Monoj Chowdhury

Monoj Chowdhury

Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Monoj Chowdhury, Writer, Malda, Bamangola.

Photos from Monoj Chowdhury's post 17/04/2024

'গ্ৰামচর্চা' গ্ৰন্থে মালদহের লোকনাট্য ডোমনি বিষয়ক একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদক শ্রদ্ধেয় ক্ষিতীশ মাহাতো স্যারের অনুপ্রেরণায় এ কাজটি সম্পন্ন করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এবং এ কাজে দৃঢ়ভাবে সবসময় পাশে পেয়েছি আমার মাস্টারমশাই চন্দ্রশেখর ঘোষ এবং আমার ঠানদি (অলোকা বসাক) কে। স্যারকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই 🙏🙏😊❤

প্রথমবারের মতো নিজের লেখা গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার অফুরান আনন্দ। 😊❤

গ্ৰন্থটি সংগ্রহ করতে পারেন/পারো।

১৬-০৪-২০২৩
মঙ্গলবার, মালদা জেলা গ্ৰন্থাগার, আলোর দিশা মঞ্চ

10/04/2024

গীতা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা: নিজের মতো করে দেখা

(১)

আধুনিক বাংলা কবিতার আকাশে যে সমস্ত কবি নিজ নিজ স্বতন্ত্রতাসহ গাঢ় অক্ষরে কবিতার পাতায় নাম রেখে গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম কবি বলাবাহুল্য নারীবাদী কবি গীতা চট্টোপাধ্যায়। গীতা চট্টোপাধ্যায় যে সময় দাঁড়িয়ে কবিতা জগতের প্রারম্ভ করলেন সে সময়ে বারংবার তীব্র কন্ঠস্বরে ধ্বনিত হয়ে উঠছে- দ্বন্দ্বময় রাজনৈতিক এবং পুঁজিবাদী আগ্রাসনের অত্যাচারী পরিস্থিতি। কবি সাহিত্যিকদের ভাবিয়ে তুলছে- যুগসন্ধিক্ষণের কবি ভারতচন্দ্রের 'অন্নদামঙ্গল' কাব্যের অন্তর্গত সেই চিরায়ত প্রবাদ বাক্য " নগর পুড়িয়ে কি দেবালয় এড়ায়"। সে সময় যেন অগ্নুৎপাতের মতো উত্তাল। কেননা,
১| ১৯৫৯- খাদ্য আন্দোলন,
২| ১৯৬০- রেল ধর্মঘট
৩| ১৯৬১- ভিয়েতনাম যুদ্ধের সংকট
৪| ১৯৬২- চীন-ভারত যুদ্ধ
৫| ১৯৬৫- ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধ
৬| ১৯৬৪ - কমিউনিস্ট পার্টির দ্বি-খন্ডিত রূপ
৭| ১৯৬৭- নকশালবাড়ি আন্দোলন

এই সংকটময় পরিস্থিতি কবিকে বহুস্তরীয় ও গভীরভাবে ভাবায়। মনের মধ্যে সৃষ্টি করে নানান জিজ্ঞাসা চিহ্ন। বাংলা সাহিত্যের জগতে বিশ শতকের ষাটের দশক এক মর্মান্তিক নিরাপত্তাহীনতার সময়, অনিশ্চয়তার সময় এবং আত্মপীড়নের সময়। আর এই সময় লিখছেন গীতা চট্টোপাধ্যায় তাঁর দৃঢ় ও সংবেদনশীল কলমের আঁচড়ে। তিনি তাঁর কবিতার মধ্যে প্রকাশ করতে চাইছেন এক স্বতন্ত্র কন্ঠস্বর। পাঠকমহলে ব্যক্ত করতে চাইছেন এক স্বতন্ত্র বয়ান কে।

'গীতা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা সংগ্রহ' গ্রন্থের ভূর্জপত্র অংশে কবি বলছেন- " আমি চাই জন্মে জন্মে তোমায় অহেতুক ভক্তি, গোবিন্দ। আমার কাছে কিন্তু, কবিতাই গোবিন্দ গোবিন্দই কবিতা। "
তিনি 'ভাগবত ও বাংলা সাহিত্য' নিয়ে গবেষণা করেছেন। এবং সেটি তাঁর অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়ও বটে। তাঁর কবিতা পড়লেই বোঝা যায় ভাগবতের সঙ্গে তাঁর এবং তাঁর কবিতার সংযোগ পথ। এমনকি সংস্কৃত শব্দও কবি অনায়াসে ব্যবহার করছেন কিন্তু তা অত্যন্ত সচেতনশীলতা অবলম্বন করে। দৃষ্টান্ত হিসাবে আমরা দেখতে পারি, এভাবে-

১) 'জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু' কাব্যগ্রন্থ
২) 'বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি' কবিতা
৩) 'অক্ষৌ নৌ মধুসংকাশে অনীকং নৌ সমঞ্জনম্' কবিতা
৪) 'ন তত্র সূর্যো ভাতি ন চন্দ্রতারকং' কবিতা
৫) 'প্রণতোহস্মি দিবাকরম্' কবিতা ইত্যাদি

এতে করে আরও স্পষ্ট হয় তাঁর কবিতার আধুনিকতা। আধুনিক কবিতার সঙ্গে বিস্তৃত ও আত্মিক ভাবে ভাগবতের যোগ তিনিই হয়তো একমাত্র দেখাতে পেরেছেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম কবিতার শিরোনাম এবং সংস্কৃত শব্দগুলোর ব্যবহার থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার স্বতন্ত্রতার আর এক বৈশিষ্ট্য।

তাঁর কবিতায় আমরা দেখতে পাবো কবিতার প্রথম চরণ প্রকাশের স্বতঃস্ফূর্ততা। দেখতে পাবো প্রাঞ্জল ও জটিলতার এক মিশ্রণ। দেখতে পাবো শব্দের কারসাজি নতুন নতুন বিচিত্র শব্দের অভিজ্ঞান। তাঁর কবিতার স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণের কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখা যাক-

" ঝরনায় স্নান সেরে উঠলেন তরুণ ঈশ্বর
বুকে রৌদ্র ক্ষৌমবাস, রজতাভ্র, স্ফুরিত কুণ্ডলে"

('অক্ষৌ নৌ মধুসংকাশে অনীকং নৌ সমঞ্জনম্' : কবিতা)

চরণ দুটির প্রথমটি কত সহজভাবে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু ঠিক পরের চরণটাই যেন এক গভীর ভাবাবেগের যাত্রা করায়, বুদ্ধিদীপ্ততার যাত্রা করায়। 'আন্দোলিতা আদি নারী' কথাটি কত অমোঘের সহিত কবি দেখিয়েছেন তা কবিতা পড়লেই বোঝা যায়।

" আরো দূর অরণ্যের জ্যোতির্ময় সমিধ-সংগ্রহ"

এই না হচ্ছে দূরবর্তী ভাবনা। ভাবনার শব্দ প্রয়োগের কৌশল।

" – গম্ভীরায় জীবনের বিশীর্ণা তটিনী;
তখন পড়ে কি মনে দূর অন্ধকার সীমন্তিনী? "

( পূর্বমেঘে উত্তরমেঘে - কবিতা )

মহাকবি কালিদাসের 'মেঘদূত' কাব্যের কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়। কবি গীতা চট্টোপাধ্যায় তাঁর কবিতায় মিথ পুরাণ প্রসঙ্গও অজস্র ব্যবহার করেছেন। ভাগবত থেকে শুরু করে সংস্কৃত সাহিত্য (কালিদাসের মেঘদূত), মধ্যযুগের সাহিত্য (মঙ্গলকাব্য), লোকনাট্য গম্ভীরা, বিভিন্ন পুরাণ প্রসঙ্গ (দশাবতার) ইত্যাদি।

' এ বিশ্বের সবচেয়ে পরিণত কোন সে মানুষ'
(সুভাষণ)
এমন চিরসত্য বাক্য তিনি অতি সহজে উচ্চারণ করেছেন কবিতায়। আধুনিক সময়ের মানুষকে দেখিয়েছেন নানান দিক থেকে স্বতন্ত্র চিত্রকল্পে, নব আঙ্গিকে।

(২)

গীতা চট্টোপাধ্যায় সংস্কৃত শাস্ত্রচর্চায় আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন পিতা বীরেশ্বরের অনুপ্রেরণায় এবং স্বদেশ-সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ জন্মায় মাতা মাধবীলতার কাছ থেকে। এমনকি কবির গবেষণার বিষয়ও 'ভাগবত' কে কেন্দ্র করে। বলাবাহুল্য, কবি এসবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ও অনুরাগ প্রীতিসম্পন্ন।
আমাদের স্মরণে রাখা প্রয়োজন কবির নাম 'গীতা'। সুতরাং কবি তাঁর কবিতায় ভাগবতের অজস্র প্রসঙ্গ ,পুরাণের প্রসঙ্গ এবং সংস্কৃত শব্দাবলি অনেক ব্যবহার করেছেন। এমনকি আমার তাঁর নামের মধ্যেও দেখতে পায় সেই প্রসঙ্গ গুলো। এবং এ দুটি কোথাও না কোথাও একত্রিত হয়েছে।

গীতা চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যগ্রন্থ সমূহের নামগুলো জানা হোক-

১| গৌরীচাঁপা নদী, চন্দরা (১৩৭৯)
২| সপ্ত দিবানিশি কলকাতা (১৩৮০)
৩| বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে বঙ্গইতিহাস (১৯৯৩ জানুয়ারি)
৪| জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু (১৯৯৩ জানুয়ারি)

আমরা দেখে নেবো গীতা'র কবিতার শিরোনাম সমূহ -

পূর্বরাগ, প্রোষিতভর্তৃকা, বসন্তরোদনা, ওষধিষু বনস্পতিষু, তস্য ভাসা সর্বমিদং বিভাতি,অক্ষৌ নৌ মধুসংকাশে অনীকং নৌ সমঞ্জনম্' ন তত্র সূর্যো ভাতি ন চন্দ্রতারকং' প্রণতোহস্মি দিবাকরম্', বিশ্লেষধিয়ার্তিঃ, ওঁ মণিপদ্মে হুম, মন্দিরে মন্দিরে, শ্যামাস্তমালদ্রুমৈঃ,

( গৌরীচাঁপা নদী, চন্দরা )

'চাঁদ সদাগর, সমুদ্র' ( সপ্ত দিবানিশি কলকাতা )

ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরম্,সুদাসী বৈষ্ণবীর হরিচন্দন,ত্বং হি দুর্গা, বিজয়া দশমী, বাংলার ব্রতকথা, ছিন্নমস্তা,

( বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে বঙ্গইতিহাস )

জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু, ধর্ম, পঞ্চভূত, ভানুসিংহ ঠাকুরের রাধা, বেহুলা জোয়ার, গোরক্ষনাথ-মীননাথ বিজয়, ভ্রাতৃমঙ্গল দ্বিতীয়া, দশাবতার (মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধ, কল্কি), পুত্রান্ দেহি ধনং দেহি, সিরাজ সাঁই কয়, লালন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব

( জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু )

তক্ষকের মৃত্যু, কুমারীপূজা, প্রজাপতির জন্মকথা, শ্মশানকালী, কৃষ্ণসখা, সায়ং সন্ধ্যা নাস্তি, সারিগান, রামপ্রসাদের বেড়া, কালী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা ( অগ্ৰন্থিত কবিতা )

উক্ত শিরোনামের শব্দ থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি তাঁর কবিতার দিক। গীতা চট্টোপাধ্যায় যেমন ভারতীয় সংস্কৃতি-শাস্ত্রচর্চার সাধনা করতেন ঠিক তেমনি কবিতার প্রতিও তাঁর সাধনা ছিল গভীর। তাঁর নাম-জীবন এবং কবিতাজগৎ যেন একসূত্রে বাধা। ভাগবত,পুরাণ, বৈষ্ণব শাস্ত্রের প্রতি অনুরাগ তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং তাঁর কবিতায় অভিনব সৌন্দর্যের সঙ্গে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।

গীতা চট্টোপাধ্যায়ের এক নিজস্ব শব্দভুবন আছে। এক নিজস্ব ছাঁচ এবং স্টাইল আছে। বিভিন্ন পুরাণ ও মিথ প্রসঙ্গগুলি কবি তাঁর কবিতায় প্রয়োগ করেছেন ঠিকই কিন্তু সেটা করেছেন এক অভিনবত্বের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রসীমানার বাইরে এসে আধুনিকতার এক নতুন আঙ্গিকে। গীতা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাজগৎ খুব বৃহৎ না হলেও ষাটের দশকের কবিতায় তাঁর অবদান সবসময় স্বতন্ত্র ও অভিনবত্ব। আধুনিক কবিতাকে যেন আর এক নতুন পথ খুঁজে দিলেন তিনি।

গীতা চট্টোপাধ্যায়ের অগ্ৰন্থিত কবিতার কয়েকটি পঙক্তি নিম্নোল্লিখিত করা হলো-

দেয়ালের সরস্বতী চকখড়ির দাগে নড়ে নড়ে
টবের পেয়ারা গাছ রামতুলসী জটলা করবীর
বসন্ত বাতাস শুঁকে সময় বদল টের পেল-
স্বপ্নে কাকে ডেকে যাচ্ছে বাস্তুসাপ একাকী তক্ষক?
( তক্ষকের মৃত্যু)

অঙ্গন্যাসে ধ্যান করো সুধাব্ধিধবলা সিংহাসনে
মানসপূজার ফুল শিরে ধরে হৃদয়ে বসাও
জলপূর্ণ শব্দ ওষ্ঠে, ওর দিকে দেখাও দর্পণ ,
সিদ্ধজয়া খুশি হলে তেজস্তত্ত্বে কবিতা লেখাবে।
( কুমারী পূজা )

ভুরুর মধ্যে তিলের মধ্যে জ্যোতি-বিন্দু একঝলোকা:
ঘুমের মধ্যে জাগার মধ্যে কেবল তুমি কৃষ্ণসখা!
( কৃষ্ণসখা )

মুক্তকেশী দিগম্বরী বামহাতে নিজের মস্তক
দক্ষিণে ধরেছে মুণ্ড চোদ্দভুবনের প্রতারক-
( ছিন্নমস্তা )

দক্ষযজ্ঞে কাটা পড়তে দক্ষের নিজেরই মাথা খানা
কে যেন পরিয়ে গেল এক অজামুণ্ডের বাহানা
( ভুবনেশ্বরী )

নন্দ বাউড়ির বউ মা কালীর ভরে ঘোরে ঝিম ,
কেরাচিনি গায়ে ছু্ঁড়ে বাউড়ি বলে, 'কাত্যায়িনি, কাতি,
চিতায় যাবার আগে বল্ তুই ছিলিস পোয়াতি? '
বুড়ো শিব নন্দ তার সাংখ্যাদর্শনের বঁটি কেটে
দেখে যা হয়েছে হবে, তাবৎ ব্রহ্মাণ্ড ওই পেটে!
( কালী )

ক্রমশ......

তথ্যঋণ:
(১) 'বান্ধবনগর' পত্রিকা গীতা চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা
(২) কবিতা সংগ্রহ - গীতা চট্টোপাধ্যায়

10/04/2024

* তেভাগা আন্দোলনের দলিল: মণীন্দ্র রায়ের 'ইয়াসিন মিয়া' কবিতা

মনোজ চৌধুরী

চল্লিশের দশক এক অগ্নিগর্ভ সময়। চারিদিকে অবিরত বিশৃঙ্খলার আবহ। দেশে জমিদার ও ইংরেজ শাসকদের সীমাহীন দমন পীড়ন। এক বিক্ষুব্ধ উত্তাল সময় চল্লিশের দশক। চল্লিশ দশকের উত্তাল ঘটনাসমূহ -

(ক) ১৯৪১-৪৫:
ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২-১৯৪৪), আগস্ট আন্দোলন, পঞ্চাশের মন্বন্তর, কমিউনিস্ট পার্টির গণপার্টিতে রূপান্তর
(খ) ১৯৪৫-১৯৪৭:
আজাদ হিন্দ বন্দী মুক্তি আন্দোলন, নৌ-বিদ্রোহ, সেনা ধর্মঘট, ১৯৪৬ সালের নির্বাচন, শ্রমিক ধর্মঘট, দেশ বিভাগ, ক্ষমতা হস্তান্তর, তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৬)

এরকম উত্তাল ও রক্তাক্ত সময়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে কবিতা লিখছেন এ দশকের (চল্লিশ দশকের) অন্যতম উল্লেখযোগ্য সময়সচেতন কবি মণীন্দ্র রায়। তাঁর 'সেতুবন্ধনের গান' (১৯৪৮) কাব্য সংকলনে তৎকালীন সময়ের জলজ্যান্ত বাস্তবরূপ তুলে ধরেছেন। তুলে ধরেছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে মহত্বের প্রতিবিম্ব ফলিত কৃষকদের কথা ও তাদের জীবনবৃত্তান্ত। কৃষকদের জল-মাটি-বাতাসের কথা উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত প্রাঞ্জল গদ্য ভাষায়। গল্প বলার রীতিতে। টুকরো টুকরো ছবির মাধ্যমে। মণীন্দ্র রায়ের তেভাগা আন্দোলনকে (১৯৪৬) কেন্দ্র করে রচিত একটি অনবদ্য কবিতা হলো 'ইয়াসিন মিয়া'। কবিতাটি 'পরিচয়' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এবং এ কবিতাটি স্বয়ং কবির খুব প্রিয় একটি কবিতা।

দেখা হল সব্জির বাগানে।
তখন বিকেল। ছোট চারাগুলি ইয়াসিন একা
দ্রুত পরিচর্যা করে।

কবিতাটির সূচনায় হচ্ছে এক কৃষি জীবনের আখ্যানচিত্র দিয়ে। কবিতাটির এক প্রধান চরিত্র হচ্ছে ইয়াসিন মিয়া (রহিমের পিতা)। যিনি বিকেল বেলায় সব্জির বাগান পরিচর্যা করতে ব্যস্ত। অর্থাৎ তাঁর মধ্য দিয়ে কৃষকদের কর্মব্যস্ততার চিত্র ফুটে উঠেছে। আমরা ইয়াসিন মিয়ার মধ্য দিয়ে এক কর্তব্যরত কৃষকের পরিচয় পায়। দেখতে পায় কৃষিকাজই যেন তাঁর জীবনের ঘর-সংসার , রুজিরুটি সমস্ত কিছু। এমনকি একমাত্র সম্বলও বটে। তারপর অবনী'র (রহিমের মাস্টারমশাই) ডাকে ইয়াসিন তার দিকে তাকালে তাঁর মুখাবয়ব রৌদ্রবিচ্ছুরিত ঘামে ভিজে একাকার যেন জ্যোতির আভায় জ্বলজ্বল করে উঠছে। আর ঠিক সেই সময়ে ইয়াসিন মিয়া তথা এক গরিব চাষির মুখমন্ডলকে কবি 'ঋষির মহিমা'/ ঋষি বলে সম্বোধন করেছেন কবিতায়। এ যেন এক অমোঘ উচ্চারণ। বাংলা কবিতা জগতের এক দুঃসাধ্য উচ্চারণ ধ্বনি।

কবিতার দ্বিতীয় স্তবকে আমরা রহিমের আভাসচিত্র পাবো। অশ্বত্থের, পিপুলের কচিপাতার মতো, কিশলয়ের মতো রহিম। সে, কি ভয়ঙ্কর বিষের জ্বালা নীলকণ্ঠের ন্যায় সহ্য করতে পারবে। আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না এ এক করুণ পরিস্থিতির ছবি। কঠিন সময়ে দুঃখের শ্বাস ফেলার ধ্বনি। এই ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি যেন অকল্পনীয় অবর্ণনীয়।
আমরা কবিতায় অবনী নামে আর একটি চরিত্র পাবো। যিনি সেই উত্তাল সময়ে অর্থাৎ 'বৈশাখের ঝড়ে' ভাঙাবাসা সত্ত্বেও পিছনে পা ফেলেনি। শক্তির উচ্ছ্বাসের এক আলোড়ন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। যিনি এই বিদগ্ধ সময়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষীও বটে।

কবিতার তৃতীয় স্তবকে আমরা পাবো একটি গ্ৰামের প্রসঙ্গ। যেই গ্ৰামে অবনী, ইয়াসিন ও তাঁর ছেলে রহিম বসবাস করেন। অবনী সেই গ্ৰামের পাঠশালার ম্লান শিক্ষাব্রতী। ইয়াসিন চাষি স্বপ্ন দেখে আগামী নিয়ে, তাঁর ছেলেকে নিয়ে। ছেলের বিবাহ ও আগামী ঘর সংসার নিয়ে। একদিকে অবনী'র শিক্ষাব্রতী সমাজের স্বপ্ন দেখা রহিম অন্যদিকে এক পিতার স্বপ্ন ছেলের আগামী নিয়ে। এই দুয়ের মধ্যে এসে দাঁড়াল এক ভয়ঙ্কর ক্ষতি।
আমরা প্রেক্ষাপটের মুখোমুখি হতে চলেছি। যার ফলে এক গরিব চাষি তথা বাবার নীরব আর্তনাদ ফুটে উঠবে কবিতায়।

পরের স্তবকে আমরা দেখতে পায় দৃশ্যের অন্তরালে থাকা এক আশ্চর্য ঘটনার কথা। যাতে করে অবনী'র মন 'উচ্ছল ঢেউয়ের মতো' হয়ে উঠেছে। সে বুঝতে পেরেছে ' জটিল স্রোতে জীবনের দুদিকের পাড়'। দেখেছে জীবনের ভাঙা-গড়া। কিন্তু জীবনের এই রূঢ় বাস্তবের সত্য থেকে নিজেকে কখনও সরিয়ে রাখেননি। সে আক্ষেপ করে প্রকাশ করছে সেই ছেলেটির কথা যাঁর কোনো দোষ ছিল না। তাঁর কচিপাতার মতো মন। সে তো প্রতিমা গড়তে জানতো - 'তোমারি প্রতিমা গড়ি মন্দিরে'। আর এখন সেই ছেলেটিই 'হাতে নিল তীক্ষ্ণধার ছেনি! '

পরবর্তী বা পঞ্চম স্তবকে আমরা সরাসরি পাবো তেভাগা আন্দোলনের প্রসঙ্গ। আমরা জানি, চল্লিশের দশকে/ ১৯৪৬ সালে বাংলার কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে তেভাগা আন্দোলনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। 'তেভাগা' কথাটির অর্থ তিন ভাগের এক ভাগ। কৃষকদের দ্বারা উৎপাদিত ফসলের বেশিরভাগ অংশই দাবি করতো জমিদার ও জোতদাররা। এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে আরও জোরালো হয় ১৯৩৬ সালে সারা ভারত কৃষক সভা গঠিত হওয়ার ফলে। অর্থাৎ ১৯৪৬ সালে দুই তৃতীয়াংশ (তিন ভাগের দুই ভাগ) ফসলের দাবিতে খেতমজুর ও ভূমিহীন চাষিরা আন্দোলন করে। এই আন্দোলনই তেভাগা আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলনে শামিল হয় হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সকল গরিব চাষি। দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, ময়মনসিংহ, মেদিনীপুর, যশোর প্রভৃতি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের গণ-অভ্যুত্থান হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে অধিকাংশ অঞ্চলের জমিদারেরা রশিদ দিয়ে দুই তৃতীয়াংশ ছেড়ে এক তৃতীয়াংশ নিজেরা রেখেছিলেন। এটাই তেভাগার সাফল্য।

এই তেভাগা আন্দোলনের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রচিত 'ইয়াসিন মিয়া' কবিতা।

হাজার
চাষীর খামারে ওঠে তেভাগার উপদ্রুত সাড়া।
সেদিন সুলালগঞ্জে হিংস্র ক্ষুধা খাণ্ডবের রোষে
জ্ব'লে গেল কতো ঘর- একটি কিশোর
সূর্যাস্তের সে তিমিরে প্রাণ দিয়ে হল সন্ধ্যাতারা।

তেভাগা আন্দোলনের মতো বিক্ষুব্ধ ঘটনা তথা জমিদার জোতদার ও জোটবদ্ধ হওয়া ইংরেজদের শোষণের অত্যাচারের দমন পীড়নের ইতিহাস খবরের কাগজে আগেভাগেই জানা হয়েছে। চাষিদের জমিতে ও খামারে শাসকদের উপদ্রব যেন বেড়েই চলেছে। এবং ইতমধ্যে এসবের সাড়া পেয়েছে কৃষক সম্প্রদায়। সুলালগঞ্জে ঘটে যাওয়া 'হিংস্র ক্ষুধার তান্ডব' এ কত কত জন প্রাণ হারালো, কত ঘর উপড়ে গেলো। রসাতলে চলে গেলো কত আগাম ভবিষ্যৎ। 'জ্বলে গেল কত ঘর' এবং 'একটি কিশোর' এরকম দুর্বিষহ চিত্র তৎকালীন সময়ে দাঁড়িয়ে কবি উপেক্ষা করতে পারেননি।

'সূর্যাস্তের সে তিমিরে প্রাণ দিয়ে হল সন্ধ্যাতারা' এর মতো নক্কারজনক চিত্র কি'ই হতে পারে। তেভাগা আন্দোলনে নির্দোষ একটি কিশোরের মৃত্যু চিত্র। তৎকালীন মানুষের আর্তনাদ হাহাকার এবং অন্যদিকে কবির প্রতিবাদীচেতনা তীব্র হয়ে উঠেছে। মৃত্যুর পর 'সন্ধ্যাতারা' হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এক কিশোরের মৃত্যু চিত্র এবং অন্যদিকে লোককথার প্রসঙ্গও কবি তুলে ধরেছেন। মৃত্যুর পর মানুষ যেন তারা হয়ে যায়।

এই কিশোর ছেলেটি আর কেউ নয় চাষি ইয়াসিন মিয়ার একমাত্র সন্তান। তেভাগা আন্দোলনে যাঁর মৃত্যু ঘটেছে অকারণে, নির্দোষে। তৎকালীন সময়ের তেভাগা আন্দোলনের ভয়াবহ চিত্র আমরা এখানে স্পষ্ট দেখতে পায়। এরকম ঘটনা কতটা ভয়ঙ্কর ও নির্মমতাসম্পন্ন হলে একজন নির্দোষ কিশোরের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করতে হয়।

এখনো স্মৃতির পটে দেখা যায় রহিমের দেহ-
রক্তপরিপ্লুত মৃত, চোখে তবু কী এক জিজ্ঞাসা!

এক গরিব চাষি তথা পিতা ইয়াসিন মিয়ার মনের আক্ষেপ দুঃখ বেদনা নিংড়ে নিংড়ে উপরিউক্ত পঙক্তির মধ্যে ফুটে উঠেছে। নির্দোষ ছেলের (রহিমের)প্রতি এক পিতার আর্তনাদ করা স্মৃতিচিত্র প্রস্ফুটিত হয়েছে। রহিমের রক্তাপ্লুত মৃত দেহের কথা স্মরণ করলে পিতার শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। চোখে এক জিজ্ঞাসা রেখে চলে গেল রহিম। ইয়াসিন মিয়ার বন্ধু অবনী'র পরামর্শ ও উদ্যোগে এক পা এগিয়ে গিয়েছিল রহিম তেভাগা আন্দোলনের প্রতি। রহিমের মৃত্যুতে অবনী'র মনও - 'অন্ধকারে জোয়ারের মতো তার ক্ষুব্ধ ঢেউয়ে ঢেউয়ে/ দড়ি ছিঁড়ে ভেসে গেছে অবনীর মন। '

অবনী দীর্ঘ ছ'বছর জেলে থাকার পর গ্ৰামে ফিরে এসে দেখলেন রহিমের মৃত্যু। এতে করে অবনী ভাবছে কীভাবেই বা গ্ৰামে দাঁড়াব, কে কী অভিযোগ শোনাবে তাকে! তেভাগা আন্দোলনের ফলে এক জোরালো পরিস্থিতির ছবি আমরা কবিতাংশে দেখতে পায়।

গ্ৰামে প্রবেশ করেই অবনীর ইয়াসিন মিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ। বর্তমানে যার 'জীবনের আশার শিকড়' ছিন্ন হয়েছে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দেওয়ার ফলে। পরশুরামের কুঠারে তার উদ্ভিন্ন মুকুল যেন ছিন্নভিন্ন হয়েছে। এতো বছর পর এরকম পরিস্থিতি দেখে অবনী ফিরে যেতে চাইলেও ফিরে যেতে পারেনি। তারপর আমরা পাবো কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়ে আর একবার ইয়াসিন মিয়ার পরিচয়। এবং সুখ দুঃখ আশা নিরাশা জীবনেরই অংশ। দুঃখ ও নিরাশার পরেও জীবনে বেঁচে থাকা ও জীবনের প্রবাহমানতা বজায় রাখা। একমাত্র সন্তান রহিমের মৃত্যুর পর ইয়াসিন মিয়ার জীবন যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে উলটপালট হয়ে গেছে।

ঐ শিরাওঠা হাতে ,
শ্বেত কাশগুচ্ছ চুলে, বসার ভঙ্গিতে, দ্রুত কাজে
কি করুণ স্নেহ ছিল, দেখে চোখ পারেনি ফিরাতে।

কাজের মধ্যে থাকা চাষি ইয়াসিন মিয়ার পরিচয়। ইয়াসিন মিয়ার character of spirit লক্ষ করা যায়। শিরা জাগা হাত, মাথায় সাদা চুল, বসা-ওঠার ভঙ্গি ও কাজের প্রতি কদর্য সমস্তটাই ফুটে উঠেছে ইয়াসিন মিয়ার চরিত্রে।

অবনী বলছেন- 'ইয়াসিন মিয়া, / ভালো আছ? '
খোদার কৃপায় ইয়াসিন মিয়ার জীবন চলছে। কিন্তু অবনী নিজেকে অপরাধী মনে করে রহিমের মৃত্যুর হেতু। কিন্তু নিজের মনকে সমবেদনা জানিয়ে ইয়াসিন মিয়া বলছেন- 'সকলেরি আয়ু এক নয়। ' কাজের মধ্যে থাকলেই জীবনটা সুন্দর হয়ে ওঠে। অনুতপ্ত হয়ে বলছেন - ' আল্লার বিচারে জানি রহিম করেনি কোনো ভুল। ' তারপর ইয়াসিন অবনী কে জিজ্ঞেস করেন- 'কবে এলে মাস্টারমশাই'।
পরের স্তবকে অবনী ঘাসে বসে এক অতি বাস্তব ও কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো ইয়াসিন কে। কী করে পার হলে ' ঐ দুঃখের সাগর'? /বলো তো কী করে ' আছ বেঁচে? / একালের নাচিকেতা খোঁজে যেন রহস্যের জড়! '
নচিকেতার মধ্য দিয়ে কবি ব্যবহার করছেন পুরাণ চরিত্রের প্রসঙ্গ। নচিকেতা- যিনি যমের দুয়ার থেকে ফিরে এসেছিলেন। একথাই ইয়াসিন মিয়া কে জিজ্ঞেস করে অবনী যে- এতো দুঃখের পর হাহাকারের পর কীভাবে বেঁচে আছো কেমন করে বেঁচে আছো? এতো দুঃখের মহাসাগর কীভাবে দমিয়ে রেখে কাজে ব্যস্ত থাকো? এসবই যেন পুরাণের নচিকেতা চরিত্রটিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

কাজেই মধ্য দিয়ে জীবনের মূল্য সার্থক হয়ে ওঠে। কাজের মধ্যে ডুবে থেকেই অতিক্রম করা যায় জীবনের দুঃখ দুরাশা নৈরাশ্য সমস্তই। আলোচ্য কবিতায় এরকম এক কর্মঠ চরিত্র হলো ইয়াসিন মিয়া। অবনীর প্রত্যুত্তরে ইয়াসিন বলছেন- দূরে চেয়ে ভাবি অনেক্ষণ কর্মই জীবনের প্রধান লক্ষ্য। তেভাগা আন্দোলনে তাঁর একমাত্র সন্তান রহিম সদ্য মারা যাওয়ার পরও তিনি মুখে অপ্রতিভ হাসি নিয়ে বলছেন-

'সে কথা জানি না। শুধু কাজ করে গেছি প্রতিদিন।
যখনি অস্থির মন, জ্বালা ধরে বুকে,
কাজে ডুবে পেয়েছি আরাম। '

কাজের মধ্যে দিয়ে জীবনের প্রবহমানতা বোঝাতে চেয়েছেন কবি। কাজের মধ্য দিয়েই জীবনের গতি স্বচ্ছ হয়। নিত্যদিন কাজ করে গেছেন ইয়াসিন মিয়া। একমাত্র সন্তানের মৃত্যু শোক কাজের মাধ্যমেই ঢেকে দিয়েছেন। জীবনের কোনো দুঃখ স্থায়ী নয় যেমন তেমনি কোনো সুখও চিরস্থায়ী নয়। জীবন চলতে থাকে নিজের ছন্দে। যখন নৈরাশ্যময় জীবন অস্থির হয়ে ওঠে, বুকে জ্বালা ধরে তখন কাজ'ই এসবের একমাত্র নিবারণ হয়ে ওঠে। কাজে থেকেই যেন সমস্ত দুঃখ হতাশা শোক তাপ মোহ নৈরাশ্যতা দূর হয়। কাজের মধ্য দিয়ে জীবন সৌন্দর্যময় হয়ে ওঠে। কাজ ছাড়া জীবনে আর কী'ই বা আছে। সন্তান হারানোর শোক সত্ত্বেও কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন বয়ে যায় 'ঝুঁকে ঝুঁকে চলে যায় আসন্ন আঁধারে শীর্ণ দেহখানি তার।' নিজেকে কাজে নিমগ্ন রাখাই জীবনের আরাম শান্তি।

'দুটি পাখি উড়ে গেল; আলো জ্বলে কার আঙিনায়!'
পৃথিবী চলেছে।'

জীবনের চলমানতা। স্বাভাবিকভাবেই জীবন কখনো থেমে থাকে না। কাজেই ইয়াসিন মিয়াও থেমে থাকেনি। প্রতিদিন যাপন করেছে কাজের মধ্য দিয়ে। সন্তানের শোক তাকে জীবনের চলমানতা থেকে আটকে রাখেনি। সবকিছু মনে মনে আত্মস্থ করে এগিয়ে চলেছে গরিব চাষি ইয়াসিন মিয়া। কবিতার শেষপর্বে অবনী হেসে বলছেন-

এ জীবন এত স্বচ্ছ, বাণী তার এতোই আদিম,
অথচ মানুষ তার লিপি ভুলে যায়।

আমাদের জীবন এত স্বচ্ছ, আদিম তবু আমরা জীবনের কোনো একটা অধ্যায়ে এসে থেমে যায়। জীবনের পথে চলতে থেমে দিই - কোনো দুঃখ শোক ও নৈরাশ্যের কারণে। কিন্তু জীবনের না স্থির থাকাই যে চিরসত্য ও অতি বাস্তব সেটা আমরা ভুলে যাচ্ছি দিন দিন। আমরা শুধুমাত্র কোনো একটা পরিস্থিতিকে ঘিরে বেঁচে থাকি। ভুলে যায় যে- জীবনের আরাম কাজে থেকে অর্জন হয়।

পরিশেষে বলা যায়, মণীন্দ্র রায়ের 'ইয়াসিন মিয়া' কবিতাটি তেভাগা আন্দোলনের এক দলিল। কবি কবিতাটিকে গদ্যছন্দে টুকরো টুকরো গল্প-চিত্রের মাধ্যমে আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। কবিতাটিতে আমরা পায়- পিতা ও সন্তানের বাৎসল্য প্রীতি, তেভাগা আন্দোলনের তৎকালীন বিক্ষুব্ধ দৃশ্য, গরিব চাষিদের সংগ্রাম, জমিদার ও জোতদারদের বিপুল অত্যাচার, এক চাষি ও কর্মঠ চরিত্র ইয়াসিন মিয়া, আন্দোলনে উদ্যোগ গ্রহণকারী ও মাস্টারমশাই অবনী ইত্যাদি। কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছে এক বার্তা। আমাদের জীবনের চলমানতা অর্থাৎ জীবনের গতি স্থির না রেখে কাজের মধ্যে থেকেই জীবনের আরাম। এভাবেই কবি সামগ্রিক ভাবে তেভাগা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গরিব চাষিদের কেন্দ্র করে এক গ্ৰামের নির্মম কাহিনিকে গল্পাকারে উপস্থাপন করেছেন।

Photos from Monoj Chowdhury's post 29/03/2024

আন্তর্জাতিক সেমিনারের দ্বিতীয় দিন
বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন

Photos from Monoj Chowdhury's post 29/03/2024

আন্তর্জাতিক সেমিনারের প্রথম দিন।
বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন

Photos from Monoj Chowdhury's post 29/03/2024

পুনর্মিলন উৎসবে
বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন

Photos from Monoj Chowdhury's post 29/03/2024

শান্তিনিকেতন, সোনাঝুড়ি বসন্ত উৎসবে বন্ধুদের সঙ্গে।
২০২৪

Photos from Monoj Chowdhury's post 29/03/2024

শান্তিনিকেতন, সোনাঝুড়ি বসন্ত উৎসবে বন্ধুদের সঙ্গে।

Photos from Monoj Chowdhury's post 29/03/2024

৩৫ তম পুনর্মিলন উৎসব উপলক্ষ্যে বিশ্বভারতী বাংলা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা পরিবেশিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ভানুসিংহের পদাবলী' এবং পরশুরামের 'উলট-পুরাণ' এর কয়েকটি খন্ড দৃশ্য।

Photos from Monoj Chowdhury's post 29/03/2024

নবান্ন মেলা ২০২৪

Photos from Monoj Chowdhury's post 29/03/2024

সূত্রপাত পত্রিকার প্রকাশ অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধেয় দাদাদের সঙ্গে শান্তিনিকেতন প্রকৃতি ভবনে।

29/03/2024

'সূত্রপাত' পত্রিকার বসন্ত সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠানে কবিতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় দাদা।

25/03/2024
25/03/2024

আঞ্চলিক কবিতা

৩৫ তম পুনর্মিলন উৎসব
বাংলা বিভাগ, ভাষা ভবন, বিশ্বভারতী

24/03/2024

'Struggle for existence' (or struggle for life)- অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম সবারই আছে। কিন্তু সবার সংগ্ৰামের ধরন আলাদা আলাদা। আমরা প্রাচীন যুগের সাহিত্য পুথি 'চর্যাপদ' এ বিভিন্ন লোকপেশা যুক্ত মানুষের জীবন সংগ্রামের ছবি থেকে মধ্যযুগীয় প্রথম মঙ্গলকাব্য 'মনসামঙ্গল' এ দেখতে পাবো লোকদেবী মনসার অস্তিত্বের সংগ্রাম। মধ্যযুগীয় সমাজে ও মানুষের ঘরে ঘরে স্থান সম্মান পাওয়ার জন্য মনসার যে লড়াই সেটাই যেন অস্তিত্বের সংগ্রাম রক্ষার আখ্যান হয়ে উঠেছে। এই সংগ্রাম যেমন প্রত্যেক মানুষের তেমনই প্রত্যেক পশু পাখিদেরও। আধুনিক তথা অত্যাধুনিক সময়ে এ সংগ্রাম যেন আরও তীব্র বেগে এগিয়ে চলেছে। এই সংগ্রাম যেন হানাহানি রক্তপাতে দুর্দশায় পরিণত হয়েছে। শহরতলির জীবনযাপনেকে যেরকম যান্ত্রিক সংগ্রাম অনেকটাই আবদ্ধ করে রাখে অন্যদিকে গ্ৰাম-সমাজের জীবনযাপনকেও ভুগতে হয় নানান কলুষতা, নৈরাশ্যতা, চিন্তাধারার নিম্নতম প্রবাহের স্রোত।
সময়ের সাথে সাথে সংগ্রামের প্রবাহমানতা নানা রূপে ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছে। ছোটো থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত এই সংগ্রাম যেন চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে আমাদের সকলের জীবনের সঙ্গে। একটা পাতা যেমন বিভিন্ন ঝড় বৃষ্টি ধুলো বালি শীত সহ্য করে কুঞ্চিত কুঁড়ি থেকে প্রস্ফুটিত পাতা হয়ে ওঠে - তার অন্তরালেও এক অস্তিত্বের ইতিহাস লক্ষ করা যায়।

'খাঁচার ভিতর অচিন পাখি/কমনে আসে যায়' - পাখিদের যে সংগ্রাম তা উক্ত ভিডিওতে লক্ষ করা যায়। পাখিদের আত্মকথনও আমাদের ভাবায়, শিক্ষা দেয়। মানুষ যেমন বসবাসের জন্য ঘর/গৃহ তৈরি করে দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও মেহনতের পর তেমনিই পাখিরাও জীবন-যাপন অস্তিত্বের জন্য পরিশ্রম করে নিজেদের ঘর তৈরি করে বসবাসের জন্য। এ প্রসঙ্গে যদিও একটা গান মনে পড়ে -

'পরের জায়গা পরের জমিন, ঘর বানাইয়া আমি রই
আমি তো সেই ঘরের মালিক নই'
বলাবাহুল্য, এ পৃথিবী আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রামের জন্যই। আর এ সংগ্রাম সবার জীবনে আলাদা আলাদা ভাবে প্রকাশ পায়।

Photos from Monoj Chowdhury's post 23/03/2024

রিহার্সাল

Photos from Monoj Chowdhury's post 23/03/2024

৩৫ তম পুনর্মিলন উৎসব

বাংলা বিভাগ
বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন
২৩ মার্চ ২০২৪

18/03/2024

যদি মরে যাই
ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই ,
যে ফুলের নেই কোনো ফল
যে ফুলের গন্ধই সম্বল ;
যে গন্ধের আয়ু এক দিন
উতরোল রাত্রিতে বিলীন
যে রাত্রি তোমারই দখলে
আমার সর্বস্ব নিয়ে জ্বলে,
আমার সত্তাকে করে ছাই।
ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই।।

Photos from Monoj Chowdhury's post 21/02/2024

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
শ্রদ্ধাঞ্জলি 🙏

২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪
বাংলাদেশ ভবন, বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন

22/01/2024

প্রকাশিত: নব ভাবনা পত্রিকা সত্য-মিথ্যা সংখ্যা
প্রচ্ছদ কবিতা

21/01/2024

প্রকাশিত: পাক্ষিক আমাদের গল্পকথা পত্রিকা
১৬ জানুয়ারি ২০২৪

মনোজ চৌধুরী

Want your public figure to be the top-listed Public Figure in Bamangola?
Click here to claim your Sponsored Listing.

Videos (show all)

'সূত্রপাত' পত্রিকার বসন্ত সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠানে কবিতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় দাদা।
আঞ্চলিক কবিতা ৩৫ তম পুনর্মিলন উৎসব বাংলা বিভাগ, ভাষা ভবন, বিশ্বভারতী
'Struggle for existence' (or struggle for life)- অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম সবারই আছে। কিন্তু সবার সংগ্ৰামের ধরন আলাদা...

Category

Website

Address


Malda
Bamangola
732138