RoseSrz Official
*সুস্থতা আল্লাহ্ তা'আলার দেওয়া বড় একটি নেয়ামত:*
-------------------------------------------------
মহান রাব্বুল আ'লামীনের অসংখ্য অগনীত নেয়ামতে আমাদের ঘিরে রেখেছে। যেগুলোর কোন একটির শুকরিয়া আদায় করেও সারা জীবনে শেষ করা যাবেনা। তাঁর মাঝে অন্যতম একটি নেয়ামত হচ্ছে সুস্থতা। সুস্থতার নেয়ামত ভালোভাবে বুঝে আসে অসুস্থ হলে। যখন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন কোন জিনিসই তাকে আকর্ষণ করেনা। সব কিছুর বিপরিতে সুস্থতা লাভ করাই তাঁর কাছে প্রাধান্য পায়।তাই অসুস্থ হবার পূর্বেই সুস্থতার কদরদানী করা চাই। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* বলেন--“পাঁচটি অবস্থার সন্মূখীন হওয়ার পূর্বেই তার যথাযথ মূল্যায়ন কর তা হলো:---
*১)* বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পূর্বে যৌবন। *২)* অসুস্থতার পূর্বে সূস্থতা। *৩)* দারিদ্রতার পূর্বে স্বচ্ছলতা। *৪)* ব্যস্তার পূর্বে অবসরতা এবং *৫)* মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে মূল্যায়ন কর । *[হাকেম, হা-৭৮৪৬]*
*📚নেয়ামতের মূল্যায়ন করা চাই:⬇*
আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের তাঁর এতো নেয়ামত দানের উদ্দেশ্য হল, আমরা যেন এই নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন ও শুকরগুজারী করি। কোন নেয়ামতের সবচেয়ে বড় শুকরগুজারী হল এর সঠিক ব্যবহার করা। আর এর যথাযথ মূল্যায়ন করা হল ছিনিয়ে নেবার পূর্বেই তা কাজে লাগানো। আমরা সুস্থতার মাধ্যমে যদি আল্লাহ্ তা'আলার বেশি বেশি ইবাদত করতে পারি তাহলে সেটাই হবে তাঁর সঠিক মূল্যায়ন। আর যদি নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার না করি। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ব্যয় না করে মন্দ কাজে ব্যয় করি। তাহলে আমরা অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হব। যার কোন ক্ষতি পূরণ হবে না। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* বলেন,‘দু’টি নিয়ামতের ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। (অর্থাৎ এ দু’টি নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণে তারা কল্যাণবঞ্চিত) নিয়ামত দু’টি হল ‘সুস্থতা’ ও ‘অবকাশ’।’ *[বুখারী, হা-৬৪২১]*
আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের যে সকল নেয়ামত দিয়েছেন তাঁর সঠিক ব্যবহার না করলে পরকালে জবাবদিহীতা করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,‘অবশ্যই সেদিন তোমরা আল্লাহ্ তাআলার নিয়ামতরাজি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ *[সূরা তাকাসুর:৮]*
হাদীসে শরীফে এসেছে- কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে তা হল, আমি কি তোমাকে একটি সুস্থ দেহ দেইনি? তোমাকে কি ঠান্ডা পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত করিনি? অর্থাৎ এই নিয়ামত প্রহণ করে তোমার দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছ? এই প্রশ্নের উত্তর সকলকে দিতে হবে। তাই সুস্থতার এই মহা নেয়ামতকে নষ্ট নাকরে কাজে লাগানো উচিত।
দৈহিক শুকর গুজারীর পাশাপাশি মুখেও সুতস্থা দানের জন্য রাসূলুল্লাহ্ *(সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম)* আল্লাহর প্রশংসা করতে বলেছেন *[মুয়াত্তা মালেক, হা-৯৭৬]*
দৈহিক ও মৈখিক শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশী নেয়ামতের প্রত্যাশী হওয়াও এক পরকার শুকরগুজারী। একারণে আল্লাহর রাসূল *(সাল্লাল্লাহু আ লাইহি ওয়াসাল্লাম)* বলেন, তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা চাও…। *[আহমদ, হা-৬]*
তিনি নিজে সর্বদা সকাল সন্ধ্যা দুয়া করে আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন আমরা আল্লাহর কাছে কিভাবে চাইব।দুয়াটি হল এই--
*اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي، وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي، وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي.*
*[আহমদ,হা-৪৭৮৫]*
আসুন আমরাও সকাল সন্ধ্যা এ দুয়া পাঠ করি।আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের তাঁর সকল নেয়া মতের কদরদানী করার তাউফিক দান করুন।আমীন..!
🔲 *মেয়েদের কাপড় শুকানোঃ*
🍁🌻🍂💐🌷🌺🌹🍃🌸☘️
মেয়েদের কাপড় শুকানো নিয়ে কিছু কথা বলবো। আমাদের সমাজে দেখা যায় অনেক আপু আছেন যারা গোসল করে তাদের কাপড় শুকাতে দেয় বাহিরে এবং ছাদের উপড়ে যেখান দিয়ে মানুষ চলাচল করলে দেখতে পায়। তাদের উদ্দেশ্যেই আজকের লিখা।
আমার মহান আল্লাহ্ মেয়েদের জন্য পর্দা ফরজ করেছেন "নারীদের চেহারার মধ্যে শুধু পর্দা না, নারীদের কাপড়ের মধ্যেও রয়েছে পর্দা। এমনকি নারীর নামের মধ্যে রয়েছে পর্দা।
অনেক মেয়ে আছে তারা গোসল করে তারা তাদের পায়জামার দুই পা ফাকাঁ করে বাহিরে শুকাতে দেয় "আরোও কামিজ শুকাতে দেয়" এমনকি অনেকেই ছোট্ট ছোট্ট জিনিস গুলোও শুকাতে দেয় "লজ্জার কথা যা বলতেও লজ্জা লাগে।"
একজন পরপুরুষ যদি আপনার পায়জামা, জামা, আরোও যা কিছু আছে যদি সে দেখতে পায় এবং সে যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয় তাহলে অবশ্যই তার মনের ভিতরে কুমন্ত্রনা সৃষ্টি হবে যদিও আপনাকে কোনদিন সে দেখে নাই। কিন্তু আপনার কাপড় দেখে সে উপলব্ধি করতে পারবে আপনার গঠন কেমন।
আর তার মনের ভিতরে যদি কুমন্ত্রনা সৃষ্টি হয় তার অন্তরে যদি যিনার প্রতি আকর্ষন তৈরী হয় তাহলে সেই ব্যক্তির আমলনামায় একটি চোখের যিনা কবিরা গুনাহ লিখা হয়। এমনকি আপনার আমলনামাও এক ভাগ গুনাহ লেখা হয়। কারণ এর জন্য আপনি দ্বায়ী। আর একটি কবিরা গুনাহই যথেষ্ট জাহান্নামে নেওয়ার জন্য।
পবিত্র কোরআনের ভিতরে মহান আল্লাহ্ তা 'য়ালা ইরশাদ করছেন "সামন্য বিন্দু পরিমাণ গুনাহ নিয়ে যদি কেউ কবরে আসে তাহলে কবরের মাটি তাকে ছাড় দিবে না।
তাই আপনারা গোসল করে কাপড় এমন জায়গায় শুকাতে দিবেন যেখানে কোন পরপুরুষ দেখতে না পায়। আর দয়াকরে ছোট্ট ছোট্ট জিনিস গুলো পরিবারের বাবা ভাই অর্থাৎ- যাদের সামনে আপনার যাওয়া বৈধ তাদের সামনেও রাখবেন না। এগুলো নিজের রুমের ভিতরে অথবা কাপড়ের নিচে শুকাতে দিবেন। লজ্জা ইমানের অংশ। যার লজ্জা নাই তার ইমানের মধ্যে কমতি আছে এটাই প্রমান করে।
আমার কোন কথায় কেউ খারাপ মনে করলে ক্ষমা করে দিবেন। আমার বিবেকে চাইছিলো তাই বললাম। এতে যদি কেও সতর্ক হয় তাহলে হয়তো এই লিখাটি আমার জন্য পরকালে মুক্তির জন্য উছিলাও হয়ে যেতে পারে ইনশাআল্লাহ্, আমীন ||
*খায়ের-বরকত ও নেক আমলের বসন্ত:আছি কেউ কদর করার:*
----------------- *[পার্ট:-০১]* ----------------
*الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد.*
আমাদের সামনে এখন ফযীলতপূর্ণ মাস ও দিবস-রজনীর এক নূরানী ধারা এবং খায়ের ও বরকতের এক আশ্চর্য বসন্তকাল চলছে। কিন্তু এগুলোর কদর বোঝার মত কি কেউ আছি? আমাদের বদ কিসমত যে, আমরা ফযীলতপূর্ণ সময়গুলো গাফলত ও অলসতায় পার করে দিই। নির্বিকারচিত্তে সময় নষ্ট করতে থাকি। অথচ শুধু ফযীলতপূর্ণ সময় নয়, অন্যান্য সময়ও আল্লাহ্ তা'আলার বিশেষ নি'আমত। আমি যদি কদর করতে পারি তাহলে প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত, প্রতিটি মাস, প্রতিটি বছর আমার জন্য খায়ের ও বরকত বয়ে আনবে।
*ہرشب شب قدر است اگر قدر میداني*
সব রাতই কদরের রাত, যদি কদর করতে পারো। কিন্তু আমাদের অবস্থা হলো, সাধারণ সময় তো দূরের কথা, বিশেষ সময় এমনকি বিশেষতর সময়েরও আমরা কদর করি না।
*📚সময়ের কদর হবে কীভাবে:⬇*
সময়ের কদর করার বিভিন্ন দিক আছে। যেমন-
*১)* আল্লাহর নাফরমানির কাজে সময় ব্যয় না করা
আল্লাহর নাফরমানির কাজে সময় ব্যয় করা সময়ের সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন। তাই কোনো সময় যেন আল্লাহর নাফরমানির কাজে ব্যয় না হয়-এ বিষয়ে সতর্ক থাকা ফরয। সময়ে গোনাহের কোনো হিসসা থাকতে পারে না। গোনাহ কোনোভাবেই সময়ের ব্যয়খাত হতে পারে না। আমরা যদি নাফরমানি থেকে সময়কে বাঁচাতে পারি তাহলে তা হবে সময়ের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন ও সর্বোচ্চ শোকরগোযারি।
*২)* নির্দিষ্ট সময়ে পালনীয় ইবাদতসমূহ গুরুত্ব ও যত্নসহকারে আদায় করা।যে সময় গুলোতে শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত কোনো ইবাদাত আছে সে সময়গুলোর সর্বোচ্চ মূল্যায়ন হলো, নির্ধারিত ইবাদতগুলো গুরুত্ব সহকারে সুচারুরূপে পালন করা। সেগুলো যেন ছুটে না যায় তাঁর প্রতি খেয়াল রাখা। ফরয ও ওয়াজিব তো কাযা হওয়ার প্রশ্নই আসে না সুন্নাতে মুয়াক্কাদার ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে, অলসতা-অবহেলার কারণে যেন সেগুলো ছুটে না যায়। সুন্নাতে মুআক্কাদা’র অর্থ হলো, তাকিদপূর্ণ সুন্নাত।
সালাফের যুগে এটি ‘সুন্নাতে রাতেবাহ’ নামে অধিক প্রসিদ্ধ ছিল। এর অর্থ, এমন সুন্নাত যা নিয়মিত আদায় করা হয়, ছেড়ে দেওয়া হয় না।আর যে সময় গুলোতে কোনো নফল ইবাদাত (নফল নামায,তিলাওয়াত, দুআ ও যিকির) পালনের প্রতি হাদীসে উৎসাহিত করা হয়েছে সেগুলোর কিছু কিছু নফল আমল নিজের দৈনিক আমলে শামিল করে নিব এবং এই নববী মুলনীতি *خير العمل ما ديم عليه* (সর্বোত্তম আমল হল যা নিয়মিত করে যাওয়া হয়)-অনুসারে সেগুলো আমি নিজ ইচ্ছায় নিয়মিত পালন করে যাওয়ার চেষ্টা করব। সাময়িক কোনো প্রয়োজনে (দ্বীনী বা দুনিয়াবী) কিংবা অলসতার কারণে কখনও যদি এ ধরনের আমল ছুটে যায় তাহলে অন্য সময় কাযা করে নেওয়া ভালো। হাদীস শরীফে আছে-
*مَنْ نَامَ عَنْ حِزْبِهِ، أَوْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ، فَقَرَأَهُ فِيمَا بَيْنَ صَلَاةِ الْفَجْرِ، وَصَلَاةِ الظُّهْرِ، كُتِبَ لَهُ كَأَنَّمَا قَرَأَهُ مِنَ اللَّيْلِ*
যে তার নির্ধারিত আমল বা তাঁর কিছু অংশ আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে, এরপর ফজর-যোহরের মাঝে তা পড়ে নেয় তার সম্পর্কে লেখা হবে যেন সে রাতেই তা পড়েছে। *[সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৪৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ৫৮১]*
*৩)* কর্তব্য কর্মে নির্ধারিত সময় ব্যয় করা।আমার দায়িত্বে যে কাজ ও যিম্মাদারি আছে এবং সেগুলো পালনের জন্য যে সময় নির্ধারিত আছে, যেমন আমি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করি বা বিনিময় নিয়ে খেদমত আঞ্জাম দেই এবং আমার দায়িত্ব পালনের সময় নির্ধারিত, এই নির্ধারিত সময়ে আমার ফরয হলো, সে সময়ের নির্ধারিত জিম্মাদারী যথাযথ আদায় করা। এখানে নির্দিষ্ট সময় ব্যয় করাই এই সময়ের মূল্যায়ন। অন্য কোনো কাজে এই সময় ব্যয় করা যেমন সময়ের অবমূল্যায়ন তেমনি তা আমানতেরও খেয়ানত।
*৪)* অতিরিক্ত সময় অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক উপকারী কাজে ব্যয় করা।নির্দিষ্ট সময়ে পালনীয় ইবাদাত, নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও যিম্মাদারী, বিভিন্ন সময় আসা তাৎক্ষণিক পালনীয় কাজ ইত্যাদি সম্পন্ন করার পর হাতে যে সময় থাকে সাধারণত এই সময়গুলো বেশি অবহেলার শিকার হয়। তাই এ খেয়াল রাখা অতি জরুরি যে, এ সময়গুলো যেন অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক উপকারী কাজে ব্যয় হয়। প্রয়োজনে বড়দের সাথে, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকদের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। সৌভাগ্যবশত আমার জীবন যদি কোনো মুত্তাকী আলেমে দ্বীন বা মুত্তাবিয়ে সুন্নাত (সুন্নাহর অনুসারী) শায়খের নেগরানি ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় তাহলে তাঁর সাথেই এ ব্যাপারে পরামর্শ করে নেওয়া অধিক শ্রেয়।
*(চলবে ইনশাআল্লাহ্)*
*যাকাত আদয় করার গুরুত্ব, ফাযায়েল ও মাসায়েল:*
----------------- *[পার্ট:-০১]* ----------------
যাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোকন। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হল সালাত ও যাকাত। কুরআন মজীদে বহু স্থানে সালাত-যাকাতের আদেশ করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ ছওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
*وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ۱۱۰*
*অর্থ:-* ‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। *[সূরা বাকারা : ১১০]*
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
*وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۵۶*
*অর্থ:-* ‘তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।’ *[সূরা নূর : ৫৬]*
সূরা নিসার ১৬২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য ‘আজরুন আযীম’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-
*وَ الْمُقِیْمِیْنَ الصَّلٰوةَ وَ الْمُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ اُولٰٓىِٕكَ سَنُؤْتِیْهِمْ اَجْرًا عَظِیْمًا۠۱۶۲*
*অর্থ:-* ‘এবং যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’
অন্য আয়াতে যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ সুফল বর্ণনা করে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন-
*خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ۱۰۳*
*অর্থ:-* ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ *[সূরা তাওবা : ১০৩]*
এছাড়া কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াত থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, সালাত ও যাকাতের পাবন্দী ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রশ্নই অবান্তর। কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে, যেখানে খাঁটি মু’মিনের গুণ ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে সেখানে সালাত-যাকাতের কথা এসেছে অপরিহার্যভাবে।
কুরআনের দৃষ্টিতে প্রকৃত পুণ্যশীলদের পরিচয় যেখানে দেওয়া হয়েছে সেখানে সালাত-যাকাতের উল্লেখ এসেছে। *[সূরা বাকারা ১৭৭]*
মুমিনের বন্ধু কারা-এই প্রশ্নের উত্তরেও সালাত-যাকাতের প্রসঙ্গ শামিল রয়েছে। *[সূরা মায়েদা : ৫৫]*
‘সৎকর্মপরায়ণদের বৈশিষ্ট্য ও কর্মের তালিকায় সালাত-যাকাতের প্রসঙ্গ অনিবার্য। *[সূরা লুকমান : ৪]*
মসজিদ আবাদকারীদের পরিচয় জানতে চাইলেও সালাত-যাকাত তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। *[সূরা তাওবা : ১৮]*
কুরআন মজীদ কাদের জন্য হেদায়েত ও শুভসংবাদ দাতা-এর উত্তর পেতে চাইলেও সালাত-যাকাত অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। *[সূরা নামল : ৩]*
ভূপৃষ্ঠে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভের পরও মুমিনদের অবস্থা কী তা জানতে চাইলে সালাত-যাকাতই অগ্রগণ্য। *[সূরা হজ্জ্ব : ৪১]*
বিধর্মী কখন মুসলিম ভ্রাতৃত্বে শামিল হয়- এ প্রশ্নের উত্তরে তাওবার সঙ্গে সালাত-যাকাতও উল্লেখিত। *[সূরা তাওবা : ১১]*
দ্বীনের মৌলিক পরিচয় পেতে চাইলে সালাত-যাকাত ছাড়া পরিচয় দান অসম্ভব। *[সূরা বাইয়েনা : ৫]*
*মোটকথা:-* এত অধিক গুরুত্বের সঙ্গে সালাত-যাকাত প্রসঙ্গে কুরআন মজীদে এসেছে যে, এটা ছাড়া দ্বীন ও ঈমানের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না। মুমিনের অন্তরের ঈমান সালাত-যাকাতের বিশ্বাসের ওপর এবং তার কর্মের ঈমান সালাত-যাকাতের কর্মগত বাস্তবায়নের ওপর নির্ভরশীল। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহ.-এর ভাষায়-
*والزكاة أمر مقطوع به في الشرع يستغني عن تكلف الاحتجاج له، وإنما وقع الاختلاف في بعض فروعه، وأما أصل فرضية الزكاة فمن جحدها كفر.*
*অর্থ:-* ‘যাকাত শরীয়তের এমন এক অকাট্য বিধান, যে সম্পর্কে দলীল-প্রমাণের আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। যাকাত সংক্রান্ত কিছু কিছু মাসআলায় ইমামদের মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও মূল বিষয়ে অর্থাৎ যাকাত ফরয হওয়া সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই। যাকাতের ফরযিয়তকে যে অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।’ *[ফাতহুল বারী ৩/৩০৯]*
উপরের আলোচনা থেকে যাকাতের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা এবং এর সুফল ও উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেল। এখান থেকে এ বিষয়টাও অনুমান করা যায় যে, ফরয হওয়া সত্ত্বেও যারা যাকাত আদায় করে না তারা কত বড় ক্ষতিগ্রস্ত-তার শিকার! যাকাতের সকল সুফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে তাদেরকে যে মর্মন্তুদ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে তা-ও কুরআন মজীদে বলে দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
*وَ لَا یَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ یَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتٰىهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَیْرًا لَّهُمْ ؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ؕ سَیُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ ؕ وَ لِلّٰهِ مِیْرَ اثُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرٌ۠۱۸۰*
*অর্থ:-* আর আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, এটা তাদের জন্য মঙ্গল। না, এটা তাদের জন্য অমঙ্গল। যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলায় বেড়ি হবে। আসমান ও যমীনের স্বত্ত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা কর আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবগত। *[সূরা আলইমরান : ১৮০]*
হাদীস শরীফে এসেছে- ‘যাকে আল্লাহ্ তা'আ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তাঁর যাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর স্বর্পরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধরপ্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ঐ ধন, আমিই তোমরা পুঞ্জিভূত সম্পদ।’ *[সহীহ বুখারী]*
:
*📚যাদের উপর যাকাত ফরয হয়:*
*১)* আগেই বলা হয়েছে যে, যাকাত ইসলামের একটি অপরিহার্য ইবাদত। এজন্য শুধু মুসলিমগণই যাকাত আদায়ের জন্য সম্বোধিত হন। সুস্থমস্তিষ্ক, আযাদ, বালেগ মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে যাকাত আদায় করা তার ওপর ফরয হয়ে যায়। *[আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯ বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯,৮২]*
কাফির যেহেতু ইবাদতের যোগ্যতা রাখে না তাই তাদের ওপর যাকাত আসে না।এছাড়া অসুস্থমস্তিষ্ক মুসলিমের ওপর এবং নাবালেগ শিশু-কিশোরের ওপরও যাকাত ফরয নয়। *[মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৬১-৪৬২; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৯ রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮]*
*📚যেসব জিনিসের উপর যাকাত ফরয হয়:⬇⬇*
*২)* সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরয হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরয হয়।
*৩)* সোনা-রুপার অলংকার সর্বদা বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক সর্বাবস্থাতেই তার যাকাত দিতে হবে। *[সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৫; সুনানে নাসায়ী হাদীস ২২৫৮; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৫৪-৭০৬১,৭০৬৩-৭০৬৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৭৪;৬/৪৬৯-৪৭১]*
*৪)* অলংকার ছাড়া সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও যাকাত ফরয হয়। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭০৬১; ৭০৬৬; ৭১০২]*
*৫)* জামা-কাপড় কিংবা অন্য কোনো সামগ্রীতে সোনা-রুপার কারুকাজ করা থাকলে তা-ও যাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যে পরিমাণ সোনা-রুপা কারুকাজে লেগেছে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে তারও যাকাত দিতে হবে। *[মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১০৬৪৮,১০৬৪৯,১০৬৫১]*
সোনা-রুপা ছাড়া অন্য কোনো ধাতুর অলংকার ইত্যাদির উপর যাকাত ফরয নয়। তদ্রূপ হিরা, মণি-মুক্তা ইত্যাদি মূল্যবান পাথর ব্যবসাপণ্য না হলে সেগুলোতেও যাকাত ফরয নয়। *[কিতাবুল আছার মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৬১-৭০৬৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৪৭-৪৪৮]*
*৬)* মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার যাকাত আদায় করা ফরয হয়। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৯১,৭০৯২]*
তদ্রূপ ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও যাকাত ফরয হয়।
*৭)* টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে যাকাত ফরয হয়। *[আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৬২,৩০০]*
*৮)* হজ্বের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে এবং নিসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরয হবে। বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা যদি খরচ হয়ে যায় তাহলে যাকাত ফরয হবে না। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৩২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩২৫]*
*৯)* দোকান-পাটে যা কিছু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা থাকে তা বাণিজ্য-দ্রব্য। এর মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত আদায় করা ফরয। *[সুনানে আবু দাউদ ১/২১৮; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/১৫৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক পৃ ১০৮; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১০৩,৭১০৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১০৫৫৭, ১০৫৬০, ১০৫৬৩]*
*১০)* ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক যেমন জমি-জমা, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর যেমন মুদী সামগ্রী, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি, তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দেওয়া ফরয হবে। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১০৩,৭১০৪]*
*📚নিসাবের বিবরণ:⬇⬇*
*১১)* স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হল বিশ মিসকাল। *[সুনানে আবু দাউদ ১/২২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৭৭, ৭০৮২]* আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি।
*১২)* রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হল দু’শ দিরহাম। *[সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৯]* আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে।
*১৩)* প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় তাহলে যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর যাকাত দিতে হবে। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৭৯৭,৬৮৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৩৭]*
*১৪)* যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬,৭০৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩]*
*কিছু দৃষ্টান্ত:- ক)* কারো কাছে নিসাবের কম সোনা এবং নিসাবের কম রুপা আছে, কিন্তু যে পরিমাণ সোনা আছে তার মূল্য মজুদ রুপার সাথে যোগ করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য হয় বা তার চেয়ে বেশি হয়। তাহলে সোনা-রুপার মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। *[মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৭৯,১০৬৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩]*
*খ)* কারো কাছে কিছু স্বর্ণালংকার আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এর যাকাত দিতে হবে। *[রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩]*
*গ)* কারো কাছে নিসাবের কম রুপা আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা বা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এরও যাকাত দিতে হবে। *[আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৩]*
*১৫)* নিসাবের অতিরিক্ত সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা ও বাণিজ্যদ্রব্যের যাকাত আনুপাতিক হারে দিতে হবে। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৩২, ৭০৭৪, ৭০৭৫, ৭০৭৯, ৭০৮০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৯]*
*১৬)* কারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমাণ ছিল, বছরের মাঝে এ জাতীয় আরো কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেল এক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরাতন সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যা যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া লাগবে না। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৮৭২,৭০৪০,৭০৪৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩২৫,১০৩২৭]*
*১৭)* বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পূর্ণ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। অবশ্য বছরের মাঝে সম্পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে ঐ সময় থেকে নতুন করে বছরের হিসাব আরম্ভ হবে এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে হবে। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৪২,৭০৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০২]*
*📚যে সব জিনিসের ওপর যাকাত ফরয নয়:⬇⬇*
*১৮)* নিজ ও পোষ্য পরিজনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বাহনের ওপর যাকাত ফরয নয়। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৯-২০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫]*
*১৯)* গৃহের আসবাবপত্র যেমন খাট-পালঙ্ক, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, আলমারি ইত্যাদি এবং গার্হস্থ সামগ্রী যেমন হাড়ি-পাতিল, থালা-বাটি, গ্লাস ইত্যাদির উপর যাকাত ফরয নয়। তা যত উচ্চমূল্যেরই হোক না কেন। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৯৩,৭১০২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৫৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫]*
তবে এক্ষেত্রে মনে রাখাতে হবে য, যেসব বস্ত্তর উপর যাকাত আসে না সেগুলোতে যদি সোনা-রুপা সংযুক্ত থাকে তাহলে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে এই সংযুক্ত সোনা-রুপারও যাকাত ফরয হবে।
*২০)* পরিধেয় বস্ত্র, জুতা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিও থাকে তবুও তাতে যাকাত ফরয হবে না। *[রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫]*
*২১)* দোকান-পাট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমন আসবাবপত্র যা ব্যবসাপণ্য নয়, তার ওপর যাকাত ফরয নয়। তবে ফার্নিচারের দোকানে বিক্রির উদ্দেশ্যে যেসব ফার্নিচার রাখা থাকে তা যেহেতু বাণিজ্যদ্রব্য তাই এসবের ওপর যাকাত ফরয হবে।
*২২)* ঘর-বাড়ি বা দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দিলে তাতেও যাকাত ফরয নয়। তবে এসব ক্ষেত্রে ভাড়া বাবদ যে অর্থ পাওয়া যাবে তার ওপর মাসআলা নং ৬ প্রযোজ্য হবে।
*২৩)* ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর-বাড়ি বা অন্য কোনো সামগ্রী যেমন ডেকোরেটরের বড় বড় ডেগ, থালা-বাটি ইত্যাদি ক্রয় করলে তার ওপরও যাকাত ফরয নয়। তবে ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থের উপর যাকাত আসবে।
*📚ঋণ ও পাওনা প্রসঙ্গ:⬇⬇*
*২৪)* কারো ঋণ যদি এত হয় যা বাদ দিলে তার কাছে নিসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে না তাহলে তার ওপর যাকাত ফরয নয়। *[মুয়াত্তা মালেক ১০৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০০৩, ৭০৮৬, ৭০৮৯, ৭০৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৪৭-৫৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৩]*
কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে যে, এই প্রসিদ্ধ মাসআলাটি সকল ঋণের ক্ষেত্রে নয়। ঋণ দুই ধরনের হয়ে থাকে। *ক.* প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে যে ঋণ নেওয়া হয়। *খ.* ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেওয়া হয়।
প্রথম প্রকারের ঋণ সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে যাকাতের নিসাব বাকি থাকে কিনা তার হিসাব করতে হবে। নিসাব থাকলে যাকাত ফরয হবে, অন্যথায় নয়। কিন্তু যে সকল ঋণ উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয় যেমন কারখানা বানানো, কিংবা ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বিল্ডিং বানানো অথবা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিলে যাকাতের হিসাবের সময় সে ঋণ ধর্তব্য হবে না। অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে যাকাত কম দেওয়া যাবে না। *[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৮৭]
৮ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে ১ টাকার একটা কয়েন হাতে নিয়ে দোকানে গিয়ে বললো,
--আপনার দোকানে কি আল্লাহকে পাওয়া যাবে?
দোকানদার একথা শুনে কয়েনটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে তাড়িয়ে দিলো ছেলেটিকে।
ছেলেটি পাশের দোকানে গিয়ে ১ টাকা দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো!
-- এই ছেলে.. ১ টাকা দিয়ে কি চাও তুমি?
-- আমি আল্লাহকে চাই। আপনার দোকানে আছে?
দ্বিতীয় দোকানদারও তাড়িয়ে দিলো।
কিন্তু, অবুঝ ছেলেটি হাল ছাড়লো না। একটার পর একটা দোকানে ঘুরতে লাগলো। ঘুরতে ঘুরতে চল্লিশটা দোকান ঘোরার পর এক বয়স্ক দোকানদার জিজ্ঞাসা করলো,
-- তুমি আল্লাহকে কিনতে চাও কেন? কি করবে আল্লাহকে দিয়ে?
এই প্রথম কোন দোকানদারের মুখে এরকম প্রশ্ন শুনে ছেলেটির চোখেমুখে আশার আলো ফুটে উঠলো৷ নিশ্চয়ই এই দোকানে আল্লাহকে পাওয়া যাবে! হতচকিত কণ্ঠে উত্তর দিলো,
--আমার তো বাবা নাই, এই দুনিয়াতে আমার মা ছাড়া আর কেউ নাই। আমার মা সারাদিন কাজ করে আমার জন্য খাবার নিয়ে আসে। আমার মা এখন হাসপাতালে। মা মরে গেলে আমি খাবো কি? ডাক্তার বলেছে, একমাত্র আল্লাহই পারে আমার মাকে বাঁচাতে। আপনার দোকানে কি আল্লাহকে পাওয়া যাবে?
--হ্যাঁ পাওয়া যাবে...! কত টাকা আছে তোমার কাছে?
--মাত্র এক টাকা।
--সমস্যা নেই। এক টাকাতেই আল্লাহকে পাওয়া যাবে।
দোকানদার বাচ্চাটির কাছ থেকে এক টাকা নিয়ে খুঁজে দেখলো এক টাকায় এক গ্লাস পানি ছাড়া বিক্রি করার মতো কিছুই নেই। তাই ছেলেটিকে ফিল্টার থেকে এক গ্লাস পানি ধরিয়ে দিয়ে বললো, এই পানিটা খাওয়ালেই তোমার মা সুস্থ হয়ে যাবে।
পরের দিন একদল মেডিকেল স্পেশালিষ্ট ঢুকলো সেই হাসপাতালে। ছেলেটির মায়ের অপারেশন হলো। খুব দ্রুতই তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন।
ডিসচার্জ এর কাগজে হাসপাতালের বিল দেখে মহিলার অজ্ঞান হবার মতো অবস্থা। ডাক্তার উনাকে আশ্বস্ত করে বললো, "টেনশনের কিছু নেই। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক আপনার সব বিল পরিশোধ করে দিয়েছেন। সাথে একটা চিঠি দিয়েছেন"।
মহিলাটি চিঠি খুলে পড়ে দেখলো তাতে লেখা-
"আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আপনাকে তো বাঁচিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ... আমি তো শুধু উসিলা মাত্র। বরং ধন্যবাদ দিলে দিন আপনার অবুঝ বাচ্চাটিকে। যে একটাকা হাতে নিয়ে অবুঝের মতো আল্লাহকে খুঁজে বেড়িয়েছে। তার বুকভরা বিশ্বাস ছিলো, একমাত্র আল্লাহই পারে আপনাকে বাঁচাতে। এর নামই বিশ্বাস... এর নামই ঈমান। আল্লাহকে খুঁজে পেতে কোটি টাকা দান খয়রাত করতে হয়না, বিশ্বাস নিয়ে মন থেকে খুঁজলে এক টাকাতেও পাওয়া যায়।"
আসুন না, সবাই এই রমজান মাসে এই মহামারি থেকে বাঁচতে মন থেকে আল্লাহকে খুঁজি...তাঁর কাছে প্রার্থনা করি... তাঁর কাছে ক্ষমা চাই..!!!
গত 5 ঘন্টা আগের মিজানুর রহমান আযহারীর লাইভ ভিডিও।
রমাদানে -১
কুরআনময় হোক আমাদের এবারের রমাদান।
#হে_আল্লাহ্ পহেলা রমজান থেকে প্রতিদিন এমন করে দিন।
টেস্ট =4000জন ,আক্রান্ত =০
সুস্থ =১০জন, মৃত্যু =০
#আমিন ❤❤
Click here to claim your Sponsored Listing.
Category
Address
Lakshmipur
3700
Lakshmipur
If you guys enjoy my video then please follow my page For more upcoming videos and what video you want to see write comment below
Lakshmipur, 3700
Thank you for visiting the page. Watch the video of the page. Share with your friends. Follow the pag
Lakshmipur Chittagong
Lakshmipur, 3706
Biboron-বিবরণ. is an Bangla Story-based Youtube channel in Bangladesh. It mainly uploads all types of Islamic news. History. Story. health tips and tricks, real-life necessity tips...
Lakshmipur, 3700
এই পেইজে জীবনঘনিষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা গুলো দেওয়ার চেষ্টা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।