It Hasib Hriday
�▁▂▃▄☾ ♛H ♛ ☽▄▃▂▁�
আলহামদুলিল্লাহ
গল্প: অসতী বউ
লেখক: জাহিদুল ইসলাম
পর্ব: ২ (শেষ পর্ব)
- ছিঃ ঝিনুক ছিঃ। এতটা নিচে নামতে পারলে তুমি?
জাহিদের কথা শুনে অনবরত কান্না করে চলছে ঝিনুক । কি উত্তরদিবে সেটা ভেবে পাচ্ছিলো না ও। ঝিনুক জানে যে ও অনেক বড় পাপ করে ফেলেছে।
- আমাকে ক্ষমা করে দাও জাহিদ। এ ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলোনা।
- কিসের উপায়?
- অফিসের বস আমাকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করতো যদিনা আমি তার সাথে...
- ব্যাছ, অনেক হয়েছে। এইবার থামো। তোর চেহারা দেখতে আমার ঘৃনা করছে। একটা নষ্টা মেয়ে ছিঃ। তুই এই মুহুর্তে চলে যাবি আমার বাড়ি থেকে।
- জাহিদ আমাকে ভুল বুঝনা প্লিজ। বিশ্বাস করো, চাকরিটা বাচাতে হলে এ ছাড়া কোনো পথই ছিলোনা আমার কাছে।
- কেনো ? তুই বিষয়টা আমার সাথে শেয়ার করলি না কেনো? আরে মান সম্মান, ইজ্জতের চেয়ে কি চাকরি বড়?
ঝিনুক দৌড়ে এসে জাহিদের পায়ে পড়ে যায়। অনেক কান্নাকাটি করে। অনেক ক্ষমা চায়। কিন্তু কোনোরকমেই জাহিদের মন গলেনা। গলারও কথা নয়। এইটা যেই সেই ভুল নয়। নিজের আত্মসম্মান নিয়ে খেলা করা। জাহিদ ঝিনুক কে একটা লাথি মারে।
- এর পর কোনোদিন যেনো তুই আমার সামনে আসিস না। আমি তোকে তালাক দিলাম।
তালাকের কথা শুনে ঝিনুকের মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়লো। উচিত একটা কাজ করেছে জাহিদ। এ ছাড়া কোনো উপায় জাহিদের ও ছিলো না। তাই ও ঝিনুক কে তালাক দিয়ে দেয়। তালাকের কথা বলে ধপাস করে বসে পড়ে জাহিদ । ভাবতে থাকে সেদিনের কথা, যেদিন জাহিদের এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। আসুন জেনে নেই সেই কাহিনি।
বিয়ের ৫ দিন পর সকাল বেলা ..
- ঝিনুক, এই ঝিনুক । কোথায় গেলে। আমি তো অফিসে যাবো।এইদিকে একটু আসোনা প্লিজ।
- আসছি...একটু দাড়াও।
- আমার অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে তো। তাড়াতাড়ি করো।
- কি হয়েছে ? এত চেচামেচি কি জন্য?
- আমার শার্টের বোতাম লাগাবে কে? টাই বেধে দিবে কে?
ঝিনুক জাহিদের শার্টের বোতাম একটা একটা করে লাগিয়ে দিলো। জাহিদ এক পলকে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে রইলো। বোতাম লাগানো শেষে জাহিদ ঝিনুকের কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে অফিসের পথে রওনা হলো। দুপুর বেলা হাসপাতাল থেকে ফোন আসলো জাহিদ এক্সিডেন্ট করেছে এবং উনার একটা পা ভেঙ্গে গেছে। ঝিনুক আর জাহিদের মা সেখানে দ্রুত পৌছায়।
- কি করে এমন হলো?(ঝিনুক)
- এ কিছু না। ঠিক হয়ে যাবে। গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা মাইক্রো এসে আমাকে ধাক্কা মারে। ধাক্কাটা পায়ে লাগে। (জাহিদ)
- দেখে চলতে পারলি না? আজকে যদি তোর কিছু একটা হয়ে যেতো?(জাহিদের মা)
- মা, তুমি এত ভেঙ্গে পড়ছো কেনো? আমি কি ইচ্ছে করে এমনটা করেছি? সব ঠিক হয়ে যাবে ।
একসপ্তাহ পরে জাহিদকে হাসপাতাল থেকে বাসাতে আনা হয়। পরদিন সকাল বেলা জাহিদের নামে একটা নোটিশ আসে যে তার চাকরিটা চলে যাবে যদিনা সে কালকের মধ্যে অফিসে জয়েন করে। জাহিদ অনেক চেষ্টা করে, স্যারদের সাথে যোগাযোগ ও করে, কিন্তু কোনোকিছুতেই রক্ষা করতে পারেনা চাকরিটা । এদিকে সংসার যখন অনেকটা অভাব অনটনের মধ্যে পড়ে যায়, তখন ঝিনুক সিদ্ধান্ত নেয় কিছু একটা করতে হবে।
- জাহিদ , আমি একটা চাকরিতে জয়েন করতে চাই। মাসে ১৫ হাজার টাকা মাইনে।
- ঝিনুক তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? তোমাকে কেনো চাকরি করতে হবে? আমি আগে সুস্থ হয়ে নিই। একটা চাকরি চলে গেছে তো কি? আরো চেষ্টা করবো।
- কিন্তু সে পর্যন্ত কেমনে সংসার চলবে? তুমি আমাকে মানা করোনা প্লিজ।
জাহিদ আর কিছু বলতে পারলোনা। মনে মনে ভাবলো এখন পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব বিপর্যয়। এই মুহুর্তে যদি ঝিনুক সংসারের হাল ধরে এতে ক্ষতি কি? যেহেতু জাহিদের চাকরিটাও চলে গেছে। তাই সবকিছু ভেবে চিন্তে জাহিদ ঝিনুক কে অনুমতি দেয়।
- কি ব্যাপার? তুই এখনো এই বাড়ি থেকে যাসনি? নাকি তোকে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো?
ঝিনুক নিস্তদ্ধ হয়ে গেলো। চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নাই ওর হাতে। ঝিনুক চলে আসতে লাগলো। জাহিদ ভাবতে লাগলো তাদের বিয়ের ১৫ দিন আগের কথা..
- ঝিনুক , ধরো কখনো যদি আমার চাকরিটা চলে যায়, আমার পরিবার নিয়ে চলা খুব কঠিন হয়ে পড়ে তখন কি করবে তুমি?
- তুমি যা খাবে আমিও তাই খেয়ে বেচে থাকবো। একটা কাপড়ে বছর পাড়ি দিয়ে দিবো। তবুও আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবোনা।
সেদিনের এই কথায় অনেকটা বেশিই বিশ্বাস করে ফেলেছিলো ঝিনুককে।
জাহিদ সেগুলো ভাবতে ভাবতে কাদঁতে লাগলো। নিয়তি হয়তো তাকে আজকে এই পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে।
৭ মাস পর....
জাহিদ নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে ২ মাস হলো। ছুটির দিন। বাসায় বসে বই পড়ছিলো তখনই একটা চিঠি আসলো । চিঠিটা খুলে জাহিদ দেখলো ঝিনুকের দেয়া চিঠি। প্রথমত অনেক রাগ হওয়া সত্বেও জাহিদ চিঠিটি খুলে পড়ে। লেখাগুলো এই রকম ছিলো..
"এই চিঠিটা তুমি যখন হাতে নিবে হয়তো তখন আমি এই পৃথিবীতে থাকবো না। আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। একটু পরে আমাকে সিজার করানো হবে। বিশ্বাস করো জাহিদ, আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। হ্যা আমি দোষ করেছি। সেটা আমাদের পরিবারের জন্যই করেছি। কিন্তু আমি পরে আমার ভুল বুঝতে পারি। আমি জানি তুমি আমাকে মেনে নিবেনা। ডাক্তার বলেছে যে কোনো একজন কে বাচাতে পারবে। আমাকে নয়তো আমার পেটের সন্তানকে। বিশ্বাস করো এই সন্তান তোমারি সন্তান। না হলে তুমি ডিএনএ টেস্ট করাতে পারো। আমি অসতী। কিন্তু আমার পেটের সন্তান যেটার জন্মদাতা পিতা তুমি। তুমি ওকে খুব আদরে রাখবে। কোনোদিনও মায়ের অভাব বুঝতে দিবেনা।
প্লিজ..তোমার কাছে হাতজোড় করে বলছি বাচ্চাটাকে তুমি নিয়ে যেও।
ইতি...
তোমার অসতী বউ
ঝিনুক
লেখাগুলো পড়ে জাহিদ পাগলের মতো হয়ে গেলো। যখন ও হাসপাতালে পৌছাল তখন ঝিনুকের লাশ মর্গে পাঠানো হচ্ছে। বেডে একটা শিশু কান্না করছে। শিশুটার কাছে কেউ নেই। ঝিনুকের বাবা মা তাদের মেয়ের লাশ নিয়ে ব্যাস্ত। জাহিদ মেয়েটাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসে।
তার ৫ বছর পর...
- বাবা.. ও বাবা.. আম্মু কোথায় গো? সবার তো আম্মু আছে..আমার কি আম্মু নেই? (জেমি)
- না মামনি, তোমার আম্মু অনেক আগেই চলে গেছে।
- কোথায় চলে গেছে?
- না ফেরার দেশে..
- কেনো চলে গেছে?
জাহিদের মুখ আটকে গেলো। এইটুকু বাচ্চা মেয়ের মুখে এইরকম প্রশ্নের উত্তর জাহিদ কেমনে দিবে? পারবে কি সত্যিটা বলতে?
(সমাপ্ত)
গল্প: অসতী বউ
লেখক: জাহিদুল ইসলাম
পর্ব: ১
" তোর বউয়ের নাভির নিচে তিলটা অনেক সুন্দর। "
রাসেলের মুখে এইরকম কথা শুনে পুরো শরীর কেপে উঠলো জাহিদের। নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছেনা ও। এসব কি বলছে রাসেল? আমি কি স্বপ্ন দেখছি?বেস্টফ্রেন্ড হয়ে এই ধরনের কথাবার্তা? এইসব ভাবতে ভাবতে জাহিদ রাসেলকে বলে উঠলো....
- কি বলছিস এসব তুই? ঝিনুকের নাভির নিচে তিল আছে এটা কেমনে জানলি তুই?
- না জানার কি আছে বন্ধু? এটা এখন শুধু আমি নয় পুরো পৃথিবীর মানুষ জানবে।
- রাসেল, এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।কি বলতে চাচ্ছিস তুই ?
- তেমন কিছুনা। তবে নিজের বউকে দিয়ে এইরকম যৌনব্যবসা না করালেই পারতি..কত টাকা লাগবে তোর আমি দিতাম।
জাহিদ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলোনা। রাসেলের শার্টের কলার চেপে ধরলো। রাগে ফুসফুস করছে জাহিদ। মনে হচ্ছে রাসেলকে এই মুহুর্তে খুন করে ফেলবে।
- মুখ সামলে কথা বলবি। আজকে তুই আমার বন্ধু বলে ছেড়ে দিলাম। অন্যকেউ হলে এখানে মেরে পুতে রেখে দিতাম। আমার ঝিনুকের সম্পর্কে এতটা বাজে কথা বলতে তোর একটুও আত্মা কাঁপলো না?
জাহিদ স্পষ্ট লক্ষ করলো রাসেল কাঁদছে। রাসেলের চোখ দিয়ে টপ টপ করে বৃষ্টির ফোটার মতো পানি ঝরছে। এই অবস্থা দেখে আরো কৌতুহল হয়ে উঠলো।
- কি হয়েছে রাসেল? প্লিজ বলবি কিছু ?
- এখন রাত কয়টা বাজে? আর ঝিনুক কোথায়?
- ঝিনুক এখন অফিসে । আর এখন তো রাত প্রায় ১১ টার কাছাকাছি।
- এত রাত করে ও অফিস থেকে ফেরে এর কারনটা কি কোনোদিন জানতে চেয়েছিলি তুই?
- হুম। একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন বলেছিলো অফিসে অনেক কাজ থাকে তাই আসতে দেরি হয়ে যায়।
- বাহ , অনেক সুন্দর। অফিসের নাম করে রাতের বেলা কি সব করে বেড়ায় জানিস তুই?
- মানে কি? তুই কি আমাকে বিষয়টা ক্লিয়ার করে বলবি?
- ঝিনুক আর ওর অফিসের বসের সাথে পর্নোভিডিও ফাস হয়েছে।
- হোয়াট?
জাহিদ অবাক হয়ে গেলো। হা করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাসেল এর দিকে। একমুহুর্তের মধ্যে সবকিছু যেনো এলোমেলো হয়ে গেলো। ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় মারলো রাসেল এর গালে। জাহিদ পাগলের মতো হয়ে যায়।
- আমাকে মেরে ফেল। কেটে ফেল। তবুও আমি কিছু বলবোনা। আমি যখন প্রথম এই ভিডিও টা দেখি , নিজের চোখকে আমিও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কিন্তু এটাই সত্য। (রাসেল)
- তোর কাছে কোনো প্রমান আছে? (অস্থিরতার সাথে রাসেলকে প্রশ্নটা করে জাহিদ ।)
- হ্যাঁ। এই দেখ ..
রাসেল ভিডিও টা চালু করে জাহিদের সামনে ধরলো। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো ঝিনুক আর ওর অফিসের বস।নিজের মুখ চেপে ধরে জাহিদ। এইসব ও কি দেখছে। এইটা দেখা আর শুনার আগে কেনো মরন হলোনা জাহিদের।
জাহিদ চিৎকার করে বলে উঠলো..
- আমি এটা বিশ্বাস করিনা। এটা হতে পারেনা। আমার ঝিনুক কখনোই এমনটা করতে পারেনা।
- এখন তো দেখলি কতটা নিচে নেমেছে ঝিনুক? ঘরে নিজের স্বামী থাকতে অন্য পরপুরুষের সাথে... না জানি আরো কত কি করেছে
- চুপ..একদম চুপ। ঝিনুক সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বললে আমি ভুলে যাবো যে তুই আমার বন্ধু। ঝিনুকের মুখে না শুনা পর্যন্ত আমি কিছুতেই আমি বিশ্বাস করবোনা। তুই চলে যা এখান থেকে।
রাসেল চলে গেলো। মনে হয় কিছু টা কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতেই এখানে এসেছিলো রাসেল। এতকিছু হওয়ার পরও জাহিদ একজনের জন্য অপেক্ষা করছে। আর সে হলো ঝিনুক । ঝিনুককে ও প্রচন্ড বিশ্বাস করে। রাসেল ভুলে ওর মোবাইলটা ফেলে রেখে চলে যায়। কিন্তু জাহিদ মোবাইলটা ধরতেই ভয় পাচ্ছিলো। হৃদপিন্ড কাপছিলো অনেক জোরে জোরে।
আসুন এই মুহুর্তে ছোটোখাটো একটা পরিচয়ে আসা যাক। মাত্র তিন মাস আগে ঝিনুককে বিয়ে করেছে জাহিদ। বিয়ের ১ মাস আগে থেকে পরিচয় ছিলো ঝিনুকের সাথে। মুলত একমাসেই ওরা একে অপরকে চেনে জানে এবং সবশেষে ভালোবেসে ফেলে। আর এই ভালোবাসার জোরেই তাদের মধ্যে বিয়েটা হয়ে যায়। জাহিদ একটা প্রাইভেট কোম্পানির ম্যানেজার পদে ৬ মাস আগে জয়েন করেছিলো। ছোটকালেই বাবাকে হারায় ও। পারিবারিক অবস্থা অতটা সচ্ছল না হওয়ায় কোনোরকমে একটা চাকরি জোগাড় করেছে। ভালো পোষ্টিং। আর চাকরিটা পাওয়ার সাথে সাথে বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগে জাহিদের মা। শেষমেষ ঝিনুককে বিয়েটা করেই ফেলে জাহিদ ।
এইরে ইতিমধ্যে ঝিনুক চলে আসছে। আসুন বাকি পরিচয় গল্পের মাঝে মাঝে দেওয়া হবে। ঝিনুক বাসায় ঢোকার সাথে সাথে জাহিদ ওর সামনে গিয়ে হাজির
- দাড়াও ঝিনুক । কোথায় ছিলে এতক্ষণ?
সররাচর এইরকম প্রশ্ন করেনা জাহিদ । কিন্তু হঠাৎ করে আজকে এইরকম প্রশ্ন করায় কিছুটা অবাক হলো ঝিনুক ।
- কোথায় ছিলাম তুমি জানোনা?
- না জানিনা। আজকে তোমাকে বলতে হবে কোথায় ছিলে তুমি? তোমার অফিস প্রতিদিন ৮:৩০ এ ছুটি হয়। আর বাসায় আসতে আসতে কেনো ১১ টা বাজে। এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে আজকে তোমাকে।
- জাহিদ তুমি ভালো করেই জানো যে আমি একটা অফিসে পরের অধীনে চাকরি করি। কতকাজ করতে হয়। আমাকে বসিয়ে রেখে তারা বেতন দেয়না।
- হা হা। প্রতিদিনই তোমার কাজ থাকে? নাকি অফিসের বসের সাথে তুমি ফস্টি নষ্টি করে বেড়াও?
- জাহিদ.. নিজের ঘরের বউ সম্পর্কে এতবাজে কথা বলতে একটুও মুখে আটকায় না তোমার?
- না আটকায় না। এইটা কি ? হ্যাঁ?
জাহিদ ঝিনুকের সামনে ভিডিও টা তুলে ধরলো। একনজর দেখেই ঝিনুক চোখ বন্ধ করে মোবাইলটা ফেলে দিলো। বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো ঝিনুক ।
- এরপরও কি আমি তোমাকে বিশ্বাস করবো ঝিনুক? নিজের চোখেই তো প্রমান দেখলে তুমি।
- বিশ্বাস ক...
- চুপ..একদম চুপ। জাস্ট সাইলেন্স। আমার তোমাকে কিছু বলার নেই ঝিনুক । যখন রাসেল আমাকে প্রথম ভিডিও টার কথা বলে, আমি ওর গালে কসে দুইটা চড় মারি। তারপর যখন ভিডিও টা চোখের সামনে ধরে তখনও আমি বিশ্বাস করিনি। আমি অস্বীকার করেছি এইটা কোনোরকমেই তুমি হতে পারোনা।
এখন তোমার কাছে আমার একটা প্রশ্ন, শুধু বলবে যে ওইটা কি সত্য নাকি মিথ্যা?
ঝিনুকের চোখের পানি গাল বেয়ে অঝোরে পড়ছিলো। হ্যাঁ আসলেই তো ওটা ঝিনুক ই। কিন্তু এই নির্মম সত্যটা কিভাবে জাহিদের সামনে স্বীকার করবে ঝিনুক? তার তো এই পৃথিবীতে বেচে থাকার কোনো অধিকার ই নেই। এইসব ভাবতে ভাবতে ঝিনুক যে উত্তরটা জাহিদকে শুনালো সেটা শুনার জন্য জাহিদ মুটেও প্রস্তুত ছিলোনা।
- হ্যাঁ। ভিডিওর ওই মেয়েটা আমিই...
চলবে
গল্প: বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু
লেখিকা: নুরুন্নাহার তিথী
পর্ব: ১৬ (শেষ পর্ব)
সাফা ঠায় বসে থেকেই বলল,
“আমি তোকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসি। তোর মা ও আমার বাবা কলিগ ছিলেন। তখন থেকেই আমার তোকে ভালো লাগে। তোর সাথে বয়সের গ্যাপ হওয়া সত্বেও তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা তারপর একসাথে চলাফেরা করা সবকিছু আমি তোর সাথে থাকার জন্য করেছি। চেয়েছিলাম ফ্রেন্ডশিপ থেকে ভালোবাসা হবে। আমি তোকে খুব ভালোবাসি আরহান।”
সাফা কথাগুলো বলা শেষ করে সেভাবেই আরহানের চোখের দিকে অবিচল চেয়ে আছে। আরহান নিজের চুল হালকা টেনে হাত দিয়ে মুখ মুছে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াসে ব্যস্ত। তারপর অস্থির স্বরে বলে,
“দেখ, আমার তোর প্রতি তেমন কোনো ফিলিংস নেই। এজ অ্যা ফ্রেন্ড ঠিক আছে কিন্তু লাইফ পার্টনার! নো ওয়ে। এতোদিনের ফ্রেন্ডশিপ আমাদের, আজ তুই এসব বলছিস। যদি লুকানো কিছুও মনের মধ্যে থাকত তবে আমি মেনে নিতাম। কিন্তু হচ্ছে না। আমি এক সেকেন্ডও বেশি ভাবতে পারছি না। সরি ইয়ার। আমি চাই না তুই দুঃখ পাস। কিন্তু আমার হাতে যা আছে তা হলো তোর থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। যাতে তুই মন থেকে এসব মুছে ফেলতে পারিস। অ্যাই অ্যাম রিয়ালি সরি।”
আরহানের মুখ নিঃসৃত প্রতিটা শব্দ সাফার হৃদয়কে অগণিত চূর্ণ করে চলেছে। চোখের কোণ জুড়ে অবিরত অশ্রধারাকে বইতে দিয়ে মলিন হেসে আরহানের চোখে চোখ রেখে বলল,
“সরি আরহান। আমি একটু বেশিই ভেবে ফেলেছিলাম। এখন থেকে নিজের চিন্তাধারাতে কন্ট্রোল রাখব। ভালো থাকিস। আর তোকে আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে না, আমিই রাখব।”
সাফা তারপর আরহানের সামনে থেকে চলে যায়। যাওয়ার আগে আরহানকে মুচকি হাসি উপহার দিয়ে যায়। সাফার যাওয়ার পানে চেয়ে আরহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে কেমন পা*ষাণের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে! একটাবারও তার মন বলল না, মেয়েটার চোখের জল মুছিয়ে দিতে। এই মূহুর্তে আরহান নিজের ভাবনা-চিন্তার উপরই ভীষণতর অবাক। এতোটা কঠোর সে তার ফ্রেন্ডের সাথে! তাও বেস্টফ্রেন্ডের সাথে! নিজের কাজেকর্মে প্রচণ্ড হতাশ ও বিরক্ত হয়ে বিপরীত দিকে হাঁটতে থাকল। একা একা ঘুরলে নিজেকে বুঝতে পারবে।
দেখতে দেখতে সময়ের ধারায় এক মাস পেরিয়ে গেছে। আরহান এমসি কলেজেই মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। অনার্স যেহেতু রসায়নবিদ্যাতে করেছিল, মাস্টার্সও সেটাতেই ভর্তি হয়েছে। আজ দ্বিতীয়দিন ভার্সিটিতে ক্লাসের জন্য এসেছে। প্রথমদিন ক্লাসের জন্য এসেছিল দুইদিন আগে। সে পাইলটের জবটা ছাড়েনি। তার ডিউটি রাতেই থাকে বেশি। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থাকলেই ক্লাস মিস হয়। আজমল খান নিজে এসে ছেলেকে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে পাইলটের জব ছাড়তে নিষেধ করে গেছেন।
ক্লাস শেষে আরহান দ্রুত দিঘীর পাড়ে নিজের বাইকের কাছে গিয়ে বাইকে উঠে চাবি ঘোরানোর পর অদূরে তীরবর্তী শাপলার জন্য ব্যাকুল হওয়া রুহানীকে দেখতে পায়। পেছনে দাঁড়ানো কাজল বারবার রুহানীকে শাপলা তুলতে নিষেধ করছে। ভরা বর্ষা। দিঘীতে শাপলার সাথে তার আশেপাশে সা*প যে থাকবে না তা ভাবাও বোকামি। রুহানী কাণ্ডকারখানা দেখে আরহান মাথায় হাত দিয়ে হেসে ওদের দিকে এগিয়ে গেল। অতঃপর পেছনে দাঁড়িয়ে রুহানীকে ডেকে বলে ওঠল,
“রুহানী, উঠে এসো।”
হঠাৎ পরিচিত পুরুষ কণ্ঠ শুনে হকচকিয়ে পেছনে ফিরে তাকায়। আরহানকে দেখে ইশারায় “আপনি এখানে?” জিজ্ঞাসা করলে আরহান জবাবে বলে,
“এখানে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি।”
রুহানী হালকা হাসি বিনিময় করে আবারও শাপলা তোলার দিকে মনোনিবেশ করতে নিলে আরহান বাধা দেয়,
“তুমি উঠে এসো। আমি তুলে দিচ্ছি। যেভাবে আছো, তাতে পরে যেতে খানিক ব্যাবধান মাত্র। তুমি উঠে এসো।”
আরহানের সাথে কাজলও তাল মিলালো।
“হ্যাঁ রুহি উঠে আয়। এভাবে করতে থাকলে শাপলা কাছে আসার বদলে আরও দূরে চলে যাবে।”
রুহানী নাছোড়বান্দা। সে ইশারায় জেদ প্রকাশ করল। রুহানীর জেদ দেখে আরহান বাধ্য হয়ে এগিয়ে গিয়ে ওকে টেনে এনে কাজলের কাছে রেখে নিজেই শাপলা তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরল। আরহানের আচানক কাণ্ডে রুহানী বিমূঢ় হয়ে চাইল। কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে আরহানকে দেখে মুচকি হাসল। ছেলেটার সাথে যতোবার দেখা হয়েছে ততোবার তার জন্য কিছু না কিছুতো করেছেই। ছেলেটা যে বড্ড কেয়ারিং তা তাকে আর কারও বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রায় মিনিট পাঁচেক কসরত করে অবশেষে আরহান এক জোড়া শাপলা তুলতে সক্ষম হয়। তারপর রুহানীর কাছে এসে লম্বাশ্বাস ফেলে বলে,
“ফাইনালি! এই নাও তোমার শাপলা। খুশি?”
ফুল দুটো হাতে পেয়ে রুহানী ভীষণ আনন্দে প্রশস্ত হেসে ঘাড় নাড়ালো।
“এভাবে দিঘীর কর্নারে যাবে না। বর্ষাকাল। শাপলার পাতার নিচে সা*প থাকে। আমি একটার লে-জ দেখেছিও! বি কেয়ারফুল। এবার বাড়িতে যাও।”
রুহানী খুশিমনে সায় দিল। সে ইশারায় ধন্যবাদও জানিয়েছে। কাজল তাড়া দিয়ে বলে ওঠে,
”হাতে তো পেয়েছিস। এবার চল। ড্রাইভার সেই কখন চলে এসেছে।”
কাজল এবার আরহানের দিকে তাকিয়ে সৌজন্য সূচক বলে,
“থ্যাংকিউ ভাইয়া, আমাদের হেল্প করার জন্য।”
“ওয়েলকাম। তোমরা এবার বাড়িতে যাও।”
রুহানী ও কাজল গাড়ির কাছে যাওয়া ধরলে আরহানও নিজের বাইকের কাছে যায়। তারপর বাইক স্টার্ট করে চলে যায়।
আজ আরহানের ডোমেস্টিক ফ্লাইট আছে। ফ্লাইটটা বিকেলেই। ক্লাস করে দ্রুত ফ্লাইটের এক ঘণ্টা আগে এসে পৌঁছেছে। এসেই খবর পেয়েছে, আজও সাফা সিডিউল চেঞ্জ করেছে। এই একমাসে এই নিয়ে তিনবার হলো। আরহানের সাথে ফ্লাইট পরলেই সে কোনো না কোনো বাহানা করে চেঞ্জ করে দেয়। বন্ধুত্বের মধ্যেও কেমন দূরত্ব এসে গেছে। আরহান তপ্তশ্বাস ফেলে রাইদার থেকে খবর নিয়ে সাফা যেখানে আছে সেখানে যায়। সাফা কাজ করছিল। আরহান পেছন থেকে গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে,
“কেন এমন করছিস সাফা?”
সাফা হাতের কাজ রেখে ঘুরে ভাবলেশহীন কণ্ঠে শুধায়,
“কী করছি?”
“বুঝতে পারছিস না? বারবার ফ্লাইটের সিডিউল কেন বদল করছিস?”
“দেখ, আমি নিজেকে অনেকটাই সামলে নিয়েছি। দুর্বলতা বাড়াতে চাই না। এছাড়া আর কিছু বলতে চাই না। প্লিজ বিরক্ত করিস না।”
সাফার কণ্ঠস্বরে এবার রূঢ়তা পরিলক্ষিত। আরহান হতাশ স্বরে বলে,
“আমি কি আমার বেস্টফ্রেন্ডকে ফেরত পাব না?”
কথাটা শুনে সাফা কয়েক সেকেন্ড পলকহীন আরহানের মুখপানে চেয়ে রইল। অতঃপর চোখের কার্নিশে জমে উঠা অশ্রুকণাকে আঙুলের সাহায্যে সরিয়ে নিয়ে বলল,
“পাবি। সময় যাক। এখন তুই যা। আমাকেও যেতে হবে।”
এই বলে সাফা নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল। আরহান চোখ বুজে ঘন নিঃশ্বাস ফেলে নিজেও চলে গেল নিজের কাজে। সাফাকে সে আর কিছু বলবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। নিজের কাজ-পড়াশোনা এসব নিয়ে ভাববে।
সময়ের ক্রমবর্ধমানে আজ ইংরেজি বর্ষপঞ্জীতে আগষ্ট মাস। বাংলা বর্ষপঞ্জীতে শ্রাবণের শেষোর্ধ। আজ আকাশ থোকে শ্রাবষ বারিধারা ঝড়ে পরছে। রুহানী টেরেসের খোলা অংশে নূপুর পায়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। তার খোলাচুলগুলো বৃষ্টির পানিতে নিজেদের ডানা লুকিয়ে চুপসে একত্রে মিশে আছে। সবুজ রঙে রাঙানো রুহানী আজ মনের অজান্তেই খুশি। আকাশও আজ পরিষ্কার। পরিষ্কার আকাশে শ্রাবণধারা মানে আকাশও তার খুশি প্রকাশ করছে।
একটু আগে আজমল খান এসেছিলেন। রহমত শেখের কাছে নিজের ছেলের জন্য রুহানীকে চেয়ে গেছেন। উনি নাকি লক্ষ্য করেছেন, আরহানা রুহানীর সাথে খুব মিশুক। রুহানীর নিরবতাও আরহানের জন্য কোনো কিছু না। আরহান প্রায়ই উনার ও আয়েশা খানমের সামনে মাঝেমধ্যেই হুট করে অন্য প্রসঙ্গের মধ্যে রুহানীর প্রসঙ্গ তুলে আনে। এতে আজমল খান ও আয়েশা খানম ভেবে নিয়েছেন, আরহান রুহানীকে পছন্দ করে। আজমল খানের এই প্রস্তাবে রহমত শেখের তো আপত্তি নেই। সে খুশি মনে রাজি হয়ে গিয়েছে।
আজমল খানি বাড়ি ফিরে আরহানকে ডেকে পাঠান। আরহান সবে ভার্সিটি থেকে ফিরেছে। আসার পথে বাইকের তেল ভরতে গিয়েছিল বলে একটু দেরি হয়েছে। আরহান তার বাবার ঘরে এসে দেখল সেখানে তার দাদীও উপস্থিত। আরহান জিজ্ঞাসা করে,
“কী ব্যাপার? তোমরা দুজনেই এখানে?”
”হ্যাঁ তোমাকে কিছু বলার আছে।”
আয়েশা খানমের কথার প্রত্যুত্তরে আরহান সায় দেয়।
“হ্যাঁ বলো।”
“রুহানীকে তোমার কেমন লাগে?”
বাবার প্রশ্নে আরহান সন্দিহান দৃষ্টিতে চাইল। তার জবাব দেওয়ার আগেই আয়েশা খানম বলে ওঠেন,
“আমরা জানি, রুহানী কথা বলতে পারে না। তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি। মাঝেমাঝেই বনিকে ও চাচিকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আমার গল্প শোনে।”
“আরে দাদী, আমি কখন বললাম যে রুহানী কথা বলতে পারে না বলে আমার প্রবলেম আছে! ও মুখে কথা না বললেও ওর মুখশ্রী কথা বলে। ওর মুখের আদলের প্রতিটা অঙ্গের যেন নিজস্ব ভাষা আছে। ওর হৃদয়ের স্বচ্ছতা এতোটা প্রাণবন্ত যে! মাঝেমধ্যেই কিছু অজানা রহস্য নিয়ে ভাবভঙ্গী প্রকাশ করে।”
আরহানের জবাব শুনে আজমল খান ও আয়েশা খানম একেঅপরের দিকে চেয়ে মুচকি হাসে। আজমল খান বলেন,
“তবে আজীবন সেই রহস্য উদঘাটন করার বন্দোবস্ত করে দেই?”
আরহান অবাক হলো। হতভম্ব, হতবিহ্বল দৃষ্টিতে নিজের বাবার দিকে চাইল। আজমল খান হালকা হেসে বলেন,
“সময় নাও। আমাদের কোনো তাড়া নেই। আমার ও তোমার দাদীর, রুহানীকে বেশ পছন্দ। তার হৃদয়ের স্বচ্ছতা আমাদেরও স্পর্শ করেছে।”
আরহান বিপরীতে কিছু বলতে পারল না। মৌন হয়েই উঠে গেল। তার হৃদয়ে কেমন এক অনুভূত হচ্ছে যার সাথে সে পরিচিত না। তৎক্ষণাৎ তার মানসপটে রুহানীর প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠল। হাস্যজ্জ্বল মেয়েটির চোখে যেন অদ্ভুত মায়া। আরহান হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির বাইরে গার্ডেনে গেল। তেজ বারিধারা এক লহমায় তাকে নিজেদের ভালোবাসায় সিক্ত করে দিয়েছে। তার বিবর্ণ বৈশাখে শ্রাবণের ছোঁয়ায় কি তবে রংধনু উঠতে শুরু করেছে?
১ম পরিচ্ছেদের সমাপ্তি
দুঃখীত পাঠক মহল। গল্পটার রহস্য কিছুটা রেখে পরিচ্ছেদে সমাপ্ত করতে হলো। তবে শিঘ্রই ২য় পরিচ্ছেদ আসবে। আপনারা কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন। ভালোবাসা পাঠকমহল।
গল্প: বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু
লেখিকা: নুরুন্নাহার তিথী
পর্ব: ১৫
আরহান তার বাবার মলিন মুখশ্রী অবলোকন করে মনে মনে হতাশ হলো। অবশেষে সে তার বাবার কথায় রাজি হয়েই গেল। আরহান নরম কণ্ঠে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি খবর নাও। আমি মাস্টার্সের জন্য এপ্লাই করব। কিন্তু এক মাস অন্তত আমাকে এসব নিয়ে ঝামেলা দেওয়া যাবে না। এক মাস পর আমি ভর্তি হবো নতুন সেসন যখন শুরু হবে তখন। এই একমাস আমার স্বপ্নের পথে উড়তে দাও।”
আরহান চলে গেলে আজমল খান মলিন দৃষ্টিতে ছেলের চলে যাওয়া দেখলেন। ছেলের কণ্ঠের বিষাদ তাকে স্পর্শ করেছে ঠিক কিন্তু সে কী করবে! একটাই ছেলে তার। তার কাজগুলোকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে ছেলেকেই তো লাগবে। আজমল খান দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের স্টাডি রুমে চলে যান।
সাফা রুম অন্ধকার করে বসে আছে। বারবার ফোনের স্ক্রিন অন করছে তারপর কিছু সময় পর আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাফার গালে অশ্রুধারার ছাঁপ। সে আপনমনে স্বগতোক্তি করে,
“কেন আরহান? কেন তুই আমায় ভালোবাসতে পারিস না? জাস্ট ফ্রেন্ডই ভেবে গেলি। আমি যে রাগ করে চলে এসেছি। একটা বারও কল করে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন বোধ করলি না? এতোটাই বিরিক্তিকর আমি? আমি যে দিন-রাত তোরই কথা ভাবি! একটু তো ভালোবেসে দেখ, আমি তোক তার তিনগুণ ফিরিয়ে দিব।”
আবারও নিরব কান্নায় ভেঙে পরে সে। কতোসময় এভাবে কাঁদল তার হিসেব নেই। তারপর রাত এগারোটার দিকে মায়ের ডাকে রুমের আলো জ্বালিয়ে হাত-মুখ ধোঁয়। সে কয়েকটা দিন ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসার কথা ভাবল।
আরও কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেছে। রুহানী প্রতিদিন ক্লাসে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্লাসের সবাই জেনে গেছে রুহানী কথা বলতে পারে না। প্রিন্সিপ্যাল স্যার নিজে এসে বলে গেছেন, যাতে রুহানীর সাথে কেউ কোনো খারাপ আচরণ না করে। রুহানীর সাথে একটা মেয়ের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। মেয়েটা রুহানীদের এড়িয়াতেই থাকে। মেয়েটা রুহানীর সাথেই ক্লাসে যায়। নাম তার কাজল।
আজ প্রচণ্ড গরম। প্রখর রোদের জন্য হাতের চামড়া পু*ড়ে যাওয়ার দশা! রুহানীর গাড়ি আজকে আগে আগে আসেনি। গাড়ির জন্য সে পাঁচ মিনিট যাবত কলেজের গেইটে অপেক্ষা করছে। সাথে কাজলও আছে। হঠাৎ পাশ থেকে গুটিকতক ছেলে রুহানীদের উদ্দেশ্যে বাক্য ছুড়ল,
“কী সুন্দরীরা? এই রোদের মধ্যে দাঁড়ায় আছো কেন?”(সিলেটি ভাষাকে বোঝার জন্য এভাবে লেখা)
রুহানী ও কাজল দুইজনেই বেশ ভয় পেয়ে যায়। কাজল এদেরকে চিনলেও রুহানী চিনে না। ওরা দুজনে সামনের দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু ছেলেগুলো আবারও ডেকে ওঠল,
“ও সুন্দরীরা, এদিকে আসো। কতক্ষণ রোদের মধ্যে দাঁড়ায় থাকবা? আসো তোমাদের পৌঁছে দেই।”
রুহানী কেঁপে ওঠে। এক হাতে কাজলের হাত শক্ত করে ধরে রেখে আরেক হাতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ড্রাইভার কতোদূর এলো জানতে কল করে কাজলের কানে দিল। কাজল ড্রাইভারের সাথে কথা বলে জানল আর দুই মিনিটের মতো লাগবে। রুহানী ও কাজল শুনতে পেল ছেলেগুলোর হাসি-তামাশা। দুইটা মিনিট কোনোরকমে পেরিয়ে গেলেই বাঁচে।
একটু পরেই ড্রাইভার এসে হাজির হলে রুহানীরা দ্রুত গাড়িতে উঠে পরে। গাড়িতে উঠে কাজল ভীত কণ্ঠে বলে,
“ওরা কিন্তু পিছু ছাড়বে না রুহি! আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র আপুর পেছনে হাত ধুঁয়ে পরেছিল। অনেক জ্বা*লিয়েছে। আমি তো এই কলেজ থেকেই এইচএসসি দিয়েছি তাই দেখেছি। তারপর ওদেরকে কয়েক মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছিল। এখন তোর পেছনে পরেছে। সময় থাকতে আংকেলকে বলিস। তাহলে উনি অথারিটির সাথে কথা বলে রাখবে।”
রুহানী মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল। তারপর কাজলকে কাজলের বাড়ির রাস্তায় ছেড়ে রুহানী গাড়িতে করে চলে গেল।
ফ্লাইটের আগে আরহান প্লেনের কাছে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে সাফাকে দেখে বেশ খুশি হলো। সে জিজ্ঞাসা করল,
“কী-রে? এতোদিন কোথায় ছিলি? ফোন করেছিলাম পাইনি। ওরা কেউই তোকে ফোনে পায়নি বলল। কী হয়েছিল?”
সাফা কয়েক সেকেন্ড পলক না ফেলে আরহানের দিকে চেয়ে রইল। আরহান ওর চোখের সামনে হাত নাড়ালে সাফার মুখাবয়বে কোনো পরিবর্তন লক্ষণীয় হলো না। কেমন ভাবলেশহীন মনোভাব তার।
আরহান আবার শুধায়,
“ঠিক আছিস তুই?”
“তা জেনে তুই কী করবি? আমার ফোন নট রিচেবল ছিল বলে কি একবারও আমার বাসায় গিয়ে খোঁজ নিয়েছিলি? নিসনি তো। রাইদা, তন্নি, রাফাত তো গিয়েছিল। আমি না থাকলেও মা ছিল। মা বলেছে।”
সাফার বলার পর আরহান বলে,
“ওরা তো গিয়েছে। তা শুনেছি। ওরা গিয়ে তোকে পায়নি। তোর অনুপুস্থিতিতে ওরা যাওয়া আর আমার যাওয়া তো একই কথা। তাই না?”
“হু।”
সাফা ছোটো করে জবাব দিয়ে চুপ করে গেল। আরহান তাকে ফ্রেন্ডের বাহিরে একটা শব্দও বেশি ভাবে না তা তার ধারনাতে চলে এসেছে। নিকষ কালো অম্বরে নিজের বিষাদময় নিঃশ্বাস ত্যগ করে মৌন রইল। যথাসময়ে দুজনে একই প্লেনে উঠার পর আরহান লক্ষ্য করল সাফা কেমন চুপচাপ হয়ে আছে। আরহান ভাবল, হয়তো রাগ করে আছে। তাই সাফাকে ডেকে বলল,
“দেখ, বাদ দে সেসব। আমার কাজ ছিল তাই যেতে পারিনি। এখন মন খারাপ করে থাকিস না।”
“হুম।”
ফ্লাইটের সময় হয়ে গেলে সকল ঘোষনা শেষে ওরা লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা করে।
এগারো ঘণ্টা পর লন্ডন পৌঁছেছে আরহানরা। সবসময়ের মতো রেস্ট করতে হোটেলে নিজের রুমের চাবি নিয়ে রেস্ট করতে চলে গেছে আরহান। পেছন পেছন সাফা নিজের রুমের চাবি হাতে ধীরে ধীরে হাঁটছে। আরহান চোখের আড়াল হতেই সেও নিজের রুমে ঢুকে পরে।
পরেরদিন সকালে আরহানের বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙলো। উঠেই ফোনে সময় দেখে সাফার কোনো কল বা মেসেজ না দেখে বেশ অবাক হয়েছে। সাফার তো স্বভাব এটা। আরহান ভাবনা-চিন্তা রেখে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে রুম লক করে বাইরে বেরোলো। হোটেল রিসিপশন থেকে জানতে পারল যে সাফা অনেক আগেই বেরিয়েছে। হঠাৎ সাফার ব্যাবহার আরহানের কাছে বেশ একটা সুবিধার লাগছে না। সেও সাফাকে খুঁজতে বের হলো।
বিকেলে রুহানী টেরেসে বসে প্র্যাকটিকেল খাতায় চিত্র আঁকছে। আর অদূরে বনি খেলছে। জাহানারা শেখ পাকোড়ার প্লেট হাতে রুহানীর পাশে এসে বসল। তিনি বললেন,
“নিজে আজমল ভাই এসেছেন।”
রুহানী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইলে জাহানারা শেখ জবাব দেন,
“ওই কিছু কাজে। কথায় কথায় বললেন, তার ছেলে নাকি মাস্টার্সে ভর্তি হবে। পাইলটের জব ছেড়ে দিবে।”
রুহানী ইশারায় কারণ জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসে,
“বলেছে বাড়িতে তারা দুইজন থাকে। আর কতো ছেলে দেশ-বিদেশে ঘুরে বোরাবে? ছেলের বিয়ের কথাও ভাবছেন।”
রুহানী শেষোক্ত কথায় কিছু সময় নীরব চেয়ে থেকে আবারও নিজের কাজে মন দেয়। জাহানারা শেখ ওকে পাকোড়া খেতে বলে চলে যান।
আরহান সেই কাঙ্খিত জায়গাতেই সাফাকে পেয়ে গেল। লন্ডন টাওয়ারের পাশে টেমস নদীর তীরে বসে আছে সে। আরহান গিয়ে ওর পাশে বসে তাতেও সাফার কোনো হেলদোল নেই। কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আরহান নিজ থেকেই জিজ্ঞাসা করল,
“কী হয়েছে তোর? আজকে আমাকে না ডেকে একা একা বেরিয়েছিস?”
সাফা এবার আরহানের দিকে ঘুরে বসল। অতঃপর আরহানের হাত দুটো ধরলো। আরহান একবার সাফার দিকে তাকায় তো একবার ধরে থাকা হাতের দিকে। সাফা কিছুটা সময় মৌন থেকে তারপর হুট করে বলে ওঠে,
“আই লাভ ইউ আরহান!”
সাফার কথা শুনে আরহান যেন আকাশ থেকে পড়ল! চট করে সাফার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। কন্ঠে একরাশ বিস্ময় নিয়ে শুধালো,
“মানে!”
চলবে
গল্প: বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু
লেখিকা: নুরুন্নাহার তিথী
পর্ব: ১৪
পরিচিত মেয়েলি কণ্ঠে নিজের নাম শুনে সদর দরজার দিকে চেয়ে আরহান উৎফুল্ল স্বরে বলে ওঠে,
“আরে তোরা?”
“হ্যাঁ আমরা। কেন খুশি হোসনি?”
মেয়েটির কণ্ঠে অভিমান। আরহান ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“খুশি হব না কেন? তোরা আমার বাড়িতে যে কোন সময় আসতে পারিস। আমি সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি তাই জিজ্ঞাসা করেছি। ভেতরে আয়।”
সাফা, রাফাত, তন্নিরা ভেতরে এসে আয়েশা খানমকে সালাম দেন। আয়েশা খানম হাসি মুখে বলেন,
“কেমন আছো তোমরা?”
“এইতো দাদী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
সাফার স্বতঃস্ফূর্ত জবাবে আয়েশা খানম মুচকি হাসেন। অতঃপর বলেন,
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বসো তোমরা।”
ওদেরকে বসতে বলে আয়েশা খানম রান্নাঘরের দিকে গেলেন সার্ভেন্টকে বলতে। এদিকে সাফা ঘুর ঘুর নজরে রুহানীকে দেখছে। সে বলে ওঠে,
“হাই আমি সাফা। সাফা ইসলাম। তুমি?”
সাফার কথার বিপরীতে রুহানী মুচকি হাসে। আরহান বলে ওঠে,
“ওর নাম রুহানী।”
“তোকে জিজ্ঞাসা করেছি? তুই কেন বলছিস? ওর নাম ও বলুক।”
কথাটা সাফা ভ্রুকুটি করেই বলল। আরহান জবাব দেয়,
“ও কথা বলতে পারে না।”
আরহানের মুখ থেকে রুহানীর সত্যটা শুনে সাফার কুঁচকানো ভ্রুঁ শিথিল হলো। সে নরম স্বরে বলল,
“সরি।”
রুহানী প্রতিবারের মতো একই প্রতিক্রিয়া দেখাল।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই রুহানী সোফায় বসে আছে তখন পায়ের কাছে কেউ নড়াচড়া করছে। পায়ে সুরসুরি অনুভূত করায় মাথা নুইয়ে দেখে বাচ্চা খোরগোশটা সোফার নিচে! রুহানীর ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে ওঠে। সে খোরগোশটাকে কোলে তুলে নিল। তারপর ওর সাথেই খেলতে লাগল।
আরহান তার বন্ধুদের জন্য কফি করে নিয়ে বাগানে যাচ্ছিল তখন রুহানীকে দেখে। সে রান্নাঘরে ফিরে গিয়ে ঝটপট ফ্ল্যাক্স থেকে গরম পানি, গুড়ো দুধ, চিনি, কফি পাউডার নিয়ে আরেক মগ কফি বানিয়ে ট্রে সহ ধীর পায়ে রুহানীর দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে বনিকে রুহানীর কোলে দেখে কিছুটা অবাক হলো। বনি তার সাথে রান্নাঘরে ছিল। ভেবেছে খেলছে কিন্তু সে দেখি রুহানীর কাছে চলে এসেছে! আরহান মুচকি হেসে বলল,
“মনে হচ্ছে বনির তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তোমার কাছেই বারবার চলে আসছে।”
রুহানী মিষ্টি হেসে আরহানের দিকে একবার নজর বুলিয়ে বনির গায়ে হাত বুলাতে থাকে। আরহান এবার ওকে কফির অফার করে।
“চলো আমাদের সাথে কফি আড্ডায় যোগ দাও।”
কথাটা শুনে রুহানী প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালে আরহান হেসে বলে,
“চলো তো। বেশ মজা হবে। আমার ফ্রেন্ডগুলো যা ব*দ*মা*শ!”
রুহানী হালকা হেসে বনিকে নিয়ে সাথে চলল। বাগানে যেতেই রাইদা এসে আরহানের হাত থেকে ট্রেটা নিয়ে নিল। আরহানের পাশে রুহানীকে দেখে সাফার বুকের ভেতর কেমন কেমন করতে লাগল। সে নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“আসো রুহানী। আমাদের সাথে জয়েন হও।”
আরহান বলে,
“রুহানীর চাচিকে নিয়ে মনে হয় দাদী নিজের ঘরে রেস্ট করছেন। রুহানী একা বসে ছিল তাই আমাদের সাথে আসতে বললাম। বসো রুহানী। ”
রুহানী হালকা হেসে বসল। ওরা আড্ডা, হাসা-হাসি করছে। সাফা প্রচণ্ড হাসছে। সে হাসতে হাসতে আরহানের উপর বারবার পরেও যাচ্ছে। আরহান এবার মজা করেই বলে ওঠল,
“তুই একটু সোজা হয়ে বসতে জানিস না? এমন ব্যালেন্সে সমস্যা হলে প্লেন ব্যালেন্স কীভাবে করবি?”
কথাটা অন্যসব দিনের মতো সাফা সাধারণ ভাবে নিল না। তার ইগোতে লাগায় সে রাগ করে উঠে দাঁড়াল। অতঃপর বলল,
“যা আমি চলে যাচ্ছি। থাকব না এখানে। ”
সাফা সাথে সাথে গটগটিয়ে গেইটের দিকে হাঁটা ধরল। তন্নি বলে ওঠল,
“ওকে আটকা আরহান।”
“আরে বাদ দে। ওর রাগ কর্পূরের মতো। আজ বাদে কাল আবারও এমনটাই করবে। যেতে দে। আবার ঠিক হয়ে যাবে।”
কথাটা সাফাও শুনল। সে চোখ বন্ধ করে নাকের কাছে হাত দিয়ে কান্নার ধা*ক্কা আটকানোর চেষ্টা করল। অতঃপর পেছনে না ঘুরে সোজা হেঁটে গেইটের বাহিরে চলে গেল। রাফাত এবার আরহানকে বলল,
“ও এবার সত্যি সত্যি রাগ করল নাতো?”
“আরে ইয়ার, ওকে তুই চিনিস না? অতিরিক্ত আহ্লাদী। ঠিক হয়ে যাবে। তোরা কফি শেষ কর।”
আরহান নিজের মগে চুমুক দিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখল রুহানী কফি না খেয়ে গেইটের দিকেই চেয়ে আছে।
“তুমি খাচ্ছ না কেন? খাও। ওর কথা ভেবো না। কালকেই ঠিক হয়ে যাবে।”
রাইদা এতক্ষণ সবটা দেখে এবার বলল,
“দেখি কালকে। একটু পেছনে ঘুরে প্রতিবারের মতো বললও না।”
আরহান সবাইকে সাফার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে দেখে কিঞ্চিত বিরক্তি প্রকাশ করে বলে ওঠে,
“যা! তোরাও যা। আমি ঘুমাব। তোদের মতো দুঃখ প্রকাশ করতে টাইম নাই। সারাদিন বনিকে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি।”
রাফাত বলে,
“আরেহ তোরা দুটো একইরকম। এতো রাগিস কেন? তুই টায়ার্ড। রেস্ট কর।”
কিছুক্ষণ পর কফি খাওয়া শেষে টুকটাক আড্ডা শেষে আরহানের অন্য বন্ধুরাও চলে যায়। আরহান লক্ষ্য করে রুহানী বনিকে পরম যত্নে আগলে রেখেছে। আরহান বলে,
“তোমার খোরগোশ পছন্দ?”
রুহানী দৃষ্টি না সরিয়েই হ্যাঁ বোধক মাথা দুলায়।
“তাহলে আজ থেকে বনি তোমার।”
রুহানী তৎক্ষণাৎ হতভম্ব হয়ে আরহানের দিকে তাকায়। আরহান হালকা হেসে বলে,
“হ্যাঁ আমি সত্যি সত্যি বনিকে তোমায় দিচ্ছি। আমি বাসায় খুব একটা থাকি না। তখন সার্ভেন্ট ওদের খাবার দেয়। বনি এমনিতে খেতে চায় না। খুব জিদ্দি। খাবার হাত দিয়ে ধরে ধরে খাওয়াতে হয়। তুমি নিয়ে গেলে যত্নও হবে। আমি বাসায় থাকলেও ওকে খুব একটা সময় দিতে পারি না। নিবে তুমি?”
রুহানী কালক্ষেপন না করে দ্রুত সায় দেয়। আরহান বনিকে একবার কোলে নিয়ে আদর করে রুহানীর কোলে দিয়ে দেয়।
বিকেলের দিকে রুহানীরা আরহানদের বাড়ি থেকে ফিরে আসে। রুহানী নিজেই বনির জন্য নিজের ঘরেই থাকার জায়গা বানলো। যদিও জানে বনি ওখানে থাকবে না। কিন্তু সে ভীষণ খুশি।
আজমল খান আরহানকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়েছে। আরহান আসলে তিনি বলেন,
“দেখো আমি তোমার শখ মেনে নিয়েছি। ২ বছরের মতো হচ্ছে তুমি পাইলট হয়ে জয়েন করেছ। গ্রাজুয়েশনের পরেই তোমাকে বলেছিলাম মাস্টার্সের জন্য লন্ডন যাও।
কিন্তু শোনোনি। জেদ করে নিজেরটা করেছ। এবার তোমাকে শুনতে হবে। আমার শরীর আগের মতো কর্মঠ নেই যে মাঠেঘাটে দৌঁড়াব। আমি চাই তুমি এবার আমার কথাও শোনো। তুমি একজন বেটার পাইলট তা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই কিন্তু আমার ব্যবসা, রাজ*নী*তি সবকিছুরও তোমায় হাল ধরতে হবে। আমি কতোদিন বাঁচি তা তো বলতে পারি না। তোমাকে সব বুঝিয়ে যেতে চাই। তুমি এখানকার কোনো ভার্সিটি থেকে মাস্টার্সটাও করে নাও।”
আরহান মৌন হয়ে সবটা শুনল। তারপর লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“পাইলটের জবটা ছেড়ে দিব বলছ? মায়ের মৃত্যুর পর তার স্বপ্নটাকে নিজের করেছিলাম। এখন বাবারটাও?”
আজমল খান ছেলের মুখাবয়বের দিকে নির্নিমেষ চেয়ে রইলেন। আরহানের গ্রাজুয়েশনের পরপর এটা নিয়ে ঝা*মেলা হয়েছিল। এখনও কি আরহান রাজি হবে না? মনে মনে প্রতিকূল চিন্তা করেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
চলবে
গল্প: বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু
লেখিকা: নুরুন্নাহার তিথী
পর্ব: ১৩
আরহান বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ করে তার খোরগোশটার কথা মনে পড়ায় ছুটে চা বাগানে গিয়েছে। আশেপাশে বেশ কয়েকবার নাম ধরে ডেকেও খোরগোশটার কোনো পদধ্বনি পায় না। আরহান অস্থির হয়ে খুঁজছে তখন তার ফোন বেজে উঠলে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে তার দাদী ফোন করেছে। আরহান রিসিভ করে উৎকণ্ঠিত হয়ে বলে,
“দাদী, আমি একটু পরে কথা বলছি। বনিকে খুঁজে পাচ্ছি না। ওকে যে একা রেখে গিয়েছিলাম। এখন কোথায় যে গেল!”
আয়েশা খানম বলেন,
“ও তো তোর ডাক শুনলেই চলে আসে। ভালো করে খোঁজ।”
“হ্যাঁ খুঁজতেছি। তুমি নাস্তা করে নাও। আমি ওকে খুঁজতে থাকি। বায়।”
আরহান আয়েশা খানমের কল কেটে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক খোরগোশটাকে খুঁজে। অতঃপর না পেয়ে সেখানেই বসে থাকে।
রহমত শেখ বাংলোতে ফিরে রেস্ট করে এখন বেলা বারোটা বাজলে নিজের স্ত্রীকে বলেন,
“জাহানারা, রুহানী কি তৈরি হয়েছে?”
“সবে একটু আগে ঘুম থেকে উঠিয়ে এসেছি। রেডি হয়ে যাবে।”
“ওর মা*থাব্যথা কমেছে?”
জাহানারা শেখ জোরপূর্বক হেসে বলেন,
“হ্যাঁ। কমেছে। এখুনি এসে পড়বে।”
জাহানারা শেখ স্বামীকে সকলের ঘটনাটা খুলে বলেননি। তিনি বলেছেন রুহানী মা*থাব্যথার কারণে ঘুমিয়ে আছে।
এদিকে রুহানী ওয়ারড্রব খুলে বেশ চিন্তিত। সে কোন জামাটা পড়বে বুঝে উঠতে পারছে না। অবশেষে নীল গাউন ও কালো থ্রিপিসের মধ্যে কালো থ্রিপিসটাই বেছে নিল। তারপর চুলগুলো খোলা অবস্থায় সেট করে হালকা সাজ বলতে, পাউডার, কাজল ও লিপস্টিক। কানে মাঝারি সাইজের এন্টিক ঝুমকা ও হাতে এন্টিক চুড়ি পড়ে তৈরি হয়ে নিচে গেল। জাহানারা শেখ ওকে দেখে বলেন,
“মাশাআল্লাহ। কারও নজর না লাগুক।”
তিনি রুহানীর কানের কাছে কাজল ছুঁইয়ে দিলেন তাতে রুহানী হালকা হাসে। ছোটো থেকে দেখে আসছে জাহানারা শেখ সবসময় ওদের দুই বোন তৈরি হলে এভাবে কাজল লাগাতেন। এখন রিহা না থাকায় শুধু রুহানীর সাথে করেন। রহমত শেখ হেসে বলেন,
“নজর কা*টানো হলে চলো। আমাদের রুহানী সাজলেও সুন্দর না সাজলেও। চলো তো এবার।”
উনারা রওনা করলেন। বাগানের মাঝের রাস্তা দিয়ে মেইন গেইটের কাছে যাচ্ছে তখন দেখল, দারোয়ান রুষ্ট মনে কিছু একটা হাতে করে নিয়ে আসছেন। রহমত শেখ ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে অপেক্ষা করছেন। এদিকে রুহানী কৌতুহলী হয়ে দারোয়ানের কাছে এগিয়ে গেল। তারপর দেখল দারোয়ানের হাতে একটা বাচ্চা খোরগোশ। রুহানী দারোয়ানকে ইশারায় জিজ্ঞেসা করে,
“কী হয়েছে?”
দারোয়ান রুষ্ট কণ্ঠে জবাব দেয়,
“আপামনি, আমি বাগানের কোনার দিকে বারোমাসি গাজর চাষ করি। এই শ*য়*তা*ন খোরগোশটা আমার বাগানে ঢুকেছে। কই থেকে যে আসলো!”
রুহানী দারোয়ানের কথা শুনে খোরগোশটাকে নিজের কোলে নিল। তারপর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দারোয়ানকে ইশারায় যেতে বলল। দারোয়ান খোরগোশটাকে ব*কতে ব*কতে চলে গেল। রহমত শেখ রুহানীকে গাড়িতে উঠতে ডাকলে সে খোরগোশটাকে সাথে নিয়ে নিল। দারোয়ানকে দেখে রেগে আছে মনে হচ্ছে। রেগে কোথায় না কোথায় ফেলে দেয়! তাই নিজের সাথেই নিয়ে নিল।
আরহানদের বাড়ির গেইট দিয়ে গাড়ি ঢুকলে প্রথমেই রুহানীর নজর কাড়ে বিশাল বাগানবিলাশের ঝাড়। তিন রঙের বাগানবিলাশের গাছ একসাথে বিধায় গোলাপি, সোনালি ও সাদা এই ত্রিরঙের মিশেলে দারুণ ফুটে ওঠেছে। রুহানীদের গেইটের কাছে গোলাপি বাগানবিলাশটাই শুধু আছে তাও এতো বড়ো ঝাড় না। এতোদিন যত্ন করা হয়নি বলে ওদের বাগানে ফুলের গাছ নিতান্তই কম। কিছু জায়গায় রুহানীরা আসার আগে ফুলসহ গাছ এনে লাগানো হয়েছে।
গাড়ি গিয়ে বাড়ির সামনে থামে। আয়েশা খানম ও আজমল খান ওদের স্বাগতম করতে বাহিরে এসেছে। গাড়ি থেকে সবার নামার পর রুহানী খোরগোশটাকে সাথে নিয়ে নামল। আজমল খান ও আয়েশা খানম সবাইকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়ার পর আয়েশা খানমের নজর খোরগোশটার উপর গেলে তিনি অবাক হয়ে বলে ওঠেন,
“আরে, বনি তোমার কাছে? এদিকে আরহান ওকে লাগাতার খুঁজর না পেয়ে হয়রান।”
কথাটা শুনে রুহানী একবার আয়েশা খানমের দিকে তাকায় তো একবার খোরগোশটার দিকে। জাহানারা শেখ আয়েশা খানমকে জিজ্ঞাসা করেন,
“খোরগোশটা আপনাদের? ওকে দারোয়ান আমাদের বাগানে পেয়েছে। তারপর রুহানী ওকে সাথে করে নিয়ে এসেছে।”
“হ্যাঁ। ও আরহানের বনি। বনির বাবা-মাও এখানে আছে। আরহান সকাল থেকে বনিকে খুঁজে পাচ্ছে না। তোমরা ভেতরে এসো, আমি আরহানকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি। ছেলেটা বোধহয় এখনো খুঁজে চলেছে।”
জাহানারা শেখ মুচকি হেসে সম্মতি দিলেন কিন্তু রুহানীর মন খারাপ হয়ে যায়। এটুকু সময়ে খোরগোশ বাচ্চাটা তার বেশ মনে ধরেছে। একে এখন ফিরিয়ে দিতে হবে বলে একটু মন খারাপ করছে। তারপর ওরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। আয়েশা খানম আরহানকে ফোন করে দিলে আরহান দ্রুত বাড়ির পথ ধরে।
খোরগোশটা রুহানীর কোল থেকে নিজেই নেমে গিয়ে নিজের বাবা-মায়ের কাছে চলে যায়। তার পিছু পিছু রুহানীও যায়। আরহানের ঘর! খোরগোশটা আরহানের ব্যালকনিতে থাকে। রুহানী সেখানে গিয়ে দেখল, আরও দুটো খোরগোশ ও বেশ কিছু লাভবার্ড আছে। পাখির মত্ত হয়ে কিচিরমিচির শুনতে শুনতে প্রায় অনেকটা সময় চলে গেছে। হঠাৎ নিজের পেছনে কারও উপস্থিতি বুঝতে পেরে পেছনে ঘুরে দেখে আরহান। আরহানকে নিজের দিকে পলকহীন চেয়ে থাকতে দেখে কিঞ্চিত অস্বস্তিতে পরে যায়। রুহানী পাখির খাঁচাতে মৃদু শব্দ করলে আরহান নিজের দৃষ্টি নিচু করে। অতঃপর বলে,
“থ্যাংকিউ সো মাচ। আমি ভেবেছিলাম বনিকে হারিয়েই ফেলেছি।”
রুহানী বিপরীতে হালকা হাসে। আরহান আবার বলে,
“এখন ঠিক আছ?”
ইশারায় রুহানীর হ্যাঁ বোধক জবাব শুনে আরহানও মৃদু হাসে। রুহানী ঠোঁট নাড়িয়ে বিনা শব্দে বলে,
“আমি যাই তাহলে। ওর খেয়াল রাখবেন। অনেকটা ছোটো।”
“হুম।”
রুহানী সেখান থেকে চলে এসে তার চাচি ও আরহানের দাদীর আড্ডায় বসে। আরহানের দাদী বলছেন,
“ছেলের বউয়ের মৃত্যুর বারো বছর পেরিয়ে গেছে। আমিই এই দুই বাপ-ছেলের সাথে আছি। ছেলেকে প্রথম প্রথম অনেক বলেও আরেকবার বিয়ে করাতে পারিনি। এখন নাতিকে মাঝেমধ্যে বিয়ের কথা বলি কিন্তু সেও কথা উড়িয়ে দেয়। তোমরাই বলো, এই বুড়ো বয়সে কি আমি একা একা পারি? একা একা কাজের লোকদের সাথে থাকি। আর ভালো লাগে না।”
জাহানারা শেখ হেসে বলেন,
“ছেলেরটা শুনেছেন বলে কি নাতিরটাও শুনবেন নাকি? একটা ভালো মেয়ে খুঁজে জোড় করে বিয়ে করিয়ে দিন। আপনার নাতি আবার পাইলট। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ায়। আপনি তো সারাদিন একাই থাকেন।”
“আরহানের মাও পাইলট ছিল। কাছে থাকত না কিন্তু ছুটির সময় আমাকে একা ছাড়তেই চাইত না। মেয়েটার অসুস্থতা, মৃত্যু সব এতো দ্রুত হয়েছিল যে কিছু করেও লাভ হয়নি। ওদের তো ছয় মাস অন্তর রুটিন চেকআপ হয়। তখনি ওর ধরা পরে ওর ব্লাড ক্যান্সার। খুব দ্রুত সেটা ছড়িয়ে পরে। আমার ছেলে ওকে সিঙ্গাপুরেও নিয়েছিল। তাও হায়াত না থাকলে কী করা বলো? চলে গেল মেয়েটা। আর আমার হায়াত দেখো!”
কথাগুলো বলে আয়েশা খানম চোখ মোছেন। জাহানারা শেখ নিরবে তাকে স্বান্ত্বনা দিতে থাকেন। ওইযে কথায় আছে না? চোখের জল ছোঁয়াচে! একজনকে দেখে আরেকজনের হৃদয় ব্যথিত হয়। রুহানীর চোখেও অশ্রুকণারা ভীড় জমিয়েছে। যেকোনো সময় গড়িয়ে পরার অপেক্ষা মাত্র।
আরহান নিচে নেমে দেখে তার দাদী চোখ মোছছেন। সে লম্বাশ্বাস ফেলে দাদীর কাছে গিয়ে পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
“উফ দাদী! এতো কাঁদো কেন তুমি? চোখের পানি বেশি হলে আমাকে ধার দাও। আমার পাখিদের পানির অভাব হবে না!”
“যাহ্ শ*য়*তা*ন!”
দাদীর আলতো মা*রা*র অভিনয়ে আরহান হাসে। ওরা আবার টুকটাক আড্ডায় মেতে উঠলে আরহান গভীর দৃষ্টিতে রুহানীকে দেখতে থাকে। মেয়েটার চোখের কাজল ঈষৎ ছড়িয়ে গেছে। তাতে অবশ্য তাকে আরহানের কাছে অন্যরকম সুন্দর ঠেকছে। আরহানের এই হৃদয়াঙ্গনে বিচরনের মধ্যেই সদর দরজা থেকে এক মেয়েলি স্বর ভেসে আসে।
চলবে
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Contact the business
Website
Address
Ghorashal, Palash
Narsingdi, 1613
Good Food, Good Life Safe food, Family village Food.
Shibpur
Narsingdi, 1620
This page is for those who want to learn to cook at low cost in a short time. Quality food is delive
Narsingdi
We'll provide you a pizza with the best ingredients � You can expect the best quality pizza from us.. Stay connected with " PizzaMate" to get more updates �