International Marketing & Export Professional Academy

International Marketing & Export Professional Academy

Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from International Marketing & Export Professional Academy, Education, .

18/11/2023

ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে ২০২৩
বিদেশে পাড়ি জমাতে চান দেশের ৪২ শতাংশ তরুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ১৭, ২০২৩

দেশের মোট শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে শিক্ষিত তরুণদের প্রায় অর্ধেকই বা ৪২ শতাংশ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে চান। অনিশ্চিত আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, দক্ষতা অনুযায়ী চাকরির বাজার তৈরি না হওয়া, গুণগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের স্বল্পতা, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগের অভাব এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা শঙ্কার কারণেই তাদের এ আগ্রহ। তবে বিদেশ যাওয়ার পর যদি দেখেন এসব সংকট সমাধান হয়েছে তাহলে ৮৫ শতাংশই আবার দেশে ফিরে আসার কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড জাস্টিস সেন্টারের ‘‌ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে ২০২৩’ শীর্ষক যৌথ সমীক্ষায় বিষয়টি উঠে এসেছে। বাংলাদেশের যুবসমাজের অবস্থান, সমসাময়িক ভাবনা ও প্রত্যাশা জানতে বিওয়াইএলসি পাঁচ বছর পরপর জাতীয় নির্বাচনের আগে এ সমীক্ষা পরিচালনা করে। বিওয়াইএলসি কার্যালয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের তথ্য উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাপক আবুল খায়ের সজীব ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড জাস্টিস সেন্টারের সাবেক গবেষণা সহযোগী হোসাইন মোহাম্মদ ওমর খৈয়াম। জীবিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সুশাসন, তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিপ্রায় বিষয় এ জরিপের ফলাফলে তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ—দুটিই উঠে এসেছে।

দেশের আট বিভাগের ৫ হাজার ৬০৯ তরুণ-তরুণীর মাঝে পরিচালিত এ জরিপে দেখা যায়, ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশই দেশ ছাড়ার কারণ হিসেবে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেছেন। ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ আবার মনে করেন, তাদের যে দক্ষতা রয়েছে দেশে সে অনুযায়ী চাকরি নেই। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই মনে করেন ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ এবং ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করেন দেশে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ কম। এছাড়া ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কারণে দেশ ছাড়তে চাইছেন ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ-তরুণী।

দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুবাশ্বিরা তাসনিম। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বিদেশ যেতে চাই। কেননা দেশে সফল হতে হলে মেধার চেয়ে বেশি মূল্যায়ন পায় লবিং, নেপোটিজম। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আরো অনেক বেশি। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা, বাইরেও নিরাপত্তার অভাব। নারীরা চাকরি করবে, উদ্যোক্তা হবে, ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করবে এসব সিদ্ধান্তের কথা যখন পরিবারকে জানানো হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। তবে দেশ ছেড়ে উন্নত বিশ্বে স্থায়ী হয়ে একই কাজগুলো করলে পরিবারের কোনো আপত্তি নেই। তাই দেশ ছেড়ে বিদেশে স্থায়ী হওয়ার কথা ভাবছি।’

জরিপে অংশ নেয়া ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ বিশ্বাস করেন বর্তমানে দেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থা নেই। অপরদিকে ৬৩ শতাংশ তরুণ মনে করেন গত পাঁচ বছরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দুর্নীতিকে চিহ্নিত করেছেন ৮৮ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ। এছাড়া ২৯ শতাংশ তরুণ মনে করেন দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার হ্রাস পাচ্ছে, যা সুশাসনকে বাধাগ্রস্ত করছে।

দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যায় স্নাতক শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওবায়দুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশে সেক্টরভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই নগণ্য। অধিকাংশ সেক্টরে মেধার মূল্যায়ন করা হয় না। মেধাবী শিক্ষার্থীদের শেখা এবং জানার অন্যতম প্রধান মাধ্যম গবেষণা। অথচ আমাদের দেশে এর জন্য ফান্ডিং নেই বললেই চলে। গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষতা অনুযায়ী চাকরির বাজারও সংকীর্ণ। আবার দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। তাছাড়া সামাজিক সুরক্ষার অভাব তো রয়েছেই।’

বিওয়াইএলসি জরিপে দেখা যায়, জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশী তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণই ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হতে চেয়েছেন। শিক্ষার মানোন্নয়নেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন তরুণরা। জরিপে অংশ নেয়া ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশই মনে করেন এক্ষেত্রে শিক্ষকের মান বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ বিশ্বাস করেন পাঠ্যক্রমে নেতৃত্বচর্চা ও সফট স্কিল উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ যুক্ত করে শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব।

ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভের রিসার্চ লিড হোসাইন মোহাম্মদ ওমর খৈয়াম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে যাতে তরুণদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটে, সেজন্য নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জরিপটি পরিচালিত হয়। সমীক্ষার ফলাফলে তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ উভয়ই উঠে এসেছে। ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে তারা নিরাপদ বোধ করেন না। তরুণদের মত প্রকাশের জন্য আরো নিরাপদ আবহ তৈরি করা যে কতটা জরুরি এ তথ্য তাই জানান দেয়।’

তরুণদের শুধু ভবিষ্যতের কাণ্ডারি হিসেবে দেখলেই চলবে না, বরং সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারণী কাজে যুক্ত করতে হবে বলে মনে করেন বিওয়াইএলসির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সভাপতি ইজাজ আহমেদ। তিনি বলেন,”‘যুবকদের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে তাদের মতামত কেবল জাতীয় নীতিমালায় যুক্ত করলেই হবে না; রাজনীতি, ব্যবসা, বেসামরিক খাত এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বচর্চার ক্ষেত্রও তৈরি করে দিতে হবে।’

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিপিজের গবেষণা পরিচালক ড. এম সানজীব হোসেন বলেন, ‘আমি তরুণদের নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। এদেশের তরুণদের মধ্যে যে আশার শিখা আমি দেখতে পেয়েছি তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এখন এটা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব আমাদের রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিপিজের গবেষণা সহযোগী তাসনিয়া খন্দকার ও বিওয়াইএলসির নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহমেদ।

18/11/2023

বাংলাদেশি তরুণেরা এত বেশি দেশ ছাড়তে চায় কেন
কাজী আলিম-উজ-জামান
আপডেট: ২০ মে ২০২৩, ১০: ৫৮

ইদানীং তরুণদের কোনো আড্ডায় যোগ দিলে সব বিষয় ছাপিয়ে আলোচনা যেন একবিন্দুতে এসে দাঁড়ায়। শুধু কি আড্ডায়? আত্মীয়স্বজন, নিকটজন, বন্ধুদের সাধারণ আলোচনায়ও বিষয়টি চলে আসে। আর তা হলো, বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে কার কী পরিকল্পনা। কে আইইএলটিএস দিয়েছে, ‘ফুল স্কলারশিপ’পেতে কত স্কোর লাগবে, কার ক্লাস কবে শুরু, ইউরোপ ভালো হবে নাকি আমেরিকা, নাকি অস্ট্রেলিয়া বা কানাডা। চারদিকে কেবল এই আলাপই শুনছি না, ঢের দেখছিও। আমাদের মেধাবী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছেলেমেয়েরা বিদেশে পাড়ি জমাতে হন্যে হয়ে চেষ্টা করছেন। পড়াশোনা শেষে আবার ফিরে আসবেন কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে, অনেকের উত্তর, ‘আগে তো যাই, তারপর দেখা যাবে।’

তরুণদের এই প্রবণতাকে কোনোভাবেই নেতিবাচক বলতে পারি না।

তবে এর আগে বলা দরকার, বিদেশে উচ্চশিক্ষায় গমনের ক্ষেত্রে একটা নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। একটা সময় ছিল, কেবল ধনী পরিবার, বড় ব্যবসায়ী, মন্ত্রী-মিনিস্টার আর আমলা-পুত্রকন্যারাই এ সুযোগ পেতেন বা নিতেন। সমাজের ক্ষমতাশালীরা অবশ্য সব সময় নিজের সন্তানসন্ততিদের বিদেশে নিরাপদে রাখার নীতিতে বিশ্বাসী।
আরও পড়ুন
তরুণ তুমি বাংলাদেশেই থাকো

যা-ই হোক, এখন মধ্যবিত্ত তো বটেই, সাধারণ গরিব ঘরের, এমনকি কৃষক পরিবারের সন্তানেরাও উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছেন। ওয়েবসাইটে ঢুকে আবেদন করে, বৃত্তি অর্জন করে, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, ধারকর্জ করে টিকিট কিনে, ব্যাগপত্র গুছিয়ে উড়োজাহাজে উঠে বসছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরিতে থাকছেন, ক্লাস করছেন, লেখাপড়ার ফাঁকে যতটুকু কাজের সুযোগ আছে, তা গ্রহণ করছেন। কেউ টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট বা টিএ হিসেবে আগেই মনোনীত হচ্ছেন। সবকিছুই একধরনের শৃঙ্খলার মধ্যে সেখানে চলছে বলে প্রতীয়মান হয়।

আরেকটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি, সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়েরাও তাঁদের মেয়েকে পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠাচ্ছেন। আগে সাধারণত বিয়ের পর মেয়েদের বিদেশ পাঠানোর অনুমতি দিতেন বাবা-মায়েরা। এখন বিয়ের আগেই মেয়েরা যেতে পারছে। চিন্তার এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে হয়।

সম্প্রতি আমাদের এক নিকটজন যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার্থে গিয়েছেন। যাওয়ার পর কয়েকবার তাঁর সঙ্গে কথাও হয়েছে। যাওয়ার দিন দশেকের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার করেছেন। সেই ছবিতে তাঁকে দেখে ভালো লেগেছে।

কেবল তিনি নন, যাঁরা পড়তে যান বা পড়া শেষে সেখানে কাজ জুটিয়ে নেন, স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অনুমতি পান, সবার খবর শুনে, ছবি দেখে ভালো লাগে। তাঁদের কেউ কেউ বলেন, তাঁরা যেখানে গেছেন, সে দেশে বা সে শহরে একটা ‘লাইফ’ আছে। লেখাপড়া, কাজ, আড্ডা, বেড়ানো—সবই চলছে। অবশ্য লাইফের ধারণা সব সময়ই ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। একজন মানুষ কীভাবে তাঁর জীবন গোছাবেন, এটা একান্তই তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। তারপরও আমাদের বিশেষ করে ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের ঢাকা শহরে যতটা বায়ুদূষণ, যতটা শব্দদূষণ, এই যন্ত্রণা থেকে তো তাঁরা আপাতত মুক্তি পেয়েছেন, এটা ভেবে আমার ভালোই লাগে।

যারা মেধাবী, তারা যদি এভাবে শয়ে শয়ে দেশ ছাড়তে থাকেন, তাহলে দেশটাকে কারা এগিয়ে নেবে? ভবিষ্যতে কারা নেতৃত্ব দেবে? ‘ঠেকার কাজ চালানোর’ মতো লোক দিয়ে একটি দেশ কীভাবে সামনের দিনগুলোতে কঠিন, কঠোর প্রতিযোগিতায় নাম লেখাবে?

২.

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশও অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট এগিয়েছে ও এগোচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ দৃষ্টিনন্দন সব অবকাঠামো তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির যন্ত্রণা সত্ত্বেও জীবনমান বেড়েছে, মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু সার্বিকভাবে বেড়েছে। তারপরও এটা হয়তো তরুণদের বিদেশমুখিনতা আটকানোর জন্য যথেষ্ট নয়। অথবা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ধারা আর তরুণদের বাইরের দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ—দুটি ভিন্ন বিষয়। এ বিষয়ে বোধ করি সমাজ-গবেষকেরা ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবেন।

তরুণদের অনেকের মধ্যে এ রকম ধারণা আছে, ঠিকমতো পড়াশোনা করলেও ফলাফলে তা প্রতিফলিত হবে না। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চাকরি জুটবে না। কোনো না কোনোভাবে বৈষম্যের স্বীকার হওয়ার ঝুঁকি তাঁর জীবনে আসতে পারে। আর চলমান বাস্তবতা তো এটা অস্বীকার করে না যে আমাদের শিক্ষাঙ্গন কলুষিত। ছাত্ররাজনীতি একেবারেই ঠিক পথে নেই। আজ থেকে দুই-আড়াই দশক আগে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ছাত্ররাজনীতি দেখেছি। অনেক কিছু বদলেছে, আবার অনেক কিছু বদলায়নি। লাঠালাঠি, কোপাকুপি থেকে গেছে এখনো। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজও নির্যাতিত। এমন অবস্থায় একজন সাধারণ মেধাবী তরুণ বা তরুণী বিদেশমুখী হয়ে স্বাভাবিক জীবন বেছে নেবে না কেন?

তারপরও বিচলিত বোধ করি, যখন ভাবি, যারা মেধাবী, তারা যদি এভাবে শয়ে শয়ে দেশ ছাড়তে থাকেন, তাহলে দেশটাকে কারা এগিয়ে নেবে? ভবিষ্যতে কারা নেতৃত্ব দেবে? ‘ঠেকার কাজ চালানোর’ মতো লোক দিয়ে একটি দেশ কীভাবে সামনের দিনগুলোতে কঠিন, কঠোর প্রতিযোগিতায় নাম লেখাবে?
আরও পড়ুন
দেশে মেধাবী তরুণদের ধরে রাখার কি কোনো উপায় নেই
৩.

তারপরও তরুণদের এই বিদেশমুখিতাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখি না, ইতিবাচকই বলতে হবে। কিন্তু জরুরি প্রশ্ন হলো, উন্নত রাষ্ট্রে পড়াশোনা করে দক্ষতা অর্জন শেষে তাঁরা কি দেশে ফিরে আসতে পারবেন? আসা দরকার। আমরা দেখছি, অনেক ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলার পুত্রকন্যারা লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে আসছেন। এসে অনেকেই পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরছেন। আবার কেউ কেউ যাওয়া-আসার মধ্যে আছেন। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা তুলনামূলক কম ফিরছেন বলে মনে হয়। তাঁরা বলছেন, তাঁদের দক্ষতা অনুযায়ী দেশে কাজের সুযোগ নেই। তার চেয়ে উন্নত বিশ্বের দেশে, যেখানে তাঁরা আছেন, চাকরি করার সুযোগ, বসবাসের পরিবেশ ভালো। অর্থ আয়ই সব সময় উন্নত জীবনযাপন বা ভালো থাকার একমাত্র নির্ণায়ক হয় না। সরকারি সেবা, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, মর্যাদা অনেক কিছুই এর সঙ্গে যুক্ত।

কিন্তু আমরা কি আমাদের মেধাবী তরুণদের হেলায় হারাব? তাঁদের দেশের কাজে লাগাব না? দেশের কাজে তাঁদের লাগাতেই হবে। এ জন্য সব সময় যে দেশে এসেই কাজ করতে হবে, এমন নয়। বিদেশে বসেও দেশের জন্য কাজ করা যায়। কেবল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিদেশে খেলতে গেলে তাদের সমর্থন করার মধ্যে দেশপ্রেম সীমাবদ্ধ রাখলে চলে না।

আমাদের যেসব তরুণ বিদেশে পড়তে গিয়ে আর ফিরে আসেননি, সেখানে চাকরি, ব্যবসা বা গবেষণা করছেন, তাঁদের দেশের কাজে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, এ বিষয়ে জোরেশোরে আলোচনা শুরুর দরকার আছে।

কাজী আলিম-উজ-জামান প্রথম আলোর উপবার্তা সম্পাদক

18/11/2023

ইদানীং তরুণদের কোনো আড্ডায় যোগ দিলে সব বিষয় ছাপিয়ে আলোচনা যেন একবিন্দুতে এসে দাঁড়ায়। শুধু কি আড্ডায়? আত্মীয়স্বজন, নিকটজন, বন্ধুদের সাধারণ আলোচনায়ও বিষয়টি চলে আসে। আর তা হলো, বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে কার কী পরিকল্পনা

08/07/2023

এলএনজি আমদানির ব্যয় মেটাতে ৭,১৮১ কোটি টাকা ঋণ চায় পেট্রোবাংলা
বাংলাদেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পেট্রোবাংলা আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলএনজি আমদানি ব্যয় মেটাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭,১৮১ কোটি টাকার ঋণ চেয়েছে।



বাংলাদেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পেট্রোবাংলা আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলএনজি আমদানি ব্যয় মেটাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭,১৮১ কোটি টাকার ঋণ চেয়েছে।
Unibots.in

অর্থ সংকটে থাকা প্রতিষ্ঠানটি মে মাসের শেষ সপ্তাহে একটি চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়কে। চিঠিতে ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ২৫,৪৮০ কোটি টাকা লোকসানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এলএনজি আমদানি ব্যয় নির্বাহে বর্তমানে তাদের এই ঋণ প্রয়োজন। বিশ্ববাজারে স্পট এলএনজির দর বাড়ায় ২০২২ সালের মে মাস থেকে এক বছরে তাদের লোকসানের অঙ্ক বেড়েছে ৮,০০০ কোটি টাকারও বেশি।

নাম না প্রকাশের শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আমরা পেট্রোবাংলার ঋণ প্রস্তাব নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করবো। "তার আগে, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের বর্তমান পরিস্থিতি, সংস্থাটির পুঞ্জিভূত দায়, অপারেটিং কস্টসহ পেট্রোবাংলার সামগ্রিক আয়-ব্যয়ের তথ্য পর্যালোচনা করা হবে। তাই প্রস্তাব অনুযায়ী ঋণ দেওয়া হবে কি-না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সময় লাগবে।"

পেট্রোবাংলার সূত্রগুলোর মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বাড়ায়, সংস্থাটি আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে রাখা আমানতের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছে। এই তহবিলের ১৯,০০০ কোটি টাকার মধ্যে অবশিষ্ট আছে মাত্র ১,৫০০ কোটি টাকা।

তবে ২০১৮ সাল থেকে পেট্রোবাংলাকে সরকার ২২,০০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। এমনকী চলতি অর্থবছরের বাজেটে এলএনজিখাতে প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, যার পুরোটাই পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

ভর্তুকির চাপ

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি বাবদ ৩৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও, গত অর্থবছরের বকেয়া ভর্তুকি মেটাতেই এখান থেকে ৩০,০০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখাতের ভর্তুকি পরিশোধের জন্য মাত্র ৫,০০০ কোটি টাকার যোগান থাকবে অর্থ বিভাগের কাছে।

কয়েক সপ্তাহ আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১,৮০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদ্যুৎখাতের গত জুলাই মাসের বকেয়ার একটি অংশ পরিশোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণে সরকারকে সুদ গুনতে হয় ৬.৭৫ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে সরকার যেখানে গত আগস্ট থেকে বিদ্যুৎখাতের বকেয়া পরিশোধ করছে না, তখন আগামী অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এলএনজি আমদানিতে অর্থায়ন করা খুবই কঠিন হবে। আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে পেট্রোবাংলার উচিত হবে, গ্যাসের বকেয়া বিল আদায়ের ওপর জোর দেওয়া।"

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ, অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আলতাফ হোসেন বলেন, 'এই মুহূর্তে ঋণ আবেদনের অগ্রগতির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।'
অন্যদিকে, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের মুঠোফোনে কল করে তাকে পাওয়া যায়নি।

এলএনজি আমদানির উদ্যোগগুলো

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়তে থাকলে, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি চালান ক্রয় বন্ধ করে বাংলাদেশ।

এদিকে গ্যাস সংকট অসহনীয় রূপ নিলে, ব্যবসায়ীরা বেশি দাম দিয়ে হলেও নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের অনুরোধ করেন সরকারের কাছে।

সে সময়, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম কমতেও শুরু করে। তবে জানুয়ারিতে সরকার শিল্পখাতে গ্যাসের দাম প্রায় ৮০ শতাংশ বাড়ায় এবং স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে।

এদিকে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরও চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, "আমরা গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলাম। তবে শর্ত ছিল যে, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু, সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ৩০ টাকা নির্ধারণের পরও আমাদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করছে না। আর গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগও হচ্ছে না।'

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করে বাংলাদেশ। এরপর গত মে মাস পর্যন্ত মোট ৩৭টি কার্গো আমদানি করা হয়েছে।

গত ১ জুন, কাতারের সঙ্গে ২০২৬ সাল থেকে বার্ষিক ১.৮ মিলিয়ন টন করে এলএনজি আমদানির ১৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ।

গত ১৯ জুন, ২০২৬ সাল থেকে বছরে শূন্য দশমিক ২৫ থেকে ১.৫ মিলিয়ন টন পর্যন্ত এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদি আরেকটি চুক্তি হয়েছে ওমানের সঙ্গে।

পেট্রোবাংলার অর্থ সংকটের শুরু যেভাবে

২০২০ সালে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন কোম্পানি, সংস্থার উদ্বৃত্ত তহবিল কোষাগারে স্থানান্তর করা শুরু করলে পেট্রোবাংলার অর্থ সংকটও শুরু হয়। এসময় অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মতো ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে উদ্বৃত্ত ও অলস তহবিল সরকারের কাছে জমা দিতে হয় পেট্রোবাংলাকে।

ওই সময় বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে সংস্থাটির আমানত ছিল ১৮,৭৬৩ কোটি টাকা, এর বিপরীতে জমা দিতে হয় ৫,৭৮১ কোটি টাকা। এরপর করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে লোকসানের সম্মুখীন হতে থাকে পেট্রোবাংলা। এতে সরকারের ওপর ভর্তুকির চাপও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

08/07/2023

ডলারের বিপরীতে টাকার সবচেয়ে বড় পতন
টাকার বিপরীতে ডলারের দর ২ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়িয়ে আন্তঃব্যাংকে ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; এখন থেকে আন্তঃব্যাংক দরেই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হবে

দেশের ইতিহাসে টাকার সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন ঘটেছে সোমবার (৩ জুলাই)। এদিন বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থেকে ১০৮.৮৫ টাকা আন্তঃব্যাংক হারে মার্কিন ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একদিনে স্থানীয় মুদ্রার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ টাকা ৮৫ পয়সা অবমূল্যায়ন হয়।

একাধিক বিনিময় হার-ভিত্তিক ব্যবস্থা থেকে সরে এসে, বাজার-ভিত্তিক একটি একক বিনিময় হার চালুর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে গত জানুয়ারিতে আইএমএফের অনুমোদিত ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণেরও অন্যতম শর্ত ছিল একক বিনিময় হার চালু। আর সেটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপ।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনা অনুসারে, বিনিময় দর ঠিক করে দিচ্ছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। ফলে আন্তঃব্যাংক ডলার বাজারের ব্যবস্থাপনা এখনও তাদের হাতেই রয়েছে।
Video Player is loading.
Unibots.in

সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফেদা আমদানিকারকদের জন্য ডলারের দর বাড়িয়ে ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে। বাফেদার কর্মকর্তারা জানান, গত ২৬ জুনের সভায় ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা দরে আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু, অনেক ব্যাংকই আমদানিকারকদের কাছে ১০৯ টাকার বেশি দরে প্রতি ডলার বিক্রি করছিল। এখন আমদানি ব্যয় পরিশোধেও তাই একই দর কার্যকর করা হলো।

বাফেদার সাম্প্রতিকতম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রেমিট্যান্স হিসেবে আসা ডলার ব্যাংকগুলো ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনতে পারবে। রপ্তানি আয়ের প্রতি ডলার কিনতে পারবে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায়।

সোমবার রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক পেমেন্টের জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে ৭২ মিলিয়ন ডলার নতুন আন্তঃব্যাংক দরে বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিক্রি করা ডলারের দর আগের ১০৬ টাকা থেকে বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ব্যাংকগুলোর কাছে নতুন আন্তঃব্যাংক হারে ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে ৯৩.৪৫ টাকা থেকে ১৬ শতাংশ বা ১৫.৪ টাকা অবমূল্যায়ন হয়েছে স্থানীয় মুদ্রা টাকার।

চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার-ভিত্তিক একটি একক বিনিময় হার চালুর ঘোষণা দেয়। এই ব্যবস্থায় ডলার বা অন্য কোনো বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় মান নির্ধারিত হবে বাজার-চাহিদার ভিত্তিতে।

মুদ্রানীতি বিবৃতিতে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্য রয়েছে। যার আওতায়, বাংলাদেশ ব্যাংকও বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় বা বিক্রয়ের নির্দিষ্ট কোনো দর ঘোষণা করবে না।

এর আগে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্যাকেজের শর্ত হিসেবে, রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি একক বিনিময় হার চালুর পরামর্শ দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় দর কমল ১.৫ টাকা

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আন্তঃব্যাংক হারে ডলার বিক্রির মাধ্যমে আইএমএফের শর্তপূরণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইএমএফের একক হারের ধারণার সাথে এটি সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায়, তাদের শর্তপূরণ হয়েছে।

তবে এখনও বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা বাকি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন যে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বর্তমানে কার্যকর কোনো বাজার নয়। "বর্তমানে এই বাজারে দৈনিক ১-২ মিলিয়ন লেনদেন হচ্ছে। কিন্তু, যখন একাধিক বিনিময় হার ছিল না, তখন বাজারটি ছিল আরও সক্রিয়। আমি একদিনেই ৬০০ মিলিয়ন লেনদেন হতে দেখেছি। তাই আন্তঃব্যাংক হারকে বাজার-ভিত্তিক দর বলা যাবে না।"

তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ডলার কেনার দরে সীমা থাকায়, আন্তঃব্যাংক হারের বাজার-ভিত্তিক চালিকাশক্তির অভাব রয়েছে। যেমন ব্যাংকগুলো যে দরে ডলার কিনছে, তার ওপর সর্বোচ্চ ১ টাকা মুনাফা করতে পারে, এতে ডলার কেনার ওপর একটা সীমা আরোপ হয়ে যাচ্ছে, যা আন্তঃব্যাংক হারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার চালুর দিকে একটি ছোট উদ্যোগ বলে মনে করছেন তিনি।

জাহিদ হোসেন বলেন, নতুন আন্তঃব্যাংক হারের কারণে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো লোকসান হবে না। "আন্তঃব্যাংক পর্যায়ে নিম্ন দরে বিক্রি হওয়ায় এপর্যন্ত প্রতি ডলারে অন্তত ২-৩ টাকা লোকসান হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কিন্তু, এই পরিবর্তনের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।"

গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বাফেদাকে রপ্তানি, আমদানি ও রেমিট্যান্সের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিনিময় হার নির্ধারণের নির্দেশ দেয়।

ডলারের দর উল্লম্ফন করে ১১৫ টাকায় দাঁড়ালে, মুদ্রাবাজারের অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণে আনতে একাধিক বিনিময় হারের এই ব্যবস্থা চালু করা হয়। ডলারের উচ্চ দর প্রশমিত করতে এই ব্যবস্থা কার্যকর প্রমাণিত হলেও, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিম্ন দরে ডলার কিনতে শুরু করলে– দ্রুত পতনের মুখে পড়ে ফরেক্স রিজার্ভ।

অন্যান্য বাজার দরের চেয়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকায় – বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যবধান কমিয়ে আনতে – টাকার দ্রুত অবমূল্যায়নের পদক্ষেপ নেয়।

এদিকে একাধিক বিনিময় হার চালুর পর ২০২৩ সালে মে মাস নাগাদ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে ২৯.৮৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরেও যা ছিল ৩৬.৪ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক সহযোগীদের থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়ায় জুনে রিজার্ভ কিছুটা বেড়ে ৩১.১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

রিজার্ভের অবনতির মধ্যেই বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি থাকার কথা উল্লেখ করে মে মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ঋণমান কমায় মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিস।

মুডিসের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের ঋণমান কমানোর ক্ষেত্রে একাধিক বিনিময় হার চালু থাকার বিষয়টিও তাদের পর্যালোচনায় ছিল।

এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার চালুর উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে। আর তাতেই একদিনে সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন হলো টাকার। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে, তারমধ্যেই আরও কমলো টাকার মান।

একাধিক বিনিময় হার চালুর আগে, রেফারেন্স রেট হিসেবে আগে শুধু একটি বিনিময় হারই চালু ছিল। পরে এই দর অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করলে, তা নতুন রেফারেন্স রেটে পরিণত হয়।

08/07/2023

আম রপ্তানিতে নজর মেরিডিয়ান অ্যাগ্রোর
মেরিডিয়ানের কর্মকর্তারা জানান, আগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে আম কিনে বিদেশে রপ্তানি করতো। ২০২১ সালে কোম্পানি নিজেই আম রপ্তানি শুরু করে। সে বছর কাতার এবং সৌদি আরবে প্রায় ৬০০ কেজি আম রপ্তানি করে মেরিডিয়ান; পরের বছর ২০২২ সালে রপ্তানি করে প্রায় ৭০০ কেজি।
ইনফোগ্রাফ: টিবিএস

দুর্গম পাহাড়ি এলাকা বাণিজ্যিকভাবে আম চাষের উপযোগী নয়, এমন ধারণাকে উপেক্ষা করে মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ বান্দরবানের লামা উপজেলায় গড়ে তুলেছে আমের বাগান। সেই বাগানে উৎপাদিত আম এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

২০১০ সালে মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো ২০ টন আম উৎপাদন করেছিল; যা ২০১৬ সালে বেড়ে ১২০ টনে পৌঁছায়। এ বছর কোম্পানির লক্ষ্য প্রায় ১৮০ টন আম উৎপাদন করা।

মেরিডিয়ানের কর্মকর্তারা জানান, আগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে আম কিনে বিদেশে রপ্তানি করতো। ২০২১ সালে কোম্পানি নিজেই আম রপ্তানি শুরু করে। সে বছর কাতার এবং সৌদি আরবে প্রায় ৬০০ কেজি আম রপ্তানি করে মেরিডিয়ান; পরের বছর ২০২২ সালে রপ্তানি করে প্রায় ৭০০ কেজি।
Video Player is loading.
Unibots.in

চলতি বছর নেদারল্যান্ডে রপ্তানি শুরু হয়েছে। কানাডায়ও শুরু হয়েছে রপ্তানির প্রক্রিয়া। চলতি বছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্র প্রায় ৭ টন।

মেরিডিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান কোহিনূর কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শুরুটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। পাগল না হলে নতুন কিছু সৃষ্টি হয় না। তখন মেরিডিয়ান হোটেল খুব লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানকার টাকা এনে এখানে বিনিয়োগ করা হয়। এই অঞ্চলের মানুষ চাষ পরবর্তী হারভেস্টিং এবং প্যাকেটজাত করতে পারতেন না। দেখা যেত, আম ঠিকভাবে না রাখা বা পরিবহনের প্রক্রিয়া না জানার কারণে চট্টগ্রামে আসতে আসতে অর্ধেক আম পচে যেত। ফলে রাজশাহী থেকে লোক এনে এখানকার মানুষদের শিখিয়েছি।"

পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষের সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য ২০০৭ সালে ভারতের ইন্ডিয়ান হর্টিকালচার রিসার্চ সেন্টারের সহায়তা নেয় মেরিডিয়ান। ভারতের মালদা থেকে আম্রপালী, মল্লিকা, রাঙ্গুই জাতের প্রায় ১৪ হাজার আমের চারা আমদানি করে।

এসব চারা রোপণের মাধ্যমে প্রায় ৮০ একর বাগান গড়ে তোলা হয়। তিন বছর পর ২০১০ সালে পরিণত প্রায় ৫ হাজার গাছ থেকে ২০ টন আম উৎপাদিত হয়।

চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা বাগানে গিয়ে কেজিপ্রতি আমের মূল্য দিতে চান ১২ টাকা, যেখানে উৎপাদন ব্যয় হয়েছিল ২৪ টাকারও বেশি।

এরপর পথ খুঁজতে থাকে মেরিডিয়ান। পরের বছর থেকে নিজেরাই বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়।

থাইল্যান্ড থেকে প্যাকেটজাতকরণের জন্য কাগজের বক্সের নমুনা আনা হয়। এরপর দেশে তৈরি করা হয় নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে বক্স। বর্তমানে ৫ কেজির বক্সে করে আম বিক্রি করছে মেরিডিয়ান।

খুব অল্প সময়ে আম্রপালী ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বাজারে। তখন মেরিডিয়ান বিদেশি নতুন নতুন জাতের আম নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৪-১৫ সাল থেকে থাইল্যান্ডের উন্নত জাতের চারা আনা শুরু হলো। তবে বাণিজ্যিক আমদানি নয়।

গ্রুপের এমডি এবং চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কাজে থাইল্যান্ডে গেলে ব্যাগে করে ২০, ৩০ বা ৫০টি করে চারা নিয়ে আসতেন। এরপর এসব চারা বাগানে চাষ করা হয়। তিন বছর পর গাছ থেকে আবার চারা উৎপাদন করা হয়। এভাবে থাই নাম ডক মাই, থাই কাঁচা-মিঠা, সর্নালী, থাই বানানা, ফোনিয়া, থাই মহাসেন জাতের আমের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়।

এরপর ২০১৮ সালের পর একইভাবে ভিয়েতনামের রেড কিং, থাইল্যান্ডের থাই কান্ট, অ্যাপ্লিম্যাঙ্গো জাতের আম যুক্ত করা হয়। বর্তমানে ৩৮ প্রজাতির আম চাষ করছে মেরিডিয়ান। এরমধ্যে কিছু জাত গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। আর বেশিরভাগই উৎপাদিত হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে মেরিডিয়ানের বাগানে শুধু মৌসুমি আম চাষ করা হতো। বছরের বাকি সময় বাগান কাজে লাগানো যেত না। কিন্তু বর্তমানে সারাবছরই আম চাষ হচ্ছে। কাটিমন জাতের আম সারাবছরই হয়।

চট্টগ্রাম মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ প্রক্রিয়াজাত শুকনো ফল রপ্তানির পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে, যা এখন রয়েছে গবেষণা ও উন্নয়ন পর্যায়ে।

কোহিনূর কামাল বলেন, "ফল ডিহাইড্রেটেড করা গেলে সহজে রপ্তানি সহজ হবে। থাইল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বে এর ফলে অপচয় কম হয়। আমাদের দেশে অন্তত ৪০ শতাংশ ফল নষ্ট হয়ে যায়। এটি নিয়ে ভাবা উচিত।"

আম চাষের পাশাপাশি ২০২০ সাল থেকে নার্সারিতে বিদেশি উন্নত জাতের আমের চারা বিক্রিও শুরু করেছে মেরিডিয়ান। বর্তমানে আম্রপালী, থাই নাম ডক মাই, থাই কাঁচা-মিঠা, থাই বানানা, রেড কিং, কাটিমন, হাড়িভাঙাসহ ১২ জাতের চারা বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

08/07/2023

এক বছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণের চেয়ে খেলাপি বেশি ১৩৪৩ কোটি টাকা
তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০৩৩ কোটি টাকা
ইনফোগ্রাফ- টিবিএস

নানা কেলেঙ্গারিতে জড়িত নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই তহবিল সংকটে ভুগছে। এর উপর চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গত ১২ মাসে খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণকৃত ঋণের চেয়ে উদ্বেগজনক হারে বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, ২০২২ এর মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ হয়েছে ২২৭৯ কোটি টাকা। যদিও এই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬২২ কোটি টাকা।

এছাড়া চলতি বছরের (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০৩৩ কোটি টাকা; যদিও এই সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ৮২৬ কোটি টাকা।
Video Player is loading.
Unibots.in

ব্যাংকাররা বলেন, বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংকটসহ নানা কারণে ঋণ তেমন বাড়ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ননা সুবিধার কারণে খেলাপি ঋণের হার এখনও কম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস্তব খেলাপি ঋণ আরও বেশি।

তারা বলেন, ঋণের চেয়ে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদারে বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান। বিশেষ করে তহবিল সংকটের কারণে টিকে থাকার তাগিদে এসব প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণ আদায়ের চেষ্টা জোরদার করেছে।

চলতি বছরের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১২৬৫ কোটি টাকা এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৭৮৫৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ২৫.০৫%।

গত ২০২২ এর ডিসেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০৪৩৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬৮২১ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ২৩.৮৮%।

আভিভা ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার টিবিএসকে বলেন, "কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পূর্বের ঋণ বিতরণে কিছু সমস্যা থাকায় এখন সেসমস্ত ঋণ আদায়ে বেশি মনোযোগী। যার কারণে তাদের ঋণ বিতরণ কম।"

"এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানের এমন জায়গায় ঋণ বিতরণ হয়েছে যেগুলো আদায়ের সম্ভবনা কম। এগুলো নিয়মিত খেলাপি হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে," বলেন তিনি।

বর্তমানে মূল্যস্ফীতি, ও আমদানি ব্যয় বাড়ায় গ্রাহকের আমনত কমে যাচ্ছে। এছাড়া আর্থিক ব্যাংকের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক ইন্টারেস্ট রেট বেশি না হওয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমানত পাচ্ছে না। যার কারণে নতুন করে ঋণ বিতরণ কম হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

ব্যাংকের ন্যায় গত তিন বছর যাবৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে নানা ধরনের সুবিধা পেয়েছেন। এর মধ্যে ২০২০-২১ সালে কোভিডের কারণে ছাড় দেওয়া হয়।

২০২২ এর শুরুতে ছাড় তুলে নিলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে এ বছরেও ঋণ পরিশোধে ছাড় পায় গ্রাহকরা।

২০২৩ এর শুরু থেকে ঋণ পরিশোধের শিথিলতা তুলে ফেললেও তার উপর স্থির থাকতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চলতি বছরের (এপ্রিল-জুন) পর্যন্ত টার্ম লোন ও চলতি মূলধনী পরিশোধিত ঋণের মাত্র ৫০% পরিশোধ করলে খেলাপি থেকে মুক্তি পাবেন গ্রাহকরা।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে চলতি বছরের মার্চে প্রান্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত কমেছে ৫৪ কোটি টাকা। মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩,৬৯৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ সম্প্রতি টিবিএসকে বলেন, "আমাদের মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেশি, তাই মানুষের নিয়মিত ব্যয় মেটাতে আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন। সে কারণেই মার্চ প্রান্তিকে এই খাত থেকে নগদ উত্তোলনের চাপ বেশি ছিল।"

এদিকে চলতি বছরের (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা।

মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১,৩১,৬২০ টাকা, যা মোট বকেয়া ঋণের ৮.৮০%।

15/06/2023

খেটে খাওয়া মানুষের জীমের দরকার পরে না, তারা এমনিতেই শক্তিশালী ❤️

15/06/2023

দেশে কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে ৬,২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় ৯ বিদেশি কোম্পানি
কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে প্রস্তাব দিয়ে, সংস্থাটির সম্মতির পর রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি)- এর কাছে শাখা পরিচালনার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে।

ইনফোগ্রাফ: টিবিএস
বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ৬,২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ৯টি বিদেশি কোম্পানি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ দেশে কৃষি আধুনিকায়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে প্রস্তাব দিয়ে, সংস্থাটির সম্মতির পর রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি)- এর কাছে শাখা পরিচালনার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে।

আরজেএসসি সূত্রে জানা গেছে, চারটি চীনা কোম্পানি যথাক্রমে ৭০০ কোটি টাকা; ১,২০০ কোটি টাকা; ১,০০০ কোটি টাকা এবং ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক।

Video Player is loading.
Pause

Unmute

Close PlayerUnibots.in
জাপানের দুটি কোম্পানি ৮০০ কোটি টাকা এবং ৩৫০ কোটি টাকা এবং দুই কোরিয়ান কোম্পানি ৫৫০ কোটি ও ৬৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায়। এছাড়া, তাইওয়ানের একটি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায় ৪০০ কোটি টাকা।

আরজেএসসি অফিসের রেজিস্ট্রার শেখ শোয়েবুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এসব বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের উৎপাদন পরিচালনার জন্য এ বছরের বিভিন্ন সময়ে আবেদন করেছে। সেই আবেদনগুলো পর্যালোচনা করছে আরজেএসসি। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসবের অনুমোদন দেওয়া হবে।

তবে সেক্ষেত্রে একটু সময় প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

"বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কৃষি অর্থনীতির উন্নয়নের ফলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়," বলেন শোয়েবুল আলম।

৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চীনা কোম্পানি জুহাচুন লিমিটেড প্রাথিমিকভাবে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চেয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত ফয়সাল শহীদ সুমন টিবিএসকে জানান, কোম্পানিটি প্রায় ৮ ধরনের কৃষিযন্ত্র ও এসব যন্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরি করে।

ঢাকার কাছাকাছি একটি ইকোনোমিক জোনে তিন একর জায়গা চেয়েছে কোম্পানিটি। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আগামী বছরের শুরুর দিকে কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু হবে এবং একই বছরের শেষের দিকে বা ২০২৫ সালের শুরুর দিকে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে। উৎপাদন কারখানা চালু হলে এতে প্রায় ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে জানান তিনি।

ফয়সাল আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটি যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ উৎপাদনের পর শুধু বাংলাদেশেই তা সরবরাহ করবে না; ভরত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, নেপাল, শ্রীলংঙ্কাসহ আরও ৭টি দেশে এসব যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম যেমন- কৃষি যানবাহন, ট্রাক্টর, কম্বাইন হার্ভেস্টার, ট্রাক্টর এটাচমেন্টস, লাঙ্গল, হ্যারো, ফার্টিলাইজার স্প্রেডার, সিডার, বেলার এবং ওয়াগন ট্রেলারও তৈরি করবে এই কোম্পানি।

আরজেএসসি'র একটি সূত্র জানিয়েছে ৯ কোম্পানির মধ্যে ৮টিই বাংলাদেশে যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ সরবরাহের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন দেশে রপ্তানির কথা উল্লেখ করেছে তাদের আবেদনে।

বিডা সূত্রে জানা গেছে, এসব কোম্পানির মধ্যে ৫টিই বিভিন্ন ইকোনোমিক জোনে কারখানা স্থাপনের জন্য জায়গা বরাদ্দ চেয়েছে। আর বাকি ৪টি রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় কারখানা তৈরি করতে চায়।

যদিও এখনি কোম্পানিগুলোর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে রাজি হয়নি সূত্র।

কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের বার্ষিক বাজার প্রায় ১১,০০০ কোটি টাকা।

দেশে কৃষিকাজে যেসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার হচ্ছে, তার বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে প্রতিবছর বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে বিদেশে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের ১১,০০০ কোটি টাকার প্রায় পুরো বাজারটিই বিদেশিদের দখলে। যন্ত্রপাতি আমদানি বাবদ এতো বড় অঙ্কের টাকা চলে যাওয়ার কারণে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে।

তবে কিছু স্থানীয় কোম্পানিও স্বল্প পরিসরে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করে থাকে।

বাংলাদেশ কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খন্দকার মঈনুর রহমান টিবিএসকে বলেন, কৃষি যন্তপাতি ও যন্ত্রাংশ উৎপদনে দেশে বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগের খবর অবশ্যই ভালো। তবে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে এটি দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ হবে না।

তিনি আরও বলেন, দেশে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ভালোমানের কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারে। সরকারের উচিত তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।

বিডার নির্বাহী সদস্য মোহসিনা ইয়াসমিন টিবিএসকে বলেন, কিছু বিদেশি কোম্পানি কৃষিযন্ত্র উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ করতে চায়। বিডার পক্ষ থেকে তাদেরকে সার্বিক সহযোগীতা করা হচ্ছে।

বিডার আরও একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, এই ৯ কোম্পানি দেশে কারখানা নির্মাণের পর উৎপাদনে গেলে, কৃষি অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি ৮ থেকে ১০ হাজার লোকের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এমএ সাত্তার মণ্ডল বলেন, "বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে বর্তমানে ৯৫ ভাগ জমি চাষ হচ্ছে।"

এরমধ্যে বালাইনাশক ব্যবহারে ৯০ ভাগ এবং ফসল মাড়াইয়ে ৭৫ ভাগ যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ, যেসব যন্ত্রপাতির দাম কম, সেসব যন্ত্রের ব্যবহার বেশি।

সার প্রয়োগে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে ৩ ভাগ, চারা রোপণে ১ ভাগ, ফসল কাটায় ১ ভাগ; আর এগুলোর বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি যেমন- জমি চাষ ও কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টরের শতকরা ৯৫ ভাগ, ফসল কাটার যন্ত্র- রিপার ৯৯ ভাগ, চারা রোপণ যন্ত্র ১০০ ভাগ, কম্বাইন হার্ভেস্টার ১০০ ভাগ ও বীজপণ যন্ত্র ৭০ ভাগ আমদানি করতে হয়। শুধু মাড়াই কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র থ্রেসার মেশিন ১০০ ভাগ দেশে তৈরি হয়।

এমএ সাত্তার মণ্ডল জোর দিয়ে বলেন, "দেশে এসব যন্ত্র উৎপাদিত হলে দেশের কৃষি অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে। কারণ, বিদেশি মেশিনগুলো এখন যে দামে কেনা হয়, দেশে উৎপাদন হলে এর চেয়ে কম দামে কেনা যাবে। তখন ট্যাক্স ভ্যাট অনেকটাই কমে আসবে।"

এছাড়াও সরকারের রাজস্ব আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও উল্লেখ করেন এই কৃষি অর্থনীতিবিদ।

Website