𝐃𝐄𝐁𝐀𝐒𝐇𝐈𝐒𝐇 𝐃𝐈𝐏𝐎𝐍 - দেবাশীষ দিপন
খ্যাতির আশা নয়,
শখের সাগরে ভাসা
নেই কোন সংশয়,
মনের জোরে আসা।।
"নারী ক্ষমতায়ন"
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীসমাজকে আঁধার হতে বের করে আলোর মুখ দেখানোর মাধ্যম! কেবল নারী বলেই অবহেলা অবজ্ঞার শিকার না করে প্রতিক্ষেত্রে নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস!
কিন্তু আদতে ক্ষমতায়ন কতটুকু হয়েছে?
হ্যাঁ! নারীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কিংবা চাকুরির দিকে এখন ঝুঁকেছে।। কিংবা আরও নানান দিকে হয়েছে সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন।।
তবুও!
নারীদের নারী হিসেবে অবহেলা বা করুণার দৃষ্টি কমেছে কি?
মত প্রকাশের অধিকার আছে বৈকি কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার?
আদতে বদলায় নি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা! নারীরা এখনও চরম অনিরাপদ জীবন-যাপনই করছে। প্রতিদিন ইলেকট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়াতে অহরহ ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, খুন এর খবর পাওয়া যায়; আর এমন বেশির ভাগ খবরই চাপা পড়ে থাকে পুরুষতান্ত্রিক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে।।
পিত্রালয়ে নানান বাধা-নিষেধের মধ্যে একজন মেয়ে হয়ে বড় হওয়া, বিবাহের পরে একজন বধূ হিসেবে নানান নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে পার করা, মা হিসেবে নানা ত্যাগ-তিতিক্ষায় জীবন পার করা, বৃদ্ধা অবস্থায় নানি-নাতনির লালনপালন আর ছেলে-মেয়ের বাসা-বাড়িতে দৌড়ঝাঁপ করেই একজন নারীর তথাকথিত জীবন কেটে যায়! নারীর জীবনে এ যেন স্বাভাবিক কোন ঘটনা। তবে এই জীবনচক্রে আদৌ কি ক্ষমতায়ন বলতে কোন শব্দের অস্তিত্ব থাকে?
নারী স্বাধীনতা শব্দকে বিরূপভাবে দেখার মানসিকতাই মূলত নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের প্রতি একটি বাধা। আমরা বক্তৃতা কিংবা সভা-সেমিনারে যতই নারী স্বাধীনতা নিয়ে বুলি আউরাই না কেন, নারীকে বেধে রাখি সীমানার গন্ডিতে।।
কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখন আগের চেয়ে অনেকটা এগিয়েছে বটে, তবে ভয়মুক্ত কর্মপরিবেশ এখনও গড়ে ওঠে নি। কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনও নানান রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন, কেউ চাকরি হারানোর ভয়ে মুখ ফুটে বলে না, কেউ চাকরি ছাড়ছে, খুব কম সংখ্যক নারী এর প্রতিবাদ করতে পারছে।
সবচেয়ে বড় কথা, ব্যক্তি নিরাপত্তা নেই নারীদের। প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নারীরা। ঘরে-বাইরে, লোকালয়ে, পাবলিক পরিবহনে কোথাও নারীদের অবাধ-অভয় চলাচল নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এমনকি কেউ কেউ কর্মস্থলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, এমনকি পরিবারের মধ্যেও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যাপারটা যেন কেবল সেই নারীর ভাগ্যের উপর নির্ভর করে!
তাছাড়া পুঁজিবাদী চিন্তাধারায় বানিজ্যিক বিজ্ঞাপনগুলোতে নারীদের করা হচ্ছে যথেচ্ছা ব্যবহার! একজন নারীর সৌন্দর্যকে পণ্য হিসেবে চিন্তা করে বিজ্ঞাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কারণে বাল্য বিবাহ, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুক প্রভৃতি সমস্যা এখন অনেকটাই কমেছে। যদিও নতুন মোড়কে যৌতুক প্রথা এখনও জীবিত আছে- সেটা হচ্ছে উপহার! কিন্তু নৈতিকতার অবক্ষয় এতটাই প্রবল আকার ধারণ করেছে যে ধর্ষণ দিন দিন বাড়ছে তো বাড়ছে।।
যাই হোক!
তাই বলে কি প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা যাবেই না?? এইসবের প্রতিকার বা প্রতিরোধ দুটোই করবে- নারীদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন!!
• বদলাতে হবে মানসিকতা! নারীদের কেবল নারী না ভেবে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে। বদলাতে হবে পুরুষতান্ত্রিক আদিম মনোভাব। পাশাপাশি নারীদেরকে হতে হবে সংগ্রামী। আনতে হবে যুদ্ধ করে ময়দানে টিকে থাকার/জয় করার উদ্যম।
• সামাজিকীকরণ এর মাধ্যম হিসেবে পরিবারকে একটি কন্যা সন্তানকে "মেয়ে"র গন্ডি থেকে পালন না করে তাকে সামগ্রিক পরিসরে বিকাশের সুযোগ দিতে হবে।
• নারী স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের পোশাকআশাককে দায়ী না করে বদলাতে হবে দৃষ্টিভঙ্গী।
• ধর্ষকের শাস্তি প্রাকাশ্যে মৃত্যুদন্ড- এমন কঠোর বিধান করতে হবে।
• কর্মস্থলে নারীদের হেনস্তা বা অপদস্ত করার মানসিকতা বন্ধ করতে হবে। নারীদেরকেও নিজেকে নারী হিসেবে উপস্থাপন করে কর্মক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবার প্রত্যাশা করা বন্ধ করতে হবে।
• একটা নির্দিষ্ট বয়স থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় নারীদের জন্য "মার্শাল আর্ট" অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
• নারীদের প্রতিবাদী মানসিকতা নারী ক্ষমতায়নে খুবই জরুরী একটি অস্ত্র।।
• স্ত্রীকে কেবল সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র না ভেবে, স্ত্রীকে সংসারের অর্ধেক হিসেবে ধারণ করার মানসিকতা আনতে হবে।
• পারিবারিক সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে নারীদের আরও বেশি স্পষ্টবাদী হতে হবে, প্রতিবাদী হতে হবে।
• নারী-পুরুষের সাধারণ সম্পর্কের ভিত্তি হবে শ্রদ্ধা! করুণা বা ভীতি নয়।
• সর্বোপরি একজন নারীকে নিজের মতন বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
নারীদের প্রকৃত মুক্তি হোক। প্রত্যেক নারী হোক একেকজন পুরুষের অনুপ্রেরণা। প্রত্যেক পুরুষ হোক একেকজন নারীর বিশ্বাস-ভরসা।। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এই শুভ কামনা!!
[তিন বছর আগের লেখা]
"ইচ্ছেকে চেপে রাখা কষ্টকে চেপে রাখার চেয়েও কষ্টকর।"
"আমার সোনার বাংলা"
Videography & Editing: দেবাশীষ দিপন
Location: Sylhet, Sunamganj, Moulvibazar & Habiganj.
Music: Flute Cover of National Anthem of Bangladesh
সুখের রাজ্য কারও বসবাস
কারও ভাগ্যে চির সর্বনাশ।
তুমি যাকে নাকি দাও, দু'হাত ভরে দাও
যার কেড়ে নাও, তার সর্বস্ব কেড়ে নাও!
হে নিয়তি,
মানুষকে তুমি সাম্যের গান শোনাও
তবে তুমি কেন এমন পক্ষপাতদুষ্ট?
কখনও বানের জলে ভেসে, জীবন অচল
কখনও চৌচির হয় মাঠ, শুকিয়ে যায় জল।
বৃষ্টি যখন হয়, একটানা ঝরে তো ঝরে
রোদ যখন উঠে, উত্তাপ বাড়ে তো বাড়ে!
হে প্রকৃতি,
মানুষকে তুমি নাকি উদারতা শেখাও
নিজে কেন তবে এতো চরমপন্থী?
———————————————
দেবাশীষ দিপন
কে জানে কাল কি হবে!
স্মৃতিগুলো তো রবে!
প্রাপ্তির পূর্বে চরম উদ্বেগ
অপ্রাপ্তিতে চরম আক্ষেপ
প্রাপ্তির পর তীব্র অসন্তোষ!
স্টল নং ০৬-০৭, নাগরী।।
#কাঙালকাব্য
ছুটির এই দুই দিনে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ থেকে 'কাঙালকাব্য' সংগ্রহ করার আমন্ত্রণ রইলো।।
রোজ সকালে
রোদের ভেলায় কিংবা
কুয়াশার চাদরে
ছুটে চলা অবিরত।
সবুজ চায়ের পাতা
একরাশ সজীবতা।
উঁচু-নিচু টিলা দু'ধারে
মাঝে আঁকাবাঁকা পথ।
পাহাড় ধুয়া স্বচ্ছতা
নদীর আধঘোলা জল
কিষানের স্বপ্ন পাকা ধানে
মাঠে খেলে কিশোরের দল।
রোজকার এই গল্পে
ক্লান্তি মুছে যায়
প্রকৃতির এমন সান্নিধ্য
কয়জনা বা পায়!
--------------------
০১ ডিসেম্বর ২০২২
"প্রকৃতি"
বছরের শেষ দিনই কেবল মনে হয়- ইসস এই বছরটা খুব যলদি চলে গেলো! অথচ নানান ঘটনা পরিক্রমায় প্রবাহিত হয় সময়। আশা নিরাশার দোলাচলে প্রহর কাটতে কাটতে ক্যালেন্ডার বদলায় চিরাচরিত নিয়মেই।
বছর শেষ হয়। শেষ থেকেই হয় আরেক শুরু...!
ঘটনা-দুর্ঘটনা; সুসময়-অসময়; সুখ-অসুখ; প্রাপ্তি-আক্ষেপ- এইতো জীবন গতিপথের নিত্যসঙ্গী।
সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা সতত।।
HAPPY NEW YEAR, 2023
এত পরিকল্পনা
এত সাধ-আহলাদ
ভেস্তে যায় সব
একেকটি অযাচিত ধাক্কায়।।
স্বপ্ন ভেঙ্গে হয় চুরমার
আকাঙ্ক্ষা মাটি চাপা পড়ে
ধূলিস্মাৎ হয় সব
নিয়তির অমোঘ বানে।
ইচ্ছা থাকে, শক্তি থাকে না
সাধ থাকে, সাধ্যে কুলায় না
স্বপ্ন থাকে, তাকে ধরা যায় না
শরীর পুড়ে; দুর্ভাগ্যের রোষানলে।
যুদ্ধে বিদ্ধস্ত প্রাণ
তবু ছুটে চলা
ঘুণে ধরা যৌবন
জীবন আশার ভেলা।।
১২ নভেম্বর ২০২২
দেবাশীষ দিপন
✍️ 𝐃𝐄𝐁𝐀𝐒𝐇𝐈𝐒𝐇 𝐃𝐈𝐏𝐎𝐍 - দেবাশীষ দিপন
তোমাকে আর কি গল্প শোনাবো
বসুধা!
আকাশের স্তর ভেদ করে
আলোকছটা এসে
বাসা বেধেছে আজ
টোল পড়া গালে।
সোনালী এই সময়ে
উঠোনে উঁকি দেয়
কবুতরের ঝাঁক;
কোকিল ডাকে আমার বসন্তে!
নিয়তির উপহাসে
পথ হারিয়ে যখন
খাদে পড়ে এক স্বপ্ন;
কেউ টেনে তুলে নি!
পরাজিতদের দলে ছুড়ে
ব্যর্থতার তকমা জুড়ে
মেখে দিয়ে কলঙ্কের দাগ
কেউ দেয় নি স্থান!
নদীর জল শুকিয়েছে
তৃষ্ণায় গলা হয়েছে কাঠ!
দীপ জ্বলে নি ঘরে
মুখে লেপটেছিলো অভিশাপ।
ছলছল ছন্দে আজ জলকেলি করে
নাম না জানা পড়শী;
ইচ্ছা অনিচ্ছায় টোপ ফেলে
ধরে রাখে বড়শি!
খাদ্যের সন্ধানে স্থানে স্থানে
দুধের মাছি উড়ে
কর্কশ সুর বদলে গেছে
মিষ্টতা হৃদয় জুড়ে!
তুমি রাজসাক্ষী হয়ে থেকো
বসুধা!
দেবাশীষ দিপন
নাগরদোলা!
এ তো জীবনেরই গতিপথ! কেউ উপরে উঠে তো কেউ নিচে নামে! অথচ সবাই ঘুরছে একই কক্ষপথে! কারও অবস্থানই অনড় নয়! কেউ কারও থেকে উঁচু বা নিচু নয়!
|| গালগল্প-০১ ||
জনৈক-১: শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশে তো গ্রামাঞ্চলে দিনে শতবার বিদ্যুৎ যায় আর আসে! এই বিদ্যুৎ দিয়ে লাভ কি তবে? 😡
জনৈক-২: আরে ভাই। দাঁত থাকতে তো আর দাঁতের মর্ম বুঝবেন না! 🤨
জনৈক-১: বুঝিয়ে বলেন তো ভাই। 🥺
জনৈক-২: এখন বুঝালেও বুঝবেন না ভাই। বিদ্যুৎ শতবার গেলেও তো শতবারই ফিরে আসে। সততা কিংবা বিবেকের মতো তো আর একবারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় নাই! 🤪
𝐃𝐄𝐁𝐀𝐒𝐇𝐈𝐒𝐇 𝐃𝐈𝐏𝐎𝐍 - দেবাশীষ দিপন
শিক্ষক!
ছোটবেলায় যখন বাংলা বা ইংরেজি রচনা পড়তাম বা লিখতাম। "আমার জীবনের লক্ষ্য" বা "এইম ইন লাইফ" এ লিখতাম- " বড় হয়ে আমি একজন শিক্ষক হতে চাই কিংবা আই ওয়ান্ট টু বি এ টিচার।" মন থেকেই লিখতাম। কিন্তু এই প্রজন্ম তা কি বলবে বা লিখবে?
শিক্ষকতা এমনই এক মহান পেশা! দেশ ও জাতির সেবা করার একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ পেশা। যেখানে আছে শুধু সম্মান আর মর্যাদা। "শিক্ষাগুরুর মর্যাদা" কবিতাটা আজও শিক্ষকের মর্যাদার স্মারক হয়ে আছে যেন!
পরিবারের পরেই শিশুর সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে শিক্ষকের সান্নিধ্যে কিংবা শাসনে একটা শিশুর ভিত্তি গড়ে উঠে! শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। আর এই শিরদাঁড়ার ভিত্তি স্থাপন করেন শিক্ষক!
এবার আসি মূল আলোচনায়!
শিক্ষকেরা মর্যাদা আদতে পাচ্ছেন কতটুকু? আর সুযোগ-সুবিধা?
আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মূলত এই চার ধাপ পার করে একজন মানুষ উচ্চ শিক্ষা লাভ করে। প্রত্যেক ধাপেই সেই জাতি গড়ার কাজটি ন্যস্ত শিক্ষকদের উপর। এখানেও আছে ভাগ সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি, এমপিওভুক্ত, কিন্ডারগার্টেন প্রভৃতি।
মর্যাদা পাচ্ছেন কাগজ কলমে! বাস্তবে? কেবল মর্যাদা ধুয়ে তো আর পানি খেয়ে লাভ নেই। টিকে থাকতে হলে দরকার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। আমরা শিক্ষকে মাথার উপর স্থান দিলাম, কিন্তু তাঁর জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস বরাদ্দ দিতে পারলাম না! তাতে কি তাঁর মর্যাদা রক্ষা হলো?
খুবই নাজুক বেতন স্কেল দিয়ে আমরা তাদের কাছে সর্বোচ্চ চেষ্টা আশা করি। আর নতুবা শিক্ষকদের সমালোচনা করতেও দ্বিধাবোধ করি না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হচ্ছেন একটি শিশুর মানসিক ভিত্তি গড়ার মূল কারিগর। অথচ এই শিক্ষকেরাই আজ অবহেলিত! কেন তাদের বেতন স্কেল বাড়িয়ে দিলে তাদের জীবন যাত্রার মান কিঞ্চিৎ বৃদ্ধি পেলে এতে সরকারের লাভ হবে বৈ ক্ষতি হবে না! যেখানে বিনিয়োগ দরকার সেখানে বিনিয়োগ না করে উলু বনে মুক্তা ছড়িয়ে লাভ কি হচ্ছে?
এমপিওভুক্ত স্কুল কলেজের শিক্ষকেরা তিন মাস চার মাসে একবার বেতন পান একসাথে! কিন্তু উনাদের পরিবারের মাসের খরচ কে চালাবে? নিজের ভিত্তি ঠিক থাকলেই তো উনারা জাতির ভিত্তি গড়ার দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারবেন! শুধু তো দোষ দিলে হবে না, কিঞ্চিৎ সুযোগও দিতে হবে!
আর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্যাডার সার্ভিসের সাথে তাদের গ্রেডেশন বৈষম্য রয়েছে। তাছাড়া গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে।
তাহলে আমরা শিক্ষকদের কিভাবে মর্যাদা প্রদর্শন করছি?
হ্যাঁ! সমালোচনা থাকতেই পারে! একজন শিক্ষক, তার শিক্ষক পরিচয়ের আগেও একজন মানুষ। আর মানুষ ভুল করেই।। মানুষ অমানবিক কাজ করেই। সেটার জন্য শাস্তি বরাদ্দ আছেও। একজন শিক্ষক তার ছাত্রীকে মানসিক, শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন, ধর্ষণ করেছেন, শিশু ছাত্রের সাথে অমানবিক আচরণ করেছেন, ছাত্র-ছাত্রী পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছেন, শিক্ষক দুর্নীতি করেছেন, শিক্ষক রাজনৈতিক অপব্যবহার করেছেন। মানছি। তবে কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর এমন অপকর্মে পুরো শিক্ষক সমাজকে এমন কালিমা লেপে দিতে পারি না। ওগুলো তার ব্যক্তি আচরণের বিচ্যুতি! এবং তার শাস্তির বিধানও রয়েছে।
বরং আমরা যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যেমন দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছি, তা থেকে বেরিয়ে আসলে যোগ্য ব্যক্তি যোগ্যস্থানে নিশ্চয়ই যাবে। নিশ্চয়ই দেশ গড়ার কারিগর দেশই গড়বে। আর শিক্ষকদের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে না!
শিক্ষকতা কাজ যতটা মহান তার চেয়ে বেশি কঠিন। আপনি ভালো ছাত্র। সব বুঝেন। কিন্তু আমাকে বুঝাতে যান সহজে বুঝাতে পারবেন না। কারণ এটা একটা কৌশল, এটা একটা পদ্ধতি, এটা একটা শিল্প, যা আয়ত্ত করতে হলে দরকার পর্যাপ্ত জ্ঞান, ধৈর্য ও প্রশিক্ষণ। তাই এক কঠিন কাজ যারা করছেন তাদের জীবিকা নির্বাহের নিমিত্তে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে তাদের জীবনকে সহজ করে দেয়াটাই সমীচীন।।
উন্নত দেশে শিক্ষকের অর্থনৈতিক সুবিধা সবচেয়ে বেশি, তাই তাদের আউটপুটও বেশি। আমরা গাছে জল দিবো না, আর সাড়ে তিনদিন পরে এসে ফল খাওয়ার আশা করবো, তা তো হয় না!!
আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস।
শিক্ষকগণের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। একটাই কামনা। শিক্ষকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা প্রদানে তাদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হোক। এতে অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সকল সমস্যা মিটে যাবে। কেবল দেশের মঙ্গল হবে।
যে শিক্ষক একটি জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়, সেই শিক্ষককে আগে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিন।
তবেই এই প্রজন্ম বড় হয়ে আবার শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখবে...
05.10.2020
লিখতে গিয়ে কলম ভাঙে না।
শিক্ষিত তো!
সত্য লিখা বা বলা হয় না।
ভয় আছে তো!
নির্বোধ হয়ে বাঁচায় তৃপ্তি মেলে
পা চাটার স্বাদে।
মেরুদন্ড ভেঙেছে সেই কবে
শক্তি নাই কাধে।
বুদ্ধি বেচার জীবিকা বেছে
টিকে থাকার লড়াই।
বিবেককে মাটিতে চাপা দিয়ে
শিক্ষিত হবার বড়াই।।
২৮.০৯.২০২২
𝐃𝐄𝐁𝐀𝐒𝐇𝐈𝐒𝐇 𝐃𝐈𝐏𝐎𝐍 - দেবাশীষ দিপন
আমার সাথে না তো
কার সাথে করবে অভিমান?
তোমার ধ্বংসস্তূপ থেকে
ছোট্ট টুকরা কুড়িয়ে, তাতে
কেবল আমার চেহারাই দেখি;
কাচের মতোই স্বচ্ছ এক ভালোবাসা।।
বড্ড জেদি তুমি
বারুদের মতো ঝাঁঝালো তোমার অভিমান!
ভেঙে চুরমার হয়েছে সব
তোমার মস্তিষ্কের আনাচে কানাচে
হারিয়েছি আমার বসবাস;
অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলে হয়েছি যাযাবর।।
আমার সাথে না তো
কার সাথে করবে অভিমান?
যুদ্ধাহত এক নারীর মত
হৃদয়ে তোমার বিঁধেছে শূল
যে আঘাত দিচ্ছে অবিরত পীড়া;
অথচ এসব আমারই ভুল!!
না হয় এবার ফিরে এসো
সকল অভিমান ভেঙে!
শোধরাবো আমি অনুতাপের আগুনে
নিজেকে মোড়াবো নতুন খামে।
আবার না হয় সূর্য উঠবে
তোমার আমার নামে!
---------------
অভিমান
১০.০৯.২০২২
𝐃𝐄𝐁𝐀𝐒𝐇𝐈𝐒𝐇 𝐃𝐈𝐏𝐎𝐍 - দেবাশীষ দিপন
বিস্বাদের গন্ধ কেন
আঁধারের বুকে
সময় দৌড়ায় যেন
অসীমের দিকে।
বহুকাল কেটে গেছে
বহুদিন পর
মহাকাল আছে বেঁচে
শূন্য নিথর।
এক||
চমক চমকিত চিত্তে চন্দ্রিমার আলোর নিচে ভালোভাবেই পাড়ি দিচ্ছিলো পথ। রাত্রি দ্বি-প্রহর। সুনসান নীরবতায় শুকনো পাতার উপর পায়ের আলিঙ্গন ধ্বনি কানে বাজছে। আবছা আলোয় পথের দু'ধারের কলাগাছের পাতাকে মনে হচ্ছে কারা যেন অনেকগুলো পাখা নিয়ে ভয়াল হাতছানি দিচ্ছে পৃথিবীকে।
রাস্তার দু'পাশে জঙ্গলময়। চেনা এ পথ। যেতে তাই ভয়ের সঞ্চার হয় না চমকের। যদিও কোন আগন্তুকের কাছে এই পথ পাড়ি দেয়াটা বিভীষিকাময় হতে পারতো! চমকের বাড়ি প্রায় নিকটবর্তী দূরত্বে। চমক বাড়িতে একাই থাকে। মা-বাবা মরা ছেলের ভাগ্যে এখনও কোন লক্ষী জুটে নি। তাই এ গ্রাম ও গ্রাম থেকে তার ডাক আসে প্রতিনিয়ত। চমকও মানুষের প্রয়োজনে দৌড়ায় এ দ্বার থেকে ও দ্বারে।
চমকের বাড়ির পাশে ছোট্ট একটা পুকুর। পুকুরের পশ্চিমপাশে চমকের দুই রুমের আধাপাকা ঘর। ঘরের সামনে একটা উঠান। উঠানের এক কোণে টিউবওয়েল। তারপাশেই শৌচাগার। পুকুরের পাড় ঘিরে বেশকিছু গাছ। পুকুরপাড়ের পাশ দিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সরু পথ। এর আশেপাশে আধামাইলের মধ্যে আর কোন বাড়ি ঘর নেই। এই জায়গাটা এক সময় পতিত ছিলো বলেই শুনেছে ছোটবেলায়। তার আগেও নাকি এটা ছিলো শ্মশানঘাট।তাই এখানে কারও বাড়িঘর নেই। তবে চমক কখনই এমন কোন উদ্ভট কোনকিছু পায় নি এখানে।
পুকুরপাড়ের পাশের রাস্তাদিয়ে বাড়িতে প্রায় ঢুকবে, তখনই চমক চমকে গেলো। ডানপাশে তাকাতেই সে দেখলো পাড়ে দেখলো এক ভয়াল শ্বেতমূর্তি। ঠিক তার বাবা-মায়ের শ্মশানের উপর ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। চমকের পুরো শরীরকে যেন কোন এক হিমবাহ এসে ঝাপটে ধরে রেখেছে। নি:শ্বাসগুলো বুকের ভেতরে ঢুকে যেন আর বের হতে চাচ্ছে না। বুকটা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। তবু সেই সাদা অবয়বের দিকে মুখ তুলে তাকালো চমক!
আরে এ তো চন্দনা! দুলাল কাকার মেয়ে। মাত্র তার শবদেহ দাহ করে ফিরছিলো সে।। বারংবার চোখ বুজে ফের তাকাচ্ছিলো। কোন ভুল হচ্ছে না তো! এ তো অসম্ভব! চন্দনা আজ সন্ধ্যার পর গলায় দড়ি দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। তার মৃত্যুরহস্য নিয়ে গ্রামে তোলপাড়! কিন্তু সে এখানে কেন? তবে কি এটা চন্দনার প্রেতাত্মা?
কোন কিছু বুঝার আগেই চমক প্রাণ বাঁচাতে দৌঁড় দিলো তার বাড়ির দিকে। পেছনে আর ফিরে তাকালো না। বাড়ির উঠানে আসতেই তার হৃদযন্ত্র প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম। এ কি দেখছে সে?
বাতাসে কেবল ধূপের গন্ধ। ঠিক মৃত লাশের পাশে যেমনটা গন্ধ লাগে। চমকের ঘরে বাতি জ্বলছে। দরজা খোলা! অথচ সেটা খোলা থাকার কথা না! উঠোনের ঠিক মাঝখানে একটা খাটিয়ার উপরে একটা সাদা চাদরে ঢাকা লাশ। লাশের আশেপাশে কেউ নেই। কেউ না!
চমকের পা থেকে মাথা পর্যন্ত কেউ যেন শক্ত করে ধরে ধরে কিছু একটা উপরে তুলছে, আর ক্রমশ শরীর নিচ থেকে উপর পর্যন্ত অচেতন হয়ে পড়ছে। চোখ দুটো চমকের ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই একটা দমকা হাওয়া এসে লাশের গায়ে রাখা সাদা কাপড়টা খানিক সরে গিয়ে লাশের ঝাপসা মুখটা চমকের চোখে ধরা দিলো।
এ তো চন্দনা!!
দুই||
চব্বিশ ঘন্টা পরে জ্ঞান ফিরলো চমকের! চোখ খুলতেই হঠাৎ উঠে বসলো সে! নাহ! চারপাশে শুধু মানুষ আর মানুষ। সবাই শুয়ে আছে। অনেকগুলো বিছানা পুরো কক্ষ জুড়ে। প্রতিটা বিছানায় শুয়া মানুষের পাশে আরও মানুষের ভীড়। চমকের বিছানার পাশে কেউ নেই।
উঠানে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে কাল সকালে গ্রামের দুজন লোক তাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করে গেছে। চমকের জ্ঞান ফিরেছে দেখে কর্তব্যরত নার্স তার বেডের দিকে এগিয়ে এসে তাকে শুয়ে থাকতে পরামর্শ দিলো।।চমকের সেই রাতের ঘটনা মনে পড়তে তার গা টা শিউরে উঠলো আরেকবার। ভাগ্যিস সে যাত্রায় সে বেঁচে গেছে।।
কোলাহল থেমে গেছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডের দিনের ব্যস্ততা নেই এখন। প্রতিটা বেডের সবাই ঘুমোচ্ছে। ঘুম নেই চমকের। চোখ বুজলেই মন শুধু চন্দনার চেহারা খুঁজে। দাহ করার আগে কি সুন্দর শুয়েছিলো সে। দেখে বুঝার উপায় ছিলো না যে সে মারা গেছে। মনে হচ্ছিলো চন্দনা ঘুমাচ্ছে। খুব মায়া হচ্ছিলো তখন চন্দনার জন্য। অথচ সেই দেহখানিকে পুড়াতে হয়েছে। প্রাণহীন দেহ যে অচল!
বাতি নিভু নিভু জ্বলছে। আঁধার কেটেছে, কিন্তু আলোকিত হয় নি এমন অবস্থা। একটা কক্ষে কমপক্ষে বিশজন মানুষ, তবু চমকের খুব একা লাগছে। পাশের বিছানা থেকে একটা আচমকা আওয়াজ এলো- আমি চন্দনা! কে কে কে- বলে ভয়ে ঘুরে তাকালো চমক। কই পাশের বিছানার রোগী দিব্যি ঘুমাচ্ছে। তবে কে এই শব্দ করলো!! চমকের গলা শুকিয়ে আসে। একটু পানি পিপাসা লাগে তার। গলাটা শুকিয়ে যেন চৈত্রের দুপুর হয়ে রয়েছে।।
কে দেবে পানি? নার্সকে ডাকলো আস্তে করে। একজন নার্সকেই দেখা যাচ্ছে। সে তার চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে। চমকের ডাকে সে কর্ণপাত করছেই না। চমকের তৃষ্ণা বেড়েই চলেছে। চোখে ভাসছে চন্দনার ছবি আর বারবার মনে পড়ছে সে রাতে পুকুরপাড় আর উঠানের দৃশ্য। কোনভাবেই হিসাব মেলে না! ওটা তার মনের ভুল ছিলো না।
বিছানা থেকে উঠে আস্তে আস্তে সে নার্সের দিকে যাচ্ছে চমক। নার্সকে জাগিয়ে পানি পানের ব্যবস্থা করতে হবে। আশপাশের বিছানার দিকে তাকাচ্ছে সে। রোগীরাও রাতে ঘুমায়! ব্যাপারটা কেমন জানি অদ্ভুত ঠেকছে তার কাছে।। সে ধীর পায়ে এগুচ্ছে নার্সের দিকে! অদ্ভুত তো! হঠাৎ করে ধূপকাঠির ঘ্রাণ নাকে এসে লাগা শুরু হয়েছে। চন্দনার লাশের পাশে এমন ধূপকাঠির ঘ্রাণ লাগছিলো। শিহরণে চমকের হাত পায়ের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। সিস্টার সিস্টার ডেকে টেবিলের দিকে এগোয়। নার্স তো উঠে না। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। আমাকে একটু পানি দিন সিস্টার, বলে সে নার্সের ঠিক কাছে যেতেই নার্স মাথা তুলে তাকায় চমকের দিকে।
এ কি! চন্দনা এখানে কেন? নার্সের বেশে চন্দনা! চমক দু'কানে হাত দিয়ে চেপে চিৎকার করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার গলা দিয়ে আওয়াজ যেন বেরোয় না। চন্দনারূপী নার্সের দু'চোখ জ্বলজ্বল করতে থাকে। চন্দনা চমকের দিকে ধীরে ধীরে এগুতে থাকে। আর চমক পেছাতে থাকে। ধূপকাঠির ঘ্রাণ আরও তীব্র হয়।। চন্দনা মুচকি হাসে। কিন্তু সে হাসিতে কোন শব্দ হয় না। চমক চিৎকার করে , কিন্তু কোন রোগীর কানে সেই শব্দ পৌঁছায় না।
কিছুক্ষণ পর সামনে এগুতে এগুতে চন্দনা হঠাৎ উধাও হয়ে যায় বাতাসের মাঝে। পাশের বেডের রোগী উঁকি মেরে বলে- কি ভাই আপনি এত রাতে একা একা হাঁটছেন কেন? না মানে ইয়ে, পানি পিপাসা পেয়েছিলো, তাই। পাশের বেডের রোগী বিব্রতস্মরে বলে- আরে ভাই, পানি তো আপনার বেডের পাশের মেডিসিন রাখার মিনি টেবিলেই দেখা যাচ্ছে, আপনি ওদিকে কি খুঁজছেন?
সত্যিই তো পানি তো এখানেই আছে। নার্সের টেবিল চেয়ার ফাঁকা। রাতের বেলা নার্স পাশেই থাকে, একটা পর্দা দিয়ে আলাদা করা ছোট্ট রুমে। কোন উদ্ভট ঘ্রাণও নেই এখন আর। চমক ঘামছে। প্রচন্ড ঘামছে। বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেন ধুক ধুক করে করে আঘাত করছে বুকের বামপাশে। কোনটা বিশ্বাস করবে আর আর কোনটা অবিশ্বাস করবে- সেটা সে বুঝে উঠতে পারে না।
দু'দিন দু'রাত হাসপাতালে কাটিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে চমক। গতদিনটা একদম ভালো কেটেছে তার। চন্দনা আর আসে নি। কোনও ভয়ও কাজ করে নি। বাড়িতে তার এক দু:সম্পর্কের কাকাতো ভাইকে এনেছে। কয়েকটা দিন একা না থাকার ইচ্ছা তার।
দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রামের জন্য শুতে যাবে চমক। তখনই ঘরের দেয়ালে চোখে গেলো তার। একটা চিহ্ন আঁকা দেয়ালে। খুবই অস্পষ্ট চিহ্ন। নাহ! এই চিহ্ন তো দেয়ালে ছিলো না। সে তার সাথে আসা কাকাতো ভাই নেপালকে ডাক দেয়। নেপাল এমনিতেই চোখে একটু কমই দেখে, সে দেয়ালে কোন চিহ্নের অস্তিত্ব খুঁজে পেলো না। অথচ চমক স্পষ্ট একটা চিহ্ন দেখছে। এই চিহ্নটা কোথায় যেন দেখেছে আগেই। বহু কষ্টে মনে পড়লো- এই চিহ্ন টা চন্দনার জন্মদাগ! শব দাহ করার আগে এই জন্মদাগ টা চন্দনার গলায় দেখতে পেয়েছিলো চমক। কিসের ইঙ্গিত এটা?
বিছনায় শুয়ে শুয়ে এইসব অদ্ভুত ঘটনা নিয়ে ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো ঘুমে ভারী হয়ে আসে চমকের। যেমনি চোখ দুটো বুজলো; কে যেন তার বুকে বসে গলা চেপে ধরে বললো- চন্দনা মরে নি। চন্দনা মরে নি।। বাতাসে আবার ধূপকাঠির উদ্ভট ঘ্রাণটা নাকে আসতে লাগলো!
তিন||
কাকাতো ভাই নেপালের ডাকে ঘুম ভাঙে চমকের। চমকে উঠে বিছানায় বসে এপাশে ওপাশে তাকায় সে। ঘামে পুরো ভিজে গেছে। নেপাল একটা গ্লাসে করে পানি আর দুটো ওষুধ বাড়িয়ে দেয় চমকের দিকে। কখন ঘুমিয়েছিলো টেরই পায় নি চমক। দেয়ালে আঁকা সেই অদ্ভুত চিহ্নটা খুঁজতে থাকে, কিন্তু আর সেটা খুঁজে পায় না।
দিনের আলো প্রায় যায় যায়। দূরের মসজিদ থেকে আযানের সুর আর উলু ধ্বনি আর শাখের আওয়াজ আসে। পিড়ি নিয়ে ঘরের বারান্দায় বসে চমক। উঠোনের চার কোণে চোখ ঘুরায় আবার চোখ চলে যায় অদূরে পুকুরপাড়ে তার মা বাবার শ্মশানের দিকে। নির্জন এ বাড়িকে আজ খুব ভুতুড়ে মনে হচ্ছে চমকের! অথচ এই বাড়িতে কেটেছে তার কৈশোর, যৌবনের প্রথম ভাগ- একাকী।।
তোমার কি হয়েছে চমক দা? নেপালের কন্ঠ শুনে আবার আতকে উঠে ফিরে পাশে তাকায় সে! নেপাল, তুই না আমার ঘুম ভাঙিয়ে বাজারে গেলি, কখন ফিরলি? কই না তো, আমি তো তোমার পাশেই পিড়ি নিয়ে বসেছিলাম চমক দা। চলো পুকুরপাড়ে গিয়ে বসি, বিদ্যুৎ চলে গেছে, প্রচন্ড গরম। চমক না সূচক মাথা নাড়ায়। এই সন্ধ্যাবেলা পুকুরপাড়ে গিয়ে বসা যাবে না! নেপাল তবু নিয়ে যায় চমককে!
পুকুরঘাটটা বেশ পাকা করা চমকদের। একসময় এই এলাকার সকল শবদাহ করার আগে আর পরে গ্রামবাসী এই পুকুরেই স্নানকর্ম সেরে নিতো বলে শুনেছিলো চমক তার বাবার কাছ থেকে।
মৃদু হাওয়া বইছিলো। আঁধার-আলোর সন্ধিক্ষণটা খুব মায়াবী। নিশ্চল জল এর উপর সাঁঝের মায়ার প্রতিফলন খুব ভালো লাগছিলো চমকের। বিপত্তি ঘটে তখনই যখন আনমনে তার চোখ চলে যায় পাড়ের শ্মশানের দিকে। তার মা-বাবার শ্মশানে এক আটি ধূপকাঠি জ্বলছে। ধূপকাঠির গন্ধ হঠাৎ করেই বাড়ছে যেন। কিরে নেপাল, মা-বাবার শ্মশানে ধূপকাঠি তুই জ্বেলেছিস? কই কি দেখো চমক দা, ওখানে তো কিছুই নেই। চমক আবার তাকিয়ে দেখে সত্যিই তো কিছু নেই!! তবু ভয় লাগতে শুরু করে চমকের! নেপাল চল, ঘরে যাই আঁধার নেমেছে- এই বলে পুকুরঘাট থেকে উঠতে যাবে চমক, নেপাল তার হাতটা জাপটে ধরলো। কোথায় যাবে চমক?
এ কি নেপালের গলা এত কর্কশ হয়ে গেলো কিভাবে? তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। নেপাল কি হয়েছে তোর? মানে কি নেপালের গলায় সেই অদ্ভুত দাগটা ভেসে উঠেছে! নেপাল চুপ করে তাকিয়ে আছে চমকের দিকে। ধূপকাঠির গন্ধ আবার পাচ্ছে সে। সে দৌড়ে ঘাট থেকে পেছনে সরে গেলো। কোথায় নেপাল? ঘাটে তো কেউ নেই!
কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চমক! হাত পা থর থর করে কাঁপছে , কিন্তু শত চেষ্টা করেও পা টা নড়ছে না! লাশপোড়া একটা গন্ধ আসছে। সে গন্ধে পেট মুচড়িয়ে বমি আসছে যেন। নেপাল নেপাল বলে ডাকতে শুরু করলো চমক!
আমি এখানে! তীব্র কর্কশ কন্ঠে এক নারী উত্তর দিয়ে পুকুর এর পানির নিচ থেকে মাথাটা বের করলো। চন্দনা!!!! ধীরে ধীরে চন্দনা পুকুর এর পানি থেকে সিঁড়ি বেয়ে ঘাটের উপরের দিকে আসতে লাগলো, ভয়াল সুন্দর ভঙ্গিতে! ভেজা শরীর, খোলা চুল, একটা চোখ বুজা আরেকটা খোলা, সন্ধ্যার আঁধারমাঝে দাঁতগুলো চকচক করছে, শাড়ি প্যাঁচ দিয়ে পরা। গলা দিয়ে অদ্ভুত এক শব্দ করে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগুচ্ছে চন্দনা।। এবার বুঝি আর প্রাণে রক্ষা পাবে না চমক! সে চোখ দুটো বন্ধ করে দিলো।
এই চমক দা, এই রাত বিরাত তুমি পুকুরঘাটে কি করো? ঘাটের পাশের রাস্তা থেকে একটা আওয়াজ কানে আসলো চমকের। চোখ খুলতেই দেখে কেউ নাই। সে ঘাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তবু ভয়ে তার শরীরের কাঁপুনি বন্ধ হয় না। ততোক্ষণে নেপাল তার পাশে চলে আসে দুই হাতে দুইটা বাজারের ব্যাগ নিয়ে। চমকে ওষুধ খাইয়েই বাজারে গেছিলো নেপাল, রাতে তো আর না খেয়ে থাকা যাবে না!
চমক বোবার মতো তাকিয়ে থাকে নেপালের দিকে। অন্ধকারের মাঝে নেপালের গলায় চন্দনার সেই জন্মদাগ খুঁজার চেষ্টা করছে চমক! এই নেপাল যে চন্দনার প্রেতাত্মা না, সে বিশ্বাস তাকে কে যোগাবে?
চার||
চারদিন হয় চমকের মুখে কথা নেই। নেপাল এলাকাবাসীর সহায়তায় ডাক্তারের কাছে নিয়েও গেছিলো। নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও চমকের জবান চলে যাওয়ার কোন কারণ খুঁজে পায় নি ডাক্তার। সকল পরীক্ষার রিপোর্ট ই ভালো। গতকালকে একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞকেও দেখানো হলো। স্পষ্ট কোন কারণ জানা গেলো না।
ফ্যালফ্যাল করে শুধু তাকায় সে। কোন কথা বলে না। একা রান্নাবান্না করে আবার চমককে চোখে চোখে রাখাটা নেপালের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে বলে নেপাল তার স্ত্রীকেও আসার খবর দিয়েছে। চমক খাবার খেতেই চায় না।
তার ছোট ঘরের দেয়ালটার মাঝে দু'হাত দিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কি যেন লেখার চেষ্টা করে। কোন অক্ষর বা শব্দ হয় না। কোন অজানা চিহ্ন হয়ে যায়। মাঝে মাঝে উঠানে গিয়ে মাটির মধ্যে ছবি আঁকে। যেটা একটা ছোট্ট বাচ্চার অবয়ব হয়ে যায়। একা একা শব্দহীন হাসে। নেপাল কিছু জিজ্ঞেস করলে ইশারায়ও কোন উত্তর দেয় না! রুদ্রমূর্তি ধারণ করে পাশ কাটিয়ে যায়।
চমক শুয়ে আছে তার বিছানায়। পাশের ঘরে নেপাল আর তার স্ত্রী। চমকের ঘুমও হয় না ঠিকঠাক! ঘরের বাতি বন্ধ। জোনাকির ডাক নীরবতা ভাঙে মধ্যরাতের। চমকের কানে এক অদ্ভুতুড়ে শব্দ আসে। পানির মধ্যে হাঁটলে যেমন ছলাৎ ছলাৎ শব্দ হয়। কিন্তু আজ তো বৃষ্টি হয় নি। তবে কি পুকুরের মধ্যে কেউ হাঁটছে?
চমক তার ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দরজাটা আলতো করে খোলে বের হলো। উঠানের সামনে একটা বাতি আছি, যা জ্বলছে। এছাড়া বাকি চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার! চমক অবিচল চিত্তে গুটি গুটি পায়ে এগোয় পুকুরঘাটের দিকে। পানির উপর কারও হেঁটে যাওয়ার শব্দ যেন আরও বাড়ছে। কে সে? হঠাৎ একটা শিরশরে হাওয়া চমকের কান-মুখ বেয়ে চলে গেলো। বাতাসটা বলে গেলো- আয় চমক আয়!
চমক প্রায় পুকুরঘাটের কাছাকাছি। চমকের কাধে পেছন থেকে একটা হাত পড়লো। চমক আর চমকালো না। সে সকল অনুভূতির ঊর্ধ্বে আছে এখন। ঘাড় ঘুরে পিছনে তাকালো। নেপাল ঘরের বাতি জ্বালানো আর দরজা খোলা দেখে ছুটে আসে। এত রাতে এদিকে কেন যাচ্ছো, চমক দা? তুমি কি পাগল হয়ে গেছো নাকি? চলো ঘরে চলো- এই বলে নেপাল চমককে এক হাত ধরে হালকা টেনে ঘরে নিয়ে যাচ্ছিলো।
নেপাল উঠোন পার হয়ে ঘরে যেতে যেতে খেয়াল করলো। কাল উঠোনে বালুতে আঁকা বাচ্চার ছবিটি এখন নেই। কাল সেটা আনমনে চমক এঁকেছিলো। অথচ এটা মুছে দেয়ার মত কেউ এখানে আসে নি। বৃষ্টিও হয় নি!
চমক অন্ধকার ঘরে তার বিছানায় শুয়ে রয়েছে। চোখে ঘুম নেই। মনে এক অস্থিরতা। হঠাৎ ঘরে একটা প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারলো চমক! অনুভূতিহীন মস্তিষ্ককেও যে অস্তিত্ব নাড়া দিয়ে দিলো। চমক শুয়ে আছে তখনও। ঘরের বাতি জ্বালাতে হলে নামতে হবে বিছানা থেকে। ছোট্ট এই ঘরেই কেউ যেন ছোট ছোট পায়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। নেপালকে ডাকার খুব চেষ্টা করছিলো সে। কিন্তু তার তো কন্ঠস্বর হারিয়েছে কয়েকদিন আগেই।
ভয়ে চমকের বুকটা ব্যথা করছে। দম ফেলতে খুব কষ্ট হচ্ছে যেন। হঠাৎ কিছু একটা চমককে স্পর্শ করতেই আতকে উঠলো সে। কেউ একজন আছে ঘরে, তার বিছানায় উঠেছে। বুঝা যাচ্ছে, কিন্তু তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না! কে কে বলার চেষ্টা করছে, কিন্তু আওয়াজ নেই গলায়। চমকের মাথাটা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে।
চিত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে চমক। ছোট ছোট কয়েকটা আঙুল যেন তার পা বেয়ে শরীরের উপরে উঠছে। চমক বিছানা চাদর আঁকড়ে আছে শক্ত করে! অদ্ভুত সেই স্পর্শ ধীরে ধীরে চমকের বুক বেয়ে যখন গলাতে যাবে, এক লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে বাতি জ্বালাতে গেলো চমক। এ কি! সুইচ দিচ্ছে, কিন্তু বাতি জ্বলছে না কেন?
থর থর করে কাঁপছে সে। পাশের ঘরে যেতে চাইলো। কিন্তু নেপাল আর তার স্ত্রী হয়ত ভেতর দিয়ে ছিটকিনি দিয়ে ঘুমোচ্ছে। কোথায় যাবে সে এবার? কোনভাবেই বুঝা যাচ্ছে না। তবে হঠাৎ সে আন্দাজ করতে পারলো এ তো এক শিশু! যার ছবি তার মনে আনমনে ভাসছিলো কদিন ধরে, উঠোনে সে তার ছবি ই এঁকেছিলো!
অদ্ভুতভাবে চমকের হারিয়ে যাওয়া চেতনা ফিরে পেতে শুরু করলো। প্রথম দিনের অদ্ভুত ঘটনা থেকে শুরু করে সবকিছু সে কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। এমন সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ বাতি জ্বলে উঠলো।
চমকের চোখের সামনে একটা শিশু। বিকৃত তার চোখ, পুরো শরীরে রক্তের দাগ! উলঙ্গ শরীর! তার হাত দুটো আস্তে আস্তে সে চমকের গলার দিকে বাড়াচ্ছে। হাতের নখগুলো ধারালো করাতের মতো চমকের গলাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করছিলো। চমকের শরীর থেকে রক্ত ফিনকির মতো বেরোচ্ছে।
দেয়ালজুড়ে লেপটে থাকা তাজা রক্ত জিহবা দিয়ে টেনে খাচ্ছে শিশুটি। চমক তা দেখছে অবিচল পাথরের মূর্তির মতো। তার স্মৃতিতে ভাসছে চন্দনার চেহারা। চমকের চোখটা ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে বন্ধ হয়ে আসছে। সেই ঝাপসা চোখে ভাসছে চন্দনার চাঞ্চল্য!
পাঁচ||
পরদিন কাকডাকা সকালে নেপালের স্ত্রীই প্রথম চমকের নিথর শরীর ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। নেপাল সদর হাসপাতালেও নিয়ে যায়। কিন্তু ডাক্তার বলেন চমক এর মৃত্যু হয়েছে মাঝরাতেই। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন বলেই ডাক্তার জানালো। আত্মহত্যা বা হত্যা বা কোন প্রকার ধস্তাধস্তির কোন আলামত পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এ আসে নি।
চন্দনা আর চমকের গোপন প্রেম ছিলো দীর্ঘদিনের। কেউ জানতো না। গভীর প্রেমের ফলস্বরূপ চন্দনার গর্ভে সন্তানও আসে। চমক সমাজের ভয়ে সেই ভ্রুণ নষ্ট করতে চাইলেও চন্দনা তার অনাগত সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে চেয়েছিলো। এতে বাকবিতন্ডায় একদিন চন্দনাকে চমক বাঁশের কঞ্চি দিয়ে আঘাত করে। চন্দনার গলায় বেশ লম্বা আছড় লাগে। এরপর থেকে চমক চন্দনার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়! চমকের ইচ্ছা ছিলো ভ্রুণটা নষ্ট হোক, বিয়ের পরে চন্দনা আবার গর্ভধারণ করুক! কিন্তু চন্দনা এভাবে নিজের জীবন শেষ করে দিবে, তা চমক কল্পনাও করে নি। আর গ্রামবাসীর কাছে এই আত্মহত্যা ছিলো আচমকা ঘটনা ও রহস্যজনক।
সেই পুকুরপাড়েই আরেকটা লাশ পুড়ছে। চমকের শেষ যাত্রা! সময়ের সাথে সাথে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে সব। নেপাল, তার স্ত্রী আর গ্রামের আট দশজন লোক শবদাহ করছেন। নেপালের স্ত্রী মনে মনে ভাবছিলো- চমক দাদা নেই, তার বাড়িঘর দেখারও কেউ নেই, তাই নেপালকে নিয়ে এখানেই থেকে যাবে!
কিন্তু এ কি দেখছে নেপালের স্ত্রী? সবাই দাহকার্যতে মত্ত আর উঠান থেকে একটা বাচ্চা ছেলে হেঁটে হেঁটে চমক দাদার ঘরে গিয়ে ঢুকলো। এই শুনছো গো- কি যেন একটা...! নেপালের স্ত্রী নেপাল এর দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেপালকে ঐ বাচ্চার কথা বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু এ কি নেপাল এর জায়গায় চমক দাদা তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে কিভাবে? তার গলায় উদ্ভট একটা দাগ!! তার চেহারার মধ্যে ভয়ার্ত এক ছাপ!
বাতাসে ধূপকাঠির এক অদ্ভুত গন্ধ বাড়ছে তো বাড়ছে।।
(সমাপ্ত)
চমক চমকিত চিত্তে চন্দ্রিমার আলোর নিচে ভালোভাবেই পাড়ি দিচ্ছিলো পথ। রাত্রি দ্বি-প্রহর। সুনসান নীরবতায় শুকনো পাতার উপর পায়ের আলিঙ্গন ধ্বনি কানে বাজছে। আবছা আলোয় পথের দু'ধারের কলাগাছের পাতাকে মনে হচ্ছে কারা যেন অনেকগুলো পাখা নিয়ে ভয়াল হাতছানি দিচ্ছে পৃথিবীকে।
রাস্তার দু'পাশে জঙ্গলময়। চেনা এ পথ। যেতে তাই ভয়ের সঞ্চার হয় না চমকের। যদিও কোন আগন্তুকের কাছে এই পথ পাড়ি দেয়াটা বিভীষিকাময় হতে পারতো! চমকের বাড়ি প্রায় নিকটবর্তী দূরত্বে। চমক বাড়িতে একাই থাকে। মা-বাবা মরা ছেলের ভাগ্যে এখনও কোন লক্ষী জুটে নি। তাই এ গ্রাম ও গ্রাম থেকে তার ডাক আসে প্রতিনিয়ত। চমকও মানুষের প্রয়োজনে দৌড়ায় এ দ্বার থেকে ও দ্বারে।
চমকের বাড়ির পাশে ছোট্ট একটা পুকুর। পুকুরের পশ্চিমপাশে চমকের দুই রুমের আধাপাকা ঘর। ঘরের সামনে একটা উঠান। উঠানের এক কোণে টিউবওয়েল। তারপাশেই শৌচাগার। পুকুরের পাড় ঘিরে বেশকিছু গাছ। পুকুরপাড়ের পাশ দিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সরু পথ। এর আশেপাশে আধামাইলের মধ্যে আর কোন বাড়ি ঘর নেই। এই জায়গাটা এক সময় পতিত ছিলো বলেই শুনেছে ছোটবেলায়। তার আগেও নাকি এটা ছিলো শ্মশানঘাট।তাই এখানে কারও বাড়িঘর নেই। তবে চমক কখনই এমন কোন উদ্ভট কোনকিছু পায় নি এখানে।
পুকুরপাড়ের পাশের রাস্তাদিয়ে বাড়িতে প্রায় ঢুকবে, তখনই চমক চমকে গেলো। ডানপাশে তাকাতেই সে দেখলো পাড়ে দেখলো এক ভয়াল শ্বেতমূর্তি। ঠিক তার বাবা-মায়ের শ্মশানের উপর ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। চমকের পুরো শরীরকে যেন কোন এক হিমবাহ এসে ঝাপটে ধরে রেখেছে। নি:শ্বাসগুলো বুকের ভেতরে ঢুকে যেন আর বের হতে চাচ্ছে না। বুকটা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। তবু সেই সাদা অবয়বের দিকে মুখ তুলে তাকালো চমক!
আরে এ তো চন্দনা! দুলাল কাকার মেয়ে। মাত্র তার শবদেহ দাহ করে ফিরছিলো সে।। বারংবার চোখ বুজে ফের তাকাচ্ছিলো। কোন ভুল হচ্ছে না তো! এ তো অসম্ভব! চন্দনা আজ সন্ধ্যার পর গলায় দড়ি দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। তার মৃত্যুরহস্য নিয়ে গ্রামে তোলপাড়! কিন্তু সে এখানে কেন? তবে কি এটা চন্দনার প্রেতাত্মা?
কোন কিছু বুঝার আগেই চমক প্রাণ বাঁচাতে দৌঁড় দিলো তার বাড়ির দিকে। পেছনে আর ফিরে তাকালো না। বাড়ির উঠানে আসতেই তার হৃদযন্ত্র প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম। এ কি দেখছে সে?
বাতাসে কেবল ধূপের গন্ধ। ঠিক মৃত লাশের পাশে যেমনটা গন্ধ লাগে। চমকের ঘরে বাতি জ্বলছে। দরজা খোলা! অথচ সেটা খোলা থাকার কথা না! উঠোনের ঠিক মাঝখানে একটা খাটিয়ার উপরে একটা সাদা চাদরে ঢাকা লাশ। লাশের আশেপাশে কেউ নেই। কেউ না!
চমকের পা থেকে মাথা পর্যন্ত কেউ যেন শক্ত করে ধরে ধরে কিছু একটা উপরে তুলছে, আর ক্রমশ শরীর নিচ থেকে উপর পর্যন্ত অচেতন হয়ে পড়ছে। চোখ দুটো চমকের ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই একটা দমকা হাওয়া এসে লাশের গায়ে রাখা সাদা কাপড়টা খানিক সরে গিয়ে লাশের ঝাপসা মুখটা চমকের চোখে ধরা দিলো।
এ তো চন্দনা!!
(চলবে)
চলো তবে...
হতাশা আর আশঙ্কার গল্প বাদ দিয়ে
আমরা নতুন এক স্বপ্ন গড়ি...
আকাশের শুভ্র মেঘ যেখানে
ভেসে বেড়াবে মাথার উপরে।
আশঙ্কার রেশটা মিশে যাবে
সমুদ্রের সুমধুর কলতানের মাঝে।
মৃত্যুর মিছিল থেমে যাবে একদিন...
অজানাকে জেনে হবে তীব্র প্রতিরোধ!
শঙ্কা নয়; মানুষ আবার বাঁচবে
মানুষ ভাসবে প্রত্যাশার ভেলায়।।
দৃঢ় প্রত্যয় ও কঠিন শপথ নিয়ে
আমরা এক নতুনের শুরু করি...
চলো তবে...
দেবাশীষ দিপন
২৩.০৭.২০২২
আমার ২য় প্রকাশিত গ্রন্থ "শিশমহল" এর স্মৃতি।
প্রকাশক: নাগরী
প্রকাশকাল: ২০১৯
"প্যাথলজিক্যাল লায়ার"
যে ব্যক্তি কারণে-অকারণে অভ্যাসবশত অনবরত মিথ্যা কথা বলে; তারা প্যাথলজিক্যাল লায়ার।।
মিথ্যা বলা যাদের অভ্যাস, সেসব ব্যক্তি মনের অজান্তেই মিথ্যা বলে শান্তি পায়।। গবেষণা বলে প্যাথলজিক্যাল লায়ার সব সময় মিথ্যা বলবে তা না, তবে কেউ কেউ দিনের বেশির ভাগ সময় খুটিনাটি নানান মিথ্যা কথা বলে থাকে।।
প্যাথলজিক্যাল লায়িং- একটা মানসিক রোগ।
বংশগত সমস্যা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, হতাশা, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার প্রভৃতি কারণে এই সমস্যার উৎপত্তি হয়ে থাকে।।
প্যাথলজিক্যাল লায়ার সব সময় মিথ্যা বলার জন্য নিজের মধ্যে তাড়না অনুভব করে। বানিয়ে বানিয়ে বাড়িয়ে কথা বলার মাঝে ব্যক্তি একটা নীরব আনন্দ অনুভব করে।
এর অপর নাম "মিথোম্যানিয়া"।। মিথ্যা বলা বা অতিরঞ্জিত করার অস্বাভাবিক প্রবণতাই মিথোম্যানিয়া।।
মিথোম্যানিয়া রোগী নিজের বানিয়ে বলা গল্প বা উপস্থাপিত বক্তব্যকে সত্য প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে থাকে। নারীদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি হয়ে থাকে।
সমস্যা হলো- এই রোগে আক্রান্ত রোগী মিথ্যা কথা বলাকেই স্বাভাবিক আচরণ আর সকল মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রবণতা থাকে বলে; এমন রোগী নিজেও তার এই অদ্ভুত অসুস্থতার কথা জানে না।।
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Contact the public figure
Website
Address
Kulaura Sylhet
Kulaura, BARAMCHAL
সবাই আমার পেজ টা ফলো করে সাথে থাকুন। ❤️❤️ মিস করবেন না 🖕🖕 LIKE || COMMENT || SHARE || FOLLOW
Kulaura
-এমন পুরুষ নাইবা হলে,যে সকল নারী চায়। পুরুষ তো আসলে সেই যে একেতেই বারবার হারায়!-🖤
Kulaura
সাধারণ সম্পদক ব্লাড ডোনেট সোসাইটি হাজিপুর ইউপি।,,আসুন রক্ত দিতে এগিয়ে যাই,, রক্ত দিয়ে প্রান বাচাই,,