জান্নাতের পথের যাত্রীরা

জান্নাতের পথের যাত্রীরা

You may also like

Hshshs
Hshshs
Rajib
Rajib

Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from জান্নাতের পথের যাত্রীরা, Camera/Photo, ithar uttar dinajpur, Raiganj.

সূরা ইখলাস। আয়াত 4 বলো তিনিই আল্লাহ এক অদ্বিতীয় আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন সকলেই তার মুখাপেক্ষী তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেওয়া হয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই❤️

01/01/2024
01/01/2024
01/01/2024

সুন্দর মন থাকলে এমন চিন্তা ভাবনাই আসে।
আল্লাহ ভাইটির ব্যবসায়ে বারাকাহ দান করুন। আমিন

30/12/2023

'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গালি-গালাজ করতেন না,অশ্লীলভাষীও ছিলেন না।আনাস বিন মালিক (রাদ্বি.)

30/12/2023

নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে।
#আলহামদুলিল্লাহ 🥰

☑️(সূরা আনকাবূত ২৯:৪৫)

30/12/2023

ঈমান বৃদ্ধির উপায় সমূহ
(১) মানব জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা : তাওহীদ তিন প্রকার। যথা- (ক) তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ (খ) তাওহীদে উলূহিয়্যাহ (গ) তাওহীদে আসমা ওয়াছ ছিফাত।

(ক) তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ
তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ হল প্রতিপালক হিসাবে আল্লাহকে একক গণ্য করা। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা সকল সৃষ্টির পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবন ও মৃত্যুদাতা, কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক। অতএব সকল বিপদাপদে তাঁর নিকটেই প্রার্থনা করতে হবে। তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, اَلْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক’ (ফাতেহা ১)। মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন, قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ‘বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের প্রতিপালকের নিকট’ (নাস ১)। আল্লাহ তা‘আলা সকলের সৃষ্টিকর্তা। তিনি বলেন, ‘তারা কি স্রষ্টা ব্যতীতই সৃষ্ট হয়েছে, না তারা নিজেরাই (নিজেদের) স্রষ্টা’ (তূর ৩৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَلَئِنْ سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيْزُ الْعَلِيْمُ ‘তুমি যদি তাদেরকে (মুশরিকদেরকে) জিজ্ঞেস কর, কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো তো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহ’ (যুখরুফ ৯)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا وَأَلْقَى فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَنبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ زَوْجٍ كَرِيمٍ- هَذَا خَلْقُ اللَّهِ فَأَرُونِي مَاذَا خَلَقَ الَّذِينَ مِن دُونِهِ بَلِ الظَّالِمُونَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ-

‘তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বপ্রকার জীব-জন্তু এবং আমরাই আকাশ হ’তে বৃষ্টি বর্ষণ করে এতে উদগত করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদরাজি। এটা আল্লাহর সৃষ্টি! তিনি ছাড়া অন্যেরা কি সৃষ্টি করেছে তা আমাকে দেখাও; বরং সীমালংঘনকারীরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে’ (লোকমান ১০-১১)। মহান আল্লাহই সকল সৃষ্টির রিযিকদাতা। তিনি বলেন,

وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِي الأَرْضِ إِلاَّ عَلَى اللهِ رِزْقُهَا ‘আর ভূ-পৃষ্ঠে যত প্রাণী বিচরণ করে তাদের সকলেরই রিযিক আল্লাহ দিয়ে থাকেন’ (হূদ ৬)। আল্লাহই মানুষের জীবনদাতা ও মৃত্যুদাতা। মহান আল্লাহ বলেন,كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتاً فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِْيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ ‘কিরূপে তোমরা আল্লাহকে অবিশ্বাস করছ? অথচ তোমরা নির্জীব ছিলে, পরে তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, পুনরায় তিনি তোমাদেরকে নির্জীব করবেন, পরে আবার জীবন্ত করবেন। অবশেষে তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৮)।

উপরে বর্ণিত বিষয় সমূহে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। কারণ আমরা সবাই রূহের জগতে মহান আল্লাহকে প্রতিপালক হিসাবে স্বীকৃতি দান করেছি। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِيْ آدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُوْلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِيْنَ ‘হে নবী! যখন তোমার প্রতিপালক বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ হ’তে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলল, হ্যাঁ! আমরা সাক্ষী থাকলাম। (এই স্বীকৃতি এজন্য যে), যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন বলতে না পার আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলাম’ (আ‘রাফ ১৭২)।

প্রত্যেক আদম সন্তানই ইসলামের উপর তথা তাওহীদের উপর জন্মলাভ করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلاَّ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ، كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ، هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ. ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ رضى الله عنه (فِطْرَةَ اللهِ الَّتِى فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ). ‘প্রত্যেক নবজাতকই ফিৎরাতের উপর

(তাওহীদের উপর) জন্মলাভ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহূদী, নাছারা বা অগ্নিপূজক রূপে গড়ে তোলে। যেমন চতুষ্পদ প্রাণী একটা পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোন (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও? অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) তিলাওয়াত করলেন, তাঁর (আল্লাহর) দেয়া ফিৎরাতের অনুসরণ কর, যে ফিৎরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই, এটাই সরল সুদৃঢ় দ্বীন’ (রূম ৩০)।[1] অতএব যে ফিৎরাতের উপর মানুষ সৃষ্টি হয়েছে তার উপর অটল থাকলে সে সরল-সঠিক সুদৃঢ় পথে টিকে থাকবে। এতে তার ঈমান বাড়বে এবং পরকালে সুখময় স্থান জান্নাত লাভ করবে ইনশাআল্লাহ। পক্ষান্তরে ফিৎরাতের পরিবর্তন করলেই সঠিক পথ হারিয়ে বিভ্রান্ত হবে।

(খ) তাওহীদে উলূহিয়্যাহ বা তাওহীদে ইবাদত
সকল প্রকার ইবাদতে আল্লাহকে একক গণ্য করা। যেমন ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত, যবেহ-কুরবানী, নযর-নিয়াজ, রুকূ-সিজদা, ভয়-ভীতি, আশা-ভরসা ইত্যাদি সকল কিছু আল্লাহর জন্যই হ’তে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ‘আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি’ (ফাতেহা ৪)। অতএব আমরা আমাদের প্রকৃত মা‘বূদের নিকটেই সকল বিপদ-আপদ থেকে আশ্রয় চাইব। একমাত্র তাঁরই ইবাদত করব। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلاً أَنِ اعْبُدُواْ اللهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوْتَ ‘আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগূত হ’তে নিরাপদ থাকবে’ (নাহল ৩৬)। অতএব শুধু আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে, অন্য কারো নয়। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِن رَّسُوْلٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُوْنِ ‘আমরা তোমার পূর্বে কোন রাসূল প্রেরণ করিনি এই অহী ব্যতীত যে, আমি ছাড়া অন্য কোন (হক্ব) মা‘বূদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর’ (আম্বিয়া ২৫)। তিনি আরো বলেন, لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحاً إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ ‘নূহকে তার কওমের নিকট পাঠিয়েছিলাম। সে বলল, হে আমার কওম! তোমরা শুধু আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য মা‘বূদ নেই’ (আ‘রাফ ৫৯)। তিনি অন্যত্র বলেন,وَاعْبُدُواْ اللهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئاً ‘আর তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না’ (নিসা ৩৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল মাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫৬)।

অতএব বুঝা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ জিন ও মানুষকে শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। ইবাদতের মধ্যে শিরক মিশ্রিত হ’লে ইবাদত বাতিল হয়ে যায়, যেমন পবিত্রতার মধ্যে অপবিত্র মিশ্রিত হ’লে সেটি বাতিল বলে গণ্য হয়। আর শিরককারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যায়। এজন্য শিরক থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপনকারীকে ক্ষমা করবেন না, তবে এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন’ (নিসা ১১৬)। আল্লাহ আরো বলেন, إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে (অন্য কাউকে) শরীক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন’ (মায়েদাহ ৭২)। অতএব শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত করলে ঈমান বাড়বে। পক্ষান্তরে শিরক মিশ্রিত ইবাদত করলে ঈমানে ঘাটতি পড়বে।

(গ) তাওহীদে আসমা ওয়াছ ছিফাত :
কুরআন ও হাদীছে আল্লাহর নাম ও ছিফাত (গুণাবলী) সমূহ যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করা এবং সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা হচ্ছে তাওহীদে আসমা ওয়াছ ছিফাত। কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করে, অস্বীকার না করে, অবস্থা বর্ণনা না করে এবং কারো সাথে সাদৃশ্য প্রদান না করে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর উপর ঈমান আনতে হবে।[2] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوْهُ بِهَا وَذَرُواْ الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِيْ أَسْمَآئِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُواْ

يَعْمَلُوْنَ ‘আর আল্লাহর সুন্দর নাম সমূহ রয়েছে। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামে ডাকো, আর তাদেরকে বর্জন করো যারা তাঁর নাম সমূহ বিকৃত করে, সত্বরই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে’ (আ‘রাফ ১৮০)। সুতরাং আল্লাহর নাম ও গুণাবলী যেভাবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করতে হবে। কারো সাথে তার সাদৃশ্য করা যাবে না। তিনি বলেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيْعُ البَصِيْرُ ‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা (শূরা ১১)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ‘যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ের পিছনে পড়ো না’ (বনী ইসরাঈল ৩৬)। আয়াতটিতে আল্লাহর অবস্থা কেমন তা বর্ণনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআন এবং ছহীহ হাদীছে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করতে বলা হয়েছে।[3] মানব জীবনে তিন প্রকার তাওহীদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঈমান মযবূত হবে ও ইহকাল-পরকাল সুখময় হবে।

আল্লাহ তা‘আলার নামগুলো যেভাবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করতঃ অর্থ বুঝে মুখস্থ করে আমলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করলে ঈমান বাড়বে এবং জান্নাত লাভ করা যাবে ইনশাআল্লাহ। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলার এক কম একশটি অর্থাৎ নিরানববইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এগুলো মুখস্থ করবে (অর্থ বুঝে আমল করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[4] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আল্লাহ তা‘আলার নিরানববইটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি এগুলোর হিফাযত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ বেজোড়। তিনি বেজোড় পসন্দ করেন’।[5] হাদীছটির ব্যাখ্যা হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিরানববইটি নাম হেফাযত করবে এবং মর্মার্থ বুঝে আমল করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[6]

(২) ইবাদত কবুলের শর্তদ্বয় মানব জীবনে বাস্তবায়ন করা : ইবাদত কবুলের মৌলিক দু’টি শর্ত হ’ল- (ক) ইখলাছ বা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করা (খ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অনুসরণ করা। এ দু’টি শর্তের প্রতি খেয়াল রেখে ইবাদত করলে তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে এবং এতে ঈমানও বৃদ্ধি হবে। সকল প্রকার ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সম্পাদন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا أُمِرُوْا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَاء وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ

دِيْنُ الْقَيِّمَةِ ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁরই ইবাদত করতে এবং ছালাত কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে, এটাই সু-প্রতিষ্ঠিত সঠিক দ্বীন’ (বাইয়িনাহ ৫)। মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন, ‘হে নবী! বল, আমি একমাত্র আল্লাহর জন্যই ইবাদত করি তাঁর প্রতি আমার আনুগত্যকে একনিষ্ঠ রেখে’ (যুমার ১৪)। সকল প্রকার ইবাদত যেমন ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত, যবেহ-কুরবানী, নযর-নিয়াজ, রুকূ-সিজদা, দো‘আ-প্রার্থনা, ভয়-ভীতি, আশা-ভরসা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই করতে হবে। কোন পীর, অলী-আওলিয়ার নামে বা মাযার-কবরের নিকট নয়। ইবাদত অন্যের জন্য করলেই শিরক হয়ে যাবে এবং পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হ’তে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَقَدْ أُوْحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ‘নিশ্চয়ই তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি এ মর্মে ওহী হয়েছে যে, যদি তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক কর তবে নিঃসন্দেহে তোমার সকল আমল বাতিল হয়ে যাবে এবং অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৬৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً ‘সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে’ (কাহফ ১১০)।

প্রতিটি কাজের জন্য সর্বপ্রথম নিয়ত ঠিক করতে হবে এবং সর্বপ্রকার ইবাদত আললাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা সৎ আমল করেছে তাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট বস্ত্ত (জান্নাত) রয়েছে এবং আরো রয়েছে অতিরিক্ত উৎকৃষ্ট জিনিস (আল্লাহর সাক্ষাৎ) (ইউনুস ২৬)। তিনি আরো বলেন,وَعَدَ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ

‘আল্লাহ তা‘আলা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে এমন জান্নাত সমূহের ওয়াদা করেছেন যার পাদদেশে নহর সমূহ প্রবাহিত রয়েছে। সেখানে তারা অনন্তকাল বসবাস করবে। আরও (ওয়াদা করেছেন) ঐ উত্তম বাসস্থান সমূহের, যা আদন নামক জান্নাতের মাঝে অবস্থিত। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড়। এটা হচ্ছে অতি বড় সফলতা’ (তওবা ৭২)।

অতএব পরকালে সুখময় স্থান লাভ করার জন্য সকল সৎকর্ম আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে করতে হবে এবং নিয়ত খালেছ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে হবে, তার হিজরত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যেই গন্য হবে। আর যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে, যে জন্য সে হিজরত করেছে’।[7]

ওমর বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) তাঁর দো‘আয় বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমার সকল আমল কবুল কর (রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী করার তাওফীক দাও), সেটি শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য করার তাওফীক দাও এবং সেটি যেন কারো উদ্দেশ্যে না হয়।

ফুযাইল বিন ইয়ায বলেন, আমল হ’তে হবে ইখলাছের সাথে ও সঠিক পদ্ধতিতে। বলা হ’ল হে আবু আলী! ইখলাছ ও সঠিক পদ্ধতিটা কি? তিনি বললেন, আমলটি যদি খালেছ হয়, সঠিক পদ্ধতিতে না হয় তাহ’লে কবুল হবে না। আর যদি সেটি সঠিক পদ্ধতিতে হয় কিন্তু খালেছ নিয়তে না হয়, তাহ’লেও কবুল হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত খালেছ নিয়তে ও সঠিক পদ্ধতিতে না হবে। আর খালেছ নিয়ত হ’ল শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত করা ও সঠিক পদ্ধতি হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর ছহীহ সুন্নাহ অনুযায়ী করা।[8]

(খ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অনুসরণ করা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ إِنْ كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللهََ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‘হে নবী! বল, যদি তোমরা আল্লাহর ভালবাসা পেতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহ’লে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন ও তোমাদের অপরাধ সমূহ মার্জনা করে দিবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়’ (আলে ইমরান ৩১)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে যা দিয়েছেন তার অনুসরণ করতে হবে আর যা থেকে নিষেধ করেছেন তা বর্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন তা হ’তে বিরত থাকো, আর আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি খুবই কঠিন’ (হাশর ৭)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে কেউ এমন কোন আমল করল, যে ব্যাপারে আমাদের অনুমোদন নেই তা প্রত্যাখ্যাত’।[9] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে নেই এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, তা প্রত্যাখ্যাত’।[10]

ইবাদত কবুলের দু’টি শর্তের সাথে আরেকটি শর্ত : আমলটি বিশুদ্ধ আক্বীদার ভিত্তিতে সম্পন্ন হ’তে হবে, নচেৎ তা কবুল হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, مَنْ عَمِلَ صَالِحاً مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ

يَعْمَلُونَ ‘মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎ কর্ম করবে, তাকে আমরা নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করব’ (নাহল ৯৭)। আয়াতটিতে শর্তযুক্ত হয়েছে যে, আমল কবুলের জন্য বিশুদ্ধ আক্বীদায় বিশ্বাসী হ’তে হবে এবং মুমিন হ’তে হবে। কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আমল করলে আল্লাহর নিকট কশ্মিনকালেও তা কবুল হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاء مَّنثُوْراً ‘আমরা তাদের কৃতকর্মগুলোর দিকে অগ্রসর হব, অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (ফুরক্বান ২৩)। ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বান্দার ভাল-মন্দের বিচার করবেন। ঐ সময় মুশরিকরা তাদের আমল থেকে কোন ফায়দা পাবে না এবং সেগুলো তাদেরকে নাজাত দিতে পারবে না। কেননা তাদের আমল শরী‘আত অনুযায়ী হয়নি এবং তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়নি। সুতরাং সেটা বাতিল হবে।[11] মহান আল্লাহ বলেন, أُوْلَـئِكَ الَّذِيْنَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الآخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيْهَا وَبَاطِلٌ مَّا كَانُواْ يَعْمَلُوْنَ ‘তারা এমন লোক যে, তাদের জন্য আখেরাতে

জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই। আর তারা যা কিছু করেছিল তাও বিফল হবে এবং তারা যা করে তা বাতিল হবে’ (হূদ ১৬)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيْعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآنُ مَاءً حَتَّى إِذَا جَاءهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئاً وَوَجَدَ اللهَ عِنْدَهُ فَوَفَّاهُ حِسَابَهُ وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ ‘যারা কুফরী করে তাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ, পিপাসার্ত যাকে পানি মনে করে থাকে; কিন্তু সে ওর নিকট উপস্থিত হ’লে দেখবে ওটা কিছু নয় এবং সে তার নিকট পাবে আল্লাহকে। অতঃপর তিনি তার কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দিবেন। আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর’ (নূর ৩৯)। তিনি আরো বলেন,مَّثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُواْ بِرَبِّهِمْ أَعْمَالُهُمْ كَرَمَادٍ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيْحُ فِيْ يَوْمٍ عَاصِفٍ لاَّ يَقْدِرُوْنَ مِمَّا كَسَبُواْ عَلَى شَيْءٍ ذَلِكَ هُوَ الضَّلاَلُ الْبَعِيْدُ ‘যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের উপমা তাদের কর্মসমূহ ভস্ম সদৃশ যা ঝড়ের দিনে বাতাস প্রচন্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়; যা তারা উপার্জন করে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারে না; এটা তো ঘোর বিভ্রান্তি’ (ইবরাহীম ১৮)।

(৩) কল্যাণকর ইলম শিক্ষা করা : মানুষ যখন শরী‘আতের জ্ঞান অর্জন করবে, কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর জ্ঞানার্জন করে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে বাস্তবায়ন করবে তখনই তার ঈমান বাড়বে। এটি ঈমান বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। মহান আল্লাহ বলেন, شَهِدَ اللهُ أَنَّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ وَالْمَلاَئِكَةُ وَأُوْلُواْ الْعِلْمِ قَآئِمَاً بِالْقِسْطِ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْعَزِيْزُ

الْحَكِيْمُ ‘আল্লাহ সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং ফেরেশতাগণ, ন্যায়নিষ্ঠ বিদ্বানগণও (সাক্ষ্য প্রদান করেন) তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (আলে ইমরান ১৮)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, لَّـكِنِ الرَّاسِخُوْنَ فِيْ الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُوْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيكَ وَمَا أُنزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَالْمُقِيْمِيْنَ الصَّلاَةَ وَالْمُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أُوْلَـئِكَ

سَنُؤْتِيْهِمْ أَجْراً عَظِيْماً ‘কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বিশ্বাসীগণের মধ্যে যারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং যারা ছালাত প্রতিষ্ঠাকারী ও যাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী, তাদেরকেই আমি মহা পুরস্কার দেব’ (নিসা ১৬২)। কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানার্জন করে আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে ঈমান বাড়ে। মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ آمِنُواْ بِهِ أَوْ لاَ تُؤْمِنُواْ إِنَّ الَّذِيْنَ أُوتُواْ الْعِلْمَ مِن قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلأَذْقَانِ سُجَّداً، وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَا إِن كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلاً، وَيَخِرُّوْنَ لِلأَذْقَانِ يَبْكُوْنَ

وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعاً- ‘তুমি বল, তোমরা কুরআনে বিশ্বাস কর অথবা বিশ্বাস না কর, যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকট যখন এটা পাঠ করা হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকরী হয়েই থাকে। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে’ (বানী ইসরাঈল ১০৭-১০৯)।

বিদ্বানগণ কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানার্জন করে নিজেরা তদনুযায়ী আমল করেন এবং অন্যদের নিকট প্রচার করে থাকেন। এতে একে অপরের ঈমান বাড়ে এবং ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন,وَلِيَعْلَمَ الَّذِيْنَ أُوْتُوْا الْعِلْمَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَيُؤْمِنُوْا بِهِ فَتُخْبِتَ لَهُ قُلُوْبُهُمْ وَإِنَّ اللهَ لَهَادِ الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ ‘আর এজন্যও যে, যাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা যেন জানতে পারে যে, এটা তোমার প্রতিপালকের নিকট হ’তে প্রেরিত সত্য। অতঃপর তারা যেন বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর যেন ওর প্রতি অনুগত হয়। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ সরল পথে পরিচালিত করেন’ (হজ্জ ৫৪)। মানুষ কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানার্জন দ্বারাই সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়। মহান আল্লাহ বলেন,

وَيَرَى الَّذِيْنَ أُوتُوا الْعِلْمَ الَّذِيْ أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ هُوَ الْحَقَّ وَيَهْدِيْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ ‘যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা বিশ্বাস করে যে, তোমার প্রতিপালকের নিকট হ’তে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা সত্য। এটা মানুষকে পরাক্রমশালী ও মহা প্রশংসিত আল্লাহর পথ নির্দেশ করে’ (সাবা ৬)। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্য যারা আলেম তারা তাঁকে ভয় করে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল’ (ফাতির ২৮)।

কল্যাণকর ইলম শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ থেকে অন্ধকার দূর করা এবং ঈমান বৃদ্ধি করা সম্ভব। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُوْا الْأَلْبَابِ ‘বল, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে’ (যুমার ৯)। অতএব কুরআন-সুন্নাহর ইলম অর্জন করা ফরয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের উপর (শরী‘আতের) জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরয’।[12] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকেই দ্বীনের ইলম দান করেন’।[13] ইলম শিক্ষা করলে জান্নাতে যাবার পথ সহজ হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষার জন্য পথ চলে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন।[14] ইলম অর্জনের মাধ্যমে নবীগণের উত্তরাধিকারী হওয়া যায়। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘আলেমগণই হ’লেন নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দীনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী করেন না। নিশ্চয়ই তাঁরা ইলমের উত্তরাধিকারী করেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল, সে বৃহদাংশ গ্রহণ করল’।[15] ইলম অর্জন করে অপরকে শিক্ষা দিলে, সে অনুযায়ী আমলকারী যে নেকী পাবে, শিক্ষাদাতাও অনুরূপ নেকী পাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিবে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় ছওয়াব পাবে, যে তার উপর আমল করল। কিন্তু আমলকারীর ছওয়াব থেকে একটুকুও কমানো হবে না’।[16]

কল্যাণকর জ্ঞান অর্জনকারীর উপর আল্লাহ রহম করেন। আর ফেরেশতাগণ, আসমান-যমীনের অধিবাসীগণ, পিপীলিকা এমনকি সমুদ্রের মাছও তার জন্য দো‘আ করতে থাকে। আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সামনে দু’জন লোকের কথা উল্লেখ করা হ’ল। তাদের একজন আলেম, অপর জন আবেদ। তখন তিনি বলেন, আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর ঐরূপ, যেরূপ আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের উপর। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ রহমত করেন এবং তাঁর ফেরেশতামন্ডলী, আসমান-যমীনের অধিবাসী এমনকি পিপীলিকা তার গর্তে থেকে এবং মাছও কল্যাণের শিক্ষা দানকারীর জন্য দো‘আ করে’।[17] দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিয়ে গেলে মৃত্যুর পরেও তার ছওয়াব পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তিনটি ব্যতীত তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। ঐ তিনটি আমল হ’ল প্রবাহমান দান-ছাদাক্বা, এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দো‘আ করে’।[18]

অতএব ঈমান বাড়াতে হ’লে ও ইহলোক-পারলোক সুখময় জীবন-যাপন করতে হ’লে সবার উপর আবশ্যক হবে সন্তান-সন্ততিক ছোট থেকেই দ্বীনের সঠিক জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া। দ্বীনী ইলম শিক্ষা লাভ না করলে পৃথিবী অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। ফলে মানুষ দ্বীনী বিষয়ে অজ্ঞদের নিকট থেকে ফৎওয়া নিয়ে গোমরাহ হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের থেকে ইলম ছিনিয়ে নেন না। বরং দ্বীনের আলেমদের উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ইলমকে উঠিয়ে নিবেন। তখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবে না। ফলে লোকেরা মূর্খদেরকেই নেতা বানিয়ে নিবে, তাদের জিজ্ঞেস করা হ’লে তারা না জেনে ফৎওয়া প্রদান করবে, এতে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে’।[19]

(৪) কুরআনুল কারীম অর্থ বুঝে পড়া এবং সে অনুযায়ী আমল করা : ঈমান বৃদ্ধি ও তা সুদৃঢ় করণের অন্যতম উপায় হ’ল অর্থ বুঝে পবিত্র কুরআন পড়া, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা এবং তদনুযায়ী আমল করা। মহান আল্লাহ বলেন, وَهَـذَا كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ مُّصَدِّقُ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ ‘আমরা এই বরকতময় কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা তার পূর্বের সকল কিতাবকে সত্যায়নকারী’ (আন‘আম ৬/৯২)। অর্থ বুঝে কুরআন তেলাওয়াত করলে এবং তার প্রতি আমল করলে আল্লাহর রহমত লাভ হয় এবং সঠিক পথের দিশা পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেন, وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ ‘আমরা এই বরকতময় কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি! সুতরাং তোমরা এটা অনুসরণ কর এবং ভয় কর, যেন তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়’ (আন‘আম ৬/১৫৫)। তিনি আরো বলেন, وَلَقَدْ جِئْنَاهُمْ بِكِتَابٍ فَصَّلْنَاهُ عَلَى عِلْمٍ هُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُوْنَ ‘আমরা তাদের নিকট এমন একখানা কিতাব পৌঁছিয়েছিলাম, যা পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা বিশদ ব্যাখ্যা করেছিলাম এবং যা ছিল মুমিন সম্প্রদায়ের জন্যে হেদায়াত ও রহমত’ (আ‘রাফ ৭/৫২)।

পবিত্র কুরআন মানব জাতির জন্য হেদায়াত স্বরূপ। এতে জীবনের প্রত্যেক বিষয়কে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَاناً لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرَى لِلْمُسْلِمِيْنَ- ‘আমরা আত্মসমর্পণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা, স্বরূপ, পথ-নির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি’ (নাহল ১৬/৮৯)।

পবিত্র কুরআন বুঝে-শুনে পড়ে আমল করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ ‘এ এক কল্যাণময় কিতাব। এটা আমরা তোমার উপর এজন্য অবতীর্ণ করেছি যে, যাতে মানুষ এর আয়াত সমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানী ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (ছোয়াদ ৩৮/২৯)। পবিত্র কুরআনই মানব জাতিকে হেদায়াতের পথ দেখায়। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ هَـذَا الْقُرْآنَ يِهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْراً كَبِيْراً ‘এ কুরআন (সৃষ্টিকুলকে) সর্বশ্রেষ্ঠ হেদায়াতের পথ নির্দেশ করে এবং সৎপরায়ণ বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৯)। পবিত্র কুরআনই মানব জাতির জন্য হেদায়াত ও আরোগ্য স্বরূপ। আল্লাহ বলেন, وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَلاَ يَزِيْدُ الظَّالِمِيْنَ إَلاَّ خَسَاراً ‘আমরা অবতীর্ণ করি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য আরোগ্য ও রহমত। কিন্তু তা যালেমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৮২)।

মহান আল্লাহ কুরআন নিয়ে গবেষণা করতে এবং সঠিক অর্থ বুঝে আমল করতে নির্দেশ দিয়েছেন, أَفَلاَ يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللهِ لَوَجَدُوْا فِيْهِ اخْتِلاَفاً كَثِيْراً ‘তারা কেন কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি ওটা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট হ’তে হ’ত তবে তারা ওতে বহু অসংগতি পেত’ (নিসা ৪/৮২)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, أَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوْبٍ أَقْفَالُهَا ‘তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করে না, না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ’? (মুহাম্মাদ ৪৭/২৪)।

কুরআন পড়া, অর্থ বুঝা, গবেষণা করা এবং আমল করা এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, وَاللهِ الَّذِى لاَ إِلَهَ غَيْرُهُ مَا أُنْزِلَتْ سُورَةٌ مِنْ كِتَابِ اللهِ إِلاَّ أَنَا أَعْلَمُ أَيْنَ أُنْزِلَتْ وَلاَ أُنْزِلَتْ آيَةٌ مِنْ كِتَابِ اللهِ إِلاَّ أَنَا أَعْلَمُ فِيْمَ أُنْزِلَتْ، وَلَوْ أَعْلَمُ أَحَدًا أَعْلَمَ مِنِّىْ بِكِتَابِ اللهِ تُبَلِّغُهُ الإِبِلُ لَرَكِبْتُ إِلَيْهِ ‘আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই, আল্লাহর কিতাবের প্রতিটি সূরা সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই জানি যে, তা কোন ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তাহ’লে আমি সওয়ার হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম’।[20]

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, ‘আমি ইবনে আববাস (রাঃ)-এর নিকট কুরআন পেশ করতাম। সূরা ফাতেহা থেকে শেষ (নাস) পর্যন্ত প্রত্যেক আয়াতের নিকট থামতাম এবং সেখানে কি বলা হচ্ছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম (অর্থ জিজ্ঞেস করতাম)। হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, পবিত্র কুরআনে কোন আয়াত অবতীর্ণ হ’লে সেটির অর্থ এবং কি উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে তা জানতে ভালবাসতাম।[21]

সুতরাং অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে এবং আমল করার চেষ্টা করতে হবে, তাহ’লে ঈমান বাড়বে। আর কুরআনের প্রতি অবহেলা করে আমল না করলে সঠিক পথের দিশা পাওয়া যাবে না; বরং পথভ্রষ্ট হ’তে হবে। পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হ’তে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,قَدْ كَانَتْ آيَاتِيْ تُتْلَى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ تَنْكِصُوْنَ، مُسْتَكْبِرِيْنَ بِهِ سَامِراً تَهْجُرُوْنَ، أَفَلَمْ يَدَّبَّرُوْا الْقَوْلَ أَمْ جَاءَهُمْ مَّا لَمْ يَأْتِ آبَاءَهُمُ الْأَوَّلِيْنَ- ‘আমার আয়াত তোমাদের কাছে পাঠ করা হ’ত; কিন্তু তোমরা দম্ভভরে পিছন ফিরে সরে পড়তে এই বিষয়ে অর্থহীন গল্প-গুজব করতে করতে। তবে কি তারা এই বাণী অনুধাবন করে না? অথবা তাদের নিকট কি এমন কিছু এসেছে যা তাদের পূর্বপুরুষদের নিকট আসেনি’? (মুমিনূন ২৩/৬৬-৬৮)।

যে ব্যক্তি অর্থ বুঝে কুরআন পড়বে ও তদনুযায়ী আমল করবে তার পক্ষে কুরআনই কথা বলবে, আর আমল না করলে তার বিপক্ষে কথা বলবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ ‘পবিত্র কুরআন তোমার পক্ষে কথা অথবা বিপক্ষে দলীল’।[22] সুতরাং মুসলমানের উপর ওয়াজিব পবিত্র কুরআন অর্থসহ পড়া এবং আমল করা।

(৫) নবী করীম (ছাঃ)-এর জীবনী অধ্যয়ন করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবন চরিত অধ্যয়ন করলে ও তার আখলাক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে মানুষের ঈমান বাড়বে। মহান আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে বলেন, لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ ‘তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট আগমন করেছে একজন রাসূল যাঁর কাছে তোমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অতি কষ্টদায়ক মনে হয়। তিনি তোমাদের হিতাকাংখী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও দয়ালু’ (তওবা ৯/১২৮)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيْمٍ ‘নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রে অধিকারী’ (কলাম ৬৮/৪)।

তিনি আরো বলেন,لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوْ اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْراً ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্

30/12/2023

ঈমান হ্রাস পাওয়ার কারণ
বিভিন্ন সৎ আমলের মাধ্যমে যেমন মানুষের ঈমান বৃদ্ধি পায়, তেমনি নানাবিধ কারণে ঈমান কমে যায়। যেসব কারণে ঈমান কমে যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হ’ল-

(১) অজ্ঞতা :
এটি ঈমান হরাসের অন্যতম কারণ। ইলম যেমন ঈমান বৃদ্ধি করে, অজ্ঞতা তেমনি ঈমান হরাস করে। মানুষ যত বেশী কল্যাণকর বিদ্যা অর্জন করবে তার ঈমান তত বেশী বাড়বে।

অজ্ঞতার কারণে আজকে বিশ্বে মানুষের এত অধঃপতন। কেননা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল আল্লাহ সম্পর্কে জানা। এজন্য তাওহীদ বুঝতে হবে। কারণ তাওহীদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকার কারণে আজকে অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন ধরনের শিরকে লিপ্ত হচ্ছে। কবর পূজাকে বড় ইবাদত মনে করছে। কবরে রুকূ-সিজদা, যবেহ, কুরবানী, মানত, দো‘আ, সাহায্য প্রার্থনা, বরকত চাওয়া প্রভৃতি শিরকী আমল করছে, যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। তাছাড়া বিদ‘আতী কর্মের তো শেষ নেই। ওরস, মীলাদুন্নবী, শবে মে‘রাজ, শবে বরাত পালন, ফরয ছালাতের পরে জামা‘আতবদ্ধ ভাবে দো‘আ করা, মৃত ব্যক্তির নামে চল্লিশা, কুরআন খতম, এগুলো সবই মানুষ করছে অজ্ঞতার কারণে। আর এভাবে মানুষের ঈমান কমছে। উল্লেখ্য যে, হাতে, গলায়, কোমরে তাবীয ঝুলানো, বাত ভাল হবার উদ্দেশ্যে হাতে লোহার বালা পরা, লাল সুতা পরা, অন্যের নামে কসম খাওয়া, মানুষ দেখানো আমল করা ইত্যাদি সকল কাজ অজ্ঞতার কারণেই করছে। যা মানুষের ঈমান নষ্ট করে দেয়। এর ফলে পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

তাই অজ্ঞতা দূর করতে হবে এবং মানুষের মধ্যে ইলমের প্রসার ঘটাতে হবে। কেননা অজ্ঞতাই হচ্ছে পাপে পতিত হওয়ার সর্ববৃহৎ কারণ। মহান আল্লাহ বলেন,وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْ إِسْرَائِيْلَ الْبَحْرَ فَأَتَوْا عَلَى قَوْمٍ يَعْكُفُوْنَ عَلَى أَصْنَامٍ لَّهُمْ قَالُوْا يَا مُوْسَى اجْعَل لَّنَا إِلَـهاً كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ ‘আমরা সাগর পার করে দিয়েছি বনী ইসরাঈলকে। তখন তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌঁছল, যারা নিজ হাতে নির্মিত মূর্তিপূজায় নিয়োজিত ছিল। তারা বলতে লাগল, হে মূসা! আমাদের উপাসনার জন্যও তাদের মূর্তির মতই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন। তিনি বললেন, তোমরা বড়ই অজ্ঞ সম্প্রদায়’ (আ‘রাফ ৭/১৩৮)।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَلُوْطاً إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ وَأَنتُمْ تُبْصِرُوْنَ- أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُوْنِ النِّسَاء بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ- ‘স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ, অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ? তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক অজ্ঞ সম্প্রদায়’ (নামল ২৭/৫৪-৫৫)। মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন,قُلْ أَفَغَيْرَ اللهِ تَأْمُرُوْنِّي أَعْبُدُ أَيُّهَا الْجَاهِلُوْنَ ‘বল, হে মূর্খরা! তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করতে আদেশ করছ?’ (যুমার ৩৯/৬৪)।

এভাবে যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং পাপ কাজ করবে সে মূর্খ। তার এ অজ্ঞতা ও মূর্খতাবশতঃ কর্মকান্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে বিনীতভাবে তওবা করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللهِ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السُّوَءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوْبُوْنَ مِنْ قَرِيْبٍ فَأُوْلَـئِكَ يَتُوْبُ اللهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللهُ عَلِيْماً حَكِيْماً ‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে। এরাই হ’ল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ’ (নিসা ৪/১৭)। তিনি আরো বলেন, وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلاَمٌ عَلَيْكُمْ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ أَنَّهُ مَن عَمِلَ مِنْكُمْ سُوْءاً بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ فَأَنَّهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

‘আর যখন তারা তোমাদের কাছে আসবে যারা আমাদের নিদর্শন সমূহে বিশ্বাস করে, তখন তুমি বলে দিও, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের পালনকর্তা রহমত করা নিজ দায়িত্বে লিখে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন মন্দ কাজ করে, এরপরে তওবা করে নেয় এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়’ (আন‘আম ৬/৫৪)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِيْنَ عَمِلُوْا السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابُوْا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوْا إِنَّ رَبَّكَ مِنْ بَعْدِهَا لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‘অনন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার পালনকর্তা এসবের পরে তাদের জন্যে অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু’ (নাহল ১৬/১১৯)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, যত প্রকার পাপ করা হয় তা (শরী‘আতের সঠিক জ্ঞান থেকে) অজ্ঞ থাকার কারণেই সংঘটিত হয়। সেটি ইচ্ছাকৃত হোক অথবা অনিচ্ছাকৃত হোক।[1]

মুজাহিদ বলেন, مَنْ عَصَى اللهَ فَهُوَ جَاهِلٌ حَتَّى يَنْزِعَ عَنْ مَعْصِيَتِهِ আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি মূর্খ। যতক্ষণ না সে তার পাপাচার থেকে দূরে থাকে।[2]

(২) আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হওয়া ও ভুলে যাওয়া :
মানুষ যখন আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী থেকে বিমুখ হয় এবং তাঁকে ভুলে যায়, তখন মানুষের ঈমান কমে যায়। আল্লাহর ইবাদত থেকে গাফলতি করা মুনাফিক ও কাফেরদের চরিত্র। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْراً مِّنَ الْجِنِّ وَالإِنْسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لاَّ يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لاَّ يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لاَّ يَسْمَعُوْنَ بِهَا أُوْلَـئِكَ كَالأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُوْلَـئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ ‘আর আমরা সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না। তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না। আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হ’ল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ’ (আ‘রাফ ৭/১৭৯)। তিনি আরো বলেন,

إَنَّ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءنَا وَرَضُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوْا بِهَا وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُوْنَ، أُوْلَـئِكَ مَأْوَاهُمُ النُّارُ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ- ‘অবশ্যই যেসব লোক আমাদের সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই উৎফুল্ল রয়েছে, তাতেই প্রশান্তি অনুভব করেছে এবং যারা আমার নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে গাফিল। এমন লোকদের ঠিকানা হ’ল আগুন সেসবের বদলা হিসাবে যা তারা অর্জন করছিল’ (ইউনুস ১০/৭-৮)। তিনি অন্যত্র বলেন,فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوْنَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً وَإِنَّ كَثِيْراً مِّنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُوْنَ ‘অতএব আজকের দিনে সংরক্ষণ করছি আমরা তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হ’তে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমাদের মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না’ (ইউনুস ১০/৯২)।

মানুষ আজ দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং তার আসল ঠিকানা পরকালকে ভুলে গেছে। মহান আল্লাহ বলেন,يَعْلَمُوْنَ ظَاهِراً مِّنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ عَنِ الْآخِرَةِ هُمْ غَافِلُوْنَ ‘তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক জানে এবং তারা পরকালের খবর রাখে না’ (রূম ৩০/৭)। মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে সম্বোধন করে বলেন,وَاذْكُر رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعاً وَخِيْفَةً وَدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ وَلاَ تَكُن مِّنَ الْغَافِلِيْنَ

‘আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং অনুচ্চ স্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়। আর গাফেল হয়ো না’ (আ‘রাফ ৭/২০৫)। মহান আল্লাহ যিকিরের মাধ্যমেই মানুষ বেঁচে থাকে, এর বিপরীত করলে অন্তর মরে যায়। মুমিনের উচিৎ ভাল কাজের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়া। পরকালের জন্য, আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য আমল করা। আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ না হওয়া। যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়, তারা নিজের উপর যুলুম করে। এর পরিণতি খুব ভয়াবহ। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ ‘যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব’ (সাজদাহ ৩২/২২)।

যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা হিদায়াতের পথ থেকে অনেক দূরে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ إِنَّا جَعَلْنَا عَلَى قُلُوْبِهِمْ أَكِنَّةً أَنْ يَفْقَهُوْهُ وَفِيْ آذَانِهِمْ وَقْراً وَإِنْ تَدْعُهُمْ إِلَى الْهُدَى فَلَنْ يَهْتَدُوْا إِذاً أَبَداً

‘তার চাইতে অধিক যালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্ম সমূহ ভুলে যায়? আমরা তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তারা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না’ (কাহফ ১৮/৫৭)। যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ তারা উভয় জীবনে দুর্বিষহ জীবন যাপন করবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنكاً وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى

‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব’ (ত্ব-হা ২০/১২৪)। যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ তার সাথী হবে শয়তান। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً فَهُوَ لَهُ قَرِيْنٌ ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমরা তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী’ (যুখরুফ ৪৩/৩৬)। যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে বিমুখ তার কঠিন শাস্তি হবে। মহান আল্লাহ বলেন,كَذَلِكَ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْبَاءِ مَا قَدْ سَبَقَ وَقَدْ آتَيْنَاكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْراً، مَنْ أَعْرَضَ عَنْهُ فَإِنَّهُ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْراً- ‘

এমনিভাবে আমরা পূর্বে যা ঘটেছে, তার সংবাদ তোমার কাছে বর্ণনা করি। আমরা আমাদের কাছ থেকে আপনাকে দান করেছি পড়ার গ্রন্থ। যে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে কিয়ামতের দিন বোঝা বহন করবে’ (ত্ব-হা ২০/৯৯-১০০)। যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের স্মরণ হ’তে বিমুখ হয় তিনি তাকে কঠিন আযাবে প্রবেশ করাবেন (জিন ৭২/১৭)। সুতরাং সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে হবে, তাঁর যিকির-আযকার ও ইবাদতের মাধ্যমে জীবন যাপন করতে হবে। কোন ক্রমেই তাকে ভুলে যাওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে স্মরণ করা ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করেছেন। তারাই তো পাপাচারী’ (হাশর ৫৯/১৯)।

(৩) পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া :
পাপ ও অন্যায়-অশ্লীল কাজের মাধ্যমে মানুষের ঈমান কমে। এমনকি সে ঈমান শূন্য হয়ে যায়। তাই সকল পাপ থেকে দূরে থাকতে হবে। আর কেউ পাপ করে বসলে তার থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ হ’ল সাথে তওবা-ইস্তেগফার করা। মহান আল্লাহ বলেন

,قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (যুমার ৪৩/৫৩)। তিনি আরো বলেন,وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُوْ عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ

مَا تَفْعَلُوْنَ ‘তিনি তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন, পাপসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমাদের কৃত বিষয় সম্পর্কে অবগত রয়েছেন’ (শূরা ৪২/২৫)। তাই মানুষকে সকল শিরক-বিদ‘আত ও পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে। তাহ’লে ইহলোকে কল্যাণ ও পরলোকে মুক্তি মিলবে। মানুষ যত সৎ আমল করবে ততই তার ঈমান বাড়বে। আর যত বেশী পাপ কাজ করবে তার ঈমান কমতে কমতে শূন্য হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا مَا أُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُوْلُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَذِهِ إِيْمَانًا فَأَمَّا الَّذِيْنَ آمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ إِيْمَانًا وَهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ، وَأَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا إِلَى رِجْسِهِمْ وَمَاتُوْا وَهُمْ كَافِرُوْنَ ‘আর যখন কোন সূরা নাযিল হয়, তখন তাদের মধ্যেকার কিছু (মুশরিক) লোক বলে, এই সূরা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল? বস্ত্ততঃ যারা ঈমান এনেছে, এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দ লাভ করেছে। পক্ষান্তরে যাদের অন্তরে রোগ আছে, এটি তাদের নাপাকির সাথে আরও নাপাকি বৃদ্ধি করেছে এবং তারা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে’ (তওবা ৯/১২৪-১২৫)।

কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পাপের মধ্যে ও ছোট-বড় রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, إِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلاً كَرِيْمًا ‘যদি তোমরা কবীরা গোনাহ সমূহ থেকে বিরত থাক, তাহ’লে আমরা তোমাদের (ছোট খাট) ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক গন্তব্যে প্রবেশ করাব’ (নিসা ৪/৩১)। তিনি আরো বলেন, اَلَّذِيْنَ يَجْتَنِبُوْنَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلاَّ اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ ‘যারা বড় বড় গোনাহ ও অশ্লীলকার্য থেকে বেঁচে থাকে ছোটখাট অপরাধ করলেও নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত’ (নাজম ৫৩/৩২)।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত এবং এক জুম‘আ থেকে অপর জুম‘আ, এক রামাযান থেকে অপর রামাযান এর মাঝে যত গোনাহ করা হয়, সবগুলির কাফফারাহ হয়। যদি কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে’।[3]

আবু বকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ. قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ. وَكَانَ مُتَّكِئًا فَجَلَسَ فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ الزُّوْرِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ، أَلاَ وَقَوْلُ الزُّوْرِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ. فَمَا زَالَ يَقُوْلُهَا حَتَّى قُلْتُ لاَ يَسْكُتُ. ‘আমি কি তোমাদের সব থেকে বড় গুনাহ সম্পর্কে খবর দিব না? আমরা বললাম, অবশ্যই তা, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। এ কথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর (সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেন, মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া (দু’বার)। তিনি ক্রমাগত একথা বলেই চললেন। এমনকি আমি বললাম, তিনি মনে হয় চুপ করবেন না।[4]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, أَىُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهْوَ خَلَقَكَ. قُلْتُ إِنَّ ذَلِكَ لَعَظِيمٌ، قُلْتُ ثُمَّ أَىُّ قَالَ وَأَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ تَخَافُ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ. قُلْتُ ثُمَّ أَىُّ قَالَ أَنْ تُزَانِىَ حَلِيلَةَ جَارِكَ.

‘কোন গুনাহ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করা। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটাতো সত্যিই বড় গুনাহ। আমি বললাম, তারপর কোন গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করবে যে, সে তোমার সাথে আহার করবে। আমি আরয করলাম, এরপর কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া’।[5]

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, اِجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ ‘সাতটি

ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকো। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলি কি কি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা, যাদু করা, আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আতসম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা। সূদ খাওয়া, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করা, রণাঙ্গন থেকে পলায়ন করা এবং অবলা-সরলা সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া’।[6]

(৪) নাফসে আম্মারা :
‘নফস’ তিন প্রকার। (ক) নফসে মুত্বমাইন্নাহ-প্রশান্ত হৃদয়। (খ) নফসে লাউয়ামাহ- তিরষ্কারকারী আত্মা অর্থাৎ বিবেক এবং (গ) নফসে আম্মারাহ অর্থাৎ অন্যায় কাজে প্ররোচনা দানকারী অন্তর। শেষোক্ত অন্তরটি সর্বদা শয়তানের তাবেদারী করে। এর সঙ্গে সর্বদা লড়াই করেই মুমিনকে হকের উপরে টিকে থাকতে হয়। এ খারাপ নফস মানুষকে সর্বদায় অন্যায় পথের দিকে ডাকে, ধ্বংসের পথে আহবান করে। আর এভাবে মানুষের ঈমান কমতে কমতে শূন্য হয়ে যায়। তাই এ খারাপ অন্তর থেকে মহান আল্লাহর নিকট সর্বদা পরিত্রাণ চাইতে হবে।

যেমন মহান আল্লাহ মিসরের শাসক আযীয-এর স্ত্রী সম্পর্কে বলেন, وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِيْ إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيَ إِنَّ رَبِّيْ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ‘আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না! নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ। কিন্তু সে নয় আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু’ (ইউসুফ ১২/৫৩)। আল্লাহর নিকট সর্বদাই সঠিক পথের থাকার তাওফীক চাইতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَوْلاَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَا مِنْكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَداً وَلَكِنَّ اللهَ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ ‘

হে ঈমানদারগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হ’তে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন’ (নূর ২৪/২১)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,وَلَوْلاَ أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدتَّ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئاً قَلِيْلاً ‘আমরা তোমাকে দৃঢ়পদ না রাখলে তুমি

তাদের প্রতি কিছুটা ঝুঁকেই পড়তেন’ (ইসরাঈল ১৭/৭৪)। তাই মানুষ যদি তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ করে চলে এবং আল্লাহ প্রদত্ত হুকুম-আহকামের প্রতি লক্ষ্য রাখে, তাহ’লে অন্যায় কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা সম্ভব। সেই সাথে পরকালের জন্য আমরা কতটুকু আমল করছি সেটা অবশ্যই ভাবার বিষয়। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ ‘মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন’ (হাশর ৫৯/১৮)।

আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে আত্মাকে জীবিত করতে হবে, ঈমান মুযবূত করতে হবে, ঈমান বাড়াতে হবে, প্রশান্ত আত্মা নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে, তাহ’লেই পরকালে শান্তির স্থান জান্নাত লাভ করা যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ، ارْجِعِيْ إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً، فَادْخُلِي فِيْ عِبَادِيْ، وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ- ‘হে প্রশান্ত আত্মা! ফিরে চলো তোমার প্রভুর পানে, সন্তুষ্ট চিত্তে ও সন্তোষভাজন অবস্থায়। অতঃপর প্রবেশ কর আমার বান্দাদের মধ্যে এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে’ (ফজর ৮৯/২৭-৩০)।

(৫) শয়তানের অনুসরণ :
শয়তান মানব জাতিকে সর্বদা ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। এমনকি ছালাতের মাঝেও মানুষকে কুমন্ত্রণা দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে মানুষের ঈমান কমে যায়। তাই মানব জাতির উচিত আল্লাহর নিকট সর্বদা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার জন্য পানাহ চাওয়া। কারণ শয়তান মানুষকে জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُوْ حِزْبَهُ لِيَكُوْنُوْا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيْرِ ‘শয়তান তোমাদের শত্রু। অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়’ (ফাতির ৩৫/৬)। শয়তান মানুষের চির শত্রু। মহান আল্লাহ বলেন,

قَالَ يَا بُنَيَّ لاَ تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَى إِخْوَتِكَ فَيَكِيْدُوْا لَكَ كَيْداً إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلإِنْسَانِ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ ‘তিনি বললেন, বৎস, তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহ’লে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (ইউসুফ ১২/৫)। শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণে মানুষ বিপথগামী হয়। মহান আল্লাহ বলেন,قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِيْ لأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الأَرْضِ وَلأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ ‘

সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেব’ (হিজর ১৫/৩৯)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,تَاللهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ ‘

আল্লাহর কসম! আমরা আপনার পূর্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর শয়তান তাদের কর্মসমূহকে শোভনীয় করে দেখিয়েছে। আজ সে-ই তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (নাহল ১৬/৬৩)। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তোমার পূর্বেকার সম্প্রদায় সমূহের নিকট রাসূল পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর (তাদের অবিশ্বাসের কারণে) আমরা তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম। যাতে কাকুতি-মিনতি সহকারে আল্লাহর প্রতি বিনীত হয়। যখন তাদের কাছে আমাদের শাস্তি এসে গেল, তখন কেন তারা বিনীত হ’ল না? বরং তাদের অন্তরসমূহ শক্ত হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাজগুলিকে তাদের নিকটে সুশোভিত করে দেখাল’ (আন‘আম ৬/৪২-৪৩)।

শয়তানই মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে। মহান আল্লাহ বলেন,اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِ أُوْلَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ

‘শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত’ (মুজাদালাহ ৫৮/১৯)। শয়তানই মানুষকে সরল-সঠিক পথ থেকে বিপথগামী করে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيْمَ، ثُمَّ لآتِيَنَّهُم مِّنْ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ وَلاَ تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِيْنَ

- ‘সে বলল, যে আদমের প্রতি অহংকারের কারণে আপনি আমার মধ্যে পথভ্রষ্টতার সঞ্চার করেছেন, সেই আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য আমি অবশ্যই আপনার সরল পথের উপর বসে থাকব। অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পিছনে, ডাইনে, বামে সবদিক থেকে। আর তখন আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’ (আ‘রাফ ৭/১৬-১৭)।

এজন্য মহান আল্লাহ শয়তানের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন; বরং সর্বদা তার বিরোধিতা করতে বলেছেন। কারণ শয়তানই মানুষের চির দুশমন। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا بَنِي آدَمَ لاَ يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَاتِهِمَا إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهُ مِنْ حَيْثُ لاَ تَرَوْنَهُمْ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ أَوْلِيَاء لِلَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ

‘হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে। যেমন সে তোমাদের আদি পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদের থেকে তাদের পোষাক খুলে নিয়েছিল যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। সে ও তার দল তোমাদেরকে এমন স্থান থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। আমরা শয়তানকে অবিশ্বাসী লোকদের বন্ধু বানিয়ে দিয়েছি’ (আ‘রাফ ৭/২৭)। যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে সে শয়তানেরই সহচর হয়ে যাবে এবং সে ঈমান শূন্য হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً فَهُوَ لَهُ قَرِيْنٌ، وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ أَنَّهُم مُّهْتَدُوْنَ، حَتَّى إِذَا جَاءنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ- ‘যে ব্যক্তি দয়াময়

আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমরা তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে। অবশেষে যখন সে আমার কাছে আসবে, তখন সে শয়তানকে বলবে, হায়, আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব থাকত। কত নিকৃষ্ট সঙ্গী সে’ (যুখরুফ ৪৩/৩৬-৩৮)।

(৬) দুনিয়া ও তার ফিৎনায় পতিত হওয়া :
মানুষের ঈমান হরাসের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় পরোক্ষ কারণ। মানুষ যখন দুনিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং তার জীবনের সব কিছুই দুনিয়াকে ঘিরে আবর্ভিত হয় তখনই সে পরকাল বিমুখ হয় এবং আল্লাহ আনুগত্য করা থেকে দূরে সরে যায়। ইবাদত-বন্দেগী করে না এবং হারাম-হালাল কিছু বুঝে না, তখনই তার ঈমান কমে যায়। অতএব যে ব্যক্তি দুনিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং তাতেই সন্তুষ্ট থাকে তার নিকট আল্লাহর আনুগত্য করাটা এবং পরকালমুখী হওয়াটা খুব ভারী মনে হয়।[7] এজন্য মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اعْلَمُوْا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِيْنَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيْجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُوْنُ حُطَاماً وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانٌ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ ‘তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন

ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়। যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়’ (হাদীদ ৫৭/২০)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيْماً تَذْرُوْهُ الرِّيَاحُ وَكَانَ اللهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِراً، الْمَالُ وَالْبَنُوْنَ زِيْنَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَاباً وَخَيْرٌ أَمَلاً-

‘তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা কর। তা পানির ন্যায়, যা আমরা আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল-সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়। অতঃপর তা এমন শুষ্ক চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান। ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম’ (কাহফ ১৮/৪৫-৪৬)। মানুষের উচিত পরকালের জন্যই বেশী বেশী কাজ করা। কারণ এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, যার কোন মূল্য নেই।

কিন্তু তারা পার্থিব জীবন নিয়েই ব্যস্ত, অথচ ইহকাল পরকালের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ মাত্র (রা‘দ ১৩/২৬)। শুধু দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলে পরকাল হারাতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই তৃপ্ত থাকে ও তার মধ্যেই নিশ্চিন্ত হয় এবং যারা আমাদের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে উদাসীন। এসব লোকদের ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম তাদের কৃতকর্মের কারণে’ (ইউনুস ১০/৭-৮)। মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا مَا لَكُمْ إِذَا قِيْلَ لَكُمُ انفِرُواْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الأَرْضِ أَرَضِيْتُم بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الآخِرَةِ إِلاَّ قَلِيْلٌ-

‘হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হ’ল যে, যখন তোমাদের বলা হয় আল্লাহর পথে (জিহাদে) বেরিয়ে পড়, তখন তোমরা মাটি অাঁকড়ে ধর? তোমরা কি পরকালের বিনিময়ে দুনিয়াবী জীবনের উপর রাযী হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার ভোগবিলাস অতীব নগণ্য’ (তওবা ৯/৩৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَوَاللهِ مَا الْفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ، وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا، كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوْهَا كَمَا تَنَافَسُوْهَا وَتُلْهِيَكُمْ كَمَا أَلْهَتْهُمْ

‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের জন্য দারিদ্রে্যর ভয় করছি না বরং ভয় করছি যে, তোমাদের উপর দুনিয়া প্রশস্ত করে দেয়া হবে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের উপর যেমন দুনিয়া প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছিল। আর তোমরা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবে, যেমন তারা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করেছিল। আর তা তোমাদেরকে আখিরাত বিমুখ করে ফেলবে, যেমন তাদেরকে আখিরাত বিমুখ করেছিল’।[8]

বাস্তবে যদি আমরা দুনিয়ার দিকে লক্ষ্য করি তাহ’লে বুঝতে পারব যে, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। এর কোন মূল্য নেই। মানুষ দুনিয়াতে একা এসেছে। আবার তাকে একা চলে যেতে হবে পরকালের স্থায়ী জীবনে। আর পরকালের জীবনই আসল জীবন। তাই যারা পরকালে নাজাত পাবে তারাই সুখময় স্থান জান্নাত লাভ করবে। আর আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হবে। অতএব পরকালীন জীবনকে সবার উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى ‘অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী’ (আ‘লা ৮৭/১৭)। মানুষের টাকা-পয়সা, গাড়ী-বাড়ী, পরিবার, সন্তান-সন্ততি নিয়ে যতই আরাম-আয়েশে থাকুক না কেন, যদি আমল না থাকে, পরকালের জন্য পাথেয় সঞ্চয় না করতে পারে, তাহ’লে তার জীবনের কোন মূল্য নেই; বরং পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

(৭) অসৎ সঙ্গ :
যখন কোন ব্যক্তির সঙ্গী অসৎ হয় তখন তাকেও অসৎ পথে চলার পথ দেখায়। আর সৎ ব্যক্তি সঙ্গী হ’লে তাকেও ভাল পথে চলার জন্য বলে থাকে। ফলে অসৎ সঙ্গী ঈমান কমার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। সুতরাং সৎ নেককার ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করা এবং ভাল মানুষকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা মুমিনের কর্তব্য। যেমন রাসূলুল­াহ (ছাঃ) বলেন,الْمَرْءُ عَلَى دِيْنِ خَلِيْلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। অতএব তোমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত কার সাথে বন্ধুত্ব করবে’।[9]

যে কোন ব্যক্তি বন্ধু নির্বাচন করার পূর্বে অবশ্যই যেন সে লক্ষ্য করে তার দ্বীনের প্রতি, আমানতের প্রতি, আক্বীদার প্রতি। যদি দেখতে পায় যে, তার দ্বীন-ধর্ম, আমানতদারী, সঠিক আক্বীদায় বিশ্বাসী হয় তাহ’লে তাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে পারে। আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), তাঁর ছাহাবীগণের এবং সালাফে ছালেহীনের প্রতি লক্ষ্য করি। আর তাঁদের মত জীবন গড়ি। পক্ষান্তরে ফেরাঊন, নমরূদ, হামানের মত যারা তাদের থেকে সাবধান হই। অতএব যে সৎ ব্যক্তিকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে তার ফল পাবে। আর যে অসৎ ব্যক্তিকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে সেদিকেই যাবে যেদিকে তার বন্ধু যাবে।[10]

Want your business to be the top-listed Photography Service in Raiganj?
Click here to claim your Sponsored Listing.

Videos (show all)

#LatestComedy real viral video
#SushmitaSen #real viral video
#NZvSA
Viral # real video 📷
কোরআন শিখার সহজ পদ্ধতি
Surah Ikhlas # real video #
# Facebook viral real video
#INDvsSL #Islamic short video
#সালে আহমদ তাকরিম ভাইরাল ভিডিও
#mentalhealth #Follow my page
#Facebook reels video

Category

Telephone

Website

Address

Ithar Uttar Dinajpur
Raiganj
733143

Other Camera/Photo in Raiganj (show all)
Draco__gaming Draco__gaming
Raiganj

किसी की पहचान की जरूरत नहीं हमें, लोग हमारा चेहरा देखकर ही जय श्री राम बोल देते हैं..!! -जय श्री राम

Akbar ali Akbar ali
Raiganj, 733134

AK BANGLA

Pdsharma66 Pdsharma66
Raiganj, PDSHARMA66

https://www.facebook.com/pdsharma66/

Stitching styles Joti Stitching styles Joti
Raiganj, AVIK

MY PAGE VIRAL PLEASE SUPPORT ME

Bikash block Bikash block
Raiganj

All types Car services

Susanta vk Susanta vk
Raiganj, 733128

SUSANTA VK

Ramjan Ali Ramjan Ali
Raiganj, 733156

Instagram

SRS gao ki bate SRS gao ki bate
Raiganj

� ��� �❖�❖� ◈•┼┼•�•┼┼•◈ ✮┼✮ ━━❖❖�❖❖━━ ꧁𑁍Sahajan𑁍꧂ ━━❖❖�❖❖━━ ✮┼✮ ◈•┼┼•�•┼┼•◈ �❖�❖� ��� �

Bloody Villagers Bloody Villagers
Samaspur, Hemtabad, Uttar Dinajpur
Raiganj, 733134

Hey Everybody! we are new here. For your moments, any kind of photography and videography low price..

D.R.Gurop D.R.Gurop
Raiganj

FX Editz FX Editz
Raiganj Uttar Dinajpur
Raiganj, 733134

MY Jaan 143 MY Jaan 143
Raiganj

https://youtube.com/@mrfarukboy1438