Purulia Tour

🙏সবাইকে বাঁদনা পরবের শুভেচ্ছা জানাই🙏

আমাদের পুরুলিয়ার গর্ব অক্ষয় ভগৎকে আক্রমণ করেছে এই তিনজন।
অক্ষয় ভবন পুরুলিয়া থেকে বাড়ি যাচ্ছিল, কন্টাকটারের সাথে একটা লাগেজ এর পয়সা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়।
হঠাৎ করে একজনকে ডেকে নিয়ে আসে। তারপর অক্ষয় ভগৎ কে মারধর করে।
তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
আমরা সবাই অক্ষয় ভগৎ এর পাশে আছি।

পুরুলিয়ার সংস্কৃতি জগতে ইন্দ্রপতন!চলে গেলেন প্রবাদপ্রতিম নাটুয়া শিল্পী হাড়িরাম কালিন্দী ।l

ছবি Durgadas Mahanty

সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর দুবাইয়ে প্রদর্শনীতে ভারত সরকার পুরুলিয়া এর ছৌ কে রেখেছে

সোশ্যাল প্লাটফর্মে যে ছেলেটার হাসির ভিডিও কমবেশি আমাদের সবার টাইমলাইনে ঘোরে , আজ তার জীবনের টাইমলাইনের গল্প বলার দিন ... গল্পটা পুরুলিয়ার ছেলে সৌরভ মাহাতোর , যিনি বর্তমানে ফেসবুক প্লাটফর্মে একজন জনপ্রিয় ভিডিও ক্রিয়েটর ... তার ফেসবুক পেজ ' সৌরভ বাংলা শো ' বর্তমানে স্পর্শ করতে পেরেছে সাড়ে চার লক্ষের কাছাকাছি মানুষকে ... কিন্তু শূণ্য থেকে শুরু করে নিজের স্বপ্নের পথে পা হাঁটা মোটেও সহজ ছিলো না ...

একদম ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা ছেলেটা ছোট্ট থেকেই স্বপ্ন দেখতো অভিনয় করার , অভিনয়ের প্রতি ন্যাকটা সে প্রবলভাবে উপলব্ধি করে যখন ২০১৮ সালের শুরুতে সে সদ্য ফার্মাসিষ্ট করার জন্য কলেজে ভর্তি হয়েছে ... সে তার পড়াশুনায় সামান্য মনোনিবেশ করতে পারে নি , তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো অভিনয়ের নেশা , সে তখন থেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার ... সেই স্বপ্নকে বুকে নিয়ে প্রথম সেমিস্টারের পরই সে কলেজ ড্রপ আউট করে ... প্রায় দেড় লক্ষ টাকার মতো নষ্ট হয় , তার বাবা প্রচন্ড রেগে যান , সহজাতই পড়াশুনা ছেড়ে তার এই পাগলামিকে মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার ... জেদি ছেলেটা নিজের হাতে রোজগার না করার আগে অবধি স্যালুনে গিয়ে চুল অবধি কাটেনি , সেজন্যেও বন্ধুবান্ধবদের অনেকেও তাকে ' পাগল ' বলতো ...

কিন্তু এটা তো ঠিকই যে সব পাগলেরা সফল নয় , কিন্তু সব সফলেরা পাগলই বটে ... ছেলেটা তখন তার বাবার কাছে ২ বছর সময় চেয়েছিলো ... প্রথম তিনমাস মোবাইল ফোনই ছিলো সম্বল , তারপর অনেক অনুরোধে একটা Dslr কিনে দেয় তার বাবা ... কিন্তু ভিডিও শুট করে এডিট করার জন্য ছিলো না কোনো কম্পিউটার ... তাই তাকে ভিডিও এডিট করতে যেতে হতো হাওড়ায় , তার বন্ধুর বাড়ি ... ভিডিও শ্যুট করতে যেতে হতো বর্ধমান , যেখানে তার সাথে ভিডিওগুলোতে অভিনয় করতো তার একজন বান্ধবী ... যেদিন ভিডিও শ্যুট হতো সেদিনই এডিট সেরে শিয়ালদহ স্টেশনের wifi তে সেটা আপলোড করে তারপর বাড়ি ফিরতো ছেলেটা , টাকা বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে খরচ করতে হতো তাকে ...

এভাবে চলতে থাকার ঠিক ৬ মাসের মাথায় ' স্টাইল মারলে যা হয় ' বলে তার একটা ভিডিও চূড়ান্ত ভাইরাল হয় , ৮ মিলিয়ন মানুষ দেখেছেন সেই ভিডিওটা ... তারপর থেকে আর কখনো ফিরে তাকাতে হয়নি ছেলেটার ... আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ফেসবুক পেজ থেকেই ছেলেটার মাসিক রোজগার এক লক্ষ টাকার উপরে , কিন্তু ফলোয়ার্স বাড়ানোর জন্য কখনো ক্লিনজ কনটেন্ট কিংবা অজস্র গালাগাল ব্যবহার করতে হয়নি তাকে ... সে প্রমাণ করেছেন যে , ইউটিউব প্লাটফর্মে না গিয়েও কেবল ফেসবুক পেজ থেকে নিজের ভিডিওর দ্বারা মোটা অঙ্কের টাকা রোজগার করা যায় ... যারা তার স্ট্রাগলের সময় তাকে নিয়ে কটূক্তি করতো আজ তারাও তার বন্ধু হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেয় , আসলে ব্যর্থদের নিয়ে হাসাহাসি আর সফলদের নিয়ে মাতামাতি করাটাই তো দুনিয়ার নিয়ম ... যে বাবা একদিন ছেলের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে হতাশ হয়েছিলেন , আজ নিজের হাতে রোজগার করে তার ২৩ বছরের ছেলে তাকে উপহার দিয়েছে একটি চারচাকা গাড়ি যেটা হয়তো ওদের সমস্ত গ্রামে কারোর নেই ... সম্পূর্ণ অপরিচিত মুখ হয়েও কোনোরকম প্রমোশন কিংবা ব্যাকআপ ছাড়া একটা একলা ছেলের জীবনের রাস্তায় দুরন্ত ছন্দে এগিয়ে যাওয়াকে কুর্নিশ ...

ভালো থাকুন সৌরভ , আর আপনার জীবনের গল্প মোটিভেট করুক সেসমস্ত সৌরভদের পরিচিত ছকের বাইরে বেরিয়ে যারা নতুন কিছু করার চেষ্টা করে ... অনেক নতুন মুখকে বরাবর নিজের সাথে অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার আপনার যে মানসিকতা সেটা প্রশংসা করার মতোই ...আপনার নতুন কাজ ' মর্ডান ব্যোমকেশের চ্যালা ' এর জন্য শুভকামনা , এভাবেই ছুঁয়ে চলুন মিলিয়নকে ...

লেখা ~ গৌরব চক্রবর্তী
ছবি ~ Sourav Bangla SHOW ❤️

PURULIA-Purulia

#ছাতা _পরবের _মেলা, #চাকোলতোড়

গত পোস্টে আলোচনা করেছিলাম পুরুলিয়ার চাকোলতোড়ের ছাতা পরব নিয়ে। আজ সেই ছাতা পরবকে উপলক্ষ করে বসা বিশাল মেলার কিছু গল্পকথা বলার চেষ্টা করছি।
---------------
মেলা মানেই হল মিলন উৎসব। প্রাচীন কাল থেকেই কোন একটি উৎসব, পূজা বা ঘটনাকে সামনে রেখে মিলনোৎসবের মাধ‍্যমে সূচনা হত মেলার। তবে শুধু মিলনোৎসব নয় এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বও কম নয়। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন, বৈচিত্রপূর্ণ তাদের ভাষা সংস্কৃতি, সঙ্গে হরেক রকম বিক্রয়যোগ‍্য সামগ্রির বিকিকিনি সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব মেল বন্ধন। তবে যুগ অনুযায়ী মেলার ধরন ধারন পরিবর্তীত হয়েছে, হয়ে চলেছ। এখন যে মেলার কথা বলব তার সঙ্গে এখনকার শহুরে মেলার চেহারা হয়ত মিলবে না কিন্তু যারা প্রবীন পাঠক তারা অবশ‍্যই তাদের ছেলেবেলার মেলার সঙ্গে এর যোগসূত্র স্থাপন করতে পারবেন।
--------------------
চাকোলতোড়ে যেখানে ছাতা তোলা হয় তার ঠিক পাশেই বিশাল এক মাঠ জুড়ে বসে এই মেলা। মেলার পথে যেতে যেতে দেখছি দলে দলে মানুষ সে দিকে চলেছে। অটো, ট্রেকার, ম‍্যাজিক গাড়ি ভরে ভরে দূর-দূরান্ত থেকেও লোকজন আসছে মেলায় যোগ দিতে। শোনা যায় আগে প্রতিবেশী রাজ‍্য ওডিশা, ঝাড়খন্ড থেকেও প্রচুর আদিবাসীরা আসত এই মেলায়। পাকা রাস্তায় প্রথমেই চোখে পড়বে বেশ অনেকটা জায়গায় অস্থায়ী সাইকেল গ‍্যারেজ। এখানে এটার প্রাসঙ্গীকতাই অধিক। এরপর বামদিকে মাঠের শুরুতেই ম‍্যাজিক গাড়ির স্ট‍্যান্ড। তরপর থেকে শুরু মূল মেলার।
---------------------
কি দিয়ে শুরু করব নিজেই বুঝতে পারছি না। প্রথমেই আসি মেলায় যেটা না থাকলেই নয় সেই খাবার জিনিসের কথায়। ছোলা,ডালমুট, ঝালমুড়ি,ভূট্টা ইত‍্যাদির দোকান রয়েছে অজস্র। সাথে রোল,মোগলাই, চাউমিন দোসর। রয়েছে মিষ্টির দোকান। সেখানে গজা, জিলাপী, মন্ডা, রঙিন খাজার বাহারি সজ্জা নজরকাড়া, জ্বিভে জল আসবেই আসবে। মাঠে রয়েছে ঢিপি করে নিয়ে আসা চিনেবাদামের স্তুপ। আরো একটা জিনিস চোখে পড়ল, সেটা হল কলার বাহার। কাঁধি কাঁধি পাকা কলার পসরা সাজিয়ে আপনার অপেক্ষায় আছে বিক্রতা। ফুচকা, আইসক্রীম, গাঢ় কমলা ঘুগনী খেতে দর্শনার্থীদের প্রবল উৎসাহ।

**এরপর একটু স্বাদ বদল করে আসি গ্রাম‍্য জিনিসের কথায়। সেখানে আছে মাছ ধরবার জাল, লোহার যন্ত্রপাতি, হাতা খুন্তি, কড়াই, দা-কূড়ুুল কোদাল, বাসনপত্র, শিলনোড়া, কাঠের চাকা লাগানো গাড়ি, পিঁড়ে ইত‍্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস। পছন্দ হলে সংগ্রহ করতেই পারেন।

**এবারে আসব আদিবাসীদের কিছু জিনিসের কথায়। এখানে যেটার কথা সবচেয়ে আগে বলতে হয় তা হল ধামসা-মাদল-বাঁশি-ঢোল ইত‍্যাদির সম্ভার। শিল্পীরা তাদের তৈরী জিনিস নিয়ে হাজির বিকিকিনির আশায়। আর ঝুমুর-নাচনী-কীর্তন-নাটুয়া-ছৌ এর দল নিজেদের মত করে বাজিয়ে ঝাচাই করে সেখান থেকে বেচাকেনা করছে। মাঠের এই অংশ তাই ঢোল মাদলের তালে মুখরিত। এছাড়াও দোতারার মত বিভিন্ন বাদ‍্যযন্ত্রের সম্ভার রয়েছে।

**আদিবাসীদের হাতের কাজের বিষয়ে যাওয়া যাক এবার। শিকার করবার তির, শলা, ইতাদির পসরা রয়েছে। আর রয়েছে অ্যলুমনিয়ামের তৈরী কুনকে, প্রদীপদানী, ভাতছাকনি, হাতা, বাটি ল‍্যাম্প। এগুলোর গঠনশৈলী খুব সহজ সরল অনেকটা ডোকরার মত। আবার রয়েছে আদিবাসীদের তাঁতে তৈরী রঙ বেরঙের সুন্দর সুন্দর শাড়ি। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের শাড়িও আছে। তাতে লতা পাতা হরেক রকমারি নকশা ও কলকার কাজ। উজ্জ্বল রঙের বাহারি শাড়ি মন ছুঁয়ে যাবেই।

** বই খুঁজছেন? হ‍্যা তাও পাবেন। আদিবাসী, সাঁওতালী, কুড়মালী, অলচিকি ইত‍্যাদি ভাষার বিভিন্ন বইপত্রের পসরাও রয়েছে।

** এবারে একটু নেশাতুর হওয়ার পালা। মাঠের একটা বড় ঘেরা অংশে নেশার পানীয়তে ভরা। তৃনস্তর থেকে সমস্ত স্তরের জলপানির ব‍্যবস্থা আছে। এর একটু বাইরে রয়েছে মহুল, হাড়িয়া ইত‍্যাদির সম্ভার। গ্রামের লোকেরা মাটির হাড়িতে রসদ নিয়ে হাজির। সেখানের ভিড় চোখে পড়বার মত। সাথে মাংস বা ইত‍্যাদির সমস্ত ব‍্যবস্থাই রয়েছে সেখানে।

**এছাড়াও রয়েছে নাগরদোল্লা, গ্রাম‍্য জুয়া, তাসের ম‍্যাজিক, হরেক মাল ১৫টাকা, মাটির পুতুল, প্লাস্টিক খেলনা ইত‍্যাদি হাজারো মনোরঞ্জন ও বিনোদনের আসর। মেলা চলবে আজ সারা রাত। এত ভীড় যে আমি মেলার খুব সামান‍্য অংশই চষতে পেরেছি। এখনো সন্ধ‍্যেতে দলে দলে মানুষ জন আসছে স্রোতের মত, একবার মেলায় ঢুকলে সেখান থেকে বার হওয়া বড় কঠিন। এদিকে আমাদের কলকাতা ফিরতে হবে আজ। তাই আস্তে আস্তে বেরোবার চেষ্টা করলাম। আরেকটা চিন্তা ফেরার গাড়ি পাওয়া। কারন আসার সময় ম‍্যাজিক গাড়ির পিছনে সিঁড়িতে ঝুলে ১০ কিমি এসেছি। এখন রাত্রি তাই ইচ্ছে থাকলেও এমন সুন্দর মেলা মাঠ ছাড়তে হল। একরাশ সুখস্মৃতি নিয়ে এবার ফেরার পালা।

ছবি ও তথ্য-বিশ্বরূপ মান্না

PURULIA-Purulia

আজ বিশিষ্ট ছৌ শিল্পী ধনঞ্জয় মাহাত( ধুন্ধা) প্রয়াত হলেন। ঈশ্বরের কাছে উনার আত্মার শান্তি কামনা করি 🙏🙏🙏♦"ছৌশিল্পী ধুঁন্দা মাহাতোর ছৌ নৃত্য সাধনা।" ---♦
ড. দয়াময় রায়।
♦ভূমিকা:-পুরুলিয়া শহর থেকে মাত্র সাত কি:মি: পশ্চিমে কাঁসাই নদীর ঠিক উত্তর দিকে বেলগাড়া গ্রাম। ভাটবাঁধ মোড় থেকে পিচ ঢালা রাস্তার বাঁক ধরে ধরে বাঁয়ে ডাইনে করতে করতে পৌছানো যায় বালিগাড়া গ্রামে। ছৌনাচ, ধুঁন্দা মাহাতো ( আসল নাম ধনঞ্জয় মাহাতো) আর বেলগাড়া এক সমার্থক নাম। লোকনাচের অর্থাৎ ছৌনাচের জগতে তিনি একজন সুপ্রতিষ্ঠিত লোক শিল্পী। কেননা ছৌনাচ বীরত্বব্যঞ্জক আর তার বিপরীতে যে করুণ রস তার একচ্ছত্র আধিপত্য ধুঁন্দা মাহাতোর নাচে। বিশেষত কিরাত অর্জুন নাচে যে বীর ও করুণ রসের সঞ্চার হয় সে বিষয়ে চোখের জল এনে নৃত্য নাট্যের সমাপণ ঘটিয়েছেন তিনি। বরং বলা যায় এ নাচের ক্ষেত্রে এক নতুন ধারার তিনি স্রষ্টা।
♦বাল্যকাল:-ধুঁন্দা মাহাতোর শৈশব কেটেছে ছৌনাচের আবহে। তাঁর বাবা স্বর্গীয় পেলারাম মাহাতো ছৌনাচের শিল্পী। তিনিও এ নৃত্য ঘরানাকে বাঁচাতে এবং সেই শৈলী দ্বারা লালন পালন করেছেন নিজের পরিবারকে। ধনঞ্জয় মাহাতোরা তিন ভাই সকলেই ছৌনাচের তালিম নিয়েছেন বাবার কাছ থেকে। ধুঁন্দা সব চেয়ে বড়ো ভাই রূপে তাঁর দায়দায়িত্ব বেশি। এমন কি তাঁর বাবা ছৌওস্তাদ এনে ছৌনাচের রীতিমতো ট্রেনিং করান। লাগদা হাইস্কুল থেকে পড়াশুনা করেন ধনঞ্জয় বাবু কিন্তু নানা অসুবিধা হওয়ার ফলে বেশিদিন লেখাপড়া চালাতে পারেন নি। এরপর পুরোপুরি ভাবে ছৌনাচে মগ্ন হয়ে পড়েন।
♦শিল্পী সত্ত্বার সূচনালগ্ন:- তাঁর পিতার সেটাই ছিল ইচ্ছে যে তাঁর ছেলে একজন বড়ো শিল্পী হোক। কিন্তু আসরে প্রদর্শন করতে না পারলে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি না হলে শিল্পী সত্ত্বার বিকাশ ঘটবে কি করে? এই চিন্তায় তাঁর বাবা পার্শ্ববর্তী সোনাই জুড়ি গ্রামের গাজন পরবে নিজের ছেলের ছৌনাচ দেখানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কোন ভাবেই জরু কুমারের মতো একজন প্রথিতযশা শিল্পীর সাথে মেলা কর্তৃপক্ষ কিশোর শিল্পী ধনঞ্জয় মাহাতোকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামাতে দিতে রাজি হয় নি। কিন্তু শিল্পীর বাবাও নাছোড়বান্দা, এমনকি আজ থেকে ষাট পয়ষট্টি বছর আগে নগদে পাঁচশ' টাকা কমিটিকে দিয়ে ছেলেকে ছৌনাচের শিল্পী রূপে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিযোগিতায় নামান। চারদিকে ঢিঢি পড়ে যায় তেরো চৌদ্দ বছরের এক বালকের অগ্নিপরীক্ষা। কিন্তু অসম এই প্রতিযোগিতায় এক তাল নাচের পরই পেট ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন। কিন্তু বাবার জেদ আর শপথের কাছে হার মানবে কে? চূড়ান্ত ভাবেই সেই নাচের আসরে বীরবিক্রমে সুপ্রতিষ্ঠিত হন ধনঞ্জয় মাহাতো।
এ যেন এবার --' ক্রমে ক্রমে সেই বার্তা রটি গেল গ্রামে গ্রামে।'
আর পিছন ফিরে তাকানো নয়, এবার এগিয়ে চলা। এরপরে সেকালের বিহারের খুঁটি এবং মুরি এলাকায় নৃত্য প্রদর্শন করে তিনি প্রচুর সুনাম কুড়ান। প্রতিবছর সেখান থেকে ডাক পেতে থাকেন এভাবেই ধুঁন্দা মাহাতোর ছৌবিজয় রথ এগিয়ে চলতে থাকে। সারা মানভূম জেলা ছাড়িয়ে রাঁচি প্রভৃতি এলাকায় 'ধনঞ্জয় মাহাতো কৃষি মঙ্গল ছৌনৃত্য দল '- এর প্রসার ঘটে।
♦ছৌশিল্পের প্রতি আনুগত্য :- ধুঁন্দা মাহাতো সাবেকি এই নাচের শৈলীর প্রতি অনুরক্ত। ধামসা, সানাই, মেরাকশ, চেড়পেটি সহ প্রাচীন বাদ্য, সুর, তাল, লয় নিয়ে প্রচলিত ঘরানা নির্ভর পরম্পরায় তিনি বিশ্বাসী। সময় ও যুগের দাবী মেনে না নিলেও মুশকিল, কেননা প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে হলে ক্যাসিও নির্ভরতা প্রয়োজন । বাহ্যিক নাটকীয়তা ছৌ নাচের ধারাটিকে নষ্ট করে তুললেও উপায় নেই বলেই তাঁরও অভিমত। কিন্তু ছৌনাচের প্রবাহে যে রীরত্ব, রৌদ্ররস তা থেকে বিচ্যুত হলে চলবে না।
♦ছৌভাবনা:-- শিল্পী ধুঁন্দা মাহাতোর মতে, ছৌনাচ আসলে ছয়টি অংগের সঞ্চালন, ছ' টি অংগ হল -১) মুখ, ২) বুক, ৩) দু'হাত আর ৪) দু' পা। এই ছ'টি অঙ্গের আন্দোলন সঠিকভাবে না করতে পারলে ছৌনাচের রীর ধর্ম রক্ষিত হতে পারে না। তাঁর মতে মুখের ভাব, অভিব্যক্তি মুখোশের আড়ালে রেখে ছয় অঙ্গের সাহায্যে প্রতীকি ব্যবহারের মধ্যেই ছৌনাচের অনুভূতি, গতি, সুখ- দু:খের প্রকাশ।
ছৌওস্তাদ কালীপদ মাহাতো যাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেছেন--'ছ' লাচ হ'ল তাই যে লাচের মাধ্যমে ষড় রিপুদমন করা যায়।' তবে মাথা বুক পা যদি টান টান করে না রাখা যায় তাহলে রীররস মার খাবেই, এ ব্যাপারে ধনঞ্জয় মাহাতো একমত।
♦আশি বছর বয়সের দ্বারপ্রান্তে পৌছেও তিনি এক যুবক। তেরো চৌদ্দ বছর বয়স থেকে প্রায় সত্তর বছর বয়স অবধি অর্থাৎ অর্ধ শতাব্দী সময় জুড়ে (১৯৬০-- ২০১০) ছৌনাচকেই শিল্পসাধনার মূল মন্ত্র করে আজো ছেলে দেবেন মাহাতো তথা দলের প্রধান স্থপতি রূপে কাজ করে চলেছেন। বিশ্বে ছৌনাচকে যিনি পৌছে দিয়েছিলেন সেই গম্ভীর সিংমুড়া, তাঁর কথা বলতে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন।
♦পুরষ্কার- সম্মাননা:- ছৌনাচের আসর মাতাতে তিনি পশ্চিম বঙ্গ ছাড়া ভারতের কম বেশি বেশির ভাগ রাজ্যে এ নাচকে তুলে ধরেছেন। কিন্তু দু:খের বিষয় এখনো তেমন কোনো সরকারি পুরষ্কার বা সম্মাননা পান নি। একবার কেন্দ্রীয় সংগীত নৃত্য নাটক একাদেমিতে নাম উঠলেও শেষ অবধি পুরষ্কার পান নি। পুরুলিয়া জেলার বেশ কয়েকটি সংস্থা তাঁকে বিভিন্ন সময় সম্মাননা জ্ঞাপন করে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল--১) আদিবাসী লোক সংস্কৃতি বিকাশ পরিষদ, ২) বিবেক বাহিনী ব্রতচারী সখা, ৩) ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেটিনারি এসোসিয়েশন, ৪) মানভূম দলিত সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাদেমী প্রভৃতি। এখন তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পী ভাতা প্রাপক।
♦কিন্তু ধুঁন্দা মাহাতোর মতো জেলার ছৌনাচ বা লোক নাচের প্রথিতনামা শিল্পীদের ' পদ্মশ্রী গম্ভীর সিংমুড়া ' নামাঙ্কিত সম্মাননা প্রদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করি। কেননা লোকগানের জগতে লালন পুরষ্কার চালু আছে, সেকারণেই 'পদ্মশ্রী গম্ভীর সিংমুড়া' পুরষ্কার লোকনাচের ক্ষেত্রে চালু করার প্রস্তাব উত্থাপন করছি। সরকার এবিষয়ে পদক্ষেপ নিলে বীররসাত্মক নৃত্য শিল্পীরা আলো দেখবে এবং আরো এগিয়ে যাবে বলেই বিশ্বাস করি।

© সাক্ষাতকার - ১২/০৮/২০১৮.

PURULIA-Purulia

আজকের ভয়াল কালবৈশাখীতে বিপর্যস্ত পুরুলিয়া শহর।

ছবি:-সংগৃহীত।

PURULIA-Purulia

#জেলার_পর্যটন_মানচিত্রে_গুরুত্ব_পাক_পাকবিড়রা
#আমার_গ্রাম_পাকবিড়রা
পাকবিড়রা নামের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস।বজ্রভূমি থেকে জঙ্গলমহল।আবার জঙ্গলমহল ভেঙে মানভূম জেলা।পরে আবার ভাঙাগড়ার খেলা শেষে মানভূম থেকে পুরুলিয়া হয়ে ওঠা।পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানা এলাকার পাকবিড়রা নামে এই জনপদ একদা জৈনদের ধর্ম প্রচারের কেন্দ্রস্থল ছিল।হাজার বছর পরেও এই গ্রামের এ দিকে -ও দিকে ছড়িয়ে রয়েছে তার নিদর্শন।
পাকবিড়রা গ্রামের চারটি টোলা রয়েছে।ভৈরবস্থান,পুরনোডি,রায়ডি ও মুদিটাঁড়।আবার ভোটের সময় এলাকা হিসেবে এই গ্রামের সঙ্গে কালাপাথর,গরারডি ও মুগগোড়া নামে তিনটি টোলা যুক্ত হয়।পাকবিড়রা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও গরারডি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি বুথ হয়।সব মিলিয়ে এই এলাকায় ৩১০০ জন বসবাস করেন।এলাকায় ভৈরবস্থান কালাপাথর এবং গরারডিতে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি করে জুনিয়র হাইস্কুল রয়েছে।গরারডি কালাপাথরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে।গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই।পুঞ্চা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখান থেকে চার কিলোমিটার এর কিছু বেশি।
পাকবিড়রার বাসিন্দা স্বরাজ রায় বলেন, "পাকবিড়রা গ্রামের একটা ঐতিহাসিক পরিচিতি রয়েছে।পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে রাজ্য সরকারের পর্যটন কেন্দ্রের তালিকায় নামও রয়েছে।কিন্তু জেলার অযোধ্যা,গড় পঞ্চকোট যে ভাবে প্রচারের আলোয় এসেছে,সেই অনুপাতে পাকবিড়রার প্রচার কম হয়েছে।"
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন,গত কয়েক দশক জ্ঞাত এবং অজ্ঞাতসারে বহু নিদর্শন স্থানচ্যুত হয়েছে ।যেগুলির হদিস মেলেনি।জেলার ইতিহাস গবেষক প্রদীপ মন্ডল বলেন, "এলাকার বাড়িঘর তৈরির সময় অজ্ঞতাবসত বেশ কিছু প্রত্ন নিদর্শন নির্মাণের কাজে লেগেছে ।আবার অবহেলায় এ দিক ও দিক ছড়িয়ে রয়েছে।কোথাও বা স্থানীয় ভাবে দেবতা জ্ঞানে পুজো পাচ্ছে ।আবার অসাধু ব্যক্তিদের হাত ঘুরে কিছু নিদর্শন পাচারও হয়ে গেছে।দেরিতে হলেও স্থানীয় বাসিন্দারা এর ঐতিহাসিক মূল্য টের পেয়েছিলেন ।বেসরকারি ভাবে গড়ে উঠেছিল পাকবিড়রা পুরা নিদর্শন সংরক্ষণ কমিটি।সেই কমিটির অস্তিত্ব এখন আর নেই।সরকারি উদ্যোগে সংগ্রহশালা নির্মিত হয়েছে।বেঁচে যাওয়া পুরা নিদর্শনগুলি এই সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে।
পর্যটন ক্ষেত্র, সংগ্রহশালা থাকলেও এর দেখভালের জন্যে সরকারি ভাবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।তবে পাকবিড়রা গ্রামের বাসিন্দা নিমাই মাহাতো স্বেচ্ছায় এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন।নিমাইয়ের দাবি,বাইরে থেকে অনেকেই পাকবিড়রা আসেন।দেউল চত্বর নোংরা থাকলে তারা কী বলবেন! এর সঙ্গে এলাকার সম্মান জড়িয়ে রয়েছে।পাশেই বাড়ি।চত্বর ঝাঁট দেওয়া,পর্যটকদের ইতিহাস বোঝানোর দায়িত্ব নিমাই স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছেন।
পুঞ্চা থেকে পুরুলিয়ার রাস্তায় পুঞ্চা বাজার থেকে পাকবিড়রা গ্রামের দূরত্ব প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার।বছর তিনেক আগে মূল পাকা রাস্তা থেকে পাকবিড়রা অবধি ঢালাই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।তবে মাঝখানে প্রায় আধ কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা রয়ে গেছে।বাসিন্দাদের দাবি মাঝখানের কাঁচা রাস্তা ঢালাই করা উচিত।আবার যে অংশে ঢালাই হয়েছে তার মান নিয়েও অসন্তোষ শোনা গেছে।এই রাস্তায় ভারী যান চলাচল চলে না ।তবে এর মধ্যে কংক্রিটের পাথর-সিমেন্ট উঠে গিয়ে কোথাও কোথাও গর্ত তৈরি হয়েছে।
মূলত পর্যটন ঘিরেই পাকবিড়রা গ্রামের পরিচিত ।বহু নিদর্শন হারিয়ে গেলেও এখনও গ্রামে তিনটি প্রাচীন দেউল দাঁড়িয়ে রয়েছে।সংগ্রহশালায় রয়েছে চোখ জুড়নো প্রত্ন নিদর্শন।রয়েছে ছ'ফুট উচ্চতার কালো নিরেট পাথরে তৈরি মূর্তি ।জৈন নিদর্শন হলেও
স্থানীয়েরা এই মূর্তিকে শিবের আরেক নাম ভৈরব হিসেবে পুজো করেন।পর্যটকেরা ইতিহাসের গন্ধ নিতে এখানে আসেন। দেউল চত্বর লাগোয়া বিরাট পুকুরও রয়েছে।সংস্কারের অভাবে সেটার বেশিরভাগ অংশ বুজে গিয়েছে।গ্রামের বাসিন্দা আনন্দ মাহাতো,বাহাদুর মাহাতো বলেন, "পর্যটকদের মূল আকর্ষণ সংগ্রহশালা চত্বরে রাখা ভৈরব মূর্তি।এক দশকের উপর ওই মূর্তি জলে ভিজে রোদে থেকে নষ্ট হতে বসেছে।প্রাচীন এই মূর্তির রুক্ষণাবেক্ষণে সরকারি উদ্দ্যোগ নেই।"
বাসিন্দারা জানান,আগে এই মূর্তির উপর ছাদ ছিল ।বাম আমলে ঘরটির ভেঙে ফেলা হলেও আজ অবধি পুননির্মান হয়নি।দেউল চত্বর লাগোয়া বিরাট জলাশয়টি সংস্কার করলেও গ্রামের আর্থিক বিকাশ ঘটবে।জল কৃষিকাজে ব্যবহার করা যাবে।এ ছাড়া মাছ চাষে বাসিন্দাদের হাতে বাড়তি টাকা আসার সুযোগ রয়েছে।প্রশাসন কেন এই বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছে না,তা তারা জানেন না ।
পাকবিড়রাকে কেন্দ্র করে প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র গড়ার লক্ষ্যে পর্যটন দফতরের পক্ষ থেকে ৭৬ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা হয়েছিল ।তাতে সংগ্রহশালা নির্মাণ,দেউলের গ্রিলের সীমানা,জলের ব্যবস্থা,সৌর আলো,সংযোগ রাস্তা প্রভৃতি হয়েছে।স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মালতী মাহাতো বলেন,"পাকবিড়রার আকর্ষণ বাড়াতে আরও প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার।এখানে পর্যটকদের
আনাগোনা বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় বাজারও তেজি হবে।হস্তজাত কাজের নমুনা প্রদর্শন ও বিক্রির সুযোগ বাড়বে।'
গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই।উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা নির্দিষ্ট দিনে টীকাকরণ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র মাহাতো বলেন "পাকবিড়রা পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নতি ঘটানোর জন্যে আমরা কয়েকটি পরিকল্পনা প্রস্তাব আকারে জেলায় পাঠিয়েছি ।পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নতি হলে গ্রামবাসী রাও পরোক্ষে ভাবে উপকৃত হবেন।"
দু'টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্ৰ রয়েছে।কালাপাথর ও গরারডি গ্রামে।শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের লক্ষ্যে প্রাথমিক পাঠ দেওয়া হয়।এ ছাড়া গ্রামে প্রাথমিক ও জুনিয়র হাইস্কুল রয়েছে।তার মধ্যে কালাপাথর টোলায় জুনিয়র হাইস্কুলটি ছাত্রীদের জন্য।চার কিলোমিটার দূরে পুঞ্চার লৌলাড়াতে হাইস্কুল এবং কলেজ রয়েছে।
পাকবিড়রা দেউল চত্বরে প্রতি বছর ১১বৈশাখ ও ১৩জ্যৈষ্ঠ কয়েক শতাব্দী ধরে পুজো ও উৎসব হয়ে আসছে।আদিবাসীদের নাটক প্রতিযোগিতা,নাচ গানের আসর বসে এখানে।জেলায় ইতিহাসবিদদের মতে,জৈন ধর্মের রীতি ও নিয়ম অনুসারে উৎসব গুলি শুরু
হয়েছিল ।পর্যটন ক্ষেত্রের হাত ধরে পাকবিড়রা গ্রাম এবং লাগোয়া টোলার বাসিন্দারা আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির স্বপ্ন দেখছেন।
লেখা-সাংবাদিক সমীর দত্ত মহাশয়।
ছবি-ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

কেউ কপি পেস্ট করবেন না।

Link:-https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2631958400397190&id=100007491666024

PURULIA-Purulia

#দেউলঘাটা_পুরুলিয়া

দেউলঘাটা বাংলার পুরাতত্বের এক অমূল্য নিদর্শন, অবহেলা আর কালের করাঘাতে আজ এক ভগ্নস্তূপে পরিণত।

সেই ঐতিহাসিক দেউলের অতীত গরিমার নিরব কান্না আর অবহেলার কাহিনী জানলাম #বেগলার_সাহেবের কাছে....

ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণার জে. ডি. বেগলার তাঁর "Report on a tour through the Bengal provinces in 1872-73" এ বোড়াম গ্রামের মন্দিরের কথা উল্লেখ করেছেন

তিনিও তিনটি ইঁটের মন্দিরের কথা উল্লেখ করেছেন| ধ্বংসপ্রাপ্ত বড় মন্দিরটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন যে বাইরের দিকের অলংকরণ বিভিন্ন স্তরে সারিবদ্ধ ভাবে খাঁজ কেটে করা হয়েছে| বৌদ্ধ গয়ার মত এখানকার মন্দিরে কোনও প্লাস্টারের আস্তরন নেই। মন্দিরের সমায়ত প্রবেশ দ্বারের মাথার দিকটা ত্রিভুজাকৃত।

বেগলার কিন্তু এই মন্দিরের গর্ভগৃহে সিংহের পিঠে বসা এক চতুর্ভুজ দেবীমূর্তি দেখতে পেয়েছিলেন, যাকে তিনি দেবী পার্বতী ভেবেছিলে।| ছোট দুটি ইঁটের মন্দিরের মধ্যে একটির কারুকার্য বেগলারের উচ্চমানের মনে হয়েছিল।

বেগলার এই মন্দিরটি যখন দেখেছিলেন তখন সেটি উপর প্লাস্টার করা হয়েছিল এবং সাদা চুনকাম করা ছিল। বেগলারের সন্দেহ হয়েছিল যে প্লাস্টারের কাজগুলো সাম্প্রতিক কারণ ইঁটের অলংকরনের সাথে পলেস্তরার প্রলেপ মানানসই লাগছিল না।

বেগলার যখন বোড়াম গিয়েছিলেন তখন এই মন্দিরের সামনে ডাল্টন বর্ণিত থামের শুধুমাত্র কুঁদোগুলো অবশিষ্ট ছিল। এগুলো নিয়ে ডাল্টনের সাথে বেগলারের মতের এটাই তফাৎ যে বেগলার মনে করেছিলেন যে মন্দিরের সামনে পরবর্তীকালে একটি মহামন্ডপ তৈরী করা হয়েছিল যার ভারবহন করত এই থামগুলো।

দ্বিতীয় মন্দিরটির পুবদিকে বেগলার আরেকটি চতুর্ভুজ পার্বতীর মূর্তি দেখেছিলেন, তার সঙ্গে একটি ছোট গনেশ মূর্তি ও একটি নারী মূর্তিও ছিল। এখানে একটা নিচু ঢিপি ছিল যার থেকে বেগালারের মনে হয়েছিল যে এখানে একসময় একটা ছোট মন্দির ছিল, যেখানে এই মূর্তিগুলি পূজিত হত।

তৃতীয় যে ইঁটের মন্দিরটি বেগলার এখানে দেখেছিলেন সেখানে একটি বড় আট হাতের মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গামূর্তি তাঁর চোখে পড়েছিল। তিনি এই ধরনের মূর্তি দুলমি ও লখিসরাইতে দেখেছিলেন, কিন্তু তাঁর মতে এটি অনেক বেশি সংরক্ষিত অবস্থায় পেয়েছিলেন।

এই তিনটি ইঁটের মন্দির ছাড়া বেগলার দুটি ধবংসপ্রাপ্ত পাথরের মন্দিরও দেখতে পেয়েছিলেন। তবে বেগলার মনে করেছিলেন এই মন্দিরগুলো শৈবদের আরাধ্য, কেননা উনি বৈষ্ণব বা অন্য কোন মূর্তি এখানে পাননি। বেগলার মনে করেছিলেন যে বোড়াম গ্রামের কোন এক সময় একটি বিশাল, ধনী ও অসহিষ্ণু শৈব সম্প্রদায় বাস করত।

#পুরুলিয়ার_ইতিহাস_গবেষক_সুভাস_রায় মনে করেন...

দেউলঘাটার দুটি ইঁটের দেউল মন্দির মুলত রেখ দেউল। দুটি দেউলই উঁচু বেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত এবং দুটিতেই রয়েছে বাড়, গন্ডি ও মস্তক অংশ.... দেউল দুটির মস্তক ক্ষয়প্রাপ্ত।

দেউল মন্দিরগুলিতে রয়েছে ছোট ছোট কুলুঙ্গি..... এই কুলুঙ্গিগুলিতে একসময় জৈন তীর্থঙ্কর মূর্তি বা অন্য কোনো দেবদেবীর বিগ্রহ বসানো থাকত।
এই ইঁটের দেউলের গায়ে অলঙ্করণ হিসাবে প্রদর্শিত হয়েছে ক্ষুদ্রাকৃতির একাধিক দেউল যা থেকে পূর্ণাঙ্গ দেউলগুলির গঠন ভঙ্গিমা বুঝতে পারা যায়।

দুটি দেউলের মধ্যে যেটি অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় আছে তার উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। অন্য দেউলটির অবস্থা একেবারে ক্ষয়প্রাপ্ত। দুটি দেউলই পুবমুখী এবং প্রবেশপথ ত্রিভুজাকৃতি। দুটি পাথরের দেউলের অবশিষ্ট ভাগ এখনও রয়েছে। একটি প্রস্তর দেউলের পাদভাগের উপর তৈরী হয়েছে একটি আধুনিক শিব মন্দির। অন্য দেউলটির পাদ ভাগ এবং তিনদিকের দেওয়ালের অংশবিশেষ এখনও টিঁকে আছে.... এর অভ্যন্তরে রয়েছে একটি শিবলিঙ্গ।

দেউলঘাটার অন্যতম আকর্ষণ এখানকার প্রস্তরনির্মিত মূর্তি যেগুলো এখানকার ছোট ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে। কয়েকটি বাইরে পড়ে আছে। উল্লেখযোগ্য মূর্তিগুলির একটি তালিকা দেওয়া হল। মূর্তির বর্ণনা পুরুলিয়ার ইতিহাস গবেষক সুভাস রায়ের অনুযায়ী....

১. দুর্গা মূর্তি : উচ্চতা ৪ ফুট। অনেকে মনে করেন মূর্তিটি একাদশ শতাব্দীর। দেবীর দশটি হাতের মধ্যে মাত্র চারটি হাত অক্ষত। ডান হাতে তরবারি। দেবীর এক পা মহিষের পৃষ্টে, অন্য পা সিংহের উপরে।

২, চতুর্ভুজা দেবীমূর্তি : চার ফুট উচ্চতার দেবীমূর্তি। একটি পদ্মের উপর দাঁড়িয়ে আছে। একটি হাত ভেঙ্গে গেছে।মূর্তিটি সালংকরা।

৩. সিংহবাহিনী দেবীমূর্তি : সিংহের পিঠে দন্ডায়মনা মূর্তি। চতুর্ভুজা দেবীমূর্তির চার হাতে চারটি প্রতীক। সমগ্র মূর্তিটি একটি প্রস্তরখন্ডের উপর খোদিত।

৪. রণচন্ডি : শিমুল বৃক্ষের নিচে অবস্থিত আট হাতের দেবীমূর্তি। স্থানীয় ভাষায় রণচন্ডি। দেবীর আট হাতেই অস্ত্র।

৫. গনেশ মূর্তি : উচ্চতা তিন ফুট। চতুর্ভুজ মূর্তি... পদ্মের উপর দন্ডায়মান।

৬. ভগ্ন ধ্যানমগ্ন মূর্তি : আনুমানিক ৩ ফুট উচ্চতা, মস্তক অংশ নেই।

৭. শিবলিং : এটি তিনটি স্তরে সজ্জিত, একটু ঘোরালেই তিনটি স্তর আলাদা ভাবে ঘুরতে থাকে।

দেউলঘাটায় আরো অনেক মূর্তি ছিল। যেমন কিনা ষড়বহুজা দেবীমূর্তি, শিব দুর্গার যুগল মূর্তি, ধনুকধারী শ্রীরাম চন্দ্রের মূর্তি, গনেশকে কোলে নিয়ে দেবী মূর্তি.... কিন্তু সেগুলো চুরি গিয়েছে।

সেই সব মূর্তির দু’একটি ও দেউলকে যেমন দেখেছি আমি....

্বীকারঃ গুগলো

এবার Purulia

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পথে হঠাৎ গাড়ি খারাপ। কান্টাডি পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পথে টামনা মোড়ের কাছে গাড়ি খারাপ হয়ে যায় কয়েকজন ছাত্রীর। সময় তখন ৯-৩০ টার মত, কেন্দ্রে ঢুকতে হাতে মাত্র সময় ২০ মিনিট। পরীক্ষার্থীরা মন খারাপ করেই এগিয়ে আসে টামনা মোড়ের দিকে, যদি বাস পাওয়া যায়। হঠাৎ টহলরত পুলিশ জিপের চোখে পড়ে পরীক্ষার্থীদের। এগিয়ে আসেন তারা। পুলিশের গাড়িতে করেই সেন্টারে পৌঁছে দেওয়া হয় ছাত্রীদের এবং তা যথাসময়েই। হাসিমুখেই কেন্দ্রে ঢুকল পরীক্ষার্থীরা। ঢোকার আগে হাসিমুখেই ধন্যবাদ জানিয়ে গেল পুলিশ কাকুদের। ধন্যবাদ পুলিশকে। পরীক্ষা পরিচালন কমিটি ও জেলা প্রশাসন তৎপর আছে৷ কোন অসুবিধে হলেই স্থানীয় পরীক্ষাকেন্দ্র,পুলিশ-প্রশাসন, কন্ট্রোল রুমের গোচরে আনুন।
ছবি ও তথ্য - Asit Rajwar
#এগিয়েপুরুলিয়া।

In My Purulia :From the Youth,To the Youth

যাই হোক শেষ মেস কাজ শুরু হয়েছে
Near purulia railway station
Katin para gate alternative railway underpass

PURULIA-Purulia

Live on At Raghunathpur college
5 th December 2k19
12 pm onwards

"Happy Friendship Day"....

Purulia Town পুরুলিয়া শহর

গ্রুপ থেকে....

পুরুলিয়ার কথা ও কাহিনী

আগামী 11 ই জুন ( মঙ্গলবার) পুরুলিয়ার বাবলিং বাডস স্কুলে দিদি NO1 এর অডিশন হবে সকাল দশটায় । সেদিনই সকাল ন'টার থেকে অডিশন ফর্ম দেওয়া হবে । দয়াকরে নিজের পানীয় জল,একটি কলম (Pen ) ও এক কপি পাশপোর্ট সাইজ ফটো অবশ্যই নিয়ে আসবেন ।

সৌজন্যে :- মাননীয়,সুদিন অধিকারী,মহাশয় ৷|

Purulia Tourism

শুধুই কি পেটের টান !
নাকি মাতৃভূমির সংস্কৃতির প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসা আর প্রবহমানতার দায়বদ্ধতা !

এটা ছৌ নৃত্য দলের একটা গাড়ি, সুরক্ষার কথা বাদ দিন,
কিন্তু মানবিকতা ?

তাই আসুন না, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে এই শিল্প সংস্কৃতিকে ভালোবাসি, বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস গ্রহণ করি ।

ছবি ঋণ: DebAshis Das Purulia

Amra Akranto Amra Nipirito,আমরা আক্রান্ত , আমরা নিপীড়িত

মাধ্যমিক যারা ৮০% এর বেশি নম্বর পেয়ে বই কিনতে পারবেন না তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। (Purulia)
9153058033