কাব্য কথা
যারা গল্প পরতে ভালো বাসেন গল্প প্রেমি তারা আমার পেইজে পাশে থাকা like বাটনে ক্লিক করে সঙ্গেই থাকুন।
আঘাত
-----------
যে আজ তোমাদের সবাইকে ভালোবাসে।
আগামীকাল সে অপরিচিতদের কাছে যাবে একটু সময়- চাইতে।
দূরত্বের কারণে, সময়ের কারণে, অথবা অহংকারে বশীভূত হয়ে ভালোবাসাকে কি মাঝপথে ছেড়ে দিতে- হবে?
আগামী আরও কিছু দিন হয়তো সে তোমাদের ভালোবাসবে।
কারণ হয়ত সে এখনো বুঝেই উঠতে পারেনি-
তোমাদের কাছে ওর জন্য যে সামান্য পরিমাণ ভালোবাসাও নেই।
যখন সে বুঝবে তখন কি ভুলে যাওয়ার জন্য চব্বিশ ঘন্টা যথেষ্ট হবে?
নাকি মৃত্যুর বিস্বাদে সে চলে যাবে বহুদূর!
তোমরা কি কেউ বুঝো?
হাসি মানে চোখের পানি ধরে রাখা।
প্রতিটা স্পন্দনে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত
হৃৎপিণ্ড কি ক্ষতিপূরণ চাইবে তোমাদের কাছে?
তোমারা কি তা বলতে পারো?
প্রথম মূহুর্তে, এটা স্পষ্ট যে তোমারা জীবনে আসো- জেনে বুঝে।
তাহলে যাবার পূর্বে কেন করো অবহেলা?
তোমাদের নিষ্ঠুর আচরণে সে যে আশা ছেড়ে দেয়।
কান্নায় আর দুঃখে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তার অস্তিত্ব।
ভালোবাসার আঘাতে প্রতি মূহুর্তে ঝরে পরে কতশত আমি সে বা আমরা।
আমার ব্রেকআপের পর আমার চেয়ে আমার মা বেশি কান্না করেছে, তাকে নিজের ছেলে মনে করে নিজ হাতে খাইয়ে দিত, এ ৩ বছরে ৬ঈদে সব সময় আম্মু নিজ হাতে জামা কাপড় কিনে দিত।
দুঃখের বিষয় যখনই শুনছে আমার পিরিয়ড হয়না, তার ১৫ দিনের মধ্যে সে বিয়ে করে নিল, আমার মা তার পায়ে ধরেছে বলেছে বাবা আমরা চিকিৎসা করাইতেছি তুমি কিছুদিন অপেক্ষা কর, আমার মায়ের কান্নাতে তার বিন্দুমাত্র ও মন গলেনি।
উপরে একজন আছেন তার উপরেই সবকিছু ছেড়ে দিলাম।🥺
বিড়ালের গায়ে কখনো পা দিয়ে লাথি কিংবা লাঠি দ্বারা আঘাত করবেন না এমন কি পা লাগিয়ে আদর করবেন না।
মনে রাখবেন
বিড়াল একমাত্র মাংসাসী প্রানী যাকে আমাদের নবী (সাঃ) তার গায়ে হাত বুলিয়েছেন কোলে বসিয়েছেন।
বিড়াল সেই প্রানী যে
পবিত্র গিলাফে পা লাগিয়ে ঘুমায়।
বিড়াল সেই প্রানী যার জন্য মক্কায় মুসল্লিগণ কাতার ভেঙে দাড়ায়।তাও তাকে স্থান থেকে উঠায় না।
বিড়াল সেই প্রানী যাকে পানি পান করানোর জন্য মক্কায় আলাদা লোক নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিড়াল সেই প্রানী যার মুখ লাগানো এটো খাদ্য মা আয়েশা মুখে নিয়েছেন।
বিড়াল সেই প্রানী যার জ্বিহা দ্বারা চাটা পানিতে আল্লাহর
হাবীব নবী কারিম (সাঃ) ওযু করেছেন।
বিড়াল কে সরাসরি হত্যা করা কিংবা অনাহারে রেখে মেরে ফেলা হারাম কারণে জাহান্নামে যেতে হবে (সহীহ মুসলিম - ৫৭৪৫)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন বিড়াল অপবিত্র (প্রানী) নয় বিড়াল তো সর্বদা তোমাদের আশেপাশেই ঘুরাফেরা করে থাকে।
(সুনানে আবু দাউদ-৭৬)
ছায়া মানব ২
সাথী ইসলাম
৭০. (অন্তিম)
হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই তার শুরু। আচমকা বৃষ্টির ফোঁটাও পড়ছে। মৃদু আবেশে জড়িয়ে থাকা অহনার পুরো শরীরটা শিউরে ওঠল। মাহতিম তাকে এক মুহুর্তের জন্য ছেড়ে দিল। তার শরীরের প্রতিটি লোমকূপ সংকেত দিচ্ছে অনিচ্ছিত কোনো আশঙ্কার। দ্রুত পদে গিয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিয়ে এলো। অহনা বিচলিত চোখে চারিদিকটা দেখল। হঠাৎ এমন অনুভূতির মানে সে বুঝতে পারল না। মন কেমন করা দৃষ্টিতে প্রিয়তম মানুষটার দিকে তাকালো। তার দৃষ্টিতে আড়ষ্টতা।
‘আমাকে চারিদিক থেকে আড়ষ্টতা ঘিরে ধরেছে কেন? খুব বাজে অনুভূতি হচ্ছে।’
মাহতিম ঈষৎ হাসল। তার মনও আকুলিবিকুলি। যেন কোথাও কেউ নেই। সব কেমন বিদঘুটে অন্ধকার। প্রকৃতিও কেমন অসহ্য রকমের শব্দ করে বিষণ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
‘অপেক্ষা করছ দেখেই এমনটা লাগছে। আর একটু পর দেখবে এসব কিছুই হচ্ছে না।’
অহনা আনচান করা হৃদয়টাকে থামাতে পারছে না। খুব হাসফাস করে বলল,‘একটু আমার ঘরে যাব।’
মাহতিম তার হাত ধরে সাহায্য করল। নিজের ঘরে গিয়েই সে আশপাশটায় নজর দিল। কেন এমন লাগছে তার কাছে? কিছুতেই মনকে শান্ত করতে পারছে না। নজর গেল টেবিলের উপর থাকা দিনলিপিটার দিকে। সে এগিয়ে গেল। কয়েকটা পাতা উল্টে অক্ষরগুলোকে স্পর্শ করে দিল। মাহতিম তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
‘সময় নেই। নিচে চলো। সবাই অপেক্ষা করছে।’
পর পরই দিনলিপিটার দিকে চোখ দিল,‘সব লিখো?’
‘হুম। আমার কলেজ লাইফ থেকে শুরু এ দিনলিপি। এটাতে সব লিপিবদ্ধ করা।’
‘আজকের ঘটনা লিখেছ?’
‘সময় পাইনি। এখন লিখে নিই। তবে শান্তিমতো বিয়ে করতে পারব। কারণ কাল ছাড়া আর সময় থাকবে না।’
‘এখন মানে? তুমি কি এখন লিখতে বসবে?’
‘কয়েক লাইন লিখব। তা-ও তোমায় নিয়ে। এখনের অনুভূতি নিয়ে। একটু পর হয়তো এখনকার অনুভূতি ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারব না।’
অহনা কলম হাতে নিল। মাহতিম এক দৃষ্টিতে তার হাত আর কলমের মিলবদ্ধনের দিকে তাকিয়ে রইল। অহনা দীর্ঘশ্বাসটাকে হজম করেই লেখা শুরু করল,
‘মানুষ কতকিছুই না চায়। আমিও চাই এবং পেয়েছিও। জীবনের কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে পেয়েছি। যাকে নিয়ে সুখ-দুঃখের স্বপ্ন দেখেছি সে এখন একান্তই আমার। সামান্য সময় পরেই সে আমার হৃদয়ে মিশবে। আইনিভাবে আমি তাকে পেয়ে যাব। এমন ভাগ্য আর কটা মেয়ের থাকে? আমি সৌভাগ্যবতী। আজ থেকেই আমার নতুন জীবন শুরু। ভালোবেসেই এ জীবনের পরিণতি দেব।’
______________________________________________
আরিশের চক্ষু চঞ্চল হয়ে আসে। পরবর্তী পৃষ্ঠা ফাঁকা। তাতে কিছুই লেখা হয়নি। ডায়রির শেষ তিনটা পৃষ্ঠা এখনো শূন্য দেখে তার বুকের পাঁজর টনটন করে ওঠল। পরবর্তীতে ঘটে যাবে যে ঘটনাটা, সেটা তার মানসপটে আবৃত হতে থাকে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘুমন্ত অহনার দিকে তাকাল। ভোরের আলো ফুটেছে বেশ খানিকটা সময় হলো। ডায়রির প্রতিটি পাতায় এমনই বুঁদ হয়ে ছিল যে টেরই পায়নি। দীর্ঘ আঁখিযুগল মেলে দেখল মেয়েটাকে। হালকা নড়ে ওঠল সে। আরিশ তার থেকে কিছুটা সরে বসল। কেন জানি তার মন অহনার দিকে ধাবিত হলো না। মনে পড়ল রোস্তমের বলা কথাগুলো। বিয়েটা হলো না অহনার আর মাহতিমের। এত প্রেম, এত ভালোবাসাময় মুহুর্তগুলো মেয়েটাকে এত কম প্রভাবিত করেছে কেন? আরিশের মনে হলো অহনার আচরণ আরও খানিকটা আবেগঘন হওয়া উচিত ছিল। হয়তো স্মৃতি হারানোর কারণে এমন হয়েছে। তার বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠল। প্রকাশ করার মতো ভাষা পেল না। পালঙ্ক থেকে সরে গেল। ডায়রিটাকে তার পাশেই রেখে আফসোসে কণ্ঠনালি শুকিয়ে এলো। শেষ তিনটা পৃষ্ঠা এখনো ফাঁকা কেন? কেন সে পূর্ণ করতে পারল না? অহনার থেকেও আরিশের কষ্টটাই যেন বেড়ে গেল। মেয়েটার প্রতি তার সোহাগের পরিমাণ বাড়ল। অহনার ঘুম ছুটে গেল। লেপ সরিয়ে দীর্ঘ হাই তুলে বোকা বোকা চোখে চারদিকটা দেখল। পরক্ষণেই আরিশকে ভাবনাতুর আবিষ্কার করে অবাক হলো,
‘আপনি এখানে?’
আরিশ তার কথায় বিচলিত চোখে তাকাল। তাকাতেই যেন লজ্জা পাচ্ছে। যে ভুলটা রাতের আঁধারে করেছে তার জন্য পুরো মন জুড়ে অনুতাপে ভরপুর। উচিত হয়নি তার। নিজের প্রেমিক সত্তাকে তার গালি দিতে ইচ্ছে হলো। নির্ঘাত ভালো মানুষ বলেই সেটা করল না। ছিঁচকে সাধারণ মানুষ হলে গালি ফুঁটতে দেরি হতো না। আমতাআমতা করে বলেই বসল,‘পুরো রাত এখানেই ছিলাম।’
অহনার চক্ষু চড়কগাছ,
‘এখানে মানে? কী করছিলেন?’
‘রাতে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর হয়েছিল তোমার। সেবা করার জন্যই ছিলাম।’
‘ওহ।’
‘ধন্যবাদ প্রাপ্য আমি।’
‘ইচ্ছে করছে না।’
আরিশ আরেক নজর দেখল অহনাকে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। তার প্রেমিক সত্তা আরও একবার মুগ্ধ হলো। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিল। অবাধ মনটাকে কঠিনরূপে প্রকাশ করতেও দ্বিধায় পড়ে গেল। যে মেয়েটার মনোজগত, স্পর্শ জুড়ে রয়েছে ভিন্ন এক পুরুষ তার প্রতি নিজের এত মায়া কেন? কেন সে ভুলতে পারছে না? অভিমানী হতে ইচ্ছে করছে না কেন? তবে কি মেয়েটা তার প্রতি জাদুটোনা করল? হবে হয়তো। এমনটা ভাবতেই আবার নিজের প্রতি রাগ হলো। যে ভালোই বাসে না সে কেন জাদু করতে যাবে? তা-ও ভাবল, যে নারী জাদু জানে তাকে প্রকাশ্যে জাদু করতে হয় না। আপনাআপনিই জাদু প্রয়োগ হয় তার চারপাশের মানুষদের উপর। অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,‘ফ্রেশ হয়ে নাও। আশা করি এখন জ্বর কমেছে।’
‘কিন্তু ব্যথা কমেনি। খুব কষ্ট হচ্ছে।’
‘যে চলে গেছে তাকে ভেবে কষ্ট পাও কেন সে কথা আর জিজ্ঞেস করব না। আমি চাই তার স্মৃতি নিয়ে বাঁচো।’
অহনা নিচে নামল দ্রুত। আরিশের কথার পিঠে তার মুখে এক চিলতে হাসি দেখা গেল। আরিশ পুনরায় বলল,‘তবে ভালোবাসি তোমায়, এ কথা কখনোই ফিরিয়ে নিতে পারব না। তোমার থেকেই শিখলাম, ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে নেওয়া বা দেওয়া যায় না।’
‘আমি আপনাকে নিয়ে ভাবছি না। এখনো বেঁচে আছি কেন সেটাই এখন আমার ভাবার বিষয়। কেন মরে যাচ্ছি না? বাঁচার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার।’
‘অহেতুক কথা বলো কেন? তোমার এসব কথা শুনে আমার...
‘আপনার কী?’
‘কিছু না। কখনো মরে যাওয়ার কথা বলবে না। দোহাই তোমার। আমাকে কষ্ট দিতে যদি তোমার এতটাই ভালো লাগে তবে শাস্তি দিও। আমি মাথা পেতে নেব। তবুও এসব বলবে না।’
অহনার কর্ণপাত নেই ছেলেটার কথায়। এলোমেলো চুলগুলো একহাতে হালকা সরিয়ে নিয়ে মৃদু হাসল। হাত বাড়িয়ে কাউকে ডাকল। এসে গেছে এমন ভাব ধরে জড়িয়ে ধরল। আরিশ সেদিকে লক্ষ্য করে কিঞ্চিত হাসার চেষ্টা করল। আনমনে বলল,‘তুমি খুশি থাকলেই আমি খুশি।’
অহনা আধো আধো কণ্ঠে আবছা মানুষটাকে জিজ্ঞেস করল,‘এত দেরি করলে কেন? আমায় ছেড়ে তোমার ভালো লাগে?’
যেন তার কানে উত্তর এলো,‘তোমায় ছেড়ে থাকার সাধ্য আছে আমার? বারবার ফিরে আসব। আমাকে ঠেকানোর সাধ্য কারো নেই।’
আরিশের কেমন হিংসে হলো। পর পরই নিজেকে মানিয়ে নিল। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে আরেকবার দেখল। অহনাকে এভাবে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। মেয়েটা ঘোরের মাঝে আছে। তার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। তাই কাছে এগিয়ে গেল।
‘শোনো, এখানে কেউ নেই। তোমার উচিত ফ্রেশ হয়ে আসা।’
সাথে সাথেই অহনা কেমন ভিমরি খায়। নিজের দুহাতের দিকে তাকায়,‘ও চলে গেল। আমাকে একা রেখে চলে গেল। আপনি কেন তাকে চলে যেতে বললেন? এত নিষ্ঠুর কেন আপনি? আপনার জন্যই চলে গেল।’
‘যে নেই তাকে আমি চলে যেতে বলব কেন? তুমি কেন বুঝতে চাও না?’
‘আপনি মিথ্যে বলছেন।’
‘আমিই সত্যি। তুমিই মিথ্যে আকড়ে বসে আছ। চোখ খোলো অহনা। কেউ কোথাও নেই!’
‘নেই? কোথাও কেউ নেই? কেন নেই? ও বলেছিল আমাকে ছেড়ে যাবে না কখনো।’
অহনা ডুকরে ওঠে। বুকের ভেতর থেকে আর্তনাদ বেড়িয়ে আসে। উন্মাদের মতো আচরণ করছে। এক পর্যায়ে নিজের সাথেই জুলুম শুরু করে। মাহতিমের পোশাকগুলো বুকের সাথে চেপে ধরে মেঝেতে বসে পড়ে। আরিশ তার মাথায় হাত রেখে শান্ত করার চেষ্টা করে। পারে না কোনোমতেই। মেয়েটার মনের খবর এতদিন খুব কম অনুভব করতে পারলেও আজ পুরোপুরি করতে সক্ষম হচ্ছে। ভালোবাসা হারানোর আর্তনাদ সহ্য করতে পারল না। অহনার রোদন থামছে না। তার ইচ্ছে করছে কিছু একটা করে মাহতিমের কাছে চলে যাক। সম্ভব হচ্ছে না। দুনিয়ার নীতির কাছে বন্দি সে। চিৎকার করে ওঠল,‘তুমি কোথায়? আমি কেন তোমায় দেখতে পাচ্ছি না? কেন দেখা দিচ্ছ না? তুমি কি আমার ব্যথা অনুভব করতে পারছ না? বলো, বলো, আমায় কি আর ভালোবাসো না? আমি যে তোমার বিরহ সহ্য করতে পারছি না। আমি পারছি না এ বিচ্ছেদ মেনে নিতে। ফিরে এসো। আমি কাঙালিনী, প্রেমের কাঙালিনী তোমায় ডাকছি। ফিরে এসো আমার কাছে। আমার মাহতিম, আর ব্যথা বাড়িও না। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি ব্যথা নিতে নিতে। আমায় শান্তি দাও। তোমায় দেখি না কতদিন। তোমায় ছুঁতে পারি না কত যুগ। এ কষ্ট কী করে মেনে নেব? তোমার কি মায়া হয় না? বিরহিণীর দিকে একবার ফিরে তাকাও। কেন ছেড়ে গেলে নিষ্ঠুর প্রেমিকের মতো? ছেড়ে যাওয়ার অভিসন্ধি থাকলে প্রেম জাগালে কেন ব্যাকুল হৃদয়ে? আমায় যে বাঁচার আশাটুকও দিলে না। কী নিয়ে বাঁচব বলো? দয়া করে ফিরে আসো। আমি সহ্য করতে পারছি না এ বিরহ। আমায় এ ব্যথা থেকে মুক্তি দাও। আমায় মুক্তি দাও তোমায় না পাওয়ার ব্যথা থেকে। ফিরে এসো! ফিরে এসো পুনরায়।’
আচমকা শব্দ আসতেই দু'জোড়া চোখ চঞ্চল হয়ে গেল। এদিকওদিক তাকাল। আরিশের চোখ যেন বের হয়ে যেতে চাইল এমন অবস্থায়। অহনার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। আকস্মিক কণ্ঠ ভেসে এলো,‘তোমায় ছেড়ে তো যাইনি। ফিরেছি পুনরায়! আমার শ্রেয়সিনী, ফিরেছি তোমার কাছে। আর ছেড়ে যাব না। আমাদের আলাদা করার সাধ্য কার বলো? তুমি একান্তই আমার। আমিই তোমার শুরু, আমিই হব তোমার অন্ত।’
- সমাপ্ত
- দ্বিতীয় খণ্ডের সমাপ্তি।
( ভালোবাসা সবার প্রতি, যারা শেষ পর্যন্ত গল্পের সাথে ছিলে। মায়া জড়ানো গল্পটা আবার এক প্রকার শেষ করলাম। সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবে; যেন লেখায় ভুলত্রুটি শুধরে নিতে পারি। আবারও নতুন করে ফিরে আসব নতুন কিছু নিয়ে। এখানেই দ্বিতীয় খণ্ডের সমাপ্তি ঘোষণা করলাম। সবাই অপেক্ষা করো পরবর্তী পর্বের জন্য। ধন্যবাদ গল্পের পাখিরা!🤍)
#মেয়েটি_অসতী
লেখা_Bobita_Ray
পর্ব-৪
-'উর্মি দরজাটা খুলো,প্লিজ?
শিহাব জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে। উর্মি চুপচাপ শুয়ে আছে।শিহাবকে কেন্দ্র করে, কোন অনুভূতিই কাজ করছে না।মস্তিষ্ক বিবশ হয়ে আছে।শিহাবের সাথে উর্মির বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছিল।উর্মির বাবা, চাচারা অর্থের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও শিক্ষার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে।মেয়েদের বিশ পেরোলেই বিয়ে দিয়ে দেয়।বাবা বেঁচে থাকতে,এইচএসসি পাশ করার পর বেশ ঘটা করে,শিহাবের সাথে উর্মির বিয়ে হয়ে গেল ।উর্মির শ্বশুর এবং জামাই পেশায় উকিল।এদের বাইরে থেকে যতটা চাকচিক্য দেখা যায়।ভেতরে ততটাই অসাধু, লোভী।শাশুড়ীও ছিল দজ্জাল। সারাক্ষণ উর্মির একাজ,সেকাজে খুঁত ধরত।রান্নার সময় কতটুকু তেল,নুন দিতে হবে দেখিয়ে দিত।একটু এদিক,সেদিক হলে এত জোরে ধমক দিত!বলত,
-'মা কিছু শিখায় নাই?শুধু গায়ে,হাত-পায়ে বড় করলেই হবে?এমনিতেই তুমি সংসারে আসার পর থেকে শিহাবের আয়, রোজগার কমে গেছে।খরচ হু হু করে বেড়ে গেছে।আমার ছেলেকে এটা-সেটা আনার জন্য এত চাপ না দিয়ে, তোমার বাবাকেও বলো।ভদ্রলোক মেয়ে বিয়ে দিয়েই যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন।
বাবার আদর,ভাইদের সাথে খুঁনসুটি, মায়ের আঁচলের তলায় বড় হওয়া উর্মির শাশুড়ীর ধমক খেয়ে ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠত।মা-বাবাকে তুলে কথা বললে প্রচুর খারাপ লাগত।নতুন নতুন শাশুড়ীমাকে কিছুই বলত না উর্মি।তবে নিজের মা,বাবার সম্পর্কে খারাপ কথা শুনতে শুনতে একটা সময় উর্মিরও মুখ ছুটে গেল।শাশুড়ী দুটো বললে, উমিও একটা বলে দিত।এই নিয়ে বাড়িতে তুমুল ঝগড়া চলত।উর্মির মা,বাবাকেও খবর দেওয়া হতো।তারা না কী মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারেনি।মেয়ে আস্ত বেয়াদব।গুরুজন মানে না।মুখে মুখে তর্ক করে।
উর্মির বাবার মাথা নীচু হয়ে যেত।অপমানে মুখ থমথমে হয়ে যেত।বাবার ক্লান্তি মাখা মুখপানে চেয়ে উর্মির বুকের ভেতর কেঁপে উঠত।মনে মনে নিজেই নিজেকে শপথ করত।আর কোনদিনও উর্মি শাশুড়ীর হুল ফুটানো কথার উত্তর দেবে না।সে যা খুশি বলুক,উর্মি সহ্য করে নেবে।তবুও ওনারা বাড়ি বয়ে এনে মা-বাবাকে অপমান না করুক।একজন সন্তান হয়ে, চোখের সামনে নিজের জন্য মা,বাবাকে অপমানিত হতে দেখতে ভাল লাগে না।নিজেকে ব্যর্থ সন্তান মনে হয়।
আসলে তারা ক্ষোভ থেকে এমন করত।উর্মির বাবার নাম-ডাক শুনে ছেলে বিয়ে দিয়েছে।যখন জেনেছে,উর্মিদের সে রকম কিছুই নেই।না আছে সয়,সম্পত্তি আর না আছে ব্যাংক, ব্যালেন্স।যা রোজগার করে খেয়ে, পরেই শোধ।যতই এখন উর্মিকে দু'হাত ভরে দিক।হঠাৎ উর্মির বাবা মরে গেলে আর কিছুই দেবে না।কোন সম্পত্তির ভাগও পাবে না উর্মি।
বিয়ের পর শিহাব জেদ করে উর্মির পড়াশোনা বন্ধ করে দিল।মায়ের কথায় প্রবাহিত হয়ে মানসিক ভাবে যত রকম ভাবে টর্চার করা যায়।সব ধরনের টর্চার শিহাব করেছে।যেহেতু শরীরে কোন মারের দাগ থাকত না। উর্মি নিজের দুঃখের কথা যাকেই শোনাত!সে হেসেই উঁড়িয়ে দিত।বলল,
-'সব সংসারেই টুকিটাকি অশান্তি হয়।তবুও ভাল তোর বর তোর গায়ে হাত তুলে না।কোথাও ঘুরতে গেলে কী সুন্দর তোকে হাত ধরে নিয়ে যায়।কত দামী শাড়ি, গহনা কিনে দেয়।তোকে এক মুহূর্ত না দেখলেও কেমন পাগল হয়ে যায়।
কী করে তাদের বোঝাবে উর্মি?এসব ছিল শিহাবের লোক দেখানো,মিথ্যে অভিনয়।
বিয়ের বছর দুই পর, উর্মি প্রেগন্যান্ট হলো।এত খুশির সংবাদ শুনে শিহাব কিংবা শিহাবের মা একটুও খুশি হতে পারল না।শিহাব বলল,
-'আমার এখন বাচ্চা চাই না,উর্মি।
আমি বিদেশে যাব।তোমার বাবাকে ব্যবস্থা করে দিতে বলো?
-'আব্বুর কাছে এত টাকা নেই।
-'যেভাবে পার আমাকে টাকাটা জোগাড় করে দাও।আর কেউ জানার আগে,মায়ের সাথে ক্লিনিকে গিয়ে বাচ্চা এবোর্ট করে আসবে।
-'অসম্ভব!আমি পারব না।
শিহাব আচমকা উর্মির গাল দুটো চেপে ধরল।বলল,
-'পারতে তোমাকে হবেই!মাইন্ড ইট..
অনেক জোড়াজুড়ি করেও উর্মিকে হাসপাতালে নেওয়া গেল না।যেহেতু দুই মাস রানিং ছিল।উর্মির শাশুড়ী একটা ভয়ানক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল।উর্মিকে একগাদা মিথ্যে কথা বলে,বাচ্চা নষ্ট হওয়ার দুটো ট্যাবলেট খাইয়ে দিল।ঔষধ দুটো খাওয়ার দশ মিনিট পর, উর্মির পেটের ভেতর ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেল।অসহ্য পেট ব্যথায় উর্মি পাগলের মতো কাঁদল।কেউ ধরতে এলো না।একটু পরেই যোনিপথ দিয়ে গাঢ় লাল রক্তের দলা বের হলো।উর্মি রক্তের দলাটা হাতে নিয়ে, মুখে মেখে হাউমাউ করে কাঁদল।একটা প্রাণ পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বাবা আর দাদীর চক্রান্তে কী করুণ ভাবে,চিরতরে বিদায় নিল। খুব কী ক্ষতি হতো?বাচ্চাটাকে জন্ম দিলে?
বাচ্চার শোকে খাওয়া নেই,নাওয়া নেই।কেমন পাগলের মতো হয়ে গেল উর্মি।একদিন শাশুড়ী যেই না উর্মিকে দুটো কটুকথা শোনাতে এলো।হাতে ঝাড়ু ছিল।উর্মি বিবেকবুদ্ধি, জ্ঞানশক্তি হারিয়ে হাতের ঝাড়ু দিয়ে ইচ্ছেমতো শাশুড়ীকে পিটাল।আবারও বাড়িতে বিরাট বিচার, সালিশ বসল।শিহাব কিছুতেই এই উড়নচণ্ডী, দজ্জাল বউ নিয়ে সংসার করবে না।উর্মির বাবা মেয়ের সংসার টিকানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেও কোন লাভ হলো না।একটা খাতায় দুজনের সিগনেচারের মাধ্যমে সব সম্পর্ক চুকেবুকে গেল।
উর্মির বাবা,চাচাদের এলাকায় প্রচুর দাপট ছিল।তবে তারা খুব মান-সম্মানের ভয় করে চলত।উর্মিদের পুরো ফ্যামিলির ভেতর উর্মিই প্রথম ডিভোর্সী মেয়ে।যদিও বাবার টাকার দাপটে লোকজন উর্মিকে হেয়,তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলার সুযোগ বা সাহস পায়নি।
উর্মি দীর্ঘদিন মানসিক ট্রমায় ছিল।সুস্থ হয়ে, উর্মি আবার আগের মতো চলাফেরা শুরু করল।ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেল।সারাদিন, ভার্সিটি,ক্যাম্পাস, বন্ধু-বান্ধবী নিয়েই ব্যস্ত থাকত মেয়েটা।উর্মির বাবাও আর মেয়েকে বিয়ের জন্য জোর করত না। খুব শিক্ষে হয়েছে।
শিহাব এত ডাকাডাকি করেও সারা পেল না।রেগে বলল,
-'তুমি যদি এখন দরজা না খুলো?আমি কিন্তু পুরো এলাকা রটিয়ে দেব, তুমি 'পতিতাবৃত্তি' করো!
অতীতের স্মৃতিচারণ থেকে বেড়িয়ে এলো উর্মি।দরজা খুলে শিহাবের মুখোমুখি দাঁড়াল।দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
-'একটু আগে কী বললে?
শিহাব দাঁতকপাটি বের করে বিকট শব্দে হেসে দিল।উর্মির মুখে ফু দিয়ে বলল,
-'যাক তাহলে, অবশেষে পাখি খাঁচা থেকে বের হলো।
উর্মিও মুখ টিপে হাসল।বলল,
-'ওয়েট!
তারপর ফোন বের করে সাড়ে তিন মিনিটের একটা টান টান উত্তেজনামূলক ভিডিও দেখাল, শিহাবকে!ভিডিওটা দেখে শিহাবের মুখখানা ভয়ে,আতঙ্কে পাংগুবর্ণ হয়ে গেল। শীতের ভেতরেও দরদর করে ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা। এলোমেলো কণ্ঠে বলল,
-'উর্মি প্লিজ ভিডিওটা ডিলিট করে দাও।
-'যদি বলি করব না?
-'এর ফল কিন্তু খুব খারাপ হবে উর্মি?
উর্মি দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁট কামড়ে ধরে, কী যেন ভাবল।মুখে চু চু শব্দ তুলে বলল,
-'আমার এলাকায় সবাইকে বলে দিবা?আমি খারাপ নারী?টাকার বিনিময়ে পর পুরুষের বিছানায় শুইয়ে পরি,তাই তো?ওকে যাও বলে দাও।গোটে গোটে সবাইকে বলে দাও!
আমিও গোটা দুনিয়াকে জানাব।লোকের ভাষায়,তোমার মতো নিপাট ভদ্রছেলে, বাড়িতে বউ ফেলে, বন্ধুর ফ্ল্যাটে নষ্ট মেয়েমানুষ ভাড়া করে অ'কাম করছে।ভিডিওটা ভাল করে দেখো?আমার মুখ কিন্তু একটুও দেখা যাচ্ছে না।তবে তোমার এই উত্তেজনা মূলক মুখটা দেখে তোমার বাবা,মা,বউয়ের মুখটা কেমন হবে,তাই দেখার বিষয়।
কথাগুলো বলে ঠোঁট টিপে হাসল উর্মি।শিহাবের ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে গেল।উর্মির হাত থেকে ফোনটা বার কয়েক কেড়ে নিতে চাইল।পারল না।হতাশ হয়ে বলল,
-'আমি তোমার সব কথা শুনব,প্রমিস!বিনিময়ে ভিডিওটা ডিলিট করে দাও, প্লিজ?
-'কী জানো তো শিহাব?কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।আমি জানি,তুমিও কখনো ঠিক হবে না।আজ যদি আমি ভিডিওটা ডিলিট করে দেই!কাল তুমি আবার আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে, তোমার কার্যসিদ্ধি করবে।কী দরকার এত রিক্স নেওয়ার?তুমি যতদিন আমার আসল চরিত্র গোপন রাখবে,আমি ঠিক ততদিন তোমার ভিডিও ক্লিপটা সুরক্ষিত রাখব।তুমি যেই না মুখ খুলবে,আমিও তোমার ভিডিও ক্লিপ পাবলিশ করে দেব।এবার দয়া করে আসতে পার!
শিহাব চলে যেতেই উর্মি ফোনটা কানে তুলল।রেবেকা বলল,
-'তোর মামা ফোন দিয়েছিল।আমাদের যেতে বলল।তোর কী সময় হবে,উর্মি?
-'অবশ্যই মা।শীতের সিজনে নানীর বাড়ি গিয়ে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা আর খেজুরের রস খাব না, তা কখনো হয়?
(চলবে)
(সবাই নাইচ,নেক্সটের পাশাপাশি এক বা দুই লাইনের গল্প সম্পর্কে মন্তব্য করবেন।আমার অনুরোধ বলতে পারেন।গল্পে রিচ বেশি হলে লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়।)
একদিন স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরেছিলাম আমাকে আমার বন্ধুদের সাথে মিশতে না বলায়। আমার স্ত্রী সেদিন টলোমলো চোখে শুধু কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর মাস সাথে বছর চলে গেলেও কখনো আমাকে বলেনি, “তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে হাঁটাচলা করো না।”
বিষয়টা একটু ভাবালেও তেমন পাত্তা দিলাম না। আমি তপন। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করি। সংসার খরচ, বাবা-মায়ের ঔষধ, মেয়ের পড়ালেখা সব মিলিয়ে মাসে হাতে থাকে বলতে হাত খরচের টাকা এবং হাজার পনেরোশ। তবে সেই হাজার পনেরশো টাকা বন্ধুদের মন রাখতে সব সময় খরচ করে ফেলতাম। এটা নিয়েই বউ বলল, “এভাবে টাকা উড়ালে বিপদের সময় কোথায় হাত পাতবে। আজ যাদের মন রক্ষায় টাকা ভাঙছো তারাও একদিন মুখ ঘুরিয়ে নিবে। এভাবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিও না।”
কথাটা বলায় রাগ না হলেও স্ত্রীর কথাটা বন্ধু শুনে ফেলায় আমার ভিষণ আত্মসম্মানে লাগে। তাই তো ওকে বন্ধুর সামনেই থাপ্পড় মেরে বসেছিলাম নিজের পুরুষত্ব বজায় রাখব বলে। তারপর তো বললামই ও আর কোন কথাই বলতো না আমার বন্ধুদের নিয়ে। তবে বিপত্তি বাঁধে আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি সেটা আচমকা বন্ধ হবার পর। সংসারে নেমে আসে অভাব, বাবা-মা সময়ের ঔষধ সময়ে খেতে না পেরে অসুস্থ হতে শুরু করে। মেয়ের স্কুলের বেতন না দিতে পারার জন্য মেয়েকে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হলো না। চারিদিকে তখন আমি যেন শুধু অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখলাম না। ছুটে গেলাম সেসব বন্ধুর কাছে যাদের পিছনে মাসে মাসে টাকা খরচ করতাম। যে যা খেতে চাইতো তাই খাওয়াতাম। মাঝে মাঝে তাদের ছেলেমেয়েদের এটা সেটা কিনে দিতাম৷ তবে তারা আমাকে সেভাবেই ফিরিয়ে দিল যেভাবে আমি তাদের কাছে গিয়েছিলাম। মানে খালি হাতে। গুনে গুনে তিনমাস খুব ভয়াবহ সময় পাড় হলো আমার। বুঝে গেলাম পৃথিবীতে কেউ আপন না। সবাই সবার স্বার্থের পিছনে ছুটে। স্বার্থ ফুরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই তাদের আচার-আচরণও বদলে যেতে শুরু করে। তবে সেই তিনমাস আমার বাবা-মা এবং স্ত্রীকে ছাড়া আর কাউকে পাশে পাইনি। জীবনের ওই ভয়ানক তিনমাস আমার জীবনে আর না আসুক। তবে শুকরিয়া আসার জন্য। এসেছিল বলেই হয়তো মানুষ চিনতে পেরেছিলাম। ভেতর থেকে অনুশোচনা বোধ হয়েছিল বলে স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতেও নিজেকে ছোট মনে হয়নি। দিনশেষে এটাই হয়তো সত্যি, রূপ বদলে ফেলা মানুষ গুলো আর যাইহোক কখনো বন্ধু হয় না। হ্যাঁ এটাও সত্যি সবাই এক না। তবে কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যায়। পৃথিবীর ৯৯% মানুষ স্বার্থের জোরে বাঁচে। বাকিরা অর্থের পিছনে এবং ভালোবাসার পিছনে উভয়পক্ষের সাথেই হাঁটে। তাই হয়তো বেলা ফুরাবার পথে তাদের ঝুলি শূন্য হয়ে থাকে। পেয়ে হারাবার ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদে...
(সমাপ্ত)
ছোট্টগল্প
"শূন্য ঝুড়ি"
সমুদ্রিত সুমি
হেডফোন নিতে ভাইয়ার রুমের দরজা খোলা মাত্রই দুটি নগ্ন দেহ অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পেলাম সে আর কেউ নয় আমার বড় ভাই ও মামাতো বোন জান্নাত যাকে আমি 2 বছর ধরে ভালবাসি জান্নাত ও আমাকে ভালবাসে কিন্তু কখনো এই অবস্থায় দেখবো স্বপ্নে ও ভাবিনি।
আমাকে দেখে এতক্ষণে ভাইয়া ও জান্নাত কাপর পরা শুরু করে দিছে। লজ্জায় কেউ কোন কথা বলছে না, হয়তো আমি এখানে আসবো আশা করেনি।
-ছি ভাইয়া ছি তোমাকে আমার ভাইয়া বলতে ঘৃণা হচ্ছে। তুমি কি করে এটা করতে পারলে? লজ্জা করলো না ? ভাবি থাকে সত্তে ও এমন টা করলে? জান্নাত তোমাকে ও বা কি বলবো ঘৃণা হচ্ছে নিজেকেই ছি ছি। (আমি)
-...........মাথা নিচু করে(নিশ্চুপ)
-আবির প্লিজ কাউকে কিছু বলো না প্লিজ তোমার পায়ে পরি। (জান্নাত)
-ছি তোমার নোংরা মুখে আমার নাম কখনো উচ্চারণ করবে না । কাঁদতে কাঁদতে চলে এলাম আমার রুমে নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। জান্নাত কেন এমন করলো আমি ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাইলাম না বলে আমার ভাইয়ের সাথে এমনটা করবে 😢😭 সারা রাত কেঁদেই কাটিয়ে দিলাম। বাসার কাউকেই বা এ কথা বলবো কি করে ভাবির সংসারটা যে ভেঙ্গে যাবে। ভাবি তো এখন বাপের বাড়িতে,সব ভেবে ডিসিশন নিলাম বাসা থেকে দুরে কোথাও চলে যাবো।
তাই জমানো মাটির ব্যাঙ টা ভাঙ্গলাম। 1336 টাকা ছিল। ব্যাগে কিছু কাপড় ও জমনো টাকাটা নিয়ে বাহিরে বের হতেই বাসার সবাই ....
-আবির সকাল বেলা কোথায় যাচ্ছিস বাবা(মা)
-মা আমি দুরে কোথাও চলে যাচ্ছি হয়তো আর ফিরবো না।
- কই যাবে তুমি আমাকে ছেড়ে? বিয়ে করা ভয়ে পালাচ্ছো(জান্নাত)
-তোর মতো নোংরা মেয়েকে বিয়ে করবো আমি কি করে ভাবলে
-আমার সাথে রাত কাটানোর আগে মনে ছিল না?(জান্নাত)
কথাটা শুনেই আম্মু আমার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।
তোকে আমার ছেলে ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে। এদিকে ভাই এসে আমাকে ইচ্ছা মতো লাঠি দিয়ে পিটাচ্ছে ব্যথায় আমি আ আই আহু করতে লাগলাম। এমন সময় ভাবি ওদের বাসা থেকে চলে আসছে আমায় এমন মারতে দেখে এগিয়ে আসলো ভাইয়াকে আটকাতে। চোখ দিয়ে অঝোরে বর্ষা নামছে। নিজের ভাই তার অপরাধ ঢাকতে আমাকে এভাবে মারছে।
আমাকে নিয়ে গিয়ে একটা রুমে আটকে রাখা হলো,,,,
নিজের গর্ভ ধারনি মা ও আমাকে চিনতে পারলো না । ১ বছর আগে ভাইয়া এক্সিডেন্ট করে যখন মৃত্যুর সাথে পান্জা লরছিল তখন তো আমি আমার ২ ব্যাগ রক্ত দিয়ে বাছিয়েছিলাম সে কি করে পারলো আমার শরীর থেকে রক্ত ঝরাতে। এসব ভেবে দুচোখে যেন অশ্রু বাঁধা মানছে না। জান্নাতের সাথে আমার প্রেম আছে বাসার সবাই জানে।
কিছুক্ষণ পর
আম্মু এসে পান্জাবি পায়জামা দিয়ে...
-তোর সাথে জান্নাতের বিয়ে,,,,রেডি হয়ে নে আর বিয়ে না করলে আমার মরা মুখ দেখবি।
--মাকে কিভাবে বলি যে যে জান্নাত কে ভালো বেসে ২ বছরে আমি স্পর্শ ও করলাম না সে কি করে ভাইয়ার বিছানায় গেলো,,,,
।
।।
।।।
#চলবে......???
মিথ্যা অপবাদে
্ব
#গল্পঃচন্দ্র_কলা
লামিয়া
পর্ব ৪
-সাফোয়ান চৌধুরীর ভাষ্যমতে আপনাকে নাকি সর্বপ্রথম লাশের পাশে দেখা গিয়েছিলো। যতদূর জানি আপনি আজকেই এ বাড়িতে নতুন এসেছেন। তাহলে এই বাড়ি সম্পর্কে আপনি সেরকম কিছুই জানেন না।কিন্তু এত রাতে আপনি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কেন?
-সামিরা আপা আমাকে আমাকে রুমে রেখে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে আমি হঠাৎ করে ঘুমিয়ে যাই। হঠাৎ করে একটা শব্দ পেয়ে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আর রুম থেকে বের হতেই দেখি আমার পায়ের সামনে কারো লাশ পরে আছে। তারপরে আমার আর কিছুই মনে নেই।
-ঠিক আছে। আপনি এখন আসতে পারেন।
আরো বেশ কিছু তদন্ত করার পর পুলিশ অফিসার সোফা থেকে উঠে সাফোয়ানের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
-চৌধুরী সাহেব আমার আজকের কাজ শেষ। আমি আজ চলে যাচ্ছি। তবে দরকার পড়লে আবার আসবো। আর যতদিন না তদন্ত শেষ হয় আপনারা কেউ শহরের বাহিরে যাবেন না।
-জি অবশ্যই।
রাত তখন প্রায় চার টা বাজে। পুলিশ পরিক্ষা নিরীক্ষা করে যাওয়ার পর শিরিন বেগম কাজের লোকদের দিয়ে দোতলার করিডোর ভালো করে পরিষ্কার করিয়েছে। পরিষ্কার করতে বেশ অনেকক্ষন সময় লেগেছে। তারপর সে সামিরাকে দিয়ে আবার চন্দ্রকে সাফোয়ানের রুমে পাঠিয়েছে। সামিরা তবে চন্দ্রকে রুমে রেখে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। সাফোয়ান এসে চন্দ্রকে ওভাবে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে বললো,
-এখানে কি করছিস এখনো?
-তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলা। দাদি তোমাকে কিছু কথা বলতে বলেছে। অবশ্য ফুফিই কথাগুলো দাদিকে দিয়ে আমাকে বলিয়েছে
-তো বল। এভাবে আমতা আমতা করছিস কেন?
-আসলে তোমাদের পরিবারের অভিশাপ সম্পর্কে তো জানোই। পাঁচ বছর ধরে অনেক ঝামেলার পরে অবশেষে তোমার বিয়ে হয়েছে। তাই ফুপি যত দ্রুত সম্ভব চৌধুরী পরিবারের উত্তরাধিকারী দেখতে চায়। তাই আজই যেন ভাবি আর তুমি......
-আর বলা লাগবে না। বুঝতে পেরেছি। তুই যা এখন।
--------------------------------
নিস্তব্ধ রাত। আশেপাশে কোনো শব্দ নেই। কিন্তু হঠাৎই চন্দ্রকলার তীরে এক মানবমূর্তিকে দেখা গেলো। সে একটা বস্তা নিয়ে নদীর দিকে যাচ্ছে। বস্তাটা অনেক ভারী। তাই তার বহন করতে কষ্ট হচ্ছে। বস্তাটা টেনে হিচড়ে সে নদীর পারে নিয়ে গিয়ে নদীতে ফেললো। বস্তাটা ফেলার পর সে তার পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করলো। সিগারেটটা ধরিয়ে দুই টান দিয়ে মানবমূর্তিটি বলতে লাগলো,
- বিশ বছর পুরানো খেলা আবার শুরু হয়েছে। এ এক মরণ খেলা। যার শেষ শুধু একজনই করতে পারবে।
সাফোয়ান রুমে এসে দেখলো রুম কিছুটা অন্ধকার হয়ে আছে। সে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো এক অতি সুন্দরী মানবী বসে আছে। যার মাথায় ঘোমটা দেয়া। সামনের চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো হয়ে আছে। সাফোয়ানকে বিছানার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে চন্দ্র নিজের হাত দিয়ে বিছানার চাদর খামচে ধরে। সাফোয়ান চন্দ্রের পাশে এসে বসে পকেট থেকে একটা খাম বের করে চন্দ্রের হাতে দিয়ে বলে,
-এই নাও তোমার মোহরানা।
-আমি নিয়ে কি করবো আপনার কাছেই রাখুন।
-ঠিক আছে। তোমার যখন লাগবে তখন নিয়ে নিও। তোমার নাম কি?
-চন্দ্র
-উহু একদম না। তোমার নাম মিসেস চন্দ্র সাফোয়ান চৌধুরী। তবে আমি তোমাকে চন্দ্রিমা বলে ডাকবো।
-জি।
-চন্দ্রিমা তুমি কিসে পড়ছো এখন ?
-এইচএসি পাশ করেছি আগের বছর।
-উহু আমি জিজ্ঞেস করেছি তুমি এখন কিসে পড়ছো?
-আমি আর কোথাও ভর্তি হইনি।
-কেন?
-আমার মা বলে মেয়েরা যারা বেশি পরে তারা নাকি ভালো বৌ হতে পারেনা।
-ওহ।শোনো চন্দ্রিমা,আমার মা হয়তো এখন উত্তরাধিকারী চাইবে। কিন্তু আমি তা চাইনা। আজ হোক কাল হোক আমাদের মধ্যেই শারীরিক সম্পর্ক হবে। কিন্তু আমি চাই তুমি আমার সাথে সহজ হও আরো। আমাদের মধ্যে প্রেম হোক,ভালোবাসা হোক ।ভালোবাসা ছাড়া কোনো মিলন হোক তা আমি চাই না।
সাফোয়ানের কথা শুনে চন্দ্রর ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ভিতরে ঢুকে যেতে। সে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। সে শুধু সাফোয়ানের কথার সাথে তাল মিলিয়ে মাথা দুলিয়ে যাচ্ছে।
-ঠিক আছে। অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন ঘুমাও।
চন্দ্র শুয়ে পড়লে সাফোয়ান লাইট নিভিয়ে এসে চন্দ্রের ওপর পাশে শুয়ে পড়লো।
ক্লান্ত থাকার কারণে সাফোয়ান অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো। কিন্তু হঠাৎ করেই তার তার বুঁকের বাম পাশে ধারালো কিছু বিধছে। তাই সে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো চন্দ্র তার বুকে শুয়ে আছে। আর তার কানের দুলের হুক ই তার বুকে লাগছে বার বার। তাই সে সন্তোপর্ণে চন্দ্রর কানের দুলটা খুলে বিছানার পাশে বেড সাইড টেবিলে রেখে দেয়।
----------------------------
চন্দ্রর যখন ঘুম ভাঙলো তখন সকাল ৮টা। চন্দ্র ঘুম থেকে উঠে দেখলো পাশে সাফোয়ান নেই। চন্দ্র কখনো নিজের বাড়িতে এত দেরিতে উঠতো না। তাই সে কিছুটা ভয় পেলো যে হয়তো তার শাশুড়ি মা তাকে কিছু বলবে। তাই সে তড়িঘড়ি করে আলমারি থেকে একটা শাড়ী বের করলো। কাল সামিরা তাকে বলেছিলো এই আলমারির সব শাড়ি তার। চন্দ্র গোসল করে একটা সিল্কের মেরুন শাড়ী পরে বের হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে লাগলো। হঠাৎ তার নজর তার কানের দিকে গেলো। সে দেখলো তার কানে পড়া স্বর্নের দুলটা নেই। সে এইদিক ঐদিক খুঁজতে লাগলো।হঠাৎ তার নজর গেলো বেড সাইড টেবিলের উপর। সে কানের দুলটা হাতে নিয়ে চিন্তা করতে থাকলো এটা এখানে কিভাবে আসলো। সে তো কানের দুল খুলে ঘুমাইনি। আর মধ্যেই সামিরা দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো।
-বাহ তুমি ফ্রেশ হয়ে গিয়েছো। ভালোই হয়েছে। নিচে চলো নাস্তা করতে।
-আমি কি বেশি দেরি করে উঠেছি।
-আরে নাহ। কাল তো অনেক রাতে ঘুমিয়েছো। ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হবেই।
চন্দ্র নিচে আসতেই দেখলো ড্রয়িং রুম ভরা লোকজন। কাল বাড়িতে সেরকম কেউ ছিল না। হয়তো দুই দিন পরেই বৌভাতের অনুষ্ঠান তার জন্যই সবাই এসেছে। কিন্তু সে এইদিক ঐদিক তাকিয়েও কোথাও সাফোয়ানকে দেখতে পেলো না।শিরিন বেগম তাকে নিচে নামতে দেখেই তার দিকে এগিয়ে এসো বললো,
-এসো এসো তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। শিরিন বেগম একে একে চন্দ্রকে সাফোয়ানের নানী আর মামার পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
সাফোয়ানের নানী একটা বক্স বের করলো তার ব্যাগ থেকে। সেখান থেকে দুইটা মোটা বালা বের করে চন্দ্রের হাতে পরিয়ে দিলো। তারপর চন্দ্রকে তার পাশে বসিয়ে বললো,
- ওমাগো নাতবৌ তো চান্দের লাহান সুন্দার।ওই শিরু কই থেইক্কা এই চান্দের মতো মুখ খানা খুঁইজা আনলি।
সবাই বসে কথা বলছিলো ঠিক তখনি সদর দরজা থেকে হন্তদন্ত হয়ে সাহিল কে ঢুকতে দেখা গেলো।
-বড় মা,বড় মা। কোথায় তুমি?
- কি হয়েছে তুই এভাবে হাপাচ্ছিস কেন।
- বড় মা সর্বনাশ হয়ে গেছে। সাফোয়ান ভাই সকালে যে গাড়িটা নিয়ে শহরের দিকে গিয়েছিলো। সেই গাড়িটার নাকি খুব ভয়ানকভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমার বন্ধু নাকি আসার সময় গাড়িটাকে পানি থেকে উঠাতে দেখেছে।আমি সাফোয়ান ভাইকে কল করার চেষ্টা করছি। কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে।
বিয়ে বাড়ির পরিবেশ নিমিষেই শোকে পরিণত হলো। শিরিন বেগম ধপ করে মাথায় হাত সোফায় বসে পড়লো। বিয়ের পরের দিনই স্বামীর এত বড় এক্সিডেন্টের কথা শুনে চন্দ্র যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো।
এই সব হইচই এর মধ্যেই হঠাৎ করে দেখা গেলো সদর দরজা দিয়ে সাফোয়ান বাড়িতে ঢুকছে। মানুষটাকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় দেখে চন্দ্র আর শিরিন বেগম যেন তাঁদের দেহে প্রাণ ফিরে ফেলো। সাফোয়ানকে দেখেই সাহিল তার কাছে দৌড়ে গিয়ে বললো,
- ভাই তুমি এখানে। তুমি না কালো গাড়িটা নিয়ে শহরে গিয়েছিলে। আর তোমার ফোন বন্ধ কেন।
-আরেহ শান্ত হ তুই কি হয়েছে। কালো গাড়িটা নিয়েই গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি থানায় নেমে যাই কিছু কাজের জন্য। আর ইন্সপেক্টরই আমাকে তার জিপে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। রাতে ফোনে চার্জ দেয়া হয় নি তাই ফোনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু কি হয়েছে? সবাইকে এরকম চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
-তোর গাড়িটা এক্সিডেন্ট করেছে। খুব বাজে ভাবে।
-কি বলিস? আমাকে এখনই যেতে হবে। আল্লাহ জানে ড্রাইভার এখন কি অবস্থায় আছে।
-তোর আর এখন যাওয়া লাগবে না ভাই। তুই রেস্ট নে। আমি আর সাহেদ যাচ্ছি।
সাফোয়ানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে আর সাহেদ এক্সিডেন্ট স্পটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
চলবে......
#গল্পঃআমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
রায়হা জুবায়ের রিপ্তি
পর্ব ৬
পড়ন্ত বিকেল, বাহিরে এখনও বাতাস বইছে তবে সকালের তুলনায় খানিক টা তীব্র গতিতে। আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে আজ থেকে টানা দুইদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবে। টিভিতে এই নিউজ টা দেখে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে চিত্রা। তার এমন বৃষ্টি পছন্দ না,চারিদিক স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। সোফার ওপর প্রান্তে বসে আছে তুষার। সে ল্যাপটপে অফিসের কিছু ফাইল চেক করছে। আড় চোখে চিত্রার মুখের ভাবভঙ্গি দেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল-
-“ মুখ টাকে এমন পেঁচার মতো বানিয়ে রেখেছো কেনো? কোনো সমস্যা?
চিত্রা নড়েচড়ে বসলো। দৃষ্টি বাহিরের দিকে রেখে বলল-
-“ ভাইয়া কখন যাবেন ও বাড়ি? দেখেন আকাশ কেমন কালো হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি আসবে তো।
-“ আসলে আসুক তোমার প্রবলেম কি।
তুষারের এমন ভাবলেশহীন কথা শুনে চিত্রা তার দিকে তাকায়।
-“ আমারই তো সমস্যা বাসায় যাবো কিভাবে,তখন রাফি ভাইয়ার সাথে গেলে ভালো হতো।
তুষার ল্যাপটপ টা বন্ধ করলো। সেকেন্ড খানিক সময় নিয়ে বলল-
-“ যাও রেডি হয়ে আসো।
কথাটা বলেই তুষার বসা থেকে উঠে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। চিত্রা তড়িঘড়ি করে রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নেয়। ব্যাগ টা গুছিয়ে একদম বসার ঘরে চলে আসে। তৃষ্ণা বাসায় নেই,তৃষ্ণা গেছে তার ফ্রেন্ডের বাসায় কিছু নোট আনতে। তানিয়া বেগম রুমে শুয়ে আছে। আকাশের আবহাওয়া খারাপ দেখে তার স্বামী তামিম খান একটু আগে ফোন দিয়ে জানিয়েছে ফিরতে দু দিন লেট হবে। চিত্রা বসার ঘরে ব্যাগ টা রেখে ফুপির রুমে চলে গেলো। দরজায় টোকা দিয়ে বললো-
-“ ফুপি আসবো?
তানিয়া বেগম চিত্রার গলার আওয়াজ শুনে শোয়া থেকে উঠে বসে বলে-
-“ হ্যাঁ আয়।
চিত্রা দরজা ঠেলে ভেতরে আসে। তানিয়া বেগম চিত্রাকে রেডি হওয়া দেখে বলে-
-“ কোথাও যাচ্ছিস?
-“ হ্যাঁ বাসায় যাচ্ছি।
-“ সে কি এখনই চলে যাবি নাকি।
-“ হ্যাঁ মা আজই যেতে বলছে তাছাড়া কয়েক দিন পর আমার এডমিশন পরীক্ষা সেটার জন্য ও তো প্রিপারেশন নিতে হবে।
-“ আচ্ছা, তুষার নিয়ে যাচ্ছে তো?
-“ হ্যাঁ তুষার ভাইয়াই নিয়ে যাচ্ছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা সাবধানে পৌঁছে ফোন দিস একটা।
-“ আচ্ছা ফুপি ভালো থেকো।
কথাটা বলে তানিয়া বেগম কে জড়িয়ে ধরে রুম থেকে চলে আসে। সোফার কাছে আসতেই দেখে সিঁড়ি দিয়ে তুষার নামছে। পড়নে জিন্স প্যান্ট হাতে হাত ঘড়ি,গায়ে ব্লাক শার্ট,শার্টের সামনে দিয়ে দুটো বোতাম খোলা। পারফেক্ট লাগছে চিত্রার কাছে। ভাইয়ের বউ অনেক লাকি হবে এমন সুদর্শন ছেলেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে।
তুষার চিত্রার সামনে এসে বলে-
-“ রেডি? তো চলো যাওয়া যাক।
চিত্রা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানিয়ে ব্যাগটা নিয়ে তুষারের পেছন পেছন হাঁটা ধরে। গাড়ির কাছে এসে পেছনের সিটে বসতে নিলে তুষার বলে-
-“ ব্যাগ টা পেছনের সিটে রেখে সামনে এসে বসো। আমি তোমার ড্রাইভার নই যে পেছনে বসবা।
চিত্রা তুষারের কথা মতো ব্যাগটা পেছনের সিটে রেখে সামনে এসে বসে। তুষারের বলার আগেই সিট বেল্টটা লাগিয়ে নেয়। তুষার স্মিত হেসে গাড়ি চালাতে আরম্ভ করে। গাড়িটা ঢাবির সামনে আসতেই চিত্রা এক ধ্যানে ঢাবির দিকে তাকিয়ে থাকে। চিত্রার খুব ইচ্ছে করছে ঢাবির ভেতর টায় ঢুকতে। তুষার কে গাড়ি টা থামাতে। তুষার চিত্রার চোখ অনুসরণ করে দেখলো মেয়েটা ঢাবির দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়িটাকে এক সাইডে রেখে বলে-
-“ চলো একটু ঢাবির ভেতরে যাই।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-“ কেনো?
তুষার গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলে-“ এমনি।আসলে ঢাবির সামনে আসলে একবারের জন্য হলেও যেতে ইচ্ছে করে। এক সময় ঢাবির স্টুডেন্ট ছিলাম বলে কথা।
চিত্রা গাড়ি থেকে নামলো। তুষারের পাশে দাঁড়িয়ে বাহির থেকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো ঢাবির দিকে। পাবলিকে পড়ার ইচ্ছে ছিলো অনেক চেয়ে চিত্রার কিন্তু এখন আর ইচ্ছে করে না। কিন্তু আজ ঢাবির দিকে তাকিয়ে সেই পুরোনো ইচ্ছে টাকে আবার পূরণ করতে ইচ্ছে করছে। তুষার চিত্রার সামনে নিজের বা হাত টা বাড়িয়ে দিলো। চিত্রা হাত টার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো-“কি?
তুষার ডান হাত দিয়ে তার চুল গুলোর মাঝে হাত দিয়ে নাড়িয়ে বলল-
-“ চলো আজ তোমাকে একটা সুন্দর বিকেল উপহার দেই।
কথাটা বলে তুষার চিত্রার ডান হাত চেপে হাঁটা ধরলো। যতই ঢাবির ক্যাম্পাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ততই চিত্রার মন আত্মিক শান্তি পাচ্ছে। এভাবে কেউ তাকে নিয়ে কখনও হাঁটে নি। ক্যাম্পাসের সবাই কি সুন্দর একে ওপরের হাত ধরে ঘুরছে আবার কেউ একজোট হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে আবার কেউ গিটারে সুর তুলে গান গাইছে। চিত্রা হাঁটা থামিয়ে দিলো। ছেলে মেয়ে গুলোর দিকে তাকালে। তুষার হাঁটার মাঝে বাঁধা পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে চিত্রার দিকে তাকালো। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে বলল-
-“ ওখানে যাবে? ওরা গান গাইবে এখন।
চিত্রা হ্যাঁ জানালো। তুষার চিত্রা কে নিয়ে ঐ ছেলেমেয়েদের কাছে গেলো। ছেলেমেয়ে গুলো সুর তুলছে গান গাইবে। চিত্রা সবটা খেয়াল করছে। তাদের মধ্যে থাকা এক টা ছেলে হঠাৎ করে বলে উঠলো-
-“ আরে তুষার ভাই আপনি যে।
তুষার খেয়াল করে নি ছেলেটা কে। ছেলেটার ডাক শুনে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ হেই শামিম হোয়াটসঅ্যাপ?
-“ এই তো চলছে,অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে আসলেন। (চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে) ওটা কি ভাবি আমাদের?
কথাটা কর্ণকুহর হতেই খানিক টা লজ্জা পেলো চিত্রা। এরা কি একজন ছেলের পাশে কোনো মেয়ে দেখলেই গফ/বফ ভেবে ফেলে। তুষার একবার চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ও আমার মামার মেয়ে।
ছেলেটা ওহ্ বলে পাশে থেকে ফুচকার স্টলে থেকে দুটো চেয়ার এনে তুষার আর চিত্রা কে দেয় বসার জন্য। চিত্রা আর তুষার বসে। ছেলে মেয়েগুলো গাইতে থাকে,,
যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তুমায় কাঁদায়
তবে প্রেমিকা কোথায় ? আর প্রেমই বা কোথায় ?
যদি দিশেহারা ঈশারাতে প্রেমই ডেকে যায়
তবে ঈশারা কোথায় ? আর আশারা কোথায় ?
যদি মিথ্যে মনে হয় সব পুরনো কথা
যদি চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা |
তবে বুঝে নিও চাঁদের আলো কত নিরুপায় |
যদি প্রতিদিন সেই রঙ্গিন হাসি ব্যথা দেয়
যদি সত্য গুলো স্বপ্ন হয়ে শুধু কথা দেয়
তবে শুনে দেখো প্রেমিকের গানও অসহায় |
যদি অভিযোগ কেড়ে নেয় সব অধিকার
তবে অভিনয় হয় সবগুলো অভিসার
যদি ঝিলমিল নীল আলোকে ঢেকে দেয় আঁধার
তবে কি থাকে তুমার বলো কি থাকে আমার
যদি ভালোবাসা সরে গেলে মরে যেতে হয়
কেন সেই প্রেম ফিরে এলে হেরে যেতে ভয়
শেষে কবিতারা দ্বায়সারা গান হয়ে যায় |
গানটা কয়েকবার ফেসবুকে শুনেছিলো চিত্রা। এবার সামনা সামনি গাইতে দেখলো। গান ভালোই লাগলো ছেলেমেয়ে গুলোর কন্ঠে। তুষার চিত্রার হাত ধরে বসা থেকে উঠে কার্জন হলের সামনে গেলো। ফাস্ট টাইম আজ কার্জন হল দেখলো সামনা সামনি চিত্রা। পিক তুলবে না সেটা হয় নাকি। তুষারের দিকে তার ফোন টা এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ আমার কয়েক টা পিক তুলে দিন।
তুষার নিজের ফোন টা বের করে বলে-
-“ আমার কাছে ফোন আছে তুমি গিয়ে দাঁড়াও আমি পিক তুলে দিচ্ছি।
চিত্রা হলের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন পোস নিলো আর তুষার পিক তুলে দিলো। হঠাৎ পাশে তাকিয়ে ভেলপুরি দেখে সেখান টায় তুষারের হাত ধরে ছোট লাগালো চিত্রা। ভেলপুরির কাছে গিয়ে চিত্রা বলল-
-“ মামা দু প্লেট ভেলপুরি দিন ঝাল বেশি করে।
ভেলপুরি মামা দু প্লেট ভেলপুরি চিত্রার হাতে দেয়। চিত্রা এক প্লেট নিজে নিয়ে আরেক প্লেট তুষারের সামনে ধরে বলে-
-“ ভাইয়া নিন।
তুষার ভেলপুরির দিকে তাকিয়ে, ভেলপুরির ঝাল মেপে নিলো। ঝাল খুব একটা খেতে পারে না তুষার।
-“ না না আমি ভেলপুরি খাই না তুমি খাও।
চিত্রা নিজের প্লেট থেকে একটা ভেলপুরি নিয়ে তুষারের মুখের সামনে ধরে বলে-
-“ একটা খান ভাইয়া তা না হলে আমার পেট খারাপ হবে প্লিজ।
তুষার চিত্রার হাতে দেওয়া ভেলপুরির অফার টা লুটে নিলো। এমন সুযোগ কবে আসবে কে জানে। তুষার একটা ভেলপুরি খেলে চিত্রা ওপর প্লেট টা তুষারের হাতে ধরিয়ে দেয়। ইশারায় খেতে বলে। তুষার খেয়ে নেয়। প্রেয়সীর সাথে একই পাশে দাঁড়িয়ে এই ঝাল ও যেনো অমৃত লাগলো। কিন্তু সব ভেলপুরি খাওয়ার শেষে বুঝলো এ অমৃত কেবল তার ভাবনাতেই ছিলো। মুহূর্তে চোখ ঠোঁট লাল হয়ে গেলো। চিত্রা খেতে খেতে তুষারের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। এই ছেলের চোখ ঠোঁট হঠাৎ লাল কেনো হলো বুঝতে পারলো না।
-“ ভাইয়া আপনার চোখ ঠোঁট এমন লাল কেনো?
তুষার ইশারায় পানি চাইলো। চিত্রা দোকানদারের কাছে থাকা পানির বোতল টা তুষারের দিকে এগিয়ে দেয়। তুষার ঢকঢক করে বোতলের অর্ধেক পানি খেয়ে ফেলে। চিত্রা বুঝলো বেচারা ঝালের জন্য এমন করছে। দোকানদারের থেকে প্লেটে মিষ্টি টক নিয়ে তুষারের সামনে ধরে বলে -
-“ মিষ্টি টক টা খেয়ে নিন ভালো লাগবে।
তুষার খেয়ে নিলো। একটু একটু করে ঝাল কমতে লাগলো। তুষার ভেলপুরির বিল মিটিয়ে চিত্রাকে নিয়ে হাঁটা ধরে। চিত্রা তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আপনি সামান্য ঝাল খেতে পারেন না আই এম তো অবাক! আমার তো ঝাল লাগলো না। পুরুষ মানুষ থাকবে ঝালের উপর দিয়ে। এমন হলে চলে নাকি।
তুষার কিছু বললো না। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলো। চিত্রা গাড়িতে বসে বলে-
-“ আর একটু সময় থাকলে কি হতো?
-“ কেনো তোমার না পাবলিকে পড়ার ইচ্ছে নাই তাহলে পাবলিকের আঙিনায় থাকবা কেনো।
-“ আশ্চর্য কে বললো ইচ্ছে নাই,আছে তো কিন্তু পাবলিকে চান্স পেতে হলে ভাগ্য লাগে।
-“ তোমার কি ভাগ্য নেই? লিসেন চিত্রা নিজের ভাগ্য নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়।মন দিয়ে প্রিপারেশন নাও।
-“ হ্যাঁ আপনার আর তৃষ্ণার কপালের সাথে কপাল ঘষা দিতে হবে যদি ভাগ্য বদলায়।
তুষার কথা বললো না। ঝালে তার অবস্থা খারাপ,রাতে হয়তো জ্বর আসবে। চিত্রা কে বাসায় দিয়ে ফেরার পথে মেডিসিন নিতে হবে। এই এক শরীর সামান্য ঝালই সহ্য করতে পারে না বিরক্তিকর শরীর। একটু কিছু হলেই নেতিয়ে যায়।
তুষার চিত্রা কে নিয়ে তার বাসায় আসে। সোফায় রিক্তা বেগম আর রিয়ার মেয়ে রিমি বসে আছে। দাদি নাতনি মিলে খুনসুটি করছে। চিত্রা আর তুষার বাড়ির ভেতর ঢুকে। রিমি চিত্রা কে দেখা মাত্রই হাতে তালি দিয়ে হেঁসে উঠে। চিত্রা ব্যাগ টা রেখে পিচ্চি টাকে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে। রিক্তা বেগম তুষার আর চিত্রা কে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তুষারের দিকে এগিয়ে বলে-
-“ কেমন আছো তুষার?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মামি। আপনারা কেমন আছেন?
-“ এই তো আল্লাহ রাখছে ভালো। আজ কত গুলো মাস পড় আসলা।
তুষার স্মিত হেসে বলে-
-“ কাজের অনেক প্রেসার সেজন্য আসার সময় হয়ে উঠে না। রায়ান ভাই আর মামা রা কোথায়?
-“ ওরা তো বাসায় নাই। তুমি বসো।
তুষার সোফায় বসলো। চিত্রা আর রিমি মিলে কথা বলছে আর হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে। তুষার পর্যবেক্ষণ করলো সবটা। মেয়েটা রায়ানের মেয়ের সাথে কিভাবে মিশে গেলো। অন্য কেউ হলে কি এতো ইজিলি ভালেবাসার মানুষটার বাচ্চাকে এভাবে আদর করতে পারতো? তপ্ত শ্বাস ফেললো তুষার।রিয়া স্ন্যাকস আর কফি এনে তুষারের সামনে রাখে।
-“ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া কেমন আছেন?
তুষার চিত্রার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি রিয়া। তুমি কেমন আছো?
-“ আমিও ভালো আছি।
-“ রাফি ও কি বাসায় নেই?
-“ না ভাইয়া, বাবা আর রায়ানের সাথে গেছে কোথাও একটা।
তুষার কফিতে চুমুক বসালো। চয়নিকা বেগম রান্না ঘর থেকে বের হয়ে মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে আগে। কপালে চুমু একে দেয়। সোফার ওপর পাশে তুষার কে দেখে। তুষার ছেলেটা আজ অনেক দিন পর আসলো তাদের বাসায়। লাস্ট এসেছিলো বছর খানে আগে। যখন গ্রাম থেকে শ্বাশুড়ি আর শ্বশুর এসেছিল।
-“ তুষারের তাহলে পা পড়লো মামার বাসায়? দাওয়াত দিয়েও তো তুষার কে পাওয়া যায় না।
-“ কি করবে বলুন মামি, সব দিক সামলিয়ে আসা টা হয়ে উঠে না।
-“ বয়স হচ্ছে তো বিয়ের। পাত্রী দেখি কি বলো?
তুষার ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। চিত্রার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বললো-
-“ মেয়ে দেখে কি করবেন মেয়ে দেখাই আছে। এখন শুধু সবার অনুমতি নিয়ে উঠিয়ে নেওয়া বাকি।
চিত্রা সহ রিয়া, চয়নিকা, রিক্তা সবাই অবাক হয়। মেয়ে দেখাই আছে মানে? তানিয়া কি তাহলে না জানিয়েই মেয়ে ঠিক করে রেখেছে। তুষার সবাই কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে -
-“ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো সবাই?
রিক্তা বেগম তুষারের পাশে বসে বলে-
-“ মেয়ে কি কর? কোথায় থাকে? কোন পরিবারের মেয়ে সে?দেখতে কেমন?
তুষার শব্দ করে হাসলো।
-“ সিরিয়াস হচ্ছেন কেনো আমি মজা করেছি। বিয়ে নিয়ে এখনও প্ল্যান করি নি। মনের মানুষ পেয়ে গেলে করবো।
রায়ান, রাফি আর রাসেল আহমেদ এনাম মেডিকেলের পাশে তাদের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের অফিসের কাজ চলছে। অফিসের ভেতর ঢুকতে হলে এই দশ শতাংশ জমির উপর দিয়ে যেতে হবে যার জন্য রাসেল আহমেদের এই দশ শতাংশ জমি চাই। রাফি বুঝলো কেনো তার বাবা জমিটার জন্য এমন করছে। রায়ান জমির মালিকের বাবা কে ফোন দেয়। আশরাফুল রহমান মেয়ে অধরার সাথে কথা বলছিলেন। হঠাৎ ফোনে কল আসায় দেখে সেই পরিচিত নম্বর। মেয়ের দিকে নাম্বার টা তাক করে বলে-
-“ এই যে দেখো জমির জন্য আবার ফোন করা হয়েছে।
অধরা ফোন টা কেড়ে নিলো বিরক্তিতে। ফোন টা রিসিভ করতেই অধরা গড়গড় করে বলল-
-“ একবার আপনাদের বলা হয়েছে না জমি বিক্রি করা হবে না তাহলে বারবার কেনো ফোন দিয়ে বিরক্ত করেন।
রাফির রাগ হলো-
-“ জাস্ট শাট-আপ, আপনাকে জমি বিক্রি নিয়ে ফোন করা জয় নি। আপনি একবার জমির কাছে আসুন।
-“ কেনো?
-“ আসুন তারপর দেখে যান।
-” ওয়েট আসছি।
কথাটা বলে অধরা ফোন কেটে দেয়। হ্যান্ড ব্যাগ টা নিয়ে বেরিয়ে যায়। রায়ান আর রাসেল আহমেদ অফিসের ভেতরে গেছে,রাফি বাহিরে দাড়িয়ে আছে। হটাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশ ফিরে দেখে সেদিনের সেই বিধবা মেয়েটা। আজও পড়নে সাদা শাড়ি। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আপনি সেই অধরা না?
অধরা রাফি কে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ আপনি কে?
-“ আমি রাফি সেদিন প্লেনে যার পাশে বসেছিলেন।
-“ ওহ্ আপনি এখানে কি করছেন?
-“ আসলে এক বজ্জাত মহিলার জন্য অপেক্ষা করছি।
-“ মানে?
- “ মানে হলে এই যে,এই যে সামনে যে জায়গা টা দেখতে পাচ্ছেন না এই জায়গা টা একটা মহিলার, সেই মহিলার জন্য অপেক্ষা করছি।
অধরা হাতের ইশারায় জমির জায়গা টার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ এই দশ শতাংশ?
-“ হ্যাঁ।
-“ আমিই সেই মালিক। বলুন কি বলবেন?
রাফি একবার জমি তো আরেক বার অধরার দিকে তাকায়।
-“ এই জমি আপনার?
-“ হ্যাঁ।
-“ আপনি এই দশ শতাংশ জমি ছাড়ছেন না কেনো? আপনার জন্য আমাদের অফিসের কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
-“ আপনাদের এখানে কে বলেছে অফিস তৈরি করতে? আমার জায়গার জন্য প্রবলেম হলে অন্য জায়গায় তৈরি করুন অফিস।
-“ আপনার জায়গা দশ শতাংশ আর আমাদের আপনার জায়গার তিন ডবল করলেও জায়গার পরিমাপ আসবে না। সেক্ষেত্রে কি আপনার উচিত না জায়গা টা ছেড়ে দেওয়া? আপনার কাছে তো জায়গা টা মাগনা চাওয়া হচ্ছে না। দাম তো দেওয়া হবে।
-“ কত দিবেন আপনারা?
-“ আপনি কত চান?
-“ আমি যা চাইবো তাই দিবেন?
-“ চেয়ে দেখুন।
-“ বেশ,আমি শতাংশ প্রতি ৩০ লাখ করে সেল করবো।
-“ জায়গার আসল দাম কত?
-“ আসল দাম যাই থাকুক, দশ শতাংশ জমির দাম আসে ১ কোটি টাকা। এখন আপনাদের পোষালে আপনারা নিবেন। যদি পারেন তাহলে জানাবেন আর না পারলে জমির সংক্রান্ত আর একটা ফোন যেনে না আসে।
কথাটা বলে অধরা চলে যায়। রাফি অধরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবে দশ শতাংশ জমির দাম ১ কোটি টাকা! মেয়েটা সুযোগ বুঝে সুযোগের দুর্ব্যবহার করছে।
#চলবে?
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Telephone
Website
Address
Dhaka Chattogram
Dhaka
Dhaka, 1206
Educator,Writer,Researcher,Youtuber, Master Reviewer &Master photographer(Google)
Dhaka
কারো প্রতি আমার কোন অভিযোগ নাই।নিজের প্রতি আমার এক আকাশ সমান অভিযোগ।😌🥀🖤💌🫶🫰💁♀