স্বকৃত নোমান

স্বকৃত নোমান

ঔপন্যাসিক

ঔপন্যাসিক

প্রকাশিত উপন্যাস :
১. নাভি, ২০০৮, ধাবমান ও বনলতা প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা।
২. বংশীয়াল, ২০০৯, রোদেলা প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা।
৩. রাজনটী, ২০১১, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা।
৪. বেগানা, ২০১২, বিদ্যাপ্রকাশ।
৫. হীরকডানা, ২০১৩, বিদ্যাপ্রকাশ।
৬. কালকেউটের সুখ, ২০১৫, জাগৃতি প্রকাশনী।
৭. শেষ জাহাজের আদমেরা, ২০১৭, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স।
৮. মায়ামুকুট, ২০১৯, অন্যপ্রকাশ।
৯. উজানবাঁশি,

28/06/2024

একদিন কাপ্তাই লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি। সন্ধ্যা সমাগত। দখিনা বাতাস খেলছে জলের সাথে। ছোট ছোট ঢেউ তুলছে। অস্তগামী সূর্যের আভা বিচিত্র রঙে রাঙিয়ে তুলছে ঢেউগুলোকে। আমার বুকে ভাঙতে থাকে বেদনার ঢেউ। এজন্য যে, এই জীবনে, ঠিক এই সময়ে, ঠিক এইখানে এবং ঠিক এই ভঙ্গিতে আর কোনোদিন আমি এই লেকের পাড়ে দাঁড়াব না। এই মুহূর্তটি আমার জীবনে একবারই এসেছে। আর কোনোদিন আসবে না। কোনোদিন না। আমার মনে হলো, আহা, আমি যদি পারতাম এই মুহূর্তটিকে ধরে রাখতে! যদি পারতাম এই মুহূর্তটি এবং আমার অনুভূতির লেখ্যরূপ দিতে!

একবার যমুনাতীরবর্তী অঞ্চলে বন্যাকবলিতদের মাঝে ত্রাণ হিসেবে নগদ টাকা বিতরণ করে ফিরছি। গাড়ি যাত্রা করেছে ঢাকার উদ্দেশে। পেছনে ফিরে দেখি ক্রাচে ভর দিয়ে এক পঙ্গু লোক মাইক্রোবাসের পেছনে ছুটছে। সে ত্রাণ পায়নি। তালিকায় তার নাম ছিল না। ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলি। থামাল। লোকটা দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। ঘর্মাক্ত মুখ। হাসি ও কান্নার যুগপৎ আভা তার চেহারায়। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি কেঁপে উঠি। ভাবি, আহা, যদি পারতাম লোকটির অসহায় করুণ চোখ দুটির বর্ণনা লিখতে! যদি পারতাম তার অপ্রাপ্তি, দারিদ্র্য আর বেদনাকে ছুঁয়ে দেখতে!

একদিন এক অসহায় বিড়ালছানাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনল আমার কন্যা। ছানাটিকে সে লালন-পালন করবে। কিন্তু বাড়িওয়ালার হুঁশিয়ারি, বাড়িতে বিড়াল পালা যাবে না। কন্যা অশ্রুসিক্ত নয়নে ছানাটিকে রাস্তায় ফেলে এলো। পরদিন দেখি ছানাটি মরে পড়ে আছে ফুটপাতে। বারান্দা থেকে কন্যা আমাকে ছানাটি দেখায় : দেখো আব্বু, ছানাটির মা-বাবা নেই। কীভাবে মরে পড়ে আছে, দেখো। আমি একবার মৃত ছানাটির দিকে তাকাই, একবার কন্যার বেদনাদীর্ণ মুখের দিকে। আমার বুকের ভেতরে নার্গিস কি আইলার গতিতে ঘুরতে থাকে বেদনার ঝড়। আহা, আমি যদি পারাতাম সেই ঝড়কে লিপিবদ্ধ করতে! যদি পারতাম বিড়ালছানাটির মৃত্যুপূর্ববর্তী দুঃখ-যাতনাকে মানুষের জন্য লিখে রাখতে!

এই যে মানব মনের বিচিত্র অনুভূতি, ছোটগল্প কি এই অনুভূতিকে ধরতে চায়? এই অনুভূতির লেখ্যরূপই কি ছোটগল্প? আমার কাছে এমনই মনে হয়। ছোটগল্প বলতে আমি একেই বুঝি। এক মুহূর্তের একটি দৃশ্য হয়ে উঠতে পারে গল্প। ছোট্ট একটি ঘটনা হয়ে উঠতে পারে একটি গল্প। মানুষ এবং মানবেতর সকল প্রাণের জীবনের একটি খণ্ডাংশ হয়ে উঠতে পারে একটি গল্প। একটি শব্দ থেকেও উঠে আসতে পারে একটি গল্প।

গল্প বর্ণন ও শ্রবণ মানুষের স্বভাবজাত। শিশুর মুখের প্রথম বুলি ‘মা’, তারপর ‘বাবা’। তারপর সে কথা বলতে শেখে। শিখলেই বলে, মা, একটি গল্প বলো। মা তাকে গল্প শোনায়। গল্প বলা ও শোনার প্রবণতা মানুষের আদিম বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই গল্প আছে। একবার মনপুরা দ্বীপগামী লঞ্চের এক সুকানি আমাকে বলেছিল, ‘আমার জীবনের হিস্টোরি শুনলে আপনি বেহুঁশ হয়ে যাবেন।’ হিস্টোরি! আমি ভাবি, হিস্ট্রি থেকে হিস্টোরি, না স্টোরি থেকে হিস্টোরি? যা থেকেই হোক, সুকানি আসলে গল্পই বোঝাতে চেয়েছে।

একটু গভীরভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে পৃথিবীজুড়ে গল্পের শাসনই চলছে। বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারতে কত শত গল্প। ভারতের অষ্টাদশ মহাপুরাণে কত হাজার হাজার গল্প। গ্রীক পুরাণেও তাই। ধর্মগ্রন্থগুলো পড়লে দেখা যাবে গল্পের কী বিপুল সমাহার! ত্রিপিটক-বাইবেল-কোরানে লৌকিক-অলৌকিক বিস্তর গল্প। জেলখানা ও ভেঙে যাওয়া জাহাজ, পৌলের প্রচার যাত্রা, পিতর ও কর্ণীলিয়, স্তিফান, একটি খোঁড়া লোক ও সাবধান বাণী, বাতাস ও আগুন, শেষ ভোজ ও বিশ্বাসঘাতকতা, গাধায় চড়ে রাজার যাত্রা, রাজা হেরোদের জন্মদিন―এরকম বিস্তর গল্প রয়েছে বাইবেলে।

ইব্রাহিম, ইসমাইল, ইউসুফ, মুসা, ফেরাউন, জাকারিয়া, নূহ, সুলায়মান, জুলকারনাইন, খিজিরের গল্পসহ অসংখ্য গল্প বর্ণিত হয়েছে কোরানে। সুরা ইউসুফের তৃতীয় আয়াতে বর্ণিত হয়েছে : ‘হে পয়গম্বর! ওহির মাধ্যমে তোমার নিকট যে কোরান প্রেরণ করেছি তাতে উত্তম কাহিনি বর্ণনা করেছি। এর পূর্বে অবশ্য তুমি সে সম্পর্কে অনবহিত ছিলে।’ খেয়াল করে দেখুন, এই আয়াতেও কিন্তু ‘কাহিনি’ শব্দের উল্লেখ। আর কাহিনি মানেই তো গল্প, আখ্যান।

ঈশ্বরকে কেউ দেখেনি। অথচ তাকে কেন্দ্র করে গল্পগুলো মানুষ বিশ্বাস করছে। মৃত্যুর পর কবরে কী হবে কেউ জানে না, অথচ কবরের অবস্থা নিয়ে কত কত গল্প তৈরি করেছে মানুষ। পরকাল কেউ দেখেনি, স্বর্গ-নরক দেখেনি, অথচ পরকালের স্বর্গ-নরকের গল্পগুলো মানুষ কী গভীরভাবে বিশ্বাস করছে। গল্প কতই না শক্তিশালী!

আমি ঔপন্যাসিক। উপন্যাসই আমার সাহিত্যসাধনার প্রধান মাধ্যম। কিন্তু এমন কিছু ঘটনা, এমন কিছু দৃশ্য, এমন কিছু অনুভূতি থাকে, যা উপন্যাসের বিস্তৃত পরিসরে লেখা সম্ভব হয় না। লিখতে হয় ছোট্ট পরিসরে, গল্পের আঙ্গিকে। এই কারণেই আমি গল্প লিখি।

আমার গল্প লেখা শুরু মূলত সতের বছর বয়সে। একুশ থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে লেখা একধিক গল্প পত্রিকায় ছাপাও হয়। সেসব গল্পকে আমি বাতিল করে দিয়েছি। তারপর গল্প লিখতে শুরু করি বত্রিশ বছর বয়সে। মাঝের সময়টা গল্প লেখার প্রস্তুতির মধ্যে ছিলাম। পড়েছি বিশ্বসাহিত্যের সেরা গল্পগুলো। আর মশকো করেছি উপন্যাস লেখার হাত। প্রথম গল্পের বই প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। নিশিরঙ্গিনী। দুই বছর পরপর যথাক্রমে প্রকাশিত হয় বালিহাঁসের ডাক, ইবিকাসের বংশধর এবং বানিয়াশান্তার মেয়ে। এ চারটি বই নিয়ে গল্পসংগ্রহ।

যখন এই বইটির পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল প্রথম দুই বইয়ের বেশ কটি গল্প ঠিক গল্প হয়ে ওঠেনি। দুর্বল, খুবই দুর্বল। যেন এই গল্প আমার লেখা নয়, আমি কখনো এমন গল্প লিখতে চাইনি। কিন্তু বললেই তো হবে না। পাঠকের কাছে তো চলে গেছে এসব গল্প। আমি অস্বীকার করলেও পাঠক এগুলোকে আমার গল্পই বলবে। তবু আমি গল্পগুলোকে এই সংকলনে বাদ দিতে চাইলাম। কিন্তু অগ্রজ কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল বললেন, ‘কেন বাদ দেবে? ভালো-খারাপ যাই হোক, তোমারই তো লেখা। কেউ তো রাতারাতি গল্পকার হয়ে ওঠে না, হয়ে ওঠে নিরন্তর চর্চার মধ্য দিয়ে। রেখে দাও দুর্বল গল্পগুলোও। তাতে পাঠক বুঝতে পারবে তোমার যাত্রার গতিপথ। বুঝতে পারবে তোমার ভাঙাগড়া।’

আমি রেখে দিলাম। শুধু বিশেষ কারণে বাদ দিলাম একটি গল্প, নিশিরঙ্গিনী বইভুক্ত গল্প ‘গাবাল’। বাকিগুলোতে একটু কলম চালিয়েছি, একটু সংযোজন-বিয়োজন করেছি, ভাষাগত একটু পরিবর্তন এনেছি। আশা করি পাঠক আমার দুর্বলতাকে, আমার অক্ষমতাকে বুঝতে পারবেন।

গল্পসংগ্রহ প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহিদুল ইসলাম বিজুকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বই প্রকাশ তাঁর সাধনা। বই নিয়ে তাঁর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। বই পাঠের মধ্য দিয়ে মানুষ হয়ে উঠুক সংবেদী, উদার, বহুত্ববাদী প্রকৃত মানুষ। প্রিয় পাঠক, আপনাদের মঙ্গল কামনা।

ভূমিকা, গল্পসংগ্রহ
স্বকৃত নোমান
পাঠক সমাবেশ, ঢাকা।

Photos from স্বকৃত নোমান's post 27/06/2024

হে বন্ধু ও শত্রু, আসুন একটা জরিপ করি। সেলিম আল দীনের স্ত্রী বেগমজাদী মেহেরুন্নেসার ভাষ্যমতে, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান ছিলেন সেলিম আল দীনের কম্পিউটার অপারেটর। কিন্তু সেলিম আল দীনের লিখিত ভাষ্যমতে, স্বকৃত নোমান ছিলেন সেলিম আল দীনের একান্ত সচিব বা ব্যক্তিগত সহকারী বা ব্যক্তিগত সচিব।

অপরদিকে, বেগমজাদীর অভিযোগ, স্বকৃত নোমান আগে কখনো লেখালেখি করেননি। সেলিম আল দীনের মৃত্যুর পর তাঁর পাণ্ডুলিপি চুরি করে তিনি লেখক হয়েছেন। অথচ সেলিম আল দীন তাঁর বইয়ে স্বকৃত নোমানকে ‘তরুণ লেখক‘ বলে উল্লেখ করেছেন।

আপনি কোনটা সত্যি মনে করেন? সেলিম আল দীনের স্ত্রীর অভিযোগ, নাকি খোদ সেলিম আল দীনের লিখিত ভাষ্য?

ছবিতে সেলিম আল দীনের দুটি বই ‘স্বর্ণবোয়াল’ ও ‘পুত্র’-এর প্রচ্ছদ ও ভূমিকা দেওয়া হলো। গালাগালি করুন, অসুবিধা নেই, তবু উত্তরটা দিয়ে যাবেন।

27/06/2024

পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের দুই খণ্ডের ‘উপন্যাস সংগ্রহ’র প্রথম খণ্ডে রয়েছে তিনটি উপন্যাস : রাজনটী, বেগানা এবং হীরকডানা। এইচএসবিসি-কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত রাজনটী উপন্যাসের বিষয়বস্তু লোকপুরাণের এক বাঈজি। মধ্যবয়সে সে একটি প্রার্থনাগৃহ নির্মাণ করেছিল, কিন্তু সে নটী বলে কেউ সেই গৃহে প্রার্থনা করেনি। আরাকান থেকে বিতাড়িত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে রচিত বাংলা ভাষায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল উপন্যাস বেগানা। অন্যদিকে ইতিহাসের মহাকাব্যিক চরিত্র শমসের গাজীর বীরত্বগাথা ও ট্র্যাজিক পরিণতি নিয়ে রচিত হীরকডানা। তিনটি উপন্যাসেই ইতিহাস ও লোকশ্রুতির মধ্যে পাঠক এক ধরনের দ্বান্দ্বিক ঘোরের মধ্যে আবিষ্কার করবেন নিজেকে।

দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে তিনটি উপন্যাস : কালকেউটের সুখ, শেষ জাহাজের আদমেরা এবং মায়ামুকুট। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নীরব দেশত্যাগ এবং স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর উত্থানকেন্দ্রিক উপন্যাস কালকেউটের সুখ। মানবপাচার বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। এই মর্মান্তিক প্রেক্ষাপটকে উপজীব্য করে রচিত শেষ জাহাজের আদমেরা। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক নানা টানাপড়েনের উপন্যাস মায়ামুকুট। অনেকটা ট্রিলজির মতো সামাজিক ও রাজনৈতিক ধারার এই তিন উপন্যাসে পাঠক বাংলাদেশের ইতিহাস, সংকট ও সম্ভাবনার গল্পগুলো জানতে পারবেন।
দুই খণ্ডের দাম : ১৫৯২ (কমিশনসহ)
ঘরে বসে বই পেতে ডাউনলোড করুন পাঠক সমাবেশ অ্যাপ।
অ্যাপ লিংক: http://onelink.to/hk9znt
www.pathakshamabesh.com
Help Line: +029669555, +8801841234612
#পাঠকসমাবেশকেন্দ্র #পাঠকসমাবেশ
অথবা : https://baatighar.com/author/swakrito-noman-skno-5057/page/2
অথবা : https://www.rokomari.com/book/author/4264/swakrito-noman
অথবা : https://www.facebook.com/kanamachhii/posts/229702835660022

26/06/2024

কবি হারিসুল হকের কবিতা পাঠ করছেন কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান।

i

25/06/2024

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা-গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নে আগ্রহী। অথচ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই সিদ্ধান্তের বিরোধী। মমতার এই অবস্থান নিন্দনীয়।

22/06/2024

চল্লিশ বছর পর বাঘের পেট থেকে বেরিয়ে আসে এক ন্যাংটা মানুষ। পৌষের কুয়াশাঢাকা এক হিমভোরে প্রথম তাকে দেখা যায় নয়নচরে। সে সাপের সঙ্গে বসে থাকতে পারে, ব্যাঙের মতো জলের উপর হাঁটতে পারে, ঈগল পাখির ঠ্যাং ধরে উড়তে পারে। উজানগাঁর ভূস্বামী অনাদি দত্ত তাকে রহস্যপুরুষ মোখেরাজ খান কথিত আবু তোয়াব বলে শনাক্ত করেন। ধীরে ধীরে বাঘামামা নামে তিনি হয়ে ওঠেন প্রণম্য। বদলে দেন নীলাক্ষী তীরের জনপদের সংস্কৃতি। কিন্তু মানুষ কি চল্লিশ বছর বাঘের পেটে থাকতে পারে? প্রশ্ন তোলেন আবদুল কায়েদ। একদিন মাটি খুঁড়তে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন এক প্রাচীন শিলালিপি। তারপর?
---------------------
বই- উজানবাঁশি
মুদ্রিত মূল্য - ৬৫০ টাকা
লেখক - স্বকৃত নোমান
প্রকাশনা - অভিযান পাবলিশার্স
------------------------
ঠিকানা- অভিযান বুক ক্যাফে (সোমবার থেকে শনিবার খোলা সকাল সাড়ে দশটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত, রবিবার সকাল এগারোটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত)
১/১এ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা-৭৩
(প্যারামাউন্ট ও মহাবোধি সোসাইটির মাঝে)
ফোন- ৮০১৭০৯০৬৫৫
এছাড়া অনলাইনে অর্ডার করতে Whatsapp করুন
৮০১৭০৯০৬৫৫ নম্বরে।

18/06/2024

বই - কালকেউটের সুখ
লেখক - স্বকৃত নোমান
মুদ্রিত মূল্য - ২৫০ টাকা
প্রকাশনা - অভিযান পাবলিশার্স
-------------------------------------
ঠিকানা- অভিযান বুক ক্যাফে (সোমবার থেকে শনিবার খোলা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত, রবিবার সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত)

১/১এ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা- ৭৩
(প্যারামাউন্ট ও মহাবোধি সোসাইটির মাঝে)
ফোন-৮০১৭০৯০৬৫৫
এছাড়া অনলাইনে অর্ডার করতে Whatsapp করুন ৮০১৭০৯০৬৫৫ নম্বরে।

15/06/2024

কবিতা কেউ পড়ে না বলাটা ভুল। বলা উচিত কবিতার পাঠকের মৃত্যু হয়েছে, কবিতা যারা পড়বে তারা আর বেঁচে নেই। অসৎ, অধঃপতিত, স্খলিত হবার ফলে একদা-পাঠকের কল্পনাজগতটিতে বিস্ময়ের স্থান সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। তার চিন্তার পৃথিবী অর্থকরী। ভ্রমণে বেরোবার আগে ফিরে আসার টিকিট সম্পর্কে সে নিশ্চিত হতে চায়। খবরের কাগজে উত্তেজক সংবাদ না থাকলে তার আগ্রহ থাকে না। গভীর জ্ঞানের পরিবর্তে সে সবজান্তা হয়ে উঠতে চায়। সমস্যা না থাকলেও, নিজের জর্জরিত রাখার নেশায় সে মশগুল। সে সবার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলবে কিন্তু সে চায় না যে তার সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুলুক। ভ্রমের যে এলাকাটিতে তার নিবাস, সে জায়গায় কবিতার স্বপ্ন, কল্পনা ও বাস্তবের প্রয়োজন নেই।

এই লোকগুলো, বর্তমানের মজা লোটায় আক্রান্ত। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভিশান থেকে এরা বঞ্চিত। নতুন ফ্রনটিয়ারকে এরা বরদাস্ত করতে পারে না। এদের খাদ্য হল সাংস্কৃতিক খিচুড়ি। স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হলে এরা শঙ্কিত হয়। এদের মূল বিচরণক্ষেত্র হল বাজার, যে বাজার এদের অন্তরে নানান চাহিদা গড়ে তোলে এবং কৃত্রিম চাহিদাকে তারা রূপান্তরিত করে নিজের দাবি-দাওয়ায়, যে দাবি-দাওয়া মেটাতে অসৎ না হয়ে উপায় নেই।

এই অধঃপতনকে বৈধতা দেবার জন্যে, এই স্খলনকে ন্যায্যতা আরোপ করার জন্যে, ওই বাজার থেকেই তাকে সংগ্রহ করতে হয় উপাদান। বাজারে, সংস্কৃতির বাজারে, কবিতার কদর নেই। তাই অতীত নিয়ে নানারকম আদিখ্যেতা হলেও, দেখা যায়, অতীতের কবিতাও কেউ পড়ছে না। কেউ যখন বলে যে আগেকার মতন লেখালেখি হয় নাকো আর, বুঝতে হবে সে একজন ধাপ্পাবাজ, কেননা সে নিজেই আগেকারকালের কবিতার সঙ্গে পরিচিত নয়। কবিতার পাঠ কমে আসার কারণ সেহেতু কবিতা নয়, কারণ হল বাঙালি পাঠকের মৃত্যু।


পাঠকের মৃত্যু
মলয় রায়চৌধুরী

14/06/2024

রাজকবিগণ রাজার স্তুতিতে ব্যস্ত। এই লোককবি লোকদের সামনে তুলে ধরছেন রাষ্ট্রের অসংগতি।

13/06/2024

কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কবি আহমেদ শিপলু।

13/06/2024

কোকাকোলার এজেন্ট-২
এই এজেন্ট হুজুর তো বলছেন কোক ওখানকার পণ্যই নয়।
এই হুজুরকে কী করবেন? বয়কট, নাকি গ্রহণ?

12/06/2024

কোকাকোলার এজেন্ট এই হুজুরকে বয়কট করা হবে না?

10/06/2024

ওরা জানেই না যে কোকাকোলা ইসরায়েলি বা ইহুদিদের পণ্য নয়। বরং ফেসবুক ইহুদি মালিকানাধীন। ইহুদির ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তথাকথিত 'ইহুদি পণ্য' কোকাকোলা বর্জনের হুমকি দিচ্ছে। কী হাস্যকর দ্বিচারিতা। এরা আর কতকাল অন্ধকার সুড়ঙ্গে ঘুরপাক খাবে!

08/06/2024

ব্রাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫
পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল ১ লাখ টাকা।
পুরস্কার পেয়েছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান এবং রাজকুমার সিংহ। দৈনিক সমকালের সাহিত্য সাময়িকী 'কালের খেয়া'র প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয়েছিল।

08/06/2024

দারিদ্র্য মানুষকে ইতর করে, হীনম্মন্য করে, অপরাধী করে। দারিদ্র্য একটি অভিশাপ। এই অভিশাপ মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। দারিদ্র্য মানুষকে মোটেই মহান করে না। নজরল যে লিখেছেন, 'হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান', এটা মনে হয় কবিতার ছন্দ মেলানোর জন্য লেখা। সম্ভবত নজরুল নিজেও মনে করতেন না দারিদ্র্য মানুষকে খ্রিষ্টের সম্মান দেয়। অন্যের কাছে হাত পাতার চেয়ে লজ্জাষ্কর জগতে আর কী আছে? দরিদ্রকে নয়, দারিদ্র্যকে ঘৃণা করি। ভয় করি। দারিদ্রের কবলে পড়ার চেয়ে মৃত্যু অধিক শ্রেয়।

08/06/2024

চট্টগ্রামী ভাষায় গরু-ছাগলের হাট।
হ্নীলা, টেকনাফ।

07/06/2024

রাতের সমুদ্র।

06/06/2024

হেন কোনো বই নেই, যা জালাল উদ্দিন রুমি পড়লেন না। হেন কোনো জ্ঞান নেই, যা রুমি অর্জন করলেন না। কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যায় তাঁর তৃষ্ণা মিটছে না। কেবলই মনে হচ্ছে কোথাও যেন খামতি রয়ে গেছে, কোথাও যেন একটা শূন্যতা রয়ে গেছে। কিন্তু শূন্যতাটা কীসের, তা তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

সেসব দিনের একদিন দেখা হলো শামস তাবরিজের সঙ্গে। শামস তাবরিজ মজ্জুব। অর্থাৎ পাগল কিসিমের। ঠিক পাগল নয়, ফকির বলা যেতে পারে। দীনহীন। সেই অর্থে তাঁর বাড়িঘরও নেই। যেখানে রাত, সেখানে কাৎ। অনেকটা প্রাচীন গ্রিকের সিনিকাল দার্শনিকদের মতো। তিনি এসব পুঁথিগত বিদ্যার ধার ধারেন না। তিনি আত্মজ্ঞানী। লালনের মতো। লালন যেমন বলেছেন, 'আত্মতত্ত্ব যে জেনেছে/নিজ তত্ত্বে নিরঞ্জন পেয়েছে।' তাবরিজও নিরঞ্জনকে পেয়ে গেছেন।

একদিন রুমি গেলেন তাবরেজির কাছে, তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে। কেননা তিনি বুঝতে পারছিলেন তাঁর তৃষ্ণা একমাত্র শামস তাবরিজই মেটাতে পারবেন। তাবরিজ বললেন, আমি মদ খাব, তুমি আমার জন্য এক বোতল মদ নিয়ে আসো। কী বিপদ! রুমি তখন বিখ্যাত পণ্ডিত, অধ্যাপক। যাকে বলে মাওলানা। চারদিকে তাঁর খ্যাতি। তাবরিজের জন্য শুঁড়িখানা থেকে মদ আনবেন, লোকে দেখলে কী বলবে! কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। তাবরিজের হুকুম তামিল করতেই হবে। নইলে শিষ্য হওয়া যাবে না।

রুমি গেলেন মদের দোকানে। দোকানদারকে বললেন, আমার ঘোড়ার সর্দি হয়েছে, এক বোতল মদ দাও। সেই কালে ঘোড়ার ঠান্ডা লাগলে মদ খাওয়ানো হতো। দোকানদার দিল এক বোতল মদ। রুমি বোতলটা এনে রাখলেন তাবরিজের সামনে। তাবরিজ বললেন, শেষ পর্যন্ত তুমি আমাকে ঘোড়া বানালে! হবে না, এই মদে হবে না। যাও, দোকানদারকে গিয়ে বলো যে তুমিই মদ খাবে। তোমার জন্য যেন এক বোতল মদ দেয়।

রুমি আবার গেলেন দোকানে। নিজের জন্য এক বোতল মদ চাইলেন দোকানদারে কাছে। বোতলটা জামার নিচে লুকিয়ে আনলেন তাবরিজের কাছে। তাবরেজি বললেন, না, এই মদও আমি খাব না। এটা তুমি লুকিয়ে এনেছ। মদ তোমাকে প্রকাশ্যে আনতে হবে, সবার সামনে দিয়ে। তবেই আমি খাব।

রুমি তাই করলেন। এবার বোতলটা মাথায় করে সবাইকে দেখিয়ে আনলেন। তাঁর মাথায় মদের বোতল দেখে লোকজন ছি ছি করতে লাগল, ধিক্কার দিতে লাগল। শেষ পর্যন্ত মাওলানা রুমি মদ্যপ হয়ে গেলেন! এই দৃশ্যও দেখতে হলো! কারো কথা কানে না তুলে রুমি বোতলটা এনে রাখলেন তাবরিজের পায়ের কাছে। তাবরিজ বললেন, মদ আমি খাব না। এক কাজ করো, এই মদ দিয়ে তোমার জায়নামাজ রাঙিয়ে দাও।

তাবরিজ আসলে রুমির পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। রুমির আমিত্বের বিসর্জন দেওয়াচ্ছিলেন, তাঁর শাস্ত্রজ্ঞান লুপ্ত করে দিচ্ছিলেন। গুরু শামস তাবরিজ সম্পর্কে রুমি তাঁর ‘মসনবি’ কাব্যে লেখেন, ‘খোদ বখোদ কামেল না-শুদ মোল্লায়ে রুম/তা গোলামে শামসে তাবরিজে না-শুদ।’ অর্থাৎ আমার গুরু শামস তাবরিজের দাসত্ব না করা পর্যন্ত আমি রুমি নিজে নিজে পূর্ণতা অর্জন করতে পারিনি।’

শামস তাবরিজের শিষ্যত্ব গ্রহণের আগে রুমি ছিলেন কিছুটা অহংকারী। জ্ঞানের অহংকার। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের (সবাই নয়) মতো আরকি। তাবরিজের শিষ্যত্ব গ্রহণের পর একদিন তিনি রাত করে বাড়ি ফিরছিলেন। দরজার সামনে দেখতে পেলেন একটি কুকুর ঘুমাচ্ছে। তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তাঁর ছাত্র দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করল। রুমি বললেন, কুকুরটা ঘুমাচ্ছে। আমি ঘরে ঢুকতে গেলে তার ঘুমটা ভেঙে যাবে। তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো ঠিক হবে না।

রুমি তাঁর ‘মসনবি’তে বলেছেন, মানুষের মধ্যে যখন জ্ঞানের পূর্ণতা আসে তখন তার অহংকার দূর হয়ে যায়। সে হয়ে ওঠে বিনয়ী। তার কাছে তখন সকল জীব সম-মর্যাদার হয়ে ওঠে। মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীকে সে আর আলাদা করে না।


শত জ্যোৎস্নার মাধুরী
স্বকৃত নোমান
০৫.০৬.২০২৪

03/06/2024

পিতা-পুত্রীর আলাপ এবং 'যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন...।'

01/06/2024

আপনি নিজেকে মুসলমান দাবি করছেন। অথচ আপনার ভাষা-ব্যবহার দেখলে, শব্দপ্রয়োগ দেখলে, আচার-আচরণ দেখলে, খিস্তি আর গালাগাল দেখলে মনে হয়, আপনি মুসলমান তো ননই, মানুষও নন। মিথের দৈত্য-দানব বা ইবলিশ শয়তানও আপনার মতো এত নিকৃষ্ট, এত অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করত না। আপনার ভাষা যতটা নিকৃষ্ট, আমার মনে হয় না, কোনোভাবেই মনে হয় না, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরতের ভাষা এমন ছিল। কোথাও সেই প্রমাণ পাইনি। তাঁর ভাষা ও আচার-আচরণ আপনার মতো এমন নিকৃষ্ট হলে পৃথিবীজুড়ে তাঁর এত অনুসারী তৈরি হতো না। আমার ধারণা, আপনার মতো মুসলমান দেখলে হযরতও লজ্জা পেতেন।

আপনার জন্য করুণা৷ আপনার অন্ধত্ব দূর হোক। আপনার তৃতীয় চক্ষুর উন্মীলন ঘটুক।

01/06/2024

সাধারণভাবে আমাদের সমাজমন চায় এক প্রশ্নহীন আনুগত্য, আর তাই যে-কোনো জিজ্ঞাসা যে-কোনো সমালোচনা যে-কোনো ভিন্নমত মুহূর্তমধ্যে জাগিয়ে তোলে প্রবল বিরূপতা, প্রায় আক্রোশ, নানাচিন্তার সংঘর্ষের আর সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগোবার পথ তাই কেবলরই রুদ্ধ হতে থাকে। ব্যক্তিগত ভাবে যেমন, জাতিগত ভাবেও তেমনি, বিপরীত ভাবনাকে বুঝবার বা এমনকী তা শুনবার ধৈর্য আমাদের কম।

ভিন্ন রুচির অধিকার
শঙ্খ ঘোষ

31/05/2024

কল্পনা আর জিজ্ঞাসা থেকে বিজ্ঞানের জন্ম। মানুষের সকল বিকাশের জন্ম। সাহিত্য শিল্প বিজ্ঞান, মানুষের যাবতীয় সৃষ্টি, তা মঙ্গলময় হোক, আর অমঙ্গলময় হোক, কল্পনা আর জিজ্ঞাসা ছাড়া কোনো কিছুই সৃষ্টি হয় নি। যার কল্পনা নেই, জিজ্ঞাসা নেই, সে কেবল প্রবৃত্তিজাত সৃষ্টিতে সক্ষম। সে আর কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না।

--সমরেশ বসু

30/05/2024

অনুষ্ঠান মঞ্চে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান।
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

29/05/2024

অরুন্ধতী রায়কে আমার কখনোই গুরুত্বপূর্ণ ঔপন্যাসিক মনে হয়নি। তার 'দ্য গড অব স্মল থিংকস' কিংবা 'দ্য মিনিস্ট্রি অফ অটমোস্ট হ্যাপিনেস' পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, তিনি যত না ঔপন্যাসিক, তার চেয়ে বেশি অ্যাক্টিভিস্ট। উপন্যাসও এক ধরনের এক্টিভিজম, কিন্তু তার ধরনটা আলাদা। সোশ্যাল এক্টিভিজম ও লিটারারি এক্টিভিজমকে আলাদা করতে পারেন না অরুন্ধতী। দুটোকে গুলিয়ে জগাখিঁচুড়ি বানান, যার ফলে তার উপন্যাস পড়ার সময় বিরক্তির উদ্রেক ঘটে।

স্বকৃত নোমান
২৯.০৫.২০২৪

29/05/2024

গান শুনছিলাম। কিশোর কুমার ও লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গান : ‘আপ কি আঁখো মে কুচ মেহকে হুয়ে সে রাজ হ্যায়/আপ সে ভি খুবসুরত আপ কি আন্দাজ হ্যায়।’ ভালো লাগছিল, খুব ভালো। মনে হচ্ছিল, বেঁচে থাকা সুন্দর, খুব সুন্দর। কোনিয়ার ঘুর্ণায়মান দরবেশদের মতো নৃত্য করতে ইচ্ছে করছিল। কিংবা সুফি কবি সৈয়দ তারিকের মতো। তারিক ভাই মাঝেমধ্যে রুমি-ঘরানার ঘূর্ণায়মান দরবেশদের মতো নাচেন, ফেসবুকে দেখি।

কিন্তু আমার তো সেই আলখাল্লা নেই, সেই ভাবও নেই। আমার মতো নাদানের পক্ষে ভাবরসে নিমজ্জিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। ভেবেছিলাম এরপর জয়দেবের গান শুনব। গীতগোবিন্দ। ভারতীয় শিল্পীরা চমৎকার করে গায় গীতগোবিন্দ। ওই ভাষাটা বুঝি বলে গীতগোবিন্দের রসে ডুবে যেতে কোনো অসুবিধা হয় না। আহা জয়দেব! সেই কত কাল আগে, বারো শতকে, জয়দেব কী গীত সৃষ্টি করলেন! এখনো নাড়িয়ে দেয়, ভয়ংকরভাবে ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়।

গোবিন্দ, অর্থাৎ কৃষ্ণ, আমার প্রিয় চরিত্র। না, তিনি 'অবতার' বলে নয়। প্রিয় এই জন্য যে, বাংলা-ভারতের মধ্যযুগের সাহিত্য, লোকসাহিত্য ও সংগীতের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে তাঁর প্রভাব। বলা যায়, গত দেড় হাজার বছর ধরে একদার মথুরা-নিবাসী, পরবর্তীকালের দ্বারকাধীশ শ্রীকৃষ্ণ ভারতীয় সাহিত্যে অধিকার করে আছেন গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বাংলা-ভারতে কৃষ্ণ-আশ্রিত সংগীতের চর্চা এত বিপুল হয়েছে যে, একটা সময় প্রবাদ হয়ে গিয়েছিল, ‘কানু বিনে গীত নাই।’

সে যাই হোক, আমি যখন সংগীতের ভাবরসে নিমজ্জিত, তখন ফেসবুকে ভেসে উঠল একটা খবর। ‘প্রথম আলো’ নিউজটা করেছে। সংগীত শিল্পী রিংকু বলছেন, ‘একটু আড়াল হলেই বন্ধু ও সহকর্মীরা কাজের জন্য খোঁজ-খবর নিতেন। কিন্তু অসুস্থ হয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকার পর সেই প্রিয় মানুষেরা যেন অচেনা হয়ে যান। সেই মানুষেরাই আর খবর নেন না।’

মনটা খারাপ হয়ে গেল সহসা। যেন ঘুর্ণিঝড় রেমাল-এর মেঘ জমে গেল মনের আকাশে। না, শিল্পী রিংকুর জন্য নয়। মিথ্যা বলব না। মন খারাপ হলো জগত-সংসারের নিয়মের কথা ভেবে। জগত এমনই। আজ আপনার ঝাণ্ডা উড়ছে। চারদিকে আপনার জয়জয়কার। মানুষ আপনার বিপুল বন্দনা করছে। পাঠক আপনার বই কিনছে, অটোগ্রাফ নিচ্ছে, পড়ছে, প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, আপনার প্রশংসায় পাঁচমুখ হচ্ছে। টিভিতে, পত্রপত্রিকায় আপনি ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন, বন্ধুরা লাইক-কমেন্ট করছে। কিন্তু কাল? কাল যদি কোনো দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন, কোনো রোগে আক্রান্ত হন, বন্ধুরা বড়জোর এক সপ্তাহ আপনার খবর নেবে। আত্মীয়-স্বজনরা বড়জোর এক মাস দেখভাল করবে। তারপর তারাও হয়ে পড়বে বিরক্ত। মনে মনে বলবে, লোকটা মরে না কেন? ডিজগাস্টিং। মরলে বেঁচে যাই।

কদিন আগে বাংলাদেশের কিংবদন্তিতুল্য এক অভিনেতার সঙ্গে কথা হচ্ছিল ফোনে। তাঁকে একটা অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছিলাম। তিনি বেশ কিছুক্ষণ আমার ওপর খেদ ঝাড়লেন। দীর্ঘ দিন তিনি অসুস্থ ছিলেন, আমি কেন তাঁর খবর নিলাম না, কেন তাঁকে নিয়ে দুটো কথা পত্রিকায় বা ফেসবুকে লিখলাম না। তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যাবেন না। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন সব কিছু থেকে। তাঁর ভাষায়, ‘আমি কোথাও নাই, হারিয়ে গেছি। আমাকে কেউ আর খুঁজে পাবে না।’ তিনি আরও খেদ ঝাড়ছিলেন বর্তমান চলচ্চিত্র পরিচালকদের ওপর, সংস্কৃতিসেবীদের ওপর। বলছিলেন, এখন সবাই শর্টকার্ট সিনেমা বানাতে চায়, নাটক বানাতে চায়। এখন সবাই ফেসবুক অভিনেতা, ইউটিইউব অভিনেতা; প্রকৃত অভিনেতাদের এখন কদর নাই। তাঁর মতো অভিনেতাদের কোনো দাম নাই।

আমি বুঝতে পারছিলাম তাঁর আবেগ। কিন্তু পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী তাঁর আবেগের কোনো মূল্য নাই। শুনতে তিক্ত শোনালেও আসলেই কোনো মূল্য নেই। জগত-সংসার এমনই, একটা বয়সের পর কেউ আর দাম দেয় না। বৃক্ষের নতুন পল্লবের মতো। নতুন পাতা গজালে পুরনো পাতাদের ঝরে যেতে হয়। সে কারণে প্রাচীন ভারতে বানপ্রস্থে যাওয়ার রীতি ছিল। একটা বয়সের পর ঘর-সংসার ছেড়ে, পুত্র-কন্যা কিংবা পৌত্র-পৌত্রীদের ওপর ঘর-সংসারের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বানপ্রস্থে চলে যেত। যেমন চলে গিয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট, গান্ধারী, কুন্তী কিংবা বিদুর। কারণ নতুনেরা, অর্থাৎ পাণ্ডবেরা এসে গেছে। নতুনকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। ছেড়ে দিতে হবে, কারণ পুরনোদের বেলা ফুরিয়ে গেছে। জীবন-সূর্য অস্তে হেলে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন, ‘এখন আমার বেলা নাহি আর/বহিব একাকী বিরহের ভার।’ বানপ্রস্থে গিয়ে সংসার-বিরহের ভার, পুত্র-কন্যাদের বিরহের ভার একাকী বইতে হবে।

সুতরাং, বেলা পড়ে যাওয়ার আগে, হে জীবন-পিয়াসী, জীবনকে উদযাপন করো। আনন্দের সঙ্গে কাটিয়ে দাও বর্তমান। এই বর্তমান আর কখনো ফিরবে না। ভাব ধরো না। ভাব ধরে কোনো লাভ নেই। তোমার মতো কত ভাবধারী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এই ধূলার ধরা থেকে। তাই অনন্ত আনন্দে জাগো। বলো, চিয়ার্স। বলো, এই বর্তমান সুন্দর। এই বেঁচে থাকা সুন্দর। এই জীবন সুন্দর।

শত জ্যোৎস্নার মাধুরী
স্বকৃত নোমান
২৭.০৫.২০২৪

28/05/2024

কল্যাণী মহাবিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
যেভাবে সংবর্ধিত হন কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান।

24/05/2024

নাজুর বারান্দা-বাগানের বেলি।
সারা রাত সুবাস ছড়াবে শোবার ঘরে।

Our Story

কথাসাহিত্যিক

Videos (show all)

কবি হারিসুল হকের কবিতা পাঠ করছেন কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান।@Channel i
আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে
রাজকবিগণ রাজার স্তুতিতে ব্যস্ত। এই লোককবি লোকদের সামনে তুলে ধরছেন রাষ্ট্রের অসংগতি।
কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কবি আহমেদ শিপলু।
কোকাকোলার এজেন্ট-২এই এজেন্ট হুজুর তো বলছেন কোক ওখানকার পণ্যই নয়।এই হুজুরকে কী করবেন? বয়কট, নাকি গ্রহণ?
কোকাকোলার এজেন্ট এই হুজুরকে বয়কট করা হবে না?
রাত, কুকুর ও সমুদ্র
চট্টগ্রামী ভাষায় গরু-ছাগলের হাট।হ্নীলা, টেকনাফ।
রাতের সমুদ্র।
আকাশ ও সমুদ্র।কণ্ঠ : কবি রাজিব কুমার দাশ।
খেলিছ এ বিশ্বলয়ে বিরাট শিশু...নজরুলের গান ও কবি রাজীব কুমার দাশ
পিতা-পুত্রীর আলাপ এবং 'যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন...।'

Website