Islamic life :: ইসলামী জীবন
ইসলামপ্রিয় ভাই ও বোনেরা এই পেজে লাইক দিন ।
রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কিত হাদীসঃ
عن سلمان(رض.)قال خطبنا رسول الله صلي
الله عليه وسلم في آخر يوم من شعبان فقال : (أيها الناس ، قد أظلكم شهر عظيم، شهر مبارك ، شهر فيه ليلة خير من ألف شهر ، جعل الله صيامه فريضة ، وقيام ليله تطوعاً ، من تقرب فيه بخصلة من الخير كان كمن أدى فريضة فيما سواه ، ومن أدى فيه فريضة كان كمن أدى سبعين فريضة فيما سواه ، وهو شهر الصبر ، والصبر ثوابه الجنة ، وشهر المواساة ، وشهر يزداد فيه رزق المؤمن ، من فطر فيه صائماً كان مغفرة لذنوبه ، وعتق رقبته من النار ، وكان له مثل أجره من غير أن ينتقص من أجره شيء. قالوا : ليس كلنا نجد ما يفطر الصائم ، فقال : يعطي الله هذا الثواب من فطر صائماً على تمرة أو شربة ماء أو مذقة لبن ، وهو شهر أوله رحمة ، وأوسطه مغفرة ، وآخره عتق من النار ، من خفف عن مملوكه غفر الله له ، وأعتقه من النار ، فاستكثروا فيه من أربع خصال : خصلتين ترضون بهما ربكم ، وخصلتين لا غنى بكم عنهما: فأما الخصلتان اللتان ترضون بهما ربكم : فشهادة أن لا إله إلا الله ، وتستغفرونه ، وأما اللتان لا غنى بكم عنهما : فتسألون الله الجنة ، وتعوذون به من النار ، ومن أشبع فيه صائماً سقاه الله من حوضي شربةً لا يظمأ حتى يدخل الجنة
হযরত সালমান ফারসী রাঃ. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেম-
একবার শাবান মাসের শেষ দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খোতবা (ভাষণ) দিলেন। খোতবা দিতে গিয়ে তিনি বলেন: “হে লোকেরা! আপনাদের নিকট এক মহান মাস হাজির হয়েছে। এক বরকতময় মাস এসেছে। এ মাসে এমন এক রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ মাসে সিয়াম পালন করা আল্লাহ ফরজ (আবশ্যকীয়) করেছেন এবং এ মাসের রাতে কিয়াম (নামায আদায়) করা নফল (ফজিলতপূর্ণ) করেছেন। এ মাসে যে কোন একটি (নফল) ভালো কাজ করা অন্য মাসে একটি ফরজ কাজ করার সমান। আর এ মাসে কোন একটি ফরজ আমল করা অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আমল করার সমান। এটি হল- ধৈর্য্যের মাস; ধৈর্য্যের প্রতিদান হচ্ছে- জান্নাত। এটি হল- সহানুভূতির মাস। এটি এমন এক মাস যাতে একজন মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি পায়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে তার সমূহ গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, সে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবে এবং তাকে সেই রোজাদারের সমান সওয়াব দেয়া হবে; কিন্তু রোজাদারের সওয়াবে কোন কমতি করা হবে না। তাঁরা বললেন- আমাদের মধ্যে সবার তো একজন রোজাদারকে ইফতার করানোর মত সামর্থ্য নেই। তিনি বললেন: কোন ব্যক্তি যদি একজন রোজাদারকে একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি অথবা এক চুমুক দুধ দিয়েও ইফতার করায় আল্লাহ তাকেও এই সওয়াব দিবেন। এটি এমন মাস এর প্রথম ভাগে রহমত, দ্বিতীয় ভাগে মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে রয়েছে জাহান্নাম হতে নাজাত। আর যে ব্যক্তি তার কৃতদাসের দায়িত্ব সহজ করে দিবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে তাকে মুক্তি দিবেন। সুতরাং এ মাসে আপনারা চারটি কাজ বেশি করে করুন। দুটি হল যা দিয়ে আপনারা আপনাদের রব্বকে সন্তুষ্ট করবেন। আর দুটি কাজ এমন যা আপনাদের না করলেই নয়। যে দুটি কাজ দ্বারা আপনারা আপনাদের রব্বকে সন্তুষ্ট করবেন: (১) এ বলে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই এবং (২) তাঁর কাছে ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। আর যে দুটো কাজ আপনাদের না করলেই নয় (৩) আপনারা আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করবেন এবং (৪) জাহান্নামের আগুন থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবেন। আর এই মাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে পেট ভরে খাওয়াবে আল্লাহ তাঁকে আমার হাউজ থেকে এক ঢোক পানি পান করাবেন যার ফলে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর পিপাসার্ত হবে না।”
মতাদর্শ নয়; দ্বীনের পথে ডাকুনঃ
@@@@@@@@@@@@@@@@@ #
রাসূল সা. বলেন, আমি তোমাদেরকে আলোকোজ্জ্বল পথে রেখে গেছি, এই ইসলামের রাত দিন বরাবর। (ইবন মাজাহ) অর্থাৎ ইসলামের পথ অত্যন্ত পরিষ্কার।
এখানে কোনো তিমির নেই। কোনো অন্ধকার নেই।
মূল শিক্ষাগুলো স্পষ্ট হলেও ইসলামের বিভিন্ন পদ্ধতিতে রয়েছে গভীরতা। একেকটি পথ অসংখ্য পথ রচনা করেছে। এ জন্য দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের হতে হবে সর্বোচ্চ সতর্ক।
আমাদের প্রত্যেকেরই একেকটি বুঝ রয়েছে ধর্মের। এই ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যাগুলোকে মাসলাক বলে। প্রত্যেকেই যদি তার মাসলাকের দিকে অন্যদের আহ্বান করে তাহলে মুসলিমদের ঐক্য সুদূরপরাহত বিষয় হয়ে যাবে।
এ জন্য যারা দাওয়াতের কাজ করবে তাদেরকে মাসলাকের দাওয়াত দেয়া ত্যাগ করতে হবে। আহ্বান জানাতে হবে জটিলতাহীন ইসলামের দিকে।
যে ইসলামের ভেতর কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই। অর্থাৎ ইসলামের সে সব বিধানের কথা বলতে হবে যেগুলো নিয়ে মতভিন্নতার অবকাশ নেই।
তাওহীদ, রেসালাত ও আখেরাত। ইসলামের মানবিক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। হিকমাহ ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে মানুষকে ধার্মিক বানানোর চেষ্টা করতে হবে। ইসলামী আখলাকের দাওয়াত দিতে হবে।
জটিল চিন্তা-চেতনার দ্বন্দ্বে ফেলে দিলে নবাগতরা ইসলামের সৌন্দর্য অনুধাবন করতে পারবে না। তা ছাড়া অসংখ্য মাসলাকের উপস্থিতি তার জন্য যন্ত্রণার কারণ হবে।
একজন নবাগত মানুষ সোজা-সাপ্টা ধর্ম পালনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। তাকে যদি মুসলমানদের বিভিন্ন ফেরকার কথা শোনানো হয় তারপর কোনো বিশেষ ফেরকার দিকে ডাকা হয় সে ইসলামকে বিদঘুটে মনে করবে।
এভাবে আপনি ইসলামের দাঈ না হয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কারণ হয়ে যাবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমীন।
ছোট ছোট পাপ মানুষকে বড় বড় পাপের পথে পরিচালিত করেঃ
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
পাপ পাপই। হোক সেটা বড় কিংবা ছোট। বড় পাপ থেকে সাধারণত মানুষ সতর্ক থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে ছোট পাপকে তেমন কোনো গুরুত্বই দেয় না। অথচ এর থেকেও নিরাপদ থাকতে আল্লাহর নবী উম্মতকে জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদিসের পরিভাষায় একে ‘মুহাক্কারাত’ বলে। এ শব্দের ব্যাখ্যায় হাদিস বিশারদরা বলেছেন, এটি এমন পাপ, যার প্রতি মানুষ ভ্রুক্ষেপ করে না। ইমাম মুনাভি (রহ.) বলেন, ‘মুহাক্কারাত হলো ছোট ছোট পাপ। মহানবী (সা.) তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, কারণ তা বড় বড় পাপের পথে মানুষকে পরিচালিত করে।
যেমন—ছোট ছোট আনুগত্য মানুষকে বড় বড় আনুগত্যের জন্য প্রস্তুত করে। ’ (ফয়জুল কাদির : ৩/১৬৪)
সাহাল ইবনে সাঈদ (রা.) গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, ‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও। ছোট ছোট গুনাহের উদাহরণ ওই লোকদের মতো, যারা কোনো খোলা মাঠে বা প্রান্তরে গিয়ে অবস্থান করল এবং তাদের প্রত্যেকেই কিছু কিছু করে লাকড়ি সংগ্রহ করে নিয়ে এলো। শেষ পর্যন্ত তারা এ পরিমাণ লাকড়ি সংগ্রহ করল, যা দিয়ে তাদের খাবার পাকানো সম্পন্ন হলো।
নিশ্চয়ই (তাওবা ব্যতীত) ছোট ছোট গুনাহ যখন জমে যাবে, তখন তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে। ’
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও, কেননা সেগুলো মানুষের কাঁধে জমা হতে থাকে, অতঃপর তাকে ধ্বংস করে দেয়। ’
(সহিহুল জামে : ২৬৮৬)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমামাভ বিভিন্ন মত উল্লেখ করেছেন। যেমন—ইমাম সিন্ধি (রহ.) বলেন, এখানে নবী কারিম (সা.) ছোট ছোট গুনাহকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ওই ব্যাপারে উদাসীন হতে নিষেধ করেছেন। সেগুলোর ভয়াবহতা ভুলে নিশ্চিন্ত হওয়া থেকে সতর্ক করেছেন।
কারণ এ উদাসীনতা মানুষকে ধ্বংস ও পতনের দিকে নিয়ে যায়। ‘মুহাক্কারাত’ হলো ওই সব সগিরা গুনাহ, যা পরিত্যাগের ব্যাপারে মানুষ তেমন সতর্কতা অবলম্বন করে না।
ইমাম মুনাবি (রহ.) বলেন, এর অর্থ হলো সগিরা গুনাহ। কারণ সগিরা গুনাহ কবিরা গুনাহের পথকে সুগম করে দেয়।
ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, ছোট গুনাহগুলো এক এক করে জমা হতে থাকে। অতঃপর মৃত্যুর সময় এগুলোই ঈমানহারা হওয়ার কারণ হয়। কারণ ছোট ছোট গুনাহ মিলে বড় গুনাহে পরিণত হয় এবং মানুষের ধ্বংসের মাধ্যম হয়। (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন : ৩/৬০)
হাদিসে উল্লেখিত উপমার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা
যেসব ছোট গুনাহকে মানুষ তেমন গুরুত্ব দেয় না, এগুলোকে তুলনা করা হয়েছে ছোট ছোট কাঠখড়ির সঙ্গে। যে কাঠখড়ির তেমন কোনো মূল্য নেই। কিন্তু অনেকগুলো একসঙ্গে হলে বড় কিছু ঘটাতে পারে। আর কিছু না হোক ছোট ছোট কাঠের টুকরা একত্র করা হলে রান্না করার ব্যবস্থা হয়ে যায়। অথচ যখন অল্প ছিল তখন তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এমনিভাবে ছোট ছোট গুনাহ যখন একত্র হবে তখন বিরাট আকার ধারণ করে মানুষের ধ্বংসের কারণ হবে।
তাই একজন মুমিনের জন্য আবশ্যক হলো সব ধরনের গুনাহ ও পাপাচার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। কোনো গুনাহকেই ছোট মনে না করা। কারণ ছোট গুনাহগুলো তাওবা না করার ফলে অথবা বারবার করার কারণে বিরাট আকার ধারণ করে। ইমাম ইবনে কায়্যিম (রহ.) বলেন, দুনিয়া ও আখিরাতে গুনাহের কুপ্রভাব দেহ-মন উভয়ের জন্য এমনই ক্ষতিকর, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
১. ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া। কারণ ইলম হচ্ছে নুর, যা আল্লাহ মানুষের অন্তরে দান করেন। আর গুনাহ ওই নুরকে নিভিয়ে দেয়।
২. রিজিক থেকে বঞ্চিত হওয়া।
৩. একাকীত্ব অনুভব হওয়া।
কারণ গুনাহগার ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। এ জন্য বহু মানুষের ভিড়েও সে যেন একা, নিঃসঙ্গ। দুনিয়ার সব সুখ একত্র হয়ে গেলেও তার সেই একাকীত্ব দূর করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কেবল ওই ব্যক্তিই বুঝতে পারে, যার হৃদয় জাগ্রত থাকে। যদি ওই ব্যক্তি বুদ্ধিমান হয় তাহলে মৃত্যু যন্ত্রণা তাকে ঘায়েল করার আগেই একাকীত্বের সতর্কবাণী অনুধাবন করে তৎক্ষণাৎ গুনাহ ছেড়ে দেবে।
(আল জাওয়াবুল কাফি ১/৫২)
মুসলিম নবজাতক শিশুদের কানে আজান দেওয়া হয় কেন?
@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
মুসলিম নবজাতকের জন্মের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রথমেই তার কানে আজান দেওয়া হয়। শিশুর কানে আজান ও ইকামত দেওয়া মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে বেশির ভাগ ওলামায়ে কেরাম একমত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তার নাতি হাসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কানে আজান দিয়েছিলেন।
উবাইদুল্লাহ ইবনে আবু রাফি' রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ছেলে হাসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে প্রসব করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কানে নামাজের আজানের ন্যায় আজান দিয়েছিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস, ৫১০৫)
আরেক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যার সন্তান হয়, সে যেন তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়। (শুআবুল ইমান, হাদিস, ৮৬১৯)।
নবজাতকের কানে কী কারণে আজান দেওয়া হয় এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে।
কেউ কেউ লিখেছেন, শিশুর কানে আজান-ইকামত দেওয়ার অর্থ হলো তাকে এই কথা বলে দেওয়া যে আজান-ইকামত হয়ে গেছে, এখন শুধু নামাজের অপেক্ষা (নামাজ শুরু হতে সামান্য বিলম্ব, তা-ই তোমার জীবন)।
হজরত থানভী রহ. বলেন, ‘আজান-ইকামতের মাধ্যমে শিশুর কানে প্রথমেই আল্লাহর পবিত্র নাম পৌঁছে দেওয়া, যেন তার প্রভাবে তার ঈমানের ভিত্তি মজবুত হয়ে যায় এবং শয়তান দূরে সরে যায়। এই দুটি হিকমতেরই সারমর্ম হলো দুনিয়াতে আসার পর তুমি আল্লাহকে ভুলে গাফেল হয়ে থেকো না। (তরবিয়তে আওলাদ, হজরত থানভী রহ.)
এগুলো বিভিন্ন বিজ্ঞ আলেমের মতামত মাত্র। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তার নাতির কানে আজান দিয়েছেন, তবে নিশ্চয়ই এই কাজের উপকারিতা রয়েছে। আমরা যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ করি, তাই আমরাও আমাদের সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতক শিশুদের কানে আজান, ইকামত দিয়ে তাকে কোলে তুলে তার জন্য বরকতের দোয়া করতে পারি।
আল্লাহ তাআ'লা আমাদের সবাইকে নবজাতকের ক্ষেত্রে নবীজির এ সুন্নাহ পালন করার তাওফিক দান করুন।
আ--মীন!!
আলহামদুলিল্লাহ
আবারও বিশ্ব সেরা হাফিজ হলেন
আমাদের সবার প্রিয় সালেহ আহমেদ তাকরীম।
দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা ২০২৪ ইং বিশ্বের ৭০ টি দেশকে পিছনে ফেলে আবারও বিশ্বসেরা হলেন বাংলাদেশের গর্ব।
কিশোর হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরীম!
তাকরীমের জন্যে হৃদয়ের গভীর থেকে অজস্র মোবারকবাদ,অভিনন্দন ও শুভ কামনা রইলো।
মুহাম্মাদকে (সা.) অবমাননাকারী ‘ওতাইবা’র করুণ পরিণতিঃ
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
মুহাম্মাদকে (সা.) অবমাননাকারী ‘ওতাইবা’র করুণ পরিণতি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে দুশমনি করে অনেকেই ক্ষমা পেয়েছেন কিন্তু তাকে অবমাননা বা অপমান করার ফলে যারা বদ দোয়ার শিকার হয়েছেন, তাদের অনিবার্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলো ওতাইবা। কে এই ওতাইবা?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা ছিল আবু লাহাব। তার দুই ছেলের মধ্যে একজন ছিল ওতাইবা। ওতাইবা ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক মেয়ে উম্ম কুলসুমের জামাতা। ইসলামের দাওয়াতের কারণে আবু লাহাবের নির্দেশে ‘ওতাইবা’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেয়ে উম্মে কুলসুমকে তালাক দেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অপমান ও অবমাননা করে। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বদদোয়া করেন।
রাসুলুল্লাহর বদদোয়াঃ
আবু লাহাবের পুত্র ওতাইবা একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল-
‘ওয়ান নাজমে ইযা হাওয়া এবং ছুম্মা দানা ফাতাদাল্লার’ (কুরআনের আয়াতের) সঙ্গে আমি কুফরি করছি। সুরা নাজমের এ দুটি আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ‘শপথ নক্ষত্রের, যখন তা অস্তমিত হয়। অতপর সে তার কাছাকাছি হলো অতি নিকটে।’
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কুখ্যাত ওতাইবা অত্যাচার শুরু করে দেয়। তাঁর জামা ধরে টেনে তা ছিঁড়ে ফেলে এবং তাঁর পবিত্র চেহারায় থুথু নিক্ষেপ করে। কিন্তু ওতাইবার থুথু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারায় পড়েনি।
সেই সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য বদদোয়া করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই বদদোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করে নেন। বিশ্বনবির বদদোয়া হলো-
‘হে আল্লাহ! ওর (ওতাইবা) ওপর তোমার কুকুরসমূহের মধ্যে থেকে একটি কুকুর লেলিয়ে দাও।’
ওতাইবা যেভাবে ধ্বংস হয়ঃ
একবার কুরাইশ বংশের কয়েকজন লোকের সঙ্গে এক সফরে ওতাইবা সিরিয়া যাচ্ছিল। ‘যারকা’ নামক স্থানে তারা রাত যাপনের জন্য তাঁবু স্থাপন করে। সে সময় একটি বাঘ তাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকে। বাঘের ঘোরাফেরা দেখে ওতাইবা নিজের ধ্বংসের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বদদোয়ার কথা তার স্মরণ হয়ে গেল।
ওতাইবা বলল, ‘আল্লাহর শপথ! এই বাঘ আমাকে খাবে; হায়রে, আমার ধ্বংস অনিবার্য। হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বদদোয়া করেছিল। সে আরও বলছিল, দেখ! আমি সিরিয়ায় অবস্থান করছি। অথচ মক্কায় বসেই আমাকে মেরে ফেলছেন।
ওতাইবাকে বাঁচানো ব্যর্থ চেষ্টাঃ
কুরাইশদের অবিশ্বাসীরাও জানত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বদদোয়া কখনো বিফলে যায় না। তাই ‘যারকা’ নামক স্থানে অবস্থানকারী অন্য সব সফরসঙ্গী তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। সতর্কতা হিসেবে তারা নিজেদের মালামাল ও জিনিসপত্র দিয়ে উঁচু একটি ঢিবি বানিয়ে নেয়। ওতাইবাকে তারা সেই মালামাল ও জিনিসপত্রের ঢিবির ওপর থাকার ব্যবস্থা করে। নিজেরা সেই ঢিবির চারপাশে শুয়ে পড়ে।
ওতাইবার সফরসঙ্গীদের সব সতর্কতাই বিফলে যায়। এতসব সতর্কতার পরও রাতে যথাসময়ে বাঘ এসে উপস্থিত হয়। সবাইকে অতিক্রম করে বাঘ মালামাল ও জিনিসপত্রের ঢিবির ওপর অবস্থানকারী ওতাইবার কাছে চলে যায়। তার ঘাড় মটকিয়ে তাকে মেরে ফেলে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননা ও অপমানকারী ওতাইবা বদদোয়ার করুণ পরিণতির শিকার হয়ে মারা যায়। (আর রাহিকুল মাখতুম)
ইসলামের নবির দুশমনি, অপমান ও অবমাননা করে কেউ রক্ষা পায়নি। ফ্রান্সের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট অ্যামানুয়েল ম্যাক্রো ক্ষমা পাবে না। শুধু ম্যাক্রোই নয়, যারাই বিশ্বনবিকে অপমান বা অবমাননা করবে, দুনিয়া কিংবা পরকালে এর পরিণতি তাকে ভোগ করতেই হবে।
সুতরাং ইসলামের বিরোধিতা কিংবা ইসলাম নিয়ে যে যাই বলুক না কেন, ইসলামের নবি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে অপমানকর, অবমাননা কিংবা ব্যঙ্গচিত্র ছাপানোর মতো ধৃষ্টতা মহান আল্লাহ সহ্য করবেন না। যেমনিভাবে যুগে যুগে অবিশ্বাসী ও অত্যাচারীরা এর পরিণতি ভোগ করেছে।
আল্লাহ তাআলা দুনিয়াজুড়ে সবাইকে বোঝার তাওফিক দান করুন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপমান, অবমাননা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
গৃহযুদ্ধ কেন হয় আপোষে দ্বন্দ্বের কারণঃ
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যখনই তারা আল্লাহ ও তার রসুলের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে, তখনই তাদের বিজাতীয় শত্রুকে (আল্লাহ) তাদের উপর বিজয় করে দিবেন, ফলে তারা মালিকানাধীন অনেককিছু দখল করে দিবে। যতক্ষণ শাসক আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন করবে না, আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় কার্যকরী করবে না, ততক্ষন আল্লাহ অভ্যন্তরীন সংঘাত লাগিয়ে রাখবেন।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫ম খন্ড পৃ-৩৬৩)।
সারাবিশ্বে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে হাদীসের বাস্তবতা পরিলক্ষিত হয়। কোথাও সরকারের সাথে বিরোধীদলের সংঘাত চলছে, কোথাও গৃহযুদ্ধ, কোথাও আল্লাহ ও রসুলের সাথে অঙ্গীকার (ইসলাম মেনে চলার) ভঙ্গ করার কারণে বিজাতীয় শত্রুরা অনেকটুকু ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে। বাংলা-পাক মুক্তিযুদ্ধও তার উদাহরণ।
ভারতবর্ষ বিভাজন হয়েছিলো ভূখন্ডকে প্রধান্য দিয়ে নয় বরং ধর্মের ভিত্তিতে। তাই ভারত সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়া স্বত্বেও বাংলাদেশের স্হান হয় পাকিস্তানের ভাগে।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ বহু নেতা ও আলেমরা ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখায় তাই ৪৭ এর বিভাজনে বাংলার বহু আলেমও পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। আর পাকিস্তান নামকরণ করা হয় মদীনা তাইয়্যেবা নাম অনুসরনে মানে পবিত্র স্হান। রাজধানী ইসলামবাদ রাখা হয় যার অর্থ ইসলামের স্হান। পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্লোগান ছিল কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। কিন্তু সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে জিন্নাহসহ পাকসরকার জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। কুরআনের আইনের বদলে মানবরচিত সংবিধান স্হান দেয় রাষ্ট্রে। যদি পাকিস্তান ইসলামী রাষ্ট্র হতো, তাহলে সংবিধান হতো আল কুরআন। পাক-বাংলার সবার সমঅধিকার হতো, সবাই তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পেত, সবার পতাকা হতো কালেমরা পতাকা।
পাক-বাংলার সবচেয়ে দ্বীনী জ্ঞানসম্পন্ন, তাকওয়াপূর্ণ মুসলিমরা মজলিসে শুরা অনুযায়ী শাসন ক্ষমতা পেত। উভয়ের মুদ্রা হতো একই স্বর্ন ও রৌপ্যমুদ্রা, সবাই নিজ নিজ ভাষায় কথা বলার অধিকার রাখতো। যেহেতু কুরআনের সংবিধান অনুযায়ী শাসনকার্য চলত তাই দুদেশের দাপ্তরিক ভাষা হতো আরবি কিন্তু তা না করে মানবরচিত সংবিধান চালু করে তারা দাপ্তরিক ভাষা উর্দু ঘোষণা করে এরপর ৫২ এর আন্দোলন ও ৭১ এর যুদ্ধ তাদের আল্লাহ ও রসুলের প্রতি অঙ্গীকার ভঙ্গ ও কুরআন ব্যতীত শাসনকার্য চালানোর ফল।
ফলে কারগিল যুদ্ধে পাকিস্তান ভারতের নিকট কিছু ভূমি হারায়, চীনকে কাশ্মীরের কিছু অংশ দেয় ভারতের বিপক্ষে চীনকে বন্ধু হিসেবে রাখার জন্য। আর বাংলাদেশ হতে তারা অপমানজনকভাবে বিতাড়িত হয়। যদি কুরআন দ্বারা শাসন করত হয়তো যুদ্ধই হতো না। আর আন্দোলন হওয়া উচিত ছিল ৫২ তে নয়, ৪৮ এ যখন সংবিধান হতে কুরআনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তাহলে হয়তো আমরা ই-সলামী রাষ্ট্র পেতাম। আজ দেখুন এদেশে যেদলই ক্ষমতায় আসুক বিরোধীদলসহ ও সাধারণ মানুষ নির্যাতিত ও অবহেলিত হয়। কারণ মানবরচিত আইন তৈরিই হয় শাসকের সুবিধার্থে।আর আল্লাহ প্রদত্ত আইন দেওয়া হয়েছে সকল মানুষের কল্যাণে।
আল্লাহ প্রদত্ত এ কল্যাণধর্মী আইন বাদ দিয়ে এ ভূখন্ডে যতই উন্নত সংবিধান রচনা
করা হোক না কেন, যতই সংবিধান সংস্কার করা হোক না কেন কখনো শান্তি আসবে না।
কিয়ামতের ছোট আলামত -৩
১১) যেনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবেঃ
আল্লাহ তাআলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যভিচার হারাম করেছেন। ইহা হারাম হওয়া অতি সুস্পষ্ট বিষয়। এমন কোন মুসলিম নারী-পুরুষ পাওয়া যাবেনা, যে ব্যভিচার হারাম হওয়া সম্পর্কে অবগত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا(
‘‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়োনা। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩২)
ব্যভিচারের ইহকালীন শাস্তি হলো বিবাহিত হলে রজম করা তথা পাথর মেরে হত্যা করা। আর অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত করা।
সহীহ বুখারীতে সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর স্বপ্নের দীর্ঘ হাদীছে কবরে ব্যভিচারীর ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেনঃ
‘‘আমরা একটি তন্দুর চুলার নিকট আগমণ করলাম। যার উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশ ছিল প্রশস্ত। তার ভিতরে আমরা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। দেখতে পেলাম, তাতে রয়েছে কতগুলো উলঙ্গ নারী-পুরুষ। তাদের নিচের দিক থেকে আগুন প্রজ্বলিত করা হচ্ছে। অগ্নিশিখা প্রজ্ববলিত হওয়ার সাথে সাথে তারা উচ্চঃস্বরে চিৎকার করছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতাদ্বয় বললেনঃ এরা হলো আপনার উম্মাতের ব্যভিচারী নারী-পুরুষ’’।[1]
কিয়ামতের পূর্বে উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে এই পাপের কাজটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে, মদ্যপান ছড়িয়ে পড়বে এবং মুসলমানেরা ব্যভিচারে লিপ্ত হবে’’।[2] তিনি আরো বলেনঃ আমার উম্মতের একটি দল যেনাকে হালাল মনে করবে’’।[3] আখেরী যামানায় ভাল লোকগণ চলে যাওয়ার পর শুধুমাত্র দুষ্ট লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষের সামনে গাধার ন্যায় ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। তাদের উপরে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।[4]
ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এ হাদীছে নবুওয়াতের অন্যতম প্রমাণ রয়েছে। কারণ তাঁর ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আমাদের যামানায় প্রকাশ্যে ব্যভিচার সংঘটিত হচ্ছে।
কিয়ামতের এই আলামতটি বর্তমান মুসলিম সমাজেও ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে, যা বিস্তারিত বলার অপেক্ষা রাখেনা। বড় পরিতাপের বিষয় এইযে, অনেক ইসলামী দেশে সরকারীভাবে ব্যভিচারের লাইসেন্স দেয়া হয়ে থাকে। এ সমস্ত মুসলিম দেশের শাসকরা রোজ কিয়ামতে আল্লাহর দরবারে কি জবাব দিবেন!!
ফুটনোটঃ[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তা’বীর
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম।
[3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আশরিবা।
[4] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
১২) সুদখোরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
মুসলমানদের উপর সুদ আদান-প্রদান করা এবং সুদের ব্যবসা হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُضَاعَفَةً(
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণ করোনা। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৩০)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদখোরকে অভিশাপ করেছেন’’।[1]
কিয়ামতের পূর্বে মুসলমানদের মাঝে সুদ গ্রহণ করা এবং সুদের ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে এমন এক সময় আসবে যখন সম্পদ কামাই করার ব্যাপারে হালাল-হারামের বিবেচনা করা হবেনা’’।[2] তিনি আরো বলেনঃ
‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের আলামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে সুদের প্রসার লাভ করবে’’।[3]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছে। অগণিত সংখ্যক মুসলমান আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে সুদের ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে এমন কোন ইসলামী দেশ পাওয়া যাবেনা যেখানে সুদী ব্যাংক নেই বা সুদের ব্যবসা নেই।
ফুটনোটঃ[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লিবাস।
[2] - তাবারানী, ইমাম মুনযেরী বলেনঃ হাদীছের বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, (৩/৯)।
[3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বুয়ূ
১৩) গান বাজনা এবং গায়িকার সংখ্যা বেড়ে যাবেঃ
আখেরী যামানার লোকেরা গান-বাজনা হালাল মনে করে ব্যাপকভাবে তাতে আসক্ত হয়ে পড়বে। বর্তমানে ব্যাপক আকারে এই আলামতটি দেখা দিয়েছে। মুসলমানদের ঘরে ঘরে টিভি, ডিস এন্টিনা, ইন্টারনেটসহ নানা ধরণের প্রযুক্তি ঢুকে পড়েছে। ২৪ঘন্টা এগুলোতে গান-বাজনা, উলঙ্গ, অর্ধালঙ্গ নারী পুরুষের ফাহেশা ছবি এবং ফিল্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। এগুলো মুসলমানের সন্তানদের ঈমান আকীদা ও চরিত্র ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে। যারা একাজে মত্ত হবে তাদেরকে তিন ধরণের শাস্তি দেয়া হবে। নবী সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আখেরী যামানায় কোন কোন জাতিকে মাটির নিচে দাবিয়ে দেয়া হবে, কোন জাতিকে উপরে উঠিয়ে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করা হবে। আবার কারো চেহারা পরিবর্তন করে শুকর ও বানরে পরিণত করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো কখন এরূপ করা হবে? তিনি বললেনঃ ‘‘যখন গান-বাজনা এবং গায়িকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে’’।[1]
এই পাপে লিপ্ত হওয়ার কারণে অতীতের কোন কোন জাতিকে এভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বর্তমানেও আমরা প্রায়ই ভূমি ধসে ব্যাপক ধ্বংসের খবর প্রচার মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি। তবে চেহারা পরিবর্তনের ঘটনা সম্ভবত এখনও ঘটেনি। আমরা মুসলিম হিসেবে বিশ্বাস করি, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন তা কিয়ামতের আগে অবশ্যই ঘটবে। দ্বীন-ধর্ম ছেড়ে দিয়ে যে সমস্ত মুসলমান গান-বাজনা ও গায়ক-গায়িকা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তাদের উপরে চেহারা বিকৃত করার শাস্তি অবশ্যই আসবে।
ফুটনোটঃ[1] - ইবনে মাজাহ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে আস্ সাগীর হাদীছ নং- ২১৬
১৪) মদ্যপান হালাল মনে করবেঃ
‘‘নিশ্চয় কিয়ামতের আলামতের মধ্য থেকে একটি আলামত হচ্ছে মদ্যপান ছড়িয়ে পড়বে’’।[1]
মুসলমানদের মাঝে মদ্যপান ও মদের ব্যবসা ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে। কেউ বা অন্য নাম দিয়ে কেউ বা হালাল মনে করে এতে লিপ্ত হচেছ। মুসলিম দেশগুলোতে প্রকাশ্যে মদ বিক্রি হচ্ছে। মুসলমানদের চরিত্র ও আদর্শ ধ্বংস কারার জন্যে সরকারী লাইসেন্স নিয়ে এক শ্রেণীর মুসলমান মদের ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে। মোটকথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী নিশ্চিতরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে।
ফুটনোটঃ[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম।
১৫) মসজিদ নিয়ে লোকেরা গর্ব করবেঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
‘‘যত দিন লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব না করবে ততদিন কিয়ামত হবেনা’’।[1]
ইমাম বুখারী (রঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করে বলেনঃ ‘‘লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে, কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তা আবাদ করবেনা’’।[2] উমার (রাঃ) মসজিদকে জাঁকজমক করতে নিষেধ করেছেন।[3]
মোটকথা আল্লাহর এবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে মসজিদ আবাদ করতে হবে। তা বড় করে নির্মাণ করা ও চাকচিক্যময় করার মাধ্যমে নয়।
ফুটনোটঃ
[1] - মুসনাদে আহমাদ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে, হাদীছ নং- ৭২৯৮।
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সালাত।
[3] - ফাতহুল বারী, (১/৫৩৯)।
(চলবে)
কেয়ামতের ছোট আলামত -২
√√√√√√√√√√√√√√√√√√√√√√√√√√√
৮) আমানতের খেয়ানত হবেঃ
আমানত শব্দটি খেয়ানত শব্দের বিপরীত। আমানতের হেফাযত করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমানতের খেয়ানত করা মুনাফেকের লক্ষণ। আখেরী যামানায় আমানতের খেয়ানত ব্যাপাকভাবে দেখা দিবে। অযোগ্য লোককে কোন কাজের দায়িত্ব দেয়াও আমানতের খেয়ানতের অন্তর্ভূক্ত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক মজলিসে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় একজন গ্রাম্য লোক এসে নবীজীকে এই বলে প্রশ্ন করলো যে, কিয়ামত কখন হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কথা চালিয়ে যেতে থাকলেন। কিছু লোক মন্তব্য করলোঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকটির এই প্রশ্নকে অপছন্দ করেছেন। আবার কিছু লোক বললোঃ তিনি তাঁর কথা শুনতেই পান নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচনা শেষে বললেনঃ প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বললোঃ এই তো আমি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
‘‘যখন আমানতের খেয়ানত হবে তখন কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে বলে মনে করবে। লোকটি আবার প্রশ্ন করলোঃ কিভাবে আমানতের খেয়ানত করা হবে? নবীজী বললেনঃ যখন অযোগ্য লোকদেরকে দায়িত্ব দেয়া হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করতে থাকো’’।[1]
আখেরী যামানায় যখন আমানতদারের সংখ্যা কমে যাবে তখন বলা হবে অমুক গোত্রে একজন আমানতদার লোক আছে। লোকেরা একথা শুনে তার প্রশংসা করবে এবং বলবেঃ সে কতই না বুদ্ধিমান! সে কতই না মজবুত ঈমানের অধিকারী! অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই।[2]
ফুটনোটঃ[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
৯) দ্বীনী ইলম্ উঠে যাবে এবং মূর্খতা বিস্তার লাভ করবেঃ
কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দ্বীনী ইলমের শিক্ষা ও চর্চা কমে যাবে এবং মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে দ্বীনী বিষয়ে মূর্খতা বিরাজ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
‘‘কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে’’।[1] এখানে ইল্ম বলতে ইলমে দ্বীন তথা কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান উদ্দেশ্য। তিনি আরো বলেনঃ
‘‘আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তর থেকে ইল্মকে টেনে বের করে নিবেন না; বরং আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে ইল্ম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবেনা তখন লোকেরা মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে। তাদেরকে কোন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বিনা ইলমেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরা গোমরাহ হবে এবং মানুষদেরকেও গোমরাহ করবে’’।[2]
ইমাম যাহাবী (রঃ) বলেনঃ বর্তমানে দ্বীনী ইল্ম কমে গেছে। অল্প সংখ্যক মানুষের মাঝেই ইলম চর্চা সীমিত হয়ে গেছে। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ইলমের আরো কমতি হবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হবে।
ইমাম যাহাবীর যামানায় যদি এই অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে বর্তমানকালের অবস্থা কেমন হতে পারে তা আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি। বর্তমানে ইলমে দ্বীনের চর্চা কমে গেছে। কুরআন-সুন্নার আলেমের সংখ্যা খুবই নগণ্য। যার ফলে শির্ক-বিদআতে অধিকাংশ মুসলিম সমাজ পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মোটকথা কিয়ামতের এই আলামতটি অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ফুটনোটঃ[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম।
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম।
১০) অন্যায়ভাবে যুলুম-নির্যাতনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় এই উম্মতের মধ্যে একদল লোক আসবে, যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে। তারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিয়ে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হবে এবং আল্লাহর ক্রোধ নিয়েই বিকাল বেলা ঘরে ফিরবে’’।[1]
বর্তমানে আমরা যদি ইসলামী অঞ্চলগুলোর দিকে দৃষ্টি দেই তবে দেখতে পাবো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীটি বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখতে পাওয়া যায় যে, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অন্যায়ভাবে জনগণের উপর যুলুম-নির্যাতন করে থাকে। প্রায়ই সংবাদপত্র ও প্রচার মাধ্যমে জনগণের উপর পুলিশের বেধড়ক লাঠি চার্জের সংবাদ পাওয়া যায়।
ফুটনোটঃ[1] - মুসনাদে আহমাদ, ইমাম
আলবানী সহীহ বলেছেন, দেখুন সহীহুল জামে হাদীছন নং- ৩৫৬০।
(চলবে)
কিয়ামতের ছোট আলামত -২
৬) ভন্ড ও মিথ্যুক নবীদের আগমণ হবেঃ
আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী ও রাসূল। কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবীর আগমণ ঘটবেনা। এটি ইসলামী আকীদার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে অনেক মিথ্যুক মিথ্যা নবুওয়াতের দাবী করে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাই এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মাতকে যথাসময়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
‘‘ত্রিশজন মিথ্যুক আগমণের পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। তারা সকলেই দাবী করবে যে, সে আল্লাহর রাসূল’’।[1] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
‘‘আমার উম্মতের একদল লোক মুশরিকদের সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বে এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হওয়ার পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। আর আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমণ ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে। অথচ আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবী আসবেনা’’।[2]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর ভবিষ্যৎবাণী সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর শেষ বয়সের দিকে মুসায়লামা কায্যাব নবুওয়াতের দাবী করেছিল। তার অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ইয়ামামার যুদ্ধে আবু বকর (রাঃ)এর খেলাফতকালে সাহাবীগণ এই ফিতনার অবসান ঘটান। এমনিভাবে যুগে যুগে আরো অনেকেই নবুওয়াতের দাবী করেছে। তাদের মধ্যে আসওয়াদ আনাসী, সাজা নামক জনৈক মহিলা, মুখতার আছ-ছাকাফী, হারিছ আল-কায্যাব অন্যতম।
নিকটবর্তী অতিতে ভারতে মীর্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নবুওয়াতের দাবী করেছিল। তার অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ভারত বর্ষের অনেক আলেম তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন এবং মুসলমানদেরকে পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সমস্ত ভন্ড এবং মিথ্যুক নবী থেকে উম্মাতকে সতর্ক করেছেন সে তাদেরই একজন। আল্লামা ছানাউল্লাহ অম্রিতসরী অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তার প্রতিবাদ করেন। এতে মিথ্যুক কাদিয়ানী শায়খ ছানাউল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করলে উভয় পক্ষের মাঝে ১৩২৬ হিজরী সালে এক মুনাযারা (বিতর্ক) অনুষ্ঠিত হয়। তাতে এই মর্মে মুবাহালা হয় যে, দু’জনের মধ্যে যে মিথ্যুক সে যেন অল্প সময়ের মধ্যে এবং সত্যবাদীর জীবদ্দশাতেই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে হালাক হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা শায়খ ছানাউল্লাহর দু’আ কবূল করলেন। এই ঘটনার এক বছর এক মাস দশদিন পর মিথ্যুক কাদীয়ানী ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।[3]
এমনিভাবে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত একের পর এক মিথ্যুকের আগমণ ঘটে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক ঘোষিত ত্রিশ সংখ্যা পূর্ণ হবে।
ফুটনোটঃ[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মানাকিব।
[2] - আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ৫৪০৬।
[3] - ইহসান ইলাহী যহীর, আল কাদীয়ানীয়া, পৃষ্ঠা নং- ১৫৫-১৫৯।
৭) হেজায অঞ্চল থেকে বিরাট একটি আগুন বের হবেঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, কিয়ামতের পূর্বে হেজাযের (আরব উপদ্বীপের) যমিন থেকে বড় একটি আগুন বের হবে। এই আগুনের আলোতে সিরিয়ার বুসরা নামক স্থানের উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
‘‘হেজাযের ভূমি থেকে একটি অগ্নি প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবেনা। উক্ত অগ্নির আলোতে বুসরায় অবস্থানরত উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হবে’’।[1]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর ভবিষ্যৎবাণী সত্যে পরিণত হয়েছে। ইমাম নববী (রঃ) বলেনঃ ৬৫৪ হিজরীতে আমাদের যামানায় উল্লেখিত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এটি ছিল বিরাট একটি আগুন। পবিত্র মদ্বীনার পূর্ব দিক থেকে তা প্রকাশিত হয়েছিল। একমাস পর্যন্ত আগুনটি স্থায়ী ছিল।
ফুটনোটঃ[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।(চলবে)
ক্বেয়ামতের আলামতঃ
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
ফিতনার সময় মুমিনের করণীয়ঃ -৩
১১) ফিতনার সময় বেশী বেশী দু’আ করাঃ
বিপদাপদ ও ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্যে দু’আ একটি উত্তম মাধ্যম। দু’আর ফজীলত এই যে, আকাশ থেকে মুসীবত আসার সময় দু‘আর সাথে সাক্ষাৎ হয়। দু’আ ও মুসীবত আকাশে পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। আকাশ থেকে মুসীবত নাযিল হতে চায়। আর দু’আ তাকে বাঁধা দেয়। মুসীবতের সময় এই দু’আ পড়তে হবেঃ
اللَّهُمَّ أَجِرْنِىْ فِىْ مُصِيْبَتِى وَاخْلُفْلِى خَيْرًا مِنْهَا
‘‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে এই বিপদে বিনিময় প্রদান করুন এবং এর পরিবর্তে উত্তম বস্ত্ত দান করুন’’।
যে কেউ এই দু’আ পাঠ করবে আল্লাহ তাকে বিনিময় প্রদান করবেন এবং মুসীবতের স্থলে উত্তম বস্ত্ত দান করবেন। দু’আ করার অন্যতম আদব হলো দু’আ কবূল হওয়ার সময় ও মাধ্যম অনুসন্ধান করা এবং দু’আ কবূল না হওয়ার কারণসমূহ থেকে বিরত থাকা। যেমন হারাম খাওয়া, দ্বীনের কাজে গাফেল থাকা ইত্যাদি।
১২) ফিতনার সময় ধৈর্য্য ধারণ করাঃ
মু’মিন ব্যক্তির সকল কাজই ভাল। কল্যাণ অর্জিত হওয়ার সময় যদি শুকরিয়া আদায় করে তবে তার জন্য ইহাই ভাল। আর বিপদাপদের সময় যদি ধৈর্য্য ধারণ করে তাও তার জন্য ভাল। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
(إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ)
‘‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের প্রতিদান পরিপূর্ণরূপে প্রদান করা হবে।’’ (সূরা যুমারঃ ১০) হাদীছে এসেছে- মুমিন ব্যক্তি সব সময় মুসিবতের মধ্যে থাকে। পরিণামে সে আল্লাহর সাথে নিস্পাপ অবস্থায় সাক্ষাৎ করে।
১৩) ফিতনার সময় দ্বীনের জ্ঞানার্জনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করাঃ
দ্বীনের সঠিক জ্ঞান অর্জনই ফিতনা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন’’।[16] দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে শত্রুদের চক্রান্ত, পরিকল্পনা, ও তাদের অবস্থা সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখতে হবে, যাতে তাদের অনিষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা যায়।
১৪) স্বস্তি ও আশার বাণী প্রচার করাঃ
মুমিনদের দু’টি কল্যাণের একটি অবশ্যই অর্জিত হবে। একটি শাহাদাত ও অপরটি বিজয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
(قُلْ هَلْ تَتَربَّصُونَ بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ وَنَحْنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَنْ يُصِيبَكُمْ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِنْ عِنْدِهِ أَوْ بِأَيْدِينَا فَتَرَبَّصُوا إِنَّا مَعَكُمْ مُتَرَبِّصُونَ)
‘‘হে নবী! আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন! তোমরা কি আমাদের ব্যাপারে দু’টি কল্যাণের একটির অপেক্ষায় আছো? আমরাও তোমাদের ব্যাপারে অপেক্ষায় আছি যে, হয়ত আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হাতে শাস্তি প্রদান করবেন। সুতরাং তোমরা অপেক্ষায় থাক আমরাও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করতে থাকবো’’। (সূরা তাওবাঃ ৫২)
মু’মিনদের পরিণাম হবে জান্নাত। আর কাফেরদের পরিণাম হবে জাহান্নাম। এ জন্যেই তারা তাদের কৃতকর্মের কারণে মৃত্যুকে ভয় করে এবং তা থেকে পলায়ন করতে চায়।
১৫) আল্লাহর চিরন্তন রীতির বাস্তবায়নঃ
মুমিন ব্যক্তি এ বিশ্বাস পোষণ করবে যে, বিশ্ব সৃষ্টি ও পরিচালনায় মহান আল্লাহর কতিপয় নীতিমালা রয়েছে যা কখনও পরিবর্তন হবেনা। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
(فَهَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا سُنَّةَ الْأَوَّلِينَ فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَحْوِيلًا)
‘‘তারা কেবল পূর্ববর্তীদের দশারই অপেক্ষা করছে। অতএব আপনি আল্লাহর বিধানে কোন পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর রীতি-নীতিতে কোন রকম বিচ্যুতিও পাবেন না’’। (সূরাা ফাতিরঃ ৪৩)
আল্লাহ তাআলার এ সকল রীতি-নীতির মধ্যে থেকে অন্যতম নীতি হলো
(১) সত্য ও মিথ্যার মাঝে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই চলতে থাকবে। আমাদের পিতা আদম (আঃ) জান্নাত থেকে বের হয়ে আসার পর থেকে এলড়াই শুরু হয়েছে। আদম ও তার মুমিন সন্তানগণ পুনরায় জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
(وَلَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لَانتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَكِنْ لِيَبْلُوَ بَعْضَكُمْ بِبَعْضٍ)
‘‘ইহা এই জন্য যে, আল্লাহ তাআলা যদি চাইতেন তাহলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেন। কিন্তু আল্লাহ তা না করে একজনকে অন্যজনের মাধ্যমে পরীক্ষায় ফেলে থাকেন’’। (সূরা মুহাম্মাদঃ ৪)
(২) আমাদের পূর্বে অনেক নবী-রাসূল ও নেককার লোকদেরকে ফিতনায় ফেলে পরীক্ষা করা হয়েছে। ইয়াহয়া ও যাকারিয়া (আঃ)কে হত্যা করা হয়েছে। মূসা, ঈসা ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। বেলাল (রাঃ)কে শাস্তি দেয়া হয়েছে। হামযা (রাঃ)কে হত্যা করা হয়েছে এবং তার কলিজা বের করে চিবিয়ে খাওয়া হয়েছে। অথচ তিনি ছিলেন শহীদদের নেতা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
(أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ (২) وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ)
‘‘মানুষেরা কি ধারণা করে যে, তাদেরকে এ কথা বলাতেই ছেড়ে দেয়া হবে যে, আমরা ঈমান এনেছি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবেনা? আমি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে পরীক্ষা করেছি, যাতে আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে জানতে পারেন এবং ইহাও জানতে পারেন যে, কারা মিথ্যাবাদী।’’ (সূরা আনকাবূতঃ ২-৩)
মুমিনকে তার ঈমান অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। অর্থাৎ যার ঈমান যত মজবুত, তার পরীক্ষাও তত বড় ও কঠিন হয়ে থাকে। মানুষের মাঝে নবীদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়ে থাকে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে অন্যদের পরীক্ষা নেওয়া হয়।
(৩) আল্লাহর রীতি-নীতির মধ্যে হতে অন্যতম নীতি হলোঃ
)إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِم(
‘‘আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা তাদের নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে’’। (সূরা রা’দঃ ১১)
মানুষের আভ্যন্তরীণ অবস্থা পরিবর্তনের সাথে সাথে আল্লাহ তাদের বাহ্যিক অবস্থা পরিবর্তন করে দেন। মানুষ যখন আভ্যন্তরীণ অবস্থা ভাল করে নেয় তখন আল্লাহ তাদের বাহিরের অবস্থাও ভাল করে দেন।
পরিশেষে আল্লাহর কাছে সকল প্রকার ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই। আমীন।
ফুটনোটঃ[1] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[2] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[3] - তিরমিজী, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেনঃ সহীহুল জামে আস্ সাগীর হাদীছ নং- ৫১২৫।
[4] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[5] - মুস্তাদরাকুল হাকীম। ইমাম ইবনে হাজার (রঃ) বলেনঃ হাদীছের সনদটি বুখারীর শর্ত অনুযায়ী, ফাতহুল বারী, (১২/৫৫)
[6] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[7] - মু’জামুল বুলদান, (৩/ ৪১৪)
[8] - মিনহাজুস্ সুন্নাহ, (২/২২৪)
[9] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[10] - মুআত্তা ইমাম মালেক। ইমাম আলবানী বলেনঃ হাদীছটি হাসান, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ১৮৬।
[11] - আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সুন্নাহ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ১৭৬১।
[12] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[13] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসলমানদের জামা’আতকে আঁকড়িয়ে ধরা ওয়াজিব।
[14] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আযান।
[15] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[16] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম্।
(চলবে)
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Website
Address
Dhaka
Dhaka, 1206
Educator,Writer,Researcher,Youtuber, Master Reviewer &Master photographer(Google)
Dhaka
কারো প্রতি আমার কোন অভিযোগ নাই।নিজের প্রতি আমার এক আকাশ সমান অভিযোগ।😌🥀🖤💌🫶🫰💁♀