Srijoni Nursary

All Plants sell & service

Photos from Srijoni Nursary's post 10/01/2024
#ও আমার দেশের মাটি।। রবি ঠাকুরের গান।। 15/08/2023

https://youtu.be/Hzcf_MF2ZQc
৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হোক রবি ঠাকুরের গানের মধ্যে দিয়ে।

#ও আমার দেশের মাটি।। রবি ঠাকুরের গান।। ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হোক রবি ঠাকুরের গানের মধ্যে দিয়ে।গান - ও আমার দেশের মাটিশিল্পী - অদিতি গুপ্ত উপস্থাপন....

14/08/2023

#কিন্নরদল । লেখক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।। পর্ব - ১ https://youtu.be/a4esrFCm1dU

31/07/2023

#মামলার ফল। লেখক - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।।
https://youtu.be/hxS8dQ4KlLI

20/06/2023

#শুভ রথযাএা

20/05/2023

পদ্মা নদীর মাঝি
– মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
( পর্ব - ১২ )

ইলিশের মরশুম শেষ হইয়া গেল। ধনঞ্জয়ের তিনটি নৌকা ইলিশ মাছ ধরার কাজে লাগানো হইয়াছিল, একটিতে থাকিত সে নিজে, অন্য দুটিতে তার দুই ছেলে। আশ্বিনের ঝড়ে একটি নৌকা ভাঙিয়া গিয়াছে। এবার একটি নৌকা সে রাখিল মাছ ধরার জন্য, অন্যটি লাগানো হইল ভাড়া খাটিবার কাজে। ছেলেরা মাছ ধরিবে, নিজে সে একজন মাঝিকে লইযা নৌকা বাহিলে।

কুবেরকে ধনঞ্জয় পছন্দ কবে না। গণেশকে সে তার নৌকার মাঝি হইতে বলিল। কিন্তু গণেশ কিনা বোকা, সে গেল পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিতে কুবেরের কাছে!

কুবের রাগিয়া বলিল, যা যা, খাট গিয়া আজান খুড়ার নায়। আমারে জিগাস ক্যান। আজান খুড়া বেশি আপনার না তর?

কুবের অনুমোদন না করিলে তাহা হইবার নয়, গণেশ ধনঞ্জয়কে বলিয়া আসিল তার নৌকায় এক সে মাঝির কাজ করিবে না, কুবের যদি করে তবেই সে করিবে, নতুবা নয়। শুনিয়া ধনঞ্জয বলিল, যা, মর গিয়া তবে পঞ্চাশ জনা মাঝি রাখুম, কলের জাহাজ পাইছস, না?

গণেশ তাহা জানে না। চিরদিন সে কুবেরের কথায় নির্ভর করিয়া আসিয়াছে, কলের জাহাজ হোক আর ছোটো পানসি হোক কুবের যেখানে নাই গণেশও নাই সেখানে। কুবেরের দাওয়ায় বসিয়া সে নিশ্চিন্ত মনে তামাক টানিতে লাগিল, আর কুবের গভীর চিন্তিত মুখে ভাবিতে লাগিল, এবার কী করিবে। মাঝিগিরিই সে করিবে সন্দেহ নাই, তবু গম্ভীর চিন্তিত মুখে অন্য কিছু করা যায় কিনা ভাবিতে কুবের চিরদিন বড়ো ভালোবাসে।

কপিলা চলিয়া যাওয়ার পব ক্ৰমে ক্ৰমে কুবেরের অভাব বাড়িয়াছে। ঘরের লক্ষ্মী যেন চলিয়া গিয়াছে কপিলার সঙ্গে, পরিপূর্ণভাবে ক্ষুধার নিবৃত্তি আর হইতেছে না। সময়টা পর্যন্ত পড়িয়াছে খারাপ। জিনিসপত্রের দাম চড়িয়া গিয়াছে। বর্ষায় একটা ফসল নষ্ট হইয়াছিল, পাটের কল্যাণে আমন ধানের ফসলও হইয়াছে কম। চাষিদের ঘরে ধান নাই, টাকা নাই, আছে পাট – কুবেরের ঘরে কিছুই নাই। পাটের উপর চাষির অনিশ্চিত মরণ-বাঁচন, কুবেরের জীবনধারণ সুনিশ্চিত মাঝিগিরিতে—সেটা ভালোমতো জুটিতেছে না। একটা নৌকা যদি কুবেরের থাকিত! পদ্মার ঘাটে ঘাটে তবে সে কুড়াইয়া বেড়াইতে পারিত জীবিকা, পরের নৌকায় লগি ঠেলিতে পাইবার ভরসায় বসিয়া থাকিতে হইত না।

ভোরবেলা এখন নদীর বুক জুড়িয়া থাকে কার্তিকের কুয়াশা, যদিও অগ্রহায়ণ আসিয়া গিয়াছে। জলের তল হইতে মাঠঘাট মাথা তুলিয়াছে। কোথাও রবিশস্যের চারা উকি দিয়াছে, কোথাও সবে শস্য-বীজ বপন করা হইতেছে। রাত্রে অল্প অল্প শীত করে, কাপড় গাযে দিতে হয়।

কুবেরের মন বড়ো খাবাপ। কিছু ভালো লাগে না। গোপি হাসপাতাল হইতে ফিরিয়া আসিয়াছে, ভাঙা হাঁটুটি তাহার শক্ত হইয়া গিয়াছে, সে হাঁটিতে পারে না। ভবিষ্যতে আবার কোথায় হাড় ভাঙিয়া ঠিক করিয়া দিলে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া হয়তো সে হাঁটিতে পারিবে, চলন তাহার স্বাভাবিক হইবে না কোনোদিন। যুগলকে জামাই করাব আশা আর নাই। মেয়ের বিবাহ দিবার এবং সেই উপলক্ষে কিছু টাকা পাইবার ভরসাও লুপ্ত হইয়া গিয়াছে।

কী উপায় হইবে গোপির?

রাসু মাঝে মাঝে আসে, বেশ বুঝিতে পারা যায় গোপির অবস্থা দেখিয়া সে বড়োই দুঃখিত হইয়াছে। গোপির হাঁটুর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ডাক্তার কী বলিয়াছে রাসু খুঁটাইয়া খুঁটাইয়া জিজ্ঞাসা করে, এক একদিন টিপিয়া টুপিয়া নিজেই পরীক্ষা করিয়া দেখিতে যায়, কী সন্তর্পণে সে যে স্পর্শ করে গোপির হাঁটু!

মালা হঠাৎ রাসুকে বড়ো খাতির করিতে আবম্ভ করিয়াছে। যুগল অবস্থাপন্ন লোক, গোপির দিকে সে আর ফিরিয়াও চাহিবে না, চালচুলাহীন রাসু হয়তো গোপিকে গ্রহণ করিতে পারে।

বড়ো দোটানায় পড়িযাছে রাসু। আজ সে চাহিলেই গোপিকে পায়, এক পয়সা পণও তাহাকে দিতে হইবে না-কিন্তু সে কি এই গোপিকে চাহিয়াছিল, এই পঙ্গু মেযেটাকে? খোঁড়া মালাকে লইয়া কুরেব সংসার পাতিয়াছে, অসুখী কুবের নয়, দারিদ্র্যের পীড়নে সে কষ্ট পায় বটে কিন্তু পারিবারিক জীবনটি তাহার কামনা করিবার মতো—গোপিকে লইয়া হয়তো সে এমনি সুখের সংসারই পাতিয়া বসিতে পারিবে। তবু মনটা খুঁতখুঁত করে রাসুর! খোড়া বউ! হয়তো জীবনে কোনোদিন সে উঠিয়া দাঁড়াইতে পারিবে না—যদি পারেও, লাঠি ধরিয়া খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া হাঁটিবে, পায়ের জন্য দেহের হয়তো তার পুষ্টি হইবে না, চিরকাল কুৎসিত দেখাইবে তাহাকে।

শেষ পর্যন্ত গোপির পায়েব অবস্থাটা কী দাঁড়ায় দেখিয়া কর্তব্য নির্ণয় করাব জনা প্রতীক্ষা করাও বিপজ্জনক। হাসপাতালের ডাক্তার যদি পা-টিকে ঠিক আগের মতো করিয়া দেয়? মরা মানুষ বাঁচায় ডাক্তার, কত ওষুধ কত যন্ত্রপাতি ডাক্তারের, একটা ভাঙা পা ঠিক করিয়া দেওয়া তার পক্ষে কঠিন নয়। তখন রাসুকে কি আর কুবের জামাই করিতে চাহিবে? আপশোশ করিয়া মরিতে হইবে রাসুকে তখন।

সাইরা যাইব কয় নাই ডাক্তার? রাসু জিজ্ঞাসা করে।

হ। কুবের জবাব দেয়।

কিন্তু এ কথা রাসু বিশ্বাস করিতে পারে না। গোপির পা যে কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হইয়া যাইবে রাসুকে তাহা বিশ্বাস করাইতে এত বেশি আগ্রহ দেখায় কুবের যে রাসু সন্দিগ্ধ হইয়া ওঠে।

হঠাৎ একদিন সে করে কী, চলিয়া যায় আমিনবাড়ি। হাসপাতালে গিয়া জিজ্ঞাসাবাদ করে, বলে যে সে গোপির আত্মীয়–কোনোমতেই কি গোপির পা-টি আগের মতো করিয়া দেওয়া যায় না? ডাক্তাবের সামনে হাতজোড় করিয়া সে দাঁড়াইয়া থাকে। কত ব্যাকুল, কত উৎকণ্ঠিত আত্মীয় সে গোপির!

না, গোপির দরদি আত্মীযকে ভরসা ডাক্তার দিতে পারেন না।

রাসু চিন্তিত মুখে গ্রামে ফিরিয়া আসে। আবার সে দেখিতে যায় গোপিকে। শীতের কুয়াশার মতো ফ্যাকাশে হইয়া গিয়াছে মেয়েটা, শীর্ণ রোগা মুখখানাতে জ্বলজ্বল করিতেছে দুটা চোখ, একটা খড়ের পুটুলির উপর ভাঙা পা-টি রাখিয়া এলাইয়া পড়িয়া আছে বিছানায়।

রাসু মমতা বোধ করে। ময়নাদ্বীপে একে একে স্ত্রীপুত্রকে হারাইয়া যে নিষ্ঠুর বেদনায় বুক তাহার দীর্ণ হইয়া গিয়াছিল, তেমন বেদনা লক্ষ স্ত্রীপুত্রকে হারাইয়াও আর সে কোনোদিন অনুভব করিবে না–গোপির ভাঙা পা-খানা দেখিলে মনটা শুধু কেমন করিয়া ওঠে।

একদিন সকালে হোসেন মিয়া কুবেরের বাড়ি আসিল।

মৃদু মৃদু হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কাম মিলে নাই কুবের বাই?

কুবের মাথা নাড়িয়া বলিল, না।

হোসেন বলিল, জান দিয়া তোমাগো দরদ করি, ক্যামনে ভালা করুম তোমাগো হুঁশ থুই কুবের বাই। কাম করবা, আমার লায়?

মনে মনে কুবের ভয় পাইল। কী মতলব করিয়াছে হোসেন মিয়া? যাচিয়া কাজ দিতে চায কেন? হোসেন মিয়ার উপকার গ্রহণ করিলে শেষ পর্যন্ত মঙ্গল নাই কুবের তাহা ভালো করিয়াই জানে, কোন স্বাৰ্থ সাধিবার জন্য কবে কাকে হোসেন মিয়ার প্রয়োজন হয় তাই শুধু কেহ জানিতে পাবে না। কুবের একবার ভাবিল, না, হোসেন মিয়ার নৌকায় সে কাজ করিবে না। কিন্তু এ কথা বলা যায় না। লোকটার মৃদু হাসি-ভরা মুখের দিকে চাহিয়া যত ভয় করে কুবেবের, সেই ভয়েব তাড়নাতে ওকেই যেন জড়াইয়া ধরিবার প্রয়োজন তত বাড়ে। তা ছাড়া, আজ পর্যন্ত ক্ষতি সে কিছুই তাহার করে নাই, বরং উপকার করিয়াছে অনেক।

কুবের জোর করিয়া আগ্রহ দেখাইয়া বলিল, হোসেন মিয়ার নৌকায় কাজ পাইলে সে বর্তিয়া যায়। সে যেন জানিত না কুবের রাজি হইবে, এমনিভাবে হোসেন খুশি হইয়া গেল-মানুষ বশ করার কত কাযদাই লোকটা জানে। কী কাজ করিতে হইবে কুবেরকে, কী সে পাইবে, এ সব কথা কিছুই উঠিল না। হোসেন শুধু বলিল, মাঝে মাঝে দশ পনেরো দিনের জন্য কুবেরকে বাড়িঘর ছাড়িয়া যাইতে হইবে, যাইতে হইবে পদ্মার দূরতম বন্দরে, যেখানে যেখানে হোসেন মিয়ার বাণিজ্য আছে। কীসেব বাণিজ্য হোসেন মিয়ার? কে তা জানে। কে সে প্রশ্ন করিবে। কুবের শুধু সায় দিয়া গেল— তার আপত্তি নাই। সপরিবারে ময়নাদ্বীপ যাওয়া ছাড়া যেখানে যাইতে বলুক কুবের সেইখানে যাইবে, যা করিতে বলুক তাই করিবে, প্রতিদানে জীবিকা পাইলেই হইল।

গণেশের কথাটা কুবেরের মনে পড়িতেছিল, তার জন্য ধনঞ্জয়ের নৌকায় একা সে কাজ নেয নাই। আজ গণেশকে ফেলিয়া হোসেন মিয়ার নৌকায় কাজ নেওয়া তার কি উচিত হইবে? কুবের উশখুশ করে। গণেশের কথাটা বলিতে গিয়া মুখে আটকাইয়া যায়। বন্ধুত্ব বজায় রাখিতে গিয়া যদি তার নিজের কাজটা ফসকাইয়া যায়? তা ছাড়া, তার সঙ্গে গণেশও হোসেন মিয়ার খপ্পরে আসিয়া পড়িবে এটা কুবেরের ভালো লাগিতেছিল না।

তবু, গণেশেরও একটা উপায় হওয়া চাই।

টোঁক গিলিয়া কুবের জিজ্ঞাসা করিল গণেশকে নিতে পাবে না হোসেন মিয়া? গণেশ বলবান, পাকা মাঝি গণেশ–বুদ্ধিটা একটু ভোঁতা বটে কিন্তু জেলেপাড়ায় ওর মতো লগি ঠেলিতে, দাঁড় টানিতে আর কেহ পারে না।

হোসেন বলিল, ডাইকা আনবা গণেশরে?

অখল?

হ, যাও, বাতচিত কইরা যাই।

কুবের অনিচ্ছার সঙ্গে উঠিয়া গেল। হোসেন মিয়াকে একা বাড়িতে রাখিয়া যাইতে তার ভরসা হয় না। গণেশকে নিয়া ফিরিয়া আসিয়া সে দেখিল, ইতিমধ্যে সংবাদ পাইয়া আমিনুদ্দি আসিয়া হোসেন মিয়ার কাছে বসিয়াছে। আমিনুদ্দিকে দেখিলে চিনিতে পারা যায় না। কয়েকদিন আগে জহরের ছেলের সঙ্গে মেয়েটার সে বিবাহ দিয়াছে, স্ত্রীপুত্রের অপমৃত্যুর পর এত তাড়াতাড়ি মেয়ের বিবাহ দিতে সকলে তাহাকে বারণ করিয়াছিল, কারও কথা সে শোনে নাই। যেটুকু বন্ধন ছিল তাও সে অধীর হইয়া চুকাইযা ফেলিয়াছে। এবার সে কী করিলে সেই জানে!

কুবেরকে দেখিয়া আমিনুদ্দি বলিল, ময়নাদ্বিপি যামু গিয়া কুবির, কাইজা মনে থুইয়ো না, কসুর মাপ কইরো বাই।

ময়নাদ্বিপি যাবা? ক্যান?

কই যামু, না ত?

কুবের ও গণেশ অভিভূত হইয়া আমিনুদ্দিল দিকে চাহিয়া বহিল। সকলকে হারাইযা রাসু একদিন ময়নাদ্বীপ হইতে ফিরিয়া আসিয়াছিল, এখানে সকলকে হারাইয়া আমিনুদ্দি আজ ময়নাদ্বীপে যাইতেছে। আমিনুদ্দিকে ওখানে নেওয়ার জন্য হোসেন অনেকদিন হইতে চেষ্টা করিতেছিল, এতদিনে তাহার মনস্কামনা পূর্ণ হইল—হোসেনের কোনো ইচ্ছা কি অপূর্ণ থাকিবার নয়? ভয়ে তাহারা হোসেন মিয়ার দিকে তাকাইতে পারে না। মনে হয আশ্বিনের ঝড় নয়, হোসেন মিয়াই আমগাছ ফেলিয়া আমিনুদ্দির কুটিরখানি চূর্ণ করিয়া দিয়াছিল। লোকে যে বলে কোনো কোনো মানুষের ভূতপ্রেতের উপর কর্তৃত্ব থাকে, হোসেনেরও তাই আছে কিনা কে জানে : একদিন রাত্রে সে যে হোসেন মিয়ার পকেট হইতে পয়সা চুরি করিয়াছিল সে কথা মনে করিয়া কুরেরেব বুকের মধ্যে চিপটিপ করিতে থাকে। এমন অলৌকিক শক্তি যার, সে কি টের পায় নাই চুরির কথা? ঘরের চালা হয়তো নয়। হয়তো হোসেনের পোষ-মানা অন্ধকারের অশরীরী শক্তি সেদিন গোপীর হাঁটু ভাঙিয়া দিয়াছিল, বাড়ি ছিল না বলিয়াই কুবের সেদিন বাঁচিয়া গিয়াছিল নিজে টু মেঘলা অমাবস্যার অন্ধকারের মতো অতল কুসংস্কার নাড়া খাইয়া কিছুক্ষণের জন্য কুবেবের মনকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখে।

খানিক পরে আমিনুদ্দি উঠিয়া গেল। তখন হোসেন কুবের ও গণেশকে বুঝাইবার চেষ্টা করিল, ময়নাদ্বীপে গিযা মঙ্গলই হইবে আমিনুদ্দির, এখানে শোকে দুঃখে কাতর হইয়া থাকিবে লোকটা, তার চেয়ে সেখানে গিয়া আবার বিবাহাদি করিয়া ঘর-সংসার করা কি ভালো হইবে না ওর পক্ষে? ময়নাদ্বীপ কি সে রকম আছে এখন, জঙ্গল সাফ হইয়া এখন সেখানে নগ্র বসিয়াছে।

হোসেন মিয়া চলিয়া গেলে গণেশ ও কুবের বসিয়া বসিয়া অনেকক্ষণ গল্প করিল। ভবিষ্যতের সব জল্পনা-কল্পনা। চাকরি পাইয়া দুজনেই খুশি হইয়াছে, দেনাপাওনা ব্যাপালে হোসেন মিয়া কৃপণ নয়, কোথায় কোথায় যাইতে হইবে, লগি ঠেলা ছাড়া আর কী তাদের দিয়া হোসেন মিয়া করাইয়া লইবে, এখন তাই শুধু তাদের ভাবনা।

কয়েকদিন পরে হোসেন মিয়ার আহ্বান আসিল।

কুবের ও গণেশ সকাল সকাল খাইয়া নদীর ঘাটে গেল। ঘাটে হোসেন মিয়ার বড়ো একটি পানসি বাঁধা ছিল। নৌকায় আরও দুজন মাঝি আছে, তারাও হিন্দু। হোসেন মিয়ার ব্যবস্থা ভালো, একই নৌকায় হিন্দু-মুসলমান মাঝি থাকিলে তাদের রান্না-খাওযার অসুবিধা হয়, সে তাই তার তিনটি নৌকার দুটিতে শুধু মুসলমান মাঝিই রাখিয়াছে, আর এই নৌকাটিতে রাখিয়াছে হিন্দু মাঝি। অন্য মাঝি দুজনের নাম শম্ভু ও বগা।

তখন নদীতে কিছুকিছু কুয়াশা ছিল। সকলকে দাঁড় ধরিতে বলিয়া হোসেন নিজে হাল ধরিয়া বসিল। নৌকা চলিল দেবীগঞ্জের দিকে। দেবীগঞ্জে হোসেন নামিয়া গেল। ঘণ্টাখানেক পরে ফিরিয়া আসিয়া কুবেরকে সে ডাকিল কাছে। বলিল, কলিকাতা হইতে বিড়ি চালান আসিয়াছে, নৌকায় আমিনবাড়ি পৌঁছিয়া দিতে হইবে। সেখানে গিরিধারী সাহার গদিতে খবর দিলে তাহারা মাল নামাইয়া লইয়া যাইবে, তারপর কুবের নৌকা লইয়া ফিরিয়া আসিবে কেতুপুরে। দ্বিতীয় আদেশ পাওয়া পর্যন্ত নৌকা কেতুপুরেই বাঁধা থাকিবে।

সকলকে সঙ্গে করিয়া হোসেন রেলের মালগুদামে গেল। টাকা দিয়া মাল খালাস করিয়া আর সে কথা বলিল না, কুবেরের হাতে তিনটি টাকা দিয়া জেটিতে যে স্টিমারটি বাধা ছিল সোজাসুজি তাহাতে গিয়া উঠিল।

হোসেন মুখে বলিয়া যায় নাই, তবু কাহারও বুঝিতে বাকি থাকে নাই যে সমস্ত ভার সে দিয়া গিয়াছে কুবেরকে, কুবেরই সব ব্যবস্থা করিবে। কুবের প্রথমটা একেবারে অভিভূত হইয়া গেল। এ কী সম্মান তার, এ কী সৌভাগ্য! এতবড়ো একটা নৌকা, তিনজন জবরদস্ত মাঝি, তিনশো চারশো টাকার মাল-এ সমস্তের উপর কর্তৃত্বের অধিকার তাহার একার। সকলের রাহাখরচেব টাকা পর্যন্ত হোসেন মিয়া তাহার জিম্মী করিয়া দিয়া গিযাছে!

মাল তুলিতে গিয়া কুবেরের মুখে কথা আটকাইয়া গেল। ভয়ে ভয়ে সে একবার সকলের মুখের দিকে চাহিল। হোসেন মিয়ার পক্ষপাতিত্বে না জানি মনে মনে ওরা কত রাগিয়াছে।

তারপর কুবের নীরবে একটা প্যাকিং কেস তুলিয়া লইল। শম্ভু জিজ্ঞাস করিল, জলপানি দিবা না কুবির?

কুবের ক্ষীণকণ্ঠে বলিল, মাল নায় তুইলা দিলে চলব না?

তা চলিবে। ধীরে সুস্থে তাহারা বিড়ির কেসগুলি নৌকায় তুলিতে লাগিল। কাজে কারও যেন গা নাই। কাজের চেয়ে কথা বলিয়া কুবেরের সঙ্গে খাতির জমাইবার চেষ্টাই তাদের বেশি। একপ্রস্থ মাল রাখিয়া আসিয়াই বগা কুবেরের কাছে একটা বিড়ি দাবি করিয়া বসিল। ওদের দেখাদেখি গণেশও যেন গা ছাড়িয়া দিয়াছে। কুবের মনে মনে বিরক্ত হইয়া উঠিল কিন্তু মুখে কিছু বলিতে সাহস পাইল না।

মাল বোঝাই হইলে কুবের চিড়াগুড় কিনিয়া দিল সকলকে, বসিয়া বসিয়া এত আরামে তাহারা চিড়া চিবাইতে লাগিল যেন আজকের মতো কাজকর্ম সব শেষ হইয়া গিয়াছে। নৌকা খুলিবার পরেও তাদের শৈথিল্য ঘুচিল না। এমনভাবে দাঁড় টানিতে লাগিল যেন কত কাল আগে তারা মরিয়া গিয়াছে।

কুবের বলিল, গাও লাগাও বাই, জোরে খ্যাপ মার।

শম্ভু বলিল, ক্যান?

কুবের সাহস করিয়া বলিল, ক্যান কী? সারাদিন লাগাইবা আমিনবাড়ি যাওনে? হোসেন মিয়া শুইনা কইব কী?

শম্ভু বলিল, হোসেন মিয়া শুনব ক্যান? বলিয়া শম্ভু হাসিল। দাঁড় উঁচু করিয়া রাখিয়া বুক চিতাইয়া বলিল, ডরাও নাকি হোসেন মিয়ারে কুবির, আঁই?

কুবেরের পরিচয় এতক্ষণে ওরা পাইয়া গিয়াছে, সর্দার বলিয়া আর মানিবে না, বন্ধুর মতো সমানভাবে কথা কহিবে। কুবের বড়ো বিমর্ষ হইয়া যায়। কত বড়ো পদটা হোসেন মিয়া তাহাকে দিয়া গিয়াছে, ইতিমধ্যে সে তার পদমর্যাদা হারাইয়া বসিল! প্রথম প্রথম ওরা যখন খাতির করিয়া ভাব জমাইবার চেষ্টা করিয়াছিল তখন একটু দূরত্ব বজায় রাখিয়া চলিলে ভালো হইত। গণেশটা পর্যন্ত ওদের সঙ্গে মিলিয়া তার সঙ্গে ইয়ার্কি জুড়িয়া দিয়াছে।

কড়া কথা বলিবে নাকি? ভয় দেখাইবে? ওরা অবশ্য চটিয়া যাইবে, কিন্তু তাহাতে কী আসিয়া যায় তার! স্বয়ং হোসেন মিয়ার সে নির্বাচিত প্রতিনিধি! তবু জোর করিয়া কুবের কিছু বলিতে পারে না। যেটুকু সে বলে সকলে হাসিয়া উড়াইয়া দেয়, নৌকা অগ্রসর হয় মন্থরগতিতে।

আমিনবাড়ি পৌঁছিতে বিকাল হইয়া গেল। গিরিধারী সাহার দোকানো খবর দেওয়া হইল বটে কিন্তু সেদিন মাল খালাস করিতে কেহ আসিল না। রাত্রে হোটেলে খাইয়া কুবের নৌকায় শুইয়া রহিল, শম্ভু ও বগাব সঙ্গে শহরে গিয়া গণেশ যে কোথায রাত কাটাইয়া আসিল, সকালবেলা বারবার জিজ্ঞাসা করিয়াও কিছু জানা গেল না, রহস্য করিয়া তিনজনে তাহারা হাসিতে লাগিল। মনে মনে বড়ো রাগিয়া গেল কুবের। এ কী তামাশা জুডিয়াছে গণেশ তার সঙ্গে? আজীবন যে নির্ভরশীল বোকা লোকটা তাহার তোষামোদ করিয়া আসিয়াছে, সঙ্গদোষে একদিনে সে এমনভাবে বিগড়াইয়া গেল। একটু বেলায় দোকানের লোক আসিয়া মাল লইয়া গেল। কুবের অবিলম্বে নৌকা ছাড়িল। কেতুপুরের কাছাকাছি আসিয়া দূর হইতে দেখিতে পাওযা গেল, ঘাটে হোসেন মিয়ার সবচেযে বড়ো নৌকাটি বাঁধা রহিয়াছে। দেখিয়া কুবেরের মুখ শুকাইয়া গেল। এত দেরী করার জন্য না জানি হোসেন মিতা তাহাকে কী বলিবে। শম্ভু এবং বগাও হঠাৎ অত্যন্ত বাধ্য ও কর্মঠ হইয়া গেল, ঘাটের কাছে আসিয়া দাঁড় পড়িতে লাগিল ঋপাঝপ, গতি বাড়িয়া গেল নৌকার।

চলবে........

17/05/2023

কৃষ্ণকালী / কলমে :- প্রশান্ত চক্রবর্তী

আবার বছর ঘুরে পুজো এলো। আমাদের বাড়িতে কালী পুজো হয় প্রতি বছর। আমার বাড়ির সবাই শক্তি মতে দীক্ষিত। সবাই শক্তির উপাসক। প্রতি বছর আমাদের বাড়িতে কালী মূর্তি তৈরী করা হয়। কিন্তুু গত বছর কাকার সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলার জন্য বাবা বসত বাড়িটা দুভাগে ভাগ করেছে। কালী পুজো করার জন্য বাবা আমাকে দায়িত্ব দিল ঠাকুর নিয়ে আসার। আমি আমার এক চেনা মূর্তিকারের কাছে গিয়ে কালী ঠাকুর বানাতে বললাম। ঠাকুরটা এমন ভাবে বানাতে বললাম যে শক্তির উপাসক হলেও সেই ঠাকুরকে প্রেম নিবেদন করা যায়। মূর্তিকার বললো সেটা কীভাবে সম্ভব।
আমি বললাম কেন কৃষ্ণকালী। চার হাতের জায়গায় ছয় হাত হবে। তুমি মূর্তি তৈরী করো আমি তোমাকে সাহায্য করবো। মূর্তিকার বললো ঠিক আছে।
বাড়ি এসে বাবার মুখে শুনলাম কাকারাও খুব বড়ো করে কালী পূজো করছে। আমি বললাম পাড়ার লোক আমাদের বাড়ির পুজো দেখতে আগে আসবে।
মা বললো সেটা কী করে সম্ভব? আমি বললাম পুজোর দিন দেখবে।
যথারীতি পুজোর দিন চলে এলো। কাকা ও কাকাতো ভাই ঠাকুর আনতে গেল। আমিও একা ঠাকুর আনতে যাচ্ছি। ঠাকুর নিয়ে ফেরার সময়ই কাকার বাড়ির ঠাকুর পাড়ায় আগে ঢুকেছে সঙ্গে ঢাক, কাসর বাজছে। রাস্তার লোকজন দাড়িয়ে কাকার ঠাকুর দেখছে। বাড়ির ভেতর থেকে মেয়েরা বেড়িয়ে মাকে প্রণাম করছে। কাকা সবসময়ের জন্য মুখে হাসি ধরে রেখেছে। এবার আমি যখন কাকার পেছন পেছন কিছুটা দূর থেকে ঠাকুর নিয়ে ঢুকছি তখন পাড়ার এক কাকীমা আমাদের ঠাকুর দেখে উলুধ্বনি দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই কাকীমার আশেপাশে যেসব মহিলারা ছিলেন তারাও উলুধ্বনি দিতে শুরু করলো।
ব্যাপারটা কী হচ্ছে বোঝার জন্য কাকা ঠাকুর নিয়ে একপাশে দাড়িয়ে ছিল। আমি কাকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললাম -
কাকা তুমি না হয় এবছর থেকে কালী পূজো শুরু করো, আর আমরা না হয় কৃষ্ণকালীর পুজো শুরু করি। বলে আমি চলে আসছিলাম। ঘন ঘন উলুধ্বনি দেওয়ার জন্য বাবা মা বাড়ির বাইরে এসেছিলো কী হচ্ছে দেখার জন্য। বাবা ঠাকুর দেখে বললো - একী করেছিস তুই? আমি বললাম - বাবা শুধু শক্তি দিয়ে নয় প্রেম দিয়েও মায়ের পুজো করা যায়।

17/05/2023
15/04/2023

নতুন বছরের শুভেছা

16/12/2022

Spangly flower

05/10/2022

শুভ বিজয়া

26/09/2022

বারো মাসের আম গাছ

Want your business to be the top-listed Home Improvement Business in KOLKATA?
Click here to claim your Sponsored Listing.

Videos (show all)

অস্ট্রেলিয়া জবা
Flow flower

Category

Website

Address


GARIA BORAL
Kolkata

Other Garden Centers in Kolkata (show all)
plant lover-fane page plant lover-fane page
Jukiveri
Kolkata, 721401

this page for garden lover

Green Up Green Up
La Jolla, PO Boral Banerjee Para, Near Shanti Sangha Club
Kolkata, 700154

Green Up, your go-to destination for vibrant plants and expert gardening services.

PiyaliNursery PiyaliNursery
DPS Delhi Public School
Kolkata, 700135

piyaliRoy

mondal plant selling enterprise mondal plant selling enterprise
Kolkata, 700001

all varieties fruit plant grafted flower plant grafted available. all india home delivery available.

Avi'S Flowers Nursery Avi'S Flowers Nursery
South Joypur Bill. Anandanagar. Liluagh. Howrah. Pin/711227
Kolkata, ৪৫৬

All Types Flower's Available

Chilekothay Bagan Chilekothay Bagan
Madhyamgram Station Road
Kolkata, 700131

গাছের পরিচর্যা কি ভাবে করবেন। Chilekothay Bagan

Pots & Pets Pots & Pets
Kolkata

gardening and pet related

Exotic fruit & flowers plant shop Exotic fruit & flowers plant shop
Kolkata, 743287

we delivered best plant verry low price

Green B R Nursery Green B R Nursery
Gaighata Road
Kolkata, 743259

all type flowers and fruit plant are available always. others plant available. healthy grafted plant

Wildflower Plant Station Wildflower Plant Station
Block 4, Suryasen Nagar, Near Pol Par, Opposite Niyoti Variety Store. Khardah
Kolkata, 700117

We provide wide ranges of natural plants(indoor plants & outdoor plants), seeds, gardening tools , f

Piyali garden786 Piyali garden786
DPS School
Kolkata, 700135

EGC Facility Management Pvt Ltd EGC Facility Management Pvt Ltd
1582, Rajdanga Main Road, 2nd Floor, Room No. 202, Kasba New Market
Kolkata, 700107