x tesh

x tesh

Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from x tesh, Digital creator, .

Photos from x tesh's post 08/02/2024
31/01/2024

me

31/01/2024

#সুখেরও_সন্ধানে
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:০৭]
শ্রাবণের হাস্যজ্জ্বল মুখখানা মুহূর্তেই হয়ে উঠলো গম্ভীর। একদৃষ্টিতে নাহিয়ানের পানে তাকিয়ে আছে সে। নাহিয়ানের দৃষ্টিও একইভাবে তার মুখশ্রীতে স্থির। উতলা হয়ে উঠেছে মন। পূর্বের কথাটার অর্থ বোঝার জন্য উদগ্ৰীব হয়ে আছে। নিরবতার অবসান ঘটিয়ে শ্রাবণ বলে উঠলো,“কেউ কী এমনি এমনি কাউকে সাহায্য করে মি.নাহিয়ান?”
হঠাৎ এই প্রশ্ন? মানেটা বুঝতে পারলো না নাহিয়ান। যা তার চোখেমুখে সুস্পষ্ট। শ্রাবণ তার মুখভঙ্গি দেখে তা সহজেই টের পেলো। পুনরায় বললো,“অনুভা আপনার উপর বরাবরই কৃতজ্ঞ। কারণ তার কঠিন দুর্দশার সময় এই চাকরির সন্ধানটা আপনিই তাকে দিয়েছিলেন। ও শুরু থেকেই আপনাকে বড়ো ভাইয়ের দৃষ্টিতে দেখে আসছে। সে অনুযায়ী আপনাকে সম্মানও করে। কিন্তু আপনি কী তাকে আদতে বোন হিসেবে ট্রিট করেন?”
ভড়কে গেলো নাহিয়ান। আমতা আমতা করে ফের বললো,“মানে?
“এত মানে মানে করছেন কেন? সত্যটা তো আপনিও জানেন আমিও জানি তাহলে এত নাটকীয়তার কী প্রয়োজন আছে মি.নাহিয়ান?”
সন্তর্পণে নিঃশ্বাস ফেলে স্থির হয়ে দাঁড়ালো নাহিয়ান। ললাটে জমে থাকা ঘাম বাম হাত দিয়ে মুছে নিয়ে বললো,“সবটা জানেনই যখন তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন? নাকি আমার মুখ থেকে শুনতে চাইছেন? আপনি কে তা আমি জানি না। কীভাবে এসব জানলেন তাও জানি না তবে এটাই সত্যি যে আমি শুরু থেকেই অনুকে ভালোবাসি। অনু বুঝুক বা না বুঝুক তবুও আমি ওকে ভালোবাসি।”
মুখশ্রী কঠিন হয়ে উঠলো শ্রাবণের। তীক্ষ্ণ কণ্ঠে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বললো,“আর বাসবেন না।”
চমকে গেলো নাহিয়ান। প্রশ্ন করল,“ভালোবাসবো না? এ আবার কেমন কথা?”
“কেমন কথা তা তো জানি না। তবে আজকের পর থেকে অনুভা নামক মেয়েটিকে আপনি আর ভালোবাসবেন না। পৃথিবীতে সবাইকে ভালোবাসার অধিকার থাকলেও অনুভাকে ভালোবাসার অধিকার আপনার নেই। অপাত্রে ভালোবাসা ঢালাটা যে সময় নষ্টের কাতারে পরে মি.নাহিয়ান। অনুভা নামক পথ আপনার জন্য নিষিদ্ধ, কাঁটার ন্যায় বিষাক্ত বিষ।”
“আমি না হয় কাঁটায় পা দিয়ে এই বিষটাই পান করতে চাই।”
কঠিন, গম্ভীর মুখখানায় হুট করেই সূর্যের ন্যায় ঝলকে উঠলো একফালি হাসি। যেই হাসিতে মিশে রয়েছে ভয়ানক কিছু। শ্রাবণ শীতল কণ্ঠে বললো,“তাহলে আপনার মৃ'ত্যু যে নিশ্চিত মি.নাহিয়ান। অনুভা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই আপনার মৃ'ত্যু সুনিশ্চিত।”--কথাটুকু বলেই নাহিয়ানকে রেখে গাড়ির কাছে চলে গেলো শ্রাবণ।
শ্রাবণের অপেক্ষায় এতক্ষণ ধরে গাড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো অনুভা। শ্রাবণ গিয়ে গাড়ির দ্বার খুলে দিতেই ভেতরে গিয়ে বসলো সে। এরপর শ্রাবণ নিজেও ভেতরে ঢুকে সিট বেল্ট বেঁধে নিলো।
নাহিয়ান পথেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো। মস্তিষ্ক জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে ছেলেটার বলা কথাগুলো। তার চোখের সামনেই রাস্তার ধুলো উড়িয়ে চলে গেলো গাড়িটি। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিলিয়ে গেলো অদৃষ্টে। নাহিয়ান হুট করেই অনুভব করল তার অনুভূতিতে মরীচিকা ধরে যাচ্ছে। এতদিনের ভালোবাসাটা হয়ে যাচ্ছে ফিকে। তাহলে সত্যিই কী সে অপাত্রে ভালোবাসা দান করল? লুকিয়ে লুকিয়ে একতরফা ভালোবেসে কী সত্যিই ভুল করল?
“মামা কই যাইবেন?”
হঠাৎ এমন ডাকে নড়েচড়ে উঠলো নাহিয়ান। দেখতে পেলো রাস্তার কিনারা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে একটি রিক্সা। রিক্সাচালক উপর্যুক্ত প্রশ্নটি করে তার পানে চেয়ে আছে উত্তরের আশায়। নাহিয়ান উঠে বসলো তাতে। আনমনে বললো,“যেদিকে দুচোখ যায়।”
“এই রাইতের বেলা আমার লগে কী মজা করেন মামা?”
“মজা! এই মুহূর্তে আমার জীবনে এসব মজা টজা বলে কিছুই নেই। যতো চাইবে ভাড়া না হয় ততোই দিবো, এবার চলো।”
“যাইবেন কই? ঠিকানাডা তো কন।”
“বললাম না দুচোখ যেদিকে যায়।”
রিক্সা চালক আর কোনো প্রশ্ন করলেন না। নিরবে চালাতে লাগলেন রিক্সা।
মনোযোগ সহকারে ড্রাইভ করছে শ্রাবণ। তার পাশে বসে হাঁসফাঁস করছে অনুভা। বলতে চাইছে কিছু কিন্তু কীভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। সামনের আয়না দিয়ে পুরোটাই খেয়াল করল শ্রাবণ।শুধালো,
“বলবে কিছু?”
“নাহিয়ান ভাইয়ার সামনে অমন করে কথা বলা তোমার উচিত হয়নি।”
“কেমন করে বলেছি? বকেছি তোমায়?”
“বকবে কেন? আসলে ওই যে অমন করে কথা বললে না? কে জানে উনি কী ভাবলেন আমাদের সম্পর্কে।”
“অন্যের ভাবনা দিয়েও তো দেখছি তোমার অনেক কিছু যায় আসে নোভা। শুধু আমার ভাবনা দিয়েই তোমার কিছু যায় আসে না।”----কথায় তার তাচ্ছিল্য ভাব।
চট করেই বিষয়টা ধরে ফেললো অনুভা। মাঝে মাঝে এমন ত্যাড়া ধরণের কথা শুনলে খুব রাগ হয় তার। এবারও হলো। প্রশ্ন ছুঁড়লো,“এতদিন পর আমাদের আবার দেখা হচ্ছে কেন বলো তো? এটা কী সত্যিই কাকতালীয় ঘটনা? প্রথম সাক্ষাৎ এর মতোই কী কাকতালীয়?”
“যদি বলি ইচ্ছাকৃত?”----শ্রাবণের সোজাসাপ্টা জবাব।
ভ্রু যুগল কুঞ্চিত হয় অনুভার। কণ্ঠে বিষ্ময় এনে শুধায়,“ইচ্ছাকৃত?”
চলন্ত গাড়িতে হঠাৎ করেই ব্রেক কষে শ্রাবণ। সিট বেল্ট খুলে অনুভার দিকে ঘুরে বসে। পাল্টা প্রশ্ন করে,
“আমাদের যে আবার দেখা হচ্ছে এতে কী তুমি খুশি নও?”
ভড়কে যায় অনুভা। হঠাৎ করে যে তাকে এমন একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তা কষ্মিনকালেও ভাবতে পারেনি সে। কী উত্তর দিবে এখন? প্রশ্নের উত্তরটা যে নিজের কাছেই তার অজানা। সত্যিই কী শ্রাবণ নামক অদ্ভুত পুরুষটির সঙ্গে পুনরায় দেখা হওয়ায় অখুশি সে? তার থেকে আশানুরূপ কোনো উত্তর না পেয়ে চোয়াল শক্ত হলো শ্রাবণের। তিরিক্ষ মেজাজে বললো,
“খুশি নও তাই না? কেন খুশি নও? জীবনে কী বসন্ত এসেছে? কী হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন? এসেছে কী বসন্ত?”
একনাগাড়ে প্রশ্নগুলো করে থামলো শ্রাবণ। ঘাবড়ালো অনুভা। বুঝতে পারলো ছেলেটা রেগে গেছে। শুকনো ঢোক গিলে দুদিকে মাথা নাড়িয়ে অস্পষ্ট আওয়াজে উত্তর দিলো,“নাহ।”
মুখের আদল বদলালো শ্রাবণের। ছোট্ট একটা শব্দে পুরো দেহ শীতলতায় ছেয়ে গেলো। কণ্ঠ হলো মোলায়েম। গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,“না আসাই ভালো। তোমার জীবনে বসন্ত আসা নিষিদ্ধ নোভা। তোমার জীবনে শুধু একটা ঋতুই আসবে আর তা হচ্ছে বর্ষাকাল। শ্রাবণের বর্ষাকাল। বর্ষার মেঘমালাকে তুমি দুচোখ ভরে দেখবে, ভালোবাসবে। বৃষ্টির জলে গা ভেজাবে। আর সেই বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় শ্রাবণ মিশে তোমাকে ছুঁয়ে দিবে। অনুভার জীবন হবে শুধুই শ্রাবণময়।”
নিষ্পল দৃষ্টিতে সামনে বসে থাকা সুদর্শন পুরুষটির পানে তাকিয়ে আছে অনুভা। অশান্ত মণি দ্বারা খুঁজে ফিরছে অপর চোখ থেকে কিছু। মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে তাণ্ডব চালাচ্ছে বাক্যগুলো। শেষ বাক্যটি কণ্ঠনালীতে গিয়ে খুঁটি গেড়েছে,‘অনুভার জীবন হবে শুধুই শ্রাবণময়!’
ততক্ষণে পূর্বের ন্যায় আবারো গাড়ি চালানোতে মনোনিবেশ করেছে শ্রাবণ। অনুভা যে অন্যমনস্ক হয়ে গেছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারলো সে কিন্তু কিছুই বললো না। নিরবে দ্রুত গতিতে পাড়ি দিতে লাগলো পথ।
পূর্বের মতো সেই একই রাস্তায় গাড়ি থামালো শ্রাবণ। অনুভা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল।বিদায় নেওয়ার কথা মনে রইলো না আজ। রোবটের ন্যায় হাঁটা ধরলো সামনের পথ ধরে।একসময় মিলিয়ে গেলো অন্ধকার গলির ভেতরে। তার চলে যাওয়া দেখেই মুচকি হাসলো শ্রাবণ। এবার নিজের বাড়ি ফেরার পালা।
_______
আজ বাড়ি ফিরেই সোজা নিজের ঘরে প্রবেশ করল অনুভা। পোশাক বদলে হাত-মুখ ধুয়ে ঘর থেকে বের হলো। উঁকি দিলো বোনের ঘরে। তাঈম ঘুমিয়ে আছে বিছানায়। তার একপাশে একটা কোলবালিশ আর একটা পাশ বালিশ দিয়ে বাঁধ দেওয়া যাতে সে নিচে পড়ে না যায়। আরেক পাশে শোয়া অর্থিকা। ঘুমিয়ে আছে সে। শ্রাবণের কথায় তিনদিন আগেই তাকে ভালো একজন সাইক্রিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিল অনুভা। ঘণ্টা বেঁধে দুজন কী এমন কথা যে বলেছিল কে জানে? তারপর থেকেই হুট করে বদলে গেলো মেয়েটা। ছেলের প্রতি আগের থেকেও অনেক যত্নশীল হয়ে উঠলো। দুদিন ধরে তার কাছেই তো ঘুমায় তাঈম।
রাতের খাবার খেয়ে ড্রয়িং রুমের আলো নিভিয়ে ঘরে এসে দরজা লাগালো অনুভা। ঘরটায় ছোট্ট একটা ব্যালকনি আছে। আকারে সরু। ছোটো একটা টুল রেখে নির্দ্বিধায় বসা যায় সেখানে। ফ্ল্যাটের ঘরগুলোও অতো বড়ো নয়। ছোটোই বলা চলে। এত সস্তায় ভালো কিছু আশা করাটাও বোকামি। অনুভার খেয়াল হলো এই ঘরে আজ পাঁচ মাস ধরে থাকছে সে অথচ এই বারান্দাটায় দুদণ্ড এসে বসেছে বলে মনে হয় না তার। একটা টুল পেতে আজ এখানে বসলো অনুভা। বাহিরে জ্যোৎস্না রাত কিন্তু চাঁদটা ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। সম্মুখেই বিশাল একটা বিল্ডিং। এই বিল্ডিং এর কারণে আকাশটাই পরিপূর্ণ দেখা যাচ্ছে না সেখানে চাঁদ তো দূরহ ব্যাপার।
তবুও বসে রইলো অনুভা।যতটুকু দেখা যায় ততটুকুই আপনমনে দেখতে লাগলো। মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে রইলো তারকামণ্ডলীর পানে। অতীত ঘেঁটে করতে লাগলো স্মৃতিচারণ।
অনুভার ছোটোবেলাটা কেটেছে মূলত ভ্রমণের মতো। বাবা পুলিশ অফিসার থাকার দরুন প্রতি বছরই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি হতে হতো উনাকে। অর্থিকা আর অনুভাকেও বদলাতে হতো স্কুল। প্রথম প্রথম বন্ধুদের ছেড়ে আসতে কষ্ট হলেও একসময় এতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে অনুভা। দুই বোনের বয়সের পার্থক্য কেবল পাঁচ বছরের। বড়ো বোনই তখন হয়ে ওঠে অনুভার প্রিয় বান্ধবী। স্কুল থেকে ফিরে সারাদিনের জমে থাকা গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসতো অর্থিকার কাছে। অর্থিকাও মনোযোগ সহকারে শুনতো ছোটো বোনের কথা। সব গুরুত্বপূর্ণ কথাই দুই বোনের মধ্যে থাকতো সিক্রেটের মতো। ঝগড়া হলেও কখনো এ নিয়ে কেউ কারো নামে অভিযোগ জানাতো না মায়ের কাছে।
অর্থিকা তখন দ্বাদশে পড়ে আর অনুভা সবে সেভেনের বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। কামরুল হাসান সিলেটের একটা থানায় বছর দুয়েক পোস্টিং ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে উনার আবার বদলি হয়ে যায় টাঙ্গাইলে। এদিকে অর্থিকার সামনে এইচএসসি পরীক্ষা।ওকে সঙ্গে করে নতুন জায়গায় পাড়ি দেওয়া যেমন সম্ভব নয় তেমনি একা রেখে যাওয়াটাও সম্ভব নয়। কী করবেন না করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না কামরুল হাসান। সবাইকে যে এখানে রেখে যাবেন তাতেও তো সমস্যা। সামনের বছর আবার অনুভার জেএসসি। এখানকার স্কুলেই আবারো ভর্তি করালে পরের বছরটাও পুরো পরিবারকে এখানেই থেকে যেতে হবে। অনেক ভেবেচিন্তে শেষে সিদ্ধান্ত হলো অর্থিকার পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত সুফিয়াই মেয়েকে নিয়ে থাকবেন এখানে। অনুভাকে নিয়ে কামরুল হাসান চলে যাবেন টাঙ্গাইল। ওখানকার একটা স্কুলেই ভর্তি করানো হবে তাকে।
তারপর আট আটটা মাস একে অপরকে ছেড়ে আলাদা থাকতে হয়েছে দুই বোনকে। রোজ ফোনে কথা হলেও অনুভার সে কি কান্না! বোনকে ছাড়া তার যেনো চলছেই না। অভিমানে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে দেয়, সেবার বাঁধিয়ে ফেলে অসুখও। গা পুড়িয়ে তার জ্বর আসে। কামরুল হাসানের প্রাণ হচ্ছেন দুই মেয়ে। সবার ঊর্ধ্বে উনার কাছে উনার মেয়েরা তারপর বাকি সবকিছু। থানা বাদ দিয়ে মেয়ের শিয়রে বসে সারারাত মাথায় পানি ঢালেন। সকাল হতেই ছুটেন হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে। টানা এক সপ্তাহ জ্বরে ভোগে সেবারের মতো সুস্থ হয়ে ওঠে মেয়েটা। প্রাণ ফিরে পান কামরুল হাসান। ওই আটটা মাস অনুভার কাছে মনে হয়েছিল যেনো আট যুগ। অর্থিকার পরীক্ষা শেষ হতেই কামরুল হাসান আবারো যান সিলেটে। সবকিছু গোছগাছ করে বউ মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন নতুন বসত বাড়িতে।
দুই বোন আবার একত্র হয়। তারপরের দিনগুলো মোটামুটি ভালোই চলছিল তাদের। মাস পাঁচেক পর ঢাকার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যায় অর্থিকা। ভার্সিটি টু টাঙ্গাইল যাতায়াত অসম্ভব হয়ে ওঠে তার জন্য। তারপর ওখানকারই একটা 'হলে' গিয়ে ওঠে সে। তখন অবশ্য কান্নাকাটি করে নিজের বেহাল দশা বানায়নি অনুভা। তার বোঝ হয়েছে, লেখাপড়া করে বড়ো কিছু হওয়ার জন্য যে বোনের যাওয়াটা প্রয়োজন তা বাবা খুব ভালো করেই বুঝিয়েছে তাকে। সাড়ে তিন বছর টাঙ্গাইল কাটিয়ে আবারো পোস্টিং হয় কামরুল হাসানের। তবে সেবার পোস্টিং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই নিয়েছিলেন। পোস্টিং হয়ে চলে আসেন মিরপুরের একটি থানায়। থানার কাছাকাছিই কিনে নেন বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট। ওখানকারই একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় অনুভাকে।অর্থিকাও তখন 'হল' ছেড়ে চলে আসে বাড়িতে। নিজের পরিবারের কাছে। তারপর বাড়ি থেকেই শুরু করে ভার্সিটিতে যাতায়াত।
আগের থেকে দুই বোনের সম্পর্কটার উন্নতি হয় অনেক। দেখতে দেখতে একটা একটা করে বছর কাটে। অনুভার এইচএসসি শেষ হয়।
অনার্স শেষ করে অর্থিকা ভর্তি হয় মাস্টার্সে। অনুভা এইচএসসি দিয়ে এডমিশনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ভর্তি হয় ফার্মগেটের ভালো একটা কোচিং সেন্টারের মেইন শাখায়।
অনুভার ক্লাস ছিলো একদিন পরপর। সবসময় বাস ধরেই মিরপুর টু ফার্মগেট যাওয়া আসা করতে হতো তাকে। প্রথম প্রথম অর্থিকা ছোটো বোনকে দিয়ে আসা নিয়ে আসা করলেও তারপরে রাস্তা চেনা হতেই অনুভা একা একাই যাতায়াত শুরু করে। কিন্তু হুট করেই একদিন মাঝ রাস্তায় বাসের মধ্যে ঘটে চরম বিপত্তি। যাকে বিপত্তি বললেও ভুল হবে। এককথায় হয়রানি।
ফার্মগেটের কাছাকাছি আসতেই হেল্পার ভাড়া উঠাতে শুরু করে যাত্রীদের নিকট হতে। অনুভা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে বাড়িয়ে দিতেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে নেয় হেল্পার লোকটা। কণ্ঠে বিরক্তি মিশিয়ে বলে,“এই রাস্তায় কী নতুন নাকি আপা?”
এহেন প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় অনুভা। শুধায়,
“নাহ। কেন বলুন তো?”
“আপনে মিরপুর তে বাসে উঠছেন না? তাইলে হাফ ভাড়া দিলেন ক্যান?”
“স্টুডেন্টদের জন্য তো হাফ ভাড়াই নির্ধারিত। আমি তো একদিন পরপরই যাতায়াত করি তখন তো হাফ ভাড়াই দেই।”
“আপনে স্টুডেন্ট?”
“হুম। এই যে কলেজ ব্যাগ।”---কোলের উপর থাকা ব্যাগটা দেখিয়ে বললো অনুভা।
হেল্পার ছেলেটা দেখেও না দেখার ভান ধরে বললেন,
“এইসব ব্যাগ ট্যাগ দিয়া হইবো না। প্রমাণ দেন।”
ব্যাগ থেকে আইডি কার্ডটা বের করে ছেলেটার সামনে তুলে ধরলো অনুভা। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটা সুর বদলে টাকাটা অনুভার কোলের উপর ফেলে দিলো। অন্য যাত্রী থেকে ভাড়া উঠাতে উঠাতে বললো,“ওই সব হাফ ভাড়া টাড়া এহন আর নাই আপা। পুরা ভাড়াই দিতে হইবো।”
“পরশুও তো বাস দিয়েই গেলাম। কই তখন তো শুনলাম না হাফ ভাড়া বন্ধ হয়ে গেছে?”
লোকটি এবার কর্কশ কণ্ঠে বললো,“দেখেন আপা হুদাই তর্ক করবেন না। টাকা পয়সা না থাকলে গাড়িতে উঠেন ক্যান?”
লোকটার কথায় বেশ অপমানিতবোধ করল অনুভা। বাস ভর্তি মানুষের সামনে এমন একটি কথা যেনো কিছুতেই নিতে পারলো না।চুপচাপ ব্যাগ থেকে বাকি টাকাটা বের করে পূর্বের টাকার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে দিলো ভাড়া। কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পেলো অন্য আরেকজন ছেলের থেকে হাফ ভাড়াই গ্ৰহণ করল হেল্পার লোকটি। দৃশ্যটি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই চট করে মেজাজ গরম হয়ে গেলো অনুভার।
চলবে ________

Website