Vedic Mission

টানা ৩য় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় এই হিন্দুত্ববাদী মানুষটার জন্য রইলো হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে বিজয়ী শুভেচ্ছা।
জয় সনাতন
জয় হিন্দুত্ববাদ

আমিষ না নিরামিষ?

‘আমিষ না নিরামিষ’ সনাতন ধর্মে কোন খাবার গ্রহন করতে বলা হয়েছে ? এই নিয়ে তর্কের সীমা নেই। তাই গীতা, বৈদিক শাস্ত্র এবং বিজ্ঞানের আলোকে যুক্তিগত বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি।


প্রথমেই জেনে নিতে হবে আমিষ বা নিরামিষ শব্দটি বৈদিক কোন শাস্ত্রে আছে কি না ? আমি ‘বেদ, মনুসংহিতা, উপনিষদ, গীতা’ কোথাও এই আমিষ বা নিরামিষ শব্দটি পাইনি। বৈদিক সকল গ্রন্থে (যে গুলোতে খাদ্য প্রণালী উল্লেখ আছে) মানুষের খাবারকে তিন ভাগে ভাগ করেছে।
যথা, ১) সাত্ত্বিক, ২) রাজসিক, ৩) তামসিক। বৈদিক কোন গ্রন্থে আমিষ বা নিরামিষ শব্দটি না থাকলে কিভাবে এটি আসলো ? মূলত বিজ্ঞানীরা এই আমিষ/প্রোটিন শব্দটির আবিষ্কার করেছে। সেখান থেকে বিভিন্ন গ্রন্থে আমিষ এবং নিরামিষ কথাটির উল্লেখ করা হয়। যেহেতু আমরা আমিষ বা নিরামিষ ভাগ করে খাদ্য প্রস্তুত করি সেহেতু আমিষ কি বা নিরামিষ কি এবং আমিষ ও নিরামিষ খাদ্য গুলো কি কি এগুলো বিজ্ঞানের আলোকে সংক্ষেপে আলোচনার প্রয়োজন।
→ আমিষ হলো, যে খাদ্যে কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেন একত্রে থাকে সেগুলোই আমিষ খাদ্য। আমিষ মূলত দুই প্রকার। ১) প্রাণীজ, ২) উদ্ভিজ্জ।
প্রাণীজ আমিষ হলো, যেগুলো প্রানী থেকে পাওয়া যায়। যেমনঃ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি। আর উদ্ভিজ্জ আমিষ হলো যেগুলো উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। যেমনঃ ডাল, বাদাম, সয়াবিন, গম ইত্যাদি।
→ নিরামিষ হলো, যে খাদ্যে আমিষের পরিমান কিঞ্চিৎ পরিমানও নেই। যেমনঃ ধান, পিয়াজ, রসুন ইত্যাদি।
এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, আমরা দুধ ও গম খাই নিরামিষ হিসেবে। কিন্তু এই দুধে ও গমে আমিষ রয়েছে। দুধে ৩-৪% এবং গমে ৯০-৯৫% আমিষ রয়েছে। এদিকে পিয়াজ, রসুন খাইনা আমিষ ভেবে। অথচ পিয়াজ, রসুনে আমিষের পরিমান ০%। এই রকম অনেক অনেক খাদ্য আছে যা আমরা নিরামিষ মনে করে গ্রহন করছি বাস্তবে সেগুলোতে আমিষ রয়েছে। যাইহোক বিজ্ঞান বিশ্লেষণ ছেড়ে এবার ধর্মীয় গ্রন্থে আলোকপাত করি। আশাকরি শ্রী গীতা সকলের কাছেই রয়েছে। শ্রী কৃষ্ণ গীতার ১৭ তম অধ্যায়ের ৮,৯,১০ এই তিন শ্লোকে মানুষের খাদ্য অনুযায়ী যথাক্রমে সাত্ত্বিক, রাজসিক এবং তামসিক খাদ্যের কথা বর্ণনা করেছেন।
চলুন ১৭/৮ শ্লোকটিতে দেখি শ্রী কৃষ্ণ কি বলেছেন...
‘‘আয়ুঃসত্ত্ববলারোগ্যসুখপ্রীতিবিবর্ধনাঃ।
রস্যাঃ স্নিগ্ধা স্থিরা হৃদ্যা আহারাঃ সাত্ত্বিকপ্রিয়া।।’’
অর্থাৎ, ‘‘যে সকল আহার আয়ু, বুদ্ধি, বল, আরোগ্য, সুখ, ও প্রীতি বৃদ্ধি করে এবং সরস, স্নিগ্ধ, পুষ্টিকর, এবং মনোরম সেইগুলি সাত্ত্বিক ব্যাক্তিগনের প্রিয় হয়।’’
এরপরের শ্লোকটিতে (১৭/৯) রাজসিক খাদ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে...
‘‘তিক্ত, অম্ল, অতিলবনাক্ত, অতি উষ্ণ, তীক্ষ্ণ, শুষ্ক, প্রদাহকর এবং দুঃখ, চিন্তা ও রোগ করে যেকল আহার তা রাজসিকগনের অতি প্রিয় হয়’’।
তারপরের শ্লোকটিতে (১৭/১০) তামসিক খাদ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে...
‘‘যে আহার ঘন্টা পূর্বে পাক (রান্না) করা হয়েছে, রসহীন, দূর্গন্ধময়, বাসী, উচ্ছিষ্ট এবং অপবিত্র, সেই সকল খাদ্য তামসিক ব্যাক্তিগনের প্রিয় হয়’’।
অর্থাৎ, সাত্ত্বিক খাবার আমাদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। তাহলে এই সাত্ত্বিক খাবার কোন গুলো ?
শ্রী কৃষ্ণের বর্ণনা অনুযায়ী যে সকল খাদ্য আয়ু, বুদ্ধি, বল, আরোগ্য, সুখ, ও প্রীতি বৃদ্ধি করে এবং সরস, স্নিগ্ধ, পুষ্টিকর, এবং মনোরম সেইগুলি সাত্ত্বিক। তাহলে উদাহরণস্বরূপ আমরা ‘দুধ’ ধরে নিতে পারি। কারণ দুধ উপরোক্ত সকল কিছুই তৈরি করতে সক্ষম। এখন এই সাত্ত্বিক দুধ যদি ‘অতি উষ্ণ’ থাকার সময় পান করি তাহলে নিশ্চই এটি রাজসিকে খাদ্যে পরিণত হবে। এবং এই সাত্ত্বিক দুধ যদি ১৫ দিন খোলা স্থানে রেখে দেই তাহলে নিশ্চই এটি ‘পঁচা/বাসি’ হিসেবে তামসিক খাদ্যে পরিনত হবে। তাই নয় কি ?? এর থেকেই প্রমান হয়, আপনি খাদ্য কিভাবে গ্রহন করছেন সেই অনুসারে সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক নির্বাচন হয়। মূলত কোন খাদ্যই সাত্ত্বিক সিলেক্ট করা নয়, কোন খাদ্যই রাজসিক বা তামসিক সিলেক্ট করা নয়। এই হিসেবে দুধ যেমন সাত্ত্বিক নয়, পিঁয়াজ রাজসিক নয় আর রসুনও তামসিক নয়। আপনি যদি খাবারে পরিমান মত পিয়াজ বা রসুন দেন তাহলে এটি সাত্ত্বিক খাদ্যেরর অন্তর্গত। আবার সম্পূর্ণ পৃথিবী হিসেবেও একই সূত্র। যেমন আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাত খেলে আমরা সুস্থ থাকি অর্থাৎ আমাদের জন্য ভাত সাত্ত্বিক খাবার। এখন যে দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য রুটি সে দেশের মানুষকে ভাত খেতে দিলে অবশ্যই অসুস্থবোধ করবে। তাহলে রুটি প্রধান দেশে আমাদের সাত্ত্বিক ভাত হয়ে যাবে রাজসিক। আবার এই সাত্ত্বিক ভাত যদি আমরাই বাসি/পঁচা করে গ্রহন করি তাহলে সেটি তামসিক হিসেবে গন্য হবে। গোটা বিশ্বে মানুষ নিজ নিজ প্রকৃতি, বাতাবরণ ও পরিস্থিতির অনুকূলে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী প্রিয় হয় এবং সুস্থতা প্রদান করে। এখন যে দেশে গমের রুটি প্রধান খাদ্য, সেই রুটি কি আমরা প্রতিনিয়ত গ্রহন করতে পারব ? প্রতিদিন প্রতিবার রুটি খেলে নিশ্চই অসুস্থ হয়ে যাব। অর্থাৎ ঐ দেশের জন্য রুটি সাত্ত্বিক কিন্তু আমাদের জন্য তা রাজসিক। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে যেকোন খাদ্যেই সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক বিদ্যমান। আপনি কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে গ্রহন করছেন সেটিই মূখ্য। বাঙালিরা যেমন ভাত, পাঞ্জাবীরা যেমন রুটি পছন্দ করে এবং পরিবেশের অনুকুল, তেমনি আরববাসীরা দুম্বা, চীনারা ব্যাঙ, মেরু অঞ্চলে মাংস ছাড়া জীবন চলে না। অর্থাৎ, মাংসও সাত্ত্বিক (পরিমাণ মত আহারে)! ইউরোপিয়রা শুকর খায়। তবুও বিদ্যা, বুদ্ধিবিকাশ এবং উন্নতিতে আমেরিকান ও ইউরোপিয়ানরা প্রথম শ্রেনীর বলে গন্য হয়েছে। অর্থাৎ শ্রী কৃষ্ণের সাত্ত্বিক খাবারের বিশ্লেষণ অনুসারে আমেরিকান ও ইউরোপিয়ানরাই বেশি সাত্ত্বিক খাবার গ্রহন করে।
তবে যাঁরা ঘর পরিবার ত্যাগ করে কেবল ঈশ্বরের আরাধনায় লিপ্ত, সন্যাস হয়ে কোন আশ্রমে আছেন তাদের জন্য মাংস-মদিরা পরিহার করার বিধান রয়েছে। কারণ অনুভবে দেখা গেছে যে এই সকল পদার্থ আধ্যাত্মিক মার্গের বিপরিত মনোভাব তৈরি করে। অতএব এই সমস্ত ব্যাবহার করলে সাধন পথ থেকে ভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যারা নির্জনে বাস করেন বৈরাগ্যযুক্ত তাঁদের জন্য শ্রী কৃষ্ণ ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে বলেছেন ‘যুক্তাহার বিহারস্য ’ এটি মনে করে আচরণ করা উচিৎ। খাদ্য গ্রহন ততটাই উচিৎ, যতটা আরাধনা সহায়ক।
বেদে মানুষের খাবার হিসেবে সাত্ত্বিক, রাজসিক আর তামসিকের কথাই বলা হয়েছে। যেহেতু এই ব্যাপারে উপরে শ্রী কৃষ্ণের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আলোচনা করা হয়েছে সেহেতু আশাকরি আর বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই।
আরেকটি ছোট কথা, অনেক সংঘটন এই আমিষ নিরামিষ নিয়ে গীতার ৯ম অধ্যায়ের ২৬ তম শ্লোকের অপব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। অথচ এই শ্লোকে মানুষের খাবারের নিয়ে কোন কথাই শ্রী কৃষ্ণ বলেনি।
চলুন একপলকে গীতার ৯/২৬ নাম্বার শ্লোকটি দেখে আসি।
‘‘পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।
তদহং ভক্ত্যুপহৃতমশ্নামি প্রযতাত্মানঃ।।’’
অর্থাৎ,
‘‘যিনি আমাকে ভক্তিপূর্বক পত্র, পুষ্প, ফল, জল অর্পণ করেন, মন থেকে প্রযত্নশীল (সংযত) সেই ভক্তের ঐ সব সামগ্রী আমি গ্রহন করি।’’
এই শ্লোক থেকেই মূলত নিরামিষ প্রাধান্য পেয়েছে। বৈষ্ণবরা এই শ্লোক দিয়েই বুঝে গেছেন ভগবান আমাদের কাছে ‘পত্র, পুষ্প, ফল, জল’ খেতে চেয়েছেন। কিন্তু এই শ্লোকটিতে একটু ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন ‘ভক্ত্যা এবং প্রযতাত্মানঃ’ শব্দ দুটি রয়েছে। এই দুটি শব্দের ভাবার্থ একটু ভালো ভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুণ। এই দুটি শব্দের মর্মার্থ যখন আপনি বুঝতে পারবেন তখন দেখবেন শ্রী কৃষ্ণ শাকপাতা, ফলমূল দিয়ে পূজা করতে বলছে না!
শ্রী কৃষ্ণ ‘ভক্তিবশঃ পুরুষঃ’। তিনি কেবল ভক্তিই গ্রহন করেন আর কোন বাহ্য বিষয় নয় বা বাহ্যিকবস্তুর কোন উপকরণেও তিনি প্রত্যাসি নয়। তাই শ্রী কৃষ্ণ ‘ভক্ত্যা’ শব্দের উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ ভক্তি সহকারে যা দেওয়া হয়।
Vedic Mission
এবার পরের শব্দটির কথা বলি, ‘প্রযতাত্মানঃ’ অর্থাৎ ‘সংযত’। এই সংযত বলতে উনি ইন্দ্রিয় সংযমের কথা বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, বিশুদ্ধচিত্ত ব্যাক্তি। বিশুদ্ধচিত্ত থাকলে ভক্তির উদয় হয়। তখন তাঁর (শ্রী কৃষ্ণের) বাহ্যিক বিষয়বস্তুর, পুষ্প, ফল, জল, ইত্যাদি - বিষয়ের অতিথ যিনি সেই পরমপুরুষকে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ভক্ত তখন নিজেকেই তার তন্-মন-ধন সবকিছুই তার প্রিতম্ প্রিয়তমের শ্রী চরণে ‘নমো নমঃ’ বলে ঢেলে দেন। আর ভাবগ্রাহী ভক্তবৎসল ভগবানও ওই ভক্তি প্রেমেই গ্রহন করেন। শ্রী কৃষ্ণ এই শ্লোকে সংযতত্মাযুক্ত ভক্তির কথাই মূখ্য ভাবে বলতে চেয়েছেন। কারণ, চিত্ত বিশুদ্ধা ভক্তিযুক্ত না হলে, অসংযমী ব্যাক্তির পত্র, পুষ্প, ফল, জল দিয়ে পূজা ভাগবৎপদে পৌঁছে না। কারণ, সংযমী না হয়ে কামনাবাসনা পূর্বক পূজা মূলত লোক দেখানো ঢং মাত্র।
এবার আসি ফলমূল, পত্র, পুষ্প, জলের কথা কেন শ্রী কৃষ্ণ বললেন বা এই উল্লেখিত উপকরণের কথা বলে উনি কি বুঝাতে চেয়েছেন ?
ছোট একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা ক্লিয়ার হবে। ধরুণ, আপনি আপনার প্রিয় বন্ধুর বাসায় গিয়ে খাবেন' এমন কথা বন্ধুকে জানিয়ে বললেন, দোস্ত.. তদের বাসায় আজ আমি খাব। বন্ধু বলল, কি খেতে চাস বল? তখন আপনি বললেন, তুই আমার সব চেয়ে প্রিয় বন্ধু। তুই আমাকে যা খেতে দিবি আমি তাই খাব। শুধু জল, পাতা লতা দিলে সেটিও গ্রহন করব। কথায় আছে, ‘অহংকারীর লুচি পুলাওয়ের চেয়ে সৎ-নম্র-প্রিয় ব্যাক্তির খুদকুড়া ঢেড় ভালো।’ এখানে মূলত ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। অহংকারীর লুচিপোলাওয়ের চেয়ে ভালোবাসা পূর্ণ খুদকুঁড়া আপনার কাছে বেশি ভালো লাগছে। অর্থাৎ ভালোবাসা পূর্ণ শুধু জল খেতেও শান্তি। এখন আপনার বন্ধু যে আপনার কাছে শুধু জল, পাতা লতা'র কথা বলল তাতে কি আপনি আপনার বন্ধুকে শুধু জল আর পাতা লতা খাওয়াবেন ? আপনি যদি এই জল, পাতা লতার Inner Spirit বুঝার পরিবর্তে Literal Meaning নিয়ে বন্ধুর সাথে ঠিক এমন আচরণ করেন তাহলে কি বন্ধু খুশি হবে ?
জনশ্রুতি আছে, শ্রী কৃষ্ণ একবার ভক্তশ্রেষ্ঠ বিদুরের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন। বিদুরের পত্নী তাদের আরাধ্য ইষ্টকে স্বয়ং উপস্থিত দেখে এতটাই অবিভূত হয়ে পরেছিলেন যে, তিনি শ্রী কৃষ্ণকে কলা খাওয়ানোর সময় কলাটা ফেলে দিলে কলার খোলসটা কৃষ্ণের মুখে দিয়েছিলেন! প্রিয়তমে ইষ্টের দর্শণে বিদুর পত্নীর স্থান, কাল, পাত্র জ্ঞান ছিল না। দেহাত্মাবোধেই ছিল না। এদিকে শ্রী কৃষ্ণও পরম তৃপ্তির সহিত সেই কলার খোলসটুকুই খেয়েছিলেন। এখানে কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ ভক্তিমতি বিদুর পত্নীর অনুরাগ, হৃদয় ভরা টান আর ভক্তিটুকুই গ্রহন করেছিলেন। কিন্তু এখন যদি আপনি এই ঘঠনার Inner Spirit টা না নিয়ে আপনি কি ধরে নিবেন, শ্রেষ্ঠ ভক্তের বাড়িতে কৃষ্ণ কলার খোলস খেয়ে তৃপ্ত হন ?, আর শ্রেষ্ঠ ভক্ত হতে হলে কলার খোলস নৈবদ্য ভগবানকে দিতে হয় ? আসলে শ্রী কৃষ্ণ ফুল ফল জল বিষয়টাকেই মূখ্য করেননি। মূখ্য বিষয় হলো ‘ভক্তি’। এখন যদি আমি বলি, উল্লেখিত শ্লোকে পত্র, পুষ্প, ফল, জলের কথা বলেছেন তাহলে আপনারা মাখন, ননী, মিষ্টান্ন, পায়েস ইত্যাদি কেন দেন ? এইগুলোর কথা তো শ্লোকে বলা হয়নি। তখন কিন্তু আপনারা চুপ। মূলত শ্লোকের ভাবখানা এমন যে, ‘বিশুদ্ধ চিত্তে কোন ভক্ত ভক্তি সহকারে নিজ সাধ্য মত আমাকে যা দিবে আমি তাই গ্রহন করব।’
এখানে ভক্তের ভক্তিভরা টানটুকুই চাচ্ছেন, সত্য সত্যই নয়। শাকপাতা ফলমূল চাচ্ছেন না।
কোন শ্লোক বা কোন মহাপুরুষের বানী বুঝতে হলে তার উদ্দেশ্য এবং প্রসঙ্গ, পূর্বাপর ভালো ভাবে বিবেচনা করতে হয়। কোন অংশভাগ উদ্ধৃত করে মনমত অর্থ যোজনা করা উচিৎ নয়।
আলোচ্য শ্লোকেও শ্রী কৃষ্ণ কোন পরিস্থিতিতে, কি উদ্দেশ্যে, কোন প্রসঙ্গে এই কথা বলেছেন তা লক্ষ্য করতে হবে। তাহলে বুঝবেন আমি যা বলছি তাই ঠিক। এই শ্লোক ৯ম অধ্যায়ের ২৬ নাম্বার শ্লোক। আপনি ৯ম অধ্যায়ের ২০ নং শ্লোক থেকে ২৪ নং শ্লোক পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন শ্রী কৃষ্ণ বুঝিয়েছেন, সাকাম কর্ম করলে মানুষ কি ফল ভোগ করবেন আর নিষ্কাম কর্ম করলে কি ফল ভোগ করবেন.. তা বর্ণনা করেছেন। ২৫নং শ্লোকে বলেছেন, ‘‘............আমার ভক্ত আমাকেই লাভ করেন। তারা সাক্ষাৎ আমার স্বরূপ হন। তাদের পতন হয়না।’’ এরপরেই তিনি পুনরায় ২৬ নং শ্লোকে ভক্তির কথাই প্রকাশ করেছে, এজন্য আপনি নবম অধ্যায়ের পরবর্তি শ্লোক গুলো পর্যালোচনা করলেই পেয়ে যাবেন। আর আহারের কথা যদি বলেন, সেটি তো ১৭ তম অধ্যায়ের ৮,৯,১০ নাম্বার শ্লোকেই বলে দিয়েছেন। সেখানে ক্লিয়ার করে সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক আহারের কথা বর্ণনা করেছেন। তাহলে এই খাবার নিয়ে পুনরায় ৯ম অধ্যায়ে ভক্তি জ্ঞান প্রদানের সময় নিশ্চই আহারের কথা বলবেন না। কারণ গীতায় একই কথা কখনো বার বার উল্লেখ করা হয়নি।
নমস্কার সকলকে🙏🙏

পবিত্র বেদ মন্ত্রে অনুপ্রেরণার বানী

রাত্রিকালীন শয়ন মন্ত্র Vedic Mission

পবিত্র বেদে ভয় দুরীকরন মন্ত্র
Vedic Mission

ধর্ম ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা বিধান

ন জাতু কামান্ন ভয়ান্ন লোভাদ্
ধর্ম ত্যজেজ্জীশিতস্যাপি হেতোঃ।
নিত্যো ধর্মঃ সুখদুঃখে ত্বনিত্যে
জীবো নিত্যো হেতুরস্য ত্বনিত্যঃ।।
মহাভারত, স্বর্গপর্ব-৫/৬৩
______ 'কামনায়, ভয়ে, লোভে অথবা প্রাণ বাঁচাবার জন্যও ধর্মকে ত্যাগ করবে না।
ধর্ম নিত্য এবং সুখ-দুঃখ অনিত্য।

Vedic Mission

অনাথ আশ্রমে গরীবের সন্তান পাওয়া যায় কিন্তু ধনীদের না আর বৃদ্ধাশ্রমে ধনীদের বৃদ্ধ বাবা মা পাওয়া যায় কিন্তু গরীবের না।এটা আমাদের বর্তমান সমাজের অবস্থা।

https://www.instagram.com/vedicmission19?igsh=d2F5dGtxNHd1M2d3

www.instagram.com

কারো মৃত্যুর খবর শোনার পর কি মন্ত্র বলতে হবে? মুসলিমরা তো কেউ মারা গেলে ইন্নালিল্লাহি বলে আমরা হিন্দুদের কি এমন কোনো মন্ত্র আছে নাকি?

হ্যা অবশ্যই আমাদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদে এমন মন্ত্র আছে। এবং কোনো কোনো সনাতনী মারা গেলে সেই সংবাদ পাইলে আমরা নিচের এই দুটি মন্ত্র পাঠ করবো

প্রেহি প্রেহি পথিভিঃ পূর্ব্যেভির্য়ত্রা নঃ পূর্বে পিতরঃ পরেয়ুঃ।
উভা রাজানা স্বধয়া মদন্তা য়মং পশ্যাসি বরুণং চ দেবং।"
ঋগবেদ ১০.১৪.৭
সরলার্থ- হে মৃত জীব! যে পথে আমাদের পূজ্য পিতৃপুরুষগণ (বিদ্যান পুরুষেরা) গিয়েছেন, তুমিও সেই পথে গমন করো এবং গমন করে প্রসন্নভাবে মুক্ত জীবাত্মা ও ঈশ্বর উভয়কে দেখো।

সং গচ্ছস্ব পিতৃভিঃ সং য়মেনেষ্টাপূর্ত্তেন পরমে ব্যোমন্।
হিত্বায়াবদ্যং পুনরস্তমেহি সং গচ্ছস্ব তন্বা সুবর্চাঃ।
ঋগবেদ ১০.১৪.৮
সরলার্থ- হে মৃত জীব! তুমি মুক্ত হইয়া পরমলোকে(স্বর্গলোকে) পিতৃপুরুষ, বিদ্বান মুক্তাত্মা ও পরমাত্মার সহিত মিলিত হও। মুক্তিকাল সমাপ্ত হইলে পাপ পরিত্যাগ করিয়া পুনরায় এই সংসারে আগমন করো এবং নতূন শরীরের সংযোগ লাভ কর।

সকল পাপী অপেক্ষাও যদি তুমি অধিক
পাপী হও, তা হলেও জ্ঞানরূপ ভেলার দ্বারা
তুমি পাপ সমূদ্র অতিক্রম করতে পারবে। এই
জগতে জ্ঞানের সদৃশ পবিত্র আর কিছুই নেই।
নিজের চেষ্টাকৃত যোগ বলে দীর্ঘ কাল পর
নিজের আত্মাতেই সেই জ্ঞান লাভ করে
থাকেন।"
গীতা ৪/৩৬,৩৮.

পবিত্র বেদে বর্নিত যজ্ঞ কতো প্রকার ও কি কি।


যজ্ঞ ৫ প্রকার।
১। ব্রহ্মযজ্ঞ
২। দেবযজ্ঞ
৩। পিতৃযজ্ঞ
৪। অতিথিযজ্ঞ
৫।ভূতযজ্ঞ

উপনয়ন কী?



উপনয়ন’ শব্দের অর্থ ‘নিকটে নিয়ে যাওয়া’। যে অনুষ্ঠানের পর ছাত্রকে বিদ্যাশিক্ষার জন্য গুরুর নিকটে নিয়ে যাওয়া হত তার নাম ছিল উপনয়ন।উপনয়ন শব্দের সহজ অর্থ যজ্ঞপবীত বা পৈতা ধারণ।বর্তমানে এই উপনয়ন সংস্কারটি আমাদের সমাজে ভিন্ন রূপে আছে। আগের মত আজকাল আর গুরুগৃহে বিদ্যাশিক্ষার জন্য প্রেরন না করা হলেও শিক্ষা জীবনের শুরুতে হাতেখড়ি বলে একটি অনুষ্ঠান আজও প্রচলিত আছে যেটা কিনা সাধারনত সরস্বতী পুজোর সময় করা হয়।

নক্ষত্র কয়টি ও কি কি?

নক্ষত্র ২৭ টি।
🚩১.অশ্বিনী,
🚩২. ভরণী,
🚩৩. কৃত্তিকা,
🚩৪. রেহিনী,
🚩৫. মৃগশিরা,
🚩৬. আর্দ্রা,
🚩৭. পুনর্ব্বসু,
🚩৮. পুষ্যা,
🚩৯. অশ্লেষা,
🚩১০. মঘা,
🚩১১. পূর্ব্বফল্গুনী,
🚩১২. উত্তরফল্গুনী,
🚩১৩. হস্তা,
🚩১৪. চিত্রা,
🚩১৫. স্বাতী,
🚩১৬. বিশাখা,
🚩১৭. অনুরাধা,
🚩১৮. জ্যেষ্ঠা,
🚩১৯. মূলা,
🚩২০. পূর্ব্বাষাঢ়া,
🚩২১. উত্তরাষাঢ়া,
🚩২২. শ্রবণা,
🚩২৩. ধনিষ্ঠা,
🚩২৪. শতভিষা,
🚩২৫. পূর্ব্বভাদ্রপদ,
🚩২৬. উত্তরভাদ্রপদ,
🚩২৭. রেবতী।

সনাতন ধর্মে গোত্র কি? গোত্র বলতে কি বুঝায়?

গোত্র শব্দটির অর্থ বংশ বা জন্মপরম্পরা বা গোষ্ঠীকে বুঝায়। সনাতন ধর্মে গোত্র মানে একই পিতার ঔরষজাত সন্তান সন্ততি সমূহ দ্বারা সৃষ্ট বংশ পরম্পরা।

সনাতন ধর্মের বংশ রক্ষার ধারায় ছিলেন শুরুতে বৈদিক ঋষিগণ। পরবর্তীতে এসকল ঋষির বংশ পরম্পরাও পরিলক্ষত হয়। এই একেকজন ঋষির বংশ পরম্পরা তাঁদের নামে একেকটি গোত্র হিসেবে পরিচিত লাভ করে। সে হিসেবে একই গোত্রের বংশীয়গণ পরস্পর ভাইবোন। এমনকি একই বংশের স্বজনেরা পরবর্তীতে জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে, সাধন-ভজন, ঈশ্বরের বাণী প্রচারের প্রয়োজনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লে পিতার নামের সাথে গোত্র নামের গুরুত্ব প্রকাশ পায়। যেমন- ঋষি কশ্যপ মুনির বংশধরেরা নিজেদের “কাশ্যপ গোত্রস্য” বা কশ্যপ মুনির বংশ পরিচয় দিয়ে থাকেন।

এভাবে পর্যায়ক্রমে আরো অনেক গোত্রের নাম পাওয়া যায়। অহরহ যেসব গোত্র দেখা যায় তা হলো,

🚩কাশ্যপ গোত্র,
🚩ভরদ্বাজ গোত্র,
🚩বশিষ্ট গোত্র,
🚩বৃহস্পতি গোত্র,
🚩বিশ্বামিত্র গোত্র,
🚩জামদগ্ন্য গোত্র,
🚩শিব গোত্র,
🚩মৌদগল্য গোত্র,
🚩ভার্গব গোত্র,
🚩শান্ডিল্য গোত্র,
🚩আলম্বায়ন গোত্র ইত্যাদি।

Principles of Vedic Mission:

1. To worship God, the One and Only.
2. Admit that God is formless, birthless, sleepless, bodyless, omnipresent, omnipotent.
3. Making idols of God and not worshiping idols.
4. Do not think that God takes birth as avatar.
5. Not worshiping nature rather not practicing nature.
6. Admit that God has no children, He is no one's child.
7. Not worshiping mythological/secular deities.
8. Do not think caste system based on birth and do not condone caste system.
9. Discarding the Eight Puranas and the Upa Puranas and not considering them as scriptures.
10. Paying homage to great men and following their lives.
11. After the death of great men, do not make idols and worship them but follow their ideals.
12. Practicing meditation pranayama yoga regularly.
13. Adhere to Vedic scriptural logic without indulging in superstitions and superstitions.
14. Abstaining from Brahmanism, Guruism and not following their superstitious precepts.
15. To impart Vedic education to one's own children and make them interested in following religious precepts.

বৈদিক মিশন এর মূলনীতিঃ

১.ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় একমাত্র তাহাকেই উপাসনা করা।
২.ঈশ্বর নিরাকার, জন্মমৃত্যুরহিত,তন্দ্রাহীন, শরীররহিত, সর্বব্যাপক সর্বশক্তিমান স্বীকার করা।
৩.ঈশ্বরের মূর্তি তৈরি এবং মূর্তি পূজা না করা।
৪.ঈশ্বর অবতাররুপে জন্মগ্রহন করে এরুপ না ভাবা।
৫.প্রকৃতির পূজা না করা বরং প্রকৃতিকে অনুশীলন না করা।
৬.ঈশ্বরের কোনো সন্তান নেই তিনি কারো সন্তান নয় স্বীকার করা।
৭.পৌরানিক/লৌকিক দেবদেবীর পূজা না করা।
৮.জন্মসূত্রে বর্নপ্রথা না ভাবা এবং বর্নপ্রথাকে প্রশ্রয় না দেয়া।
৯.আঠের পুরান আঠের উপপুরান বর্জন করা এবং এগুলোকে ধর্মগ্রন্থ না ভাবা।
১০.মহাপুরুষ মহামানবগনকে শ্রদ্ধা জানানো এবং তাদের জীবনকে অনুসরন করা।
১১.মহাপুরুষদের মৃত্যুর পর তাদের মূর্তি বানিয়ে পূজা না করা বরং তাদের আদর্শ মেনে চলা।
১২.প্রতিনিয়ত ধ্যান প্রানায়াম যোগ অনুশীলন করা।
১৩.কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসকে প্রশ্রয় না দিয়ে বৈদিক শাস্ত্রীয় যুক্তি মেনে চলা।
১৪.ব্রাহ্মন্যবাদ,গুরুবাদ হতে বিরত থাকা এবং তাদের কুসংস্কারযুক্ত নির্দেশ অনুসরন না করা।
১৫.নিজ নিজ সন্তানকে বেদ শিক্ষা প্রদান করা এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে আগ্রহী করা।