Lawsuit

Lawsuit

Construct The Knowledge Of Law.

10/12/2022

(What is naraji petition) নারাজি দরখাস্ত কি?
নারাজি বলতে বুঝায় যে, 'আমি মানি না'। সাধারণত ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে নারাজি পিটিশন দায়ের করা হয়। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত ফৌজদারী কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ১৭৩ ধারা মোতাবেক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মূলত ২(দুই) ধরনের রিপোর্ট বা প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন।
প্রথমতঃ মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা তদন্তের কার্যক্রম সম্পন্ন করে যদি দেখেন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপরাধ করার সত্যতা পাওয়া গিয়েছে তখন তাদের বিচার প্রার্থনা করে “চার্জশীট বা অভিযোগপত্র” বলে।
দ্বিতীয়তঃ তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার তদন্তের কার্যক্রম সম্পন্ন করে যদি দেখেন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের বা অপরাধের কোন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় নি তখন মামলার দায় হতে অভিযুক্তে অব্যাহত চেয়ে “ফাইনাল রিপোর্ট বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন” দাখিল করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রদত্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে অভিযোগকারী বা মামলার বাদী সঠিকভাবে বা পূর্ণাংগভাবে মামলার তদন্তকার্য সম্পন্ন করা হয় নি মর্মে আপত্তি উত্থাপন করে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট অধিকতর তদন্তের দরখাস্ত করতে পারেন। এই দরখাস্তকেই নারাজি বলে।
ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিষ্ট্রেট একটি নারাজি দরখাস্ত নিষ্পত্তি করতে যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনঃ
সংবাদদাতা/ অভিযোগকারী ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট নারাজি দরখাস্ত দাখিলের পর ম্যাজিষ্ট্রেট মামলার নথিপত্র, কেস ডায়েরী ইত্যাদি বিশ্লেষ্ণ করে যদি মনে করেন যে, তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন করেননি তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট নারাজি দরখাস্তটি নিষ্পত্তি করার জন্য নিম্নলিখিত উপায়ে অগ্রসর হতে পারেনঃ-
১) ম্যাজিষ্ট্রেট উক্ত নারাজি দরখাস্তটিকে নালিশী দরখাস্ত হিসেবে গণ্য করে ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারায় শপথ গ্রহণপূর্বক অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে অভিযোগ আমলে নিবেন এবং কার্যবিধির ২০৪ ধারায় আসামীদের বিরুদ্ধে প্রসেস বা পরোয়ানা ইস্যু করতে পারেন।
২) ফৌজদারী কার্যবিধির ২০২ ধারা অনুসারে ম্যাজিষ্ট্রেট নিজেই মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে পারেন অথবা মামলাটি অধঃস্তন কোন ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট তদন্তের জন্য পাঠাতে পারেন।
৩) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩(৩-খ) ধারার বিধান অনুসারে মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য থানায় পাঠাতে পারেন।
৪) ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৩ ধারার বিধান অনুসারে ম্যাজিষ্ট্রেট নারাজির আবেদনটি খারিজ করে দিতে পারেন।
64 DLR (HCD) 91- Khorsheda Begum Vs. Monira Begum মামলার সিদ্ধান্ত বলা হয়েছে যে, যখন কোন পুলিশ রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন দায়ের করা হয়, তখন সেই পুলিশ রিপোর্ট আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি করতে হয়।
36 DLR (SC) 58- মামলার সিদ্ধান্ত বলা হয়েছে যে, পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে যদি নারাজির দরখাস্ত করা হয়, তবে অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে ম্যাজিষ্ট্রট অপরাধ আমলে নিতে পারেন কিংবা ফৌজদারী কার্যবিধির ২০২ ধারার পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
29 DLR 427 মামলার সিদ্ধান্ত বলা হয়েছে যে, ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্ণিত বিধান মতে পুলিশ রিপোর্টের বিপক্ষে কোন ধরনের নারাজী দরখাস্ত দায়ের করা হলে তখন ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ২০২ ধারাতে উল্লেখিত কার্যপদ্ধতি মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
যদি ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক দাখিলীয় তদন্ত রিপোর্টের উপর সন্তুষ্ট হতে না পারেন তাহলে তিনি মামলাটি যথারীতি আমলে নেয়ার আগে পুলিশকে আরো তদন্তকার্য চালানোর নির্দেশ দিতে পারেন। এমনকি এক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করলেও ম্যাজিষ্ট্রেট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আরো অধিকমাত্রায় তদন্ত করার নির্দেশ দিতে ক্ষমতাবান হবেন বিধায় তদন্তমোতাবেক পেশকৃত চূড়ান্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আগেই অব্যাহতি প্রাপ্ত কোন আসামীর বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাধ্যমত আরও তদন্ত কাজ চালিয়ে অতিরিক্ত অভিযোগপর দাখিল করতে কোন বাধা নেই। এভাবে আইন স্বীকৃত বিধান মতে ম্যাজিষ্ট্রেট নারাজি দরখাস্ত সুষ্ঠূভাবে নিষ্পত্তি করতে পারেন।
ম্যাজিষ্ট্রেট প্রদত্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিকার কি এবং কেনঃ- নারাজি দরখাস্ত অগ্রাহ্য হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অবশ্যই প্রতিকার আছে। নারাজি দরখাস্ত ম্যাজিষ্ট্রেট অগ্রাহ্য(না-মঞ্জর) করলে অসন্তুষ্ট পক্ষ আদেশের তারিখ থেকে ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে বিজ্ঞ দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৯(ক) ধারা মতে রিভিশনের দরখাস্ত করতে পারেন এবং যে সকল হেতুমূলে তা করতে পারেন নিম্নে তা উল্লেখ করতে পারেন।
১) অভিযোগকারী মারাত্নক এবং অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন যা অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য নয়।
২) সমাজে তার মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে এবং সে চিরতরে ন্যায়বিচার থেকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।
৩) ভবিষ্যতে অন্যায় কাজ হতে অপরাধী বিরত থাকবে,তার অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে, ভীতির সঞ্চার হবে ও চরিত্র সংশোধনের সুযোগ পাবে।
তথ্য কণিকাঃ
ফৌজদারী কার্যবিধি- এডভোকেট জহিরুল হক, আইন শব্দসমূহ- এডভোকেট নাসির উদ্দিন, ফৌজদারী কার্যবিধির ভাষ্য- গাজী শামসুর রহমান,উকিপিডিয়া, শত বছরের ক্রিমিন্যাল রেফারেন্স এডভোকেট কামাল উদ্দিন।

13/08/2022

----প্রতারণা (Cheating) ও অপরাধামূলক বিশ্বাসভঙ্গ (Criminal Breach of Trust):
বর্তমানে আমাদের সমাজে বহুল সংগঠিত অপরাধ হচ্ছে। প্রতারণা (Cheating) ও অপরাধামূলক বিশ্বাসভঙ্গ। ব্যক্তি বা যে কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বা প্রতিষ্ঠান যে কোন সময় যে কোন পরিবেশে প্রতারণা (Cheating) ও অপরাধামূলক বিশ্বাসভঙ্গ করতে পারে। বাংলাদেশের ফৌজদারী আদালতে প্রায়ই দন্ডবিধির ৪২০ ও ৪০৬ (প্রতারণা (Cheating) ও অপরাধামূলক বিশ্বাসভঙ্গ) ধারায় মামলা হয়ে থাকে। এই ধারা দু’টির একটি অজামিনযোগ্য এবং অন্যটি জামিনযোগ্য অপরাধ।
যে কোনো কারণে প্রতারণার শিকার হলে কিংবা চাকরির নামে কোনো প্রতারণার শিকার হলে আইনের আশ্রয় খুব সহজেই নিতে পারেন। আপনি দায়ী ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করতে পারেন।
প্রতারণার পাশাপাশি বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগও আনা যায়। ক্ষেত্রবিশেষ দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। তবে আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে যথেষ্ট প্রমাণ থাকা লাগবে। যেমন কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রসিদ এসব। তাই এ দলিলগুলো সংরক্ষণ রাখা জরুরি।
বিয়ের নামে যদি কেউ প্রতারণামূলকভাবে সংসার করে, এ ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নেওয়া যাবে। দেশ-বিদেশে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার সময় টাকা লেনদেন-সংক্রান্ত চুক্তি ভঙ্গ করলেও প্রতারণার অভিযোগ আনা যাবে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে উঠবে। কথা ছিল সুকেশকে বৃত্তির ব্যবস্থা করে আমেরিকা পাঠাবে। চুক্তির শর্তানুযায়ী সুকেশের বাবার প্রতিষ্ঠানটিকে তিনটি সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধের কথা। যদি ব্যর্থ হয় তাহলে প্রদেয় টাকা কোনোরকম কর্তন ছাড়াই পরিশোধ করবেন বলে স্বীকার করে দুই পক্ষই স্বাক্ষর করেন। শেষ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি বৃত্তির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়।
সু্কেশের বাবা তাঁর দেওয়া টাকা ফেরত চান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, ‘আমরা চুক্তিতে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছি। কত দিনের মধ্যে ফেরত দেব তা কিন্তু উল্লেখ নেই। ’ তাঁর মতে এটা হতে পারে ছয় মাস, এক বছর বা যে কোনো দিন। তাঁরা তো বলেননি পরিশোধিত পুরো টাকা তাঁরা এক কিস্তিতে পরিশোধ করবেন। তাই তাঁরা যখন যে টাকার ব্যবস্থা করবেন, সুকেশের বাবাকে তাই নিতে হবে। এ রকম ঘটনা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে।
যদি এই রকম প্রতারণার স্বীকার কেউ হন তাহলে উক্ত প্রতারিত ব্যক্তি থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করতে পারেন অথবা আদালতে সরাসরি মামলা দায়ের করতে পারেন।
নিম্নে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
 প্রতারণা(Cheating) কি এবং এর শাস্তিঃ
সাধারণ অর্থে, কেউ যদি কারোও সাথে কোন বিষয়ে কোন ধরণের মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তা প্রতারণা হলেও আইনে প্রতারণার সংজ্ঞা কিছুটা ভিন্ন। প্রতারণার বিষয়টি বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪১৫ ধারায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-
“যদি কোন ব্যক্তি ছলনা করে বা অসাধুভাবে কোন ব্যক্তিকে অন্য কাউকে কোন সম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করে, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে অনুরূপ প্রতারিত ব্যক্তিকে এরূপ কোন কার্য করতে বা বিরত থাকতে প্ররোচিত করে, যে কার্য সেই ব্যক্তি অনুরূপভাবে প্রতারিত না হলে করতোনা বা উহা করা হতে বিরত থাকতো না এবং যে কাজ নিবৃত্তি উক্ত ব্যক্তির দেহ, মন,সুনাম বা সম্পত্তির ক্ষতি বা অনিষ্ট সাধন করে বা করার সম্ভাবনা রয়েছে, সে ছলনাকারী ব্যক্তি ‘প্রতারণা’ করে বলে গণ্য হবে।
উদাহরণঃ ১
সুকান্ত একজন স্বর্ণকার। সে কোন একটি পিতলের গয়নাকে সোনার প্রলেপ দিয়া উক্ত গয়নাকে সোনার গয়না হিসেবে সুকেশের কাছে বিক্রি করে দেয়। সে সম্পূর্ণরূপে জেনে-বুঝে সুকেশের সাথে কাজটি করে।
এখানে সুকান্ত গিল্টি করা পিতলের গয়নাটি সোনার গয়না হিসেবে সুকেশের কাছে বিক্রি করার সাথে সাথে প্রতারণার অপরাধ হয়েছে।সুকান্ত এই জাতীয় অপরাধ এই ধারার অধীনে বিচার্য্য।
উদাহরণঃ ২
অনন্ত সিভিল সার্ভিসে আছে বলিয়া মিথ্যা ভান করিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে রাশেদকে বঞ্চনা করে এবং তাহাকে ধারে সম্পত্তি দিতে রাশেদকে অসাধুভাবে প্ররোচিত করে। অথচ এই সম্পত্তির মূল্য প্রদান্নের ইচ্ছা তার নাই। অনন্ত প্রতারণা করিয়াছে। এ ধরণের অপরাধ এই ধারার অধীনে বিচার্য্য।
অসৎ পন্থায় কোন কিছু গোপন করলে সেটাও প্রতারণা হিসেবে গণ্য হতে পারে যা এই ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
 30 DLR 227 Anowar Ali Vs. The State, “সম্পত্তি অর্পণ যদি অসৎ প্রলুব্ধকরণের সম্পত্তি না হয় তবে প্রতারণার অপরাধ হবে না”।
 36 DLR 14(AD) Nasiruddin Mahmud Vs. Momtazuddin “মামলায় বলা হয়েছে যে, দন্ডবিধির ৪১৫ ধারার প্রয়োজন এই যে, ঠকাবার উদ্দেশ্যে কাজ করা”।
 38 DLR 105 Sheikh Obaidul Houque Vs. Razure Rahman, “মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “৪১৫ ধারায় প্রদত্ত সংজ্ঞার ভাষা থেকে অত্র ধারায় দুইটি অংশ পাওয়া যায়। প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে, প্রতারিত ব্যক্তি কোন সম্পত্তি অর্পণে অবশ্যই প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধুভাবে প্রলুব্ধ হলে এবং দ্বিতীয় অংশে এমন এক ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে যে প্রতারিত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সম্পত্তি অর্পণে প্রলুব্ধ করবেন। সুতরাং প্রতারণা গঠিত হতে গেলে অবশ্যই সম্পত্তি অর্পণে প্রবঞ্চনা এবং অসৎভাবে প্রবৃত্তকরণ থাকতে হবে। প্রাপ্তমালের টাকা পরিশোধের নিমিত্তে প্রদত্ত অগ্রিম তারিখের চেক যদি অসম্মতিতে হয় তবে তাহা শুধু দেওয়ানী দায়িত্বের সৃষ্টি করে। তাই চেক উহাকে প্রতারণা বলা যায় না”।
 দন্ডবিধির ৪১৫ ধারা অনুসারে প্রতারণামূলক কার্য সম্পাদনের জন্য নিম্নলিখিত উপাদানগুলি থাকতে হবে। যথাঃ
১. অপরাধী কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে ফাঁকি দেয়া বা ছলনার আশ্রয় নিয়া প্রতারণ করেছে
২. অপরাধী ঐভাবে তাকে প্ররোচিত করেছিল;
৩. উক্ত প্ররোচনা প্রতারণামূলক ছিল এবং
৪. উক্ত লোক প্ররোচিত হয়ে সম্পত্তি প্রদান করেছিলেন বা সংরক্ষণ করতে
সম্মত হয়েছিল।
 প্রতারণার-শাস্তিঃ প্রতারণার নানা প্রকার আছে। যেমন, ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জালিয়াতি করে প্রতারণা, পরিচয় গোপন করে প্রতারণা, বিয়ের ব্যাপারে প্রতারণা ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রতারণার জন্য পৃথক পৃথক শাস্তির বিধান আছে।
সাধারণ প্রতারণা দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪১৭ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য। দন্ডবিধির ৪১৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি দন্ডবিধির ৪১৫ ধারা অনুসারে প্রতারণা করে, তাহলে সে ব্যক্তি দন্ডবিধির ৪১৭ ধারা অনুসারে ১ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
 7 BCR(AD) 128 Abdul Mannan Vs. The State মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “দলিলের স্বল্পমূল্য উল্লেখ করার কারণে ইহা বলা যায় না যে,”প্রতারণামূলকভাবে অতিরিক্ত জমি দলিলের অন্তর্ভূক্ত করেছে”।
অন্যদিকে, প্রতারণাকারী ব্যক্তির কাজ থেকে যদি কোন সম্পত্তির বিতরণ বা বিন্যাস বা কোন মূল্যবান সুরক্ষার পরিবর্তন বা ধ্বংস ঘটে থাকে তবে, দন্ডবিধির ৪২০ ধারার অধীনে অপরাধটি দন্ডনীয়। দন্ডবিধির ৪২০ ধারা অনুযায়ী সে ব্যক্তি ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।
 45 DLR 102 মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে,” প্রথম কোন লোক ঋণ গ্রহণের জন্য অসৎ উপায়ে অন্য লোককে প্রলুব্ধ করে যে, সে উহা ফেরত দিবে যদি উহা ফেরত দিবার উদ্দেশ্য তার নাই, তখন ইহা দন্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বর্ণিত সংজ্ঞানুসারে প্রতারণা হবে যা দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় দণ্ডণীয়”।
 27 DLR 175(SC) Akamuddin VS. The State মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে,” অসৎ গোপনীয়তা দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারার অর্থানুসারে চাতুরী। এই ধরণের চাতুরী প্রতারনার একটি উপাদান”।
 38 DLR 8 Yaqub vs. Kalu মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে,” দণ্ডবিধির ৪২০ ধারার অধীন সাজা প্রদানের সময় কারাদণ্ডের আদেশ অবশ্যই প্রদান করতে হবে। কারণ আইনের বিধানানুসারে উহা বাধ্যতামূলক। অত্র ধারার অধীন কেবল অর্থদণ্ডের আদেশ প্রদান করা হলে তা বে-আইনী।
 অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ (Criminal Breach of Trust)ঃ
 দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা কাজে লিখিত বা মৌখিকভাবে চুক্তিতে আবদ্ধ হই। ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্পত্তি হস্তান্তর, দান, বিনিময়, সম্পত্তি বিক্রি এমনকি বিয়েতেও চুক্তি সম্পাদন করতে হয়। কারণ চুক্তিই আইনত গ্রহণযোগ্য। ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ২(জ) ধারায় চুক্তির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য সম্মতিকে চুক্তি বলে। চুক্তি লিখিত বা মৌখিক উভয় রকমই হতে পারে। আদালত প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। সে ক্ষেত্রে মামলা পরিচালনার ব্যয়ও অভিযুক্তের কাছ থেকে আদালত আদায় করে দিতে পারে। তবে লিখিত চুক্তি হওয়াটাই ভালো। কারণ মৌখিক চুক্তি প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য।
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ভূমিসংক্রান্ত চুক্তি করলে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। তা না হলে আইনে আপনি সহযোগিতা পাবেন না। সর্বোপরি চুক্তি করার সময় চুক্তির খসড়াটা ভালো করে দেখ নিন, খুঁটিনাটি দিক যাচাই করে নিলে প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আর যদি কেউ আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করে থাকে, আমানতের খেয়ানত করে থাকে, অঙ্গীকার পালন না করে, বিশ্বাস ভেঙে চম্পট দেয় তাহলে আপনি সেই বিশ্বাসভঙ্গের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন।
অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ হলো- “অসাধু অপব্যবহার” বা অন্যের সম্পত্তি “নিজস্ব ব্যবহারের জন্য রূপান্তর”, যা ইংলিশ ল এর Embezzlement বা আত্মসাৎ করার অপরাধের মতো। দন্ডবিধির ৪০৫ ধারায় অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের সজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে-
“যদি কোন ব্যক্তি কোনভাবে কোন সম্পত্তির বা সম্পত্তি পরিচালনার ভার পেয়ে অসাধুভাবে সেই সম্পত্তি আত্মসাৎ করে বা নিজের ব্যবহারে প্রয়োগ করে কিংবা সেই দায়িত্ব আইনে যেভাবে পালন করা উচিৎ সেভাবে পালন না করে সেই সম্পত্তি অসাধুভাবে উক্ত সম্পত্তি ব্যবহার করে বা বিলি ব্যবস্থা করে কিংবা স্বেচ্ছায় বা ইচ্ছাপূর্বক অপর কোন ব্যক্তিকে এরূপ করতে দেয়, তাহলে সে ব্যক্তি Breach of Trust বা অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধ করেছে বলে বিবেচিত হবে।
উদাহরণঃ
জয়ের দখলে থাকা কোন সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় জয়ের সম্মতি ব্যতীতই অসীম সম্পুর্ণরূপে জেনে-বুঝে সম্পত্তিটি নিজের ব্যবহারে এনে ভোগ দখল করে অথবা নিজের সম্পত্তি হিসেবে বিক্রি করে দেয়। সে জয়ের বিশ্বাসের সুযোগেই কাজটি করে।
এখানে অসীম সম্পত্তিটি নিজের ব্যবহারে এনে ভোগ দখল করার অথবা নিজের সম্পত্তি হিসেবে বিক্রি করার সাথে সাথে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধ করেছে। ফলে, জয়ের এরূপ অপরাধ এই ধারার অধীনে বিচার্য্য।
অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ গঠনের জন্য নিম্নোক্ত উপাদান প্রয়োজন। যথাঃ

১. অপরাধীকে কোন সম্পত্তি পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা কোন জিম্মা পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হতে হবে।
২. উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিটি অসাধুভাবে আত্নসাৎ করে অথবা নিজের ব্যবহারে প্রয়োগ করতে হবে।
৩. সম্পত্তি পরিচালনার জন্য যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল, উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক উহার বরখেলাপ হবে।
৪. একইভাবে আইনানুগ চুক্তি বরখেলাপ করে উক্ত সম্পত্তি অসাধুভাবে ব্যবহার করেছিল
৫. আসামী অসাধুভাবে বিলি ব্যবস্থা করা অথবা ইচ্ছাপূর্বক অন্য কোন ব্যক্তিকে তা করতে দেওয়া।
৬. প্রাপ্ত দায়িত্ব যেভাবে আইনত করা উচিৎ সেভাবে পালন করেনি
৭. উক্ত সম্পত্তি কোন ব্যক্তিকে অসাধুভাবে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিল।

 39 DLR Musa Bin samser vs. Ansarul মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “ অংশীদার কারবার বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং হিসাবের টাকা গ্রহণ না করা পর্যন্ত উহার কোন অংশ কোন অংশীদারের একচেটিয়া অধিকার সৃষ্টি করে না। তবে বিশেষ চুক্তির দ্বারা যদি কোন সম্পত্তি কোন অংশীদারের নিকট রাখা হয় এবং তিনি উহা আত্নসাৎ করেন তবে দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারার অধীন তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হবে।
 45 DLR 705 মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “ বিশ্বাস স্থাপন করে টাকা প্রদান প্রমাণিত হলে উক্ত টাকা পরবর্তীকালে ফেরত দিলেও আসামীকে টাকা আত্নসাতের অভিযোগ হতে রেহাই দেয়া যায় না”।

অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি
দন্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তি অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে, সে ব্যক্তি ৩ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।
যদি কোনো অফিসের কর্মচারী বিশ্বাসভঙ্গ করেন তাহলে দন্ডবিধির ৪০৮ ধারা অনুযায়ী সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। আর ৪০৯ ধারায় সরকারি কর্মচারী কিংবা ব্যাংকার, ব্যবসায়ী বা এজেন্টের এ অপরাধের সাজা যাবজ্জীবন বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডসহ অর্থদন্ড।
 39 DLR 393 মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে,” বাদীকে অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন বা সম্পত্তির উপর আধিপত্য প্রমাণ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ যে লোকের উক্ত সম্পত্তির উপর আধিপত্য থাকে বা যার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা হয় সে নিজের বা অন্যের লাভের জন্য উহা আত্নসাৎ করে”।
 1 BLD 302 Tazimuddin Vs. The State মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে,” কারাদণ্ড ব্যতীত কেবল অর্থদন্ডের আদেশ প্রদান করা হলে দন্ডবিধির ৪০৯ ধারার অধীন উহা বৈধ হবে না। এরূপ ক্ষেত্রে কেসটি রিমান্ডে দেওয়াই শ্রেয়”।

পরিশেষে বলা যায় যে, যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণার স্বীকার হন তাহলে উক্ত প্রতারিত ব্যক্তি থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করতে পারেন অথবা আদালতে সরাসরি মামলা দায়ের করতে পারেন। এ মামলা করতে হয় সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। বিজ্ঞ আদালত বাদীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে মামলার গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে সরাসরি মামলাটি আমলে নিতে পারে অথবা কোনো প্রাথমিক তদন্তের জন্য ব্যক্তি বা সংস্থাকে আদেশ দিতে পারে। আবার সরাসরি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য থানাকেও নির্দেশ দিতে পারেন।
Collected...

13/08/2022

🔸ভুল করেও যে ৯ ধরণের জমি কিনতে যাবেন না❗

>> বর্তমানে জমির দাম দিনকে দিন বাড়লেও আবাসযোগ্য ভালো জমির পরিমাণ অনেক কম এবং পাওয়াও কঠিন। এজন্য বিভিন্ন প্রতারক চক্র ” ভালো জমি” বিক্রির লোভ দেখান। সহজ সরল মানুষ একটি ভালো জমির মালিক হবার জন্য দ্রুত টাকা পরিশোধ করে রেজিস্ট্রি করে নেন। কিন্তু দখল করতে গিয়ে দেখেন জমিটি ঝামেলাপূর্ণ। এজন্য জমি কেনার আগে জানা উচিত আর কোন জমিগুলো একদমই কেনা উচিত নয়।

একটা ভালো জমি যেমন আপনার সারা জীবনের একটা সম্বল হতে পারে। ঠিক তেমনি, ভুল জমি ক্রয় আপনার সারা জীবনের কান্নার কারণ হতে পারে। আসুন জেনে নেই, কোন জমিগুলো ভুলেও কেনা উচিত নয়-

১. খাস জমিঃ

জমি কেনার সময় খোঁজ নিয়ে দেখবেন যেন সেটি খাস জমি না হয়। যে জমিগুলো সরাসরি সরকারের মালিকানাধীন থাকে সেগুলোকে খাস জমি বলা হয়। অনেক সময় অনেক প্রতারক জাল দলিল তৈরি করে “খাস জমি” বিক্রি করে।

আইনে বলা আছে, কোনো জমি যদি সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে ও সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে সেইগুলোই খাস জমি। সরকার এ জমিগুলো বন্দোবস্ত দিতে পারেন। সাধারণত ভূমিহীন ব্যক্তিরা সরকারীভাবে খাস জমি পায়। এজন্য জমি কিনার পূর্বে ভুমি অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখুন যে জমিটি খাস জমি কি না।

২. অর্পিত সম্পত্তিঃ

অনেক হিন্দু নাগরিক তাদের জমি-জমা পরিত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন এবং সেখানে নাগরিকত্ব লাভ করে বসবাস করেছেন। তাদের অনেকের ভূমি অর্পিত ও অনাবাসী সম্পত্তি (Vested and Non-Resident Property) হিসেবে সরকারের তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং এগুলো সরকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
এসকল জমি সরকার ছাড়া অন্যকেও ক্রয় বিক্রয় করতে পারে না। এজন্য, যেকোনো জমি ক্রয়ের আগে খোঁজ নিন এগুলো সরকারের তালিকাভুক্ত অর্পিত জমি কি না।

৩. অধিগ্রহণকৃত জমি বা এরূপ সম্ভাবনার জমিঃ

রাষ্ট্র বা সরকার দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেমন শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলপথ, সড়ক বা সেতুর প্রবেশ পথ বা এ জাতীয় অন্য কিছুর জন্য জনগণের কোন ভূমি যদি দখল করে নেয় তাকে বলে “অধিগ্রহণ”। সরকার দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কারো জমি অধিগ্রহণ করতে পারে।

অনেকেই সরকারের অধিগ্রহণকৃত জমি প্রতারণা করে বিক্রি করে। এজন্য, জমি ক্রয়ের পূর্বে ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জেনে নিন জমিটি সরকারের অধিগ্রহণকৃত জমি কিনা বা ভবিষ্যতে অধিগ্রহণ করার সম্ভবনা আছে কি না।

৪. যাতায়াতের রাস্তা নেই এরূপ জমিঃ

যে জমিটি ক্রয় করবেন সেটির মৌজা ম্যাপ যাচাই করে বা সশরীরে উপস্থিত হয়ে খোঁজ নিন যে জমিটিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কিনা। যে জমিতে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই এমন জমি ভুলেও কিনবেন না।

৪. ইতোমধ্যে অন্যত্র বিক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ কিনাঃ

অনেক বিক্রেতা একই জমি কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেন। ফলে, আসল বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয় করার পরও জমির প্রকৃত মালিক হওয়া যায় না।
এজন্য জমি ক্রয় এর পূর্বে খোঁজ নিন বিক্রেতা পূর্বে অন্য কারো কাছে জমিটি বিক্রি করেছে কিনা বা বিক্রির জন্য বায়না চুক্তি করেছে কিনা।
সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে খোঁজ নিন এর পূর্বে জমি হস্তান্তর জনিত কোন দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে কি না।

৫. বন্ধকীকৃত জমিঃ

অনেক সময় জমি বিভিন্ন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানে বন্ধক বা মর্টগেজ থাকে। এমন জমি কখনই ক্রয় করবেন না। কারণ বন্ধককৃত জমি ক্রয় – বিক্রয় সম্পূর্ণ বে-আইনী।

৬. কোন আদালতে মামলায় আবদ্ধ জমিঃ

অনেক সময় একই জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলে। মামলা চলছে বা মামলা এখন নিষ্পত্তি হয়নি, এমন জমি কেনা উচিত নয়।

৭. বিরোধপূর্ণ জমিঃ

অনেক সময় ওয়ারিশসূত্রে জমির মালিক হলে ঠিকমত ওয়ারিশ সনদ বা বন্টননামা করা হয় না। এসব জমি নিয়ে ওয়ারিশদের মধ্যে বিরোধ চলে।
এসকল বিরোধপূর্ণ জমি কেনা কোনোভাবেই উচিৎ নয়। কৃষি জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে রেকর্ডীয় মালিকানায় অংশীদারগণ অগ্রক্রয়াধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। সুতরাং অংশীদারদের সম্মতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

৮. দখলহীন জমিঃ

যেকোনো জমির মালিকানার জন্য প্রয়োজন দলিল ও দখল। একটি ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ। এজন্য যিনি জমি বিক্রি করছেন জমিটি তার দখলে আছে কিনা জেনে নিন। যদি দখলে না থাকে তবে এমন জমি ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন। দখলহীন মালিকদের জমি ক্রয় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে জমি দখলের জন্য ঝগড়া, দাঙ্গা ফ্যাসাদ এবং মামলা মোকদ্দমায় জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৯. নাবালকের নামে জমিঃ

জমি যদি নাবালকের নামে থাকে, তবে সে জমি আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক ছাড়া বিক্রি করা যায় না। সাধারণত ১৮ বছরের নিচে ব্যক্তিকে নাবালক বলা হয়।

এজন্য, অনেকেই এমন জমি কিনে যা ওয়ারিশসূত্রে কোনো নাবালকের অংশ আছে। কিন্তু, নাবালক বড়ো হয়ে মামলা করলে জমিটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। এজন্য, এ ধরনের জমি কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন।

23/07/2022

সংজ্ঞা
⚖ আপীল (Appeal): নিম্ন আদালতের রায়ের পুনর্বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা।

⚖ আরবিট্রেশন (Arbitration): বিবাদকারী দুই দলের অনুমোদিত নির্দলীয় কোন তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে কলহের বিচার - যার রায় বিবাদকারীরা মানতে স্বীকৃত।

⚖ এলিবাই (Alibi): অপরাধ সংঘটিত হবার সময় অভিযুক্তের অন্য কোথাও থাকার দাবী।

⚖ ইনটারলোকিউটরি (Interlocutory): অস্থায়ী, অন্তর্বতী কালের জন্য।

⚖ উইল (Will) বা ইচ্ছাপত্র: কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ধনসম্পত্তি কি ভাবে বণ্টন করা হবে - সে বিষয়ে তাঁর ইচ্ছাপত্র।

⚖ ইনটেস্টেট (Intestate): যে ব্যক্তি উইল বা ইচ্ছাপত্র না লিখে মারা গেছে - তার স্ট্যাটাস বা অবস্থা।

⚖ একস্‌ট্রাডিশান (Extradition): অভিযুক্ত ব্যক্তিকে একটি আইন-এলাকা (রাজ্য, রাষ্ট্র, ইত্যাদি) থেকে অন্য আইন-এলাকায় হস্তান্তরিত করা।

⚖ এনট্র্যাপমেন্ট (Entrapment): কাউকে অন্যায় কর্মে প্রণোদিত করা - যাতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায়।

⚖ এফ.আই.আর. (F.I.R.): এটি ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কোন অপরাধ সংঘটিত হবার পর আক্রান্ত ব্যক্তি বা অন্য কেউ সেই সম্পর্কে থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে অভিযোগ জানালে - অফিসারের দায়িত্ব সেটিকে নথিভুক্ত করা। সেই লিখিত রিপোর্টটি হল এফ.আই.আর। এর ভিত্তিতে পুলিশের তার অনুসন্ধান শুরু করে।

⚖ এফিডেভিট (Affidevit): হলফপত্র বা শপথনামা: শপথ দেওয়ানোর ক্ষমতা আছে এমন কোনও লোকের সামনে স্বেচ্ছায় শপথপূর্বক লিখিত বিবৃতি দাখিল করা।

⚖ এমবেজেলমেণ্ট (Embezzlement) বা তহবিল তছরুপ: বিশ্বাস ভঙ্গ করে কারোর গচ্ছিত অর্থ বা সম্পত্তি নিজের জন্য আত্মসাত করা।

⚖ ওয়ারেণ্ট (Warrant): সাধারণ ভাবে কাউকে আটক করা বা কোথাও তল্লাসী চালাবার জন্য পুলিশকে দেওয়া আদালতের হুকুম।আইন আদালত আদালতের কাছে থেকে এই ওয়ারেণ্ট বার করার জন্য পুলিশকে আটক বা তল্লাসী চালানোর প্রয়োজনীয়তা তথ্য সহযোগে আদালতে পেশ করতে হয়।

⚖ কনটেমপ্ট অফ কোর্ট (Contempt of Court) বা আদালতের অবমাননা: ইচ্ছাকৃত ভাবে বিচারকের আদেশ বা বিচার-বিভাগীয় হুকুম অমান্য করা।

⚖ কনভেয়্যান্স (Conveyance): কোনও জমির সত্ব এক বা একাধিক লোকের হাত থেকে অন্য হাতে যাওয়ার দলিল।

⚖ করপাস ডেলিকটি (Corpus delicti): যার ওপর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে - তার বস্তু-অবশেষ উদ্ধার করা। যেমন, খুনের লাস বা পুড়িয়ে দেওয়া বাড়ির দগ্ধাবেশেষ, ইত্যাদি।

⚖ কুইড প্রো কো (Quid pro quo): এই ল্যাটিন শব্দটির অর্থ - 'কিসের জন্য কি' বা 'কিছুর জন্য কিছু'। অর্থাৎ, কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। কোন কণ্ট্র্যাক্ট পালন বাধ্যতামূলক হয় যখন দুই পক্ষের মধ্যে মূল্যবান কোন বস্তুর আদান-প্রদান ঘটে। সেইজন্য যখন কোনো কোম্পানী তাদের নতুন তৈরী করা জিনিষ বাজারে বিক্রি করার আগে পরীক্ষা করার জন্য লোকদের ব্যবহার করতে দেয়, তখন তার জন্য সাধারণত টাকা নেয় না। এই জন্য যে, সেই বস্তু কাজ না করলেও তার জন্য ব্যবহারকারীদের আইনত কিছু করার থাকে না।

⚖ কোডিসিল (Codicil): উইল বা ইচ্ছাপত্রের সংশোধন।

⚖ ক্যাপিটল ক্রাইম (Capital crime): যে অপরাধের দণ্ড হল মৃত্যু।

⚖ ক্রিমিন্যাল ইনস্যানিটি (Criminal insanity): ভালো ও মন্দের তফাৎ বোঝার অক্ষমতা; কোনও কিছু করার বা করা থেকে বিরত হবার মানসিক অক্ষমতা।

⚖ ক্লাশ একশন (Class action): যে মামলা এক বা একাধিক লোক একটি সমগ্র দলের হয়ে আদালতে আনে।

⚖ জয়েণ্ট এণ্ড সেভারেল লায়াবিলিটি (Joint and several liability): আইনের একটি ভাষা, যার অর্থ দুর্ঘটনার জন্য কোন দল দায়ী হলে, সেই দলের প্রত্যেকটি ব্যক্তি আলাদাভাবে পুরো ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে - যদি অন্য কেউ ক্ষতিপূরণ দিতে অসমর্থ হয়।

⚖ জয়েন্ট টেনানসি(Joint tenancy): যুগ্মভাবে সম্পত্তির মালিকানা (একে অনেক সময়ে 'সার্ভাইভারশিপ' বলা হয়)। এক্ষেত্রে একজন মালিকের মৃত্যু হলে, অন্যজন সম্পাত্তির পুরো মালিকানা পায়।

⚖ জাজমেণ্ট (Judgement) বা রায়: মামলায় দুই পক্ষের বক্তব্য ও সাক্ষ্য প্রমাণ শোনার পর বিচারক তাঁর যে সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে প্রকাশ করেন।

⚖ জুভেনাইল ডেলিনকোয়েন্সি (Juvenile delinquency): বালক-বালিকাদের করা অপরাধ।

⚖ ডমিসাইল (Domicile): স্থায়ী বাসস্থান।

⚖ ডিফেমেশন (Defamation): মানহানি।

⚖ ডিসকভারি (Discovery): মামলা শুরু হবার আগে তার সম্পর্কিত ঘটনাসমূহ ও তথ্যাদি জানার উপায়গুলি।

⚖ ডিসমিস্যাল (Dismissal): মামলার খারিজ।

⚖ নেগলিজেন্স (Negligence): সাধারণভাবে একজন বিচারবুদ্ধি-সম্পন্ন পরিণামদর্শী লোক যে সাবধনতা অবলম্বন করবে সেটা না করা।

⚖ নোটারি পাবলিক (Notary Public): সরকারী কর্মচারী যার কাজ হল লোককে শপথ করানো, স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত কাগজে কেউ সই করার পর সেটিতে সই করে তাকে প্রামাণিক করা, ইত্যাদি।

⚖ পেটেণ্ট (Patent): উদ্ভাবকদের দেয় অধিকার - যার বলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁর উদ্ভাবন বিনা অনুমতিতে অন্য কেউ তৈরী, ব্যবহার বা বিক্রি করে লাভবান হতে পারে না।

⚖ প্লি (Plea): আদালতে ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নিজের স্বপক্ষে প্রথম উচ্চারিত কথা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের উত্তরে সে নিজেকে, 'দোষী' বা 'নির্দোষী' বলতে পারবে।

⚖ প্লি বার্গেইনিং (Plea bargaining): ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে সরকারী পক্ষের একটা সমঝোতায় আসার জন্য আলোচনা। এর উদ্দেশ্য দীর্ঘস্থায়ী মামলা (যার ফল অনিশ্চিত) না চালিয়ে দুপক্ষেরই সময় ও অর্থের সাশ্রয় করা। এর ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তি সাধারণত অপেক্ষাকৃত কম অপরাধের জন্য নিজেকে দোষী বলে স্বীকার করে ও সরকার তার অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু বিচারক এই সমঝোতা অগ্রাহ্য করে মামলা চালাবার নির্দেশ দিতে পারেন।

⚖ পাওয়ার অফ এটোর্নি (Power of attorney): একটি দলিল - যার ভিত্তিতে একজনের হয়ে দলিলে উল্লেখিত বিভিন্ন কাজ অন্য কেউ করতে পারে।
Collected...

19/07/2022

রিট কি (What is Writ)

সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদঅনুযায়ী কারো মৌলিক লঙ্গিত হলে হাইকোর্টতা বলবত করতে পারে এবং বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনাকে কার্যকর করতে পারে যা হাইকোর্ট বিভাগের রিট এখতিয়ার নামে পরিচিত ।

রিট (Writ) শব্দের অর্থ হল আদালত বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ঘোষিত বিধান বা আদেশ। রিটের উৎপত্তি ও বিকাশ ইংল্যান্ডে। প্রথমে রিট ছিল রাজকীয় বিশেষাধিকার(royal prerogative)। রাজা বা রানী বিচারের নির্ধারক হিসাবে(fountain of justice) হিসাবে রিট জারী করতে পারত।

বাংলাদেশের সংবিধান হাইকোর্ট বিভাগকে শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে আদি এখতিয়ার দিয়েছে। সেটি হল রিট জারীর এখতিয়ার। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ কারো মৌলিক অধিকার লংঘিত হলে তা বলবৎ করতে পারে এবং বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনাকে কার্যকর করতে পারে।

হাইকোর্ট বিভাগের এই এখতিয়ারকে রিট জারীর এখতিয়ার বলে। অর্থাৎ রিট শুধু মাত্র হাইকোর্ট বিভাগ জারী করতে পারে। কারো মৌলিক অধিকার লংঘিত হলে সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ প্রদত্ত অধিকারবলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মৌলিক অধিকার বলবত করার জন্য রিট পিটিশন দায়ের করতে পারে এবং হাইকোর্ট বিভাগ ১০২ অনুচ্ছেদ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে মৌলিক অধিকার বলবত করার জন্য কতিপয় আদেশ নির্দেশ জারী করতে পারে, তাকে রিট বলে।

রিট ৫ প্রকারঃ
▪বন্দী প্রদর্শন রিট,
▪পরমাদেশ বা হুকুমজারি রিট,
▪নিষেধাজ্ঞামুলক রিট,
▪উৎপ্রেষণ রিট ও
▪কারণ দর্শাও রিট ।

◆আমাদের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকার সমুহ বলবৎ করার জন্যে ৪৪ নং অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ ১০২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পাঁচটি ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। তারমানে, সংবিধানের তৃতীয় ভাগে কতিপয় মৌলিক অধিকারের সংরক্ষণ বা স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, যা নাগরিক হিসেবে আমি আপনি সবাই সমানভাবে ভোগ করার অধিকার রাখি।

কি আছে সেসব মৌলিক অধিকারের তালিকায়? ◆মৌলিক অধিকারগুলো জেনে নেয়া যাক। অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং সবাই সমান আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। অর্থাৎ এর মাধ্যমে সকল নাগরিকের মধ্যে আইনের সাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যখনই কেউ আইনের সাম্য নষ্ট করেন তার বিরুদ্ধে এটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়, অন্তত কেতাবি অর্থে।

অনুচ্ছেদ ২৮, সকল ধর্ম, বর্ণ, নারী পুরুষ ও জন্মস্থান ভেদে রাষ্ট্র যেন বৈষম্য না করতে পারে তার বিধান দেয়া হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ২৯, সরকারী পদে নিয়োগ লাভে সকল নাগরিকের সাম্যের নিশ্চয়তা দিয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩১, সকল নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার নিশ্চিত করেছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনী প্রক্রিয়া ব্যতীত কোন নাগরিকের জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটানো যাবে না। অর্থাৎ পুলিশ চাইলেই যে কাউকে তুলে নিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করতে পারবে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনী প্রক্রিয়া শুরু না করে কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারবে না।

অনুচ্ছেদ ৩২, যথাযথ আইনই প্রক্রিয়া ছাড়া কোন নাগরিকের ব্যক্তি ও জীবনের স্বাধীনতা হরণ করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ ৩৩, এখানে ব্যক্তির গ্রেপ্তার ও আটক বিষয়ে রক্ষাকবচ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তিকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের কারণ যথাশীঘ্র উল্লেখ না করে আটক রাখতে পারবে না এবং তাকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করার সুযোগ দিতে হবে। তাছাড়া, আটকের পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতে উপস্থাপন করবে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য। তবে যদি তাকে কোন নিবর্তন মূলক আইনে আটক করা হয় বা সেই ব্যক্তি বর্তমানে দেশের শত্রু হয় তবে তার ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না। এটি সংবিধানের মূল ধারার সাথে সাংঘর্ষিক হলেও নিবর্তন মূলক আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে। কেনইবা এই স্ববিরোধীতা?

অনুচ্ছেদ ৩৪, এর মাধ্যমে বাধ্যতামুলক শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ জোর করে কাউকে দিয়ে শ্রম আদায় করতে পারবে না। এই অনুচ্ছেদে দুটি ব্যতিক্রম আছে- যেমন শ্রম যদি কারাভোগের অংশ হয় তাহলে বাধ্যতামূলক শ্রম আদায় করা যাবে আর দ্বিতীয়টি হল যদি জনগণের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে তা আবশ্যক মনে হয়। যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মনে করবে বাধ্যতামুলক শ্রম জনগণের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে প্রয়োজন তা কোথাও উল্লেখ নেই। এখানে আইনের অস্পষ্টতা রয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩৫, এর মাধ্যমে ফৌজদারি অপরাধের বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ে যদি কোন কাজ অপরাধের পর্যায়ে না পড়ে তাহলে পরবর্তীতে নতুন আইন করে সেই কাজকে অপরাধ হিসেবে সজ্ঞায়িত করে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না। একে আমরা ইংরেজিতে বলি “রেট্রোস্পেক্টিভ ইফেক্ট”, এই নিয়ম পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আছে। একই অনুচ্ছেদের ২ নং উপ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য একাধিকবার অভিযোগের মাধ্যমে বিচার ও দণ্ড দেয়া যাবে না। অর্থাৎ কোন অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির একবারই বিচার হবে। এই অনুচ্ছেদের ৪ নং উপ-অনুচ্ছেদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ- এতে বলা হয়েছে, কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশ “রিমান্ড” নামক ভয়ানক পদ্ধতির মাধ্যমে যেসব স্বীকারোক্তি আদায় করেন এবং সেসব স্বীকারোক্তি অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? আইনের এই সাংঘর্ষিক অবস্থান বজায় রেখেই চলছে আমাদের ফৌজদারি শাসন ব্যবস্থা।

অনুচ্ছেদ ৩৬, এতে নাগরিকের আইনসংগত ভাবে বসবাস ও চলাফেরার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩৭, এতে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সভা সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৩৮, এর মাধ্যমে আইনসঙ্গত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে সংগঠন করার অধিকার দেয়া হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩৯, এর মাধ্যমে বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৪০, এর মাধ্যমে পেশা বা বৃত্তি নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৪১, এর মাধ্যমে সকল নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিধান করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৪২, এর মাধ্যমে সম্পত্তির উপর নাগরিকের অধিকার এবং সেই সম্পত্তি রাষ্ট্র যেন বাধ্যতামূলক অধিগ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ ও দখল করতে না পারে তার বিধান দেয়া হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৪৩, এর মাধ্যমে আইনগত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে নাগরিকের গৃহে প্রবেশ, তল্লাশি ও আটক থেকে নিরাপত্তাসহ চিঠিপত্র ও অন্যান্য ব্যক্তিগত যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকার দেয়া হয়েছে।

এবার আসি রিট নিয়ে মূল আলোচনায়। আগেই বলেছি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ মহামান্য হাইকোর্ট-কে কতিপয় ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপের ক্ষমতা দিয়েছে। আলোচনার সুবিধার্থে অনুচ্ছেদটি হুবহু তুলে দেয়া হল-

“অনুচ্ছেদ ১০২(১) কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে এই সংবিধানের তৃতীয় ভাগের দ্বারা অর্পিত অধিকারসমূহের যে কোন একটি বলবৎ করিবার জন্য প্রজাতন্ত্রের বিষয়াবলীর সহিত সম্পর্কিত কোন দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিসহ যে কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্ট বিভাগ উপযুক্ত নির্দেশাবলী বা আদেশাবলী দান করিতে পারিবেন।

(২) হাইকোর্ট বিভাগের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আইনের দ্বারা অন্য কোন সমফলপ্রদ বিধান করা হয় নাই, তাহা হইলে
(ক) কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে-
(অ) প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সহিত সংশ্লিষ্ট যে কোন দায়িত্ব পালনে রত ব্যক্তিকে আইনের দ্বারা অনুমোদিত নয়, এমন কোন কার্য করা হইতে বিরত রাখিবার জন্য কিংবা আইনের দ্বারা তাঁহার করণীয় কার্য করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিয়া, অথবা
(আ) প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সহিত সংশ্লিষ্ট যে কোন দায়িত্ব পালনে রত ব্যক্তির কৃত কোন কার্য বা গৃহীত কোন কার্যধারা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হইয়াছে বা গৃহীত হইয়াছে ও তাঁহার কোন আইনগত কার্যকরতা নাই বলিয়া ঘোষণা করিয়া উক্ত বিভাগ আদেশ দান করিতে পারিবেন; অথবা
(খ) যে কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে- (অ) আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে বা বেআইনী উপায়ে কোন ব্যক্তিকে প্রহরায় আটক রাখা হয় নাই বলিয়া যাহাতে উক্ত বিভাগের নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইতে পারে, সেইজন্য প্রহরায় আটক উক্ত ব্যক্তিকে উক্ত বিভাগের সম্মুখে আনয়নের নির্দেশ প্রদান করিয়া, অথবা
(আ) কোন সরকারি পদে আসীন বা আসীন বলিয়া বিবেচিত কোন ব্যক্তিকে তিনি কোন্ কর্তৃত্ববলে অনুরূপ পদমর্যাদায় অধিষ্ঠানের দাবী করিতেছেন, তাহা প্রদর্শনের নির্দেশ প্রদান করিয়া উক্ত বিভাগ আদেশ দান করিতে পারিবেন।”
উপরের অনুচ্ছেদটির ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়- হাইকোর্ট বিভাগ এমন কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেন যেখানে অন্য কোন আইনের মাধ্যমে কোন প্রকার প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী, কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তার আইনী প্রতিকার লাভের জন্য সর্বনিম্ন এক্তিয়ারাধীন আদালতে অভিযোগ দায়ের করবেন। যদি তিনি নিম্নআদালত সমুহের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হন তবে তিনি উপরের আদালতে যাবেন।

অতএব দেখা যায়, সাধারণত হাইকোর্ট অভিযোগ দায়ের করার জন্য প্রাথমিক আদালত নয়। তবে কিছু কিছু বিষয়ে হাইকোর্ট প্রাথমিক বা বিশেষ অধিক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। তেমনই একটি অধিক্ষেত্র হল এই রিট।

অনুচ্ছেদ ১০২(২)(ক)(অ) অনুসারে, কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে হাইকোর্ট, প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট যেকোন দায়িত্ব পালনে রত ব্যক্তিকে আইনের দ্বারা অনুমোদিত নয়, এমন কোন কার্য করা হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন। এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে আইন বহির্ভূত কাজ করা থেকে বিরত রাখার জন্য আদেশ দেয়া হয়।

পক্ষান্তরে, এই অনুচ্ছেদের দ্বিতীয় অংশ আইনের দ্বারা তাঁর করণীয় কার্য করবার জন্য নির্দেশ প্রদান করতে পারে। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নির্দেশনার সহাবস্থান রয়েছে এই অনুচ্ছেদে যা দুটি স্পষ্ট ক্ষেত্র নির্দেশ করে যাতে হাইকোর্ট তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। উদাহারণ স্বরূপ ধরা যাক- আপনি গ্রামে থাকেন, সেখানে সরকার নতুন রাস্তা বানাতে চায়। সেজন্য জমি অধিগ্রহণ করা দরকার।

সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মূল কর্মকর্তা হলেন ডেপুটি কমিশনার। তিনি প্রত্যাশী সংস্থার কাছ থেকে অনুরোধ পাওয়ার পর ভুমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ভুমি অধিগ্রহণের জন্য যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে তাদেরকে ভূমি অধিগ্রহণ আইনের ৩ ধারা মোতাবেক নোটিশ প্রদান করবেন। সেই নোটিশ পাওয়ার পর যদি কারো কোন আপত্তি থাকে তা শুনবেন এবং সেসব আপত্তি নিষ্পত্তি করে তিনি উক্ত আইনের ৭ ধারায় ক্ষতিপূরণ গ্রহনের জন্য নোটিশ প্রদান করে ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। দেখা গেল- আপনি ৩ ধারার নোটিশ পাননি। যেসব প্রক্রিয়ায় নোটিশ জারি করার কথা আইনে বলা হয়েছে তা মোটেও অনুসরণ করা হয়নি। আপনি সরাসরি ৭ ধারার নোটিশ পেলেন। এটি নিশ্চয়ই সুনির্দিষ্ট আইনের লঙ্ঘন। এখন বোঝা দরকার এতে কোন মৌলিক আইনটি ভঙ্গ হয়েছে? এক্ষেত্রে প্রধানত ভুমি অধিগ্রহণ আইন এবং সে সাথে সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৪২ নং অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে, যা ১০২(২)(ক)(অ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।

এর পরে আছে, অনুচ্ছেদ ১০২(২)(ক)(আ), যাতে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোন দায়িত্ব পালনে
রত ব্যক্তির কৃত কোন কার্য বা গৃহীত কোন কার্যধারা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হয়েছে বা গৃহীত হয়েছে ও তাঁর কোন আইনগত কার্যকরতা নাই বলে ঘোষণা করে হাইকোর্ট আদেশ দিতে পারবেন। এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে, প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মচারীর আইন বহির্ভূত কাজের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ১০২(২)(খ)(অ) অনুসারে, যে কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে হাইকোর্ট বিভাগ যদি মনে করে কোন ব্যক্তিকে আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে বা বেআইনী উপায়ে প্রহরায় আটক রাখা হয়েছে, সেক্ষেত্রে প্রহরায় আটক উক্ত ব্যক্তিকে উক্ত বিভাগের সম্মুখে আনয়নের নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন। এটি সাধারণত বেআইনি আটকাদেশের বিরুদ্ধে নাগরিকের রক্ষাকবচ। কিন্তু নানান অজুহাতে বেআইনি আটক বন্ধ হয়নি। এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এক অব্যর্থ অস্ত্র বিধায়, আমাদের দেশের রাজনীতির গুণগত মান পরিবর্তন না হলে এর ব্যবহার কখনো বন্ধ হবে বলেও মনে হয় না।

অনুচ্ছেদ ১০২(২)(খ)(আ)-তে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে- হাইকোর্ট বিভাগ, কোন সরকারি পদে আসীন বা আসীন বলে বিবেচিত কোন ব্যক্তিকে তিনি কোন্ কর্তৃত্ববলে অনুরূপ পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত আছেন বলে দাবী করছেন, তা প্রদর্শনের নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।

উপরের আলোচনা থেকে কয়েকটি বিষয় বেশ স্পষ্ট, অনুচ্ছেদ ১০২(২)(ক)(অ)-(আ) এর অধীনে আবেদন করতে গেলে কোন ব্যক্তির নিজের সংক্ষুব্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু অনুচ্ছেদ ১০২(২)(খ)(অ)-(আ) এর অধীনে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টের নিকট আবেদন করতে পারবেন।

এছাড়া, আরও একটি বিষয় পরিস্কার করে বোঝা দরকার তা হল- কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে রিট মামলা চলে না। প্রতিপক্ষ হতে হবে রাষ্ট্র কিংবা তার কোন অঙ্গে নিয়োজিত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী।

আমাদের সংবিধান মূলত ব্রিটেন, ভারত ও মালয়েশিয়ার সংবিধানের আদলে রচনা করা হয়েছে। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটি কতটা সঠিক বা কার্যকর সেপ্রশ্ন ভিন্ন, কিন্তু এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারসমূহের যথাযথ সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা সেটিই দেখার বিষয়। যেহেতু ব্যক্তি ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানকে এই আইনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে তাই, কোন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যদি আপনার মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করে তাহলে, আপনি রিট মামলা দায়ের করতে পারবেন না।

আপনাকে যেতে হবে, দেওয়ানী আদালতে, যার দীর্ঘ প্রক্রিয়া আমদের কেবল নিরুৎসাহিতই করে না, বিচার প্রক্রিয়ার অসাড়তাও নির্দেশ করে। ধরে নেয়া যাক- আপনি একটি প্রাইভেট মেডিকেলে ডাক্তার হিসেবে কর্মরত আছেন। আপনি ৫ বছর সুনামের সাথে কাজ করার পর, ম্যানেজমেন্ট যদি কোন কারণে আপনার উপর ক্ষিপ্ত হন, তাহলে কোন প্রকার কারণ প্রদর্শন ছাড়াই আপনাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার মনে হতেই পারে, এটি যদি সরকারী মেডিকেলে হয় তাহলে কি হবে? সহজ উত্তর তিনি রিট করার সুযোগ পাবেন, যার ফলাফল মোটামুটিভাবে দ্রুত। সাম্যের নামে এই অসাম্য কেন, তার উত্তর আমার জানা নেই।

উপরের আলোচনাটি মূলত সংবিধানের আলোকে রিট মামলার করার বিধান বিষয়ে সীমাবদ্ধ। এতে যৌক্তিক বিশ্লেষণ তেমন একটা নেই। রিট মামলা করতে পারার বিধান আর এর মাধ্যমে সত্যিকারের প্রতিকার পাওয়া এক বিষয় নয়। বর্তমানে সাধারণের স্বার্থে এর ব্যবহার হওয়ার পাশাপাশি এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহারও করা হচ্ছে। উদাহারণ হিসেবে ধরা যাক, সুন্দরবনের রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে অক্টোবর মাসে দায়সারাভাবে একটি রিট মামলা দায়ের করা হয়।

আপাত দৃষ্টিতে এই রিট মামলা দায়ের করার পেছনে বৃহৎ জনগণের স্বার্থ মনে করা হলেও দেখা যায় মামলাটি করার পূর্বে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও তার প্রভাব সম্পর্কে কোন প্রকার গবেষণা করা হয়নি। ফলে আশানুরুপ ফল পাওয়া যায়নি। শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে এর ভবিষ্যৎ। এতে যারা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে আসছিলেন তাদের পক্ষ থেকে মামলা করার সুযোগটি নষ্ট হয়ে গেল। কেননা, একই বিষয়ে দুটি মামলা চলতে পারে না (যদি ভিন্ন কোন প্রতিকার চাওয়া না হয়)।

অনেক সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতাসীন সরকারগুলো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন না ঘটিয়ে রাজনৈতিক বিচারে প্রজাতন্ত্রের কার্যাদি নির্বাহ করার কারণে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটছে। বিগত পাঁচ বছরে কিংবা তারও আগের পাঁচ বছরে, কি পরিমাণ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও,এস,ডি, বা কাজবিহীন অবস্থায় পাঁচটি বছর জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ করেছেন তা থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে। নির্বাচন আসন্ন এবং পরবর্তী সরকার আসার পর এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা যায়। এছাড়াও, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গগুলো তাদের কার্য নির্বাহ করার সময় অনেকক্ষেত্রে এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্বই হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের নাগরিকদের সুবিধা-অসুবিধার দেখভাল করা সেখানে রাষ্ট্র নিপীড়কের ভুমিকা নেয়ার ফলে আদালতের কাছে সব সমস্যার সমাধান খুঁজতে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর গত্যান্তর থাকে না।

যে কারণে বর্তমানে মামলার সংখ্যা যেখানে পৌঁছেছে তার চূড়ান্ত নিস্পত্তি হতে সময় লাগবে অন্তত আগামী দশটি বছর। তাহলে মামলা করে কি লাভ হয়? এই ভাবনাটি মামলা দায়ের করার পূর্বের ভাবনা। এর সাথে মামলা দায়ের, পরিচালনা ও অপরাপর প্রক্রিয়া যুক্ত আছে। আপনি কি চান এবং কি পেতে পারেন তার ধারনার উপরই এসব প্রশ্নের উত্তর নির্ভরশীল। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। এখানে কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি। প্রথমত জানা দরকার, রিট মামলা দায়ের করার পর প্রথম শুনানির দিন কি আদেশ বা নির্দেশ পাওয়া যায় এবং সেটির আলাদা কোন গুরুত্ব আছে কি না? রিট মামলার ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, রিট মামলা করার পেছনে কারণ থাকে প্রাথমিক শুনানির দিনই যেন অপর পক্ষের কোন কাজের বিরুদ্ধে রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ পাওয়া যায়। “রুল” হল “কারণ দর্শানো নোটিশের” আদালতি ভাষা। দরুন আপনি শুধু মাত্র “রুল” পেলেন প্রাথমিক শুনানির দিন। তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার মামলাটি মূলত ঝুলে গেল। এই মামলা সকল নোটিশ জারি করার পর চূড়ান্ত শুনানির জন্য তৈরি হতে সময় লাগবে এবং যে পরিমাণ মামলা বিভিন্ন কোর্টের তালিকায় এখন চূড়ান্ত শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ আছে তাতে, কোন কোর্ট নতুন কোন মামলা নিতে আগ্রহী হবেন কিনা সন্দেহ। দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চূড়ান্ত শুনানি না হওয়ার কারণে অনেক সময় মামলা করার মূল উদ্দেশ্যই হারিয়ে যায়। যেমন ধরুন, আপনি কোন এক সরকারী বিভাগে কর্মরত আছেন।

নিয়ম অনুযায়ী আপনার পদোন্নতি হবার কথা, অথচ আপনাকে পদোন্নতি না দিয়ে আপনার পরের অবস্থানে থাকা ব্যক্তিকে পদোন্নতি দিয়ে দিল। আপনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট মামলা দায়ের করলেন, আপনি সেই নিয়োগের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেলেন না, কেবল “রুল” পেলেন। মামলাটি ঝুলে রইল। ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ডিপার্টমেন্ট আপনাকেও পদোন্নতি দিল। এক্ষেত্রে ধরে নেয়া যাক, আইন আছে যে, একই বছরের মধ্যে যদি পদোন্নতি হয় তবে আপনার সিনিয়রিটি বজায় থাকবে। তাহলে আপনার রিট মামলা করার আর কোন প্রয়োজনীয়তা থাকে না। এক্ষেত্রে আদালতে আবেদনকারীর এবং রাষ্ট্রের যে ব্যয় তা পুরোটাই নেতিবাচক ব্যয়।

বাংলাদেশে রীট সম্পর্কিত বিখ্যাত মামলা:
*মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ (১৯৯৬) এই মামলা ফ্যাপ-২০ (পরিবেশ বিষয়ক) মামলা নামেও পরিচিত। এই মামলার রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে জনস্বার্থমূলক মামলা (Public Interest Litigation) করার আনুষ্ঠানিক দ্বার খুলে যায়। আপীল বিভাগ এই মামলায় বলেন-“Aggrieved Person” কথাটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবে অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বুঝায় না বরং এটা জনসাধারণ পর্যন্ত বিস্তৃত। তার মানে “Aggrieved Person” বলতে জোটবদ্ধ বা সমষ্টিগত ব্যক্তিকে বওভেরাল*মোখলেছুর রহমান বনাম বাংলাদেশ [২৬ DLR ১৯৭৪,(AD)৪৪]

রীটের জন্য আবেদন প্রসঙ্গে “সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি” কথাটি এই মামলায় উদারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আবেদনকারী ব্যক্তি কাজী মুখলেছুর রহমান বাংলাদেশের বেড়ুবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ছিলেন না। হাইকোর্ট বিভাগ আবেদনটিকে অসময়োচিত (Pre-mature) বলে খারিজ করে দেন। আপীল বিভাগ আবেদনকারীর আবেদন করার যোগ্যতাকে [লোকাস স্ট্যান্ডি(Locus Standi) বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি] বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বৈধতা দেয়।

▪চাকুরী থেকে অপসারিত একজন সরকারী কর্মচারী তার অপসারণের বিরুদ্ধে রীট দায়ের করতে পারে কিনা?
আমরা জানি সরকারী চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল নিষ্পত্তি করেন।চাকুরী থেকে অপসারিত একজন সরকারী কর্মচারী ইচ্ছা করলে তার অপসারণের বিরুদ্ধে উৎপ্রেষণ রীট (Writ of Certiorari) দায়ের করতে পারেন। এই রীটের মূল কথা হলো, কোন অধস্তন আদালত, ট্রাইব্যুনাল, কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা ব্যক্তি তার আইনগত ক্ষমতাকে লঙ্ঘন করে কিংবা স্বাভাবিক ন্যায়-নীতি ভঙ্গ করে তবে হাইকোর্ট বিভাগে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আবেদন করতে পারেন। এই ধরনের আবেদনের উপর ভিত্তি করে হাইকোর্ট বিভাগ অপসারণ আদেশ বৈধ কিনা তা যাচাই করে দেখতে পারেন। সরকারী কর্মকর্তাকে যদি অন্যায়ভাবে অপসারণ করা হয়ে থাকে তাহলে উক্ত অপসারণ আদেশকে হাইকোর্ট বিভাগ অবৈধ ঘোষণা করতে পারেন।

◆আদালতের কোন অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ যদি কেউ ভঙ্গ করেন তাহলে কি হবে?

এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার জন্য নতুন করে একটি মামলা হয় আদেশ/নির্দেশ ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে, তাতে আদালত মামলার বিষয়বস্তুর আলোকে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক আদেশ দিতে পারেন। এসব মামলার ক্ষেত্রে প্রচলিত সমাধান হচ্ছে ভুল স্বীকার করে শর্তহীন ক্ষমা চাওয়া। অভিযোগের কোন একটি বিষয়ে যদি আপনি আপত্তি করেন তবে সেই মামলা উভরপক্ষের শুনানির মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথমোক্ত সমাধানই বেছে নিতে দেখা যায়।

☆রীট ও মামলার মধ্যে পার্থক্য কি?
সাধারণত যেকোন বিষয়ে হোক সেটা দেওয়ানী অথবা ফৌজদারী মামলা হাইকোর্টের অধিন্যস্ত দেওয়ানী/ফৌজদারী আদালতে করা হয় শুধু মাত্র কিছু মামলা আছে যেগুলোতে সরাসরি হাইকোর্টে যেতে হয়। যেমন, কোম্পানী সংক্রান্ত মামলা, খ্রিস্টান বিবাহ সংক্রান্ত মামলা, কপি রাইট মামলা, এডমিরালটি বা সমুদ্রগামী জাহাজ সংক্রান্ত মামলা। রিট সংবিধানের ১০২ ধারা অনুসারে যেকোন নাগরিক রিট আবেদন করতে পারেন।

রিটের বিষয়টি মামলার মত হলেও মৌলিক একটি পার্থক্য আছে। আমরা মামলা করি প্রচলিত আইনের অধীনে হাইকোর্টের অধিন্যস্ত কোর্টে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোন আইনের অধীনে উক্ত সমস্যার কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে। তখন ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ জনস্বার্থে এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করতে পারে যাকে রীট বলা হয়। বিষয়টি পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। আবার কেউ যদি মনে করেন সরকারের প্রণীত কোন আইন প্রচলিত অন্য আইনের পরিপন্থী বা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, সে ক্ষেত্রেও আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে রিট করা যায়।যিনি মামলা করার যোগ্যতা রাখেন তিনি রীট ও করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে বিষয়ে রীট করতে চান সে বিষয়ের প্রতিকার সরাসরি অন্য আইনে উল্লেখ নেই।

উল্লেখ্য, কিছু কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে রিট এবং সাধারণ মামলা দু’টিই করা চলে। রিটে খরচ কিছুটা বেশি হলেও সাধারণত দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।

যখন কোনো ব্যক্তি কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হোন তখন আদালতের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন। মামলা দুই রকম হয়, দেওয়ানী ও ফৌজদারী। যদি আপনার ক্ষতি দেওয়ানী প্রকৃতির হয় তাইলে তা দেওয়ানী মোকাদ্দমা হবে। যেমন সম্পত্তি বা পদের অধিকার সম্পর্কিত মোকাদ্দমা। আর যদি কেউ কোনো অপরাধ করে যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো ফৌজদারি মামলা। পেনাল কোডের অধীন যে মামলা করা হয় তা ফৌজদারি মামলা। যেমন- খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ইত্যাদি।

রিট হলো সাংবিধানিক ভাবে একটি প্রতিকার যা সংবিধানের ১০২(২) এ রয়েছে। সেখানে ৫ ধরনের প্রতিকার দেওয়া হয়ে থাকে।

দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা হলো আইন ভঙ্গের ক্ষেত্রে ক্ষতির বা অপরাধের শিকার ব্যক্তির আদালতের কাছে প্রতিকার চান।

রিট বিষয়টি অনেক বিস্তৃত একটি আইনী বিধান। এত স্বল্প পরিসরে এর পূর্ণ আলোচনা সম্ভব নয়। কিন্তু সাধারণ পাঠক কিছুটা ধারণা অন্তত এই লেখার মাধ্যমে পেতে পারেন, যা আরও জানার জন্য আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে।

Telephone

Website