Frame Bangladesh

Bangladesh is a Country of Archeological, Cultural, Historical and Natural diversity. A Hidden Gems.

Photos from Frame Bangladesh's post 31/08/2023

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন!!!

গত বছর (2022) সেপ্টেম্বরের ছয় তারিখে স্কুল বন্ধু জিয়া ও কলিগ ফরহাদ এর সাথে রওনা হই সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে। আমরা কল‍্যানপুর বাসষ্ট‍্যান্ড হতে বিআরটিসি এসি বাস যোগে রাত দশটায় রওনা দিই। সকাল সাতটার দিকে পৌঁছে যাই সুনামগঞ্জ বাসষ্ট‍্যান্ড। এখানে নামকরা পানসী রেস্তোরাঁয় নাস্তা করে রিক্সা যোগে পৌঁছে যাই হাছনরাজা মিউজিয়াম সংলগ্ন সাহেব বাড়ী ঘাটে।
আমরা আগে থেকেই নোঙ্গর নামের একটি প্রিমিয়াম বোটে আমাদের তিনজনের জন‍্য জনপ্রতি সাড়ে চার হাজার টাকায় প‍্যাকেজ বুক করেছিলাম। ঘাটে গিয়ে দেখি প্রিমিয়াম ও সাধারণ মিলে প্রায় বিশটির মত বোট বাঁধা। বোটে যেতেই এই বোটের হোস্ট তথা ওনার (পরে শুনেছিলাম এই বোটের তিন জন মালিক আর দুইজন আমাদের সাথে হোস্ট হিসেবে ছিলেন) আমাদেরকে অভ‍‍্যর্থনা জানান। এরপর আমাদেরকে রুম বুঝিয়ে দেন। এই বোটে ঢুকতে প্রথমেই একটুকরো জায়গা যেখান থেকে ছাদে উঠার সিঁড়ি ও একপাশে একটি জেনারেটর। এরপর সুন্দর করে সাজানো একটি ছোট্ট লবি। এরপর দুপাশে দুটি আনলকড কেবিন। তবে পর্দা দিয়ে প্রাইভেসি মেইনটেইন করা। প্রতিটি কেবিনে তিনজন শোয়ার ব‍্যবস্থা। এরপর তিনটি তিনটি করে মোট ছয়টি ডোরসহ কেবিন। তারপর দুটি টয়লেট। একটি হাইকোমড অন‍্যটি লো কমোড। এরপর স্টাফরুম ও রান্নাঘর। রুমে লাগেজ রেখেই আমরা ঘাটের দোকান থেকে কিছু শুকনো খাবার কিনি। ইতিমধ্যে বোটের অন‍্য গেস্টরা চেকইন করে।
প্রায় নয়টার দিকে সুরমা নদী হয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। একটু পরেই সামনের লবি অংশে সকালের নাস্তা সরবরাহ করা হয়। মেনু হিসেবে খিচুড়ি, ডিম ও মুরগির মাংস দেওয়া হয়। আমরা কখনওবা রুমের জানালা অথবা সামনের লবি অথবা ছাদে উঠে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে একসময় বিশাল হাওরে প্রবেশ করি। দূরে মেঘালয়ের পাহাড়গুলো দেখা যায়। তখন চারদিকে শুধুই পানি আর পানি। সে এক অপার সৌন্দর্য।
প্রায় দেড়টার দিকে নৌকা নোঙ্গর করে একটি জলাবনের কাছে। গাছগুলোর কান্ডের বেশ অংশ পানির নীচে আর ডালপালা উপরে যা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছিল। নৌকা ভিড়তে অনেকগুলো ছোট নৌকা ভিড় করল ভাড়া দেওয়ার জন‍‍্য; যার অধিকাংশ চালকই ছোট ছোট বাচ্চারা। আমরা রবারের একটি নৌকা দুইশত টাকায় ঠিক করে উঠে পড়ি। এগুলো চালানো যত সহজ মনে করেছিলাম বস্তুত ততটাই কঠিন। ছোট্ট ছেলেটি জলাবনের মধ‍্যে বেশ কিছুক্ষণ চালিয়ে নেয়। এরপর একজায়গায় আমরা নেমে পরি আবগাহনে। পানি বেশ পরিস্কারই ছিল। এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। আমরা সেই ওয়াচ টাওয়ারে উঠে চারদিকটা পরখ করে নেমে আসি। এইস্থানে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে ড্রাইফুড ও চা বিক্রি করে। আমরা পানিতে দাঁড়িয়ে চা এর স্বাদ নিই। এরপর নৌকায় ফিরে ফ্রেস হই। নৌকা এবার যাত্রা শুরু করে টেকেরহাটের উদ্দেশ্যে। নৌকায় বসে উঁচু উঁচু পাহাড়গুলো আরও স্পষ্ট হতে থাকে। সে এক মায়াজালে ভরা সৌন্দর্য। এবার ডাক পরে দুপরের খাবারের। মেনুতে ছিল হাওরের বোয়াল মাছ, ছোট মাছের ভাজি, মুরগির মাংস, ডাল ও সবজী। খাবার শেষ করে রুমে বসে জানালা খুলে হাওরের পানির মাঝ দিয়ে নৌকার বয়ে চলা উপভোগ করতে থাকি। সামনে উঁচু পাহাড় আর নীচে বিস্তৃত জলরাশি সে এক অন্য রকম অনুভূতি।
নৌকা প্রায় সাড়ে চারটার দিকে নিলাদ্রী লেক সংলগ্ন টেকেরহাট ঘাটে ভেড়ে। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে নেমে পড়ি নৌকা থেকে। অন‍্যান‍্য ট‍্যুর অপারটরের নৌকাগুলো এক এক করে এখানে নোঙ্গর করতে শুরু করে। ঘাটের খুব কাছেই একটি হাসপাতাল আছে যার কার্যক্রম তখন ছিল না। এরপর রেলের কিছু পরিতক্ত লাইন ও পাশাপাশি অবস্থিত দুটি বিশাল ক্রেন আছে যা মাইনিং এর কাজে ব‍্যবহৃত হইত। এরপর এখানকার বিখ্যাত নিলাদ্রী লেক যা চুনাপাথর মাইনিং এর ফলে তৈরি । লেকটি বেশ গভীর বলেই মনে হলো। লেকটি পাহাড়ের গোড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে দুটি ঘাট দেখলাম কায়াকিং ও ছোট বোট রাইডিংয়ের এর জন‍্য। ঘাট এবং লেকের মাঝের অংশটি খুবই সুন্দর যেন শিল্পীর আঁকা কোন সবুজ প্রান্তর ও টিলা। এর একটু দূরেই টেকেরহাট বাজার ও স্থানীয় জনবসতি। আমরা লেকের পাশে বসে বসে অনেকখানি সময় অতিবাহিত করি। সন্ধ‍্যার বেশ খানিকক্ষণ পরে নৌকায় ফিরে নাস্তা সেরে নিই। নাস্তায় ছিল ছোলা-চানাচুর দিয়ে মুড়ি মাখা ও চা। আবার নৌকা থেকে নেমে আশপাশে ঘুরে বেড়াই। ইতমধ‍্যে সব বোটগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়ে উঠে। কয়েকটি বোটে দেখলাম গেস্টরা স্ব-উদ্দোগ‍্যে গানের আসর বসিয়েছিল। রাতের খাবারের পর নৌকা ঘাট থেকে একটু সরিয়ে পানির মধ‍্যে নোঙ্গর করে রাখে নিরাপত্তাজনিত কারনে। রাতের চাঁদের আলোতে পুরা এলাকাটি খুবই মোহনীয় হয়ে উঠে। আমরা সহ বোটের সকলে ছাদে উঠে গল্পগুজব করে অনেক রাত অবধি কেটে দিই।
সকালে বোট আবার ঘাটে ফেরত আনে। আমরা হালকা নাস্তা করে নীচে নেমে পড়ি। ঘাটের পাশেই বেশ কিছু স্থানীয় ছেলে মোটর সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রাইডের জন‍্য। একজনের সাথে কথা বলে আসা-যাওয়া একশত টাকা ঠিক করি যদিওবা আসার পর ছেলেটি কথা উল্টিয়ে ফেলে আমাদের কাছ থেকে ডবল টাকা নেয়!!! যাই হোক আমি ও বন্ধু জিয়া লাকমাছড়া পৌছে দেখি আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। এমন শান্ত পরিবেশ। তবে ছড়ার পানি প্রবাহের শব্দ ছিল অন‍্যরকম। খুব কাছে কোন বড় ঝরনা দেখি নাই কিন্তু পানি প্রবাহের শব্দ ছিল বেশ। মনে হচ্ছিল যেন এক শব্দঝংকারের সংগীত। এখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমরা বোটে ফিরে আসি।
এবার বোট নোঙ্গর তোলে যাদুকাটা নদী ও বারিক্কাটিলার উদ্দেশ্যে। চলতি পথেই পরিবেশন করা হয় সকালের নাস্তা। এমন পরিবেশে ছাদে বসে নাস্তা করতে খুবই ভাল লাগছিল। আমাদের বোট যাদুকাটা নদী হয়ে বারিক্কাটিলার দিকে যেতে থাকে। এপথে ভীষন কর্মব্যস্ততা ও প্রচুর বালু ও পাথর বোঝাই নৌকা দেখা যায়। এরপর নৌকা যাদুকাটা নদীর বাংলাদেশের শেষ অংশের কাছাকাছি একজায়গায় নোঙ্গর করে। এখান থেকে আনেকটা খাড়া পথ বেয়ে আমরা বারিক্কাটিলার চূড়ায় উঠি। ওঠার রাস্তাটি কংক্রিটের তৈরী। বারিক্কাটিলার চূড়াটি বেশ প্রসস্ত ও পুরা সবুজ ঘাসে ঢাকা। এর বিস্তৃর্ণ অংশের কিছু অংশ ভারতের মধ‍্যে পরেছে। টিলার চূড়াতে যাদুকাটা নদীর বাংলাদেশের অংশে শতশত নৌকা আর হাজারও মানুষ বালি, পাথর অথবা কয়লা সংগ্রহে ব‍্যস্ত। উপর থেকে দেখতে সে এক অন‍্যরকম লাগছিল। ভারতের অংশে বড় বড় পাহাড় আর দূরে সাদা ঝরনাও দেখা যাচ্ছিল। এখানে ঘোরা শেষ হলে নৌকা আবার আমাদেরকে শিমুল বাগানের কাছে নিয়ে যায়। বিশাল এলাকা নিয়ে অবস্থিত শিমুল বাগান ব‍্যক্তিগত প্রপার্টি। এখানে ঢুকতে তিরিশ টাকা টিকেট নিতে হয়েছে। এখানে বেশ কিছু ঘোড়া আছে যাতে উঠে ছবি তোলা যায় বা বাগানের ভিতরে ঘোরা যায়। এসময় পুরো বাগানটি ছিল সবুজে পরিপূর্ণ। শিমুল বাগানের পাশ্বে রয়েছে বাঁশ বাগান। এখান থেকে ফেরার পর নৌকা আমাদেরকে গোসলের জন‍্য একটা সুবিধাজনক স্থানে নেমে দেয়। সবাই লাইফ জ‍্যাকেট নিয়ে নেমে পড়ে। অনেক দিন পরে এমন এক পরিবেশ গোসল করতে খুবই ভালো লাগছিল। বোটের সবাই এই নদীতে ভেজা ও সাঁতার কাটা খুবই উপভোগ করেছিল। এরপর নৌকা এবার সুনামগঞ্জের দিকে ফিরতে শুরু করে। সবাই একসাথে বসে ছাদে দুপুরের খাবার খাই ও যে যার যার মত রুমে গিয়ে রেস্ট নেই। সন্ধ‍্যায় নৌকা আবার সাহেব বাড়ী ঘাটে ভেড়ে। আমরা বাসষ্ট‍্যান্ড থেকে ফিরতি বাসের টিকেট কেটে নৌকায় রেস্ট নিই। রাত দশটার দিকে নৌকা ত‍্যাগ করি এবং বিআরটিসি বাস যোগে ঢাকা ফিরি।



Masud Haider Jiaur Rahman Farhad Uddin

Photos from Frame Bangladesh's post 29/08/2023

বান্দরবন ট‍্যুর : প্রকৃতি, পাহাড়, মেঘের সন্ধানে!!

গত বছর 30 জুলাই 2022 যাত্রা শুরু করি কলাবাগান বাসষ্ট‍্যান্ড থেকে রাত্রী 11:15 মিনিটে। আমি, আমার ওয়াইফ আর দুই মেয়ে (ছয় এবং দুই বছর বয়স)। আমরা শ‍্যামলী এন আর বিজনেস ক্লাসএ কলাবাগান থেকে যাত্রা করি। ভাড়া নিয়েছিল 1500 টাকা করে। আমরা তিনটা সিট নিয়েছিলাম। রাত 2:30 এ কুমিল্লার জমজম নামক হোটেলে যাত্রা বিরতি দেয়। সকাল 7 টার দিকে বান্দরবন এর কয়েক কিলোমিটার আগে একটি যৌথবাহিনীর চেকপোস্টএ সবার NID চেক করে। সকাল 7:30 এর দিকে আমাদেরকে হোটেল হলিডেইন এর সামনে নামিয়ে দেয়। আমরা আগেই বাসের সুপারভাইজারকে বলে রেখেছিলাম কারন আমরা যে রিসর্টএ থাকব, তাদেরই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হলো হলিডে ইন। রিসর্ট কতৃপক্ষ এখান থেকেই পিকআপ সুবিধা প্রদান করেছেন। আমরা হলিডে রিসর্টএর রেষ্টুরেন্টে গিয়ে ফ্রেস হই। এদের রেষ্টুরেন্ট 8:30 থেকে অর্ডার নেয় তাই আমরা বসে বসে রেস্ট নিই। এই রেষ্টুরেন্টে নাস্তা শেষে আমরা হলিডে ইন রিসর্টের বিপরীতে অবস্থিত মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরতে যাই। এখানে এন্ট্রী ফি 50 টাকা প্রতিজন। বাচ্চাদের কোন এন্ট্রি ফি লাগে নাই। পর্যটন কেন্দ্রটি বেশ সাজানোগোছানো এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এখানে দুটি ঝুলন্ত ব্রীজ, একটি গন্ডোলা (50 টাকা পে করতে হবে), কয়েকটি পশুর খাঁচা আছে। আর বসার বেশ কিছু সুন্দর ব‍্যবস্থা। আমারা মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র ঘুরাঘুরি শেষে Eco Sence রিসর্টএ ওদের গাড়িতে যাত্রা করি।
Eco Sence রিসর্টটি নীলাচল রোডে। এ রোডে ঢুকতেই একটি পার্বত‍্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের চেকপোস্টএ 100 টাকা টোল দিতে হইল। কিছুক্ষণ পাহাড়ি উচু-নীচু পথবেয়ে আমরা পৌঁছে যাই Eco Sence রিসর্টে। রিসর্টটি তখনও under construction ষ্টেজে ছিল। রিসিপসনটি রাস্তা থেকে বেশ নীচুতে। মেইন রাস্তা থেকে রিসিপসান পর্যন্ত রাস্তাটি খুবই ঢালু তাই একটু ভয়ও লাগছিল। রিসিপসন কাম রেষ্টুরেন্টের বেলকুনিটি অসাধারন। বেলকুনিতে দাড়িয়ে চারিদকের সবুজ পাহাড় এবং দূরের বান্দরবন শহর দেখতে অন‍্যরকম এক অনূভুতি টের পাচ্ছিলাম। দূরের ঊচু উচু পাহাড়ের গায়ে মেঘের আলিঙ্গন কিংবা দূরে বৃষ্টির ধারা এক অপার্থিব সৌন্দর্যের স্বাদ অবলোকনের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। আমরা বেশকিছুক্ষন বেলকনিতে বসে এর পরে আমাদের রুমে যাই। রুমগুলো পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বানানো। একটি থেকে অন‍্যটির যথেষ্ট দুরত্ব মেইনটেইন করা হয়েছে। যারা প্রিয়জনের সাথে একান্তে সময় কাটাতে চান তাদের জন‍্য এক অন‍্যন‍্য স্থান। রুমগুলো প্রধানত বাঁশের এবং কাঠের তৈরী। ফ্লোরে শীতল পাটি ব‍্যবহার করা। বাথরুমটিও মোটামুটি বড় ও পরিস্কার এবং প্রয়োজনীয় এমিনিটিস ছিল। রুমের বেলকনিটি ছিল সবচাইতে অসাধারণ। বেলকনিটি ছিল খুবই সুন্দর ও প্রাইভেসি সম্পন্ন। একান্ত সময় কাটানোর মত এত প্রাইভেসি ও প্রাকৃতিক বেলকনি আমরা আগে কখনও পাই নাই। রিসর্টটি সম্পূর্ন ইকো পরিবেশ বজায় রাখতে পোকামাকড় নিরোধক কোন কেমিক্যাল ব‍্যবহার করে নাই। ফলে চারদিক থেকে শুধুই বিভিন্ন প্রাকৃতিক শব্দের আধিক্য। একসময় তো একটি বিশাল তক্ষক কে সাপ ভেবে ভয়ই পেয়ে গেছিলাম। এখানে দুপুর বা রাতের খাবারের জন‍্য আগেই অর্ডার করতে হয়। আমরা চেকইনের সময়ই দুপুরের খাবার অর্ডার করেছিলাম। খাবারের দাম একটু বেশি হইলেও মান এবং স্বাদ অনেক ভালো ছিল।
বিকালের দিকে আমরা নিলাচলে যাই সূর্যাস্ত উপভোগ করতে। নিলাচলে এন্ট্রি ফি পঞ্চাশ টাকা জনপ্রতি। জায়গাটি বেশ বিস্তৃত ও অনেক সুন্দর। সূন্দর্য উপভোগের জন‍্য এখানে বেশ কয়েকটি ভিউ পয়েন্ট আছে। এখানে কিছু ভাসমান দোকান আছে। আমরা একটি দোকান থেকে পাহাড়ী আনারস ও পেঁপের স্বাদ নেই এরপর রিসর্টে ফিরে আসি। রাতে রিসর্টে এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হয়। খুবই নিরব পরিবেশে শুধুই ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। দূরে বান্দরবন শহরের আলোকিত রুপ। আমরা নিস্তব্ধতার মাঝে রেস্টুরেন্টের বারান্দায় বসে পাহাড়ের নির্মল বাতাস ও নিস্তব্ধতা উপভোগ করি। এরপর রাতের খাবার খেয়ে লোহার সিড়ি বেয়ে নেমে আসি ঘরে। বাচ্চারা বসে পড়ে টিভি নিয়ে আর আমরা বেলকুনির বেঞ্চিতে বসে স্মৃতি রোমন্থনে।
পরদিন সকাল আটটায় যাই রেস্টুরেন্টে কম্পিমেন্টরি নাস্তা করতে। নাস্তার মেনু ও পরিবেশনা ছিল চমকপ্রদ। মেনুতে ছিল পরাটা, ডিম, লাচ্ছা, গরুর নলী, ডাল, সবজী, ফলের জুস ও কয়েক পদের মৌসুমী ফল। এরপর আমরা রুমে ফিরে এসে পরের গন্তব্যস্থল যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহন করি।

রিসর্ট থেকেই একটি চাঁদের গাড়ী ঠিক করে দিয়েছিল চারহাজার টাকায়। আমরা গাড়ীতে রওনা হই সাইরু হিল রিসর্ট এর উদ্দেশ্যে। বান্দরবন শহর হয়ে পাহারের আকাবাঁকা-উচুনিচু পথধরে আমাদের গাড়ী ছুটে চলে রিসর্ট পাণে। কিছুক্ষন পর গাড়ী দাড়ায় একটি পুলিশ চেকপোস্টে গাড়ি এন্ট্রির জন‍্য। আবার শুরু হয় যাত্রা; আহঃ সে-কি সৌন্দর্য পথে, পুরাই মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম আমরা। প্রায় দুইঘন্টা পর পৌছাই ওয়াইজংশন আর্মি চেকপোস্টে। এখানে আমাদের NID চেক করে যাওয়ার অনুমোদন দেয়। এখানে একটি রোড থানচির দিকে এবং অন‍্যটি নীলগিরির দিকে গেছে। ওয়াইজংশন হতে নীলগিরি রোডে অল্পপরেই সাইরু হিল রিসর্টে পৌছে যাই। রিসর্টের গেটটিতেই নান্দনিকতার ছোঁয়া। গেট থেকে কয়েকটি সিড়ি বেয়ে উপরেই উঠতেই চোখে পড়ল সবুজ ও আর্কিটেকচারাল নান্দনিকতায় পূর্ন একটি খোলা জায়গা। এরপর রিসিপশান ও রেস্তোরা। রিসিপশানটি অনেক বড় ও নান্দনিক। রিসিপশনের পাশেই রেস্তেরাঁ। রেস্তোরাঁর বাইরেও বসার জায়গা আছে যা সবচাইতে আকর্ষণীয় ও অনবদ‍্য। পূরা রেস্তেরাঁ ও এরপাশ মাঝেমধ্যেই মেঘের মধ্যে ঢেকে যায়। সে এক অতুলনীয় পরিবেশ!
আমরা চেকইন করে আমাদের রুমে চলে যাই। আমরা প্রিমিয়াম কাপল রুম বুক করেছিলাম। ভাড়া নিয়েছিল আঠারো হাজার টাকা।রুমগুলোতে যাওয়ার দুটি পথ। একটি কাঠের সিড়ি পথ অন‍্যটি কংক্রিটের ঢালু পথ। আমরা কাঠের সিড়ি বেয়ে উঠে যাই। রুমগুলো বেশ উপরে। রিসর্ট এর বেলবয় বাগীকারে করে রুমে লাগেজ পৌছে দেয়। রুমগুলো বেশ বড়, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও রুচিশীল আসবাব ও পেইন্ট দিয়ে সাজানো। একটু পরেই শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। আমরা রুমের বেলকুনি ও সামনের ঘাসঢাকা লনে ছাতা নিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করি। মেঘের মধ‍্যেই বৃষ্টি সে এক অনন্য উপভোগ।
দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিই এরপর চলে যাই এই রিসর্টের মূল আকর্ষন সুইমিংপুলে। রিসর্টের সবচেয়ে উঁচু জায়গাই তথা পাহাড়ের চূড়াতে পুলটির অবস্থান। মাঝারি সাইজের পুলটি বেশ ভালভাবেই মেইনটেইন করা হয়। সে সময় পুলটিতে বেশ লোকজন ছিল। পুলের একপাশে একটি বিল্ডিং আছে। নীচতলায় চেইনজিং রুম। উপরতলায় একটি রেস্টুরেন্ট; কনফারেন্স রুম ও ইনডোর গেমের ব‍্যবস্থা। আমরা একটু টেবিল টেনিস খেলে এরপর সুইমিংপুলে নামি। পুলের একপাশে জাকুজির ব‍্যবস্থা আছে। পুল থেকে চারদিকে যে ভিউ পাওয়া যায় তা এককথায় অনন‍্য। এই সুইমিংপুলের সৌন্দর্যের সাথে একমাত্র কক্সবাজারের সায়মনেরই তুলনা করা যায়। কিন্তু পাহাড়ের চূড়া থেকে এমন সৌন্দর্য উপভোগের সূযোগ আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার জানা নেই। এরপর আমরা রিসর্টএর কিছু অংশ ঘুরে দেখি। সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্টের খোলা অংশে বসে নাস্তা করি। এখানে বাচ্চাদের কিছু খেলনা ছিল। বাচ্চারা খেলায় মেতে ওঠে আর আমরা বসে বসে মেঘের আনাগোনা উপভোগ করি। রাতের খাবার খেয়ে আমরা রুমে ব‍্যাক করি।

পরদিন খুব সকালবেলায় প্রায় সকাল ছয়টায় আমরা রওনা হই নীলগিরির উদেশ‍্যে। আগের দিন যে গাড়ি আমাদেরকে রিসর্টে দিয়ে গেছিলেন উনাকেই আমরা বুক করে রেখেছিলাম। খুব সকাল হওয়ায় বলতে গেলে রাস্তা ছিল একদম ফাঁকা। মাঝে মাঝে কিছু পাহাড়ী মানুষকে কাজে যেতে দেখলাম। পাহাড়ের গা ঘেসে রাস্তাটি এমন ভাবে তৈরি যার একপাশে উচু পাহাড় অন‍্য পাশে খাড়া নীচু। আর অন‍্যপাশটি ছিল সাদা মেঘের ভেলায় পরিপূর্ণ। সে এক স্বর্গীয় দৃশ‍্য। খুব সকালে বের না হলে এমন দৃশ্য দেখা দূস্কর কারন সূর্য উঠার দরূন এই মেঘের ভেলাগুলো আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠে যায়। তখন শুধু নীচের সবুজ পাহাড়ের চূড়াগুলো দেখা যায় যা আমরা ফিরার সময় বুঝতে পারি। চলতে চলতে একসময় আমরা চুংদার ক‍্যাফে নামক এক রেস্টুরেন্টের সামনে থামি। তখনও রেস্টুরেন্টটি খোলা হয় নাই। রেস্টুরেন্টটি রাস্তার পাশে খাড়া গিরিখাতের উপর তৈরী। এক ভয়ংকর সৌন্দর্য উপভোগের স্থান। এরপর আমরা আর কোথাও না দাঁড়িয়ে সরাসরি চলে যাই নীলগিরিতে। তখনও বাইরের কোন পর্যটক আসে নাই। আমরা টিকেট কেটে প্রবেশ করি।

এখানে বেশ কিছু ভিউ পয়েন্ট আছে। একপাশে আর্মিদের ক‍্যাম্প, মাঝে একটি রিসর্ট ও অন‍্যপাশে হেলিপ‍্যাড। জায়গাটি খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সাজানো গোছানো। এই পাহাড়ের চূড়া থেকে আমরা দুইপাশে দুই ধরনের প্রকৃতি প্রত‍্যক্ষ করি। বঙ্গোপসাগরের দিকের অংশে কোন মেঘ ছিল না শুধুই সবুজ পাহাড়ের চূড়া। অন‍্যপাশে তথা মায়ানমারের দিকে সাদা শুভ্র মেঘের সাগর। আমরা পূরো জায়গাটি ঘুরে ও বিভিন্ন পয়েন্টে একটু করে বসে জায়গাটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকি। এখানে আর্মি পরিচালিত একটি রেস্টুরেন্ট ও দুইটি সুভেন‍্যিয়রের দোকান আছে। রিসর্ট এর অভ‍্যন্তরেও একটি রেস্টুরেন্ট আছে যা শুধুমাত্র রিসর্টএর গেস্টদের জন‍্য সংরক্ষিত। আর রিসর্ট-এর আশপাশে কিছু এলাকা সংরক্ষিত যেখানে বাইরের পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ। এই রিসর্ট এ থাকতে হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোন অফিসারের রেফারেন্স লাগে।
যাই হোক আমরা কিছু সময় সেখানে উপভোগ করে আবার রওনা হই। আসার পথে আমরা ডবল হান্ড পয়েন্ট কিছু সময়ের জন‍্য নামি। এখানে হাতেরমত করে দুটি ভিউ পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে। নীচে ততক্ষণ মেঘের পরিমাণ অনেক কমে এসেছিল। হালকা মেঘ ও সবুজ পাহাড় দেখতে খুবই অনন‍্য লেগেছিল। এরপর আমরা চিম্বুক ভিউ পয়েন্ট হয়ে রিসর্টে চলে আসি।
রিসর্টে আমরা কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট করি। রিসর্টটির নিরিবিলি পরিবেশ আমাদের খুব মুগ্ধ করে। তাই রিসিপশনে কথা বলে আমরা আরও একদিন থাকা এক্সটেনশান করি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের রুমের ক‍্যাটাগরি চেঞ্জ করে ডিলাক্স রুমে যেতে হয়। আর এই রুমের ভাড়া ছিল ষোল হাজার টাকা। রুম চেঞ্জ করে আমরা আবার চলে যাই সুইমিং পুলে দাপাদাপি করতে। এরপর লাঞ্চ করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিই। বিকেলে আমরা পূরা রিসর্টটি ঘুরে দেখি। সামনের লন থেকে বেশ নীচুতে এদের চারটি বড় কটেজ আছে গ্রুপ ট্রাভেলারদের জন‍্য। এখানে যেতে বেশ কিছু সিড়ি পাড়ি দিতে হয়। আর জায়গাটাও বেশ নির্জন ও একটু ভূতুড়ে ভূতুড়ে ভাব আছে। আর সাঙ্গু ভিউ কটেজের থেকে একটু উপরের দিকে একটি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন পাহাড় চূড়া আছে যেখানে সুন্দর বসার ব‍্যবস্থা আছে। এখানে যেতে একটি ছোট্ট হাংগিং ব্রীজ পার হতে হয়। প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানোর এক বিচিত্র জায়গা। এই রিসর্টের সবচেয়ে মজার ব‍্যপার হলো ক্ষনেক্ষনে এর পরিবেশের বৈচিত্র্যতা। এই মেঘের আচ্ছাদনে পুরো রিসর্ট তো একটু পরেই পূরা ফকফকে পরিবেশ। অথবা একটু পরই একপশলা বৃষ্টি। একজায়গায় বসে প্রকৃতির এই খেলা উপভোগের মনে হয় আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। পূরোটাই মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম এখানে। সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা সেরে রিসর্টের রাত্রীকালিন পরিবেশ উপভোগ করি। কি এক শান্ত ও মায়াবী পরিবেশ। রাতের ডিনার শেষ করে রুমে ফিরি। এই রিসর্টের খাবারের দাম বেশ চড়া। প্রতি বেলা আমাদের মিনিমাম দেড় হাজার থেকে সর্বচ্চ তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

পরদিন সকালের নাস্তা সেরে রওনা হই বান্দরবন শহরের উদ্দেশ্যে। আসার সময় অধিকাংশ সময় রাস্তা ছিল মেঘে ঢাকা তাই কোন কিছুই ঠিকমত দেখাযাচ্ছিল না। একটু ভয়ও কাজ করছিল। এসআর পরিবহনের বাসে করে সাড়ে এগারো টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। আর পিছনে ফেলে আসি স্মৃতিরোমন্থনের এক অনবদ‍্য গল্প।

Photos from Frame Bangladesh's post 15/08/2023

সিলেট ভ্রমন।

ঘুরে আসলাম সুন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট থেকে। গত চৌঠা আগষ্ট ব‍্যক্তিগত গাড়ী নিয়ে যাত্রা শুরু করি বিকাল তিনটায়। দিনটি ছিল বৃষ্টিস্নাত। সুন্দর আবহওয়া উপডোগ করতে করতে আমরা রাত নয়টা নাগাদ সিলেট শহরে পৌঁছে যাই।

কয়েকটি হোটেল এ দরদাম করে অবশেষে আমরা লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে হোটেল লা ভিসতা তে চেকইন করি। হোটেলটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং প্রতিটি ফ্লোরে পাঁচটি করে রুম রয়েছে। আমাদের জন‍্য একটি ডবলবেড কাপল রুম এবং ড্রাইভারের জন‍্য একটি সিংগেল বেডরুম ভাড়া করি। সবমিলিয়ে আমাদের ভাড়া পড়েছিল সাড়ে চার হাজার টাকা। হোটেল থেকে এরপর আমরা চলে যাই বিখ‍্যাত পানসি ইন রেস্তোরাঁয়। সেদিন প্রচন্ড লোকের চাপ ছিল কিন্তু হোটেল বয়গুলো খুবই আন্তরিকতার সাথে সার্ভিস প্রদান করে। হোটেলে ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করি কিন্তু এসির কম্প্রেসারের বাজে শব্দে রাতে আমরা ভালো ঘুমাতে পারি নাই।

পরদিন সকালে উঠে হোটেলের কমপ্লিমেন্টারি নাস্তা করে হোটেল থেকে চেকআউট করি এবং যাত্রা শুরু করি রাতারগুলের উদ্দেশ্যে। শহর থেকে রাতারগুল চৌরঙ্গী ঘাটের দুরত্ব পঁচিশ কিলোমিটার এবং যেতে আমাদের প্রায় চল্লিশ মিনিটের মত সময় লাগে। ঘাটটিতে বতর্মানে কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান আছে। একটি যাত্রী ছাউনি ও গাড়ি পার্কিংয়ের স্ট‍্যাকচার তৈরি হচ্ছে। এখানে নৌকা ভাড়া ফিক্সড সাতশত টাকা। জনপ্রতি পঞ্চাশ টাকা এন্ট্রি ফি লাগে। আমরা একটি নৌকা রিজার্ভ নিয়ে সোয়াম ফরেষ্ট এ যাত্রা করি। ঘাট থেকে ফরেস্ট পযর্ন্ত একটি সরু ক‍্যানেল আছে দেড় দুইশ মিটার লম্বা। খুব অল্প সময়ের মধ‍্যে আমরা মূল ফরেস্টে প্রবেশ করি। পানি কম থাকায় ক‍্যানেলের পানি খুবই ঘোলা ছিল। নৌকার মাঝি জানালো পানি বেশি থাকলে পানির কালার সবুজাভ লাগে। ভেতরে পরিবেশটা খুবই ভালো লেগেছে। ভেতরে একটি পরিত‍্যক্ত ওয়াচ টাওয়ার আছে। ভেতরে কিছু সাপ এবং গিরগিটিরও দেখা মিলল। নৌকার মাঝি জানাল মোট তিনটি ঘাট আছে রাতারগুল ভ্রমনের জন‍্য, যে কোন একটি থেকে ভ্রমন করা যায়। একমাএ চৌরঙ্গী ঘাটেই স্থানীয় প্রসাশন নৌকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে।

আমরা কিছুক্ষণ সৌন্দর্য উপভোগ করে আবার ঘাটে ফিরে আসি। এরপর আমরা ভোলাগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। ভোলাগঞ্জের রাস্তাটি পুরাপুরি কংক্রিটের এবং যানবাহনের চাপ যথেষ্ট কম ছিল। তাছাড়া যাত্রাপথে বৃষ্টি আরও উপভোগ‍্য ছিল। আধাঘন্টার মধ‍্যে আমরা ভোলাগঞ্জ পৌঁছে যাই। দুপুরে আমরা সাদাপাথর রিসর্টে খাবার খাই। রিসর্টটি অনেক সুন্দর ছিল। খাবারের দাম বেশি হলেও মান যথেষ্ট ভাল ছিল। এরপর আমরা নৌকার ঘাটের দিকে রওনা হই। শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টি শেষ হতেই ঘাট থেকে একটি নৌকা রিজার্ভ নিয়ে রওনা হই সাদা পাথরের উদ্দেশ‍্যে। নৌকা ভাড়া নির্ধারিত আটশত টাকা। পনের মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাই। নৌকা থেকে নামতেই আবার শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। আধিকাংশ লোকজন তখন দোকানের তাবুর নিচে আশ্রয় নেয়। আমরা বৃষ্টির মধ‍্যেই রেইনকোট পরে সাদাপাথরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও ভারী বর্ষন উপভোগ করতে থাকি। তখনও অনেক মানুষকে দেখলাম সেই হিমেল স্রোতে জলকেলি করতে। আর প্রকৃতি যে রূপ সেখানে পেয়েছি তা তো অনন‍্য। ছোট বাচ্চা সাথে থাকায় আমাদের অনেক সতর্ক থাকতে হয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে সমস্ত স্পটটি আরও পরিস্কার ও প্রানবন্ত হয়ে উঠে। এখানে বেশ কিছু টেম্পোরারী দোকনে হালকা স্ন‍্যাকস, চা কফি, খেলনা, কাপড় পাওয়া যায়। এখানে মোবাইল লকার ও চেইঞ্জিং রুমের ও ব‍্যবস্থা আছে। যাই হোক এখানে কিছুক্ষণ উপভোগ করে আমরা সিলেট শহরে ফিরে আসি।

নতুন করে আম্বরখানা রোডে হোটেল ব্রিটেনিয়া তে চেকইন করি। এখানে আমাদের জন‍্য ডবল বেডের একরুম সাড়ে তিন হাজার এবং ড্রাইভারের এক বেডের রুমের জন‍্য একহাজার টাকা রাখে। ভাড়ার সাথে কম্প্লিমেন্টরি সকালবেলার নাস্তা ছিল।

পরদিন সকালে আমরা জয়িন্তা হিল রিসর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। এই রাস্তাও যথেষ্ট ভালো ছিল। ভালো রাস্তায় কখন যে গাড়ির গতি একশত পার হয়ে গেছিল বুঝতেই পারি নাই। ব‍্যস যা হওয়ার! অতিরিক্ত গতির কারনে পুলিশ কেস দিয়ে দেয়। সাথে সাথে ছাব্বিশ টাকা ইউক‍্যাশ করে কেস উইথড্র করতে হয়। এরপর আমরা লালাখাল পয়েন্টে এসে নদীর অবস্থা আর পানির ঘোলাটে কালার দেখে আর যাই নাই। এরপর চলে আসি জৈন্তীয়া হিল রিসর্টে। বিশাল এক সবুজ চত্তরের মাঝ ছোট দুটি বিল্ডিং সংযুক্ত করে রিসর্টটি তৈরি। চারদিকি বিশাল খোলা সবুজ মাঠ। সীমানা প্রাচীর দেওয়া কিন্তু বেশ নীচু। সবুজ চত্তরে বেশ কিছু গরু ঘাস খাচ্ছিল। রিসর্টের পেছেনের দিকে উঁচু মেঘালয়ের পাহাড়ের সারি। রিসর্টের সামনের পাহাড়েই আছে দুটি বিশাল ঝরনা প্রবাহ। রিসর্টের লোকজনের মতে এর একটি মেঘালয়ের সবচাইতে উঁচু ও বড় ঝরনা। এ ব‍্যপারে আমি নিশ্চিত নয়। এ রিসর্ট থেকে যে সৌন্দর্য দেখা যায় তাতে অনায়াসে সারাটা দিন ঘরে বা বারান্দায় বসে থাকা যায়। আর এখানে মাঝে মাঝেই মেঘে ঢেকে যাচ্ছিল। তবে আমার মনে হলো শুধুমাত্র বর্ষাকালেই এখানে মেঘের এমন স্পর্শ পাওয়া সম্ভব। জায়গাটাতে থেকে একটি কথায় মনে হয়েছে এতসুন্দর লোকেশান ও ভিউ নিয়ে সিলেটে আর দ্বিতীয় কোন রিসর্ট নেই। কিন্তু খুবই হতাশ হয়েছি রুমের কোয়ালিটি, সার্ভিস ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে। একটা কথায় মনে হয়ে একটা ফাইভ ষ্টার হওয়ার যোগ‍্যতা সম্পূর্ন রিসর্ট শুধু মাত্র ভুল ম‍্যানেজমেন্টের কারনে ষ্টার বিহীন। এর নৈসর্গিক সুন্দর্যকে আমি একশত দিলে রুম কোয়ালিটি, সার্ভিস ও নিরাপত্তাব্যবস্থা কে দশ দিব। এখানে আমাদের রুম ভাড়া নিয়েছে ডবল বেড সাড়ে চার হাজার এবং একবেড রুম দেড় হাজার টাকা।

বিকালে আমরা চলে যাই জাফলং বাজার ঘাটে কারন এদিক দিয়ে নদীতে নামা সহজ। কিন্তু এত বৃষ্টি শুরু হয় যে বাচ্চা নিয়ে আর রিস্ক নিইনি। বৃষ্টির মধ‍্যেই আমরা গাড়ী নিয়ে জাফলং বাজার ব্রিজ পার হয়ে চলে যাই চা বাগানে। চা বাগানের পথ ধরে কিছুক্ষণ বিক্ষিপ্তভাবে গাড়ি চালিয়ে চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করি। এরপর চলে আসি জাফলং এর মামার বাজারে। এখান থেকেই প্রায় চারশত সিড়ি বেয়ে লোকজন প্রধানত উঠানামা করে। এখানে একটি পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে আমরা ডাউকি শহরের সুন্দর্য দেখতে থাকি। এই পাহাড়ের চূড়াতে একটি আন্তর্জাতিক পিলার আছে। তাই খুবসহজেই এখান থেকে ভারতের মাটিতে পা রাখা যায়। আর এখানে কোন ভারতের সিমান্ত রক্ষী বা কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় কোন সমস‍্যা মনে হয়। এখানে দেখলাম প্রচুর লোক পাহাড়ি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে মাথায় করে ভারতের জিনিস পত্র নিয়ে আসছে। ইত‍্যবসরে সন্ধ‍্যা ঘনিয়ে আসে এবং ডাউকি শহরের সকল লাইট একবারে জ্বলে উঠে যা দেখতে খুবই ভালো লেগেছে। এরপর আমরা রিসর্টে ফিরে আসি আর রুম থেকেই মেঘালয়ের ঝরনার গান উপভোগ করি। রাত গভীর হলে ঝরনার বিশাল পানি প্রবাহের শব্দ আরও স্পষ্ট ও ভয়ংকর হয়ে উঠে।

পরদিন সকাল নয়টায় আমরা চেকআউট করি এবং জাফলং মামারবাজার যাই নাস্তা করতে। নাস্তা শেষ করে আমরা যেতে শুরু করি নৌকার ঘাটের দিকে। এখানে বিজিবির ক‍্যাম্পের পাশ দিয়ে একটি সিড়ির রাস্তা চলে গেছে। চারশও বেশি সিড়ি আছে এখানে যদিওবা খুব বেশি কষ্টসাধ্য মনে হয় নাই। কিন্তু খুবই বিরক্তিকর লেগেছে সিড়ির দুপাশের খুপরি দোকানগুলো। পুরা রাস্তাজুড়েই বিভিন্ন দোকান আর সাথে নৌকার দালালদের উৎপাত। এখানে নৌকার কোন ফিক্সড ভাড়া নেই। দরদাম করতে হয়। তবে ইন্জিন চালিত নৌকা বারশ এবং হস্তচালিত নৌকা আটশর নিচে কেউ রাজি হয় নাই। কিছু ইন্জিন চালিত নৌকা পার পারসন একশত টাকায় লোকালি নিয়ে যায়। কিন্তু এরা সাধারণত চৌদ্দজন হলে তবেই নিয়ে যায়। নৌকা আমাদেরকে প্রথমে মায়াবী ঝরনার ঘাটে নিয়ে যায় পাঁচ মিনিটের মধ‍্যে। এখানেও ঝরনার গোড়া পযর্ন্ত দোকানপাট বসে গেছে। ঝরনাটা অনেক সুন্দর এবং প্রচুর পানি প্রবাহ ছিল। কিছু কিছু ছেলেকে দেখলাম অতিরিক্ত উত্তেজনায় ঝরনার উপরের দিকে উঠেযেতে যা খুবই অনিরাপদ মনে হয়েছে। এখানে কিছুক্ষণ আবস্থান করে আবার ঘাটে ফিরে আসি এবং নৌকা নিয়ে চলে আসি ডাউকি সাসপেনশান ব্রীজ ভিউ পয়েন্টে। পানি বেশি থাকায় নদীতে নামার নিষেধাজ্ঞা ছিল। নৌকা আমাদেরকে একটা পাথুরে ছোট দ্বীপের মত জায়গায় নেমে দেয়। এখান থেকে চার দিকের পাহাড়; ডাউকি ব্রীজ; নদীর সুন্দর্য খুব ভালো ভাবে উপভোগও করা যায়। তবে পাথরের উপরদিয়ে চলাচল বেশ কষ্টসাধ্য ও অনিরাপদ বিশেষত ছোট বাচ্চা নিয়ে। এরপর আমরা সেই চারশতাধিক সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসি। খাসিয়া পল্লী যাই নাই কারন দশ বছর আগে যখন এখানে ভ্রমনে আসি তখনই মনে হয়েছে স্থানিয় খাসিয়া অধিবাসীরা টুরস্টি যাওয়াতে বিরক্ত। তাই এবার আর যেতে মন টানে নাই।

দুপুরের খাবার খেয়ে বেলা তিনটার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। রাত বারটায় বাসায় চলে আসি। মাঝে যাত্রা বিরতি করি হবিগঞ্জের একটি হাইওয়ে রেস্তোরাঁয়। দুই দিন আগে সিলেট যেতে যে রোডে কোন ভাঙাচোরা চোখে পড়ল না। ঠিক দুদিন পর সেই রাস্তার ভাঙ্গাচোড়া অবস্থা দেখে মনে হইল কোন ভূল রাস্তায় এসে পরলাম বুঝি।

পাদটিকা: আমাদের দেশটি অনেক অনেক সুন্দর। পুরা দেশটাই বলতে গেলে একটা টুরিস্ট স্পট হওয়ার যোগ‍্য। কিন্তু টুরিস্ট স্পটগুলোই দিনদিন কেমন জানি বিরক্তিকর হয়ে উঠছে কিছু সংগত কারনে। যেমন টুরিস্টদের সবজায়গায় ময়লা ফেলার মানসিকতা; স্থানিয় স্টেকহোল্ডারদের টুরিস্ট প্লেসের গুরুত্ব না বোঝা, যত্রতত্র খুপরি দোকান তোলা, সেবার মান না বাড়িয়ে সিন্ডিকেট করে বা চিটিং করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ইত‍্যাদি। একমাএ সচেতনতা পারে আমাদের পর্যটন ব‍্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে। আর টুরিস্ট প্লেসে ময়লা করার অপরাধকে জরিমানার ব‍্যবস্থা করা উচিত। পরিচ্ছন্ন পরিবেশই মানেই সৌন্দর্য এই শিক্ষা সবাইকে দেওয়া উচিত।

Want your business to be the top-listed Media Company in Dhaka?
Click here to claim your Sponsored Listing.

Videos (show all)

Sea Pearls Resort Beach, Inani, Ukhiya, Cox's Bazar
কুয়াশাস্নাত উত্তরবঙ্গের এক প্রত‍্যন্ত আমার গ্রামের কাঁচা রাস্তা ও সকালের সূর্যোদয়।
Red Fort, Delhi, IndiaSymbol of power!
সহস্রধারা-1 ঝরনা। গরম শরীরে হীমেল পরশ।#sitakunda #Chittagong #waterfall #fountian #Bangladesh #touristspot #BangladeshiV...
জাফলং (ডাউকি সাসপেনশান ব্রীজ) ভিউ পয়েন্ট।
Halud Vihara, Badalgachhi, Naogaon.
Rajshahi city : Drive at Night
বায়োস্কোপ (Bioscope)
Jagaddol Monesrty (জগদ্দল মহাবিহার), Naogaon
Natural Singer.....
Dibbak Glory Monument (দ‍িব‍্যক জয়স্তম্ভ), Naogaon

Category

Telephone

Website

Address

Dilu Road
Dhaka
1000

Other Digital creator in Dhaka (show all)
Ðesign Phenomena Ðesign Phenomena
Ground Floor, House # 302 Road # 4, Baridhara DOHS
Dhaka, 1212

Complete web solutions including domain, hosting, design, development & digital asset management.

Rj Raju Rj Raju
Gulshan 1
Dhaka, 1212

Official Page of Rj Raju. The Vocal Of band ONTOPUR ( Bangladesh)

Ghash Foring Ghash Foring
Dhaka, 1216

•♥•♥•♥ ☜ Most exclusive video channel ☞ ♥•♥•♥•

LIHAN LIHAN
Dhanmondi
Dhaka

HI, I am Lihan. like to make friends...love to traval and ride motorcycle also make moto vlog....

Infoluent Infoluent
Dhaka, 1205

জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।

Funny World Funny World
All The Funny Turn
Dhaka

This is all about fun. We are gathering all the funny moments of life....

Abida's Design Abida's Design
Dhaka

গায়ে হলুদের ডেকোরেশন এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন - 01712636042

Syed Faiyaz Rabbi Syed Faiyaz Rabbi
Dhaka

+++ page is still under construction +++

Tiger Critics BD Tiger Critics BD
Cricket@BD24/7
Dhaka

This page was created long ago for no reason & its still looking for its Path ? Let's give it one :)

দেশের হালচাল দেশের হালচাল
Dhaka, 1215

দেশের হালচাল নিয়ে আপনার পাশে আমরা

The Special LTD. The Special LTD.
Haragach, Rangpur. Bangladesh
Dhaka

ব্যার্থতা একটা পরিক্ষা মাত্র। শক্তি রেখে যারা চলে, তারা কখনো হারে না। আল্লাহ ভরসা❤️

Sobor-ধৈর্য Sobor-ধৈর্য
Dhaka

"দুনিয়াতে আপনি আল্লাহকে খুশি করতে এসেছেন মানুষকে নয়।" ~ ড. বিলাল ফিলিপ্স হাফিজাহুল্লাহ