Poem,Art & Music
Nature and Emotion maintain a proportion which touches heart and that is literature.
বাংলার দেশ
কামরুন নাহার
বাংলাদেশ;
কেবল একটি নাম নয়
একটি জাতির পরিচয়
যার জন্ম স্লোগানে;
"বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো
বাংলাদেশ স্বাধীন করো"
রক্ত দাবানলে জন্ম নিলো
একটি দেশ; স্বাধীন বাংলাদেশ
ভাষার দেশ
কোটি মানুষের দেশ
সার্বভৌমত্বের দেশ
লাল সবুজের দেশ
আমার এই সোনার বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ;
খেঁটে খাওয়া মানুষের দেশ
জয় গৌরবে বেঁচে থাকা মানুষের দেশ
পৃথিবী মানচিত্রে আত্ম চিৎকারে
নিজ পরিচয়ে জেগে ওঠার দেশ।
বিজয়ের গৌরব গাথা
অমর একুশের দেশ।
আমার এই সোনার বাংলাদেশ
আমার এই স্বাধীন বাংলাদেশ।
ফণীমনসা
সফেদ বিহঙ্গ
অন্ধকারের আত্মকথা ভাবছি আমি একাই একা
ভীষণ নীরব মেঘলা রাতে জীবন স্মৃতি নিরালাতে
ফণীমনসার একটি শাখে হৃদয় আমার আঁটকে থাকে
কাঁটায় ঘেরা এই যে জীবন,সৌন্দর্যে সাজিয়ে রাখে
থাকি আমি ড্রয়িংরুমে কারো আবার শোবার ঘরে
ছড়াই রূপের মাধুর্য কাঁটায় ভরা এই এ দেহের
গভীর রাতের নিদ্রা জেগে কেউ বা আমায় তাকিয়ে দেখে
তার মনেও দোলা জাগাই কাঁটায় ভরা হৃদয় পোড়াই
মেঘলা রাতের শীতল হাওয়া আমায় ধরে জড়িয়ে থাকা
ফণীমনসার স্বপ্নে বিভোর আত্মভিমান বিসর্জনে
আমার ডালেও ফুল ফোটে কদাচিৎ তা দেখতে পাবে
সে ফুল আবার ভীষণ দামী তা নিয়ে হয় কাড়াকাড়ি
ইচ্ছে ছিল প্রকাশ করি ফণীমনসার আত্মকথা
রাতেই জাগি,জোনাক পোকা,যার পরিচয় না দিলেইবা
এই সমাজের কি আসে যায়!
বিষাদ
সফেদ বিহঙ্গ
শূণ্য হৃদয়ে ভগ্ন চন্দ্র
অসহায় রূপ নেয়।
তার আকাশ যে কতটা কালো
বিষাদের মেঘে ঢাকা!
সেই বুঝি জানে;
যার আকাশ কেবল
থেকে থেকে কাঁদে একা!
রাতের আঁধার জানে নাকো তা,
গুম হয়ে থাকে নিজ অভিমানে
তৃষিত হৃদয় তিয়াসী উঠিয়া
কাঁপন জাগায় মনে।
বনের পাখিরা নির্ভুলভাবে
ফিরে যায় নীড়ে ক্লান্ত ও ধীরে
আঁখি পল্লবে জেগে ওঠে আশা
নিশুতি রাতের স্মৃতি বিজড়তা
শূন্য আঁখিতে কাঁপন জাগায়
কেবল থেকে যায় কিছু ব্যাথা।
ভুলের স্মৃতিরা কড়া নেড়ে যায়
আঁখি নীড়ে জল, কিছু ছিটেফোঁটা
হয়তোবা ভাসে মনের ভুলে
নিদারুণ কিছু মিছে অভিমানে!
ছলনার আকাশ থেকে থেকে কাঁদে,
জীবন উল্লাসের অজস্র ভুলে।
তবু্ও তো ক্ষণ পেরিয়ে যখন
সময়ের ধারা নিজ থেকে হায়
অতীতের রেখা মুছে দিয়ে যায়
আসে নতুন দিনের স্মৃতি।
জানালার গ্রিলে দাড়িয়ে একা;
দূর থেকে দূরে মেঘেদের ভিড়ে
চিলেদের গর্জনে, কান পেতে শোনা
আর মনে মনে ভাবা
যেন এভাবেই ধীরে বয়ে যায়
জীবন পথের নদী।
মানুষ
সফেদ বিহঙ্গ
এই ভোগবাদী বিশ্বে
একজন প্রকৃত ভোক্তাই
নিজের প্রয়োজনের যথার্থতা
সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেন।
পক্ষপাতহীন দৃষ্টিতে!
আমরা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করে
কিছু নীতিবোধকে মানদণ্ড ধরে
নীতিবাগীশ হয়ে যাই।
কিন্তু আমরা বরাবরই ভুলে যাই
কোন নির্দিষ্ট সঠিক কিংবা ভুল
কোনটাই কিন্তু হয় না।
যা একজনের কাছে সঠিক;
তা অন্য জনের কাছে ভুলও হতে পারে।
ভুল শুদ্ধের বহু ওপরে
মূলত সত্যিকারের মানুষের বাস করে।
খেলাঘর
সফেদ বিহঙ্গ
পৃথিবীটা বর্ণহীন নিষ্পলকে তাকিয়ে থাকে
আর দূর হতে আকাশ দেখে।
অভিমানী মন
একাকী বিজন
নিরজনে সভা ডাকে।
সে সভার সভাপতি
বেজায় রাগী,ডাকেন সভা।
সভাসদ সবাই থমথমে গুরুগম্ভীর-
আকাশ,বাতাস, চন্দ্র, সূর্য,নক্ষত্র,তারা,গাছপালা,তরুলতা
এমনকি বৃক্ষরাজি।
সন্ধ্যা সাঁজে
পূজোর বাদ্য বাজে
মানুষ হেলায় হারে।
বিজন বাতাসে মরুভূমি কাঁদে
আত্মস্থ হওয়ার সুর নিয়ে
প্রকৃতি ও কাঁদে ।
শূণ্যতার বাতাসে ভেসে আসে
মরুঝড় হয়ে।
আবেগীমন দাড়কাক হয়ে মরীচিকা দেখে শূণ্য বালিতে,
নির্মমতা পরিহাস হয়ে
অট্টহাসিতে ফেটে যেন পড়ে।
জীবন জগত নিজ্ঝুম হয়ে
মনের দন্দ্বে সরলতা খোঁজে।
সভাসদ থাকে নিশ্চুপ
দেখে জীবনের পরিহাস!
সন্ধ্যা হারায়
প্রীতিলতা দেয় রণে ভঙ্গ!
সূর্যসেন বলে- চাই না মৃত্যু;
চাই জীবন!
নজরুল বলে গাইবো না আমি -বিদ্রোহী গান
তুলবো না সুর!
প্রকৃতি হিংস্রতা নিয়ে বলে ওঠে;
পূজোর বেদীতে বাজবোনা আমি!
রবি ঠাকুর বলে ওঠেন
গাইবো না কোন প্রার্থনা গীতি;
অজোর কবিতা কিংবা অবিনাশী গান!
ঝলসে দেবো
কোন বেদনার সুর
বিদীর্ণ করি পুরাতন সব।
জেগে উঠব স্ব-প্রলয়ে,
নিশীথিনী করে ধ্বংস
গড়ো মাটির নতুন পৃথিবী
আনো এ ধূলোর জগতে
কিছু নতুনত্বের সৃষ্টি।
মেঘদূত হেসে বলে
বৃথা আস্ফালন;
কেবলই চিৎকার
কতদিন ঘুমাই না
কত যুদ্ধ গেলো;
এ দুচোখের পাতা এক হলোনা।
সৃষ্টি সেতো মরিচীকা
এক বিশাল বিভ্রম।
প্রশ্ন
সফেদ বিহঙ্গ
প্রগতির ছোঁয়া লাগেনা ধরাতে
পোকামাকড়ের এই বসতিতে
ব্যাঙ শ্বাপদের মাদল নৃত্যে
ভূবন যেন সদা কাঁপে।
মানুষ হয়েও জীবন নাসে
পিছুপা তবু হই না যে
মানবতাহীন পৃথিবীতে
পাথরের এই মন নিয়ে
বেঁচে থাকি বড়ো নিভৃতে।
পাছে কুকুরের মিছিল নামে
সেই ভয়ে থাকি টটোস্হ
অস্থি মজ্জা ভয়ে কম্পিত
নড়ে জানায় যে তার অস্তিত্ব।
মানুষ হয়েও মনুষ্যত্বহীন
দেবতার ঘরে দিই আগুন
নারীকে করি ভূলন্ঠিত,
ধর্ষিত করে ছুড়ে ফেলি
পোশাকের নামে দোহাই দিয়ে
বিবেকের গলা চেপে ধরি।
বিবেকের ঘরে তালা এঁটে
বেড়িয়েছি হায় সেই যবে
ফিরে তাকাইনি, নিজেকে দেখিনি।
দানব হয়েছি সেই কবে!
আত্মা কবে যে পিশাচ হয়ে
ঘুরে ফিরে হায় চারপাশে
আয়নাতে তার সেই রূপ
দেখা হয় নাই যেন কোনকালে!
আমিও কি মানুষ?
সৃষ্টির সেরা!
পিশাচিতা আর কলুষতা নিয়ে
জাগেনা প্রশ্ন?
হে মানুষ!
কখনো কি তোমার এই মনে!
গল্প কথন
কামরুন নাহার
নীরব রাতের
কবিতা প্রহর
একাকী কাব্য
গল্প কথন
ছুঁয়ে যায় মন
নীরব দহন।
আঁখি যুগল
ক্লান্ত ভীষণ
যেন অনন্ত পথ
নীরব চাহন।
একাকী গদ্য
নবীন জীবন
অলস দুপুর
মিথ্যা ও ভুল
চোখের পলক
হাসির ঝলক
যা বাসনা বহুল।
নব জীবনের
কিছু শোরগোল
কিছু ভুল
যা অতীত সুদূর।
নিয়ে যায় দূরে
অতীত সুদূরে
আনে মিছে স্বপ্নের
দ্বিধাহীন রাত
মেঘলা আকাশ
আর কবিতা প্রহর।
গাঙচিল
কামরুন নাহার
বিরাণ ভূমির
এতোখানি পথ
একা গাঙচিল
ঘাস ছুঁয়ে যাক।
তবু সাঁঝ ডাকে
জোছনা ফুরায়
পথের কাব্য
বাঁক খুঁজে পায়।
তুমি আমি ক্ষণ
জোছনা রমণ
হাসি উল্লাস
বহতা নদী।
একা ভেসে যাই
কোন কাজ নাই
স্মৃতির পেয়ালা
কারুকাজ সেজে
আঁকে নিজেকেই
যেন বারেবার।
নিশি রাত ভোর
একাকী জীবন
তীব্র বাসনা
আর চিড় লাগা ভোর
আঁকে স্বপ্নের
নীলাভ আকাশ।
কাঁদে বেদনার
মিছে কাব্য
সময়ের তালে
তালা পড়ে হায়
হারায় পথিক
মরু প্রান্তর।
প্রেমিক হবে
সফেদ বিহঙ্গ
বলো না ভেবে;
প্রেম দেবো না তাই কখনো হয়!
প্রেমিক হবো;
দূর চন্দ্রের আকাশ হবো;
পাড়ি জমাবো মেঘের ভিড়ে;
দূর আকাশের একলা গগণ আমার হবে।
চাঁদনী রাতে হাতটি ধরে ছুঁয়ে রবো;
সেই পরশে বুঝবে তুমি;
ক্লান্ত ভিড়ে পাখির নীড়ে
একলা আমি নিঝুম রাতের
নিয়ন বাতির কোমল আলো।
তুমি তো আমার নিশীথ রাতের একলা তারা;
বিশাল আকাশ!
নিঝুম দ্বীপের কবিতা পুঞ্জ!
কিংবা সাঁঝবেলার একাকী কাব্য;
কংক্রিট মন খোলা বাতায়ন।
বলো না ভেবে;
প্রেম দেবো না তাই কখনো হয়!
কাঁচের দেয়াল
সফেদ বিহঙ্গ
তোমাকে ভুলে যেতে চাইলেও ঠিক ভোলা হয়ে ওঠে না
বড় ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি আজকাল।
স্মৃতি রোমন্থন করতে গেলেই বিস্মৃতির অতঁলে তলিয়ে যাই।
না আর কাঁদি না!
কাঁদতে ভুলে গেছি আজ বহুদিন।
কেবল একা হয়ে গেলে স্মৃতিরা যেন আঁকড়ে ধরে
হটাৎ হটাৎ হৃদয় হাহাকার করে ওঠে।
আমি প্রেমিকার চোখে এখন আর জগৎ দেখিনা।
ভালবেসে ভালবাসার অর্থ খুঁজি না।
এখন কেবল বেঁচে থাকাটাকেই প্রাধান্য দিই ।
এ সমাজ ব্যবস্থায় সংবেদনশীলতার কোন মূল্য নেই।
কঠিন বাস্তবতা আর তার কটকটে নোংরামি
তা হতে পারে ভাষার, মূল্যবোধের, সংস্কৃতির কিংবা মানসিকতার।
যা আর নিতে পারি না, বড় কষ্ট হয়।
যেন বেঁচে থাকাটাকেই করে তুলছে দুর্বিষহ প্রতিনিয়ত।
তা যেন আর এই মাটির মনটিকেই বাঁচিয়ে রাখতে দিচ্ছে না।
কখন যে এ পূর্ণ হৃদয় শূন্য হয়ে গেলো নিজেই তার আর খোঁজ পেলাম না।
নিজেকেই যখন দেখি পায়ে পা দিয়ে পঙ্কিল নর্দমার কীটের মত
কখন যেন নোংরামির অংশ হয়ে যাচ্ছি
এই সমাজের এক অচেনা জীব হয়ে
ভাবতেই বড় অবাক লাগে!
নিজের হীন তুচ্ছ বিবেক,
বিভীষিকার দহনে কালো কলঙ্কে পরিপূর্ণ হয়ে হাহাকার করে ওঠে।
আর তার অনুশোচনায় দগ্ধ হৃদয়
যেন একান্ত আশ্রয় খোঁজে নিজ অন্তর কুটিরে।
তাই আর অভিযোগ,অনুযোগ,অভিমান নেই কারো বিরুদ্ধে।
মনের গহ্বরে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কি আর লড়াই করে বিজয়িনী হওয়া যায়?যায় না!
এ যেন প্রতিটি মানব জীবনের এক একটি ব্যর্থ প্রয়াস।
নিজের অজান্তেই দখিন দুয়ারে বসে মনের পাতা খুলে বসে আছি।
রাত আসবে সে রাতে হয়তো পূর্ণিমাও থাকবে
এখন আর মেঘের সাথে ভেসে যেতে কোন ভয় নেই।
নেই কোন দুর্ভাবনা কিংবা দুঃস্বপ্ন।
কেননা এখন জানি কাছের মানুষগুলো ভালই থাকবে।
মেঘবালিকা ও রাখাল বালক
ছেয়ে যাচ্ছে সফেদ চতুষ্কোণ; তেমনিভাবে ছেয়ে যাচ্ছে হৃদয় ও মন;
জানি না, মনোনিবেশ কমে যাচ্ছে না নিয়ন্ত্রণ;
মেঘবালিকার গল্পে হঠাৎ এক রাখাল বালকের আবির্ভাব;
রাখালের স্বপ্ন!
কল্পনার বিদ্যুৎ সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নতুন করে গড়ে তুলবে নগর, বন্দর;
এক নতুন শহর;
মেঘবালিকা ভাবে;
সমুদ্রের প্রবল ঢেউকে ডেকে এনে তাতে মিলিয়ে যাবে তার গভীর মায়ায়;
রাখালের আঁকাবাঁকা সুরের সঙ্গী হয়ে নীল আকাশের তারা হয়ে জ্বলে উঠবে সে;
তবুও নিয়ন্ত্রণহীন এক ধূসর বালিতে আটকে যায় মেঘবালিকা;
চোরাবালি আর চোরাকাঁটায় পথ যে আকীর্ণ।
সব কিছু বিনাশ করে নীহারিকা পথে
যদি রাখাল এসে ছুঁয়ে যায় মেঘবালিকার হৃদয়;
নিয়ে যায় তারে কোন এক রূপকথায়;
সে স্বপ্নে দিশেহারা মেঘবালিকা;
তবে রাখালকে হতে হবে বীর সাহসী; মেঘবালিকার স্বপ্নে গড়তে হবে তার নিজস্ব রাজ্য, পেতে হবে মন সিংহাসন;
কিন্তু রাখাল নিস্তেজ ও নিস্তব্ধ!
প্রতিদিন তার প্রতীক্ষায় মেঘবালিকা নতুন স্বপ্নে মোহাবিষ্ট হয়;
পরক্ষণেই বাস্তবতার করাঘাতে ফিরে আসে সে নিজ দুনিয়ায়;
আর ভালোবাসি শব্দটি গভীর থেকে উঠে এলেও হাত বাড়িয়ে ছুঁতে পারে না আর মেঘবালিকা;
গভীর সমুদ্রে বা অথৈ অনিলে হারিয়ে যায় প্রবল প্রবঞ্চনায়;
কোথাও এতটুকু শক্ত মজবুত সীমারেখা পায় না মেঘবালিকা;
যেখানে হারিয়ে গেলেও স্থিত মন নিয়ে দাড়ানো যায়,
হাতে হাত রেখে কেউ বলে যায়;
আমি আছি তো; নির্ভয়ে চলো;
জগতে কারও আস্থা হয়ে উঠতে সময়, স্বস্তি, শ্রম সব দিতে হয়;
বিনিময়ে হয়তো নির্ভরতা, বিশ্বাস একটু প্রশান্তি মেলে,
এর বেশি কিছু নয়;
আর এটুকুই যে অমূল্য! যারা পায় তারাই কেবল জানে;
কতখানি ছুঁয়ে গেলে ছেড়ে থাকা যায়; কতখানি স্পর্শ হৃদয় কাঁপায়!
কতগুলো মেঘখন্ড আঁধার সাজায়; কতটা নীরবতা বৃষ্টি নামায়!
মেঘবালিকা জানে;
আর তাই শূন্যে হারিয়ে যায় মেঘেদের রাজ্যে;
কোন এক রাখাল বালকের স্বপ্নে বা দুঃস্বপ্নে!
সফেদ বিহঙ্গ
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
মিছিল
যে যাবে না সে থাকুক, চলো, আমরা এগিয়ে যাই।
যে-সত্য জেনেছি পুড়ে, রক্ত দিয়ে যে-মন্ত্র শিখেছি,
আজ সেই মন্ত্রের সপক্ষে নেবো দীপ্র হাতিয়ার।
শ্লোগানে কাঁপুক বিশ্ব, চলো আমরা এগিয়ে যাই।
প্রথমে পোড়াই চলো অন্তর্গত ভীরুতার পাপ,
বাড়তি মেদের মতো বিশ্বাসের দ্বিধা ও জড়তা।
সহস্র বর্ষের গ্লানি, পরাধীন স্নায়ুতন্ত্রীগুলো,
যুক্তির আঘাতে চলো মুক্ত করি চেতনার জট।
আমরা এগিয়ে যাবো শ্রেনীহীন পৃথিবীর দিকে,
আমাদের সাথে যাবে সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস,
অনার্যের উষ্ণ লহু, সংঘশক্তি, শিল্পে সুনিপুন
কর্মঠ, উদ্যমশীল, বীর্যবান শ্যামল শরীর।
আমাদের সাথে যাবে ক্ষেত্রভূমি, খিলক্ষেত্র, নদী,
কৃষিসভ্যতার স্মৃতি, সুপ্রাচীন মহান গৌরব।
কার্পাশের দুকূল, পত্রোর্ন আর মিহি মসলিন,
আমাদের সাথে যাবে তন্তু-দক্ষ শিল্পীর আঙুল।
দ্বিধাহীন ঋজু মাথা, চলো, আমরা এগিয়ে যাই,
সামন্ত জঞ্জালগুলো ঝেড়ে ফেলি বলিষ্ঠ আঘাতে।
সম্পর্কের বনেদি পোশাক আর বাতিল নিয়ম
ঝেড়ে ফেলি এসো আজ বৈষম্যের সকল ধারনা।
লক্ষ্যস্থির আমাদের, চলো, সামনে এগিয়ে যাই।
আমাদের সাথে যাবে তিতুমীর, সিপাহী বিপ্লব,
আমাদের সাথে যাবে অস্ত্রাগার দখলের হাত,
কাল বোশেখির মতো রক্তবীজ, বিপুল উত্থান।
উত্তাল বাংলার রোষে ছিন্নভিন্ন বেনিয়া বৃটিশ,
বিলুপ্ত নীলের চাষ, পীড়নের দুইশো বছর।
শোষক বদলে যায়, টিকে থাকে শোষনের ফাঁদ,
মসনদে নব প্রভু জন্ম নেয় নতুন শোষক।
চলো, আমরা এগিয়ে যাই, আমাদের সাথে যাবে
বায়ান্নর শহীদ মিনার, যাবে গণ অভ্যুত্থান,
একাত্তুর অস্ত্র হাতে সুনিপুন গেরিলার মতো।
আমাদের সাথে যাবে ত্রিশ লক্ষ রক্তাক্ত হৃদয়।
শোষক বদলে যায়, টিকে থাকে শোষনের ফাঁদ,
টিকে থাকে শ্রেণিভেদ, ঘুনে ধরা জীর্ন সমাজ কাঠামো।
পতাকা বদলে যায়, বদলায় মানচিত্র-সীমা,
টিকে থাকে গৃহহীন, বস্ত্রহীন ক্ষুধার্ত জীবন।
আমরা এগিয়ে যাই শ্রেণিহীন পৃথিবীর দিকে,
চলো যে-হাত শ্রমের হাত, যে-হাত শিল্পের হাত,
যে-হাত সেবার হাত, সে-হাত সশস্ত্র করি, চলো,
আমরা সশস্ত্র হোই সমতার পবিত্র বিশ্বাসে।
কথোপকথন
কামরুন নাহার
এই ছেলেটা
একটু দাড়া
নাম কিরে তোর!
আমার নাম!
সোনার তরী
এই যে নদী...
তার ওপারেই আমার বাড়ি।
কিন্ত তুমি...
এই এ বেলা যাচ্ছো কোথায়?
কে ভাই তুমি?
আমি!
আমি হলাম মেঘ দুলালী
মেঘের রাজ্যে আমার বাড়ি।
বাঃ!
নামতো তোমার মিষ্টি ভারী।
তুমি কি সেই!
যে গগন কাঁপায়
বৃষ্টি ঝরায়
হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়ায়
বজ্র হয়ে ঝড়ে পড়ে!
আর চারিদিক ভাসিয়ে নেয়!
আহ্! তুই তো বেশ কথায় পটু!
ঝগড়া করিস পা বাড়িয়ে
এমন করে বলতে আছে!
আমি হলাম;
কৃষক মায়ের মুখের হাসি।
বর্ষা দিনের প্রথম কদম
কিশোরীদের উচ্ছ্বসিত উচ্ছলতা
বৃষ্টি ভেজা...
যা যা তোর ভাষায় ওই তো আমি।
ভীষণ রাগী আর আকাশ কাঁদাই।
হ্যা, হ্যা যাচ্ছি তো তাই
তুমি ডাকছো!
তাই কি আমায় থামতে হবে?
আমার কত কাজ রয়েছে
হাঁটছি আমি দেখছো না কো!
দেখছি তোরে...
তবে পারছি নাতো তাল মেলাতে।
তুই যে তরুণ
উদ্দাম এক প্রান ঐশ্বর্য
আমার বয়স শত বর্ষ
তোর সাথে কি পারি বল!
আচ্ছা তবে বিদায় নিলাম
তুই চলে যা তোরই পথে
এবার আমি বাঁক নেবো যে
তোর পথে আর যাবো না
তুই চলে যা সোনার তরী
ভালো থাকিস।
আমার কথা মনে রাখিস
প্রয়োজনে আমায় ডাকিস
মনে থাকবে!
সন্ধ্যা হলো
আসতে পথে
আবার পিছু
ডাকছে কে যে!
এই ছেলেটা
যাচ্ছো কোথায়?
দাড়াও না ক্ষণ!
আমি হলাম সোনার তরী
এই যে নদী তার ওপারেই আমার বাড়ি।
কেনো ডাকছো এমন করে!
কে গো তুমি?
এই নিঝুম রাতে অন্ধকারে
ডাকছো আমায় বারেবারে।
আমি হলাম...
জোনাক পোকা
রাতের বেলায়ই জেগে থাকা
হঠাৎ করে
তোমায় একা চলতে দেখা
ইচ্ছে হলো সাথী হতে
তোমার পাশে আলো জ্বেলে
তোমার হাতে হাতটি রাখার।
রাগছো কেনো?
রাগবো না!
সকাল বেলা আসতে পথে
পথ কাটলো মেঘ দুলালী
চললো আমার সাথে সাথে
গল্প জুড়ে সারাটা পথ
হাটলো আমার পাশে পাশে
দিন গড়িয়ে রাত্রি এলো
তাও তারে ভুলছি না যে
মন টা যে তাই ভীষণ খারাপ।
তাই ভেবেছি চলবো একা
করবো না আর গল্প কোন।
দেবো না হাত
একাই হাঁটো!
আমি হলাম
সোনার তরী...
যে একাই আসে
ওপার থেকে
মিষ্টি হেসে একটু ক্ষণ
গল্প করে
ফের চলে যায়...
যেই পারেতে নিজের বাড়ি।
ভালো থেকো জোনাক পোকা
রাতেই জ্বেলো তোমার পাখা
অন্ধকারে পথিক মনে আলো দিও।
ভালো থেকো।
বিদায় জেনো।
কথা দিলাম
কামরুন নাহার
ও মেয়ে!
কৃষ্ণ নদী পাড় হবি কি?
আমার সাথে?
আমার হাতে হাতটি রেখে?
ও মেয়ে
তুই কি নীরব সঙ্গ দিবি?
আমার হবি!
মাঝ নদীতে, ভীষণ ঢেউ এ!
ও মেয়ে
মনের মাঝের ঝড়কে ডেকে
ভীষণ হেলায় হারিয়ে যাবি!
তুই কি আমার নদী হবি?
ও মেয়ে!
প্রেমের জলে ভাসিয়ে দিবি
কেবল তোকে?
ও মেয়ে
বৃষ্টি দিনের সাথী হবি
কেবল আমার একার হবি?
ও মেয়ে
ভালোবাসি বললে কি তুই
ঝাপ দিবি আমার বুকে?
ও মেয়ে
তুই ভেবে নিয়ে বল তো দেখি
তুই কখনো আমার ছিলি?
বা আমার হয়ে মিলিয়ে যাবি?
ও মেয়ে
তোকে বড্ড বেশি ভালোবাসি
এ কথাটিই হয়নি বলা!
মনের কোথায় তুই যে থাকিস
তুই যে আছিস!
তুই নিজেও তার খোঁজ জানিস নে;
ও মেয়ে
তুই কবে ফিরবি আমার কাছে!
একান্তই আমার হয়ে?
দিন, ক্ষণ, মাস জানিয়ে রাখিস
থাকবো আমি, তোর হয়ে;
কথা দিলাম।
একজন হেলাল হাফিজ একজন কবি না একজন নীরব নদী!
কামরুন নাহার
"যে জ্বলে আগুন জ্বলে" খ্যাত কবি হেলাল হাফিজ কে নিয়ে নতুন করে বলার কিংবা লেখার কিছু নেই। কবি হেলাল হাফিজ প্রেমের না বিরহের কবি তা নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি একটু কৌতূহলী। একাকী একটি জীবন কবিতা নিয়ে পার করে দেয়া এ মানুষটি স্বভাবে খুব নরম, আদ্র, একজন প্রেমিক পুরুষ নামেই প্রসিদ্ধ। কবি সমাজে অনেকটা এমনই তাঁর পরিচিতি।
তার জন্ম ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। তার পিতার নাম খোরশেদ আলী তালুকদার । আর মাতার নাম কোকিলা বেগম। শৈশবেই কবি মাকে হারান। বাবা ছিলেন কবি ও খ্যাতিমান শিক্ষক। মা মারা যাবার কিছুদিন পর তাঁর বাবা আবার বিয়ে করেন। দুই ঘর মিলিয়ে তাদের ৪ ভাই, ৩ বোন।
১৯৬৫ সালে নেত্রকোনা থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে এইচএসসি পাস করে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান হেলাল হাফিজ। সে রাতে ফজলুল হক হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় পড়ে সেখানেই থেকে যান। রাতে নিজের হল ইকবাল হলে (বর্তমানে জহুরুল হক) থাকার কথা ছিল। সেখানে থাকলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হতেন। ২৭ মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়ার পর ইকবাল হলে গিয়ে দেখেন চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, লাশ আর লাশ। হলের গেট দিয়ে বেরুতেই কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে দেখা। তাকে জীবিত দেখে উচ্ছ্বসিত আবেগে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকলেন নির্মলেন্দু গুণ। ক্র্যাকডাউনে হেলাল হাফিজের কী পরিণতি ঘটেছে তা জানবার জন্য সে দিন আজিমপুর থেকে ছুটে এসেছিলেন কবি গুণ। পরে নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের দিকে আশ্রয়ের জন্য দুজনে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য সম্পাদক, ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।
তাঁর কাব্যগ্রন্থ "যে জলে আগুনজ্বলে"(১৯৮৬) "কবিতা একাত্তর"(২০১২) বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় অনূদিত ও "বেদনাকে বলেছি কেঁদো না"(২০১৯) সালে প্রকাশিত হয়েছে । প্রথম কাব্যগ্রন্থ যে জলে আগুন জ্বলে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হলে তা এক আলোড়ন সৃষ্টি করে বাংলা সাহিত্যের জগতে। ৩৩ টির ও বেশি মুদ্রণ হয়েছে এ কাব্যগ্রন্থটির।
তবে তার অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’
যার দুটি পঙ্ক্তি
‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়,
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়"।
যা তাকে দিয়ে গেছে এক অনন্য খ্যাতি । 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' তাঁর পুরো জীবন পাল্টে দেয়। যে খ্যাতি পেয়েছেন জীবনে, তার পেছনে এই কবিতার অবদান অনেক। এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়' এ সম্পর্কে তিনি বলেন "কবিতাটি সময়ই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে।" ১৯৬৯ সালে কবিতা লেখার পর ক্যাম্পাসে রাতারাতি তিনি তারকা হয়ে যান। আহমদ ছফা ও কবি হুমায়ুন কবির কবিতার প্রথম দুই লাইন একরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে চিকা মেরে দিলেন। কবিতাটি এতোটা জনপ্রিয়তা পেলো, টিএসসির দিকে গেলে মেয়েরা একজন অন্যজনকে বলতো- ওই দেখ দেখ 'এখন যৌবন যার' সে যায় । বলাবলি করত, ওই যে কবি যায়। কবির নাম হেলাল আর বলতো না, বলতো কবিতার কথা।
এমন কি এ কবির এমন বিখ্যাত কিছু পঙ্ক্তি রয়েছে যা বাংলাদেশের কবিতাপ্রেমী ও সকল প্রেমিক জুটির মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে থাকে।
প্রস্থান
"এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো৷
এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো৷"
কবির অন্যান্য অসাধারণ কিছু কবিতার নাম যা উল্লেখ না করলেই নয়ঃ
নিরাশ্রয় পাঁচটি আঙুল,দুঃসময়ে আমার যৌবন, অস্ত্র সমর্পণ,অগ্নুৎসব, বেদনা বোনের মতো, ইচ্ছে ছিলো, প্রতিমা, অন্যরকম সংসার,নিখুঁত স্ট্রাটেজি, আমার সকল আয়োজন, হিরণবালা,দুঃখের আরেক নাম, প্রত্যাবর্তন, তীর্থ, অনির্ণীত নারী,অশ্লীল সভ্যতা, কবিতার কসম খেলাম, পরানের পাখি, বাম হাত তোমাকে দিলাম, উপসংহার, শামুক, আমার কী এসে যাবে, ইদানীং জীবন যাপন, পৃথক পাহাড়, অহংকার, কোমল কংক্রিট, নাম ভূমিকায়, সম্প্রদান, একটি পতাকা পেলে, মানবানল, যার যেখানে জায়গা, কবি ও কবিতা, ফেরিওয়ালা,উৎসর্গ, যেভাবে সে এলো,
রাডার, যাতায়াত,যুগল জীবনী,লাবণ্যের লতা, তোমাকেই চাই,ভূমিহীন কৃষকের গান,কবুতর, নেত্রকোনা,তুমি ডাক দিলে, হিজলতলীর সুখ, রাখাল,ব্যবধান,কে,অমীমাংসিত,সন্ধি,ক্যাকটাস,
তৃষ্ণা, হৃদয়েরঋণ, ঘরোয়া,রাজনীতি, ডাকাত।
কবিতায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার অর্জন করেন। পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির কবি সংবর্ধনা (১৯৮৫), যশোহর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেদদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা প্রভৃতি।
হোটেলবাসী এ কবি করোনা মহামারির সময় ও ছিলেন সেগুনবাগিচায় কর্ণফুলী হোটেল তার আবাসস্থলে । গত ৯ বছর যাবত তিনি এই হোটেলেই অবস্থান করছেন । ২০২০ সালের মার্চে সরকার যখন লকডাউন দেয় তখন হোটেল থেকে সব বোর্ডার চলে গেলে তিনি প্রায় ১৫ মাস থাকেন ভাইয়ের বাসায়। তিনি ইদানীং প্রায়শই অসুস্থ থাকেন তবে মাঝে মাঝে একটু বেশি অসুস্থ হয়ে যান। শেষ জীবনে এসে কবি মনে করেন জীবনের শেষ বেলায় কেউ একজন পাশে থাকলে ভালো হতো। এটা যতটা না শারীরিক, তার চেয়ে অনেকটা বেশি মানসিক। তাঁর ইচ্ছে তিনি তার দেহ দান করে যাবেন যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে লাগবে।
জীবনের অপ্রাপ্তি বা হাহাকার নিয়ে কবি হেলাল হাফিজ এর মন্তব্য অনেকটাই এমন বেঁচে আছি একা নিদারুণ সুখে। 'যে জলে আগুন জ্বলে'র একটা কবিতা শুরু হয়েছে ঠিক এভাবে—
কোনো প্রাপ্তিই পূর্ণ প্রাপ্তি নয়
কোনো প্রাপ্তি দেয় না পূর্ণ তৃপ্তি
সব প্রাপ্তি ও তৃপ্তি লালন করে
গোপনে গহীনে তৃষ্ণা তৃষ্ণা তৃষ্ণা।
মানুষ যতই পায়, আরও থাকে চাহিদা। তৃপ্তি মিটে না। আবার কিছু কিছু মানুষ অনেক কিছুই না পেয়েও তৃপ্ত।
কবি হেলাল হাফিজ মনে করেন তাঁর মতো সৌভাগ্যবান কবি বাংলা সাহিত্যে নেই। এতো অল্প লিখে এতো ভালোবাসা কেউ পায়নি। তাঁর দুই বই মিলিয়ে ১০০ টি কবিতাও হবে না। তাও মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা, প্রাপ্তি তাকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন "বাংলা সাহিত্যে তাকিয়ে দেখ, দ্বিতীয় কেউ নাই।"
কবির মাত্র দুটি বই দুটিতে একশ কবিতাও হবে না। এত কম লেখার কারণ কী? এ নিয়ে ডেইলি স্টার এর সাংবাদিক কবিকে প্রশ্ন করলে কবির সহজ স্বীকারোক্তি।
"আমি হয়ত কম প্রতিভাবান। আলস্য প্রিয় মানুষ। অধিক খাটুনি আমার ভালো লাগে না।"
হোটেল জীবন নিয়ে জানতে চাইলে তাঁর উত্তর
" আমি হোটেল জীবন এনজয় করি। নিঃসঙ্গতা, নির্জনতা আমার ভালো লাগে। একাকীত্বের এই বেদনাকে আমি উপভোগ করি।"
'আজন্ম মানুষ আমাকে পোড়াতে পোড়াতে কবি করে তুলেছে মানুষের কাছে এও তো আমার এক ধরনের ঋণ। এমনই কপাল আমার অপরিশোধ্য এই ঋণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।'
কবি হেলাল হাফিজ রাজনৈতিক কোন বিষয় নিয়ে আলাপ করতে একেবারেই আগ্রহী নন। এর অর্থ এই না যে, তিনি রাজনীতি বিমুখ মানুষ। কিন্তু কথা বলতে চান না এ ব্যাপারে। তিনি কখনো কোন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, না ছাত্রজীবনে, না কর্মজীবনে।
রাজনীতি না করা এই কবি মনে করেন প্রত্যেকের কিছু না কিছু দায় আছে সমাজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি, রাষ্ট্রের মানুষের প্রতি যা নজরে আনা খুব প্রয়োজন । তাঁর একটি কবিতার চার লাইন-
'কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,
সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ
সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।'
কবি হেলাল হাফিজ এমনই একজন মানুষ যিনি খোলা পাতা কিন্তু ভীষণই অজানা। তিনি একজন স্বভাবগত কবি। তার কবিতায় যেমন ছন্দ পাওয়া যায়, পাওয়া যায় কাব্যরস। যিনি প্রেম, বিদ্রোহ, বিজ্ঞান সবকিছুকে খুব সুন্দর সহজভাবে একই সাথে ভীষণ দক্ষতায় ও গভীরতায় তুলে ধরতে পারেন। কবি আরও অসংখ্য দিন সুন্দর ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
তাই কবির কবিতা "অচল প্রেমের পদ্য-১১" র কিছু লাইন দিয়ে কবিকেই স্মরণ করছি-
"যুক্তি যখন আবেগের কাছে অকাতরে পর্যুদস্ত হতে থাকে,
কবি কিংবা যে কোনো আধুনিক মানুষের কাছে
সেইটা বোধ করি সবচেয়ে বেশি সংকোচ আর সঙ্কটের সময়।"
এই আধুনিক কবির প্রতি রইলো অশেষ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। কবি তাঁর সুস্থ ও সুন্দর প্রেমময় অনুভূতি দিয়ে জগতকে আরও সুন্দর ও রঙিন করে তুলবেন কবিতাপ্রেমী প্রতিটি মানুষের কবির প্রতি এটাই ঐকান্তিক চাওয়া। ধন্যবাদ।
শিব ভক্ত
কামরুন নাহার
ও মেয়ে!
তোর নাম দেবো কি?
শিবের সনে আলাপ ক্ষনে
জেনে নিয়ো ; মোর নাম হবে কি?
ও মেয়ে!
তোর নাম রাখলাম
কৈলাস বন!
ঠিক আছে তো!
আলাপ করে দিয়েছো তো?
তবে, চলবে!
আমি কি না শিব ভক্ত!
তার কথা ফেলি কি করে!
ও মেয়ে তুই না ছিলি
কৃষ্ণা কন্যা!
কবে থেকে তবে শিব ভক্তে
নাম লিখেছিস!
আরে! তুমি জানো না!
পিতা আমার জ্ঞানের জ্যোতি;
যাকে তোমার ইচ্ছে যখন
করতে পারো পূজো তখন
তাতে তার বাঁধা নেই কো!
আচ্ছা তবে!
ভালোই আছিস!
পিতার পরে অগাধ বিশ্বাস
এই নিয়েই বেঁচে আছিস!
এও তেমন মন্দ নয় কো!
মনে তবুও ভাবিস
আছেন পিতা!
দেখে রাখবেন ।
এটাই বা কজন জানে!
ও মেয়ে!
তবে মাঝে মাঝে
কাঁদিস কেন?
কান্না পায় যে!
ভীষণভাবে মন খারাপের
ঝড় ওঠে যে!
বোকা মেয়ে!
এই জগৎ জলের
কত প্রলেপ
তাই যদি তুই দেখতে পেতি!
নরক বলে চেঁচিয়ে বেড়ায়
নিষিদ্ধ ফলে জন্ম নেয়া
যে জীবের জগৎ!
তার আকার,প্রকার, শ্রেণি বিভাগ!
তবে আমার কাছে চুপটি করে নীরব বসে গল্পে মেতে
কল্পে জীবন পেরিয়ে যাক
এই স্বপ্নেই বিভোর হতি!
তবু আমি ছাড়ি!
ছেড়ে শেখাই বাঁচতে হবে
কে বাঁচাবে?
এই আমি ছাড়া!
চাঁদের হাঁটে পিঁপড়ে হয়ে...
আর কতটা জীবন!
কালো জলে ঘোলা হয়ে
ভাসবি বলে পাঠাইনিতো!
জানি ময়ূর রঙে
তার আদলে কালো পিঁপড়ের
ছড়াছড়ি।
তাই বলে কি তুই সে জলের
অংশ হবি!
জলে ভাসবি!
তোর জল স্বচ্ছ অনেক
কাচের মতো!
নিজের ছবি
নিজেই দেখে খুশি হবি।
আমার প্রিয়,
কাছের হয়ে
মনের মাঝের সুর হয়ে
বেজে থাকবি।
ভালো থাকবি।
জানিস রে তুই
কাছের দূরের ভেলায় ভেসে
কত আপন পর হয়ে যায়!
কত পর হয় যে আপন!
তবু তুই, মনে জানিস!
তুই সবটা আমারই ছিলি।
আমি জানি তুই ভালো থাকবি
সাথে থাকবি।
আর এই ভেবেই তো মনে রাখা!
ও মেয়ে!
তুই যে আমার কত কাছের
ভালোবাসার, জানতি যদি!
বুঝতি যদি!
দুঃখ পেয়েও ভুল করেও
দুঃখ দিতে সায় দিতি না!
জানি আমি!
এমন হয়তো নয় কখোনো!
তবুও মেয়ে ভালো থাকিস
আর আমায় ভীষণ ভাবে আগলে রাখিস।
মনে জানিস...
আমি ছাড়া এই ভুবনে কেউ ছিলো না এত আপন।
এত কাছের
প্রাণের মানুষ।
কালো মেয়ের কাব্যকথা
কামরুন নাহার
আমার যেদিন জন্ম!
সেদিন সকালে চারিদিক সুমধুর আযানের আওয়াজে
ভরে গিয়েছিল।
কিন্তু আমার কানে কেউ আযান দেয়নি।
কারন আমি মেয়ে!
এ সমাজ ব্যবস্থায় আমি অবাঞ্ছিত!
আমি জন্মেছিলাম খুব ছোট
দেহে লাল রঙের লালিমা নিয়ে
সবাই বুঝে নিয়েছিল মেয়ে কালো।
একেতো মেয়ে! তার উপর কালো মেয়ে!
কেউই তেমন আর খুশি হতে পারেনি।
হ্যা, আমি কালো মেয়ে!
ছোটখাটো মুখ, মিষ্টি চেহারা
যে দেখে সেই বলে।
কিন্তু তাই বলে কেউ কখনো
সুন্দরী সম্বোধন করেনি।
এই প্রাচ্যের দেশে আমরা জানি,
সুন্দর হলো দুধে আলতা রং, ছিপছিপে গায়ের গঠন,
ঠিকঠাক লম্বা, ঘন চুল, পটলচেরা চোখ, পান পাতার ঠোঁট আরও কতো কিছু!
এ সবের কোনটাই আমার নেই
তাই মিষ্টি মেয়ে হলেও সুন্দরী হয়ে ওঠা হয়নি।
আমি কালো;
ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি।
আমার মা, কাকিমা,দাদিমা সবাই বলতো মেয়ে কালো!
সবারই এক চিন্তা
এ কালো মেয়েকে বিয়ে করবে কে?
এই একবিংশ শতাব্দীতেও বিয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণই বটে!
আমার বুদ্ধিমত্তা, লেখা-পড়া, আমার জানার পরিধি সবাইকে মুগ্ধ করলেও
কালো মেয়ের তকমাটা এ দেহ থেকে কখনোই মুছে যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে
বেশ ভালো চাকুরী করে
বাবা মা, ভাই বোন সবার মুখই উজ্জ্বল করেছি।
কিন্তু চিন্তার ছায়া মুছে দিতে পারিনি।
যাই হোক বিয়ে আমার হয়েছে। ভালোই হয়েছে।
বেশ ভালো বেতনে চাকুরী করি
সংসারে তাই কদরও বেশ ভালো।
তবুও শাশুড়ি, ননদ, এমনকি নিজের বরও তার সমাজ জীবনে- এই কালো বউকে পরিচয় করিয়ে দিতে কিছুটা কুন্ঠা বোধ করেন।
যদিও এ অভিজ্ঞতা নতুন;
কেননা মায়ের বাড়িতে অন্তত এ সমস্যা অনুভব করতে হয়নি।
কিন্তু জীবন ভারি অদ্ভুত সে তার চটুলতা দিয়ে গুরুত্বের গুরুত্বটা বুঝিয়ে দিয়ে যায় বারেবার।
কালো মেয়েরা এ সমাজে বসবাসরত নাগরিকের নানা চিত্র এবং চরিত্র এবং তাদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা খুব গভীরভাবে অবলোকন করে বেড়ে ওঠে।
তাই তারা অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে পারে।
তারা দেখে এবং হাসে!
কখনো নিজের ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, কখনো অন্যের অবান্তর কৌতূহলে।
কিন্তু এখন আর এসব গায়ে মাখেনা, সয়ে গেছে সব।
এসবকে এখন আর ধর্তব্যের মধ্যে গণনা করাই ছেড়ে দিয়েছে।
পরিহাসকে পরিহাস ভেবেই উড়িয়ে দেয়।
কালো মেয়েদের কাব্যগুলো কিছুটা একই ছকে বাঁধা।
প্রাচ্যের এ সমাজ ব্যবস্থায় মেয়েই যেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত
সেখানে একটি কালো মেয়ে কেনইবা অভিশপ্ত হবে না!
নিয়তির এ নির্মম পরিহাস
কেনই বা তাকে কটাক্ষ করবে না!
এটাই তো স্বাভাবিক!
কিন্তু আমরা একবিংশ শতাব্দীর নাগরিক
এটাও হয়তো কিঞ্চিৎ মাথায় রাখা প্রয়োজন।
এই পাষবিক সমাজ ব্যবস্থা,
এ বর্বর মানসিকতা, রুচিহীন পঙ্কিল বাক্যবাণ
বাক্সবন্দী হোক।
কালো মেয়ের কাব্যকথাই হয়ে উঠুক রূপকথা।
একবিংশ শতাব্দী হোক
নারীর প্রতি পরিবর্তনশীল দৃষ্টভঙ্গির
এক নতুন ধরা।
বাংলার দেশ
কামরুন নাহার
বাংলাদেশ;
কেবল একটি নাম নয়
একটি জাতির পরিচয়
যার জন্ম স্লোগানে;
"বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো
বাংলাদেশ স্বাধীন করো"
রক্ত দাবানলে জন্ম নিলো
একটি দেশ; স্বাধীন বাংলাদেশ
ভাষার দেশ
কোটি মানুষের দেশ
সার্বভৌমত্বের দেশ
লাল সবুজের দেশ
আমার এই সোনার বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ;
খেঁটে খাওয়া মানুষের দেশ
জয় গৌরবে বেঁচে থাকা মানুষের দেশ
পৃথিবী মানচিত্রে আত্ম চিৎকারে
নিজ পরিচয়ে জেগে ওঠার দেশ।
বিজয়ের গৌরব গাঁথা
অমর একুশের দেশ।
আমার এই সোনার বাংলাদেশ
আমার এই স্বাধীন বাংলাদেশ।
বিভাজন
কামরুন নাহার
তোমার সাথে শেষ হলো আমার সকল লেনদেন।
সকল বোঝাপড়া আর হিসেব-নিকেশ।
তুমি আর নেই কোথাও;
এ জীবন পাতায় কিংবা লেখায়;
নেই কোথাও!
জেনে তুমি খুশি হবে; না দুঃখ পাবে;
তা জানার জন্যও
হয়তো নেই আমার কোন দায় কিংবা প্রত্যয়!
তুমি আর আজ কোথাও নেই
আমার এ জীবনে; চলার পথে;
কাজের মাঝে; কোথাও না!
এ কথা জেনে চিৎকারে কেঁদে আকাশ কাঁপাবে;
না খুশি হয়ে নতুন স্বপ্নে বিভোর হবে
নব উল্লাসে!
কেবল তুমিই তা জানো!
এ গহন জীবনে…
তুমি হয়তো ছিলে কিংবা নয়!
তাও কেবল তুমিই বলতে পারো!
গত জনমের তীব্র অভিশাপে-
এ জীবন বৃথা হয়ে গেলো তোমার;
তুমি অনুভব করলে কি করলে না!
তা বোঝাবার পরিসরও নেই আমার।
দুঃখ কেবল এতটুকুই;
এ জনমেও…
আমাকে আর পাওয়া হলো না!
কাউকে না পাওয়ার ব্যাথা কতটা তীব্র
এ জীবন দিয়ে তা তুমি জেনে যাও।
জেনে যাও নেই অভিযোগ;
নেই দাবি!
কেবল এক হৃদয় ভালোবাসা আর ক্ষমা।
যা তোমার প্রাপ্য;
যা দিয়ে গেলাম তোমার প্রার্থনায়।
আমায় চিনবে কি চিনবে না!
বুঝবে কি বুঝবে না!
এ দায় আর রইলো না!
তবু ভালো থেকো।
তুমি আমার কেইবা ছিলে!
কেইবা জানে!
তুমি আমার কেউ নও; এ মন তা জানে!
ভালোবাসা হারিয়ে দামি; সকলে বলে;
আমি তো ভালোবাসতেই জানি না;
কিংবা জানি অনেক বেশি।
তাই ভালোবাসা আর উপভোগের হলো না!
আপেক্ষিক কোন মোহে
কিংবা কথার চাতুর্যে এ মন
কখনো ভোলে না!
তাই শত সহস্র আহ্বানেও
তা কঠিন পাথর।
তুমি আমার কেই বা ছিলে!
কেইবা জানে!
তুমি আমার কেউ নও;
এ মন তা জানে।
নও কোন প্রিয়জন!
কিংবা আপন!
তবু এমনভাবে বুঝিয়ে গেলে;
ভালোবাসার অনুভূতি মূলত কেমন!
ভালোবাসা ছুঁয়ে গেলে কতটা নিঃস্ব লাগে;
কতটা টুকরোয় তার বিভাজন!
এবারেও দেখা হতে হতে হলো না;
কথা হলো পুরোদস্তুর তবু জানা হলো না।
স্বাধীন বাংলাদেশ
কামরুন নাহার
নীরব আঁখি পটে বেদনারা হাসে
স্বামী হারানো নতুন বধূ
মেহেদির সাজে-
জেনে যায় বিরহের সুর
যেন এক ক্লান্ত বিবশ চোখে।
কতটা স্মৃতি কাঁদালে
মা কাঁদতে ভুলে যায়;
তবু বিজয় উল্লাসে
পতাকার সাজে নিজেকে সাজায়!
কতটা পথ গেলে পরে
কুঞ্জের দেখা মেলে
যেথায় মালতী ঘরে
প্রিয়ার কবরে আজও ফুল সেজে রয়!
কতটা কান্না এলে পরে
মন মুছে দেয়
পিতা হারানোর শোক।
কতটা অশ্রুতে
জামা ভিজে হয় একাকার
সাথে পাখিরাও কাঁদে!
মৃত লাশ হাতে মম চিৎকারে!বাতাসেরও মন হুহু করে!
স্বাধীনতা!
তুমি এলে মোর ঘরে-
অবশেষে!
জননী আঁচলে।
যখন পুত্র ক্রোড়ে
আমি বীরাঙ্গনা রূপে
পিতৃহীন এ গৃহপটে।
বিজয় তুমি আমারে করেছে মহান।
দিয়েছো সম্মান।
এক নতুন স্বাধীন দেশ
আমার বাংলাদেশ।
তুমি রাঙিয়েছো মোরে নব সুরে
দিয়েছে গান
মধুর স্মৃতি
যা করুণ লহরী তোলে
মন পাঁজরে কেবলই থেকে থেকে বাজে।
স্বাধীনতা তুমি এক উদাত্ত পৃথিবী।
যা ভূবন কাঁপায়, ছন্দে ভুলায়
মর্ত্যে আনে স্বর্গ স্মৃতি।
আর তীব্র স্বরে জানিয়ে যায়
বাংলাদেশ তুমি আমার দেশ।
তুমি মৃত্তিকা মালতী, আমার জননী।
বড্ড বেশি বেমানান
কামরুন নাহার
বছর তিনেক স্বল্প সময়
গাছের সাথে গল্প করে পার হয়ে যায়;
কিন্তু তারার আকাশ অগুণিত
আর এই ভিড়ে বেঁচে থাকাই ভীষণ লড়াই।
কল্পলোকের এই জগতে বসত করা এই আমিটি
বড্ড বেশি বেমানান এই সভ্যলোকে।
আমি ভাবি মানুষ গুলো মানুষ হয়ে উঠবে কবে?
ঠিক তখনই ঘন্টা বাজে আমার ঘরে!
তুমি নিজে মানুষ তো!
এই মানুষ হবার যুদ্ধে নেমে
প্রতিটাবার পিছিয়ে যাই
আর হারিয়ে ফেলি নিজেকে;
আমি মানুষ;
ব্যক্তিলোকের এই আকাশে
জোর গলায় বলে বেড়াই
হ্যা; আমিই মানুষ;
তাকিয়ে দেখো
যদি তোমার চোখ থাকে
দেখার মতো।
বিজয় গৌরব
কামরুন নাহার
বিজয় আমায় দিয়েছিলো
এক ফালি বাঁকা চাঁদ
যার স্বল্প জোছনায়
আমি স্বপ্ন বুনে যাই।
কিন্তু হঠাৎ স্বপ্ন ভাঙে;
কাকেদের ককর্শ স্বরে
বাংলার ভুল উচ্চারণে
বিজয়ের রাতে
বিদেশি গানের সুরে।
এভাবেই বুঝি বিজয়
নিশ্চুপ হয়!
আর হারাতে থাকে;
তার স্বাধীনতা;
বিজয় গৌরব গাঁথা।
বদ্বীপ
কামরুন নাহার
সুন্দরী বৃক্ষ
তুমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ো প্রতিনিয়ত!
শ্বাসমূল উর্ধাকাশে উর্ণনাভ ছলে
লাল প্রত্যয়ে নীল ঘূর্ণন তোলে
ঐ দূর আকাশে!
বৃক্ষ তুমি রাজা হয়ে ওঠো
এক বদ্বীপ সমুদ্রে;
লবনাক্ত চুম্বনে নীল জল
ঘোলা হয়ে যায়;
প্রকৃতির নতুন রূপে,
অবাক চোখে দেখে যাই
এক নতুন বিভ্রাট;
এক নীরব মৃত্তিকা ঘোর রাত।
সুন্দরী তুমি গাছ হয়ে ওঠো
কাঠ হয়ে ভেসে চলো
পাল তুলে কোন গহীন সমুদ্রে!
তোমার জলে ঠাঁই
নাই নাই কোথাও নাই;
তুমি অকিঞ্চন
এই অন্তঃসলিলা বুকে;
নিভু নিভু রাত্রিতে
কৃষ্ণপক্ষের এই কুয়াশাচ্ছন্ন চাঁদে;
তুমি এখনো ঘুরে বেড়াও
খুঁজে বেড়াও;
এক অধীর আগ্রহে ;
জন্ম জন্মান্তরে;
শুক্লপক্ষ জাত
সেই তীর্যক হাসিকে।
কানামাছি
কামরুন নাহার
ও মেয়ে!
তোর পাড়াতে ভিড় জমেছে!
তোকে নিয়েই কানাঘুষো
জানিস কিছু!
ও মেয়ে!
তুই এমন ধারার কেমন করে?
বলবি ভেবে!
তোর জন্যে ঘুম হয় না!
রাত জেগে রই;
তবু তোর কথাতেই গল্প জুড়ি।
তোকে ঘিরেই...
আমার এই স্বপ্ন বাড়ি!
ও মেয়ে তুই এমন কেনো?
তোর মায়াতে কান্না এলেও
চোখ মুছে নেই!
পাছে তুই বুঝতে পারিস!
আর মন খারাপের বায়না ধরিস!
ও মেয়ে!
তুই কবে থেকে এমন হলি?
বল না ভেবে!
কবে থেকে ছোট্ট একটি তারা থেকে
পুরো আকাশ কেড়ে নিলি!
বল না ভেবে!
ও মেয়ে তুই বড্ড বেশি
কাছের ছিলি!
কেন এমন দূরের হলি?
যাকে ইচ্ছে হলেই যায় না ছোঁয়া
মন খারাপের বায়নাগুলো
আর যায় না বলা!
যার হাতের ওপর হাতটি রেখে
নিশ্চিন্তে যায় না বোঝা
দুঃখগুলো কতটা ভারী!
ও মেয়ে!
তবু ভালো থাকিস।
তারার আলোয় আলো হয়ে
জ্বলে থাকিস!
তবুও ভালো থাকিস।
ভিড়ের গল্প
কামরুন নাহার
এই যে মানুষ ভিড়ের মাঝে হারিয়ে একা
গল্প করে, নিদ্রা ভেঙে
নিঝুম রাতে শূন্য তীরে
দাঁড়িয়ে একা
আর ভেবে চলে
পাখি এবং নীড়ের কথা।
তৃণ থেকে গাছ হয়ে যায়
কাটা ছেঁড়ার গল্প ভিড়ে
এই যে মানুষ স্বপ্নগুলো তাড়িয়ে বেড়ায়
রোজ অজানা ভুল বশতো!
রোজ জীবনের পৃথক সাজে
নর এবং নারীর গল্প
একঘেয়ে খুব।
তবে পিঁপড়ে এবং মাঝির গল্প
দাঁড় টানা কোন গুণের গল্প
মৃত্তিকা ভোর বাদুড় গল্প
উই ডাকা কোন গাছের গল্প
মন কেড়ে নেয়
অবাক সুরে।
অল্প, স্বল্প, গল্প ভিড়ে
জীবন তরী গহন জলে
ভাসিয়ে নেয় ভেলায় ভেসে।
তীব্র স্রোতে, স্রোতের ভিড়ে
মনের আগুন জলের স্নানে
শান্ত সুখের পরশ পেয়ে
নীরব হয়ে গহীন জলে
নির্বিবাদে মিলিয়ে যায়
মলিন হয়ে হাসির রেখায়।
প্রচার সম্পাদক
কামরুন নাহার
কবিদের আচার বিধি নিয়েই লিখি ভিন্ন কিছু।
কবিরা কেমন হলে পাঠকের ভালো লাগে!
কিংবা পাঠক শ্রেণী পড়ে ব্যাকুল!
কবি হবেন ন্যায় নীতির তলোয়ার
ভীষণ রকম ভালো আর সংগ্রামী প্রমিথিউস।
সাথে কিউপিডের দোসর।
তবে কবিগণ হয় কেমন!
জানেন! তার বিবরণ!
এক এক জন এক এক পাগল
ভীষণ অন্য রকম!
কেউ আছেন গায়ে পড়েই ঝগড়া বাঁধান
অকারণেই ভুল ধরে যান!
কেউ আছেন অভিনন্দন জানিয়ে খালাস
লিখতে হয় তাই লিখে যান
পড়ার তার সময় কোথায়?
মিডিয়ার এই ভরাট চাপে
পেইজটা তো রাখতে হবে
তাই লাইক, কমেন্ট খুব জরুরি
তাই দিয়ে যান।
কেউ কেউ ভাবেন আমি লিখছি
বড়ো জম্পেশ!
পাঠক আমার লক্ষাধিক
রাজনীতি, সমাজনীতি, প্রেম
কোন কিছুই উর্ধ্বে নয়; সরল ট্রেন।
কিছু আছেন গায়ে পড়া
অকারণেই জ্বালিয়ে মারা কবি সমাজ
যাদের লেখা পড়তে গেলে কষ্ট হয়
তবুও টাইম লাইনে ভাসে তাই পড়তে হয়।
কেউ আছেন ভীষণ প্যারাদায়ক
শুভেচ্ছা বাণী এদের না পাঠালে বড়ো বিপদ!
আবার কেউ আছেন লিখেই চলেন
পড়লে পড়ো না পড়লে কি এলো গেলো!
এই সমাজের কবেই ছিলাম!
এই ভাবা গোঁয়ার জ্ঞানী।
এদের জ্ঞান ভরপুর
তাই তোয়াক্কা নেই কোনকিছুর
খেতে পড়তে পেলেই হলো
লিখে চলেন দিনভর।
কারা কবি! কারা নন!
এ প্রশ্ন বড়ো আজব!
পড়তে যদি ভালো লাগে পড়ে যাও সকল কিছু।
পড়াই তোমায় বলে দেবে কোনটা ভালো; কোনটা গেছো!