Jechi Monument's

#প্রেমের_সূচনা



আবিদ আর মারিয়ামের বিবাহিত জীবন এই কয়দিন স্বাভাবিক ভাবেই যাচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটনো একদিন যেদিন ওরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে ছিল। সেদিন হঠাৎ করে একটা ছেলে এসে মারিয়ামের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। মারিয়াম ও ছেলেটার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়েছে কারণ ও এই প্রথম দেখছে ছেলে টাকে।

--আপনি কি কিছু বলবেন?

--তার আগে বলো এই ছেলেটা কে? (আবিদকে দেখিয়ে)

--মানে কি,, আপনাকে বলতে যাবো কেনো?

--আমি ওর হাজবেন্ড,, কিছু বলবেন নাকি?

--তুমি এটা আমার সঙ্গে কি করে করতে পারো মারিয়াম? তোমার স্বামী আছে আর তুমি আমার সঙ্গে এতদিন প্রেমের নাটক করেছো?

--কি,, কি আবোল তাবোল বলছেন এসব। আপনাকে তো আমি আজ প্রথম দেখছি।

--হ্যাঁ,, এখন তো না চেনার ভান করবেই। তুমি আমাকে কেনো এতদিন মিথ্যা স্বপ্ন দেখালে।

--এক মিনিট,, আপনি কি বলছেন আপনি জানেন। আমার সামনে আমার ওয়াইফকে এসব কি বলছেন। তাছাড়া কোনো প্রমাণ আছে কি এসব কথার।

--আমি কি এমনি এমনি আসবো? আজকে আমাদের দেখা করার কথা এই রেস্টুরেন্টে। ও আমার কথা মতও সেজে এসেছে। গোলাপি শাড়ী, খোলা চুল আর কি বলবো আমি।

--এগুলা কিসের প্রমাণ,, তাছাড়া আমার স্ত্রী এমন নয়। আপনি নিশ্চয়ই কাওকে ঘুলিয়ে ফেলেছেন।

--আমার কোনো ভুল হচ্ছে না বুঝেছেন। এই দেখুন আমাদের এতদিনের চ্যাট,, আর আজকের চ্যাট ও।

--(আবিদ দেখলো সত্যিই মারিয়ামের আইডি থেকে মেসেজ। এবার আবিদ কিছুটা অবাক হয়ে মারিয়ামের দিকে তাকালো) এসব কি মারিয়াম?

--আমি সত্যি বুঝতে পারছি না,, আমি এই ছেলেটাকে আজকে প্রথম দেখছি।

--ওর সাথে আমার নিয়মিত কথা হয়েছে আর ও এখন কি বলছে শুনুন।

--দেখুন,, আমার এখনো মনে হচ্ছে কোনো ভুল করছেন?

--আমি আপনাকে সব প্রমাণ দিলাম আর আপনি এখনও বলছেন আমি ভুল করছি।

--আচ্ছা যা হয়েছে আমি তার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমার স্ত্রী ভুল করে ফেলেছে আর এমন হবে না। এবার থেকে আমি ওর উপর নজর রাখবো।

--আপনি এসব কি বলছেন,, ক্ষমা কেনো চাইছেন। আমি এমন কিছুই করিনি আবিদ।

--আমরা বাসায় গিয়ে কথা বলবো।

--একটু খেয়াল রাখবেন আপনার বউ এর উপর। (এই বলে ছেলেটা ওখান থেকে চলে গেলো)

--আবিদ আপনি এসব বিশ্বাস করেছেন??

--তুমি বাইরে যাও আমি বিল দিয়ে আসছি।

আবিদ আর মারিয়াম রুমে এসে চুপ করে আছে। না আবিদ কিছু বলছে আর না মারিয়াম। মারিয়ামের এখন ভয় হচ্ছে কারণ আবিদ তখন অনেক রেগে ছিল। ও অনেক সাহস করে আবিদকে ডাকে।

--আপনি কিছু বলছেন না কেনো?

--কি বলবো হ্যাঁ?? কেও একজন এসে বলে তার সঙ্গে তোমার প্রেমের সম্পর্ক তাও বিয়ের পর। এটা আমার জন্য কেমন বিষয় তুমি বুঝতে পারছো?

--আপনি এসব বিশ্বাস করছেন কি করে।

--তুমি প্লিজ যাও এখান থেকে।

--(মারিয়াম মন খারাপ করে ওখান থেকে চলে গেলো)

আবিদ চুপচাপ বসে ভাবছে আসলে ঘটনা কি। ওই ছেলে হুট করে এসে এত কনফিডেন্সে প্রমাণ দেখাচ্ছে। এর দুইটা অর্থ হতে পারে,, হয়তো ছেলেটা সত্য প্রমাণ করতে চাইছে। আর নয়তো কাওকে ফাঁসানোর জন্য এসব করছে। ছেলেটাকে দেখে তো মনে হয়না আমি চিনি। মারিয়ামেরও পরিচিত বলে লাগছে না। আচ্ছা ছেলেটা নিশ্চয়ই কারো কথায় এসব করছে। কিন্তু কার কথায়,,,

--রাব্বি,, শালা এটা কি করলো। আর একটু হলে আমি আমার বউকে হারাতাম। আচ্ছা সেদিন তো মেসেজে মারিয়াম ওকে বলছিলো। "আবিদ আমাকে অনেক বিশ্বাস করে"। আর তখন ওই রাব্বি বলেছিলো আমার এই বিশ্বাস ও ভাঙ্গবে। আর এই জন্যই ও এসব করলো। হায়রে রাব্বি,, তোকে যে আমি কি করবো।
*
*
সারাদিন গেলো মারিয়াম আবিদের সাথে কথা বলছে না। আবিদ অনেক চেষ্টা করেছে কথা বলার কিন্তু লাভ হলো না। আবিদ এবার মারিয়ামের জন্য রুমে বসে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ওর আসার নামই নেই। আবিদ এবার কি ভেবে রিহার রুমে গেলো।

--এই রিহা,, দরজা টা খোল তো?

--কি হয়েছে ভাইয়া?

--মারিয়াম কি এই রুমে?

--হ্যাঁ,, দাঁড়াও। (বলে উঠে দরজা টা খুললো)

--ওকে বল রুমে আসতে।

--কিছু হয়েছে ভাইয়া,, ভাবীকে দেখে মনে হলো মন খারাপ।

--তেমন কিছু না ও বেশি রিয়েক্ট করছে।

--(আবিদ এটা বলার সাথে সাথেই ও সামনে এসে দাড়ালো) আমি বেশি রিয়েক্ট করছি তাইনা। বউয়ের উপর বিশ্বাস নেই আবার বড় বড় কথা।

--তুমি রুমে চলো,, তোমার সাথে কথা আছে।

--আমি যাবো না।

--ভাইয়া তোমরা বরং এখানেই কথা বলো আমি অন্য রুমে আছি। (এটা বলে রিহা চলে গেলো)

--আমাকে শান্তি দিবেন না আপনি। আমি আপনার থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছি।

--তার কোনো প্রয়োজন নেই,, আরে একবার আমার দিক দিয়ে তো ভাবো।

--কি ভাববো,, আমি এত করে বললাম ওই ছেলেকে আমি চিনিও না। কিন্তু আপনি তো ওই কথা বিশ্বাস করেছেন।

--তুমি নিজেই দেখেছো আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু পরে ওই চ্যাটগুলো দেখে মাথা ঠিক ছিলনা। আচ্ছা তুমি আমার জায়গায় হলে কি করতে?

--সময় নিতাম এটা সত্য না মিথ্যা যাচাই করার জন্য। তারপর গিয়ে আমি কোনো একটা রিয়েক্ট করতাম।

--তুমি এটা এখন বলছো কিন্তু তখন তুমিও আমার মতো করতে। শুনো আমি কি কোনোদিন এমন করেছি বলো। আজকে হয়ে গেছে আর কোনোদিন ও হবে না,, প্লিজ ক্ষমা করে দাও।

--আমার কেমন লাগছিল তখন এটা আমি বুঝতে পারবেন না। আমার আপনাকে নিয়ে গর্ভ ছিল যে আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন। কিন্তু আজকে আপনি এটা কেনো করলেন।

--ক্ষমা করে দাও,, আর অবিশ্বাস করবো না। (এটা বলে মারিয়ামকে জড়িয়ে ধরলো)

--আমি ওই ছেলেকে চিনিও না।

--তাহলে এমন কাজ কে করেছে বলতে পারবে? তুমি তো চেনো না কিন্তু সে তো এমন ভাবে আসলো যেনো তুমি তাকে অনেক আগে থেকে চিনো।

--(এটা শুনে মারিয়াম আবিদের থেকে সরে আসলো) তার মানে কেও কি আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমন করলো? কিন্তু কিভাবে,, আমার তো কোনো এমন মানুষ নেই যে এমন করবে?

--(আবিদ যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিল) রাব্বি?

--(মারিয়াম এটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। কারণ ও বুঝে গেছে এটা রাব্বিই করেছে। ও এবার লজ্জায় আবিদের দিকে তাকাতেও পারছে না)

--আচ্ছা বাদ দাও,, এবার প্লিজ রুমে চলো। (মারিয়াম এবার চুপচাপ আবিদের সাথে গেলো)
*
*
*
মারিয়াম আজ ওর মায়ের কাছে এসেছে। এখানে আসার কারণ হলো রাব্বির সাথে কথা বলা। রাব্বি ওর বিবাহিত জীবন টা নষ্ট করতে চাইছে। কিন্তু ও তো সেটা মেনে নিয়ে পারেনা। তাই আবিদকে বলে ও ওদের বাড়ীতে এসেছে।

--কিরে আসার পর থেকে চুপচাপ বসে আছিস? (মারিয়ামের আম্মু এসে ওকে এটা বললো)

--আম্মু রাব্বি এখন কোথায় আড্ডা দেয়?

--এটা জেনে তুই কি করবি?

--বলো না দরকার আছে।

--এই দিকেই একটা ফুলের দোকানের সামনে।

--ঠিক আছে।

--কিছু কি হয়েছে রে?

--নাহ,, আমি একটু আসি। (বলে ও বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেলো।)

মারিয়াম রাব্বিদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর যেতে ইচ্ছেও করছে আবার ভয়ও করছে। কিন্তু কালকের ঘটনার জন্য রাব্বিকে কিছু না বললে ও সাহস পেয়ে যাবে। মারিয়াম এবার গিয়ে রাব্বির সামনে দাঁড়ালো।

--কিরে তুই,, বাপের বাড়ি কি করছিস?

--তুমি এটা কেনো করলে??

--কেনো,, বিশ্বাস করেনি তোকে।

--সেটা তোমার জানতে হবে না,, শুধু বলো এমন কেনো করলে।

--তুই আমাকে ওইদিন তোর স্বামীকে নিয়ে অনেক গর্ভ করে কথা বলছিলি। তাই তোর স্বামীর বিশ্বাস দেখার জন্য এই ছোট চেষ্টা। কিন্তু মনে তো হয়না ও তোকে বিশ্বাস করেছে। (বলে ও হাসলো)

--একটা মানুষ এত খারাপ কি করে হয়। আমার বিয়ে হয়ে গেছে আর আমার একটা সংসার আছে। আর তুই আমার সংসার ভাঙ্গার জন্য এত উতলা হয়ে আছিস। একটা ছেলেকে পাঠিয়ে বলছিস ওর সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক। (মারিয়াম অনেক জোরে কথাগুলো বললো)

--কি করছিস পাগল হয়ে গেছিস,, আশেপাশে লোক আছে ওরা কি ভাববে।

--ওরা যা ভাবার ভাবুক,, ওদেরকেও জানতে দে। যে তুই আসলে কেমন? এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলে বলে কি তুই খুব ভালো। তুই আমার সংসার ভাঙ্গার চেষ্টা করছিস আর আমি কি তোকে এমনে এমনে ছেড়ে দিব।

--মারিয়াম চিৎকার করবি না একদম। আমার বাবার এলাকায় সম্মান আছে। তুই এমন করছিস কেনো,, লোকে কি বলবে। (মারিয়ামের হাতটা জোরে চেপে ধরে বললো)

--লোকের চিন্তা আমি আর করি না। তোকে আমি Harassment এর জন্য জেলে ও পাঠাতে পারতাম। কিন্তু ধরে নে এটা আমার দেওয়া তোকে শেষ সুযোগ। এই আজকেই শেষ বার,, আমার থেকে দূরে থাকবি।

মারিয়াম ওখান থেকে রেগে চলে এলো। আর এদিকে রাব্বির দিকে সবাই কটু চোখে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে রাব্বির মাথা গরম হয়ে গেলো। ও চুপচাপ ওখান থেকে ওর বাড়ীর দিকে চলে গেলো।

--চলবে।

(অবশেষে আজকে ফোনটা হাতে পেলাম।ফোনটা ঠিক করতে দিয়েছিলাম ঈদের আগে।কিন্তু লোকটা তখন ফোন ধরেও দেখলো না।এর মাঝে আবার ঈদের ছুটি আরো দেরি হয়ে যাচ্ছে।বকাঝকা করে অবশেষে ফোনটা ঠিক করালাম।আর আজকেই ফোন অপেন করে এত অবাক। নোটিফিকেশন এ ভর্তি,, গল্প গ্রুপ থেকে আমি ব্যান,, মানে খুশি হবো না দুঃখ পাবো নিজেই বুঝতে পারছি না।)

#প্রেমের_সূচনা



--আপনি ওকে কেনো মেসেজ করলেন?

--দেখতে চেয়েছিলাম তুমি ওকে আমার সামনে দেখলে কি করো। কিন্তু যা দেখলাম আমি মোটেও খুশি হইনি। তুমি এখনও ওকে ভয় পাও।

--আমি মোটেও ভয় পাইনা ওকে।

--আচ্ছা যাও ক্লাসে যাও।

--আপনি ও তো আসবেন বললেন।

--আমি রাফির জন্য আসবো বলেছিলাম।

--আপনি যে কি করেন না। (এটা বলে মারিয়াম চলে গেলো)

--আমি এমন কিছু করবো যাতে রাব্বি এক দিনের জন্য হলেও জেলে যায়। (তারপর আবিদ ওখান থেকে চলে যায়।)

সারাদিন কাজ করে আবিদ রাত নয়টার দিকে বাড়ী ফিরে। ও বাড়ী এসেই দেখে মারিয়াম রান্না করছে। ওর মা তো মারিয়ামকে রান্না করতে দেয়না তাহলে আজ কেনো দিলো। আবিদ হাতের ব্যাগটা রেখে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।

--তুমি রান্না করছো?

--এটা কেমন প্রশ্ন,, আমি রান্না ঘরে আছি যেহেতু অবশ্যই রান্নাই করছি।

--তোমাকে তো রান্না করতে দেখিনা তাই বললাম। তা কি রান্না করেছো?

--একজনের প্রিয় খাবার "মোরগ পোলাও"।

--বাহ বাহ,, কবে থেকে আমার পছন্দে গুরুত্ব দিয়েছো তুমি??

--(মারিয়াম রেগে তাকালো আবিদের দিকে) এজন্য কারোর জন্য কিছু করতে নেই।

--আচ্ছা সরি,, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি খাবার দাও।

কিছুক্ষণ পর মারিয়াম টেবিলে খাবার দিলো। একে একে সবাই একসাথে খেয়ে নিল। মারিয়াম সবকিছু ঘুছিয়ে রুমে আসলে আবিদ ওকে টেনে নিজের পাশে বসায়।

--আমি কালকে আমার না শুনা কথা গুলো শুনতে চাই।

--এখন,, আমি পারবোনা।

--প্লিজ বলো,, না বললে আমি জানবো কি করে।

--আমি কালকে বলতে চেয়েছিলাম অনেক সাহস করে। এখন আমি পারবোনা বলতে।

--তুমি না বললে আমি বুঝবো কি করে? আমাকে বিশ্বাস করো না তুমি?

--(মারিয়াম চুপ করে রইলো কিছু না বলে। কিন্তু ও কতক্ষণ আর চুপ করে থাকবে তাই বলতে শুরু করলো)

"প্রিন্সিপাল যখন আমাকে কলেজ থেকে টিসি দিয়ে বের করেছিল তখন আমি আর অন্য কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারছিলাম না। প্রত্যেকই জানতে চাইতো বছরের মাঝে কেনো টিসি নিয়েছি। তখন আমার বাবা ওই এলাকা ছেড়ে এই এলাকায় আমার নানার দেওয়া এই বাড়ীটায় চলে আসে। কারণ ওখানে বেরও হতে পারতাম না লোকের কানাঘুষার জন্য।"

--এসব আমার জন্য হয়েছে,, আমি যদি সেদিন স্যারের কাছে তোমার নামে বিচার না দিতাম তাহলে এমন হতো না। কিন্তু আমি একবারও বলিনি তোমাকে কলেজ থেকে বের করে দিতে। আমি চেয়েছিলাম তুমি এসব ব্যাপারে আর দুঃসাহস না দেখাও। কিন্তু কি থেকে কি হলো। (মারিয়ামকে থামিয়ে আবিদ এই কথাটা বলে)

--ওসব কথা থাক এখন,, আমার ওসব আর মনে নেই। (কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললো) আর এই এলাকাতেই রাব্বির সাথে আমার পরিচয়। আমার বাবা ওর কলেজেও আমাকে ভর্তি করাতে নিয়েছিল। আর সেদিনই আমি ওকে প্রথম দেখি। এখানে ভর্তি না হতে পারায় বাবা সেদিন আমার উপর রেগে গেলো। আর তখন রাব্বি এসে আমাদের সমস্যা শুনতে চায়। এরপর ও বলে ওর বাবার সাথে কথা বলতে। ওর বাবা এলাকার চেয়ারম্যান আমাকে নাকি ইজিলি ভর্তি করাতে পারবে আর হলোও তাই।

--উনি তোমাকে রাব্বির কলেজে ভর্তি করিয়েছেন?

--নাহ অন্য কলেজে ভালোই হয়েছিল অন্য কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। রাব্বির প্রথম দিন থেকেই আমার উপর নজর ছিলো,, আমাকে নাকি ভালোলাগতো ওর। ও সবসময় আমার কলেজের সামনে আসতো আর আমি সৌজন্যে বোধের জন্য কথাও বলতাম। কারণ ওর বাবা আমাকে এই কলেজে ভর্তি করিয়েছে। ও আমাকে বারবার প্রপোজ করতো আর আমি বারবার রিজেক্ট করতাম।

--এই জন্যই কি তোমার সাথে ও,,,

--নাহ এই সামান্য কারণে না। একদিন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল তাড়াতাড়ি বাড়ী যাওয়ার জন্য একটা নির্জন রাস্তা ধরি আমি। রাস্তাটা দিয়ে বাড়ী যেতে পনেরো মিনিট লাগতো আমার। কিন্তু ওই রাস্তায় মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। চারিদিকে গাছে ভরা আর মাঝখানে রাস্তা। আমি যাচ্ছিলাম হঠাৎ রাব্বি চলে আসে আমার সামনে তাও হাতে ছুরি নিয়ে। সেদিন ও বারবার বলছিল আমাকে ভালোবাসে। আমি যদি এক্সেপ্ট না করি ও নিজেকে শেষ করে দিবো। সেদিন আমি কোনো কথা না পেয়ে বলেছিলাম আমি আপনাকে ভালোবাসি আমি আর কাওকে ভালোবাসতে পারবোনা। আর তখনই ওর আসল রুপ সামনে আসলো। ও আমাকে টেনে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গেছিলো। আমি বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ও আমার হাত চেপে ধরলো আমি আর কিছু করতে পারছিলাম না। (এটুকু বলে মারিয়াম ওর চোখের পানি মুছলো)

--মারিয়াম এবার তুমি কিভাবে ওর থেকে ছাড়া পেলে?

--ওর হাত আমার পুরো শরীরে বিচরণ করছিলো। ওর স্পর্শে আমি শুধু চিৎকার করছিলাম। ধস্তাধস্তিতে আমার শরীলে অনেক আঘাতও লাগে। আমি সাহায্য চাইছিলাম কিন্তু কেওই ছিলো না সাহায্য করার জন্য। আমাকে ধরে রাখার ফলে রাব্বির ছুরিটা পাশেই পড়ে ছিলো। আমি সুযোগ বুঝে ওটা নিয়ে রাব্বির পায়ে গেঁথে দিলাম। ও ব্যাথায় আমাকে ছেড়ে দিলো। আমিও তখন সুযোগ বুঝে ওখান পালিয়ে চলে আসি।

--তুমি রাব্বির শাস্তির ব্যবস্থা কেনো করোনি। ওরা কি তোমাকে কোনোভাবে ব্লাকমেইল করেছিল?

--আমি পুরো ঘটনা আব্বুকে বললে আব্বু রাব্বিদের বাড়ী গিয়ে ওকে অনেক মারে। আমার ছেড়া ড্রেস আর ওমন আঘাত দেখে আব্বুর মাথা ঠিক ছিলো না। আব্বু চেয়েছিল থানায় ওর নামে জিডি করতে কিন্তু সেদিন ওর বাবা এমন এক কথা বলে যার জন্য আমরা সবাই পিছিয়ে যাই।

--কি বলেছিল?

--বলেছে এলাকায় নাকি আমার নামে এমনে একটা বদনাম আছে। আমি নাকি কলেজে খারাপ কাজ করে বেরাই যার জন্য আমাকে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে। এখন যদি রাব্বির সাথে এই ঘটনা জানাজানি হয় তাহলে আমি মুখও দেখাতে পারবোনা। রাব্বির হয়ে উনি সেদিন অনেকবার আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। রাব্বিকে উনি বিদেশে পাঠাবেন পড়ালেখার জন্য। আমার চোখের সামনেও নাকি রাব্বি আসবে না কোনোদিন। তখন আব্বু আমার কথা ভেবেই আর জিডি করেনি।

--তুমি এইটার জন্য ওর শাস্তির ব্যবস্থা করলে না। তোমার সাথে তো খারাপ কিছু হয়নি মারিয়াম।

--এটা কয়জন মানবে, আমি কয়জনকে এই কথা বলে যাবো। আর সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বাস করবেই বা কয়জন। আমি একটা মেয়ে আবিদ এসব কিছু চিন্তা করেই সেদিন আব্বু পিছিয়ে গিয়েছিল।

--তুমি কি চাও ওর শাস্তি হোক?

--নাহ আমি চাইনা,, আমি চাই ও শুধু আমার লাইফ থেকে বিদায় হোক। হ্যাঁ আমি একসময় চাইতাম রাব্বি যেনো আমার মত এমন খারাপ পরিস্থিতিতে পরে। ও যেনো বুঝে কতটা অসহায় লাগে এই সময়টায়। কিন্তু এখন আমি আর এমন কিছুই চাইনা।

--ঠিক আছে,, তুমি ঘুমিয়ে পরো আমার কিছু কাজ আছে।

--আপনার কিছু বলার নেই??

--নাহ,, আর দয়া করে এখন আমাকে ভুল বুঝোনা।

--(মারিয়াম মুচকি হেসে ঘুমাতে চলে যায়)
আজকে আবিদ আবারো মারিয়ামের ফোন নিয়ে বসে আছে। যদিও আজকে ও মারিয়ামকে বলেই ওর ফোন নিয়েছে। আবিদ নিজের ফোনে রাব্বির নাম্বার টা সেভ করে নিলো। আবিদের মাথায় যে কি চলছে এটা শুধু ওই জানে।

--আমার ফোন চেক করা হয়েছে?

--আমি ফোন চেক করছি না একজনের নাম্বার নিচ্ছি।

--রাব্বির?

--হুম,, ওর সাথে একটু কুশল বিনিময় করবো। (এটা বলে ওর রুম থেকে বের হতে নেয়। কিন্তু ও বের হওয়ার আগে মারিয়াম ওর হাত ধরে ফেলে)

--আপনি কি কিছু করবেন ওর সাথে?

--তোমার কি মনে হয়?

--আপনি প্লিজ কিছু করতে যাবেন না। এখন আমার রাব্বিকে নিয়ে কিছু যায় আসে না। আমি আমার রাস্তায় ও ওর রাস্তায়।

--সেটা না হয় সময় বলুক,, আমি এখন আসি। (এটা বলে ও মারিয়ামের কপালে কিস করে চলে গেল)

--আমি কি কোনো ভুল করলাম রাব্বির কথা বলে।

আবিদ অফিসে বসে মারিয়াম সেজে রাব্বির সাথে কথা বলা ওই মেসেজ গুলো পড়ে হাসছিল। রাব্বি এখনও মারিয়ামের প্রতি দূর্বল সেটা ও কালকেই বুঝতে পেরেছে। নাহলে কোন ছেলে কোনো মেয়ের বলার সাথে সাথেই দেখা করতে চলে আসে। আবিদ এবার রাব্বির দূর্বলতা কেই কাজে লাগাবে বলে ভাবে।

--তোমার জন্য যে কি অপেক্ষা করছে তুমি নিজেও জানোনা রাব্বি। (বলে ও মুচকি হেসে ওর কাজে মন দিলো)

---চলবে..

#প্রেমের_সূচনা



আবিদ আর মারিয়াম পাশাপাশি শুয়ে আছে। মারিয়াম এই কিছুক্ষণ হলো ঘুমিয়েছে কিন্তু আবিদের চোখে ঘুম নেই। ও মারিয়াম আর রাব্বির ওই কথাটা ভাবছে। তখন ও মারিয়ামের বাকি কথাটা না শুনে রুম থেকে বের হয়ে গেছিলো। এরপর মারিয়ামও আর আবিদের সাথে কথা বলেনি। আবিদ শোয়া থেকে উঠে আলমারি থেকে একটা ভাঙ্গা হাত ঘড়ি বের করে। ঘড়িটা দেখে ও মুচকি হাসল কারণ ঘড়িটা মারিয়াম দিয়েছিল কলেজে।
কলেজে সেদিন নবীনবরণ অনুষ্ঠান ছিল। স্টুডেন্ট দের পাশাপাশি অনেকের মা বাবাও উপস্থিত ছিল। আবিদও কলেজের শিক্ষক হিসেবে সবকিছু দেখে রাখছিল। হঠাৎ পেছন থেকে কেও একজন ওকে ডেকে উঠে।

--আরে মারিয়াম? (পেছন ফিরে ও মারিয়ামকে দেখতে পেলো)

--আসসালামু আলাইকুম স্যার।

--ওয়ালাইকুম আসসালাম,, কি ব্যাপার এত খুশি।

--স্যার আপনার কি আলাদা করে একটু কথা বলা যাবে।

--না মারিয়াম,, যা বলার এখন এখানেই বলো। আলাদা করে কথা বলতে গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে।

--(মারিয়াম এ কথা শুনে একটা শ্বাস নিলো।) এটা আপনার জন্য। (মারিয়াম একটা ছোট বাক্স এগিয়ে দিল)

--আমার জন্য? (আবিদ বক্সটা নিয়ে খুলে দেখলো একটা ঘড়ি তাও অনেক দামি)

--কেমন হয়েছে?

--তুমি এটা আমাকে কেনো দিয়েছো? আর আজকে তো আমার জন্মদিন বা টিচার্স ডে ও না।

--আসলে আমি ইংলিশ এত ভালো পারতাম না কিন্তু আপনার কাছে পড়ার পর আমি ইংলিশ অনেক ভালো পারছি এজন্য।

--(আবিদ বুঝতে পারে মারিয়াম এই কারণে ওকে ঘড়ি দিচ্ছে না।) Okay,,, Thank you.. (বলে ঘড়িটা মারিয়ামের সামনেই নিজের হাতে পড়লো)

--স্যার আমার আরো কিছু বলার আছে।

--কি বলো?

--(মারিয়ামের এবার অস্বস্তি হতে থাকে কি করে বলবে এটা। আবিদকে সামনাসামনি প্রপোজ করার আইডিয়া টা ওর ফ্রেন্ডরা দিয়েছিল। ও এবার জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে জোরে বললো) Sir I love you...

--(আবিদ তো মারিয়ামের কথা শুনে থ) কি বললে তুমি?

--স্যার আমি সত্যি বলছি।

--তুমি মনে হয় ইংলিশ টা একটু বেশিই শিখে গেছো।

--স্যার আই এম সরি,, কিন্তু আমার মনে যেটা ছিল আমি আপনাকে বলে ফেলেছি। আমি কোনোদিনও এমন দুঃসাহস দেখাতাম না যদি আপনি না হতেন।

--বুঝতে পেরেছি আমার কারণে আজ তোমার এমন দুঃসাহস। তোমার সাহসটা একটু বেশিই বেড়ে গেছে এটা কমানো দরকার। তোমার মা বাবাকে আমি এ ব্যাপারে অবশ্যই জানাবো। (এটা বলে আবিদ চলে যাচ্ছিল কিন্তু মারিয়াম ওর একটা হাত টেনে ধরে। আবিদ এবার রেগে যেই কিছু বলতে নিবে ও খেয়াল করে কলেজে উপস্থিত কিছু স্টুডেন্টের মা বাবা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আবিদের এবার মারিয়ামের উপর আরো রাগ উঠলো। ও মারিয়ামের হাতটা জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।)

--সরি স্যার,, প্লিজ আব্বু আম্মুকে কিছু বলবেন না।

--তুমি যে কেমন বেহায়া মেয়ে সেটা আমি আজ বুঝতে পারলাম। তোমার এই কাজের জন্য আমি তোমাকে কলেজ থেকে বের করার ব্যবস্থা বলছি।(কথাটা আবিদ বেশ জোরেই বললো যা অনেকে শুনতে পেলো)

আবিদ তখন কলেজ থেকে সোজা তার বাড়ীতে এসেছিল। ওর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিল যেনো। মানুষের স্বভাব তিলকে তাল করা। এখন যদি ওই স্টুডেন্টের মা বাবা ওর আর মারিয়ামকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কিছু বলে বেড়ায় তাহলে কি হবে। ওর চাকরিতে এই ঘটনা কতটা প্রভাব ফেলবে এটা শুধু ওই বুঝতে পারবে। হঠাৎ আবিদের নজর হাতের ঘড়িটার দিকে গেলো। ও রেগে ঘড়িটা দেওয়ালে ছুড়ে মারলো।
--আবিদ আপনি এত রাতে আলমারির সামনে কি করছেন?

--(আবিদ তাড়াতাড়ি ঘড়িটা রেখে দিল) ঘুমাওনি তুমি??

--পানি খেতে উঠলাম,, কি করছেন বললেন না তো।

--কিছু না। (বলেই ও খাটে এসে বসলো)

--(মারিয়াম আবিদের কথায় চুপ করে বসে রইলো। ও এবার পানি খেয়ে আবিদের দিকে ফিরলো) আমি বিয়ের আগে বারবার বলতে চেয়েছিলাম রাব্বির এই কথাটা। বিয়ের আগে বললে হয়তো আপনাকে এখন প্রস্তাতে হতো না।

--আমি প্রস্তাচ্ছি? তুমি আমাকে নিয়ে এমন ভাবো?

--আবিদ আপনার প্রস্তানো কি স্বাভাবিক নয়।

--তখন আমি তোমার বাকি কথা শুনতে চাইনি যাতে তোমার ওসব কথা মনে করে খারাপ না লাগে।

--খারাপ লাগবে কেনো আমার,, সেদিন আমি নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিলাম। কথা হচ্ছে আপনি অন্য কারণে শুনতে চাননি। আপনি হয়তো ভয় পেয়েছেন আমি আপনাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করি কিনা। যদি আমার কথা সকালে শুনতেন আমি আপনাকে বরং আমার থেকে আলাদা হওয়ার আলাদা হওয়ার কথা বলতাম। (এটা বলে মারিয়াম ওয়াশরুমের দিকে যেতে নেয়। কারণ আর একটু থাকলে ওর চোখের পানি আবিদ দেখে ফেলতো। কিন্তু ও যাওয়ার আগেই আবিদ ও হাত চেপে ধরে)

--কি বলতে চাইছো তুমি,, তোমার থেকে আলাদা হওয়ার কথা মানে কি?

--আপনি ছোট না যে বুঝেননি।

--আমি এই সামান্য কারণে তোমার থেকে আলাদা হবো এটা তুমি ভাবলে কি করে??

--তো আর কি ভাববো,, বাবা-মা, আরভা ছাড়া এই তৃতীয় আপনাকেই আমি এ কথা বলেছি। কিন্তু আপনি আমার বাকি কথা না শুনেই চলে গেলেন। আপনি নিশ্চয়ই তখন ভেবেছেন আমি অপবিত্র।

--এই,,, (মারিয়ামের মুখটা চেপে ধরে) তোমার সাহস হয় কি করে আমার সামনে এসব বলার। আমার তোমার বাকি কথা শুনা উচিত ছিলো ঠিক আছে। তাই বলে তুমি নিজেকে এভাবে ছোট করবে।

--ছাড়ুন আমাকে,, (আবিদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল) আমি সেদিন চেয়েও রাব্বির শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারিনি জানেন। এই জিনিসটা আমাকে কতটা কষ্ট দেয় এটা আপনি বুঝতেও পারবেন না। (এটা বলে মারিয়াম নিজের মুখে হাত দিল। আবিদ তখন ওর মুখটা অনেক জোরে ধরেছিল যার ফলে ওর মুখটা ব্যাথা করছে।)

আবিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ মারিয়ামকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। মারিয়াম যেন মন খুলে কান্না করার একটা স্থান পেলো। সে আবিদকে ধরে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছিল। আবিদ কিছুক্ষণ পর মারিয়ামকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়।

--আর কারোর জন্য যেনো তোমাকে কাঁদতে না দেখি। যেটা তোমার সাথে হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারলেও তোমার কষ্টটা আমি ফিল করতে পারবোনা। কিন্তু তুমি চাইলেই সেসব ভুলতে পারবে। আমি জানি তুমি আমাকে এখনও ওতটা আপন ভাবতে পারোনি। তাই তোমার মনে আমাকে নিয়ে এমন চিন্তা এসেছে। কিন্তু যেদিন তুমি আমাকে নিজের কাছের কেও ভাববে সেদিন তোমার আমায় নিয়ে সব সন্দেহ চলে যাবে।

মারিয়াম আবিদের কথায় এবার একটু শান্ত হলো। ওর চোখ লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। হটাৎ আবিদ মারিয়ামকে টেনে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। মারিয়াম এর ফলে কিছুটা চমকে উঠলো কিন্তু পরে আরো চমকে উঠলো যখন আবিদ ওকে কিস করলো। মারিয়াম প্রথমে চুপ করে থাকলেও পরে সেও আবিদের চুম্বনে সাড়া দেয়।
সকালে মারিয়াম গোসল করে ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছিল। আবিদকে ও কিছুক্ষণ আগেই নাস্তা দিয়ে রেডি হতে এসেছিল। রেডি হয়ে মারিয়াম ওর ফোনটা নিতে গিয়ে দেখে ওর ফোনটা নেই। ও অবাক হয়ে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো ওর ফোন। তখনই আবিদ এসে ওর ফোনটা সামনে ধরলো।

--আমার ফোন আপনার কাছে ছিল?

--একটু দরকার ছিলো তাই নিয়েছিলাম,, চলো।

--হুম।

মারিয়ামকে নিয়ে আবিদ ওর ভার্সিটিতে এল। কিন্তু আজকে নাকি আবিদ মারিয়ামের সাথে ভার্সিটির ভেতরেও যাবে। মারিয়াম কেনো জানি আবিদের কর্মকাণ্ডে একটু অবাক হচ্ছে। তবুও কিছু না বলে ওর সাথে ভার্সিটির গেটের সামনে আসতেই দেখলো রাব্বি দাঁড়িয়ে আছে। রাব্বিকে দেখে ও ভয় পেয়ে গেল যেটা আবিদ লক্ষ্য করলো।

--কিরে মারিয়াম,,, মেসেজ করে ভার্সিটির সামনে আসতে বললি। কোনো দরকারি কথা আছে নাকি?

--আমি মেসেজ করেছি,, কখন??

--এইতো অনেকক্ষণ আগে। (বলে ফোনে মারিয়ামের মেসেজটা দেখালো। রাব্বি ইচ্ছে করেই আবিদের সামনে মেসেজগুলো দেখাচ্ছে।)

--তুমি কি ওকে আলাদা করে কিছু বলবে,, আমি কি অন্য দিকে যাবো??

--না আমি ওকে মেসেজ করিনি।

--আমি কি মিথ্যে বলছি,, প্রমাণ তোর সামনে। বলেছিস দরকারি কথা আছে ভার্সিটির সামনে আসতে। তুই বলেছিস আমি এসেছি এখন অস্বীকার করছিস কেনো??

--আচ্ছা ও মনে হয় অন্য কাওকে পাঠাতে গিয়ে তোমাকে পাঠিয়েছে মেসেজটা। তুমি কিছু মনে করোনা ওর কথায়।

--তো দেখে শুনে মেসেজ করতে পারিস না। (এটা বলে রাব্বি ওখান থেকে চলে গেলো)

--তুমি ওকে আসতে বলেছিলে?

--(মারিয়াম কি বলবে বুঝতে পারছে না। কালকেই ওর আর আবিদের এই নিয়ে এক ঝগড়া গেলো। এখন ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। আবিদ যদি এখন ওকে ভুল বুঝে কি হবে) আমি ওকে আসতে বলিনি বিশ্বাস করুন। ওকে আমি মেসেজ কেনো করবো। বরং ওই আমাকে মেসেজ দেয় আমি রিপ্লাই দিই না।

--(মারিয়ামের কথায় আবিদ মুচকি হাসে।) আমি করেছি মেসেজ,, মনে আছে সকালে তোমার ফোন আমার কাছে ছিল।

--চলবে,,,

#প্রেমের_সূচনা



মারিয়ামকে ঘুমাতে দেখে আবিদ উঠে মারিয়ামের ফোনটা নিল। আবিদের মারিয়ামের উপর একটু সন্দেহ হচ্ছে। হঠাৎ এমন কি হলো যে মারিয়াম এত চুপচাপ হয়ে গেল। আবিদ ওর ফোনের পাসওয়ার্ড জানতো তাই ফোনটা খুলতে অসুবিধা হলো না। আবিদ কি ভেবে মারিয়ামের ফ্রেন্ডের নাম্বার নিয়ে নিল ওর ফোনে। কিছু না ভেবেই সাথে সাথে কল করলো। আর অপরদিকেও ফোনটা রিসিভ হলো।

--হ্যালো কে?? (মারিয়াম বান্ধবী কল রিসিভ করে বললো)

--আমি মারিয়ামের হাসবেন্ড,, তোমার সাথে দরকারি কিছু কথা ছিল মারিয়ামকে নিয়ে।

--ওহহ,, হ্যাঁ ভাইয়া বলুন।

--আচ্ছা মারিয়ামের কি কিছু হয়েছে,, ও কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। আমাকে তো মুখ ফুটে কিছু বলেই না তুমি কি কিছু জানো?

--ওর আবার কি হবে ভাইয়া ও আগে যেমন ছিল তেমনই আছে।

--তুমি কিছু জেনে থাকলে আমাকে বলো প্লিজ। ওর এমন নিশ্চুপ থাকা আমার ভালো লাগছে না।

--আপনি মারিয়ামকে কিছু বলবেন না তো?

--না বলবোনা,, আচ্ছা ও কি কোনোভাবে আমাকে বিয়ে করে পস্তাচ্ছে?

--না না ভাইয়া এমন কিছু না। আসলে,,

--বলো কোনো কি সমস্যা??

--ভাইয়া মারিয়াম আপনার সাথে হ্যাপি আছে এটা ও আমাকে বলেছে। কিন্তু ও আপনাকে কিছু একটা জানায়নি যার জন্য ওর মনে হয় ও আপনাকে ঠকাচ্ছে।

--মানে,, এমন কি বলেনি আমাকে যে ও এমন করছে?

--ভাইয়া আমি ওত কিছু তো বলতে পারবো না। তবে আপনি মারিয়ামকে রাব্বির সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করবেন। পরে ও যদি আপনাকে সব বলে তাহলে তো ভালো।

--শুধু এই কারণ তো হতে পারেনা ওর এমন হওয়ার,, আর অন্য কোনো কারণ আছে কি??

--আসলে ওর আম্মু ওকে বুঝিয়েছিলো যে বিয়ের পর মেয়েদের একটু শান্ত থাকতে হয়। সবার কথা মেনে চলতে হয় এজন্য আর কি ও এমন করে থাকে এখন।

--(আবিদ বুঝতে পারে মেয়েটা ওকে সব সত্যি বলেনি) আচ্ছা ঠিক আছে,, তোমায় ডিস্টার্ব করলাম,, ভালো থেকো। (বলে কল কেটে দিলো)
*
*
সন্ধ্যায় আবিদ বাইরে থেকে এসে মারিয়ামকে রুমে দেখতে পায়না। ও জামা কাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে রিহার রুমে যায়। ওখানেই মারিয়াম আর রিহা বসে কথা বলছিলো।

--আরে ভাইয়া,, আসো বসো। (রিহা ওর ভাইকে দেখেই এটা বললো)

--কি কথা চলছে দুজনের?

--রিহার বয়ফ্রেন্ডের কথা বলছে। (মারিয়াম হেসে জবাব দিলো)

--তাই নাকি। (আবিদ একটু খুশি হলো মারিয়ামকে এভাবে হেসে কথা বলতে দেখে)

--আরে না,, ভাবী মিথ্যা বলছে।

--হয়তো ওর কথাই সত্যি,, বলতো কে ছেলেটা?

--ভাইয়া তুমিও এবার শুরু করলে?

--শুন,, আজকে আমরা রাতে বাইরে ডিনার করবো। আমি কিছুক্ষণ আগেই রেস্টুরেন্টে টেবিল বুকড করে এসেছি। তোদের তো রেডি হতে অনেক সময় লাগে। কিছুক্ষণ পর থেকে রেডি হওয়া স্টার্ট করিস।

--বাইরে ডিনার করবো আগে বললেন না যে এটা।

--আমি এই প্ল্যান কিছুক্ষণ আগেই করলাম।

মারিয়াম ওখান থেকে উঠে রুমে চলে এলো। আবিদ ওর বোনের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে সেও রুমে এলো। মারিয়াম ওর আর আবিদের পড়ার জন্য জামা বের করে রাখছে।

--তুমি খুশি তো আজকে বাইরে ডিনার করতে যাচ্ছি যে।

--আপনি কি আমার জন্য বাইরে ডিনার করার প্ল্যান করেছেন??

--বলা যায়,, তুমি তো মুখ ফুটে কিছু বলোও না। বিয়ের পর এই আজ প্রথম বাইরে যাচ্ছি আমরা।

--তাতে কি হয়েছে আরো পরেও যেতে পারতাম।

--মারিয়াম তুমি কেনো এমন হয়ে গেলে। তুমি কি সে যে একটা স্বপ্ন দেখে আমাকে ডিম ছুড়ে মেরেছিলো।

মারিয়াম আবিদের কথায় জোরে হেসে ফেলে। আবিদ মারিয়ামকে এভাবে হাসতে দেখে একটু অবাক হয় তবে ওর ভালোও লাগে। মারিয়াম এগিয়ে এসে আবিদের গলা জরিয়ে ধরলো।

--আপনি ওই দিনটা মনে হয় খুব মিস করছেন?

--আমি তোমাকে মিস করছি আগের মারিয়ামকে।

--আমি তো আগের মতই আছি আপনি কেনো আমাকে মিস করছেন।

--তুমি আর আগের মত নেই আর আমি সেটা বুঝতেও পারিনি। আচ্ছা মারিয়াম রাব্বিকে কি তুমি ভালোবাসতে?

--(মারিয়াম আবিদের গলা ছেড়ে দূরে সরে গেলো। আবিদ হঠাৎ রাব্বির কথা কেনো বলছে ও বুঝতে পারছে না) হঠাৎ ওর কথা?

--(আবিদ বুঝতে পারল মারিয়াম একটু অস্বস্তি বোধ করছে। আবিদ এবার মারিয়ামকে নিজের কাছে টেনে আনলো) তোমার বিয়ে হয়েছে বলে তুমি নিজেকে চেঞ্জ করে ফেলেছো। বিয়ে হলেই যে লাইফস্টাইল, কথাবার্তা চেঞ্জ করতে হবে এমন তো না। তুমি তোমার মায়ের কথায় নিজেকে এত চেঞ্জ করেছো।

--আপনাকে এসব কে বললো সত্যি করে বলুন তো?

--আমি সব জানি,, শুনো তুমি যেমন ছিলে তেমনই থাকবে। আমি যেনো আর কোনোদিন না দেখি তুমি চুপচাপ বসে আছো। আমি আগের মারিয়ামকে চাই।

আবিদের কথায় মারিয়াম মাথা নিচু করে ফেলে। আবিদ মারিয়ামের মুখটা উঁচু করে ওর দিকে ফিরালো। আবিদ আস্তে আস্তে ওর ওষ্ঠের দিকে এগোতে লাগলো। মারিয়াম সরে যেতে চাইলে আবিদ ওকে ধরে ফেলে। আবার আবিদের চোখাচোখি হতেই মারিয়াম লজ্জা পেয়ে যায়।

--এত পালাচ্ছো কেনো তুমি,, এমনতো না যে এটা আমাদের ফাস্ট কিস।

--(এটা শুনে মারিয়াম লজ্জায় আবিদের থেকে সরে ওর দিকে একটা বালিশ ছুড়ে মারলো)
*
*
মারিয়ামরা রেস্টরেন্টে বসে যখন খাবার খাচ্ছিলো তখন হঠাৎ আবিদ দেখে রাব্বি কিছুটা দূরে বসে আছে। ওর এই ছেলেটাকে মনে থাকতো না যদি না আজকে মারিয়ামের বান্ধবী এর নাম না বলতো। আবিদ কি ভেবে রাব্বির দিকে হাতে ইশারা করলো। মারিয়াম আবিদের ইশারা লক্ষ্য করে সামনে তাকাতেই দেখল রাব্বিকে। মারিয়াম ওকে দেখে অনেক ঘাবড়ে যায় যেটা আবিদ লক্ষ্য করে।

--আরে তুমি এখানে কখন এলে? (রাব্বি ওদের দিকে এগিয়ে আসলেই আবিদ এটা বলে)

--আমি তো আরো আগে এসেছি। (মারিয়ামের দিকে এক পলক তাকিয়ে)

--আসো আমাদের সাথে বসো।

--না না,, আমি চলে যাবো এখন। তা মারিয়াম কেমন আছিস?

--(মারিয়াম এর প্রতিত্তোরে কিছুই বলেনা)

--এ এখনো আমার উপর রেগে আছে। আচ্ছা আমি আর এখানে না থাকি কেমন। (এটা বলে রাব্বি এখান থেকে চলে গেলো)

মারিয়ামের এমন আচরণে ওর শ্বশুর শ্বাশুড়ি একটু অবাক হয়ে তাকায়। কিন্তু পরে আর পাত্তা না দিয়ে বসে থাকে। আবিদ এবার বুঝতে পারে আসলেই রাব্বিকে নিয়ে অনেক জটিল কিছু আছে। ওরা খেয়ে দেয়ে আসতে আসতে অনেক লেট হয়ে যায়।

--মারিয়াম একটু এদিকে আসো তো। (মারিয়াম সবে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো আর আবিদ ওকে ওর কাছে ডাকলো)

--বলুন।

--(আবিদ কিছু না বলে মারিয়ামের চুলে বেনি করতে লাগলো)

--আপনি পারেন??

--পারতাম না কালকে শিখেছি এবার থেকে আমিই তোমার মাথায় বেনি করে দিব।

মারিয়াম মুচকি হেসে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আবিদ বেনি করা শেষে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আবিদের এভাবে জরিয়ে ধরায় মারিয়ামের মাথা থেকে রাব্বির চিন্তা চলে গেলো। আবিদ মারিয়ামের ঘাড়ে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিল।

--আমাদের সম্পর্ক তো এখন ঠিক আছে তাই না মারিয়াম?

--মানে??

--মানে হলো তুমিও আমাকে মেনে আমিও তোমাকে মেনে নিলাম। আমরা দুজনের ব্যাপারে জানিনা এমন কিছুই নেই। তুমিও সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য নিজেকে চেঞ্জ করলে।

--(আবিদের একটা কথায় মারিয়াম একটু কেঁপে উঠলো। "আমরা দুজনের ব্যাপারে জানিনা এমন কিছুই নেই"। মারিয়াম আবিদের দিকে ফিরলো)

--কি হলো??

--আমার কিছু বলার আছে।

--(আবিদ যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিল) কি বলবে বলো।

--রাব্বির সাথে আমার কোনো ভালো সম্পর্ক নেই। সেদিন ও বউভাতে এসেছিলো আমাকে রাগানোর জন্য। ও যে কতটা খারাপ আপনিও কল্পনাও করবেন না।

--কি বলছো মারিয়াম?

--ও আমাকে রেপ করার চেষ্টা করেছিলো। (এটা বলার সময় মারিয়ামের চোখ ছলছল করছিলো)

আবিদ এমন কিছু শুনবে ও ভাবতেও পারেনি। ও ভেবলছিল হয়তো রাব্বির সাথে মারিয়ামের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ও ভাবতেও পারছে না মারিয়াম আর রাব্বির এমন কিছু।

--চলবে??

#প্রেমের_সূচনা



মারিয়ামের এসব কথার মাঝে ওর কলেজের কথা মনে পড়লো। কলেজে ও কত দুষ্টামি করত এটা ভেবে ও মুচকি হাসলো। ওর দুষ্টামির জন্য আবিদ ওকে বার বার বলতো "এই বয়সে দুষ্টামি কম করো,, আর পড়ালেখায় মনোযোগ দাও"। ও হাসতে হাসতেই ওর মন খারাপ হয়ে গেলো ওইদিনের কথা মনে করে। সেদিন ও আবিদকে প্রপোজ না করলেও পারতো।

"কলেজের অতীত"

মারিয়ামদের কলেজে আবিদ জয়েন করেছে মাত্র তিন মাস হলো। আর ও মারিয়ামদের ইংরেজি ক্লাস নিচ্ছে মাত্র এক মাস হচ্ছে। মারিয়াম ক্লাসে অনেক দুষ্টামি করত। কিন্তু ও প্রত্যেকদিন পড়া কমপ্লিট করে আসতো বলে আবিদ কিছু বলতো না। একদিন মারিয়াম আবিদের পড়ানোর মাঝখানেই আচমকা জোরে হেসে উঠলো। আজকে আবিদ ভীষণ রেগে গেলো পড়ার মাঝখানে এমন করার জন্য।

--Mariam,, Stand up.

--(মারিয়াম চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো)

--হাসছিলে কেনো??

--স্যার আরভা,,

--পড়ালেখা করতে একদমই ইচ্ছে করে না তাই না।

--সরি স্যার।

--পড়ালেখা করতে ইচ্ছে না করলে বাবাকে বলো বিয়ে দিয়ে দিবে। কলেজে এসে শুধু শুধু বাবার টাকা নষ্ট করতে হবে না।

--(মারিয়াম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো)

--এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকো। আমি তোমাকে কিছু বলিনা বলে এটা ভেবো না যে কোনোদিনই কিছু বলবো না। (এটা বলেই আবার পড়াতে লাগল)

--মারিয়াম সরি। (আরভা মারিয়ামের দিকে করুণ তোকে তাকিয়ে বললো। আরভা তখন মারিয়ামকে আচমকা সুরসুরি দেওয়ায় ও হেসেছিল)

--(মারিয়াম কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো)

ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত মারিয়াম দাঁড়িয়ে ছিল। আবিদ ক্লাস থেকে যাওয়ার আগে ওকে বসার পারমিশন দেয়। মারিয়াম বসে আরভার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে উঠে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল।

--দোস্ত সরি। (আরভাও মারিয়ামের পিছন পিছন আসলো)

--It’s okay..

--মন খারাপ করে আছিস।

--আমি কোনোদিন ও স্যারদের থেকে এভাবে বকা শুনিনি,, খারাপ তো লাগবেই।

--আমি স্যারকে বলে দিবো আমি করেছি।

--দরকার নেই,,, পরে উনি দয়া দেখাবেন।

--তুই কি এত রিয়েক্ট করছিস কারণ সে তোর ক্রাশ এজন্য। (আরভা একটু দুষ্টুমির ছলে বললো)

--চুপ কর,, ক্রাশ না ছাই। কোন দুঃখে ফিদা হয়েছি কে জানে।

--ওই দেখ স্যার। (আরভা আবিদকে দেখালো যে এখন অন্য একটা ক্লাসে যাচ্ছিলো)

সেদিন মারিয়াম আবিদের কথায় ভীষণ হার্ট হয়েছিল। আবিদের সাথে হুটহাট দেখা হলে এড়িয়ে যায়। এবং কি মারিয়াম আবিদের কোচিং এ যাওয়া বন্ধ করে দিল। আবিদ সব লক্ষ্য করলেও পাত্তা দিত না। কিন্তু মারিয়ামের মত একটা ভালো স্টুডেন্ট ওর কোচিং এ আসছে না এটাও মানতে পারছে না।
*
*
কিছুদিন পর মারিয়াম যখন কলেজে ডুকছিল তখন হঠাৎ আবিদ ওকে ডেকে উঠে। মারিয়াম আবিদের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে যায় কিন্তু ওর কাছে যায় না। আবিদ এবার বিরক্ত হয়ে আবার ডাকলো।

--জ্বি বলুন। (আবিদের কাছে গিয়ে মারিয়াম বললো)

--তুমি কোচিং এ আসছো না যে??

--ইংরেজি কি এত কঠিন নাকি যে কোচিং এ ও আসতে হবে?

--কীভাবে কথা বলছো তুমি,, শুনো আমি পড়াশোনা একদিকে রাখি আর দুষ্টামি আরেকদিকে। আমি তোমাকে কয়েকটা কথা বলতেই পারি কিন্তু তাই বলে তুমি কোচিং এ আসবে না, রেগুলার পড়া কমপ্লিট করবে না এসব কি?

--আমি এর জন্য কোচিং বন্ধ করিনি। (মিথ্যা কথাটা অনেক সহজেই বলে দিলো)

--দেখো আমার ওইদিন এভাবে কথাগুলো বলা উচিত হয়নি। জানি তুমি এর জন্য আমার উপর রেগে আছো। কিন্তু তুমি সবসময়ই এমন করো আর আমি কিছুই বলিনা। কিন্তু সবসময় তো আর এমন হয়না।

--ঠিক আছে স্যার। (এটা বলে ও চলে যেতে লাগল)

--মারিয়াম,, তুমি পড়ালেখায় অনেক ভালো। এজন্য আমি তোমার উপর একটু বেশিই নজর রাখি। রেগে মাঝে মাঝে হয়তো উল্টা পাল্টা কিছু বলে দিব। ওগুলা নিয়ে মন খারাপ করো না। (এটা বলে আবিদ ওখান থেকে চলে গেলো)

সেদিন মারিয়ামের আরো ভালো লাগতে লাগলো আবিদকে। ও মন খারাপ করে আছে জেনে কত সুন্দর করে ওকে বুঝালো। মারিয়াম কেনো আবিদের প্রতি এত দূর্বল ও নিজেও জানেনা।
*
*
হঠাৎ কারো ডাকে মারিয়াম অতীত থেকে বেরিয়ে আসলো। মারিয়ামের সামনে আবিদ দাঁড়িয়ে আছে। মারিয়াম ভাবছে আবিদ তো মাত্র অফিসে গেছিলো এত তাড়াতাড়ি চলেও এলো।

--এত তাড়াতাড়ি চলে এলেন অফিস থেকে?

--আমি অফিস যাইনি,, আমার কলিগ ফোন করে বলেছে আজকে নাকি অফিস বন্ধ। আমি এটা একদম ভুলে গেছিলাম আজকে যে বন্ধ অফিস।

--এখন??

--চেঞ্জ করে নিই তারপর মায়ের কাছে যাচ্ছি।

--আচ্ছা।

--মারিয়াম তোমার শরীল মনে হয় ঠিক আছে। তুমি এখন ভার্সিটি চলে যাও।

--কই ঠিক আছে আমি যাবো না।

--আমাকে মিথ্যা বাহানা দিবে না,, যাও রেডি হও তুমি আমি তোমাকে গাড়ীতে উঠিয়ে দিব।

আবিদ এটা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আর মারিয়াম একটু চিন্তায় পরে গেলো। কিছু না ভেবে ও ড্রেস চেঞ্জ করে রেডি হয়ে নিলো। ততক্ষণে আবিদ ও বের হয়ে গেলো।

--চলো।

--আমি আজকে না গেলে হতো।

--কেনো বলো তো,,, কেও কি কিছু বলেছে?? (আবিদ মারিয়ামের থেকে ওর মায়ের আদেশটা শুনতে চাইছে)

--নাহ,, কেও কিছু বলেনি।

আবিদ মারিয়ামকে নিয়ে বের হওয়ার সময় ওর মা ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো। মারিয়াম মাথা নিচু করে আবিদের পিছন পিছন যেতে লাগলো। আবিদ শুরু একবার ওর মায়ের দিকে তাকিয়েছিলো।

--তুই ওকে ভার্সিটি পাঠালিই। (আবিদ বাসায় ডুকতেই ওর মা ওকে এটা বললো)

--মা থামো,, আমার রাগ তুলো না।

--চুপ কর,, সবাই কত কথা বলেছে ওকে নিয়ে। যেদিন দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন শুনিসনি ওই লোকটার কথা।

--তুমি এসব বিশ্বাস করো?

--না করে উপায় আছে,, তোর বাবার কথার খেলাপ হতে পারিনি আমি। ও নিশ্চয়ই ভালো ভাবে চলতো না তাই ওকে নিয়ে এত কথা হয়েছে।

--মা আমি মারিয়ামকে চিনি ও খুব ভালো মেয়ে। বাইরের লোকের কাজই হচ্ছে মানুষের ব্যাপারে নাক গলানো আর উল্টা পাল্টা কথা বলা।

--কিভাবে চিনিস তুই মারিয়ামকে??

--চিনি বলতে এতদিনে চিনেছি। মা তুমি জানোনা ও আগে কত চঞ্চল ছিলো আর এখন কতো শান্ত। ও যথেষ্ট চেষ্টা করছে এখানে মানিয়ে নেওয়ার মা। এখন ওকে যদি তুমি এভাবে সবকিছুতে বারণ করো তাহলে কি হবে। ওর তো এবার এটা ভাবতে শুরু করবে যে আমাকে বিয়ে করে ওর এই অবস্থা।

--আমি কি ইচ্ছে করে করছি এসব,, ওকে কিছু বলা মানে এখন আমাদের কেও বলা।

--অফিসে যাওয়ার সময় ফোনে তোমার আর কাকীর কথা না শুনলে আমি জানতেও পারতাম না তুমিই ওকে ভার্সিটি যেতে বারণ করেছো।
*
*
মারিয়ামের ভার্সিটি থেকে আসতে আজকে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এক্সট্রা ক্লাস থাকায় এত দেরি হলো প্রায় তিনটা বাজে৷ বাড়ীতে ডুকতেই সে তার শ্বাশুড়ির মুখোমুখি হলো। উনি মারিয়ামকে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলেন। মারিয়াম ভয়ে ভয়ে নিজেদের রুমে ডুকলো। আবিদকে ঘুমাতে দেখে ও আস্তে আস্তে ব্যাগ রেখে গোসল করতে চলে গেলো।

--মারিয়াম। (মারিয়ামের শ্বাশুড়ি রুমে এসে দেখে মারিয়াম নেই) এই আবিদ।

--হুম মা। (ঘুম ঘুম চোখে বলল)

--মারিয়াম মনে হয় গোসল করছে তুই ওকে খাবারটা দিয়ে দিস। আজকে ওর আসতে অনেক দেরি হয়ে গেছে,, ক্লান্ত লাগছিল অনেক।

--ও আসলো কখন।

--এইমাত্রই এলো,, তুই ওকে খেয়ে নিতে বলিস। (এই বলে উনি চলে গেলেন)

--(আবিদ শুয়ে শুয়ে মারিয়ামের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর মারিয়াম চুল মুচতে মুচতে বের হলো) মারিয়াম।

--হ্যাঁ।

--মা খাবার দিয়েছে খেয়ে নাও।

--আমি তো ওখানে গিয়েও খেতে পারতাম।

--তোমাকে নাকি ক্লান্ত লাগছিল তাই দিয়ে গেছে,, খেয়ে নাও মারিয়াম।

মারিয়াম বসে খেতে শুরু করলো। সকালে ওর শ্বাশুড়ির কথায় ওর ভীষণ খারাপ লাগছিল। কিন্তু সেই তিনিই আবার তার খেয়াল রাখছে। মারিয়ামের চুল থেকে পানি পরে ওর গায়ের জামাটা কিছুটা ভিজে গেছে। আবিদ সেটা লক্ষ্য করে উঠে টাওয়াল টা নিয়ে ওর মাথা মুছে দিতে লাগলো। মারিয়াম খাওয়া থামিয়ে আবিদের দিকে এক পলক তাকালো।

--মারিয়াম আমি মনে হয় তোমার ভালো মত খেয়াল রাখতে পারছি না,, তাই না??

মারিয়াম এ কথার প্রতিত্তোরে কিছুই বললো না। ও খাবার শেষ করে প্লেট টা রেখে এসে খাটে শুয়ে পড়লো। আবিদও মারিয়ামের পাশে শুয়ে ওর মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলো। কিন্তু এমন একটা মুহূর্তে মারিয়ামের চোখে পানি দেখা গেলো।

--চলবে,,,,