠে হয়ে নওরিনের ব্যাগের দিকে নামিয়ে নিয়ে আসলো। ব্যাগ থেকে ধাঁরালো এক চাকু বের করে চোখের নিমিষেই অভ্রের গলা বরাবর চালান করে দিলো নওরিন! ফিনকি দেওয়া রক্ত নওরিনের চোখে মুখে ছিঁটকে আসছে। অভ্রের দেহটা নিয়ে সে ফ্লোরে ধপাস করে পড়ে গেলো। অভ্রের কোমল ঠোঁট দুটি এখন নওরিনের ঠোঁটের সংস্পর্শে লেগে আছে। গভীর একটা চুমু দিয়ে নওরিন বললো,
- আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি অভ্র! তবে আমার চিত্র আর জনপ্রিয়তা থেকে বেশি নয়! আমি জানি তোমার রক্ত দিয়ে ছবি আঁকলেই আমার আঁকা ছবি তোমার আঁকা ছবির মতোই সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে। ভালোবাসি তোমাকে আর তোমার রক্তকে! ভালোবাসি ভালোবাসি!
নওরিনের কথার উত্তরে কেবল অভ্রের কাটা গলা থেকে গড়গড় শব্দ আসলো।
চুমু দিয়ে অভ্রের পুরো চেহারাটা ভরে ফেলেছে সে।
পরিশিষ্ট: সেদিনের পর থেকে অভ্রকে কেউ খুঁজে পায় নি। নওরিন কেবল মাত্র খয়েরী রং ব্যবহার করে রক্তে মাখা মাখি প্রেমিক যুগলের চুম্বনরত ছবি এঁকে দেশে ও দেশের বাহিরে বিপুলভাবে পরিচিত লাভ করে। বিভিন্ন চিত্র পরিষদের মানুষ অবাক হয়ে শুধু ভাবে, "কোনো মানুষ কিভাবে কেবল মাত্র একটি রং ব্যবহার করে এতো বাস্তবিক ছবি আঁকতে পারে! নওরিন দেশের জন্য এখন একটি রত্ন!"
(সমাপ্ত)
[ধন্যবাদ যারা শেষ পর্যন্ত গল্পটা পড়েছেন। এই গল্পের মূল বানীটা অনেক ডিপ। নওরিন ইসলাম, আবু রাব্বি এবং জুনায়েদ আবরার দুইজনই ছিলো গুরুতর প্যারাফ্রেনিয়ার রোগী। এই রোগের রোগীরা নিজেদের সকল কিছুর ঊর্ধ্বে ভাবা শুরু করে। তারা পরাজয় মেনে নিতে রাজি হয় না সহজে। হিংসাত্মক হয়ে উঠে ক্রমেই! তাদের এই হিংসা ও হার না মানার পরিমাণ অত্যাধিক বেড়ে গেলে তারা খুনের মতো ভয়ংকর জিনিস করতেও দ্বিতীয় বার ভাবে না। গল্পের শেষে দেখা যায় খারাপ শক্তি ভালো শক্তিতে বার বার নষ্ট করতে চায়। এভাবেই সমাজের বিভিন্ন প্রতিবাদী চরিত্র চাপা পড়ে যায় যুগে যুগে।
আমি গল্পের মাধ্যমে সমাজে বাস করে কিছু প্যারাফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের নির্দেশ করেছি যারা দিনের পর দিন প্রতিভাবানদের চেপে রাখতে চায়। নতুন লেখকদের উঠতি সফলতা মেনে নিতে না পেরে হিংসাত্মক হয়ে উঠে এবং লেখকদের আইডি নষ্ট থেকে শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও খারাপ কথা ছড়ায়। কোনো কারণ ছাড়াই ইসলাম নিয়ে অন্য লেখকদের খোঁটা দেয়। আমার একটাই অনুরোধ, আপনারা পাঠকরা এমন কোনো কিছু দেখলে আগে সম্পূর্ণ প্রমাণ ও লিখা বিবেচনা করেই তারপর কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন। নাহলে মেধাবী লেখকরা অকালেই ঝড়ে পড়বে। ভালোবাসা রইলো ❤]
#ক্যানভাস
পর্ব-৫
লিখা: ফারজানা মিতু
শিল্প হোসেন আইডির পিছনে এত দিন ধরে ছিলেন অভ্রের মামা বারেক চৌধুরী। বর্তমানে কানাডায় অবস্থানরত অভ্রের মামা অভ্রকে খুব ছোট বেলা থেকেই প্রতিটি কাজে সাপোর্ট দিয়েছেন। ভার্সিটিতে উঠার কয়েকমাস পরেই অভ্র তাকে জানায় তার দেশের অব্যবহৃত নাম্বার ও ফেইক ইমেইল ব্যবহার করে একটা নকল ফেইসবুক আইডি খুলে লেখক আবু রাব্বির একজন একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে উঠার জন্য। কেন বলা হয়েছিলো সেই কারণটা সম্পূর্ণভাবে সে না জানলেও আন্দাজ করেছিলো নিয়েছিলো কিছুটা। "ভালো মানুষ সেজে সমাজের অন্যান্য প্রতিভাবানদের যেন আর পঙ্গু করে দিতে পারে আবু রাব্বির কুচক্রী সদস্যরা।"- এটাকেই অভ্রের কাজের মোটিভ হিসেবে ধরে নিয়েছেন বারেক চৌধুরী। তাদের উদ্দেশ্যে অভ্রের আঁকা বিভিন্ন ছবি ও মন গলানো পোস্ট দিয়ে লেখক আবু রাব্বির মন জয় করতে সফল হয় বারেক সাহেব। তবে কথা ছিল তাদের সকল খারাপ কাজের পোক্ত প্রমাণ পাওয়ার সাথে সাথে কোনো দেরী না করে তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কেঁচো খুঁড়তে বের হলো সাপ! খুনের সাথেও লিপ্ত হওয়ার ক্লু পেয়ে গেলো বারেক সাহেব! কিন্তু ছিল না খুনের কোনো প্রমাণ! শুধুমাত্র এই প্রমাণটা জোগাড় করতে পারলেই "ধ্বংস" গ্রুপের সকলকে বাংলাদেশের সবার সামনে এনে দিতে পারবে অভ্র এবং বারেক সাহেব! প্রশাসনও থাকবে তাদের পক্ষে! তাই অভ্র এবং শাওন মিলে কিডন্যাপ করে ফেলে আলিফকে। সিগারেট খাওয়ার সময় অভ্র শাওনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে সিরিঞ্জ দিয়ে হাই ডোজের ড্রাগ পুশ করে দেয়। সাথে সাথেই শাওন গাড়ি নিয়ে এসে দরজা খুলে দেয়। হাই ডোজ সহ্য করতে না পেরে আলিফ তখনই অচেতন হয়ে যায়।
এখন শুধু তার মুখ থেকে খুন করার পদ্ধতি এবং কারা কারা লেখক আফজালের খুনের পিছনে জড়িত সেটা বের করে রেকর্ড করতে হবে। তাহলেই তারা সকল প্রমাণ জোগাড়ে সফল হবে এবং প্রশাসনিক সাহায্য পাবে।
- কিছু বের করেছে মুখ দিয়ে?
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে অভ্রের উত্তর,
- বের করে নি, তবে করাতে কতক্ষণ? মামা আলিফের নির্যাতনের কয়েকটা ভিডিও ক্লিপ তোমাকে পাঠাচ্ছি, তুমি এক কাজ করো! ধ্বংস চ্যাট গ্রুপে ক্লিপটা পাঠিয়ে দাও!
- কি বলছিস! নিজেদের রিভিল করে দিবো?
- করলেই বা কি হবে? যা যা লাগবে সব তো হাতেই! পুলিশ যখন এসে তাদের ধরে নিয়ে যাবে তখন তো তারা এমনিতেও জেনে যাবে যে শিল্প হোসেনের কাজ এটা। দেখো ফুটেজ দিয়েছি, সেন্ড করে দাও তাদের।
- আচ্ছা ভাগ্নে! ঘুমিয়ে যা, রাখি এখন।
এতোক্ষণ সামনে থাকা ছেলেটার কথা শুনছিলো আলিফ!
- তারা আমাদের চ্যাট গ্রুপের ব্যাপারে কিভাবে জানে! গ্রুপের তো সবাই বিশ্বস্ত! তাহলে কি নতুন মেম্বার শিল্প..
- কিরে! মিন মিন করে কি বলছিস? যা জিজ্ঞেস করছি তা বলে দে, মার খাওয়ার পর তো এমনিতেই বলে দিবি! খামোখা মার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে?
- আমি কিছু জানিনা। কিছু না! কিচ্ছু..
কথা শেষ হওয়ার আগেই আলিফের পেট বরাবর জোরে একটা লাথি দিলো অভ্র। এতোই জোরে লাথিটা লেগেছে যে চেয়ারটা পিছনের দেয়ালের সাথে ধাক্কা দেখে অনেকখানি ভেঙ্গে গেছে। আলিফের মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। ভাঙ্গা চেয়ারটা সাইডে সরিয়ে নিলো অভ্র। হাত পা শক্ত করে বেঁধে, মুখের মধ্যে ডাক টেপ মেরে দিয়ে ফ্লোরে মধ্যে ফেলে রেখেছে আলিফকে। রুমটা অভ্রের আর্টরুম, মা-বাবা মারা যাওয়ার স্বপ্নটা যতবার অভ্র দেখেছে ততবার ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং করা প্রতিটি ছবি এই ঘরটায় খুব আগলে রেখে দিয়েছে। স্বপ্নের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ছোট ছোট মুহূর্তের অখণ্ড ছবি আজ পর্যন্ত সে এঁকেছে।
কাল যাওয়ার সময় নওরিন বলে গিয়েছিলো সে আবারো আসবে! না জানি কখন হুট করে এসে পড়ে! ডায়েরিতে নওরিনের সাথে ড্রয়িং কম্পিটিশনের কথাটা লিখে লম্বা একটা ঘুম দিলো অভ্র।
টুটুং..টুটুং..
রাত ৩ টা প্রায়! এতো রাতে একের পর এক মেসেজ নোটিফিকেশন আসছে আবু রাব্বির ফোনে। মনে হচ্ছে যেন নোটিফিকেশনের শব্দের মধ্যে কেমন তাড়া ভাব! নিভু নিভু ঘুমন্ত চোখ নিয়ে মেসেজের ঘরে তাকালো আবু রাব্বি সাহেব। 'ধ্বংস' গ্রুপে মেসেজের স্রোত! শুরুর দিকে একটু স্ক্রল করতেই দেখলো তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত নব লেখক আলিফের ভিডিও! ছেলেটাকে চেয়ারের উপরে বেঁধে তার উপরে গরম ফুটন্ত পানি ঢালা হচ্ছে, ছেলেটার পেটের মধ্যে সজোরে লাথি দিয়ে মুখ থেকে রক্ত বমি বের করে ফেলেছে লম্বা করে একটা ছেলে! ভিডিও ক্লিপ গুলো পাঠিয়েছে শিল্প হোসেন আইডিটা।
- শিল্প! ও কেন এমন করবে? (মনে মনে আওড়াচ্ছেন আবু রাব্বি)
এই ভিডিও মেসেজটা দেখার পরেই গ্রুপের সবাই হতবিহ্বল হয়ে পরে, তাই একের পর এক মেসেজ আসছিলো! শত শত প্রশ্ন সবার মনে! খানিকক্ষণ বাদেই শিল্প হোসেন আইডি থেকে আরেকটা মেসেজ আসলো!
"আগামী কয়েক দিনের মধ্যের তোমাদের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পুলিশ ও জনগণের সামনে আসবে! তৈরি হও সবাই।"
মেসেজটা দেওয়ার সাথে সাথেই দেখা গেলো নীল হোসেন আইডিটা গায়েব হয়ে গেছে!
- আইডিটা ডিলিট করে দিলো!
আলিফকে নির্যাতন করার প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ফুটেজটা কেউ ডাউনলোড করার আগেই আইডিটা ডিলিট হয়ে গেলো!
সাথে সাথে গ্রুপ থেকে সবাই নিমিষেই লিভ নিয়ে চলে গেলো। এখন শুধু আছে আবু রাব্বি, জুনায়েদ আবরার এবং মালিহা কাদির! এরা ভার্সিটি লাইফ থেকে একে অন্যের বন্ধু, তিন জনেরই বয়স চল্লিশোর্ধ্ব! তাদের সাজানো গোছানো ধ্বংসের সাম্রাজ্য এক পলকেই হাওয়ায় উড়ে যাবে কেউই ভাবতে পারে নি। নির্ঘুম রাত পার করে দিলো তারা!
পরের দিন সকালে অভ্রের বাসায় কড়া নাড়ার শব্দ এলো! খিটখিটে মেজাজ নিয়ে অভ্র বিছানা ছেড়ে উঠলো।
- কলিং বেল থাকার পরেও দরজায় কড়া নাড়ার দরকার...
কথাটা বলতে বলতে দরজা খুলেই দেখে সামনে নওরিন দাঁড়িয়ে আছে। নওরিনের সামনে খালি গায়ে কেবল একটা পায়জামা পড়া অবস্থায় উষ্কখুষ্ক চুলসহ অভ্র ছেলেটি বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। অভ্র এখন নওরিনের সামনে কাচুমাচু হয়ে দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্রকে দেখিয়ে দেখিয়ে নওরিনের কলিংবেলের সুইচটাতে দুইবার চাপ দেয়।
নাহ! কোনো বেল রিং হচ্ছে না। অভ্র বললো,
- দুঃখিত হয়তো ব্যাটারি শেষ আর..
- আর ভোলামন অভ্র সাহেব নতুন ব্যাটারি কিনার কথা ভুলে গেছে।
- না মানে ইয়ে..
- রাখো তোমার ইয়ে! সাইড চাপো ভিতরে আসবো।
নওরিন দরজা দিয়ে ঢোকার সাথে সাথে অভ্র একছুটে তার রুমে গিয়ে টি-শার্ট পড়ে পায়জামা পাল্টে নিলো।
অভ্রের বেডরুমের দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে টিপ্পনী কেটে নওরিন বললো,
- খালি গায়ে উষ্কখুষ্ক চুলের ছেলেদের আমার কাছে বেশ লাগে।
রুম থেকে বের হতে হতে অভ্র বললো,
- তা এতো সকাল সকাল আসলা যে?
- নাস্তা নিয়ে এসেছি। নাস্তা খাওয়া শেষে তোমার সাথে ভার্সিটিতে যাবো তাই আসলাম!
- শুধু শুধুই কষ্ট নিলা!
- কষ্ট কিসের! কাল তুমি ডিনার করিয়েছো তাই আমি নাস্তা করাবো শোধবোধ! আমি পাওনা জিনিস তাড়াতাড়ি শোধ করি!
- তাহলে তো আজ তোমাকে আমার এখানে লাঞ্চ করতে হবে!
- কেন?
একটা ভ্রু খানিকটা উপরে উঠিয়ে অভ্রের উত্তর,
- হুট করেই রাত ১১ টায় লাঞ্চের পাওনাটা শোধ করতে যেন রাতের খাবার নিয়ে আসতে পারো তাই।
- হাহা ফানি!
সারাটা সকাল অভ্র নওরিনের সাথে ঘুরাঘুরি করলো। একটা ক্লাসও করে নি দুইজনের একজনও। এই প্রথম নিজেকে অনেকটা হালকা লাগছে নওরিন আর অভ্র উভয়েরই!
"হয়তো এই হালকা হওয়াটাই জরুরি ছিল এতো বছর করে।"- ভাবতে ভাবতে টঙের দোকানে বসে দুইজন একসাথে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো। সাথেই সাথেই দুইজন হকচকিয়ে হেসে উঠলো!
- আমার নকল করছো তুমি অভ্র!
- আমি? তুমি নকল করছো!
- কি বললা! দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা!
বলেই অভ্রকে ধরার জন্য নওরিন দিলো ছুট। হাসিঠাট্টা আর দৌঁড়ঝাপের মধ্য দিয়েই দুপুরের আজান পড়ে গেলো। অভ্রের বাম হাতটা নওরিন টান দিয়ে বলতে লাগলো,
- চলো বাসায় চলো ক্ষুধা লেগেছে তো!
- আহা! রাতে ডিনার নিয়ে আসার জন্য কত বাহানা!
- আবার পঁচাচ্ছো! তবে রে!!
দুপুর দুইটা! অভ্রের কিচেনে রান্না করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে নওরিন। সে কখনো এর আগে রান্না করে নি। আজ বেশি ভাব নিতে গিয়ে বলে ফেললো যে সে রান্না করবে, কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে যেই না গরম তেলে কয়েকটা গলদা চিংড়ি ছেড়েছে ঠিক তখনই ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠেছে নওরিন। গরম তেল গুলো এদিকে ওদিকে ছিঁটে যাচ্ছে। অভ্র তাড়াতাড়ি নওরিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তেল ছিঁটে আসা কড়াইটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ফেললো। তারপর বাকি চিংড়িগুলোর পানি ভালোমতো শুকিয়ে একে একে ভেজে উঠালো।
- নওরিন ভয় পেয়ো না। চিংড়িতে লেগে থাকা এক্সট্রা পানি তেলের মধ্যে পড়লে ওমনই হয়। আস্তে আস্তে শিখে যাবে।
খাওয়া শেষ করে সোফার উপরে পা ভাজ করে বসে আছে নওরিন! অভ্র তখন পাশে থাকার রান্না ঘরে থালা বাসন ধুচ্ছিলো। জোরে জোরে তারা একরুম থেকে অন্য রুমে কথা বলছে।
- জানো অভ্র! কাল রাতে না আমি অনেক বার চেষ্টা করলাম তোমার মতো ছবি আঁকার। কিন্তু..
- কিন্তু?
- কিন্তু আমি তোমার মতো ভালোভাবে রক্ত মিক্স করতে পারি না। পারফেক্ট কালারটা আসেই না!
কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেলো নওরিন।
- অভ্র?
- হু!
- কি হলো? ভেঙ্গেছে নাকি কিছু?
- হু!
মিনিট পাঁচেক পরে নওরিনের সামনে থাকা সোফায় ধপাস করে বসে পড়লো অভ্র। চিন্তিত স্বরে বললো,
- তুমি কিভাবে জানো রঙের সাথে ব্লাড মিক্স করে ড্রয়িং করতে হয়?
- হিহি! যেটা আমার জানা দরকার সেটা আমি যত কষ্টই হোক বের করে নেই!
- সিরিয়াস আমি!
- লিপি বলেছে আমাকে।
- সে কিভাবে জানে?
- তাকে শাওন বলেছে!
- উফফ আমার মাথায় সব প্যাঁচ লেগে যাচ্ছে!
- রিল্যাক্স! আমি বলছি তোমাকে!
তারপর নওরিন সাইকোলজিস্টের কাছে লিপি ও শাওনের দেখা হওয়ার ঘটনাটা বললো।
- তুমি যেমনটা ভাবছো আসলে জিনিসটা ওমন না নওরিন! আমার আব্বু-আম্মুর মারা যাওয়ার দৃশ্যটা অনেক ভয়ংকর! আমার আব্বু ছিলেন তখনকার সময়ের বেশ জনপ্রিয় উঠতি চিত্রশিল্পী। খুব কম বয়সেই আব্বু আম্মু বিয়ে করে ফেলে। শেষ সময়ে আব্বু ক্ষতবিক্ষত হয়ে আমার সামনে পড়ে ছিল। আমি খুব ছোট ছিলাম। মাঝ রাস্তায় তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে কান্না করছিলাম। তখন গলা দিয়ে আব্বুর কোনো আওয়াজ বের হয় নি। নিরুপায় হয়ে সে কি করেছিলো জানো? ক্ষতবিক্ষত হাত উঠিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে রাস্তায় আমাকে এঁকে বুঝিয়েছিলো কিভাবে মাঝ রাস্তা থেকে সরে গিয়ে, রাস্তার সাইডে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। রাস্তার সাইডে যাওয়ার সাথে সাথে আরেকটা ট্রাক এসে...
- স্যরি অভ্র!
- নাহ স্যরি কেন বলবে! সেদিনের ভয়ংকর এই অবস্থার পরেই আমার অ্যালজাইমার এবং বাইপোলার হয়েছে। রক্ত দিয়ে ছবি আঁকার দৃশ্যটা আমার মাথায় গেঁথে গেছে। তাই প্রথম দেখায় আমি বলেছিলাম,"আমি আমার আঁকার মাধ্যমে আমার অনুভূতি প্রকাশ করি, তোমরা যেমনটা ভাষা দিয়ে করো ঠিক তেমনই।"
বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে নওরিনের অভ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
- বাইপোলার? এর মানে কি তুমি নিজের রক্ত দিয়েই! ওহ মাই গড! আমি জানতাম তুমি ব্লাড ব্যাংকের ব্লাড মিক্স করে ড্রয়িং করো!
বাম হাতটা নওরিনের দিকে বাড়িয়ে অভ্র বললো,
- আপাতত এই হাত আমাকে রক্ত সাপ্লাই দিচ্ছে। চলো তোমাকে ছবি এঁকে দেখাই।
বেড রুম থেকে দুইটা ক্যানভাস এনে ডাইনিং স্পেসে বসালো অভ্র। নওরিন তার ব্যাগ থেকে ছোট এক বোতল রক্ত বের করলো।
- বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ব্লাডের ব্যাগ থেকে সামান্য নিয়ে এসেছিলাম।
- ভালো করেছো।
বলেই হাতে থাকা ব্লেড দিয়ে হাতের তালুর নিচের অংশে একটা টান দিলো অভ্র।
শুরু হলো দুইজনের ছবি আঁকা যুদ্ধ! অভ্র যতই ছবির প্রতিটি ধাপ আঁকছে ততই নওরিন মুগ্ধ চোখে অভ্রের ক্যানভাসের দিকে তাকিয়ে থাকছে।
অপর পাশে কুঁড়িয়ে পাওয়া একটি সিম কার্ড দিয়ে হোয়াট'স এপ একাউন্ট খুলে বারেক চৌধুরী। সকল অপরাধীদের নাম্বার ফোনে সেভ করে ফেলে সে। মনে মনে বলে,
"খেলা তো মাত্র শুরু। ধ্বংসের ধ্বংস নিশ্চিত!"
(চলবে...)
[গল্পে ব্যবহৃত চরিত্র গুলো কাল্পনিক। অভ্রের উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি, কাল ভুলে ৫ ফুট এক ইঞ্জি লিখে ফেলেছিলাম। দুঃখিত! শিল্প হোসেন আইডির পিছনে যে বারেক সাহেব ছিল সেটার হিন্ট বহুবার দেওয়া হয়েছে আগের পর্বগুলোতে। আপনারা কেউ কি আগে বুঝতে পেরেছিলেন যে অভ্রের মামাই ফেইক আইডিটার পিছনে ছিল? গল্প শেষ হতে আর কিছু সময় বাকি।
ধন্যবাদ আগ্রহ করে গল্পটি পড়ার জন্য!]
Click here to claim your Sponsored Listing.