Mohammad Alli 07
Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Mohammad Alli 07, Public Figure, .
রোজার আগমন শুরু হতে যাচ্ছে Kajal Arefin Ome
শেষ পর্যন্ত দেখলাম কাজল আরেফিন অমি’র ‘অসময়’।
অমি সম্পর্কে এ দেশের দর্শকদের মধ্যে বিচিত্র মন্তব্যের ব্যাপারস্যাপার আছে। কোথায় যেন শুনলাম, সে এবার আলাদা কিছু বানিয়েছে। দেখলাম। দেখার পর চুপচাপ ছিলাম। আসলেই অমিকে দেখে যারা অভ্যস্ত, তারা ধাক্কা খাবে। স্বাভাবিক চিত্র এটাই। আমি ধাক্কা খাইনি এজন্য যে, আমার কাছে অমিকে বরাবরই মেধাবী মনে হয়েছে। নড়েচড়েই দেখতে বসলাম।
আমার দেখা এক পরিবারের ছোট গল্প বলে ‘অসময়’ সম্পর্কে বলছি। আমি এক পরিবারকে কাছে থেকে দেখেছি। আমাদের এক বন্ধু দেশের কোথাও চান্স পেলো না। ভর্তি হলো ঢাকার এক নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। নব্বই দশকের শেষার্ধে আমরা যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, সেসময় কারো প্রাইভেটে ভর্তি হওয়াটা কোনও চমকের ব্যাপার ছিল না। তো, সে আমাদের কাছে তার ক্যাম্পাসের চমক দেখাবার জন্য উচ্চবিত্তের ভাব দেখাতো। তার সেই ভাব ঠিক রাখতে তার বাবা সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে ফতুর হয়ে গেল। পরবর্তীতে যখন সে একটা চাকরি মেনেজ করলো, ততদিনে চিন্তায় চিন্তায় বাবা-মা দুজনেই গত। শেষে তার জীবনে যে ট্র্যাজেডি, সেটা মনে পড়ল অমি’র ‘অসময়’ দেখতে গিয়ে।
‘অসময়’ মূলত মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। এই টানাপোড়েন বেশি দেখা যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর সেখানে খুব স্বাভাবিক গল্প। যারা পাবলিকে চান্স পায় না, তাদের মধ্যে যারা প্রাইভেটে ভর্তি হয়, সেখানে গিয়ে মধ্যবিত্তের সন্তান তাল মেলাতে পারে না। হোঁচট খেলেও তবুও প্রায় সকলেই তাল মিলিয়ে দেখে। এই তাল মেলাতে গিয়ে অধিকাংশই বিপথগামী হয়। ‘অসময়’ গল্পের উর্বি বিপথগামী না হলেও উচ্চবিত্তের সাথে অত্যধিক স্বপ্নে গা ভাসায়, ফলে তার জীবনে নেমে আসে চূড়ান্ত দুর্ভোগ। একটা পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। সেই গল্পটাকে নিপুণভাবে তুলে এনেছেন অমি।
আমি তেমন ঋদ্ধ দর্শক নই। আমি দেখি গল্প। গল্পের চরিত্রে কে কেমন, তাই। এই দিকটা দেখতে গিয়ে একের পর এক মুগ্ধতার ভ্রমণ শুরু।
ইন্তেখাব দিনার-রুনা খান দম্পতির দুর্দান্ত অভিনয়েই আমাকে আটকে দিলো শুরুতে। বিশেষ করে ঘরের মধ্যে দুই সন্তান রেখে স্বামী-স্ত্রীর মারামারি আর অকথ্য ঝগড়ার দৃশ্যে মনে পড়ল- এ তো আমাদের শহুরে জীবনের অন্যতম ওপেন সিক্রেট। ব্যক্তিগতভাবে আমি রুনা’র অভিনয়ের ভক্ত। আলাদা মনোযোগ ছিল তার দিকে। ঘরের মধ্যে এক রকম, কোর্টে আরেক রকম। একদম অনবদ্য রুনাকে পেয়ে ভালো লেগেছে বেশ। ইন্তেখাব দিনার তো এদেশের সেরাদের একজনে পৌঁছে গেছেন কবেই।
‘অসময়’ গল্পের দর্শক ধরে রাখায় সবচেয়ে বড় অবদান সম্ভবত ইরেশ জাকের আর শরাফ আহমেদ জীবনের। এই দুজন এত সত্যিকারের ছিলেন যে মনেই হয়নি তারা অভিনয় করছেন। দারুণ।
তারিক আনাম খান এবং মুনিরা মিঠু দম্পতির মধ্যে দুজনেই দুজনের সেরা কাজ দিয়েছেন। মনে হচ্ছে, তাদের জীবনের উল্লেখযোগ্য কাজ হয়ে থাকবে ‘অসময়’।
ফারিণের নানান সময়ে নানান স্তরে গিয়ে নিজেকে মিশিয়ে দেবার ক্ষেত্রে যে পারদর্শিতা, এই মেয়ে তো চাইলেই একদিন জয়া আহসানের মতো দুনিয়া জয় করে ফেলবে। তাকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার দরকারই নেই।
বাকিরা সকলেই চেনা দৃশ্যে চেনা অভিনয়েই ছিলেন।
শেষে আমি বলব আবারও তারিক আনামের প্রসঙ্গেই। হ্যাঁ, আমার একটা মেয়ে আছে। আমার দুশ্চিন্তার যথাযথ কারণও আছে। আমার ভেতরের ব্যক্তিগত বাবা সত্ত্বাটাকে বের করে এনে আছাড় মেরেছেন তারিক আনাম খান। আমি যেন আজ থেকে কয়েক বছরের পরের আমাকে দেখলাম এই চরিত্রে। তারিক আনামের কিছু দৃশ্যে নিজের অজান্তে টের পেলাম আমি কাঁদছি।
কাজল আরেফিন অমি’র গল্পে কান্নাও সংক্রামিত হয়? এটা অনেকে বিশ্বাস করবেন না কিংবা কেউ উপহাসও করবেন। তবে আমি তো আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি শেয়ার করবই। আমাকে কেউ এটা দেখার জন্য কিংবা দেখার পর এটা নিয়ে লেখার জন্য প্রভাবিত করেনি। একটা গল্প আমাকে ছুঁয়ে গেছে, তাই লিখলাম। কাজল আরেফিন অমি’র জন্য শুভেচ্ছা
সময়ের গল্প বলতে আসছে 'অসময়'।
চোখ রাখুন ১৮ই জানুয়ারি Bongo-তে।
#অসময়