Mohammad Arif Hossain

Mohammad Arif Hossain

An Ancient Mariner of Government of the People's Republic of Bangladesh.

27/07/2023

#ডেঙ্গু_সতর্কতা_কি_করবেন_কি_করবেন_না।

ডেঙ্গুর বর্তমান অবস্থার কথা আমরা সকলেই জানি।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কমবেশি সকলেই জানি, কিন্তু ডেঙ্গু হয়ে গেলে আমাদের এপ্রোচ কি হবে সেটা নিয়ে আজকের এই আলোচনা।

মনে করুন আপনার জ্বর হলো। এখন কি করবেন?
* এটা নর্মাল, সিজনাল, এই কথা চিন্তা করা বন্ধ।
* দেখি ১-২দিন, দেখাদেখি বন্ধ।
* আমার তো সর্দি কাশি আছে,তাহলে এটা ডেঙ্গু না, ভাবা বন্ধ করুন।
কারন?
ডেঙ্গু জ্বরের প্যাটার্ন পাল্টেছে। একসময় চিকিৎসকরা সর্দি কাশি থাকলে আর ডেঙ্গু ভাবতো না। এখন আর সেটা নেই। গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে একটা আউটব্রেকের সময় যে কোন ফিভারেই শুরুতেই ভাবতে হবে আমি আউটব্রেকের কবলে পড়েছি। এটাই হচ্ছে নির্দেশিত। একটা সময় র‍্যাশ হতো, এখন র‍্যাশ দেখাই যায়না খুব একটা। এবছর জ্বরের তীব্রতাতেও পরিবর্তন এসেছে, অনেকেরি ১০০-১০১ এ ডেঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড শরীর ব্যথার কারণে এটাকে ব্রেক বোন ফিভার বলতো আগে, এবছর সেই প্যাটার্নেও পরিবর্তন এসেছে, আগে ৫-৬দিনের দিন রোগীর কন্ডিশন খারাপ হতো, এখন ৩দিনের মাথাতেই ইভেন জ্বরের ১-২দিনেও কেউ কেউ ক্রিটিকাল কন্ডিশনে চলে যাচ্ছে।

ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল সিম্পটম:
তীব্র জ্বর, প্রচন্ড শরীর ব্যথা, বিশে করে কোমর ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাথা ব্যথা। তবে বর্তমান ডেঙ্গুতে এমনটা নাও থাকতে পারে।

করণী-১:
প্রথম দিনেই হসপিটাল গিয়ে তিনটি টেস্ট করে ফেলা।
১)CBC
2)Dengue NS1
3) SGOT
করার পর কি করবেন? কারণ NS1 positive means আপনার ডেঙ্গু নিশ্চিত। কিন্তু ধরুন কোন কারণে আপনার রিপোর্ট সব নর্মাল আসলো। প্রথম দিনে এটা হতেই পারে। তবে সব নর্মাল আসার সম্ভাবনা কম।
প্রথমেই CBC report এর HCT/PCV নামে একটা টার্ম আছে, হেমাটোক্রিট বা প্যাকড সেল ভলিউম, এটা কত পার্সেন্ট আছে মার্ক করে ফেলবেন বা লিখে ফেলবেন। কারণ এটাই আপনাকে পরবর্তীতে অনেক কিছু গাইড করবে। ধরুন আপনার আসলো ৩৬%, আপনার হিমোগ্লোবিন ১২%, তাহলে নর্মাল এবং প্রথম দিন এটা নর্মাল আসবে। আর নর্মাল রেঞ্জ আপনার কত সেটি জানা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের দেশে ডেমোগ্রাফিক্যালি হেমাটোক্রিট ক্লাসিফাই করা নেই। তাই নিজের বেজ লাইন জেনে রাখবেন। হেমাটোক্রিট আপনার হিমোগ্লোবিনের ৩গুন সাধারণ অবস্থায়।
যদি দেখেন আপনার SGOT সাধারণ মাত্রার চাইতে ১-২গুন বেশি, তাহলে ওকে, এটাকে সাধারণ অবস্থা ভেবে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি SGOT ৪-৫গুন হয়ে যায়, তবে এই রোগী সামনের দিকে খারাপ হওয়ার চান্স অনেক বেশি। তাই সতর্ক হয়ে যেতে হবে আগেই।

করণীয়-২:
প্রথম দিনেই ডাক্তার দেখাবেন। প্যারাসিটামল ছাড়া কোন ব্যথার মেডিসিন খেয়েছেন তো বিপদ আছে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শ শুনবেন ও মেনে চলবেন।

করণীয়-৩:
প্রতিদিন CBC টেস্ট করতেই হবে মাস্ট। সিবিসি করে কি চেক করবেন? Platelet? না। HCT বা হেমাটোক্রিট। বিলিভ মি, যত প্যাশেন্ট মারা যাচ্ছেন, সব ডেঙ্গু শক সিন্ড্রমে, কেউ প্লাটিলেট বা ব্লিডিং হয়ে মারা যাচ্ছেন না। হেমোরেজিক ডেঙ্গুর চাইতে এখন আমাদের দেশে ডেঙ্গু শক হচ্ছে বেশি। আর এই হেমাটোক্রিট আপনাকে ইন্ডিকেশন দিবে এই শক সম্পর্কে। CBC থেকে আপনি কিভাবে কি বুঝবেন এবং দ্রুত হসপিটাল যাবেন?
যদি দেখেন আপনা HCT/PCV প্রথম দিনের নর্মাল রেঞ্জের চাউতে অনেক বেড়ে গেছে, ধরুন ছিলো ৩৫%, এখন ৪০%-৪৫%, তাহলে আপনার প্লাজমা লিকেজ হচ্ছে, শক।
যদি দেখেন হিমোগ্লোবিন এবং HCT দুটোই প্রথম দিনের চাইতে অনেক কমে গেছে, তবে আপনার শরীরে কোথাও ব্লিডিং হচ্ছে, সাথে কালো পায়খানা, লাল প্রশ্রাব, দাঁতের মাড়ি থেকে, নাক থেকে রক্ত পড়ছে। দ্রুত হসপিটাল ভর্তি হবেন। এক মুহুর্ত দেরি করা যাবেনা।
আর কী কী বুঝা যাবে CBC থেকে? যদি আপনার WBC count বা হোয়াইট ব্লাড কাউন্ট ৫হাজারের নিচে নেমে যায়, লিউকোপিনিয়া, এবং মনে রাখবেন, WBC count না কমার আগে আপনার প্লাটিলেট কমবে না। WBC count কমার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার Platelet count কমতে শুরু করবে। Platelet count যখন ১লাখের নিচে নেমে যাবে, তার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার প্লাজমা লিকেইজ শুরু হবে, এবং আপনি শকের দিকে ধাবিত হবেন। তাহলে CBC কতটা গুরুত্বপূর্ণ আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। মনে রাখবেন, প্রতিদিন CBC করতে হবে। প্লাটিলেট কমে গেলে মরবেন না, তাই প্লাটিলেট নিয়ে হাহুতাশ করবেন না। প্লাটিলেট ২০হাজারের নিচে না নামলে অন্য কোন প্রব্লেম না থাকলে ব্লিডিং হয়না, কারোর ১০হাজারেও কিছু হয়না। এটা আমাদের দেশে একটা অকারণ আতঙ্ক। পেপে পাতাও খাওয়া লাগবেনা, প্লাটিলেট যখন বাড়বে, একদিনেই কয়েক লাখ বেড়ে যাবে।

ক্রিটিকাল ফেইজ:
--------------------------
মনে রাখবেন, জ্বর থাকা অবস্থায় ডেঙ্গু রোগী মারা যায়না, বরং বিপদ শুরু হয় মূলত জ্বর কমার পর এবং সাধারণত আগে ৫-৬দিনের মাথায় ক্রিটিকাল ফেইজ শুরু হতো, কিন্তু এখন ৩দিনের শুরুতেই রোগীরা শকে চলে যাচ্ছে। ইভেন অনেকে জ্বর থাকা অবস্থাতেই ক্রিটিকাল হয়ে যাচ্ছে। তাই ফিভার কমে গেলে আরও সতর্ক হতে হবে। এই ফেজে আপনার প্লাটিলেট দ্রুত কমে যাবে। কিন্তু আগেই বলেছি, আপনাকে দেখতে হবে হেমাটোক্রিট।
এই ফেজে আর কী কী করলে বুঝতে পারবেন আপনার রোগী খারাপ হচ্ছে কিনা?
#ব্লাড_প্রেশার মাপবেন। দিনে ৪-৫বার মিনিমাম। বরং প্রথম দিন থেকেই মাপবেন।
এক্ষেত্রে ধরেন অনেকেরি আগে থেকে বিশেষ করে মেয়েদের ব্লাড প্রেশার লো থাকে, সো মাপার সময় আগে কত থাকতো জেনে নিবেন। বাসায় একটা ব্লাড প্রেশার মেশিন রাখবেন, ডিজিটাল মেশিন হলে পর পর দুইবার মাপবেন, আর ম্যানুয়াল হলে একবার মাপবেন।
এতে কি বুঝা যাবে? যদি ব্লাড প্রেশার সিস্টোলিক আইমিন উপরেরটা ১০০ এর নিচে নেমে যায় এবং ডায়স্টলিক মানে নিচেরটা ৬০ এর নিচে নেমে যায়, তবে এলার্ট হয়ে যান।
কিন্তু ধরেন উপরের প্রেশার ১০০-১১০ আর নিচেরটা ৯০। আপনি ভাবলেন নর্মাল। বা ৯০/৭০ বা ১২০/১০০। না, এটা নর্মাল না। দুটোর বিয়োগফল কত আসে? অনেক কাছাকাছি না? এটাকে বলে ন্যারো পালস প্রেশার এবং এই পালস প্রেশার যদি ২০ এর কম হয়, অর্থাৎ দুটোর পার্থক্য যদি ২০ এর কম হউ, ইউ আর ইন শক ওর আপনি শকে যাচ্ছেন।
দ্রুত হসপিটাল।
এই ক্রিটিকাল ফেজে আর কী কী বিষয় গুরুত্বপূর্ণ?
তীব্র পেটে ব্যথা হচ্ছে কিনা? এটা শকের লক্ষন।
লো প্রেশারের সাথে আপনার রোগীর হাত ও পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিনা, এটা শকের লক্ষন।
আপনার রোগী অস্থিরতা দেখাচ্ছে কিনা, একদম নেতিয়ে দূর্বল ফ্যাকাশে হয়ে গেলো কিনা, বিপদ চিহ্ন।
খুব ভালোকরে প্রশ্রাবের দিকে খেয়াল করবেন। কয়বার প্রশ্রাব করছে, কতটুকু প্রশ্রাব হচ্ছে প্রতিবার। যদি প্রশ্রাব কমে যায়, অল্প প্রশ্রাব হয়, হসপিটাল সোজা ভর্তি হয়ে যাবেন।
রোগীর কি শ্বাসকষ্ট হচ্ছে? পেট ফুলে যাচ্ছে? হঠাৎ করে গা ঝাকুনি দিয়ে খিচুনি হচ্ছে? দ্রুত হসপিটাল নিয়ে যান।

আর কি করতে পারেন? হাতের আঙুলের নখে জোরে চাপ দিয়ে ধরুন কিছুক্ষণ, নখ সাদা হয়ে গেলে এবার ছাড়ুন, এবার ভালোভাবে খেয়াল করুন নখের রঙ ফিরে আসতে কত সময় লাগছে, যদি বেশি সময় লাগে, বেশি বলতে কত? ২ সেকেন্ডের বেশি লাগলে আপনার রোগী শকে আছে। এটাকে বলে ক্যাপিলারি রিফিল টাইম।
আর কি করতে পারেন?
ব্লাড প্রেশার মেশিন নিন, এবার হাতের কব্জি মাঝে রেখে যেভাবে ব্লাড প্রেশার মাপবেন সেভাবে বাতাস দিয়ে টাইট করুন, টাইট অবস্থায় ৪-৫মিনিট দিয়ে রাখুন, এবার বাতাস ছাড়ুন, এবং খেয়াল করুন বাহুতে লাল লাল কতগুলো দাগ পড়েছে ছোট ছোট, ছোট্ট একটা বক্স কল্পনা করে যদি মনে হয় অনেক বেশি লাল লাল স্পট, দ্রুত হসপিটাল চলে যান। এটাকে বলে টর্নিকেট টেস্ট। সব রিপোর্ট নর্মাল আসলেও যদি আপনার টর্নিকেট টেস্ট পজিটিভ আসে, নিশ্চিত থাকুন আপনার ডেঙ্গু। এটা একদম প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন করবেন।

বমি ও পাতলা পায়খানা:
-----------------------------------
দিনে ৩বারের বেশি বমি করলে, ৩বারের বেশি পাতলা পায়খানা হলে সোজা হসপিটাল চলে যাবেন। একমুহূর্ত দেরি করা যাবেনা।

বাসায় কি করবেন?
---------------------------
প্রচুর পরিমানে তরল খাওয়াবেন। ২-৩লিটার, ডাবের পানি, আধা লিটার পানিতে গোলানো স্যালাইনের পানি, স্যুপ,শরবত লবন চিনি দেয়া খাওয়াবেন। যতক্ষণ মুখে খেতে পারবে খাওয়াবেন, যখন আর পারবেনা, বমি হবে অনেক, পাতলা পায়খানা, হসপিটাল নিয়ে যাবেন।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকবেন।
বেশিরভাগ রোগী মারা যায় শুরুতেই ডাক্তারের পরামর্শ না নেয়াতে, বিপদ চিহ্ন না জানাতে, বাসায় থেকে রোগী খারাপ করে ফেলে।

******ডায়বেটিস, হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক, কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, SLE প্যাশেন্ট হলে প্রথম দিনেই হসপিটাল ভর্তি করে দিবেন।

********আপনার বাড়ির কাছের হসপিটালে আগে যাবেন।
সব সরকারি হসপিটালের ম্যানেজমেন্ট ভালো, বারান্দায় শুয়ে থাকলেও, কারণ সরকারি হসপিটাল এবং মেডিকেল কলেজ গুলোতে ন্যাশনাল গাউড লাইন মেনে চিকিৎসা দেয়া হয়।

*******বাসায় পালস অক্সিমিটার থাকলে অক্সিজেন স্যাচুরেশন চেক করবেন।

********কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে হার্ট ইনভলভ হয়ে যাবে, দেরি করলে অর্গান ফেইলিউর হয়ে যায়। ভাইরাল মায়োকার্ডাইটিস কিংবা একিউট কিডনি ইঞ্জুরির রোগীর জন্য আইসিউ লাগবেই। এসব রোগী বাইরে ম্যানেজ করা যায়না। রোগী খারাপ দেখলে সকল প্রস্তুতি রাখুন। যে কোন ইসিজি চেঞ্জেস, বিশেষ করে ট্যাকিকার্ডিয়া, শ্বাস দ্রুত হওয়া মানে ট্যাকিপেনিয়া বিপদ চিহ্ন। খারাপ হওয়ার আশংকা বেশি। কারো কারো ক্ষেত্রে প্লুরাল ইফিউশন অর্থাৎ লাংসে পানি চলে আসতে পারে।

*******মনে রাখবেন, প্রতিদিন সিবিসি টেস্ট, ডাক্তারের পরামর্শ, হসপিটাল এডমিশনের প্রস্তুতি, প্রচুর তরল খাওয়ানো, ব্লাড প্রেশার মাপা, বিপদ চিহ্ন খেয়াল করা, দেরি না করে হসপিটাল নেয়া, জ্বর কমে গেলে আরও সতর্ক হওয়া, প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন মেডিসিন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়ানো।

*******ডেঙু এখন আর শুধু ঢাকাতে সীমাবদ্ধ না, সারা বাংলাদেশে ছড়িয়েছে।

*******দিনে রাতে যে কোন সময় ডেঙ্গু মশা কামড়ায়।
*******পরিষ্কার নোংরা সব পানিতেই ডেঙ্গু হচ্ছে।
*******Dengue NS1 test জ্বর শুরু হওয়ার ৩দিন পর করলে লাভ নেই। সেক্ষেত্রে CBC, SGOT, Dengue Antibody (IgG+IgM) করতে হবে।
*******যারা রক্ত তরল করার মেডিসিন খান, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেটি বন্ধ রাখবেন কিংবা খাবেন। কোন অবস্থাতেই নিজে নিজে বন্ধ বা খাওয়া যাবেনা।

সবাই সবার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি সুরক্ষা চাইবেন। চারপাশ পরিষ্কার রাখবেন।
সতর্ক থাকবেন।
Collected
তথ্যসূত্র:
------------
Dengue National Guideline
CDC

Photos from Mohammad Arif Hossain's post 12/03/2023

*মানিকগঞ্জ সদর এলাকার চাঞ্চল্যকর নবু প্রামানিক হত্যা মামলার দীর্ঘ ২৪ বছর বিভিন্ন ছদ্মবেশে পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মোঃ মজিবরকে (৬০) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে সিপিসি-৩, র‌্যাব-৪ মানিকগঞ্জ।*

১। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। র‌্যাব-৪ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য আসামী গ্রেফতার করে যার মধ্যে সাভারের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন হত্যার রহস্য উদঘাটনপূর্বক আসামীদের গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার, সাভারের ক্লুলেস ফাতিমা হত্যা রহস্য উদঘাটনসহ অসংখ্য ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করা এবং আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ২০-৩০ বছর পলাতক যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কয়েকজন দুধর্ষ খুনী, ডাকাত এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়।

২। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল মানিকগঞ্জের চাঞ্চল্যকর নবু প্রামানিক হত্যা মামলার দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে পলাতক আসামী’কে গ্রেফতার করার জন্য ০২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন আদাবর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মোঃ মজিবর (৬০) কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

৩। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মজিবর ও ভিকটিম নবু প্রামানিক উভয়ই মানিকগঞ্জ জেলার নারীকুলী গ্রামে বসবাস করত এবং সেই সুবাদে তাদের মধ্যকার ভালো সম্পর্ক ছিলো।
গত ইং ১৬/১১/১৯৯৮ তারিখ বিকাল অনুমান ০৫:৩০ ঘটিকার সময় ফুটবল খেলা নিয়ে ভিকটিম নবু প্রামানিক এর ছেলে মোঃ বাদশার সাথে আসামী মোঃ মজিবরের চাচাতো শ্যালক মোঃ বরকতের সাথে বিরোধ বাধে। এরই সূত্র ধরে ভিকটিম নবু প্রামানিক এর স্ত্রী নুর নাহারের সাথে আসামী মোঃ মজিবরের স্ত্রী জুলেখার মধ্যে কথা কাটাকাটি ও চুল টানাটানি হয়। একপর্যায়ে উক্ত ঝগড়া থামানোর জন্য নবু প্রামানিক চেষ্টা করে। উক্ত সময়ে ঘটনাস্থলে মোঃ মজিবর, ছমির, আলতাফ, লেবু, জামাল এবং আব্বাছ দাঁ, লাঠি, শাবলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভিকটিম নবু প্রামানিক এর উপর অতর্কিত ভাবে আক্রমন করে। সেখানে উপস্থিত আসামী মজিবরের হাতে থাকা নৌকার কাঠের বৈঠা দিয়ে ভিকটিম নবু প্রামানিককে আঘাত করে গুরুতর জখম করে, যার ফলে ভিকটিম নবু প্রামানিক এর মাথার মগজ বাহির হয়ে যায়। তখন ভিকটিম নবু প্রামানিক মাটিতে পড়ে গেলে জামাল ও অন্যান্য আসামীদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি ভাবে মারধর করে ভিকটিম নবু প্রামানিক এর মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থ থেকে পালিয়ে যায়। ভিকটিমের স্ত্রীর চিৎকার শুনে আশপাশ হতে লোকজন এসে ভিকটিম নবু প্রামানিককে রক্তাত্ত অবস্থায় উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম নবু প্রামানিককে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের স্ত্রী নুর নাহার বাদী হয়ে আসামী মোঃ মজিবর সহ সর্বমোট ০৭ জনকে আসামী করে একই দিন মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-১৪(১১)৯৮ তারিখ-১৭/১১/১৯৯৮ ইং, ধারা ১৪৮/৩০২/৩২৩/৩২৪/১১৪ পেনাল কোড। মামলা হওয়ার পর আসামী মোঃ মজিবর ব্যতিত বাকি এজাহারনামীয় সকল আসামী থানা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়। মামলা হওয়ার পর থেকেই আসামী মজিবর আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা ০৩ মাস হাজত খেটে ১৯৯৯ সালে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। অত্র মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় আসামী মোঃ মজিবর’কে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন এবং এজাহার নামীয় বাকি ০৬ জন আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশীট থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। পরবর্তী চার্জশীটের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম নবু প্রামানিক হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী মোঃ মজিবরকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। পলাতক আসামী মোঃ মজিবর মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রথম থেকেই গত ২৪ বছর পলাতক ছিল।

৪। আসামীর জীবন বৃত্তান্তঃ আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী ১৯৬২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন রাজনগর এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। সে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করেননি। ব্যক্তিগত জীবনে আসামীর ঘরে তার দুইটি মেয়ে এবং একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ১৯৯৮ সালের পর থেকে আসামী আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে অবস্থান করেন নাই।

৫। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় আসামীর জীবনযাপনঃ আসামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় এবং ঐ মামলায় সে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোক চক্ষুর আড়ালে আত্মগোপন করেন। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে ঢাকায় চলে আসে। গত ২৪ বছর ধরে আসামি মোঃ মজিবর নাম পরিবর্তন করে মোঃ কালাম নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুরহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামী নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করে। প্রথমদিকে সে দিনমজুর, রিক্সাচালক হিসেবে কাজ করে। পরবর্তীতে আসামী মোঃ মজিবর মোহাম্মদপুরের আদাবর থানা এলাকায় অবস্থান করে মাছ ধরে আত্মগোপনে থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।

৬। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

29/09/2022

মামা অনেক দিনের অভুক্ত ছিলো, তাই ক্ষুদা মেটাতে গিয়ে ধরা খেয়েছে🤭🤭😜
শ্বশুরালয়ে কয়েকটা দিন বিশ্রামে পাঠালাম।

Photos from Mohammad Arif Hossain's post 22/08/2022

Time Demanding decision..

15/08/2022

*মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকায় চাঞ্চল্যকর আগুনে পুড়িয়ে আম্বিয়া হত্যা মামলার দীর্ঘ ২১ বছরের পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আলম’কে ঢাকার বংশাল হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।*

১। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। র‌্যাব-৪ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতার যেমনঃ সাভারের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন হত্যার রহস্য উদঘাটনপূর্বক আসামীদের গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার, সাভারের ক্লুলেস ফাতিমা হত্যা রহস্য উদঘাটনসহ অসংখ্য ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে যার প্রেক্ষিতে সার্বিক মূল্যায়নে ২০২১ সালে র‌্যাব-৪ ক্লুলেস অপরাধ রহস্য উদঘাটনে প্রথম স্থান লাভ করে। এছাড়াও র‌্যাব-৪ কর্তৃক ২০-৩০ বছর যাবত বিভিন্ন মামলার পলাতক যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কয়েকজন দুদ্ধর্ষ খুনী, ডাকাত ও ধর্ষককে গ্রেফতার করে, যার মধ্যে চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুল (৩৯)’কে ১৯ বছর পর, চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নজরুল ইসলাম (৪২)’কে ০৭ বছর পর, ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আলী নূর হত্যা মামলার মূল আসামী আহিনা খাতুন (২৯)’কে, চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা ও তার ৩ বছরের মেয়ে জোতি’কে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকির হোসেন (৪৭)’কে গ্রেফতার করা হয়। গত কয়েকদিন পূর্বে গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার চাঞ্চল্যকর সাইদুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামী নান্নু শেখ @ নূরনবীকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

২। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকায় চাঞ্চল্যকর আগুনে পুড়িয়ে আম্বিয়া হত্যা মামলার দীর্ঘ ২১ বছরের পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী’কে গ্রেফতার করার জন্য ১৩ আগস্ট ২০২২ তারিখ রাতে ঢাকার বংশাল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ আলম (৪০)’কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

৩। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আলম ও ভিকটিম একই গ্রামের বাসিন্দা। গ্রেফতারকৃত আসামীর সাথে ঘটনার প্রায় ০৩ মাস পূর্বে ২০০১ সালের জুন মাসে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানাধীন আটিপাড়া গ্রামের জনৈক মোঃ মকবুল হোসেন এর মেয়ে ভিকটিম আম্বিয়া বেগম(১৮) এর সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়।বিয়ের শুরু থেকেই আলম ভিকটিম আম্বিয়াকে অপছন্দ করতো। বিয়ের সময় ভিকটিমের বাবা সাধ্যানুযায়ী আসবাবপত্র ও স্বর্নালংকার প্রদান করে। কিন্তু আসামী আলম সহ আসামির বাবা-মা ও নিকট আত্মীয়-স্বজন এতে সন্তুষ্ট না হয়ে ভিকটিমের নিকট ৫০,০০০ টাকা যৌতুক দাবি করে। ভিকটিমের বাবা দরিদ্র হওয়ায় ভিকটিম আসামির দাবীকৃত যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় আসামি ভিকটিমকে বিভিন্ন সময় মারপিট করতে থাকে। ভিকটিমের বাবা বিষয়টি জানতে পেরে ধার দেনা করে আসামিকে ১০,০০০ টাকা প্রদান করে। কিন্তু যৌতুকের বাকি ৪০,০০০ টাকা পাওয়ার জন্য আসামি ভিকটিমকে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ঘটনার ১০/১২ দিন পূর্বে আসামি ভিকটিমকে মারপিট করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় এবং যৌতুকের ৪০,০০০ টাকা না নিয়ে আসলে তাকে বাড়িতে উঠতে দেবে না বরং মেরে ফেলবে মর্মে হুমকি দেয়। ঘটনার দিন ইংরেজি ০৫/০৯/২০০১ তারিখ রাত অনুমান ১১:৩০ ঘটিকার সময় আসামি আলম ভিকটিমের বাবার বাড়িতে এসে ভিকটিমকে ডেকে নিয়ে যায়। অতঃপর ভিকটিমের বাবার বাড়ি হতে অনুমান ৩০০ গজ দূরে ফাঁকা ভিটায় এসে আসামি আলম ভিকটিমের মুখে ও বুকে লাথি ও ঘুষি মারে। ফলে ভিকটিম মাটিতে বসে পড়ে। তখন আসামি আলম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগ্রহ করে রাখা পেট্রোল ভিকটিমের গায়ে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।ভিকটিমের চিৎকার চেঁচামেচিতে ভিকটিমের মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের প্রতিবেশীরা এসে আগুন নিভায় এবং গুরুতর অগ্নিদগ্ধ ভিকটিম আম্বিয়াকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে ঢাকার মিরপুরে সেবা ক্লিনিক নামক একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর দেখে উক্ত ক্লিনিকের চিকিৎসকরা ভিকটিম কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। উক্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম আম্বিয়া উপরোক্ত ঘটনার বর্ণনা দেয়। ইংরেজি ০৬/০৯/২০০১ তারিখ সকাল অনুমান ০৮:০০ ঘটিকার সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম আম্বিয়ার মৃত্যু হয়। রমনা থানা পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ভিকটিমের মৃতদেহের সূরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে এবং উক্ত হাসপাতালে ভিকটিমের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। অতঃপর ইংরেজি ০৭/০৯/২০০১ তারিখ ভিকটিমের বাবা মোঃ মকবুল হোসেন বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আসামী আলম, উক্ত আসামির বাবা মোঃ রহিজ উদ্দিন, মা আলেয়া বেগম, আলমের বোন জামাই রবিউল, আলমের চাচাতো নানা আফতাব সহ সর্বমোট ০৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে যার মামলা নং-০৪(১)০১, ধারা-২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ধারা ১১(ক)/৩০। মামলার পর হতে অদ্যবধি আসামী আত্মগোপনে থাকায় থানা পুলিশ আসামী আলমকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামী আলমের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট প্রদান করে এবং এজাহারনামীয় বাকি ০৪ জন আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশীট থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন স্পেশাল ট্রাইবুনাল এর বিজ্ঞ বিচারক উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম আম্বিয়াকে হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ইংরেজি ৩০/১১/২০০৩ তারিখ চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী আলমকে মৃত্যুদন্ড সাজা প্রদান করেন। পরবর্তীতে মামলা উচ্চ আদালতে গেলে মহামান্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ইংরেজি ০৬/০৭/২০০৬ তারিখ আসামি আলম এর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় প্রদান করে। উক্ত ঘটনার পর হতে আসামি আলম দীর্ঘ ২১ বছর পলাতক ছিলো।

৪। *আসামীর জীবন বৃত্তান্তঃ* প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী ১৯৮২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানাধীন আটিপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। ব্যক্তিগত জীবনে আসামী ০২ টি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রী ভিকটিম আম্বিয়াকে আসামী বিয়ের ০৩ মাসের মধ্যে আগুনে পুড়িয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে এবং এই ঘটনার ০৫ বছর পর পুনরায় ঢাকার বংশাল এলাকায় নিজের নাম ঠিকানা গোপন করে দ্বিতীয় বিয়ে করে। বর্তমানে আসামী আলম তার দ্বিতীয় স্ত্রী সূমী (৩৫)’কে নিয়ে ঢাকার টিকাটুলি এলাকায় বসবাস করে আসছিলো। বর্তমান পরিবারে তার মহিন (১৫) নামের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ২০০১ সালের পর থেকে আসামী আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে যায়নি।

৫। *আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় আসামীর জীবনযাপনঃ* আসামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় এবং ঐ মামলায় সে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোক চক্ষুর আড়ালে সে নিজেকে আত্মগোপন করে। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ঘটনার পর (২০০১ সালে) ঢাকায় চলে আসে। গত ২২ বছর ধরে আসামী আলম এনআইডিতে নিজের নাম ঠিক রেখে বাবা-মায়ের নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামী নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করে আসছিলো। প্রথমদিকে সে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের কাজ করতো। পরবর্তীতে সে বাসা ভাড়ার দালালি করে জীবিকা নির্বাহ করতো।
গত কিছুদিন যাবৎ সে বংশালে একটি জুতার কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছিলো।

৬। *নতুন ঠিকানায় এনআইডি তৈরীঃ* আসামী আলম নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য সে কাজী আলাউদ্দিন লেন, বংশাল, ঢাকা এর ঠিকানায় এনআইডি তৈরি করে এবং নিজের মায়ের নাম পরিবর্তন করে আলেয়া বেগম এর স্থলে জাহানুর বেগম ও বাবার নাম পরিবর্তন করে মো রইস উদ্দিন স্থলে মো ইয়াসিন নাম ব্যবহার করে বসবাস করে আসছিলো।

৭। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে॥

05/08/2022

মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরের চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা ও তার ৩ বছরের মেয়ে জ্যোতিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকির হোসেন'কে ঢাকা জেলার সাভার থানার শাহিবাগ এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪।

১। র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‍্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। র‍্যাব-৪ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য আসামী গ্রেফতার করে যার মধ্যে সাভারের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন হত্যার রহস্য উদঘাটনপূর্বক আসামীদের গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার, সাভারের ক্লুলেস ফাতিমা হত্যা এবং আশুলিয়ার আলী নুর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ অসংখ্য ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করা এবং আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও র‍্যাব-৪ ২০-৩০ বছর পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কয়েকজন দুর্ধর্ষ খুনী, ডাকাত এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গত কয়েকদিন পূর্বে ৩৯ বছর ধরে পলাতক হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী কাওছার (৬৩) কে ঢাকার বারিধারা থেকে, অন্তঃসত্তা স্ত্রী হত্যা মামলায় ১৯ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুলকে নারায়ণগঞ্জ থেকে, চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলায় ০৭ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নজরুলকে সাভার হেমায়েতপুর জয়নাবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

২। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৪ অগাস্ট ২০২২ রাতে র‍্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরের চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা আক্তার (২২) ও তার ৩ বছরের মেয়ে জোতিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকির হোসেন (৪৭)কে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন শাহিবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

৩। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গত ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ গ্রেফতারকৃত আসামী জাকির হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার জিয়নপুরের একই গ্রামের জনৈক মোঃ আবু হানিফ এর মেয়ে ভিকটিম নিপা আক্তারের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশকিছু নগদ অর্থ, গহণা এবং আসবাবপত্র বরপক্ষকে প্রদান করা হয়। তদুপরি বিয়ের পর হতে উগ্র এবং বদমেজাজী আসামী জাকির হোসেন ভিকটিমকে আরো যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। ইতোমধ্যে জাকির ও নিপা দম্পতির ঘরে জ্যোতি (০৩) নামে ০১ টি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। একপর্যায়ে জাকিরের পূনরায় গর্ভবতী স্ত্রী নিপা আক্তার জানতে পারে যে, জাকির এর বড় ভাই মোঃ জাহাঙ্গীর এর স্ত্রী তাহমিনার সাথে জাকির হোসেন এর পরকিয়া প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে দাম্পত্য কলহ আরো বেড়ে যায়। গত ২৫-০২-২০০৫ তারিখ রাতে জাকিরের ভাই জাহাঙ্গীর বাড়িতে না থাকার সুযোগে আসামী জাকির হোসেন তার ভাবী তাহমিনার ঘরে প্রবেশ করে। জাকিরের স্ত্রী নিপা আক্তার জাকির ও তাহমিনাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে এবং তার স্বামীকে জানায় বিষয়টি তার ভাসুর জাহাঙ্গীর’কে বলে দিবে। সেই কারণে এই বিষয় নিয়ে আসামী জাকির ও তার স্ত্রী ভিকটিম নিপা আক্তারের মধ্যে পুনরায় মনোমালিন্য এবং তুমুল ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হওয়ায় জাকির ভিকটিমকে তালাক দিবে মর্মে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। তখন ভিকটিম নিপা আক্তার ০৫-০৬ মাসের অন্তঃসত্তা ছিলো। ভিকটিম নিপা আক্তার জাকির ও তাহমিনার পরকীয়া প্রেমের এই ঘটনা আসামী জাকিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীরকে বলার পর আসামি জাকির, তার ভাই জাহাঙ্গীর, ভাবী তাহমিনা এবং শশুর-শাশুরীসহ প্রায় পরিবারের সকলেই বিষয়টি বিশ্বাস না করে ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিম নিপা আক্তারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরিবারের সদস্য, আত্বীয়-স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবের উস্কানিতে আসামী জাকির স্ত্রী নিপা আক্তারের প্রতি আরো উগ্র এবং প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে পড়ে এবং গোপনে ভিকটিম নিপা আক্তার’কে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ দিবাগত রাতে আসামী জাকির পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুমন্ত অবস্থায় ভিকটিম নিপা আক্তার’কে গলায় গামছা দিয়ে হত্যা করে এসময় ভিকটিম নিপা আক্তার মৃত্যু যন্ত্রনায় হাত-পা আছড়া আছড়ি করার সময় তাদের মেয়ে জোতি (০৩)’ জেগে কান্না-কাটি করতে থাকে। তখন ঘটনার সাক্ষী না রাখতে নরঘাতক পাষান্ড বাবা একই প্রক্রিয়ায় ০৩ বছরের শিশু কন্যা জ্যোতিকে হত্যা করে ঘরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ তারিখে থানা পুলিশ কর্তৃক ভিকটিম নিপা আক্তার এবং তার কন্যা জ্যোতির মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। একই দিনে উক্ত চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক ঘটনায় ভিকটিমের বাবা মোঃ আবু হানিফ বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় আসামী জাকির হোসেনসহ তার বাবা-নইম উদ্দিন শেখ, মা-মালেকা বানু এবং ভাবি-তাহমিনাসহ সর্বমোট ০৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-০৪(০২)২০০৫, তারিখঃ ২৭/০২/২০০৫, ধারা-৩০২/৩৪ (দঃ বিঃ)। দৌলতপুর থানা পুলিশ উক্ত মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামি জাকির হোসেন, বাবা- নইম উদ্দিন শেখ, মা- মালেকা বানু ও ভাবি- তাহমিনাকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করে কিন্তু এজাহারনামীয় আসামী নইম উদ্দিন শেখ, মালেকা বানু, তাহমিনা আসামীগণ ০১ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পায়। এজাহারনামীয় ০১ নং আসামী জাকির হোসেন ০৫ বছর কারাভোগ করে ২০১০ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার তদন্তকালীন সময়ে স্বাক্ষী-প্রমানে জানতে পারে এই হত্যাকান্ডে এজাহারনামীয় আসামীদের বাইরেও বেশকয়েকজন জড়িত আছে। বিশদ তদন্তকালে আসামী জাকিরের বিচারিক স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকান্ডের সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রধান আসামী জাকির হোসেন, তার বাবা নইম উদ্দিন শেখ, মা মালেকা বানু এবং ভাবি তাহমিনা সহ জাকিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন (৩২), জাকিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিনুল (১৮), জাহাঙ্গীরের শ্যালক স্বপন (২২) ও হাসান (১৮) এবং জাকিরের চাচাতো ভাই পারভেজ @রানা @মিলন (১৫) সহ সর্বমোট ০৯ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম অন্তঃসত্তা নিপা আক্তার ও তার মেয়ে জোতি হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ১২/০৯/২০২১ তারিখে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ উৎপল ভট্টাচার্য মহোদয় চার্জশিটে অভিযুক্ত হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অপরাধে প্রধান আসামী জাকিরকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন এবং অপর আসামী ভাবি-তাহমিনা, জাকিরের ভাই-জাহাঙ্গীর, জাকিরের বন্ধু-আমিনুল, জাকিরের চাচাতো ভাই পারভেজ রানা মিলন, জাহাঙ্গীরের শ্যালক স্বপন ও হাসান সহ প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। আসামী মালেকা বানু (জাকিরের মা) বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। উল্লেখ্য যে, বিচারকার্য চলাকালীন সময় আসামী নইম উদ্দিন মৃত্যুবরণ করে। ২০১০ সালে জামিন গ্রহণের পর থেকে মামলার রায়ের সময় মূল আসামী জাকির পলাতক ছিল এবং গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ ১২ বছর আত্মগোপনে ছিলো।

৪। আসামীর জীবন বৃত্তান্তঃ আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী ১৯৭৫ সালে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানাধীন জিয়নপুর এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। প্রথম স্ত্রী অন্তঃসত্তা নিপা আক্তার ও তার মেয়ে জ্যোতিকে হত্যা করায় ০৫ বছর হাজতবাস শেষে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর আসামী আত্মগোপনে চলে যায়। ২০১৩ সালে আসামী জাকির পুনরায় বিয়ে করে। গ্রেফতারের মুহূর্তে আসামি জাকির হোসেন তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সাভার থানাধীন জিনজিরা এলাকায় বসবাস করে আসছিলো। বর্তমান সংসারে তার মাধুরি (০৫) ও মারিয়া (০৩) নামে দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী ভিকটিম অন্তঃসত্তা নিপা আক্তার ও তার মেয়ে জ্যোতি হত্যা মামলায় জামিন নেওয়ার পর ২০১০ সাল থেকে আসামী আর কোনোদিন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর যায়নি। তবে উক্ত হত্যার ঘটনার পর থেকে আত্মগোপন এবং গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আসামী জাকির প্রথমে চট্টগ্রাম ও পরবর্তীতে ঢাকার আরামবাগ, ফকিরাপুল, হাজারীবাগ, খিলগাঁও ও সাভার এলাকায় বসবাস করতো। তবে এক জায়গায় সে বেশিদিন অবস্থান করতো না। তাছাড়া পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে সে প্রতিনিয়ত পেশা পরিবর্তন করতো। সে বিভিন্ন সময় গার্মেন্টস, স্পাইরাল বাইন্ডিং, ঝুট ব্যবসা এবং পরবর্তীতে ছদ্মবেশ ধারণ বিভিন্ন বাউল গানের দলের সাথে ঘুরে বেড়াতো ও বাউল গান করে জীবিকা নির্বাহ করতো।

৫। ছদ্মনাম তৈরীঃ আসামী পালিয়ে সাভার চলে যাওয়ার পর নিজেকে আড়াল করার জন্য জাকির নামের পরিবর্তে বাউল নাম ব্যবহার করে বাউল পরিচয় দিয়ে আসছিল।

৬। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হন্তান্তর করা হয়েছে॥

31/07/2022

মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুরের চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নজরুল ইসলাম (৪২)’কে ০৭ বছর পর ঢাকা জেলার সাভার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

১। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত, সততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র‌্যাবের জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনপূর্বক হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতার করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

২। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুরের চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার দীর্ঘ ০৭ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ নজরুল (৪২)’কে ৩০ জুলাই ২০২২ তারিখ রাত অনুমান ০৯.০০ ঘটিকায় ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন হেমায়েতপুরের জয়নাবাড়ী এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

৩। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, হরিরামপুর থানার কদমতলার কোমেলা বেগমের ছেলে ইদ্রিস আলী পেশায় একজন রিক্সাচালক। ইদ্রিসের সাথে মানিক নগর গ্রামের জোনাব আলীর মেয়ে সেলিনা বেগমের ২০০৫ সালে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ হয়। তাদের ঘরে ০১ টি মেয়ে ও ০১ টি ছেলে সন্তান থাকলেও প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। সেলিনার সাথে তার স্বামী ইদ্রিসের দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হওয়ার সুযোগে আসামী সাত্তার ইদ্রিসের বাড়ী গিয়ে স্বামী স্ত্রীর বিরোধ মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে সেলিনার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে। আসামী সাত্তার সেলিনাকে দিয়ে স্বামী ইদ্রিসের বিরুদ্ধে আদালতে নারী শিশু নির্যাতন মামলা করায়। মামলার কারণে সেলিনা ঘর সংসার ফেলে আদালতে যাওয়া আসা করতে থাকে। সেলিনাকে তার স্বামী ইদ্রিস, আসামী সাত্তারের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ও আদালতে যাওয়া আসায় বাধা দিলে সেলিনা ইদ্রিসকে কৌশলে হত্যা করার জন্য সাত্তার, নজরুল ও দুলালের সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র করে।

৪। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেলিনা সন্তানসহ স্বামী ইদ্রিসের রিকসাযোগে তার বাবার বাড়ীতে চলে যায় এবং মোবাইলে সাত্তার, নজরুল ও দুলালকে সেখানে আসতে বলে। ইদ্রিসসহ সকল আসামী সেলিনার বাবার বাড়ীতে খাওয়া দাওয়া শেষে সেলিনা কৌশলে তার স্বামী ইদ্রিসকে চেতনানাশক কিছু ঔষধ খাইয়ে দেয়। অতঃপর ইদ্রিস তার রিক্সা চালিয়ে নিজ বাড়ীর সামনে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেলিনা ও নজরুল তাকে ধরাধরি করে ইদ্রিসের বাড়ীতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২৮ নভেম্বর ২০১১ ইং তারিখ রাত অনুমান ১২.০০ ঘটিকায় হতে ০২.০০ ঘটিকার মধ্যে আসামী সাত্তার, দুলাল, নজরুল ও সেলিনা ভুক্তভোগী ইদ্রিসের গলায় প্রথমে নাইলনের রশি পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে এবং একই সাথে তারা ইদ্রিসের হাত, পা ও মাথা চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করে নৃসংশ ভাবে হত্যা করে কাঁথা দ্বারা তার মৃতদেহ ঢেকে রেখে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২৮ নভেম্বর ২০১১ তারিখে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কর্তৃক ভুক্তভোগীর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলে ময়না তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে ভুক্তভোগীর মা কোমেলা বেগম বাদী হয়ে হরিরামপুর থানায় সাত্তার, দুলাল, নজরুল ও সেলিনার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে যার মামলা নং-০২ তারিখ ০৫/০২/২০১৩ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ দঃ বিঃ। উক্ত মামলার এজাহারনামীয় আসামি নজরুলকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে উক্ত আসামি ৩৮ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পায়। মামলার অন্যান্য আসামীরা পলাতক ছিল। পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভুক্তভোগী ইদ্রিস হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ সিনিয়র দায়রা জজ চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী নজরুল ও সেলিনাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন এবং অপর একজন আসামি দুলাল’কে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। এছাড়াও অন্য আসামী সাত্তার বিচারকার্যের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত ঘটনার পর হতে আসামী নজরুল দীর্ঘ প্রায় ০৭ বছর যাবত পলাতক ছিল।

৫। আসামীর জীবন বৃত্তান্তঃ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী ১৯৮০ সালে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানাধীন কামারঘোনা এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। গত কিছু দিন ধরে আসামি নজরুল ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন হেমায়েতপুর জয়নাবাড়ী এলাকায় বসবাস করে আসছিলো। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আসামী নজরুল ঢাকা, আশুলিয়া ও সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতো এবং এক জায়গায় সে বেশিদিন অবস্থান করতো না। তাছাড়াও পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে সে প্রতিনিয়ত পেশা পরিবর্তন করতো। সে বিভিন্ন সময় ভ্যান চালক, কাঁচা মালের ব্যবসা, সবজি বিক্রেতা কিংবা হোটেলে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।

৬। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হন্তান্তর করা হয়েছে।

#মানিকগঞ্জ

Videos (show all)

*মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকায় চাঞ্চল্যকর আগুনে পুড়িয়ে আম্বিয়া হত্যা মামলার দীর্ঘ ২১ বছরের পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আল...
মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরের চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা ও তার ৩ বছরের মেয়ে জ্যোতিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্...
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুরের চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ
আজ বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হলো -মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আমাদের টাকায় আমাদের সেতুবাংলাদেশের পদ্মা সেতুস্বপ্নের সেতুর স্বপ্ন সারথীআমি গর্বিত, আমি বাঙ্গালী…
প্রেস রিলিজ:মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইরের চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুল (৩৯)’ক...
মানিকগঞ্জ সদর এলাকার আজহার হ'ত্যা মামলার দীর্ঘ ৩১ বছর বিভিন্ন ছদ্মবেশে পলাতক মৃ'ত্যু'দ'ন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ কাওসারকে রাজ...
স্বাধীন খেলাধুলা কী এবং আপনার বাড়িতে এ ধরনের খেলাধুলাকে কেন উৎসাহিত করা উচিত?খেলা শুধুমাত্র মজার একটা বিষয় না - এটি শেখ...

Telephone