BZM - Zaker Party
Nearby non profit organizations
Alumni Association of Bksp, Dhaka
Khilkhet, Dhaka
University of Dhaka, Dhaka
dhaka, Dhaka
Dhaka 1215
Karinegong Dhaka, Dhaka
A/2 Jahurul Islam Avenue, Dhaka
Dhaka 1219
Chittagong 1208
Dhaka
Moghbazar, Dhaka
Dhaka
Dhaka, Dhaka
Dhaka 8130
Dhaka
Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from BZM - Zaker Party, Community Organization, Faridpur.
পবিত্র রবিউল আওয়াল মাস লক্ষ কোটি দূরদ ও সালাম বর্ষিত হওক আপনার প্রতি।
নবী গো আপনার শুভ আগমনে ধন্য এ জাহান উজ্বালা হল তামাম পৃথিবী
আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুল আল্লাহ,
আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবিব আল্লাহ,
আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া শাফিউলমযনাবিন,
আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া সায়্যেদুল মুরসালিন,
আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাহমাতুল্লিল আলামীন।।
"নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন।
হে ইমানদারগণ ! তোমরাও নবীর প্রতি যথাযত দরুদ (মীলাদ) ও সালাম পেশ করো।।
সূরা আহযাবরঃ ৫৬ আয়াত
“হে হাবীব, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি” -(সূরা আম্বিয়া-১০৭)
“আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি পালন কর যা তোমাদের সমস্ত ধন দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়। - (সূরা ইউনুস-৫৮)
সূফি কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলছেনঃ
তুমি যে নূরের নবী
নিখিলের ধ্যানের ছবি
তুমি না এলে দুনিয়ায়
আঁধারে ডুবিত সবি।।
একটি গোলাপে পালকগুলি দেখা যায় কিন্তু সুভাষ দেখা যায় না। কিন্তু দুটি একসাথে অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জরিত। যে পালকে দেখা পাবে সে সুভাষও পাবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
‘হে নবী (সা.)! আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও, তবে তোমরা আমার নবী (সা.)-এর অনুসরণ করো; তাহলেই আল্লাহ তাআলা তোমাদের ভালোবাসবেন।’
(সুরা-৩ আল ইমরানঃ আয়াত: ৩১)।
সর্বপরি আপনার আগমনে ধন্য হয়েছে এই দুনিয়া। সৃষ্টির সেবাতরে উৎসর্গ হওক সকল কিছু।
জাকের পার্টি জাতীয় চতুর্থ কাউন্সিল অধিবেশন - ২০২৩
সীমার তোরে বিনয়ও করি,
আমার গলাতে সীমার দিয়োনা ছুড়ি।
এই গলেতে দিতেন চুমু নবী মোস্তাফায়,,
জয়নাল আবেদীন এর কান্দন শুনতে দাওনা রে আমায়,,,,,
আকাশ কান্দে বাতাস কান্দে কান্দে বিবি ফাতিমা,
আসমান কান্দে জমিন কান্দে কান্দে সোনার মদিনা।
ফাতিমার কান্দন শুনিয়া আরশ থেকে আল্লাহ কয় ওহে জিব্রাইল তুমি গিয়ে বাতাস দাও ফাতিমার গায়ে।
ফাতিমা কয় ওহে জিব্রাইল বাতাস কেন দাও আমায় ইমাম হোসাইনের শোকে জ্বলে আগুন বাতাসে কি ঠান্ডা হয়।
========== বিশেষ ঘোষণা ===========
হিজবুল্লার ঈমাম জাকের পার্টির মহামান্য চেয়ারম্যান মহোদয়ের পবিত্র হুকুম। আগামী ২৮/৭/২৩ ইং রোজ শুক্রবার বাদ আসর থেকে শোকাবহ পবিত্র মহরম উপলক্ষে সকলের ঘরে ঘরে নিম্নোক্ত কর্মসূচি।
১| বাদ ফজর ফাতেহা শরীফ ও খতম শরীফ এর পর লাল পতাকা উত্তোলন।
২| বাদ আসর এক খতম মিলাদ ও বিশ্বওলী খাজা বাবা ফরিদপুরী (কূঃছেঃআঃ) ছাহেব এর মহা পবিত্র রওজা শরীফ জেয়ারত।
৩| মাগরিবের নামাজ এর পর দুই রাকা'ত করে ছয় রাকা'ত তরিকতের বিশেষ নিয়মে নফল নামাজ আদায় করে নিজ পরিবার পরিজন সহ দেশ ও জাতির জন্য বিশেষ প্রার্থনা।
৪| ফাতেহা শরীফ পাঠ করে নিজ পরিবার পরিজন সহ দেশ ও জাতির জন্য বিশেষ প্রার্থনা।
৫| জিকির , মিলাদ ও আখেরি মোনাজাত এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে, সাধ্যমত খিচুড়ি তবারুক দিয়ে উপস্থিত সবাইকে আপ্যায়ন।
সুলতানে কারবালা কো হামারা সালাম হো,
জা-নানে মুস্তফাﷺ কো হামারা সালাম হো।
রহমত ও যায় ফাকি দিয়া রে
সোনার আদম,
রহমত ও যায় ফাকি দিয়া।
সারা জীবন ঘুমাইলি -
আর কত ঘুমাইবি রে।
কেহ তোরে জাগাবেনা,
একবারও আসিয়া রে,
সোনার আদম।
হেলা খেলায় গেলো বেলা,
নামবে আধার সাজের বেলা,
সেই আধারে কি করিবি,
দেখোনা ভাবিয়া রে,
সোনার আদম।।
রহমত ও যায় ফাকি দিয়া।
আজ করবোনা করবো কালই,
এভাবে দিন গেল চলি।
আজরাঈল এসে এক দিন তোকে,
নিবে যে বান্ধিয়া রে, সোনার আদম।
রহমত ও যায় ফাকি দিয়া।।
জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্টের ২৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী
২৭ জুন ২০২৩ সফল হউক।
শুভ শুভ দিন খাজা বড় চাচাজান মুজাদ্দিদ ছাহেব এর পবিত্র আবির্ভাব দিবস >>>(৩রা মে)
🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏
তুমি সেই সুমহান জোর্তিময় পুরুষ
তব কদমে লুটিয়া পড়ে দূলোকভুলোক
জিন ইনসান তামাম মাখলুক।
তোমার তরবারিতে রাঙ্গাবে ইসলাম
আলো ছড়াবে মুজাদ্দেদীয়া খান্দান
তুমি সেই সুমহান।।
কারবালার প্রতিশোধের সেনানায়ক তুমি
নূরে মোহাম্মদির ধারক
তুমি জোর্তিবান
আমার বড় চাচাজান।
আপনার শুভ আর্বিভাবে জগতের উপর নেমে আসুক রহমতের বর্ষন।
আমার ভাঙ্গিল পাষাণ উড়িলো পরাণ
ফাতেহা শরীফ পাকের খবর শুনিয়া।।
কতো আওলিয়া আম্বিয়া আল্লাহর ফেরেশতারা
হুর-গেলেমান হয় গো সামিল সকলে মিলিয়া।।
ফাতেহা শরীফ পাকের ছলে জাকের দলে দলে
গাঠুরি বান্দিয়া তারা ছুটিয়া চলে,
তারা ভাইয়ে ভাইয়ে মিলে এক চাদোয়ার তলে
কেঁন্দে আকুল হয় গো নূরের ঝলক দেখিয়া।।
বিশ্ব ফাতেহা শরীফ এর মিলাদ শরীফ।
যে দিল করুণা করি যুগল নয়ন
উচিত কি নহে তার রূপ দর্শন।
যে দিল করুণা করি রসনা ললিত
কেনরে গাও না তার মহিমার গীত।
হাফেজ করিবে যদি মহত্ব প্রলাপ
তরুর মতন কর আপন স্বভাব।
একটি চক্ষুর বদলে
যে মহান স্রষ্টা আল্লাহ
আপনাকে আমাকে দুটি চক্ষু দান করিলেন।
সেই চক্ষু দিয়া, কেন আল্লাহ দেখার চেষ্টা করো না।
এত সুন্দর জবান যিনি
আপনাকে আমাকে দান করিলেন
সেই জবান দিয়া
তাহাকে কেনই বা ডাকো না।
হাফিজ তুমি চেয়ে দেখ
ফলবান বৃক্ষগুলো যেমন
ফলের ভারে নিচের দিকে ঝুকে থাকে,
তুমি কেন মাথা উঁচু করে চলাচল করো,
তোমার কিসের এত বড়াই, কিসের এত অহংকার
তুমি কেন সেই ফলবান বৃক্ষের ন্যায় হইয়া যাও না।
⬛অন্ধকার হয়তো বৃক্ষ বা ফুলকে,
দৃষ্টিসীমা থেকে লুকিয়ে ফেলতে পারে,,!
কিন্তু হৃদয়ে প্রস্ফুটিত সত্য
ভালোবাসাকে আড়াল করতে পারে না!❣️
{মওলানা জালাল উদ্দীন রুমি রহঃ}
🔴Live/সরাসরি
বিশ্ব শান্তি মঞ্জিল এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফ থেকে ১০৮তম মহাপবিত্র ওরছ শরীফের পবিত্র ঝান্ডা মোবারক উত্তোলন।
১৬-০২-২০২৩ ইং তারিখে ফজরের নামাজ শেষে ফাতেহা শরীফ পাঠ করে,
মোজাদ্দেদ গজলের মাধ্যমে
শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের মহা পবিত্র রওজা মুবারকের “মহা পবিত্র বিশ্ব উরস শরীফ ২০২৩ইং” এর উদ্বোধনী পতাকা উত্তোলন করা হয়।
আল্লাহু আকবার
ধিক্কার জানাই এইসব সাইনবোর্ড মার্কা রাজনীতিবীদ জাকেরদের। আমার কেবলাজানে নামের ওপর নৌকা রাখা কতবড় বেয়াদবির সামিল।
"তুমি জ্ঞান-বিজ্ঞানে যতই উন্নত হওনা কেন,
তোমার পীরের কদমকে তুমি নূহের তৈরি মনে করো
নচেৎ,
দূর্বিপাকের এমনি তুফান আসবে তোমার সকল ভিত্তি ভাইংগা মেছমার কইরা ফেলবে,
তখন তুমি কুলায় উঠতে পারবেনা,
তাই তোমার পীরের দামানকে শক্ত কইরা ধরো।"
~বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরি (কূঃছেঃআঃ) কেবলাজান ছাহেব।
৫ ই জমাদিউস সানী এবং ১৮ই ফাল্গুন
১৮ই ফাল্গুনঃ
আমার পীর কেবলাজান বাংলা ১৩৫৮ সনের ১৮ই ফাল্গুন রবিবার বেলা ১২ টা ১৫ মিনিটের সময় ইন্তেকাল করেন। এই ১৮ই ফাল্গুন অত্যন্ত বেদনাবিধুর দিবস। এই দিনে পীর কেবলার মহব্বতের ফয়েজ প্রবল বেগে আশেকানদের দেলে ওয়ারেদ হয়। তাই এই দিনে বিশেষ ভাব গাম্ভীর্য ও ধর্মীয় পবিত্রতার সহিত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ফাতেহা উদযাপিত হয়। আমার অবর্তমানের এই নিয়ম অব্যাহত থাকিবে। আমার পীর কেবলাজান হযরত খাজাবাবা শাহসূফী এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেব এত বড় সাধক ও খোদাতত্ত্বজ্ঞ ফকির ছিলেন যে, মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের পরে তাহার মত ওলী বা সাধক আর আসমানের নীচে আসেন নাই। সেই ফকিরের মহব্বত দেলে পয়দা করার বিশেষ দিন এই ১৮ই ফাল্গুন। তাঁহার মহব্বত দেলে পয়দা করিতে পারিলে আর ভয় নাই। ‘হোব্বুল ফোকারায়ে মেফ্তাহুল জান্নাত''-ফকির লোকের মহব্বতই বেহেশতের কুঞ্জি।
আমার পীরের মত এত বড় আকাবের ওলী আসমানের নীচে আর আসেন নাই। তিনি আজীবন আপন মুরীদ সন্তানের নাজাত চিন্তায় ব্যাকুল থাকিতেন। তিনি ছিলেন দয়াল নবী (সাঃ) এর খাছলতে খাছলতধারী। রাসূলে পাক (সাঃ) যেমন পেটেতে পাথর বাঁধিয়া, আহার-নিদ্রা পরিত্যাগ পূর্বক পাহাড়ে-পর্বতে, গুহায়-গহবরে পড়িয়া উম্মতি উম্মতি বলিয়া কাঁদিতেন, উম্মতের মুক্তি কামনায় খোদার দরবারে অশ্রুপাত করিতেন; তেমনি ছিলেন আমার পীর কেবলাজান। তিনিও আহার-নিদ্রা পরিত্যাগ পূর্বক মুরীদ সন্তানের মুক্তি কামনায় খোদার দরবারে অঝরে কাঁদিতেন। তাঁহার কান্নার সুর মাঝে মাঝে নিস্তব্ধ রজনীর ধ্যান ভংগ করিত। সেই সুর ভাসিয়া আসিত সাহেবজাদাদের কর্ণে। তাহারা কান পাতিয়া শুনিতেন যে, খাজাবাবা এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেব কান্নাভেজা কন্ঠে আকুতিসহ খোদাতায়ালাকে বলিতেছেন, ‘হে খোদা! আমার মুরীদেরা গরীব, দরিদ্র। তাহাদের পরণে কাপড় নাই, পেটেতে ভাত নাই। তাহারা কেমন করিয়া তোমার ইবাদত করিবে? তুমি তাহাদেরকে দয়া কর, করুণা কর। তাহাদের গোনাহ্খাতা মাফ করিয়া দাও।''
আমার পীরেরতো অভাব ছিল না। তথাপিও তিনি তৃপ্তিসহ আহার করিতেন না। কেবলমাত্র দেহ টিকিয়া থাকিতে পারে-এমন সামান্য পরিমাণ আহার করিতেন। তাই তাহার দেহ ছিল জীর্ণ, শীর্ণ, কংকালসার! অনায়াসেই তদীয় পবিত্র দেহের হাড় যে কেহই গণনা করিতে পারিত।
একদিনের ঘটনা। জোহর নামাজ অন্তে কেবলাজান হুজুর ভিতর হোজরায় গেলেন। গায়ের জামা খুলিলেন। সংগে কেবল আমিই ছিলাম। তাহার পবিত্র দেহ মোবারকের দিকে চক্ষু পড়িতেই আমার কান্না আসিল। বুকের হাড়গুলো ভাসিয়া আছে। গায়ে গোশ্ত আছে বলিয়া মনে হইল না। ভাবিলাম, প্রতিদিন যিনি একটি করিয়া খাসী রোষ্ট খাইলে কিছু আসে যায় না; কেবলমাত্র মুরীদের চিন্তায় আহার নিদ্রা ছাড়িয়া দিয়া তাহার দেহের এহেন করুণ দশা হইয়াছে। আমার মনের অবস্থা বুঝিতে পারিয়া কেবলাজান হুজুর আমাকে বলিলেন, ‘বাবা! অন্যান্য পীরেরা মুরীদের বাড়ীতে যায়, আর সুস্বাদু খাবার খাইয়া দেহকে মোটা তাজা করে। কিন্তু দেখ! তোমার পীরের অবস্থা। লক্ষ লক্ষ মুরীদেরা যখন পীরের দেলের সাথে দেল মিশায়, তাহাদের দেহের রোগ-ব্যাধি ও দেলের কালিমা সবই আত্মার অদৃশ্য তার বাহিত হইয়া আমার দেলে ও দেহে আসে। তাই আমার এমন অবস্থা। আমি রুগ্ন। আমি দুর্বল।” তিনি আমাদেরকে কেমন মহব্বত করিতেন, কেমন ভালবাসিতেন-তাহা উপলব্ধির জন্য আমার জীবনের নীচের ঘটনাটিই যথেষ্ট।
একবার কোরবানী ঈদের সময়ে আমি ২৯ খানা নৌকা লইয়া ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যেও পীর কেবলাজানের দরবারের উদ্দেশ্যে আটরশি হইতে রওয়ানা হইলাম। গোয়ালন্দ ছয় (৬) নং ঘাটে পৌঁছাইতে না পৌঁছাইতে ঝড় সাইক্লোনের আকার ধারণ করিল। একদিন গোয়ালন্দ থাকিলাম, যদি ঝড় থামে এই আশায়। ঝড়তো থামিলই না বরং ক্রমেই বাতাসের বেগ বাড়িতে লাগিল। এদিকে কোরবানীর ঈদ খুবই নিকটে। পীর কেবলাজানের সাথেই ঈদের নামাজ আমাকে পড়িতে হইবে। আমার উপর ইহা তাঁহার পবিত্র নির্দেশ। তাই ঠিক করিলাম, ঝড় যতই বাড়ুক; কোরবানীর আগেই এনায়েতপুর পৌছাইতে হইবে। ২৯ খানা নৌকার মাঝিকে গোয়ালন্দ ঘাটে এক জায়গায় করিয়া তাহাদের আমি বলিলাম, ‘তোমরা কি আমার কথা রাখিবা?'' তাহারা সকলেই উত্তর দিল, রাখিব।'' তখন বলিলাম, তাহা হইলে নৌকা ছাড়িয়া দাও। তাহারা সকলেই রাজী হইল ঠিকই কিন্তু চেহারা সকলেরই মলিন, ফ্যাকাসে। এই টাটকা মরণ কে মরিতে চায়? উম্মত্ত পদ্মার উত্তাল তরঙ্গ। বাতাসের প্রচন্ড বেগ। ইহারই মধ্যে আমরা রওয়ানা হইতেছি। এই কথা শুনিয়া শত শত লোক ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করিয়াও ঘাটে আসিয়াছে আমাদের মরণ দেখার জন্য।
যাই হোক, রওয়ানা হইলাম। আমার নৌকাই প্রথমে। অন্যান্য সকল নৌকাই আমার পিছনে। বাদাম টানিয়া দেওয়ার সাথে সাথেই আমার নৌকা যেন বাতাসের বেগে উড়িয়া চলিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখিলাম একটি বাজার। নৌকার একজন বলিলঃ আরিচা আসিয়া গিয়াছি। পিছনে তাকাইলাম কিন্তু একটি নৌকাও চোখে পড়িল না। দুশ্চিন্তায় পড়িলাম। কিন্তু পীর কেবলাজানের তরফ থেকে যে ইংগিত পাইতেছিলাম, তাহাতে অমংগল বা অশুভের কিছু ছিল না। যাহা হউক, অপেক্ষা করিতে লাগিলাম। নৌকাগুলো একে একে দেখা যাইতে লাগিল। রাত্র দুইটা পর্যন্ত একে একে ১৩ টি নৌকা আসিয়া আমার সহিত যোগ দিল। তখন আরও একটু দূরে তেওতা ঘাটে আসিয়া পরদিন ভোর বেলা পর্যন্ত অবস্থান করিতে লাগিলাম। ঐ স্থানে একে একে আরও ১৩ টি নৌকার সন্ধান পাইলাম। মোট ২৬ টি নৌকা একত্রিত হইল। বাকী রহিল মাত্র তিনটি। ঐ অবস্থায় সম্মুখপানে অগ্রসর হইয়া একটি চড়ায় গিয়া রাত্রি যাপন করিলাম। আরও দুইটি নৌকা আসিয়া একত্রিত হইল। বাকী রহিল আব্দুল মান্নান মোড়লের দেড় মাল্লার সর্বাপেক্ষা ছোট নৌকাটি।
এই নৌকাটির জন্য দুশ্চিন্তায় রহিলাম। বাড়ীর লাল মিঞা (যে আমার সংগে সংগে থাকিত এবং আমার নিজস্ব বাবুর্চি ছিল) কে আমার নৌকার মাস্তুলের শীর্ষে উঠিয়া পিছনে সেই নৌকা দেখা যায় কিনা চেষ্টা করিতে বলিলাম। লাল মিঞা বলিল, দূরে-বহুদূরে নদীতে পাখীর মত কি যেন ভাসিতে দেখা যায়। আমার মন বলিল, উহাই সেই নৌকা। কিছুক্ষণের মধ্যে সেই নৌকাও আমাদের সাথে আসিয়া একত্রিত হইল। বিলম্ব হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করায় ছোট নৌকার যাত্রিগণ বলিলঃ গোয়ালন্দ ছয় নম্বর ঘাট হইতে রওয়ানা দেওয়ার পরই উত্তাল তরংগের প্রচন্ড আঘাতে আমাদের নৌকা ফাটিয়া যায়। ঠিক এমন সময় উল্টা দিকের বাতাসের বাড়িতে নৌকা মুহূর্তেই ঘাটে আসিয়া ভিড়ে। আমরা কান্নাকাটি শুরু করিলাম। পীরের সাথে একত্রে যাইতে না পারায় আমাদের আত্মহত্যা করিতে ইচ্ছা করিল। এমন সময় দেখি, একজন ছুতার বা কাঠমিস্ত্রি যন্ত্রপাতি বা হাতুর বাটালসহ দাঁড়াইয়া আছে। ছুতার আমাদেরকে বলিল, ‘আপনারা চিন্তা করিবেন না। আমি আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করিতেছি। সেই ছুতার নৌকা মেরামত করিয়া দিল। মেরামত করিতে দুই ঘন্টা সময় লাগিয়াছে। তাহা ছাড়া ছিন্ন পাল চার ভাজ করিয়া টানাইয়া অতঃপর আসিয়াছি। তাই আমাদের আসিতে বিলম্ব হইয়াছে।''
আমার পীর কেবলাজানের দয়ায় ২৯ টি নৌকা এবং নৌকার মাঝি ও আরোহীদের ফেরত পাইলাম। ঝড়ের প্রচন্ড আঘাতে যদিও, হয় কোনো নৌকার হাল, না হয় পাল, না হয় মাস্তুল ছিল না, তথাপিও একটি নৌকাও ডুবে নাই কিংবা পানি উঠিয়া নৌকার মালামাল ভিজে নাই।
যাহা হউক, সময় লাগিবার কারণে ছোট নৌকাটির আমাদের সাথে যোগ দিতে এক দিন সময় লাগিল। পরবর্তী রাত্রি আমরা পাবনা জেলার সোনাতনীর হাটে যাপন করিলাম। সেই রাত্রে ঐ হাটে বসিয়াই এনায়েতপুর দরবার শরীফ হইতে আগতদের নিকট থেকে শুনিতে পাইলাম যে, পীর কেবলাজান হুজুর রাত্রিতে কাহাকেও কিছু খাইতে দেন নাই। বলিয়াছেন, তোমাদের পীর ভাইয়েরা মহা দুর্যোগের মধ্যে আছে। তাহারা আসিয়া পৌছাইলে তারপর তোমরা আহার করিবে।'' পরদিন অতি সকালেই রওয়ানা হইয়া ঈদের জামায়াতের পূর্বেই এনায়েতপুরে পৌছাইলাম। আমাদেরকে দেখিয়া পীর কেবলাজান ছাহেব অতিশয় খুশী হইলেন। তিনি বলিলেন, ‘তোমাদের নৌকা খাজা হযরত খিজির (আঃ) হেফাজত করিয়াছেন। তাই তোমরা রক্ষা পাইয়াছ।'' অতঃপর পীর কেবলাজান হুজুর সকলকে খানা খাইতে আদেশ দিলেন। পরে ঈদের নামাজ হইল। কোরবানী হইল। নজিরবিহীন ঝড়ের মধ্যে রওয়ানা দিয়া যথা সময়ে পীর কেবলার কদমে পৌঁছাইয়া পীর কেবলার সাথে জামায়াতে নামাজ পড়িতে পারায় সেইবার যেন আমরা বেহেশতী শান্তি লাভ করিয়াছিলাম।
সেই মহান সাধক, মুরীদ প্রেমিক, হযরত খাজাবাবা এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেবের বেছালত দিবস এই ১৮-ই ফাল্গুন। আজ তাহারই মহব্বতে ফয়েয ওয়ারেদ হইতেছে-সেই ধাক্কায় তোমরা কাঁদিতেছ। রাসূলে পাক (সাঃ) বলিয়াছেন, আল্ মারয়ো মা'মান আহাব্বা অর্থাৎ যে যাহাকে ভালবাসে, সে তাহারই সংগে থাকিবে। তিনি আরও বলিয়াছেন, ‘হোব্বুল ফোকারায়ে মেফ্তাহুল জান্নাত'' অর্থাৎ ফকির লোকের মহব্বতই বেহেশতের কুঞ্জি। আমার পীর বর্তমান যামানার শ্রেষ্ঠ ফকীর। তাহার মহব্বত যদি পয়দা করিতে পার, তবে আর ভয় কিসের? আল্লাহপাক তোমাদিগকে অপূর্ব পুরস্কারে ভূষিত করিবেন।
১৮ই ফাল্গুনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান যদিও পবিত্র উরস শরীফের অংশ বিশেষ; তথাপিও ইহা উরস শরীফ হিসাবে বা নামে নয়, পবিত্র ফাতেহা হিসাবে উদযাপিত হইবে।
১৮-ই ফাল্গুনের কর্মসূচীঃ
১৭ই ফাল্গুন দিবাগত সন্ধ্যা হইতে ১৮ই ফাল্গুনের কার্যাবলী শুরু করিতে হইবে। মাগরিবের আযানান্তে খেয়াল কালবে ডুবাইয়া আল্লাহতায়ালাকে হাজের নাজের ওয়াহেদ জানিয়া হুজুরী কালবে মাগরিব ওয়াক্তের ফরয ও সুন্নত নামাজ শেষ করিয়া যথারীতি দুই রাকাত করিয়া মোট ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায় করিবে। প্রত্যেক দুই রাকাত অন্তর ছওয়াব রেছানী করিবে। জামে আম্বিয়া, জামে আউলিয়া ও তামাম মোমেন মোসলমানদের বিদেহী আত্মায় ছওয়াব রেছানী করিবে। (নফল নামাজের মোনাজাত দ্রষ্টব্য)
তৎপর ফাতেহা শরীফ পড়িয়া ছওয়াব বখ্শাইয়া দিবে। (ফাতেহা শরীফের মোনাজাত দ্রষ্টব্য)
ফাতেহা শরীফ আদায়ান্তে মোরাকাবায় বসিয়া মাগরিবের ওয়াক্তের নির্ধারিত পাঁচ প্রকারের ফয়েয খেয়াল করিবে।
( মাগরিবের ফয়েয খেয়ালের নিয়ম দ্রষ্টব্য)
অতঃপর সকলে মিলিয়া মহাধুমধামে কিছুক্ষণ জেকের করিবে। জেকের সমাপানান্তে এক খতম মিলাদ মাহফিল হবে। মিলাদান্তে এশার নামাজের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত (রাত দশটা পর্যন্ত) ওয়াজ নসিহত চলিবে।
তারপর যথারীতি খেয়াল কালবে ডুবাইয়া এশারের ফরয ও সুন্নত নামাজ আদায়ান্তে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করিয়া ছওয়াব রেছানী করিবে। অতঃপর বেতের নামাজ আদায়ান্তে দয়াল নবী (সাঃ) এর গায়রাতের ফয়েজ খেয়াল করিবে। অতঃপর ৫০০ মর্তবা দরুদ শরীফ পড়িয়া দয়াল নবী (সাঃ) কে নজরানা দিয়া কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিবে। তৎপর রহমতের সময় (রাত ৩ টা থেকে) উঠিবে।
রাত তিনটা হইতে কিছুক্ষণ কুরআন তেলাওয়াত হইবে, কুরআন তেলাওয়াতান্তে এক খতম মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। তারপর সকলে বসিয়া রহমতের ফয়েজ খেয়াল করিবে। তৎপর ফজরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত জেকের করিবে। অতঃপর ফজর নামাজ আদায় করিয়া ফাতেহা শরীফ ও খতম শরীফ আদায় করিবে। ফাতেহা শরীফ পড়িয়া ইহার ছওয়াব রেছানী করিবে। ৭০০ মর্তবা খতম শরীফ পড়িয়া মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবকে নজরানা দিবে।
ইহার পর এক খতম মিলাদ পুনরায় সকলেই মিলিয়া পাঠ করিবে। তারপর দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ওয়াজ নসিহত ও পীর কেবলাজানের শানে লিখিত বিষাদময় গজল পরিবেশন করিবে। পীর কেবলাজানের ওফাতক্ষণ দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিট। কাজেই ১২ টার সময় সকলেই দন্ডায়মান অবস্থায় এক খতম মিলাদ পড়িবে। দুপুর ১২-১৫ মিনিটের সময় চোখে পানি লইয়া আদায়কৃত সমুদয় নফল ইবাদতের ছওয়াব জামে আম্বিয়া, জামে আউলিয়া ও মোমেন মোসলমানদের বিদেহী আত্মায় পৌঁছাইয়া দিবে। বিশেষ ভাবে ছওয়াব রেছানী করিবে আমার পীর কেবলাজান হযরত খাজাবাবা শাহসূফী এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেবের রূহ পাকে। কারণ এই ১৮ ই ফাল্গুন তাহার বেসালত দিবস। তাহারই রূহে ছওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই দিনের মাহফিল। ছওয়াব রেছানী শেষে চোখের পানি লইয়া আপন আপন বাড়িতে যাইবে। দরবারে অবস্থানরত জাকেরানসকল নিয়মমত যোহর ও আসরের নামাজ আদায় করিবে। যোহরের পরে দয়াল নবী (সাঃ) এর খাছ হোব্ব এশক মহব্বতের ফয়েজ খেয়াল করিবে। আসরের পরে তওবা কবুলিয়তের ফয়েজ খেয়াল করিবে। এই ভাবে দিনের কর্মসূচী শেষ করিবে।
৫-ই জমাদিউস সানীঃ
আরবী কেলেন্ডার মোতাবেক ৫-ই জমাদিউস সানী পীর কেবলাজানের ওফাত দিবস। কাজেই প্রতি বছর ১৮ই ফাল্গুনের মত ৫-ই জমাদিউস সানীতেও তাঁহার পবিত্র আত্মায় ছওয়াব রেছানীর জন্য ফাতেহা অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে।
৫-ই জমাদিউস সানীর অনুষ্ঠানমালা হুবহু ১৮ই ফাল্গুনের অনুষ্ঠান মালার অনুরুপ।
(তথ্যসূত্রঃ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা পদ্ধতি)ই জমাদিউস সানী এবং ১৮ই ফাল্গুন)
১৮ই ফাল্গুনঃ
আমার পীর কেবলাজান বাংলা ১৩৫৮ সনের ১৮ই ফাল্গুন রবিবার বেলা ১২ টা ১৫ মিনিটের সময় ইন্তেকাল করেন। এই ১৮ই ফাল্গুন অত্যন্ত বেদনাবিধুর দিবস। এই দিনে পীর কেবলার মহব্বতের ফয়েজ প্রবল বেগে আশেকানদের দেলে ওয়ারেদ হয়। তাই এই দিনে বিশেষ ভাব গাম্ভীর্য ও ধর্মীয় পবিত্রতার সহিত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ফাতেহা উদযাপিত হয়। আমার অবর্তমানের এই নিয়ম অব্যাহত থাকিবে। আমার পীর কেবলাজান হযরত খাজাবাবা শাহসূফী এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেব এত বড় সাধক ও খোদাতত্ত্বজ্ঞ ফকির ছিলেন যে, মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের পরে তাহার মত ওলী বা সাধক আর আসমানের নীচে আসেন নাই। সেই ফকিরের মহব্বত দেলে পয়দা করার বিশেষ দিন এই ১৮ই ফাল্গুন। তাঁহার মহব্বত দেলে পয়দা করিতে পারিলে আর ভয় নাই। ‘হোব্বুল ফোকারায়ে মেফ্তাহুল জান্নাত''-ফকির লোকের মহব্বতই বেহেশতের কুঞ্জি।
আমার পীরের মত এত বড় আকাবের ওলী আসমানের নীচে আর আসেন নাই। তিনি আজীবন আপন মুরীদ সন্তানের নাজাত চিন্তায় ব্যাকুল থাকিতেন। তিনি ছিলেন দয়াল নবী (সাঃ) এর খাছলতে খাছলতধারী। রাসূলে পাক (সাঃ) যেমন পেটেতে পাথর বাঁধিয়া, আহার-নিদ্রা পরিত্যাগ পূর্বক পাহাড়ে-পর্বতে, গুহায়-গহবরে পড়িয়া উম্মতি উম্মতি বলিয়া কাঁদিতেন, উম্মতের মুক্তি কামনায় খোদার দরবারে অশ্রুপাত করিতেন; তেমনি ছিলেন আমার পীর কেবলাজান। তিনিও আহার-নিদ্রা পরিত্যাগ পূর্বক মুরীদ সন্তানের মুক্তি কামনায় খোদার দরবারে অঝরে কাঁদিতেন। তাঁহার কান্নার সুর মাঝে মাঝে নিস্তব্ধ রজনীর ধ্যান ভংগ করিত। সেই সুর ভাসিয়া আসিত সাহেবজাদাদের কর্ণে। তাহারা কান পাতিয়া শুনিতেন যে, খাজাবাবা এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেব কান্নাভেজা কন্ঠে আকুতিসহ খোদাতায়ালাকে বলিতেছেন, ‘হে খোদা! আমার মুরীদেরা গরীব, দরিদ্র। তাহাদের পরণে কাপড় নাই, পেটেতে ভাত নাই। তাহারা কেমন করিয়া তোমার ইবাদত করিবে? তুমি তাহাদেরকে দয়া কর, করুণা কর। তাহাদের গোনাহ্খাতা মাফ করিয়া দাও।''
আমার পীরেরতো অভাব ছিল না। তথাপিও তিনি তৃপ্তিসহ আহার করিতেন না। কেবলমাত্র দেহ টিকিয়া থাকিতে পারে-এমন সামান্য পরিমাণ আহার করিতেন। তাই তাহার দেহ ছিল জীর্ণ, শীর্ণ, কংকালসার! অনায়াসেই তদীয় পবিত্র দেহের হাড় যে কেহই গণনা করিতে পারিত।
একদিনের ঘটনা। জোহর নামাজ অন্তে কেবলাজান হুজুর ভিতর হোজরায় গেলেন। গায়ের জামা খুলিলেন। সংগে কেবল আমিই ছিলাম। তাহার পবিত্র দেহ মোবারকের দিকে চক্ষু পড়িতেই আমার কান্না আসিল। বুকের হাড়গুলো ভাসিয়া আছে। গায়ে গোশ্ত আছে বলিয়া মনে হইল না। ভাবিলাম, প্রতিদিন যিনি একটি করিয়া খাসী রোষ্ট খাইলে কিছু আসে যায় না; কেবলমাত্র মুরীদের চিন্তায় আহার নিদ্রা ছাড়িয়া দিয়া তাহার দেহের এহেন করুণ দশা হইয়াছে। আমার মনের অবস্থা বুঝিতে পারিয়া কেবলাজান হুজুর আমাকে বলিলেন, ‘বাবা! অন্যান্য পীরেরা মুরীদের বাড়ীতে যায়, আর সুস্বাদু খাবার খাইয়া দেহকে মোটা তাজা করে। কিন্তু দেখ! তোমার পীরের অবস্থা। লক্ষ লক্ষ মুরীদেরা যখন পীরের দেলের সাথে দেল মিশায়, তাহাদের দেহের রোগ-ব্যাধি ও দেলের কালিমা সবই আত্মার অদৃশ্য তার বাহিত হইয়া আমার দেলে ও দেহে আসে। তাই আমার এমন অবস্থা। আমি রুগ্ন। আমি দুর্বল।” তিনি আমাদেরকে কেমন মহব্বত করিতেন, কেমন ভালবাসিতেন-তাহা উপলব্ধির জন্য আমার জীবনের নীচের ঘটনাটিই যথেষ্ট।
একবার কোরবানী ঈদের সময়ে আমি ২৯ খানা নৌকা লইয়া ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যেও পীর কেবলাজানের দরবারের উদ্দেশ্যে আটরশি হইতে রওয়ানা হইলাম। গোয়ালন্দ ছয় (৬) নং ঘাটে পৌঁছাইতে না পৌঁছাইতে ঝড় সাইক্লোনের আকার ধারণ করিল। একদিন গোয়ালন্দ থাকিলাম, যদি ঝড় থামে এই আশায়। ঝড়তো থামিলই না বরং ক্রমেই বাতাসের বেগ বাড়িতে লাগিল। এদিকে কোরবানীর ঈদ খুবই নিকটে। পীর কেবলাজানের সাথেই ঈদের নামাজ আমাকে পড়িতে হইবে। আমার উপর ইহা তাঁহার পবিত্র নির্দেশ। তাই ঠিক করিলাম, ঝড় যতই বাড়ুক; কোরবানীর আগেই এনায়েতপুর পৌছাইতে হইবে। ২৯ খানা নৌকার মাঝিকে গোয়ালন্দ ঘাটে এক জায়গায় করিয়া তাহাদের আমি বলিলাম, ‘তোমরা কি আমার কথা রাখিবা?'' তাহারা সকলেই উত্তর দিল, রাখিব।'' তখন বলিলাম, তাহা হইলে নৌকা ছাড়িয়া দাও। তাহারা সকলেই রাজী হইল ঠিকই কিন্তু চেহারা সকলেরই মলিন, ফ্যাকাসে। এই টাটকা মরণ কে মরিতে চায়? উম্মত্ত পদ্মার উত্তাল তরঙ্গ। বাতাসের প্রচন্ড বেগ। ইহারই মধ্যে আমরা রওয়ানা হইতেছি। এই কথা শুনিয়া শত শত লোক ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করিয়াও ঘাটে আসিয়াছে আমাদের মরণ দেখার জন্য।
যাই হোক, রওয়ানা হইলাম। আমার নৌকাই প্রথমে। অন্যান্য সকল নৌকাই আমার পিছনে। বাদাম টানিয়া দেওয়ার সাথে সাথেই আমার নৌকা যেন বাতাসের বেগে উড়িয়া চলিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখিলাম একটি বাজার। নৌকার একজন বলিলঃ আরিচা আসিয়া গিয়াছি। পিছনে তাকাইলাম কিন্তু একটি নৌকাও চোখে পড়িল না। দুশ্চিন্তায় পড়িলাম। কিন্তু পীর কেবলাজানের তরফ থেকে যে ইংগিত পাইতেছিলাম, তাহাতে অমংগল বা অশুভের কিছু ছিল না। যাহা হউক, অপেক্ষা করিতে লাগিলাম। নৌকাগুলো একে একে দেখা যাইতে লাগিল। রাত্র দুইটা পর্যন্ত একে একে ১৩ টি নৌকা আসিয়া আমার সহিত যোগ দিল। তখন আরও একটু দূরে তেওতা ঘাটে আসিয়া পরদিন ভোর বেলা পর্যন্ত অবস্থান করিতে লাগিলাম। ঐ স্থানে একে একে আরও ১৩ টি নৌকার সন্ধান পাইলাম। মোট ২৬ টি নৌকা একত্রিত হইল। বাকী রহিল মাত্র তিনটি। ঐ অবস্থায় সম্মুখপানে অগ্রসর হইয়া একটি চড়ায় গিয়া রাত্রি যাপন করিলাম। আরও দুইটি নৌকা আসিয়া একত্রিত হইল। বাকী রহিল আব্দুল মান্নান মোড়লের দেড় মাল্লার সর্বাপেক্ষা ছোট নৌকাটি।
এই নৌকাটির জন্য দুশ্চিন্তায় রহিলাম। বাড়ীর লাল মিঞা (যে আমার সংগে সংগে থাকিত এবং আমার নিজস্ব বাবুর্চি ছিল) কে আমার নৌকার মাস্তুলের শীর্ষে উঠিয়া পিছনে সেই নৌকা দেখা যায় কিনা চেষ্টা করিতে বলিলাম। লাল মিঞা বলিল, দূরে-বহুদূরে নদীতে পাখীর মত কি যেন ভাসিতে দেখা যায়। আমার মন বলিল, উহাই সেই নৌকা। কিছুক্ষণের মধ্যে সেই নৌকাও আমাদের সাথে আসিয়া একত্রিত হইল। বিলম্ব হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করায় ছোট নৌকার যাত্রিগণ বলিলঃ গোয়ালন্দ ছয় নম্বর ঘাট হইতে রওয়ানা দেওয়ার পরই উত্তাল তরংগের প্রচন্ড আঘাতে আমাদের নৌকা ফাটিয়া যায়। ঠিক এমন সময় উল্টা দিকের বাতাসের বাড়িতে নৌকা মুহূর্তেই ঘাটে আসিয়া ভিড়ে। আমরা কান্নাকাটি শুরু করিলাম। পীরের সাথে একত্রে যাইতে না পারায় আমাদের আত্মহত্যা করিতে ইচ্ছা করিল। এমন সময় দেখি, একজন ছুতার বা কাঠমিস্ত্রি যন্ত্রপাতি বা হাতুর বাটালসহ দাঁড়াইয়া আছে। ছুতার আমাদেরকে বলিল, ‘আপনারা চিন্তা করিবেন না। আমি আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করিতেছি। সেই ছুতার নৌকা মেরামত করিয়া দিল। মেরামত করিতে দুই ঘন্টা সময় লাগিয়াছে। তাহা ছাড়া ছিন্ন পাল চার ভাজ করিয়া টানাইয়া অতঃপর আসিয়াছি। তাই আমাদের আসিতে বিলম্ব হইয়াছে।''
আমার পীর কেবলাজানের দয়ায় ২৯ টি নৌকা এবং নৌকার মাঝি ও আরোহীদের ফেরত পাইলাম। ঝড়ের প্রচন্ড আঘাতে যদিও, হয় কোনো নৌকার হাল, না হয় পাল, না হয় মাস্তুল ছিল না, তথাপিও একটি নৌকাও ডুবে নাই কিংবা পানি উঠিয়া নৌকার মালামাল ভিজে নাই।
যাহা হউক, সময় লাগিবার কারণে ছোট নৌকাটির আমাদের সাথে যোগ দিতে এক দিন সময় লাগিল। পরবর্তী রাত্রি আমরা পাবনা জেলার সোনাতনীর হাটে যাপন করিলাম। সেই রাত্রে ঐ হাটে বসিয়াই এনায়েতপুর দরবার শরীফ হইতে আগতদের নিকট থেকে শুনিতে পাইলাম যে, পীর কেবলাজান হুজুর রাত্রিতে কাহাকেও কিছু খাইতে দেন নাই। বলিয়াছেন, তোমাদের পীর ভাইয়েরা মহা দুর্যোগের মধ্যে আছে। তাহারা আসিয়া পৌছাইলে তারপর তোমরা আহার করিবে।'' পরদিন অতি সকালেই রওয়ানা হইয়া ঈদের জামায়াতের পূর্বেই এনায়েতপুরে পৌছাইলাম। আমাদেরকে দেখিয়া পীর কেবলাজান ছাহেব অতিশয় খুশী হইলেন। তিনি বলিলেন, ‘তোমাদের নৌকা খাজা হযরত খিজির (আঃ) হেফাজত করিয়াছেন। তাই তোমরা রক্ষা পাইয়াছ।'' অতঃপর পীর কেবলাজান হুজুর সকলকে খানা খাইতে আদেশ দিলেন। পরে ঈদের নামাজ হইল। কোরবানী হইল। নজিরবিহীন ঝড়ের মধ্যে রওয়ানা দিয়া যথা সময়ে পীর কেবলার কদমে পৌঁছাইয়া পীর কেবলার সাথে জামায়াতে নামাজ পড়িতে পারায় সেইবার যেন আমরা বেহেশতী শান্তি লাভ করিয়াছিলাম।
সেই মহান সাধক, মুরীদ প্রেমিক, হযরত খাজাবাবা এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেবের বেছালত দিবস এই ১৮-ই ফাল্গুন। আজ তাহারই মহব্বতে ফয়েয ওয়ারেদ হইতেছে-সেই ধাক্কায় তোমরা কাঁদিতেছ। রাসূলে পাক (সাঃ) বলিয়াছেন, আল্ মারয়ো মা'মান আহাব্বা অর্থাৎ যে যাহাকে ভালবাসে, সে তাহারই সংগে থাকিবে। তিনি আরও বলিয়াছেন, ‘হোব্বুল ফোকারায়ে মেফ্তাহুল জান্নাত'' অর্থাৎ ফকির লোকের মহব্বতই বেহেশতের কুঞ্জি। আমার পীর বর্তমান যামানার শ্রেষ্ঠ ফকীর। তাহার মহব্বত যদি পয়দা করিতে পার, তবে আর ভয় কিসের? আল্লাহপাক তোমাদিগকে অপূর্ব পুরস্কারে ভূষিত করিবেন।
১৮ই ফাল্গুনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান যদিও পবিত্র উরস শরীফের অংশ বিশেষ; তথাপিও ইহা উরস শরীফ হিসাবে বা নামে নয়, পবিত্র ফাতেহা হিসাবে উদযাপিত হইবে।
১৮-ই ফাল্গুনের কর্মসূচীঃ
১৭ই ফাল্গুন দিবাগত সন্ধ্যা হইতে ১৮ই ফাল্গুনের কার্যাবলী শুরু করিতে হইবে। মাগরিবের আযানান্তে খেয়াল কালবে ডুবাইয়া আল্লাহতায়ালাকে হাজের নাজের ওয়াহেদ জানিয়া হুজুরী কালবে মাগরিব ওয়াক্তের ফরয ও সুন্নত নামাজ শেষ করিয়া যথারীতি দুই রাকাত করিয়া মোট ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায় করিবে। প্রত্যেক দুই রাকাত অন্তর ছওয়াব রেছানী করিবে। জামে আম্বিয়া, জামে আউলিয়া ও তামাম মোমেন মোসলমানদের বিদেহী আত্মায় ছওয়াব রেছানী করিবে। (নফল নামাজের মোনাজাত দ্রষ্টব্য)
তৎপর ফাতেহা শরীফ পড়িয়া ছওয়াব বখ্শাইয়া দিবে। (ফাতেহা শরীফের মোনাজাত দ্রষ্টব্য)
ফাতেহা শরীফ আদায়ান্তে মোরাকাবায় বসিয়া মাগরিবের ওয়াক্তের নির্ধারিত পাঁচ প্রকারের ফয়েয খেয়াল করিবে।
( মাগরিবের ফয়েয খেয়ালের নিয়ম দ্রষ্টব্য)
অতঃপর সকলে মিলিয়া মহাধুমধামে কিছুক্ষণ জেকের করিবে। জেকের সমাপানান্তে এক খতম মিলাদ মাহফিল হবে। মিলাদান্তে এশার নামাজের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত (রাত দশটা পর্যন্ত) ওয়াজ নসিহত চলিবে।
তারপর যথারীতি খেয়াল কালবে ডুবাইয়া এশারের ফরয ও সুন্নত নামাজ আদায়ান্তে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করিয়া ছওয়াব রেছানী করিবে। অতঃপর বেতের নামাজ আদায়ান্তে দয়াল নবী (সাঃ) এর গায়রাতের ফয়েজ খেয়াল করিবে। অতঃপর ৫০০ মর্তবা দরুদ শরীফ পড়িয়া দয়াল নবী (সাঃ) কে নজরানা দিয়া কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিবে। তৎপর রহমতের সময় (রাত ৩ টা থেকে) উঠিবে।
রাত তিনটা হইতে কিছুক্ষণ কুরআন তেলাওয়াত হইবে, কুরআন তেলাওয়াতান্তে এক খতম মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। তারপর সকলে বসিয়া রহমতের ফয়েজ খেয়াল করিবে। তৎপর ফজরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত জেকের করিবে। অতঃপর ফজর নামাজ আদায় করিয়া ফাতেহা শরীফ ও খতম শরীফ আদায় করিবে। ফাতেহা শরীফ পড়িয়া ইহার ছওয়াব রেছানী করিবে। ৭০০ মর্তবা খতম শরীফ পড়িয়া মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবকে নজরানা দিবে।
ইহার পর এক খতম মিলাদ পুনরায় সকলেই মিলিয়া পাঠ করিবে। তারপর দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ওয়াজ নসিহত ও পীর কেবলাজানের শানে লিখিত বিষাদময় গজল পরিবেশন করিবে। পীর কেবলাজানের ওফাতক্ষণ দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিট। কাজেই ১২ টার সময় সকলেই দন্ডায়মান অবস্থায় এক খতম মিলাদ পড়িবে। দুপুর ১২-১৫ মিনিটের সময় চোখে পানি লইয়া আদায়কৃত সমুদয় নফল ইবাদতের ছওয়াব জামে আম্বিয়া, জামে আউলিয়া ও মোমেন মোসলমানদের বিদেহী আত্মায় পৌঁছাইয়া দিবে। বিশেষ ভাবে ছওয়াব রেছানী করিবে আমার পীর কেবলাজান হযরত খাজাবাবা শাহসূফী এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেবের রূহ পাকে। কারণ এই ১৮ ই ফাল্গুন তাহার বেসালত দিবস। তাহারই রূহে ছওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই দিনের মাহফিল। ছওয়াব রেছানী শেষে চোখের পানি লইয়া আপন আপন বাড়িতে যাইবে। দরবারে অবস্থানরত জাকেরানসকল নিয়মমত যোহর ও আসরের নামাজ আদায় করিবে। যোহরের পরে দয়াল নবী (সাঃ) এর খাছ হোব্ব এশক মহব্বতের ফয়েজ খেয়াল করিবে। আসরের পরে তওবা কবুলিয়তের ফয়েজ খেয়াল করিবে। এই ভাবে দিনের কর্মসূচী শেষ করিবে।
৫-ই জমাদিউস সানীঃ
আরবী কেলেন্ডার মোতাবেক ৫-ই জমাদিউস সানী পীর কেবলাজানের ওফাত দিবস। কাজেই প্রতি বছর ১৮ই ফাল্গুনের মত ৫-ই জমাদিউস সানীতেও তাঁহার পবিত্র আত্মায় ছওয়াব রেছানীর জন্য ফাতেহা অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে।
৫-ই জমাদিউস সানীর অনুষ্ঠানমালা হুবহু ১৮ই ফাল্গুনের অনুষ্ঠান মালার অনুরুপ।
(তথ্যসূত্রঃ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা পদ্ধতি)
“একাকী বোধ করো না, কারণ তোমার মধ্যেই সমগ্র পৃথিবীর অবস্থান।”
— সূফী মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি (রহঃ)
"হে মহান দয়াময়, আপনার গোলামের গোলাম হিসেবে কবুল করে নিন। আমাদের জীবন যেনো আপনার খান্দানের গোলাম হিসেবেই অতিবাহিত হয়।"
বিশ্ব শান্তির মহা তাপস, শাহানশাহে এনায়েতপুরী (রঃ) এর পবিত্র আবির্ভাব দিবসে ওই নূরময় পবিত্র কদমে কোটি কোটি চুম্বন ও কদমবুসি।
বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আধ্যাত্মিক জগতে তরিকার ইমাম হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের মর্যাদাঃ
কেবলাজান ছাহেবের নসিহত থেকে-------
,গউস পাক হযরত আব্দুল কাদের জেলানী (রঃ) ছাহেব স্বীয় খেরকা নিজ পুত্রের হাতে অর্পণ পূর্বক অছিয়ত করিয়া যান, পাঁচশত বৎসর পরে উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে যে এক বিশেষ ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব হইবে তাঁহার হস্তে যেন ইহা পৌঁছাইয়া দেওয়া হয়।
হযরত গউস পাক (রঃ) ছাহেবের দেওয়া সেই খেরকা মোবারক বিভিন্ন সাধকের হাত হইয়া যেদিন ইহা হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী(রাঃ) হস্তে আসে, সেদিন আধ্যাত্মিক জগতে হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবকে লইয়া নেতৃস্থানীয় সমস্ত ওলী আল্লাহর মধ্যে শোরগোল বা বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়-যাহার সমাধান করেন, সরোয়ারে কায়েনাত, হযরত রাসূলে পাক (সাঃ)। সেদিনের সেই ঘটনা ‘জাওয়াহেরে মুজাদ্দেদীয়া'' নামক পুস্তকে নিম্মোক্তভাবে বর্ণীত আছে”।
একদা অভ্যাস অনুযায়ী হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব ফজর নামাজের পরে মুরীদানসহ মোরাকাবায় রত। এমন সময় হযরত শাহ কামাল কায়থেলী (রঃ) এর দৌহিত্র হযরত শাহ সেকান্দার (রঃ) সেখানে উপস্থিত হন এবং একটি খেরকা হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের স্কন্ধে রাখিয়া দেন। হযরত মুজাদ্দেদ (রাঃ) ছাহেবের মোরাকাবা ভংগ হয়। চক্ষু খুলিয়া তিনি হযরত শাহ সেকান্দারকে দেখিয়া তাঁহাকে আলিংগন করেন এবং সম্মানের সাথে তাঁহাকে বসিতে অনুরোধ করেন।
হযরত শাহ সেকান্দার (রঃ) ছাহেব তখন বলেন, আমি আপনার পবিত্র স্কন্ধে যে খেরকাটি রাখিয়াছি, তাহা গউস পাক হযরত আব্দুল কাদের জেলানী (রঃ) ছাহেবের স্মৃতির পবিত্র নিদর্শন। এইটি আমাদের খান্দানে দীর্ঘদিন যাবৎ বংশানুক্রমিকভাবে চলিয়া আসিতেছে। আমার বুজুর্গ পিতামহ হযরত শাহ কামাল কায়থেলী (রঃ) ছাহেব মৃত্যুর সময়ে এই পবিত্র জুব্বাটি আমাকে সোপর্দ করিয়া নির্দেশ করেন “এইটি আমানত ¯¡রূপ নিজের নিকট রাখিয়া দাও। আমি যাহাকে দিতে বলি, তাহাকে দিয়ে দিও।''
কিছুদিন হইতে আমার বুজুর্গ পিতামহ এই জুব্বাটি আপনাকে দেওয়ার জন্য তাগিদ করিতেছেন। কিন্তু এইরূপ অমূল্য স¤পদ হাত ছাড়া হউক-ইহা কি কেহ চায়? তাই ইহা আমার নিকট রাখিয়া দিয়াছিলাম। অতঃপর যখন আমার বুজুর্গ পিতামহ (রঃ) ছাহেব বারংবার আমাকে এইজন্যে তাগিদ দেন; শেষ পর্যন্ত আমাকে ধমক দিয়া বলেন, তুমি যদি ইহা তাহার হস্তে না পৌঁছাও, তাহা হইলে তোমার কামালিয়াত ও নেছবত এবং বাতেনী স¤পদ ছিনাইয়া লওয়া হইবে; ফলে অনন্যোপায় হইয়া এই দুর্লভ আমানতটি আপনার খেদমতে পেশ করিয়াছি।
অতঃপর হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব সেই পবিত্র খেরকাটি পরিধান পূর্বক যখন আপন হোজরায় গমন করিলেন তখন তাহার মনে এইরূপ ভাবের উদয় হইলঃ যদি এই মাশায়েখ কেরাম আমাকে প্রথম হইতেই খলিফা নির্বাচিত করিতেন, অতঃপর খেরকা প্রদান করিতেন, তাহা হইলে ভাল হইত। এমন সময় হঠাৎ তিনি অবলোকন করেন, হযরত গউসপাক আব্দুল কাদের জেলানী (রঃ) ছাহেব-হযরত আলী (রাঃ) ছাহেব ও কাদেরীয়া তরিকার অন্যান্য মাশায়েখগণসহ এমনকি হযরত শাহ কামাল কায়থেলী (রঃ) ছাহেবসহ তশরিফ আনিয়াছেন। হযরত গউস পাক আব্দুল কাদের জেলানী (রঃ) ছাহেব হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবকে স্বীয় নেছবত ও বাতেনী কামালাত দ্বারা ভরপুর করিয়া দেন।
অতঃপর হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের মনে এই ধারণার সৃষ্টি হয় যে, আমার প্রতিপালন বা তরবিয়ততো নকশবন্দীয়া তরিকার মাশায়েখবর্গ করিয়াছেন। কাজেই, আমি নকশবন্দীয়া তরিকার বুজুর্গদের দলভুক্ত। এইরূপ ধারণা সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে তিনি অবলোকন করেন যে, তাঁহার হোজরায় হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ) ছাহেবের সাথে হযরত খালেক গুজদোওয়ানী (রঃ) ছাহেবসহ নকশবন্দীয়া খান্দানের সমস্ত মাশায়েখবর্গ এমনকি হযরত বাকী বিল্লাহ (রাঃ) ছাহেব পর্যন্ত তশরীফ আনিয়াছেন। কাদেরিয়া তরিকার মাশায়েখবর্গ পূর্বেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রঃ) ছাহেব গউসপাক হযরত আব্দুল কাদের জেলানী (রঃ) ছাহেবের নিকটে উপবেশন করিয়াছেন। তখন তাঁহাদের মধ্যে পর¯পর আলোচনা চলিতে লাগিল। অতঃপর নকশবন্দীয়া তরিকার মাশায়েখগণের ছর্দার হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রঃ) ছাহেব গউস পাক (রঃ) ছাহেবকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলেন, শেখ আহমদ সেরহিন্দী (রাঃ) আমাদের প্রতিপালনের দ্বারা কামালিয়াত হাছিল করিয়াছেন, আপনি অনর্থক তাহাকে আপনার দলভুক্ত করিবার চেষ্টা করিতেছেন।
এই কথার জবাবে হযরত গউসপাক আব্দুল কাদের জেলানী (রঃ) ছাহেব বলেন, “শায়খ আহমদ (রাঃ) প্রথমেই আমাদের তরিকা হইতে ফয়েজ প্রাপ্ত হইয়াছেন। কাজেই সে আমাদের দলভুক্ত।"
এই আলোচনার সময় চিশতিয়া, কুবরাবিয়া, সোহওয়ার্দ্দীয়া তরিকার মাশায়েখগণ তশরিফ আনেন এবং হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবকে আপন আপন তরিকাভুক্ত বলিয়া দাবী জানান। কেননা হযরত মুজাদ্দেদ (রাঃ) ছাহেব প্রথম দিকে স্বীয় পিতার নিকট হইতে উক্ত তরিকাসমূহেরও নেছবত হাছিল করিয়াছিলেন।
মাওলানা হাশেম কাশ্মেরী (রঃ) ছাহেব ও মোল্লা বদরুদ্দিন তাহাদের ইতিহাসে এইরূপ লিখিয়াছেন যে, ঐ সময় উম্মতে মুহাম্মদীর সমস্ত আউলিয়াগণ সেরহিন্দ শরীফে সমবেত হন। এই পবিত্র সময় ছিল ১০১১ হিজরীর ১১ই শাবানের সকাল হইতে জোহরের নামাজের শেষ সময় পর্যন্ত।
অতঃপর হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) ওলী আল্লাহগণের সেই বিশাল জলসায় তশরিফ আনেন। তাঁহার খেদমতে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। তৎপর রাসূলে পাক (সাঃ)-ই বিরোধের সুষ্ঠু মিমাংসা করেন। তিনি সমস্ত তরিকার মাশায়েখবর্গকে সান্তনা দিয়া বলেন, যেহেতু শায়খ আহমদ সেরহিন্দী (রাঃ) এর পরিপূর্ণতা বা কামালিয়াত নকশবন্দীয়া তরিকার উপরে স¤পন্ন হইয়াছে; কাজেই এই তরিকাকেই রেওয়াজ বা প্রচলন দান করা হউক এবং বাকী অন্যান্য সমুদয় তরিকার নেছবতও তাঁহাকে প্রদান করা হউক; যাহার ফলে শেখ আহমদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত মুজাদ্দেদীয়া তরিকা সমস্ত তরিকার সারাংশ হিসেবে পরিগণিত হইবে এবং তোমরাও সকলে সমভাবে ছওয়াবের অধিকারী হইবে। হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) আরও বলেন, যেহেতু নকশবন্দীয়া তরিকার যোগসূত্র, সমস্ত নবীদের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ) ছাহেবের সাথে এবং এই তরিকার মধ্যে অন্য তরিকার চেয়ে সুন্নতের অনুসরণ ও বেদয়াত বর্জনের প্রতি বেশী লক্ষ্য রাখা হইয়াছে; তাই এই তরিকা দ্বীনের পুনুরুজ্জীবনে অধিক সহায়ক।
অতঃপর রাসূলে পাক (সাঃ) এর নির্দেশক্রমে সমস্ত তরিকার মাশায়েখগণ স্ব-স্ব কামালাত ও নেছবত হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবকে অর্পণ করেন। ফলে তাঁহার এই তরিকা (মুজাদ্দেদীয়া) সমস্ত তরিকার সমন¦য়ে সমৃদ্ধি লাভ করে। অতঃপর আকায়ে-নামদার রাসূলে পাক (সাঃ) নিজের তরফ থেকে হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবকে খাছ নেছবত ও কামালত প্রদান করেন।
উপরের এই ঘটনা থেকেই হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের মর্যাদা স¤পর্কে সহজেই ধারণা জন্মে।
হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব সমস্ত তরিকার সমন্বয়ে এবং নকশবন্দীয়া তরিকাকে পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করিয়া এমনই এক শ্রেষ্ঠ তরিকা প্রবর্তন করেন, যাহা সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ তরিকা তরিকায়ে নক্শবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া।''
হে জাকেরান ও আশেকান সকল! উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝিতে পারিলে যে, আসমানের নীচে হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের মত সাধক সাহাবাদের পরে আর আসেন নাই। হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের পরে তাহারই পরিপূর্ণ কামালিয়াত ও নেছবতের অধিকারী হন আমার পীর কেবলাজান। হযরত মুজাদ্দেদ (রাঃ) ছাহেবের পর সমস্ত মাশায়েখগণের মধ্যে তাঁহার স্থান শীর্ষে। তোমরা যদি খোদাতায়ালাকে পাইতে চাও, তাহা হইলে আমার পীর কেবলাজানের এই তরিকামত চল। এই তরিকা মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের তরিকা-যাহা চিশতিয়া, কাদেরিয়া, কুবরাবিয়া, নকশবন্দীয়া তথা পূর্বের সমস্ত তরিকার সমন্বয়ে এবং রাসূলে পাক (সাঃ) এর খাছ নেছবত ও কামালিয়াতের মিশ্রণে প্রতিষ্ঠিত শ্রেষ্ঠতম তরিকা। এই তরিকার নীতিসমূহের মধ্যে বিশেষ দুই মুলনীতি হইল আদব ও মহব্বত। পীরের প্রতি যেমন আদব প্রদর্শন করিতে হয়, তেমনি সবকিছুর চেয়ে পীরকে বেশী মহব্বত করিতে হয়। পীর হওয়া সত্ত্বেও হযরত বাকী বিল্লাহ (রঃ) ছাহেব ফয়েজ হাছিলের জন্য হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবকে কতই না আদব প্রদর্শন করিতেন!
কাজেই, তোমরা যদি খোদাতায়ালার একান্ত সান্নিধ্যে পৌঁছাইতে চাও, তবে আদব, বুদ্ধি, মহব্বত ও সাহসের সাথে কামেল পীরের খেদমত করিতে থাক। আল্লাহপাক তোমাদিগকে কামিয়াবী বখশিশ করুন। আমিন!(তথ্যসূত্রঃ নসিহত নং ৮, খন্ড ৩)
(copy from - kabul dada)
Click here to claim your Sponsored Listing.
Videos (show all)
Category
Contact the organization
Website
Address
Faridpur
7830
Faridpur Brothers Club-FBC
Faridpur
Faridpur brothers club - Fbc South tapakhola, Rojob ali rood Faridpur.
Faridpur
Bangladesh Hindu Students' Porishad, Faridpur District is a non-political service oriented community
Red Crescent Plaza, Alipur
Faridpur, 7801
Faridpur Computer Samity is the apex ICT business and trade industry association of Bangladesh.
Faridpur
পুলিশ লাইনস্ স্কুল এন্ড কলেজ, ফরিদপুর.
Faridpur
Faridpur, 7802
বাংলাদেশ হিন্দু যুব পরিষদ ফরিদপুর শা?
Faridpur, 7851
It is a public page where we post all event related to Durga Puja