Couple Goals
Stay connected with us, thanks.
ফ্রিজ থেকে বড়ো সাইজের একটা ইলিশ বের করেন সাফিনা আহমেদ। গতকালই জাকির বাজার থেকে এই ইলিশগুলো নিয়ে এসেছে। একেকটা প্রায় দেড় কেজির মতো ওজন। মাছগুলো দেখার মতো সাইজ। আজ অফিস থেকে ফোন দিয়ে বলল যে সরিষা ইলিশ খাবে, তাই বের করা।
ইলিশটা বের করে রান্নার বুয়াকে ডাকেন, 'হরতনের মা, ইলিশটা আঁশ ফেলে বড়ো বড়ো করে পিস করো। আজ সরিষা ইলিশ করব।'
হরতনের মা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থেকে বলে, 'আফা, এত্ত বড়ো ইলিশ? মাঝখানটা কী ফেরি, নিশ্চয়ই চাঁদপুরের মাছ এইটা। হরতনের বাপ বাইচা থাকতে এমুন মেলা মাছা খাইছি গো আফা। এহন হেই মানুষও নাই, খাওয়াও নাই।'
এই বুয়াটা নতুন এসেছে। কথা বলে বেশি কিন্তু রান্না চমৎকার। সাফিনা ভ্রু কুঁচকে বলে, 'এমন সাইজের মাছ সত্যিই খেয়েছ?'
হরতনের মা চোখ কুঁচকে বলে, 'আমি কি মিছা কইতাছি আফা? হরতনের বাপ টেকার গরীব আছিল, কিন্তু মনের গরীব আছিল না। হের আত্মাটা ছিল বিরাট। মনে করেন দশটা মাছ আনলে পাঁচটাই আশেপাশের মাইনষেরে দিয়া দিত। আমি রাগ করতাম, কিন্তু হরতনের বাপ হাইসা কইত, একা খাইলে কোনো আনন্দ নাই।'
সাফিনা কপাল কুঁচকে একবার তাকায়। কী গল্প দিচ্ছে! দশটা ইলিশ কিনে নাকি পাঁচটাই মানুষকে দিয়ে দিত। হঠাৎ একটা কথা মনে হতেই থমকে যায়, জাকির গতকাল দশটা ইলিশই এনেছে। হরতনের মাকে দিয়েই সেগুলো ফ্রিজে রেখেছিল। তারমানে ইচ্ছে করেই হরতনের মা এই মিথ্যা গল্প ফেঁদেছে যাতে ওনাকে ইলিশ দেয়া হয়। কী চালাক মহিলা!
সাফিনা মাথা নেড়ে বলে, 'হ্যাঁ ঠিক বলেছ। তবে এখন তো হরতনের বাবাও আর বেঁচে নেই, তাই আগের সেই সময়টাও নেই। তুমি তাড়াতাড়ি মাছটা কুটে ফেলো। আমি সরিষা আর কাঁচা মরিচ ব্লেন্ড করে দিচ্ছি।'
হরতনের মা বিড়বিড় করে কী যেন বলে বোঝা যায় না। তারপর মাছটা হাতে নিয়ে রান্নাঘরে যায়।ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ইলিশটা দেখতে থাকে। মায়া হচ্ছে ইলিশটা কেটে ফেলতে।
সাফিনা দুই টেবল চামচ কালো আর হলুদ সরিষা সাথে দুটো কাঁচা মরিচ দিয়ে ব্লেন্ড করতে করতে বলে, 'আচ্ছা, তোমার ছেলের নামটা এমন অদ্ভুত কেন? হরতন কারো নাম হয়?'
হরতনের মা এক গাল হেসে বলে, 'কইছিলাম না হরতনের বাপের ছিল দিল দরিয়া মন। তাস খেলার পোকা ছিল। ছেলে হইল, নাম রাখল হরতন। আমি কইলাম এইটা কেমুন নাম। তা হে আমারে কইল, বোকা মাইয়া, এইটা হইল হার্টের রাজা। আমারে একটা পান পাতার মতো তাস দেহাই কইল আমাগো বুকে যে হৃদপিণ্ড থাকে তার মতো। এই পোলা হইল আমার হৃদপিণ্ড। কী কমু আফা, বিরাট জ্ঞানী লোক ছিল হরতনের