Dr. Syeed Abdullah Muhammad Taher
Official page of Dr. Syeed Abdullah Muhammad Taher: Nayeb-e-Ameer (Vice President) of Jamaat-e-Islami
সংবাদপত্র ও মিডিয়া দলননীতির প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান
-অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ১৫ জুন এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “তৎকালীন সরকার ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশে একদলীয় শাসন কায়েমের লক্ষ্যে বাকশাল গঠন করে করে দেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় সেই বাকশালী সরকার ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ অবজারভার-এ চারটি সংবাদপত্র সরকারি নিয়ন্ত্রণে চালু রেখে বাকী সকল সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিল করে দিয়ে সংবাদপত্র ও মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। ফলে হাজার হাজার সাংবাদিক, কর্মচারী ও কর্মকৌশলী বেকার হয়ে পড়েছিল। বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে সাংবাদিক-কর্মচারী ও কর্মকৌশলীগণ পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়েছিল। সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, একইভাবে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই সংবাদপত্র ও মিডিয়ার উপর দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার এবং বহু অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ বেশকিছু সংবাদপত্র ও মিডিয়ার প্রকাশনা অন্যায়ভাবে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে গত ১৫ বছরে এই সরকারের আমলে হাজার হাজার সাংবাদিক বেকারত্বের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অকল্পনীয় হুমকির মুখে পড়েছে সাংবাদিকদের জীবন ও জীবিকা। এ সব গণবিরোধী কর্মকা-ের মাধ্যমে সরকারের কুৎসিত চেহারাই অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে বর্তমান সরকার ২০১৮ সালের অক্টোবরে ৩২ ধারা হিসেবে পরিচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে জঘন্য কালাকানুন তৈরি করে। আইনটি নিবর্তনমূলক হওয়ায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র সংস্থার চাপের মুখে পড়ে সরকার। সরকার আইওয়াশ হিসেবে আবারো ২০২৩ সালে আগের আইনটির নামে মাত্র কিছু ধারা পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ নতুন শিরোনাম দিয়ে আরেকটি কালাকানুনের ব্যবস্থা করে। দেশের জনগণ মনে করে, এই আইনটিও নতুন অবয়বে নিবর্তনমূলক আইন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মাত্র।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দমনে বর্তমানে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনটি’ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই নিবর্তনমূলক কালাকানুনে বহু সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তার মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে এবং তাঁদেরকে বিনা অপরাধে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হয়েছে। দেশের সকল রাজনেতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক সমাজ এ কালো আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও সরকার সেদিকে মোটেই কর্ণপাত করেনি। মূলত সাংবাদিক সমাজের কলম বন্ধ করতেই সরকার নতুন এই কলাকানুনটি প্রণয়ন করেছে।
সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও মিডিয়ার উপর জুলুম-নিপীড়ন এবং দমননীতি বন্ধ করে দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানের সম্প্রচার এবং আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে সরকারের সংবাদপত্র ও মিডিয়া দলননীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমি সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী মহলসহ দল-মত-নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
ঋণ নির্ভর ও সংকোচনমূলক বাজেট জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না
-অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
১০ জুন সোমবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ-এর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মোঃ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।
দেশবাসীর উদ্দেশে সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার-এর প্রদত্ত বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলোঃ-
“প্রিয় দেশবাসী,
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনারা জানেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ৭ জানুয়ারি প্রহসনের ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকার ক্ষমতা দখল করেছে। অর্থমন্ত্রী ৬ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক বাজেট বক্তব্যে তথ্য-উপাত্ত পেশ করে যে সব আশার বাণী শুনিয়েছেন, তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তিনি সুখী-সমৃদ্ধ বলতে যে বাংলাদেশের কথা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাংলাদেশের মানুষ দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্দ্ধগতি, পানি-গ্যাসের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি এবং ব্যাংক লুটপাটসহ শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, বিদেশে অর্থপাচার ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় লাগামহীন দুর্নীতির কারণে চরম কষ্টকর জীবন-যাপন করছেন। এটাকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বলা যায় না।
বাজেটে করের চাপ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিনের জীবন-যাপনে অপরিহার্য নানা পণ্যের সেবার ওপর বাড়তি কর চাপানো হয়েছে। মুঠোফোনে কথা বলার ওপর অতিরিক্ত কর বসানো হয়েছে। পানি শোধন যন্ত্র, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বা এসি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি দ্রব্যের ওপর শুল্ক কর বাড়ানো হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়াবে।
রাজস্ব আয়
প্রস্তাবিত বাজেটে বড় অংকের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এটি অর্জন করতে চলতি সংশোধিত বাজেট থেকে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি আহরণ করতে হবে। যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদগণ। প্রকৃতপক্ষে সরকারের রাজস্ব নীতি ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নির্ভর হয়ে পড়েছে।
ঋণ নির্ভর ও সংকোচনমূলক বাজেট বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করবে
বাজেটে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এই বিশাল ঋণ নির্ভর বাজেট বাস্তবায়ন করা সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে এবং মুদ্রা বাজারে অনেক বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সুদের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে আরও তারল্য সংকট। প্রস্তাবিত বাজেটকে অর্থনীতিবিদগণ সংকোচনমূলক বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাজেটে মূল্যস্ফীতি, কর-জিডিপির অনুপাত এবং জিডিপির অনুপাতে বাজেট ঘাটতির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটি অর্জন করা কঠিন হবে।
খেলাপি ঋণ
বাজেটে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোনো কৌশল রাখা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণ খেলাপি ও হুন্ডির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কোনো কথা বলা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব করেছে তাতে বিগত মার্চ মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৮২ হাজার ৯ শত ২৫ কোটি টাকা, যা প্রকৃত চিত্র নয়। বাস্তবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। খেলাপি ঋণ কমাতে হলে খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাজেটে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এতে খেলাপি ঋণের প্রবণতা আরও বাড়বে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের সময় খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আওয়ামী লীল বলেছিল, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আইন প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে। বাস্তবে খেলাপি ঋণ আদায় নয়, বরং বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
মূল্যস্ফীতি
বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট উত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ৬ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে। অথচ ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীত ৯ শতাংশের ওপরে। বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, মূল্যস্ফীতির যে হিসাব ধরা হয়েছে, সেটি গড় হিসাব। সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত পণ্য বাস্কেটের ভিত্তিতে হিসাব করা হলে মূল্যস্ফীত হবে ২০ শতাংশের বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আছে কিছু বাস্তবতা বর্জিত উচ্চাকাক্সক্ষী লক্ষ্যমাত্রা।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনো দিক থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ সামাজিক ন্যায্যতার দিক থেকে বৈষম্যমূলক।
বাজেটে সর্বোচ্চ কর হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ শতাংশ। কিন্তু ১৫ শতাংশ কর দিয়েই কালো টাকা বৈধ করা যাবে, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে কর ফাঁকিবাজদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে নিয়মিত ও সৎ করদাতাদের তিরষ্কৃত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ যারা নিবেন, সরকারের কোনো সংস্থা তাদের কোনো প্রশ্ন করবে না।’ সরকারের এই পদক্ষেপ দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করবে।
আয় সীমা
বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির আয়সীমা গত অর্থ বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ছিল। এ বছর তাই রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বেশি আয়ের লোকদের আয়করের সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যক্তি কর বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়সীমা বাড়ানো উচিত ছিল। এক্ষেত্রে আয়সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
শিক্ষাখাত
শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। প্রস্তাবিত বাজেটেও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে ধারাবাহিকভাবেই জিডিপিতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমছে। যদিও শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ বেশি দেখিয়ে অনেকটা শুভঙ্করের ফাঁকির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। সরকার দেখাতে চাচ্ছে- চলতি অর্থ বছরের তুলনায় আগামী অর্থ বছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ বরাদ্দ মূল বাজেটের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
কৃষিখাত
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। কৃষির উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও কৃষকদের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখযোগ্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। অথচ শ্রমজীবীদের ৪৩ দশমিক ৮৯ শতাংশই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা নেই বাজেটে। সার, বীজ ও কীটনাশক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কৃষকদের সুবিধা দেয়ার কোনো দিকনির্দেশনা বাজেটে নেই।
শিল্পখাত
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম খাত হচ্ছে শিল্প। অথচ শিল্পের উন্নয়ন, বিকাশ এবং নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কোনো দিকনির্দেশনা রাখা হয়নি বাজেটে। এমনিতেই কোভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা বৈশ্বিক কারণে এবং ডলারের অভাবে শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। শ্রমঘন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত এবং বেকারত্বও কিছুটা দূর হতো। কিন্তু শিল্পের বিকাশে কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়নি প্রস্তাবিত বাজেটে। একদিকে হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসানের বোঝা নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের শিল্পগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বন্ধ পাটকলগুলো চালু করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত বস্ত্র ও পোশাক শিল্পকে অবহেলা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের বিকাশে কোনো সহায়তার কথা উল্লেখ নেই। উলটো পুরুষ ও বাচ্চাদের আমদানি করা পোশাকের শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে দেশিয় শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চিকিৎসা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা
মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হচ্ছে চিকিৎসা প্রাপ্তি। এক্ষেত্রে বাজেটে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে দেশে চিকিৎসা খাতে চলছে ভয়াবহ অরাজকতা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসমূহে সেবার মানে ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। বিশেষায়িত বিশেষ শুল্ক ছাড়ে চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পাওয়া যেত। এক্ষেত্রে আমদানির শুল্ক হার ছিল ১ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে ২০০টিরও বেশি চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশের শুল্ক বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছেন। এতে চিকিৎসা সেবার মূল্য অনেক বেড়ে যেতে পারে। জনগণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
ব্যাংক ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বর্তমানে লুটপাটের কারখানায় পরিণত হয়েছে। গ্রাহকগণ ব্যাংকে টাকা রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের নামে বিশেষ গোষ্ঠী জনগণের আমানতের টাকা আত্মসাৎ করার যে অপকৌশল গ্রহণ করেছে, তা রোধ করার জন্য বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
বেকারত্ব
বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি ও বেকারত্ব। দুর্নীতি কমলে অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। কর্মসংস্থানও বাড়বে। ফলে বেকারত্ব কমবে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে ঘরে ঘরে চাকুরি দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ঘরে ঘরে চাকুরি কিংবা বেকারত্ব না কমে বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী শুধু ২০২৩ সালেই বেকারত্বের সংখ্যা ২৪ লাখ ৭০ হাজার। বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্বের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
অনেক দেশে সরকার বেকারদের কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা দিয়ে থাকে। আমাদের দেশে সে রকম কিছু করার সদিচ্ছা নেই সরকারের। এবারের বাজেটে বেকারদের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেই।
দেশকে ঋণ মুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই
তিন বছর আগে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মাথা পিছু ঋণ ছিল ১ লাখ টাকা। বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত তিন বছরে প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫৫ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের জুন মাসে সরকারি ও বেসরকারি ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে তা দাঁড়ায় ১০০ বিলিয়ন ডলারে। যার সুদ দিতে হবে প্রতি বছর সোয়া লাখ কোটি টাকা। আগামী অর্থ বছরে দেশি ও বিদেশি ঋণ এবং তার সুদ দ্বিগুণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদগণ। চলতি অর্থ বছরে সুদ পরিশোধে বাজেটের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে সেটা বাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশি বিদেশি সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, যা বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাজেটের এক বিশাল অংশ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হবে। মেগা প্রকল্পের ঋণ ও সুদ পরিশোধের দায়-এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। ডলারের সরবরাহ আরও কমে যেতে পারে। প্রয়োজনীয় ডলারের অভাবে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ যেমন বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকট আরও তীব্র হবে। মূলত দেশকে ঋণমুক্ত করার বিষয়ে বাজেটে কোনো কার্যকর পদক্ষেপের কথা উল্লেখ নেই।
বাজেট জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না
দেশের অর্থনীতির সূচক নিম্নগামী। মূল্যস্ফীতির কারণে সীমিত আয়ের মানুষ বিপদগ্রস্ত। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু তার বাজেট বক্তৃতা বিশ্লেষণ করলে আশাবাদী হওয়ার মত কোনো নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থমন্ত্রী খরচের ক্ষেত্রে যে হিসাব পেশ করেছেন, তা কোথা থেকে আসবে তার নিশ্চয়তা নেই। অর্থমন্ত্রী ২ লাখ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পূরণ করার উৎস হিসেবে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ করার কথা বলেছেন। সরকার ব্যাংকখাত থেকে বেশি টাকা ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ঝুঁকিতে পড়বে। প্রকৃতপক্ষে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের ওপর বাড়তি কর আরোপের একটি বাজেট মাত্র। এই বাজেট দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।
প্রিয় দেশবাসী,
প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এ কথা প্রতীয়মান হয়, এই বাজেট জনগণের কল্যাণের জন্য উপস্থাপন করা হয়নি। সরকার ও সরকারের মদদপুষ্টদের আখের গোছানোর জন্যই এই বাজেট পেশ করা হয়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি এই সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য একটি ভারসাম্য পূর্ণ বাজেট উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেশকে একটি ঋণনির্ভর দেশে পরিণত করবে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।”
(LIVE)
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া
- Mia Golam Porwar
সেক্রেটারি জেনারেল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ১০ জুন ২০২৪ ইং, রোজ সোমবার বিকাল ৪.০০ ঘটিকায় অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
দেখতে চোখ রাখুন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অফিসিয়াল ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
👉www.facebook.com/BJI.Official
👉www.youtube.com/bjiofficial
নারায়ণগঞ্জ জেলার উপজেলা / থানা কর্মপরিষদ সদস্যদের শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত
৭ জুন’২৪ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে উপজেলা / থানা কর্মপরিষদ সদস্যদের নিয়ে শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার। সভাপতিত্ব করেন জেলা আমীর মোঃ মমিনুল হক।
প্রস্তাবিত বাজেট দেশের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না
-অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান সরকার জাতীয় সংসদে ৬ জুন ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করেছেন সে সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ৬ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতা দখল করেছে। ৬ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকার ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নির্ভর বিশাল আকারের কল্পনা বিলাসী যে অবাস্তব বাজেট পেশ করেছেন, তাতে দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো দিক নির্দেশনা নেই।
তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মাার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক শিরোনামে বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন। বাস্তবে বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের মাধ্যমে এবং বিদেশে অর্থপাচারের ব্যবস্থা করে ও দুর্নীতিবাজদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে বর্তমান সরকার।
প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। এবার ব্যয় বেড়েছে ৮২ হাজার ৫ শত ৮২ কোটি টাকা। বড় অংকের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এটি অর্জন করতে চলতি সংশোধিত বাজেট থেকে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি আহরণ করতে হবে। যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীবিদগণ। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকী ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির আয় সীমা গত বছরের মতই রাখা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। বেশি আয়ের লোকদের আয়করের সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ভ্যাট ও আমদানি শুল্কখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পাশাপাশি এসি ও এলইডি তৈরির উপকরণ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসি ও টিভির মূল্যসহ বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ভোক্তার খরচ বৃদ্ধি পাবে। বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। যা কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়।
অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে সব পরিসংখ্যান ও নীতি বাক্য উচ্চারণ করেছেন তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা সমাধানের বাস্তব কোনো পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেই। বর্তমান সরকার গত ২০২৩ ও ২০২৪ সালের জন্য যে বাজেট পেশ করেছিল তার অর্ধেকও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের পরিবর্তে লুটপাট করেছে। ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থপাচার, শেয়ারবাজারসহ অর্থনৈতিকখাতে দুর্নীতি রোধকল্পে বাজেটে কোনো দিক নির্দেশনা দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তিন বছর আগে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মাথা পিছু ঋণ ছিল ১ লক্ষ টাকা। বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত তিন বছরে প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫৫ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের জুন মাসে সরকারি ও বেসরকারি ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে তা দাঁড়ায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। যার সুদ দিতে হবে প্রতি বছর সোয়া লাখ কোটি টাকা। আগামী অর্থ বছরে দেশি ও বিদেশি ঋণ এবং তার সুদ দ্বিগুণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদগণ। বাংলাদেশে খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে প্রায় ১১ শতাংশ, যা দেউলিয়া রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার চাইতেও বেশি। প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০০৬ সালের চাইতেও কম।
বর্তমানে খোলা বাজারে প্রতি ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আগামী অর্থ বছরে তা আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রিজার্ভের পরিমাণ বর্তমানে ১৩ বিলিয়ন ডলার। আগামী অর্থ বছরে তা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রফতানি আয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিদেশি রেমিটেন্স সবকিছুতেই নিম্নগামী ধারা ক্রমশ বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ৫০টি দ্রব্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর এবং ভ্যাটের আওতা আরো বাড়িয়ে দরিদ্র জনগণকে শোষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশে চিকিৎসা খাতে চলছে ভয়াবহ অরাজকতা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসমূহে সেবার মানে ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। বিশেষায়িত বিশেষ শুল্ক ছাড়ে চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পেত। হার ছিল ১ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে ২০০টিরও বেশি চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশের শুল্ক বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে চিকিৎসা সেবার মূল্য অনেক বেড়ে যেতে পারে। ফলে জনগণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্পকর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের ওপর বাড়তি কর আরোপের একটি বাজেট মাত্র। এই বাজেট দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। জনস্বার্থ বিরোধী প্রস্তাবিত বাজেট দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করছে।”
গাজীপুর মহানগরী জামায়াতের থানা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত
ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে সকল মানুষ তাদের প্রাপ্য অধিকার বুঝে পাবে
-ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রত্যেক নর ও নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ করে দিয়েছেন। পৃথিবীর মানুষের জন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে শুধুমাত্র ময়দানেই ভূমিকা রাখবো তা নয় বরং পৃথিবীকে পরিবর্তনের জন্য আমাদেরকে হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো সমাজের মূলের সাথে মিশে থাকা, জাহিলিয়াত দূর করতে সমাজের তাগুতি নেতৃত্ব পরিবর্তন করে আমাদেরকে সামাজিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। আর এ সমাজের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রয়োজন যথাযথ জ্ঞানগত প্রস্তুতি।”
৩১ মে’২৪ গাজীপুর মহানগরী জামায়াতের আয়োজনে দিনব্যাপী থানা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগরী আমীর অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি আ স ম ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ। আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরী নায়েবে আমীর খায়রুল হাসান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি হোসেন আলী ও আফজাল হোসেন প্রমুখ।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের বলেন, “জ্ঞানের উৎস হিসেবে আমাদেরকে কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে। একইসাথে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগেও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হবে। জ্ঞানের সকল শাখায় আমাদের বিচরণ থাকতে হবে। জ্ঞান মানুষের চিন্তার জগতকে আন্দোলিত করে তোলে। জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে আমাদেরকে সমাজের মানুষের কল্যাণেও ভূমিকা পালন করতে হবে। সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব ছাড়া সুখী-সমৃদ্ধ ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এজন্য সর্বদা জনগণের পাশে থেকে তাদের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হতে হবে।
কুরআনের জ্ঞান চর্চা করে নিজেদের মান উন্নয়ন করতে জামায়াতের থানা পর্যায়সহ সকলকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জামায়াতে ইসলামী তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে দেশ ও জাতি গঠনে অবদান রেখে চলেছে। ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে সকল মানুষ তাদের প্রাপ্য অধিকার বুঝে পাবে। সকল মানুষ শান্তিময় জীবনযাপন করবে। এমন একটি সমাজব্যবস্থা কায়েমের জন্যই জামায়াতে ইসলামী প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।” তিনি জামায়াতের এই প্রচেষ্টা ও সংগ্রামে সকলকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ
পৌত্তলিকতা মিশ্রিত নাস্তিক্যবাদী বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পৌত্তলিকতা মিশ্রিত নাস্তিক্যবাদী বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয় যে, “বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পৌত্তলিকতা মিশ্রিত নাস্তিকতাবাদী শিক্ষা নীতি চালু করে দেশের জনগণের ঈমান-আক্বিদা ধ্বংস করার জন্য বর্তমান সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত ষড়যন্ত্র করে আসছে। এ দেশের জনগণ কখনো বিজাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করবে না।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করছে যে, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই তারা বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি জাতির ঘাড়ে চাপানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছে। বর্তমান আওয়ামী সরকারও দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত ইসলামী শিক্ষা ও জনগণের ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করার যে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে আসছে তা অবশ্যই ব্যর্থ হবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড কোনো জাতিকে একটি উন্নত সভ্য জাতিতে পরিণত করতে হলে সর্বাগ্রে তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে নৈতিক ও আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই দেশে সৎ, যোগ্য, অভিজ্ঞ মানুষ গড়ে উঠবে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অর্থ-আত্মসাৎ, হত্যা, ধর্ষণ চলছে এবং হেরোইনসহ নানা মাদকদ্রব্যের ছোবলে যুবক-যুবতীরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তার মূল কারণ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পৌত্তিলিকতা মিশ্রিত নাস্তিক্যবাদী নৈতিকতাহীন শিক্ষা নীতি। মানুষ গড়ার কারিগর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রীদের ধর্ষণ করছে এবং ইয়াবা, মদ, গাঞ্জা, হেরোইন খাচ্ছে, দুর্নীতি করছে।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা মনে করে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের নতুন প্রজন্মকে নৈতিক, আদর্শিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষা দিয়ে তাদেরকে সৎ, যোগ্য, নীতি ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তাহলেই একজন ছাত্র বা ছাত্রী কর্মজীবনে দেশ গড়ার ক্ষেত্রে যোগ্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
একজন আদর্শবান মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নীতি-নৈতিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে দেশ এবং জাতির খেদমত করে ইহকাল ও পরকালে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা উদ্বেগের সাথে আরও লক্ষ্য করছে যে, বর্তমান সরকার শুধু আধুনিক শিক্ষাকেই ধ্বংস করছে না, মাদ্রাসা শিক্ষাকেও ধ্বংস করছে। সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো শুধু মাদ্রাসা নামের ঘর থাকবে, সেখানে ইসলামী শিক্ষা বলে কিছু থাকবে না। সে জন্যই মাদ্রাসাগুলোতে বিধর্মী ও বিজাতীয় শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতেও নাচ, গান, অভিনয়, ঢোল, তবলা ও হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। প্রাণির ছবি আঁকা ও মূর্তি বানানো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য পাঠ্য পুস্তক থেকে বাদ দিয়ে বাউল গান, মাজার পূজা ইত্যাদি শিরক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যু বার্ষিকী পালন, ছাত্র-ছাত্রীদের পরস্পরকে চুমা দেয়ার সংস্কৃতি, সালামের পরিবর্তে গুড মর্নিং ও গুড ইভিনিং বলা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। রাধা-কৃষ্ণ, চণ্ডিদাসের প্রেমকাহিনী ও শ্রী চৈতন্যের দর্শন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের হালাল-হারামের বিধান ভুলিয়ে দিয়ে পৌত্তলিকতা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডার প্রমোট করে তৃতীয় লিঙ্গ তথা হিজড়াদের সাথে মিলিয়ে দিয়ে সমকামিতা চালু করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকারের এসব পৌত্তলিকতা মিশ্রিত বিজাতীয় শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবিতে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা দেশের আপামর জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ
-রাফায় দখলদার ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ
-ফিলিস্তিনি মুসলিম জাতিগত নিধনযজ্ঞ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ফিলিস্তিনে বিশেষ করে অতি সম্প্রতি রাফায় দখলদার ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ফিলিস্তিনি মুসলিম জাতিগত নিধনযজ্ঞ বন্ধে বিশ্ববাসীর প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে, “দখলদার ইসরাইলি বাহিনী ১৯৪৮ সাল থেকেই ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ঘর-বাড়ি ও ভূমি জবর দখল করে দখলদারিত্ব চালিয়ে আসছে। দীর্ঘ ৭৫ বছর যাবত ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনে বর্বর গণহত্যা চালিয়ে ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে।
গত বছর ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৭ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৮২ হাজারের অধিক মানুষকে আহত করা হয়েছে, যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। নিখোঁজ রয়েছে শত শত ফিলিস্তিনি। এমনকি জাতিসংঘের কর্মী, ফিলিস্তিনি ও বিদেশি সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। এইসব বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই নিয়েছিল। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী আশ্রয় শিবিরগুলোতেও হামলা করে গণহত্যা চালাচ্ছে। বর্বর ইসরাইলিদের হাত থেকে হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, আশ্রয় কেন্দ্র কোনো কিছুই রেহাই পায়নি। গাজায় এ পর্যন্ত ৭টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে এবং এসব গণকবর থেকে কয়েক শত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
হাসপাতালে হামলা করে চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত করা হয়েছে। চিকিৎসা সামগ্রী এবং ওষুধের অভাবে আহতদের ন্যূনতম চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। ব্যথানাশক ওষুধ ছাড়াই চিকিৎসকদের আহত ব্যক্তিদের দেহে অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে। ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শিশুরা মাটির কচু-কন্দ ও লতাপাতা জোগাড় করে খাচ্ছে। গবাদি পশুর খাদ্য দিয়ে তারা রুটি বানিয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছে। বিবেকবান বিশ্ববাসীর প্রশ্ন ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চালানো এই গণহত্যা যদি ইতোমধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি না করে থাকে, তাহলে আর কী কী হলে সেই পরিস্থিতিকে নিকৃষ্টতম বিপর্যয় বলা যাবে? ফিলিস্তিনের নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলমানদের ওপর অবৈধ ইসরাইলি বাহিনীর এসব আগ্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা আমাদের জানা নেই। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও মুসলিম জাতিসত্তা নির্মূলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ফিলিস্তিনে হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত সাধারণ ফিলিস্তিনি রাফাহর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সেখানে খাদ্য ও পানির অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এই অমানবিক সংকটের মধ্যেও বর্বর ইসরাইলি বাহিনী রাফায় স্থল অভিযান পরিচালনা করে গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা যুদ্ধের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ কার্পেট বোমা নিক্ষেপ করছে। গত ২৬ মে রবিবার রাফাহর একটি তাঁবুতে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ৪৫ জন ফিলিস্তিনিসহ এ পর্যন্ত ৬৬ জনকে জীবন্ত দগ্ধ করে হত্যা করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরাইলি অভিযানের মুখে গত দুই সপ্তাহে রাফাহ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ১০ লাখের মতো মানুষ। এর আগে জাতিসঙ্ঘ বলেছে, ‘রাফায় স্থল অভিযান ‘নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়’ সৃষ্টি করবে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই নাগাদ পুরো ফিলিস্তিনে দুর্ভিক্ষ ব্যাপক রূপ নিতে পারে।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা আরও লক্ষ্য করছে যে, গাজায় খাদ্য সামগ্রী প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অভুক্ত গাজাবাসীর জন্য খাদ্য বহনকারী ট্রাকে হামলা করে উগ্র ইসরাইলিরা পদদলিত করে খাবার নষ্ট করেছে এবং গাজায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অভিমত হচ্ছে স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ফিলিস্তিন সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। অতি সম্প্রতি ইউরোপের ৩টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ১৪৩টি সদস্য রাষ্ট্র ভোট দিয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা শান্তিকামী বিশ্ববাসীর এই প্রস্তাবকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছে ।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জাতিসংঘ, ওআইসিসহ শান্তিকামী গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে। সেই সাথে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের শাহাদাত কবুল করার এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছে এবং নিহতদের শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও আহতদের প্রতি এবং ফিলিস্তিনি সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাছে।”
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ
দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয় যে, “বর্তমান সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট ও ব্যাপকভাবে চড়া সুদে বিদেশী ঋণ নিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উচ্চাভিলাষী কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের গোটা অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। দেশের অর্থনীতির এ দুরবস্থায় দেশবাসী সকলেই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, দেশের অর্থনীতির উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলছে আশঙ্কাজনকভাবে। শেয়ার বাজার ধ্বংস, রিজার্ভ কমে ১৩ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। রফতানিও কমেছে। বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স কমেছে এবং স্বর্ণের দাম বাড়ছে। ঘুষ-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত, বিদেশে অর্থ পাচার বাড়ছে ব্যাপকভাবে। ডলারের দাম বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। খোলা বাজারে প্রতি ডলার ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে টাকা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেগুলো কোনোভাবে টিকে আছে। চারিদিকে শুধু নেই আর নেই।
গত ৭ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীগণ ও বর্তমানে অনুষ্ঠিত প্রহসনের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচন কমিশনে তাদের সম্পদের যে হিসাব জমা দিয়েছে তাতে দেখা যায় একেকজন নেতার সম্পদ বেড়েছে একশত থেকে হাজার গুণ পর্যন্ত। এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, সরকার ও সরকার দলের নেতাদের লুটপাট ও দুর্নীতির কারণেই দেশের অর্থনীতির এ বিপর্যস্ত পরিস্থিতি। বর্তমান সরকার ঋণের ভারে জর্জরিত। দেশের প্রতিটি নবজাতক ১ লক্ষ টাকার ঋণ মাথায় নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। সরকারকে বছরে বিদেশী ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে প্রায় সোয়া লক্ষ কোটি টাকা। বর্তমান সরকার ঋণ নিয়ে সে টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করছে। জনগণের আশঙ্কা সরকার ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছে তা পরিশোধ করতে পারবে না।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা মনে করে, ব্যাংকিং খাতে লেনদেনে ছন্দ পতন ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন কমেছে ১ লক্ষ ১১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায় যে, ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের লেনদেনে ছন্দ পতন ঘটেছে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে। বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষ করে আমদানি, রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা পড়েছে। এসব ব্যাংকে গত জানুয়ারি মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। অথচ ফেব্রুয়ারিতে এসেছে মাত্র ৯ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। একটি জাতীয় দৈনিকে ৩০ মে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে আসা বিদেশী বিনিয়োগের ৭০% চলে গেছে ভারতে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করছে যে, বর্তমান সরকার ও সরকারি কর্মকর্তাদের লুটপাট ও অদক্ষতা-অযোগ্যতার কারণে দেশের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে গিয়েছে।
সরকারের লুটপাট, ঘুষ-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে অর্থ পাচার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিস শূরা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।”
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Contact the public figure
Telephone
Website
Address
1000
Street No :03
Dhaka, DHAKA-1230
Dr. Abdul Mannan Choudhury is an academic, media personality, politician, and freedom fighter,
40/1A, West Tolarbag, Mirpur-1
Dhaka, 1216
#TeamHAPPY #ChangeForWell #ChangeForTommorow #Mirpur #Dhaka14 #কাজীহ্যাপী #ভ?
Savar
Dhaka
সাবেক সভাপতি. মোচনা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ. সদস্য. বাটিকামারী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ. মুকসুদপুর. গোপালগঞ্জ.
Dhaka
আহবায়ক ফেনী জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন। Convener Feni District Bangabandhu Foundation.