গড়িয়াদহ
এটা গড়িয়াদহ গ্রামের পেজ।🙏
জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই আধুনিক যুগে রাষ্ট্র কি ধর্মশিক্ষার আয়োজক হতে পারে?
২০১২ সালের মে মাসের কোন এক দিনের লন্ডন মেইল পত্রিকাতে পড়েছিলাম ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ স্কুলের পাঠ্য পুস্তকে বাইবেলের জেনেসিসে "সৃষ্টি তত্ত্ব" এবং "স্বর্গীয় উদ্যান" অর্থাৎ "আদম-হাওয়া কাহিনী" পড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কর্তৃপক্ষের মতে ছাত্ররা বাইবেল ও বিজ্ঞান একসাথে পড়লে দ্বিধায় পড়ে যাবে। তারা না হবে ধার্মিক, না হবে বিজ্ঞানী; ছাত্রের মনোজগৎ বিকাশ ব্যাহত হবে।
ধরা যাক দেশের দায়িত্বশীল কোন অভিভাবক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়ে অভিযোগ করলো -
তার ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত সন্তানকে সৃস্টিতত্ব বা বিবর্তনবাদ সম্পর্কে বিজ্ঞান ক্লাসে যে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে , ঠিক তার উল্টো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার ধর্মীয় ক্লাসে !
এই রকম পরস্পরবিরোধী শিক্ষা পেয়ে তার সন্তান বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং তার প্রকৃত শিক্ষা ব্যহত হচ্ছে। সুতরাং তিনি এর একটা বিহিত চান।
কী জবাব দেবে রাষ্ট্র বা সরকার ?
শিক্ষার আয়োজক হিসেবে সরকার তার নাগরিককে বিভ্রান্ত করতে পারে কি ?
কিম্বা পারে কি প্রকৃত শিক্ষা থেকে কাউকে বঞ্চিত করতে?
ঠিক এ ধরনের জটিলতার কথা ভেবে ধর্মশিক্ষা প্রসংগে বহু বছর আগে দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর মতামত দিতে গিয়ে বলেছিলেন যে পরিবারে ধর্মশিক্ষা দেয়া উচিৎ নয়। শুধু তাই নয় প্রাথমিক বা উচ্চবিদ্যালয় স্তরেও ধর্মশিক্ষা দেওয়ার বিরোধীতা করেছেন তিনি।
তাঁর পরামর্শ উচ্চতর শিক্ষায় ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে এটা থাকতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক যে কোন ছাত্র যাতে তার স্বাধীন ইচ্ছায় তা অধ্যয়ন করতে পারে। সে ধার্মিক হবে নাকি অধার্মিক হবে নাকি সংশয়ী মানুষ হবে সে নিজেই তা নির্ধারণ করবে। এখানে পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেবার কিছু নেই।
রাসেলের এই প্রস্তাব বা মতামত আপাত অবিশ্বাস্য বা অবাস্তব মনে হলেও একমাত্র যুক্তিহীন ও নির্বোধ ছাড়া কারো পক্ষে তা খন্ডন করা সম্ভব নয়।
সেই সময় কিছুটা বিতর্কের জন্ম দিলেও ইতিমধ্যে পশ্চিমের দেশগুলো তাদের শিক্ষাব্যবস্থা বিজ্ঞান-নির্ভর করে ফেলেছে এবং পরিবারগুলোও আর সেভাবে তাদের সন্তানদের ধর্মশিক্ষা দেবার প্রয়োজনবোধ করেনা।
ওদের এই পরিবর্তনের কারণ বুঝার জন্য গভীর দার্শনিক প্রজ্ঞার দরকার নেই , simple logic ও কান্ডজ্ঞান প্রয়োগ করলেও বুঝা যায় যে , ধর্ম আসলে মানুষের ' ব্যক্তিগত আবেগ ' ও 'ব্যক্তিগত চিন্তা'র ফল। এবং যেহেতু এটা ভীষণভাবে ' ব্যক্তিগত ' বা too much personal সেহেতু এখানে কারো নাক গলানোর দরকার নেই। শিক্ষার বিষয় তো তা হতেই পারেনা।
ধর্ম যেহেতু কতিপয় বিশ্বাস ও চিন্তার সমাহার সেহেতু জন্মসূত্রে উত্তরাধিকার হিসেবে কেউ তা পেতে পারেনা। মনে রাখতে হবে ধর্মীয় বিশ্বাস স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির মত পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি ( intelectual property) নয় যে তার উত্তরাধিকার থাকতে হবে। অথচ দেখা যায় ধার্মিকদের প্রায় সবাই ( ধর্মান্তরিতরা ছাড়া) উত্তরাধিকার সূত্রে ধর্ম পান। এটা কি শিক্ষার বিষয় হতে পারে? তাও আবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়?
কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে বলেন , ধর্মশিক্ষার মাধ্যম আসলে নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয়। এটা ডাহা মিথ্যাচার। ধর্ম কখনো নৈতিকতার উৎস নয়। ছিলোনা কখনো। ধর্মীয় নৈতিকতার নামে প্রচলিত অনেক নীতিকথা আসলে সামাজিক নীতিকথা। ধর্মীয় নয় কোনমতেই।
নৈতিকবোধ কী আবিস্কৃত হয় নাকি তা সৃষ্টি হয় ? কোন মানদন্ডে নীতিবান ভাববো নিজেকে ?
যেভাবেই হোক , মানুষকে নৈতিকতার নির্দেশক হিসেবে বিবেচনায় নিতে হয়েছে এই নীতিটি । কী সেটা ?
মানুষ জন্মগত ভাবে সমান এবং ঠিক এ কারণে জীবন , স্বাধীনতা ও সুখ লাভ করার অধিকারও তার সমান। একটুও কম নয় । আমরা যেভাবেই দেখি - নৈতিকতার উৎস হিসেবে এখান থেকেই শুরুটা করতে হবে।
হ্যাঁ , পৃথিবীতে বিপুল সংখ্যক লোক একদা দাসপ্রথা , বর্ণবাদ অনুমোদন করেছিল , এমনকি এখনো ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ , প্রভৃতি অসুস্থ বিভাজন এই মানুষ দ্বারাই সমর্থিত হচ্ছে কিন্তু তারপরও আমাদের ফিরতে হবে সে মৌলিক উৎসের কাছে , কারণ এটাই মানদন্ড - মানুষ সমান এবং জগতের সকল কিছুতে তার প্রাপ্যতাও সমান , অবিভাজ্য ও অলংঘনীয়।
ধার্মিকদের চিন্তার বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য নিয়ে ভাবা যাক এবার। সাধারণভাবে এই বৈশিষ্ট্য অনেকের। তারা ভেবে পাননা বা ভেবে বিচলিত হন যে একজন ' ধর্মহীন ' মানুষ কীভাবে সৎ হতে পারে। নেদারল্যান্ডের ৯৫% ভাগ মানুষ ধর্মহীন। সেখানে কোন কারাগার নেই। উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে অপরাধী নেই বলে। অর্থাৎ ধর্মহীন সমাজ হলেই অরাজকতায় ছেয়ে যাবে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই।
এই ভুলটা ঘটে এই কারণে যে ধার্মিকরা ধরে নেন শুভ-অশুভ বা ভালো-মন্দ এই উপলব্ধিগুলো মানুষ বুঝি ধর্মের কাছ থাকে পায়। এর থেকে মনে মনে তারা একটা ভুল সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত হন , ভাবেন - ধর্মই যদি না থাকে তাহলে মানুষ নিশ্চিতভাবে অসৎ হতে বাধ্য হবে।
এই ভ্রান্তিটা ঘটে আরেকটা কারণে। মানুষের মনে শৈশব থেকে ঢুকিয়ে দেয়া হয় একটা ' ভুল ধারণা '। আর এই ভুল ধারণাটা হলো - যা কিছু শুভ তাই ধর্ম আর যা কিছু অশুভ তাই ধর্মহীনতা ( অধর্ম)।
' চুরি করা অন্যায় ' অথবা ' নরহত্যা মহাপাপ ' এমন নৈতিক শিক্ষা প্রত্যেকে তাদের নিজেদের ধর্মের ' সুবচন ' বলে দাবি করতে থাকেন। কোন ধর্মকে এর ক্রেডিট দেয়া যায়? কোথায় উৎস এই নৈতিকতার ?
এই আলোচনা এড়িয়ে বরং ঘুরে আসা যাক সাঁওতাল পল্লী। সেখানে চুরি বা হত্যাকান্ড বিষয়ে তারা কী ভাবে? দেখা যায় তারাও ধার্মিকদের মতোই এ দুটো অপরাধকে ' গর্হিত ' মনে করছে। তাহলে?
অর্থাৎ সাঁওতালদের ঈশ্বরকেও তখন ধার্মিকদের ঈশ্বরের সাথে এক করে দেখতে হবে যেহেতু তারা ' নৈতিকভাবে অভিন্ন ' কারণ এই দুই ঈশ্বরই চুরি ও হত্যাকে মন্দ বলছেন। মানবে কেউ ?
এসব প্রশ্নের চেয়েও অধিক জরুরি হলো প্রশ্ন হল - এই আধুনিক যুগে আমরা যে রাষ্ট্রধর্মের মালা পরে বসে আছি, তার কী হবে?
©Razik Hasan
নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সেনাপতি মীর জাফর কুরআন ছুঁয়ে শপথ করেছিলেন তিনি সিরাজের পক্ষে থাকবেন। সেই শপথ ভেঙে মীর জাফর সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নিজে নবাব হয়েছিলেন। সিরাজের নানা আলীবর্দীর গাদ্দারী ছিলো আরো নিকৃষ্ট। আলীবর্দীর তুলনায় মীর জাফর নেহাত শিশু! বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সুজাউদ্দীন যিনি আলীবর্দীকে বলতে গেলে রাস্তা থেকে তুলে এনেছিলেন, সমৃদ্ধ করেছিলেন, নিঃস্ব থেকে করেছিলেন নবাবের ডানহাত, তারই মৃত্যুর পর তার পুত্র সারফারাজ খানকে মসনদ থেকে উত্খাত করে হত্যা করেন আলীবর্দী। কুরআন ছুঁয়ে নবাবের সুরক্ষার শপথ করেই তাকে হত্যা করেছিলো আলীবর্দী। এতবড় বেঈমানী করার পরও ইতিহাস আলীবর্দীকে খল নায়ক বানায়নি। এর কারণ সম্ভবত আমাদের ইতিহাসে “মুসলিম শাসন” নামের অধ্যায়টি আছে বলে। আমাদের ইতিহাসের নায়ক সিরাজের নানাকে তো আর নিকৃষ্ট বলা যায় না! বরং এইসব শাসনের সমালোচনাকে “মুসলিম বিদ্বেষ” বলাও এখন রীতি।
আলীবর্দীর প্রকৃত নাম মির্জা মুহাম্মদ আলী। তিনি আওরাঙ্গজেবের পুত্র আযম শাহের পিলখানা (হাতির আস্তাবল) চাকরি পান। কিন্তু আওরাঙ্গজেবের দুই পুত্র প্রথম বাহাদুর শাহ ও আযম শাহ সিংহাসনের প্রতিদ্বন্দিতার যুদ্ধে লিপ্ত হলে আযম শাহ যুদ্ধে মারা যান। স্বাভাবিকভাবেই আলীবর্দী মনিবের মৃত্যুতে বেকার হয়ে পড়েন। এসময় তিনি ভাগ্য পরীক্ষা করতে বাংলায় আসেন। মুর্শিদাবাদ আসেন মুর্শিদকুলি খানের সহায়তা পেতে। তার বদলে মুর্শিদকুলির আক্রমনের শিকার হয়ে কোন মতে প্রাণ হাতে নিয়ে কটকের দিকে পালান। এখানে এসে তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। মুর্শিদকুলির জামাতা সুজাউদ্দিন তাকে চাকরি দেন এবং দ্রুত নিজের যোগ্যতা দেখিয়ে সুজাউদ্দিনের কাছ থেকে পদন্নতি পেতে থাকেন। আলীবর্দীর রাজনৈতিক গুণাবলী ছিলো অসম্ভব। প্রশাসনকে প্রভাবিত করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। একই সঙ্গে সুজাউদ্দিনের তোষামোদও ভালো করতে পারতেন। ফলে সুজাউদ্দিনের তামাকবহনকারীর সামান্য চাকরি থেকে বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব পর্যন্ত হয়েছিলেন।
আলীবর্দীর বড় ভাই হাজি মুহাম্মদকে বলা হয় আলীবর্দীর উপদেষ্টা। হাজি মুহাম্মদ সুজাউদ্দিনের চারিত্রিক দুর্বলতা টের পেয়ে নিজেদের স্ত্রীকে সুজাউদ্দিনের কাছে পাঠাতেন আমোদ প্রমোদ করতে। এতে প্রভু খুশী হবে। আলীবর্দী সুদক্ষ প্রশাসক ছিলেন, ছিলেন যোদ্ধা, এইসব যোগ্যতার বাইরে মালিকের নেকনজর প্রয়োজন ছিলো। সুজিউদ্দিনের বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব হওয়ার পথ মসৃন করতে এই দুই ভাই তাদের সমস্ত মেধা প্রয়োগ করেছিলো। সুজাউদ্দিন ছিলেন মুর্শিদকুলি খানের জামাতা। মুর্শিদকুলির কোন পুত্র না থাকায় জামাতারাই ছিলেন সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী। কিন্তু সুজাউদ্দিনকে মুর্শিদকুলি পছন্দ করতেন না। মুর্শিদকুলি খানের মৃত্যুর পর আলীবর্দীর কুটকৌশলে সুজাউদ্দিন নবাব হতে পারেন। আলীবর্দীর রাজনৈতিক উত্থানও তড়তড় করে বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি নবাবের মাথা হয়ে উঠেন। এই সময়ই মির্জা মুহাম্মদ আলী “আলীবর্দী” উপাধি লাভ করেন নবাব থেকে। এটাই তার ঐতিহাসিক পরিচয় হয়ে থাকে।
সুজাউদ্দিন মারা গেলে তার ছেলে সারফারাজ নবাব হলে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও শঠতায় মেতে উঠেন আলীবর্দী ও তার ভাই। এক পর্যায়ে আলীবর্দী কুরআন ছুঁয়ে শপথ করেন তিনি নবাবের বিশ্বস্ত থাকবেন। এরপরই আলীবর্দী সারফারাজকে হত্যা করে নবাবের পদ দখল করেন। তার নাতি সিরাজদৌলার সঙ্গে একইভাবে মীর জাফর কুরআন ছুঁয়ে শপথ করে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।
সারফরাজকে হত্যা করে আলীবর্দী নবাব হওয়া সহজ ছিলো না। আলীবর্দী এ জন্য স্বয়ং দিল্লির মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহকে ঘুষ দিয়েছিলেন! মুঘল অধপতন কোথায় নেমেছিলো এটি তার একটি প্রমাণ। মুঘল সাম্রাজ্য ভেতরে দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে নাদির শাহ সহজেই দিল্লি দখল করতে পেরেছিলো। সেই সুযোগেই আলীবর্দীর মত নবাবরা নিজেকে স্বাধীন নবাব ঘোষণা করতে পেরেছিলেন।
তথাকথিত এইসব “মুসলিম শাসনে” হিন্দুরা উজির নাজির হয়ে সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে তাদের মেধা খাটাতেন। যুদ্ধে জীবন দিতে কুন্ঠিত হতেন না। আলীবর্দীর সেনাবাহিনীতে ছিলো হিন্দু রাজপুত সৈন্য। তার পরিষদের মধ্যে হিন্দুরা ছিলেন। “মুসলিম শাসন” নাম দিয়ে পুরো ভারতবর্ষের ইতিহাসকে যারা “মুসলিম জাতি” বলে একটা জনগোষ্ঠিকে বুঝান- তারাই এখন ইতিহাসকে হিন্দুত্ববাদী করে ফেলার ষড়যন্ত্রের দাবী করেন! নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার মত বখাটে উচ্ছৃঙ্খল অযোগ্য নবাবকে পরাজিত করে মীর জাফর যদি ক্ষমতা দখল করে সেটা কেন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হবে?
ইংরেজরা বগিরাগত ছিলো। আর ভারতে মুসলিম শাসন এখানে উপনিবেশ বানালেও তারা এটাকেই তাদের দেশ বানিয়ে ফেলেছিলো। যেমন সিরাজ। এই একই লোক কিন্তু আর্যরা বাহিরাগত ছিলো সেই ভাঙা রেকর্ড বাজানো কিছুতে ছাড়তে পারে না! আর্য অনার্য একদেহে লীন হয়ে যাবার পরও যদি আর্যদের বহিরাগত আমাদের দুইবেলা গাইতে হয়, তাহলে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম অনুপ্রবেশকে কেন বহিরাগত বলবো না?
আমার উদ্দশ্য নয় মুসলিমদের বহিরাগত বলা। এটি কোন যুক্তিযুক্ত অবস্থান হবে না। কিন্তু এদেরকে “মুসলিম শাসন” এই বিভাজিত ব্রাকেটে তুলে দিতে হবে। না হলেই সমস্যা। আলীবর্দীর সমসাময়িক কাব্যে আলীবর্দীকে দুরাত্মা বলে ঘৃণা করা হয়েছিলো। নিষ্ঠুরতা দেখে কবি আলীবর্দীকে গালি দিয়েছিলো। মুসলিম শাসনের উত্তরাধিকারদের এটা গায়ে লাগবে। কিন্তু এটাকে কোন ধর্মীয় পরিচয়ের জাতীয়তাবাদের বাইরে থেকে দেখলে কিছুই যায় আসে না। “বাংলা” বলতে প্রাচীনকালে কী যে বুঝাতো তার কোন হদিস নেই। পন্ডিতরা কেউ একমত নয়। সেই বাংলা কবে স্বাধীন ছিলো? কবে আবার পরাধীন হয়েছিলো? নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে আসলে “মুসলিম বাংলার” স্থপতি বানানো হয়েছিলো। এটা জেনে, বুঝে, না বুঝে হিন্দু মার্কসবাদীরা মদদ দিয়ে গেছে। সিরাজের পতনে খুশী হয়েছিলো তখনকার বাংলা। ইংরেজরা ক্ষমতা দখল করে নেয়া আর সুজাউদ্দিনের পুত্র সারফরাজকে হত্যা করে আলীবর্দীর ক্ষমতা দখলের মাঝে বাংলার জনসাধারণের আলাদা কোন চাঞ্চল্যই ছিলো না। তাদের কাছে সব শাসকই এক।
(পড়তে পারেন কালিকিংকর দত্ত লিখিত ‘আলীবর্দী ও তার সময়’ বইটি)
©সুষুপ্ত পাঠক
ধর্ম আর পন্থা এক জিনিস না। ধর্ম মানে মানুষের জীবন ধারনের মতনই সেটা একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। সেখানে পন্থা কেউ শুরু করেন।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় আমাদের হিন্দু ধর্ম এমন এক ধর্ম যা সেই প্রাচীনকাল থেকেই একটা জীবনশৈলীর অঙ্গ। অনাদি ও অনন্ত।
অন্যদিকে পন্থা যেহেতু মনুষ্যসৃষ্ট তাই এর সব সময় স্টেট পেট্রোনেজ ও স্টেট প্রোটেকশন দরকার হয়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরন হল জরাথ্রুষ্টবাদ।
জরাথ্রুষ্টবাদ বা পারসিক ধর্মের উত্থানের আগে ইরানের সমাজ আমাদের মতন বৈদিক সমাজ ছিল। প্রকৃতির উপাসনা করা হত। সেই বিভিন্ন প্রাকৃতিক ভগবান থেকে গুরু জরাথ্রুষ্ট শুধুমাত্র অগ্নিদেবের পূজাকেই শ্রেষ্ঠ মনে করে শুরু করলেন তার ধর্মমত প্রচার।
যতদুর পড়া যায়, দেখা যায় বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের উত্থানের কিছুটা আগেই জরাথ্রুষ্ট্রবাদের উত্থান হয় একই পদ্ধতিতে। পরে ৫৫০ খ্রিঃপূর্ব নাগাদ তা পারস্যের স্টেট রেলিজিওনের সম্মান পায়।
যেহেতু পারসিকধর্ম স্টেট প্রোটেকশনেই বেড়ে উঠেছিল ও স্টেটের পেট্রোনেজে তা আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, কির্গিস্তান, তাজিকিস্তান, আজেরবাইজান ও কাজাখস্থানের ছড়িয়েছিল তাই পারসিক সাম্রাজ্যের পতনের পরে আর তারা তাদের জীবনধারন পদ্ধতি ধরে রাখতে পারেনি। ৮৮০ খ্রিষ্টাব্দ অবধি উত্তর ইরানের কিছু রাজা তাদের স্বাধীনতার লড়াইতে হেরে গেলে তারা জরাথ্রুষ্ট্রবাদ ছেড়ে দেন এবং জরাথ্রুষ্ট্রবাদও কর্পুরের মতন পারস্যের ভূমি থেকে উবে যায়।
একই ব্যাপার ভারতে বৌদ্ধধর্মের সাথেও হয়েছিল। বিশেষত বাংলায়। তাই বাংলায় শৈববাদের উত্থান ঘটলে বৌদ্ধদের সংখ্যা কমে যায় ও তুর্কী আক্রমনের পরে তা সুদূর চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
কিছুটা খ্রিস্টানধর্মের মধ্যেও এটা দেখা যায়। তবে ওদের ভ্যাটিকান চার্চ একটা প্যারালাল সরকারের মতন থাকায় খ্রিষ্টধর্ম কিছুটা টিকে আছে। নাহলে যেই যেই ইয়ুরোপীয় দেশে স্টেট আর রেলিজিয়ন আলাদা হয়ে গেছে সেখানে চার্চের প্রভাব অনেকটাই কমে গেছে।
আজ ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে ইররেলিজিয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরন। অফ্রিকাতে চার্চের প্রভাব কমে গেলে আফ্রিকানরা আবার তাদের প্রাচীন ধর্মমতে ফিরে যাবেন যা কেনিয়া বা নাইজেরিয়ার মানুষদের মধ্যে শুরু হয়েও গেছে। ঘানা তো হিন্দুধর্মের দিকে ঝুঁকে গেছে।
আসলে স্টেটের প্রভাব ধর্মে পড়লে সেখানে স্টেট ইন্টারফিয়ারেন্স বাড়ে ও স্টেট দুর্বল হলে তার প্রভাবও পড়ে। আমাদের দেশে গত ১১০০ বছরে এত বিদেশী আক্রমণের পরেও আমাদের প্রাচীন ভূমির প্রায় ৭০% এখনো তাদের প্রাচীন ধর্মমতে টিকে আছে কারণ সেখানে মানুষ নিজ ইচ্ছায় তার সভ্যতা তার সন্তান ও তাদের সন্তানদের পাস অন করে গেছে। স্টেটের পেট্রোনেজের দরকার আমাদের পড়েনি। আমাদের নিজস্ব মন্দির ও আশ্রমই যথেষ্ট।
আবার বাংলায় বাম আমলে হিন্দুদের এমন ব্রেনওয়াশ করেছে যে এখানে বামপন্থা ও ইররেলিজিয়নের প্রভাব বেড়েছে। তবে তা ছিন্নমূলদের মধ্যে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে, নিজের মূলের সাথে জড়িতদের বেশি শেকড় থেকে কাটতে পারেনি।
তাই স্টেটের কাজে ধর্মের প্রভাব নিয়ে না ভেবে এটা ভাবা উচিত যে ধর্মের কাজে যেন স্টেট বেশি ইন্টারফেয়ার না করে। মানুষ নিজস্ব ইচ্ছায় নিজ নিজ মতে নিজের উপাসনা করলে তবেই দেশের ও দশের মঙ্গল।
©Hijibiji
আমার যে বান্ধবীটি কলেজে ওঠার আগেই ৪টি প্রেম করার পরে, ৫ নং প্রেমিককে বিয়ে করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে, সেই বান্ধবীটির সাথে ১৫ বছর পর কথা হলো। আমাকে অনেকক্ষণ ধর্মের জ্ঞাণ দিলো। হারাম রিলেশন যে কত গুণাহর কাজ সেই বিষয়ে অনেকক্ষণ বয়ান দিলো।
যে মিটার রিডার দুর্নীতি করে এলাকাতে একটা ৪ তলা বাড়ি, ঢাকাতে দুটো ফ্লাট ও ছেলে-মেয়েদের বিদেশে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছে, সেই মানুষটি এখন আপাদমস্তক ধর্মীয় পোশাক পরে থাকে। সারাক্ষণ তজবিহ জপে। সেই সাথে হয়েছে, মসজিদ কমিটির সভাপতি। দুর্নীতি যে খুব খারাপ, সেই বিষয়ে নীতি কথা বলে বেড়ান।
যে নায়িকা জীবনের ৩০টা বছর দাপটের সাথে অভিনয় করে আর্থিক সফলতা পেয়েছেন, সেই নায়িকা শেষ বয়সে এসে আপাদমস্তক ধার্মিক বনে যান। যেই চলচ্চিত্রর টাকায় অর্থবিত্তর মালিক হয়েছেন, সেই অর্থবিত্ত ছাড়তে পারেন না। কিন্তু চলচ্চিত্র ছেড়ে নিজেকে বড় ধার্মিক প্রমাণে ব্যস্ত থাকেন। চলচ্চিত্রে অভিনয় করা যে গুণাহর কাজ সেই বিষয়েও বয়ান দেন।
যে শিল্পপতী তামাক ব্যবসা দিয়ে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, সেই ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠান এখন তামাক ব্যবসা ছেড়ে সভ্য হয়েছেন। এখন তাদের অফিসে নিয়োগ দেয়ার সময় উল্লেখ করেন, ধুমপায়ীদের আবেদন করার প্রয়োজন নেই।
যে সাদা-চামড়ার সভ্য দেশ, ৩য় বিশ্বের দুর্নীতিতে উপার্জিত অর্থ নিজেদের দেশে ঢুকিয়ে আরো ধনী দেশে রুপান্তরিত হয়েছে, তারাও এক সময় সভ্য সাজার জন্য এই কথা বলে যে, আমরা আর দুর্নীতির টাকা ঢুকতে দিবোনা।
যে কাজের বিনিময়ে মানুষ অর্থবিত্তর মালিক হয়, সফলতা পায়, এক সময় এসে সেগুলোকে ছুড়ে ফেলে দেয় শুধু পারেনা, সেই অর্থবিত্তটা ছুড়ে ফেলে দিতে। অতীতের কৃতকর্ম খারাপ, শুধু কৃতকর্মের মাধ্যমে পাওয়া অর্থবিত্তটার টেস্টই সুন্দর। সেটা আর কেউ ছুড়ে ফেলে দিতে পারেনা।
©দেশ বিদেশের বিজ্ঞাপন
ঋক "স্তব" ও বেদ "জ্ঞান" থেকে হল ঋগ্বেদ। ঋগ্বেদ প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃত স্তোত্রাবলির একটি সংকলন। বেদের চারটি খণ্ডের মাঝে প্রথম অংশটি ঋগ্বেদ। এটি সনাতন ধর্মের আদি উৎস। ধারণা করা হয় ঋগ্বেদ বিশ্বের প্রথম গ্রন্থগুলোর মধ্যে একটি যা আজ পর্যন্ত কোনো না কোনো ভাবে সমাজে টিকে রয়েছে। এই গ্রন্থই সনাতন ধর্মের মূল পাঠ।
ঋগ্বেদ গ্রন্থের চারটি স্তর লক্ষিত হয়। যথা: "সংহিতা", "ব্রাহ্মণ", "আরণ্যক" ও "উপনিষদ্।
ঋগ্বেদের যুগ থেকে ধর্ম প্রবাহিত হতে শুরু করেছিলো দ্বিধারায়। একটি জ্ঞানপিপাসা চরিতার্থ করা। আদিমতম ধর্মীয় প্রেরণা --- সারা পৃথিবীতেই --- ভয় ও বিস্ময়। আকাশের সূর্য চন্দ্র, বাতাসের প্রভঞ্জন বেগ, সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস, অগ্নির দাহিকাশক্তি।
এরপ আসে বৈদিক দেবতাদের দল। সূর্য, চন্দ্র, পবন, বরুণ, অগ্নি।
প্রয়োজন হল একটি সমন্বয় প্রচেষ্টার। বিভিন্ন দেবতাকে পরিচালিত করতে অলক্ষ্যে আরেকটি সত্বার কল্পনা করা। তিনি সূর্যের মতো স্বয়ং প্রকাশ নন, চন্দ্রের মতো স্নিগ্ধতার স্বাক্ষর রাখেন না, অগ্নি বা বায়ুর মতো স্পর্শেন্দ্রিয়ের দ্বারাও তাঁকে অনুভব করা যায় না। সেই অবাঙমানসগোচর হল নির্গুণ, কিন্তু অদৃশ্য। তবু তিনি আছেন। নইলে অঙ্কটা যে ঠিক মেলে না।
অনেকটা যেমন আলোকতরঙ্গের সমস্যার সমাধানে বৈজ্ঞানিকেরা নির্গুণ ইথার তরঙ্গের কল্পনা করতে বাধ্য করেছিলেন, সেভাবেই ঋষিদের কল্পনায় সৃষ্ট হলেন ---ব্রহ্মা।
এই রুট ওভার মাইনাস ওয়ান বিনে সৃষ্টিতত্বের ব্যাখ্যাটি অঙ্ক কষে বোঝানো যাচ্ছিল না।
ধর্মের দ্বিতীয় ধারাটি হলো--- মানুষের ঐহিক প্রয়োজন মেটানো।
একান্ত ব্যবহারিক প্রয়োজনেই ঈশ্বর কে প্রীত করার একটা প্রয়োজন দেখা দিল।
ধরে নেওয়া হলো --- তিনি শুধু সৃষ্টির আদি কারণ ও নিয়ন্তাই শুধু নন, তিনি বিপত্তারণ, তস্মিন তুষ্টে জগৎ তুষ্ট। অর্থাৎ তাঁকে তুষ্ট করলেই জগৎ তুষ্ট। তাঁকে তুষ্ট করতে পারলেই জাগতিক আধি ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা।
ঠিক তার পরের ধাপেই ভারতীয় দর্শন ব্যবহারিক প্রয়োজনের উর্ধ্বে উঠে গেল ---- উপনিষদের যুগে।
তখন জ্ঞানপিপাসা ই ছিল মুনিঋষি দের একমাত্র প্রেরণা। উপনিষদের মুনিঋষি বিপদ থেকে উত্তরণের কথা ভাবেননি, বৈষয়িক উন্নতি র জন্য মন্ত্ররচনা করেননি। তাঁদের লক্ষ্য তখন অন্ধকার থেকে আলোকে পদার্পণ, মৃত্যু থেকে অমৃতে উত্তরণ। বিশুদ্ধ জ্ঞানপিপাসা তৃপ্তির জন্যই তখন তাঁরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। তখনি তিনি উপলব্ধি করলেন --- কি উদ্দেশ্যে সেই ' একবর্ধা বহুধা হয়েছেন, ইন্দ্রিয়গোচর দ্যাবাপৃথিবী সৃজন করেছেন। এ এক অহেতুকী আনন্দের উচ্ছাস। ব্রহ্মের উদ্দেশ্য -- কারধত্ব হল : --- রসের আস্বাদন।
সেই আনন্দ -- স্বরুপ -- ব্রহ্মের উপলব্ধি হওয়ার পরেই পরমতৃপ্ত ঋষি সারা পৃথিবীকে সানন্দে জানালেন : ---
হে অমৃতের পুত্রপুত্রী গণ --- তোমরা শোন। আমি জেনেছি সেই অজ্ঞেয় কে।
কিন্তু পরম পরিতাপের বিষয়, ভারতীয় দর্শনের এই স্বর্ণ যুগের ব্যপ্তি বড়ই অকিঞ্চিৎকর। ফুলটি শুকিয়ে গেল।
উপনিষদ উত্তর যুগের ষড়দর্শনে এসে উপস্থিত হলো --- কর্ম ফলবাদ আর পরজন্মবাদ।
উপনিষদের আনন্দঘন দৃষ্টিভঙ্গিটি পরিবর্তিত হল এক বিষাদময়তায়।
©Razik Hasan
ধর্ম ও বিজ্ঞানের মৌলিক দ্বন্দ্ব
ধর্মের প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে বিশ্বাস, আরো ভালভাবে বললে অন্ধবিশ্বাস। ধর্ম, ধর্মগ্রন্থের বিধিবিধান এবং বক্তব্য সবকিছুই একজন ধার্মিকের মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হয়, এবং মান্য করে জীবন যাপন করতে হয়। কোন ধরণের যাচাই বাছাই অথবা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা মানেই বিশ্বাসটি দুর্বল হয়ে যাওয়া। একজন ধার্মিক কোন অবস্থাতেই তার ধর্ম সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহ করার অধিকার রাখে না। মনে যদি সন্দেহ বা সংশয়ের সৃষ্টি হয় তাহলে সেটিকে ধর্মগুলো মহাপাপ হিসেবে গণ্য করে। একজন ধার্মিককে তার ধর্মের ভুল চোখের সামনে তুলে ধরলেও সে মানতে চাইবে না। সে নানা ধরণের কুযুক্তি এবং ভুল তথ্য দিয়ে তার ধর্মকে সঠিক বলে চালাবার চেষ্টা করবে। আর কেউ যদি ধর্মের ভুল মানুষের কাছে প্রকাশ করে, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধানও ধর্ম করে রেখেছে। এই কারণেই ইসলামে ধর্মত্যাগীদের মুরতাদ বলে হত্যা করা হয়, অন্য প্রধান ধর্মগুলোতেও একই অবস্থা। কিন্তু বিজ্ঞানের ব্যাপারটি একেবারেই উলটো।
যেকোন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বিষয়ে আপনি সন্দেহ সংশয় যাচাই বাছাই করতে পারেন। এমনকি, কোন মহাবিজ্ঞানীর কোন যুগশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে আপনি চ্যালেঞ্জও করতে পারেন। আপনি নিউটন-ডারউইন বা আইনস্টাইনের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করতে পারলে আপনাকে নোবেল পুরষ্কারও দেয়া হতে পারে। কারণ বিজ্ঞানে বিশ্বাসের কোন স্থানই নেই। বিজ্ঞান কাজ করে যুক্তি তথ্য প্রমাণ যাচাই বাছাই এবং পরীক্ষার ওপর। আপনাকে এরকম বলা হবে না যে, নিউটনের প্রতি ভক্তি স্বরূপ তার সব কথাকে বিশ্বাস করতে হবে, বা নিউটনের সমালোচনা শাতিমে নিউটন বলে গণ্য হবে, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড! হেফাজতে বিজ্ঞান নামে একটি সংগঠন আপনার ফাঁসিও চাইবে না। বরঞ্চ বিজ্ঞানীদের সংগঠনগুলো আপনাকে মাথায় তুলে রাখবে।
তাই বিজ্ঞান ও বিশ্বাস মৌলিকভাবেই পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থাকে। একটি প্রমাণ নির্ভর, আরেকটির ভিত্তি প্রমাণ ছাড়াই মেনে নেয়া এবং সন্দেহ না করা।
সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণাধর্মী প্রথা-প্রতিষ্ঠান বিরোধী বাঙলা ব্লগ
অস্পৃশ্য ও শূদ্রেকে ধর্মে পূর্ণ অধিকার দিবার চেষ্টা করলেন বাঙলা দেশের মহাপুরুষ - শ্রীচৈতন্য। শ্রী চৈতন্য দেবের ভাব বিপ্লবকে কেন্দ্র করে গোটা বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যর সূচনা হয়। সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই, বড়ু চণ্ডিদাস এর কথা, শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন কাব্যের। তাঁকে শ্রীরাধাকৃষ্ণের যুুুগল প্রেমাবতার বলা হয়।
আমরা বাঙালীরা নিজেদের ইতিহাস সম্বন্ধে এতটাই অজ্ঞ যে ঐ ইংরেজ আমলের ১৮শ শতকের পিছনে কেউ যেতেই পারি না। চৈতন্যদেবের মতো যুগস্রষ্টাকে আমরা ঠাকুর ঘর থেকে আর বের করতে পারি নি। বাঙালী তথা ভারতের ইতিহাসে তাঁর সঠিক মূল্যায়নও আমরা করতে পারি নি। যাইহোক বাঙালী তবুও মহাপ্রভুকে অন্ততঃ ঠাকুরঘরে চেনে।
শ্রীচৈতন্য সে-যুগে হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন যে ভারতবর্ষে ইসলামের বিজয় অভিযান যদি রুদ্ধ করতে হয় তবে চণ্ডালকে, শূদ্রকে, এমন কি যে হিন্দু মুসলমান হয়ে গেছে তাকে, এক কথায় আপামর সর্বসাধারণকে ধর্মে পুর্নাধিকার দিতে হবে। বল্লভ নিম্বার্ক যে সাহস দেখাতে পারেন নাই মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যর দ্বারা তাই সম্ভব হল। কিন্তু চৈতন্যের উদার ধর্ম পন্ডিত্যাভিমানী ব্রাহ্মণের হৃদয় স্পর্শ করতে পারল না। যে উদ্দেশ্য নিয়ে বৈষ্ণব ধর্মের প্রচার হল তা সফল হল না সত্য, তারপরেও হিন্দু সমাজে প্রচুর উদারতা প্রবেশ করেছিল।
এই উদারতার কারণে সূফিদের প্রচার কাজে সুবিধা হল। কারণ ভক্তি ও সূফিতত্ত্ব দুইই প্রেমরসাত্মক। শাস্ত্রীয় হিন্দুধর্ম ও শাস্ত্রীয় মুসলমান ধর্মে মিলন হল না - সে মিলনের চেষ্টা রাজপুত্র দারা শি কুহর মতো দুই একজন পন্ডিত চেষ্টা করেছেন - কিন্তু প্রেমের গঙ্গা যমুনার মিলন হল না।
উত্তর ভারতবর্ষে কবীর, দাদূ, মহারাষ্ট্রের সন্তজী, মুহম্মদ উভয় ধর্ম শাস্ত্রের শাসনকে উপেক্ষা করে মধুর কন্ঠে প্রেমের গান গাইলেন। সে-গান মসজিদে মন্দিরে প্রবেশ করল না সত্য কিন্তু ধর্মপিপাসার্ত লক্ষ লক্ষ নরনারীর হৃদয়ে সুধাবর্ষণ করল। আজও উত্তর ভারতবর্ষে গুজরাত ও কাঠিয়াওয়াড়ে সে গান গীত হয়।
হিন্দু-মুসলমানের মিলনের এই চেষ্টা সাধুরা করেছিলেন প্রেমের দ্বারা। আরেক দল চেষ্টা করলেন ধর্ম্ম-বিশ্বাসের সম্মেলন দ্বারা। সেই সম্মেলন হতে খোজাদের ধর্ম্মের সৃষ্টি হল। প্রিন্স আগাখান এই দলের ইমাম বা গুরু। খোজারা শীয়া কিন্তু বিশ্বাস করে যে বিষ্ণু নয়বার পৃথিবীতে মৎস্য, কুর্ম্ম, বরাহ ইত্যাদি রূপে অবতীর্ণ হয়েছেন, শুধু যেখানে বৈষ্ণবরা বিশ্বাস করে ভবিষ্যৎকালে বিষ্ণু কল্কিরূপে অবতীর্ণ হবেন সেখানে খোজারা বিশ্বাস করে যে আলী (শীয়াদের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম) কল্কিরূপে মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পর তাঁর আত্মা তাঁর পুত্র হাসান, তৎপর হুসেন ও বংশানুক্রমে অবতীর্ণ হয়ে আসছে। খোজারা তাই কুরান পড়ে না, তাদের সর্বপ্রধান ধর্ম্মগ্রন্থ তাদেরই এক পীর কর্ত্তৃক গুজরাতিতে লেখা "দশাবতার"। খোজারা জকাত দেয় না - আগাখানকে "দশোন্দ" দেয়, হজে যায় না, আগাখানকে প্রদর্শন করে - তাই তাঁকে প্রায়ই বোম্বাই আসতে হয়। রমজান মাসে উপবাস করে না ও নামাজ পরে তিনবার, তাও আরবীতে নয়, হয় কচ্ছী নয় গুজরাতিতে। পাঞ্চরাত্রে যে সব দেব দেবীর উল্লেখ আছে তাঁদের নাম উপাসনার সময় স্মরণ করে। বিষ্ণুর নয় অবতার বিশেষ ভক্তি নিবেদন করে আর আগাখান ত স্বয়ং বিষ্ণু।
নওসারীর মতিয়া ও গুজরাটিরাও হিন্দু মুসলমানের একটার চেষ্টার ফল। তারা রমাদানে উপবাস করে, কিন্তু নামাজ পড়ে না। বিবাহে ব্রাহ্মণ ডাকে, কিন্তু মৃতদেহ দাহ করে না, কবর দেয়। সে সময় ডাকা হয় মোল্লাকে। মতিয়াদের ধর্ম্মবিশ্বাস ও আচার ব্যবহারের ইতিহাস ও বর্ণনা এখনও প্রকাশিত হয় নাই।
মালেকানারা রাজপূতরা আধা হিন্দু আর আধা মুসলমান। একই পরিবারে কারও নাম আশরফ উদ্দীন কারও নাম প্রতাপ সিং।
উর্দূ ভাষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর ভারতবর্ষে মুসলমানদের ভিতরে দুই চিন্তাজগতের সৃষ্টি হয়েছিল। উর্দূ ফার্সির ন্যায় আরবী শব্দভান্ডার গ্রহণ করায় শাস্ত্রালোচনায় তার কোনও বিঘ্ন ঘটে নাই - ইসলামী চিন্তাধারা উর্দূতে অক্ষুণ্ন রইল বাংলাতেও এই দুই চিন্তাধারা সৃষ্টি হল। প্রথমটি উর্দূ দ্বারা কুরান, হদীস, ফিকা ধর্ম্মশাস্ত্রের আলোচনা এবং দ্বিতীয়টি সূফিমতের প্রসার।
সূফিমত তার নানা শাখাপ্রশাখায় কাদেরিয়া, কদমিয়া, নকশাবন্দী নানা সম্প্রদায় এদেশে প্রসার লাভ করল। বাঙালী সূফিরা জিকর বা ভজন করেন, বারম্বার নাম উচ্চারণ করে করে 'হাল' বা দশা প্রাপ্ত হন, সেতার বা একতারা যোগে মধুর গান করেন, পঞ্চেন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ করে সমাধিস্থ হন।
গুরু প্রশস্তিতে আবার হিন্দু-মুসলমানের ভক্তি স্ত্রোত্র মিলিত হয়েছিল। ইরানি কবি হাফিজ বলিয়াছেন, 'মুর্শিদ যদি আদেশ দেন তবে আমি মদ দিয়া আমার জায়নামাজ রাঙা করিব। এক কথায় বাঙালী সূফী ইরান ও উত্তর ভারতবর্ষের সূফি ঐতিহ্য সঞ্জীবিত রেখেছিল।
এদের প্রভাবে অত্যন্ত নিন্ম শ্রেনীর হিন্দু-মুসলমানের ভিতর যে রসধারার সৃষ্টি হয়েছিল তা অপূর্ব ও আধ্যাত্মিক জগতে তাদের যে মিলন হল পৃথিবীর ইতিহাসে তাহার স্থান পাওয়া উচিত। আউল, বাউল, মুর্শিদিয়া, দরবেশী, সাঁই, মরমিয়া, জারীগান, গাজীর গীত সমাজের নিন্মতর স্তর হতে উঠে সে গীতে বাঙালী ভক্তের আধ্যাত্মিক অনুভূতির যে পরিচয় পাওয়া যায় তার সাথে কোন দেশেরই - এমন কি ইউরোপ, এশিয়ার লোক - সাহিত্যের তুলনা হয় না।
লিখেছেনঃ Razik Hasan
আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ভবিষ্য পুরাণে ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর আগমনের ভবিষ্যত বাণী আছে। মহর্ষি বেদব্যাস কর্তৃক দেবভাষা সংস্কৃততে লিখিত এই ধর্মগ্রন্থে প্রায় পনের জায়গায় তাঁর নাম 'মহামদ' হিসেবে লিখিত হয়েছে, এবং ব্যাসদেব সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি শিবের ভক্ত ছিলেন। এ কথা তো সত্য যে, এই ভবিষ্যত বাণীকে সত্যরূপ দিতে পৃথিবীতে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর আবির্ভাব হয়েছিল। তাহলে দেখা যায়, হিন্দুধর্ম সত্য। আবার এরকম একটি সত্য ধর্ম যখন আরেকটি ধর্মের সত্যতার সাক্ষ্য দেয়, তখন সেটিও, অর্থাৎ ইসলাম ধর্মও সত্য। এভাবে প্রমাণ করে দেয়া যায় যে, পৃথিবীর সব ধর্মই আসলে সত্য। এবং ধর্ম যদি সত্য হয়, তাহলে এসব ধর্মে বর্ণিত সকল আল্লাহ, ভগবান, ঈশ্বরও ধর্মীয়ভাবে সত্য।
আপনারা আরও জানেন, অনেক মহাপুরুষই বলে গেছেন যে, ঈশ্বর এক; বিভিন্ন ধর্মে তাঁকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। সে হিসেবে আল্লাহকেও ভগবান বলে মেনে নিতে আমার বাধা নেই। তেমনি নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-কেও হিন্দুদৃষ্টিকোণ থেকে অবতার বা দেবতা হিসেবে মেনে নেয়া যায়। আমাদের রাম ও কৃষ্ণ যুগলের একক অবতার শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবসহ পাবনার অনুকূল ঠাকুর পর্যন্ত তাঁকে ঈশ্বরের অবতার হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন বলেই শুনেছি।
ঈশ্বর নিয়ে আরেক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বোধহয় এরকম কিছু বলেছিলেন - ঈশ্বর থাকলে থাকবে, না থাকলে না থাকবে। ঈশ্বর থাকুক বা না থাকুক, তাতে কিছু যায় আসে না, কারণ মানুষের বিপদে-আপদে ঈশ্বর কোনও কাজে আসে না। একথা শুনে অনেকেরই মনে হতে পারে, আসলেই তো তাই, মানুষ শুধু শুধু আস্তিক-নাস্তিক দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে ঈশ্বর আছেন কি নেই, সেই তর্ক করে সময় নষ্ট করছে। আসল কাজ তো মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, নিজে বাঁচ, অন্যকেও বাঁচতে সাহায্য কর। তার মানে ধর্ম সত্য কি না, ঈশ্বর আছেন কি না - এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হল - মানুষ কী করছে, অর্থাৎ বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়।
বাংলাদেশে আমার পরিচয় আমি একজন হিন্দুধর্মাবলম্বী। আরও স্পষ্ট করে বললে, নমোশূদ্র। হিন্দুধর্মে যে চারটি বর্ণভেদ, তাতে নমোশূদ্র বলে কিছু নেই। বাংলার বাইরে এই জাতের বা শব্দের কোনও অস্তিত্বও নেই। যতদূর মনে হয়, আমরা হলাম সাঁওতাল-বাগদীসহ আরও কিছু জাতের সংমিশ্রণ। জোরাজুরি করে হিন্দু বানানো তো দূরের কথা, বাই ডিফল্ট হিন্দুধর্মের চার বর্ণের কোথাও আমাদের জায়গা হয়নি, হিন্দুরাই জায়গা দেয়নি। আমাদেরই কিছু পূর্বপূরুষরাই বরং হিন্দুদের হাতে-পায়ে ধরে এবং ইংরেজদের সাহায্য নিয়ে হিন্দুধর্মে কোনওরকমে জায়গা করে নিয়েছে। ছোটবেলা দেখেছি, স্বয়ং হিন্দুরাই আমাদের ডাকত চণ্ডাল বলে। আরও স্পষ্ট করে বললে, চাঁড়াল। একটা গালি। আর মুসলমানরা 'নোমোর পো' ছাড়া কথাই শুরু করত না।
এমত অবস্থায় আমার আস্তিক বা নাস্তিক পরিচয়ে কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কিছু বলার সাহসই আমার হবে না। বরং স্কুলে থাকতে কতবার যে কালেমা পড়েছি (আসলে পড়ানো হয়েছে), তার ঠিক নেই। শুধু ছোটবেলা থেকে আরবিটা শেখা হয়নি বলে নামাজটা পড়তে পারি না। আর হিন্দুদের ঘৃণা করাও সম্ভব নয়, কারণ আমি নিজেই পড়ে আছি হিন্দুসমাজব্যবস্থার একেবারে ঘৃণিত-নিচু একটা স্তরে। সেখান থেকে উপরের দিকে ঘৃণা ছুঁড়ে মারা কেউ পাত্তা দেবে না।
আসলে আমাদের আদিবাসী পূর্বপুরুষরা যেভাবে কোথাও স্থায়ী হতে পারেনি। ভারতবর্ষের এখানে-সেখানে পালিয়ে পালিয়ে, ঘুরে ঘুরে শেষে এসেছে এই দক্ষিণবঙ্গে। আর এই আসার পথে-পথে হিন্দুধর্মের রীতি-নীতি, আচার-ব্যবহার, শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রভাবটাই বেশি পড়েছিল তাদের উপর। এই প্রভাবে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিটা হারিয়ে গেছে। জীবন বাঁচানোটাই মনে হয় তাদের কাছে সবসময় বড় উদ্দেশ্য ছিল। পরে, মাত্র শ' খানেক বছর আগে, হিন্দুধর্মে 'আশ্রয়' পেয়েছে। অবশ্য কেউ কেউ খ্রিষ্টানও হয়েছে, মুসলমানও হয়েছে। এখনও অনেকে জীবন আর বসতভিটা বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। আর মুহূর্তেই তাদের সমস্ত জন্ম-পরিচয়, ইতিহাস নাই হয়ে যায়!
তো এটাই বলছিলাম - ধর্ম বা ঈশ্বর নিয়ে আমাদের আসলে কিছু করার বা বলার নেই। বরং আশেপাশের মানুষ কীরকম ব্যবহার করছে, সেটাই আসল। ওই যে আগে বললাম, বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়। কার ধর্ম সত্য, কার ধর্ম কেমন, সেটা ব্যাপার না, ধর্মের মানুষগুলো আমাদের সাথে কেমন ব্যবহার করছে সেটাই আসল। আর এতেই সে মানুষটার ধর্মটাও কেমন, সেটাও বোঝা হয়ে যায়। আর এটা বুঝতে বুঝতেই একটা সময়ে, বলতে গেলে, প্রায় পালিয়ে আবার ভিনদেশে এসে উঠেছি। জানি যে, সব ঈশ্বরই সত্য, সব ধর্মও সত্যি, তাই কোনও ব্যক্তি বা ধর্মের প্রতি কোনও রাগ-ঘৃণা বা বিদ্বেষও নেই। তবে হ্যাঁ, ভয় আছে! মুসলমানদের ভয় পাই। এই বিদেশে এসেও মুসলমান কারও সাথে পরিচয় হলে বা সামনা-সামনি পড়ে গেলে মনে মনে ভাবি - একজন মুসলমান আর যা-ই হোক, মুসলমান যেন না হয়!
লিখেছেনঃ
Ganesh Roy
ঘূর্নিঝড় "মিগজাউম" এর প্রভাতে বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা!
১ এ চন্দ্র অর্থাৎ একটি চাঁদ ।
কোনো ছোট্ট শিশুকে রাতের আকাশের চাঁদমামা দেখিয়ে সহজেই এক এ চন্দ্র বুঝিয়ে ফেলা সম্ভব ।
২ এ পক্ষ অর্থাৎ দুটি পক্ষ । এই দুটি পক্ষ হলো শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ ।
অমাবশ্যার পরদিন থেকে চাঁদের আকার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং অবশেষে পৌঁছায় পূর্ণিমাতে, আই অমাবশ্যার পরদিন থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় শুক্লপক্ষ। হিন্দু ধর্ম মতে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা হয়ে থাকে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে।
আবার পূর্ণিমার পরদিন থেকে চাঁদের আকার ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে এবং অবশেষে পৌঁছায় অমাবস্যায়, এই পূর্ণিমার পরদিন থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় কৃষ্ণপক্ষ।
৩ এ নেত্র অর্থাৎ তিনটি চোখ।
উপরের দুটি ক্ষেত্রে পরিষ্কার বোঝা গেলেও তিন নেত্র বলার সময় দুটি চোখ খুঁজে পাওয়ার পর আরেকটি চোখ খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু দর্শন অনুযায়ী এই তৃতীয় চোখটি হলো জ্ঞানচোখ(vision)।
৪ এ বেদ অর্থাৎ চারটি বেদ, এগুলি হলো রিক ঋক, সাম, যজুঃ ও অথর্ব ।
বেদ হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থ। বেদ কথাটির অর্থ হলো জ্ঞান। ইংরজিতে veda শব্দটি এসেছে vidi থেকে যার অর্থ knowledge, এই বেদে রয়েছে ১০২৮টি স্তোত্র। হিন্দু ধর্মমতে বেদ মানুষের রচনা নয় স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী। এইজন্য বেদকে "নিত্য ও অপৌরুসেও" বলা হয়। প্রাচীন ঋষিরা ঈশ্বরের বাণী শ্রবণ করেছিলেন বলে বেদের ওপর নাম শ্রুতি।
৫ এ পঞ্চোবান , পঞ্চবান হলেন মদনদেব, কামের অধিস্টাতা দেবতা। এই পাঁচটি বান হলো , সম্মোহন, উন্মাদন, শোষণ, তপন ও স্তম্ভন।
৬ এ ঋতু অর্থাৎ ছয়টি ঋতু , এই ঋতুগুলি হলো গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত।
৭ এ সমুদ্র অর্থাৎ সাতটি সমুদ্র। এই সাতটি সমুদ্র হলো ভারত মহাসগর, উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, Arctic ocen and Antarktic ocen( southern)
৮ এ অস্তবসু অর্থাৎ আটজন বসু। এই আটজন বসু হলেন ধর, ধ্রুব, সোম, অনল, অনিল, প্রত্যুষ, প্রভাস ও দ্যু।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী এই আটজন বসু হলেন দেবতা। ধর্মের ঔরসে এবং দক্ষের কন্যা বসুর গর্ভে এরা জন্মগ্রহণ করেন। অষ্টবসুরা মূলত ইন্দ্রের অনুচর হিসেবে পরিচিত। কথিত আছে একবার বসুগণ বশিষ্ঠের গাভী নন্দিনীকে হরণ করায় বশিষ্টের কোপে গঙ্গার গর্ভে শান্তনুর পূত্ররুপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
বসুরা মানুষ রূপ পাওয়ার জন্য গঙ্গার শরনাপন্ন হয়েছিলেন। তাদের অনুরোধে শান্তনুর ঔরসে গঙ্গার গর্ভে একের পর এক জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু জন্ম হওয়ার পরই গঙ্গা তাদের জলে নিক্ষেপ করেন। ফলে তারা মানব জন্ম থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু শান্তনুর বাধায় গঙ্গা অষ্টম পুত্রকে ভাসিয়ে দিতে পারেননি ,কিন্তু তিনি শান্তনুকে ত্যাগ করে স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করেন। এই অষ্টম পুত্রই হলেন দ্যু বসু মানুষরূপে যিনি দেবব্রত এবং তিনিই হলেন মহাভারতের ভীষ্ম।
৯ এ নবগ্রহ অর্থাৎ সৌরজগতের নয়টি গ্রহ, এগুলি হলো বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো।
১০ এ দিক অর্থাৎ দশটি দিক। এই দশটি দিক হলো পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈ্ঝত, ঊর্ধ্ব ও অধঃ ।
ঈশান - উত্তরপূর্ব।
বায়ু - উত্তরপশ্চিম।
অগ্নি - দক্ষিণপূর্ব।
নৈ্ঝত - দক্ষিনপশ্চিম।
ঊর্ধ্ব - মাথার উপর।
অধঃ - পায়ের তলা।
মনের আনন্দে বলো হরি, ভজ বৃন্দাবন ✋🤚
আলাপ
ওটিটি কলিং ও ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিং অ্যাপ
ফিচারঃ
নতুন নম্বর
ল্যাপটপ বা পিসি থেকেই দেশ বিদেশের যেকোন নম্বরে কল
কলরেকর্ডিং সুবিধা । কল কনফারেন্স
এমএফএস এ রিচার্জ । ব্যালেন্স ট্রান্সফার
১০০ এমবি ফাইল ট্রান্সফার
গুগল প্লে স্টোর লিংকঃ
https://play.google.com/store/apps/details...
অ্যাপল অ্যাপ স্টোর লিংকঃ
https://apps.apple.com/us/app/alaap/id1541531041
www.btcl.gov.bd
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অর্থনৈতিক অঙ্গনে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। বিগত দিনে ক্রমাগত বাড়তে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্প্রতি কিছুটা নিচে নেমে এলে রিজার্ভ-সংক্রান্ত আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে। করোনা মহামারি এবং পরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাবে উত্তঙ্গ গতিতে ছুটতে থাকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড খানিক শ্লথ হয়েছে। টান পড়েছে ঊর্ধ্বমুখী ছুটতে থাকা রিজার্ভে। সরকার ইতিমধ্যে বিলাসী পণ্য আমদানির রাশ টেনে ধরাসহ বহুবিদ প্রতিকারমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। ইতিবাচক ফলও আসতে শুরু করেছে। তথাপি, সভা-সেমিনার আর চায়ের কাপে ধোঁয়া ওড়াচ্ছে রিজার্ভ। ‘গেল গেল, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে গেল’ রব নিয়েও হাজির হয়েছেন অনেকে।
রিজার্ভের সংজ্ঞা বুঝতে গিয়ে আমরা খুঁজি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্তৃক ২০ সেপ্টেম্বর ২০০১ তারিখে প্রকাশিত 'Guidelines for Foreign Exchange Reserve Management' শীর্ষক প্রতিবেদন, যেখানে রিজার্ভকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে 'Reserves consist of official public sector foreign assets that are readily available to and controlled by the monetary authorities' হিসেবে। রিজার্ভ মূলত কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রক্ষিত তাদের নিজস্ব সম্পদ, যা তাত্ক্ষণিকভাবে বিনিময়যোগ্য এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে দেনা-পাওনা মেটানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। সাধারণত স্বর্ণ, ডলার অথবা ইউরোর মতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো মুদ্রা রিজার্ভ আকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসমূহের তত্ত্বাবধানে সংরক রিজার্ভ হিসেবে স্বর্ণের একচ্ছত্র আধিপত্য টিকে ছিল ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন মোতাবেক স্বর্ণের প্রভাব কাটিয়ে ডলারের উত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্রেটন উডস সিস্টেম’ থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্তকে প্রণিধান হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭১ সালে ব্রেটন উডস সিস্টেম থেকে একতরফাভাবে বের হয়ে যায়। ফলে স্বর্ণের সঙ্গে অন্যান্য দেশের মুদ্রার বিনিময় হার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসেবে ডলারের তুল্যমান নিরূপণের পদ্ধতি অকজো হয়ে পড়ে। সেই থেকে উত্থান ঘটতে থাকে ডলারের। এ প্রসঙ্গে ১৯৭১
সালের নভেম্বরে ইউরোপের ১০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে রোমে অনুষ্ঠিত জি-১০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) জন বাউডেন কনালির বিখ্যাত উক্তি 'The dollar is our currency, but it is your problem' আজও বহুল আলোচ্য।
ডলার তথা কোনো একটি একক মুদ্রার ওপর অতিনির্ভরশীলতা উদ্ভূত ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে আইএমএফ ১৯৬৯ সালে SDR (Special Drawing Rights) নামক বিশেষ মুদ্রা ঝুড়ির প্রবর্তন করে। এসডিআর একক কোনো মুদ্রা নয়, বরং পাঁচটি মুদ্রা নিয়ে গঠিত মুদ্রার মিশ্রণ মাত্র : অথবা মুদ্রাঝুড়ি (Basket of Currencies)। ঝুড়িতে কোন মুদ্রা কী পরিমাণে থাকবে প্রতি পাঁচ বছর পর পর আইএমএফ কর্তৃক নির্ধারিত হয়। সর্বশেষ ১ আগস্ট ২০২২ তারিখ থেকে কার্যকর প্রতি ঝুড়ি এসডিআরে ৪৩.৩৮ ভাগ থাকে ইউএস ডলার, ২৯.৩১ ভাগ ইউরো, ১২.২৮ ভাগ চীনা ইউয়ান, ৭.৫৯ ভাগ জাপানিজ ইয়েন এবং ৭.৪৪ ভাগ থাকে ব্রিটিশ পাউন্ড। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে এসব মুদ্রার মোট মান যোগ করে এক এসডিআরের মান নিরূপণ করা হয়।
আইএমএফের ডাটা মোতাবেক ২০২২ সালের তৃতীয় ভাগে পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন দেশের হাতে ১১,৫৯৮.৬৩ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে। তাছাড়া ওয়ার্ল্ড গোল্ড পরিষদের প্রতিবেদনমতে উক্ত সময়ে ৩,১৯৪.০৮৩ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করে চীন আছে তালিকার সবার ওপরে। তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা জাপান, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভের
পরিমাণ যথাক্রমে ১২৩৮.০৫৪, ৯৪৭.৬১০ এবং ৬৫৬.২৭৩ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের রিজার্ভ। ৩৬.৫১৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম। বাংলাদেশে স্বর্ণের মজুতের পরিমাণ প্রায় ১৪.০৩ টন, যার মূল্যমান ৭৫৪.২৪ মিলিয়ন ডলার। কোনো দেশ স্বীয় দেশেরই কোনো ব্যাংকে বা বিদেশে অবস্থিত কোনো ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংরক্ষণ করে থাকে। বাংলাদেশের ব্যাংকের রিজার্ভও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভোল্টে রক্ষিত আছে।
রাষ্ট্রসমূহ সাধারণত বিদেশ থেকে রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স এবং ঋণ ও অনুদান—এই তিন খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি খাত থেকে আয় করেছে প্রায় ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা সমমানের ৫২.৪৬৯ বিলিয়ন ডলার।
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রধানত আমদানি মূল্য এবং বৈদেশিক ঋণ, ঋণের সুদ ইত্যাদি পরিশোধে ব্যবহৃত হয়।
পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছাড়া একটি দেশ জ্বালানি তেল, খাদ্যদ্রব্য, ওষুধের মতো জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারে না। আর্থিক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন রোধ, মুদ্রানীতি জোরদারকরণ, বাজেট বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৃহৎ প্রকল্পে অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ব্যবহৃত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার মাধ্যমে দেশীয়
যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সংকটকালে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস জোগায় রিজার্ভ।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী যে পরিমাণ রিজার্ভ রক্ষিত আছে, তা দিয়ে গড়ে ১১ মাসের বৈশ্বিক আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে বর্তমানে মোজাম্বিকের হাতে সবচেয়ে বেশি ৭৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ সংরক্ষিত আছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয়ের হাতেই মাত্র ২ (দুই) মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ সংরক্ষিত আছে। একই প্রতিবেদন মোতাবেক অন্তত ২৫টি দেশের হাতে বর্তমানে এক মাস অথবা এক মাসের কম দিনের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদনি ব্যয় মেটানোর মতো অর্থ ছিল, বর্তমানে তা কিছুটা কমে এসেছে। বেশি বেশি রিজার্ভ হাতে ধরে রাখলেই অর্থনীতির অবস্থা ভালো হবে তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, কোনো দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকলে সেটা মোটামুটি নিরাপদ। তাছাড়া, কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য রিজার্ভই একমাত্র মানদণ্ড নয়। তাই বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার একান্তই কিছু নেই, বরং সতর্ক হওয়ার উপাদান আছে।
বছর-বছর রিজার্ভ বাড়ানোর চেয়ে অর্থনৈতিক খাতের শৃঙ্খলা বজায় রাখা, পাচার ও অপচয় রোধ, দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা বিরাজমান রাখা খুবই জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জমে থাকাও অর্থনীতির জন্য ভালো নয় বলে মনে করা হয়। কারণ, অতিরিক্ত রিজার্ভ অকারণ ফেলে রাখা অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি আশানুরূপ না হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে। দক্ষ ও স্মার্ট সরকার রিজার্ভ অহেতুক ফেলে না রেখে লাভজনক কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত খাতে বিনিয়োগ করে থাকে। বাংলাদেশের রিজার্ভ সন্তোষজনক মাত্রায় পৌঁছালে সরকার রিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ৫৮ হাজার কোটি টাকার সমপরিমান
অর্থ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঋণ নিয়ে গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ) এবং রপ্তানি ঋণ তহবিল (ইডিএফ)। বিআইডিএফ থেকে বিনিয়োগ করা হয়েছে পায়রা বন্দর উন্নয়নে, নদী ড্রেজিংয়ের কাজে। সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে প্রথম বারের মতো রিজার্ভ থেকে ২০ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে।
বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে রূপকল্প ২০৪১ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় বর্তমান সরকার বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে। টেকসই ঋণব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্বল্প সুদের দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা হচ্ছে মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মতো উৎপাদনশীল খাতে। রেমিট্যান্সে প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কারিগরি ও আইটি শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে। রপ্তানি বাস্কেটে নতুন নতুন পণ্য যোগ করার লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ আগাচ্ছে দ্রুতগতিতে।
বর্তমান সরকারের আমলে প্রথম বারের মতো দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ২৫ আগস্ট, ২০২১ তারিখ অতিক্রম করেছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক। ৩০ জুন ২০০৬ তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ৩.৪৮৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ১ জুলাই ২০২২ তারিখে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১.৮২৭ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সদ্ব্যবহার করে আসছে বিচক্ষণতার সঙ্গে। তাই রিজার্ভ নিয়ে অহেতুক গুজবে কান দিয়ে শঙ্কিত না হয়ে আত্মবিশ্বাসে শামিল হতে হবে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সব বাধা অতিক্রম করে ‘দাবায়া রাখতে পারবা না’র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’ অর্জনের অদম্য অভিযাত্রায়।
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Contact the organization
Website
Address
Gariadaha
Faridpur
KAMARKHALI-7851
Faridpur Brothers Club-FBC
Faridpur
Faridpur brothers club - Fbc South tapakhola, Rojob ali rood Faridpur.
Faridpur
Bangladesh Hindu Students' Porishad, Faridpur District is a non-political service oriented community
Red Crescent Plaza, Alipur
Faridpur, 7801
Faridpur Computer Samity is the apex ICT business and trade industry association of Bangladesh.
Faridpur
পুলিশ লাইনস্ স্কুল এন্ড কলেজ, ফরিদপুর.
Faridpur
Faridpur, 7802
বাংলাদেশ হিন্দু যুব পরিষদ ফরিদপুর শা?
Faridpur, 7851
It is a public page where we post all event related to Durga Puja