Pankaj vlogs Barak Valley
Temple vibes only.
আজ পবিত্র শিব চতুর্দশী। হিন্দুদের একটি পবিত্র তিথি, যা শিবরাত্রি নামেই পরিচিত। এই তিথিতে পূন্যার্থ লাভের আশায় সকল শিবের ভক্তবৃন্দ উপবাস করে জল, বিল্বপত্র সহযোগে শিবকে স্নান করিয়ে দেয় অর্থাৎ সাধারণ অর্থে উপবাস শেষে শিবের মাথায় জল ঢালে।
আসুন জেনে নিই এই তিথির মাহাত্ম্য।
পুরাকালে বারানসীতে এক ভয়ঙ্কর ও হিংস্র ব্যাধ বা শিকারী ছিল। যেমন ছিল তার কুশ্রী চেহারা, তেমনি ছিল তার হিংস্র স্বভাব ও আচার আচরণ। শিকারের জন্য যাবতীয় অস্ত্রসস্ত্রে পরিপূর্ণ ছিল তার বাড়ি।
একবার বনে গিয়ে সে অনেকগুলো পশু শিকার করলো। শিকার শেষে সেই পশুদের কাঁধে ঝুলিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। পথিমধ্যে সূর্য অস্ত গেলো। সেও ক্লান্ত হয়ে পরলো। অতঃপর এক বৃক্ষতলে সে শিকার করা পশু নামিয়ে বিশ্রাম নিতে থাকলো। বিশ্রামরত অবস্থায় সে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম থেকে যখন জেগে উঠলো, তখন চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, নিশুতি রাতি।
এদিকে শুনতে পেলো চারপাশ থেকে হিংস্র পশুদের ভয়ঙ্কর গর্জন। ব্যাধ ভয় পেয়ে তার শিকার করা পশুপাখি লতাপাতা দিয়ে বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে রাখলো আর হিংস্র পশুদের আক্রমণের আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে সে নিজেও গাছের উপর উঠে আশ্রয় নিলো। গাছটি ছিল বেলগাছ। সেই গাছের নিচে ছিল একটি শিবের প্রতীকি পাথর আর তিথিটি ছিল শিব চতুর্দশী।
সেদিন ব্যাধও কাটিয়েছিল উপবাসে। গাছের উপরে শীত ও ক্ষুধায় তার শরীর কাঁপতে লাগলো। শিশিরে সে ভিজে উঠলো। এদিকে নিজের অলক্ষেই তার শরীর থেকে শিশিরসিক্ত জলের ফোঁটা টপটপ করে পড়তে লাগলো শিবলিঙ্গের উপর। সেই সাথে তার শরীরের ঝাঁকুনিতে বিল্বপত্রও ঝরে পড়তে থাকল সেই পাথরে। ফলশ্রুতিতে ব্যাধ নিজের অজান্তেই উপবাস করে বেলপাতা এবং শিশিরজলের মাধ্যমে শিবের মাথায় জল ঢেলে শিবরাত্রি ব্রত করে ফেললো।
কালক্রমে ব্যাধের আয়ু শেষ হলো, যমদূত তার আত্মাকে নিতে এলো। কিন্তু তার আগেই শিবের প্রেরিত দ্যূত তাকে শিবলোকে নিয়ে এলো। এদিকে আত্মার খোঁজে যমরাজ শিবলোকে উপস্থিত হলো। শিবের অনুচর নন্দীকে দেখে যমরাজ তাকে বললো, "এই ব্যাধ পাপিষ্ঠ, সারাজীবন ধরে কুকর্ম করে গেছে। একে যমলোকে গিয়ে শাস্তি প্রদান করতে হবে।" কিন্তু নন্দী বিস্তারিত ঘটনা যমরাজকে জানিয়ে বললো, "সারাজীবন পাপ করলেও নিজের অলক্ষে শিবরাত্রির ব্রত পালন করে সে সকল পাপের মোচন করেছে। তাই তার স্থান হয়েছে শিবলোকে।"
এই কথা শুনে যমরাজ প্রীত হয়ে চলে গেলেন।
এই হলো শিবরাত্রির মাহাত্ম্য।
তাই যে শিবরাত্রি ব্রত পালন করে তার সকল পাপের বিনাশ ঘটে এবং মৃত্যুর পর শিবলোকে তার স্থান হয়।
খুব ভাল থাকুন সবাই/সনজিত কর্মকার।
ভালোবাসার আরেক নাম
#মহাদেবপারবতী
সুপ্রভাত
মা সকলের মঙ্গল করুক
ঘটনাস্থল বারাণসীর কাছে৷ এক কুখ্যাত শ্মশান৷ এক অঘোরী, তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটিকে আবেগভরে চুম্বন করছে৷ সেই সম্পদটি আর কিছুই নয়৷ একটি খুলি৷ মানুষের৷ অঘোরীদের সাধনপথ তান্ত্রিক, কাপালিকদের মতোই৷ তাঁদের কাছে পৃথিবীর কোনও কিছুই অপবিত্র নয়৷ এই অঘোরীরা যে জীবনযাপন করে, সেটা হয়তো আমাদের কাছে খুব ‘অপবিত্র’৷ কিন্তু সেটা তাঁরা করে থাকেন খুব সচেতনভাবেই৷ বস্তুজগতের কোনও কিছুর প্রতিই তাঁদের মায়া বা মোহ নেই৷ নিজেদের মলমূত্র তাঁরা যেমন খেতে পারেন, তেমনই পারেন শবদেহ থেকে মাংস খেয়ে নিতে৷ ভালো মন্দ-সব কিছুতেই তাঁরা ঈশ্বর দেখতে পান৷ অঘোরীরা আসলে শৈব৷ যাঁর অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেন কালী৷ কালীই শক্তির উত্স৷ হিন্দুদের কাছে মা কালী থেকে উত্সারিত এই শক্তি থেকেই বিশ্বের সব কিছুরই উত্পত্তি৷ আর শক্তির মধ্যে তো একযোগে মিলে থাকে ভালো আর মন্দ৷ মা কালী যেমন একাধারে সৃষ্টি এবং ধ্বংসের দেবী৷ এই শক্তিও তাই৷ একইসঙ্গে লালন আর বিনাশ, সদয় আর নির্মম৷ জীবন আর মৃত্যু-সবই তিনি৷
বিশ্বাস, রহস্যময় এই অঘোরী সন্তরা তাই অন্তরের শিবশক্তি জাগাতে কালীরই সাধনা করেন, তবে তাঁদের আরাধ্যা হলে শ্মশান কালী৷ এই কালীর বাম পা শিবের বুকে স্থাপিত৷ যেটা এক অর্থে মোক্ষলাভের বিকল্প পথের রূপক৷ এই বিকল্প পথ বড়ই কঠিন, অদ্ভূত, ভয়ঙ্কর, নির্মম কৃচ্ছসাধনের৷ কঠিন হলেও অঘোরীরা নির্বাণের জন্য এই পথটিই বেছে নিয়েছেন৷ প্রতিটি অঘোরীই তাঁর সাধনক্রিয়ার জন্য বেছে নেন গভীর রাত৷ অন্ধকার যখন চরাচর ঢেকে দেয়, প্রতিটি প্রাণী চলে যায় ঘুমের দেশে, তখন শুরু হয় তাঁদের সাধনা৷ এঁদের সাধনপীঠ হল শবদেহ৷ যার ওপর বসেই এঁদের ধ্যান শুরু হয়৷ সামনের জ্বলন্ত চিতা আর উড়তে থাকা ছাই প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দেয় শেষ পর্যন্ত কোন গন্তব্যে পৌঁছতে চলেছে৷
কিন্তু শবদেহ ভক্ষণ বা মৃতদেহের সঙ্গে সঙ্গমের কি কোনও অর্থ আছে?
কোনও অঘোরীকে এই প্রশ্নটা করলে জবাব আসবে, জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিস্বাদের স্বাদ নেওয়া, প্রাণহীনতাকেই উপভোগ করা৷ বস্তুত, অঘোরীরা স্বাদের জন্য খাদ্য গ্রহণ করেন না, বা সুখের জন্য রতিক্রিয়া করেন না৷ আর সেই কারণেই যে-কোনও ধরনের খাবার, হতে পারে সেটা নিজের দেহের বা অন্য কারও বর্জ্য, তাঁরা ভক্ষণ করতে পারেন৷ এখানে খাবার উদ্দেশ্য একটাই, জীবনধারন৷ স্বাদ নেওয়া নয়৷
এই রহস্যময় অঘোরীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অদম্য কৌতূহলের কারণে আমি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছি৷ তবে, প্রকৃত অঘোরীর সঙ্গে দেখা করাটা মুখের কথা নয়৷ এঁরা জিপসির মতো এক শ্মশান থেকে অন্য শ্মশানে ঘুরে বেড়ান৷ সুতরাং তাঁদের কোনও পাকা ঠিকানা নেই৷ অঘোরীদের ক্রিয়াকর্মের জন্য অত্যন্ত গোপনীয়তা দরকার, তাই মানুষের আনাগোনা যেখানে খুবই কম, এমন কোনও শ্মশানে তাঁদের পাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি৷
তবে, ওই যা বললাম, আগাম পরিকল্পনা করে কোনও অঘোরীর সঙ্গে দেখা করা যায় না, খুঁজে বেড়ালে হয়ত তেমন কারও সঙ্গে একদিন দেখা হয়ে যেতে পারে৷ অনেক বন্ধুই আমার কাছে জানতে চান, দেখা হওয়ার পর অঘোরীরা ঠিক কী বলে থাকেন? তাঁরা সত্যিই দেহাবশেষ ভক্ষণ করেন কি না? বা রতিক্রিয়া করার জন্য তাঁরা ঠিক কী ধরণের শবদেহ পছন্দ করেন? কিন্তু অঘোরীরা এতই কম কথা বলেন (অনেক সময় আদৌ কথা বলেন না) যে সব কিছুর উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়৷ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, অঘোরীরা কথাবার্তায় অত্যন্ত অনিচ্ছুক আর শান্ত স্বভাবের মানুষ৷ তাঁদের ক্রিয়াকর্ম সমস্তটাই হয় অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে, এবং তাঁরা সচেতনভাবে এই প্রসঙ্গে কথাবার্তা এড়িয়ে চলেন৷ আমি এমন কোনও অঘোরী খুঁজে পাইনি যিনি সাগ্রহে আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন৷ অঘোরীদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতার বেশিরভাগটাই হল স্রেফ কিছুটা সময় তাঁদের সঙ্গে কাটানো আর ছবি তোলা৷ তবে তাঁরা যে ক্যামেরা জিনিসটা পছন্দ করেন, তা কখনওই নয়৷ কিন্তু, কেন জানি না, ছবি তুলতে বাধাও দেননি এঁদের কেউ৷
প্রকৃত অঘোরীর একটা বড় লক্ষণ হল তাঁর বাকসংযম৷ এঁরা প্রায় সব ক্ষেত্রেই নিরুত্তাপ থাকেন, আর এঁদের চাউনিতেও থাকে একটা শূন্যতা৷ তবে এর একটা কারণ হতে পারে এরা সবসময় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকেন প্রচুর মদ্যপান এবং গঞ্জিকা সেবন করে৷ আমি বহুবার জানার চেষ্টা করেছি অঘোরীদের এই বিপুল পরিমাণ মদ্যপান আর সর্বক্ষণ গঞ্জিকা সেবনের কেন দরকার পড়ে? তবে উত্তর মেলেনি৷ ওঁদের ভক্তদের বক্তব্য, নেশার ঘোরে থাকলে হয়ত ধ্যানের সময় মনঃসংযোগ ভালো হয়৷ আর ‘ক্রিয়া’র সময় মনের ভিতর হয়তো ভয় জন্মাতে পারে, নেশা সম্ভবত সেটা দূরে রাখতেও সাহায্য করে৷
বেনারসেই গঙ্গার ধারে এক অঘোরীর আস্তানা দেখেছিলাম৷ গল্পটা বলি৷ আস্তানাটা তৈরি হয়েছিল মূলত কয়েকটা কাপড় দিয়ে, যে কাপড়গুলো শবদেহ ঢাকতে ব্যবহার করা হয়৷ আর সেই আস্তানার বাইরেই গঙ্গার পাড়ের কাছে ভাসছে এক গলিত শবদেহ৷ ভাসছে বললাম, কেননা দেহটি একটি ভেলায় ভাসানো৷ যে নৌকায় ছিলাম সেটির মাঝি আমায় বললেন, এই শবদেহটি সম্ভবত ওই অঘোরী সাধু ভক্ষণ করেননি, কেননা সেটি সাপে কাটা৷ তবে ভেলার পাশে একটি পাত্রে থকথকে, অনেকটা ডিমের কুসুমের মতো একটা পদার্থ রয়েছে৷ প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি, সেটি কী৷ পরে আলোচনা করে বুঝতে পারলাম, সেটি সম্ভবত এই শবদেহটিরই মস্তিষ্কের অংশ, হয়তো সেই অঘোরী সেটা ভক্ষণ করেছেন!
অনেক সময় দেখেছি অঘোরী সাধুরা দল বেঁধে ঘোরেন৷ তবে দল বেঁধে ঘুরলেও তাঁরা কখনওই দল বেঁধে থাকেন না৷ এই সাধুদের একমাত্র অগ্রাধিকার একাকিত্ব আর নির্জনতা৷ শ্মশানঘাটগুলোয় ঘুরতে থাকা কুকুদের দল এঁদের একমাত্র সঙ্গী বলা যেতে পারে৷ অঘোরীরা খাদ্য এবং পানীয় গ্রহণ করেন মড়ার খুলিতে৷ নরকোটির উপরের অংশটিই খাদ্য আর পানীয়ের আধার হিসেবে কাজ করে!
মোক্ষলাভের পর কোনও অঘোরী সাধনার এই কঠিন পথ ত্যাগ করতেই পারেন৷ তবে ‘ক্রিয়া’ ছাড়লেও ত্যাগের পথ তিনি ছেড়ে দেন না৷ তিনি তখন গুরু হিসেবে অন্য অঘোরীদের পদপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেন৷ মোক্ষ বা সিদ্ধিলাভ করেছেন, এমন এক অঘোরী সন্তের সঙ্গেও আমি দেখা করেছিলাম৷ তিনি ১৬ বছর সাধনার পর মোক্ষলাভ করেছিলেন৷ আর এই দীর্ঘ ১৬টা বছর তিনি কাটিয়েছিলেন গঙ্গাবক্ষে একটি নৌকার উপর৷ ১৬ বছরের মধ্যে তিনি একটিবারও নাকি নৌকার বাইরে যাননি৷ মোক্ষলাভের পথটি অবশ্য তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই৷ কেননা, সেটি আড়ালেই থাকে৷ তিনি শুধু আমায় বলেছিলেন কীভাবে তিনি দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে জীবনধারণ করেছিলেন৷ একটি আশ্রমে যখন আমি তাঁর দেখা পেয়েছিলাম, দেখে অবাকই হয়েছিলাম৷ তাঁর সাধারণ-সাফসুতরো চেহারা, পরিচ্ছন্ন পোশাক আমায় আশ্চর্য করে দিয়েছিল৷ একটু পরে বুঝলাম ফারাকটা চিন্তাভাবনা আর মানসিকতায়৷ সেই সাধু কথাবার্তায় একেবারেই অনাগ্রহী৷ আশ্রমে কোথায় একান্তে সময় কাটানো যাবে, সারাক্ষণ সেটারই সন্ধানে রয়েছেন৷ সেইসঙ্গে সর্বক্ষণ তিনি যেন নিজের চিন্তায় নিমজ্জিত৷ বুঝলাম, তিনি প্রকৃতই একজন অঘোরী৷
অঘোরীদের সঙ্গে মেশার পরও আমি এখনও কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর পাইনি৷ যেমন, কেন অঘোরীরা এমন একটা জীবন যাপন করেন? এই জীবন যাপনের লক্ষ্যটাই বা কী? বা, ঘুরিয়ে বলতে গেলে সিদ্ধিলাভের উপকারিতাটাই বা কী? কীভাবে এক অঘোরী বুঝতে পারেন তিনি মোক্ষলাভ করেছেন? অঘোরী বা তান্ত্রিকরা শক্তিরই সাধনা করে থাকেন৷ এই শক্তির স্বরূপটা কী? এই শক্তি কি অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে? না যাবতীয় সম্ভাবনাকে নয়ছয় করে দেয়? কে জানে৷ নিজের ইচ্ছেপূরণের জন্য কোনও-কোনও সাধক হয়তো নিজের অর্জিত শক্তির অপব্যবহার করতে পারেন৷ কিন্তু প্রকৃত অঘোরীর মন সব ভয়, কামনা, লালসা, ইচ্ছেকে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করে দিতে সক্ষম৷ এইরকম মানসিক অবস্থায় এক অঘোরী কালীরই অংশ হয়ে ওঠেন৷ মোক্ষলাভের পর সব কিছুই তাঁর কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়৷ থাকে শুধু ‘উপলব্ধি’৷
!
Mata