Jahan Chowdhury - জাহান চৌধুরী

Jahan Chowdhury - জাহান চৌধুরী

গল্প লিখতে ভালোবাসি

Photos from Jahan Chowdhury - জাহান চৌধুরী's post 14/07/2022

এমন চাঁদ কি সবসময় দেখা যায়? 🤔

Once in a blue moon.
অর্থ হলঃ "কদাচিৎ" তার মানে নেই বললেই চলে।
We see this kind of full moon once in a blue moon.
অর্থাৎ, এই ধরণের চাঁদ আমরা দেখিনা বললেই চলে!

গ্লোয়িং সুপারমুন..
এ বছরের সবচেয়ে বড়চাঁদ। এ সময়ে চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসবে, তখন এর দুরুত্ব হবে ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ২ শত ৬৪ কিলোমিটার। আর এর জন্যই চাঁদকে আগের তুলনায় অধিক উজ্জ্বল দেখা যাবে, যাকে পার্ক বা গ্লোয়িং সুপারমুন বলে।

তারিখঃ ১৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার (২০২২)
রাতঃ১২.০০ টা।

11/07/2022

' কিরে তরু? এতো রাতে তুই এইখানে কি করস?'

' বাড়ি যাবেন না মৌ কাকি ?'

' হ্যাঁ রে। বাড়িতেই তো যাচ্ছি। আর বলিস না, ছোটবোনটা পোয়াতি, শ্বশুরবাড়িতে মেয়েটার মোটেও শান্তি নেই। জানিস ই তো! আমার বাড়িতেও মেয়েটাকে আসতে দেবেন না ওনারা। কি এক জ্বালা বল তো!
এদিকে মাও টেনশনে মরমর। তাই তো বেশ লম্বা কতগুলো দিন বোনের শ্বশুরবাড়িতেই ছিলাম। আর কত? ভেবেছিলাম কাল সকালে আসবো কিন্তু মার শরীরটা খারাপ শুনলাম আর মন মানলো না, বিকেলে বেরুবো বেরুবো করতে করতেই কখন যে সন্ধ্যে হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। একপ্রকার জোড় করেই সন্ধ্যেতেই রওনা হলাম। অটোওয়ালা টাও রাত হয়ে গেছে বলে নামিয়ে দিলো সেই সড়কের মাথাতেই,
কি এক যন্ত্রণা! বল তো? এখন এতোটা পথ হেঁটে যেতে হবে। ভাগ্যিস তোকে পেয়েছিলাম এখন দুটিতে মিলে কথা বলতে বলতেই চলে যাবো, ভালোই হলো তাই না বল?'

-- হাঁটতে হাঁটতেই একনাগারে বলে উঠলো পরপর দুবার নির্বাচিত মেম্বর কবির তালুকদারের স্ত্রী মারুফা জান্নাত মৌ। বয়স চল্লিশের কোঠায়, প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই কথা বলেন তবে ভদ্রমহিলা বড্ড ভালো মানুষ, সহজ-সরল। বর্তমানে রাত প্রায় বারোটা ছাঁড়িয়ে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে একহাতে শাড়ির কুচিগুলো ধরে কর্দমাক্ত রাস্তায় হাতের টর্চলাইটের মৃদ্যু আলো তাক করে টিপটিপ করে হাঁটছেন মারুফা বেগম। সন্ধ্যা থেকে ঝুম বৃষ্টি, পুরো রাস্তা কাঁদায় একহাঁটু। বাড়ি যাওয়ার জন্য বিকল্প কোনো রাস্তা নেই, নির্জন এলাকা হওয়ায় সন্ধ্যার পর এ রাস্তায় লোকজনের আনাগোনাও কম। ভদ্রমহিলার শ্বশুর-শাশুড়ি মারা গেছেন বছর বিশেক আগেই। বর্তমানে তার মা, স্বামী ও বিবাহ যোগ্য এক পুএ-সোহেলকে নিয়েই তার বসবাস।

তিনি একনাগারে এতো কথা বললেন, কিন্তু জবাবে তরুর কোনো প্রত্যুওর না পেয়ে পাশ ফিরে তাকালেন।
কিঞ্চিৎ অবাক হলেন তরুকে পাশে না পেয়ে, অন্ধকারে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন না ভেবেই কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে চোখের মোটা ফ্রেমের চশমাটা মুছতে মুছতে ডেকে উঠলেন,

' কই রে তরু? জবাব দিচ্ছিস না যে.. ক..কই তুই?'

জবাবে গম্ভীর কন্ঠস্বরে বলে উঠলো তরু,
' আমি আপনার সামনে কাকি..'

সামনের দিকে ফিরতেই ভয়ে আঁতকে উঠলেন মারুফা বেগম। হাত থাকা টর্চ লাইটের আবছা আলোয় পনের বয়সের কিশোরী তরুর মুখটা দৃশ্যমান, মেয়েটার চোখজোড়া ফ্যাকাশে, চুলগুলো অগোছালো। ছোট ছোট ঝাঁকড়া চুলগুলোর বেশিরভাগই মুখের সামনে পড়ে আছে, যার দরুণ পুরো মুখমন্ডল রয়ে গেলো দৃষ্টির অগোচরেই। ভয় পেলো মারুফা বেগম, তবে অঙ্গ ভঙ্গিমায় বুঝতে দিলেন না। যদি তাকে ভয় পেতে দেখে বাচ্চা-মেয়েটাও রাত-বিরাতে ভয় পেয়ে যায় তবে তো মেয়েটাকে সামলানোও দায় হবে। গুটি কয়েকবার চোখের পলক ফেলে নিজের অন্তনির্হিত সত্ত্বাকে ধাতঃস্থ করার চেষ্টা চালিয়ে তরুকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত পা চালাতে চালাতে বলে উঠলেন,

' রাত-বিরাতে ভূতের মতোন কি শুরু করলি? চুলগুলান ছাইরা রাখছোস কেন? মাইয়া মানুষের সন্ধ্যার পর ঘরের থেইক্যা বাইর হওয়া ভালো না জানোস না, এতো রাইতে ঘরের বাইরে কি তোর? ভূ'ত-প্রে’ত ধরবো তো।রাইত বিরাতে এইখানে আর দেরী করন যাইবো না। এমনিই অনেক রাইত হইয়্যা গেছে। জলদি পা চালা। '

- বলেই কয়েক কদম এগিয়ে এসে পরক্ষনেই কিছু একটা ভেবেই থমকে দাঁড়ালেন মারুফা বেগম। পিছনে ফিরে তাকাতেই নজরে পড়লো তরুকে। মেয়েটা আগের জায়গাতেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। টর্চটা তরুর মুখের দিকে তাক করায় ঐ মুহুর্তে মারুফা বেগমের মুখভঙ্গিটা স্পষ্ট বোঝা গেলো না। মুখভঙ্গিমা চাঁপা পড়লো ঘুটঘুটে অন্ধকারেই। ফিঁচেল কন্ঠে তরুকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলেন মারুফা বেগম,

' কিরে? মূর্তির মতোন এখনো দাঁড়াইয়া রইলি যে? এইখানেই রাইত পার করবি নাকি? কইলজায় কি ডর-ভয় কিছু নাই? '

তরু নিরুত্তর। চারিদিক থেকে ভেসে আসছে বৃষ্টি চাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ব্যাঙদের আহাজারি। ক্ষণে ক্ষণে অস্ফুটস্বরে দূরে শোনা যাচ্ছে শেয়াল দলের হাক-ডাক।
বাচ্চা-মেয়েটার কান্ডে এইবার বেশ অনেকটাই বিরক্ত হলেন মারুফা বেগম। দিন হলে নিশ্চিত রাগ দেখিয়ে চলে যেতেন, কিন্তু এই রাত-বিরাতে বোকা মেয়েটাকে ফেলে কে ই বা যেতে পারেন। মনের অন্তরিক্ষে মায়ার উদয় হলো মারুফা বেগমের, মায়ের জাত তো! কি করে পারে মেয়েতুল্য বোকা মেয়েটার উপর রাগ করে থাকতে? ভেতরে ভেতরে গলে গেলেও বাহিরে কপট রাগ দেখানোর চেষ্টা করলেন। তরুর দিকে দ্রুতপায়ে এগিয়ে এলেন, খপ করে মেয়েটার হাত পুরে নিলেন হাত মুঠোয়। মেয়েটার হাতে স্পর্শ করতেই হকচকিয়ে উঠলেন মারুফা বেগম। বাচ্চা মেয়েটার হাত যেন পরিণত হয়েছে অখন্ড বরফে। চিন্তিত ভঙ্গিমায় তরুর হাত ছেড়ে দ্রুত মুখের সামনে পরা চুলগুলো সরিয়ে কপালে হাত রাখলেন মারুফা বেগম। বলে উঠলেন,

" হ্যা রে! নিশ্চিত রাত-বিরাতেই বৃষ্টিতে ভিজেছিস? দাঁড়া আজ তোর হচ্ছে, তোর মায়ের কাছে আজ নালিশ দিয়ে তবেই....

কথা শেষ করার আগে হাত ভিজে অনুভূত হলো মারুফা বেগমের। টর্চলাইট টা হাতের দিকে তাক করার পূর্বেই বলে উঠলো তরু,

' ম'রা মাইনসের কাছে কি না'লিশ দেওয়ন যায় মৌ কাকি? আফনকে বড্ড ভালা মানুষ। অনেকটা এসেছি পথ, বাকি পথ আফনারে একাই যাইতে হইবো কাকি ।
আফনার লগে আমি আর যাইতে পারুম না। আম্মা একা, আমি গেলে গা আবার সে ভ'য় পাইবো। আমি তার চোখের আড়াল হইলেই সে কাঁ'ইন্দা ওঠে..চি'ল্লাইয়া ওঠে..'

মুহুর্তেই অজানা আশংকায় হাত অনবরত কাঁপতে লাগলো মারুফা বেগমের, হাতে রাখা টর্চের আলো পড়লো এলোপাথাড়ি। শুকনো ঢোক গিলে মিনমিনিয়ে বলল মারুফা বেগম ,

' আ..আমার লগে মশ'কারি করতাছোস ত.তরু?'

' ম'শকারি তো জী'বিতরা করে কাকি!
কাকি জানেন তো, আমি না..অনে..অনেক বড় ডাক্তার হইতে চাইছিলাম। আব্বা যখন ন'বছর আগে যক্ষা রোগে ম'ইরা গেলো, আম্মা কইলো চিকিৎসা করলে নাকি আব্বা বাঁইচা যাইতো। তহনই আম্মা কইলো সে নাকি আমারে অনেক পড়াইবো, আমি ও মনে মনে ঠিক করে রাখলাম একদিন অনেক বড় ডাক্তার হমু, বড় ডাক্তার হইলে টেকা ছাড়াই রোগী দেখমু। আব্বার মতোন আর কাউরে টেকার লাইগ্যা ম'রতে দিমু না। কিন্তু আইজ আমার আর আমার আম্মার সব স্বপ্ন ২৮ দিন আগেই এইখানের ময়লার স্তু'পের চাঁ'পায় চাঁ'পা প'ড়ছে কাকি ।
২৮ দিন আগে আপনার পোলা তার বন্ধুরা আমারে খুব'লা'ইয়া খু'বলা'ইয়া খা'ইছে.. চি'ৎকার কইরা কইরা আমি সোহেল ভাইজানের কাছে সাহায্য চাইছি, জানেন তো! কিন্তু ভাইজান যেন সেদিন পশু হইয়্যা গেছিলো কাকি। আমার গলা ছেঁড়া চিৎকারে যেন তার অন্তরে কিঞ্চিৎ দয়া ও হইলো না। জানেন কাকি, আমার চি'ৎকার শুইনা আম্মা পা'গলা ষাঁ'ড়ের ন্যায় ছুঁইট্যা আইছিলো, কিন্তু ওরা আমার মা রেও ছা'ড়লো না কাকি। শা'বল দিয়া বাড়ি মা'ই'রা আমার চোখের সামনেই দু'খন্ড ক'ইরা দিলো আমার আম্মার মাথাখা'না। কা'ফ'নের কাপড় ও আমাগো কপালে জোটে নাই কাকি। জানেন তো কাকি, আমি না তখনও ম'রি নাই। অচেতন ছিলাম, সোহেল ভাই সমেত উনার বন্ধুগুলান আমারে আম্মার লগেই জ্যা'ন্ত এ ম'য়লার স্তু'পে চা'পা দিয়া চইলা গেলো। আজকে আটাশ নম্বর দিনের শুরু, আটাশ টা দিন আগে আফনে কেন আইলেন না কাকি ? কেন আইলেন না ?'

মুহুর্তেই ভয়ে কাঁপতে লাগলেন মারুফা বেগম, নিঃশ্বাস যেন তার এসে ঠেকেছে গলার মধ্যিখানে। হাত-পা,ঠোঁট কাঁপতে লাগলো অনবরত, পা হয়ে এলো অসাড়। ঘাঁড় বেকিয়ে হাতে তাকাতেই খেয়াল করলো হাতের আঙ্গুলে লেগে আছে জমাটবাঁধা যৎসামান্য রক্ত। টর্চের আলো কাঁপা-কাঁপা হাতে তরুর মুখের দিকে ধরতেই লক্ষ্য করলো বাচ্চা মেয়েটার পুরো মুখজুড়ে ন'খের আঁ'চড়, ঠোঁটযুগলে গভীর ক্ষ'ত। শ্বাস আঁটকে এলো মারুফা বেগমের, শক্ত হাতে টর্চটা ধরতে চাইলেও আর পারলেন না, টর্চটা গড়িয়ে পড়লো মাটিতে। মুহুর্তেই অন্ধকার হয়ে এলো চোখের চারপাশটা। অচেতন হয়ে পরমুহুর্তেই লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। শেষমুহুর্তেই কিছু অস্পষ্ট শব্দ ভেসে এলো কানে।
শব্দগুলো কিছুটা এমন..

' কি দোষ ছিলো আমার আর আমার আম্মার? কেন আজ আমাগো স্বপ্ন চাঁ'পা পড়েছে এই ম'য়লার স্তু'পে...

#সমাপ্ত
#অনুগল্প
#তরু
#লেখনীতেঃজাহান_চৌধুরী ( জেরিন )

09/07/2022

সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা।
تقبل الله منا ومنكم صالح الأعمال

" তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম "

ইদ মোবারক❤️
মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সকলের নেক আমলগুলোকে কবুল করুন।
আমীন।

03/07/2022

#আধভেজা_শহর
#লেখিকাঃজাহান_চৌধুরী ( জেরিন )
ক্যাটাগরিঃ সামাজিক+রোমান্টিক

💖সকল পর্বের লিংকঃ

#পর্বঃ০১ [ তাজা_খবর ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/154157437126362/

#পর্বঃ০২ [ লবুপাখি ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/154337613775011/

#পর্বঃ০৩ [ সামর্থিং_সামর্থিং ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/154580817084024/

#পর্বঃ০৪ [ চেঞ্জ ]
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=154840800391359&id=100372322504874

#পর্বঃ০৫ [ নানীটা আসলে কার😒 ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/155036320371807/

#পর্বঃ০৬ [ আই হেইট মাই মাইন্ড ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/155271033681669/

#পর্বঃ০৭ [ ফুফিম্মুর ছেলে ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/155476476994458/

#পর্বঃ০৮ [ ভূত ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/155740653634707/

#পর্বঃ০৯ [ সা'প ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/155978403610932/

#পর্বঃ১০ [ নুডুলস ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/156407400234699/

#পর্বঃ১১ [ ঢিপঢিপ ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/156646513544121/

#পর্বঃ১২ [ ক'লিজা ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/156841380191301/

#পর্বঃ১৩ [ বি'শ্বাসঘা'তকতা ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/157286293480143/

#পর্বঃ১৪ [ ক্রিংক্রিং ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/157511290124310/

#পর্বঃ১৫ [ ডুবে ডুবে ভালোবাসি ]
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=157729250102514&id=100372322504874

#পর্বঃ১৬ [ জোড়া চড়ুঁই ]
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=157984526743653&id=100372322504874

#পর্বঃ১৭ [ পাক্কা প্রমিস ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/158253593383413/

#পর্বঃ১৮ [ বর্তমান-ভবিষ্যৎ ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/158784253330347/

#পর্বঃ১৯ [ ডালভাজা ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/158978043310968/

#পর্বঃ২০ [ অভিমান ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/159156043293168/

#পর্বঃ২১ [ পার্সেল ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/159568336585272/

#পর্বঃ২২ [ মনের কথা মন বোঝে না ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/159810916561014/

#পর্বঃ২৩ [ টুকটুকির আব্বু ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/160279476514158/

#পর্বঃ২৪ [ প্রেমে পরা বারণ ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/160494786492627/

#পর্বঃ২৫ [ আধভেজা শহর - অন্তিম পাতা ]
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/160686089806830/

02/07/2022

#আধভেজা_শহর ( অন্তিম পাতা )
#পর্বঃ২৫ [ আধভেজা শহর ]
#লেখনীতেঃজাহান_চৌধুরী ( জেরিন )

' ফোন মানে আপনি কি ফো..ফোন চোর?
আমার ফোন আমি আপনাকে কিছুতেই দেবো না..
এখনো সময় আছে, ভালো ভালোয় বলছি কোল থেকে আমায় নামিয়ে দি..দিন, আমার জামাই জানতে পারলে কিন্তু আপনার হাত দুখানা ভে'ঙে গুঁ'ড়ো গুঁ'ড়ো করে দেবে.....

' তাই বুঝি?'

' তা নয় তো কি?'

আর কথা বললো না আকাশ, লাবণ্যকে কোলে নিয়েই ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো সে । ভড়কালো লাবণ্য, যেন হুঁশ ফিরে এলো তার। বুঝতে পারলো এই এন্গরি ম্যান তার জামাই ছাড়া কেউই হতে পারেনা, পরপর দুবার চোখের পলক ফেলে ভালোমতোন দেখে নিলো আকাশকে। চিৎকার করে উঠলো লাবণ্য, এবং বললো ;
' ভূল হয়ে গেছে আমার, এখন আপনাকে চিন্তে পেরেছি.. ত..তখন মজা করছিলাম। স..সরি!'

' কয় শত ফোন দিয়েছি কোনো খবর আছে তোর?'

' আব..ফো. ফোন তো সাইলেন্ট মুডে ছিলো, খেয়ালই করিনি।'

' ওকে, সারারাত আমাকে জ্বালানোর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে।'

' ন..না...না..
( বলার পূর্বেই লাবণ্যকে কোল থেকে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিলো আকাশ।)

সকাল সকাল গায়ে হিমশীতল ঠান্ডা পানি পড়তেই কেঁপে উঠলো লাবণ্য। মুখ ফুলিয়ে তাকালো আকাশের দিকে। রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো,

' এটা কি হলো? আপনি খুব..ব খারাপ।'

' ইয়েস আই এম। এ তো কিছুই না, গেট রেডি ফর ইউর নেক্সট পানিশমেন্ট। চুপচাপ গোসল সেরে বেরিয়ে আয়।
-- বলেই ওয়াশরুমের দরজা চাপিয়ে বেরিয়ে গেলো আকাশ।

হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো লাবণ্য। পরক্ষণেই কিছু একটা মনে পড়তেই বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো সে,
' আরে..রেহ! আমার ড্রেস তো দিয়ে...
( কথার মাঝপথেই তওবা তওবা বলে মুখ চেপে ধরলো নিজের।) বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো, ' দরকার নেই, বাপু।
এই লোকের উপর আমার যৎসামান্য ভরসা নেই..

প্রায় এিশমিনিট ওয়াশরুমে বসে বসে চিন্তাভাবনা করতে লাগলো লাবণ্য, উনি কি রুমে আছেন? নাকি চলে গেছেন? ড্রেসই বা কিভাবে আনবে সে? দূর দূর! বিশেষ করে উওর সাজেস্ট করলো না মেয়েটার মস্তিষ্ক। একপর্যায়ে কাঁকভেজা হয়েই ওয়াশরুমের দরজা খুলে রুমের চারিদিকে একবার চিরুণী তল্লাশী চালিয়ে নিলো লাবণ্য। আকাশকে না দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে । বের হয়ে এলো ধীরপায়ে, পা টিপেটিপে ঘরে প্রবেশ করতেই চোখ পড়লো বিছানায় রাখা স্টোনের কাজ করা নীলরঙা একটা অপূর্ব শাড়ির উপর ..ভাবনার সাগরে ডুব দেওয়ার পূর্বেই নজর পড়লো শাড়ির নিচে চাপা পড়া একটা সাদাকাগজ।
চিরকুটই বলা যায়, দুপা এগিয়ে এসে কাগজখানা হাতে নিলো লাবণ্য। কাগজখানায় গুটি গুটি অক্ষরে লিখা,

' অনেকদিন আগেই এই শাড়িটা তোর জন্য কিনেছিলাম আমি, ইচ্ছে ছিলো তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার। তবে হয়ে উঠেনি, আজ বড্ড স্বাদ জেগেছে আমার তোকে এ শাড়িতে দেখতে। একবার কি সাজাবি নিজেকে অপরুপ সাজে? শুধুমাএ এই আমিটার জন্য!'

-- লবুপাখির রাজ্যের এক পথহারা পথিক
আকাশ'

চিরকুটটির দিকে একদৃষ্টে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো লাবণ্য, পরক্ষণেই চিরকুটটা আগের জায়গায় রেখে শাড়িটা তুলে নিলো হাতে, খেয়াল করলো ইতিমধ্যেই ঘরের মেঝে পানিতে ভেসে যাওয়ার জোগাড়! দাঁত দিয়ে জিভ কাটলো মেয়েটা। দৌঁড়ে চেয়ার থেকে তোয়ালেটা নিয়ে পা বাড়ালো ওয়াশরুমের পানে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুলগুলো মুছতে ব্যস্ত লাবণ্য। চুলগুলো মুছতে মুছতেই অজান্তেই চোখ পড়লো আয়নায়, স্থির হয়ে এলো তার হাতজোড়া। নজরে পড়লো আকাশকে, একদৃষ্টে আয়নার পানেই তাকিয়ে আছে সে। মুহুর্তেই একরাশ লজ্জা এসে ভীড় করলো লাবণ্যের চোখ-মুখে, দৃষ্টি অবনত হলো মেঝেতে। লাবণ্যের দিকে এগিয়ে এলো আকাশ, লাবণ্যের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো পরমুহূর্তেই।
' ঢিপঢিপ! ঢিপঢিপ!
নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো দ্রুতই, এই বুঝি তার হৃদযন্ত্রটা বেরিয়ে আসবে এক্ষুণি। লাবণ্যের হাত থেকে তোয়ালেটা সযত্নে নিয়ে নিলো আকাশ, চোখ তুলে তাকালো লাবণ্য, চোখে চোখ পড়লো দুজনার। এবার আর চোখ সরিয়ে নিলো না লাবণ্য, তাকিয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বরাদ্দকৃত চেয়ারটিতে লাবণ্যকে এনে বসালো আকাশ, নিজের হাতে আকাশের স্পর্শ অনুভূত হতেই কেঁপে উঠলো লাবণ্য। হাসলো আকাশ, পরক্ষণেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো লাবণ্যের চুলগুলো মুছতে। স্থির হলো হৃদস্পন্দনের ধুকপুকানি মেয়েটার, বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে তার, অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা, মনে হলো যেন সময়টা থমকে যাক এক্ষুণি.. বছরের পর বছর পেরিয়ে যাক এভাবেই। বলে উঠলো আকাশ,

' আমাকে পাগল না বানালে কি হতো না লবুপাখি?'
দৃষ্টি তার তখনো লাবণ্যের চুলের গোছাতেই বিদ্যমান।

আমতা আমতা করে জবাব দিলো লাবণ্য, ' আ…আমি আবার কি করলাম?'

' এই যে এইভাবে তাকিয়ে আছিস?
জানি অত্যন্ত কিউট আমি, চোখ ফেরানো দায়।
যদিও ভার্সিটিতে নীলা-রুপা-নিপা সবাই ও এভাবেই তাকিয়ে থাকে তবুও ছেলে বলে কি লজ্জা নেই নাকি!'
( লজ্জা লজ্জা ভাব করে )

তবে আকাশবাবু তো জানেন না মজার ছলে তিনি কি কান্ডটাই না করে বসেছেন..দু-চার লাইনের বাক্য ব্যয় করলেও তার লবুপাখি আঁটকে রয়েছেন নীলা' নামক নামটাতেই.. লাবণ্যের কোনো জবাব কানে না আসতেই
পুনরায় আয়নায় লাবণ্যের দিকে তাকালো আকাশ।
চোখগুলোকে আগ্নেয়গিরি বানিয়ে রাগে ফুঁসফুঁস করছে লাবণ্য, একগাল হাসলো আকাশ - যেন এহেন কিছুর অপেক্ষাতেই ছিলো সে। তড়িৎ গতিতে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো লাবণ্য, তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো ঘনঘন। দ্রুতহাতেই আকাশের হাতে থেকে তোয়ালে নিয়ে নেওয়ার অভিপ্রায়ে হাত বাড়ালো, তবে পারলো না কারণ, তোয়ালের অপর পার্শ্বেই শক্তহাতে একজন ধরে রেখেছে। তবুও হাল ছাড়লো না লাবণ্য, টানাটানি চালিয়েই বলে উঠলো বাংলা সিনেমার প্রচলিত ডায়লগ,
' হ্যাঁ তাই তো। আপনার দিকে তো ওই চিপকু নীলা ই তাকিয়ে থাকবে। এখন তো আমি পুরনো হয়ে গেছি কিনা! আমাকে তো এখন আপনার চোখেই পড়বে না।
ছাড়ুন, তোয়ালে। নিজের চুল আমি নিজেই মুছতে জানি। আপনার এতো কষ্ট করতে হবে না, আপনি ওই চিপকু নীলার কাছেই যা..যান.. থুক্কু এইখানেই বসে থাকুন, একদম নড়বেন না।'

লাবণ্যের কথাগুলো কর্ণগোচরে পৌঁছাতেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো আকাশ, সজোরে তোয়ালে টান মারলো, অপ্রস্তুত থাকায় তোয়ালে সমেতই হুমড়ি খেয়ে আকাশের বুকে এসে মাথা ঠেকলো মেয়েটার। মুখ ফুলিয়ে ঘাঁড় বেকিয়ে আকাশের দিকে তাকালো লাবণ্য। দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো আকাশ,
' বউপাখি আমার এত্তো জেলাস? হায়! মে তো দিওয়ানা হয়ে গেলাম, বউপাখি। '

রাগে গিজগিজ করে আকাশের বুকে কিল বসিয়ে দিলো লাবণ্য। আকাশের থেকে ছাঁড়া পেতে ব্যঙের মতোন ছটফট করতে লাগলো, তবে নড়তে পারলো না একইঞ্চি ও। আরো শক্তহাতে লাবণ্যের কোমড় জড়িয়ে ধরলো আকাশ, বলে উঠলো;
' ছাড়া পাওয়া কি এতোই সহজ!'

কি জানি কি হলো লাবণ্যের? মুহুর্তেই ছটফটানি বন্ধ হয়ে এলো মেয়েটার। তবে এবার আর দৃষ্টি অবনত হলো না, তাকিয়ে রইলো আকাশের চোখের দিকেই নিষ্পলকে। ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো আকাশ,
' আমার বউ পাখি কি জানে যে রেগে গেলে তাকে দেখতে ঠিক কতটা সুন্দর লাগে? '

আকাশের ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো কানে আসতেই একগুচ্ছ লজ্জারা ডানা মেলে এসে ভীড় করলো লাবণ্যের কাছে,এবারে দৃষ্টি অবনত হলো মেয়েটার। আকাশের চোখে তাকানোর মতোন আর সাহস হয়ে উঠলো না। লাবণ্যের কোমড় থেকে হাত সরালো আকাশ, হাতে থাকা তোয়ালেটা রেখে দিলো পাশ টেবিলেই। তখনও দৃষ্টি অবনত মেয়েটার। মুহুর্তেই কপালে কপাল ঠেকলো দুজনার, আবেশে চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলো লাবণ্য। শীতল কন্ঠে বলে উঠলো আকাশ,

' বড়রা সকলে তোকে বললো আমাকে না জানিয়ে বাড়িতে চলে আসতে, আর তুইও সকলের কথামতোন গাঁধীর মতোন আমাকে কিছু না জানিয়েই চলে এলি। ওদিকে যে তোকে কয়েক ঘন্টা না দেখতে পেয়ে, ফোনে না পেয়ে আমি কতটা অস্থির হয়ে পড়েছিলাম একবারো ভাবলি না?
আমার জন্য কি তোর এতটুকুও মায়া হয়না বউপাখি?'

লাবণ্যকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পুনরায় একনাগারে বলে উঠলো আকাশ,

' জানিস। আম্মু, উসমান, রাফী সবাইকে জিজ্ঞাসা করেও কোনো সদ্যুওর পাচ্ছিলাম না
তোকে ফোন দিয়ে পাচ্ছিলাম না, তারিনটাও ফোন তুলছিলো না তখন ঠিক কতটা চিন্তায় পড়ে গেছিলাম আমি। পরে মুজিবর চাচাকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম তুই বাড়িতেই আছিস, নিরাপদে আছিস। তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো ও তোকে না দেখে কিছুক্ষণ থাকাও যেন দায় হয়ে গিয়েছিলো আমার।
' এতো পাগল আমায় কেনো করলি বউপাখি?
আমার জন্য কি তোর এতটুকুও মায়া হয়না?'
ভোর হওয়ার আগেই ঘুমন্ত রিসেপশনিস্টদের সাথে একপ্রকার হা'ঙ্গামা করে হসপিটালের পাঠ চুকিয়ে ছুঁটে চলে এসেছি। আর আমাকে সারারাত জাগিয়ে রেখে, পাগল বানিয়ে তুই কি বেঘোরে ঘুমচ্ছিলি? নিমিষেই রেগে গিয়েছিলাম তখন, তাই সকাল সকাল এহেন একটা শাস্তি দিয়ে বসলাম তোকে। পরে আমার টনক নড়লো, সকাল সকাল তোকে এভাবে ঠান্ডা পানির নিচে দাঁড় করানো উচিত হয়নি আমার। সরি!"

পিটপিট করে আঁখিজোড়া মেললো এবার লাবণ্য। লাবণ্যের চোখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো আকাশ। মুগ্ধতার নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো লাবণ্য,
' এতোটা ভালো আমায় কেনো বাসেন? আপনার এ ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে পারবো তো আমি? '
( প্রশ্নটা করতেই চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠলো মেয়েটার)

নিমিষেই লাবণ্যকে বুকে জড়িয়ে ধরলো আকাশ। বলে উঠলো আকাশ,
' তোকে ভালোবাসার কারণ অসংজ্ঞায়িত!
কারণে অকারণে আমি ভালোবাসি তোকে।
শুধু এতটুকুই জানি তোকে ছাড়া আমার চলবে না।
রইল বাকি মর্যাদা রাখার কথা? এর উওর আমার জানা নেই, আর না আমি জানতে চাই কোনোদিন।
আমার শুধু তুই আমৃত্যু পাশে থাকলেই চলবে।'

-- এবার শক্তহাতে আকাশকে জড়িয়ে ধরলো লাবণ্য ও। গাল বেয়ে টপাটপ গড়িয়ে পড়লো নোনাজল। এ জল সুখের, আনন্দের, সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতার!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
লাবণ্যের হাত মুঠোতে পুরেই খাবারের ঘরে এলো আকাশ। লজ্জায় দৃষ্টি অবনত মেয়েটার, তবে কোনো এক কারণে আজ আর আকাশের হাত থেকে হাত ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে মোচড়ামুচড়ি করলো না লাবণ্য। খাবারের ঘরে উপস্থিত সকলে। আকাশ আর লাবণ্য খাবারের ঘরে প্রবেশ করতেই রাফীর তও্বাবধানে সকলে একএে করতালি দিয়ে উঠলো। লজ্জায় লাল- নীল হলো লাবণ্য, ইচ্ছে হলো তার গল্পের এ দৃশ্য থেকে নিজেকে এডিট করে অন্য কোথায় বসিয়ে দিতে। তবে তা সম্ভবপর হলো না কিছুতেই হয়তো এখানেই বাস্তবতা আর কল্পনার মধ্যকার ফাঁড়াক।

গলা খাঁকড়ি দিয়ে বলে উঠলো রাফী, ' অনুগ্রহ করিয়া খেতে বসলে আমারও খাবার হইয়া উপকৃত হইতাম আকাশ, এছাড়া আর তেমন কিছুই না। আসলে এই কথাটা আমি বললেও আসলে আমি বলি নাই, কথাটা উসমাইন্যার মনের কথা। তাই না উসমান?

বিদ্যুৎবেগে মাথা নাড়িয়ে রাফীকে সম্মতি জানালো উসমান, বলল উঠলো ;
' বাপরে! তুই পারস ও আকাশ, সক্কাল বেলা বাড়িতে আসার জন্য কি তা'ন্ডবই না চালালি হসপিটালে। হসপিটালে একেকটা মশা ও জাইন্যা গেছে যে লাবণ্য তোরে না জানাইয়া বাড়ি আসছে, বাপরে বাপ!'

উসমানের কথা শেষ হতেই একপত্তর হেসে উঠলো সকলে। সকলের দিকে একবার তাকিয়ে একগাল হেসে বলে উঠলো, ' যাইহোক, যা হইছে হইছে এইবার তোর বউরে নিয়া দয়া করিয়ে খেতে বয়, সাথে আমাদের উপরও একটুকু দয়া কর। এতো এতো মজাদার খাবারের গন্ধে আমার পেটের ইঁদুরগুলো আর একটু দেরী হলে নিশ্চিত পেট ফেটে বাহিরেই বেড়িয়ে আসবে।
জলদি কর বন্ধু, জল...দি..'

এবার সকলের সাথে হাসিতে যোগ দিলো আকাশ আর লাবণ্যও। পরিবারের সদস্য বেশি হওয়ায় মেঝেতে মাদুর পেতে বসে পড়লো সকলে খেতে বসে পড়লো সকলে, রহুল আমীন আগেই বসে ছিলেন বিধায় খেয়াল করেননি তিনি কার পাশে বসেছেন কারণ, তিনি কখনো আকাশের পাশাপাশি বসেন না। বসেন না বললে ভূল হবে, আকাশই পাশাপাশি বসতে চায় না কখনো। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো আকাশ বসেছে তার পাশেই। হকচকিয়ে উঠলেন তিনি, পরিস্থিতি বুঝতেই দ্রুত বসা থেকে উঠার উদ্দেশ্যে দাঁড়াতেই রুহুল আমীনের হাত ধরে উঠতে বাঁধা দিলো আকাশ। অবাক নয়নে আকাশের দিকে তাকালো রহুল আমীন। একগাল হেসে বলে উঠলো আকাশ,
' আজকে থেকে আমার পাশের সিটটায় আমি সর্বদা আপনাকে চাই কাকা। বসবেন না আমার সাথে?'

আকাশের মুখপানে স্থির হয়ে এলো রহুল আমীনের দৃষ্টি, হতভম্ব তিনি। উপস্থিত সকলে তাকালো একে অপরের দিকে। সকলের চোখে -মুখে আনন্দের হাসি। পুনরায় বসে পড়লেন তিনি, মুখ তার মলিন। দৃষ্টি অবনত রেখেই বলে উঠলেন,
' আকাশ..আমার উপর রাগ করাটা তোর অধিকার। সেই রকম কাজই তো করে এসেছি আমি..

আর কিছু বলতে পারলেন না রহুল আমীন। কাকার হাতের উপর হাত রাখলো আকাশ, চোখের ইশারায় বোঝালো কিছু। বলে উঠলো আকাশ,

' কাকা, বাবারা বাবা ই হয়। আপনি যা করেছেন রাফীর কথা ভেবেই করেছেন। রাফীর মনে জমা অনুভূতিগুলোর সাথে সর্বপ্রথম আপনিই তো হয়েছিলেন পরিচিত। শুধু অনুভূতি না রাফীর করা ভূলের কথাও সর্বপ্রথম জেনেছিলেন আপনি। কিন্তু আপনি চাননি সত্যটা সামনে আসুক, আমরা জানি এবং কষ্ট পাই। আমাদের কষ্ট না দিতেই আপনি সর্বদা চেষ্টা করেছেন, টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন অনন্তের। একজন পিতার দ্বায়িত্বই পালন করেছেন আপনি..এখানে আপনার কোনো দোষ নেই।
আমার দোষ রয়েছে, আমি ই না জেনে অনেক ভূল বুঝেছি আপনাকে। প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার করেছি, আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, কাকা। আমার কাজের জন্য আমি অনেক অনুতপ্ত কাকা, দয়া করে নিজের সন্তান ভেবে আমাকে ক্ষমা করে দেন প্লিজ।'

" কি বলছিস এসব আকাশ? তোর উপর আমার কোনো রাগ নেই রে.. ভুল করেছে রাফী, সে ভুলেই পর্দা দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমি। আমারো উচিত ছিলো ওকে আরো বোঝানোর, ভুলটা আরো আগে ভাঙ্গিয়ে দেওয়া। যদি সত্যই ভাবির কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো তাহলে আমি কোনোদিন ও ক্ষমা করতাম না ওকে।'
( রাফীর দিকে তাকিয়ে, দৃষ্টি অবনত এবার রাফীর )

এবার বলে উঠলেন হামিদা বেগম, " ভাই, বিশ্বাস করুন আমার কোনোপ্রকার ক্ষোভ নেই, আর না কোনোপ্রকার রাগ আছে। রাফী তো আমার আরেকটা ছেলেই, আকাশের থেকে কোনো অংশেই কম নয় রাফী আর উসামান আমার কাছেই। ভূল তো মানুষ মাএই হয়, সন্তানেরা ভূল করবে পিতা-মাতারা শুধরে দেবে প্রকৃতির নিয়মই তো এমন, ভাই। সত্য তো এটাই যে, আমি সুস্থ আছি। রাফী বাপটা আমার নিজের ভূলটা বুঝতে পেরেছে আর কি চাই!'

হামিদা বেগমের সাথে সম্মতি প্রকাশ করলেন হাবিবুর রহমান ও, বললেন; ' আকাশের মা, ঠিকই বলেছে।
যা হয়েছে, হয়েছে। ভূলে যা রুহুল..আকাশ এতোদিন পর ওর কাকার সাথে মন খুলে কথা বলছে এতেই আমি অনেক খুশি।'

গল্প-গুজবের মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া শেষ হলো সকলের। গুঁড়গুঁড় শব্দ করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে মেঘের দলেরা। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই নামবে বাঁধ ভেঙে। বসার ঘরে খোঁশ-গল্পে মেতেছেন বড়রা।
বাড়িতে আজ খুশীর আমেজ। আকাশদের বাড়িতে এসেছেন আজ তারিনের আব্বু-আম্মুও। কথা চলছে রাফী আর তারিনের শুভ পরিণয়ের। দিন পাকাপোক্ত করার সিদ্ধান্ত আজকেই নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে আকাশ। আকাশের সাথে রাফীর মনোমালিন্য ঘুঁচেছে অনেক আগেই, শুরুতে রাফী নিজের কর্মের জন্য আকাশের সাথে চোখে-চোখ মেলাতে না পারলেও, সময়ের পরিক্রমায় ঠিক হয়ে গেছে সবকিছুই।
রাফীর জন্য অদ্ভুত অনুভূতির জাগ্রত হয়েছে তারিনের মনে পূর্বেই, তবে ধীরে ধীরে সেই অনুভূতি স্থান করে নিয়েছে উচ্চতর পর্যায়ে। রাফীর মনেও বপন হয়েছিলো অনুভূতি, তবে প্রস্ফুটিত করেনি কখনো। এক পর্যায়ে, ভালোবাসার স্বীকারোক্তি প্রকাশ করানোর লক্ষ্যে ভিন্ন পথে হেঁটেছিলো তারিন। কাজেও দিয়েছে সেই উপায়, আকাশের হসপিটালেই অবস্থানকালে রাফীকে শুনিয়ে শুনিয়ে লাবণ্যকে বলেছিলো তারিন,

' লবু.. বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আমার। হয়তো আর কখনো আসা হবে না তোর বাড়িতে, জ্বালানো হবে না আর কাউকেই.. চলে যাবো অনেকদূর। দেখিস পরে যেন কেউ হারিয়ে না খুঁজে আমায়।'

- তারিনের কথাগুলো মুহুর্তেই ধরতে পেরেছিলো লাবণ্য, কবে রাফী ভাইকে বুঝতে দেয়নি কিছুই। সেদিন তারিনের সাথেই তালে তাল মিলিয়ে ছিলো লাবণ্য। জলকে চোখের পানি বানিয়ে লাবণ্যের তারু বেবি কাঁদার অভিনয় করেছিলো জব্বর। দারুণভাবে কাজেও লেগেছিলো বুদ্ধি, তারিনের মুখে বিবাহের কথা শোনামাএই কেঁপেছিলো রাফীর হৃদয়। হয়তো হয়েছে রক্তক্ষয়, বুঝতে পেরেছিলো তার অন্তরে লুকায়িত অদ্ভুত অনুভূতির। পুরো একদিন নিজেকে ঘরবন্ধি ই রেখেছিলো রাফী। রাফীর লক্ষণ কিছুই ঠাওর করতে না পেরেই আশা হারিয়ে একগাদা কাঁঠাল খেয়ে দুঃখে ম'রার ঘুম ঘুমিয়েছিলো সেদিন। ঘুম থেকেই উঠতেই দেখতে পেলো ছন্নছাড়া একটা চেহারা, ছলছল আঁখিজোড়া, আ'তঙ্কগ্রস্ত এক সুদর্শন যুবকের। সেদিনই লাজ-লজ্জার পাঠ চুকিয়ে রাফী করেছিলো তার স্বীকারোক্তি। নিঃসঙ্কোচে দিয়েছিলো তারিনের জন্য মেয়েটার পরিবারে বিবাহের প্রস্তাব। সেদিন আর নকল জলের প্রয়োজন পড়েনি। আনন্দে একপত্তর কেঁদেছিলো মেয়েটা। পূর্ব থেকেই রাফীকে মেয়ে জামাই রুপে পছন্দ থাকায় একপ্রস্তাবেই রাজী হয়ে গিয়েছিলেন তারিনের বাবা-মা। আর রইলো বাকি রাফীর পরিবার, রাফীর পছন্দ মানেই তাদের পছন্দ। আর এ তো তারিন! মেয়েটাকে যে তাদেরও বড্ড পছন্দের। আপত্তির তো আর কোনো প্রশ্নই নেই। তবে সেদিন ন্যাকাসুরে কেঁদেছিলো উসমান, দাবি তার ছিলো একটাই; ' একে একে সবাই হচ্ছে মিঙ্গেল, তিনি আর কতদিন থাকবে সিঙ্গেল। আর যাই হোক তার নাকি ' বলিউডের সা'লমান খান হওয়ার ইচ্ছে নেই..
সেদিন ও সকলে উসমানের কথা আকাশের উড়িয়ে হেসেছিলো একপত্তর।

*** বর্তমানে****

হর্ণ বেজে উঠলো জিপগাড়ির। রোকেয়া বেগম মুখে আঁচল টেনেই উঁকি মারলেন বাহিরে, মিজান উদ্দিনকে দেখতেই দ্রুতপায়ে সরে আসলেন দরজা হতে। রোকেয়া বেগমকে একগাল হেসে সালাম দিলেন মিজান উদ্দিন, উত্তর নিলেন রোকেয়া বেগম তবে মনে মনে। মিজান উদ্দিনের একহাতে কিছু কাগজপএ খামে মোড়ানো আরেকহাতে তিন প্যাকেট মিষ্টি। বসার রুমে প্রবেশ করেই বলে উঠলেন,

' সুখী পরিবারে পুনরায় পদধূলি ফেললাম, সুখী মানুষগুলোকে আরো একটু আনন্দ দেওয়ার লক্ষ্যে..'

ওই মুহুর্তে সকলে নিশ্চুপ থাকলেও ভ্রু বাকিয়ে বাঁজখাই কন্ঠে বলে উঠলেন সালেহা বানু,
' ওতো কথা ঘুরাও কেন মিয়া, কি কইবা খোলাসা কইরা কও।'

জবাবে কিছুটা ভড়কে ছিলো মিজান উদ্দিন,নিজেকে সামলে নিলেন পরক্ষণেই বলে উঠলেন,
' জ্বি, অবশ্যই।
আনন্দের আরেকটি নিউজ হচ্ছে আমাদের গোয়ান্দা বিভাগ থেকে আকাশ এবং রাফী দুজনকেই নতুন গোয়ান্দা সদস্য হিসেবে নির্বাচন করেছেন আমাদের মেজর জেনারেল। তিনি আকাশ ও রাফী উভয়ের বন্ধন, ভালোবাসা দেখে ইমপ্রেস। তিনি খুব দ্রুতই আকাশ আর রাফী দুজনকে নিয়েই আপকার্মিং তদন্তের কাজ করতে চাচ্ছেন। তদন্তের মিমাংসা যথাযথভাবে মিমাংসা করা সম্ভবপর হলেই দুজনের কাজ পাকাপোক্ত। আশা করছি, অবশ্যই আমরা সফল হবো। ইর্মারজেন্সি একটা তদন্ত চলায় এতোদিন খবরটা জানাতে পারিনি। আজ সুযোগ বুঝে চলে এসেছি।
আমাদের হেড অফ দ্য ডির্পান্টমেন্টের কড়া নির্দেশ এবার আর, তিনি রাফী বা আকাশ কারো ই নাকোচ বা বাহানা শুনতে রাজী নন, স্পেশালভাবে এ ব্যাপারে স্যারকে ( হাবিবুর রহমান) অনুরোধ করেছেন। '

এতো ভালোর মধ্যে আরো একটা ভালো নিউজ শুনতেই মুহুর্তে ই আনন্দে ভরে উঠলো বকুলভিলা। হাবিবুর রহমানের অনুমতিক্রমে, রাফী ও আকাশের ইচ্ছানুসারেই শীঘ্রই কাজে জয়েন করার বিষয়টি পাকাপোক্ত হয়। আনন্দিত আজ সকলে, একটা সুখী পরিবারের সুখী হতে আর কি লাগে? কিছুক্ষণ পরেই সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন মিজান উদ্দিন
ঠিক তখনই সকলের আনন্দের সাথে তাল মেলালো একরাশ মেঘমালা। মুহুর্তের বৃষ্টি আধভেজা করে দিলো এ শহরকে। হাবিবুর রহমান, হামিদা বেগম,তারিনের বাবা-মা, মুজিবর রহমান, হোসনে আরা বেগম, হামিদুর রহমান সবাই ব্যস্ত একে অপরের সাথে আলাপ-চারিতায়, রাফী-তারিন ব্যস্ত একে অপরের দিকে তাকানোয়, সালেহা বানু ব্যস্ত পান চিবুতে।

অন্যদিকে সকলের অলক্ষ্যে নিজের বউপাখিকে আধভেজা শহরে বাইকে চড়ে একপত্তর লং ড্রাইভের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে আকাশ। পড়ছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, পেছন থেকে শক্তহাতে আকাশকে জড়িয়ে ধরে সেই সময়টা উপভোগ করছে লাবণ্য, চোখ বন্ধ রেখেই গেয়ে উঠলো লাবণ্য,

🎶অসময়ি এ বৃষ্টিতে আমি,
অসময়ি এ বৃষ্টিতে তুমি,
কিছু না বলা কথা দিলাম ভাসিয়ে,
ধুয়ে যাক না এ মন অভিমানী।

( বলেই আকাশের দিকে একগাল হেসে তাকালো লাবণ্য। তাকালো ও আকাশও, চোখা-চোখি হলো দুজনার।)

মেঘলা আকাশ, হাল্কা হাওয়া,
যাই ভিজে আর নিজেকে ফিরে পাওয়া।
আধখোলা কাঁচ, বৃষ্টি ছোঁয়াচ,
তোমার নামে মেঘের খামে চিঠি দিলাম আজ।
আধভেজা প্রহর, আধভেজা শহর,
আধভেজা তুমিও আর আধভেজা আমার সফর।

( এক সাইড করে বাইক পার্ক করলো আকাশ। বৃষ্টি হওয়ায় দিনের বেলাতেও রাস্তা জনমানবশূণ্য। বাইক থেকে নেমেই ঘুরে ঘুরে গায়ে বৃষ্টি ছোঁয়াতে ব্যস্ত হলো লাবণ্য। বাইকে হেলান দিয়ে বসে বউপাখির হাসিমাখা মুখের দিকে নিষ্পলকে চেয়ে রইলো আকাশ।)

হালকা পায়ে রঙ ধোয়ানোর আবদার,
মেঘ বলেছে বৃষ্টি আনবে বারবার।
রাস্তা বেয়ে এক ছাতায় প্রেমের ঢল,
রঙিন সাজুক আমার শহর অনর্গল।

( গাইতে গাইতে আকাশকে হাত ধরে টেনে আনলো লাবণ্য। ব্যাগ থেকে একটা চাতা বের করে লাবণ্যের মাথায় ধরলো আকাশ, একহাতে ছাতাটা সরিয়ে দিলো লাবণ্য)

মেঘেরা ক্লিপ খুলেছে মন জুড়োয় খুশিতে,
হাল্কা হাওয়ার সিম্ফোনিতে,
কাটছে আজ অবসর।

( ছাতার নিচ থেকে বের হয়ে শাঁড়ির আঁচল বাতাসে উড়িয়ে ঘুরতে ঘুরতে গেযে উঠলো লাবণ্য।)

আধভেজা প্রহর, আধভেজা শহর,
আধভেজা তুমিও আর আধভেজা আমার সফর।

( আবারো ছাতা নিয়ে একগাল হেসে লাবণ্যের পাশে এসে দাঁড়ালো আকাশ। গাইতে গাইতেই আকাশের চুলগুলো অগোছালো করে দিলো লাবণ্য।)

এর ফাঁকেই নাম না জানা ইচ্ছে,
ফের তোমাকে মন পাঠিয়ে দিচ্ছে।
বৃষ্টি শেষে তাও যে থাকে অল্প,
আবছা আলো আর না বলা গল্প।

( গাইতে গাইতেই আকাশের হাত থেকে জোর করে ছাতাটা নিয়ে পাশেই মাটিতে ঠেকিয়ে রাখলো। আকাশের আঙ্গুলির মাঝে নিজের হাত এলিয়ে দিয়ে গাইতে গাইতে ঘুরতে লাগলো লাবণ্য।)

তোমাকে মেঘ সাজিয়ে দিচ্ছি,
আর নিজেকে,
ঠিক সেভাবে বৃষ্টি ভেবে নিচ্ছি

( গাইতে গাইতেই পুনরায় আকাশের পিছনে বাইকে এসে বসলো লাবণ্য।)

তারপর ( বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলে উঠলো আকাশ)

আধভেজা প্রহর, আধভেজা শহর,
আধভেজা তুমিও আর আধভেজা আমার সফর।

( একহাতে আকাশকে জড়িয়ে ধরে গেয়ে উঠলো লাবণ্য, তখনই দমকা হাওয়া এসে উড়িয়ে নিয়ে গেলো
লাবণ্যের হাতে থাকা ছাতাটা। তাতে কি? পুনরায় গেয়ে উঠলো লাবণ্য)

****এভাবেই আধভেজা শহরে হাতে হাত রেখে না হয় কাটিয়ে দেবে সারাটা জীবন আকাশ আর লাবণ্য। সুখে থাকুক তার পরিবারের প্রতিটি সদস্যবৃন্দ। ভালো থাকুক সকলে। সুখ-দুঃখে সর্বদা পাশে থাকুক একে অপরের। গড়ে তুলুক আরেক নতুন শহর! ****

_____________________সমাপ্ত_____________________

গল্পের সমাপ্তিটা এখানেই। চেয়েছিলাম এই পর্বেই শেষ করবো গল্পটা, পর্বটা খুব বেশি বড় হয়ে গেছে কিনা জানি না। শুরু থেকে শেষ অবধি কেমন হয়েছে তাও জানিনা। তবে প্রতিবারের মতোন এবারো অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছি আমি আপনাদের। আপনাদের ভালোবাসায় বিমুগ্ধ আমি! অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ সকলকে। ভূলত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ঈদের পরেই আমার ফাইনাল এক্সাম, হয়তো আবারো যাবো এক লম্বা বিরতিতে। আমার জন্য দোয়া করবেন সকলে। ভালো থাকবেন সকলে, ভালো রাখার চেষ্টা করবেন আপনাদের আশেপাশের সকলকে। সকলের জন্য রইলো আমার বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। অগ্রিম ঈদ মোবারক 💜
আসসালামু আলাইকুম 💖

🌻 পূর্ববর্তী পর্বের লিংকঃ ২৪
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/160494786492627/

#আধভেজা_শহর
#পর্বঃ২৪ [ প্রেমে পরা বারণ ]
#লেখনীতেঃজাহান_চৌধুরী ( জেরিন )

ঠিক তখনই নীলরঙা একটা প্যাকেটে মোড়ানো বই নজরে পড়লো মেয়েটার। আগ্রহ বশত প্যাকেট থেকে বইটা বের করলো সে। বাহির থেকে বই মনে হলেও সেটা কোনো বই নয়, এটা একটা ডায়েরি।
কালোরঙা ডায়েরির কভার পেজে সাদা মার্কার পেন দিয়ে বোল্ড করে লিখা ' লবুপাখি '।
চিকচিক করে উঠলো লাবণ্যের চোখজোড়া। দ্রুতহাতেই উল্টালো পরের পাতা...

রঙ-বেরঙের কালি দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা;

🍁 প্রেমে পরা বারণ.. কারণে অকারণ..
তবুও কেনো মানুষ প্রেমে পরে?
কেনো সবকিছু রঙ্গিন লাগে?
প্রেমে পরা কি কোনো রোগ?
আমি কি প্রেমে পরেছি?
আমার এই অদ্ভুদ অনুভূতির কি নাম দেবো আমি?
আবেগ নাকি অনুভূতি নাকি অন্যকোনো কিছু?
কে দেবে আমায় এ প্রশ্নের সদ্যুত্তর?

-- লাইনখানা পড়েই মুচকি হাসলো লাবণ্য, নিজে নিজেই বলে উঠলো, ' সত্যই তো, মানুষ কেনো প্রেমে পরে?

ভাবলো না বেশিক্ষণ, দ্রুতহাতে আগ্রহের সহিত উল্টালো পরবর্তী পৃষ্ঠা। পেইজের মাঝ বরাবর লিখাটার শুরু, লিখা;

🍁 কোলাহলপূর্ণ এ শহরে একা একা ভালোই তো ছিলাম আমি, শান্ত ও গতিশীল ! ঠিক তখনই আমার এ শহরে পা পড়লো অন্যরকম এক তুই' এর, যা মুহুর্তেই করে দিলো আমায় অশান্ত। খুব কি দরকার ছিলো এই শান্ত ছেলেটার প্রাণপ্রিয় ঘুমটা কেঁড়ে নেওয়ার? '

-- লাইনগুলো পড়ে আগা টু মাথা কিছুই বুঝলো না লাবণ্য। দৃষ্টি শুধু আঁটকে রইলো শেষের লাইনে, গাল ফুলালো সে। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো, ' এ্যাহ.. বললেই হলো নাকি? আমি থোরি না উনার কাঁথা-বালিশ নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছিলাম যে, ঘুম কেঁড়ে নেওয়ার মতোন অপবাদ দিলো আমায়। একবার সামনা-সামনি হই না খবর আছে উনার..ভাবতে ভাবতেই পৃষ্ঠা উল্টালো মেয়েটা...

পরবর্তী পৃষ্টার শুরুতেই রা'গান্বিত ইমোজি অঙ্কন করা।
ইমোজির ঠিক নিচেই গুটি গুটি অক্ষরে লিখা,

🍁ভাই' শব্দটা যতটা না মধুর, প্রিয় মানুষের মুখে এই শব্দটা শোনা ঠিক ততটাই তি'ক্ত।
এতটাই তি'ক্ত যা প্রকাশের কোনো শব্দই হয়তো গোটা অভিধানেও নেই। ভাই' শব্দটির বারংবার অপপ্রয়োগের মতোন মা'রাত্নক অপ'রা'ধের তীব্র নি'ন্দা জানাচ্ছি।"

-- লাইনখানা পড়ে শব্দ করে হেসে উঠলো লাবণ্য। বলে উঠলো, ' আপনি আ'ন্দোলন করেন বা রা'গ করেন আমি তো শুধরাতে অনিচ্ছুক আকাশ ভা..ভাই..'
- বলেই আবারো হাসলো লাবণ্য।

উল্টালো পরবর্তী পাতা,

🍁 কাঠফাঁটা রোদ্দুরে কর্মব্যস্ততা শেষে ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে যখন দরজার সামনে এসে দাঁড়াবো তখন শাড়ির আঁচল দিয়ে মুচকি হেসে আমার মুখ মুছিয়ে দেওয়ার জন্য আমার তোকে চাই!

কোনো এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টি ঠেলে যখন দুয়ারে এসে দাঁড়াবো, তখন আলতো হাতে আমার ভেজা অগোছালো চুলগুলো গুছিয়ে দেওয়ার জন্য আমার তোকে চাই!

কোনো এক কনকনে শীতের রাতে কাজ শেষে যখন দুয়ারে এসে দাঁড়াবো, আমার পরনে থাকবে পাতলা একটা শার্ট, যার দরুণ তখন ঠকঠক করে কাঁ'পবো সেই মুহুর্তে নিশব্দে কটমট চাহনিতে একগুচ্ছ রাগ দেখিয়ে, পরমুহুর্তেই আমাকে চাদর দিয়ে আবৃত করে দেওয়ার জন্য হলেও আমার তোকে চাই!

-- তুই কি আমার হবি লবুপাখি?"

** প্রতিটি লাইন দুবার করে পড়লো লাবণ্য। অনুভব করলো প্রতিটি মুহূর্ত, আনমনে বলে উঠলো;
' আমি তো আপনারই, শুধুই আপনার!'

উল্টালো পরবর্তী পাতা, চোখ থমকে এলো লাবণ্যের।
এই পাতায় রয়েছে লাবণ্যের একটা ছবি, ছবিটি কোনো এক বিকেলের। লাবণ্যের পরনে লালরঙা কুর্তি, চুলগুলো দুইবেণী করা। লাবণ্য বসে আছে ডাইনিং টেবিলে গালে হাত রেখে, টেবিলের উপরেই অবহেলায় পড়ে রয়েছে তার আধখোলা জীববিজ্ঞান বই। কিন্তু তার দৃষ্টি অন্যদিকে, অন্যদিকে তাকিয়েই হয়তো কাউকে দেখে আনমনে হাসছে সে। ছবিটির ঠিক নিচেই গুটি গুটি অক্ষরে লিখাঃ
' যার বদৌলতে এই হাসিটির উৎপত্তি, তাহাকে অজস্র ধন্যবাদ।'

-- শুরুর দিকে লাবণ্য ছবিটা কখন তোলা হলো, কে তুললে, সে কার দিকে তাকিয়ে ছিলো - এসব চিন্তাভাবনার সমুদ্রে ডুবে থাকলেও ছবির নিচের লাইনটি পড়েই লাবণ্যের ভাবনার দলেরা ছুঁটে পালালো। চোখে-মুখে এসে ভিড় করলো একরাশ লজ্জা ও মুগ্ধতা। আনমনেই হাসলো মেয়েটা।

উল্টালো পরবর্তী পৃষ্ঠা,

🍁ঘৃ'ণা! শব্দটা বড্ড ভয়ঙ্কর লবুপাখি। তার চেয়েও ভয়ংকর এর প্রভাব। আমাকে তোর কেনো পছন্দ নয় লবুপাখি, আমি কি এতোটাই খা'রাপ? একবারো কি সামনা-সামনি এসে আমার সাথে কথা বলা যেত না?
আমাকে কি একটু বিশ্বাস করা যায় না? একটু কি ভালোবাসা যায় না? আমি এতটাই খা'রাপ!'

-- লাইনটুকু পড়ে নিমিষেই মুখ মলিন হয়ে এলো লাবণ্যের। চোখ বুলিয়ে নিলো লিখনীর ডেটটায়, মনে মনে ভাবলো, ' আরে এটা তো সেদিনের ডেট, যেদিন আকাশ ভাইকে অজ্ঞাত লোকটিকে মা'রতে দেখেছিলো লাবণ্য। পরমুহুর্তেই ছোট করে নিঃশ্বাস ফেললো সে। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো, ' আমি ভূল ছিলাম আকাশ ভাই। ভুল ছিলাম আমি, আপনাকে ঘৃ'ণা নয় শুধুমাএ ভালোবাসাই যায়। ভালোবাসি...
- বলতেই মেয়েটার একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ডায়েরীর পাতায়। দ্রুততার সাথে চোখ মুছে নিলো লাবণ্য, উল্টালো পরবর্তী পৃষ্ঠা..

🍁বড্ড বে'ড়েছিস, সাহসটা একটু বেশিই হয়ে গেছে তাইনা! পা'লাচ্ছিস আমার থেকে, ওকে। নো প্রবলেম,
যত মন চায় পা'লিয়ে নে। ফিরতে তো তোকে হবেই আমার কাছে, ঘৃ'ণা করিস তো? কর! সারাজীবন আমার চোখের সামনেই থাকতে হবে তোকে, ভালোবেসে না হোক এই ঘৃ'ণাকে সাথে নিয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দেবো আমি তোর সাথে। বিয়ে ভা'ঙবি তো, ওকে! পারলে ভে'ঙে দেখা।'

-- লাইনগুলো পড়ার সময় রীতিমতো অক্ষিযুগল কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো লাবণ্যের।
বলে উঠলো, ' এ তো রীতিমতো হু'মকিপএ।'
তাকিয়ে দেখে নিলো ' এ লেখনীটা আর বিয়ের আগেরদিনের। পরক্ষণেই আরো একবার লাইনগুলো পড়ে নিলো লাবণ্য, যেখানে তার রাগ হওয়ার কথা তা না হয়ে হলো পুরোই উল্টো, লাইনগুলো পড়তে পড়তেই মুচকি হাসলো মেয়েটা। বলে উঠলো, ' ভাঙ্গিস! জামাইটা আমার ডে'য়ারিং ছিলো, কি বোকামিটাই না আমি করছিলাম?'
বলেই ডায়েরিটার দিকে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিলো লাবণ্য, সাথে একগাল হেসে বলে উঠলো,

' সেদিন রাফী ভাইয়ের কাজের জন্য উনাকে একটা বিরিয়ানি ট্রিট তো দেওয়াই যায়।'
-- ভেবেই হাসলো লাবণ্য।

উল্টালো পরবর্তী পাতা,

🍁 রে'গে গেলো তোকে কত্ত যে কিউট লাগে! কোনোদিন কি আয়নায় দেখেছিস বউপাখি? এত্তো কিউট মুখশ্রীর দর্শনের জন্য তো আমি সারাজীবন তোকে রা'গিয়ে দিতে রাজী...আর রে'গে গিয়ে তোর করা বোকামিগুলো তো আরো বেশি কিউট! এতোদিন তো আমি শুধু প্রেমে কাতর ছিলাম, কিন্তু এখন তো তুই আমাকে পুরো পাগলই বানিয়ে দিবি যা বুঝছি..তবে যাই বলিস, বিয়ে ভাঙার বিষয়ে তোর প্ল্যানটা কিন্তু দারুণ ছিলো.."

-- লাইনদ্বয় পড়ে লাবণ্য মুখ ফুলালো। লেখনীর ডেট দেখতেই বুঝলো, এটা আকাশবাবু লিখেছেন বিয়ের দিন রাতেই। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো লাবণ্য,
' আপনি তো বড্ড পাঁ'জী.. বলেই বিয়ের রাতের কান্ডখানা মনে পড়তেই নিশব্দে হাসলো লাবণ্য।

পুনরায় উল্টালো পরবর্তী পাতা,

🍁 আমার বেরঙা জীবনটা রঙতুলির ছোঁয়ায় নিমিষেই রঙিন করে দিয়েছিস তুই লবুপাখি!
আমার আশ্রয়স্থল আমার পরিবার, আমার স্বস্তি আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্য, আর আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ঠোঁটের কোণের ওই হাসিটা আমার অমূল্য যক্ষের ধন।

আজ যখন তুই সকলের সাথে বাগানে মাছ ধরায় ব্যস্ত ছিলি, ওই মুহুর্তটা ছিলো আমার জীবনের সেরা মুহুর্তগুলোর মধ্যে একটি.. আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের ঠোঁটের কোণে ছিলো প্রশান্তি, এক স্বর্গীয় আনন্দ- অতীতকে ফিরে দেখা!
এতো সুন্দর একটা মুহুর্ত তুই নিজের অজান্তেই তৈরি করেছিস, হয়তো সে বিষয়ে তুই বেখবর!
আমার আশ্রয়স্থল, আমার যক্ষের ধনগুলোকে আমৃত্যু আগলে রাখিস লবুপাখি! কি পারবি না আগলে রাখতে? "

-- লাইনগুলো পড়ে চোখের কোণে এসে ভীড় জমালো স্নিগ্ধ জলরাশি, মুহুর্তেই টুপ করে গড়িয়ে পড়লো।
অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো মেয়েটা, ' আপনার আশ্রয়স্থল তো আমারও আশ্রয়স্থল, আপনার যক্ষের ধন তো আমারো যক্ষের ধন আকাশ ভাই। আপনার আমানত, আমার আমানত! আমি পারবো, পারতে তো আমাকে হবেই...

পরের পাতায় লিখা,

' আমার প্রেমে পড়ে গেলি নাকি লবুপাখি?
-- সামর্থিং সামর্থিং বুঝি?'

লেখটা পড়ে মুচকি হাসলো লাবণ্য। বসা থেকে উঠে হাতে তুলে নিলো একটা লালরঙা কলম। ডায়েরির এ পাতায় আকাশের প্রশ্নের ঠিক নিচেই জবাবে লিখলো লাবণ্য।

* জ্বি! সামর্থিং সামর্থিং মহারাজ।
-- লাইলাতুল লাবণ্য
( আপনার লবুপাখি )

পরের পেইজ উল্টাতেই আর কিছু খুঁজে পেলো না লাবণ্য। বুঝতে পারলো আর লিখার সময়ই করে উঠতে পারেননি উনি। সযত্নে ডায়েরিটা বন্ধ করে নীলরঙা প্যাকেটে ডায়েরিটা মুড়িয়ে নিলো লাবণ্য, চোখ বন্ধ করে বুকে জড়িয়ে নিলো ডায়েরিটা। ধ্যান ভাঙলো তারিনের বাঁজখাই কন্ঠস্বরে, বলে উঠলো তারিন;

' লবণ...কটা বাজে দেখেছিস কি??
জলদি খেতে আয়...

চমকালো মেয়েটা, এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজে নিলো এলার্ম ঘড়িটা। ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ চড়কগাছ লাবণ্যের। কাঁটায় কাঁটায় বারোটা বাজে!
বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো, ' হায় হায়! বারোটা কখন বেজে গেলো? সব কাজই তো এখনো বাকি!

হাতে থাকা ডায়েরিটা দ্রুতহাতে সযত্নে জায়গা মকোন রেখে দিলো মেয়েটা, ঘর থেকে বেরুনোর পূর্বেই ড্রেসিং টেবিলের রাখা আকাশের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো লাবণ্য,
' সব দোষ আপনার টুকটুকির আব্বু, সব দো..দোষ
আপনার..

- বলেই মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো লাবণ্য।
হয়তো এই মুহুর্তে আকাশের ফ্রেমে বাঁধাইকৃত ছবিটির জবান থাকলে সে মুহুর্তেই প্রতিবাদীস্বরে বলে উঠতো,

' এতে আমার দোষটা কোথায়??'

___________________________________
ঘুমের মধ্যেই হাওয়াতে ভাসছে.. এমনটাই অনুভূত হলো লাবণ্যের। পরে যাওয়ার ভয়ে জড়িয়ে ধরলো অজ্ঞাত ব্যক্তিটিকে, ধড়ফড়িয়ে তাকালো মেয়েটা।
তাকাতেই ভড়কালো লাবণ্য, র'ক্তলাল চোখে তাকিয়ে আছে আকাশ। ঘাঁড় বেকিয়ে ঘড়িটির দিকে তাকাতেই বুঝলো সময়টা ভোর চারটা বেজে চল্লিশ মিনিট, চারিদিকে এখনো অন্ধকার.. ভোরের আলো ফোটে নি। আকাশ ভাইয়ের তো সকাল এগারোটায় আসার কথা, তাহলে উনি এতো সকালে এখানে কিভাবে এলো? আবারো গতরাতের মতোন হ্যালুশিনেশন হচ্ছে নাতো তার। আমতা আমতা করে বলে উঠলো,

' কে..কে আপনি? আমাকে কোলে তুলে নিয়েছেন কেন? নামান বলছি।'

' ফোন কোথায় তোর?'

' ফোন মানে আপনি কি ফো..ফোন চোর?
আমার ফোন আমি আপনাকে কিছুতেই দেবো না..
এখনো সময় আছে, ভালো ভালোয় বলছি কোল থেকে আমায় নামিয়ে দি..দিন, আমার জামাই জানতে পারলে কিন্তু আপনার হাত দুখানা ভে'ঙে গুঁ'ড়ো গুঁ'ড়ো করে দেবে.....

[ চলবে..]

🌻 পূর্ববর্তী পর্বের লিংকঃ ২৩
https://www.facebook.com/100372322504874/posts/160279476514158/

Website