Chera Pata
দীর্ঘ বিরতির পর ছেঁড়া পাতা হয়তো আবারো নড়ে উঠলো একটু দমকা হাওয়ায়। শুভকামনা রইল।।
গল্পঃ "বৃষ্টি তুমি এসো না"
আজ নীরার বিয়ে। সকাল থেকেই আকাশটা গুমোট মেঘ করে আছে। বৃষ্টি হবে হবে করছে তবে হচ্ছে না। হালকা বাতাসে আমার ঘরের একমাত্র জানালাটা খট্ খট্ শব্দ করছে, খাট ছেড়ে উঠে জানালাটা বন্ধ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। মেসের ম্যানেজার মতিন সাহেবকে বলতে হবে জানালাটা সারিয়ে দিতে। কবে ভাঙ্গা জানালা দিয়ে ঘরে চোর ঢুকে যাবে, অবশ্য আমার কাছ থেকে নেবার মতো তেমন কিছু নেই।
মেসের রান্না ঘর থেকে একটা হৈচৈ ভেসে আসছে। ভালো কিছু রান্না হচ্ছে সম্ভবত। ও, আজ তো শুক্রবার, ১২ই জুলাই, আজ নীরার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
নীরা ঠিক আমার প্রেমিকা নয় তবে আমি ওকে অসম্ভব রকম ভালবাসি। ভালবাসার কথা কখনো ওকে বলি নি তবে আমার ধারণা ও বুঝতে পারে আমি ওকে ভালবাসি। কেন বলি নি? কারন, আমি জানি আমি কখনো ওর যোগ্য হতে পারবো না, শুধু শুধু ভালবাসার কথা বলে সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট করতে চাই নি। নীরা তুখোড় ছাত্রী, ভীষণ মায়া কাড়া সুন্দরী, অভিজাত বিত্তবান পরিবারের মেয়ে। আর আমি? নিতান্তই আমি।। দু'বছর আগে মাষ্টার্স শেষ করে একটা ছোট সিমেন্টের ব্যবসায় হিসাব রাখি। বিসিএস পরীক্ষায় ভাইবা পর্যন্ত গিয়েছি শেষ পর্যন্ত হয়নি। মামা চাচা নেই, টাকা পয়সা নেই, মাঝারি রেজাল্ট। ক্লাশে সবসময় মিডেল রোর স্টুডেন্ট, নট গুড এনাফ, নট ব্যাড এনাফ আইদার। আমার নানা বলতেন, তোমাকে সেরাটা হতে হবে, যদি মেথর ও হও সেরা মেথর হবা, তাহলে জীবন জীবিকা নিয়ে কখনো ভাবতে হবে না। আমার জীবনের গল্পটা ঠিক তার উল্টো, সবসময় মিডিওকার, কখনো সেরা নয়। এই আমি নীরাকে ভালোবাসার কথা বলার যোগ্যতা রাখি না।
দরজা ঠেলে কারও ঘরে ঢোকার শব্দ হলো, রান্নাঘরের হৈচৈর শব্দটাও বেড়ে গেল। তাকিয়ে দেখি রফিকুল ভাই, গাঁয়ে একটা সেন্ডো গেঞ্জি, চেক লুঙ্গি আলগোছে গিঠ দেয়া, এক মুখ হাসি,
" মামুন ভাই, খিচুড়ি হইতেছে?"
"আচ্ছা"
"সাথে বেগুন ভাজা আর ডিম ভূনা।"
"আচ্ছা"
"ক্যাশ থেকে কিছু দেন না, একটু মাংস করি?"
"কত?"
"তিনশ দিলেই হবে"
"আচ্ছা"।
" ভাই, আপনার কি শরীর খারাপ?"
"না, কেন?"
" এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন"
আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম ওনার দিকে, দু মাস আগে চাকরি চলে গেছে, গত মাসে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন বিয়ের ঘড়িটা বেচে দিয়ে, তিন বাচ্চা বৃদ্ধ বাবা মা, বউ, ছয় জন মানুষ ওনার আয়ে চলে, এ মাসে টাকা পাঠাতে হবে আরো বেশি। বড় মেয়েটার এস এস সির ফর্ম ফিলাপ, অথচ দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন উনি।
"কি ভাবছেন মামুন ভাই?"
" কিছু না"
অবশেষে বিছানা ছেড়ে উঠতে হলো। এই মেসের ক্যাশ আমার কাছে থাকে। আগে অনেক ঝামেলা গেছে এই ক্যাশ নিয়ে, প্রায় দু'বছর আগে আমার কাছে দায়িত্ব আসে, সেই থেকে আমার কাছেই চাবি। মেস ম্যানেজার মতিন সাহেবকে এটা ও বলতে হবে, অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে। তিনশ টাকা এগিয়ে দিতেই রফিকুল ভাই বললেন,
"বাদ জুমা, আড়াইটায় লান্চ, আপনার নাস্তা পইরা আছে, পাঠাইয়া দিমু?
"না থাক"।
উনি চলে যেতেই জানালাটা বন্ধ করে দিলাম। বুকের ভেতর কেমন যেন একটা ভার লাগছে। অথচ আমি জানতাম নীরা একদিন আমার জীবন থেকে পুরোপুরি মুছে যাবে। আসলে আমি হয়তো ওর বিয়ের জন্য কষ্ট পাচ্ছি না, আমি কষ্ট পাচ্ছি এটা ভেবে যে, নীরা আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাবে।
গত সপ্তাহে ও এসেছিল আমার অফিসে। জরুরী একটা টেন্ডারের কাগজ ঘাটছিলাম, অফিসের বয় রতন দৌড়ে এলো।
"ভাইয়া, তাড়াতাড়ি আসেন, দেখেন কে আসছে"?
"ব্যাস্ত আছি রতন, এখন যা"
" নীরা আপা আসছে"
আমার বুকের মধ্যে খচ্ করে উঠেছিল। কিছু দিন আগে জানিয়েছিল ওর ইম্পেরিয়াল কলেজে পিএইচডি ফান্ড হয়েছে, ও আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি ব্যাস্ততার ছুতোয় বলেছিলাম, "কাজের খুব চাপ যাচ্ছে, দেখি"। নীরা ঠিকানা বের করে আমার অফিসে চলে এসেছে। অফিসের সামনের রুমটায় একটা রিসিপসন ডেস্ক আছে আর কিছু পুরনো সোফা। নীরা দাঁড়িয়ে কথা বলছিল রিসিপসনিষ্ট মুনিরার সাথে। আমি আসাতেই মুনিরা চূপ হয়ে গেল, নীরা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল একরাশ কৌতূহল নিয়ে,
" তুমি তো আমাকে বলো নি, তোমাদের এখানে একটা ভর্তার রেস্টুরেন্ট আছে, চলো তোমাকে খাওয়াবো।"
" তোমার গাড়ী ওই গলিতে ঢুকবে না"
" চলো তাহলে হেঁটে যাই।"
"আচ্ছা"
আমি নীরাকে নিয়ে হাঁটছিলাম, কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
" তুমি আমাকে দেখে খুশি হও নি?"
"অনেক,..... অফিসের ঠিকানা কোথায় পেলে?"
" সিক্রেট,....." হেসে বলেছিল, " ঢাকা শহরে এটা খুব সোজা, তোমার অনেক চেনা মানুষকে আমি চিনি।"
" তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।"
" কারন আছে"
উত্তর বাড্ডায় রাসেলের ভর্তার হোটেল বিখ্যাত, তবে নীরাকে নিয়ে আসাতে কিছু উৎসুক চোখ আমাদের দেখছে।
"তুমি রতনকে চাকরিটা দিয়ে খুব ভালো করেছ"
"এ আর এমন কি"
"ওর জন্য অনেক, ক্যম্পাসে ওর আদা চা টা সেরা ছিল। তোমার সন্ধ্যা স্কুলটা এখনো আছে"
"আছে, কিছু জুনিয়র ছেলেপেলে ধরে রেখেছে।"
ভাত, ডাল আর কি কি ছিল মনে নেই, তবে নীরা খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছিল। হেসে বলেছিল,
"আমি সুন্দর হয়ে গেছি কারন আমি বিয়ে করছি"
"তুমি সব সময়ই সুন্দর"
"আসছে ১২ তারিখ, ছেলে লন্ডনে স্যাটল্ড, ফিজিসিস্ট"
" তোমার সাথে মানানসই"
" দেখতেও ভাল, ফাইভ ইলেভেন"
" কনগ্রাচুলেশান"
" ভাবলাম তোমাকে নিজ মুখে খবরটা দেই।"
"ভালো করেছ, তোমার সাথে দেখা হলো।"
"বিয়ের পরপরই লন্ডনে চলে যাচ্ছি, ২০ তারিখ আমার ফ্লাইট"
" তোমাকে মিস করবো"
"বিয়েটা আমি করবো কিনা জানিনা, আমি সবসময় ভাবতাম বিয়ে তাকেই করা যায় যাকে ভালোবাসি"।
" বিয়ের পরেও ভালোবাসা হয়"
"তাই, কিন্তু ফ্রিডম অফ চয়েস থাকে না, তুমি জানো ভালো না বাসতে পারলে অনেক অশান্তি। আফটার অল, আমারা সবাই শান্তি চাই"।
" ছেলেটা ভালো, তোমার সাথে মানানসই"
নীরা কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবছিল। আমার বুকের মাঝে উথাল পাথাল, কিন্তু আমি জানি আমি কে, আমি মিডল বেঞ্চার, আমি অনলি ফাইভ সেভেন, নট টল, নট সর্ট ইদার।
" কি ভাবছো?" ও উত্তর না দিয়ে পাল্টা জিজ্ঞেস করল,
" তুমি কি কাউকে ভালবাসো?"
একবার ভেবেছিলাম বলে দেই।
" ভালবাসা বাসির সময় কোথায় আমার, তাছাড়া আমাকে কেন কেউ ভালোবাসবে?"
" তুমি অনেক অনেস্ট, অনেক ভাবো অন্য সবার জন্য, ইউ নেভার নো, দেয়ার ইজ সাম ওয়ান সাম হোয়ার, হঠাৎ একদিন তাঁকে পেয়ে যাবে আর বুঝে যাবে, দেয়ার সি ইজ"
আমি জানি সে কোথায়, এবং আমি জানি তার সাথে হয়তো আজকের পর আর দেখা হবে না।
"আমার বিয়েতে এসো, এই নাও কার্ড"।
"আচ্ছা"।
"আমাকে এগিয়ে দাও, রাস্তা চিনে গাড়ী পর্যন্ত যেতে পারবো না"।
সেদিন ফিরতি পথে আর কোন কথা ও বলে নি। একটু কি বিষন্ন ছিল ও, আচ্ছা এমন কি হতে পারে না, ও আমাকে ভালবাসে। অসম্ভব, যতসব ফালতু চিন্তা। আমি মেস ছেড়ে বাইরে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। আকাশটা খুব মেঘলা, যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে। আমি ফুটপাত ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। আজ অনেক দূরে চলে যাব।
প্রায় আধঘন্টা পর বড়বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামলো, মহাখালী রোড ধরে আমি প্রায় কেন্টনমেন্ট চলে এসেছি। দুমিনিটেই সমস্ত শরীর ভিজে গেল। ফুটপাত ধরে মানুষ জন দোকানপাটের নিচে জরসর হয়ে আছে। বৃষ্টিটাকে খুব আপন লাগছে, কি দারুন একটা আড়াল দিচ্ছে, চোখ বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়েছে কি? আমাদের মতন ছেলেরা কাঁদে না, তবু এমন বৃষ্টিতে চোখের জল মিশে যাক না বৃষ্টির ফোঁটায়, কেউ বুঝবে না।।
(চলবে)
Click here to claim your Sponsored Listing.
Category
Contact the public figure
Website
Address
Melbourne
Pete Williams is an entrepreneur, author and marketer from Australia. Read his thoughts on business
Melbourne
Little people call me Zia (Italian word for Aunty), big people call me Grace. I wrote a children's b
Melbourne
Welcome to the official PD Martin page. Read my latest writing news and find out more at www.pdmartin.com.au
Melbourne
Managing Director of imagineeringnow.com Author of Imagineering NOW BLOG http://www.imagineeringnow.
Melbourne
Rum Charles is an established public speaker, author and generally passionate individual. He loves what he does and he does it well - with a unique blend of energy, passion and hu...
Melbourne
Paul Kiritsis, PsyD, is a clinical psychologist, artist, and award-winning writer.
Melbourne, 3186
Paul Moder is a multi award winning writer, producer and performer based in Melbourne, Australia..