Ortho & Trauma Care BD
Nearby health & beauty businesses
Dhaka
Dhaka Mirpur, Mirpur
Dhaka Mirpur
Lakshmipur Sador, Lakshmipur
Mirpur
Mirpur 12 Dhaka
Dhaka Mirpur
Mirpur
চকবাজার
Hanover Street, New City
1216
Mirpur
Mirpur
Daka
Provide proper orthopedics healthcare
"No Man's Land"
আমরা অনেকেই দেশের বর্ডারের "No Man's Land" এর নাম শুনেছি। এ নামে সিনেমাও আছে খুব সম্ভবত। কিন্তু হাতের "No man's Land" এর নাম বোধহয় ডাক্তারসমাজ ব্যাতিত কেউ শুনেননি। আমাদের আজকের এই রোগীর সেই "No Man's Land" এরিয়াতেই ইঞ্জুরি হয়েছে। ১০ বছরের বাচ্চা মেয়ে। আরেকজনের সাথে কিছু কাজ করতে গিয়ে লোহার শাবল এর আঘাত লাগে হাতের ঠিক এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ২ আঙুলে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এক আঙুলে সেলাই দিয়ে দিয়েছে কিন্তু আরেকটায় দেয়নি। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এইসব রোগী বা রোগীর স্বজন বড় মেডিকেলে এসে খাই হারিয়ে ফেলে। কোথায় যাবে কি করবে কাকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারে। এই রোগী বিকেলে হাসপাতালে এসে বেডে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। এদিকে আমরা রাত ১২/১২:৩০ টা পর্যন্ত কাজ করে কাজ শেষ ভেবে সব ঘোছাতে ব্যস্ত। এমন সময় ওয়ার্ডের সাহায্যকারী রোগী নিয়ে হাজির। তাদের যে হাতের চিকিৎসা হয়নি বা পায়নি সেটা নিয়ে তার কাউকে কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি, বলেও নি। ওয়ার্ডে যেয়ে কাদের কাজ করা হয়নি খোজার পর একে খুজে পাওয়া গেছে। রোজার দিনে রোজার রেখে ইফতার করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ভেবেছিলাম আগে আগে রুমে চলে যাবো। তা আর যাওয়া হলোনা।
আমাদের হাতের আঙুল ভাজ করার জন্য প্রতি আঙুলে ২ টি করে রগ/টেন্ডন রয়েছে। হাতের সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ কাজ করার জন্য এইসন রগ/টেন্ডন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা টেন্ডন শেষ হয়েছে আঙুলের মাঝে আরেকটা আঙুলের মাথার একটু নিচে। ২ টা টেন্ডন একসাথে কাজ করে বলেই আমরা শক্তি দিয়ে কিছু ধরতে পারি। একটা না থাকলেও আঙুল ভাজ করা যাবে কিন্তু আগের মত শক্তি আর থাকবেনা। তাই ২ টি টেন্ডন ঠিক করাই গুরুত্বপূর্ণ। বয়স্ক মানুষ হলে যারা হাত দিয়ে তেমন কোন ভারী কাজ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় ঝামেলা এড়াতে একটা টেন্ডন সেলাই দিয়ে দেই যাতে স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে নিতে পারে। কিন্তু আমাদের এই রোগীর বয়স কম। বাকি জীবন পড়েই আছে সামনে। তাই তার ক্ষেত্রে ২ টো রগ ঠিক করাই দরকার। কিন্তু বলছিলাম যে এরিয়ায় কেটেছে এটাকে বলা হয় "No Man's Land" কারণ এই এরিয়াতে রগ ঠিক করার খুবই কঠিন ব্যাপার। আবার এই এরিয়াতে রগ সেলাই করার আউটপুট ও খুব একটা ভালো পাওয়া যায়না। তাই অপারেশনের পরেও এক্সটেন্সিভ ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। তাই বলা হয়ে থাকে এক্সপার্ট হ্যান্ড সার্জন ব্যাতিত এই এরিয়াতে রগ সেলাই না করতে। এক্সপার্ট হ্যান্ড সার্জন পেতে হলে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে ঢাকায়, যা আমাদের এই রোগীর নেই বা সরকারী হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ রোগীরই থাকেনা। তাই আমরাই যতটুকু ভালোভাবে করে দেয়া সম্ভব আমাদের যথাসাধ্যভাবে করে দেয়ার চেষ্টা করি। আবার শুধু রগ সেলাই দিলেই হবেনা৷ এই এরিয়াতে বিশেষ ধরনের টিস্যু থাকে যাকে বলা হয় "Pulley" যা রগকে হাড়ের সাথে আটকে রাখে। এই পুলি না থাকলে আঙুল ভাজ করতে গেলে রগ ধনুকের মত বেকে যাবে। রগ টানের কারনেই আঙুল ভাজ হয়। তাই রগ হাড়ের সাথে লাগানো না থাকলে রগে টান লাগলে রগ ঠিকই ধনুকের মত বেকে যাবে কিন্তু আঙুল পুরোপুরি ভাজ হবেনা। তাই রগ/টেন্ডন সেলাই দেয়ার সাথে সাথে এই পুলি যাতে নষ্ট না হয় না নষ্ট হলেও সেটা যেন রিপেয়ার করে দেয়া হয় সেদিকে খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এক্সপার্ট সার্জন না হলে আরো আউটপুট ভালো হবেনা।
আমাদের এই রোগীর যে আঙুলে সেলাই দেয়া ছিলো, আমরা সেটা কেটে চেক করে দেখি সেখানে একটা রগ কেটেছে আরেকটা ঠিক আছে। তাই সে সেই আঙুল ভাজ করতে পারছে। কিন্তু এই আঙুলের ২ টি রগই কেটে গিয়েছে। এখানে রগ কেটে গেলে আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে মাংসের টানে রগ অনেক ভেতরে চলে যায়। সহজে খুজে পাওয়া যায়না। অনেক সময় হাতের মাঝখান পর্যন্ত কাটতে হয় শুধু এই কাটা রগ খুজে বের করতেই। দেখা যায় অরিজিনাল কাটা ছোট্ট কিন্তু রগ খুজে বের করতে তার থেকে বড় করে কাটতে হয়। আমাদেরও রগ খুজে পেতে কাটতে হয়েছে হাতের তালুর দিকে। ফাইনালি ২ টি রগই খুজে পাওয়া যায় এবং সেগুলো রিপেয়ার করা হয়। সাথে "Pulley" ও রিপেয়ার করা যায়। রক্ত থামাতে হাত বেধে রাখা হলেও বাচ্চা মেয়েটা এতটা ধৈর্য্য ধরে ছিলো যে বেশিরভাগ বড় রোগীরও এত ধৈর্য্য থাকেনা। অবশেষে ১ ঘন্টার উপরে লাগে অপারেশন শেষ করতে। কিন্তু হাতের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরে পেতে যেভাবে ফলোআপ, ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন বেশিরভাগ রোগীই সেটা মেনে চলেনা, আসতে বললেও আসেনা। তাই আসলে বাচ্চা মেয়েটার হাতের কার্যক্ষমতা কতটুকু ফিরে পাবে সেটা আগে থেকে বলাই বাহুল্য।
* Please Share our Post and Stay with Us.
"শ্রমিক শেণীর মানুষদের হচ্ছে যত জ্বালা"
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বেশিরভাগ মানুষই হচ্ছে হাতে পায়ে বা গায়ে-গতরে খেটে খাওয়া মানুষ। এদের বেশিরভাগই আবার বিভিন্ন পেশার শ্রমিক। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে মানুষের কষ্ট যেমন কমেছে, বিপদও আবার বেড়েছে। নূন্যতম সেফটির কোন বালাই নেই কর্মক্ষেত্রে। দেখবেন উচু উঁচু বিল্ডিংয়ে ইন্সট্রাকশনের কাজ করছে যারা তাদের সেফটির জন্য কিছুই নেই অথবা থাকলেও সেটা এতটাই নগন্ন যে আসলে তা সেফটি দেয়ার জন্য নাকি প্রশাসনকে শুধু বুঝ দেয়ার জন্য দেখলেই বোঝা যায়। দেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বেড়েছে অনেক অনেক গুণ গত কয়েক বছরে। এগুলোর নেই কোন সেফটির বালাই। তাই হাসপাতালে এক্সিডেন্ট করে আসা রোগীর বেশিরভাগই দেখা যায় এই অটোরিকশার এক্সিডেন্ট। গতকালকেই এক রোগী এসেছে, যে নিজেই একজন অটোরিকশাচালক। তার নিজের রিকশায় নিজের হাত ঢুকে কণিষ্ঠা আঙুলের পুরোটা পড়ে গেছে, আরেক আঙুল কোন রকমে ঝুলে আছে। এই রিকশাচালককে রিকশাই চালিয়ে খেতে হবে কিন্তু নিজের হাতের অর্ধেক নিয়েই। আবার কৃষকশ্রেণির বেশিরভাগ মানুষ দেখা যায় মাঠে বা বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে দা দিয়ে কোপ দিতে গিয়ে হাতের বা পায়ের আঙুল কেটে এসেছে অথবা হাতের বা পায়ের রগ কেটে এসেছে৷ আবার আধুনিক কালের আরেক মেশিন গ্রাইন্ডিং মেশিন। জানিনা কিসের কাজে লাগে। শস্য মাড়াইয়ের মেশির নাকি অন্য কিছু। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই ২/১ টা রোগী আসবে গ্রাইন্ডিং মেশিন ছুটে এসে এখানে ওখানে লেগে পা-হাত কিছুনা কিছু কেটে এসেছে। আমার এই রোগী ও সেই গ্রাইন্ডিং মেশিনে কেটে এসেছে। বুড়ো আঙুল প্রায় পুরোটা কেটে প্রায় ঝুলে আছে কোনরকমে। আঙুলের হাড় ভেঙে গিয়েছে সাথে আঙুলের রগ ও কেটে গিয়েছে। যেহেতু এরা নিম্নশ্রেণীর মানুষ, এদেরকে হাত দিয়ে কাজ করেই খেতে হবে, তাই আমরা চেষ্টা করি যত স্বল্পমূল্যের মধ্যে চিকিৎসা দিয়ে ম্যাক্সিমাম আউটপুট পাওয়া যায়। যদিও এইসব কাজ কিছুটা সময়সাপেক্ষ এবং প্রয়োজনীয় যথাযথ যন্ত্রপাতির অভাব আমাদের আছেই। তারপরেও আমাদের হাতে যা আছে তা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে হয়। এ রোগীরও তাই স্বল্পমূল্যের চিকন রড (K Wire) দিয়ে ভাঙা হাড় যথাযথ জায়গায় বসিয়ে তারপর রগ সেলাই করে দিয়েছি। রোগীকে বললাম, আপনারা এমন বিপদ্দজনক কাজ করেন অন্তত একজোড়া হাতের গ্লাভস তো পড়ে নিতে পারেন যেগুলো সহজে কাটেনা। অনেক আধুনিক গ্লাভস পাওয়া যায়৷ কিন্তু রোগী নিশ্চুপ। তাদের কাছে হয়তো এই ১০০০-১৫০০ টাকার গ্লাভসও বিলাসিতার সমান। তাই কি আর করার। যতদিন তারা সাবধান হতে না পারবে, কর্মক্ষেত্রে সেফটি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার শুধু করতে না পারবে ততদিন এমন এক্সিডেন্ট হতেই থাকবে, আর আমাদেরও তাদের চিকিৎসা দিয়ে যেতেই হবে।
* Please Share Our Post and Stay with us.
দেখতে টেবিল টেনিস বল না গলফ বলের মত মনে হলেও আসলে তা নয়। এটি মানুষের শরীরের সবচেয়ে লম্বা হাড় বা উড়ুর হাড়ের বা ফিমারের মাথার অংশ বা ফিমোরাল হেড, যা আপনার উরুসন্ধি বা হিপ জয়েন্ট তৈরি করে৷ এমন গোলাকার আকারের জন্যই আপনি আপনার পা বিভিন্ন দিকে নাড়াতে পারেন সহজেই, হাটতে পারেন, দৌড়াতে পারেন। এই ফিমোরাল হেড যে অংশের মাধ্যমে ফিমার বা উরুর হাড়ের বাকি অংশের সাথে যুক্ত থাকে তার নাম হলো ফিমোরাল নেক না ফিমারের ঘাড়/গর্দান। এই ফিমোরাল হেড বা নেক ভেঙে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা জোড়া লাগেনা, তাই ফিমোরাল হেড ফেলে দিতে হয়। ফেলে দিয়ে সেখানে মেটালিক প্রস্থেসিস বা মেটালের তৈরি ফিমোরাল হেড এবং নেক বসিয়ে দেয়া হয়। দেখতে অনেক বড় অপারেশন মনে হলেও আদতে খুবই অল্প সময় লাগে অপারেশনে আর অপারেশনের পরদিনই রোগী বসতে পারে আর দ্বিতীয় দিনই রোগী হাটতে পারে যদি রোগী ব্যাথা সহ্যসীমার মধ্যে থাকে। বিভিন্ন ধাতু/মেটালের তৈরি হয়ে থাকে এই প্রস্থেসিস আবার এর রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। এগুলোর উপর ভিত্তি করে এবং হাসপাতালের উপর ভিত্তি করে এই অপারেশনের খরচেও কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়৷ তাই আপনার রোগীর জন্য কোনটা প্রয়োজন, আপনার রোগীর আর্থিক সচ্ছলতা কেমন সব বিষয় বিবেচনা করে অপারেশনের খরচ কেমন হবে তার জন্য সরাসরি অর্থপেডিক্স সার্জনের পরামর্শ নিন।
হাটুর বাটি বলে অনেকে। মেডিকেলীয় নাম হচ্ছে "Patella". এক্সিডেন্টের ফলে বা পড়ে দিয়ে খুব কমনলি ভেঙে যাওয়া হাড়ের মধ্যে একটি। ছোট হাড় হলেও মানুষের হাটার জন্য বা পা সোজা করে দাড়ানোর জন্য এর গুরুত্ব অনেক। হাটুর উপরের এবং হাটুর নিচের বড় বড় হাড়দুটির মধ্যে সমন্বয় সাধনই করে থাকে এই হাড়। এই হাড় আছে বলেই হাটার সময় বা দৌড়ানোর সময় আপনি পা সোজা করে সামনে বাড়াতে পারেন। ভেঙে গেলে সাধারণত হাটুর জয়েন্টে রক্ত জমে হাটু ফুলে যায়। খুব বেশি রক্তপাত হয়ে বেশি ফুলে গেলে হাটুর নিচের অংশে রক্ত চলাচলেও ব্যাপ্তয় ঘটতে পারব। তবে এই হাড় ভেঙে গেলেই সব সময় অপারেশন লাগবে এমন নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়া শুধুমাত্র প্লাস্টার দিয়েও চিকিৎসা করা সম্ভব। সেজন্য অভিজ্ঞ অর্থপেডিশিয়ান এর পরামর্শ নিতে হবে সময়মত। এই হাড় অপারেশনের একটা সুবিধা হচ্ছে রোগীর ব্যাথা যদি সহ্যসীমার মধ্যে থাকে, তাহলে সে অপারেশনের পরদিন থেকেই হাটতে পারে৷ যদিও আমরা কিছুদিন পর হাটতে দেই অতিরিক্ত সতর্কতা স্বরূপ। অপারেশন করে হাড় জায়গামত বসিয়ে দিলে খুব সহজেই এই হাড় জোড়া লেগে যায়। তাই যেকোন হাড়ের অপারেশনের জন্য সবসময় অভিজ্ঞ অর্থপেডিশিয়ান এর পরামর্শ নিন।
একটা কথা প্রচলিত আছে যে "বেকার মানুষ নাকি সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে"। কিন্তু রাস্তাঘাটে সবচেয়ে ব্যস্ততা দেখবেন বাইকারদের মধ্যে। স্পেশালি যুবক বয়সি বাইকারদের মধ্যে। জানিনা এরা ৫/১০ সেকেন্ড সময় বাচিয়ে সে সময় দিয়ে জীবনে কি অর্জন করে। কিন্তু যেটা অনিবার্যিত ভাবে অর্জিত হয়, সেটা হচ্ছে এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি হয়। যুবক বয়সি শ্রমিকশ্রেণীর মানুষের মেশিনারি ইঞ্জুরি বেশি হয়, আর স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া যুবকদের হয় বাইক এক্সিডেন্ট। আমাদের এই রোগীও সেই বাইক এক্সিডেন্ট করেই এসেছিল। পায়ের পাতার ৫ টা বড় হাড়ের ৫ টাই ভেঙে গিয়েছিলো, কিন্তু ২ টা ভেঙে সরে গিয়েছিলো। যেহেতু ৫ টাই ভেঙে গিয়েছিলো তাই পা আনস্ট্যাবল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যেহেতু পা দিয়েই হাটতে হবে তাই আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। পায়ের সমস্যা হচ্ছে এখানে হাড় গুলো অনেক গভীরে থাকে তাই বাইরে থেকে খুব একটা ভালোভাবে পুরোটার আউটলাইন পাওয়া যায়না, যেটা হাতের ক্ষেত্রে সহজেই পাওয়া যায়। তার উপর এতগুলো হাড় ভেঙে যাওয়ায় পা অনেক ফুলে আছে। এক্ষেত্রে পা ফুলে অনেক সময় পায়ের রক্ত চলাচলও বন্ধ হয়ে যেতে পারে যাকে আমরা "কম্পার্টমেন্ট সিন্ড্রম" বলে থাকি। আমাদের লিমিটেড রিসোর্সে হয়তো সবকিছু করা সম্ভব হয়ে উঠেনা, অথবা চাইলেও রোগীর চাপে সময় নিয়ে কোন কাজ করা হয়ে উঠেনা। এই রোগীও হয়তো ঢাকা পাঠানো লাগতো। কিন্তু হাতে সময় থাকায়, রাতের সর্বশেষ রোগী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম যাতে ভালো কিছু করতে পারি, যাতে রোগীর ঢাকা পর্যন্ত না যাওয়া লাগে। ফলস্বরূপ "K Wire" দিয়ে সরে যাওয়া মাঝের হাড় দুটো জায়গামত আনতে পেরেছিলাম। যদিও পা ফোলা থাকায় কোন অতিরিক্ত কাটাছেড়া না করে কাজটা করা যথেষ্ট কঠিন ছিলো। পায়ে যতটুকু কাটা নিয়ে এসেছিলো সেটা দিয়ে ৪/৫ নাম্বার হাড় এক্সেস করা যেতো, কিন্তু ২, ৩ নাম্বার হাড় এক্সেস করা যায়নি। কিন্তু আমরা আর কোন কাটাছেড়া না করে শুধুমাত্র দুটো ছিদ্র করে দুটো K Wire দিয়ে হাড় দুটো ফিক্স করতে এবং জায়গামত আনতে সক্ষম হই। প্রায় ১ ঘন্টার কাছাকাছি সময় আর কোন এনেস্থেটিস্ট না থাকার পরেও রোগীও যথেষ্ট ধৈর্য্যশীলতার পরিচয় দিয়েছিলো। তারই ফলস্বরূপ ভালো ফলাফল পাওয়া গেলো। যদিও আমরা কাটাস্থানের আশে পাশের চামড়া নিয়ে সন্ধিহান ছিলাম যে নষ্ট হয়ে যায় কিনা, রোগীকে সেভাবেই বলে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা অপারেশনের পরে ২ দিন অবজারভেশনে রোগীর চামড়া খুবই ভালো ছিলো, নষ্টও হয়নি। আশা করছি খুব দ্রুতই সে আবার আগেরমত বাইক চালাতে পারবে।
"Teamwork Makes Dream Work"
রোগী এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। উরুর বড় হাড় (ফিমার) ভেঙে গিয়েছে। শরীরের সবচেয়ে বড় হাড়। অপারেশন ছাড়া উপায় নেই। ভর্তির পরেই রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে, রক্ত দিয়ে রোগী স্ট্যাবিলাইজ করা হয়েছে। উরুর এই বড় হাড় ভেঙে গেলে ভেতরে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। যদিও সেটা বাইরে থেকে দেখা যায়না। তাই, সময়মত স্যালাইন, রক্ত না দিলে রোগী খারাপ হয়ে যেতে সময় লাগেনা। অনেক সময় রোগীর লোককে রক্ত দেয়া লাগবে বললেই প্রশ্নবোধক চাহনি দেয় যে এক ফোটা রক্ত বের হলোনা কিন্তু রক্ত দিতে বলে কেন? এখানেই মার খেয়ে যায় কবিরাজ মশায় বা ট্রান্সডাক্তাররা (😁 মানে যারা ডাক্তার না হয়েও নিজেদেরকে ডাক্তার মনে করে আরকি)। দেশের মানুষের খাতাকলমে স্বাক্ষরতার হার বাড়লেও প্রয়োজনীয় শিক্ষা তো আর দেয়া হয়না। তাই এমন বড় হাড় ভেঙে গেলেও রোগীর লোকেরা রোগী নিয়ে এখানে ওখানে দৌড়াদৌড়ি করে কিন্তু প্রায় ঘরে ঘরে যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দিয়ে রেখেছে সরকার, সেখানে যায়না। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা ও পায়না। ফলস্রুতিতে অনেক সময়েই রোগী খারাপ হয়ে আসে হাসপাতালে। বাইরে এক ফোটা রক্ত বের না হয়েও, ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী খারাপ হয়ে আসে। তখন বাংলা সিনেমার মত আমাদেরও বলতে হয়, আর ১ ঘন্টা আগে যদি আনতেন, তাহলে হয়তো রোগী বাচানো যেত। বাচানোর কথা বললাম এজন্য যে, এ ধরনের রোগী খারাপ হয়ে মারাও যেতে পারে ভেতরে রক্তক্ষরনের ফলে। মাঝে মাঝেই আমাদেরকে এমন খারাপ রোগী আইসিইউ তে পাঠাতে হয়। কিন্তু সময়ের এক ফোড় আর অসময়ের দশ ফোড়। আইসিইউ তে পাঠানো হলেই কি আর সব রোগীকে বাচানো যায়। এজন্যই এ ধরনের ভাঙা রোগীর জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা বলতে গেলে জীবন রক্ষাকারী।
আমাদের এ রোগী স্ট্যাবিলাইজ করে পরীক্ষানিরীক্ষা করে অপারেশনের জন্য রেডি করা হচ্ছে। সব রিপোর্ট ভালো থাকলেও বিপত্তি বাধলো এক জায়গায়। রোগীর ব্লাড প্রেশার বেশি। তাই অজ্ঞানের বিভাগ থেকে অপারেশনের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছেনা। রোগীর বয়স ৪৫-৫০ হয়ে গেলেও নিজের যে ব্লাডপ্রেশার বেশি সে জানেনা, কারণ কখনো মেপে দেখেনি। ফলস্রুতিতে অপারেশনের জন্য আগানো যাচ্ছেনা। মেডিসিন বিভাগে কল পাঠানো হলো। তারা ব্লাড প্রেশার কমানোর জন্য ওষধ দিয়ে দিলেন। ২/৩ দিন ফলোআপ করা হলো, কিন্তু ব্লাডপ্রেশার এখনো পর্যাপ্ত কমেনি৷ তাই সাথে আমরা আরেকটা প্রেশারের ওষধ যোগ করে দিলাম সাথে ঘুমের ওষধ। আবার ২/৩ দিনের ফলোআপের পরে ব্লাডপ্রেশার কমে আসলো। তারপর অপারেশনের জন্য আগানো গেলো। আমরা প্রায় ২ সপ্তাহ যাবত রোগী ফলোআপ করছিলাম, ফাইনালি তার অপারেশনও আমাদের হাতেই পড়লো। আলহামদুলিল্লাহ, ভালোভাবেই অপারেশন সম্পন্ন হলো কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই। রোগীও খুশি, আমরাও খুশি।
যে কারনে টিম ওয়ার্ক বললাম সেটা হচ্ছে এই এক রোগীর পরিপূর্ণ চিকিৎসা শেষ করতে অনেকগুলো টিমের কাজ করতে হয়েছে বা করতে হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য একজন ডাক্তার কাজ করেছে, রোগীর দেখভাল করেছে আরেকজন ডাক্তার। ব্লাডপ্রেশার ম্যানেজ করেছে আরেকজন ডাক্তার। অপারেশনের ফিটনেসের জন্য কাজ করেছে এনেস্থেসিয়ার ডাক্তার। ফাইনালি সার্জন টিম অপারেশন করেছে। এখানে ডাক্তারবাদেও অনেক সহায়তাকারীও কাজ করেছে। তারপর কাজ করবে রিহ্যাবিলিটেশন এর জন আরেকদল মানুষ। তারপরেই তার চিকিৎসা সম্পূর্ন হবে। এখানে এই টিম লাইনের কোন বিচ্চুতি হলেই সেটা রোগীর পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
অপারেশন করার থেকেও আমার কাছে বেশি চ্যালেঞ্জিং এবং Fascinating লাগে এমন বা যে কোন ভাঙা; কোনরকম কাটাছেড়া বা অপারেশন ছাড়াই টেকনিক্যালি পূর্বাবস্থায় বসিয়ে দেয়া বা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা, যেটাকে আমরা "ক্লোজ রিডাকশন" বলে থাকি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা করা সহজ হলেও পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়না বা কঠিন হয় বা অপারেশন ও লেগে থাকে।
"অভিজ্ঞতার মূল্য"
একটা গল্প পড়েছিলাম। অনেকেই হয়তো পড়েছেন। একটা জাহাজের ইঞ্জিনে ডিস্টার্ব দিচ্ছিলো। কোন ভাবেই চালু হচ্ছিলো না। অনেক টেকনিশিয়ান দেখানো হচ্ছিলো কিন্তু কেউই ইঞ্জিন চালু করতে পারছিলোনা। শেষে একজন বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ানকে ডাকা হলো। সে অনেকক্ষন খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো। তারপর ছোট একটা হাতুড়ি দিয়ে কোথাও একটা বারী দিতেই ইঞ্জিন চালু হয়ে গেলো৷ সে যখন তার কাজের বিল জমা দিলো সেখানে বড়সড় একটা বিল দেখা গেলো। জাহাজের মালিক বললো, তুমি তো কাজই করোনি, ছোট হাতুড়ি দিয়ে একটা বারি দিয়েই কাজ শেষ করেছো, এর জন্য এত বিল হয় কিভাবে? আমাকে বিস্তারিত বিল জমা দাও। টেকনিশিয়ান বিস্তারিত বিলে লিখলো একটা বারি দেয়ার জন্য অল্প কিছু টাকা, আর বাকিটা কোথায় বারি দিতে হবে সেটা জানতে তার এত বছরের অভিজ্ঞতার মূল্য।
আমাদের চিকিৎসা পেশাও অনেকটা সেরকম। মানুষভাবে এই ছোট কাজের জন্য বা এই ছোট একটা প্লাস্টারের জন্য ২/৩ হাজার বা শহরভেদে এবং চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা ভেদে সেটা ৫/১০/১৫ হাজার টাকা, এত হয় কিভাবে? কিন্তু নিচের এক্সরে গুলো খেয়াল করলেই দেখবেন কতটা খারাপ ভাবে ভেঙেছে একেকটা হাড়। প্রতিটিই বাচ্চা রোগী। স্বভাবতই বাচ্চাদের নিয়ে তাদের বাবা মারা একটু বেশিই কনসার্ন থাকেন, সেটা থাকাই স্বাভাবিক। কারণ তার পুরো জীবনটাই পড়ে আছে সামনে। এমন ভাঙা থাকলে এবং সেটার চিকিৎসা ঠিকঠাক না হলে সেই বাচ্চাকে সারাজীবন সেটার ফল ভোগ করতে হবে, পঙুত্ব ও বরণ করা লাগতে পারে সারা জীবনের জন্য। কিন্তু তারপরেও অনেক পিতামাতা তাদের অজ্ঞতার কারণেই হোক বা ৫০০/১০০০ টাকা বাচানোর তাগিদেই হোক, অনেক সময় অনভিজ্ঞ কোন ডাক্তার (অন্য বিষয়ের অভিজ্ঞ) বা কবিরাজ বা ফার্মেসিওয়ালার কাছে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ফলস্বরূপ দেখা যায় কোন একটা সমস্যা বাধিয়ে তারপর আসেন হাসপাতালে। কিন্তু শুরুতেই যদি একজন অভিজ্ঞ অর্থপেডিশিয়ান এর কাছে যান তাহলে এমন খারাপ ভাবে ভাঙাও প্লাস্টার দিয়ে কোন অপারেশন ছাড়াই এমন সুন্দর ভাবে মিলিয়ে দেয়া সম্ভব। যদিও বড়দের ক্ষেত্রে এমন ভাঙা অনেক ক্ষেত্রেই অপারেশন লাগে বা লাগতে পারে কিন্তু ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়াই শুধু প্লাস্টার দিয়েই চিকিৎসা করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে তিনি কতটা ভালোভাবে ভাঙা হাড় জায়গামত বসাতে পারবেন। তাই কিছু টাকা বাচানোর আশায় কবিরাজ বা ফার্মেসি ওয়ালার কাছে না গিয়ে অভিজ্ঞ অর্থপেডিশিয়ান এর পরামর্শ নিন।
গত ২ সপ্তাহে করা কাজের মধ্যে একাংশ নিচের এক্সরে ৩ টি।
"সংগ্রামের জীবন"
১১/১২ বছরের জীবন। থাকেই নদীপ্রধান এলাকায়। জীবনকের চাকাও ঘোরে নদীকে ঘিরেই। এ বয়সেই কাজ করে খেতে হয়। নদীতে মানুষ বড় বড় স্পিকার/মাইক নিয়ে গান বাজনা করে, পার্টি করে, বেশির ভাগই ইয়াং ছেলেপেলে। এটাই ট্রেন্ড চলছে এখন। আর সেই স্পিকারের কাজই করে আমার এই বাচ্চা রোগী। সবাই পার্টি করছে আর এই বাচ্চা স্পিকারের দেখাশোনা করছে। কাজ করার সময়েই তার জুতা পরে যায় পানিতে। সেই জুতা উদ্ধার করতে পানিতে দেয় ঝাপ, আর ওদিকে নৌকা দেয় টান। ফলস্রুতিতে হাতে পেচিয়ে যায় নৌকার দড়ি। এমন ভাবে পেচিয়ে যায় ৩ আঙুলের গোড়ায় যে ৩ আঙুলের গোড়া ফুলের গোড়ার মত এক হয়ে গিয়েছিলো আর আঙুলের মাথা ফুলের পাপড়ির মত ছড়িয়ে ছিলো। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য যেখানে নিয়েছিলো তারা দড়ি না কেটেই রোগী পাঠিয়ে দিয়েছে মেডিকেল কলেজে। মেডিকেলে আসতে আসতে ৬ ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে। আমি যখন দেখি রোগী আসার পর, ততক্ষণে আঙুল ৩ টাই কালো হয়ে গিয়েছে এই দীর্ঘ সময় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে থাকায়। চিকিৎসা শুরু করার আগে প্রথম কাজই ছিলো দ্রুত দড়ি কেটে দিয়ে আঙুলের রক্ত চলাচল শুরু করানো। দ্রুত দড়ি কেটে দিয়ে রোগী এক্সরেতে পাঠানো হয়, তারপর বাকি চিকিৎসা শুরু হয়। ৩ টা আঙুলেরই গোড়ার হাড় ভেঙে গিয়েছে। আঙুল ঝুলে আছে শুধু রগের ( Tendon) মাধ্যমে। যদিও ছোট ছোট কিছু রক্তনালী তখনো ভালো ছিলো দেখতে পাচ্ছিলাম। তাই দ্রুত ভাঙা হাড় K Wire দিয়ে ফিক্স করে সেলাই দিয়ে দেই। ৩ টা আঙুলের মধ্যে ২ টার রং কালো থেকে কিছুটা লাল বা স্বাভাবিক হয়ে আসে। আশা করেছিলাম হয়তো আঙুল টিকেও যেতে পারে। যদিও রোগীর লোকদের বলে রাখা হয় আঙুল নাও টিকতে পারে। সেই আশা থেকেই সাবধানে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়। পরদিন সকালেই সবার আগে ছেলেটার হাত চেক করি, কিন্তু দেখতে পাই ৩ টা আঙুলই কালো হয়ে গিয়েছে। তার মানে কোনটাই হয়তো টিকবেনা। চিন্তা করতে পারেন এই ১১/১২ বছরের একটা ছেলে, যার বাকি জীবন সামনে পড়ে আছে তার ডান হাতের ৩ টা আঙুলই নেই। কিভাবে চলবে তার বাকি জীবন। যদিও আমরা আঙুল ফেলে দেইনি। অবজারবেশনে রেখেছি। কিন্তু আঙুল টেকার কোন সম্ভাবনা নেই। হয়তো ছেলেটাকে মেডিকেলে পাঠানোর আগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার সময়েই যদি দড়িটা কেটে দিতো তাহলে তাকে সারা জীবনের জন্য এই পঙুত্ব বরণ করতে হতোনা। হয়তো যদি ছেলেটার আর্থিক সচ্ছলতা থাকতো তাহলে দ্রুত ঢাকায় আরো বড় কোন হাসপাতালে নিয়ে হ্যান্ড সার্জারি বা ভাস্কুলার সার্জারির মাধ্যমে আঙুলে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো। কিন্তু এই দুনিয়া ফেয়ার না। এখানে গরীবদেরই সাফার করতে হয় বেশি সবদিক থেকে। আল্লাহ তা'আলাও হয়তো তাদের পরীক্ষার পর পরীক্ষা নিতেই থাকেন। যদিও এটা আমার জন্য এটা কোন সাকসেস স্টোরি না বরং খুবই খারাপ লাগার বিষয়।
* তাই এমন পরিস্থিতিতে কেউ পড়ে থাকলে আগে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য দড়ি কেটে ফেলুন যতদ্রুত সম্ভব।
* অনেকে আবার রক্ত বন্ধ করার জন্য এমন ভাবে বেধে নিয়ে আসেন যে রক্ত চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে সব নষ্ট করে ফেলেন, সেটাও উচিত নয়।
*একই ভাবে হাত বা পা ভারি কিছুর নিচে চাপা পড়লে দ্রুত সেটা সরিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন। রক্ত বের হয়ে গেলে সেটা রিপ্লেস করা যাবে, কিন্তু রক্তপাত বন্ধ করার উদ্দেশ্যে কিছু দিয়ে শক্ত বাধন দিয়ে রক্ত চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে সেটা আরো হিতে বিপরিত হয়ে যাবে। সেক্ষত্রে হাত/বা কেটেও ফেলা লাগতে পারে।
তাই সবারই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
"যক্ষা হলে রক্ষা নাই, এই কথার ভিত্তি নাই" আলোচিত স্লোগানটিই হয়তো দেশে যক্ষা রোগের প্রকোপ কমিয়ে আনতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আগে মানুষ ভাবতো হয়তো যক্ষা হলেই জীবন শেষ। কিন্তু সরকারী ভাবে, বিভিন্ন এনজিও-র মাধ্যমে যক্ষার ওষধ ফ্রিতে দেয়াতে এবং গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারণার মাধ্যমেই হয়তো সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে কিছুটা সচেতন হয়ে উঠে, ফলস্রুতিতে যক্ষার প্রকোপ ধীরে ধীরে কমে এসেছে। ঠিক তেমনই আমাদের অর্থপেডিক্স এর একটা রোগ হচ্ছে "ক্লাব ফুট বা মুগুর পা". এটি জন্মগত একটি রোগ যা জন্মের সাথে সাথেই দেখা যায় কারণ বিভিন্ন কারণে বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীন সময়েই এই রোগের শুরু হয়। যদিও যক্ষার মত এ রোগের প্রকোপ এত নয়, তবুও মানুষের সচেতনতার অভাবে বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক বা কবিরাজি চিকিৎসার জন্য একটি শিশু সারা জীবনের জন্য পঙু হয়ে থাকতে পারে এ রোগের কারণে৷ চিকিৎসায় এ রোগ সম্পূর্ণ ভালো করা সম্ভব এবং শিশু স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। যদিও এ রোগ নিয়ে বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে, ফ্রিতে চিকিৎসা দিচ্ছে তবুও মানুষের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কারণ হতে পারে যক্ষা নিয়ে যেমন গণমাধ্যমে প্রচারণা হয়েছে সেভাবে এ রোগ নিয়ে বা অন্যান্য রোগ নিয়ে প্রচারণা হয়না৷ ফলে এখনো মানুষ, বাচ্চা জন্মের পরে পা এমন বাকা দেখলেও সরাসরি চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে ঝাড়ফুক, কবিরাজি চিকিৎসা বা মালিশ এগুলো করতে থাকে। যত দিন যায় বা যথাযথ চিকিৎসা শুরু করতে যত বিলম্ব হয় এই রোগের চিকিৎসা করাও তত কঠিন হয়ে যায়৷ বলা হয়ে থাকে, জন্মের সাথে সাথে এ রোগের চিকিৎসা শুরু করার জন্য। ১ দিনও বিলম্ব না করার জন্য৷ যদিও এ রোগের চিকিৎসা কিছুটা দীর্ঘমেয়াদী, কিন্তু যথাযথ চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভালো করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সচেতনতার। জন্মের পর থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত এ রোগের চিকিৎসা চলতে থাকে পর্যায়ক্রমে। শুরুতে সাপ্তাহিক প্লাস্টার করা হয় ৫-৬ টা। তারপর প্রয়োজনবোধে পায়ের পেছনের রগ ছোট্ট ছিদ্রের মাধ্যমে কেটে দিতে হয় এবং তারপর আবার ৩ সপ্তাহের জন্য প্লাস্টার দেয়া হয়৷ ৩ সপ্তাহ পরে প্লাস্টার খুলে বিশেষ ধরনের জুতা পরিয়ে দেয়া হয় যা দিনে অন্তত ২৩ ঘন্টা পরানো থাকে ৩ মাস পর্যন্ত। তারপর সময় কমিয়ে এনে সারাদিনে ১২-১৬ ঘন্টা পরাতে হয় ৪ বছর পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে রোগীকে ৩ মাস অন্তর অন্তর বাচ্চার জুতা পরিবর্তন করে নিতে হয়, কারণ বাচ্চা দিনে দিনে বড় হতে থাকে সাথে পায়ের সাইজও বাড়তে থাকে। ৪ বছর পর থেকে বাচ্চা হাটার জন্য কাস্টমাইজড জুতা বানিয়ে নিতে হয়। এই দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় রোগীর লোক সচেতন না হলে বা গাফিলতি করলে পা আবার বাকা হয়ে যেতে পারে। তাই ধৈর্য্য হচ্ছে এই চিকিৎসার মূল অস্ত্র।
নিম্নোক্ত প্লাস্টারের ছবির বাচ্চাটির প্লাস্টার করছি আমরা গত ৫ সপ্তাহযাবত। এই সপ্তাহে তার পায়ের পেছনের রগ কেটে দেয়া হয়েছে ছোট্ট অপারেশনের মাধ্যমে। এই অপারেশনে বাচ্চা অজ্ঞান করতেও হয়না, কোন সেলাইও করতে হয়না৷ খুবই ছোট্ট ছিদ্রের মাধ্যমে বা অনেক সময় সিরিঞ্জের সুইয়ের মাধ্যমেও রগ কেটে দেয়া হয়। আমরা তারপর ৬ষ্ট প্লাস্টার দিয়েছি অপারেশনের পরে, যা ৩ সপ্তাহ থাকবে। ৩ সপ্তাহ পর রোগী আসলে আমরা তাকে বিশেষ জুতো দিয়ে দিবো। এই রোগী যখন প্রথম আমাদের কাছে এসেছিলো তখন তার পা পাশের ছবির মতই বাকা ছিলো, কিন্তু পরপর ৫ টা প্লাস্টার করায় তার পা এলরেডি সোজা হয়ে স্বাভাবিক আকারে চলে এসেছে। কিন্তু রোগীর চিকিৎসা এখনো শেষ হয়নি। আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু তার বাবা মা যদি একটু সচেতন হয়ে ধৈর্য্য ধরে আমাদের পরামর্শ মেনে চলে তাহলে এই বাচ্চা স্বাভাবিক জীবন পাবে। তাই জন্মের পর বাচ্চার পা বাকা পেলে দেরী না করে যতদ্রূত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
৪ তলা পর্যন্ত সিড়ি বেয়ে উঠতে ভয় পেয়েছেন কখনো? আমি পেয়েছি আজকে। ভাবছিলাম এই বুঝি চোখ অন্ধকার হয়ে আসে, মাথা ঘুরে উঠে। গুটি গুটি পায়ে ভয়ে ভয়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে এসেছি। কারণ, পুর্বঅভিজ্ঞতা। বেশ কয়েক বছর আগে ল্যাব এইড হাসপাতালে একজনকে রক্ত দিতে গিয়েছিলাম সারা রাত নাইট ডিউটি করে। রক্ত দেয়া শেষে জুস, পানি খেয়ে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিয়ে, তারপর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। খারাপ লাগেনি বের হয়ে। রাস্তা পার হওয়ার জন্য ওভারব্রিজে উঠতে গিয়েই বাধে বিপত্তি। সিড়ি দিয়ে উঠছিলাম আর চোখ অন্ধকার হয়ে আসছিলো। উপরে উঠে চশমা পড়েও চোখে ঘোলা দেখছিলাম৷ ভাবছিলাম চশমা কি ঘোলা হয়ে গেলো। তারপর সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে আরো ঘোলা হয়ে গেলো। নেমেই সরাসরি ফুটপাতে বসে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম সারারাত ঘুমাইনি তাই হয়তো এমন লাগছে। তাড়াতাড়ি বাসায় যেয়ে ঘুমাতে হবে। ঘোলা চোখেই বাসে উঠে সামনে যে সিট পাই, বসে যাই। কিন্তু চোখ আসতে আসতে অন্ধকার হয়ে আসছে। শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, পা রাখতে পারছিনা, কোন শক্তি নেই হাতে পায়ে। পা ছড়িয়ে দিয়ে বাসের সিটে গা এলিয়ে দেই। ভাবছিলাম আমি কি মারা যাচ্ছি নাকি স্ট্রোক করছি। একসময় চোখে আর কিছুই দেখতে পারছিলাম না। চোখ খুলতেই পারছিলাম না, সেই শক্তিও নেই। বাস কোন পর্যন্ত এসেছে তাও বুঝতে পারছিলাম না। তাই চোখ বন্ধ রেখেই আল্লাহকে ডাকছিলাম। বাসার কাছাকাছি আসার পর কিছুটা ভালো লাগায়, বাসা থেকে নামতে পেরেছিলাম। নেমেই আবার ফুটপাতে বসে পড়ি। এমন অভিজ্ঞতা আর কখনো হয়নি৷ তখন বুঝেছিলাম, আসলে রক্ত দেয়ায় ব্লাড প্রেশার নেমে গিয়েছিলো, সাথে সারারাত জেগে ডিউটির প্রভাব। তারপর থেকেই ভয় ঢুকে গিয়েছিলো। তারপর আর রক্ত দেয়া হয়ে উঠেনি। যদিও এই অভিজ্ঞতার কারণে নয়, বরং রক্ত দেয়ার মত কাউকে পাইনি, বা কেউ আমার কাছে চায়নি।
আজকে বিকেল ৫ টা থেকে রাত ১২:৩০ টা পর্যন্ত ওটির ডিউটি করে মাত্র ওটি থেকে বের হয়েছি। আমার ওটির দরকার সামনেই গাইনি ওটি। একজন মহিলা ফোনে কথা বলছে তাড়াতাড়ি রক্ত লাগবে। রোগী অপারেশন টেবিলে শোয়ানো। রক্ত নাই তাই অপারেশন শুরু করা যাচ্ছেনা। সাথে সাথে ভাবলাম অনেক দিন রক্ত দেয়া হয়না। সুযোগ পেয়েছি, এখনি দিয়ে যাই। তাতে যদি মা- বাচ্চার জীবন বেচে যায় তাহলে খারাপ কি। সাথে সাথে রোগীর লোক সাথে নিয়ে ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে রক্ত দিয়ে আসলাম। রক্ত দিয়ে ঢকঢক করে প্রায় ১ লিটার পানি খেয়ে নিয়েছি। পূর্বের অভিজ্ঞতা ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে মনে। পানি খেয়ে কিছুক্ষণ বসে বের হয়ে আসলাম। আসার সময় মহিলা বলছেন, স্যার কি যে বলবো। তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে আসলাম এটা বলে " ঠিক আছে থাকেন, অপারেশন যেন ভালোভাবে হয় দেখেন". খুব ধীর পায়ে হেটে হেটে বের হচ্ছিলাম আর ভয় পাচ্ছিলাম এই বুঝি চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। রুম পর্যন্ত যেতে পারবো তো? সেই ভয় নিয়েই ৪ তলা পর্যন্ত সিড়ি বেয়ে ভালোভাবেই রুমে এসে পৌছেছি। আগেও বহুবার রক্ত দিয়েছি। কোয়ান্টাম ব্লাড ব্যাংকের লাইফটাইম ডোনার ছিলাম। কিন্তু কতবার রক্ত দিয়েছি সে হিসেব আর রাখা হয়ে উঠেনি।
রোগীর লোকের সাথে যুবক বয়সের এক ছেলেও ছিলো। যদিও জানিনা তার রক্তের গ্রুপ কি, সে নিজেও হয়তো নিজের রক্তের গ্রুপ জানেনা। জানলেও রক্ত দিতো কিনা জানিনা। কারণ দেশের মানুষের এখনো রক্তদানে ভীতি। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে যুগে যুগে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শিক্ষার অভাব এখনো বেশিরভাগ মানুষের মাঝেই। কারণ জীবন রক্ষাকারী শিক্ষা কোথাও দেয়া হয়না৷ ফেসবুকে মাঝে মাঝে বাইরের দেশের ছোটছোট বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া দেখি। তারা শেখাচ্ছে কিভাবে রাস্তা পার হতে হয়, কিভাবে একজন আরেকজনকে সাহায্য করতে হয়, কিভাবে কথা বলতে হয়, অপরিচিত মানুষ কিছু দিলে কিভাবে কি বলতে হয়, আগুন লাগলে কিভাবে নেভাতে হয়, কিভাবে নিরাপদভাবে বের হয়ে আসতে হয়, কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে কিভাবে কি করতে হয়। এগুলি জীবনমুখি শিক্ষা, জীবন রক্ষাকারী শিক্ষা। কিন্তু আমরা আমাদের বাচ্চাদের তো দূরে থাক বড়দেরও এগুলো শেখাতে পারিনি। কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এগুলো নেই৷ আমরা শেখাচ্ছি কিভাবে আলু ভর্তা বানাতে হয়, কিভাবে ডিমভাজি করতে হয়৷ জানিনা কে এই শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ন করেন। তাইতো এখনো শিক্ষিত হোক আর অশিক্ষিত হোক, রক্ত দানে এখনো মানুষ ভয় পায়। বেসিক জ্ঞান না থাকাতেই মানুষ এখনো রোগী অপারেশন টেবিলে শুইয়ে রেখে তারপর রক্ত খোজে। অথচ আমরা ছোট বেলায় পড়েছিলাম, বাড়িতে কেউ গর্ভবতী থাকলে আগে থেকেই রক্তদাতা ঠিক করে রাখতে, গাড়ি ঠিক করে রাখতে। অথচ এই শিক্ষাটুকুও এখনো মানুষের মধ্যে ঢুকেনি। জানিনা কবে এই জাতির মধ্যে এইসব শিক্ষা ঢুকবে।
সরকারী হাসপাতালে সাধারণত গরীব আর কিছু মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীই আসে। আবার কিছু চালাক মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তও আসে যারা, এসে ভর্তি হয় গরীব দু:স্থ হিসেবে বা এসে বলবে টাকা নেই হ্যান ত্যান। একবার এক রোগী দেখি দু:স্থ গরীব হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মাথায় আঘাত নিয়ে। চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে উচ্চতর সেন্টারে ঢাকায় যেতে বলা হয় (অবশ্যই সরকারী প্রতিষ্ঠানেই), পরে দেখা যায় তারা হেলিকপ্টার ভাড়া করে ঢাকা গিয়ে দেশের প্রথম সারির এক প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আবার কিছু রোগী বলবে টাকা নাই, গরীব, দেখা যায় তারা পেয়িং বেড অথবা কেবিন নিয়ে আছে। আবার কিছু আছে চিকিৎসার সার্থে তাদের ঢাকার উচ্চতর সেন্টারে যেতে বলা হলে, তারা জিজ্ঞেস করবে বাইরে কোথায় কাকে দেখালে ভালো হয়। জনগণ বা রোগীর তুলনায় যদিও সরকারী হাসপাতালের সুযোগ সুবিধা অনেকাংশেই অপ্রতুল। তারপরেও হাসপাতালগুলোতে বছরে কোটি কোটি টাকার সার্ভিস রোগীরা পায় যা তারা নিজেরাও জানেনা। আমরাও চেষ্টা করি যতটা কম খরচে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো যায় রোগীকে। আজকের এই ২ রোগী। পায়ের পাশে গোড়ালীর হাড় ভেঙে গিয়েছে। অবশ্যই অপারেশন লাগবে। চামড়ার অবস্থা ভালোনা। তাই ইমিডিয়েট অপারেশন করা যাচ্ছেনা। আবার সরকারী হাসপাতালে অপারেশনের সিরিয়াল আসতেও ১/২ সপ্তাহ সময় লেগে যায়, যেহেতু রোগীর চাপ বেশি। তাই সল্প মূল্যে চিকন রড (K Wire) দিয়েই ২ জনের অপারেশন করে দিয়েছি চামড়ার উপর দিয়েই। ২ টা অপারেশনই জটিল ছিলো, হাড় ভেঙে জয়েন্টের ভেতর ঢুকে ছিলো। হাড় সোজা করে জায়গা মত বসাতেই অনেক সময় লেগে গিয়েছে। অপারেশনের পর এক্সরে করে আলহামদুলিল্লাহ ভালো এসেছে।।হয়তো তাদের আর সেকেন্ড অপারেশন নাও লাগতে পারে। যেখানে এই অপারেশন বাইরে করতে গেলে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হতো, সেখানে ১ হাজারেরও নিচে আমরা অপারেশন করে দিয়েছি। এখন বাকিটা মহান আল্লাহু তা'আলার ইচ্ছা। আশা করি দ্রুতই তারা সুস্থ হয়ে উঠবেন।
আমরা অর্থপেডিক্স সার্জনরা বলে থাকি হাড়ের থেকে চামড়ার গুরুত্ব বেশি। কারণ হাড়ের উপর মাংস বা চামড়ার কাভারিং না থাকলে হাড় বাচবেনা। তাই হাড়ের অপারেশনের থেকে চামড়া বেশি গুরুত্ব দিয়ে হ্যান্ডেল করতে হয়। এই রোগীর পায়ের হাড় ভেঙে হাড় বের হয়ে গিয়েছিলো। তাই হাড়ের অপারেশনের আগে চামড়া ঠিক করতে হবে৷ আর সেজন্যই বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে এই এক্সটার্নাল ফিক্সেটর। এটা দিয়ে হাড় টেম্পোরারি ফিক্স করে দেয়া হয় যাতে সফটটিস্যু এবং চামড়া প্রোপার হিলিং হয় বা চামড়ার যথাযথ চিকিৎসা করা যায় এবং ড্রেসিং করতেও সুবিধা হয়। যেহেতু হাড় ফিক্সড থাকে, রোগীও কিছুটা কম্ফোর্টেবল ফিল করে, যেহেতু ভাঙা হাড় আর নড়াচড়া করতে পারেনা। এই রোগীর আমরা এক্সটার্নাল ফিক্সেটর দিয়েছি। এখন উপরেএ চামড়া ঠিক হয়ে গেলে তারপর এক্সটার্নাল ফিক্সেটর খুলে দিয়ে হাড়ের ডেফিনিটিভ চিকিৎসায় যাবো আমরা। সেক্ষেত্রে ভেতরে রড দেয়া যাবে। আবার পাকা প্লাস্টারও করে দেয়া যাবে। তাই কোন ভাঙায় হাড় উন্মুক্ত হয়ে গেলে এক্সটার্নাল ফিক্সেটর দিয়ে আধুনিক চিকিৎসার জন্য ভালো অর্থপেডিক্স সার্জনের সরনাপন্ন হন যতদ্রুত সম্ভব।
রোগী এক্সিডেন্ট করে আসছে এই অবস্থায়। পায়ের ৩ টা হাড় ভেঙে গিয়েছে। ৩ টা আঙুলের রগ (টেন্ডন) কাটা পড়েছে। রক্তনালী কাটা পড়েছে ছোট কিছু। এগুলো অপারেশন করা সেনসিটিভ কাজ। কারন হাত/ পায়ের যেকোন অপারেশনই সূক্ষ অপারেশন। ঠিকঠাক করতে না পারলে রোগীকে সারাজীবন হাত/পায়ের সমস্যা নিয়ে চলতে হবে। কাজ করে খেতে হবে রোগীর, বিধায় এগুলোর কাজ সময় নিয়ে করার চেষ্টা করি। পায়ের হাড় হাতের হাড়ের মত চামড়ার নিচেই থাকেনা, ভালো গভীরে থাকে। ফলে এগুলো ফিক্স করাও কষ্টকর। কষ্টকর হলেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে রোগীর উপকারের কথা চিন্তা করে ধীরে ধীরে করার চেষ্টা করি। ৩ টা হাড় ভাঙা, এই অবস্থায় হাড় ফিক্স না করলে রোগীর পা আন্সটেবল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি৷ আবার পায়ের হাড় জোড়া লাগতেও সময় লাগে অনেক৷ বাইরের দেশে হলে হয়তো প্লেট বসিয়ে দিতো, কিন্তু আমাদের মত দেশে যেখানে রোগীর আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করতে হয় আগে, সেখানে আমাদের এই চিকন রড (K Wire) ই ভরসা। এই সুক্ষ্ণ কাজ করার মত যন্ত্রপাতির ও অভাব৷ তবুও চালিয়ে নিতে হয় আমাদের। ৩ টা হাড় K Wire দিয়ে ফিক্স করে তারপর ৩ টা রগ জোড়া লাগিয়ে দিয়েছি। রোগী তাতক্ষণিক ভাবেই আঙুল নাড়াতে পেড়েছে। প্রায় ১ ঘন্টার উপরে লেগেছিলো পুরো অপারেশন শেষ করতে। যদিও পায়ের চামড়ার অবস্থা ভালো নয়। রোগীর লোকদের জানিয়ে দেয়া হয় যে, উপরের চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে আরেকটা অপারেশনের মাধ্যমে চামড়া লাগানো লাগতে পারে। এই বড় অপারেশন প্রাইভেটভাবে বাইরে করতে গেলে ৪০/৫০ হাজার টাকার নিচে হয়তো করতে পারতোনা৷ কিন্তু আমরা কোন খরচ ছাড়াই করে দিয়েছি। তাই হয়তো রোগী তার পায়ের অবস্থার গুরুত্ব বুঝতেই পারেনি, যেহেতু কোন খরচ হয়নি৷ পরদিনই রোগী কাউকে কিছু না বলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমরা বাঙালিরা জাতিগতভাবেই অকৃতজ্ঞ। এর সময় নিয়ে, এত কষ্ট করে অপারেশন করে দিলাম, কিন্তু রোগীর অবস্থা বোঝার আগেই রোগী চলে যায়। তাই মাঝে মাঝে মানুষের উপকার করতে ইচ্ছা করেনা। মনে হয় একটু ঘুরে ফিরে দেখুন কেমন কঠিন পৃথিবী। তবে যাই হোক, আশা করি সে তার পায়ের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি ফিরে পাবে দ্রুতই।
ডাল কাটতে যেয়ে দায়ের কোপ পড়েছে হাতে। ডান হাতের একদম মাঝ পর্যন্ত চলে গিয়েছে এক কোপে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। একটা হাড়ের গোড়া ভেঙে গিয়েছে৷ এই অবস্থায় কোনরকম পেচিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসছে। সাধারণ আমরা হাতে ব্যান্ড দিয়ে বেধে অপারেশন করি যাতে রক্তক্ষরণ কম হয়৷ কিন্তু ব্যান্ড লাগানোর কিছুক্ষণ পরেই রোগীর চিৎকার সে আর রাখতে পারছেনা। কাটার থেকে এখন ব্যান্ডের ব্যাথাই বেশি। বাধ্য হয়ে সেটা খুলেই অপারেশন করা লাগলো। ফলস্রুতিতে অপারেশনের সময়ও ভালো রক্তক্ষরণ হলো। কিন্তু ফাইনালি ভালোভাবেই অপারেশন শেষ করা গেলো। রোগীরও ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। বেশ কয়েকটা ছোট ছোট রক্তনালী কাটা পড়লেও কোন রগ (টেন্ডন) কাটা পড়েনি। কাটা রক্তনালী থেকে আমরা রক্তপাত বন্ধ করে তারপর সেলাই দিয়েছি। রোগী এখনি হাত মুঠি করতে পারছে খুলতে পারছে ঠিকঠাক। আশা করি খুব দ্রুতই পুরোপুরি সেড়ে উঠবে সে।
Videos (show all)
Telephone
Website
Address
Mirpur/1
Dhaka