Arrzu's Dairy

Arrzu's Dairy

Hello guys. I'm Arrzu Ahmad. I am a Bangladeshi writer. I want to be a writer... I love writing.

14/04/2022

বাইরে ভীষণ পরিপাটি,
দেখা যায় না ক্ষত।
আমরা সবাই দেখতে রঙিন,
ঝরা পাতার মতো।

®️শামীম আহম্মেদ

07/04/2022

সকাল সন্ধ্যা নিয়ম করে
নাই-বা পেলে মোর খোঁজ।
বাঁচার মতো বাঁচতে হলে
মোরে পুড়তে হবে রোজ।

#কবিতাঃ #অঙ্গার
#আরজু_আহমেদ

13/02/2022

হয়তো জীবনের সবচেয়ে অমীমাংসিত সমস্যা হচ্ছে পারিবারিক সমস্যা।

®️আরজু আহমেদ

21/01/2022

পেইজ লিংক দিলাম। সবাই পাশে থাকবেন আশা করছি 😊❤️

https://www.facebook.com/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A6%9C%E0%A7%81-%E0%A6%86%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6-Arrzu-Ahmed-103663275519546/

আরজু আহমেদ একটা গল্প শুনবেন?

16/01/2022

দুঃখ আমার নিত্য সঙ্গী হোক। দুঃখ এলেই যে তুমি আমায় আঁকড়ে ধরো।
হে প্রিয়তম! আমার সৌভাগ্য!

®️আরজু আহমেদ

15/01/2022

কামনা পুরুষের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। যদি সে নারীর প্রতি আকৃষ্ট হন। তাতে কোথাও না কোথাও ঐ নারীর ভুল না থাকলেও বেখায়ালী ভাব অবশ্যই আছে। নারীর প্রতি পুরুষ আকৃষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের মধ্যকার সম্পর্ক যেন পবিত্র হয় তাই প্রত্যেক সমাজে বিয়ের প্রচলন আছে। সম্পর্ক যেভাবেই হোক তাতে বৈধতা থাকা জরুরী। আর দুজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষের কাছে সবচেয়ে পবিত্র সম্পর্ক বিয়ে। এটাকে সহজ চোখে দেখলে সহজ। কঠিন চোখে দেখলে কঠিন।

#উৎসঃ #সংক্ষিপ্ত_অভিযোগ
#কলমেঃ #আরজু_আহমেদ

13/01/2022

আপনাকে এড়িয়ে যাওয়া যায়।
মৃত্যুকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

®️আরজু আহমেদ

12/01/2022

সবচেয়ে সুন্দর চোখ হলো ভেজা চোখ। যে চোখের তারায় ব্যস্ত থাকে অভিমানেরা!

®️আরজু আহমেদ

11/01/2022

কোনো কিছু ভালো লাগার আলাদা একটা জায়গা থাকে মনে। কখনও তা খুঁজে নিতে হয়। কখনও-বা তৈরি করে নিতে হয়।

®️আরজু আহমেদ

09/01/2022

জীবনে কিছু জিনিস কখনও ভুলে থাকা যায় না। তার মধ্যে একটি হচ্ছে অতীত। কেননা অতীত আমাদের জীবনের অংশ।

®️আরজু আহমেদ

06/01/2022

হালকা কালচে ঠোঁট!

সাজতে জানে না। এমন নয়। কিন্তু সে ন্যাচারাল লুকেই আমার সামনে এসেছে। এটাও এক ধরনের সততা। এর মানে এই নয় লিপস্টিক দেয়া খারাপ। লিপস্টিক দেয়া ঠোঁট দেখে যতটা ভালো লাগে। তার চেয়েও বেশি নেশা কাজ করে ঐ কালচে ঠোঁট দেখে। এটা সবাই উপলব্ধি করতে পারে না।

আমরা কজন ছেলে ন্যাচারাল ঠোঁটের প্রেমে পড়ি?

#গল্পঃ #মুগ্ধ
#কলমেঃ #আরজু_আহমেদ

03/01/2022

আপনার কখনো এমন মনে হয় এই বিষয়টা হলে পারতো। অথবা এই মানুষগুলো জীবনে না থাকলে ভালো হতো।

মাঝে মাঝে জীবনে এমন সময় আসে তখন আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন আপনাকে কি করা উচিত। আপনি অনেক বেশি অধৈর্য হয়ে পড়বেন। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন। জীবনকে এলোমেলো মনে হবে। সবকিছু অগোছালো মনে হবে। মনে হবে এর কোন মানে নেই। সবকিছুর প্রতি তিক্ততা কাজ করবে।

এমন সময় আপনি যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান। স্বাভাবিক ভাবেই বাঁচতে চান। তাহলে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। যথাঃ

১)লাইফ রুটিন চেন্জ করাঃ
অর্থাৎ আপনার প্রতিদিনের কাজের যে কর্মসূচি। সেটাকে খানিকটা পরিবর্তন করতে হবে। যেন কাজের প্রতি একঘেয়ে ভাবটা কিছুটা হলেও দূর হয়।

২)অভ্যাস পরিবর্তন করাঃ
অর্থাৎ আপনি সাধারণত যেই নিয়ম মেনে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করেন। তাতে কিছুটা ভিন্নতা আনার চেষ্টা করুন। এতে কাজে নতুনত্ব আসবে। কাজের প্রতি কিছুটা হলেও আগ্রহ বাড়বে। কাজ করতে ভালো লাগবে।
৩)ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি ওঠাঃ
অর্থাৎ যতটুকু সম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের কাজ একটু তাড়াতাড়ি শুরু করা। এতে দিন শেষে কিছুটা সময় বেঁচে যাবে। নিজেকে নিয়ে আর একটু বেশী সময় থাকা যাবে। মনে প্রশান্তি কাজ করবে।

৪)প্রতিদিন অন্তত একটা ভালো কাজ করাঃ অর্থাৎ
প্রতিদিন কিছু না কিছু করতে হবে। সেটা অন্যের জন্য। অন্যদের উপকার হবে এমন কিছু। হতে পারে খুব সামান্য একটা কাজ। যা তাকে সাহায্য করতে যথেষ্ট।

৫)সাময়িক দূরত্ব বজায় রাখাঃ
অর্থাৎ
যেসকল বিষয় অথবা যে সকল মানুষের কারণে আপনার মন খারাপ হয় বা আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেসব জিনিস এবং সে সকল মানুষের সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে দিন। কিছুদিন অন্তত এসব থেকে একটু দূরে থাকুন। ধীরে ধীরে আপনি নিজেকে সামলে উঠতে পারবেন।

এই ছোট ছোট বিষয় গুলো আমরা সবাই জানি। তবুও এই বেসিক জিনিস গুলো খুব একটা আমলে নেই না। যেটা আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল। তার আজ থেকে অমরা নিজেদের একটু একটু করে পরিবর্তন করব। ভালো দিকগুলো উন্মোচন করব। খারাপ দিকগুলো মুছে ফেলব। এতে মানসিক ভাবে আমরা ভেঙে পড়ব না। আমাদের মানসিক চাপ কিছুটা হলেও কমবে। আমর হাসিখুশি থাকব। মনে একটা প্রশান্তি কাজ করবে। ফলে অল্পতেই হতাশ হবার প্রবনতা কিছুটা হলেও কমবে❤️



#আরজু_আহমেদ

Happy Reading

03/01/2022

🤧কাজ চলছে

31/08/2021

বৃষ্টি ভেজা রাত! বাইরে তুমুল ঝর-বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বজ্রপাত। চারদিকে ধুলো আর বাতাস। শেফা বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় উপন্যাস পড়ছে। ভৌতিক উপন্যাস "Once Upon A Time A Night Of Black Sky" by Arrzu Ahmed. মাত্র ৩ নম্বর পর্ব শেষ হতে চললো। হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ করে লাইট চলে গেল। হুট করেই আলো চলে যাওয়ায় পুরো ফ্লাটটা যেন অন্ধকারে ডুবে যায় ।

শেফা কোনো কিছু বোঝার আগেই বিকট একটা আওয়াজ করে ডাইনিং রুমের কর্নার টেবিলে রাখা কাঁচের ফুলদানীটা ভেঙে গেল। চারদিকে এতো বাতাস ।বাতাসের ঝাপটায় শখের ফুলদানীটা ভেঙে গেছে এই কষ্ট বুকে নিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে পা বাড়ালো শেফা।বিছানা থেকে নেমেই ফোনের ফ্ল্যাশ-লাইট অন করলো শেফা। যেন অন্ধকারে হাত পা লেগে আর কিছু না ভাঙে। লাইট নিয়ে ডাইনিং রুমে এসে থমকে যায় শেফা। বিস্মিত হয় চোখ! স্থির হয়ে যায় পায়ের পাতা! ফুলদানীটা অক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ একটু আগে কাচ ভাঙ্গার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেলো মেয়েটা। তাহলে কী অন্যকিছু ভাঙলো?

কিছু একটা নিশ্চয়ই ভেঙেছে। ফুলদানীটা ভাঙেনি দেখে অবাক হয় শেফা। এতো উপর থেকে কাঁচের জিনিস পড়বে অথচ ভাঙবে না এমন তাজ্জব বিষয়ের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না মেয়েটার। ফারাবী আজ লেট করে ফিরবে। কিছুক্ষণ আগেই কথা হয়েছে প্রিয়তমার সাথে। ফারাবী তাকে অপেক্ষা করতে নিষেধ করেছে। ফিরতে অনেক রাত হবে। বাড়িতে শেফা একাই। ছোট ফ্লাটটায় সবগুলো ঘর অন্ধকার। যেন পাতালে আছে মেয়েটা। এতো অন্ধকারে থাকা যায় না।

যেহেতু রাত। আবার বাইরে তুমুল ঝর-বৃষ্টি। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাতাস। বাতাসে ভেসে ঘরে আসছে রাস্তার বালি। শেফার গা ছমছম করছে। এতো অন্ধকারে সে থাকতে পারে না। একটু আলো হলে ভালো হয়। তার অস্বস্তিকর লাগছে বাড়ির অন্ধকার শান্ত ঠান্ডা পরিবেশটা। কিছুক্ষণ আগেও সে বেলার রক্তমাখা দেহটার সম্পর্কে পড়ছিল। যেখানে বেলাকে লোহার হ্যান্ডেল দিয়ে মেরে আহত করার ভয়ংকর বর্ননা রয়েছে। বেলাকে আহত করে মাটিতে ফেলে রাখা হয়।

অবশেষে সুঁচালো পেরেক বেলার হাতে, গালে, বুকে, পেটে, পিঠে, গেঁধে দেওয়া হয়। একেকটা আঘাতে ভয়ংকর জখম হয়। আর তাতে চিৎকার করে দাপরাতে থাকে বেলা। পায়ের পাতায় অগনিত পেরেক গেঁধে আছে। পুরো পায়ের পাতা ছিদ্র ছিদ্র হয়ে গেছে । তা থেকে রক্ত ঝরছে অবিরাম। বেলা অসম্ভব জোরে চিৎকার করে। ছটফট করে। গলা কাঁটা মুরগীর মতো দাপড়াতে দাপড়াতে বেলার চোখ উল্টে যায়। এরপর..... আর পড়া হলো না বেচারী শেফার।

হুট করেই লাইট চলে যাওয়ায় পড়া থামিয়ে দেয় শেফা। বেলার সাথে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর আত্ম-চিৎকার শেফার দুকানে বাজছে। কাঁচ ভাঙার আওয়াজ পেয়েও ফুলদানীটাকে অক্ষত অবস্থায় দেখে শেফার মনে কিছুটা ভয় কাজ করে। আজ তো ফারাবী বাসায় নেই। তেমন কেউ নেই আশেপাশে যে শব্দ হবে। পুরো ফ্লাটে সেই একা একটা মেয়ে। বাইরে বৃষ্টি। সাথে ভীষণ বজ্রপাত। শেফা স্পষ্ট কাঁচ ভাঙার আওয়াজ পায়। অথচ ফুলদানীটা নিচেই পরে আছে অক্ষত অবস্থায়।

শেফা কাঁপা হাতে ফুলদানীটা তুলে টেবিলের উপর লাগলো। চারদিকে লাইটের আলোতে ভালো করে দেখে নিলো। কোথাও কোনো কিছুই অস্বাভাবিক লাগলো না শেফার কাছে। সব ঠিকঠাক। যে যার জায়গা মতোই আছে। শুধু শো শো বাতাসের শব্দ। ড্রইং রুমের জানালা খোলা। সেই খোলা জানালা দিয়েই এতো বাতাস ঢুকছে ফ্লাটে।বাতাসটা কেমন যেন। অস্বাভাবিক ঢান্ডা! এতো শীতল বাতাস আগে কখনই অনুভব করেনি শেফা। বাতাসের শীতলতা শেফার অন্তর আত্মা পর্যন্ত কাপিয়ে তুলছে ক্ষণে ক্ষণে। মনে হচ্ছে যেন বাতাসের তৈরী অদৃশ্য হাত বারবার তার কোমর চেপে ধরছে।আধভেজা খোলা চুলে চুমু খাচ্ছে। আধখোলা কাধে খামচে ধরছে।মেয়েটার শীত লাগছে বড্ড বেশি। নাহ! এবার জানালাটা লাগানো উচিত।

ড্রইং রুমের জানালা লাগিয়ে দিলো শেফা। ছোটখাটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফায় গা এলিয়ে বসলো মেয়েটা। কোলের উপর ফোনটা রেখে সোফার কভারে হাত রাখতেই চমকে উঠে মেয়েটি। অন্ধকারে সোফায় হাত ছুঁতেই মনে হচ্ছিল তরল ক্ষারীয় কিছু। রক্ত নয়তো? বুকের মাঝখানটা মুচড়ে উঠলো। সে অনুভব করলো তার সোফাটা ভিজে যাচ্ছে রক্তে। বারবার সোফার কভার হাতরে শিউরে ওঠছে মেয়েটি। ভয়ে তার সারা মুখ ঘামতে থাকে। কোনো মতে কোলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে বাম হাতে চেপে ধরে ডান হাতের তালুর উপর রাখতেই ঘোর কাটে।

পুরো হাতের তালু শুকনা। ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে হাতের এপিঠ ওপিঠ দেখে নেয়। শুষ্ক চামড়ায় হালকা ঘাম বিন্দু জমে সাদা ফর্সা হাতদুটোকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। টি-শার্ট এর উপর হাতের পিঠ ঘষে জমে থাকা ঘামগুলো মুছে নিল শেফা। একটা চাঁপা নিশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। মনে মনে সে নিজেকেই বললো, "না। এটা আমার মনের ভুল। অন্ধকারে সবকিছুই একটু বেশি বেশি মনে হয়। তাই হয়তো এমন লাগলো"

ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা সামনের দিকে বাড়িয়ে রুমের বাইরে পা রাখে শেফা। হঠাৎ একটা মিষ্টি গন্ধ পায়। লেবু ফুলের। সদ্য ফোঁটা সতেজ লেবু ফুল। গন্ধটা খুব কড়া। নাকে লাগছে ভীষণ ভাবে। উফফ! কী চমৎকার মোহনীয় ঘ্রাণ। নেশা ধরে যায়। শেফা ক্রমশ মাতাল হয়ে যাচ্ছে। এতো সুন্দর মিষ্টি কড়া ফুলের গন্ধ কোথা থেকে আসছে?

শেফা জানে আশেপাশে কোথাও কোনো লেবু গাছ নেই। তাহলে? চোখ খোলে শেফা। তার হুশ ফিরে আসে। শিউরে ওঠে ড্রইং রুম থেকে বেরিয়ে আসে মেয়েটি। পেছন থেকে একটা মিষ্টি কন্ঠ তাকে ডাকে,"শেফু। এই শেফু"

চমকে উঠে শেফা। সে কী ঠিক শুনলো? এই কন্ঠটা তো..... নাহ! এটা কী করে সম্ভব? শেফা নিজের হাতের আঙুল মুচড়াতে মুচড়াতে নিজেকে বললো, "এসব আমার মনের ভুল" ।Hallucination... ছোট একটা ঢোক গিলে নিজের টাউজারটা একটু উপরে তুলে পায়ের পাতার দিকে লাইটের আলো ফেলে শেফা। তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার পায়ের পাতা ডুবে আছে রক্তে। এটা দেখা মাত্রই তার ভিতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তার শুষ্ক পায়ের পাতা ডুবে আছে রক্তের স্রোতে।

চারদিকে চোখ বুলিয়ে শেফা আবিষ্কার করে পুরো ফ্লাটে রক্ত আর রক্ত। সে এসব দেখে নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না। পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকে। কোথাও কোন কিছু আর অবশিষ্ট নেই। সবকিছুতেই রক্ত আর রক্ত। সিলিং এর উপর থেকে রক্ত চুইয়ে পড়ছে। ফ্রিজের রংটাও চেনা যাচ্ছে না। সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ডাইনিং টেবিলের উপরে সারি সারি গ্লাসে পরপর ডুবে আছে সাদা সাদা কাঁটা আঙুল।

কোনো কোনো গ্লাস থেকে রক্ত উপচে পড়ছে। কোনো কোনো গ্লাস আবার অর্ধেক খালি। কোনো গ্লাসে কাঁটা আঙুল ডুবে আছে। কোনোটাতে আবার ভেসে আছে। সারা দেয়ালে রক্ত লেগে আছে। সদ্য বের করা তাজা রক্ত। কোথাও কোথাও আঙুলের ছাপ আছে। আবার কোথাও হাতের ছাপ। ছোপছোপ রক্তের কারণে শখের দেয়ালের রংটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।

শেফা তার পায়ের পাতা দেখতে পারছে না। সেটা অনেক আগেই ডুবে গেছে। রক্তের স্রোতে। নিজের চুল দু'হাতে চেপে ধরে উন্মাদের মতো দৌড়াতে থাকে মেয়েটি। আবার সেই কন্ঠ তাকে থামিয়ে দেয়। একটা মিহি চিকন মায়াবী কন্ঠে কেউ একজন ডাকছে, "শেফু, এই শেফু"

শেফা নিজের কান্না থামাতে নিজের হাতে মুখ চেপে ধরে কোনো মতে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে থাকে। ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে শেফা বাচ্চাদের মতো কান্না করতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে ঢেকোর তোলে। তার যে কিছুই ভালো লাগছে না। এসব কেন হচ্ছে তার সাথে? কীভাবে এসব থেকে পালাবে? ফারাবীকে খুব দরকার ছিল এখন। ও পাশে থাকলে এতো ভয় লাগতো না। উফফ কোনো ভাবেই মনকে শান্ত রাখতে পারছে না শেফা। ভয়ে ভয়ে ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। কিছুই যে করতে পারছে না।

কান্না থামাতে না পেরে চোখ বন্ধ করে বারবার নিজেকে বলছে এটা একটা দুঃস্বপ্ন। আমি স্বপ্ন দেখছি। এসব কিছুই সত্যি না। মনে মনে বিরবির করতে করতে হঠাৎ তার দেহ স্থির হয়ে যায়। শেফার মনে হলো পায়ের নিচে রক্তের স্রোত ক্রমেই বাড়ছে।চারদিকে গলা-পচা দুর্গন্ধ। শেফা টের পায় রক্তের স্রোত উপরে উঠছে। প্রথমে পায়ের পাতা ডুবে গেল। এরপর পায়ের নরম গোরালী। এরপর টাকনু।এরপর হাঁটু। এরপর উড়ু। রক্তের স্রোত তার কাঁপা কোমর ছুঁতেই শেফা চিৎকার করতে থাকে বাঁচার জন্য। ভয়ে ভয়ে অসহায় কন্ঠে করুন সুরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, "প্লিজ আমার সাথে এমন করো না ।কে তুমি?"

"আমাকে দেখবি? দেখবি তুই?"
খুব মিষ্টি শীতল কন্ঠে কেউ একজন শেফাকে প্রশ্ন করলো। শেফা অন্ধকারে অনুভব করলো রক্তের স্রোত ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে। একটু আগে রক্তে যে নীল টাউজারটা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছিল । অথচ পুরো টাউজার এখন একদম খটখটে শুকনো। একফোটা রক্তও নেই কোথাও। শেফা চোখ মুখ মুছে সামনের দিকে পা বাড়াতেই ধারালো তিন ইঞ্চি লম্বা তারকাঁটা তার পায়ে গেঁথে পায়ের পাতা ভেদ করে উপরে খারা ভাবে বেরিয়ে আসলো।

ব্যাথায় যন্ত্রনায় সে চিৎকার করে বলতে চাইছে আমাকে বাঁচতে দাও। অথচ চিৎকারের বিকট আওয়াজ এ কোনো কিছু স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না। অবস্থা এমন যে মেয়েটি পা নাড়াতে পারছিল না। পায়ের পাতা ছিদ্র হয়ে এমন ভাবে গরগরিয়ে রক্ত বের হচ্ছে যেন এই মাত্র গরুর গলা কাঁটা হলো। মেয়েটা অনুভব করতে পারছে তার পা চলার শক্তি ক্রমশ হারাচ্ছে। হঠাৎ কেউ একজন পেছনের দেয়াল ভেদ করে এক জোরা হাত বের করে পেছন থেকে তাকে চেপে ধরে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে কানের কাছে বললো, "এই নে শেফু। আমাকে উপভোগ কর।"

একটা হাত শেফার গলায় আর অন্য হাতটা শেফার পাতলা কোমরের বাম দিকটা চেপে ধরলো। ধারালো নখযুক্ত চিকন আঙ্গুল গুলো একটু একটু করে চামড়া ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। ক্রমশ পাতলা চামড়া ছিদ্র ছিদ্র হয়ে আঙুল গুলো ভেতরে চলে যাচ্ছে। তারকাঁটার মতো সুঁচালো নখগুলো গলায় আর কোমরে চামড়া ছিড়ে ছিদ্র করতে করতে চর্বির স্তরে ঢুকে যাচ্ছে। শেফা দৌড়াতে পারছে না। এতে আঙুল গুলো আরো বেশি করে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। অস্বাভাবিক যন্ত্রণা হচ্ছে। অথচ সে কোনো ভাবেই নড়াচড়া করতে পারছে না। এতে আরো বেশী কষ্ট হচ্ছে।

গলা দিয়ে গড়গড়িয়ে রক্ত পড়ছে। বুকটা ভিজে যাচ্ছে। বুকের ঠিক মাঝখানে রক্ত বেয়ে রক্তিম রেখা তৈরী করে শেফার শুষ্ক চামড়াযুক্ত পাতলা দেহ ভিজিয়ে দিচ্ছে। কোমরের চামড়া ছিড়ে তৈরী হওয়া ছিদ্র থেকে রক্ত বের হয়ে বাম উড়ু ভিজিয়ে দিচ্ছে। অথচ অসহায় মেয়ে শেফা কিছুই করতে পারছে না। শরীরে নিশক্তি কাজ করছে। চোখে আর কিছুই দেখতে পারলো না।ধীরে ধীরে শেফার চোখ বুঁজে গেল।

____________________________

ফারাবী ফ্লাটে ঢুখেই প্রিয়তমার নাম ধরে ডাকতে থাকে। কোনো সারা শব্দ না পেরে কিছুটা অবাক হয় ছেলেটি। আরো বেশি অদ্ভূত লাগে পুরো ফ্লাট অন্ধকার দেখে। ডাইনিং রুমে এসে লাইট অন করে দেখে সবকিছুই এলোমেলো। ছোট বাচ্চারা যেভাবে খেলার সময় ছোটাছুটি করে সবকিছু নষ্ট করে। সেভাবেই সব নষ্ট হয়ে আছে।

হাটতে হাটতে নিজের বেডরুমে আসে ফারাবী। সেখানেও শেফাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বিছানার উপর উপন্যাসের বই পরে আছে। ফারাবী ব্যগ রেখে বইটা হাতে নেয়। 13 নম্বর পৃষ্ঠা ভাজ করা। শেফা বই পড়ে এভাবেই ভাজ করে রাখে। যেন পরবর্তী সময়ে বুঝতে পারে কতটুকু শেষ হয়েছে।

বইটা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ফারাবী। একটু চিন্তা হচ্ছিল শেফার জন্য। এতো অন্ধকারে কোথায় আছে মেয়েটা। কবরের মতো অন্ধকার চারদিকে। সব লাইট অন করে ডাইনিং রুম ক্রস করতেই পায়ের সাথে নরম কিছু ধাক্কা লাগে। সেটা ছিল শেফার নিথর দেহ। আত্কে ওঠে ফারাবীর কলিজা! রুমের লাইট অন করে শেফার মাথাটা কোলে তুলে তাকে ডাকতে থাকে। শেফার গালে ছোট ছোট চর দিয়ে তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে ফারাবী।

কোনো সারা শব্দ নেই। পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে শেফার চোখে মুখে ছিটিয়ে তাকে বারংবার ডাকতে থাকে। হাতের তালু ঘষে। বুকে প্রেস করে। এভাবে একের পর এক চেষ্টা সম্পুর্ন করতেই কোনো মতে চোখ তুলে তাকায় শেফা। ফারাবী শেফার পানিতে ভেঁজা কপালে চুমু দিয়ে আদর মাখা চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করে, "ঠিক আছো তুমি?"

ফারাবীর শার্টের কলার খাঁমচে ধরে তার বুকের সাথে মিশে যায় শেফা। ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে। ফারাবী বুঝতে পারে মেয়েটা ভয় পেয়েছে খুব। চুলে পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করে ভরিয়ে দেয় ফারাবী। ভরসার হাতে হাত চেপে ধরে হাতের পিঠে চুমু খেয়ে ফারাবী বলে, "ভয় নেই পাগলি। এই তো আমি চলে এসেছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি তো নাকি? আর কাঁদবে না। কেমন?"

শেফা ফারাবীর কাঁধে সর্দি মুছে ফারাবীর হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। একটু চোখ খুলে সামনে তাকায়। চোখ দুটো এখোনো ঝাপসা। তবুও স্পষ্ট চোখে পড়ে পর্দাগুলো কাঁপছে। " পর্দার আড়ালে কে? ওটা কী তাহলে? ". কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। শেফা ঘাড় ঘুরিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেলো। শুধু ফারাবী দেখতে পেলো না। রক্তে মাখা সাদা ফর্সা তারকাঁটা গাঁথা পায়ের পাতা।

#অনুগল্প : #পায়ের_পাতা

:

উৎসর্গ : ছোট ভাই আল আরিয়ান আহম্মেদ ফারাবী এবং বোন Sumaiya Shefa 😍😍😍
কেমন লাগলো?
আপনার জন্য একটা প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি কমেন্ট করে বলুন গল্পের শেফুকে কষ্ট দেওয়া সেই ভৌতিক আত্মা টা কে?
গঠন মূলক কমেন্ট করবেন যেন নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে পারি।

Happy Reading 😍😍

29/08/2021

অহেতুক অজুহাত আর অপ্রকাশিত ব্যস্ততা.. আমাদের জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত গুলো ক্রমশ গ্রাস করছে।।

🗡️Arrzu Ahmed 🗡️

23/08/2021

ফোন হাতে নিয়ে প্রথম নক প্রিয়তমকে।
--আছো?
--হুমম
বলো।
--ব্যস্ত?
--খাবার খাচ্ছিলাম।
--ওহ।সরি।
--ওকে।
--আমিও খেতে বসেছি।
--আচ্ছা খাও।
--খাচ্ছিতো।
--খাও।
--তুমি এমন করে কথা বলছো কেন?
--আহারে কী জ্বালাতন। আমি নরমাল কথা বলছি।
বলছি খাও। তারপর নক দিও।
--শেষ খাওয়া।
--হুমম বলো

ম্যাসেজ টা স্লাইড টেনে কিছুটা অভিমান মিশিয়ে তুলি বললো...
--এখনই সহ্য করতে পারো না। বাকি জীবন তো পরেই রইলো।
--সহ্য না করলে চলে যেতাম। যাইনি কিন্তু।
--অনেক বড় দয়া করলা না গিয়ে।

এই চলছিল দুজনেল খুনসুটি। তুলি ইয়াসিন এর বাগদত্তা। তেরদিন হলো তাদের ভাব হয়েছে। নতুন নতুন সম্পর্ক গুলোতে কিছু শুকনো অভিযোগ, ভেজা অভিমান, গরম রাগ, ঠান্ডা অনুরাগ, স্যাঁতস্যাঁতে প্রেম থাকবেই। এসব না থাকলে সম্পর্কটা মাখা মাখা হয় না।

তুলি এখন জগরা করার মুডে নেই। তাই কথার মোর ঘুরিয়ে বললো.....
--যাইহোক
প্রতিবার আমিই বলি
তুমি কিছু বলবা
--I LOVE YOU
JAN

কোনো উত্তর পেল না ইয়াসিন। সে একজন নামকরা রাইটার। আর তুলি একজন স্কাই ড্রাইভার। দুজনের পরিচয় হয় খুব অদ্ভুত ভাবে। এই নাটকীয় পর্বের সুচনা হয় দি রয়েল হোটেল এর নিউ ইয়ার পার্টিতে। দুজনেই দি রয়েল হোটেলের দুই জন গুরুত্বপূর্ণ অতিথি। তুলি ছিল হোটেলের সাত তলায়। আর ইয়াসিন ছিল পাঁচ তলায়। পার্টির উচ্চ কোলাহল তুলির পছন্দের হলেও ইয়াসিন এর জন্য বিরক্তিকর এক অভিজ্ঞতা। তার হৈ চৈ পছন্দ না।

তুলির এসব খুব পছন্দ। আপনি ভাবছেন তাহলে তাদের মিল হলো কীভাবে? এখানেই আসল টুইস্ট। ইয়াসিন তার নতুন কবিতার বইয়ের মোরক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এই রয়েল হোটেলে আসেন। বহু শুভাকাঙ্গী সাংবাদিক পাঠক ও সমালোচকদের সমন্বয়ে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। আর তুলি এসেছিল তার এক ধনী কাজিনের বার্থডে পার্টিতে। দুজনের পরিচয় হয় হোটেলে।

সাংবাদিকদের ঘুরানো পেঁচানো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে পার্টি হল থেকে বেরিয়ে আসে ইয়াসিন। বয়স তার ৩০ ছুই ছুই। এখনো ছোঁয়া হয়নি আর কি। মুখে কোনো দাড়ি গোফ না থাকায় তাকে আরো অল্পবয়সী লাগে। নিয়মিত পাঠকদের অনেকেই তাকে গোপনে প্রেম পত্র পাঠায়। শুরুর দিকে শখ করে পড়তো। এখন অবশ্য পড়ে না। সব লেটার বিন এ পরে থাকে।

হলের বাইরে এসে ছয় তলায় উঠার জন্য যে সিঁড়ি আছে তার সামনে এসে দাড়ায় ইয়াসিন। হঠাৎ চোখ পড়ে উপরের দিকে। সিঁড়ির শেষ মাথায় অর্থাৎ ছয় তলায় সিঁড়ির সামনে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আসে পাশে কেউ নেই। মেয়েটা একা। একটা লাল রঙের গাউন পরা। টকটকে লাল। দুর্ভাগ্যবশত ইয়াসিন লাল রং পছন্দ করে না। তার সবচেয়ে অপছন্দের রং লাল। কিন্তু সে নিজের চোখদুটোকে সংযত করে রাখতে পারছে না। নির্লজ্জের মতো বারবার উপরের দিকে দৃষ্টি চলে যাচ্ছে।

নিজের এমন বেহায়া রুপ আর কারো চোখে যেন ধরা না পরে তাই ইয়াসিন লিফটের দিকে পা বাড়িয়ে দেয়। এমন সময় উপর থেকে ঐ লাল পরী থুক্কু লাল গাউন পড়া মেয়েটা গলা তুলে ডাকে, "excuse me sir......."

ইয়াং একটা ছেলেকে ভাই বললে যতটা বুকে বাধে। sir শব্দটা শুনলেও ইয়াসিন এর বুকে খুব লাগে। সে আবার ব্যতিক্রমী পুরুষ। মেয়েরা ভাইয়া বললে সে খুশি হয়। এই জন্য বিবাহিত সব বন্ধুরা জাতীয় ভাই বলে তাকে ক্ষেপায়। খুব একটা কানে তোলেনা ইয়াসিন। কিন্তু কেউ sir বলে ডাকলে তার ego তে লাগে। কারণ তার মনে হয় শুধুমাত্র বিবাহিত বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে sir শব্দটা ঠিক। এই জন্য তাকে কোনো সুন্দরী মেয়ে sir বললে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।মনে হয় যেন মেয়েটা তাকে বুড়ো বলছে।

সেদিনের সেই লাল পরী ছিল আমাদের তুলি। পরীদের মতোই লাগছিল সেদিন তাকে। কালো রঙের হিল আর লাল রঙের গাউন সাথে সিল্কের হিজাব। এখানে এমন আউট ফিট খুব কম মেয়েদের মধ্যেই দেখা যায়। তুলি সেদিন মাস্ক পড়া ছিল।হাতের কব্জি আর চোখের এরিয়া ছাড়া তেমন কিছুই ধরা পরেনি ইয়াসিনের চোখে।আকাশ সমান রাগ আর মেঘের মতো কালো মেজাজ নিয়ে পেছনে ফিরে উপরে তাকিয়ে থমকে যায় ইয়াসিন।

সে মেয়েটা প্রথমে ভালো করে খেয়াল করেনি। কিন্তু যখনই দেখলো তার চোখ আটকে গেল মেয়েটার আর্ধঢাকা মুখের দিকে তাকিয়ে। কী আছে ঐ চোখে? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো ইয়াসিন। আরো একটু কাছ থেকে মেয়েটাকে দেখার লোভে উপরে উঠে এলো ইয়াসিন। যেই মেয়েকে ঝাড়ি মারবে তাকে Sir" সম্বোধন করেছে বলে। সেই মেয়ের চোখ এতো দুর থেকে দেখেও তার পুরুষালী লোভ জাগলো। লোভটা হচ্ছে অচেনা মেয়েটাকে আরো একটু কাছ থেকে দেখা।

ইয়াসিন উপরে এসেই নিজের রাগের কথা ভুলে গিয়ে সোজাসুজি প্রশ্ন করলো, "কোনো সমস্যা?"

তুলি আঙুল দিয়ে সামনে থাকা মেয়েটাকে দেখিয়ে বললো, "ওকে নিয়ে বাসায় যাবো"

ইয়াসিন ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো, "তো কী? এখানে আমি কী করবো?"

তুলি ইয়াসিন এর কানের কাছে এসে বললো, "মেয়েলি সমস্যা" ইয়াসিন ছোট করে বলল, "ওহ্"

সামনের মেয়েটি লজ্জায় কোনোদিকে তাকাতে পারছে না। মুখটা শুকিয়ে গেছে। ঘন ঘন ঘামছে আর হাতের তালুতে নখ দিয়ে খুটছে। অনেক মেয়েরা অস্থিরতার সময় হাতের তালুতে নখ দিয়ে খোটাখুটি করে। ইয়াসিন নিজের লেখায় এমন একটা ঘটনা উল্লেখ করেছিল। তবে সেটা সম্পূর্ণ তার কল্পনার জগতে ঘটেছে। তবে সেদিন হলো তার বাস্তব অভিজ্ঞতা। একটা মেয়ে কতটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেলে নিজের নখ দিয়ে তালুতে আঘাত করতে পারে।

এ যেন গভীর চিন্তার বিষয় কয়েক মুহূর্তের জন্য ইয়াসিন ভাবনায় ডুবে গেল। তুলি বিরক্ত হয়ে তার হাতে থাকা পার্সটা ইয়াসিন এর পেটে ঠেকিয়ে বললো, " আপনি কী এভাবেই তাকিয়ে থাকবেন? একটা CNG ডেকে দিন। আমি ওকে নিয়ে নিচে আসছি। কী হলো? যান!"

প্রথম ঘোর কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় ঘোরে ডুবে যায় ইয়াসিন। মেয়েটা তার পেটে নিজের পার্স ঠেকালো। যদি হাত ঠেকাতো তখন? কেমন লাগতো স্পর্শটুকু। তুলির ধমক শুনে লিফটে ঢুকলো ইয়াসিন। সে যেন ভুলেই গেছিল কেন সে এখানে এসেছে। পার্টির উচ্চ কোলাহল, বন্ধমহল, সমালোচকদের আড্ডা, পাঠকদের শুভেচ্ছা সব কিছুই যেন মাথা থেকে বের করে দিল এই লাল পরীটা। হোটেলের বাইরে এসে সামনের রাস্তায় নেমে CNG খুঁজতে লাগলো।

হোটেলের সামনে থাকা দারোয়ান খুব অবাক হলো ইয়াসিনের কান্ড দেখে। যে লোক গাড়ি নিয়ে হোটেলে ঢুকলো তার আবার CNG কোন কামে লাগে? দারোয়ান এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পেল তুলি আর তার সাথের মেয়েটিকে দেখে। দারোয়ান পরপর মেয়ে গুলোর দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে উত্তর দিলো, "ওহ্ তাইলে এই ব্যাপার। শালা এক রাত হয়নি অথচ মেয়ে খুঁজে নিল।"

আমাদের রক্ষণশীল সমাজে রাইটারদের ভালো চোখে দেখে না।একজন রাইটার মনের গুপ্ত অনুভূতি ও সুপ্ত আবেগকে আরো কিছুটা মোহনীয় করতে খোলামেলা ভাষায় তার গল্পে অথবা কবিতায় প্রকাশ করেন। এই জন্য তাকে তার অগোচরে লুচ্চা বদমাশ চরিত্রহীন প্রভৃতি এমন সনামধন্য উপাধি দিয়ে ডাকা হয়। সে নিজের অজান্তেই এই সব উপাধি লাভ করেন। রাইটার খোলামেলা লেখেন যেন সেটা আমাদের বোধগম্য হয়। এখন যদি জটিল ভাবে লেখে। তাহলে এই বলে গালি দেবে, "আরে শালাতো লিখতেই জানে না। রশ নাই প্রেম নাই।"

তবে এমন অকথ্য গালিগালাজ এর ধার ধারে না ইয়াসিন। দারোয়ান যে তাদের বাজে নজরে দেখছে। তা ভালোভাবেই চোখে পড়লো। সে তুলিকে একটু সাইডে দাড় করিয়ে CNG খুজতে লাগলো। তুলির সাথের মেয়েটা মুখ থেকে ইমম ইমম শব্দ করতে করতে মাথায় হাত রাখলো। ইয়াসিন ভাবলো মেয়েটার বুঝি মাথা ঘুরছে। পরে গেলে যেন ধরতে পারে সেই আশায় মেয়েটার সামনে এসে দাড়ায়। আর তাতেই ঘটে অঘটন। মেয়েটা নিজেকে সামলাতে না পেরে ইয়াসিনের গায়ের উপর বমি করে দেয়। নিজেকে কোনো ভাবেই থামাতে পারেনি মেয়েটি। ইয়াসিন হতভম্ব হয়ে গেছে। এমন কিছুহবে তা ইয়াসিন কল্পনাও করতে পারে না। একটা মেয়ে তার গায়ে বমি করলো। এটাই বাকী ছিল।

তুলি এই কান্ড দেখে "আহ" বলেই দুহাতে মুখ চেপে ধরলো। বোঝা যায় সে নিজেও খুব অবাক হল। লোকটা তাদের সাহায্য করছে আর তাকে এই প্রতিদান দিল শেষ পর্যন্ত। লজ্জা আর অনুশোচনায় তুলি মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারলো না। দারোয়ান বিষয়টা দেখেই কাউকে ডাকতে ভেতরে গেল। ঠিক তখন একটা CNG হর্ন বাজাতে বাজাতে তাদের সামনে আসলো । ইয়াসিন হাত দিয়ে ইশারা করে থামতে বললো। তারপর তুলিকে উদ্দেশ্য করে মুখে বললো, "যাও গিয়ে বসো।"

তুলি কিছু না বলেই পার্স থেকে একটা রুমাল বের করে ইয়াসিনের হাতে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। কিছু একটা বলতে গিয়েও বললো না। চোখ দুটো কেঁপে কেঁপে আবার থেমে গেল। ইয়াসিন বিষয়টা ভালো ভাবেই লক্ষ করলো। গাড়ি চলে গেলে ইয়াসিন রুমালটা নিজের প্যান্টের পকেটে চালান করলো। এতো সুন্দর একটা জিনিস এমন নোংরা কাজে ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এক পকেটে রুমাল রেখে অন্য পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের করে পার্কিং জোনে গেল।

দ্রুত গাড়িতে বসে কোনো কিছু না ভেবেই CNG র পিছু নিল। মেয়েটাকে হাত ছাড়া করা যাবে না। কে জানে কে এই মেয়ে। কি যেন একটা বলতে গিয়েও বললো না। না জানলে তো আজ আর ঘুমই আসবে না ইয়াসিনের। একে তো মেয়ে। তার উপর সুন্দরী। কীভাবে নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখে? কী ছিল ঐ চোখে এতোটা মায়া কেন? টানা করে চিকন রেখার আইলাইনার দেয়া সাধারণ দুটি চোখ। তাও কত সুন্দর। কী আছে ঐ চোখের কোণে। দু ফোটা রহস্য? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই।

গাড়ি থামলো সোলায়মান রোডে। একটা বহুতল ভবনের সামনে। অসুস্থ মেয়েটি ভেতরে চলে গেল। তুলি ভাড়া মিটিয়ে বাড়িতে ঢোকার জন্য পা রাখার আগেই ইয়াসিন গাড়ি থেকে নেমে তুলির পেছনে চলে আসে। পেছন থেকে "ঐ" বলে ডাকে।

ততক্ষণে তুলি নিজের মাস্ক খুলে ফেলেছে। ডাক শুনে পেছনে ফিরে ভ্রু কুঁচকে বিস্মিত হয়ে গেল। এই লোক এখানে কেন? মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করে তুলি। ইয়াসিন হালকা হেসে বলল, "তোমার নামটা জানা হয়নি। নাম কী তোমার?"

তুলি মাথা নেড়ে বলল, " আপনি আমার নাম জানতে এতো রাতে এই ময়লা জামা পরে এখানে এসেছেন। মাথা ঠিক আছে আপনার? সাইকো না কী?"

ইয়াসিন ঠোঁট দুটোর দিকে তাকিয়ে হাসলো লিপস্টিক হালকা হয়ে গেছে। মাস্ক পরে থাকার কারণে ঠোঁটের লিপস্টিক মাস্কে মিশে গেছে। মেয়েটা এখনও টের পায়নি এই ব্যাপারটা। ভেবেই খুব হাসি পাচ্ছে ইয়াসিনের।লিপস্টিক সরে ঠোঁটের চিকন রেখাটা দৃশ্যমান হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবতে লাগল ইশ মাস্কটাও তার চেয়ে ভাগ্যবান। ঐ ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে গেল। সে কেন পেল না? খুব কী কঠিন?

হঠাৎ হুশ ফিরল ইয়াসিনের কী সব আবোল তাবোল ভাবছে সে। মনে মনে তওবা করলো। নিজের এমন বোকামি দেখে নিজের উপরই রাগ হলো। "কেন যে এখানে আসতে গেলাম। মেয়েটা কী ভাবছে। এমন জঘন্য কাজ কীভাবে করলাম। তার উপর মেয়েটির ঠো....... ছি ছি আমি এসব কী ভাবছি" এভাবে নিজেই নিজেকে ফেরাতে লাগলো ইয়াসিন। মেয়েটা এখনো উত্তরের অপেক্ষা করছে দেখে কেন জানি মনে কোথাও না কোথাও একটা প্রশান্তি কাজ করলো। কোনো কিছু না ভেবেই সরাসরি মেয়েটাকে বললো, "তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি কি বলো?"

ইয়াসিনের কথা শুনে তুলি পাগলের মতো হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে বললো, "আপনি এই জন্য এতোদুর আসলেন। তাও এই ময়লা জামা কাপড়ে। বিশ্বাস করুন আমি আপনার মতো আইটেম একটাও দেখি নাই। পাগল ছাগল মানুষ" এসব বলেই আবার হাসতে লাগলো।

ইয়াসিন মাইন্ড করলো। মেয়েটা তাকে আইটেম বললো। এর চেয়ে ভালো কোনো শব্দ নেই ডিকশনারীতে। এমন একটা শব্দ তার মতো ছেলেকে কীভাবে বললো। মনে মনে রাগ হলেও সেটা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হলো ইয়াসিন। নাহ এই মেয়ের সাথে বিয়ে না হলে চলবে না। একেই বিয়ে করবো। এতো অল্প সময়ের মধ্যে মাথাটা পুরো ব্লগ করে ফেলেছে। মনের মধ্যেও ছিটেফোটা জায়গা রাখেনি যে অন্য কোন কিছু রাখবে।

ইয়াসিন শান্ত গলায় তুলিকে বললো, " দেখো মেয়ে তোমাকে আমার মনে ধরেছে।তাই আমি তোমাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো না। কারণ তোমাকে আমার চাই। আমার বউ হিসেবে তোমাকে চাই। যত দ্রুত সম্ভব মানসিক প্রস্তুতি নাও।"

তুলি কিছুটা কাছে এসে চোখের দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বললো," আপনি জানেন আপনি কে? আমি বলছি আপনি কে। আপনি হলেন ক্রিমিনাল সাইকো।ভালোয় ভালোয় বিদায় হোন। না হলে 3rd degree torture করে পিঠের ছাল তুলে ফেলবো। এরপর গাধার পিঠে বসিয়ে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাবো। পুরো নাংগা করে সুলেমানী মালিশ দিবো তোমায়। হারামজাদা! একটু সাহায্য করেছে কী করেনি। সোজা বাড়ি পর্যন্ত চলে আসলো। "

মুখের ভাষা কোথায় গিয়ে থামবে ভাবতে থাকে ইয়াসিন এমন সময় বাজপাখির মতো ইয়াসিনের কলার ধরে তুলি বলে," ঐ লুখ্যা। তোর সাহস কত বড় তুই আমার পিছু নিলি। তোর কলিজা কত বড় তুই আমার এরিয়ায় ঢুইকা আমারে প্রশ্ন করছ নাম কী। আবার বিয়ের প্রস্তাব দেস। আজ তোর কলিজা বের করে দেখমু কত বড়। হারামজাদা। তোর মরনের ভয় নাই? ঐ ইতর। কথা কস না কেন?"

ইয়াসিন যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। মেয়েটার এতো গুণ। তাকেই শাষাচ্ছে। চর থাপ্পর মারতে পারে ভেবে নিজেকে মেয়েটার হাত থেকে ছাড়িয়ে গায়ের জামাটা খুলে ফেলল। তুলি ইয়াসিনকে দেখে কিছুটা আত্কে উঠে। আবার রেপ করবে না তো? এমন একটা নেতা নেতা ভাব নিল। যেন সে এলাকার মেয়ে না। বরং নাম করা গুন্ডী। মানে মহিলা গুন্ডা। থুক্কু লেডি কিলার। এতোটা বাড়াবাড়ি না করলেও পারতো। কেন এসব করতে গেল। যদি ছেলেটা খারাপ কিছু করে বসে। এমন উদ্ভট চিন্তায় পড়ে যায় তুলি তাকিয়ে থাকে সামনের মানুষটার দিকে।

ইয়াসিন ময়লা জামাটা তুলিকে দিয়ে বলে, "এটা ধুয়ে ইস্ত্রী করে কাল আমার বাসায় দিয়ে যাবে। তোমার সাথে দেখা না হলে এসব কিছুই হতো না।"
নিজের কার্ডটা তুলির হাতের মুঠোয় গুজে দিয়ে চলে যায় ইয়াসিন। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকে তুলি। কে এই লোক? এমন পাগলামি কেউ করে। কার্ডটা চোখের সামনে রেখে নামটা পড়ে। রাইটার ইয়াসিন তালুকদার।মুচকি হেসে বলে" পাগল একটা"

বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বলে এই ঘটনা। বাবা বাড়িতে ছিল না। তাই ঘটনাটা চাপা পড়ে যায়। তুলি পরদিন সত্যি সত্যি ইয়াসিনের বাসায় যায়। তার জামাটা সাথে নিয়ে। ইয়াসিনের বাবা মা দুজনেই তুলির সাথে এমন আচরণ করে যেন তাকে বহুদিন ধরে চেনে। তুলি নিজের নাম পরিচয় সব বলে। শেষে ইয়াসিনের কাছে ক্ষমা চায় গতকাল রাতের ব্যবহারের জন্য।

ইয়াসিন তুলিকে সামনে বসিয়ে তুলির আব্বুর সাথে কথা বলেন। তুলি প্রথমে খুব ভয় পায় তার বাবা রেগে গিয়ে যদি কিছু করে বসে। পরে দেখলো রাইটার মিহি কথার সুরে তার বাপজানকেও রাজি করিয়ে ফেলেছে। কথা শেষ করে ফোন রেখে ইয়াসিন হাসি মুখে তুলির গাল টেনে বললো, "জান প্রস্তুত হও। আগামীকাল আমাদের আংটি বদল হবে"

তুলি কপাল ভাজ করে প্রশ্ন করে, "এতো তাড়াহুড়ো করছেন কেন? আমরা তো ঠিকমতো পরস্পরকে জানি না। এখানে কত কিছু ম্যাটার করে। আর...."

তুলিকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে ইয়াসিন বললো, "তুমি যুবতি মেয়ে। আমি বিয়ের উপযুক্ত ছেলে। তুমি হলে জলন্ত ফুল। আর আমি সেই আগুনের ফুলে উড়ে বেড়ানো মৌমাছি। আমরা কেন নিজেদের পাপ বাড়াবো? এর চেয়ে ভালো না বৈধ উপায়ে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী করি। কাল যদি আমি কিছু করে ফেলতাম। আমি গতকাল নিয়ন্ত্রণ হারাইনি। কিন্তু আজ যদি নিজেকে সামলাতে না পারি। কেউ কী তোমাকে দোষারোপ করবে? কেউ করবে না। অথচ তুমি আমার নজরে এসেছো। আমি না।এটা তোমার ভুল না। কিন্তু আমি কিছু করলে একা কেন অপরাধী হবো বলো? "

তুলি চুপ করে ভাবতে লাগলো। সে কখনোই এভাবে ভেবে দেখেনি। কামনা পুরুষের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। যদি সে নারীর প্রতি আকৃষ্ট হন। তাতে কোথাও না কোথাও ঐ নারীর ভুল না থাকলেও বেখায়ালী ভাব অবশ্যই আছে। নারীর প্রতি পুরুষ আকৃষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের মধ্যকার সম্পর্ক যেন পবিত্র হয় তাই সমাজে বিয়ের প্রচলন আছে। সম্পর্ক যেভাবেই হোক তাতে বৈধতা থাকা জরুরী। আর দুজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষের কাছে সবচেয়ে পবিত্র সম্পর্ক বিয়ে। এটাকে সহজ চোখে দেখলে সহজ। কঠিন চোখে দেখলে কঠিন।

তুলি আর কোনো আপত্তি করলো না। এই যুক্তিশীল রাইটারকে বিয়ে করতেই রাজি হয়ে গেল। পরদিন বাগদান সেরে নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু করলো। এখন সম্পর্কটা সুন্দর। প্রতিষ্ঠিত। কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে করতে যাচ্ছে তারা। রোজ কথা হয় তাদের। সাথে একটু আধটু জগরাও হয় দুজনের মধ্যে।

যেমনটা আজ হলো।
আর যখনই জগরা হয় এই তিন শব্দের সবচেয়ে শক্তিশালী বাক্যটি বলে এরা। I LOVE U "

ইয়াসিন এর কন্ঠে এই মোহনীয় বাক্যটি শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকলো মেয়েটি। এরপর একটু ছোট বড় শ্বাস নিয়ে ইয়াসিন কে বললো," হুমম।। আমাকে শান্ত করা শিখে গেছো তাহলে. বাহ! ভালোই তো। "

ইয়াসিন হাল্কা হেসে বললো," তুমি বলবা না? "

তুলি বললো," আজ যে আমাদের দেখা করার কথা ছিল মনে আছে? হাতে তো বেশি দিন নেই। তুমি কথা দিয়েছো!"

ইয়াসিন নরম গলায় বললো, "তাহলে তুমি এই অভিযোগ টা তুলে রাখো। আজ আসতে পারবো না একটু ব্যস্ত যে। "

কিছুক্ষণ কেউই কথা বললো না। ইয়াসিন আবার প্রশ্ন করলো," কি হলো কিছু বলবা না? মন খারাপ করে দিলাম?

মৃদুহাসিতে ইয়াসিন এর মন জুড়িয়ে তুলি বললো, "সংক্ষিপ্ত অভিযোগ টা তোলা রইলো"

----সমাপ্ত----

উপন্যাস : #সংক্ষিপ্ত_অভিযোগ
কলমে:

কেমন হলো জানাবেন। যদি ভালো রেসপন্স আসে তবেই পরবর্তী পর্ব দিবো ইনশাআল্লাহ।
Happy Reading...

22/08/2021

#অনুগল্প : #জমানো_আদর

#কলমে:

ছোট বেলায় জাহিদ স্যার একটা কথা বলতেন, "মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময় কতটুকু? বাম চোখ থেকে ডান চোখ পর্যন্ত।"
আসলেই তাই মৃত্যু কখন আসবে কার কাছে আগে আসবে তা কেউই জানে না। মৃত্যু এতো দ্রুত আসবে চোখের পলকে সব কিছু উলোট পালট করে দেয়। মৃত্যুর অনেক মাধ্যম আছে। এটাকে উসিলা বলা যায়। বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সারা জাগানো উসিলার নাম করোনা ভাইরাস। আমাদের সবাইকে মৃত্যু যন্ত্রণা ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিতে এসেছে।

সেবার আমার এক চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত পেলাম। আমি তখন সিঙ্গাপুরে ছিলাম। রুবিনা ফোনে সব খবরাখবর দিতো। আমি টিকিট কাটতে জোর-তোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। ছোট ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। কিন্তু আমার শরীর বড় অসুস্থ হয়ে পড়লে ডেট পিছিয়ে দেই। তেমন কিছু না। এই ঠান্ডা, জ্বর, মাথা ব্যাথা, বমি। আমি সিঙ্গাপুরে আসার পর থেকে এমন অসুখ প্রতি বছর হয়। এই জন্য খুব বেশি চিন্তা করে দেখলাম না।নরমাল ঔষধ খেয়ে অপেক্ষা করতে থাকি করে ঠিক হবো। কিন্তু আমার কপালে তো অন্য কিছু লেখা ছিল। সেটা তো ফেরাতে পারি না।

কয়েক সপ্তাহ পর আমি সুস্থ হবার বদলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়লাম। বুকের ব্যথাটা বেড়ে গেল। সেই সাথে শ্বাসকষ্ট। আমি আমার এক বন্ধুকে জানালাম নিজের অসুস্থতার কথা। আসলে এখানে সেই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমাদের কোম্পানির CA. ও আমাকে একটা নতুন ভাইরাসের কথা বললো। সারা উহান জুড়ে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর খারাপ খবর হলো ভাইরাসটা উহানের গন্ডি পেরিয়ে চলে এসেছে আমাদের শহরে। আমি পুরো ফেসবুক ঘেটে মরিয়া হয়ে খুজলাম খবরটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য।

আমি যত এই ভাইরাস সম্পর্কে জানলাম ততই অবাক হলাম। এই ভাইরাস থেকে সৃষ্ট অসুখের লক্ষন কী? যা যা উপসর্গ আমার দেখা দিয়েছে। সেই সব গুলো। এই রোগের যে কোন প্রতিষেধক নেই। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ভাইরাস যা মহামারী আকার ধারণ করেছে। নিজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর জনবহুল শহর গুলোতে নিজের মৃত্যুলীলা শুরু করে দিয়েছে। সবচেয়ে চিন্তার বিষয় ছিল এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে অধিকাংশ মানুষ মারা যাচ্ছে যারা কিনা ৫০+। আমি তো খুবই চিন্তিত হয়ে পরলাম। ভেতরে ভয়টা বেড়ে গেল।

আমি সিঙ্গাপুরে আসার পর থেকে আমার শরীর খারাপ হয় এখানকার অসভ্য আবহাওয়ার কারনে। সাভাবিক আমি রাত দিন ধরেই কাজ করি। এখানে এই পার্টির সাথে মিটিং ওখানে ওই পার্টির সাথে মিটিং। খাওয়া দাওয়ার অবস্থা তো আরো নাজুক। রুবিনা পাশে নেই যে ভালো ভালো খাবার রান্না করে খাওয়াবে। সারাদিন কোনো রুটিন না মেনে যেভাবে মন চায় সেভাবেই কাজের ছুতোয় খাবার খেতে অবহেলা করছি। এরমধ্যে এমন সব রোগ আমাকে পেয়ে বসলো যার কোনো প্রতিষেধক নেই। মৃত্যুই যার সর্বশেষ ও সর্বোচ্চ শাস্তি বা পরিনতি।

আমি এই খবর শুনে ঘামতে শুরু করি। শরিরের অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগলো। আমি কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে হোটেলের হাউজকিপিং ছেলেটাকে দিয়ে সামনের সুপারশপ থেকে একজোরা গ্লাভস আর একটা মাস্ক কিনে আনলাম। তারপর কাউকে কিছু না জানিয়ে সিটি হসপিটাল এ পরিক্ষা করলাম। জানতে পারলাম আমিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। সিঙ্গাপুরে যেসকল বাংলাদেশী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আমি সেই প্রথম সারির প্রবাসী। যে আল্লাহর রহমতে এখন জীবিত আছি। বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারছি।

আমার রিপোর্ট হাতে পাওয়া মাত্রই আমার চিকিৎসা শুরু হয়। এই নভেল করোনার প্রধান ও সর্বোচ্চ চিকিৎসা আইসোলেশন এ রাখা এবং পর্যবেক্ষণ করা। আমাকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়েছিল। আমার তখন কোনো হুশ ছিল না। শুরুর কয়েকটা দিন বলতেও পারিনি কে চিকিৎসা নিয়েছে। কে সেবা দিয়েছে। কারন আমি নিজেই তো তখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছি। অক্সিজেন মাস্ক ছাড়া নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতো। মাঝে মাঝে এতো জ্বর থাকতো বিশেষ করে রাতে। যেন পুরো শরীর পুরে যাচ্ছে।

সপ্তাহক্ষানিক আমি বেডে শুয়ে অচেতন অবস্থায় চিকিৎসা করলাম। আমার ডাক্তাররা ভাবেন নি যে আমি বেঁচে ফিরবো। কারন প্রথম সারির কোনো বাঙালি বাঁচতে পারেনি। আমি যেই ICU রুমে ছিলাম সেখানে আমি সহ চারজন রোগী ছিল যারা সবাই মারা গেছেন। আমি কারো মৃত্যু দেখতে পারিনি। শুধু মাত্র যেদিন আমাকে আইসোলেশন ইউনিট থেকে বের করে নরমাল কেবিনে নিয়ে যাচ্ছিল তখন একটা অল্প বয়সী তরুণ মৃত অবস্থায় ICU থেকে বাইরে আসলো যার পেছনে পেছনে D. Anny ও তার সহকর্মীদের দেখা যায়। যারা সেসময় সদ্য মৃত্যুবরণ করা ছেলেটার জন্য কান্না করছিল।

কী যন্ত্রণাদায়ক দৃশ্য। নিশ্চয়ই ছেলেটা বাঁচার জন্য বড় আকুতি মিনতি করে। বড় বেশি ছটফট করে। ও বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু নভেল করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি বেচারা। এমন দুর্ভাগাদের দেখার পর যদি চোখ দিয়ে পানি না পড়ে তাহলে তো ওই সব চোখ দিয়ে রক্ত ঝরা উচিত। আমি মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি আমাকে আবার বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়ার জন্য। সত্যিই আমি অনেক ভাগ্যবান যে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পেয়েছি। যেখানে আমার বাঁচার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। আলহামদুরিল্লাহ।

এই অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে বলে আমি একজন অসাধারণ মানুষকে দেখতে পেরেছি। আইসোলেশন ইউনিট থেকে যখন নরমাল কেবিনে নিয়ে আসা হয়েছে তখন সেবা বা Caring এর জন্য যে একঝাক সেবিকা ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলো পাকিস্তান বংশধর ইন্দোনেশিয়ান মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া Hu. অসম্ভব পরিশ্রমী এবং সর্বোচ্চ শান্তি প্রদানকারী রক্ত-মাংসের মানুষ। আমি তার চেহারা তখনো দেখতে পাইনি। শুধু কথা বলার সময় তার হাস্যেজ্জল মুখটা অনুমান করতাম আর হ্যামলেট এর ভেতরে ঝাপসা চোখদুটো অনুভব করতাম।

Hu এর প্রশংসা কীভাবে করবো জানি না। সে অসাধারণ একজন নার্স ছিলেন। বয়স খুব করে হলে ২৪/২৬ হবে। সারাদিন দৌড়ের উপর থাকতো। এমনিতেই অনেক কাজের চাপ তার উপর আবার বিশেষ চাহিদা। শত শত মৃত্যুযাত্রী রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার অধিকারী। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেই গুনটা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো পাঁচ মিনিটের মধ্যে মাথা ধরা দুর করা। প্রক্রিয়াটা খুব সুন্দর। আপনার মাথার দুপাশে গ্লাভস পড়া আঙুল জোরা দিয়ে জোরে জোরে মালিশ করবে আর আপনাকে একটার পর একটা প্রশ্ন করবে। একটু পর আপনার চোখে ঘুম চলে আসবে। ঘুম ভেঙ্গলেই বুঝবেন মাথা ব্যথা নেই।

আমার ক্ষেত্রে রুবিনা ছাড়া আর কারো মাথায় হাত বোলানো পছন্দ না। কিন্তু আজ এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে Hu রুবিনার চেয়ে সুন্দর করে মাথা ব্যাথা দুর করতে পারে। সুস্থ হবার পর থেকে প্রতিদিন রুবিনার সাথে কথা বলতাম। আমাদের আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল Hu. প্রথম কোনো একটা মেয়ে আমার অন্তরের আকাশে দাগ কেটে গেছে। রুবিনা এমন ভাবে প্রশ্ন করতো যেন সে Hu কে চেনে। আসলে Hu মানুষটাই ছিল এমন। ওকে মনে রাখবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। অসম্ভব আন্তরিকতা, অসাধারণ সেবা, দুটো বাক্যে বেঁচে থাকার মনোবল ফিরিয়ে আনতে পারে শুধু মাত্র ওর মতো অসাধারণ কিছু মানুষ।

আমার শেষ দফা টেস্ট করানো হলে ২য় বার করোনা ( - ) হলে রিলিজ দেওয়া হয়। যেদিন আমাদের হোটেলে পাঠানো হবে সেদিন সব সুস্থ রোগীদের জন্য ফুলের তোরা, শুভেচ্ছা কার্ড, ছবি তোলা সহ নানা রকম আয়োজন করা হয়। আমাদের একটা ইন্টারভিউ দিতে হয়। বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু কথা বলতে হয়। আমি চলে যাবার সময় গাড়ি না ছাড়া পর্যন্ত কম করে হলেও ১০০ বার পেছনে তাকিয়েছি। আমার চোখ দুটো শুধু Hu কেই খুঁজতে লাগলো। কোয়ারেনটাইনে থাকাকালীন সময়ে সে আমাকে বলেছিল যে বিদায়ের দিন সে অবশ্যই আমাকে বিদায় জানাতে আসবে।

কেননা আমি তাকে জানিয়েছিলাম যে আমি প্রবাসী এবং আমার পরিবারের কেউই এখানে থাকে না। আমাকে নিয়ে যেতেও কেউ আসবে না। আমি গাড়িতে বসে শেষ বার যখন পেছনে তাকাই দেখি Hu টেস্ট কীট নিয়ে ছোটাছুটি করছে। বুঝলাম যে সে অনেক ব্যস্ত তাই আসতে পারিনাই। আমি অত্যন্ত উদাস হয়ে বসে রইলাম। যখন গাড়ি চলতে শুরু করলো তখন আমার কানে একটা অচেনা কন্ঠ ভেসে আসে। আমি জানালার সাদা পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি Hu তার হ্যামলেট আকাশে তুলে অন্য হাতে আমাকে টা টা ✋✋দিচ্ছে। আমিও হাত নাড়িয়ে তাকে বিদায় জানালাম। ও দৌড়ে এসে গেটের সামনে ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রইলো। যতক্ষণ না গাড়িটা দৃষ্টি সীমানার সাথে মিশে না যায়।

আমার খুব ভালো লাগলো এটা ভেবে যে সে তার কথা রেখেছিল। আমাকে বিদায় জানাতে এসেছিল। এটা নিয়ে এতো উত্তেজিত হয়েছি কারণ কোনো অচেনা অজানা মানুষের কাছ থেকে পাওয়া এই অপ্রত্যাশিত আদর আমাকে কখনই Hu এর কথা ভুলতে দেবে না। হোটেলে হোম কোয়ারেন্টাইন শেষে যখন দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। তখন এখানকার বাইরে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিল। শুধু সিঙ্গাপুর না। বিশ্বের ছোট, বড়, উন্নত, উন্নয়নশীল, অনুন্নত সব দেশেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হলো। না কেউ বাইরে থেকে দেশের ভেতরে আসতে পারবে। আর নাতো কেউ বাইরে যেতে পারবে।

রুবিনা তো খবর শুনেই কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। বেচারী কোথাও যেতে পারে না। শহরে লকডাউন চলছে। একা একা এতো বড় ফ্লাটে থাকতে সে ভয় পায়। চোর ডাকাতরা তো করোনো মানবে না। এটা রুবিনার ধারণা। আমি ফেসবুক ঘেঁটে দেখলাম যে যতটা ক্ষমতাধর এই করোনাকে ভেবেছিলাম এটা তার চেয়ে কয়েকশো গুন বেশি শক্তিশালী। কোনো দেশ বুঝি বাকি ছিল না। বড় বড় দেশের বড় বড় জনবহুল শহরগুলোর অবস্থা সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। উহান বলি কিংবা ওয়াশিংটন সব জায়গায় ভয়ংকর অবস্থা। আমাদের দেশেও করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় রুবিনার চিন্তা ও ভয় দুটোই বেড়ে যায়। USA, ব্রাজিল, ইতালি, ফ্রান্স, ভারত এরাই সবচেয়ে বড় বড় রেকর্ড গড়ে তোলে।

ফেসবুকে তো থাকাই যায় না। কত যে মর্মান্তিক ঘটনা, কত যে কান্না, কত যে মৃত্যু। গুনে শেষ করা যাবে না। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গুজব। রুবিনা ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে বলে এটা সত্য কিনা ওটা সত্যি কিনা। কোনটা বিশ্বাস করবো আর কোনটা বিশ্বাস করবো না এটা ভেবে বের করতে পারি না। দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বেই এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এতো সহজে বিষয়টা মেনে নেয়া যায়না। এরই মধ্যে আমার অফিসের ম্যানেজার থেকে শুরু করে MD. পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। অনেক মানুষ মারা যায়।

এমন অবস্থায় আমার এক বন্ধুর ছেলে ফোন করলো। জানালো সে খুব অসুস্থ। দেখা করতে চান। সে আমার এপার্টম্যান্টের 4floor এ থাকে। আমি আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ওর সাথে দেখা করতে যাই। দেখি সে ভালো ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। তাই আমার তেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি না থাকায় ওকে সাহায্য করতে রাজি হলাম। ওকে সিটি হসপিটালে নিয়ে গেলাম। যেখানে তিন মাস আগে আমি ছিলাম। আমি PPE পড়ে সেখানে যাই। তাই আমাকে দেখতে অনেকটা নার্স বা সেবাকর্মীদের মতো লাগছিলো। আমি কাউন্টারের সামনে আসতেই D. Anny এর সাথে দেখা হয়। ওনাকে চেনা সহজ নয়।

তবে ওনার ব্যাচ দেখে চিনতে পেরেছি। ওনার সাথে কথা বলার পর উনি আমাকে চিনতে পারেন। প্রাথমিক আলাপচারিতার একপর্যায়ে আমি Hu সম্পর্কে ওনাকে প্রশ্ন করি,
--তো Miss Hu কে দেখছি না যে......
--সুস্থ থাকলে তখন না দেখতে পাবে।
--(বিস্মিত হয়ে) কী বললেন আপনি, তাহলে কি....
--(ভেজা কন্ঠে) Hu করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তিন দিন আগে শনাক্ত করা হয়েছে। এখন ICU তে আছে।
--(ভয় ও জরতার সাথে) অবস্থা কি বেশি খারাপ?
--(দীর্ঘশ্বাস ফেলে) মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করবেন যেন সুস্থ হয়ে ওঠে। প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা যায়নি। কিন্তু দেহে ভাইরাস পাওয়া গেছে।
--(আগ্রহ নিয়ে) আমি কি একবার Miss Hu এর সাথে দেখা করতে পারি?
--(উত্তেজিত হয়ে) আপনার মাথা ঠিক আছে? করোনা ওয়ার্ডে কোনো বাইরের মানুষ ঢুকতে পারে না। আপনি ভেতরে যাবার কথা একদম ভাববেন না।
--আপনি আমাকে সাহায্য করুন প্লিজ।
--এটা সম্ভব না। আমি আপনার জীবনের ঝুঁকি নিতে পারি না। এটা ক্রাইম।
--আমি শুধু ওকে একবার দেখতে চাই।
--এটা কিভাবে সম্ভব?
--আপনি সাহায্য করলে অবশ্যই সম্ভব। আমি শুধু দুর থেকে ওকে দেখবো। শুধু একবার। এ বিষয়টা শুধু আপনার আর আমার মধ্যে থাকবে। আমি কাউকেই বলবো না। প্লিজ Miss. Help Me.
--ও সুস্থ হলেই তো আপনি দেখতে পাবেন।
--(আশঙ্কা নিয়ে) আর যদি সুস্থ না হয়....
--এমনটা কেন ভাবছেন?
--জানিনা। তবে মন মানছে না। আমি যদি ওকে দেখে না যাই আমার সারা জীবন আফসোস থাকবে। আমি অনুরোধ করছি আপনাকে। Please Miss Anny. আমাকে HU এর কাছে নিয়ে যান।
--(চিন্তা ভাবনা করে) ঠিক আছে। চলুন।
--(খুশি হয়ে) অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
--কিন্তু পাঁচ মিনিটের জন্য। এর চেয়ে বেশি সময় সম্ভব না। বুঝতে পারছেন আপনি?
--জি আচ্ছা।
--আপনি অপেক্ষা করুন। আমি আপনার জন্য একটা হ্যামলেট নিয়ে আসছি।

আমি হ্যামলেট সহ ICU এর সামনে গেলাম। সারি সারি বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে সবাই। ICU এর কাচের দরজা বরাবর বেডে HU শুয়ে আছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক, ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে। আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছি।
নিজের অজান্তেই হাজার হাজার আবেগ পানি হয়ে ঝরছে। আমি থামাতে পারছি না। একটা অচেনা ব্যথা আমার বুকের ভেতর ঝড় তুলছে। যেন আপন কাউকে হারাতে যাচ্ছি। ব্যথাটা সহ্য হচ্ছে না।

কিছুদিন আগে একটা কবিতা পড়েছিলাম। কবিতাটার নাম "ভালোবাসা ছড়ায় না"।যদিও আমি লাইন গুলো ঠিক মতো মনে রাখতে পারিনি। তবুও বলছি। কিছুটা এরকম ছিল.....

ভালোবাসা ছড়ায় না

উহান ফেরত স্ত্রী বসে আছে
হাতে তার হলুদ গোলাপ।
বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
প্রিয়তমাকে ছুঁতে পারি না।
জড়িয়ে ধরতে পারি না।
পারি না চুমু খেতে।

--------- ---------- ----------
--------- ---------- ----------

মানুষে মানুষে করোনা ছড়ায়।
ভালোবাসা ছড়ায় না।

আমার ক্ষেত্রে কবিতাটা হবে,

কোনো এক অচেনা বিকেলে
অতি চেনা কাউকে দেখা।
বিছানায় শুয়ে আছে মৃত্যুঝুঁকির সাথে।
বাইরে দাঁড়িয়ে আমি।

কাছে যেতে পারি না।
আদর করতে পারি না।
আবেগ ভর্তি ভালোবাসা
তার হাতে তুলে দিতে পারি না।

মানুষে মানুষে করোনা ছড়ায়।
ভালোবাসা ছড়ায় না।

আল্লাহ সাক্ষী, আমি ফেরার পর একটুও শান্তি পাইনি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো অজুহাত দেখিয়ে হসপিটালে যাওয়ার ব্যবস্থা করতাম। প্রয়োজনে Miss Anny কেও ফোন করতাম। আমার কি যে কষ্ট হতো বলে বোঝাতে পারব না। বুকের মধ্যে অদ্ভুত একটা ব্যথা শুরু হতো। চিনচিন করে ব্যথাটা বেড়ে যেত। আর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হতো। রুবিনা নিজেও আমার মতো চিন্তিত ছিল। যেন আমাদের আপন কেউ অসুস্থ হয়েছে।

সত্যি কথা বলতে কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের বড় আপন হয়। বড় কাছের মানুষ। এরা দুরে চলে গেলেই বোঝা যায় আমাদের জীবনে এদের গুরুত্ব কত বেশি। আমি আসলে ওকে বলতে চেয়েছিলাম যে আমার খুব ইচ্ছা ও আমাকে একবার বাবা বলে ডাকুক। আমি ওর মুখে বাবা ডাকটা শুনতে চেয়েছি। হ্যাঁ।। সত্যি বলছি।
ওকে কেন যেন আমার নিজের মেয়ের মতোই লাগতো। ও আমার সেবাযত্ন সেভাবেই করতো যেভাবে একজন মেয়ে তার অসুস্থ বাবার সেবা করে। তার জ্বর মাপে। ওষুধ খাইয়ে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সেবা সবাই করে। কিন্তু সবাই ভালোবাসে না।

বন্ধুর ছেলেকে আনতে যখন সেখানে গেলাম তখন জানতে পারি গত রাতেই Hu মারা গেছে। শোনার পর আমি কিছুক্ষণ চুপ ছিলাম। বোঝার চেষ্টা করছিলাম আসলে কতটুকু সত্য কথা শুনলাম। পুরোপুরি সত্য ছিল। এটাই ভাগ্য। আমি সামনের পার্কে বসে অনেকক্ষণ কান্না করলাম। এজন্য নয় যে ও মারা গেছে। এজন্য কারণ আমি আসার কিছুক্ষণ আগেই বডিটা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কতটা মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ধর্ম, দেশ, জাতি, পেশা, কোনো কিছু বিচার করা বা বাছাই করার সুযোগ নেই।

সংক্রামক রোধে হাজার হাজার মানুষের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এটাই আমাকে সবচেয়ে কষ্ট দিয়েছে। আমি ওকে বলতে চেয়েছিলাম, যেওনা লক্ষি মেয়ে। তোমাকে অনেক আদর দেবো। আমার অন্তরের আকাশে মেঘ হয়ে জমে থাকা জমানো আদর। শুধু তোমাকেই দেবো। সেদিন ICU এর কাঁচের অস্বচ্ছ দরজায় দাঁড়িয়ে মনে মনে ওকে বলছিলাম,
"হার মানবে না। লড়াই করো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকলাম। তোমাকে লড়াই করতে হবে। আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসা দেবো। উষ্ণ আদর তোমার কপালে মেখে দেবো। লড়াই করতে থাকো মামুনি। লক্ষি মেয়ে "

ওকে দেখার পর আমার HU এর বাবা হতে মন চাইতো। আমি চৌদ্দ বছর পর আবার বাবা ডাক শোনার জন্য ছটফট করতে লাগলাম। আমাদের প্রথম সন্তান মারা যাওয়ার পর রুবিনা শুধু তার বোনের ছেলে ইয়াসিনের দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছে। আর আমি রুবিনার দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু এই ঘটনার পর আবারো সন্তান হারানোর বেদনা অনুভব করি। আমার মেয়ে যখন জন্ম নিল তখন ডাক্তার বললো যে ও বাঁচবে না। যতক্ষণ বেঁচে থাকবে আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচে থাকবে। ওকে বাঁচাতে পারবো না। কোনো আশা নেই।

রুবিনা আম্মার বুকে আছড়ে পড়ে কান্না করছে। এ যন্ত্রণা সহ্য করা কঠিন। আমার মেয়ে আমার কোলে শুয়ে মারা যায়। আমি আমার এই দুটো হাতেই ওকে কবরে রেখে আসি। রুবিনা সেদিন আমাকে ধরে অনেক কান্না করে। আমি নিজেও অনেক কান্না করি। এরপর আমাদের জীবনে কোনো সন্তান আসেনি। Hu সেই ব্যথা আবার বাড়িয়ে দিলো। ওকে কত কিছু বলার ছিল। ওর সাথে কত গল্প করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সব ইচ্ছাতো পূরণ করা সম্ভব না।

আমার জানা নেই কবে করোনা এই পৃথিবী থেকে চলে যাবে। কবে আবার সবকিছু সাভাবিক হবে। কিন্তু এই মৃত্যু মিছিল সহজে শেষ হবে না। আমার মতো এমন অনেক বাবাই সন্তান হারাবে। প্রতিনিয়ত এমন হাজার হাজার Hu রা বাবাকে ছেড়ে চিরতরে হারিয়ে যাবে। আমার মতো হাজার হাজার বাবারা তাদের জমানো আদর মেয়েকে দিতে পারবে না। বলতে পারবে না যে মামুনি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার হাসি আমার বেঁচে থাকার শক্তি। তুমি আমার জন্য সবচেয়ে বড় পুরষ্কার। তোমার জন্য অনেক অনেক আদর জমিয়ে রেখেছি বাবা। তোমাকে আমার জমানো আদর দিয়ে ভরিয়ে তুলবো। উষ্ণ জমানো আদর। শুধু তোমার জন্য।

#উৎসর্গ : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এমন সাহসী সকল সেবাকর্মীদের জন্য।

Want your public figure to be the top-listed Public Figure in Narayanganj?
Click here to claim your Sponsored Listing.

Category

Website

Address

Narayanganj