Unity of islamic powers in bangladesh

Unity of islamic powers in bangladesh

we will try our best to unite all islamic powers in our beloved country bangladesh

Bill Gates || AB Party || Michael Foucault || Farhad Mazhar || Rabindranath || বাংলাদেশের সংবিধান || 11/05/2020

https://m.youtube.com/watch?v=kw6GfklsD8o

Bill Gates || AB Party || Michael Foucault || Farhad Mazhar || Rabindranath || বাংলাদেশের সংবিধান || ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো অনেক আগেই সাবধান করেছেন যে আধুনিক রাষ্ট্র যখন আমাদের ‘নিরাপত্তা’র কথা বল.....

09/11/2014

রক্ত কথা বলে.................
অসভ্যরা মিছিল করে
বিচ্ছিরি গালি ওদের মুখে
অশ্লীল হাসি ওদের ঠোটে
নিষিদ্ধ দাগ ওদের বুকে
অস্রের ঝনঝনানি ওদের করে

ওদের বিবেক নিহত, হৃদয় বিক্ষত
আবেগ নষ্ট, ভাবনা বিকৃত
ওরা পথভ্রষ্ট, হাবলা, ধিকৃত
ওরা ঝাপিয়ে পড়ে শুয়োরের মতো।

মানবতার শিরে ওরা বুলেট চূড়ে
লাশের উপর অশালীন নৃত্যে দুলে।

ওরা রক্তের নেশায় প্রলাপ বকে
মানবতার মৃত্যুতে ওরা উল্লাস করে।

ওদের চোখে লেগে আছে হিংস্রতা
মনে মিশে আছে বক্রতা
মতে মিশে আছে ভ্রষ্টতা
বিশ্বাসে আছে নাস্তিকতা
হাতে আছে অস্র আর ক্ষমতা ।

মনে রাখিস অসভ্যরা,
রক্ত কখনও বৃথা যায়না
রক্ত কথা বলে, মরেনা।।....................................................................................................................
আমানুল্লাহ

18/02/2014

Who am I?
A question I couldn’t find answer to
Allah states in the Qur’an that He created Mankind to be His Khalefah,His trustee on earth (Q2vs30)
But, I keep feeling this emptiness inside me
I feel something not fulfilling in me
Oh! It is my purpose in life
Why am I created by Allah?
What is my purpose in this life
The Qur’an replied me
“And I (Allah) created not the jinn and MANKIND Except that they should worship me
{Chapter 51:56}.”
But, am I fulfilling this SPECIAL HONOUR
Given to me by Allah to worship Him?
Am I yearning towards this purpose?
Yes, I read, I learn
I pray, I strive,
But, ARE THOSE DEEDS DEDICATED TO THE WORSHIP OF ALLAH?
I strive, but, IS IT DONE SINCERELY FOR ALLAH?
Another question I find hard to answer
“Shame on me!” You may say.
Those same questions apply to you also.
In our pursuit to rule the world,
We forget our place of eternal abode.
We build mansions.
We aim not to own a dwelling in paradise
We insure our property and sometimes our life
We insure not our deeds and our eternity
We want the World to be proud of our success
We aim not to be successful in the sight of Allah
Are our deeds for Allah?
Or for our Nafs (Self)?
Are our intentions alright?
Who are we? I wonder
Who are we not obeying Allah’s
command?
Are we His obedient servants?
Or servants to our whims?
A question that needs a sincere answer
From you and me before it’s late
Let us remember,
DEATH will surely pay us a visit
Whether soon or later, ONLY ALLAH KNOWS
HELL is real and ready for its inhabitant
likewise,
PARADISE is certain for those who strive for it
A reminder for me and you

09/08/2013

"ইহুদীরা আমাদের বুকে গুলি চালানোর সময় পার্থক্য করবে না যে, কে শাফেয়ী আর কে হানাফী, কে আট রাকাত তারাবিহ পড়ে আর কে বিশ রাকাত তারাবিহ পড়ে। তাদের দৃষ্টিতে কালেমা পাঠ করা সব মুসলমানই শত্রু। তাদের সাফল্য এটাই যে, তারা আমাদেরকে পরস্পরের সাথে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত রাখতে পেরেছে। এ জন্য আজ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, শাখা প্রশাখার ঝগড়া পরিহার করে কুফরী ও জালেম শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাওয়া ।"

- শহীদ ইমাম হাসান আল বান্না

21/05/2013

কোনটি আমাদের প্রধান পরিচয় হওয়া উচিত? ১।মুসলিম ২। বাংলাদেশী ৩। বাঙ্গালী

05/05/2013

রাজপালের "রঙ্গীলা রাসূল" বই এবং শহীদ আলীমুদ্দীন (র)

আপনি কি শহীদ আলীমুদ্দীন রহঃ কে চিনেন?না চিনলে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাকে চেনা খুব প্রয়োজন।চলুন তাকে চিনে নেই…

১৯২৪ সাল।পাকিস্তানের লাহোরে জনৈক রাজপাল রাসূল সাঃ কে ব্যাঙ্গ করে "রঙ্গীলা রাসুল" নামে একটি বই প্রকাশ করে।যা নিয়ে তৎকালীন সময়ে মুসলমানদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।মুসলমানরা রাজপালের শাস্তি দাবী করে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানায়।ব্রিটিশ সরকার গড়িমসি করে অবশেষে রাজপালকে কয়েকবছরের জেল দেয়।কিন্তু নবী প্রেমিক মানুষের দাবী ছিল তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হোক।কিন্তু সরকার তাকে লঘু শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেয়।মুসলমানরা এটা মানতে পারেনি।কারন ইসলামী আইনানুযায়ী নবী অবমাননার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড।রাজপালে শাস্তি না মেনে নিতে পারা এমনি এক ব্যাক্তি ছিলেন আলীমুদ্দীন(কেউ বলে ইলমুদ্দীন)

যখন রাজপাল জেল থেকে ছাড়া পেল তখন সে আলীমুদ্দীনের হাতে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়।আলীমুদ্দীন নবী প্রেমিক ছিলেন।নবী সাঃ এর অবমাননা করে এই কুলাঙ্গার রাজপালের বেচে থাকাটা তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না।তাই তাকে হত্যা করেন।ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর তিনি আদালতে আত্মসমর্পন করেন।তার আত্মসমর্পনে আদালত খুব অবাক হয়।যে কতটুকু সাহস থাকলে একজন মানুষ একজনকে হত্যা করে আবার আদালতে এসে আত্মসমর্পন করতে পারে!

কিন্তু আলীমুদ্দীন ছিলেন নির্বিকার।কারন তিনি তো কোন অপরাধ করেন নি!তিনি নবী অবমাননার প্রতিশোধ নিয়েছেন।তাই তার চোখেমুখে প্রশান্তির চিহ্ন ফুটে উঠছিলো।যাই হোক আদালতে আলীমুদ্দীনের ফাসীর রায় হয়।সমস্ত মুসলমান তখন আলীমুদ্দীনের পক্ষে।তারা সবাই আলীমুদ্দেনের ফাসীর বিরোধীতা করে।কিন্তু জালিম সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অটল থেকে আলীমুদ্দীনের ফাসীর রায় কার্যকর করে।

=========================

ফাসিকাষ্ঠে আলীমুদ্দীনঃ

যখন তাকে যমমুখোশ পড়ানো হয় তখন সে হেসে উঠে।কারন জানতে চাইলে সে বলে " আমাকে তাড়াতাড়ি ফাসি দাও,ফেরেশতারা আমাকে অভ্যর্থনা জানাতে আসছে।আমি তাদের দেখতে পাচ্ছি।"

জল্লাদ তার এই কথাকে পাগলের প্রলাপ ভেবে ফাসিতে ঝুলিয়ে দেয়।তৎক্ষনাৎ শহিদী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নবীপ্রেমিক আলীমুদ্দীন নামক এক মর্দে মুজাহিদ।যাকে ইতিহাস আজো শহীদ গাজী আলীমুদ্দীন রহঃ নামে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করে।

>>প্রতিক্রিয়াঃ অনেকেই বলেন মুসলমানরা ভিন্নমত সহ্য করতে পারেনা।তাদের একথা চরম ভুল!! শত শত বছর ধরে মুসলিম আলেমগন বিধর্মী/ভিন্নমতালম্বীদের প্রশ্নের সকল জবাব সুন্দর এবং স্পষ্ট ভাষ্যে দিয়ে আসছেন।যদি না দিতেন তাহলে বলা যেত মুসলিমরা ভিন্নমত সহ্য করেনা।দাড়ান প্রমান দিচ্ছি…

লাহোর থেকে আর্য পণ্ডিত দয়ানন্দ স্বরসতীর বই প্রকাশিত হয়েছিল।যে বইয়ে কুরআন কারীম নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন করা হয়।আল্লামা কাসেম নানুতুবী রহঃ এবং মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী রহঃ কিতাব লিখে তার জবাব দিয়েছিলেন।

তাই যারা বলেন ইসলাম ভিন্নমতকে সহ্য করেনা তারা ভুল বলেন।ইসলাম সহ্য করেনা অবমাননা।যার প্রমান সেই লাহোরেই সংঘটিত হওয়া রাজপালের ঘটনা।অবমাননা আর ভিন্নমতকে একত্রে গুলিয়ে ফেলা উচিৎ না।বর্তমানের নবী সাঃ এর অবমাননাকারী নাস্তিকদের ব্যাপারে একই সিস্টেম।তোমরা নাস্তিকতা কর,এটা তোমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।কিন্তু আমার নবীকে নিয়া কটুক্তি করবা?হাসু বুবু সহ পৃথিবীর কেউই তোমাদের রক্ষা করতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ…কেননা আজো বাংলাদেশে লাখো লাখো আলীমুদ্দেন রয়ে গেছে…আমি তোমাদের হুমকি দিচ্ছিনা!কথাগুলা সাবধান হওয়ার জন্য বললাম।আশা করি ব্যাপারটা খোলাসা হয়েছে।

==========

পোষ্টখানা শেয়ার করার অনুরোধ রইলো!

04/05/2013

ইতিহাস
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসলামী রাজনৈতিক দল। জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪১ সালে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদূদী হায়দরাবাদের আওরঙ্গবাদে (বর্তমানে যা ভারতের মহারাষ্ট্রের অন্তর্গত) জন্মগ্রহন করেন।

জামায়াত প্রতিষ্ঠার বীজ বপিত হয় ১৯৩১ সালে। এ বছরই মাওলানা মওদূদী দিল্লি থেকে হায়দরাবাদ ফিরে আসেন এবং 'তর্জমানুল কুরআন' নামক একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদনার ভার গ্রহন করেন। তরজমানুল কুরআনের মাধ্যমেই তিনি তার চিন্তাগুলো প্রচার করতে থাকেন। ১৯৩৮ সালে তিনি আল্লামা ইকবালের আমন্ত্রণে পাঞ্জাব চলে আসেন এবং পূর্ব পাঞ্জাবের পাঠানকোটে 'দারুল ইসলাম' নামক ট্রাস্ট গঠন করেন। তর্জমানুল কুরআনের দপ্তর এখানেই স্হানান্তরিত হয়।

মাওলানা মওদূদী মুসলিম লীগের সাথে দ্বিমত পোষণ করে ১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪০ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাচী হলে এক জনসমাবেশে দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। তিনি তার বক্তৃতায় ইসলামী রাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ চিত্র, তা কায়েম করার পদ্ধতি, ধারা, বৈশিষ্ট্য এবং ভুল পন্হার ভয়াবহ পরিণাম বিশ্লেষণ করেন। মাওলানা মওদূদীর এ বক্তৃতা থেকেই মুসলিম লীগের চেয়ে পৃথক একটি আদর্শবাদী দল গঠনের চিন্তা ও তার কর্মপদ্ধতিটি প্রকাশিত হয়। বক্তৃতাটি পরে বই আকারে প্রকাশিত হয় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়।

১৯৩৯ সালের ২৬শে আগষ্ট দারুল ইসলাম ট্রাষ্ট এবং তর্জমানুল কুরআনের দফতর সাময়িকভাবে পুঞ্চ রোড মুবারক পার্ক লাহোরে স্হানান্তরিত হয়েছিল। ১৯৪১ সালে তরজমানুল কুরআনে মাওলানা মওদূদী 'জামায়াতে ইসলামীর গঠন' শীর্ষক এক প্রবন্ধ লেখার ফলে সমমনা লোক প্রবন্ধের ব্যাখ্যা দাবী করে মাওলানাকে পত্র লিখতে থাকেন। তার জবাবে এপ্রিল মাসের তর্জমানুল কুরআনে বলা হয় যে, যারা উক্ত প্রবন্ধে বর্ণিত পদ্ধতিতে কাজ করতে চান তাঁরা আপন আপন জায়গায় কাজ শুরু করতে পারেন এবং সংগে সংগে যেন তাঁদের নাম তরজমানুল কুরআন অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয় যাতে করে একে একটি সম্মেলনে রূপ দেয়ার পথ বেরোয়। এভাবে দেড়শ' লোকের একটি তালিকা তৈরী করা হয়। এবং এ তালিকা অনুযায়ী ২৫ শে আগষ্ট মুবারক পার্কে অবস্হিত তর্জমানুল কুরআন কার্যালয়ে তাদেরকে উপস্হিত হওয়ার জন্যে দাওয়াতনামা পাঠানো হয়। তদানুযায়ী সারা ভারত থেকে পচাত্তর জন ইসলামী ব্যক্তিত্ব লাহোরে উপস্হিত হন। সম্মেলনের কাজ ২৬শে আগষ্ট সকাল আটটায় শুরু হয় এবং ২৯শে আগষ্ট পর্যন্ত চলে। এ সম্মেলনেই জামায়াতে ইসলামী গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।

১৯-২১ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে অবিভক্ত ভারতে সর্বপ্রথম জামায়াতের কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর জামায়াতে ইসলামী দুইভাগে বিভক্ত হয় - জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান ও জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। উভয় জামায়াত সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের পৃথক কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে কাজ করা শুরু করে।

১৯৪৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতের কাজ শুরু হয়। ঢাকায় প্রথম চার ব্যক্তি কাজ শুরু করেন। তারা হচ্ছেন: মাওলানা রফী আহমদ ইন্দোরী, খুরশীদ আহমদ বাট, মাওলানা কারী জলিল আশরাফী নদভী ও মাওলানা আব্দুর রহীম।

১৯৫৫ সালে মাওলানা আব্দুর রহীম পূর্ব পাকিস্তানের আমীর নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের নায়েবে আমীর হলে পূর্ব পাকিস্তানের আমীর নির্বাচিত হন অধ্যাপক গোলাম আযম। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জামায়াত প্রকাশ্যে কাজ করেতে পারেনি। ১৯৭৬ সালে কয়েকটি অধুনালুপ্ত দলের সমন্বয়ে মাওলানা সিদ্দীক আহমদের নেতৃত্বে আইডিএল [ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ] নামে P.P.R [Political Parties Regulation] এর আওতায় এক নতুন দল গঠিত হয়। জামায়াত নেতাকর্মীরা এ নতুন প্লাটফর্মে কাজ করে। পরে ২৫শে মে ১৯৭৯ সালে এ কথা ঘোষণা করা হয় যে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে এখন থেকে প্রকাশ্যে কাজ করবে এবং তখন থেকে করে আসছে।

১৯৮৩ সালে এরশাদ সামরিক শাসন জারি করলে এর বিরুদ্ধে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয় তাতে জামায়াত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহন করে এবং ১০টি আসন লাভ করে। নির্বাচনের পরও স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত থাকে। এই আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করে আন্দোলনকে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। বাধ্য হয়ে আওয়ামিলীগ সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। ফলে সংসদ ভেঙ্গে যায়। স্বৈরশাসক এরশাদ ৮৮ সালে নতুন নির্বাচন করে। জামায়াতে ইসলামীসহ কোন বড় দলই নির্বাচনে অংশগ্রহন করেনি। ৮৮ সালের মার্চ মাসে নামমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে এরশাদের একটি পুতুল পার্লামেন্ট গঠিত হয়। জামায়াতসহ বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে এবং ১৯৯০ সালে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহন করে এবং ১৮টি আসন লাভ করে। এই সময়ের বড় ঘটনা হলো যে জামায়াত ক্ষমতায় অংশগ্রহন না করে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করে। জামায়াতের সমর্থনে বিএনপি সরকার গঠিত হলেও দুইটি বড় ঘটনা জামায়াতের সংগে বিএনপির দূরত্ব ক্রমবর্ধমান হারে বাড়িয়ে দেয়। তার একটি হলো সংসদে পেশকৃত জামায়াতের কেয়ারটেকার সরকারের প্রস্তাব বিএনপির অসহযোগীতার কারণে সংসদে উত্থাপিত হতে পারেনি। উল্লেখ্য জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের আন্দোলন ১৯৮২ সাল থেকে করে আসছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো নাগরিকত্ব না থাকার অভিযোগে অধ্যাপক গোলাম আযমকে গ্রেফতার। এই গ্রেফতারের বিরুদ্ধে জামায়াত হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। বিএনপির শাসনামলের মধ্যেই সুপ্রীম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ে অধ্যাপক গোলাম আযম কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং নাগরিকত্ব ফিরে পান।

এদিকে জামায়াত উত্থাপিত কেয়ারটেকার সরকারের দাবী জাতীয় দাবীতে পরিনত হয় এবং আওয়মিলীগসহ সকল বিরোধী দল এ দাবীতে আন্দোলন শুরু করে।

এ দাবী উপেক্ষা করে বিএনপি সরকার তার মেয়াদ শেষে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করে। কিন্তু জামায়াতসহ সকল বিরোধী দল এ নির্বাচন বয়কট করে। ফলে উক্ত তারিখে নামমাত্র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ নির্বাচনে গঠিত সংসদে বিএনপি বিরোধী দলগুলোর সাথে আপোষে আসার জন্য কেয়ারটেকার সরকারের দাবী মেনে নিয়ে সংসদে আঈন পাস করে। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে জামায়াত মাত্র ৩ টি আসন লাভ করে। ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির ভোটের বিভাজনের ফলে সে নির্বাচনে আওয়ামিলীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।

২০০১ সালে আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম তার দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি গ্রহন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্হাপন করেন। তার জায়গায় আমীর নির্বাচিত হন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।

আওয়ামিলীগ শাসনামলের পাঁচ বছর আওয়ামিলীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে বিএনপি ও জামায়াত ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে। ২০০১ সালের নির্বাচনেও জামায়াত ও বিএনপি জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহন করে। এ নির্বাচনে জামায়াত ১৭টি আসন লাভ করে। অন্যদিকে বিএনপি ১৯৩টি আসন লাভ করে। সব মিলিয়ে জোট দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠিত হয় এবং জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারী আলী আহসান মুজাহিদ ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে সরকারে যোগদান করেন। আওয়ামিলীগের অসহযোগীতা, সংসদ বর্জন, লাগাতার আন্দোলন, জঙ্গী হামলা ইত্যাদি সত্ত্বেও জোট সরকার সাফল্যের সাথে তার মেয়াদ পূর্ণ করে এবং সংবিধান অনুসারে ২০০৬ সালের ২৯শে অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।

04/05/2013

গোলাম আজম এমন একজন ব্যাক্তি যিনি

জাতির সামনে তত্তাবধায়ক সরকারের রূপরেখার উপস্থাপক।
বাংলাদেশে বাস্তব সম্মত ইসলামী আন্দোলনের স্বপ্ন দ্রষ্টা।
মুসলিম বিশ্বের আধ্যাত্বিক নেতা।
অসংখ্যবার সৌদী বাদশা-হর মেহমান হিসেবে হজ্জ পালন।
উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সর্বপ্রথম স্বেচ্ছায় দলীয় প্রধানের পদ থেকে অবসর গ্রহণ
সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও এদেশের লক্ষ আলেমের ওস্তাদ।
আল্লামা সাঈদী তাঁর হাত ধরেই জামায়াতে আসেন।
আজকের আল্লামা সাঈদী গড়ার পেছনের কারিগর।
ভাষা আন্দোলনের দায়ে দু দুইবার কারাবরন।
ডাকসুর সাবেক সফল জি এস।
বাংলা ভাষায় শতাধিকের উপর ইসলামী সাহিত্য রচনা।
আল কোরাআনের সহজ অনুবাদক ও তাফসীর কারক।
(চলমান)
এর পরেও কি মজলুম এ নেতার মুক্তির জন্য জালেম সরকারের বিরুদ্বে আন্দোলন করবেননা??????????

03/05/2013

জনগণের প্রত্যাশা
ড. আহমদ আবদুল কাদের

আলেমসমাজ আমাদের সমাজের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এ দেশে ইসলাম আবির্ভাবের সময় থেকেই আলেমসমাজের আবির্ভাব। এ দেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই আলেমগণ একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ সামাজিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। প্রতিটি যুগেই আলেমগণ সমাজে দ্বীনি শিক্ষার প্রচার, প্রসার, প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে নির্দেশনাদানের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। সেই সাথে যেকোনো ইসলামবিরোধী শক্তির মোকাবেলায়ও তারা প্রধান ভূমিকা রেখেছেন। তা ছাড়া মুসলিম ভূখণ্ডবিরোধী তথা দেশবিরোধী যেকোনো আগ্রাসী শক্তির মোকাবেলায়ও আলেমগণ সক্রিয় অংশ নিয়েছেন, ক্ষেত্রবিশেষে নেতৃত্বও দিয়েছেন। মূলত আলেমগণ যুগে যুগে সমাজের অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছেন।

এ দেশে সুলতানি আমল ও মুঘল আমলে আলেমগণ সামাজিক শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সোনার গাঁওয়ে বাংলাদেশে প্রথম ইসলামী উচ্চতর শিক্ষাকেন্দ্র (বিশ্ববিদ্যালয়) স্থাপন ও পরিচালনায় হজরত শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা রহ:, সম্র্রাট শের শাহ শূর ও ইসলাম শাহ শূরের আমলে ’শায়খুল ইসলাম আবদুল্লøাহ আনসারী রহ:, সম্র্রাট আকবরের প্রথম আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সদর-উস-সুদুর শায়খ আবদুন্নাবী রহ: রাষ্ট্রকে নিদের্শনাদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৫৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ক্রমান্বয়ে সম্র্রাট আকবর অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে ওলামাসমাজকে দুর্বল ও অকর্মন্য করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ ক্ষেত্রে আলেমসমাজের ব্যতিক্রম হিসেবে শাইখ মোবারক ও তার দুই ছেলে আবুল ফজল ও ফাইজীর মতো দরবারি আলেম নিকৃষ্টতম ভূমিকা পালন করে (যেমন আজকেও কিছু আলেম নামধারী লোক একই ভূমিকা পালন করছেন)। যদিও আকবরের আমল ও জাহাঙ্গীরের আমলের প্রাথমিক কয়েকটি বছর ওলামাসমাজের সংগ্রামী ভূমিকা কঠোরভাবে দমন করা হয়। তা সত্ত্বেও আলেমসমাজের ধর্মীয়-সামাজিক ভূমিকা অব্যাহত ছিল। বিশেষ করে শায়খ আহমদ সেরহিন্দ মুজাদ্দেদে আলফেসানি রহ:-এর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রচেষ্টার ফলে আকবর সৃষ্ট ‘দ্বীনি ইলাহী’র ফেতনা নির্মূল হয়ে যায়।

ব্রিটিশ আমলে প্রথম ১০০ বছর আলেমসমাজই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ: ও হজরত শাহ আবদুল আযিজ রহ: প্রবর্তিত আন্দোলন ও এর সূত্র ধরে সৈয়দ আহমদ বেরেলভী রহ: ও শাহ ইসমাঈল রহ:-এর জিহাদ-আন্দোলন, বাংলায় তিতুমীর রহ: ও হাজী শরিয়তুল্লাহ রহ:-এর আন্দোলন ইসলামী পুনর্জাগরণ ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ধর্মীয়-সামাজিক ক্ষেত্রেও এসব আন্দোলন আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে আলেমসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, এমনকি নেতৃতের ভূমিকাও পালন করেন। মাওলানা কেরামত আলী র:-এর শিক্ষা আন্দোলনও জাতিগঠনে বিশেষ অবদান রাখে। এরপর ব্রিটিশের অত্যাচার, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের ফলে আলেমসমাজ অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তার পরেও ব্রিটিশ শাসনের পরবর্তী নব্বই বছর আলেমসমাজের সামাজিক ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বদানে প্রধান ভূমিকায় না থাকলেও সামাজিক শক্তি হিসেবে তাদের ভূমিকা বরাবরই অব্যাহত ছিল। হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজেরী মক্কী রহ: ও মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহ:-এর দেওবন্দ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দ্বীনি শিক্ষা আন্দোলন। মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী রহ:-এর নেতৃত্বে রেশমি রুমাল আন্দোলন, মাওলানা মোহাম্মদ আলী রহ:-এর এবং মাওলানা শওকত আলী রহ:-এর নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বৃটিশ প্রবর্তিত পাশ্চাত্যের শিক্ষাব্যবস্থার ফলে প্রথমবারের মতো এ উপমহাদেশে দুই ধরনের শিক্ষিত শ্রেণীর জন্ম হয় : ১. ওলামা শ্রেণী ও ২.আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণী। এর ফলে সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলোতে আলেমসমাজের ভূমিকা ক্রমেই দুর্বল হয়ে আসতে শুরু করে। অন্য দিকে আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। তার পরেও ওলামাসমাজের ধর্মীয়-সামাজিক ভূমিকা অব্যাহত ছিল। উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ:, মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ:, মাওলানা শিব্বির আহমদ উসমানী রহ:, মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ:-এর অবদান অস্বীকার করা যাবে না। পাকিস্তান আমলে আলেমসমাজ দেশ গঠনে এবং বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে কার্যকর ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন। সেই সময়ে যেসব ওলামায়ে কেরাম নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মাওলানা জাফর আহমদ উসমানি রহ:, মাওলানা আতাহার আলী রহ:, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ:,খতিবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ রহ:,মাওলানা আবদুর রহীম রহ: প্রমুখ।

বাংলাদেশ আমলের প্রাথমিক কালে আলেমসমাজের ভূমিকা দুর্বল করার যড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা করা হয়। কিছু দিনের মধ্যেই তারা আবার ঘুরে দাঁড়ান এবং সামাজিক শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করা শুরু করেন। জিয়ার আমলে সংবিধানে ‘আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ মূলনীতিটি সংযোজনের সপক্ষে গণভোটে আলেমসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আশির দশকে হজরত হাফেজ্জী হুজুরে রহ:-এর আন্দোলন ওলামাসমাজের মধ্যে ও সাধারণ দ্বীনদার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৮৭ সালে চরমোনাইর পীর মাওলানা ফজলুল করিম রহ:, প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক-গবেষক মাওলানা ্আবদুর রহীম রহ:, বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা আবদুল জব্বার রহ: প্রমুখের নেতৃত্বে দেশের ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রবল আন্দোলন গড়ে ওঠে। ওলামাসমাজ নব্বইর দশকের শুরুর দিকে নাস্তিক-মুরতাদবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেন। পরবর্তী সময়ে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ: আহূত বাবরী মসজিদ অভিমুখে লংমার্চ ব্যাপক সাড়া সৃষ্টি করে। বসনিয়ায় মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে মুজাহিদ সংগ্রহ অভিযান জাতির মধ্যে আলোড়ন তোলে। তা ছাড়াও ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে পানি আন্দোলনও দেশের জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০০০ সালের দিকে ফতওয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে প্রচণ্ড আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনে নেতৃত্বের পুরোভাগে ছিলেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী, মাওলানা মহীউদ্দিন খান,শায়খুল আল্লামা আজিজুল হক প্রমুখ। দেশের ওলামাসমাজ এ আন্দোলনে ব্যাপক সাড়া দেয় এবং শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে ফতওয়ার অধিকার অর্জিত হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে, বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী শান্তিচুক্তিবিরোধী আন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী আন্দোলন, খতমে নবুওয়াত আন্দোলন, টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী, নারীনীতি ও শিক্ষানীতিবিরোধী আন্দোলনে দেশের আলেমসমাজের সোচ্চার ভূমিকা জনগণের দৃষ্টি আকষর্ণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এসব ক্ষেত্রে বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক রহ:সহ শীর্ষস্থানীয় সব ওলামায়ে কেরাম জাতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

আন্দোলনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ সংযোজন হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম হজরত মাওলানা শাহ আহমদ শফি দা: বা: নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এ আন্দোলন প্রধানত তথাকথিত ‘শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের’ সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু নাস্তিক-ব্লগার কর্তৃক মহানবী সা: ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কুৎসা রটনার বিরুদ্ধে লং মার্চের ডাক দেয়। এই লংমার্চ ব্যর্থ করার জন্য সরকার তাদের সমর্থক কিছু গোষ্ঠীকে দিয়ে নজিরবিহীনভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও রাতের বেলায় হরতাল আহ্বান করে। স্মিয়করভাবে সরকার এ হরতাল বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তা সত্ত্বেও জনগণ যেভাবে এ লংমার্চে অংশগ্রহণ করেছে তাতে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়ে গেছে। সাধারণ জনগণ যেভাবে এ লংমার্চে অংশগ্রহণ করেছে ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা সত্যিই অভূতপূর্ব। এ লংমার্চ সমাবেশ কার্যত মহাজনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। মানুষ যেভাবে পায়ে হেঁটে দূরদুরান্ত থেকে ঢাকায় এসেছে তা মূলত ইসলাম ও মহানবী সা:-এর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অনন্য নজির এবং নাস্তিক-মুরতাদদের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন। এ লংমার্চ প্রকারান্তরে সরকারের নীতির প্রতিও অনাস্থা জ্ঞাপন করার শামিল। এ আন্দোলন মূলত জনগণের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে। হেফাজত ঘোষিত ১৩ দফা দাবি কার্যত আজ জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশে এ আন্দোলনের গভীর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশে যে নাস্তিক-মুরতাদদের স্থান নেই তার জানান দিয়েছে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ। রাষ্ট্রীয় সংবিধানে প্রতিস্থাপিত ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিকূলে এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের অনুকূলে এ লংমার্চ। এ লংমার্চ জাতীয় জীবনের ভাবাদর্শের গভীরতর প্রকাশ। আমাদের জাতিসত্তার অন্যতম উপাদান যে ইসলামী আদর্শ তারই প্রকাশ এ লংমার্চ। এ লংমার্চের মধ্য দিয়ে জাতির অন্তরাত্মার জাগৃতি ঘটেছে। যারা এ অন্তরাত্মার আওয়াজ শুনতে পায় না, যারা এখনো ধর্মবিমুখÑ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও জাতি গঠনের অলীক স্বপ্ন দেখে, যারা জাতির ভাবানুভূতির গভীরতা অনুভব করতে পারছে না, তারা যে জাতিবিরোধী অবস্থান নিয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ আন্দোলন আলেম-ওলামা, ছাত্র-যুবক, সাধারণ জনগণ, আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণী (যারা ভোগবাদ ও পাশ্চাত্য ভাবধারায় আত্মপরিচয় হারিয়ে বসেনি) সবাই একাকার হয়ে গেছে। এ লংমার্চ আত্মজাগৃতির লংমার্চ। এ লংমার্চ দীর্ঘ দিনের সুপ্তির মধ্যে থাকা আলেমসমাজ ও জনগণকে জাগিয়ে তুলেছে। জনগণের শেষ অভিভাবক যে আলেমসমাজ আবারো তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এ লংমার্চে। এ লংমার্চ জাতির মধ্যে ইসলামের নবজাগরণের প্রবল আকাক্সা জাগিয়ে তুলেছে। জনগণ নতুন সমাজের, নতুন নেতৃত্বেরও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

তাই এ লংমার্চের মাধ্যমে সৃষ্ট জনস্ফুলিংগকে একটি বৃহৎ গণজাগরণে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। এ লংমার্চ আন্দোলনকে শুধু নাস্তিক-মুরতাদবিরোধী আন্দোলনে সীমিত না রেখে জাতিকে আরও বৃহত্তর পরিসরে পরিচালিত করার আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। এ আন্দোলন প্রাথমিকভাবে নিছক ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে থাকলেও এর সৃষ্ট জন-উচ্ছ্বাসকে একটি সফল পরিণতিতে নিয়ে যেতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা হচ্ছে, এ আন্দোলন বাংলাদেশে একটি ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের পথ প্রশস্ত করবে।

গঠিত হবে এক সুখী ও সমৃদ্ধ ইসলামী সমাজÑ যেখানে দারিদ্র্যের জ্বালায় কাউকে কষ্ট করতে হবে না, যেখানে দুর্নীতির মূলোৎপাটন ঘটবে, যেখানে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে জনগণের অংশীদারিত্বভিত্তিক ইসলামী আদর্শের আলোকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠিত হবে, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষিত হবে, যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করবে। জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণকল্পে হেফাজতের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীবৃন্দকে এগিয়ে আসতে হবে। এ আন্দোলনকে সঠিক লক্ষ্যে পরিচালিত করার জন্য মুনাফিক মনোবৃত্তিসম্পন্ন লোকেদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। ক্ষমতা ও অর্থলোভী লোকদের হাত থেকে তাকে রক্ষার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। সাথে সঠিক কর্মকৌশল ও পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জাতিকে পাশ্চাত্যের ডান-বাম সেবাদাসদের হাত থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ, দেশের নারীশিক্ষা ও উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, উন্নততর সমৃদ্ধ অর্থনীতি, শ্রমিক ও মেহনতি শ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, একটি দুর্নীতিমুক্ত ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ গঠন, ধর্মীয়, নৈতিকতা ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ একটি উন্নত শিক্ষানীতি প্রণয়নসহ একটি আলোকিত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে এক সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে হেফাজতের পৃষ্টপোষকতায় একটি আরও ব্যাপক ও গণসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তা হলে হেফাজতের আন্দোলন একটি সফল পরিণতি পাবে। দেশের জনগণ সেদিনের প্রতীক্ষায় দিন গুনছে। আমরা সবাই আরাধ্য লক্ষ্যপাণে তাকিয়ে আছি।

01/05/2013

৫ নভেম্বর ২০১২ ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহরনের আগের দিন সুখরঞ্জন বালী দৈনিক আমার দেশ পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল। সাক্ষাৎকারটি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল ৬ নভেম্বর ২০১২। আমার দেশ পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে সুখরঞ্জন বালী বলেছিলেন "সাঈদী সাহেব মোর ভাই বিশাবালীরে খুন করে নাই, এডা ডাহা মিথ্যা কথা। মুই মোর ভাইর মরন লইয়া এই রহমের মিত্যা কতা কইতে পারমুনা।”

সুখরঞ্জন বালী বলেছিলেন, "মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার আমাকে বলতে বলে সাঈদী সাহেব তোমার ভাই হত্যাকান্ডের সাথে ছিল এই কথা বলবা। আমাকে দিয়া তারা মিথ্যা কথা বলানোর জন্য চেষ্টা করছে। তাতে রাজি না হওয়ায় আমারে তারা সাক্ষী দিতে আনে নাই। আমিও হেদিকে যাই নাই, আমি সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষী দিতে আইছি।"

সুখরঞ্জন বালী আরো বলেছিলেন, "আমার ভাইয়ের হত্যার লগে সাঈদী সাহেব কোন ভাবেই জড়িত ছিলেন না। আমার ভাই হত্যার লগে জড়িত ছিলো সেকেন্দার শিকদার, মোমিন, দানেশ মোল্লা, রুহুল আমিন, আব্দুর রাজ্জাক এরা। এই কথাগুলান মুই মামলার আইওরে কইছিলাম। তারপরও হেয় আর মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার আমারে বারবার শুধু সাঈদী সাহেবের নাম কইতে কয়। আমি কইছি আমি পারমু না সাঈদী সাহেবের নাম কইতে।"

01/05/2013

বৃটিশ শাসনের শেষের দিকে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রস্তাবকে সর্বস্তরের মুসলিমদের নিকট গ্রহণযোগ্য করার জন্য মুসলিম লীগের তৎকালীন নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রচার-পত্রের সাহায্যে ইসলামের বিজয়কে পাকিস্তান কায়েমের লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। 'পাকিস্তানের লক্ষ্য কি, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ'- এ ধরণের শ্লোগান তারা জনসম্মুখে তুলে ধরেন। তদানিন্তন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের পক্ষে প্রচার সম্পাদক আবুল মনসুর আহমদ স্বাক্ষরিত একটি প্রচারপত্রে 'হুকুমতে ইলাহিয়া' প্রতিষ্ঠাকে পাকিস্তান কায়েমের উদ্দেশ্য বলে ঘোষণা করা হয়। এভাবে তারা মানুষকে বুঝায় যে, পাকিস্তান কায়েম হলেই ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হবে।

কিন্তু দেশ ভাগের মাধ্যমে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে ইসলাম কয়েমের ধারে কাছেও হাঁটেনি। ক্ষমতা রক্ষা করাই হয়ে যায় তাদের একমাত্র আদর্শ। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ইসলামী রাষ্ট্রের শ্লোগানে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাই গঠিত হয় হিন্দু ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের মন্ত্রীদের সমন্বয়ে।

ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের কান্ড দেখে দলটির স্বাধীনচেতা লোকেরা বেজায় ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়ে উঠে। অনেকেই নবাব-জমিদারদের মুসলিম লীগ ছেড়ে একটি 'জনগণের মুসলিম লীগ' গঠনে উদ্যোগী হয়। সে অনুসারে আসাম থেকে আগত মুসলিম লীগ নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও টাঙ্গাইলের জনাব শামসুল হককে যথাক্রমে সভাপতি ও সেক্রেটারী করে ১৯৪৯ সনের ২৪ জুন 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামে নতুন আরেকটি দল গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী এই দলের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং তার অনুসারী শেখ মুজিবুর রহমান নিযুক্ত হন এর অন্যতম জয়েন্ট সেক্রেটারী। মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগিশ, এডভোকেট আতাউর রহমান খান প্রমুখ ব্যক্তিত্বও এই দলের সাথে সম্পৃক্ত হন। এ দলটির মাধ্যমেই তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে অঞ্চল-ভিত্তিক রাজনীতির এক নতুন ধারা সূচিত হয়। কিন্তু এর দ্বারা ইসলামের তো কোন উপকার হয়ইনি বরং এক সময় দলটির নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটিকেই উচ্ছেদ করে (১৯৫৫সালে) সম্পূর্ণ সেক্যুলার আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। এভাবেই মুসলিম লীগ সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলমানদেরকে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেতনা থেকে বিরত রাখা হয়।

01/05/2013

উপমহাদেশে খিলাফত আন্দোলন

১৯১৪ সালে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে বৃটেন তাদের বৃহত্তম উপনিবেশ ভারতবর্ষে যাতায়াতের পথ খোলা রাখার জন্য আরব দেশগুলোকে উসমানী খিলাফত থেকে ছিনিয়ে নেয়ার জোর চক্রান্ত চালাতে থাকে। এতদুদ্দেশ্যে খিলাফত বিরোধী মনোভাব উস্কে দেয়ার জন্য তারা আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের দক্ষ গুপ্তচরদেরকে নিয়োগ করে। বৃটিশদের হয়ে আরব এলাকায় খিলাফত বিরোধী চেতনা ও আরব জাতীয়তাবাদী ধারণা ছড়ানোর গোয়েন্দাবৃত্তিতে নেতৃত্ব দানকারী কর্ণেল টি.ই. লরেন্স এর প্রচেষ্টায় গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে তারা উত্তপ্ত ও বিভক্ত করে ফেলে। ভারত উপমহাদেশের উলামাগণ খিলাফতের এই বিপদ দেখে ভীষণভাবে আতংকিত হয়ে উঠেন। যে কোন মূল্যে খিলাফত শাসন বহাল রাখার জন্য তারা জোর তৎপরতা শুরু করেন। খিলাফত রক্ষার জন্য ভারতীয় উলামাদের সেই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাকেই ইতিহাসে 'খিলাফত আন্দোলন' নামে অবিহিত করা হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতের মুসলমানরা ব্রিটিশকে এই শর্তে সমর্থন দিয়েছিল যে, ব্রিটিশরা তুরস্কের খলীফার কোন ক্ষতি করবে না। কিন্তু এই যুদ্ধে তুরস্ক ও জার্মানি মিত্রশক্তির কাছে পরাজিত হলে ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তি তুর্কী খিলাফতকে বিভক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। পবিত্র মক্কা ও মদীনা খ্রিষ্টানদের করতলগত হবার আশস্কায় ভারতের মুসলমানরা ১৯১৯ সালের ৭ অক্টোবর খিলাফত দিবস পালন করে। খিলাফত রক্ষাকল্পে ভারতীয় মুসলমানগণ দেশব্যাপী গড়ে তোলে তীব্র আন্দোলন।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন-ভারতের বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দ এর তৎকালীন মুহতামিম শায়খুলহিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (রহ.), মাওলানা মুহাম্মাদ আলী জাওহার এবং মাওলানা শওকত আলী ভ্রাতৃদ্বয়, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ড. মুক্তার আহমদ আনসারী প্রমুখ।

খিলাফত আন্দোলন হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মাওলানা মুহাম্মাদ আলী জাওহার এবং মাওলানা শওকত আলী ভ্রাতৃদ্বয় ১৯১৯ সালে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ড. মুক্তার আহমদ আনসারী প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে খিলাফত আন্দোলন নামের এই সংগঠনটির কাজ শুরু করেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল : তুর্কী খিলাফতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। এই একটি মাত্র সংগঠন ভারতের সকল ঘরানার উলামা ও সাধারণ মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে যে, খিলাফতই হচ্ছে এক উম্মাহ্‌র ঐক্যের প্রতীক। এখানে উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী ছিলেন একজন উচ্চতর হানাফী। অথচ তার সাথে এই আন্দোলনে ঘনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন যে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ তিনি ছিলেন একজন গায়ের মুকাল্লিদ। এভাবে সকল মাসলাক, মাশরাফ ও মাযহাবের উলামাগণ খিলাফত ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন।

১৯২০ সালে বঙ্গ প্রদেশের আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত খিলাফত কন্‌ফারেন্সের সভাপতির ভাষণে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ খিলাফতের গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেছিলেন : এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদেরকে সিরাতে মুস্তাকীমের উপরে চালানোর জন্য সংগঠিত করা এবং দুনিয়াতে আল্লাহ্‌'র কালামকে বুলন্দ করা। এর জন্য জরুরী হচ্ছে খলীফার হাতে যথাযথ কর্তৃত্ব থাকা। মাওলানা আজাদ বিশ্বাস করতেন মুসলমানদের খলীফা বিহীন জীবনই হচ্ছে ইসলাম বিহীন জীবন। খিলাফত বিহনে বসবাস করলে মুসলমানদেরকে আখেরাতে জবাব দিতে হবে। 'মাসআলায়ে খিলাফত' নামে এক গ্রন্থে তিনি লিখেছেন : "খিলাফত বিহীন ইসলামের অস্তিত্ব অসম্ভব। ভারত বর্ষের মুসলমানদের উচিত সর্বশক্তি দিয়ে খিলাফতের জন্য কাজ করা।" মাওলানা শওকত আলী কেন্দ্রীয় খিলাফত কমিটির পক্ষ থেকে এই ঘোষণা জারী করেছিলেন যে আমরা আশা করি ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ মুসলিমগণ ভারতবর্ষে অবস্থান করে বৃটিশ রাজের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেবে। তা অসম্ভব হয়ে উঠলে খিলাফত রাষ্ট্রে হিজরত করার চিন্তা করবে। ভারতবর্ষের বিশিষ্ট উলামাগণ এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছিলেন। মাওলানা সাইয়েদ সুলায়মান নদভী জোর দিয়ে বলতেন মুসলমানদের জন্য একজন খলীফা থাকা ফরয। ১৯২০ সালে মাওলানা মুহম্মাদ আলী জাওহারের সঙ্গে এক প্রেস কন্‌ফারেন্সে উপস্থিত তার সঙ্গী সাইয়েদ হুসাইন বলেছিলেন যদি দুনিয়াতে ইসলামের অস্তিত্ত্ব বজায় রাখতে হয়, তাহলে মুসলমানদের একজন খলীফার উপস্থিতি অপরিহার্য্য।

শায়খুলহিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান কঠিন পরিশ্রম করে খিলাফতের অধীনে যুদ্ধরত সৈনিকদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে খলীফার নিকট প্রেরণ করতেন। তিনি রাশিয়া এবং তুরস্কের যুদ্ধে উসমানী খিলাফতকে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করেছিলেন। খিলাফতের সাহায্যার্থে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করেন। ছাত্রদের একটি বিশাল বাহিনীকে তুরস্কে প্রেরণ করে অপর আরেকটি বাহিনী নিয়ে নিজে তুরস্ক চলে যান। তিনি জানতেন সমগ্র ইউরোপ ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফত ধ্বংসের মাধ্যমে ইসলামের প্রদীপকে নিভিয়ে দিতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছে। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারত বর্ষের মসজিদগুলোতে খুতবার মাঝে খিলাফতের কথা উল্লেখ করা হতো এবং নামাজে মুসলমানদের বিজয় ও কাফেরদের পরাজয়ের জন্য দোয়া করা হতো। খিলাফত আন্দোলনের আরেক মহান ব্যক্তিত্ব মওলানা শওকত আলীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনি কেন খুতবায় তুর্কী সুলতানের নাম অন্তর্ভূক্ত করেন। তিনি জবাবে বলেছিলেন, কারণ তুর্কী সুলতান এই মূহুর্তে মুসলমানদের খলীফা। বৃটিশ সামাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র থেকে খিলাফত রাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য মাওলানা মাহমুদুল হাসান তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। এই জন্য তিনি হিজাজ সফর করেন। গভর্নরের পক্ষ থেকে ভারতবর্ষের মুসলমানদের জন্য পত্র মারফত এই অনুরোধ নিয়ে এসেছিলেন যে তারা যেন বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে খিলাফত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এই চিঠি ইতিহাসে গালিব নামা নামে খ্যাত। খিলাফতের পক্ষে এই ধরণের তৎপরতার দরুন নিষ্ঠুর ইংরেজ শাসকরা মাওলানা মাহমুদুল হাসানের উপর কঠিন চাপ সৃষ্টি করে। সত্য ভাষণ থেকে নিবৃত করা এবং ইংরেজ সরকারের বিপক্ষে গিয়ে উসমানী খিলাফতকে সমর্থন দেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য তাঁর উপর অনেক অত্যাচার করা হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁকে সুদূর মাল্টাদ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ইংরেজরা দাবী করেছিল তিনি যেন মক্কার বিশ্বাসঘাতক গভর্নর শরীফ হোসেনকে ইংরেজদের স্বার্থে সমর্থন দিয়ে খিলাফতের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারী করেন। এ জঘণ্য অন্যায় কাজটি করতে অস্বীকার করায় গাদ্দার শরীফ হোসেন তাকে এবং তার সঙ্গীদেরকে মক্কায় গ্রেফতার করে ইংরেজদের হাতে তুলে দেয়।

অন্য সব বিষয় নিয়ে কম-বেশী মতভেদ থাকলেও খিলাফত আন্দোলন নিয়ে মুসলিম শিক্ষাবিদদের মাঝে কোন প্রকার অনৈক্য ছিল না। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ তার বিখ্যাত পত্রিকা "আল হেলাল"-এ ১৯১২ সালের ২রা নভেম্বর সংখ্যায় নিজের অভিমত এভাবে ব্যক্ত করেছেন : "শুধু উসমানী খিলাফতের হাতেই এখন সেই তলোয়ার আছে যা মুসলিমদেরকে রক্ষা করতে পারে। খিলাফতই হচ্ছে শরীয়তের একমাত্র কর্তৃপক্ষ। এই ব্যবস্থা ওহির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষের আনুগত্য করা আল্লাহ্‌'র নির্দেশ। খিলাফতের বিধি-বিধান মেনে চলা ফরয।"

এভাবে খিলাফত রক্ষার আন্দোলন ভারতময় ছরিয়ে পড়লেও ১৯২৪ সালে তুরস্কে উসমানী খিলাফতের পতনের পর এর ধারাবাহিকতায় এক প্রকার ভাটা পড়ে। তাছাড়া বৃটিশ শাসনের শেষের দিকে স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রাধান্য দেওয়া এবং দেশভাগের প্রশ্নে মতানৈক্য সৃষ্টির ফলে খিলাফতের চেতনা অনেকটাই হ্রাস পেয়ে যায়। যার কুপ্রভাবে উম্মাহ্‌ আজও ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি।