Shaikh Mufti Baratul Islam

সাহাবায়ে কেরামের বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকিদা।

(দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইল।)

উম্মতের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের জন্য ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পোষণ করা তাদের ইজমা তথা ঐক্যমত কে শরীয়তের দলিল মনে করা এবং তাদের অনুসরণ- অনুকরণ করা ওয়াজিব।

তাদের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ রাখা, তাদের সকলকে অথবা কোন একজনকে মন্দ বলা বা সমালোচনা করা ইসলামী শরীয়তে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত মনে করে সাহাবায়ে কেরামগণ নবীদের মত মাসুম নিষ্পাপ নন। কিন্তু তারা মাগফুর তথা তারা নিজেদের ভুল ত্রুটির উপর অটল থাকেন নি, বরং তাওবা করেছেন এবং আল্লাহ তা'আলা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।

প্রকৃতপক্ষে যাদের অন্তরে বিন্দু পরিমান ঈমান রয়েছে তারা কখনও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করতে পারেন না তাদেরকে মন্দ বলতে পারেন না। হযরত আবু উরওয়া যুবাইরী রহ: বলেন একবার আমরা ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। তখন কোন এক ব্যক্তি, একজন সাহাবী কে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে কিছু বক্তব্য রাখল এবং সে তার বক্তব্যে সাহাবায়ে কেরামের প্রচুর সমালোচনা করল। তখন ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি সুরা ফাতহ এর ২৯ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করলেন :

مُحَمَّدٌ رَسولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذينَ مَعَهُ أَشِدّاءُ عَلَى الكُفّارِ رُحَماءُ بَينَهُم ۖ تَرىٰهُم رُكَّعًا سُجَّدًا يَبتَغونَ فَضلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضوٰنًا ۖ سيماهُم فى وُجوهِهِم مِن أَثَرِ السُّجودِ ۚ ذٰلِكَ مَثَلُهُم فِى التَّورىٰةِ ۚ وَمَثَلُهُم فِى الإِنجيلِ كَزَرعٍ أَخرَجَ شَطـَٔهُ فَـٔازَرَهُ فَاستَغلَظَ فَاستَوىٰ عَلىٰ سوقِهِ يُعجِبُ الزُّرّاعَ لِيَغيظَ بِهِمُ الكُفّارَ ۗ
অর্থ : মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন।

তেলাওয়াত শেষে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাই বললেন, যার অন্তরে কোন একজন সাহাবীর প্রতি বিদ্বেষ বা ক্রোধ রয়েছে সে لیغیظ بهم الکفار উক্ত আয়াতের শাস্তি লাভ করবে। (তাফসীরে কুরতুবী ৮ম খন্ড ২০২ পৃষ্ঠা।)

একবার এক ব্যক্তি ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি কে সাহাবায়ে কেরাম প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে বললেন :

لا يجوز لاحد ان یذكر شيئا من مساويهم ولا ان یطعن على احد منهم بعيب و لا نقص ومن يفعل ذلك وجب تعذیبه....

অর্থ : সাহাবায়ে কেরামের মন্দ আলোচনা করা তাদেরকে দোষারোপ করা তাদের খুঁত খুঁজে বের করা কারো জন্যই বৈধ নয় বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। (আস সারিমুল মাসলুল ১৬৯ পৃষ্ঠা।)

প্রকৃতপক্ষে যার অন্তরে বিন্দু পরিমান ঈমান রয়েছে সে কখনোই সাহাবায়ে কেরামকে মন্দ বলতে পারেন না। হযরত মায়মুন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একবার ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল আমাকে বললেন:

وقال لي يا ابو الحسن, اذا رايت احدا يذكر اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم بسوء فاتهمه على الاسلام

হে আবুল হাসান! কাউকে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করতে দেখো তাহলে তুমি তার ঈমানকে সন্দেহের চোখে দেখবে। (আস সারিমুল মাসলুল ১৬৭ পৃষ্ঠা)

ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মূল নীতি অনুযায়ী বর্তমান যুগে যারা সাহাবায়ে কেরামকে মন্দ বলছেন, তাদের সমালোচনা করছেন তাদেরকে সত্যের মাপকাঠি মনে করছে না, তাদের ঈমান রয়েছে কিনা এখন ভেবে দেখাটা সময়ের ব্যাপার।

আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা মতে সকল সাহাবার সাধুতা ও ন্যায় পরায়ণতা বিশ্বাস করা তাদের সমালোচনা সর্বতোভাবে পরিহার করা এবং আল্লাহ ও রাসূলের অনুরূপ তাদের প্রশংসা করা অবশ্য কর্তব্য। আমাদের এই বক্তব্যের সমর্থন প্রসিদ্ধ আকিদার গ্রন্থ شرح العقیدة الواسطیة তে আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহঃ লিখেছেন

ومن اصول اهل السنة والجماعة سلامة قلوبهم والسنتهم لاصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم كما وصفهم الله تعالى في قوله والذين جاءوا من بعدهم

অর্থ : সাহাবায়ে কেরামের বিষয়ে কলব ও জবান পাক রাখা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতর মৌলিক পরিচয়ের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন :

وَالَّذينَ جاءو مِن بَعدِهِم يَقولونَ رَبَّنَا اغفِر لَنا وَلِإِخوٰنِنَا الَّذينَ سَبَقونا بِالإيمٰنِ وَلا تَجعَل فى قُلوبِنا غِلًّا لِلَّذينَ ءامَنوا رَبَّنا إِنَّكَ رَءوفٌ رَحيمٌ
অর্থ : আর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়। (সূরা হাশর, আয়াত নং

সাহাবায়ে কেরামকে গালমন্দ করা এবং তাদের সম্মানে আঘাত করা এখন কিছু লোকদের জন্য এটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। তারা উঠতে-বসতে সাহাবায়ে কেরামের সম্পর্কে এমন এমন কিছু কথা বলে যা দেখে মনে হয় তারা রাফেজী খারেজি ও শিয়াদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। অথচ হাদিসে স্পষ্টভাবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে মন্দ বলতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهُ

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ কর না। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বত পরিমান সোনা আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় কর, তবুও তাদের এক মুদ বা অর্ধ মুদ-এর সমপরিমাণ সওয়াব হবে না। ( সহীহ বুখারী হাদিস নং ৩৬৭৩ , আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪০৫)

সাহাবায়ে কেরামকে গালমন্দ করার ব্যাপারে শরয়ী বিধি-বিধান _____

সাহাবায়ে কেরামকে গালমন্দ করা হারাম এবং সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হতে একটি। যেকোনো ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরামকে গালমন্দ করবে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। মালেকী মাযহাবের কতিপয় ফকীহর মতামত হল যে, এমন ব‍্যক্তি কে হত্যা করা হবে।

كل كافر تاب فتوبته مقبولة في الدنيا والاخره الا جماعة الكافر، سب النبي وسب الشيخين او احدهما ..... سب الشيخين ولعنهما كفر، اعلم انسب الصحابة حرام، من اكبر الفواحش... وقال بعض المالكيه يقتل

অর্থ : যে ব্যক্তি কুফরী থেকে তাওবা করবে তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা রয়েছে। কিন্তু যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা শায়খাইন তথা আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু অথবা তাদের দুজনের কোন একজনকে গালমন্দ করে তওবা করে, তাহলে তার তওবা গ্রহণ করা হবে না এবং সে ক্ষমা পাবে না। ইবনে নুজাইম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, শায়খাইন ও সাহাবাদের কে গালমন্দ করা এবং তাদের অভিশাপ দেওয়া কুফরী। (মিরকাতুল মাফাতিহ ৯ম খন্ড ৩৮৭৫ পৃষ্ঠা )
আকাইদের শাস্ত্রের সুপ্রসিদ্ধ পাঠ্যগ্রন্থ العقاءد النسفیة তে ইমাম নাসাফী লিখেছেন,
ویکف عن ذکر الصحابة الا بخیر .....

ইসলামী আকীদা এই যে, সাহাবায়ে কেরামের সম্পর্কে উত্তম আলোচনাই শুধু করা উচিত। সকল সাহাবীর তাজিম করা এবং তাদের সমালোচনা পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। কেননা আল্লাহ সুমহান। আর স্বয়ং তিনি তাদের প্রশংসা করেছেন, আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে।এমনকি আল্লাহর প্রিয় রসূল তাদের ভালোবেসেছেন তাদের প্রশংসা করেছেন।(আল আকিদাতুন নাসাফিয়া ৩৮৯ পৃষ্ঠা )

মূল কথা হল : আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত এর মতে সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে মুখ খোলার সময় সতর্ক থাকতে হবে। তাদের ব্যাপারে মুখ থেকে শুধুমাত্র এ কথাই বের করতে হবে যা প্রশংসা ও কল্যাণের হবে। যদি তাদের মধ্য হতে কারো সম্পর্কে এমন কোন বিষয় প্রণীত হয় যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে প্রশংসা বিরোধী পরিদৃষ্ট হয়, তাহলে সে দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে হবে। আমাদের সকলকে ভাল ভাবে মনে রাখতে হবে দিন ওই মানের সুরক্ষা এরই মাঝে নিহত। তর্কবিতর্কের বেড়াজালে নয়।

আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুক এবং সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করা থেকে আমাদের কলব ও জবান কে পবিত্র রাখুন এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় উম্মত হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।

হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ বারাতুল ইসলাম। খতিব : আল-মামুর জামে মসজিদ,দক্ষিণ ধনকুন্ডা, গোদনাইল, নারায়ণগঞ্জ।

ঋণ পরিশোধ হবেই যদিও বা পাহাড় সমপরিমাণ হয়।

আপনি কি আপনার সন্তানের জন্য দোয়া করে থাকেন!!

কালিমা তায়্যিবা বলে দোয়া শেষ করা কি সঠিক??

পাকিস্তানের মোহাম্মদ কাসিম কি আসলেই ঈমাম মাহদি??
সত্যটাকে জানুন।।