𝗔𝗥𝗕𝗔 𝗜𝘀𝗹𝗮𝗺𝗶𝗰 𝗩𝗶𝘀𝗶𝗼𝗻
اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য
যিনি সৃষ্টিকুলের রব
#আল্লাহ_আপনাকে_পর্যবেক্ষণ_করছেন
আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম হলো 'রাকিব'। পর্যবেক্ষক। অর্থাৎ এ সত্তা যিনি সমগ্র সৃষ্টিজগৎ পর্যবেক্ষণ করেন।কোনো কিছুই তার পর্যবেক্ষণের বাহিরে নয়। পবিত্র কুরআনের তিন জায়গায় ' #রাকিব' নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথমত সুরা মায়েদায় হযরত ইসা আলাইহিস সালামের আলোচনা প্রসঙ্গে।
وَإِذْ قَالَ اللَّهِ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي إِلَهَيْنِ مِن دُونِ اللَّهِ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقِّ إِن كُنتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ إِنَّكَ أَنتَ عَلامُ الْغُيُوبِ، مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيداً مَّا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنتَ أَنتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ.
'যখন বলবেন, হে মরিয়ম-পুত্র ইসা! তুমি কি মানুষকে বলেছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা আমাকে ও আমার মাকে উপাস্য বানাও? সে মহিমা আপনার! আমরা যা বলার অধিকার নেই আমি তো তা বলতে পারি না। আমি যদি অমন কথা বলতাম তাহলে আপনি তা অবশ্যই জানতেন। আমার মনে কি আছে আপনি তা জানেন, আর আপনার মনে কি আছে আমি তা জানি না। অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে তো একমাত্র আপনিই সম্যক অবগত। আপনি আমাকে যা আদেশ দিয়েছিলেন আমি তাদের শুধু তাই বলেছি। আর তা হলো, তোমরা আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভু আল্লাহর ইবাদত করো। আর আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম ততদিন তাদের কর্মকাণ্ড অবগত ছিলাম। তারপর আপনি যখন আমাকে লোকান্তরিত করেছেন তখন থেকে তো আপনিই তাদের পর্যবেক্ষক ছিলেন। ' 📚 (সুরা মায়েদা: ১১৬-১১৮)
দ্বিতীয়ত সুরা নিসায়,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِن نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُم رَقِيباً
'হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে। তার থেকে তার সঙ্গিনীকেও সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাদের দুজন থেকে অনেক নর-নারী সৃষ্টি করে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট চেয়ে থাকো। রক্ত সম্পর্কের ব্যাপারেও সতর্ক থেকো। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের পর্যবেক্ষণ করছেন। 📚 (সুরা নিসা: ১)
তৃতীয়ত,
مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
'সে যে কথাই উচ্চারণ করুক তার কাছে একজন সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।' 📚 (সুরা কাফ: ১৮)
প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইবনে জারির তাবারি রহ. বলেন, রাকিব অর্থ হলো, আল্লাহ্ তায়ালা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেন। ভূপৃষ্ঠের সবকিছু তার সংরক্ষণে। তিনি সকল মানুষ ও প্রাণীর অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণ অবগত। কোনো কিছু তার ইলমের বাহিরে নয়।
ইমাম যুজাজ রহ. বলেন, রাকিব অর্থ হলো, সৃষ্টিজগতের কোনোকিছু তার হেফাজতের বাহিরে নয়। কোনোকিছু তার থেকে গায়েব নয়।
ইমাম হুলাইমি রহ. বলেন, রাকিব অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টিজগত সম্পর্কে অমনোযোগী ও উদাসীন নন।
ইমাম সাদি রহ. বলেন, রাকিব অর্থ হলো, বান্দার অন্তরের বিষয়সমূহ সম্পর্কে অবগত হওয়া। বান্দার আমলনামা সম্পর্কে জ্ঞান রাখা। সমগ্র মাখলুকাতকে সংরক্ষণ করা এবং তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান প্রদান করা। আর এসবের ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْماً
'হে আমাদের প্রভু! অনুগ্রহ ও জ্ঞান দ্বারা আপনি সবকিছু ধারণ করে আছেন।' 📚(সুরা মুমিন: ৭)
আল্লাহ তায়ালা সমগ্র মাখলুকাতকে পর্যবেক্ষণ করেন, তাদের হেফাজত করেন, কৃতকর্ম সম্বন্ধে তিনি অবগত। তিনি দেখেন তাদের যাবতীয় আমল। তিনি কখনো ঘুমান না এবং কখনো তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হোন না।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
الذي لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ
'তিনি ঐ সত্তা, যাকে ঘুম ও তন্দ্রা আচ্ছন্ন করে না।' 📚(সুরা বাকারা: ২৫৫)
আল্লাহ তায়ালা সকল গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় জানেন। তিনি জানেন যা মানুষ দেখে এবং যা-কিছু তারা দেখে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ
'তিনি চোখের প্রতারণা ও অন্তরের সকল গোপন কথা জানেন।' 📚(সুরা তহা: ৭)
সৃষ্টিকারী এবং সৃষ্টজীবের বৈশিষ্ট্যে সবসময় বিস্তর তফাৎ বিদ্যমান; এ কথা সহজেই অনুধাবন যোগ্য হলেও সেই তফাতের মাত্রা কতদূর হতে পারে, সেটা বুঝতে পারা অতোটা সহজ নিশ্চয় নয়। আমাদের রব তাঁর দানের সীমা পরিসীমায় যেমন কল্পনার বাইরে, তেমনি তাঁর পাকড়াও করার পদ্ধতি-কৌশলও মনুষ্য স্বাভাবীকতার বাইরে। তিনি তাঁর অসীমঅকল্পনীয় করুণা এবং পাকড়াও কৌশলের মধ্য থেকে খুব সামান্যই আমাদের জন্য দুনিয়াতে প্রকাশ করে থাকেন; যাতে বুঝতে কষ্ট না হয়আমাদের আশা ভরসার জায়গা কোথায় হওয়া উচিত আবার ভয় করার জায়গাও কোথায় হওয়া উচিত। নিম্নোক্ত আয়াতের বক্তব্য থেকে তাঁর করুণার সামান্য একটি চিত্র খেয়াল করা যাক- সূরাহ ইউনুসের ১২নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
"আমি যখন তার বিপদ দূর করে দিই, তখন সে এমন ভাবে চলতে থাকে, মনে হয় যেন তাকে কোন বিপদ স্পর্শ করার কারণে আমাকে ডাকেনি।"
মানুষ তার জীবন যাপনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব কষ্টক্লেশ, বিপদবিপর্যায় এবং ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে নিপতিত হয় তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য নিবিড় হয়ে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে এবং তাঁর কাছে সমস্ত দুরাবস্থা থেকে নিরাময় প্রার্থনা করে থাকে।
কিন্তু যখন আল্লাহ তায়ালা তার প্রগাঢ় প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে সব রকমের সমস্যামুক্ত করে স্বস্থির সময়ে পৌঁছে দেন তখন তার আচরণ পাল্টে যায়। সে তখন এমন ভাবে তার জীবন যাপন করতে থাকে যেন সে কখনই বিপদগ্রস্থ হয়নি এবং তা থেকে উদ্ধার পাবার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনাও করেনি। এক ঘনঘোর বিপৎসংকুল পরিস্থিতির মধ্যে সে অসহায় অবস্থায় নিপতিত হয়েছিল এবং তা থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করেছিল এবং সেই প্রার্থনার ফলেই যে তার আজকের এই স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন যাপন অব্যাহত আছে- কথা কাজে সেরকম আবহ প্রকাশ পায়না। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য মৌখিক উচ্চারণ যদিও না থাকলো কিন্তু তার অন্য সকল কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরোক্ষ ভাবেও আল্লাহ তায়ালার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা-বোধের ছিটেফোটা প্রকাশিত হতে দেখা যায়না। সে নিজেকে স্বয়ং সম্পুর্ণ ভাবতে থাকে তখন।
আল্লাহ তায়ালা বান্দার সব অবস্থার খবর রাখেন। তার প্রকাশিত কিংবা গোপন- কোনো বিষয়ই তাঁর কাছে অজানা থাকেনা। যেহেতু তিনিই মানুষের সৃষ্টিকর্তা, মানুষের সবকিছুর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাপার তাঁর কাছে আড়াল থাকার প্রশ্নই আসেনা। আর তাই মানুষ যখন তার বিপদাপদ থেকে উদ্ধার কামনা করে প্রার্থনা করতে থাকে তখন রব্বুল আলামিনের কাছে সেই প্রার্থনার প্রকৃত অবস্থা জানা থাকে- প্রার্থনা যে আসল নয়, সাময়িক পরিত্রাণের জন্য এই ডাকাডাকি তা তিনি জানেন। তারপরও তিনি সেই প্রার্থনায় সাড়া দেন। এবং তাদের সকল বিপদাপদ থেকে উদ্ধারও করেন কিন্তু মানুষ তার সুসময়ে পৌঁছে যাবার পর সেই বিপদ সঙ্কুল সময়ের কথা বেমালুম ভুলে যায়, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করেনা।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষের সেই স্বভাব-প্রবণতার কথাই উল্লেখ করেছেন। এবং এখানে অবাক হবার মতো বিষয় হলো, আল্লাহ তায়ালা এমন লোকদের থেকে তাদের বিপদাপদ দূর করে দেন, যারা এমনকি তার কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেনা। তারা যখন আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনার করুণ স্বরে ডাকতে থাকে তখনও তিনি জানেন যে ‘এই আহ্বান আসল নয়। আপনি কি ভেবে দেখেছেন, ‘অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির মেকি প্রার্থনায় যদি আল্লাহ তায়ালা এইভাবে সাড়া দিয়ে তার দুরাবস্থা দূর করে দিয়ে থাকেন তাহলে কৃতজ্ঞ ব্যক্তির আন্তরিক প্রার্থনায় আল্লাহ তায়ালা কেমন তীব্র সাড়া দিবেন?”
রব্বুল আলামিন আমাদেরকে তার কৃতজ্ঞ বান্দাহ হয়ে ওঠার তাওফিক দান করুন। আমিন।
#কুরআনিক_ম্যাসেজ বই থেকে...
সাধারণত সৌন্দর্য বলতে মানুষ বাহ্যিক রূপ-লাবণ্য আর সাজসজ্জাকেই বুঝে থাকে। এ জন্যই দেখা যায়, অনেক মানুষই কেবল নিজের বাহ্যিক অবস্থাকে চাকচিক্য করে তোলতে চেষ্টা-সাধনা করে। অপরকেও তার বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে পরিমাপ করে; তা দেখেই পছন্দ হলে কাছে টানে, না হলে দূরে ঠেলে। আসলে কি বাইরের এ সৌন্দর্যই আসল সৌন্দর্য? শরীরী কাঠামোটাই কি ভালো-মন্দ পরিমাপের মানদন্ড? না, বরং একজন মানুষের বাহ্যিক অবস্থা যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, তার আত্মা যদি পরিশুদ্ধ না হয়; তার এ বাহ্যিক সৌন্দর্য ও চাকচিক্যতার কোনো মূল্য নেই। প্রকৃত সুন্দর তো সে-ই ব্যক্তি, যার অন্তর-আত্মা পরিশুদ্ধ। তাই আসুন, প্রকৃত সৌন্দর্যে নিজেকে শোভিত করি। আর এর জন্যই প্রয়োজন- আত্মার পরিচর্যা।
বয়স্কদের যত্ন নিন_Would you care for your elders M***i Menk
পরকালের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করুন_Protect yourself from being harmed in the hereafter M***i Menk
আল্লাহ আপনার সম্পর্কে কথা বলেন - Allah talks about you - @muftimenkofficial ARBA_islamic_vision
নম্রতা আপনার ধার্মিকতার চিহ্ন
🎙️M***i Menk
নম্রতা আপনার ধার্মিকতার লক্ষণ ৷৷ মুফতী মেন্ক Islamic Vision , , , , Vision,
আপনার ব্যক্তিত্বের সত্তর ভাগ প্রতিফলিত হয় প্রথম সাক্ষাতে। এজন্য এটাই আমার প্রথম ও শেষ সাক্ষাৎ- একথা মাথায় রেখে প্রথম সাক্ষাতের ব্যবহার নির্ণয় করুন ।
الصفحة الرسمية للشيخ د. محمد العريفي .
স্ত্রীলোক রাগান্বিত হলে আমরাও তাদের জবাব দিতে শুরু করি৷ ফলে সংসারে এমন সব অশান্তির সূচনা ঘটে যা চাইলে খুব সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যেতো।এটি একটি পুরুষের শানে বেমানান কাজ যে সে তার স্ত্রীর কথার পিঠে কথা লাগিয়ে তর্ক জুড়ে দিবে। সংসারের বিভিন্ন বিষয়ে টুকটাক রাগ দেখানো, চেচামেচি করা স্ত্রীদের অধীকার।
কথিত আছে যে, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে খলীফা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু 'আনহুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই তিনি শুনতে পেলেন হযরত উমারের (রা.) স্ত্রী তাঁর সাথে ঝগড়া করছেন আর খলীফা উমার (রা) নীরবে সব শুনে যাচ্ছেন।
এ অবস্থা বুঝতে পেরে লোকটি আর কোনো সাড়া শব্দ না করে, খলীফার সাথে সাক্ষাৎ ও তাঁর নিকট অভিযোগ না করেই ফিরে যেতে উদ্যত হলো। সে ভাবল, আমীরুল মুমিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন উমারের (রা) মতো ব্যক্তিত্বের অবস্থা যদি এই হয়, যিনি অত্যন্ত কঠোর, যাকে সবাই ভয় পায়, তা হলে আমার মতো সাধারণ মানুষের অবস্থা আর কী হতে পারে?
ঠিক এমন সময় হযরত উমার (রা.) ঘরের দরজায় এসে দেখলেন একজন লোক চলে যাচ্ছে। তিনি লোকটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার প্রয়োজনের কথা না বলেই তুমি চলে যাচ্ছ কেন?" লোকটি জবাব দিল, "যার জন্য আমি এসেছিলাম, সে জবাব আমি পেয়ে গেছি। আমার স্ত্রী আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে । সে অভিযোগ নিয়েই আমি এসেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি আপনার অবস্থাও আমার মতোই।"
"উমার (রা) উত্তর দিলেন, "আমি সহ্য করে নিই। কারণ আমার ওপর তার অনেক অধিকার রয়েছে। সে আমার খাবার তৈরি করে, রুটি তৈরি করে, কাপড় ধুয়ে দেয়, আমার সন্তানকে দুগ্ধপান করায়, তাদের লালন-পালন করে, আমার হৃদয়ে শান্তি আনে, অনেক কিছুই করে, তাই একটু সহ্য করে নিই।"
এটা শুনে লোকটি বলল, "হে আমীরুল মুমিনীন, আমার স্ত্রীও তো অনুরূপ"। উমার (রা.) বললেন, "তা হলে সহ্য করে নাও ভাই, তারা তো সামান্য সময়ই রাগান্বিত থাকে।"
[এ ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন শাইখ সুলাইমান ইবন মুহাম্মাদ আল-বুজাইলিনী, আল-হাশিয়া (আলা শাবছিল মিনহাজ, ৩/৪৪১-৪৪২। আরও উল্লোখ করেছেন আবুল লাইছ আস-সাদী আল- হানাফী, তাম্বীহুল গাফেলীন বি আহানীসি সাইদিল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, পৃ. ৫১৭ এবং হাজার আল-হাইসামী, আয-যাওয়াজির কী ইকতিরামিল কাবাইর, ২/৮০]
তোমাকে তোমার থেকে কেড়ে নেওয়া
আজকের সময়ের কয়েকজন মুসলিম তরুণকে দাঁড় করিয়ে যদি এই উম্মতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে বলা হয়, তুমি দেখবে তাদের প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা কারণ বর্ণনা করছে। কিন্তু আমি শতভাগ নিশ্চিত, তাদের সকলেই একে একে উম্মতের প্রতিটা সমস্যা বলে দিলেও শেষপর্যন্ত কেউই বলবে না, ‘এই উম্মতের ভোগান্তির জন্য আমি নিজেই দায়ী।' আর এটাই তোমাকে তোমার থেকে কেড়ে নেওয়া, তোমার থেকে তোমাকেই উদাসীন করে দেওয়া!
যে নিজেকে ভুলে গিয়েছে, সে কী করে নিজের দোষ খুঁজে পেতে পারে। ফলে তার উত্তর হয়, দোষ সব অন্য কারও বা অন্যকিছুর। সে বলে : আলিমগণ তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না, ইমামেরা মসজিদে সময় দিচ্ছে না, বক্তারা সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, জনগণের নেতানেত্রীরা দুর্নীতিবাজ, আরবজাতির অধঃপতন, পশ্চিমা সভ্যতার অশ্লীলতা আর ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্রগুলো উম্মতের ভোগান্তির মূল কারণ; অথচ সে নিজেও যে এই উম্মতের একজন, তা সে ভুলে গেছে।
একটা সময় মানুষ ছিল সৎ এবং সহজ সরল। তাদের সবকিছু ছিল পরিষ্কার। তারা তিলকে তাল বানিয়ে ফেলত না। তাদের কাছে সবকিছু স্বাভাবিক এবং ক্ষমার যোগ্য ছিল। কিন্তু আজকে সামান্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনায় মেতে যাওয়া আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা অকারণেই সবকিছুর গভীরে প্রবেশ করতে চাই। সমাধানের চাইতে সমস্যা নিয়েই আজ সকল ব্যস্ততা। অপরের ভুল শুধরে দেওয়ার পরিবর্তে ভুল প্রমাণ করতে পারাই যেন বড় বিজয়। আবার ভুল শুধরে দিলেও আমাদের তা পছন্দ না। কেউ মেনে নিতে চায় না যে, তার সমস্যার জন্য সে নিজেই দায়ী! সমাধান পেতে চাইলে অন্যদের নয়; বরং তাকেই সতর্ক থাকতে হবে, প্রচেষ্টা করতে হবে। ভুল যেহেতু তার, এই সমাধান তাকেই করতে হবে।
আমার প্রিয় ভাই, প্রিয় বোন! তুমি মহান আল্লাহর প্রিয়তম হাবিব এবং শ্রেষ্ঠ রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতের অংশ। প্রত্যেক ইসলাম এবং উম্মাহর জন্য মূল্যবান। তোমার ব্যক্তিসত্তা ইসলামে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তুমি তোমার বাহ্যিক জীবনে আল্লাহর কতটুকু আনুগত্য করছ, তাকে কতটুকু ভয় করছ, কীভাবে সমাজে চলাফেরা করছ, কী পড়ছ, কীভাবে তোমার সময়গুলো অতিবাহিত করছ—তোমার জীবনের প্রত্যেকটি কাজ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তোমার প্রতিটি কাজের সাথে অন্য মুসলিমের স্বার্থ জড়িত। আমরা প্রত্যেকে পরস্পরের সাথে একাত্ম, নির্ভরশীল ও সম্পৃক্ত। তোমার সাথে অন্য মুসলমানের সম্পর্কের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
"মুমিনদের উদাহরণ হলো, তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের ন্যায়। যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহে তাপ ও অনিদ্রা ছড়িয়ে পড়ে।
তুমি কখনোই একা নও। তুমি আলাদা কোনো সত্তা নও। তুমি মুসলমান। তুমি আমার অংশ, আমাদের সবার দেহের একটি অংশ। পৃথিবীর যে প্রান্তেই মুসলমান রয়েছে, তুমি তার এবং সে তোমার অংশ। তুমি চাইলেও এই বন্ধন ভেঙে দিতে পারবে না। শরীর থেকে কি কখনো কোনো অঙ্গকে আলাদা করা যায়?
তাই আজ তোমার ব্যথা হলে আমার অন্তরেও ব্যথা হয়, তুমি সুখে থাকলে আমাকেও ছোঁয় সে সুখের আবেশ। আর তুমি যদি অবাধ্যতায় লিপ্ত হও, তাহলে সেই অপরাধ আমাকেও প্রভাবিত করে।
তুমি যেহেতু সমস্ত মুসলিম উম্মাহর একটা অংশ, তোমার অবাধ্যতার দায় আমাদেরও নিতে হবে। তোমাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা না-করার জন্য আমাকেও আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে।
তাই আমি আজ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর পক্ষ হতে তোমাকে আহ্বান করছি, দয়া করে নিজেকে এবং এই উম্মতকে আর কষ্ট দিয়ো না। তোমার বিপথে থাকার দরুন কেবল হিসাবের খাতায় আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ; প্রকৃত হিসাবে আমরাই সবচেয়ে সংখ্যালঘু।
আমাদের থেকে তোমাকে দূরে সরিয়ে, তোমার থেকে আমাদের আলাদা করে ওরা আমাদের সকলকে নিঃশেষ করে দিতে চাচ্ছে। তুমি থাকতেও যদি কেউ আমাকে ধ্বংস করে দেয়, তুমি কি সইতে পারবে? তোমার দেহ থেকে আমাকে এভাবে ছিঁড়ে ফেলার পরেও কি তুমি চুপ করেই বসে থাকবে? কী লাভ হলো তাহলে এই শক্তির? কী করবে তখন এত জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে?
তাকিয়ে দেখো, বাইরে থেকে দেখলে তুমি আর আমি কত আলাদা। আমাদের জীবন কত আলাদা। আমাদের স্রষ্টা, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের রাসুল এক হওয়া সত্ত্বেও আজকে আমরা আনুগত্য করছি ভিন্ন ভিন্ন সত্তার। অথচ এমন তো হওয়ার কথা ছিল না!
হ্যাঁ জানি, তোমাকে কেউ কখনও বোঝেনি, বোঝায়নি; তোমাকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি; একটু মায়া নিয়ে তোমার দুঃখ কেউ শুনতে চায়নি। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমরা তোমার সাথে দুঃখগুলো ভাগাভাগি করতে প্রস্তুত। আমরা প্রতিনিয়ত তোমার প্রতীক্ষা করছি। কিন্তু তোমাকে আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুমি আজ যাদের আপন ভাবছ, তারাও হয়তো মুসলমান; কিন্তু অবাধ্যতায় ডুবে তাদের অন্তর মরে গেছে, তাই কেবল ভোগের চশমা দিয়ে তারা পৃথিবীকে দেখে। না তারা নিজের দুঃখ বোঝে, আর না অন্য কারও। কিন্তু তুমি একবার অন্তত আমাদের কাছে এসো। এই উম্মতের যে অংশ এখনো পচেনি, তাদের সাথে জুড়ে যাও; নিজেকে একটু চিনে নাও; সুখ খুঁজে নাও তোমার রবের সন্তুষ্টির মধ্যে।
যদি এই কথাগুলো তোমার পর্যন্ত পৌঁছে থাকে, তবে তোমাকে জানাতে চাই, আর কেউ তোমাকে নিয়ে ভাবুক বা না ভাবুক, আমি এবং আমরা তোমার জন্য সত্যিই চিন্তিত। তোমাকে যন্ত্রণায় ভুগতে দেখা আমাদের জন্য কষ্টকর। কিন্তু হায়! তোমার আর আমাদের মধ্যে আজ এক বিশাল অদৃশ্য দেয়াল। চোখের সামনে তুমি বা তোমার মতো অন্য কাউকে ধ্বংস হতে দেখেও আমরা কিছুই বলতে পারি না। সামনে দাঁড়িয়ে তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারি না। কাঁধে হাত রেখে সব ব্যথা উপশমের স্বস্তি হতে পারি না। অধিকার খাটিয়ে জোর করে তোমার হাতটা ধরে জান্নাতের দিকে ডেকে আনতে পারি না। পারি না একসাথে বসে তোমার দুঃখগুলো শুনতে। পৃথিবী তোমাকে আমাদের থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছে, অনেক দূরে। তাই তো নিরুপায় হয়ে বইয়ের পাতায় পাতায় তোমার পর্যন্ত পৌঁছানোর এই প্রচেষ্টা...!
তুমি যদি চাও, এ দেয়াল তুমিই ভেঙে দিতে পারো, কিন্তু আমরা পারি না। পৃথিবী আমাদের হাত পা বেঁধে রেখেছে, তাই তুমি এবার খুঁজে নিয়ে ছুটে এসো রেলগাড়ির শক্তিশালী ইঞ্জিনটা যেভাবে নিজ থেকে এসে তার বাকি অংশের সাথে জুড়ে যায়, তুমিও নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে সব দেয়াল ভেঙে চলে এসো। চলো আবারও একসাথে হাঁটি, একসাথে ছুটে যাই আমাদের রবের দিকে। পৃথিবীর মানুষ তোমাকে বুঝুক বা না বুঝুক, তোমার রব তো তোমাকে বোঝেন। তুমি নিজেকে
তোমার রবের কাছে সঁপে দাও, তিনি তাঁর সমস্ত সৃষ্টি তোমাকে দিয়ে দেবেন।
তবে মনে রেখো, ইসলাম এমনি এমনি পৃথিবীতে আসেনি। জগতের প্রতি কোণে
থাকা মুসলমানেরা আকাশ থেকেও পড়েনি। ইসলামের প্রতিষ্ঠা এবং তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর
সাহাবায়ে কিরামের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইন) কঠিন ত্যাগ ও সাধনা
রয়েছে। এই দীন বা জীবনবিধানকে প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দিতে হয়েছে। তোমাকেও ফিরে আসার পথে নানান পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।
এত কষ্টের পর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছিলেন, তাদের পথে না হেঁটে
কেবল সাত-আট মিনিটের একটা ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করলেই আল্লাহ
তাআলা আমাদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে দেবেন—ব্যাপারটা এত
ছেলেখেলা না।
আজকের পৃথিবীতে তাৎক্ষণিকভাবে সবকিছু অর্জন করার আশা মানুষের অভ্যাসে
পরিণত হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে খানিকটা সতর্ক থেকো। হুট করেই তোমার
জীবনে দীন প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে না। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন—
কোথাও হুট করেই সবকিছু বদলে ফেলা যায় না। বাস্তবতা জেনেও অনেকে আশা
করে যে, এমন যদি কোনো মসজিদ থাকত! যেখানে প্রবেশ করলেই আবু বকর,
উমর, উসমান হয়ে বেরিয়ে আসা যাবে!
তাড়াহুড়ো সবকিছুকে এলোমেলো করে দেয়; তুমি বরং ধীর-স্থির হও। অহংকার
করে লোক দেখিয়ে কিছু করার অধিকার মুসলমানের নেই। তার চেয়ে ভালো, তুমি
সবার সামনে থেকেও অগোচরে চলে যাও। তোমার দেহ পৃথিবীতে থাকলেও,
অন্তরটা পাঠিয়ে দাও আসমানে–তোমার রবের কাছে।
#উদ্দেশ্যহীন_আর_কত_দিন
তোমার জন্য একমাত্র সঠিক পথ হলো ইসলামের পথ, দীনের পথ, কুরআনের পথ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথ। এগুলো আলাদা কিছু নয়, এসবের অর্থ একটাই। আর এই পথ আমার বা অন্য কোনো মানুষের বলা পথ নয়; এটাই তোমার স্রষ্টার পক্ষ হতে নির্ধারিত একমাত্র পথ।
এ যুগে অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর বিপথে যাওয়ার পেছনে মূল কারণই তার পরিবার। সহজ সরল এই মানুষগুলোর ভেতরে ইসলামের পুরোটা না থাকায় আমাদের অন্তরেও তা দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিতে পারেননি। তাই অধিকাংশ আজ বাহ্যিক দু-একটা আচার-অনুষ্ঠানকেই ইসলাম হিসেবে চেনে। জীবনকে পরিচালনার যে আদর্শ বা উপলব্ধি, ইসলামের সে অংশটুকু আমাদের কেউ দেখিয়ে দেয়নি। ফলে বর্তমান সমাজ-রাষ্ট্র-বিদ্যালয় বা বাইরের পরিবেশের যা কিছু আমাদের চোখে পড়ে, তা আমরা পরিচালনার রসদ নিই। এরপর একটা সময় ভেতরের সামান্য ইসলামটুকুও হারিয়ে যায়। শুধু পরিবারকেই দায়ী করা যদিও যথার্থ নয়, তবে একজন মানুষের মূল শেকড় বা ভিত্তি হলো তার পরিবার; পিতামাতা যদি উত্তম আদর্শবান হন, তবে সন্তানকে আদর্শিকভাবে সুরক্ষা দেওয়াকে তিনি দেখবেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে নির্ধারিত দায়িত্ব হিসেবে। কিন্তু ভ্রান্ত চিন্তায় ডুবে থাকা পিতামাতার সন্তানও যে পথভ্রষ্ট হবে, এ আর আশ্চর্যের কি!
এ ছাড়া আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রের বৃহৎ অংশটাই আজ ইসলামের বিপরীত অবস্থানে। এখানে সবাই ইচ্ছামতো ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ লালন করে। মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও এই মানুষগুলোকে নানান অপকর্মে লিপ্ত হতে দেখে আমাদের ভেতরে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা জন্ম নেয়। মনে হয়, ইসলাম বুঝি-বা এমনই। ধীরে ধীরে অন্তরের এই ভুল চিন্তা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ইসলাম থেকে পুরোপুরি দূরে সরিয়ে দেয় আমাদের।
আজ ধর্মীয় আলোচনার নামেও যা হচ্ছে, তাতে মূল ইসলাম খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অধিকাংশই তেল-লবণ মাখানো কেচ্ছাকাহিনি। ভালো আলোচনা যে একদম নেই, তা নয়। অবশ্যই ভালো ভালো স্কলারদের দরকারি আলোচনাও আছে। কিন্তু সমস্যা হলো, যখন শুরু থেকেই কেউ এসব কল্পকথার আলোচনাগুলো শুনতে থাকে, তখন প্রকৃত আলিম বা আসল ইসলামের আলোচনাগুলো আর তার সামনে আসে না। শুরু থেকেই যদি কেউ ভুল মানুষকে ইসলামের মাপকাঠি ধরে নেয়, সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির ভুলগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর ইসলাম সম্পর্কেও তার অন্তরে একটা হতাশা কাজ করে।
তবে পেয়ো না! এসব তো আর আমাদের দোষ নয়। এগুলো একেকটা মায়াজাল। তুমি আর আমি যাতে আসল ইসলাম পর্যন্ত পৌঁছতে না পারি, সেজন্যই অভিশপ্ত শয়তানের অনুসারীরা প্রতিটা ধাপে ধাপে ইচ্ছা করেই কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। একদিকে ষড়যন্ত্রের পাথুরে আড়াল দিয়ে আর অন্যদিকে বিবেকের ওপর কালো পর্দা মুড়িয়ে তারা ইসলামের আলোময় পথটা ঢেকে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তুমি যাতে সঠিক পথে প্রবেশ করতে গিয়েও এই ভেবে শঙ্কিত হয়ে পড়ো : আসলেই পথটা সঠিক কি না, আসলেই পথটা আলোকিত কি না!
এটাই মহান আল্লাহর অমোঘ সিদ্ধান্তকে প্রমাণ করে দেয়। তিনি যাকে চাইবেন, সে-ই কেবল এই সমস্ত পাথর সরিয়ে, বিবেকের পর্দা উঠিয়ে আসল পথের দিকে হাঁটতে পারবে; তিনি না চাইলে প্রবেশদ্বার থেকেই ফিরে আসবে কত শত খালি হাত।
জাগতিক নানান ষড়যন্ত্রের মাঝে আরেকটা বড় ষড়যন্ত্র হলো, তোমার থেকে তোমাকেই কেড়ে নেওয়া। অর্থাৎ তুমি যেন নিজেকেই ভুলে যাও, সেই ব্যবস্থা করা। এটাতেও আজ তারা সফল, যে কারণে আজকে মুসলিম উম্মাহর মাঝে হাজারো সমস্যা। বিশ্বের যেদিকেই তাকাও না কেন, সেখানেই মুসলমানদের দুঃখ- দুর্দশা নজরে আসে। যদিও এই দুর্দশার কারণ একটা-দুটো নয়, অনেক কারণ;
কিন্তু গাছের না হাতড়ে তুমি যদি একেবারে মূল শেকড়ের খোঁজ করো, তবে একটা ভিন্ন চিত্র দেখতে পাবে।
#উদ্দেশ্যহীন_আর_কত_দিন
স্বার্থ আর অর্থ—পৃথিবীতে এই দুটো ছাড়া কোনো মানুষ একটা কদমও ফেলতে চায় না, অথচ দুটোই কল্যাণের চাইতে ক্ষতিই বেশি করে মানুষের। পরকালের বিশ্বাসী কোনো মুসলমান নিজকর্মের জন্য জাগতিক প্রতিদান কামনা করে না। আমিও শুরুতেই একটা বিষয় জানিয়ে রাখি, এই আলোচনার পেছনে আমার দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ নেই। আমার জীবন-মরণ, আমার সালাত, কুরবানি কেবল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
আজকের কথাগুলো শুধু তোমার জন্য। বাকি দুনিয়া যেখানে থাকে থাকুক, সবাই যা করে করুক, সবাই যা বলে বলুক। সে সবকিছু এই মুহূর্তের জন্য ভুলে যাও। পৃথিবীর বাস্তবতা তো তুমি জানোই; এখানে কেউ কারও নয়। তাই চলো, আজ নিজের কথা একটু ভাবি। তুমি আর আমি মিলে আমাদের ভেতরের জরাজীর্ণতা ওঠার চেষ্টা করি। সব আবর্জনা সরিয়ে এলোমেলো জীবনটাকে গুছিয়ে নেওয়ার উপায় একটু খুঁজে দেখি।
তুমি আর কিন্তু আলাদা কেউ নই। আমাদের জীবন এখনও পুরোপুরি পবিত্র নয়। আমিও জীবনের অনেকগুলো দিন-মাস-বছর নষ্ট করেছি নিজের হাতে। কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছিলাম, আজ তা আর মনে পড়ে না। তবে এটুকু শুনে রাখো, তোমার স্বপ্নের যে জগৎ, আমি সেই জগতেই থেকেছি বহু কাল। সুখ অর্জনের প্রবল আকাঙ্ক্ষায় প্রতিনিয়ত তুমি যে অজানা পথের দিকে ছুটে যাচ্ছে, সেই পথের শেষ সীমা পর্যন্ত গিয়েছিলাম আমি; কিন্তু ফিরতে হয়েছে একদম শূন্য হাতে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত কিছুর পরেও আমি সেই অর্থহীন পথটাকেই সঠিক পথ ভাবতাম। সেই চটকদার রাস্তায় সামান্য কয়েক কদম এগোতে পারার উন্মাদনাকে আমিও সর্বোচ্চ সুখ মনে করতাম নিজের জন্য।
তাই তোমার আর আমার জীবনের মাঝে এদিক থেকে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। আমরা একই পথে হেঁটেছি, একই গন্তব্যের দিকে গিয়েছি; কিন্তু আমি তো শেষ পর্যন্ত পৌঁছনোর পরেও সুখ পেলাম না। তোমার খবর কী বলো? এখনও কত দূর যেতে পারলে? সুখের কি কোনো দেখা পেয়েছ?
আমরা কত বোকা ভাবো, যেখানে অন্যেরা স্বার্থ ছাড়া এক কদমও এগোতে চায় না, সেখানে আমরা দুজন কোনো রকম অর্জন ছাড়াই, সুখের দেখা না পেয়েও অনর্থক একটা পথের পেছনে নিজেকেই শেষ করে দিলাম।
শুনবে আমার গল্পটা?
কিন্তু আমি তো এখন বদলে ফেলেছি আমার আগের রাস্তাটা। এখানে যদিও প্রকাশ করা বারণ, তবে তোমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার মতো করে সামান্য বলছি। তুমি বুঝে নিয়ো।
একটু বয়স হওয়ার পর প্রথমবার যখন পৃথিবীর সাথে আমার পরিচয়, মনে হয়েছিল, এর চেয়ে উত্তম কিছু আর নেই। প্রথম উপলব্ধিতেই পৃথিবীর মায়ার আমি বিক্রি করে দিয়েছিলাম। পিতামাতার উদাসীনতায় সামাজিকতার চিন্তাধারা লালন করা এক অজ্ঞ প্রজন্মের মাঝে আমার বেড়ে ওঠা। কেউ আমাকে সঠিক পথ, ভুল পথ, সুখ-অসুখ, ভালো-মন্দ, অন্যায়-উপকারের মূল্যবোধটা কখনও ঠিকভাবে বুঝিয়ে
মাঝমাঠে গরু-ছাগলকে লম্বা রশি দিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে ছেড়ে দেওয়ার আমিও নির্দিষ্ট একটা সীমানার মাঝে স্বাধীনতা লাভ করলাম। প্রবল উচ্ছ্বসিত হয়ে মাঠের এক দিক থেকে অন্য দিকে ছুটোছুটি করতে লাগলাম। মাঠের ভেতরে থাকা ঘাস, লতাপাতা, আবর্জনা যখন যেখানে যা-ই পেয়েছি, গ্রহণ করেছি নির্দ্বিধায়।
সময়ের সাথে একটু একটু করে মাঠের সব সুখের স্বাদ চাখা শেষ হলো। এরপরেই বাঁধল আসল সমস্যাটা! দূর থেকে দেখে মাঠের ঝলমলে ঘাসের যে আসক্তি আমায় উন্মাদ করে ফেলেছিল, এখন তার সবটার স্বাদ আমার পরিচিত। এখন সবকিছু কেমন পানসে মনে হতে লাগল। কেমন যেন তেতো তেতো! হাতের নাগালে থাকা সত্ত্বেও সেসব সুখের প্রতি কেমন এক বিতৃষ্ণা! বিতৃষ্ণা পরিণত হলো এক নিদারুণ যন্ত্রণায়। একটুখানি স্বস্তির জন্য ছটফটানি। কিন্তু খুঁটি অন্য কোথাও চলে যাওয়ার শক্তিও আমার ছিল না।
তাই ভেতরের যন্ত্রণা সইতে না পেরে আমিও নিজের মালিকের কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানাতে লাগলাম, ঠিক যেমন সন্ধা ঘনিয়ে এলে গরু-ছাগল ঘরে ফেরার জন্য ডাকাডাকি করে। এরপর কী হলো, জানো?
সারা দিনের চড়া রোদ আর মাঠের তেতো সুখের যন্ত্রণা নিয়ে খুঁজে পেলাম শান্তির সেই ঘর। মালিক আমাকে দিলেন ঠান্ডা পানি এবং আরও হাজার প্রকার অনাবিল নতুন সুখের সন্ধান। প্রতিমুহূর্তে প্রশান্তির আবেশ আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখল। আমি টের পেলাম : পশু হোক কিংবা মানুষ—মালিকের কাছেই তার প্রকৃত স্বস্তি... আসল সুখের ঠিকানা।
তুমিও আর এভাবে যন্ত্রণায় ডুবে থেকো না। নশ্বর শরীরে এই প্রাণের মেয়াদ থাকতে থাকতেই জীবনের প্রকৃত অর্থটা শিখে নাও, তোমার সত্তার আসল উদ্দেশ্য জেনে নাও, চিনেই নাও সঠিক পথটা।
#উদ্দেশ্যহীন_আর_কত_দিন বই থেকে
মৃত্যুর_যখন_মৃত্যু_হবে When_death_will_die Muhammad Al-Arefe c n . Muhammad Al Arefe Al Arefe d e
শয়তান কীভাবে ধোঁকা দেয় জানেন কি?
আমরা আমাদের শত্রুর ব্যাপারে বরাবরই সতর্ক। শত্রুর কর্মপদ্ধতি, তার পরিকল্পনা, তার বাহিনী, তার অস্ত্রশস্ত্র—সবকিছু নিয়েই যেনো আমাদের সকল চিন্তা। কখন না জানি আমাদের ওপর আক্রমণ করে বসে—সে ভাবনায় বিভোর।
আচ্ছা, আপনি জানেন কি? আশেপাশের পরিচিত শত্রু ছাড়াও, আমাদের প্রত্যেকের একজন চিরকালীন শত্রু আছে। সে সর্বদাই আমাদের মধ্যে বিচরণ করছে। এমনকি, রগের শিরায়-শিরায় তার চলাচল। কে সে জানেন? সে আমাদের প্রকাশ্য শত্রু 'শয়তান'। এই শত্রু যেকোনো মূল্যে আমাদের ক্ষতি করতে বদ্ধপরিকর। আমরা কী জানি তার কৌশলগুলো? ইনশাআল্লাহ, আজকে আমরা জানবো তার কিছু কৌশল।
ঝগড়া ও শয়তানের ধোঁকা
বাজে ধারণা, ভুল বোঝাবুঝি, অবিশ্বাস—এগুলো থেকেই ঝগড়া শুরু হয়। এদিকে শয়তান একজন আরেকজনের প্রতি বাজে ধারণা তৈরি করে দেয়। কোনো একটা বিষয় নিয়ে দু'জনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে দেয়। একজনের প্রতি আরেকজনের অবিশ্বাস সুদৃঢ় করে দেয়। ফলে, সেখান থেকে শুরু হয় মন কষাকষি, অতঃপর ঝগড়া।
পরিবারে অশান্তি আসে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদে। একে অন্যের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে হাসতে থাকে শয়তান। বিভিন্ন কৌশলে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে। যেভাবে হযরত ইউসুফ আ: ও তাঁর ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক বিনষ্ট করেছিলো। সূরা ইউসুফের একটি আয়াতে বলা হয়, ‘শয়তান ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক বিনষ্ট করে।' [সূরা ইউসুফ, আয়াত- ১০০]
ইরশাদ হয়েছে- 'তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য কর এবং পরস্পর কলহ করো না। অন্যথায় তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্যধারণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।' [সূরা আল আনফাল, আয়াত- ৪৬] মোটকথা, শয়তান সবসময় চাইবে আমাদের পরস্পর ঝগড়া লাগাতে। সবসময় চাইবে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করতে। সব সময় চাইবে অশান্তি সৃষ্টি করতে। তাই, শয়তান সম্পর্কে যখন কেউ সতর্কতা অবলম্বন করবে, তখন বাজে ধারণা, ভুল বোঝাবুঝি ও অবিশ্বাস নিজের মধ্যে জায়গা পাবে না। ফলে, ঝগড়াও কখনও তার আলোর মুখ দেখবে না। সংসারে কখনও অশান্তি সৃষ্টি হবে না। বন্ধুর সাথে বন্ধুর সম্পর্ক ছিন্ন হবে না। ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের লড়াই হবে না।
অবসর সময় ও শয়তানের ধোঁকা
একটু ভেবেচিন্তে দেখুন— আমরা কখন সবচেয়ে বেশি গুনাহ করি? বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায়, নাকি অবসর সময়ে? অবশ্যই অবসর সময়ে। যেমন: আপনি যদি সিনেমা দেখতে চান, তাহলে অবশ্যই অবসর সময় কাটাতে হবে। যদি পর্ণ দেখতে চান, তবুও পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দরকার। যদি গীবতের মজলিসে বসতে চান, তবুও আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় দরকার। মোটকথা, গুনাহের যতগুলো কাজ— যেই কাজে আমাদের নফস তৃপ্তি লাভ করে, যেই কাজে শয়তান খুশি হয়— এ সব কাজ অবসর সময় ব্যতীত সম্ভব নয়। (অনেক গুনাহ আছে, যা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থেকেও করা হয়)। কেননা, একজন মানুষ যখন সবসময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে, তখন শয়তান তাকে সারাদিন প্ররোচনা দিয়েও সফল হয় না। কারণ, সে যতই বলুক, 'যা, সিনেমা দেখে আয়'— তখন একজন কর্মব্যস্ত মানুষ পারে না, তার কাজ রেখে সিনেমা দেখতে যেতে। শয়তান যতই প্ররোচনা দিক, পারে না কাজের ফাঁকে একজন মানুষকে পর্ণের জগতে নিয়ে যেতে। পারে না গীবতের মজলিসে তাকে বসাতে।
মোটকথা, সবচে' বেশি পাপকাজ আমাদের অবসর সময়ই সংঘটিত হয়। ব্যস্ত সময়ে গুনাহ হয় না, তা-ও কিন্তু নয়! তবে অবসর সময়ের তুলনায়, ব্যস্ত সময়ে খুব কম। আপনি নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন। একমাস টানা ব্যস্ত থেকে দেখুন, শয়তান আপনার কাছে এসেও কেন জানি বারবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।
ধনীদের ওপর শয়তানের ধোঁকা
ধনী ব্যক্তিরাই বেশিরভাগ শয়তানের শিকারে পরিণত হয়, অর্থকে টোপ বানিয়ে শিকার করে তাদের।
প্রথমতঃ অর্থের বড়াই অন্তরে জাগ্রত করে তাদের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি করে দেয়। অতঃপর সেই অহংকার থেকে সৃষ্টি হয় অন্যকে খাটো করে দেখার মন-মানসিকতা।
দ্বিতীয়তঃ এত এত অর্থ কাজে লাগাতে, বিভিন্ন অকাজে তা খরচ করায়। যেমন: মদ্যপান, জুয়ার আসর, নাইটক্লাব—ইত্যাদি।
তৃতীয়তঃ অপব্যয়ে তাকে নিয়োজিত রাখে। অথচ, অপব্যয় শয়তানের অন্যতম নিকৃষ্ট কর্ম। দেখা যায়, শয়তানের ধোঁকায় পড়ে খাবার ও পানীয় গ্রহণে অপ্রত্যাশিত অপচয়। খাবার খেতে গিয়ে থালায় কিছু রেখে দেয়া, ন করতে গিয়ে গ্লাসে বেশ কিছু পানীয় রেখে দেয়া—এগুলো শয়তানের ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, 'নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তাঁর রব্বের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।’ [সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত- ২৭]
চতুর্থতঃ শয়তান তাঁদের অর্থের লোভ দেখায়। অর্থের লোভে পড়ে হারামহালালের দিকে কোনো খেয়াল রাখে না। হালাল-হারাম মিশ্রণ করে ফেলে।
পঞ্চমতঃ কতক ধনী হয় কৃপণ। কৃপণতাকে কাজে লাগিয়ে শয়তান তাঁদের ধোঁকা দেয়। আল্লাহ’র রাস্তাতে খরচ করা থেকে বিরত রাখে। যাকাত প্রদানে পিছিয়ে রাখে।
গরিবদের ওপর শয়তানের ধোঁকা
আল্লাহ তাআলা বলেন, “শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজে উৎসাহ দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।" [সূরা বাকারাহ, আয়াত- ২৬৮]
গরীবদের প্রতি শয়তানের এটাই প্রধান ধোঁকা। যাদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে, যারা দিন আনে দিন খায়—শয়তান তাঁদেরকে দারিদ্র্যের ভয় দেখিয়ে ধোঁকা দিতে চায়।
সুন্নত ছেঁড়ে দেয়ার ব্যাপারে শয়তানের ধোঁকা
সুন্নত ছেঁড়ে দেয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমরা নামাজ পড়ি, কিন্তু পরিপূর্ণ হক আদায় করে পড়ি না। কোনো রকম ফরজ আদায় করতে পারলেই ব্যস।
শয়তান সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়, মানুষ যখন সিজদার মাধ্যমে আল্লাহ’র কাছে মস্তক অবনত করে। এজন্য, শয়তান সবসময় মানুষকে নামাজ থেকে বিরত রাখতে চায়। যতগুলো ইবাদত রয়েছে তন্মধ্যে নামাজে সবচেয়ে বেশি গাফিলতি কাজ করে। তার কারণ, শয়তান আমাদেরকে নামাজ থেকে বিরত রাখার জন্য সর্বদা পেছনে লেগেই থাকে। কাউকে পারে নামাজ থেকে বিরত রাখতে; কাউকে পারেনা। যাকে নামাজ থেকে বিরত রাখতে পারে না, তাকে এই বলে ধোঁকা দেয়——'থাক, ফরয তো পড়েছিস, সুন্নত না-পড়লেও চলবে।' এমতাবস্থায় আপনি আমি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে অনেক সময় ফরয পড়েই মসজিদ ত্যাগ করি; সুন্নতের প্রতি কোনো টান থাকে না।
#শয়তানের_বিরুদ্ধে_লড়াই বই থেকে...
আমাদের জীবনের একটা বড় পেরেশানির কারণ বস্তুগত জীবিকার চিন্তা। কেউ হয়তো এটা নিয়ে বাড়াবাড়িতে মাতেন, আবার কেউ ছাড়াছাড়ি করেন। কিন্তু জীবনের এই অপরিহার্য বিষয় নিয়েও ইসলামে রয়েছে সুন্দর সমাধান। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু তাই ইসলামের আলোকে বস্তুগত জীবিকার গুরুত্ব।
■ হালাল জীবিকা অনুসন্ধান প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ। (আলজামিউস সগির লিস-সুয়ুতি, হাদিস : ৫২৭২)
প্রত্যেক মুসলিম বলতে যদিও নারী-পুরুষ উভয়কেই বোঝায়, কিন্তু এখানে কিছুটা ভিন্নতা আছে। পুরুষের ওপর তার অধীনস্থদের ভরণপোষণ ওয়াজিব, নারীদের ওপর নয়।
■ ফরজ সালাতের পর, জীবিকা অনুসন্ধান হলো ফরজের পর ফরজ। (তাবারানি, বাইহাকি, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)
তার মানে, আল্লাহ তাআলা যে বলেছেন, ফরজ নামাজের পরে তোমরা বেরিয়ে পড়ো, এবং আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ তালাশ করো। সেই হিসেবে বলা হচ্ছে যে, ফরজ সালাতের পরে জীবিকা অনুসন্ধানের যে তাগিদ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। অর্থাৎ, ফরজের পর আরেকটা ফরজের হুকুম আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন।
■ যেহেতু জীবিকা উপার্জন ছাড়া ফরজ দায়িত্ব পালন করা যায় না; সেহেতু জীবিকা উপার্জন ফরজ। ঠিক যেভাবে সালাত আদায়ের জন্য পবিত্রতা অর্জন ফরজ। [কিতাবুল কাসব লি মুহাম্মাদ আশ-শাইবানি, পৃষ্ঠা ৭৩]
■ মুমিনের দেহ হলো তার বাহন, সে যেন বাহনের সাথে উত্তম আচরণ করে। [মুসনাদে আহমদ হাদিস : ৬৬৩৯]
অর্থাৎ, আমার এই দেহকে সুস্থ-সবল রাখার জন্য, এই দেহ যদি অসুস্থ হয়ে যায়, এটিকে সুস্থ করার জন্য আমাকে জীবিকা উপার্জন করতে হবে। এই বাহনের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে। খাদ্য-পোশাক-আবাস দিতে হবে। সেটা ফ্রি পাওয়া যায় না, সেজন্য অর্থকড়ি লাগবে। এই টাকার ব্যবস্থাটা আমরা দুইভাবে করতে পারি।
হয় আমাকে কারও কাছ থেকে ডাকাতি করতে হবে, কারও কাছ থেকে ছিনতাই করতে হবে, দোকানপাট লুট করতে হবে।
অথবা আমাকে জীবিকা উপার্জন করে, টাকা কামাই করে, সেটা দিয়ে দোকানে গিয়ে কিনতে হবে।
প্রথম রাস্তা হলো হারাম, আর হালাল রাস্তা হলো, জীবিকা উপার্জন করা। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, ইসলামে জীবিকা অনুসন্ধান করা ফরজ একটি আমল।
#মুমিনের_ক্যারিয়ার_ভাবনা বই থেকে...
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Telephone
Address
Rangpur
5300
Rangpur
Adventure,হাসি এবং বিনোদন মুলক ভিডিও CREATOR! 🥀LIKE, COMMENT, SHARE & SUBSCRIBE OUR PAGE🥀
Nilphamari
Rangpur, 5300
I'm YouTube video creator.my channel Link, https://youtube.com/channel/UCFGabGEOXlNoz1tX3WEdHnw
Rangpur
Hi,this is MD Miraj khan ,I am a video creator my tiktok account https://www.tiktok.com/@miraj_khan1
Rangpur, 5460
রোমান্টিক & লিরিক্স গান এবং SAD ভিডিও পেতে আমাদের পেজটিকে ফলো করুন এবং শেয়ার করে আমাদের সঙ্গেই থাকুন
Rangpur
Hello everyone,I'm Mr.Teddy friend.This is my official page.All stay with us and support me.
Rangpur
- সুস্থ মস্তিষ্কে মন খুলে হাসুন, ভেজালমুক্ত বিশুদ্ধ বিনোদন পেতে আমাদের পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন 🥰
Jaldhaka
Rangpur, 5330
সুস্থ বিনোদন, ইসলামিক গজল, ইসলামিক গল্প, ইসলামিক ভিডিও পেতে পেজটি Follow করুন।