Iqra model school
Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Iqra model school, Education, .
সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে আমাদের নতুন একটি গ্রুপ চালু হয়েছে যেখানে বিদ্যালয়ের সমস্ত আপডেট প্রদান করা হবে৷
বিদ্যালয়ের সিলেবাস, প্রশ্নসীট, ছুটি সমূহ সমস্ত বিষয়াদি এডভান্স দেওয়া হবে৷ ঐ গ্রুপটা একটি প্রাইভেট গ্রুপ যেখানে নিয়মিত সমস্ত আপডেট দেওয়া হবে৷ আপনার ফেসবুক থেকে বাংলায় টাইপ করে সার্চ দিন
ইকরা মডেল স্কুল ১৬৩১
তাহলেই চলে আসবে৷
আন্তঃক্রিকেট খেলায় বিজয়ী দলের খন্ডকালীন ছবি..... ২০২২
বহু বছর আগে একবার চল্লিশ জন কয়েদিকে আফগানিস্থানের রাজধানী কাবুল থেকে জালালাবাদ নেয়া হচ্ছিল। তখনতো আর দ্রুতগতির গাড়ি ছিল না। এক শহর থেকে আরেক শহর যেতে দিনের পর দিন লেগে যেত। রাতের বেলায় জায়গায় জায়গায় বিশ্রাম নেয়ার জন্য থামতে হত। তো একদিন সকালবেলা পাহারাওয়ালারা উঠে দেখে চল্লিশ জন কয়েদির মধ্যে একজন কীভাবে যেন পালিয়ে গেছে। পাহারাওয়ালারতো মাথায় হাত! এর আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। সুতরাং, এর সাজা কী হতে পারে তাও বলা মুশকিল। পাহারাওয়ালাদের একজন বলল, ফাঁসি দিবে, একজন বলল গুলি করে মারবে, আরেকজন বলল জ্যান্ত শরীর থেকে চামড়া টেনে খুলবে। যে যাই বলুক, জেল যে হবে তা নিশ্চিত এবং আফগান জেলের অবস্থা সম্পর্কে পাহারাওয়ালারা ভালোই ওয়াকিবহাল। বলা হয়ে থাকে ওখানে কেউ একবার ঢুকলে আর বের হয় না। যদি কেউ বের হয়, তাহলে সম্ভাবনা দুটো। হয় তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে মারার জন্য বের করা হয়েছে, আর নয়তো সে আগেই মারা গেছে; অন্যরা তার লাশ বের করছে।
তো যা বলছিলাম, পাহারাওয়ালাদেরতো ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেছে। কী করা যায়, কী করা যায় ভাবতে ভাবতে শেষে একজন বলে উঠল, এখনোতো বাইরে তেমন আলো ফোটেনি। চলো আমরা রাস্তা থেকে যেকোনো একজনকে তুলে নিয়ে কোনোরকম বুঝ দিয়ে দেই!
যেই কথা সেই কাজ। এক হতভাগা সকালবেলা রাস্তার ধারে প্রাতঃকর্ম সারতে মাত্র বসেছিল। অমনি পাহারাওয়ালারা তাকে শিকল পরিয়ে অন্যদের সাথে নিয়ে চলল জালালাবাদের দিকে। পুরো রাস্তা ধরে লোকটাকে ইহকাল পরকাল সবকালের ভয় দেখিয়ে কেবল একটা বাক্যই মুখস্থ করাল, 'মা খু চিহল ও পঞ্জম হস্তম!' এর মানে হচ্ছে, আমি পঁয়তাল্লিশ নম্বরের।
তার কেবল একটাই কাজ, জালালাবাদের জেলর তাকে কিচ্ছু বললেই সে কেবল ওই একটাই বাক্য বলবে, আমি পয়তাল্লিশ নম্বরের। আর কিচ্ছু না।
বেচারা লোকটা ভয়ে হোক, কিংবা ঘটনার আকস্মিকতায় হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়ার কারণে হোক, তাকে যা শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল জেলরের সামনে ঠিক তাই বলেছিল। সে যে নির্দোষ সেটা বলার চেষ্টা পর্যন্ত করেনি। ফলাফল যা হবার তাই হলো। ঢুকে পড়ল জালালাবাদের জেল নামক জাহান্নামে। সেখানে কয়েকদিন কাটানোর পর অন্যদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারল কী বোকামিটাইনা সে করেছে! নিজের ভুল বুঝতে পারার পরই সে আল হজরত বাদশার কাছে সমস্ত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চিঠি লিখতে শুরু করল। কিন্তু জেলখানার চিঠিতো আর অত সহজে হুজুরের কাছে পৌঁছায় না। এদিকে জেলরও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ঠিকমতো খোঁজ না নিয়ে নির্দোষ মানুষকে জেলে ঢুকানোর দায়ে তারওতো সাজা হয়ে যেতে পারে! অপরদিকে জেলখানায়তো আর কয়েদিদের জন্য কাড়ি কাড়ি কাগজ কলম দেয়া নেই। একে ওকে ধরে, বলে কয়ে, এত কষ্ট করে লিখে পাঠানো দরখাস্ত আদৌ হুজুরের কাছে পাঠানো হয় কিনা সেটাওতো ও বেচারা জানে না!
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে এমন করে একমাস, দুমাস কিংবা এক বছর দুবছর না; টানা ষোলটা বছর কেটে গেল! ষোলটা বছর অকারণে জেলে থাকার পর একটা মানুষের মনের অবস্থা কেমন হয় সেটা হয়তো আমরা বুঝতে পারব না। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, ততদিনে সে দরখাস্ত পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল।
এমন সময় পুরো আফগান জুড়ে খুব খুশির কোনো ঘটনা ঘটল। সম্ভবত যুবরাজ মুইন-উস-সুলতানের বিয়ে কিংবা তার প্রথম পুত্র সন্তানের জন্ম। আমির হাবিবউল্লা প্রচুর দান-খয়রাত করলেন এবং শেষে সিদ্ধান্ত নিলেন জেলখানার পুরোনো কয়েদিদের সাথে কথা বলে তাদের আচরণের ভিত্তিতে সাজা কমানো ও মওকুফ করবেন। প্রচুর কয়েদি মুক্তি পেল, প্রচুর কয়েদির সাজা কমল। সবাই খুশি। তো শেষমেষ সেই হতভাগার পালা আসল।
হুজুর জিজ্ঞেস করলেন, তু কিস্তি? (তুই কে?)
লোকটা উত্তর দিল, মা খু চিহল ও পঞ্জম হস্তম। (আমি পঁয়তাল্লিশ নম্বরের।)
হুজুর যতই তার নামধাম খোঁজখবর জানতে চান, সে কেবল ওই একটাই কথা বলে যায়, আমি পঁয়তাল্লিশ নম্বরের।
হুজুর ভাবলেন অন্যদের মতো এও পাগল হয়ে গেছে কিনা! শেষে বাজিয়ে দেখার জন্য সূর্য কোনদিকে ওঠে কোন দিকে অস্ত যায় জাতীয় অনেকগুলো প্রশ্ন করে দেখলেন সে স্বাভাবিক সব প্রশ্নের উত্তরই সঠিক দিচ্ছে। কেবল তার পরিচয় জানতে চাইলেই সে বলছে, আমিতো পঁয়তাল্লিশ নম্বরের!
টানা ষোল বছর ওই এক মন্ত্র জপতে জপতে তার বিশ্বাস হয়ে গেছে, তার ইহকাল পরকাল, জীবন যৌবন বলে আর কিছু নেই। সে কেবল পঁয়তাল্লিশ নম্বর!
আমির হাবিবউল্লা শেষে জেলের অন্যান্য পুরোনো কয়েদিদের যে কজন বেঁচেছিল তাদের সাথে কথা বলে রহস্য ভেদ করেন এবং লোকটাকে খালাশ দেন। কিন্তু খালাশ পাবার পর বাকি জীবনেও লোকটা ওই পয়তাল্লিশ নম্বরের বলয় থেকে বের হতে পারেনি। যতদিন বেঁচে ছিল, তার ধারণা ছিল সে পঁয়তাল্লিশ নম্বর!
'দেশে বিদেশে' বইতে সৈয়দ মুজতবা আলী ছোট একটা ঘটনা মানুষের জীবনে কেমন বড় রকম প্রভাব ফেলতে পারে তা বলতে গিয়ে ওপরের গল্পটা বলেছেন। কিন্তু কাহিনীটা পড়ে আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেছে। আমি কেবল লোকটার কথা ভাবছি। ষোলটা বছর! আহা, ষোলটা বছর! একটা মানুষকে পঁয়তাল্লিশ নম্বর বানিয়ে দিল!
এটা যদি কেবলই একটা বানানো গল্প হতো, তাহলে আমি খুব খুশি হতাম। কিন্তু এমন গল্প আমাদের আশপাশেও আছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা নিজেদেরকে যা ভাবি, আশপাশের মানুষ আমাদেরকে যেভাবে কদর করে আমরা একটা সময় তাই হয়ে যাই। আর ঠিক এই কারণেই আমি বাচ্চাদের সাথে কথা বলার সময় সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকি এবং সবসময় বলি বাচ্চাদেরকে ঠিকঠাক কদর করতে। একটা বাচ্চা যদি ছোটবেলা থেকে শুনে বড় হয় যে তাকে দিয়ে কিছু হবে না, তাহলে সে একটা সময় সেটা বিশ্বাস করে ফেলে। একটা সময় সে বিশ্বাস করে ফেলে সেও ওই পঁয়তাল্লিশ নম্বর এবং বাকি জীবন আর ওই বলয় থেকে বের হতে পারে না।
আমি নিজে কখনো পঁয়তাল্লিশের বলয়ে ঢুকতে চাই না, কাউকে ঢোকাতেও চাই না। আর এজন্যই আমি নেতিবাচক পরিবেশ এবং মানুষ দুটোই এড়িয়ে চলি। এই দুই জিনিস এড়ানো না গেলে পঁয়তাল্লিশের বলয় এড়ানো যায় না। এই বলয় বড় ভয়ঙ্কর। জীবন তছতছ করে দিতে যথেষ্ট। পঁয়তাল্লিশের বলয়ে কারো পড়া উচিত না, কাউকে ফেলাও উচিত না। কখনোই না!
'পঁয়তাল্লিশ নম্বর'
১৯.০৫.২০২১
বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা ও মেধাবীদের পুরস্কার বিতরনের কয়েকটি খন্ড কালীন ছবি 😊❤️