Samadhi MOTH
To culture Nirvana Dharma in the light of Samkhya, Yoga and cognate philosophies.
ওঁ সমাধি🙏
শুভ দীপাবলীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জয় গুরু। 🙏🙏🙏
শুভ শারদীয়া, প্রত্যেকের পূজা ভালো কাটুক, প্রত্যেকে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এই কামনা করি মঙ্গলময়ী মায়ের কাছে।
🙏জয় গুরুদেবের জয় 🙏
শুভ জন্মদিন Admin বিজয় সরকার ।
গুরু কৃপায় দীর্ঘায়ু লাভ করো।
ওম সমাধি 🙏
আপনারা সকলেই আমন্ত্রিত। 🙏
ওঁ সমাধি জয় গুরু।
গুরু কৃপাহি কেবলম্🙏
একজন ব্রহ্মজিজ্ঞাসু ব্যক্তি, তাঁর গুরুর নিকটেই ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করতে পারে। আর এ ব্রহ্মজ্ঞান লাভের পরাকাষ্ঠা হল, অকৃত্রিম ভক্তি। অর্থাৎ পরমেশ্বরের প্রতি আমাদের যেরূপ একনিষ্ঠ ভক্তি রয়েছে, সেইরূপ অচলা ভক্তি যদি গুরুর প্রতিও থাকে, তবেই সেই গুঢ় ব্রহ্মরহস্য আমাদের নিকট প্রকাশিত হবে। এজন্য ব্রহ্মজিজ্ঞাসু ব্যক্তির শ্রদ্ধাবান্ এবং ভক্তিমান হওয়া অত্যন্ত আবশ্যক।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা তে ৪ অধ্যায় ৩৪ নং শ্লোকে বলা হয়েছে:
"তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া। উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ॥"
[আচার্য্যগণের] সেবা প্রণিপাত এবং [যথাবসরে] তত্ত্ববিষয়ে বিনীত প্রশ্নের দ্বারা, জ্ঞানলাভের উপায় কি, তাহা জান।তত্ত্বদর্শী জ্ঞানীগণ [এইপ্রকার হইলে] তোমাকে সম্যগ্ জ্ঞান-বিষয়ে উপদেশ প্রদান করিবেন।
অর্থাৎ শ্রদ্ধাপূর্বক প্রণাম, সেবা দ্বারা এবং নিষ্কপটভাবে প্রশ্ন করে সেই জ্ঞানলাভ করতে হয়। তখন তত্ত্বদর্শী জ্ঞানীগণ তোমাকে সেই জ্ঞান সম্পর্কে উপদেশ প্রদান করবেন।
তত্ত্ববেত্তা গুরুর উপদেশ দ্বারাই জীব অজ্ঞানরূপ নিদ্রাবস্থা ত্যাগ করে এই চরাচর জগৎ এবং দেহস্থ অগ্নি, বায়ু, আকাশাদি ভূতসমূহের তত্ত্ব অবগত হন এবং বুঝতে পারেন যে, এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড সর্বব্যাপক পরমাত্মার সত্তা দ্বারাই উৎপন্ন হয় এবং তাঁর সত্তা দ্বারা লয় হয়। গুরুকৃপায় ব্রহ্মরহস্য অবগত হওয়ার পর জীব বলেন— “ত্বামেব প্রত্যক্ষং ব্রহ্ম বদিষ্যামি” (তৈত্তি০ উপ০ ১।১) অর্থাৎ পরমাত্মা! তোমাকেই আমি "ব্রহ্ম" বলবো, অন্য কাউকে নয়।
গীতা ৪ অধ্যায় ৩৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,
তুমি যদি সকল পাপিগণ হইতেও অধিক পাপকারীহও, তাহা হইলেও জ্ঞানরুপ ভেলার সাহায্যে সকল পাপ-সমুদ্র পার হইতে পারিবে।
অতএব, সংসার সমুদ্র থেকে পরিত্রাণ পেতে আদর্শ গুরুর শরণাগত হয়ে আত্মতত্ত্ব (ব্রহ্মবিদ্যা) জানা উচিত। ওঁ সমাধি, জয় গুরুদেব, ওঁ শান্তিঃ 🙏
ত্রিভুবনে যত প্রেম আছে গুরুর সাথে শিষ্যের প্রেম সর্বশ্রেষ্ঠ। জয় গুরু 🙏🌸🌸🌺🌼
ওঁ সাংখ্যপ্রবচন সূত্র নং - ৭
আভাস - দুঃখনিবৃত্তিই মুক্তি, এই কথা বলাতে দুঃখসংযোগই বন্ধন, ইহাই বলা হইলো। তবে কি এই বন্ধন স্বাভাবিক? তদুত্তরে বলিতেছেনঃ -
🌸ন স্বাভাবতো বদ্ধস্য মোক্ষসাধনোপদেশবিধিঃ। ৭🌸
বঙ্গানুবাদ - বন্ধন কে স্বাভাবিক বলা যায় না। যদি স্বাভাবিক হয়, তাহা হইলে শাস্ত্রোক্ত মোক্ষোপায় ও তদ্বিধান বিফল হইয়া যায়। যদি বন্ধন স্বাভাবিক হইত, তাহা হইলে শাস্ত্রে মোক্ষোপায় লিখিত থাকিত না। ৭
তাৎপর্য্যার্থ - জগতে যেটি যাহার স্বাভাবিক ধর্ম, শত - সহস্র চেষ্টাতেও তাহা কখন দূরীভূত হয় না। যেমন অগ্নির স্বাভাবিক ধর্ম উষ্ণতা, যদি অগ্নির ঐ উষ্ণতাকে নষ্ট করিতে হয়, তাহা হইলে অগ্নিকে পর্য্যন্ত নির্ব্বাপিত করিয়া নষ্ট করিতে হয়। তদ্রূপ যদি পুরুষের বন্ধনটি স্বাভাবিক হয়, তাহা হইলে সেই বন্ধননাশের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের নাশও অবশ্যম্ভাবী। অতএব বন্ধন স্বাভাবিক নহে। ৭
ওঁ সাংখ্যপ্রবচন সূত্র নং - ৬🌸🌸🌸
আভাস - লৌকিক সাধনলভ্য রাজ্য ঐশ্বর্য্যাদির দ্বারা পরম দুঃখের নিবৃত্তি না হউক, কিন্তু শাস্ত্রীয় উপায়-সাধ্য যাগযজ্ঞাদি বৈদিক কর্মের দ্বারা ত আত্যন্তিক দুঃখের নিবৃত্তি হইতে পারে। তদুত্তরে বলিতেছেনঃ -
🌸অবিশেষশ্চোভয়োঃ।৬🌸
বঙ্গানুবাদ- দৃষ্ট উপায় অর্থাৎ ধনাদি এবং বৈদিক ক্রিয়াকান্ড উভয়ই তুল্য। - ইহার কারণ এই যে, কি ধনাদি, কি যাগযজ্ঞাদি কিছুতেই আত্যন্তিক দুঃখ-নিবৃত্তির সম্ভাবনা নাই। বিবেকজ্ঞান জন্মিলেই মোক্ষরূপ পরমপুরুষার্থ প্রাপ্ত হওয়া যায়।৬
তাৎপর্য্যার্থ - লৌকিক সাধনলভ্য রাজ্য ঐশ্বর্য্য যেমন ক্ষয়শীল ও দুঃখমিশ্রিত, বৈদিক সাধন যাগযজ্ঞাদি দ্বারা লভ্য স্বর্গও সেইরূপ ক্ষয়শীল ও দুঃখমিশ্রিত। কারণ, লৌকিক কর্মাজিত রাজ্য ঐশ্বর্য্যাদি যেমন কালে নষ্ট হইয়া যায়, সেইরূপ বৈদিক কর্মাজিত স্বর্গাদিও কালে নষ্ট হইয়া যায়। গীতাতে শ্রী ভগবান অর্জুনকে ঐ কথাই বলিয়াছেন, যথা-"ক্ষীণে পুন্যে মর্ত্ত্যলোকং বিশন্তি" অর্থাৎ যাগযজ্ঞাদিরূপ কর্ম্মজন্য পুণ্য ক্ষয় হইয়া গেলেই জীবকে আবার এই দুঃখপূর্ণ সংসারের আসিতে হয়। পৃথিবীতে যেমন লৌকিক উপায়ের তারতম্য বশতঃ ধনসম্পত্তির তারতম্য হওয়ায় আপনা অপেক্ষা অধিক-ধনবান্ ব্যক্তিকে দেখিয়া তাহা অপেক্ষা অল্প ধনবান্ ব্যাক্তির আকাঙ্খা ও ঈর্ষ্যা প্রভৃতি দুঃখ হয়, তদ্রূপ যাগযজ্ঞাদি পুণ্যের তারতম্য বশতঃ স্বর্গেও সুখ ভোগের তারতম্য হয়, অর্থাৎ পুণ্যের আধিক্য বশতঃ কেহ বা ইন্দ্রত্ব পাইলেন এবং পুণ্যোর অল্পতা বশতঃ কেহ বা ক্ষুদ্র দেবত্ব পাইলেন। সেই জন্য স্বর্গেও অধিক - পুণ্যবান্ ব্যাক্তির সুখ দেখিয়া অল্প-পুণ্যবান্ ব্যাক্তির আকাঙ্খা, ঈর্ষ্যা প্রভৃতি দুঃখ হইয়া থাকে। বিশেষতঃ লৌকিক উপায়ের ন্যায় বৈদিক উপায়েও অনেক স্হলে জীবহত্যাদিরূপ হিংসাজনক কার্য্য করিতে হয়। সেই জন্য যে পাপ হয়, তাহাতে স্বর্গেও দুঃখসম্পর্কশূন্য সুখভোগ করিবার অধিকার কোথায়? কেহ হয় তো মনে করিতে পারেন যে, শাস্ত্রবিহিত বৈধহিংসায় আবার পাপ কি? কিন্তু সেরূপ কথা মনে করায় কোন ফল নাই। কারণ, "মা হিংস্যাৎ সর্ব্বাভূতানি" অর্থাৎ কোন প্রানীকেই হিংসা করিবে না, এইটিই প্রকৃত বেদের হৃদয়ের কথা। তবে যে যজ্ঞাদিতে হিংসার ব্যবস্থা দেখা যায়, তাহা কেবল রাজ্য, ঐশ্বর্য ও স্বর্গাদি কামনাপূর্ণ অবিবেকি ব্যক্তির জন্য। তাই শ্রুতিও
বলিয়াছেন - " ন কর্ন্মণা ন প্রজয়া ধনেন ত্যাগেনৈকে অমৃতত্বমানশুঃ।" অর্থাৎ বিবেকী ব্যাক্তি স্বর্গসুখ, পুত্রলাভ ও ধনসম্পত্তি-স্পৃহা সমস্তই পরিত্যাগ পূর্বক একমাত্র ত্যাগের দ্বারাই পরম শান্তি লাভ করেন। আর অবিবেকি বিবিধ কামনার বশবর্ত্তী হইয়া মৃত্যুতুল্য যন্ত্রনা ভোগ করে। শ্রুতি যথা-কর্ন্মণা মৃত্যুমৃষয়ো নিষেদুঃ প্রজাবন্তো দ্রবিণমীহমানাঃ" অতএব আত্মজ্ঞান ব্যাতিত লৌকিক ও বৈদিক কোন উপায়েই মুক্তি সিদ্ধ হইতে পারে না। ৬
🌸ওঁ সাংখ্যপ্রবচন সূত্র নং-৫
আভাসঃ—লৌকিক উপায়েই ত রাজ্য ঐশ্বর্য্য লাভ করিয়া সকল দুঃখের হাত হইতে পরিত্রাণ পাওয়া যায় এবং পরম সুখে কালযাপন করা যায়। ধনী লোকেরা যে সুখি, তাহা কে না জানে? সুতরাং মুক্তিলাভের জন্য পরিশ্রম করিবার আবশ্যক কি? তদুত্তরে বলিতেছেনঃ -
"উৎকর্ষদপি মোক্ষস্য সর্বেবাৎকর্ষশ্রুতেঃ।" ৫
বঙ্গানুবাদঃ— লৌকিক উপায়ের দ্বারা লভ্য রাজ্য ঐশ্বর্য্যাদি অপেক্ষা মোক্ষই শ্রেষ্ঠ। কারণ, শ্রুতি মোক্ষেরই সর্বেবৎকৃষ্টতা প্রতিপাদন করিয়াছেন। ৫
তাৎপর্য্যার্থঃ— লৌকিক সাধনের দ্বারা অতুল রাজ্য ঐশ্বর্য্য লাভ করিয়াও, রাজরাজেশ্বর পৃথিবীপতি দুঃখশূন্য হইতে পারেন না। কারণ, তাহাকেও রাজ্যশাসন, প্রজাপালন, বিদ্রোহদমন প্রভৃতির জন্য এবং উত্তরোত্তর আকাঙ্ক্ষার বৃদ্ধি হেতুক সর্ববদা চিন্তাদিরূপ বিবিধ ক্লেশ ভোগ করিতে হয়। অতএব সর্ববদুঃখনিবর্ত্তক মুক্তিই যে রাজ্য ঐশ্বর্য্য অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, তাহাতে আর অধিক বক্তব্য কি আছে?(চলতে থাকবে)
"জ্ঞাত্বা দেবং সর্বপাশাপহানিঃ ক্ষীণৈঃ ক্লেশৈর্জন্মমৃত্যুপ্রহাণিঃ। তস্যাভিধ্যানাৎ তৃতীয়ং দেহভেদে বিশ্বৈশ্বর্য়ং কেবল আপ্তকামঃ।।"
(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ১/১১)
সরলার্থঃ "পরমদেব পরমাত্মাকে জেনে সমস্ত বন্ধন নাশ হয় এবং সমস্ত ক্লেশ ক্ষয় হয়, এর ফলে জীব জন্ম-মৃত্যুর দুঃখ হতে মুক্ত হন। তৃতীয়তঃ একাগ্রচিত্তে সেই পরব্রহ্মের ধ্যান করার ফলস্বরূপ দেহত্যাগের পর বিশ্বের সমস্ত ঐশ্বর্য প্রাপ্তি হয়। অবশেষে জীবাত্মা স্বরূপে স্থিত হন এবং সকলপ্রকার কামনা-বাসনা পূর্ণ হয়ে যায়।"
🌸ওঁ সাংখ্যপ্রবচন-সুত্র নং ৪
আভাস - লৌকিক উপায়ে নিষ্পন্ন পুরুষার্থের নিকৃষ্টত্ব যে বিজ্ঞজনেরও অনুমোদিত, তাহাই প্রতিপাদন করিয়া বলিতেছেনঃ-
"সর্ববাসম্ভবাৎ সম্ভবেহপ্যত্যন্তাসম্ভবাৎ হেয়ঃ প্রমাণকুশলৈঃ।" ৪
বঙ্গানুবাদ - লৌকিক উপায়ে সকল দুঃখের উপশম হয় না, হইলেও তাহা আত্যন্তিক নহে। কারণ, পরক্ষণেই আবার সেই সেই দুঃখ আসিয়া উপস্থিত হয়। অতএব শাস্ত্রবিৎ অর্থাৎ বিবেকী ব্যাক্তিগণ লৌকিক উপায়কে হেয় বলিয়া ত্যাগ করত শাস্ত্রীয় উপায়কেই উপাদেয়- রূপে গ্রহণ করিয়া থাকেন। ৪
তাৎপর্য্যার্থ - লৌকিক উপায়(ধন-সম্পত্তি, সুন্দরী রমণী ও ঔষধাদি) দ্বারা যে ক্ষণস্হায়ী দুঃখের নিবৃত্তি হয়, তাহাও প্রকৃতপক্ষে দুঃখের নাশক না হইয়া দুঃখের পোষাকই হইয়া থাকে। কারণ, একটি দুঃখনিবৃত্তি করিতে গিয়া তজ্জন্য আরও দশটি দুঃখ ভোগ করিতে হয়। (চলতে থাকবে)
গুরু পূর্ণিমা অনুষ্ঠান ২০২৩
স্থান-শ্রী গুরুধাম হাসুয়া সমাধি মঠ।
🌸🌸🌸🙏🙏🙏🙏🙏🌸🌸🌸🌸
আজ গুরু পূর্ণিমা পবিত্র মহেন্দ্রক্ষণে হাসুয়া সমাধি মঠে মাধ্যণ্য উপাসনা, শান্তি পাঠ করছেন পুজ্যপাদ মহান্ত মহারাজ স্বামী মৈত্রী প্রকাশ আরন্য ।
গুরু পূর্ণিমার ২০২৩🙏
🌸শুভ গুরু পূর্ণিমা 🌸
প্রনাম মন্ত্র - ওঁ অজ্ঞান-তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন-শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। ১
মন্ত্রঃ সত্যং পূজা সত্যং সত্যং দেবো নিরঞ্জনঃ।
গুরোর্বাক্যং সদা সত্যং সত্যমেব পরং পদম্।।২
অখন্ড-মন্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।
তত্পদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।৩
ধ্যানমূলং গুরোমূর্ত্তিঃ পূজামূলং গুরোঃ পদম্।
মন্ত্রমূলং গুরোর্বাক্যং মোক্ষমূলং গুরোঃ কৃপা।।৪
ব্রহ্মানন্দং পরম-সুখদং কেবলং জ্ঞানমূর্ত্তিম্।
দ্বন্দ্বাতীতং গগন-সদৃশং তত্ত্বমস্যাদি-লক্ষ্যম্।।
একং নিত্যং বিমলমচলং সর্ব্বদা সাক্ষিভূতম্।
ভাবাতীতং ত্রিগুণ-রহিতং সদ্গুরুং তং নমামি।।৫
ত্বমেব মাতা চ পিতা ত্বমেব।
ত্বমেব বন্ধুশ্চ সখা ত্বমেব।
ত্বমেব বিদ্যা দ্রবিণং ত্বমেব।
ত্বমেব সর্ব্বং মম দেবদেব।।৬
অর্থঃ
যিনি অজ্ঞান-অন্ধকারাচ্ছন্ন শিষ্যের চক্ষু জ্ঞানাঞ্জন-শলাকা দিয়া খুলিয়া দেন, সেই শ্রীগুরুদেবকে ভক্তিভরে প্রণাম করি।১
মন্ত্র সত্য, পূজা সত্য, দেব নিরঞ্জনও সত্য; শ্রীগুরুদেবের বাক্যও সর্ব্বদা সত্য বলিয়া জানিবে এবং সেই পরমপদও সত্য।২
যাঁহার দ্বারা অখন্ড-মন্ডলাকার এই চরাচর বিশ্ব পরিব্যাপ্ত রহিয়াছে, তাঁহার শ্রীপাদপদ্ম যিনি দর্শন করাইয়া দেন, সেই শ্রীগুরুদেবকে পুনঃ পুনঃ প্রণাম করি।৩
শ্রীগুরুমূর্ত্তিই সর্ব্বদা ধ্যান করা কর্ত্তব্য, শ্রীগুরুদেবের শ্রীপাদপদ্মই সর্ব্বদা পূজা করা উচিত, শ্রীগুরুদেবের বাক্যই মন্ত্র-স্বরূপ এবং শ্রীগুরুকৃপাই মুক্তি বা মোক্ষ লাভের একমাত্র উপায়।৪
যিনি ব্রহ্মানন্দ-স্বরূপ, পরম সুখদানকারী, নিলির্প্ত, জ্ঞান-মূর্ত্তি-স্বরূপ, যিনি সুখদুঃখাদি দ্বন্দ্বের অতীত, গগনসদৃশ উদার, ‘তত্ত্বমসি’ প্রভৃতি মহাবাক্যের লক্ষ্য-স্বরূপ, যিনি এক, নিত্য, বিমল, অচল, সর্ব্বদা সমস্ত কিছুর সাক্ষীস্বরূপ, ভাবাতীত ও ত্রিগুণাতীত, সেই পরব্রহ্মরূপী শ্রীশ্রীসদ্গুরুকে ঐকান্তিক ভক্তিভরে প্রণাম করি।৫
হে গুরুদেব, তুমিই আমার মাতা, তুমিই আমার পিতা, তুমিই বন্ধু, তুমিই সখা। তুমিই আমার বিদ্যাবুদ্ধি, তুমিই আমার ধনৈশ্বর্য্য সবই; শুধু তাহাই নয়, হে আমার প্রাণদেবতা, তুমিই আমার জীবনের যথাসর্বস্ব।৬🙏
(এইভাবে শ্রীশ্রীসদ্গুরুর শ্রীচরণে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণই প্রণাম মন্ত্রের যথার্থ অর্থ) ।
🌸সদগুরু প্রসঙ্গে কিছু কথা- গুরু কে হতে পারে? সৎ গুরু চেনার উপায় কী? গুরু কে ভগবান বলা যায়? সৎ গুরুর লক্ষণ সমূহ কী কী? ইত্যাদি প্রশ্নসমূহ প্রায়ই আমাদের মনে প্রায়ই উঁকি দেয়। এছাড়া গুরু পূর্ণিমা সন্নিকটে। তাই পরম গুরু এবং আমাদের পথপ্রদর্শকদের নিয়ে দুচার কথা লিখতে বসলাম। মূলত যিনি অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে দেন তিনিই গুরু। এ বিষয়ে গুরুগীতার ২০ নাম্বার শ্লোকে বলা হয়েছে, “গু” হল অন্ধকার এবং “রু” হল সেই অন্ধকার যিনি নাশ করেন। গুরু গীতার ২৭ নাম্বার শ্লোকে আরো পরিস্কার করে বলা হয়েছে, “জ্ঞানরূপ শলাকার সাহায্যে যিনি অজ্ঞ ব্যক্তির অজ্ঞানতা দূর করেন তিনিই গুরু।”
গুকারশ্চান্ধকারঃ স্যাৎ, রু-কারস্তন্নিরোধকঃ। অন্ধকারঃ নিরোধিত্বাৎ গুরুরিত্যভিধীয়তে।।
সুতরাং যেই জ্ঞানের দ্বারা মানবের অজ্ঞানরূপ অন্ধকার নিরোধ প্রাপ্ত বা নিবারণ হয় তাঁহার নাম গুরু। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রথম প্রেসিডেন্ট স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজ বলতেন— “চুরি করা শিখতেও একজন শিক্ষকের দরকার। আর ব্রহ্মবিদ্যার মতো শ্রেষ্ঠবিদ্যা – ব্রহ্ম সমন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে কোন শিক্ষক লাগবে না?” জগৎগুরু শঙ্করাচার্য তাঁর বিবেকচূড়ামণিতে (৩৬) বলেছেন— আত্মতত্ত্বজিজ্ঞাসু গুরুর কাছে যাওয়া উচিৎ।
পূর্ব পূর্ব সময়ে যেসব গুরু ছিলেন— যেমন, বশিষ্ঠ, বেদব্যাস, যাজ্ঞবল্ক্য প্রভৃতি; আত্মা সেই সকলেরই গুরু। তিনি কালেরদ্বারা অবিচ্ছিন্ন হন না। তাই গুরু নমস্কারে বলা হয়েছে — গুরুব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ। গুরুরেব পরমব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমো।। (গুরুগীতা, ২৬)
যোগ দর্শনে (সমাধি পদ/২৬,২৭) বলা হয়েছে, সেই ঈশ্বর পূর্বে উৎপন্ন গুরুদেরও গুরু। কালের দ্বারা তিনি কখনো মৃত্যু প্রাপ্ত হননা। সেই ঈশ্বরের নাম ওম্(ওঁ)।
গুরুর পরম্পরা অর্থাৎ জ্ঞান প্রাপ্তির এই ধারা বৈদিক যুগ থেকেই হয়ে আসছে। আমাদের কেমন গুরুর কাছে যাওয়া উচিৎ? এই প্রশ্নের সবচেয়ে উত্তম উত্তর প্রদান করেছে মুণ্ডক উপনিষদ। সরাসরি বলেছে (১/২/১২), বেদজ্ঞ অর্থাৎ যিনি বেদের জ্ঞান প্রাপ্তি করেছেন-এমন ব্রহ্মনিষ্ঠ গুরুর সমীপে যেতে হবে।
গুরুর শাস্ত্রীয় অপর নাম আচার্য। কারণ তিনি আচরণের মাধ্যমে শিক্ষা দেন। কঠ উপনিষদ (১/২/৭) বলছে— নিপুন আচার্যের কাছে কেউ আত্মজ্ঞান লাভ করেছে, এই রকম ব্যাক্তিও সচরাচর পাওয়া যায়না। কথাটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে সম্পূর্ণ সত্যতা নিজেই উপলোব্ধি করতে পারবেন।
মহাভারতের গীতায় (২/৭) শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে ব্রহ্মবিদ্যা সহ নানা প্রকার জ্ঞান দান করেছিলেন। কিন্তু সেটি অর্জুন শিষ্যত্ব গ্রহণের পর। অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পিত ছিলেন। সমর্পণ, শ্রদ্ধা এবং ভক্তি সহকারে জ্ঞান অর্জন করা উচিৎ। এজন্য শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ (৬/২৩) বলছে, পরমেশ্বরের প্রতি যার ভক্তি আছে, তার পক্ষেই গুরুর দানকৃত বিদ্যা প্রকাশিত হয়।
গুরুকে ভগবান বলা যায়? এই প্রশ্নেরও স্পষ্ট উত্তর রয়েছে উপনিষদে। মুণ্ডক উপনিষদের প্রথম মুণ্ডক প্রথম খণ্ডের তিন নাম্বার শ্লোকে দেখা যায় গৃহস্থ শৌনক ঋষি অঙ্গিরার কছে জ্ঞান অর্জন করতে এসে “ভগবান” শব্দে সম্বোধন করছেন। সুতরাং আমরা গুরুদেবকে ভগবান উপমায় ভূষিত করিতে পারি।
য়স্য দেবে পরা ভক্তির্য়থা দেবে তথা গুরৌ।
তস্যৈতে কথিত হ্যর্থাঃ প্রকাশন্তে মহাত্মনঃ। প্রকাশন্তে মহাত্মনঃ॥২৩॥
(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬।২৩)
সরলার্থঃ যেই ব্যক্তির পরমদেব পরমেশ্বরের প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তি এবং পরমেশ্বরের প্রতি যেরূপ গুরুর প্রতিও সেইরূপ ভক্তি আছে, সেই মহাত্মার নিকটেই এই উপনিষদে বর্ণিত গূঢ় রহস্য নিশ্চিতরূপে প্রকাশিত হয়।
ভাবার্থঃ একজন ব্রহ্মজিজ্ঞাসু ব্যক্তি, তাঁর গুরুর নিকটেই ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করতে পারে। আর এ ব্রহ্মজ্ঞান লাভের পরাকাষ্ঠা হল, অকৃত্রিম ভক্তি। অর্থাৎ পরমেশ্বরের প্রতি আমাদের যেরূপ একনিষ্ঠ ভক্তি রয়েছে, সেইরূপ অচলা ভক্তি যদি গুরুর প্রতিও থাকে, তবেই সেই গুঢ় ব্রহ্মরহস্য আমাদের নিকট প্রকাশিত হবে। এজন্য ব্রহ্মজিজ্ঞাসু ব্যক্তির শ্রদ্ধাবান্ এবং ভক্তিমান হওয়া অত্যন্ত আবশ্যক।
এই বিষয়ে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উপদেশ দিয়েছিলেন—"তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া। উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ॥" (গীতা ৪।৩৪) অর্থাৎ শ্রদ্ধাপূর্বক প্রণাম, সেবা দ্বারা এবং নিষ্কপটভাবে প্রশ্ন করে সেই জ্ঞানলাভ করতে হয়। তখন তত্ত্বদর্শী জ্ঞানীগণ তোমাকে সেই জ্ঞান সম্পর্কে উপদেশ প্রদান করবেন।উপনিষদের মতে যিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ এবং শ্রুতি, স্মৃতি শাস্ত্রের তত্ত্ব তপস্যার দ্বারা উপলব্ধি করেছেন তিনি গুরুপদবাচ্য,,,, কারণ, এই রকম সাধকই শিষ্যদের অজ্ঞানতা দূর করে জ্ঞানের প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম।
শাস্ত্রে গুরু সম্পর্কে বলা আছে,—“শ্রোত্রিয়ং ব্রহ্মনিষ্ঠম”। গুরুকে ‘শ্রোত্রিয়’ অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞানী হতে হবে, শ্রুতিতে পারঙ্গম হতে হবে। ‘শ্রুতি’ মানে বেদ, তাই বেদ জ্ঞানের মর্মকে তিনি জানবেন। শুধু অর্থকে নয়, মর্মকে জানতে হবে। অর্থাৎ শ্রুতির মর্মবেত্তাকে বলা হচ্ছে ‘শ্রোত্রিয়’। শুধু ‘শ্রোত্রিয়’ বা শাস্ত্রজ্ঞ হলেই হবে না, শাস্ত্রের মর্মজ্ঞ হতে হবে এবং পাশাপাশি তাঁকে ‘ব্রহ্মনিষ্ঠ’ ও হতে হবে। ‘ব্রহ্মনিষ্ঠ’ মানে, তাঁর জীবন এবং আচরণে দাম্ভিকতা, অহংকার, আত্মাভিমান ক্রোধ, পরনিন্দার স্থান থাকবে না, থাকবে সমর্পণ, পবিত্রতা, ত্যাগ, সেবা, এই সবগুলির মিলিত ভাব।
গুরু সম্পর্কে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বলা আছে—
"তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া।
উপদেক্ষান্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ॥"
অর্থাৎ–তত্ত্বদর্শী জ্ঞানী আচার্যদিগের নিকটে আত্মসমর্পণ করিয়া এবং তাঁহাদের সম্পূর্ণ অধীন ভাবে সেবা দ্বারা তাঁহাদিগকে প্রসন্ন করিবে, তখন তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলে তাঁহারা এই জ্ঞান তোমাকে উপদেশ করিবেন এবং তুমি তাহা বুঝিতে পারিবে।
মহাত্মা শ্রীশ্রী ভোলানাথ ‘গুরু কেমন হবেন’ সে সম্পর্কে বলেছেন-" তিনিই গুরু হওয়ার যোগ্য যিনি সর্ব্বশাস্ত্রে দক্ষ, সর্ব্বশাস্ত্রার্থবিৎ, সুবচাঃ(মধুর বাচন যাঁহার), সুন্দর, স্বচ্ছ(দোষ মুক্ত), কুলীন, শুভদর্শন, জিতেন্দ্রিয়, সত্যবাদী, ব্রাহ্মণ (ব্রহ্মজ্ঞান যিনি লাভ করেছেন), শান্ত-মানস (যিনি ধীর,স্থির ও শান্ত) ইত্যাদি গুণ সম্পন্ন ব্যক্তি।
স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ভক্তিযোগ গ্রন্থে বলেছেন, “আমরা দেখব তিনি (গুরু) যেন শাস্ত্রের মর্মজ্ঞ হন। যে গুরু শব্দ নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করেন ও মনকে কেবল শব্দের শক্তি দ্বারা চালিত হতে দেন; তিনি ভাব হারিয়ে ফেলেন... শাস্ত্রের মর্ম যিনি জানেন, তিনিই যথার্থ ধর্মাচার্য। শব্দ যোজনা, সুন্দর ভাষায় বক্তৃতা ও শাস্ত্রমর্ম ব্যাখ্যা করার বিভিন্ন উপায়-পণ্ডিতদের বিচার ও আমোদের বিষয়মাত্র, উহা দ্বারা অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ হয় না। ...জগতের কোনও প্রধান ধর্মাচার্যই এরূপ শাস্ত্রের নানাবিধ ব্যাখ্যায় অগ্রসর হননি। শব্দার্থ ও ধাত্বর্থ নিয়ে ক্রমাগত মার-প্যাঁচ করেন নি। শুধু তাঁরা জগৎকে অতি সুন্দর শিক্ষা দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত: গুরুর নিষ্পাপ হওয়া আবশ্যক। অনেক সময় লোকে বলে, ‘গুরুর চরিত্র, গুরু কি করেন না করেন, দেখবার কি প্রয়োজন? তিনি যা বলেন, সেটি নিয়েই আমাদের কাজ করা আবশ্যক।’ একথা ঠিক নয়। গতিবিজ্ঞান, রসায়ন বা অন্য কোন পদার্থবিজ্ঞান শিখাতে হলে, শিক্ষক যাই হোন না কেন, কিছু আসে যায় না। কারণ ওতে কেবল বুদ্ধিবৃত্তি চালনা— বুদ্ধি বৃত্তিকে কিঞ্চিৎ সতেজ করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অধ্যাত্ম বিজ্ঞানের আচার্য অশুদ্ধচিত্ত হলে, তাঁতে আদৌ ধর্মালোক থাকতে পারে না। অশুদ্ধচিত্ত ব্যক্তি আবার ধর্ম কি শিখাবে? নিজে আধ্যাত্মিক সত্য উপলব্ধি এবং অপরে সঞ্চার করার একমাত্র উপায়—হৃদয় ও মনের পবিত্রতা। যতদিন না চিত্তশুদ্ধ হয়, ততদিন ভগবদ্দর্শন বা সেই অতীন্দ্রিয় সত্তার আভাস জ্ঞানও অসম্ভব। সুতরাং ধর্মাচার্যের সম্বন্ধে প্রথম তিনি কি চরিত্রের লোক, তা দেখা আবশ্যক তারপর তিনি কি বলেন দেখতে হবে।“
শ্রীশ্রী রামঠাকুর বলেছেন,"--সদগুরু দত্ত নামের শক্তি অসীম, অমোঘ। সদগুরু ধরতে জানেন, ছাড়তে জানেন না বইলাই নাম সাধনের ফলে নামে অনুরাগ জন্মে। অনুরাগ থাইকা নামে রুচি হয়, রুচি থাইকা নামে প্রেম হয়। নামে প্রেম যোগ হইলে ব্রজবাসী হইয়া যায়। আর যাতায়াত করতে হয় না" -" গুরুর উপর পূর্ণ বিশ্বাস থাকলে উপায় গুরুই করেন ।"
শ্রীশ্রীমৎ নিগমানন্দ পরমহংসদেব বলেছেন,"শিষ্য করা সদগুরুর ব্যবসা নহে --- প্রাণের প্রেরণা। শিষ্য হৃদয়ে শ্রীভগবানের বিকাশ দেখিবার আশাতেই গুরু শিষ্যের ভার গ্রহণ করেন।“
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে “অসৎ-গুরু পরিত্যাগ করে সদগুরু গ্রহণই জীবের একমাত্র মঙ্গল।“
শ্রীশ্রীমৎ স্বামী ভূমানন্দ পরমহংসদেব বলেছেন, “গুরু নির্বাচনে যদি ভুল হয় অর্থাৎ অসৎ গুরুকে যদি সৎগুরু বলিয়া গ্রহণ করা হয়, তাহা হৈলে তদ্বারা জ্ঞান লাভ না হৈয়া বরং অজ্ঞানতাই বৃদ্ধি পায়। এরূপ গুরু পরিত্যাগ করাই বিধেয়, ও সৎগুরুর অনুসন্ধান কর্ত্তব্য।“
🌸"যিনি অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান তিনিই গুরু।" এমনই একজন শ্রেষ্ট গুরু হলেন ব্যাসদেব। ( basdeb is the national spiritual teacher of Hindu religion )
বেদব্যাস বা ব্যাসদেব ছিলেন বশিষ্ঠমুনির প্রপৌত্র, শক্তির পৌত্র, পরাশরের পুত্র এবং শুকদেবের পিতা। মহর্ষি ব্যাসদেব হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদের ব্যবহারিক বিন্যাসকারী, পৌরানিক, মহাকাব্য, মহাভারত, ভাগবত,বেদান্তদর্শন প্রভৃতির সংকলক, সম্পাদক ও সমন্বায়ক এক জ্ঞানান্বেষী ঋষি।
দ্বীপের মধ্যে জন্মগ্রহন বলে,বেদকে চারভাগে বিভক্ত করেন বলে, শরীরের কৃষ্ণবর্ণ হওয়ার কারনে তার পুরো নাম - শ্রী কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস।
আজ থেকে কয়েক হাজার বছর পূর্বে মহর্ষি বেদব্যাস বেদ সঙ্কলন করেছিলেন এবং সংকলিত বেদ পুস্তকের আকারে তিন খন্ডে বিভক্ত করেছিলেন ( ঋক্, সাম, য়জু বা যজু)। অথর্ব বেদ পরবর্তীকালে সংকলিত হয়,,,,কারোর কারোর মতে অথর্ব বেদও উনারই সংকলন।
তিনি আঠারটি পুরাণ, মহাভারতের মত মহাকাব্য ও তার অংশ শ্রীমদভগবদগীতা লিপিবদ্ধ করেন।
মহাভারত রচনা কালে তিনি ব্রহ্মাদেবের নির্দেশ(দ্বিমত শিবের নির্দেশ ) অনুযায়ী গণেশ দেবকে সহযোগী হিসেবে নেন। ব্যাসদেব মুখে শ্লোক বলতেন আর গণেশ তা লিপিবদ্ধ করতেন।
মহাভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক মহাভারতের প্রতিটা ক্রান্তিলগ্নে সয়ংক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাসদেব যদি বেদ,পুরাণ,সর্বশাস্ত্রের সারাংশ গীতা লিপিবদ্ধ করে না যেতেন তাহলে ব্রহ্মপ্রাপ্তিসহ জাগতিক ও পরমার্থিক জ্ঞানের আলো আমরা সনাতনীরা পেতাম না। কুয়াশা আচ্ছন্ন সূর্যের মত আমাদের সনাতন ধর্মের লোকদেরও অজ্ঞতায় গ্রাস করত।
যাইহোক, বেদ সংকলনের পর ব্যাসদেব তাঁর চার শিষ্য 'সনক ,সনন্দন আদি উপযুক্ত চার শিষ্যকে আজকের দিনে বেদ অধ্যয়ন শুরু করান। সেই জন্য আজকের দিনটিকে গুরু পূর্ণিমা বা ব্যাস পূর্ণিমা বলা হয়। তাই আমাদের সবসময়ই স্মরণ রাখা উচিত পবিত্র সনাতন ধর্মের সংস্কৃতিকে যেন আমরা বিকৃত বা বিধ্বস্ত না করি। কিছু নিয়ম ব্যতিক্রম হলেও মূল আদর্শ যেন এক হয়। পবিত্র ঋগবেদেও(১০/১৯১/২-৪) বলা হয়েছে-
তোমাদের সকলকে একই মন্ত্রে সংযুক্তি করিতেছি। তোমাদের সকলের মত এক হউক,মন এক হউক, সকলের চিত্ত সম্মলিত হউক।
মানবজাতির জন্য ব্যাসদেব যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন শ্রদ্ধাভরে উনাকে স্বরণ করার মাধ্যমেই কিছুটা ঋণ হয়তো পরিশোধ করতে পারব।
গুরুপূর্ণিমাতে শাস্ত্রের অন্যতম প্রণেতা ব্যাসদেবের চরণে প্রণাম জানাই। 🙏
🌸গুরু – শিষ্যের সম্বন্ধ আত্মার মুক্তি হয়ে থাকে । গুরু – শিষ্যের সম্বন্ধ হলো নিত্য , অনিত্য নয় । মাতা পিতা , বন্ধু বান্ধব , জাতি , কূল আদি সবই মায়ার সম্বন্ধ । গুরু অথবা ঈশ্বরের সম্বন্ধ হলো নিত্য । যতক্ষণ পর্যন্ত শরীর , ততক্ষন পর্যন্ত মায়ার সম্বন্ধ আছে । শরীর ছেড়ে দিলে মায়ার সম্বন্ধ আর থাকেনা , কিন্তু গুরুর সম্বন্ধ শরীর ছেড়ে দিলেও অন্য দেহের মধ্যে তা থেকে যায় ।
গুরুর দেওয়া নিত্য জ্ঞান জীবের সঙ্গে থেকে যায় । জন্ম – মৃত্যুর চক্করে যদিও জীব পড়ে থাকে কিন্তু গুরুর দেওয়া জ্ঞান তার অন্তরে থেকে যায় । সেই জ্ঞানকে যদিও সাধন , অভ্যাস করে জীব না বাড়ায় , তার আধ্যাত্মিক বিকাশ না ঘটায় , তবুও সেই গুরুর জ্ঞান বীজরুপে জীবের অন্তরে সুরক্ষিত থাকে । সেই জ্ঞান সময় পেয়ে অর্থাৎ সেবা – সৎসঙ্গ পেয়ে পুনঃ উদয় হয় , সেই বীজ থেকে অঙ্কুর ফুটতে থাকে । যখন তার সদগুরু – দর্শন হয় , যখন সে সদসঙ্গ পেয়ে যায় , তখন তা গুপ্ত থেকে প্রকট হয়ে যায় । তার সেই গুরু জ্ঞান পরিপূর্ণ বিকশিত হয়ে যায় । তখন সাধন ভক্তির দ্বারা তার প্রভু প্রাপ্তি হয়ে যায় এবং সেই জীব মুক্ত হয়ে যায় ।
কিন্তু এই ঘোর কলিযুগে পাপী হৃদয় , মলিন মস্তিষ্ক এবং দুরাত্মারা লোভ, লালসা, ভক্তি প্রেম কিছুই নাই শুধু আমার আমার কোরে কাম, ক্রোধ, লোভ এ মন দেয় ফলস্বরুপ অধোগতির দিকে অগ্রসর হয়ে নষ্ট হয়ে যায় । কীট পতঙ্গ আদি ঘৃনিত যোনিতে পড়তে থাকে । জন্ম-জন্মান্তর পর্যন্ত ঘোর যাতনা সহ্য করে ।
অনেক মানুষ র ভক্তি আছে পথ নেই তারা শুধুই কাঁদে সদগুরু না পাওয়ার জন্য জীবন পরিপূর্নিতা লাভ হয় না তাদের জন্য আমার এই লেখা আমরা সবই সেই পরম পিতা র সন্তান আমরা কেউ ভিন্ন নই তাকে পাওয়ার পথ একটাই আত্মদর্শন এর পথ সদগুরু ই দেখান ।
যতবড় মহাপুরুষ হোক না কেন কোনো স্বরূপ তার সামনে এসে দাঁড়ায় নি ।
কিন্তু সত্যিকারের বিবেকবান শিষ্য সত্য গুরু স্মরণ এবং সেবাতেই নিজের জীবন ব্যতিত করে থাকে । গুরু – শিষ্যের সম্বন্ধ মুক্তি পর্যন্ত হয়ে থাকে । সত্যিকারের শিষ্য বা ভক্ত কখনো গুরু থেকে আলাদা হতেই পারে না । যেমন জীব, ঈশ্বরের সম্বন্ধ নিত্য সনাতন , ঠিক তেমনি শিষ্য – গুরুর সম্বন্ধও নিত্য সনাতন।
🌸হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে গুরু পূর্ণিমার গুরুত্ব অসীম। কথিত আছে, বোধিজ্ঞান লাভের পর আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় প্রথম সকলকে উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ। সেই কারণে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে। হিন্দু পুরাণে বলা আছে, এই তিথিতেই গুরু হিসাবে শিষ্যদের মহাজ্ঞান প্রদান করেন দেবাদিদেব মহাদেব। আদিযোগী শিব এই তিথিতেই আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন। অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ, মরীচি, ক্রতু এই সাতজন ঋষি ছিলেন মহাদেবের প্রথম শিষ্য। তাঁদেরই জ্ঞান প্রদান করেন আদিগুরু মহাদেব।
'গুরু' শব্দটি দ্বারা এমন কাউকে নির্দেশ করা হয় যিনি মোহ অবিদ্যা অন্ধকার মোচন করে আমাদের আলোর রাজ্যে নিয়ে যান।
আষাঢ় মাসের পূর্ণিমার নাম -- গুরুপূর্ণিমা। সমগ্র বিশ্বে হিন্দুরা এই পূর্ণিমাটি গুরু পূর্ণিমা রূপে পালন করেন।
সদা সর্বদা গুরুর আরাধনাই আমাদের জীবনের একমাত্র পাথেয় ও মুক্তির পথ, গুরুপূর্ণিমা হল গুরু-শিষ্যের মিলনের একটি বিশেষ দিন, তাই আজ এই গুরুপূর্ণিমা পবিত্র মহেন্দ্রক্ষণে আমার গুরুদেব সাংখ্যযোগী গুরু মহারাজ শ্রী শ্রী স্বামী সমাধি প্রকাশ আরন্যজীর রাতুল চরণে জানাই ভক্তিকুসুমমন্ডিত প্রনাম।🌸🌸🌸🙏🙏🙏
হলধরভূমিকর্ষকং সাধনচিত্তভূমিবর্ধকম্ ।
হরিহরানন্দনন্দং সমাধিপ্রকাশং নমাম্যহম্।।🙏
জয় সমাধি।জয় গুরু। গুরু কৃপাহি কেবলম্ ।
ওম্ নারায়ণ।ওঁ শান্তি। শুভ গুরুপূর্ণিমা।।🙏
শ্রীশ্রী গুরু পূর্ণিমা অনুষ্ঠান
৩ জুলাই, ২০২৩, সোমবার।
সকলকে অগ্রিম শুভেচ্ছা ও আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
স্থান-শ্রী গুরুধাম হাসুয়া সমাধি মঠ।
শ্রীশ্রী গুরু পূর্ণিমার পূণ্য মহেন্দ্রক্ষণে শ্রীশ্রী গুরুদেবের দীক্ষিত সকলে ইষ্টনাম জপ ও গুরুগীতা পাঠ করুন। যাঁরা দীক্ষা নেন নাই কিন্তু ঠাকুরানুরাগী, তাঁরা গুরুদেবর বানী, বই ও প্রণাম মন্ত্র পাঠ করুন।
তৎসহ সকল গুরু ভক্ত ও শিষ্যদের শ্রী গুরুধাম হাসুয়া সমাধি মঠে গুরুদেবর বিশেষ পূজায় সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
জয় সমাধি 🙏
🌸ওঁ সাংখ্যপ্রবচন সূত্র নং-৩
আভাস-যদি ধনাদি অর্জ্জন দ্বারা দুঃখের নিবৃত্তি হস্তিস্নানের ন্যায় বৃথা হয়, অর্থাৎ হস্তি যেমন স্নানের পরক্ষণেই ধুলামাটী মাখিয়া পূর্ব্ববৎ অপরিষ্কৃত হয়, সেইরূপ যদি ধনাদিতে দুঃখের নাশের পরক্ষণেই আবার দুঃখোৎপত্তি হয়, তবে পুরুষ কেন তাহার জন্য এত লালায়িত হয়? তদুত্তরে বলিতেছেনঃ-
"প্রত্যহিকক্ষুৎ প্রতীকারবৎ তৎপ্রতীকারচেষ্টাবৎ পুরুষার্থত্বম্।৩
বঙ্গানুবাদ - ভোজন দ্বারা যেমন প্রত্যাহিক ক্ষুধার শান্তি হয়, ধনসম্পত্তি দ্বারাও তদ্রূপ স্থুলদুঃখের উপশম হইতে পারে, এই জন্যই লোকে ধনাদি উপার্জ্জনের চেষ্টা করে বলিয়া তাহা পুরুষার্থ। কিন্তু ধনাদি দ্বারা দুঃখনিবারণকে পরম নিবৃত্তি বলা যায় না।
তাৎপর্য্যার্থঃ- যেমন ক্ষুধাতুর ব্যাক্তি প্রত্যহ পানভোজনের দ্বারা তৃপ্তিলাভ করে বলিয়া তাহা পুরুষার্থ, তদ্রূপ লৌকিক উপায়ের দ্বারাও তৎকালীন স্থুলদুঃখের উপশম হয় বলিয়া তাহা পুরুষার্থ। কিন্তু তাহা আত্যন্তিক পুরুষার্থ নহে। কারণ, উৎকৃষ্ট অন্নাদি ভোজনে যেমন তৎকালীন ক্ষুধার ক্লেশ দূরীভূত হইলেও আবার কালান্তরে তাহার উদ্রেক হয়। তদ্রূপ লৌকিক উপায়ে তাৎকালিক দুঃখের নিবৃত্তি হইলেও আবার কালান্তরে তাহার উৎপত্তি হইয়া থাকে, অর্থাৎ চিরদিনের জন্য একেবারে নিবৃত্তি হয় না। অতএব এই লৌকিক উপায় (ঔষধাদি) সামান্য পুরুষার্থ। (চলতে থাকবে)
ওঁ🌸সাংখ্যপ্রবচন-সুত্র নং-২
আভাস:- সত্যই দুঃখনিবৃত্তি পুরুষার্থ, কিন্তু দুঃখনিবৃত্তির জন্য লৌকিক নানাবিধ সহজ উপায় আছে। অতএব বহু পরিশ্রম ও কষ্টসাধ্য শাস্ত্রীয় যমনিয়মাদি উপায় অবলম্বন করিবার আবশ্যক কি? :-
"ন দৃষ্টাৎ তৎসিদ্ধির্নিবৃত্তেরপ্যনুবৃত্তিদর্শনাৎ" ২
বঙ্গানুবাদ-" শাস্ত্রবিহিত উপায় ভিন্ন দৃষ্ট উপায় (ঔষধ, কামিনী-কাঞ্চন ও মনিমন্ত্রাদি) দ্বারা উক্ত দুঃখ - সমূহের নাশ হয় না। যাহার বা নাশ হয়, তাহাও স্থায়ী হয় না। কারণ, পরক্ষণেই সেই দুঃখ বা তাদৃশ অন্য দুঃখ আসিয়া উপস্থিত হয়।"২
তাৎপর্য্যার্থ- দুঃখনিবৃত্তিমাত্রকেই পুরুষার্থ বলা যায় না। দুঃখের উৎপত্তি-নিবৃত্তি, অর্থাৎ অনন্তকালেও আর কোনরূপ দুঃখের উৎপত্তি না হওয়াই প্রকৃত পুরুষার্থ। কারণ, শারীরিক দুঃখনিবৃত্তির জন্য উৎকৃষ্ট ঔষধাদি, মানসিক দুঃখনিবৃত্তির জন্য স্রকচন্দনবরবনিতাদি, আধিভৌতিক দুঃখনিবৃত্তির জন্য নীতিশাস্ত্র - মনীষিগণ কর্ত্তৃক উদ্ভাবিত উপায়াদি এবং আধিদৈবিক দুঃখনিবৃত্তির জন্য গ্রহশান্তি ও মনিমন্ত্রাদিরূপ বিবিধ উপায় আছে সত্য, কিন্তু তদ্দ্বারা কোনরূপ দুঃখের নিবৃত্তি হইলেও দুঃখের উৎপত্তি - নিবৃত্তি হয় না, সেই জন্যই দুঃখনিবৃত্তিও আত্যন্তিক হয় না। কারণ, পরক্ষণেই আবার সেই দুঃখ বা তৎসদৃশ অন্য দুঃখ আসিয়া উপস্থিত হয়। অতএব দৃষ্ট উপায় দ্বারা মুক্তি সিদ্ধি হয় না। (চলতে থাকবে)
"এটা আমাদের মঠ। শ্রী গুরুধাম।এখানে কিছুক্ষণ বসে জপ করুন। গুরুদেব স্বামী সমাধি প্রকাশজি এখানে সম্পূর্ণ জাগ্রত অবস্থায় উপস্থিত আছেন; তিনি সবকিছু দেখেন এবং শোনেন; … ভক্তি, মুক্তি, প্রজ্ঞা, বৈষম্যের শক্তি, বৈরাগ্য, মুক্তি বা অর্থ, শক্তি, জীবনের আনন্দ বা অন্য কিছুর জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন; আপনি যা চান তাই পাবেন|" 🙏🙏🙏
🌸সাংখ্যপ্রবচন-সুত্র-
"অথ ত্রিবিধদুঃখাত্যন্তনিবৃত্তিরত্যন্তপুরুষার্থঃ।" ১
অর্থাৎ - অথ শব্দ মঙ্গলবাচক, এই জন্যই গ্রন্থের প্রারাম্ভে অথ শব্দ প্রযুক্ত হয়। "ত্রিবিধ দুঃখের যে অত্যন্ত-নিবৃত্ত, তাহাই অত্যন্ত অর্থাৎ পরমপুরুষার্থ নামে অভিহিত হইয়া থাকে।" ১
তাৎপর্য্যার্থ- আত্মাকে অর্থাৎ শরীর ও মনকে অধিকার করিয়া যে রোগ-শোকাদিরূপ দুঃখ উপস্থিত হয়, তাহার নাম আধ্যাত্মিক দুঃখ। মনুষ্য পশু, পক্ষী ও সর্পাদি প্রানিসমূহকে অধিকার করিয়া অর্থাৎ তাহাদের কর্তৃক যে দুঃখ উপস্থিত হয়, তাহার নাম আধিভৌতিক। শনৈশ্চরাদি-গ্রহ ও ভূতাদি অপদেবতাগণকে অধিকার করিয়া অর্থাৎ তাহাদের কর্তৃক যে দুঃখ উপস্থিত হয়, তাহার নাম আধিদৈবিক। এই ত্রিবিধ দুঃখের অত্যন্তনিবৃত্তি অর্থাৎ অনন্তকালের জন্য উপশম, অর্থাৎ আর কখনও আত্মাতে কোনরূপ দুঃখের অনুভূতি না হওয়া। ফল কথা, সমস্ত জড়সম্বন্ধরহিত হইয়া কেবল আত্মস্বরূপে অবস্থান করার নাম মুক্তি।
গুরু – শিষ্যের সম্বন্ধ আত্মার মুক্তি হয়ে থাকে । গুরু – শিষ্যের সম্বন্ধ হলো নিত্য , অনিত্য নয় । মাতা পিতা , বন্ধু বান্ধব , জাতি , কূল আদি সবই মায়ার সম্বন্ধ । গুরু অথবা ঈশ্বরের সম্বন্ধ হলো নিত্য । যতক্ষণ পর্যন্ত শরীর , ততক্ষন পর্যন্ত মায়ার সম্বন্ধ আছে । শরীর ছেড়ে দিলে মায়ার সম্বন্ধ আর থাকেনা , কিন্তু গুরুর সম্বন্ধ শরীর ছেড়ে দিলেও অন্য দেহের মধ্যে তা থেকে যায় ।
গুরুর দেওয়া নিত্য জ্ঞান জীবের সঙ্গে থেকে যায় । জন্ম – মৃত্যুর চক্করে যদিও জীব পড়ে থাকে কিন্তু গুরুর দেওয়া জ্ঞান তার অন্তরে থেকে যায় । সেই জ্ঞানকে যদিও সাধন , অভ্যাস করে জীব না বাড়ায় , তার আধ্যাত্মিক বিকাশ না ঘটায় , তবুও সেই গুরুর জ্ঞান বীজরুপে জীবের অন্তরে সুরক্ষিত থাকে । সেই জ্ঞান সময় পেয়ে অর্থাৎ সেবা – সৎসঙ্গ পেয়ে পুনঃ উদয় হয় , সেই বীজ থেকে অঙ্কুর ফুটতে থাকে । যখন তার সদগুরু – দর্শন হয় , যখন সে সদসঙ্গ পেয়ে যায় , তখন তা গুপ্ত থেকে প্রকট হয়ে যায় । তার সেই গুরু জ্ঞান পরিপূর্ণ বিকশিত হয়ে যায় । তখন সাধন ভক্তির দ্বারা তার প্রভু প্রাপ্তি হয়ে যায় এবং সেই জীব মুক্ত হয়ে যায় ।
কিন্তু এই ঘোর কলিযুগে পাপী হৃদয় , মলিন মস্তিষ্ক এবং দুরাত্মারা লোভ, লালসা, ভক্তি প্রেম কিছুই নাই শুধু আমার আমার কোরে কাম, ক্রোধ, লোভ এ মন দেয় ফলস্বরুপ অধোগতির দিকে অগ্রসর হয়ে নষ্ট হয়ে যায় । কীট পতঙ্গ আদি ঘৃনিত যোনিতে পড়তে থাকে । জন্ম-জন্মান্তর পর্যন্ত ঘোর যাতনা সহ্য করে ।
অনেক মানুষ র ভক্তি আছে পথ নেই তারা শুধুই কাঁদে সদগুরু না পাওয়ার জন্য জীবন পরিপূর্নিতা লাভ হয় না তাদের জন্য আমার এই লেখা আমরা সবই সেই পরম পিতা র সন্তান আমরা কেউ ভিন্ন নই তাকে পাওয়ার পথ একটাই আত্মদর্শন এর পথ সদগুরু ই দেখান ।
যতবড় মহাপুরুষ হোক না কেন কোনো স্বরূপ তার সামনে এসে দাঁড়ায় নি ।
কিন্তু সত্যিকারের বিবেকবান শিষ্য সত্য গুরু স্মরণ এবং সেবাতেই নিজের জীবন ব্যতিত করে থাকে । গুরু – শিষ্যের সম্বন্ধ মুক্তি পর্যন্ত হয়ে থাকে । সত্যিকারের শিষ্য বা ভক্ত কখনো গুরু থেকে আলাদা হতেই পারে না । যেমন জীব, ঈশ্বরের সম্বন্ধ নিত্য সনাতন , ঠিক তেমনি শিষ্য – গুরুর সম্বন্ধও নিত্য সনাতন।
স্বামী সমাধি প্রকাশ আরন্য গুরুদেবর জয় 🙏
সৌম্য শান্তভাবে চলেছ জীবনের পথ বেয়ে।
অশ্রু নেই, হাসি নেই। উপেক্ষায়, অনাদরে তুমি অবিকার।
হে মহান, প্রাজ্ঞ— কিছুই তােমাকে স্পর্শ করে না।
কেউ নেই তােমার প্রাণের দোসর। একা, নিঃসঙ্গ।
শােভন, সুন্দর তুমি! অথচ কেউ জানে না, এই সৌন্দর্য তােমার কাছে কোন মূল্য পায় কি না।
কোন মমতার বন্ধন নেই— নিরাসক্ত নির্লিপ্ত তােমার মন।
তােমার ভাবনা মুক্ত, দৃষ্টি গভীর, সেই অতল গভীর, শূন্যগর্ভ।
অমৃতলােকে, পবিত্র সুর নির্ঝরে তাই তােমার জ্যোতির্ময় সত্তার দুঃখ-সুখ বিমুক্ত অনির্বাণ আনন্দ বিহার।
(শুভ বুদ্ধপূর্ণিমায় গুরু ভাই বোনদের প্রার্থনা)
পৃথিবীতে এসেছি খালি হাতে ,
যা কিছু পাওয়া এখানে এসে পেয়েছি বাবা ,মা ,ভাই ,বোন,
আত্মীয় ,স্বজন ,গাড়ি ,বাড়ি ,জায়গা ,জমি সবকিছু তবুও সামান্য কিছু পেয়ে আমাদের কত পার্থক্য কতো অহংকার ।
এই অহংকার কিতদিনের ? যতদিন দেহের মধ্যে শ্বাস আছে ততোদিনের ।
শ্বাস যখন থাকবে না তখন আগুনেই সব শেষ হয়ে যাবে ।
দেহের বন্ধন অস্থায়ী যখন দেহ পেলাম একে একে সম্পর্ক গড়তে শুরু করলো আবার সময়ের সাথে সাথে সম্পর্ক একে একে ভাঙতে শুরু করলো ।
ভাঙ্গা গড়া প্রকৃতির নিয়ম ।
একসময় দেহ থাকবে না কোনো সম্পর্ক আর থাকবে না ।
এটা শুধু দেহের জন্য প্রযোজ্য দেহী র জ বিন্য নয় ।
দেহের সৃষ্টি আর ধংস আছে দেহীর নয় দেহী অথাৎ পরমআত্মা র অংশ আত্মা যার দয়ায় প্রতিটা জীব বেঁচে আছে কিন্তু তাকে ভুলে আছে তোমার ভিতর তিনি আছেন এটাই মনে করিয়ে দেওয়া আমার কাজ ।
তাকে পাওয়ার একটা মাত্র পথ সদগুরু ।গুরুর সার্নিধে এসে গুরুদেবের বাক্য মেনে কর্ম যুক্ত হলে
কিছুদূর এগোতে এটা যোগী নিজেই বুঝতে পারে আমি ভিন্ন দেহ ভিন্ন
দেহ আমার বাসস্থান ।এই দেহ থাকতে থাকতে ধর্ম কর্ম সব করতে হবে যা করার এই দেহ তে করতে হবে ।
একজন সাধারণ মানুষের এই ভাবনা আসা সম্ভব নয় ভ্রম তাকে বেস্ত রাখে মায়ায় জড়িয়ে রাখে অহংকার দিয়ে ।
আমার আমার আমার
আসলে আমার যিনি তাকে আমি জানি না ।
আমি কে জানা নিজেকে জানাই আসল জানা
, বাকি সব মায়ার বন্ধন অথবা ভ্রম ।
তাই গুরু ধরো গুরুই তোমায় আমার আমি কে জানার পাওয়ার পথ দেখবেন ।
। জয় গুরুদেবের জয় ।
সমাধি বানী🙏
"সমস্তই আত্মা ব্রহ্ম বা জগদীশ্বরেরই ব্যাপ্তিতে, অনুস্মৃতিতে ভরা, ইহাও দর্শনের ও সাধনার একটা উচ্চতম স্তর। সেই রসশ্বরূপ, আনন্দস্বরূপ ওঁকার অক্ষর ব্রহ্মই সর্বজীবে, সর্বজগতে ব্যাপ্ত অনুস্মৃত ও সমবায়ে আছেন।" (শুদ্ধতম মাধুরী)
🙏🙏🙏
যাহারা চিকিৎসা করাতে চান, অবশ্যই যথা সময়ে সমাধি মঠে উপস্থিত থাকবেন। তাং-১৮/০২/২০২৩
স্থান - হাসুয়া সমাধি মঠ ।
সময় - সকাল ৯ থেকে।
🙏🙏🙏
শুভ অধিবাস অনুষ্ঠানে প্রদীপ প্রজ্বলন।
সাংখ্য যোগাচার্য্য শ্রীশ্রীমৎ স্বামী সমাধি প্রকাশ আরন্য গুরুদেব মহারাজের ১৩৮ তম আবির্ভাব দিবস, অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করলেন- বর্তমান মহান্ত মহারাজ শ্রী শ্রী মৎ স্বামী মৈত্রী প্রকাশ আরন্য ।
এই আনন্দ উৎসবে আপনারা সকলেই আমন্ত্রিত। 🙏
ওঁ সমাধি 🙏
ওঁ সমাধি।
যোগ
যে পদ্ধতিতে ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয় তাকে যোগ বলে। যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি এই আট প্রকার অঙ্গ বিশিষ্ট যোগই অষ্টাঙ্গ-যোগ। এই অষ্টাঙ্গ-যোগকে রাজযোগও বলে। ঋষি পতঞ্জলি অষ্টাঙ্গ-যোগ বা রাজযোগের প্রবর্তক। ঋষি পতঞ্জলি বিরচিত সূত্রকে পতঞ্জল যোগসূত্র বলে। পতঞ্জল যোগসূত্রে সবিস্তরে অষ্টাঙ্গ-যোগের বর্ণনা আছে। নিচে উক্ত অষ্টাঙ্গ-যোগের আটটি অঙ্গের বর্ণনা দেয়া হল-
🍁যম
অষ্টাঙ্গ-যোগ সাধনার প্রথম অঙ্গ যম। যম বলতে মূলত ইন্দ্রিয়-সংযমকেই বোঝায়। ঋষি পতঞ্জলি প্রবর্তিত যোগসূত্রে আছে- অহিংসা, সত্য, অস্তেয় (অচৌর্য), ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ এ পাঁচটি গুণকে যম বলে। কায়-মন-বাক্যে কোন প্রাণীকে বধ না করা বা ব্যথা না দেওয়াকে অহিংসা বলে। যথাজ্ঞাত বিষয়কে যথাযথ প্রকাশ করার নাম সত্য। অন্যের ধন চুরি না করাকে অস্তেয় বলে। বীর্য-ধারণ করাকে ব্রহ্মচর্য এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন দ্রব্য গ্রহণ না করাকে অপিরগ্রহ বলে। যোগের প্রথমেই যম অভ্যাস করতে হয় কেন? অন্তরে অহিংসা প্রতিষ্ঠিত হলে অন্যের প্রতি শত্রু মনোভাব হ্রাস পায়। হৃদয়ে সত্য প্রকাশিত হলে কোন মিথ্যা ও কুকর্মকে সহজেই দূরিভূত করা যায়। সত্যবাদীর মুখ-নিঃশ্রিত বাণীও সত্য হয়। অর্থাৎ সত্যবাদী ব্যক্তির মধ্যে সততার শক্তি সঞ্চারিত হয়। ফলে তিনি যা বলেন, তাই সত্য হয়। অচৌর্য বা অস্তেয় প্রতিষ্ঠার দ্বারা যোগী সমুদয় ধন-রত্নাদি লাভ করে থাকেন। ব্রহ্মচর্য প্রতিষ্ঠিত হলে বীর্য বা শক্তি লাভ হয়। অপরিগ্রহ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে পূর্বজন্মের স্মৃতিও স্মরণ করা সম্ভব হয়।
🍁নিয়ম
অষ্টাঙ্গ-যোগ সাধনার ক্ষেত্রে শৌচ, সন্তোষ, তপস্যা, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বর প্রণিধান এই পাঁচটি গুণকে নিয়ম বলে। শৌচ বলতে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ শুদ্ধতা বোঝায়। সণান, আচমন প্রভৃতির দ্বারা বাহ্যশৌচ এবং সৎচিন্তা, দয়া প্রভৃতির দ্বারা অন্তঃশৌচ সম্পন্ন করা হয়। শৌচ হতে সত্ত্বশুদ্ধি, সৌমনস্য (মনের প্রফুল্ল ভাব), একাগ্রতা, ইন্দ্রিয়জয় প্রভৃতি লাভ হয়ে থাকে। সহজ চেষ্টায় যা পাওয়া যায় তাতে তৃপ্ত থাকাকে সন্তোষ বলে। সন্তোষ হতে পরম সুখলাভ হয়। শ্রদ্ধার সাথে শাস্ত্রবিধি অনুসারে ব্রত করাকে তপস্যা বলে। তপস্যা হতে দেহ ও ইন্দ্রিয়ে নানাবিধ শক্তি আসে। বেদ-বেদান্ত প্রভৃতি ধর্মশাস্ত্র নিয়মিত যথাযথভাবে অধ্যয়ন করাই স্বাধ্যায়। স্বাধ্যায়ের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতার দর্শন লাভ হয়। ঈশ্বরের নিকট সমুদায় অর্পণ করাকে ঈশ্বর প্রণিধান বলে।
🍁আসন
অষ্টাঙ্গ-যোগ সাধনার তৃতীয় অঙ্গ আসন। যেভাবে অনেকক্ষণ স্থিরভাবে সুখে বসে থাকা যায়, তাকে আসন বলে। বিভিন্ন প্রকার আসন আছে, যথা- পদ্মাসন, সুখাসন, বীরাসন, ভদ্রাসন, ভূজঙ্গাসন প্রভৃতি। প্রাণায়াম যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিদিষ্ট আসন একান্ত প্রয়োজন। আসন শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলোকে স্থির ও শিথিল করতে সাহায্যে করে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এমন স্থানে আসন পাততে হয়ে যেখানে নদীর কুলুকুল তরঙ্গ-ধ্বনি ও পাখির কুজন শোনা যায় এবং যেখানে শোরগোল ও কোলাহল থাকে না। নিয়মিত আসন অভ্যাস করলে নানাবিধ রোগব্যাধি থেকেও মুক্ত হওয়া যায়।
🍁প্রাণায়াম
নিশ্বাস ও প্রশ্বাস উভয়ের গতি সংযত করাকে প্রাণায়াম বলে। অন্য কথায় প্রাণ ও অপান বায়ুর সংযোগকে প্রাণায়াম বলে। পূরক, কুম্ভক ও রেচক এই তিনটি প্রক্রিয়া দ্বারা প্রাণায়াম করা হয়। বহিঃস্থ বায়ুকে আকর্ষণ করে দেহের অভ্যন্তরের নাড়ীগুলো পূরণ করাকে পূরক বলে। সহজ কথায় নির্দিষ্ট নিয়মে মন্ত্র উচ্চারণ করে শ্বাস ভেতরে নেয়ার নাম পূরক। অভ্যন্তরের বায়ু কুম্ভ বা কলসের মত ধারণ করাকে কুম্ভক বলে। ঐ ধারণ করা বায়ুকে বাইরে রেচন বা নিঃসরণ করাকে রেচক বলে। সহজ কথায় নির্দিষ্ট নিয়মে মন্ত্র উচ্চারণের সাথে শ্বাসতাগের নাম রেচক। প্রাণায়ামের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা ডান নাসাছিদ্র বন্ধ করে বাম নাসাছিদ্র থেকে ৪ বার ‘‘ওঁ’’ বা ইষ্ট-মন্ত্র জপ করতে করতে শাস নিতে হয়। এভাবে শ্বাস গ্রহণই পূরক। তারপর বৃদ্ধঙ্গুলি দ্বারা ডান নাসাছিদ্র এবং কনিষ্ঠা ও অনামিকা দ্বারা বাম নাসাছিদ্র বন্ধ করে ঐ শ্বাস ধরে
রেখে ১৬ বার ‘‘ওঁ’’ বা ইষ্ট-মন্ত্র জপ করতে হয়। এভাবে শ্বাস ধরে রেখে জপ করা কুম্ভক। কুম্ভকের পর বৃদ্ধাঙ্গুলি ডান নাসাছিদ্র থেকে সরিয়ে নিলে বন্ধ ডান নাসাছিদ্র খুলে যায় এবং ঐ পথে ধরে রাখা শ্বাস ধীরে ধীরে ত্যাগ করার সময় ৮ বার ‘‘ওঁ’’ বা ইষ্ট-মন্ত্র জপ করতে হয়। এরকম শ্বাসত্যাগের এই প্রকৃয়াই রেচক। ইড়া নামক নাড়ীতে পূরক, সুষুম্না নামক নাড়ীতে কুম্ভক এবং পিঙ্গলা নামক নাড়ীতে রেচক সম্পন্ন করা হয়। পূরকের সময় ইড়া নামক নাড়ী পথে বায়ু প্রবেশ করে এবং কুম্ভকের সময় নিমণগামী বায়ুপ্রবাহ ঊর্ধমুখী হয়ে পিঙ্গলা নাড়ী পথে বাইরে গমন করে। উক্ত প্রাণায়ামে পূরক, কুম্ভক ও রেচক ৮। ৩২। ১৬ এবং ১৬। ৬৪। ৩২ অনুপাতেও হতে পারে। তন্ত্রমতে দশটি চক্রের সর্বনিম্ন চক্র মূলাধারে কুলকুণ্ডলিনী শক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। প্রাণায়ামের ফলে ঐ ঘুমমত্ম কুলকুণ্ডলিনী শক্তিকে জাগ্রত করা যায়। কুলকুণ্ডলিনী শক্তিকে সহস্রার চক্রে অবস্তিত পরমাত্মারূপী শিবের সাথে মিলন ঘটাতে পারলেই সমাধি লাভ সম্ভব।
🍁প্রত্যাহার
প্রত্যাহার বলতে ধেয় বস্তু ব্যতীত অন্যান্য বৈষায়িক চিন্তা প্রত্যাহার বা ত্যাগ বোঝায়। যখন ইন্দ্রিয়গণ তাদের নিজ নিজ বিষয় পরিত্যাগ করে চিত্তের অনুগামী হয়, তখন তাকে প্রত্যাহার বলে। ইন্দ্রিয়গুলো বহির্মুখী এবং এরা বিভিন্ন বাহ্যিক চিন্তা দ্বারা মনকে পরিপূর্ণ করে। ধরা যাক, যোগী চন্দ্র বা সূর্যের জ্যোতির ধ্যান করবে। কিন্তু ধ্যান শুরু করলে যোগীর মনে চন্দ্র বা সূর্য ছাড়াও বিভিন্ন চিন্তা আসতে পারে। চন্দ্র বা সূর্য ব্যতীত অন্যান্য চিন্তা বা কল্পনাকে দূরীভূত করাই প্রত্যাহার
🍁ধারণা
অষ্টাঙ্গ-যোগ সাধনার ষষ্ঠ অঙ্গ হল ধারনা। চিত্তকে কোন বিশেষ বস্ত্ততে ধরে রাখার নাম ধারণা। চিত্ত স্বভাবতই বিক্ষিপ্ত থাকতে চায়। চিত্তে বিভিন্ন ধরণের চিন্তা, কল্পনা, অতীত-স্মৃতি প্রভৃতি এসে উপস্থিত হয়। প্রত্যাহারের মাধ্যমে ঐ সব বাহ্যিক বিষয় দূর করে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে (যেমন- চন্দ্র, সূর্য, অগ্নিশিখা, কোন দেবতা বা গুরুর মূর্তিতে) মনকে নিবিষ্ট করাই ধারণা। ধারণার মাধ্যম বিক্ষিপ্ত মন একাগ্র হয়। ফলে যোগী অমিত শক্তির অধিকারী হন।
🍁ধ্যান
ধেয় বস্তু বিষয়ক জ্ঞান নিরন্তর একভাবে প্রবাহিত হতে থাকলে তাকে ধ্যান বলে। কোন বস্ত্ত বা বিষয়ে বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ ধারণা করতে পারলে, সে ধারণাই ধ্যানে পরিণত হয়। সোজা কথায় অবিচ্ছিন্ন ধারণাকেই ধ্যান বলে। ধারণার সময় মন অন্য দিকে চলে যেতে পারে। কিন্তু পুনরায় মনকে ধেয় বস্তুতে স্থাপন করে কিছুক্ষণ ধরে রাখাতে পারলেই ধ্যান সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
🍁সমাধি
অষ্টাঙ্গ-যোগ সাধনার সর্বশেষ অঙ্গের নাম সমাধী। ধ্যান যখন সমুদয় বাহ্য-উপাধি পরিত্যাগ করে কেবল অর্থমাত্রকে প্রকাশ করে, তখন তাকে সমাধি বলে। ধ্যান গাঢ় হলে ধেয় বস্তু (যে বস্তুর ধ্যান করা হয়) ও আমি এরকম জ্ঞান থাকে না এবং চিত্ত তখন ধ্যেয় বস্তুতেই লীন হয়। সেই লয় অবস্থাকেই সমাধি বলে। কেবল সেই ধেয় বস্তু আছেন, সেরকম আভাস জ্ঞান মাত্র থাকবে আর কিছু থাকবে না, চিত্তের ধেয় বস্তুতে এরকম তন্ময়তাকেই সমাধি বলে। মূলত ধ্যানের পরিণামই সমাধি। ধ্যানের সময় সাধকের এই ভাব থাকে যে, তিনি একটি বিষয়ে চিন্তা করছেন কিন্তু সমাধির ক্ষেত্রে সে ভাবটিও থাকে না। সমাধি দুই প্রকার, যথা- সবিকল্প বা সম্প্রজ্ঞাত এবং নির্বিকল্প বা অসস্প্রজ্ঞাত। জ্ঞাত, জ্ঞান, জ্ঞেয় এই তিনটি পদার্থের ভিন্ন ভিন্ন জ্ঞান সত্ত্বেও অদ্বিতীয় ব্রহ্মবস্তুতে অখণ্ডাকারে চিত্তবৃত্তির অবস্থানকে সবিকল্প সমাধি বলে। সবিকল্প সমাধিতে চিত্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে ব্রহ্মবস্তু বা আত্মাতে স্থির হলেও জ্ঞাত (যোগী নিজে), জ্ঞান (ধেয় বস্ত্ত সম্পর্কিত জ্ঞান) এবং জ্ঞেয় (ধেয় বস্তু দ্বারা যে বিষয়গুলো জানা যায়) এই তিনটি বিষয়ে পৃথক চৈতন্য থাকে। জ্ঞাত, জ্ঞান ও জ্ঞেয় এই তিনটি পদার্থে ভিন্ন ভিন্ন উপলব্ধি না হয়ে অদ্বিতীয় ব্রহ্মবস্তুতে অখণ্ডাকার চিত্তবৃত্তির অবস্থানেকে নির্বিকল্প সমাধি বলে। নির্বিকল্প সমাধিতে জ্ঞাতা, জ্ঞান ও জ্ঞেয় এই তিনটি পদার্থ সম্পর্কেই যোগীর কোন পৃথক চৈতন্য থাকে না। সহজ কথায় যোগী বাহ্য-সংজ্ঞা হারিয়ে এক ধেয় বস্তুতেই নিবিষ্টি থাকেন। নির্বিকল্প সমাধিতে জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলন ঘটে। সমাধি-সত্মরে গিয়ে সাধক এক অনির্বচনীয় আনন্দ ও ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেন। সাধক সমাধি-স্তর থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে সমাধি-স্তরে কি উপলব্ধি করেছিলেন, তা স্মরণ করতে পারেন না। সুতরাং সমাধিকে ভাষা দ্বারা ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। সমাধি স্তরে যে পৌঁছাতে পারে কেবল সেই সমাধি-স্তরকে উপলব্ধি করতে পারে।
অষ্টাঙ্গ যোগ বা রাজ যোগ ছাড়াও যোগশাস্ত্রে আরও তিন ধরণের বিশেষ যোগ রয়েছে, যথা- মন্ত্র যোগ, হঠযোগ এবং লয়যোগ। মন্ত্রজপ করতে করতে যে মনোলয় হয় তাকে মন্ত্রযোগ বলে। ‘‘হ’’ শব্দের অর্থ সূর্য এবং ‘‘ঠ’’ শব্দের অর্থ চন্দ্র। তাই ‘‘হঠ’’ দ্বারা চন্দ্র ও সূর্যের সংযোগ বোঝায়। মূলত চন্দ্র দ্বারা অপান বায়ু এবং সূর্য দ্বারা প্রাণ বায়ু বোঝায়। অতএব প্রাণ ও অপান বায়ুর একত্র সংযোগের নাম হঠযোগ। যে যোগের মাধ্যমে চিত্তকে যে কোন পদার্থের উপর স্থির করা যায়, তাকে লয় করাকে লয়যোগ বলে। লয়যোগ চার প্রকার, যথা- শাম্ভরী-মুদ্রা দ্বারা ধ্যান, খেচরী-মুদ্রা দ্বারা রসাস্বাদন, ভ্রামরী-কুম্ভক দ্বারা নাদ শ্রবণ এবং যোনিমুদ্রা দ্বারা আনন্দভোগ। লয়যোগ-সাধনা দ্বারা দর্শন, শ্রবণ ও ঘ্রাণ ইন্দ্রিয়কে অতি শক্তিশালী করা যায়। ওঁ শান্তি, জয় গুরু 🙏
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Telephone
Address
Raiganj
733143
Opening Hours
Monday | 9am - 5pm |
Tuesday | 9am - 5pm |
Wednesday | 8am - 5pm |
Thursday | 8am - 5pm |
Friday | 8am - 5pm |
Saturday | 8am - 6pm |
Sunday | 8am - 6pm |
Raiganj
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। خيركم من تعلم القران وعلمه. এই পেজটু শুধু আপনাদেরকে উদ্দেশ্য করে ক্রিয়েট করানো হয়েছে। কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন যে সবচেয়ে ...
Raiganj, 733130
Lord shiva is the brahm,infinite,bliss,light,energy,origin,universe.everything belongs from them.we
Raiganj
God is great.... God is best ...God is mine...God is my everything...God is love ��
Raiganj, 733130
Welcome to our Diocesan Youth commission Official Page . A Roman Catholic Diocese that consist