Indian University Alumni Association Bangladesh

Indian University Alumni Association Bangladesh

All Bangladeshi Student from Indian Universities

বিমানবন্দরে কৃত্রিম পা খোলায় PM Modi-কে জানালেন Sudhaa, ক্ষমা চাইল CISF 24/10/2021

বাংলাদেশ আর ভারতের কালচারের পার্থক্য

বিমানবন্দরে কৃত্রিম পা খোলায় PM Modi-কে জানালেন Sudhaa, ক্ষমা চাইল CISF

এই ঘটনায় অভিনেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছে সিআইএসফ।

বিমানবন্দরে কৃত্রিম পা খোলায় PM Modi-কে জানালেন Sudhaa, ক্ষমা চাইল CISF
নিজস্ব প্রতিবেদন: বিমানবন্দরে কৃত্রিম পা খুলে পরীক্ষা করেছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা। কেন প্রতিবার এমনটা হবে, সেনিয়ে নেটমাধ্যমে সরব হন নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী সুধা চন্দ্রন (Sudhaa Chandran)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে উপযুক্ত পদক্ষেপও দাবি করছেন। এই ঘটনায় শোরগোল পড়তেই তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়েছে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (CISF)। তারা জানাল, কেন মহিলা নিরাপত্তারক্ষী সুধা চন্দ্রনের কৃত্রিম পা খুলতে বলেছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইনস্টাগ্রামে ভিডিয়োবার্তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুধা (Sudhaa Chandran) অভিযোগ করেছেন, আমি পেশাদার অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী। কৃত্রিম পায়ে নেচে ইতিহাস তৈরি করেছি। গর্বিত করেছি দেশকে। প্রতিবার পেশাদারি কাজে যাওয়ার পথে বিমানবন্দরে আমাকে আটকানো হয়। আমি সিআইএসএফ আধিকারিকদের অনুরোধ করি, আপনারা ইটিডি করুন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার কৃত্রিম পা খুলতে বাধ্য করেন। প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর আবেদন, এটা কি সম্ভব মোদীজি? এটাই কি দেশ চায়? এই সম্মানই কি একজন মহিলার কাছ থেকে আর এক মহিলার প্রাপ্য? প্রবীণ নাগরিকদের মতো বিশেষ কার্ডের ব্যবস্থা করা হোক।

এই ঘটনায় অভিনেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে সিআইএসফ জানিয়েছে,''ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতেই কৃত্রিম পা খুলতে বলা হয়। কেন সুধা চন্দ্রনকে পা খুলতে বলেছিল মহিলা নিরাপত্তা কর্মী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।''

দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছেন সুধা চন্দ্রন। তবে তাঁর কেরিয়ারের পথে তা বাধা হয়নি। শুধু নৃত্যেই নয় টেলিভিশনেও জনপ্রিয় মুখ তিনি। তাঁর জীবন নিয়ে তেলুগু ছবি 'ময়ূরী'র জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন।

https://zeenews.india.com/bengali/entertainment/cisf-apology-to-actress-sudhaa-chandran-for-stopping-over-prosthetic_409222.html

বিমানবন্দরে কৃত্রিম পা খোলায় PM Modi-কে জানালেন Sudhaa, ক্ষমা চাইল CISF এই ঘটনায় অভিনেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছে সিআইএসফ।

26/05/2021

নজরুলের শব্দের মহফিলে: আরবী-ফার্সী , উর্দু হিন্দী শব্দের ব্যবহারও করেছেন

জাফর ওয়াজেদ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার সাহিত্যকর্মে আরবী-ফার্সী শব্দের বেশ ব্যবহার করেছেন। অবশ্য তার আগেও বেশছিু লেখক কবি আবরী-ফার্সী শব্দ ব্যবহার করেছেন। তবে তা সীমিত, সীমাবদ্ধস্তরে। নজরুল তার পদ্যে-গানে আরবী-ফার্সী শব্দের ব্যবহার অন্যদের তুলনায় বেশি করেছেন। ওই দুটি ভাষা শুধু নয়, উর্দু ও হিন্দী শব্দের ব্যবহারও করেছেন। তার ব্যবহৃত অনেক শব্দই বাংলা ভাষায় নিজস্ব সম্পদে পরিণত হয়েছে। আবার কিছু শব্দ আছে কোনভাবেই বাংলার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে অব্যবহৃত থেকেই গেছে। কবি নজরুল শব্দের ‘মহফিলে’ হরেক ‘কিসিমের’ শব্দের ‘ঝুলঝাপ্পুর’ দেখিয়েছেন বলা হয়। শব্দের রঙ্গনির্মাণ যেমন করেছেন, তেমনি কঠিন কঠিন আরবী-ফার্সী শব্দের ‘গুলমোহরও বানিয়েছেন এবং উর্দু-হিন্দী শব্দ ব্যবহার করেছেন। সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, নজরুল মোল্লা-মৌলবীদের মতো ভাল আরবী-ফার্সী না জানলেও কাব্যের রস আস্বাদন করতে পেরেছিলেন। তার ব্যবহৃত অনেক শব্দই বাংলাভাষায় যুৎসইভাবে ঠাঁই নিয়েছে। আবার কিছু আরবী-ফার্সী শব্দ ‘সুকৌশলে’ ব্যবহার করলেও তা বাংলা হয়ে ওঠেনি। বরং আরবী-ফার্সীই রয়ে গেছে। ‘হিম্মত, জাহান্নাম, ইমান, জানাজা, আসমান, ইনসান, আহাদ, মুর্দা- ইত্যাদি নজরুল ব্যবহৃত শব্দ এখন পুরোদস্তুর বাংলা। অবশ্য বাংলার বাগবিধিকে নজরুল উপেক্ষা করেননি, বরং সুসামঞ্জস্যভাবে আরবী-ফার্সী শব্দের বিন্যাস ঘটিয়েছেন। তাই লিখেছেন, নীলিম প্রিয়ার নীলা গুলরুখ লাজুক নেকাবে ঢাকা’ ‘ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত।’
নজরুলের আরবী-ফার্সী শব্দের ব্যবহার নিয়ে অনেক সমালোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। প্রমথ চৌধুরী বাংলাভাষার জাতপাত সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বাংলা সাহিত্য থেকে আরবী-ফার্সী শব্দ বহিষ্কৃত করতে সেই জাতীয় সাহিত্যিকই উৎসুক যারা বাংলাভাষা জানে না।’ দীনেশ চন্দ্র সেন এ বিষয়টি গভীরভাবে অনুধ্যান করে বলেছিলেন, ‘গত পাঁচ-ছয় শ’ বছরের মধ্যে বাংলাভাষাটা হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের হইয়া গিয়াছে। মুসলমানের ধর্মশাস্ত্র ও সামাজিক আদর্শ অনেকটা আরবী ও ফার্সী সাহিত্যে লিপিবদ্ধ। সেই সাহিত্যের জ্ঞান তাহাদের নিত্যকর্মের জন্য অপরিহার্য। আমাদের যেমন সংস্কৃতের সহিত সম্বন্ধ, আরবী ও ফার্সীর সঙ্গে তাহাদের কতকটা তাই।’ এই গভীর ঐতিহাসিক ও সমন্বয়ের সূত্রটি কাজী নজরুলের ভেতরে ভেতরে কাজ করেছে। সে জন্য তিনি বহুভাষাবিদ গবেষক প-িত প্রবলের মতো একদিকে যেমন সংস্কৃত ছন্দ অধ্যয়ন করেছিলেন, তেমনি আরবী-ফার্সী ভাষা থেকেও প্রচুর শব্দ, ছন্দ ও সুর আনয়ন করে বাংলার কাব্যলক্ষ্মীকে মুসলিম ঢঙে সাজাবার প্রয়াসী হয়ে ইরানী ‘জওরে’ ভূষিত করতে চেয়েছিলেন। নজরুলের আরবী-ফার্সীর ব্যবহার যে ভাবসম্পদ বৃদ্ধির জন্য, হিন্দুর দেব-দেবীর নাম গ্রহণ সে হিন্দু মুসলমানের বিভেদ দূর করার জন্য সমকালীনরা তা উপলব্ধি করতে পারেননি। তাই ‘শনিবারের চিঠি’ থেকে শুরু করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত কিছুটা অসহিঞ্চু হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি নজরুল সতীর্থরাও তার আরবী-ফার্সী শব্দ প্রয়োগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করে। ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় এ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের অবসান ঘটানোর জন্য পত্রিকার সম্পাদক মিস্টার ওয়ার্ডওয়ার্থ সম্পাদকীয় লেখেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘কোন একটা ভাষায় অন্য ভাষার শব্দ প্রবেশ করবে কিনা; তা লেখকের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। যে সাহিত্যিকরা অন্য ভাষার শব্দ চয়ন করে নিজের ভাষার মধ্যে মিলিয়ে দিতে পারবেন তিনি তত বড় শক্তিশালী সাহিত্যিক। নিজের সাহিত্যে ভা-ার এমনি করে পূর্ণ করেছেন ইংরেজ সাহিত্যিকরা। তারা ডাকাতের মতো অন্য ভাষার সুন্দর শব্দগুলো এক রকম কেড়ে এনেছেন নিজেদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার জন্য।’ এটি প্রকাশের পর দেখা গেছে, সমসাময়িক অনেকের লেখায় হরহামেশা উর্দু ও ফার্সী শব্দ ব্যবহার শুরু হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের ভাব-বৈচিত্র্যের জন্যই বুঝি নজরুল হাবিলদার কবি থাকাকালীন পারস্যের কবি হাফিজের কবিতা অনুবাদে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন। এ যেন ‘বাংলার শ্যামকোয়েলার কণ্ঠে ইরানের গুলবাগিচার বুলবুলির বুলি’ তিনিই দেন। নজরুল বাংলার শাপলা-শালুক পদ্মের সঙ্গে বসরাই গোলাপ-জুঁই-নার্গিস একাকার করে দিয়েছেন। নজরুলের কবিতায় ‘খুন’ রক্ত অর্থে ব্যবহারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সে সবার জানা।
নজরুলের একটি হাসির গান আছে ‘রসঘন রসুনের গন্ধতুতো দাদা।’ এই গন্ধতুতো শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় গন্ধ সম্পর্কিত। অনেকটা পাড়াতুতো, জেঠাতুতো অনুসরণেই তৎসম শব্দের সঙ্গে আটপৌঢ়ে শব্দ ‘তুতো’র মিতালি ঘটিয়েছেন নজরুল। এই ‘তুতো’ এসেছে কোত্থেকে, সে প্রশ্ন জাগবেই। মূলত তুতো শব্দটিই এখানে প্রত্যয়ে পরিণত হয়েছে। যেমন খুল্লতাত খুড়াতো বা খুড়তুতো। কিংবা খুল্লতা উয়া খুড়তাতুয়া, খুড়তুতুয়া. খুড়তুতো। আর তুতো সহজেই পাড়া সম্পর্কীয় বিষয়ে জড়িয়ে হয়ে গেছে পাড়াতুতো। নজরুল তাকে গন্ধতুতো করে বেশ চমৎকার একটি শব্দে বাংলা শব্দ ভা-ারকে সমৃদ্ধ করেছেন। নজরুল ব্যবহৃত আরেকটি শব্দ হনুকরণ। অর্থ হচ্ছে হনুমান বা বাঁদরের মতো অনুকরণ (অনুকরণ’ এর ব্যঙ্গাত্মক হনুকরণ-হনুমানের মতো করণীয়)। নজরুলের বাজেয়াফত হওয়া প্রথম গ্রন্থ প্রবন্ধের যুগবাণী। তাতে ‘জাতীয় শিক্ষা’ শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখ রয়েছে ‘যাহাদিগকে মুখ ভেঙচাইয়া বাহির হইয়া আসিয়াছি, আবার তাহাদেরই হনুকরণ করিতেছি।’ নজরুলের ফণীমনসা কাব্যগ্রন্থের ‘সাবধানী ঘণ্টা’ কবিতার একটি লাইন ‘লাল বাংলার হুমকানি, ছি ছি, এত অসহ্য ও মা’। হুমকানি এসেছে ধমকানির সাদৃশ্যে। ধমককে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া গেলেও হুমকানিকে সমীহ করতেই হয়, না হলে যে জীবন রাখা দায়। অবশ্য এই হুমকানি শব্দটি বাঙালীর ব্যবহারের ধোপে টেকেনি। হুমকিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে হুমকানির ভয়ে।
সাপ্তাহিক ‘সওগাত’ পত্রিকায় ১৯২৩ সালে লেখা ‘চানাচুর’ শীর্ষক নিবন্ধে নজরুল লিখেছিলেন, ‘তখন কি আর ফোকলাদন্তী চুপসায়িত ককোল অস্টাবক্রীয় কটি বুড়োদের ওরা বিয়ে করতে চাইবে?’ এখানে চুপসায়িত অর্থ চুপসে গিয়েছে এমন, অথবা তোবড়ানো। অনেকটা তরলায়িত। আলুলায়িত ইত্যাদির সাদৃশ্যে নজরুল লিখলেন চুপসায়িত। প্রকৃত বাংলা চুপসা ধাতুর সঙ্গে ইতপ্রত্যয়যোগে সংস্কৃতায়নে বাক্যটিতে নজরুল এক ধরনের রসায়ন ঘটিয়েছেন। সাধু ‘অস্টাবক্রীয়’-এর চেয়ে অসাধু ‘ঢ়ুপসায়িত’-এর ওজন ভারি। সংস্কৃতের সঙ্গে আছে ইঙ্গায়ন। যেমন কেলেঙ্কারি+আউস= কেলেঙ্কারিয়াস। ‘ধূমকেতু’তে লিখেছেন নজরুল ‘কেলেঙ্কারিয়াস কা-’! আবার ‘বাঁধনহারা’য় লিখেছেন, ‘আমি হতে তোর এ বর্ষাস্নাতা সাগর সৈকতবাসিনী করাচীর বর্ণনাটা কি রকম কবিত্বপূর্ণ ভাষায় করতাম অবদান কর, যদিও বর্ণনাটা আন্দাজিক্যালি হতো।’ আন্দাজ ফার্সী শব্দ, তার সঙ্গে ইংরেজী ইক্যালি যুক্ত করে নতুন শব্দ তৈরি করেছিলেন নজরুল।
নজরুলের কবিতায় আছে, মদলোভীর মৌলভী কন, -পান করে এই শরাব যারা।’ মোলবীরূপধারী মৌলোভী অর্থাৎ মদলোভী ব্যক্তি (মৌলভী শব্দের ধ্বনি সাদৃশ্যে)। নজরুল মৌলোভী শব্দটিকে যুৎসই প্রয়োগ করেছেন। বারোয়ারি সাদৃশ্যে নজরুল লিখেছেন মালোয়ারী। ম্যালিরিয়া রোগের নয়া নামকরণ যেন। ‘বাঘা শীত কাঁপি থরথর, যেন গো মালোয়ারী।’ এভাবে নজরুল সেই ট্রাডিশন সমানে চালিয়েছেন। নজরুল আরবী-ফার্সীর অপ্রচলিত শব্দ ব্যবহার করেছেন অনায়াসে। এ যে তার একক কৃতিত্ব। ‘সুবে-উম্মেদ’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘তোমাদের এই ইখাওয়াৎকে কেন্দ্র করিয়া আমাদের অন্তরের সত্য স্বাধীন শক্তিকে যেন কোনদিন বিসর্জন না দিই।’ আরবী শব্দ ইখাতওয়াৎ অর্থ ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি। আরবী আখ অর্থ ভাই। আখাওয়াৎ-ইখাওয়াৎ দুই উচ্চারণই করা হয়। বাংলায় এ শব্দটি খাপ খাওয়ানো যায়নি বলে নজরুলের পরে তার কোন ব্যবহার মেলে না। নজরুলের কবিতার লাইন ‘কিসমিস ছেঁচা অধর আজিকে আলাপ শখতসর।’ শেষোক্ত শব্দটির অর্থ সংক্ষিপ্ত, ভাষা ফার্সী। এর অস্তিত্ব রক্ষা হয়নি বাংলা শব্দ ভা-ারে। ঈদ মোবারক কবিতায় ‘সুজদা এনেছে সুখে ডগমগ মুকুলীমন’ লাইনের প্রথম শব্দটি অর্থ হচ্ছে শুভবার্তা বা সুসংবাদ। আবার সুবেহ উন্মেদ রচনায় দেখি ‘পাহাড়ি তরুর শুকনো শাখায় গাহে বুলবুল খোশ এলান। এই শেষোক্ত শব্দটির অর্থ মধুর স্বর। বুলবুল পাখির মধুর স্বর বোঝাতে এই ফার্সী শব্দের ব্যবহার। ঈদের চাঁদ কবিতায় লিখেছেন, ‘জুলুমের জিন্দানে জনগণ আজাদ করতে চাই। জিন্দান অর্থ কারাগার। নজরুলের আরেক কবিতায় আছে, না শিখে আদব এলি বেহেশতে/ কোন বন হতে রে মনহুশ। এই আরবী শব্দটির অর্থ হতভাগা। নজরুলের গদ্যে আছে, ‘বাপ বলত হালার পো, মা আদর করে বলত, আফলাতুন। এই আফলাতুন অর্থ দুর্দান্ত বা জাঁহাবাজ। এ ছাড়া ব্যবহৃত হয় পরিবর্তিত অর্থে। নজরুলের গদ্যে এমন শব্দের ব্যবহারও দেখা যায়।
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের মোহররম কবিতায় আছে, ‘শমশের নাও হাতে, বাঁধো শিরে আমামা। এই আমামা অর্থ পাগড়ি। ফার্সী এই শব্দটি বাংলার পাগড়ির নিচেও ঠাঁই পায়নি। মূলত বাঙালীর পাগড়ি প্রিয়তা যৎসামান্য থাকায় এ ধোপে টেকেনি। নজরুল অনূদিত হাফিজের রুবাইয়াতে মেলে, ‘মুলতুবি আজ সাকী ও শরাব/ দীওয়ানে হাফিজ জুজদানে।’ এই শেষ শব্দটির অর্থ মূলত- গ্রন্থ আবরণী বা মলাট। জুজদানে বাংলাভাষার কোন দানছত্রের ভেতরও আশ্রয় নিতে পারেনি। নজরুল ব্যবহৃত অনেক শব্দই না বোঝা থেকে গেছে। আবার সে যুগে নতুন মনে হয়েছে এমন শব্দ এ যুগে বাংলায় ঠাঁই পেয়েছে। তবে অনেক শব্দের অর্থ বুঝে নিতে হয় আন্দাজক্যালি। এসব শব্দের তাৎপর্য জানা থাকালে কাব্যশব্দ তৃপ্ত হয়। নজরুল আরবী-ফার্সী শব্দের পাশাপাশি উর্দু-হিন্দী-ইংরেজী এবং সংস্কৃত শব্দেরও ব্যবহার করেছেন। যখন যেখানে যা পেয়েছেন তা আত্মস্থ করে নতুন উদ্ভাসনে বাংলা গদ্যে-পদ্যে সংযোজন করে শব্দের ভা-ারকে সমৃদ্ধ করেছেন। দজ্জাল, জালিম, খুনিয়াদের বিরুদ্ধে এই শব্দাস্ত্র ব্যবহার করেছেন। হায়দরি হাঁক হেঁকেছেন মোনাফেকদের বিরুদ্ধে। হিন্দু-মুসলিম দুই সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করে সরব ছিলেন নজরুল। শব্দ নিয়ে খেলেছেন ছন্দ তালে লয়ে তানে। নজরুল প্রাচ্য থেকে যেসব শব্দ তার সৃষ্টিশীলতার মধ্য দিয়ে অনুরণিত করেছেন, তাতে প্রাণের স্পর্শ প্রবাহিত করতে সব সময় সচেষ্ট ছিলেন। নজরুল কোন কেলেঙ্কারিয়াস ঘটনা ঘটাননি। যদিও সমালোচনার তোড়ে মাঝে মাঝে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের প্রতিও ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন।
নজরুল অভিধান শব্দসূত্রে মুসলিম সংস্কৃতির মনন-চিন্তনের দিকেই শুধু নয়, হিন্দু সংস্কৃতির গভীর, দ্যোতনার দিকে বাঙালীকে উন্মুুখ করে তুলতে পেরেছিলেন। শব্দের বাহারে কিংবা যুৎসই শব্দাঞ্জলি দিয়ে পাঠকের ‘দিল ওহি মেরা ফাঁস গেয়ি’ করেছেন। শব্দগুলো নজরুলের ভাষাতেই বালা যায় ‘আমাদের যেন জিজ্ঞেস করছে ‘হাঁদাইবানি অর্থাৎ তুমি কি সাদাইবা (সাঁ হাঁ)? অর্থাৎ ভেতরে ঢুইক্যা দেখবা। যদি তাই করণের খাইস থাকে তবে হীরা জহরত পাইবা।’

26/05/2021

কলকাতার বিখ্যাত জেভিয়ার কলেজিয়েট স্কুল চালু হচ্ছে ঢাকার বসুন্ধরায়

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুল কলকাতার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়। ... ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট ও পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত।

St. Xavier's Collegiate School
Students have excelled on the Indian Certificate of Secondary Education exam. In 2017 a student scored the highest marks, among 73,633 examinees, in the ISC exam. In 2013 Xavier was ranked by Digital Learning as the top school in West Bengal.

The school is divided into houses, all trained in synchronized marching. The tertiary section extended to coeducational Honors Arts and Science programs and Teacher Training while still on the high school campus. Xavier runs a large hostel for male students. The school opened a university division in 2017, at New Town, Kolkata.

In 2011 Xavier has judged the best eco-initiative school in Kolkata City for its preparation of compost manure for organic gardening. The school won a football tournament organized to promote outdoor exercise (so that youth did not become addicted to staying indoors with their computers). The traveling cricket team in 2016 won first place in a tournament in Leicester, England. In September 2016 the school hosted an exhibition of about 90 paintings of Mother Teresa to commemorate her canonization that month.
https://www.bashundharahousing.com/projects/bashundhara-international-school

26/05/2021

আমরা তর্ক করবো অবক্ষয়ের জন্য, স্বপ্নহীনতার জন্য : হাবীবুল্লাহ সিরাজী

আমরা তর্ক করবো অবক্ষয়ের জন্য, স্বপ্নহীনতার জন্য : হাবীবুল্লাহ সিরাজী
আমরা তর্ক করবো অবক্ষয়ের জন্য, স্বপ্নহীনতার জন্য : হাবীবুল্লাহ সিরাজী

গত বছর শেষের দিকে কবি শামীম রেজা ও কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মধ্যে ফেসবুক লাইভে কথোপকথন অনুষ্ঠিত হয়। সেই আলাপের সবটুকু আজ প্রকাশ করা হলো। হাবীবুল্লাহ সিরাজী সোমবার রাত ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ফরিদপুর জেলার রসুলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে হাবীবুল্লাহ সিরাজী প্রকৌশলী হলেও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন।


শামীম রেজা : শুভসন্ধ্যা, বুকের মধ্যে কুমার নদ, মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরায় পদ্মা-বুড়িগঙ্গার ঢেউ বহমান। নোনা জলে বোনা সংসারে মধুময় দুপুরে কিংবা প্রাতঃসন্ধ্যায় কিংবা সকালে যিনি ৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৪৮ সালে জন্মেছেন, ফরিদপুরের রসুলপুর গ্রামে। তিনি ষাটের অন্যতম প্রধান কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। পৃথিবীর এই দুর্যোগময় মুহূর্তে আপনাকে পেয়ে আমরা আনন্দিত। অভিবাদন হে, প্রিয় কবি।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী : ধন্যবাদ, কবি শামীম রেজা। সকলকে ভালোবাসা ও অভিবাদন জানাই। বিশেষ করে এই আয়োজনের সাথে যারা যুক্ত আছেন কবি শামীম রেজা ও তার বন্ধুবর্গ তাদের সকলকে আমার প্রীতি, শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।

শামীম রেজা : ওনার উল্লেখযোগ্য বই হলো:
কবিরাজ বিল্ডিংয়ের ছাদ
স্বপ্নহীনতার পক্ষে
সিংহদরজা
ছিন্নভিন্ন অপরাহ্ণ
সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না
সুগন্ধ ময়ূর লো
নির্বাচিত কবিতা
একা ও করুণা
মিশ্রমিল
বি ডি মিস্ত্রি ফেসবুক
সুবাসিত রক্তের গম্বুজ
শ্রেষ্ঠ কবিতা
কবিতা সংগ্রহ-১
কবিতা সংগ্রহ-২
এছাড়া এবার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ঈহা’। এই কবিতার বই থেকে আমরা কয়েকটি গান তৈরি করেছিলাম এবং কবিতার বইটি সুফিবাদী ঘরানার। উনি যেটা ধারণ করেন, পরাবাস্তবতা ও প্রতীকের ধারণা এখানে স্পষ্ট। অনুবাদগ্রন্থের মধ্যে আমরা যেটা পড়ে বড় হয়েছি, ‘রসুল হামজা তওফের কবিতা’। এই কাব্যগ্রন্থ ছাড়া আমরা রসুলকে জানতে পারতাম না, তার কবিতাকে জানতে পারতাম না। আর ‘মওলানার মন’ রুমীর কবিতা তিনি অনুবাদ করেছেন। আমার জানতে চাওয়া আছে হাফিজের কবিতা তিনি অনুবাদ করেছেন কি না সে জানতে চাওয়ায় আমি পরের গল্পে আসব। আর শিশুসাহিত্য লিখেছেন প্রচুর, কিশোরদের জন্যও লিখেছেন। উপন্যাসও লিখেছেন, গদ্য খুব সাবলীলভাবেই তার হাতে উঠে আসে। তিনি ‘আমার কুমার’ নামে যে বই লিখেছেন সে বইতে তিনি বেড়ে ওঠা নদের পলি-জলমাখা শৈশবের কথা বলেছেন। কবি ও অধ্যাপক মাসুদুজ্জামানকে বলেছিলেন প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি না হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার গল্প, সেই শিক্ষককে প্রণতি জানিয়েছেন। জাতির জনকের ঐতিহাসিক ফরিদপুর, পল্লীকবি জসীম উদদীনের ফরিদপুর, পৃথিবী বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের ফরিদপুর, হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ফরিদপুর। এই যে আপনার বেড়েওঠা, আর যন্ত্রকৌশল বিভাগের মতো জায়গা থেকে কিভাবে কবিতা লেখার মতো জায়গাটায় এলেন? প্রথমটায় হচ্ছে বাল্যকাল এবং তারপর অনুপ্রেরণা, আমরা জানতে চাচ্ছি।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী : ধন্যবাদ, শামীম রেজা। আপনি যেভাবে শুরু করলেন। এই শুরুর রেশ ধরেই বলতে চাই। আমার ‘ঈহা’ কাব্যগ্রন্থের পরেও এ বছর আমার আরেকটি বই বেরিয়েছে ‘জমিনে ফারাক নেই’। আপনি এত সুন্দর করে বইয়ের কথা বললেন এবং বেড়েওঠার প্রসঙ্গে কুমারকে নিয়ে আসলেন। কুমার একটি নদ, নদী নয়। ব্রহ্মপুত্র একটি নদ, কপোতাক্ষ একটি নদ, কুমার একটি নদ। ‘আমার কুমার’ এই গ্রন্থখানি কখনো লেখা হতো না, বাংলা একাডেমি থেকে নিয়মিত বের হয় ‘ধানশালিকের দেশ’ এবং এটা কিশোরদের ও আমাদের মধ্যেও জনপ্রিয়, উপভোগও করতাম। একবার ‘ধানশালিকের দেশ’ এর সম্পাদক মাহবুব আজাদ চৌধুরী আমাকে বলেছিলেন ঈদের ওপরে আমার অভিজ্ঞতা লিখতে। আমি টানা দশ বছর গ্রামে কাটিয়েছি, আমার জন্ম ফরিদপুর শহর থেকে দশ-বারো মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে রসুলপুর গ্রামে। সেই গ্রামেই কুমার নদ, কুমার নদটি পদ্মা থেকে নানা জায়গা হয়ে শেষ পর্যন্ত মাদারীপুর হয়ে গেছে। কুমারে পরে আসব, আমি মাহবুব আজাদকে কথা দিলাম লেখাটা দেবো কিশোর তরুণদের উপযোগী করে। লেখাটা লিখতে গিয়ে আমি উপযোগী ভাষা সৃষ্টি করতে গিয়ে হিমশিম খেলাম। বড় ও ছোটদের মাঝখানে যে ভাষা সেটার বাক্য তৈরি ও গঠন ভিন্ন। আপনি দেখবেন আমার অন্য গদ্যের সাথে ‘আমার কুমার’ এর শব্দ, বাক্য, যতিচিহ্নের অনেক পার্থক্য রয়েছে। এমন চেষ্টা করলাম এই ভাষার মধ্যদিয়ে আমি আমার শৈশব ও বাল্যকালকে তুলে ধরার। এটি আমার দশ বছরের খণ্ডকালীন আত্মজীবনী বলতে পারেন। যারা আত্মজীবনী লেখেন তারা নিজেদের একটি জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছেন বলে সাহস করে লেখেন কিন্তু সেই সাহস এখনো আমার নেই এবং এই লেখায় অনেক ভ্রান্তি আছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি আমাকে এক মহান লোক বলেছেন, ‘নিজেকে কখনো ছোট লেখক ভাববেন না এবং বলার সময় দ্বিগুণ করে বলবেন।’ তাই আমি এখন চারগুণ করে বলব, আমি অনেক অনেক বড় লেখক। লেখাগুলোকে চেয়েছিলাম আমার বাল্যকালের সাথে যুক্ত করতে। বলতে চেয়েছিলাম নদটি কেমন ছিল, গ্রামটি কেমন ছিল, মানুষজন কেমন ছিল। আজ থেকে প্রায় একাত্তর-বাহাত্তর বছর আগে আমার জন্ম সেসময়ে একটি গ্রামের অবস্থা কি হতে পারে। রাতে আলো বলতে হারিকেনের আলো, কুপির আলো, চাঁদের আলো, জোনাকির আলো। যাতায়াত বলতে ছিল নদীপথ। একটি বাজার, সে বাজারকে কেন্দ্র করে এর ব্যাপ্তি ঘটেছে। একটি দাতব্য চিকিৎসালয় আছে, একটি প্রি-প্রাইমারি স্কুল আছে, একটি কামারখানা আছে, একটি কুমোরের দোকান আছে, ময়রা দোকান আছে, পাশাপাশি বেনে দোকান থেকে শুরু করে মালাকারের দোকান। এই প্রজন্মের অনেকে মালাকার চেনে না, ওরা টোপর বানায়, শোলার কাজ করে। এই যে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে একটু হতদরিদ্র মুসলমানরা কৃষিকাজের সাথে যুক্ত ছিল। ক্ষৌরকর্ম থেকে বাকি যে কর্মযাপন তা সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকেরা করত। অসম্ভব সম্প্রীতির সাথে সবাই থাকত। ১৯৭১ সালে আমি আমার মাতুলালয়ে ছিলাম সেখানে ব্যক্তিগত যত আক্রোশই থাকুক না কেন সাম্প্রদায়িক আক্রমণ কেউ কাউকে করেনি। বরং অনেক মুসলিম পরিবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আশ্রয় দিয়েছে। বলতে পারেন আপনি এটা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলছেন। না, এটা আমার নিজের দেখা। এই পরিবেশ থেকে আমার লেখালেখির সূত্র। আমি জন্মেছি মাতুলালয়ে এবং মা নানার একমাত্র কন্যা হওয়ার ওখানে বাল্যকাল কেটেছে। বাবার চাকরি সূত্রে অনেক জায়গায় গিয়েছি। লেখালেখি ব্যাপারটি মাথায় না থাকলেও বাল্যকালে তার উপকরণ ছিল প্রচুর। তাই এই পরিবেশ, প্রকৃতি, এই নদটি আমাকে লেখালেখির দিকে নিয়ে গিয়েছে। আমার লেখালেখি যেভাবে শুরু করেছিলাম একটু বর্ণনাত্মক, কিছু abstrac বিষয়ও আছে। আমি ন্যারেটিভ কবিতা লেখার পাশাপাশি রাজনৈতিক কবিতাও লিখেছি। কিন্তু এখন আমি ফিরে গেছি আগের জায়গায়। শব্দের ব্যবহার, এমনকি একটি যতিচিহ্নের ব্যবহারও যাতে পরিমিতভাবে করতে পারি সেদিকে খেয়াল রেখেছি। আমার অনেক কমতি আছে তবে একটি জিনিস আমি বলতে পারি আমি কখনো ফাঁকি দেইনি। না ব্যক্তিগত জীবনে, না বন্ধুত্বে, না সম্পর্কে, না কবিতায়। আমি কখনো আমার দেশ ও জন্মভূমির সঙ্গে অসৎ আচরণ করি নাই, ফলে কখনো আমি বঙ্গবন্ধু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারিনি। আমার যা কিছু সব জন্মভূমির জন্য, বঙ্গবন্ধুর জন্য। যদি আপনারা ধরে নেন এটা আমার বেশি আবেগ-উচ্ছ্বাস, তবে তাই। ‘সুবাসিত রক্তের গম্বুজ’ বইটি উনাকে নিয়ে লেখা, একটু আড়াল থেকে লেখা।

শামীম রেজা : এই যে আপনার সততা, দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি, লেখার প্রতি, বঙ্গবন্ধুর প্রতি। তার জন্য আপনাকে অভিবাদন, হে কবি। মহামারি ও যুদ্ধ দুটি আপনার অভিজ্ঞতার মধ্যে, এই দুই জীবনের অভিজ্ঞতা যদি আমাদের ভাগাভাগি করেন। বিশেষ করে, আপনার বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আপনার জন্ম, একাত্তরের যুদ্ধ আপনি দেখেছেন। এই যে আমরা মহামারির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, আপনি কতটা আশাবাদী?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী : এই যে মহামারিতে আমরা নিমজ্জিত, এটা যুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর। যুদ্ধে অন্তত আমরা বুঝতে পারি আমাদের প্রতিপক্ষ কে এবং আত্মরক্ষায় কি কি করতে হবে। কিন্তু এই যে মহামারি আমাদের তছনছ করে দিয়েছে, আমাদের পরিবারের মধ্যেও প্রবেশ করছে এর মতিগতি বোঝা মুশকিল। প্রাদুর্ভাব এমন একটি শব্দ যা, দূর হতে চায় না, রেশ রেখে যায়। আর আমি অন্তত বিশ্বাস করি প্রতিটি যুদ্ধের পরে একটা নতুন সৃষ্টি হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে আমরা সারা পৃথিবীর অবস্থানগত দিকটি দেখেছি। বিশেষ করে ইউরোপের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন রেখা তৈরি হলো। যুদ্ধের পরে বিশেষ করে সাহিত্যে যে নতুন ধারা, এই উপমহাদেশেও ত্রিশের দশকটি পাই যুদ্ধপরবর্তী সময়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফসল সাম্রাজ্যবাদী বেনিয়াদের আত্মসমর্পণ এবং এই ভারত বিভাগ। দেশবিভাগ আমাদের কাছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর ছিল। পাঞ্জাব ও বাংলার যে সকল মানুষ এই রক্তক্ষয়ী অবস্থার মধ্যদিয়ে গেছেন তারা এখনো তাদের ক্ষত শুকাতে পারেনি। কিন্তু এর মধ্যদিয়ে অর্জনের সীমা ও আহরণের সীমা বিস্তৃত হয়েছে পৃথিবীতে। এখন মহামারির কথা যদি বলি স্প্যানিশ ফ্লুতে প্রচুর প্রাণ ক্ষয় হয়েছে কিন্তু এই মহামারির শেষটা তো এখনো আমরা জানি না। এই মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকবে আমরা কিন্তু জানি না। এই যে মহামারি সারা বিশ্বকে যেভাবে খাবলে ধরেছে হয়তো তার অর্থ ভয়াবহ। ভয়াবহ এই অর্থে এটা পরবর্তী সময়ে আমরা যদি নতুন একটি নতুন পৃথিবীতে বসবাস করি তবেই মানবপ্রজাতি থাকবে। মানুষ তার মেধা ও বুদ্ধির জন্য সমস্ত প্রাণীর ওপর কর্তৃত্ব করছে, মানুষের চেয়েও দশগুণ শক্তিশালী প্রাণী থাকা সত্ত্বেও সে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে। এই পৃথিবীর অবস্থান গত কারণে হয়তো হাজার বা কোটি বছর টিকতে পারে, তখন প্রাণিজগতে একটি বিপ্লব আসবে। আর হয়তো এই মহামারি প্রাণিজগতের বিপ্লবের প্রথম সোপান। এবারের মহামারি কিন্তু পৃথিবীব্যাপী, আগের প্লেগ থেকে শুরু করে স্প্যানিশ ফ্লু কিন্তু অঞ্চলভিত্তিক ছিল। যে পিঁপড়া কাঁধে খাদ্যকণা তুলে তার ঘরে সংগ্রহ করছিল তাকেও কিন্তু আমি পদদলিত করে চলে গেছি। আর এখন এই ক্ষুদ্র খালি চোখে দেখা যায় না ভাইরাস আমরা যারা কথায় কথায় পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দেই তাদের কাত করে দিচ্ছে। নতুন জীব পৃথিবীকে শাসন করবে সেই ভাবনা আমি শুরু করেছি হয়তো কোটি বছর লাগবে। সেই কারণে পাথর থেকে শুরু করে বৃক্ষের শেকড় পর্যন্ত আমি যেন নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি। জড় ও চৈতন্যের concepভেঙে যাবে। জড়, চৈতন্যে রূপান্তর হবে। আমি সহজ করে বলি, এই যে মার্বেল পাথর প্রকৃতি থেকে রূপান্তর করে আপনি ঘরের মেঝেতে ব্যবহার করেন, এটাও কিন্তু রং বদলায়। মেঝেতে পড়া বিভিন্ন জিনিস শুষে নেয় এই যে প্রাণের অস্তিত্ব এটা সবকিছুর মধ্যে এসে যাবে। আর এসে গেলেই পৃথিবী নতুন রূপে প্রকাশিত হবে। এই কয় মাসে প্রকৃতি কিন্তু তার আগের রূপ ফিরে পেতে চলেছে। এখন একটি বড় প্রশ্ন আমাদের সামনে চলে এসেছে যে, জীবন আগে না জীবনধারণ আগে। যদি জীবন না থাকে কোনো কিছুই থাকে না, আর জীবন রাখতে জীবনকে ধারণ করতে হয়। এই খাদ্যবস্তু যা কিনা জড়, কিন্তু তা গ্রহণ করে আমি চৈতন্যে জেগে থাকি। চৈতন্য জেগে থাকার জন্য উপাদান আসছে জড় থেকে। নতুন উপাদান জড়ের কাছ থেকে আসছে চৈতন্যের জন্য, এটি একটি বড় সংকেত মানবজাতির জন্য। শামীম রেজা আপনি কবি, আপনার নিজস্ব একটা ভাবার দৃষ্টিভঙ্গি আছে, প্রত্যেকের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি আছে, আমারও আছে। আমি নিজের লেখালেখির প্রতি কখনো অবিশ্বাস রাখিনি, লেখালেখির ওপর রাখেনি। আমি অবাক হয়ে গেছি আমি একসাথে ত্রিশটি করোনাভিত্তিক, জীবনভিত্তিক, মৃত্যুভিত্তিক কবিতা লিখে ফেলেছি। আমি এখন ‘মুহূর্ত’ নামে সিরিজ লিখছি, আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি যে আমি কিভাবে লিখছি! আমি দৈবে বিশ্বাস করি না কিন্তু আমি নিজের উপর আস্থাহীনতার ভিতর দিয়ে আস্থা খোঁজার চেষ্টা করছি এবং সেটাই হবে আমাদের জন্য বড় বিষয়। মহামারি বিষয়টি কিন্তু এত সহজভাবে দেখার মতো না। এটা ট্রাম্পের হুট করে প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়া না, এটা নর্থ কোরিয়ার হুমকি না, এটা উহানের অল্প দিনের ব্যাপার না। এ চক্র বিশাল, এ চক্রে মানবজাতির ইতিহাস নতুনভাবে, নতুন বৈচিত্র্যে, নতুন উপাত্তে, কি ধ্বংসে বা কি সৃষ্টিতে নির্লিপ্ত হবে। তারই বীজ রোপিত হচ্ছে। তাই আসুন, আমাদের চলাচলের অংশটুকু আমরা সহমর্মিতায় প্রশস্ত করি।

শামীম রেজা : অনেক ধন্যবাদ, আপনি বিজ্ঞানকে সম্পৃক্ত করে আমাদের যাপিত জীবনের অংশটাকে বর্ণনা করেছেন। কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন ছিল, ‘বিপ্লব ঘরে বসত করে মতোর ধারণা আমি যে কতবার উপস্থিত করেছি’। কবি কি বাক্যটার একটু বিস্তার ঘটাবেন?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী : আমার ঐ লেখাটির নাম ‘বিপ্লব বসত করে ঘরে’ এবং এটি খুব আক্ষেপের লেখা। এটি বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে লেখা বই। উৎসর্গলিপির শেষ দুটি লাইন হলো, ‘এভাবেই একদিন দেশের নাম বাংলাদেশ হয়ে গেলে, মানুষের নাম হয় শেখ মুজিবুর রহমান।’ জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে পূর্ব-পশ্চিমের যে দ্বন্দ্ব তাতে আমরা বাধ্য হলাম বিভক্ত হতে। এই যে প্রেক্ষাপটটি আমরা রচিত করে যাচ্ছি তা আমাদের দিয়ে রচিত করতে বাধ্য করা হয়েছে। যার ফলাফল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। সারা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আমাদের জাতীয়তাবাদের ভিতর দিয়ে আন্তর্জাতিকতায় প্রবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা পুবেও নাই, পশ্চিমেও নাই। মহাপশ্চিমে যিনি বসে আছেন তিনি তো কামানদাগা ছাড়া আর সমুদ্রে তরি ভাসানো ছাড়া কিছুই বোঝে না। আর ইউরোপ! যাকে আজ থেকে চারশো বছর আগেও লুটেরা, বর্বর ছাড়া আর কিছু ভাবা যেত না। এই সবকিছুর মধ্যেও যেটা দুঃখজনক যে আজকে মাক্স বা এরকম ব্যক্তিদের মুখেও শ্যাওলা পড়তে দেখা যায়, ধূলি পড়তে দেখা যায়। ইশ্ কি ধুলো, মাকড়সার জাল মাক্সের গালে! এই যে নিজের প্রতি ধিক্কার ও ঘৃণা এটিই ‘বিপ্লব বসত করে ঘরে।’ সেই বিপ্লবকে আমি নিজের থেকে নতুন করে শুরু করতে চাই। এই গ্রন্থে তৎকালীন রাজনৈতিক অ্যালিগ্যারি ছিল।

শামীম রেজা : আপনি অতীতে এবং ভবিষ্যতে থাকেন এটা আপনার বিভিন্ন লেখায় আমি পেয়েছি। ফলে আমি পেছনে যাচ্ছি এবং সামনে আসছি। এবার আবার পরিবার এবং বাল্যকালে ফিরে যাব, সেই কথা শুনব।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী : শামীম, আমি কুমারের পাড়ে ছিলাম, এবার পদ্মা আর বুড়িগঙ্গায় যাব। ১৯৫৯ সালে আমি ফরিদপুর শহরে আসি বিদ্যাশিক্ষার জন্য। বিদ্যাশিক্ষা বইয়ের শব্দ ব্যবহার করলাম কারণ আমার শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় সুধন্য চন্দ্র ঘোষ বলেছেন, একটি ধর্ম শিক্ষা, যার সাথে বিদ্যাশিক্ষাও যুক্ত। আরেকটি শিক্ষা, আপন শিক্ষা, নিজ শিক্ষা। এটি তোমার নিজের, নিজে তৈরি করবে পরিপার্শ্ব দিয়ে। গ্রামে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আছে, ফলে বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন ক্লাস সিক্স থেকে শহরে পড়ানোর জন্য। উনি শহরে একটা ঘর ভাড়া করলেন, বাইশ টাকা ভাড়ার একটি ঘর। ফরিদপুর জেলা স্কুলে পড়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু তখন ক্লাস সিক্সে সিট না থাকায় ফরিদপুর হাইস্কুলে ভর্তি হলাম। ক্লাস সেভেনে ফরিদপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হই এবং S.S.C করি, বিজ্ঞান শাখায়। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি করেছি, বিজ্ঞান শাখায়। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পরে উচ্চশিক্ষা দরকার। এখন যেমন তখন তো এত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, অনার্স ছিল না। শুধু সাধারণ B.A. কিংবা Bachelor of Science কিংবা bachelor of artsকরা যেত। পরিবার যেহেতু নিম্নমধ্যবিত্ত, আয়ের ব্যবস্থা সামান্য ভূমি আর বাবার চাকরি। ফলে তারা চান তাদের প্রথম সন্তানকে উপার্জনক্ষম করতে। তার জন্য তারা চায় হয় ডাক্তার হও, না হয় ইঞ্জিনিয়ার হও। না হয় অন্য চাকরি করো। তাই বাবা চাইলেন ঢাকায় গিয়ে বিজ্ঞান পড়ি। এবার আমি পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় আসলাম একা, এক বন্ধুর সঙ্গে। এখনকার মতো বাবা-মা যেমন ক্লাস ওয়ান থেকেই সন্তানের সাথে সাথে যাওয়া আসা করে আমাদের সময় তো তেমন না। জীবনে শুধু একবার মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় বাবা সাথে এসেছিলেন, এমনকি আমার স্কুলের ভর্তি ব্যাপারটাও আমার এক কাজিনের সহযোগিতায় করেছিলাম। ঐদিন বাবা আমার জন্য একটা ডাব নিয়ে এসেছিলেন, এটা খুব আনন্দের। আমি যখন ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসি বাবা আমার জন্য একটা চাদর কিনেছিলেন এবং আমি সেদিন খুব আপ্লুত হয়েছিলাম। তিনি গত হয়েছেন ১৯৯২ সনে, এই উপলক্ষ্যে আমি তাকে স্মরণ করি যে আমি পড়তে যাচ্ছি আর আমার বাবা আমার জন্য একটা চাদর কিনে দিয়েছেন। আমার লেখালেখির অংশটুকু যেদিন কুমারকে সঙ্গে নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে বুড়িগঙ্গার পাড়ে আসলাম সেদিন থেকে এক অর্থে শুরু বলতে পারো।

শামীম রেজা : আমরা আবেগের অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলাম বাবার চাদর কিনে দেওয়ার গল্প থেকে। সবারই এইরকম কিছু গল্প থাকে আর এটা থেকেই সুখ-দুঃখের আদান প্রদান ঘটে। আমার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু নিখিলেশ রায় একটি প্রশ্ন বা মতামত রেখেছে তা থেকেই বলছি, অন্যান্য ভাষার জনগোষ্ঠীর বই প্রকাশের জন্য বাংলায় এবং তাদের ভাষায় তার জন্য একটা নির্দিষ্ট কর্নার থাকা দরকার বা প্রাধান্য দেওয়া দরকার। এখনই আমাকে বাংলা একাডেমির প্রসঙ্গে ঢুকে পড়তে হচ্ছে, কারণ আপনি সেই চেয়ারে অধিষ্ঠিত যেখানে আমরা আপনাকে প্রশ্ন করতে পারি। আপনার চিন্তায় এরকম কোনো প্রকল্প আছে কি না?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী : বিষয়টি যদি মোটাদাগে দেখি তো তবে একরকম দাঁড়াবে। এই ব্যাপারটি নীতি নির্ধারণী ব্যাপার এবং এর সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যুক্ত। আমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে এটুকু বলতে পারি যদি কেউ আগ্রহ নিয়ে আসেন এবং বাংলা ভাষায় ও তাদের ভাষায় গ্রন্থ প্রণয়ন করতে চান, এখানে যৌথভাবে কথাটা এজন্য বলছি নীতিমালার কারণে। নীতিমালা অনুযায়ী যারা বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন তাদের বই ছাপানো হয় বাংলা একাডেমি থেকে। তবে এটুকু বলা যায় আমরা আমাদের দিক থেকে সার্বিক সহযোগিতা করব এবং আপনারা জানেন এখানে গারো ভাষা, মণিপুরী ভাষা নিয়ে কাজ হয়। আমরা চাচ্ছি আপনারা প্রস্তাব নিয়ে আসুন এবং আমরা সেই কাজটি করব। এই বাংলাদেশে বিভিন্ন ভাষাভাষীর যারা রয়েছেন, এমনকি যারা উর্দু ভাষার লোক রয়েছেন তাঁদেরকেও স্বাগত জানাই, আসুন আমরা আছি। আপনাদের লেখা নিয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে হয়তো চেষ্টা করতে পারব কিন্তু এককভাবে পারব না। প্রবন্ধের বই হয়তো এককভাবে আমরা করতে পারব। কিন্তু সৃজনশীল লেখা যেমন, কবিতা, গল্প আমরা পারব না। আপনারা আমার ভাই, আপনারা আমার বন্ধু, আপনারা আমার আত্মীয়, আপনারা আমার গুরুজন। আসুন সবাই মিলে আমাদের ভাষার সঙ্গে পৃথিবীর সবার ভাষার প্রতি যেন শ্রদ্ধাশীল হই। এই প্রসঙ্গে একটু যুক্ত করি, বিভিন্ন ভাষায় যারা কাজ করছি তাদের প্রধান সমস্যা হলো কিছুদিন পরে খেই হারিয়ে ফেলেন। আমি বাইরে কাজ করতে গিয়েও দেখেছি। আমরা যে অবস্থান থেকে কাজগুলো করতে চাই এগুলো নিয়ে একটি দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনা থাকে। যেমন, অনুবাদ নিয়ে আমরা নতুনভাবে ভাবছি। বাংলা একাডেমি ভাবতে শুরু করেছে বাংলা কবিতার আবৃত্তি নিয়ে। অনুবাদ নিয়ে আমাদের একটি প্রকল্প আছে। আর বাংলা কবিতা কেন, কিভাবে আমি পাঠ করব, বাংলা একাডেমি এ ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের কথা ভাবছে। আসুন আমরা বাংলা একাডেমি নিয়ে নতুনভাবে কাজ করি আগামী দিনে আমাদের সন্তানেরা যাতে তার ফল লাভ করে।

শামীম রেজা : আবার পিছনে যাই, আপনি পদ্মাপাড় থেকে বুড়িগঙ্গার পাড়ে আসলেন। আপনার হল নিয়েও বিশেষ একটি গল্প আছে। তার আগে প্রথম প্রেম, বিয়ে, সংসার।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী : শামীম, এখানটায় আমি বলি আত্মজীবনীর ব্যাপারে সুনীল দা একটা ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন যে, ‘অর্ধেক জীবন’-এ। আমি অন্তত বিশ্বাস করি বাঙালি কোনো লেখক তার পুরোপুরি জীবন তার লেখায় আনতে পারেননি। তাই এই যে প্রেমের কথা, বিয়ের কথা, সংসারের কথা তা বললে মেকি কথা হয়ে যাবে। তবুও আমি সংক্ষিপ্ত করে গ্রহণযোগ্য করে বলি, যে প্রেমের বিয়ে। কিন্তু প্রেমের নানাবিধ পন্থা থাকে, পথ থাকে সুচারুভাবে প্রেমের বিয়ে। তারপরে সংসার, ভালো এবং মন্দ মিলানো। যদি স্বামী হিসেবে আমার কর্তব্যের কথা বলতে বলেন তো সবাই মেনে নেবে আমার চেয়ে সংসারধর্ম পালনে খারাপ স্বামী আর হয় না। যদি উপার্জনের কথা বলেন, আমার শেষ উপার্জনটুকুও চেয়েছি সন্তানের সাথে, স্ত্রীর সাথে, পিতামাতার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে। দায়িত্বের কথা যদি বলেন, তবে আমি চেষ্টা করেছি। আমি কখনো দেশের বাইরে চাকরি করতে চাইনি, কষ্ট করেও দেশে থাকতে চেয়েছি। ১৯৭২ সালে এমনও দিন গেছে যে অফিস থেকে এসে একটি প্যান্ট কেচে শুকিয়ে আবার পরেরদিন পরে অফিসে গেছি। তবুও কষ্ট ছিল না। কিন্তু ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে মনে অনেক কষ্ট নিয়েই আমাকে দুবার দেশের বাইরে যেতে হয়েছে। ১৯৮০ সালের পরে ও ১৮৯৩ সালে এবং পরেরবার দীর্ঘ পাঁচ বছর দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। শুধু উপার্জন এর মূল ব্যাপার ছিল না, পেছনে অন্য কারণ বা কার্যকর করণ ছিল। ঐ যে বললাম আত্মজীবনীতে পুরোটা বলা যায় না। আমি পাঁচ বছর মালয়েশিয়ায় ছিলাম, একবছরের বেশি সময় কুয়েত ও ইরাকে ছিলাম। ওখানে যা দেখেছি বিদেশে যে প্রবাসীরা কাজ করেন তাদের দেশের জন্য টান অসামান্য, দেশকে, দেশের মানুষ তারা অসম্ভব ভালোবাসেন। আমরা যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতাম ওনারা কতটা ভালোবাসার সাথে গ্রহণ করতেন তা বলার মতো না। আমার লেখালেখির জীবন অনুবাদ দিয়ে শুরু। দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আজাদে আমার প্রচুর লেখা ছাপা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমি শ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় রণেশ দাশগুপ্তকে স্মরণ করি, উনি আমাকে যথেষ্ট প্রশ্রয় দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তার মতো প্রশ্রয় পেয়েছি আমি আহসান হাবীব ভাইয়ের কাছ থেকে দৈনিক বাংলার সময়ে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কিছু কথা বলি, আমি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াকত হলের ছাত্র ছিলাম, যেটা এখন সোহরাওয়ার্দী হল। এই হলের নাম পরিবর্তন হয় মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের সময় এবং আমাদের বন্ধু ড. মোজাম্মেল খান লিয়াকত হলের ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় লিয়াকত হলের নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব করেন। তখনই একটা কাগজে লিখে এটা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। আমি হলের ৪০৩ নম্বর রুমে টানা ১৯৬৬ থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় ১৯৭২ পর্যন্ত কাটিয়েছি। আমি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও আমার বন্ধুদের একটা বড় অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। এখানে আমি একটু বলি, ষাটের দশকে শিল্প, সাহিত্যের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে রাজত্ব ছিল, তাতে কারো প্রবেশ বা গমন দুঃসাধ্য ছিল। আমি ও আমার বন্ধুদের বেলায় দেখিনি প্রকৃত অর্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা মূলধারার, যারা সাহিত্যচর্চা করছেন তাদের কাছে কোনো পাত্তা পান! স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত এই অবস্থা ছিল। হ্যাঁ, আমার ব্যক্তিগতভাবে বন্ধু ছিল অনেকেই কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, হুমায়ুন কবীর, ছফা ভাই আমি আরো অনেকের নাম বলতে পারি। কিন্তু এটা আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে সমষ্টিগতভাবে গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিল্প ও সাহিত্যের সঙ্গে যেভাবে কাজ করে এগিয়ে গেছে। এখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে সবাই যেমন গ্রাহ্য করে তখন তেমন ছিল না। এটি আমার জন্য একটি বড় সংকট ছিল, আমাকে বা আমাদের এককভাবে লড়তে হয়েছে। তবে যারা অভিনয় করতেন, গান করতেন বা অন্যকিছু যেমন, আবুল হায়াত ভাই তিনি তার মতো করে করতেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি দাঁড়িয়ে গেছেন। কিন্তু তার এ সংকট ছিল না। আবার অন্য দিকে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এসেছিলেন, যেমন এনামুল হক তাদের অবস্থা ভিন্ন ছিল, তারা নাট্যদলের সাথে যুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ, একজন আবুল হায়াত যে অবস্থানে ছিলেন আমরা সাহিত্য করতে গিয়ে সে অবস্থায় ছিলাম না। একটা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সেমিস্টার সিস্টেমে কতটুকু সময়ই বা সাহিত্যে দেবে বা তার পড়ালেখায় দেবে বা কতটুকু সময় তার কর্মজীবনের জন্য তৈরি হবে! স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে আমরা যখন ঢাকায় আসলাম তখন আমাদের সংকট, কী করব! এর মধ্যে ১৯৬৯ সালে আন্দোলন করেছি, ৭ মার্চের ভাষণ শুনে ধানমন্ডি ৩২-এ যাওয়া, যুদ্ধে অংশগ্রহণ এগুলো সাধারণ। এগুলো নিয়ে বড়াই করে বলার কিছু নেই এগুলো সেই সময়ের সাধারণ ব্যাপার, এমনকি আমার বন্ধুরা আমার চেয়ে অগ্রগামী ছিল। ১৯৭২ সালে আমি প্রথম চাকরি করি। আছির উদ্দীন সাহেব তখন ঝিনুক নামে একটা কাগজ করতেন, এটি নন্দলাল দত্ত লেন থেকে বের হতো। এই চাকরির বেতন ছিল তখন আড়াই শো টাকা। যেহেতু এই টাকায় চলা মুশকিল তাই তখন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ নামে একটি পত্রিকা বের হতো সেটাতেও কাজ করি, এটার সাহিত্য পাতা দেখতাম। দুপুর পার করে ঝিনুকে, আর সন্ধ্যাকালীন সময়ে সাপ্তাহিক বাংলাদেশে কাজ করতাম। পরে অক্টোবর মাসে আর্থিক সংকটের কারণেই আমি ঐ চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে আসি। এই আয়ে বিয়ে করে ঢাকা শহরে সংসার করা অসম্ভব, তারপরে পরিবার-পরিজন, পিতা-মাতাকে দেখতে হয়েছে। সর্বোপরি এর মধ্যেও সময় বের করতে হয়েছে সাহিত্যের জন্য, লেখালেখির জন্য, আড্ডার জন্য। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বিয়ে করি, আমার বড় দুই মেয়ে আর একটি পুত্রসন্তান। আমার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। আর আমরা দুই ভাই, ছয় বোন ছিলাম, বাবা কৃষি বিভাগে চাকরি করতেন। এই হলো মোটাদাগে পরিচয়। আর প্রথম বই করার ব্যাপারে আমি এখন স্মরণ করব আমাদের প্রয়াত আবদুর সাত্তার ভাইকে। ওনাকে অনেকেই চিনবেন, আরবি কবিতা অনুবাদ করতেন। ভালো অনুবাদক, ভালো লেখক, সর্বোপরি ভালো মানুষ। মুক্তধারা তখন নতুনদের বই বের করছে। ডেকে নিয়ে সাত্তার ভাই বললেন বই দেন, বই করব। আমার সৌভাগ্য যে আমার প্রথম কবিতার বই ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’ মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। আমার এখনকার শেষ বই ‘জমিনে ফারাক নেই’ প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আমি আমার প্রকাশকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে আমার মতো অভাজন লেখককে সহ্য করেছেন। আমার পাঠকদের প্রতি কৃতজ্ঞ যে আমার মতো অভাজন লেখকের লেখা পড়েছেন।

শামীম রেজা : আমি এবার সরাসরি কবিতায় প্রবেশ করতে চাই। আপনার কবিতার মধ্যে একটা মেট্রোপলিটন মন উপস্থিত যেমন, আত্মহত্যার মতো পরিস্থিতি—এইরকম বহু বলা যাবে। গ্রামের ছেলে কিন্তু মেট্রোপলিটন মন, দুটোর সংঘর্ষ ঘটে কি?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী : না, ঘটে না। এটা আসলে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু নয়। আমার যে গ্রামের অবস্থান আর মেট্রোপলিটন অবস্থান এর মধ্যে ফারাক খুবই কম। আমরা খুব উচ্চাভিলাষী হয়ে শহরকে অনেক বড় জায়গায় নিয়ে গিয়েছি। মনে হয় যেন নিউইয়র্ক বা টোকিওর পাশে ঢাকাকে রাখতে চাই, আবার গ্রামকে ঐ যেন অজপাড়াগাঁ হিসেবে ফেলে রাখতে চাই। আমাদের এই হীনম্মন্যতার জন্য আমাদের শহর ও গ্রাম পরস্পর থেকে দূরে সরে গেছে। গ্রাম ও শহর অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। আমার শুরু থেকেই উদ্দেশ্য ছিল আমি অন্য দৃষ্টিতে জীবনকে দেখব, অন্য দৃষ্টিতে বিজ্ঞান পড়ব। আমি বারবার বলি যে আমার কোনো বর্তমান নাই, আছে শুধু অতীত আর ভবিষ্যৎ। আমি বর্তমানকে ডিঙিয়ে যাই। মেট্রোপলিটন আর গ্রাম কোনো ভিন্ন কিছু নয়, এটা শুধু দৃষ্টিভঙ্গি, লেখার দৃষ্টিভঙ্গি, প্রকাশের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আধুনিকতার দৃষ্টিভঙ্গি।

শামীম রেজা : আপনার বই ‘জো’ এই যে আঞ্চলিক কবিতাগুলো আপনি লিখেছেন সাম্প্রতিক সময়ে। এটার ব্যাপারে একটু বলুন।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী : ‘জো’ লেখার অনুপ্রেরণা আপনারা, আমার তরুণ বন্ধুরা। এই আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে আমাদের অগ্রজ সৈয়দ শামসুল হক কাজ করেছেন, অনুজ বন্ধু রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কাজ করেছেন। তাদের কাজের অংশটুকু একরকম ছিল। ‘জো’-এর মধ্যে দুটো মজার বিষয় আছে যদি আপনি খেয়াল করেন। বাংলা ভাষায় পঞ্চাশটি বর্ণ নিয়ে পঞ্চাশটি কবিতা আছে এবং বাংলাদেশের পঞ্চাশজন মহান ব্যক্তি নিয়ে কবিতা আছে। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য ছিল আমার কুমারের ভাষা, আমার রসুলপুর অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা তুলে আনা। একজন হাজেরা খাতুন বা একজন আব্দুল আলীমের গানের ভাষ্যে কিন্তু পার্থক্য আছে, সেই পার্থক্যটা কিন্তু আমার ‘জো-এ আছে। তার জন্য আমি হয়তো সৈয়দ শামসুল হক বা রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ থেকে আলাদা।

শামীম রেজা : পুঁজিবাদ, শিল্পের যে আড়াল, প্রতীক, রূপকল্প, চিত্রকল্প যা বিশেষত প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কাল থেকে চর্চা শুরু হলো প্রবলভাবে। এতে শুধু শিল্পের কথা বলে, আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকরা বললেন, মানুষের কথা সমাজ-রাষ্ট্রের প্রতি কমিটমেন্টের কথা। এটিরও চর্চা হলো। কোন ধরনের কবিতা আপনার পছন্দ?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমাদের এই অঞ্চলে বাংলা কবিতার যে অংশটুকু ছিল এবং পশ্চিমবঙ্গে ছিল তা নিয়ে আমরা মোটাদাগে একটা কথা বলে আসছি। আমরা একজন নজরুলের কথা বলে আসছি, আমরা একজন জীবনানন্দ দাশের কথা বলে আসছি। আমরা ত্রিশের উত্তরণের কথা বলে আসছি। চল্লিশে আমরা একজন সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে, একজন অরুণ সেনকে পেয়েছিলাম। এই যে পাওয়া এটা ছিল ভিন্ন পাওয়া। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের দিকে লক্ষ রেখে, রুশ বিপ্লবকে সামনে রেখে আমাদের এই কাজকে আমরা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পঞ্চাশের নবউত্থানের পরে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবক্ষয়ের পরে, ধ্বংসের পরে আমরা নতুনভাবে কবিতার অংশটুকু দেখতে শুরু করলাম। আর ষাটের দশকে নৈরাজ্য ও নৈরাশ্য আমাদের ভিতরে যেভাবে কাজ করল যে আমাদের মধ্যে নিউরিয়েলিজম, সুরিয়ালিজম একদম ঢুকে গেল, তা যে খারাপ এমন নয়। কিন্তু বক্তব্যের দিক থেকে আমরা চাইলাম নির্ভার হতে। এই নির্ভার হওয়ার অংশ হিসেবে আমরা অনেককে পেয়েছি, অনেকের নাম করা যায়। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা বাংলার যে মূল কবিতার সাথে যুক্ত হয়েছিলাম, বাংলার যে চিত্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়েছিলাম। বাংলা কবিতার ধারাবাহিকতা ও পরম্পরার সাথে যুক্ত হয়েছিলাম তা যেন বারবার আমাদের পদাবলির কাছে টেনে নিয়ে যায়। এটি আমাদের একরকম অন্তরায় হয়েছিল। আজ পৃথিবীর এই অবস্থানে এসে কবিতার রূপ কি হবে কবি সেটা নতুনভাবে নির্মাণ করছেন। এখন কিছুটা সরে এসে আমি নির্মেদ একটা লেখা লিখছি, আমি এখন মনে করি যে আমি যদি একটি সেমিকোলন বাড়তি লিখি তো পাঠক আমাকে ক্ষমা করবে না। আমাদের এই অংশে এসে আমরা চেষ্টা করছি কবিতাকে যতটা নির্ভার করা যায়, কবিতাকে যতটা মানুষের কাছাকাছি নেওয়া যায়।

শামীম রেজা : কবিতায় কঠিন ও কোমলের একধরনের যাতায়াতে এক ধরনের উপমা যা আবার রূপান্তরময় হয়ে উঠে। দৃশ্যকল্প, চিত্রকল্প তৈরিই তো কবির প্রধান শক্তি। কিন্তু মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকরা এমনকি টেরি ইগলটনের মতো লোকেরা বলেছেন পুঁজিবাদী বিশ্বে এই উপমা, চিত্রময়তার আড়ালে কবিতা চলে যায় সত্যের বাইরে বা সত্য-কণ্ঠটা প্রকাশ পেতে কষ্ট হয়। অবশ্য এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আমিও একমত না। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন কবিতা হয়েওঠার বিষয় না কবিতা নির্মাণ করার বিষয়? যদিও সৈয়দ শামসুল হকের সাথে আমি তর্ক করেছিলাম কবিতা কোনো প্রকল্প নয়, এই কথা বলে। আপনা

Website